মহানবীর সততার আর এক মহা পরাকাষ্ঠা আমরা দেখতে পাই তার মিরাজ গমনের কিচ্ছাতে।হঠাৎ একদিন মোহাম্মদ প্রচার শুরু করলেন তিনি সাত আসমান অতিক্রম করে আল্লাহর কাছে গেছিলেন। যাকে সবাই মিরাজ বলে জানে। কুরানে সেটার উল্লেখ আছে-

পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি যিনি তার বান্দাকে এক রাত্রিতে ভ্রমন করিয়েছিলেন মসজিদে হারেম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত যার চারদিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি ও যাতে আমি তাকে কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দেই। কুরান, ১৭:০১

তোমরা কি বিষয়ে বিতর্ক করবে যা সে দেখেছে? নিশ্চয়ই সে তাকে আর একবা দেখেছিল, সিদরাতুলমুন্তাহার নিকটে,যার কাছে অবস্থিত বসবাসের জান্নাত।যখন বৃক্ষটি দ্বারা আচ্ছাদিত হওয়ার, তদ্বারা আচ্ছন্ন ছিল।তার দৃষ্টি বিভ্রম হয়নি, সীমা লংঘনও করেনি।নিশ্চয়ই সে তার পালনকর্তার মহান নিদর্শনাবলী অবলোকন করেছে। ৫৩: ১২-১৮

কিন্তু মেরাজ ভ্রমনের পটভূমিকাটা কি? এক রাতে মোহাম্মদ তার সাহাবীদের নিয়ে কাবা শরীফে অবস্থান করছিলেন।গভীর রাতে তিনি চুপি চুপি উঠে উম হানি( তার চাচাত বোন) এর বাড়ী হাজির হন। উম হানি তার চাচা আবু তালিবের মেয়ে যার প্রেমে পড়েছিলেন মোহাম্মদ ও বিয়ে করতে চেয়েছিলেন কিন্তু তার চাচা রাজী হয় নি।উম হানির বিয়ে হয়েছিল এক কুরাইশ প্যগানের সাথে। সে রাতে তার স্বামী বাড়ী ছিল না।গভীর রাতে মোহাম্মদের সঙ্গীরা হঠাৎ মোহাম্মদকে কাবা ঘরে দেখতে না পেয়ে তার তালাশে বের হয়।তাদের কেউ কেউ উম হানির প্রতি মোহাম্মদের দুর্বলতার কথা জানত। ওদিকে কিছুকাল আগেই মোহাম্মদের স্ত্রী খাদিজা মারা গেছে। তাই মনের অবস্থা তার বিশেষ ভাল না।সঙ্গীরা সারারাত ধরে তাকে খুজতে খুজতে অবশেষে উম হানির ঘরে যায় ও সেখানে তাকে ভোরবেলা পায়। মোহাম্মদ ও উম হানি উভয়ে দারুন লজ্জায় পড়ে যায় আর সাহাবীদের মধ্যে কিছু কিছু মোহাম্মদের এহেন লাম্পট্যের কারনে সে আসলেই আল্লাহর নবী কি না এ ব্যপারে সন্দেহ করতে থাকে, কিন্তু ভীষণ বুদ্ধিমান ও প্রত্যুৎপন্নমতি মোহাম্মদ ঘাবড়ে না গিয়ে তাৎক্ষনিক ভাবে এক কিচ্ছা তৈরী করেন যা হলো ইসলামী বিশ্বে পরিচিত সেই বিখ্যাত আকাশ ভ্রমন বা মিরাজ।

মিরাজের বিষয় নিয়ে কতকগুলি প্রশ্ন জাগে, যেমন-
প্রশ্ন-১।একা একা গভীর রাতে মোহাম্মদ উম্মে হানির ঘরে কেন গেলেন ও সেখানে রাত কাটালেন যখন তার স্বামী ঘরে ছিল না? এ নিয়ে কথা উঠত না যদি আগে মোহাম্মদ তাকে বিয়ে করতে না চাইতেন বা তার প্রেমে না পড়তেন। যদি ধরে নেই মোহাম্মদ উম্মে হানির সাথে এক বিছানায় রাত কাটান নি , কিন্তু সেটা বিশ্বাস কেন করতে হবে যখন তিনি গোপনে সেখানে গেছেন?

প্রশ্ন-২। তিনি উম্মে হানির ঘরে গেলেন কিন্তু কেন তার সাহাবীদেরকে বলে গেলেন না? কেন চুপি চুপি একা চোরের মত গেলেন ?

প্রশ্ন-৩। তিনি যদি জরুরী কোন কাজে যেয়েই থাকেন তাহলে কাজ শেষ করে সাথে সাথে চলে না এসে সারা রাত কেন সেখানে কাটালেন? তিনি কি জানতেন না যে , যে কেউ বিষয়টি জানবে সে কখনই বিষয়টিকে স্বাভাবিক ভাবে মেনে নেবে না ? নাকি স্ত্রী বা স্ত্রী-সঙ্গ বিহনে তার দেহ মন এত উন্মাতাল হয়ে উঠেছিল যে সব কান্ড জ্ঞান তিনি হারিয়ে ফেলেছিলেন ? আমরা জানি এরকম পরিস্থিতিতে অনেক লম্পট লোক নারী ধর্ষণের মত জঘন্য কাজ করে থাকে কান্ড জ্ঞান হারিয়ে।যেন এটা কোন বিষয়ই নয়।

প্রশ্ন-৪: মিরাজের মত একটা অতি মহান ও তুলনাহীন ঘটনা কোন পর নারীর ঘর থেকে শুরু হওয়া শোভনীয় বা যুক্তিযুক্ত কোনটাই নয়।সেটা তথাকথিত আল্লাহর ঘর কাবা থেকে শুরু হলেই মানাত ভাল। তাই নয় কি?

এ ধরনের রহস্যময় ও সন্দেহজনক ঘটনাকে হালকা করার জন্য ইসলামী লেখকরা যেভাবে ঘটনাটাকে বর্ননা করে তা নীচে দেখা যাক, (যেন বিষয়টি কোন ঘটনাই নয়, ভাবখানা এমন):

It was during this period that al-Isra and al-Miraj had taken place. Al-Asra means the night journey when Muhammad was reported to have taken from Mecca to the Mosque of Aqsa, the distance mosque of Jerusalem. Al-Miraj means Muhammad’s ascension to heaven and his visit to paradise and hell. On the night of al-Isra, Muhammad was staying in the house of his cousin, Hind, daughter of Abu Talib, who was also called Umm Hani. Hind relates that the Prophet of God spent the night in my quarters. He recited the night prayers and went to sleep. Just before dawn, the Prophet of God awoke us and we all prayed the dawn prayer together. When the prayer was through, he said, “O Umm Hani, I prayed with you the night prayer in this place; then I went to Jerusalem and I prayed there, and as you see, I have just finished praying with you the dawn prayer.” I answered, “O Prophet of God! do not tell this to the people, for they will belie you and harm you.” He said, “By God, I shall tell them.” ( http://ismaili.net/histoire/history03/history313.html)

এখানে দেখা যাচ্ছে খুব নিষ্কলুষ একটা বাক্য- Muhammad was staying in the house of his cousin, Hind, daughter of Abu Talib, who was also called Umm Hani- যেন এটা কোন বিষয়ই নয়। এখানে মোটেও বলা হয় নি কেন তিনি উম্মে হানির ঘরে অবস্থান করছিলেন।মোহাম্মদ বলছেন- “O Umm Hani, I prayed with you the night prayer in this place; এটা কি সম্ভব মোহাম্মদ গভীর রাতে উম্মে হানির সাথে এক সাথে নামাজ পড়বেন যখন তার স্বামী একজন প্যাগান? তার স্বামী কি তাকে অনুমতি দিত যদি সে সেই রাতে বাড়ী থাকত? এ বর্ননার মধ্যেই নিহিত যে সে রাতে উম্মে হানির স্বামী বাড়ীতে ছিল না আর গভীর রাতে মোহাম্মদ গোপন অভিসারেই তার ঘরে ঢুকেছেন।

That night was the twenty-seventh night of the month of Rajab, a Monday night. He proceeded to the house of Umm Hani who was the daughter of Abu Talib, the sister of Ali. She lived in her father’s house, which was situated between Safa and Marwa. The Muhammad {s} arrived at her house, and finding him downcast and dispirited, she asked him for the reason of this. The Muhammad {s} explained to her what had happened and why he felt as he did. Now, Umm Hani was an intelligent and resourceful woman.
(http://www.muhammadanreality.com/ascentionmiraj.htm)

লক্ষ্যনীয়, বলা হচ্ছে মোহাম্মদ উম্মে হানির বাড়ী গেলেন।বিষয়টি আপত্তিকর মনে হওয়াতে পরে সেটা ঢাকা দেয়ার জন্য বলা হচ্ছে- সে তার বাপের বাড়ী থাকত। এরপর আবারও বলা হচ্ছে- যখন মোহাম্মদ উম্মে হানির বাড়ী পৌছালেন ।যদি উম্মে হানি সত্যিই বাপের বাড়ী থেকে থাকে তাহলে প্রথমে উম্মে হানির বাড়ীর কথা কেন বলল ? তার বাপ আবু তালিবের বাড়ী তো তার বাড়ী নয়, বিয়ের পর স্ত্রীর বাড়ী হয় তার স্বামীর বাড়ী।এ ক্ষেত্রে যদি বলত মোহাম্মদ আবু তালিবের বাড়ী গেলেন উম্মে হানির সাথে দেখা করতে – তাহলে সেটা হতো যুক্তি যুক্ত। ঘটনাটাকে লুকাতে চাওয়ার আপ্রান চেষ্টা করার পরও আসল সত্য প্রকাশ হয়ে পড়েছে। The Muhammad {s} explained to her what had happened and why he felt as he did. Now, Umm Hani was an intelligent and resourceful woman.- এখানে বলা হচ্ছে আবার মোহাম্মদ প্রথমে মিরাজে গেছিলেন তারপর সে ঘটনা সবিস্তারে বলার জন্য তিনি উম্মে হানির নিকট গমন করেন।আজব কথা ! কাবা ঘরে তার সাথে ছিল বেশ কিছু সাহাবী, তিনি তাদেরকে আগে বলার দরকার বোধ করলেন না, গভীর রাতে চুপি চুপি অন্ধকারে উম্মে হানির নিকট গমন করে তার কাছে বলার এত তাড়াটা কিসের? সুতরাং আসল কেলেংকারী চাপা দেয়ার জন্য যতই বাক্য বিন্যাশ করে ঘটনাটাকে অন্যভাবে সাজানোর চেষ্টা করা হোক না কেন, কোন ভাবেই তাকে চাপা দেয়া সম্ভব নয়। আসল ঘটনা বের হয়ে আসবেই। একেই বলে ধর্মের ঢোল আপনি বাজে। এছাড়া, মিরাজের এ ঘটনা নিয়ে নানা মুনির নানা মত। প্রতিটি ইসলাম সম্পর্কিত বইতে লেখকের নিজস্ব ধ্যান ধারনা প্রকাশিত যার কোন ভিত্তি নেই। যার যেমন ইচ্ছা তেমন বর্ননা করেছেন অবশ্যই মোহাম্মদ যাতে কলংকিত না হয় সে লক্ষ্যকে মাথায় রেখেই।কারন ইসলামি সকল উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে , ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল উম্মে হানির ঘরে আর শেষও হয়েছিল সেখানে যা বাস্তবে অত্যন্ত আপত্তিকর বিশেষ করে গভীর রাতে যখন উম্মে হানি তাদের বাড়ীতে একা অবস্থান করছিল।

যাহোক, কথিত মিরাজ ঘটনার সেই রাতে আল্লাহ তাকে মক্কা থেকে জেরুজালেমের মসজিদুল আকসাতে নিয়ে গেছিলেন। যাওয়ার বাহন হিসাবে ছিল বোরাক।বোরাক হলো গাধার চাইতে একটু বড় একটা জন্তু যার মূখটা ছিল মানুষের মত, আর ছিল দুইটা ডানা। এ বর্ননা থেকে একটা বিষয় অত্যন্ত পরিস্কার যে বোরাক একটা অদ্ভুত জন্তু ছিল, কোন মতেই উন্নত প্রযুক্তির কোন যান্ত্রিক বাহন ছিল না।
এছাড়াও বোরাক যে কি জিনিস তা এখানে ভাল বর্নিত আছে-
“Jibra’il, Mika’il and Israfil brought Buraq [5] to the Prophet . One of these (three) held the reigns of Buraq, while the other one held on the saddle and the third one held on to the clothing of the Prophet while he was ascending it. When the Prophet mounted onto the Buraq, its entire body started to tremble. Jibra’il pointed with his hand towards Buraq and told him, `O’ Buraq! Keep calm! Before the Noble Prophet no other Prophet has ever ridden you and after him too no one like him will ever ride upon you again.”
(সূত্র: http://www.al-islam.org/al-miraj/)

বোরাকের বর্ননা হাদিসে যা আছে তা নিম্নরূপ:
Then a white animal which was smaller than a mule and bigger than a donkey was brought to me.” (On this Al-Jarud asked, “Was it the Buraq, O Abu Hamza?” I (i.e. Anas) replied in the affirmative). The Prophet said, “The animal’s step (was so wide that it) reached the farthest point within the reach of the animal’s sight. I was carried on it, and Gabriel set out with me till we reached the nearest heaven. (Sahih Bukhari 5:58:227)

Al-buraq, a white animal, smaller than a mule and bigger than a donkey was brought to me and I set out with Gabriel. (সহি বুখারী, Book #54, Hadith #429)

It is narrated on the authority of Anas b. Malik that the Messenger of Allah (may peace be upon him) said: I was brought al-buraq Who is an animal white and long, larger than a donkey but smaller than a mule, who would place his hoof a distance equal to the range of version. (সহি মুসলিম, Book #001, Hadith #0309)
I was then brought a white beast which is called al-buraq, bigger than a donkey and smaller than a mule. Its stride was as long as the eye could reach. I was mounted on it, and then we went forth till we reached the lowest heaven. (সহি মুসলিম, Book #001, Hadith #0314)

ইবনে কাথিরের বর্ননা মতে- মোহাম্মদ সেই বোরাকের পিঠে চড়ে বায়তুল মোকাদ্দাসে (মসজিদুল আকসা) যান, তার গেটে বোরাককে বাধেন,যেমন করে মানুষ ঘোড়া বাঁধত আগের দিনে।ভেতরে গিয়ে দু রাকাত নামাজ পড়েন। । এর পরেই তার তথাকথিত বেহেস্ত ভ্রমন শুরু হয়। শুধু তাই নয় এক এক করে সাত টি বেহেস্ত ও সাতটি দোজখ ভ্রমন করেন , প্রতিটি বেহেস্তে পূর্ববর্তী সকল নবীরা ছিল, তাদের সাথে নানা খোশ গল্প, তামাশা করেন,এর পর আল্লাহর সাথে দেখা করেন, তার সাথেও খোশ গল্প করেন। অত:পর পূনরায় মসজিদুল আকসাতে প্রত্যাবর্তন করেন, সাথে তার সাথে দেখা সকল নবীরাও আসে তাকে বিদায় জানাতে।সেখানে তার ইমামতিতে তিনি ফজরের নামাজ পড়েন।
(সূত্র:http://www.central-mosque.com/quran/isramiraj.htm)

একটা ডানা ওয়ালা ঘোড়ার মত জন্তুর পিঠে চড়ে মোহাম্মদ মহাকাশ ভ্রমনে বের হলেন। সে ভ্রমনে তিনি কোটি কোটি আলোকবর্ষ দুরত্ব নিমেষে অতিক্রম করে সাত বেহেস্ত ও সাত দোজক ভ্রমন করে আসলেন। এটা তো দেখি আরব্য রজনীর কিচ্ছাকেও হার মানাচ্ছে।কোন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ এটা বিশ্বাস করতে পারে ? আর যে সব লোক এ উদ্ভট গাজাখুরি ও আজগুবি গল্প বিশ্বাস করবে তাদেরকে কি সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ বলা যায়? এ কিচ্ছাকে সত্য প্রমান করতে আবার তথাকথিত ইসলামী পন্ডিতরা আরও নানা রকম উদ্ভট ও গাজাখুরী যুক্তি তর্কের অবতারনা করে থাকে।

মিরাজের কথা প্রচার করার পর কুরাইশরা তাকে নানা রকম প্রশ্ন করতে থাকল তা ঘটনার প্রমান দাখিল করার জন্য। মোহাম্মদ তখন বললেন- তিনি এক মরুভুমির এক জায়গায় কিছু মানুষকে দেখলেন যাদের উট পালিয়ে গেছিল ও তারা সেগুলো খোজাখুজি করছিল।তিনি তাদের উটগুলো খুজে বের করে দিলেন ও দামাস্কাসের দিকে তাদেরকে পথ দেখিয়ে নিয়ে গেলেন। ফেরার পথে আমি দেখলাম এক জায়গাতে এক দল লোক ঘুমাচ্ছিল, আমি তাদের পাত্র থেকে পানি পান করলাম ও পাত্র যেমন ছিল তেমন রেখে দিলাম। ( সূত্র: http://www.questionsonislam.com/index.php?s=article&aid=10849)

উনি চলেছিলেন বোরাকের পিঠে সওয়ার হয়ে উর্ধ্বাকাশ দিয়ে আল্লাহর সাথে দেখা করার জন্য সেই আল্লাহর আরশে। হঠাৎ আকাশপথে যাত্রা বিরতি করে মরুভূমিতে নেমে পড়েন এবং উপরোক্ত কর্মকান্ড সমূহ করেন ।এমন উদ্ভট গল্প কে কবে শুনেছে? আর এসব গাজাখুরী কিচ্ছা যারা বিশ্বাস করে তারা কি মানসিক ভাবে সুস্থ?

তার মানে বোঝাই যাচ্ছে, মোহাম্মদ যখন জেরুজালেম যান তখন সেখানে আল আকসার জায়গাতে একটা মসজিদ বা এ জাতীয় কিছু ছিল। অথচ খলিফা ওমর যখন জেরুজালেম দখল করেন তখনও সেখানে কোন মসজিদ বা মন্দির ছিল না। যেখানে টেম্পল অব সলোমন ছিল তার ধ্বংসাবশেষের ওপর তিনি নামাজ আদায় করেন। ইতিহাস থেকে জানা যায় সেখানে বাদশাহ সলোমন একটা মন্দির তৈরী করেন যাকে বলা হয় টেম্পল অব সলোমন। অথচ আমরা আবার সেই ইতিহাস থেকেই জানতে পারি, রোমানরা জেরুজালেম দখল করে ৭০ খৃষ্টাব্দে সে মন্দির ধ্বংস করে ফেলে। আর ৬৯১ খৃষ্টাব্দে খলিফা আব্দুল মালিক ইবন মারওয়ান সেখানে একটা মসজিদ তৈরী করেন।আর বর্তমান কালে মসজিদুল আকসা বলে যা আছে তা নির্মিত হয় আরও পরে। আর মোহাম্মদ তার তথাকথিত আল আকসা রাতের বেলায় ভ্রমন করেন ৬২১ বা ৬২২ খৃষ্টাব্দে। তার মানে আল আমীন বলে কথিত আমাদের দ্বীনের নবী যখন সেখানে রাতের বেলা বোরাকে চড়ে হাজির হন, সে সময় সেখানে কিছুই ছিল না। অথচ তিনি সেখানে শুধু যান ই নাই, সেখানে প্রথমে নিজে একা পরে ফিরতি পথে সাত বেহেস্তে বসবাসরত আগের কালের সব নবীরসূল সহ সদলে নামাজ আদায় করেছেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো- মহানবীর মেরাজ ভ্রমনেরও প্রায় ৭০ বছর পর সেখানে মসজিদ নির্মিত হয়।তার মানে গভীর রাতে উম্মে হানির সাথে তার গোপন অভিসারকে চাপা দেয়ার জন্য তিনি এমন এক উদ্ভট কিচ্ছা তৈরী করেন যার জের গত ১৪০০ বছর ধরে মুসলমানরা অন্ধের মত বয়ে চলেছে প্রশ্ন ছাড়াই। এ ব্যপারটিকে ঢাকা দেয়ার জন্য কিন্তু ইসলামী পন্ডিত এক অদ্ভুত মনগড়া ব্যখ্যা হাজির করেছেন। আর সেটার ভিত্তি হলো নিচের হাদিস-

আবু ধার বর্নিত- আমি আল্লাহর নবীকে জিজ্ঞেস করলাম, কোন মসজিদ সর্বপ্রথম নির্মিত হয়েছিল? তিনি উত্তর করলেন- মসজিদুল হারাম অর্থাৎ কাবা শরীফ। আমি জিজ্ঞেস করলাম- এর পর কোন মসজিদ তৈরী হয়েছিল ? তিনি উত্তর করলেন- মসজিদুল আকসা। আমি জিজ্ঞেস করলাম- এদের নির্মানের মধ্যে সময়ের ব্যবধান কত ? তিনি উত্তর করলেন- চল্লিশ বছর। অত:পর তিনি আরও বললেন- যেখানেই নামাজের সময় হয়ে যাবে, সেখানেই নামাজ পড়বে, কারন সমস্ত দুনিয়া নামাজের স্থান। সহী বুখারী, বই-৫৫, হাদিস-৬৩৬

এখানে বলা হচ্ছে পৃথিবীর যে কোন জায়গাই হলো নামাজ পড়ার স্থান, তার মানে হিন্দুদের মন্দির, খৃষ্টানদের গীর্জা, ইহুদীদের সীনাগগ, বৌদ্ধদের প্যগোডা এসবও নামাজের স্থান। যাহোক, মোহাম্মদ মসজিদুল আকসাতে আসলে নামাজ পড়েন নি, পড়েছেন সেখানে যেখানে আসলে আল আকসা মসজিদ ছিল। কিন্তু ইবনে কাথিরের বর্ণনায় দেখা যাচ্ছে- বোরাককে মসজিদুল আকসার গেটে বেধে রাখা হয়। শুধু তাই নয়, কুরাইশদের নানা প্রশ্নের উত্তরে মোহাম্মদ আল আকসা মসজিদের কয়টি দরজা, কয়টি গেট, আশে পাশে কি আছে তারও একটা বর্ননা দিয়েছিলেন বলে কথিত আছে যা সকল ধর্ম প্রান মুসলিম বিশ্বাসও করে বিনা প্রশ্নে। তার মানে তখন মসজিদের অস্তিত্ব ছিল। আধুনিক কালে এসব ইতিহাস নিয়ে যখন টানাহেচড়া শুরু হয়েছে তখনই ইসলামী পন্ডিতরা নানা কায়দায় ওখানে মসজিদ ছিল না , নবী ও জায়গায় এমনিতেই নামাজ পড়েছেন, নামাজের স্থানকেই ইসলামে মসজিদ বলা হয় ইত্যাদি নানা রকম ব্যখ্যা হাজির করা শুরু করেছে। এর আগে হাজার বছর পর্যন্ত ওখানে একটা জল জ্যান্ত মসজিদ ছিল সেটাই কিন্তু প্রচলিত বিশ্বাস ছিল, আর এ বিশ্বাসের ভিত্তিতেই কিন্তু মোহাম্মদের আল আকসা মসজিদের বর্ননাকে অলৌকিক ঘটনা ধরা হতো। যাহোক, আরও একটা গুরুতর সমস্যা হলো- খৃ:পূ: প্রায় ২০০০ সালের দিকে আব্রাহাম দুনিয়াতে আসেন বলে ধারনা করা হয় যার কিছু কিছু ঐতিহাসিক প্রমানও আছে।আর মসজিদুল হারাম তথা কাবা শরীফ তার হাতেই নির্মিত-সেটাই সবাই বিশ্বাস করে।পক্ষান্তরে খৃ:পূ: ৯৫০ সালের দিকে সলোমন তার রাজত্ব কালে টেম্পল অব সলোমন তৈরী করেন। ৭০ সালে রোমানরা সে টেম্পল গুড়িয়ে দেয় ও মোহাম্মদের মৃত্যুরও প্রায় ৬০ বছর পর সেখানে মুসলমানদের হাতে একটা মসজিদ নির্মিত হয়। যুক্তির খাতিরে যদি সলোমনের টেম্পলকে মসজিদুল আকসা ধরি তাহলেও এ দুইয়ের তৈরীর সময় ব্যবধান হলো কম পক্ষে এক হাজার বছর। আর মুসলমানদের তৈরী বাস্তব মসজিদুল আকসা ধরলে সময়ের ব্যবধান দাড়ায় আরও বেশী। অথচ দ্বীনের নবী বলছেন মাত্র চল্লিশ বছর। কি আজব কথা !নাকি নবী যদি সব আজগুবি কথা বলেন তাহলে দরকার মত ইতিহাস পাল্টে বা গোজামিল দিয়ে হলেও তাকে সত্যি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে ? মানুষ কেন বুদ্ধি বৃত্তির চর্চা বাদ দিয়ে এহেন অন্ধত্বের ও মূর্খতার দাসত্ব করবে ? (সুত্র: http://en.wikipedia.org/wiki/Al-Aqsa_Mosque, http://www.islamic-awareness.org/Quran/Contrad/External/aqsa.html, http://www.nawajee.com/AlArthAlMuqaddasa/AlMasjidAlAqsa.html, http://www.noblesanctuary.com/HISTORY.html, http://www.jewishvirtuallibrary.org/jsource/Society_&_Culture/geo/Mount.html)

মেরাজের ঘটনাকে সত্য প্রমানের জন্য কি আজগুবি ও গাজাখুরী যুক্তির অবতারনা করা হচ্ছে তার নমুনা নীচে-
In an attempt to prove that the Prophet (s.a.w.) was lying, those Makkans who were familiar with Jerusalem and the Sacred Mosque (al-Aqsa) quizzed him about his journey. The Prophet (s.a.w.) described everything in detail, and no one could fault his description. Additionally, the Prophet (s.a.w.) told the Makkans about a caravan travelling from Jerusalem to Makkah, mentioning the number of camels, their condition, and the time that they would arrive in Makkah. The caravan from Jerusalem appeared exactly when the Prophet (s.a.w.) said it would, and everyone saw that his description was accurate. But the pagans remained fettered to their disbelief.
( http://www.islamiclandmarks.com/saudi_house_of_umme_hani.html)

Those who had journeyed to Damascus and who had seen Masjid-al–Aqsa came to our Holy Prophet (PBUH) and asked, “Could you describe Masjid-al- Aqsa to us?” Our Holy Prophet (PBUH) said, “I went there and I can describe it.” Our Holy Prophet (PBUH) reported it as follows: I was very tired of their denial and questions. In fact, I had not experienced such difficulty until that moment. Just then, Allah showed me the Baytu’l Maqdis. While looking at it, I described every detail one by one. They even asked me, “How many doors does the Baytu’l Maqdis have?” however, I had not counted its number of doors. When I saw the Baytu’l Maqdis across from me, I began to look at it, count each of its doors and told them the number.” 3
Thereupon, the polytheists said, “By God, you perfectly and correctly described it.” Nevertheless, they still did not become Muslims. (http://www.questionsonislam.com/index.php?s=article&aid=10849)-

বলা হচ্ছে- মোহাম্মদ জেরুজালেম থেকে একদল লোককে মক্কায় আসতে দেখেন। মোহাম্মদ সেখানে যাচ্ছিলেন বোরাকের পিঠে সওয়ার হয়ে আকাশ পথে উড়ে তাও আবার গভীর রাতে।জেরুজালেম থেকে মক্কা সোজা বিমান উড্ডয়ন দুরত্ব হলো ১,২১৫ কি. মি.।আর স্থল পথ দুরত্ব নিশ্চয়ই ১,৩০০ কি. মি. এর নীচে হবে না। সেই কালে কঠিন ও দুর্লঙ্ঘ এত বিরাট দুরত্ব অতিক্রম করে মানুষ সচরাচর জেরুজালেম থেকে মক্কা বা মক্কা থেকে জেরুজালেম যেত না। সেকারনে মক্কাতেও জেরুজালেম আগে গেছে এরকম মানুষ না থাকার সম্ভাবনাই বেশী ছিল।তার মানে জেরুজালেমে আল আকসা মসজিদ কোথায় আছে তা দেখতে কেমন তা জানার মত লোক মক্কাতে ছিল বলে বিশ্বাস করা কঠিন।অন্য কথায়, আল আকসা নামের মসজিদ বা মন্দির-এর বাস্তব অস্তিত্ব আদৌ আছে কি না তা কেউ জানত না। তবে তারা সে মসজিদ বা মন্দির আছে বা ছিল এমন কিছু শুনে থাকতে পারে, কারন সেটা বিখ্যাত স্থান সেই কালেও। সর্বোপরি, ইতিহাস বলছে তখন সেখানে আদৌ মসজিদ বা মন্দির কিছু ছিল না।ছিল কিছু ধ্বংসাবশেষ। অথচ মোহাম্মদ পরিস্কার ভাষায় বলে দিলেন সে মসজিদের বর্ননা, তার কয়ট দরজা এসব, আর কেউ তার ভুল ধরতে পারল না। কেউ যদি মসজিদ না দেখেই থাকে তাহলে ভুল ধরবে কিভাবে?
এমন কোন গাধা আছে যে এ ধরনের অলৌকিক ঘটনার চাক্ষুষ প্রমান থাকা সত্ত্বেও মোহাম্মদকে নবী মানত না ? এই এক বিংশ শতাব্দীতে বিজ্ঞান মনষ্ক মানুষগুলোর সামনেও যদি এ ধরনের অলৌকিক ঘটনা প্রমান করা যেত, সিংহ ভাগ মানুষই মোহাম্মদকে নবী মানত। আর সে সময়ে তো ঐ সব আরব বেদুইনরা ছিল নিতান্তই অশিক্ষিত, নিরক্ষর, অজ্ঞ।তাদের সামনে এত বড় অলৌকিক কান্ড দেখানোর পরও তারা মোহাম্মদকে নবী মানেনি, তার মানে মোহাম্মদ কোন অলৌকিক কান্ড দেখান নি। সুতরাং মোহাম্মদ যদি এসব কথা বলে থাকেন তাহলে তিনি ডাহা মিথ্যা কথা বলেছেন। আর তিনি মিথ্যা বলার সাহস পাচ্ছেন কারন তখন সেখানে সম্ভবত আল আকসা চাক্ষুস কেউ দেখেছে তেমন কেউ ছিল না।
এ ছাড়াও মিরাজ ঘটনা আমাদেরকে বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন করে।

প্রথমত: বোরাক নামক একটা জন্তু যার ডানা আছে সে কিভাবে বায়ুমন্ডলের বাইরে গিয়ে এক এক করে সাত টা বেহেস্ত ভ্রমন করল? কারন বায়ূমন্ডলের বাইরে তো ডানা দিয়ে উড়ে যাওয়া যায় না।

দ্বিতীয়ত: পৃথিবীর সবচাইতে কাছের নক্ষত্র প্রক্মিমা সেন্টরাই এর দুরত্ব হলো ৪ আলোকবর্ষ।তার মানে আলোর গতিতে চললেও সেখানে পৌছে পুনরায় পৃথিবীতে ফিরে আসতে মোট সময় লাগবে ৮ বছর। জানা মহাবিশ্বের প্রান্ত সীমায় পৌছতে আলোর গতিতে চললেও কম পক্ষে ৩০ বিলিয়ন বছর লাগবে। তাহলে বেহেস্ত আসলে কোথায়? পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে বায়ুমন্ডল যতদুর তার মধ্যে অর্থাৎ মাত্র ৫০/৬০ কিলোমিটার উপরে? কারন তার বাইরে বোরাক তো তার ডানা দিয়ে উড়ে যেতে পারবে না। বেহেস্ত এত কাছে হলে তো অনেক আগেই মানুষ বেহেস্ত আবিস্কার করে ফেলত আর মনে হয় এতদিনে সেখানে কলোনী বানিয়ে ফেলত। তা হতো- অতিরিক্ত জনসংখ্যা ভারাক্রান্ত পৃথিবীর জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ। কিন্তু সেটা এখনও করা যায় নি।বিজ্ঞানীদের উচিৎ তাদের সব কাজ বন্দ করে পৃথিবীর অতি নিকটবর্তী এ বিশাল সাতটা বেহেস্ত আবিস্কারে মনোনিবেশ করা।

বোরাককে এক মহা উন্নত আল্লাহর মহাকাশযান প্রমান করার জন্য ইদানিং কিছু তথাকথিত ইসলামী পন্ডিতরা আদাজল খেয়ে লেগে পড়েছে। কিন্তু হাদিস ও কাথিরের বর্ননায় পরিস্কার বলা আছে ( আগেই দেখানো হয়েছে) – বোরাক হলো ঘোড়ার মত দেখতে একটা প্রানী যার চারটা পা আছে, দুইটা ডানা আছে, আর মুখটা মানুষের মত।তাছাড়া মোহাম্মদ বেহেস্তে ভ্রমনের সময় এ ধরনের বোরাক নামক জন্তুকে মাঠে চরে ঘাস খেতে দেখেছেন। সুতরাং কোনভাবেই বোরাককে অতি উন্নত মহাকাশযান বানান সম্ভব নয়।কারন আর যাই হোক,কোন অতি উন্নত আকাশযান নিশ্চয়ই মাঠে চরে ঘাস খেয়ে বেড়াবে না, তাদের কোন পাখীর মত ডানা থাকবে না, গরুর মত চারটে পা ও থাকবে না।

উপরোক্ত কারন সমূহ দ্বারা দিনের মত পরিস্কার যে, মেরাজ বলে আদৌ কিছু ঘটেনি। আগেই বলা হয়েছে, সদ্য পত্নীবিয়োগের কারনে ভারাক্রান্ত মোহাম্মদ হঠাৎ গভীর রাতে নিজের দৈহিক ও মানসিক যন্ত্রনায় ভুগতে থাকেন, তা থেকে কিছুটা পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য তিনি কাউকে কিছু না বলে সেই গভীর রাতে গোপনে উম্মে হানির ঘরে গমন করেন যখন তার স্বামী বাড়ীতে ছিল না। দুর্ঘটনাক্রমে, তার সঙ্গী সাথীরা তাকে সেভাবেই অপ্রস্তুত অবস্থায় উম্মে হানির ঘরে আবিষ্কার করে ফেলে।যা থেকে তাৎক্ষনিক পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য প্রত্যূৎপন্নমতি মোহাম্মদ খুব দ্রুত মিরাজ নামক এক আজগুবি ও গাজাখুরী কিচ্ছা তৈরী করে আপাতত তার সঙ্গী সাথীদেরকে ধোকা দেন। আমরা নিজেরাও ছোট কালে এ ধরনের অনেক আজগুবি ঘটনার কথা শুনেছি। যেমন- তখন কেউ কেউ রাতের বেলা জঙ্গলাকীর্ন কবরখানার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ভুত-পেত্নী বা জ্বীন-পরী তাদের রাস্তা আটকে দাড়িয়ে ছিল।অত:পর ভীষণ সাহসী মানুষ নানা রকম দোয়া দরুদ পড়ে সেসব ভুত পেত্নী বা জ্বীন পরীকে পরাস্ত করে বীর দর্পে সেখান থেকে চলে এসেছেন। তারপর তারা সেসব গল্প বলতেন অকাতরে এমন ভাবে যা অবিশ্বাস করার মত লোক তখন পাওয়া যেত না একেবারেই।দু:খের বিষয় বর্তমান কালে আর কোন ভুত -পেত্নী বা জ্বীন পরীর দেখা পাওয়া যায় না। শোনা কথা- এরা নাকি সব বৈদ্যুতিক লাইনের ভয়ে চাঁদের দেশে ভেগে গেছে। এটা আমাদের জন্য অবশ্যই বেশ পরিতাপের বিষয়।কারন অত:পর আমরা জ্বীন-পরী বা ভুত-পেত্নী দেখা থেকে বঞ্চিত আছি।

কিছু কিছু ইসলামী পন্ডিত আবার আরও অগ্রসর হয়ে মেরাজের এ ঘটনাকে আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতাবাদের সাথে তুলনা করে বলতে চায়, মূলত আপেক্ষিকতাবাদের জনক মোহাম্মদ নিজেই। তার অর্থ নিরক্ষর মোহাম্মদ মহা বিজ্ঞানী। আর একজন নিরক্ষর মানুষ যদি মহা বিজ্ঞানী হয় তাহলে তিনি আল্লাহর নবী না হয়ে পারেন ই না। এবার দেখা যাক, মোহাম্মদের আপেক্ষিকতাবাদ আবিস্কারের মাজেজা:

কেউ কেউ বলে থাকে যে-আল্লাহর সকাশে যেতে মোহাম্মদের সাড়ে তের বছর সময় লেগেছিল আর ফিরে আসতেও একই সময় লেগেছিল।অর্থাৎ মোট সময় লেগিছিল সাতাশ বছর। কিন্তু মোহাম্মদ বোরাকে চড়ে এ দুরত্ব অতিক্রম করেছিলেন মূহুর্তের মধ্যে। এমনও বলা হয়- উনি ওজু করে নাকি মেরাজে রওনা হয়েছিলেন,ফিরে এসে দেখেন সে অজুর পানি তখনও গড়াচ্ছে।তার মানে মুহুর্তমধ্যে মোহাম্মদ মক্কা থেকে জেরুজালেম গেলেন, সেখান থেকে সাত আসমান ও সাত দোজখ ঘুরতে গেলেন, আল্লাহর সাথে খোশ গল্প করলেন, তারপর পুরনো সব নবীদের দল সহ জেরুজালেমে আসলেন, আল আকসাতে জামাতের নামাজ পড়লেন ও অত:পর মক্কাতে উম্মে হানির ঘরের মধ্যে প্রত্যাবর্তন করলেন। আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্বের সাথে এর সম্পর্কটা কি ? এর ব্যখ্যা নিচে-

আপক্ষিক তত্ত্ব মতে – কোন ব্যাক্তি যদি আলোর গতিতে চলমান হয় তাহলে তার কাছে সময় থেমে যাবে।মোহাম্মদ বোরাকের পিঠে চড়ে আলোর গতিতে আল্লাহর কাছে গেছিলেন ও ফিরে আসলেন। তাই তার কাছে সময় থেমে গেছিল। যে কারনে যখন তিনি পৃথিবীতে উম্মে হানির ঘরে চুপিসারে প্রত্যাবর্তন করলেন তখনও তার কাছে মনে হলো তিনি মুহুর্তমাত্র সময় সময় ব্যয় করেছেন এ মহান ও সীমাহীন দীর্ঘ মহাকাশ ভ্রমনে।যারা আপেক্ষিক তত্ত্ব সম্পর্কে আদৌ অবগত নন, তাদের কাছে বিষয়টি খুবই বিস্ময়কর ও অলৌকিক।আসল ফাকিটা হলো এরকম। আপেক্ষিক তত্ত্ব অনুযায়ী আলোর গতিতে ভ্রমনকারী ব্যক্তির কাছে সময় স্থির হলেও যারা এক জায়গায় স্থির হয়ে অবস্থান করছে তাদের কাছে তো সময় চলমান।তার অর্থ- মোহাম্মদ আলোর গতিতে বোরাকের ডানায় ভর করে উড়ে চললে সময় তার কাছে থেমে থাকবে কিন্তু উম্মে হানি বা মক্কার লোকের কাছে থেমে থাকবে না।সুতরাং মোহাম্মদ যদি সাড়ে তের আলোক বর্ষ দুরত্ব ভ্রমন করে আবার ফিরে আসেন তার কাছে সেটা মুহুর্তমাত্র মনে হতে পারে কিন্তু উম্মে হানি বা তার সাহাবীদের কাছে সেটা হবে মোট সাতাশ বছর।অর্থাৎ দুনিয়াতে তখন বাস্তবেই সাতাশ বছর পার হয়ে যাবে। এর সোজা অর্থ- মোহাম্মদ দুনিয়াতে ফিরে এসে দেখবেন তার গোপন প্রেমিকা উম্মে হানি বৃদ্ধা হয়ে পড়েছে(এমনকি মারাও যেতে পারে), তার সাহাবীরাও সবাই বৃদ্ধ হয়ে গেছে , কেউ কেউ মারাও গেছে- অথচ তার নিজের কাছে সময়টা মনে হবে মুহুর্তমাত্র।ঘটনাটা এরকম হলেই সেটা হতো সত্যিকার আপেক্ষিকতাবাদের পক্ষে এক দারুন উদাহরন আর তখন মোহাম্মদকে আল্লাহর নবী হিসাবে বিশ্বাস না করে উপায় থাকত না। অথচ কোন কিছু না বুঝেই কিছু কিছু তথাকথিত ইসলামী পন্ডিত যাদের পর্দার্থ বিজ্ঞান সম্পর্কে সামান্যতম জ্ঞান আছে বলেও মনে হয় না তারা মোহাম্মদের এক আজগুবি ও ভুয়া মিরাজ কিচ্ছার মধ্যে আপেক্ষিকতাবাদের সূত্র খুজে মরছে।

এবার নীচের আয়াত গুলো দেখা যাক-

নক্ষত্রের কসম, যখন অস্তমিত হয়।তোমাদের সংগী পথভ্রষ্ট হননি এবং বিপথগামীও হননি।এবং প্রবৃত্তির তাড়নায় কথা বলেন না। কোরআন ওহী, যা প্রত্যাদেশ হয়।তাঁকে শিক্ষা দান করে এক শক্তিশালী ফেরেশতা। সহজাত শক্তিসম্পন্ন, সে নিজ আকৃতিতে প্রকাশ পেল। উর্ধ্ব দিগন্তে, অতঃপর নিকটবর্তী হল ও ঝুলে গেল। তখন দুই ধনুকের ব্যবধান ছিল অথবা আরও কম।তখন আল্লাহ তাঁর দাসের প্রতি যা প্রত্যাদেশ করবার, তা প্রত্যাদেশ করলেন। রসূলের অন্তর মিথ্যা বলেনি যা সে দেখেছে। তোমরা কি বিষয়ে বিতর্ক করবে যা সে দেখেছে? নিশ্চয় সে তাকে আরেকবার দেখেছিল, সিদরাতুলমুন্তাহার নিকটে, যার কাছে অবস্থিত বসবাসের জান্নাত। যখন বৃক্ষটি দ্বারা আচ্ছন্ন হওয়ার, তদ্দ্বারা আচ্ছন্ন ছিল। তাঁর দৃষ্টিবিভ্রম হয় নি এবং সীমালংঘনও করেনি। নিশ্চয় সে তার পালনকর্তার মহান নিদর্শনাবলী অবলোকন করেছে। ৫৩: ০১- ১৮

মিরাজের কিচ্ছা যে সত্যি তা বলতে গিয়ে আল্লাহ নক্ষত্রের মত একটা জড় বস্তুর কসম করছে।মানুষ কখন কসম কাটে? কারা কসম কাটে? সাধারনত মিথ্যাবাদী প্রকৃতির মানুষ যাদেরকে অন্যরা বিশ্বাস করে না তারাই কসম কাটে, কসম কাটে আল্লাহ বা খোদার নামে।যেমস বলে- খোদার কসম আমি মিথ্যা বলছি না।আল্লাহ নিজে নক্ষত্রের নামে কসম কাটছে, তার মানে নক্ষত্র আল্লাহর কাছে তার চাইতেও আরও বড় এক আল্লাহ।আল্লাহর দেখি মাথাই খারাপ হয়ে গেল।সে নিজেই নিজের সাথে শিরক করছে।এখানে সহজাত শক্তিসম্পন্ন, সে নিজ আকৃতিতে প্রকাশ পেল অর্থ- আল্লাহ এখানে নিজ আকৃতিতে মোহাম্মদের সাথে দেখা দিলেন।কোন কোন অনুবাদকৃত কোরানে এটাকে জিব্রাইল ফিরিস্তা বলে উল্লেখ করেছে। কিন্তু এটা মোটেও তা না।ইদানিং অনুবাদকরা কোরানের দুর্বলতার কথা বুঝতে পেরে নিজেদের মত অনুবাদ করে।তখন দুই ধনুকের ব্যবধান ছিল অথবা আরও কম।তখন আল্লাহ তাঁর দাসের প্রতি যা প্রত্যাদেশ করবার, তা প্রত্যাদেশ করলেন,– নিশ্চয় সে তাকে আরেকবার দেখেছিল, সিদরাতুলমুন্তাহার নিকটে, যার কাছে অবস্থিত বসবাসের জান্নাত। -এ বর্ননা থেকে পরিস্কার বোঝা যায় এটা আল্লাহ।মিরাজের প্রায় দশ বছর আগেই জিব্রাইল মোহাম্মদের কাছে নিয়মিত আসা যাওয়া করে, কথাবার্তা-আড্ডা হয়।তখন কতবারই তো তারা খুব কাছাকাছি ছিল। তাছাড়া হেরা গুহার মধ্যে সে তো মোহাম্মদকে জড়িয়ে ধরেছিল। মেরাজের শুরু থেকে সাত বেহেস্ত ও দোজখ ভ্রমনে সব সময় সে মোহাম্মদের সাথে ছিল, সকল নবীকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিল, সুতরাং সে তাকে আরেকবার দেখেছিল– এখানে তাকে বলতে আল্লাহকেই বুঝানো হচ্ছে, কারন জিব্রাইল মোহাম্মদের সাথে সব সময়ই ছিল সুতরাং তাকে বলতে জিব্রাইল বুঝালে বাক্যটির কোন অর্থই হয় না।এর অর্থ কোরানের আল্লাহ বলছে তার আকার আছে, অথচ ইসলামের মূল বক্তব্য হলো আল্লাহর কোন আকার নাই।সোজা কথায়, গোপন অভিসারে ধরা খেয়ে মোহাম্মদ আল্লাহর বানীর নামে এমন সব আবোল তাবোল কথা বার্তা শুরু করেছিলেন যা ছিল সরাসরি ইসলামের মূল ভাবধারার বিপরীত।এক দিকে গভীর রাতে উম্মে হানির ঘরে গিয়ে ধরা খাওয়া, তারপর তা গোপন করতে গিয়ে গাজাখুরি গল্প চালু করা, একে সত্য বলে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে আল্লাহর বানীর নামে আরও উদ্ভট ও আজগুবি কথাবার্তা বলাতে, মক্কাতে তার পক্ষে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। কারন এর পর থেকে কুরাইশরা তাকে আরও বেশী অপমান করতে থাকে ও তাকে সবাই মিলে উন্মাদ সাব্যাস্ত করতে থাকে। এরকম একটা অসহনীয় ও অপমানকর পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যই অবশেষে তিনি মদিনাতে হিজরত করেন।তাকে হ্ত্যা করার চক্রান্ত হচ্ছিল বলে যে কিচ্ছা আমরা শুনি তা সবই বানানো ও ভিত্তিহীন।কারন কোন উন্মাদ লোককে কেউ প্রতিদ্বন্দ্বী জ্ঞান করে না আর তাকে কেউ মেরেও ফেলতে চায় না।

সুতরাং এখানেও মোহাম্মদ যে একজন সত্যবাদী ছিলেন তার কোন প্রমান পাওয়া যাচ্ছে না। আগেই বলেছি- কারো নিকট অন্য কেউ যদি সম্পদ গচ্ছিত রাখে আর তা ফেরত দেয় অথচ একই সাথে সেই একই ব্যাক্তি যদি বানিয়ে বানিয়ে কিচ্ছা তৈরী করে মানুষকে ধোকা দেয় বা বিপথে পরিচালিত করে- তাকে আর যাই হোক সত্যবাদী বলা যায় না।

মহানবী মোহাম্মদের চরিত্র ফুলের মত পবিত্র, পর্ব-১