যুগের চাহিদা বা ইচ্ছার সঙ্গে শিল্প বিযুক্ত থাকতে পারে না। পিপলস থিয়েটার বা গণনাট্যকে অবশ্যই জনগণের সংগ্রামের শরিক হতে হবে। তাদের দুঃখকষ্ট, তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা, তাদের লড়াইয়ে অংশ নিতে হবে। খোলাখুলিভাবে বলা যায়, গণনাট্য হবে অবশ্যই জনগণের। তা যদি না হয়, তাহলে গণনাট্য কখনোই সফল হবে না। -রোমাঁ রোলাঁ
স্বদেশী আন্দোলনের আগে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে বাঙালি মধ্যবিত্তশ্রেণীর তেমন কোনো স্বতঃস্ফূর্ত আগ্রহ বা আত্মিক সমর্থন ছিল না। সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহ, তিতুমীরের লড়াই, সাঁওতাল বিদ্রোহ, সিপাহী বিদ্রোহ, পাবনার প্রজাবিদ্রোহ, আঞ্চলিক নানা কৃষক বিদ্রোহ, এসব সংগ্রামে বাঙালি মধ্যবিত্ত সযত্নে নিজেদেরকে দূরে সরিয়ে রেখেছে। আগুনের তাপ থেকে নিরাপদ দূরত্বে থেকে সাহিত্য আর সংস্কৃতি চর্চা করে গিয়েছে। বিস্ময়করভাবে এর ব্যতিক্রম দেখা দেয় নীল বিদ্রোহের সময়ে। নীলকরদের পীড়ন অত্যাচারে অতীষ্ট নীল চাষীদের দুঃখ-দুর্দশা বাঙালি শিক্ষিত সমাজকে বিচলিত, ক্ষুব্ধ ও প্রতিকারপ্রত্যাশী করে তুলেছিল। দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া চাষীরা যখন নীলকরদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল, তখন শুধু সহানুভূতি এবং সমর্থনই নয়, তাঁদের সাথে সক্রিয়ভাবে এই লড়াইয়ে অংশ নিয়েছিল বাঙালি লেখক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী এমনকি জমিদার সম্প্রদায়ের লোকেরাও।
অশিক্ষিত নিম্নবিত্ত এবং শিক্ষিত মধ্যবিত্তের এই সম্মিলনের অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন ঊনিশ শতকের অত্যন্ত সৃষ্টিশীল একজন নাট্যকার দীনবন্ধু মিত্র এবং তাঁর এক অবিস্মরণীয় সৃষ্ট নাটক নীল দর্পণ। এই নাটকটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৮৬০ সালে ঢাকা থেকে। প্রথম প্রকাশে লেখকের কোনো নাম ছিল না গ্রন্থটিতে। মলাটে লেখকের নাম না থাকলেও, এটি কে লিখেছেন সেটি জানতে কারোরই বাকি ছিল না সেই সময়।
১৮৩০ সালে চব্বিশ পরগনায় জন্ম দীনবন্ধু মিত্রের। দরিদ্র ঘরের সন্তান তিনি। নিজের চেষ্টায় দাঁড় করিয়েছিলেন নিজেকে। পিতৃদত্ত ‘গন্ধর্বনারায়ণ’ নাম বদল করে ‘দীনবন্ধু’ নাম গ্রহণ করেন। ঊনিশ শতকের মাঝামাঝি বাংলার রেঁনেসার সময়ে যে সকল মহৎ সাহিত্যিক তাঁদের মেধা দিয়ে বাংলাকে আলোকিত করার চেষ্টা করেছেন, তিনি তাঁদের মধ্যে অন্যতম।
দীনবন্ধু মিত্র
ডাকবিভাগে কাজ করতেন দীনবন্ধু। নীল দর্পণ যখন ছাপা হয় তখন তিনি ঢাকা বিভাগের ইনেস্পেক্টিং পোস্টমাস্টার। সরকারি কাজে তাঁকে প্রায়শই ঢাকা ও ময়মনসিংহ জেলার বিভিন্ন স্থানে যেতে হতো। যদিও বাংলায় নীল চাষের মূল জায়গা ছিল নদীয়া (কুষ্টিয়া তখন নদীয়ার অংশ ছিল) এবং যশোর জেলায়। তারপরেও, ঢাকা এবং ময়মনসিংহেও অনেক নীল কুঠি ছিল। সেগুলো চোখা এড়িয়ে যায় নি দীনবন্ধু মিত্রের। মেধাবী, কর্মঠ এই ব্যক্তিটি সম্পর্কে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেনঃ
দীনবন্ধুর যেরূপ কার্যদক্ষতা এবং বহুদর্শিতা ছিল, তাহাতে তিনি যদি বাঙালি না হইতেন, তাহা হইলে মৃত্যুর অনেক দিন পূর্বেই তিনি পোস্টমাস্টার জেনারেল হইতেন, এবং কালে ডাইরেক্টর জেনারেল হইতে পারিতেন। কিন্তু যেমন শতবার ধৌত করিলে অঙ্গারের মালিন্য যায় না, তেমনি কাহারো কাহারো কাছে সহস্র দোষ থাকিলেও কৃষ্ণবর্ণের যায় না! শ্বেতবর্ণ যেমন সহস্র দোষ ঢাকিয়া রাখে, কৃষ্ণচর্মে তেমনি সহস্র গুণ ঢাকিয়া রাখে।
১৮৬০ সালে ঢাকা থেকে প্রকাশ হবার পরের বছরেই ঢাকাতে মঞ্চস্থ হয় নীল দর্পণ। কোলকাতায় তখনও পেশাদার রঙ্গমঞ্চ তৈরি হয় নি। নীল দর্পণ ঢাকায় মঞ্চস্থ হবার পরে কোলকাতার হরকরা পত্রিকায় এ সম্পর্কে খবর প্রকাশিত হয়। পত্রিকার ঢাকাস্থ সংবাদদাতা লিখেছিলেনঃ
Our native friends entertain themselves with occasional performances and the ‘Nil Darpan’ was acted on one of these ocations.
এ কারণেই মুনতাসীর মামুন তাঁর ঢাকা সমগ্রের দ্বিতীয় পর্বের ঊনিশ শতকে ঢাকার থিয়েটার পরিচ্ছদে বলেন যে,
এতে নিশ্চিত হয়ে বলা যায় যে, ‘নীলদর্পণ’ ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয়ে ঢাকায়ই মঞ্চস্থ হয় প্রথম। সন ১৮৬১, সংবাদটির সূত্র ধরে বলা যেতে পারে যে, নীলদর্পণের আগেও ঢাকায় অভিনয় কার্য কিছু হয়েছে। কিন্তু এ সব ছিল শখের অভিনয়।
নীল দর্পণ নাটক বাংলার পেশাদার থিয়েটার গড়ার ক্ষেত্রেও অবদান রেখেছিল। এই নাটক দিয়ে প্রভাবিত হয়েই গীরিশচন্দ্র ঘোষ কোলকাতায় ন্যাশনাল থিয়েটার গঠন করেন এবং নীল দর্পণই প্রথম বানিজ্যিকভাবে প্রদর্শিত হয়। এই নাটকের প্রদর্শনীতে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরও উপস্থিত ছিলেন দর্শক হিসাবে। আবেগী এবং মেজাজী লোক ছিলেন তিনি। সাহেব সুবোদের গ্রাহ্যের মধ্যেই নিতেন না। অপমানের প্রতিশোধ নেবার জন্য এক ইংরেজ অধ্যক্ষ্যের সামনে টেবিলে পা তুলে দিয়ে কথাও বলেছিলেন একবার। কারণ, ওই অধ্যক্ষ বৃটিশ হবার গরিমায় ঈশ্বরচন্দ্রের সাথে একই আচরণ করেছিলেন। নাটকের মূল চরিত্র উডের ভূমিকায় অভিনয় করছিলেন শক্তিমান অভিনেতা অর্ধেন্দুশেখর মুস্তাফি। নীল চাষীদের উপর তাঁর অত্যাচারের অভিনয় দেখে বিদ্যাসাগর এতই ক্ষিপ্ত হয়ে ছিলেন যে, পায়ের জুতো খুলে ছুঁড়ে মেরেছিলেন অর্ধেন্দুর গায়ে। তিনিও তাঁর অভিনয়ের পুরস্কার হিসাবে সেই জুতোকে তুলে নিয়েছিলেন স্মারক হিসাবে।
নীল দর্পণ প্রকাশের পরেই বাংলার বিখ্যাত সব সাহিত্যিকেরা এর পাশে এসে দাঁড়ান। শুধু এই নাটকের ক্ষেত্রেই নয়, নীল চাষের বিরুদ্ধে লেখালেখিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন তাঁরা সকলেই। এঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, কালীপ্রসন্ন সিংহ, কাঙাল হরিনাথ মজুমদার, শিশিরকুমার ঘোষ প্রমুখ। একটা মাত্র মহত্তম নাটক যে একটি বিদ্রোহের জন্য রসদ জোগাতে পারে, তা প্রমাণ করে দিয়েছিল নীল দর্পণ।
সেই সময় সবাই যে দীনবন্ধুর পক্ষ নিয়েছিলেন তা কিন্তু নয়। মীর মোশাররফ হোসেন তাঁর আত্মজীবনী ‘আমার জীবনীতে দীনবন্ধুকে পাতফোঁড় বলে তীব্রভাবে সমালোচনা করেছিলেন ইংরেজের কুৎসা গাওয়ার জন্য। তাঁর ভাষায়ঃ
দীনবন্ধু মিত্র ‘নীলদর্পণে’ নীলকরের দৌরাত্ম্য অংশই চিত্রিত করিয়া গিয়াছেন।… দীনবন্ধুবাবু ইংরেজের ত্রুটি, ইংরেজের কুৎসা গাহিয়া গিয়াছেন। ইংরেজ মধ্যে যে দেব ভাব আছে, প্রজার প্রতি মায়া-মমতা-স্নেহ এবং ভালোবাসার ভাব আছে তাহা তিনি চক্ষে দেখিয়াও প্রকাশ করেন নাই। যে ইংরেজ জাতির নেমক-রুটি খাইয়া বহুকাল জীবিত ছিলেন,… সেই ইংরেজের কুৎসা গান করিয়া দু’শ’ বাহবা গ্রহণ করিয়াছেন।… ইহারই নাম ‘পাতফোঁড়’, যে পাতে খান, সেই পাতেই ছিদ্র করেন।
তবে এই মন্তব্য থেকে এই সিদ্ধান্তে আসাটা সমীচীন হবে না যে, মীর মোশাররফ হোসেন ইংরেজ দরদী ছিলেন। তাঁর অবস্থানটা ছিল দ্বিধাগ্রস্ত। নদীয়ার নীলকরদের প্রধান পাণ্ডা টি আই কেনি ছিল মোশাররফের বাবার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। এই কেনি সাহেব মোশাররফকে বিলাতে পড়তে যাবার খরচও দিতে চেয়েছিলেন। অন্যদিকে স্থানীয় নীল বিদ্রোহের নেতা ছিল তাঁদেরই জ্ঞাতিগোষ্ঠীর লোক। সম্পত্তি নিয়ে তাঁর পিতার সাথে এই লোকের গোলমাল লেগেছিল। ফলে, নীল বিদ্রোহ কবলিত অঞ্চলে থেকে নীলকরদের অত্যাচার স্বচক্ষে দেখার পরেও মীর মোশাররফ হোসেনের অবস্থান ছিল দ্বিধাময়। নদীয়ার এই কেনি সাহেব ছিলেন প্রবল অত্যাচারী লোক। এর কিছুটা ধারণা মেলে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের এক চিঠিতে। গণেন্দ্রনাথের এক চিঠির জবাবে দেবেন্দ্রনাথ লিখেছেনঃ
তোমার ২৭ মাঘের পত্রে নূতন প্রস্তাব হঠাৎ শুনিলাম। কেনি সাহেব ২০০০০০ টাকা দিয়া ছয় বৎসরের নিমিত্ত বিরাহিমপুর ইজারা লইবেক।… কেনি সাহেবের অধীনে অধুনা যে সকল প্রজা আছে তাহার মধ্যে অনেক প্রজা তাহার দৌরাত্ম্য জন্য তাহার এলাকা হইতে পালাইতেছে। বিরাহিমপুর তাহার হস্তগত হইলে এখানকারও অবস্থা তদ্রূপ হইবেক তাহার সন্দেহ নাই। ছয় বৎসর হস্তগত হইবার পরে এ জমিদারী প্রজাশূন্য দেখিতে হইবেক।
এই কেনি সাহেবের সাথে প্রবল দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন সুন্দরপুরের জমিদার প্যারীসুন্দরী দাসী। প্রজাহিতকরণের এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে আছেন এই ভদ্রমহিলা। কেনির হাত থেকে প্রজাদের বাঁচানোর জন্য তিনি বলেছিলেনঃ
আমি থাকিতে আমার প্রজার প্রতি নীলকর ইংরেজ দৌরাত্ম করিবে? আমি বাঁচিয়া থাকিতে আমার প্রজার বুনানী ধান ভাঙিয়া কেনি নীল বুনিবে, ইহা আমার প্রাণে কখনই সহ্য হইবে না। প্রজাদিগের দূরবস্থা আমি এই নারীচক্ষে কখনই দেখিতে পারিব না। যে উপায়ে হউক, প্রজা রক্ষা করিতেই হইবে। লোক, জন, টাকা, সর্দ্দার, লাঠিয়াল যাহাতে হয় তাহার দ্বারা প্রজার ধন, মান, প্রাণ, জালেমের হস্ত হইতে বাঁচাইতে হইবে।
কেনিকে শায়েস্তা করার জন্য নীল বিদ্রোহের এই নেত্রী ঘোষণা দেন এই বলে যে,
যে ব্যক্তি যে কোনো কৌশলে কেনির মাথা আমার নিকট আনিয়া দিবে, এই হাজার টাকার তোড়া আমি তাহার জন্য বাঁধিয়া রাখিলাম। এই আমার প্রতিজ্ঞা, আমার জমিদারী, বাড়ী, ঘর, নগদ টাকা, আসবাব যাহা আছে, সমুদয় কেনির কল্যাণে রাখিলাম। ধর্ম্মসাক্ষী করিয়া বলিতেছি, সুন্দরপুরের সমুদয় সম্পত্তি কেনির জন্য রহিল। অত্যাচারের কথা কহিয়া মুষ্টিভিক্ষায় জীবনযাত্রা নির্ব্বাহ করিব। দ্বারে দ্বারে কেনির অত্যাচারের কথা কহিয়া বেড়াইব।… দুরন্ত নীলকরের হস্ত হইতে প্রজাকে রক্ষা করিতে জীবন যায় সেও আমার পণ।
প্রজাদের রক্ষার লড়াইয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছিলেন প্যারীসুন্দরী। নীল চাষে অস্বীকৃতি জানানোতে কেনির লোকেরা প্যারীসুন্দরীর প্রজাদের ক্ষেতের ধান পুড়িয়ে দেয়। এর বদলা নেবার জন্য প্যারীসুন্দরী লোকজন জড়ো করে একাধিকবার কেনির নীলকুঠিতে হামলা চালান। এরকমই এক হামলা কেরির নীলকুঠি চাষীদের রোষানল থেকে বাঁচানোর প্রচেষ্টায় নিহত হন একজন পুলিশ অফিসার। এই অপরাধে সরকার তাঁর জমিদারী ক্রোক করে নেয়।
ঠাকুরপুরে একটা বাংলা স্কুল চলাতেন রেভারেন্ড জেমস লং।বহুভাষাবিদ ছিলেন তিনি। ছিলেন প্রাচ্য বিশারদ। বাংলা, সংস্কৃতি, ফার্সিসহ আরো অনেকগুলো প্রাচ্যদেশীয় ভাষা জানতেন তিনি। ১৮৬১ সালে দীনবন্ধুর কাছ থেকে নীল দর্পণের একটি কপি পান তিনি।পাদ্রি লং বাংলার গভর্নর জেনারেলের সেক্রেটারি এবং ইন্ডিগো কমিশনের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট সেটন কারের নজরে আনেন। এর গুরুত্ব অনুভব করে সেটন কার কথা বলেন লেফটেন্যান্ট গভর্নর যে পি গ্রান্টের সাথে। নাটকটিতে কী লেখা আছে সেটি জানার জন্য ঘনিষ্ঠ কিছু লোকজনকে দেবার জন্য এর ইংরেজি অনুবাদ করা যায় কি না সে বিষয়ে আগ্রহ দেখান।
রেভারেন্ড জেমস লং
বিষয়টা পাদ্রি লং এর মাথায় গেঁথে যায়। তিনি নিজেই এর অনুবাদ করা শুরু করেন। কিন্তু কৃষকের চলতি গ্রাম্য ভাষা ছিল এই নাটকের প্রাণ। ফলে, এর অনুবাদে খুব একটা সুবিধা করতে পারেন না তিনি। তাই লং সাহেব শরণাপন্ন হলেন বাংলা এবং ইংরেজি দুই ভাষাতেই বিশেষ দখল আছে, এমন একজন দেশি ব্যক্তির। সেই ব্যক্তি মাত্র এক রাতের মধ্যে নীল দর্পণের অনুবাদ করে দেন। পাদ্রি লং তখন এই পাণ্ডুলিপি পাঠিয়ে দেন ক্যালকাটা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং এর স্বত্বাধিকারী ক্লিমেন্ট হেনরি ম্যানুয়েল এর কাছে। তিনশ টাকার বিনিময়ে পাঁচশ কপি ছাপানোর সুরাহা হয়। নীল দর্পণ Nil Darpan, The Indigo Palnting Mirrorনামে তা ছাপা হয়ে যায় অনুবাদকের নাম ছাড়াই। বইতে শুধু লেখা ছিল Transalted from the Bengali by a Native. বইটাতে পাদ্রি লং একটা ভূমিকাও জুড়ে দিয়েছিলেন।
নীল দর্পণের ইংরেজি অনুবাদ
বইগুলো হাতে পাবার পরে পাদ্রি লং সেগুলোকে বিভিন্ন গণ্যমান্য ইউরোপীয় এবং প্রভাবশালী নেটিভদের কাছে ডাকযোগে পাঠানো শুরু করেন। নীলকররা যখন এই ঘটনা জানতে পারলো তখন তাদের ক্ষিপ্ততা দেখে কে। গভর্নরের কাছে তারা জানতে চাইলো যে, কার অনুমতিতে এই বইয়ের অনুবাদ করা হয়েছে? সরকারের কাছ থেকে তেমন কোনো সদুত্তর না পেয়ে নীলকরেরা আদালতে যাবার সিদ্ধান্ত নিল। লেখক এবং প্রকাশককে রাষ্ট্রদ্রোহীতার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হলো। কিন্তু, বইয়ে অনুবাদকের নাম না থাকায় শুধু প্রকাশক হেনরি ম্যানুয়েলকে আদালতে তোলা হলো। তিনি নিজেকে দোষী বলে স্বীকার করে নিলেন এবং জানালেন যে, পাদ্রি লং এর কাছ থেকে টাকা পেয়েই তিনি এই বইটি প্রকাশ করেছেন। এরপর মামলা সরে গেল পাদ্রি লং এর দিকে। পুরো বিচার চলাকালীন সময়ে পাদ্রি লং এর কাছ থেকে নেটিভ অনুবাদকের নাম জানার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু কিছুতেই তাঁর মুখ খোলাতে পারে নি আদালত। বিচার শেষে দোষী বলে আদালত সাব্যস্ত করে তাঁকে। একমাসের কারাদণ্ড এবং এক হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয় তাঁকে।
হাজার চেষ্টা করেও লং সাহেবের মুখ থেকে যে নেটিভ অনুবাদকের নাম জানা সম্ভব হয় নি, তাঁর নাম অবশ্য গোপন থাকে নি। থাকার কথাও নয়। ইংরেজরা ঠিকই ধরে ফেলেছিল। কিন্তু কিছুই করতে পারে নি প্রমাণ না থাকার কারণে। বাংলা এবং ইংরেজিতে ওইরকম তুখোড় দখল বাংলাদেশে মাত্র একজনেরই ছিল। বুদ্ধিমান পাঠকেরাও এতক্ষণে অনুবাদক কে ছিলেন, সেটা ধরে ফেলেছেন জানি। হ্যাঁ, নীল দর্পণের সেই অজ্ঞাতনামা নেটিভ অনুবাদক ছিলেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত।
নীল দর্পণের নেটিভ অনুবাদকের নাম প্রকাশ্যে ফাঁস করেছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র। তিনি বলেছিলেন যে, এই ইংরেজি অনুবাদের ফলে মাইকেল মধুসূদন গোপনে তিরস্কৃত ও অপমানিত হয়েছিলেন এবং এইজন্য শেষে তাঁকে জীবিকানির্বাহের একমাত্র উপায় সুপ্রীম কোর্টের চাকরিও ছেড়ে আসতে হয়েছিল।
কারো জন্য যদি অন্য কেউ জেল খাটার বন্দোবস্ত থাকতো, তবে সেদিন পাদ্রি লং এর জন্য বহু লোকই এক পায়ে খাড়া ছিল। তবে, সেটা হবার নয়। কাজেই হয়ও নি। এক মাসের কারাবরণ করেছিলেন পাদ্রি লং। কিন্তু এক হাজার টাকার জরিমানা তাঁকে বইতে হয় নি। বিচারকের রায় বেরুনোর পরে দেখা গেল যে, আরেক নেটিভ ভদ্রলোক অযাচিতভাবে পাদ্রি লং এর অর্থদণ্ডের সমস্ত টাকা হাসিমুখে পরিশোধ করে দিয়েছেন।
এই নেটিভ ভদ্রলোক একজন জমিদার। নাম কালিপ্রসন্ন সিংহ। হুতোম পেঁচার নকশা দিয়েই তাঁকে চিনি আমরা।
সত্যি দারুন একটি লেখা।
নীল দর্পনে দীন বন্ধু মিত্রের আবেগ ও প্রতিবাদ মিশে একাকার হয়ে আছে।
প্যস্রীসুন্দরী দেবীর বক্তব্য আমাকে দারুন মুগ্ধ করেছে।এতো তেজ এতো জলন্ত!ভালো লাগল।
ধন্যবাদ লেখককে।
@বুনো বিড়াল,
ধন্যবাদ আপনাকে বুনো বিড়াল।
প্যারীসুন্দরী আমার কাছেও এক বিস্ময়। প্রজাদের জমির ধান পুড়িয়ে দেবার প্রতিশোধ নেবার জন্য একাধিকবার কেনির নীলকুঠিতে সশস্ত্র হামলা চালিয়েছিলেন প্যারীসুন্দরী দাসী। এরকমই এক হামলার সময়ে কেনিকে রক্ষায় নিযুক্ত একজন পুলিশ অফিসার নিহত হন। এই অপরাধে সরকার তাঁর জমিদারী ক্রোক করে নেয়।
এরকম একজন তেজী বাঙালি নারীর ইতিহাস আমাদেরকে জানতে দেওয়া হয় নি, অথচ কত আড়ম্বর করে কোথাকার কোন সুলতানা রাজিয়ার ইতিহাস পড়েছি আমরা।
@ফরিদ আহমেদ,
আপনার লেখাগুল ধারাবাহিকভাবে পড়ছি এবং আপনার সম্বন্ধে একধরণের মুগ্ধতা তৈরি হচ্ছে / বিশেষ করে আপনার গল্প যে আধারে আপনি তুলে ধরেন বাংলাভাষার হারিয়ে যাওয়া মুক্তগুল আর আপনার মেদ হীন গদ্য সৃষ্টি করে অসাধারণ সৌন্দর্যের /
@রতন কুমার সাহা রায়,
কষ্ট করে পুরোনো লেখাগুলো খুঁজে খুঁজে পড়ছেন। আপনাকে ধন্যবাদ জানানোর ভাষা আমার নেই। (F)
ডঃ পাল
আমার বিরুদ্ধে গালাগালের মিথ্যা অভিযোগের তীব্র প্রতিবাদ করতেছি । দেখুন সব কাজ সবারে দিয়ে হয় না । আপনি পদার্থবিদ্যার মেধাবি ছাত্র হতে পারেন, কিন্তু আপনার রাজনৈতিক জ্ঞান শূন্যের কোঠায় । যুক্তিহীন রাজনৈতিক বক্তব্যের পালটা যুক্তি দেয়া যায় না । আপনার যুক্তিহীন রাজনৈতিক বক্তব্য সিপিএম এর কাছে উপস্থান করুন এবং তাদের প্রতিক্রিয়া অনুধাবন করুন ।
পাকিস্তানে কমিউনিষ্ট পার্টি নিষিদ্ধ । হাসিনা সরকারে তিনজন কমিউনিষ্ট মন্ত্রী আছেন । আপনি রাজনৈতিক মাঠে সবকিছু দেখেন সাদা ও কালো হিসাবে । রাজনৈতিক মাঠে আরো যে রং আছে, তা বুঝার ক্ষমতা আপনার নাই । হ্যা, আপনার মতো আমি সবজান্তা ব্যক্তি নই । আপনাদের একজন বিশিষ্ট ও বিজ্ঞা মুক্তমনা আমাকে অজ্ঞ বলে আগেই ঘোষণা দিয়েছেন । অতএব আপনাকে পুনরাবৃত্ত করতে হবে না । তবে অজ্ঞ হলেও রাজনীতি একটু বুঝি ।
ভবঘুরে
হাতি ঘোড়া গেল তল/মশা বলে কত জল । ফেসবুকের বাহিরেও যে একটি বিশাল পৃথিবী আছে, তা আপনার লেখা পড়ে মনে হয় না । ইসলাম ব্যাশিং দেখে মনে হয় আপনি একজন কমিউনাল ব্যক্তি । যাক ইসলাম ব্যাশিং জোরসে করতে খাকেন ।
মহিউদ্দীন
@আ হা মহিউদ্দীন,
এই মহামূল্যবান তথ্যটির সূত্র কি?
সি পি পির সাথে আমার ব্যক্তিগত যোগাযোগ আছে। তারা বহাল তবিয়তেই পাকিস্তানে আছে কিন্ত কেও পাত্তা দেয় না। ওরা এখনো পাকিস্তানের সব সমস্যার জন্যে আমেরিকাকেই দোষ দেয়। ইসলামের পক্ষেই ওরা কথা বলে। এমনি লাল মসজিদে অস্ত্র রাখাও ওদের কাছে বিপ্লব! ফলে এরা ইতিহাস থেকে মুছে গেছে।
বাংলাদেশে কমিনিউস্ট পার্টি অব বাংলাদেশ একা নির্বাচনে লড়েছিল। বাকি বাম পার্টিগুলি মহাজোটের ঘোঁটে ছিল। যে তিন জন আছে -তাদের নেতা রশিদ মেনন ও কি আওয়ামী লীগের ভোট ছারা একা জেতার ক্ষমতা রাখেন? উত্তরটা সবাই জানে। তাই কথা বাড়িয়ে লাভ নেই।
ডঃ পাল
আপনার প্রবন্ধটা পড়লাম । প্রবন্ধের বক্তব্যগুলো আমাদেরকে বহুবার শুনিয়েছেন । আমি তার উত্তরও বহুবার দিয়েছি । তাই চর্বিত-চর্বন করে কোন লাভ নাই । বাংলাদেশ বা ভারত দূরের কথা, খোদ মার্কিন রাজনীতিবিদরাও ইন্টারনেট পড়ে রাজনীতি করেন না । ইন্টারনেট হলো রাজনৈতিক কর্মিদের পরস্পরে মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যম এবং বিভিন্ন বুদ্ধিজীবীর মধ্যে মতামতের আদান-প্রদানের উপায় ।
কে কাকে গ্রাস করলো বা ধর্ম নিয়ে বামদের পজিশন ঠিক বা বেঠিক তা ভবিষ্যত বলে দিবে । কমিউনিষ্ট নেতা নজিবুল্লাহর এক ভুলের জন্য আফগানিস্তানে কমিউনিষ্ট পার্টির বিলোপ্তি ঘটেছে । উপমহাদেশের বামপন্থীরা যদি ধর্মের উপর আঘাত হানে, তবে তাদেরও পটল তুলতে সময় লাগবে না । রাজনৈতিক জ্ঞানহীন এবং বাস্তব জ্ঞান বিবর্জিত ব্যক্তিরাই ধর্মের উপর আঘাত হানার কথা বলতে পারে ।
মহিউদ্দীন
@আ হা মহিউদ্দীন,
পাকিস্তানের কমিনিউস্ট পার্টির সদস্য কজন? আমি যদ্দুর জানি ওদের এখন আর কোন অস্তিত্বই নেই। পার্লামেন্টে একটাও সিট নেই। বাংলাদেশে সি পি বি একটাও সিট পায় নি। পটল ত তুলেই দিয়েছে? আর কি বাকি আছে? ভারতে পটল তোলার পক্রিয়াটা অন্য রাজ্যে বহুদিন আগেই সমাপ্ত-শেষ দুর্গ পশ্চিম বঙ্গে সবে শুরু হয়েছে। বাকী কিছু নেই।
আর না-আমার এই বক্তব্যের বা যুক্তির বিরুদ্ধে কিছু লেখা বা যুক্তি দেওয়ার ক্ষমতা বা জ্ঞান কোনটাই আপনার নেই। আমার লেখার বিরুদ্ধে একগুচ্ছ গালাগাল আর প্রলাপ ছারা, আপনার লেখাতে আর কিছুই পায় নি।
@আ হা মহিউদ্দীন,
সহি কথা বলেছেন ভাইজান। আসলে কমিউনিজম দিয়ে ধর্মকে বিলুপ্ত করা যাবে না। ধর্মের মধ্যেই নিহিত আছে ধর্ম বিলুপ্তির বীজ। ধর্ম নিয়ে যত চর্চা হবে তার বিলুপ্তির গতি ত্বরান্বিত হবে। অন্য ধর্ম নিয়ে অনেক চর্চা হয়েছে বলে তাদের বিষদাঁত ভেঙ্গে গেছে। ইসলাম নিয়ে সেটা হয়নি। তার কারন হলো- পশ্চিমারাই সেটা চায় নি। তারা চেয়েছে- মুসলমানরা যেন ইসলামের নেশায় বুদ হয়ে ঘুমিয়ে থাকে। ঘুমিয়ে আছেও। কিন্তু হঠাৎ করে লাদেনের মত কিছু উটকো ঝামেলা হাজির হওয়াতে না চাইলেও এখন পশ্চিমা দেশ গুলোকে ইসলাম নিয়ে চর্চা করতে হচ্ছে যার প্রভাব মুসলমানদের উপর এসে পড়ছে না চাইলেও। গভীর ভাবে চিন্তা করলে এটা মুসলমানদের জন্য এক বিরাট দুয়ার খুলে দিচ্ছে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার। আপনি ইউ টিউবে সার্চ করে দেখেন প্রতি নিয়ত তথাকথিত ইসলামী চিন্তা বিদদেরকে এখন নানা পন্ডিতদের সাথে তর্কে বিতর্কে লিপ্ত হতে হচ্ছে আর তাতে নাস্তা নাবুদ হচ্ছে তারা। তা হওয়ার কথাও। কারন আর যাইহোক, মোহাম্মদের বুড়া কালে এক ডজন বিয়ে, পালিত পুত্রের বধুকে বিয়ে বা তার শিশু বিয়ের তো সত্যিকার অর্থে কোন যুক্তি সঙ্গত কারন দেখানো যায় না। তথাকথিত ইসলামি পন্ডিতর গোজামিল দিয়ে যা বলে যায় মনে করার কোন কারন নেই যে তা সব মুসলমান এখন গ্রহন করে সত্য মনে করে।
ফরিদ যাযাবর ও ভবঘুরে
ফরিদ
বামপন্থী ও নাস্তিক দাবী করলেই একজনকে ইসলাম ব্যাশিং এবং মুহাম্মদের ব্যক্তিগত চরিত্র হনন করতে হবে, এমন কোন কথা বাম ডিকশনারিতে নাই । শখের নাস্তিক, যাদের আধুনিক ইতিহাস ও রাজনীতির উপর জ্ঞান নাই, তারাই এই কাজটি করে থাকেন । ব্যক্তি চরিত্র হনন ইতিহাসের বিষয়বস্তু নয় । বিশ্ব ইতিহাস, পৃষ্ঠা নং ১০০, In A.D. 600 Arabia was a land torn by warring tribes. Less than a century later, members of these tribes united to rule a mighty Arab Empire. One man – Mohammed – made these changes possible; and he did so by means of a new religion: Islam. এটা হলো ইতিহাসের মূল্যায়ন । পৃথিবীর কোন বামপন্থী সংগঠনই কোন ধর্মেরই ব্যাশিং করে না । বাংলাদেশের বামপন্থীরা ইসলাম ব্যাশিং এবং মুহাম্মদের চরিত্র হননকে নিরুৎসাহিত করেন । মানুষের বিশ্বাসকে ব্যক্তিগত ব্যাপার বলে তারা মনে করে এবং ধর্মকে রাজনীতি ও রাষ্ট্রীয় ব্যাপারে সম্পৃক্ত করাকে নিরুৎসাহিত করে । বাম পন্থীরা ধর্ম নিরাপেক্ষতায় আস্থাবান । যার অর্থ রাষ্ট্র মসজিদ, মন্দির ও গির্জার ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবে না । অনুরূপ ভাবে মসজিদ, মন্দির ও গির্জাও রাষ্ট্রীয় ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবে না ।
কালো রং হলো কয়লার বৈশিষ্ট । অনুরূপ ভাবে বামপন্থীদে্র বৈশিষ্ট হলো সাধারন মানুষের অনুভূতিকে সম্মান করা, বিশ্বাসকে ব্যক্তি পর্যায় রাখা এবং শ্রমজীবী মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য সংগ্রাম করা । হ্যা, আপনার মত শখের নাস্তিকদের সমালোচনার উর্ধ্বে বামপন্থীরা ।
জানতে চেয়েছেন, মুসলমানেরা সন্ত্রাসী কেন হয় ? সভ্যতা সকল জাগায় সমভাবে বিকাশিত হয়নি । এই না হওয়ারও কারন আছে, যা এই ক্ষুদ্র পরিসরে আলোচনা করা সম্ভব নয় । তবে মুসলমানেরা যে সব অঞ্চলে বাস করে, তুলনামূলক ভাবে সে সব অঞ্চল অনাগ্রসর । সভ্যতা যত নিম্ন স্তরের হবে, ধর্মীয় গোড়ামি তত বেশি হবে । উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ, বেলুচিস্তান ও আফগানিস্তান মূলত পাঠান অঞ্চল, যা পাকতুস্থান নামে খ্যাত । বৃটিশ কূটচালে আফগানিস্তানের সৃষ্টি । পাঠানেরা ট্রাইবাল সমাজ থেকে এখনও বেড় হয়ে আসতে পারেনি । ফলে তাদের ধর্মীয় গোড়ামি ছিল খুবই প্রকট । আফগানিস্তানের বাদশাহ দাউদকে অপসারিত করে কমিউনিষ্ট নাজিবুল্লাহ ক্ষমতা গ্রহন করেন । নাস্তিক কমিউনিষ্টদের ক্ষমতা গ্রহন পাঠানেরা মেনে নিতে পারেনি । তারা নাজিবুল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে । নাজিবুল্লাহকে সহায়তা করতে সোভিয়েত ইউনিয়ন সৈন্য প্রেরন করে । পাঠানের স্বাধীনচেতা । নিজ দেশে বিদেশি সৈন্য তারা বরদাস্ত করতে পারে না । তার উপর আবার নাস্তিক সৈন্য । তাদের মাথায় আগুন চেপে যায় । সোভিয়েতকে শায়েস্তা করার জন্য মার্কিনীরা এই সুযোগটি গ্রহন করে । পাকিস্তানের মাধ্যমে মার্কিনীরা পাঠানদেরকে অর্থ প্রদান, অস্ত্র সরবরাহ এবং প্রশিক্ষণ দিতে থাকে । তাছাড়া বিভিন্ন মুসলিম দেশ থেকে অর্থের বিনিময় মৌলবাদি সংগ্রহ করতঃ সিয়াইএ এজেন্ট লাদেনের নেতৃত্বে আফগানিস্তানে প্রেরেন করে । আফগানিস্তান থেকে সোভিয়েত ইউনিয়ানকে সরে যেতে বাধ্য করে এবং আফগান সরকারের কর্তৃত্ব গ্রহন করে । মার্কিনীদের স্বার্থ উদ্ধারের পর অর্থ ও অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে ইসলামি মৌলবাদিরা মার্কিনীদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে । এই হলো মুসলিম সন্ত্রাসীদের ইতিহাস ।
যাযাবর
Fascism বা Fascist শব্দটি প্রয়োগ করার আগে তার অবিধানিক অর্থ জেনে নেয়া প্রয়োজন ছিল । Fascism is a system of government that is marked by stringent social and economic control, a strong centralized government usually headed by a dictator. And a Fascist is an Advocate or adherent of fascism. ইসলাম হলো ধর্ম, কোন সরকারি পদ্ধতি নয় । ইসলামের নামে দুই-এক হাজার মুসলমান সন্ত্রাসী কাজে লিপ্ত হলো বলে ইসলাম ও দেড় শত কোটি মুসলমান সন্ত্রাসী হয়ে গেল বলে যারা মনে করেন, তাদের সাথে আমি একমত নই । একটা উদহারণ দেই, বিংশ শতাব্দির আরম্ভে বাংগালি উঠতি মধ্যবিত্তরা দেশ স্বাধীন করার লক্ষ্যে রাজনৈতিক সন্ত্রাসী কার্য্যকলাপ আরম্ভ করে । এই রাজনৈতিক সন্ত্রাসী কাজ করতে গিয়ে ক্ষুদিরাম শহিদ হন । সোভিয়েত বিপ্লবের পর এই রাজনৈতিক সন্ত্রাসীরা নিজেদের ভুল বুঝতে পেড়ে কমিউনিষ্ট আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়ে যান ।
ভবঘুরে
আপনাদের মত শখের নাস্তিক আমি নই এবং ইসলামকেও ডিফেন্ট করি না । আপনাদের মধ্যে যে যত বেশি ইসলামকে গালাগালি দিতে পারবে বা মুহাম্মদের চরিত্র হনন করবে, সে তত বড় নাস্তিক । ামার কাছে নাস্তিকতা হলো ব্যক্তিগত বিষয় । গালাগালি বা চরিত্র হনন বিষয়গুলো আধুনিক ইতিহাসের বিষয়বস্তু নয় বিধায় প্রতিবাদ করি । গালাগালি ও চরিত্র হননের প্রতিবাদ করায়, আপনার মনে হচ্ছে আমি ইসলামকে ডিফেন্ট করছি ।
আপনারা আমাকে বলতে বাধ্য করেছিলেন বিধায় ইসলাম ব্যাশিং এর কথা আসেছিল । এই যেমন আমাকে উত্তর দিতে বাধ্য করছেন যে Everything depends on time, place and condition. এ আমি বিশ্বাস করি কিনা । বক্তব্যটি দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ তত্ত্বের একটি সাব-তত্ত্ব । তত্ত্ব আবার আপনার কাছে ধোয়াসে যুক্তিহীন মনে হয় ।ঙ্কিন্তু আমার কাছে তত্ত্ব হলো প্রকৃতিগত । আমার বিশ্বাস বা অবিশ্বাসের উপর নির্ভরশীল নয় ।
মহিউদ্দীন
@আ হা মহিউদ্দীন,
এই বক্তব্য ঠিক-কিন্ত এটা করেই ত বাংলায় বামপন্থীরা ডুমুরের ফুল হয়ে গেল। দক্ষিন পন্থা তাদের গ্রাস করল। আগে বাংলাদেশে-এখন পশ্চিম বঙ্গেও সেই পথে।
বামেদের ধর্ম নিয়ে এই পজিশন ঠিক না। এটা বুঝতে গেলে আপনাকে অস্তিত্ববাদ এবং ফুকোর ক্ষমতার তত্ত্ব বুঝতে হবে। বাংলাতে বামেদের ধারাবাহিক ইতিহাস পড়লে, বুঝবেন কেন এই পজিশন ভুল। এই নিয়ে আমার বিস্তারিত লেখা আছে
বামেরা ধর্মীয় মৌলবাদ ঠেকাতে ব্যার্থ কেন?
অসাধারণ লেখা।এতটাই ভাল লেগেছে, ভবিষ্যতে আপনার লেখা খুঁজে পড়তে হবে নিজের তাগিদেই।
@মৌরী,
খুব একটা কষ্ট করতে হবে না আপনাকে। আমার বেশিরভাগ লেখাই মুক্তমনাতে রয়েছে। অনাগতগুলোও এখানেই থাকবে। 🙂
অবশেষে নীলদর্পন রহস্য সমাধান হল।
দীনবন্ধু মিত্র আসলে তখন ছিলেন ডাক বিভাগের উচ্চপদে আসীন। এবং তিনি ঢাকায় পোস্টেড ছিলেন-এই খবর ভুল। উনি কাজের জন্য পাটনা, কৃষ্ণনগর এবং ঢাকা-এই তিন শহরেই কিছু মাস করে কাটাতেন। কৃষ্ণনগরে বসেই লিখেছিলেন। এবং এখানে প্রকাশ করার আগেই তাকে কাজের জন্যে ঢাকাতে চলে যেতে হল। ফলে ঢাকাতে জনৈক ভৌমিকের ছাপাখানা থেকে বইটি বেড়ল। এবং সেখানে অভিনিত ও হল।
নীল দর্পন বাদে তার বাকী প্রায় সব বই কৃষ্ণ নগর থেকেই বেড়িয়েছিল। এবং তিনি কৃষ্ণ নগরে নিজেই একটি প্রেস খুলেছিলেন। এখানে যে বাড়িটিতে [ডাক বাংলো] তিনি থাকতেন, সেটি সংরক্ষিত এবং তার সামনের রাস্তাটি দীনবন্ধু মিত্র লেন নামে পরিচিত। নীল দর্পনের প্রুফটিও কৃষ্ণনগরে সংরক্ষিত আছে। মানে প্রকাশনার পরপরই তাকে আবার কৃষ্ণনগরে ফিরে আসতে হয়েছিল এবং সেখানেই পান্ডুলিপিটি তার ছাপাখানেই রেখে যান।
নীলকর সাহেবদের সাথে গভর্নর জেনারেলদের বিরোধ ছিল, এবং যার জন্যে দীনবন্ধু মিত্রকে সরকারের নেক নজরে পড়তে হয় নি। আসামের কাছার জেলাতে ডাক ব্যাবস্থা উদ্ধার করার জন্যে বৃটিশদের কাছ থেকে তিনি রায় বাহাদুর উপাধিও পেয়েছেন। নীলের চাষের বিরুদ্ধেই রায় দিয়েছিল বৃটেনের প্রিভি কাউন্সিল। অন্যান্য কলোনিস্টদের সাথে বৃটিশদের পার্থক্য, এই ঘটনা থেকে পরিস্কার।
@বিপ্লব পাল,
সাবাশ! এই না হলে কী আর বিপ্লব!! (Y)
@বিপ্লব পাল,
একটি চমৎকার প্রবন্ধের পাশাপাশি আপনার মূল্যবান তথ্য সমৃদ্ধ মন্তব্য আমাদের বাড়তি পাওয়া ৷ আপনি থাকলে কেমন করে যেন অনেক কিছুই জানা হয়ে যায় ৷
বিষয় ভিত্তিক বিপ্লব দার প্রশ্নগুলো ঠিকই আছে, আরেকটু গভীরে প্রবেশ করা গেল। কিন্তু মহিউদ্দীন সাহেব অপ্রাসঙ্গীকভাবে ইসলাম ব্যাশিং, মুসলিম ব্যাশিং নিয়ে এসে সব গোলমাল করে দিলেন। বহু বছরের দুঃখ, তিক্ত অভিজ্ঞতা অনেক কথা বলার ছিল সে দিকে যাওয়ার প্রয়োজন নেই, যাযাবর সার কথা বলে দিয়েছেন।
লেখাটির সব চেয়ে বড় বিষ্ময় মাইকেল, অন্তত আমার কাছে। ছোট বেলায় যে নীল দর্পণ পড়েছিলাম, সময়ের ধুলোবালিতে মলিন স্মৃতির পাতাগুলো মেলে, তার নাম কোথাও দেখেছি বলে মনে পড়েনা। মীর মোশাররাফ হুসেনকে জীবনের দ্বিতীয় পর্বে অনুসন্ধিৎসু চোখে যখন বিষাদ সিন্ধুতে দেখলাম, তখন থেকে তার উপর আমার শ্রদ্ধা হ্রাস পেতে থাকে, দীন বন্ধুর উপর তার মন্তব্য পড়ে আজ যেন তা সম্পূর্ণই উবে গেল।
নিঃসন্দেহে এ আরেকটা ফরিদিয় ক্লাসিক লেখা। (Y) (F)
@আকাশ মালিক,
মাইকেলের নাম দেখারতো কথা নয় আকাশ ভাই। ইংরেজি অনুবাদের পুরো বিষয়টাতেই তিনি ছিলেন নেপথ্যে। নীল দর্পণের এই ইংরেজি অনুবাদটি যে কতখানি কাজে লেগেছিল, সেটা আমরা অনেকেই আজকে জানি না। এটি হাত ঘুরে ঘুরে এক পর্যায়ে বৃটিশ পার্লামেন্টে পর্যন্তও উঠেছিল।
বাংলা সাহিত্যের ছাত্র ছিলাম, নীল দর্পন ও পাদ্রী লং সাহেবের ইতিহাসও জানা, তবু এ লেখাটি অসাধারন ভালো লাগলো ৷ লেখককে আন্তরিক ধন্যবাদ ৷ ভবিষ্যতে কালী প্রসন্ন সিংহকে নিয়ে কেউ লিখলে খুব ভালো হয় ৷ কালী প্রসন্ন সিংহ অসাধারন এক ব্যক্তিত্ব ছিলেন ৷
আমি কিন্তু আজও জানি না , নীল দিয়ে কি করা হতো । এটা কি রং করার কোন উপাদান ছিল নাকি?
@আ হা মহিউদ্দীন,
আপনি ওষুধের দোকানে আলু পটল বেঁচার ধান্ধা কেন শুরু করলেন বুঝলাম না। এখানে কথা হচ্ছে নীলকরদের অত্যাচার ও তার বিরুদ্ধে সংঘটিত প্রতিবাদ নিয়ে, আপনি আমদানী করলেন ইসলাম ব্যাশিং।
উপরোক্ত বক্তব্য আপনি উল্লেখ করলেন। সত্যিই কি আপনি বিষয়টি মনে প্রানে বিশ্বাস করেন ? মনে তো হয় না। হলে আবার ইসলাম কে পরোক্ষভাবে ডিফেন্ড করেন কি ভাবে ? ইসলাম সেটা মধ্যযুগে সঠিক ছিল, এখন সেটা অচল – আপনার কথায় তো সেটাই বুঝায়। এ সত্য কথাটা সোজাভাবে বলে দিলেই তো লেঠা চুকে যায়। সেটা তো বলতে শুনি না। কারন কি ?
@ভবঘুরে,
নীল কাপড় রং করার উপাদান।
লাভজনক বলে নীলকর সাহেবরা চাষীদের বাধ্য করত নীল চাষে।
তখন বাংলাদেশের অনেক জেলায় নীল চাষ হত,
নীলফামারী জেলার নামকরণ হয়েছে নীল থেকে।
আমার দাদাবাড়ী রংপুরের গ্রামে নীলকরদের কুঠিবাড়ী ছিল।
নীলকরদের নীল তৈরী করার কড়াই ও অন্যান্য জিনিষ দেখেছেন
বলে আমার আব্বার মুখে গল্প শুনেছি।
ফরিদ
বাজারে হরেক রকম আম পাওয়া যায়, যার কোনটা মিষ্টি, কোনটা কম মিষ্টি, আবার কোনটা টক । অনুরূপ ভাবে সমাজে হরেক রকম বাদিওয়ালা পাওয়া যায় । যেমন কোন কোন বাদিওয়ালারা গ্রামগঞ্জে শ্রেনী শত্রু খতম বা চাঁদা আদায় করে সাধারণ মানুষের বিরাগ ভাজন হচ্ছে, আবার কেউ কেউ ওয়েব সাইট খুলে সাধারন অশিক্ষিত মানুষকে ইসলাম ধর্মীয় সুরা পান করাচ্ছেন এবং আবার এই গ্রুপের বিপরীতে কেউ কেউ চৌদ্দশত বছর পূর্বের কোরাণ, ইসলাম, মুহাম্মদের চৌদ্দ পুরুষ উদ্ধার করে মুসসলমানদেরকে সন্ত্রাসী আখ্যায়িত করে চলছেন । আলোচ্য এই ইসলাম ব্যাশিংরা সময়ের ব্যবধানে ন্যায় যে অন্যায় হয় বা সত্য যে মিথ্যা হয়, সেই বোধটুকু তারা হারিয়ে ফেলছেন । সকল ধর্মের অসারতা নিয়ে মুক্তমনায় কোন আলোচনা হয় না । সেখানে ধর্ম সম্পর্কীয় যে সকল প্রবন্ধ পোষ্ট হয় তার ৯৯% ইসলাম ব্যাশিং ।
মুক্তিমনায় আমার ভূমিকা অতীতে যা ছিল বর্তমানে তাই আছে । তবে তারুন্যের কারনে কখনো কখনো কারও কাছে নেতিবাচক বা ইতিবাচক মনে হতে পারে । তাই নেতিবাচক/ইতিবাচক মনে হওয়াটা উক্ত ব্যক্তিটির, আমার বিষয় নয় । আলোচনায় দ্বন্দ্ব জ্ঞানের গভীরতা বৃদ্ধি করে । তবে সেই দ্বন্দ্বের ঝাল গালাগালি বা অশোভন আচরণ অথবা ব্যক্তি পর্যায় নিয়ে যাওয়া বাঞ্চনীয় নয় । আবার যে আচরণ বন্ধুদের সাথে করা যায়, তা অপরিচিত বা বয়ষ্ক লোকের সাথে করা যায় না । গ্রামীন একটি কথা আছে “ স্থান, কাল ও পাত্র ভেদে কথা বল”, যা দর্শনশাস্ত্রে বলে Everything depends on time, place and condition. এই ব্যক্যটি সবার মনে রাখা প্রয়োজন বলে মনে করি ।
কোন মানুষই সমাজ বহির্ভূত নয় । আমি নাস্তিক হতে পারি । কিন্তু আমার পিতা-মাতা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বন্ধবরা নাস্তিক নয় । তাদেরকে নিয়েই আমার সমাজ । এই সামাজিক কাঠোমায় ধর্ম একটি অবিচ্ছিদ্য অংশ । এই অবিচ্ছেদ্য অংশকে ব্যক্তি পর্যায় কারো কাছে অপ্রয়োজনীয় মনে হতে পারে, তাই বলে তাকে ঘৃণা করা বা গালাগালি করা প্রগতিশীলতার লক্ষণ নয় ।
সামগ্রিক ভাবে সভ্যতা বা প্রগতির চাকা উলটো দিকে ঘুরানো সম্ভব নয় । অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বৃদ্ধির মাধ্যমে সভ্যতার অগ্রগতি ঘটে । প্রচীনকালে সভ্যতার চাকা সচল ও সম্মু্খমূখী রাখার জন্যে বিভিন্ন ধর্মের আগমন ঘটে । কালের প্রবহে ধর্ম আজ পরিত্যক্ত । তাই বলছিলাম Everything depends on time, place and condition । আরবের গণবিস্ফোরণ ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য নয়, তারা সংগ্রাম করছে অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য । ১৯৭১ সালে বাংগালিরা ইসলামিক রাষ্ট্র পাকিস্তান ভেঙ্গেছে অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য । তাই সংগ্রামের মাধ্যমে অর্থনৈতিক মুক্তি যত বেশি অর্জিত হবে, তত বেশি ধর্মের বা ইসলামের কার্য্যকারিতা হ্রাস পাবে । তাই প্রগতিশীলেরা সংগ্রাম করে অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য । ইসলামী সন্ত্রাস পুজিবাদের সৃষ্টি, তাই এর জন্য ইসলামকে দায়ী করাটা বিচক্ষণতার পরিচিয় বহন করে না ।
@আ হা মহিউদ্দীন,
ইসলাম ব্যাশিং শব্দ যারা ব্যবহার করে তারা ইসলামের ফ্যাসিস্ট আদর্শবাদকে প্রশ্রয় দেয়। ইসলাম ব্যাশিং মানে ফ্যাসিস্ট ইসলামী আদর্শবাদের সমালোচনা। যারা মহিউদ্দিন সাহেবের চোখে ইসলাম ব্যাশার তাদেরো মাতা পিতা ধর্মভীরু, তাই বলে তারা কি তাদের মাতা পিতাকে ব্যাশিং করছে? ইসলাম ব্যাশিং মানে মুসলীম ব্যাশিং নয় এটা যেন বুঝেও না বুঝার ভান করা। আরেকটা কথা চর্বিত চোষ্যের মত শুনি, ভাল মন্দ আপেক্ষিক, সময়বদ্ধ। অর্থাৎ ইসলামের সমালোচনা এখন করা যাবে না কারণ তা তখনকার সময়ের বিচারে সঠিক ছিল।এই যুক্তি দিয়ে এখনকার সব মন্দকেও ডিফেন্ড করা যায়। তাহলে মহিহুদ্দিন সাহেবের চোখে বর্তমানে কোন মন্দ থাকতে পারে না। সেটা মন্দ হবার জন্য আরো কয়েকশ বছর অপেক্ষা করতে হবে। সবই সময় নির্ভর বলা একটা হঠকারী যুক্তি। মহিউদ্দিন সাহেব মইনে করেন ইসলামী সন্ত্রাস পুজিবাদের সৃষ্টি। অদ্ভুত যুক্তি। জিহাদের ডাক ইসলামের গোড়া থেকেই আছে। আর ইসলাম নিজেও পুজিবাদের সমর্থক। মুহম্মদ আজান না শুনলে গ্রামের পর গ্রাম জালিয়ে পোড়ান, ইসলামের মিমন্ত্রন উপেক্ষা করলে সশস্ত্র আক্রমণ, নিরস্ত্র কাফেলার উপর ঝাপিয়ে পড়ে হত্যা লুন্ঠন করা, এগুলি সন্ত্রাস নয়? এগুলো সবই সিরাতে উল্লেখ করা আছে।
@আ হা মহিউদ্দীন,
কয়লার ময়লা ধুলেও যায় না, এই প্রবাদবাক্যের স্বার্থক প্রমাণ দেখালেন আপনি। আপনার সংযত আচরণের একটু প্রশংসা করেছিলাম, কিন্তু সেটাকে খুব বেশিক্ষণ ধরে রাখার তর সইলো না আপনার। আপনার এই জগাখিচুড়িমার্কা মন্তব্যের পরে বিশাল এক উত্তর দিতে পারতাম, কিন্তু দিচ্ছি না, রুচিতে বাধছে বলে। তবে, অল্প দুই একটা কথা না বললেই নয়, তাই বলছি। আপনি দাবী করেন যে, আপনি একজন নাস্তিক, বামপন্থী, কিন্তু সেই আপনিই আপনার ইসলামের প্রতি প্রেমকে চাপা দিয়ে রাখতে পারেন না। আমার কথা হচ্ছে যে, আপনি যদি ইসলামের অনুসারীই হয়ে থাকেন, সেটা প্রকাশ্যে বলে দিলেইতো হয়। খামোখা মুক্তমনা ইসলাম ব্যাশিং করে, এই একই ঘ্যান ঘ্যান বছরের পর বছর ধরে না করলেও চলে।
আপনি যে চোখ বন্ধ করে মুক্তমনা পড়েন, সেটা আপনার এই মন্তব্য থেকেই বোঝা যায়। হিন্দু ধর্মের তীব্র সমালোচনা করে অসংখ্য প্রবন্ধ এই মুক্তমনাতেই আছে। মুক্তমনায় ইসলাম নিয়ে বেশি লেখা আসার পিছনে অসংখ্যবার এই বলে যুক্তি দেওয়া হয়েছে যে, এখানে যারা লেখালেখি করেন এদের বেশিরভাগই মুসলিম পরিবার থেকে এসেছেন, স্বাভাবিকভাবেই তাঁদের লেখাতে ইসলাম উঠে আসে বেশি। আপনার যদি মনে হয় যে, সব ধর্মকে সমানভাবে ধরা হচ্ছে না, সেক্ষেত্রে আপনি এগিয়ে আসতে পারেন। অন্য ধর্মগুলোকে ইচ্ছেমত ব্যাশিং করে দুই একটা প্রবন্ধ লিখুন, দেখুন ঠিকই ছাপবো আমরা। সেক্ষেত্রে আর ইসলাম ব্যাশিং নিরানব্বই শতাংশ থাকবে না, কমে আসবে। যদি না ছাপি, তারপর না হয় অভিযোগনামা নিয়ে আসবেন, এর আগে নয়।
এখানে মুক্তমনায় সবাই ধর্মের বিপক্ষে, সাধারণ ধর্মপালনকারীদের বিপক্ষে নয়। গালাগালি যা করা হয়, তার পুরোটা যায় ধর্ম এবং ধর্মোন্মাদদের উপর দিয়ে, ধর্মের সাধারণ অনুসারীদের উপর দিয়ে নয়।
আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে যে, ধর্মকে ভালবাসা আর তার সাথে গলাগলি করাটা প্রগতিশীলতার লক্ষণ। গুড! এখন থেকে না হয় সেটাই করবো, প্রগতিশীলতার নতুন সংজ্ঞায় নিজেকে মাপমত এবং খাপমত বসানোর জন্য।
ভালই বলেছেন। ইসলামি সন্ত্রাসবাদীরা বোমা মেরে মেরে নিরীহ মানুষজনকে হত্যা করুক, আর আমরা তাদের বদলে পুঁজিবাদকে গাল দিয়ে বিচক্ষণতার পরিচয় দেই।
আমার একটা কৌতুহল নিবৃত করে দিয়ে গেলে খুব ভাল হয়। পুঁজিবাদের দ্বারা শুধু ইসলামি সন্ত্রাসী তৈরি হয় কেন? কেন অন্য ধর্মের লোকেরা সন্ত্রাসবাদী হয় না তেমন, ইসলামিস্টদের তুলনায়? এর কি কোনো সামাজিক, ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং দ্বান্দ্বিক তত্ত্ব জানা আছে আপনার?
দুর্দান্ত একটা লেখা, জানা ঘটনাই এমন চমৎকারভাবে বললেন।।। অর্ধেন্দুশেখর, মাইকেল আর কালীপ্রসন্ন সিংহের জায়গাগুলো দারুণ হয়েছে
আপনাকে (F) (F) (F)
@লীনা রহমান,
ধন্যবাদ লীনা।
ভাইয়া, এই লেখাটা আসার পর থেকে বেশ কয়েকবার লেখাটা খুলেও শেষ করতে পারিনি একবার ও। এখন পারলাম অবশেষে। শেষ করে মনে হল, পড়ার জন্য এতোবার খোলা সার্থক! অসাধারণ একটা লেখা। সাধে কি আর আপনার লেখা দেখলেই ঝাপিয়ে পড়ি! বাংলা সাহিত্যের নায়কদের গল্প এমন নাটকীয় ভাবে উপস্থাপন করলেন। ইতিহাসের উপস্থাপনায় একটা নতুন মাত্রা পেলাম। খুব লোভ লাগছে এমন করে একটা লেখা যদি লিখতে পারতাম আমি!
(F) :-[
@নীল রোদ্দুর,
এই রে! প্রশংসার তোড়েতো এখন পাখা ছাড়াই আকাশে উড়ছি। :))
দীনবন্ধু মিত্রের নীলদর্পন নীলচাষ বিরোধী নাটক হিসেবে বিশেষ পরিচিত। এর সাথে এত সমৃদ্ধ ইতিহাস থেকে বঞ্চিত ছিলাম। ফরিদ সাহেব যেভাবে ইতিহাস বের করে এনেছেন তার প্রসংসা না করে উপায় নেই। রেভারেন্ড লংএর প্রতিও শ্রদ্ধা জানাই।
My hat is off to this great lady –>
এই মহীয়শী মহিলার উপর কোন লেখাই পাই নি কেন? সুন্দরপুরটা কোথায়?
@নৃপেন্দ্র সরকার,
মীর মশাররফ হোসেনের ‘উদাসীন পথিকের মনের কথা’ উপাখ্যান গড়ে উঠেছে নীলকর কেনি এবং প্যারীসুন্দরীর দ্বন্দকে কেন্দ্র করে। এছাড়া রাইচরণ দাসও প্যারীসুন্দরীকে নিয়ে একটা বই লিখেছিলেন ‘মনের কথা অনেক কথা’ নামে।
সুন্দরপুর বা সদরপুর কুষ্টিয়ায়।
লেখাটা ভালো লাগলো। বিশেষ করে ভালো লাগলো এই জায়গা তিনটি-
বৃটিশ ইন্ডিয়ার চেনা চেনা চরিত্রওগুলোকে এক অজানা নাটকের চরিত্র হিসেবে নাটকীয়ভাবে ইন্ট্রোডিউসড হতে দেখে পুলকিত হলাম। মীর মোশারফ হোসেনও নিঃসন্দেহে ছিলো বৃটিশ ইন্ডিয়ার আরেকটি হীরকখন্ড; নতুবা বেহেস্তি কুঞ্জি, বোখারী শরীফ, কোরান শরীফ, কাছাছুল আম্বিয়া প্রভৃতি কিতাবাদি লেখার জন্য মাথায় যতোটুকু ছাগলের নাদি থাকা লাগে তিনি ব্যতীত তা অন্য খুব বেশী বাঙ্গালীর মাথায় ছিলো না বলেই আমার বিশ্বাস! মাইকেল মধুসুদন আমার খুব প্রিয় একজন ব্যক্তিত্ব; এতোটাই প্রিয় যে পরিবার পরিজনদের কাছ থেকে মাঝে মাঝে আমাকে শুনতে হয় ‘মাইকেল মধুসুদনের মতো হইস না’ জাতীয় ভাষণ! ফাইনালি, লেখা ভালো লাগলো।
@আল্লাচালাইনা,
রবির মত গুডি বয় আদর্শ হিসাবে থাকাতে কোন পরিবারইতো চাইবে যে তাদের ছেলে মাইকেল বা নজরুল হোক। 🙂
মাইকেল আমারও প্রিয় ব্যক্তিত্ব। শুধুমাত্র তাঁর বর্ণিল জীবনের জন্যই তা নয়। বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে মেধাবী এবং আধুনিক একজন কবি হিসাবে তাঁকে আমি মনে করি। মাইকেলের আগে বাংলা কবিতা পড়ে ছিল মধ্যযুগে। কবিতা ছিল না আসলে সেগুলো, ছিল পদ্য। মাইকেল এক হেঁচকা টানে মধ্যযুগের এই পদ্যাশ্রয়ী কবিতাকে টেনে নিয়ে এসেছিলেন আধুনিক যুগে। বাংলা আধুনিক কবিতার আদিমপুরুষ তিনি। অথচ মজার বিষয় হচ্ছে যে, এত বছর কেটে যাবার পরেও, আধুনিক কবিতার জগতে তিনিই আধুনিকতম। তার আধুনিকতাকে অতিক্রম করতে পারে নি আর কোনো আধুনিক কবি-ই।
সুনিপুনভাবে লেখা “বাংলার নবজাগরনের বরপুত্রদের” ইতিহাস পড়ে দারুন আরাম পেয়েছি।
(F)
@মাহবুব সাঈদ মামুন,
পড়ার জন্য এবং মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ মামুন ভাই। আশা করি শারীরিকভাবে ভাল আছেন।
@ফরিদ আহমেদ,
আমি ভালো আছি,ফরিদ ভাই।
আশা করি আপনি সব কিছু নিয়ে ভালো আছেন।
ধন্যবাদ।
আবা্র মেলাতে পারলাম না। আমি যদ্দুর জানি অনুবাদকের আয়ে তার বিলাসবহুল জীবন চলছিল না-তাই আইন ব্যবসাতে নামার নিমিত্ত তিনি অনুবাদকের চাকরি ছেরে ছিলেন।
প্রায় ২৫ বছর আগে পড়া কবির জীবনী স্মৃতি থেকে মনে পড়ল-স্মৃতি বিট্রে করতে পারে। ফরিদ ভাই এই টুকরো ইতিহাসের রেফারেন্স দিলে ভাল হয়।
@বিপ্লব পাল,
তুমি মিয়া একটা ঝামেলাবাজ পাবলিক। মন্তব্যের লিস্টে তোমার নাম দেইখাই বুঝছি যে, কিছু একটা ঝামেলা পাকাইছো এইখানে। 🙁
এই অংশটুকু আছে দেজ থেকে প্রকাশিত আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের লেখা ‘নিষিদ্ধ বই’ গ্রন্থে। বঙ্কিমকে উদ্ধৃত করে তিনি এই তথ্য দিয়েছেন।
@ফরিদ আহমেদ,
না। আমার স্মৃতি বিট্রে করে নি। এটাই ঠিক-দুবছর অনুবাদকের (১৮৭০-৭২) কাজ করার পর, উনি আরো উপার্জনের জন্যে হাইকোর্টের অনুবাদকের চাকরি ছেরে ছিলেন। এই যে পাইছি!
http://www.banglapedia.org/httpdocs/HT/D_0316.HTM
Madhusudan returned to England from Versailles in 1865. In 1866 he became a barrister. He returned to Kolkata on 5 January 1867 and started practising law. But his practice did not pick up and, in June 1870, he was obliged to give up law to work as a translator at the High Court on a monthly salary of Rs 1000. After two years he left this job and returned to his law practice, becoming quite successful. However, his habit of reckless spending ran up debts
ইতিহাস আর তথ্যের অপূর্ব সমাবেশ ঘটেছে লেখাটাতে।
আসলেই ঐ সময়টা ছিল বাঙালি রেঁনেসার কাল!
দুঃখজনক ভাবে বাঙালি মুসলিমরা পিছিয়ে ছিল।
শিক্ষায় ও অর্থে দূর্বল থাকার জন্য!
পথটা এরাই দেখিয়েছিলেন তাদের মেধা ও দূরদর্শিতা দিয়ে!
তখন ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে বাঙালিরা অনেক এগিয়েই ছিল!
অভিনন্দন!
@লাইজু নাহার,
ধন্যবাদ আপনাকে।
ঊনিশ শতকের বাংলার নবজাগরণে মুসলমানরা পিছিয়ে ছিল বা বলা চলে যে তাদের কোনো অবদানই ছিল না। এটা এক অর্থে দুঃখজনকই বটে। তবে, বাংলায় আরো আগে ষোড়ক শতকে আরেকটি জাগরণ ঘটেছিল, সেটার নেতৃত্বে কিন্তু বাঙালি মুসলমানেরাই ছিল।
@ফরিদ আহমেদ,
তা কি ঈসা খাঁর নেতৃত্বে হয়েছিল?
এ বিষয়ে তেমন বিস্তারিত পড়া হয়নি।
@লাইজু নাহার,
নাহ। এক ঝাঁক বাঙালি মুসলমান কবির নেতৃত্বে ঘটেছিল।
শুধু ষোড়শ শতক বললে ভুল হবে, এটা বিস্তৃত ছিল ষোড়শ এবং সপ্তদশ শতক জুড়ে। পাকিস্তানিরা বাংলাকে হিন্দুয়ানী ভাষা বলে মনে করতো, অথচ তারা জানতো না যে, বাংলা ভাষা এবং সাহিত্যের বিকাশ ঘটেছে মুসলমানদের হাতে। বাংলায় যখন মুসলমান রাজত্বের শুরু হয়, তখন হিন্দুদের কাছে সংস্কৃতি ছিল দেবভাষা, ফলে বাংলাকে বাদ দিয়ে সংস্কৃতিকে নিয়েই মেতে ছিল তারা। অন্যদিকে, মুসলমান শাসকদের প্রশ্রয়ে বাঙালি মুসলমানেরা প্রথম মানবিক-রসাশ্রিত সাহিত্যধারা প্রবর্তন করে। এর মূল প্রভাবটা এসেছে ইরানি ভাষা ও সংস্কৃতির সাথে পরিচয়ের ফলে। যদিও এই পরিচয়টা হিন্দু-মুসলমান দুপক্ষের সাথেই ঘটেছিল। কিন্তু প্রভাবটা ছিল তারতম্যময়। অপেক্ষাকৃত সংস্কারমুক্ত একেশ্বরবাদী মুসলমানদের পক্ষে ইরানি সংস্কৃতিকে গ্রহণ করাটা যতখানি সহজ ছিল, সংস্কারাচ্ছন্ন হিন্দুদের পক্ষে তা সম্ভব ছিল না। তাই, মুসলমানেরা যখন বিশুদ্ধ এবং মানবিক সাহিত্য রচনা করেছেন, তখন বাংলার হিন্দুরা দেবতা ও কল্পজগতের মোহ ত্যাগ করতে পারে নি। সে কারণে, ধর্মীয় মহাত্মবাচক সাহিত্যই রচিত হয়েছে তাদের হাতে।
সুলতানী আমলে ষোড়শ ও সপ্তদশ শতাব্দীতে মুসলমানদের এই সাহিত্য চর্চা বেগবান হয়ে উঠে। এতে যারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন তাঁরা হচ্ছেন, শাহ মুহম্মদ সগীর, দৌলত উজির বাহরাম খান, মুহম্মদ কবীর, শাহবারিদ খান, দোনা গাজী, মাগন ঠাকুর, আব্দুল হাকিম, সৈয়দ সুলতান প্রমুখ।
আমার জানা ইতিহাসের সাথে মিলিল না। আমি যদ্দুর জানি উনি তখন কৃষ্ণনগরের কর্মরত এবং বেনামে মাত্র ৩ দিনে পুরো নাটকটা লিখেছিলেন। নীলের চাষ যেহেতু এই নদীয়াতেই হত-আমার কাছে এটাই বিশ্বাসযোগ্য। আমি একজন গবেষককে চিনি যিনি এই ব্যাপারে অনেক কাজ করেছেন। লেখাটা তাকে পাঠালাম ইতিহাস মেলানোর জন্য। তারপরে লিখব।
@বিপ্লব পাল,
নীল দর্পণ যে ঢাকা থেকে প্রকাশিত এটা বাংলাদেশের একটা বাচ্চা ছেলেও জানে। তিনি ঢাকায় কর্মরত ছিলেন বলেই নাটকটি ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয়েছিল।
এনিওয়ে, তিনি যে ঢাকায় কাজ করতেন তার প্রমাণ রয়েছে উইকিতে।
Around 1846, he was admitted to the free school run by James Long. Dinabandhu was a bright student and won a number of scholarships. In 1850, he enrolled at Hindu College and was awarded scholarships for academic excellence. However, he did not appear in his last examination, and, instead, started working as a postmaster at Patna (1855). He served in various posts in the Postal Department in Nadia, Dhaka and Orissa.
এছাড়া নাটকটি যে ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয়েছে সেটির উল্লেখও আছে উইকিতে।
Mitra stormed the social and the literary circle of Bengal by his most notable play Nildarpan in the year 1860. It was published from Dhaka and soon after its publication it ignited a major argument in the newspapers.
তবে নাটকটি তিনি ঢাকায় বসে লিখেছেন, নাকি নদীয়া, কৃষ্ণনগরে বসে লিখেছেন, সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত কিছু জানি না।
@ফরিদ আহমেদ,
ঢাকা থেকে প্রকাশিত -এই তথ্যে ভুল নেই। কিন্ত তখন কি তিনি ঢাকাতে কাজ করতেন? এই ব্যাপারটা নিয়েই আমার সন্দেহ আছে। জেমস লং এর কাছে বই টি ডাকযোগে তিনি ঢাকা থেকেই পাঠিয়েছিলেন। তাতেও সন্দেহ ঘুচল না। কারন নীল দর্পনের মূল ঘটনা-সেই নারী হরনের ব্যাপারটা কৃষ্ণনগরের ঘটা সদ্য একটি ঘটনার সাথে হুবহু মিলে যায়- একমাত্র সমাধান তিনি কৃষ্ণনগরে বসে লিখেছেন এবং ঢাকাতে বদলী হয়ে আসা মাত্রই বইটা প্রকাশ করে দেন। কালকে সব জানতে পারব।
@বিপ্লব পাল,
তোমার এই ধারণা যথেষ্ট যৌক্তিক। এরকমটা ঘটতেই পারে। তোমার সোর্সের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের অপেক্ষায় রইলাম
অর্ধেন্দুশেখর মুস্তাফি আসলেই খুব বড় মাপের অভিনেতা ছিলেন। প্রচন্ডভাবে পান করতেন। স্বাধীনচেতা ছিলেন। নিজে আলাদা করে থিয়েটারও খুলেছিলেন মনের তাগিদে।
বাঙালী আসলে কখনোই খুব একটা সাহসী নয়। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে কেউ যদি প্রতিবাদ করে তাহলে তাকে সাহসী বলা যায় না। রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ, এরা ছিলেন ভাবের পুরুষ। এদের মত সবাই হলে ভারতবর্ষ কোনদিনই স্বাধীন হত না। দুজনেই ছিলেন আনখশির কুসংস্করাচ্ছান্ন।
চমৎকার লাগল ফরিদ ভাইয়ের লেখা বরাবরের মতই।
শুভেচ্ছা।
@সাইফুল ইসলাম,
গান্ধী সুনিশ্চিত ভাবে এই উভয়ই ব্যক্তির চেয়েই বেশি কুসংস্করাচ্ছন্ন ছিলেন। স্বাধীনতা ও কুসংস্কারের সম্পর্কটা ঠিক ধরতে পারলাম না।
@রৌরব,
অস্বীকার করার উপায় নেই রবীন্দ্রনাথের ভেতর ভয়ঙ্কর ভয়ঙ্কর রকম কুসংস্কারাচ্ছন্নতা ছিলো; গান্ধীরও ছিলো। তবে জীবনানন্দর ভেতর এমন কোন কুসংস্কারাচ্ছন্নতা ছাপ আমি পাইনি। আমি জীবনানন্দের হাফেজ না যদিও, তবে তার নির্বাচিত কবিতাগুচ্ছ আর আট-দশটা ছোটগল্পের একটা ছোট্ট সঙ্কলন পড়েছি; সেখানে কুসংস্কারাচ্ছন্নতার কোন ছাপ দেখেছি বলে মনে পড়েনা। তারপরও জানিনা প্রশ্ন থেকে যায় জীবনানন্দ যদি কুসংস্কারাচ্ছন্ন হয়, তবে বাদবাকী আর কয়ডা বাঙ্গাল সুসংস্কারাচ্ছন্ন?
@আল্লাচালাইনা,
ইয়ে, কথা হচ্ছিল বিবেকানন্দকে নিয়ে 🙂 । অবশ্য, বিবেকানন্দও কিছু কোবতে লিখেছিলেন, কাজেই যাহা বিবেকানন্দ, তাহাই জীবনানন্দ।
রবীন্দ্রনাথের মধ্যে কুসংস্কার ছিল, কিন্তু “জাতিভেদপ্রথার কারণে ভূমিকম্প হয়”, এই গান্ধীবাদী কুসংস্কারকে টেক্কা দেবার মত কিছু করেছেন বলে মনে হয় না।
@রৌরব, দুঃখিত, ম্যান ইজ মর্টাল, মাত্রায় ভুল করে! 🙁 জীবনানন্দ ছাড়াও আনন্দমঠের আরও যে একজন সদস্য আছে খেয়ালই ছিলো না। বিবেকানন্দ সম্পর্কে বিষদ জানি না তাই মন্তব্য করতে পারছি না।
@আল্লাচালাইনা,
😀 :lotpot:
@রৌরব, হাসেন কেনো? আসলেই কিন্তু আনন্দমঠের সবগুলো সদস্যদের নাম শেষ হতো ‘আনন্দ’ সাফিক্স সহযোগে, যেমন- শিবানন্দ, জীবানন্দ, সত্যানন্দ, পাগানন্দ, ছাগানন্দ ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি। নামে তাদের মধ্যে যেইরকম মিল, কামেও ঠিক তেমনিই- সকলেই তারা ছাগু, হিন্দু ছাগু। তবে, একটা ভালো কাজ তারা করেছিলো বটে- মুছল্মানদের একটা আধ্যাতিক মাইর দিয়েছিলো। মাইর মানে পুরাই আধ্যাতিক মাইর, যেই মাইর খেয়ে মুছল্মানদের খতনা করা পুরুষাঙ্গের মাথায় নতুন করে চামড়া গজিয়ে যায় জৈববিজ্ঞানের সকল নিয়ম-কানুনকে বৃদ্ধাঙুলি প্রদর্শন পুর্বক, ঈমান নেতিয়ে পড়ে তাদের! জীবনানন্দ নামে আসলেই বোধহয় একজন সদস্য ছিলো আনন্দমঠের, সিরিয়াসলি। স্পষ্ট মনে করতে পারছিনা তবে জীবনানন্দ অথবা বিবেকানন্দ এই দুইটির যে কোন একটি নামে আসলেই ছিলো খুব সম্ভবত!
@রৌরব,
আমি আসলে এই দুজনের দুটো বৈশিষ্টের কথা বললাম আর কী। স্বাধীনতার সাথে কি কুসংস্কারের সম্পর্কে আছে নাকি তা বলতে পারব না। তবে হ্যা, আপনার কথা ঠিক গান্ধীর কুসংস্কার বেশ দূর্গন্ধ ছড়াত বৈকি। 🙂
@সাইফুল ইসলাম,
এই ভদ্রলোককে নিয়ে একটা লেখা মুক্তমনায় দিয়ে দিন। আপনার গদ্যের হাত কিন্তু চমৎকার। কবিতার দিকে বেশি মনোযোগ দিতে গিয়ে ওটাকে অবহেলা করবেন না যেন।
(Y)
লেখার এই স্টাইলটা আমি অনুকরণ করার চেষ্টা করছি।
@আসরাফ,
আমি নিজেও হয়তো কারো কারো লেখার স্টাইল অনুকরণ এবং অনুসরণ করি। তবে, একজন ভাল লেখক হতে গেলে নিজস্ব স্টাইল তৈরি করাটাই সঠিক কাজ।
অপূর্ব লেখা। যেভাবে ইতিহাসকে গল্পোচ্ছলে তুলে ধরলেন প্রশংসা না করে পারছি না। আপনাকে যদি আমার ইতিহাস শিক্ষক হিসাবে পেতাম তা হলে ইতিহাসে এত গদর্ভ হতাম না। যাক এই জন্মে তো আর হবে না। আর নাস্তিকদের জন্য তো পরজন্মও নেই। যে পরের জন্মে আপনাকে শিক্ষক হিসাবে পাওয়ার কামনা করব। যাক এইভাবে লিখতে থাকুন। এখান থেকেই শিখে নেব। (F)
@সুমিত দেবনাথ,
হা হা হা। ত্রিপুরায় একটা ইতিহাস শেখানোর পাঠশাল খুলে ফেলি, কী বলেন? একজন মাত্র শিক্ষক আর সবেধন নীলমণি এক ছাত্র নিয়ে ভালই জমবে পাঠশালাটি। :))
ফরিদ
আমার আদর্শের প্রতি আপনার এলার্জি থাকা সত্ত্বেও, ইতিহাসের প্রতি আপনার আগ্রহের জন্য সাধুবাদ জানাচ্ছি । রৌরবের মন্তব্যের উত্তরে বাংগালি মধ্যবিত্তের উন্মেষ সম্পর্কে আপনার ব্যাখ্যা প্রগতিশীল চিন্তার সাক্ষ্য বহন করে । তবে ধর্মীয় ব্যাপারে আপনার চিন্তা-চেতনা উগ্র বলে প্রতিয়মান হয় ।
ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ, যা সিপাহী বিদ্রোহ নামে পরিচিত, ছিল মূলত সামন্তবাদি বিদ্রোহ । কালটা ছিল বাংগালি মধ্যবিত্তের রেঁনেসার । ফলে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধে অথবা তার পূর্বকার কৃষক বিদ্রোহে ভারতীয় বা বাংগালি মধ্যবিত্তের অংশ গ্রহন ছিল না । মধুসুদন দত্ত বাংগালি মধ্যবিত্ত শ্রেনী রেঁনেসার মধ্যমনি । এই মধ্যবিত্তের আগমন ঘটেছিল উচ্চবিত্ত থেকে । উনবিংশ শতাব্দির শেষ দিকে বিংশ শতাব্দির আরম্ভে কৃষক পরিবার থেকে ব্যাপক হারে শিক্ষিত মধ্যবিত্তের আগমন ঘটতে থাকে । এই মধ্যবিত্তরাই ইংরাজের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে । আলোচ্য এই মধ্যবিত্তের প্রথম বলি ক্ষুদিরাম ।
আমার আপনার ব্যাখ্যার মধ্যে পার্থক্য থাকাটা স্বাভাবিক । কারন আমি রাজনৈতিক দৃষ্টিকোন থেকে বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছি । এব্যাপারে সিরাজুল ইসলাম কর্তৃক সম্পাদিত বাংলাদেশের ইতিহাস (১৭০৪-১৯৭১), রাজনৈতিক ইতিহাস (১ম খন্ড) বইখানি পড়ে দেখতে পারেন ।
মহিউদ্দীন
@আ হা মহিউদ্দীন,
আপনার আদর্শের প্রতি আমার কোনো এলার্জি নেই। বলতে গেলে আপনার মূল রাজনৈতিক আদর্শ আর আমার রাজনৈতিক আদর্শ প্রায়ই কাছাকাছি। ছাত্র বয়স থেকে শুরু করে এখন পর্যন্তও সামান্য হলেও বাদিকেই হেলে আছি আমি।
কী কারণে প্রদাহ ছিল এবং আপনার সাথে অতীতে তর্ক-বিতর্ক হয়েছে, সেটা আপনি খুব ভাল করেই জানেন। এতদিন পরে সেগুলোর আর উল্লেখ করতে চাই না। নতুনরূপে মুক্তমনায় আপনার ভূমিকাটা এখন পর্যন্ত যথেষ্ট ইতিবাচক। অন্তত প্রদাহ সৃষ্টি করার মত তেমন কিছু ঘটে নি এখনও। এটাকে নিয়েই সামনে এগোতে চাই আমি।
এই লেখায় আমি যেহেতু ধর্মীয় বিষয়ে বা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে কোনো কথা বলি নি, সেহেতু আপনার কাছে ধর্মীয় ব্যাপারে আমার চিন্তা-চেতনা উগ্র বলে প্রতীয়মান হওয়াটা সামগ্রিক বিষয় হিসাবে বিবেচনা করে নিচ্ছি। ধর্ম আমার কাছে অপ্রয়োজনীয় একটা বিষয় মাত্র। এর সংসর্গ ত্যাগ করেছি আমি সেই কৈশোর বয়সেই। ধর্মকে আমি সমাজ প্রগতি এবং সভ্যতার জন্য বিশাল ক্ষতিকর একটা উপাদান হিসাবে বিবেচনা করি। ধর্মগুলো না থাকলে মানব সভ্যতা বহুদূরে এগিয়ে যেত। এর অগ্রযাত্রাকে শুধু টেনে ধরে কমিয়েই দেয় নি ধর্ম, বরং কখনও কখনও প্রগতির চাকাকে উলটো দিকেই ঘুরিয়ে দিয়েছে ধর্ম। আমার এই সামান্য ভাবনাটুকু যদি আপনার কাছে উগ্র বলে মনে হয়, সেক্ষেত্রে আমার আসলে করার কিছু নেই।
আপনি যে ব্যাখাটা দিয়েছেন তার সাথে আমার কোনো দ্বিমত নেই।
অসাধারণ!
আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে আপনার লেখার ঢং। একবারও মনে হয়নি ইতিহাস পড়ছি। সুখপাঠ্য গল্পের মতন এক নিশ্বাসে পড়ে ফেললাম।
@নিটোল,
ধন্যবাদ আপনাকে। আপনার কাছ থেকেও সুখপাঠ্য লেখা পাবার প্রত্যাশা রইলো।
ফরিদ,
দীনবন্ধু মিত্র, পাদ্রী লং, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, কালি প্রসন্ন সিং কীভাবে একই সূত্রে বাঁধা!
খু উ ব ভাল লাগলো। ইতিহাস, সাহিত্য, দেশপ্রেম, মানবপ্রেম সব এক সূত্রে গাঁথা।
@গীতা দাস,
ঊনিশ শতক বাংলার জন্য এক অবিস্মরণীয় সময়। এ সময়ই ঘটেছে সবচেয়ে বড় জাগরণ। এই মেধাবী লোকগুলো সবাই সেই জাগরণের অগ্রদূত ছিলেন। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পিছিয়ে পড়া সময়কে এগিয়ে দিয়েছেন তাঁরা দ্রুতলয়ে। সে কারণেই এঁরা সবাই একসূত্রে গাঁথা।
এক কথায় চমৎকার! এ জাতীয় লেখাগুলো পড়লে আমার যা মনে হয়, তা হলোঃ এখনো বেঁচে আছি।
@স্বপন মাঝি,
পড়া এবং প্রশংসার জন্য ধন্যবাদ। এরকম পাঠক পেলে লিখেও আরাম।
এতো সুন্দর ভাবে ইতিহাস তুলে ধরলেন, মনে হলো গল্প পড়লাম (Y)
@স্বাধীন,
ধন্যবাদ আপনাকেও। ইচ্ছে আছে এরকম গল্পের ছলে আমাদের হারানো গৌরবগাথাগুলোকে মাঝে মাঝে তুলে ধরার।
@ফরিদ আহমেদ,
ছোটদের জন্যে এরকম গল্পের ছলে ইতিহাসের ঘটনাগুলো বা বিভিন্ন মানুষের জীবনী লেখার চিন্তা করতে পারেন। ইতিহাস যে শুধু বাংলাদেশ বা উপমাহদেশ কেন্দ্রিক হতে হবে তারও কথা নেই। হাইপেশিয়া, গ্যালিলিও, এদের জীবনীগুলোও তুলে আনতে পারেন। আমার খুব ইচ্ছে, এরকম সকল মনীষীদের জীবনীগুলো একত্র করা। তাদের জীবনী পড়েই তো মানুষ ভালো কিছু করার উৎসাহ পাবে। বড় হয়ে তাদের মতো হতে চাইবে। আমরা ধর্মকে গালি দিতে পারি, কিন্তু তার আগে নিজেদের দিকে তাকাতে হবে। মানুষের সামনে যদি এই সব মানুষের জীবনী তুলে না ধরেন তবে তারা কি পাবে? পাবে মুহাম্মদের জীবনী, খ্রীষ্টের জীবনী, রামের জীবনী। যারা এই সব জীবনী পড়ে মুগ্ধ হয়ে তাদের মতো হতে চায় তাদেরকে তো দোষ দেওয়া যায় না। সে সব জীবনীতে তো খারাপ কিছু বলা থাকে না, সব ভালো ভালো বিষয়েরই উল্লেখ থাকে। ছোটদের সামনে যদি ভালো উদাহরণ তুলে ধরা হয় তবে সে বড় হয়ে নিজেই নিজের পথ বেছে নিতে পারবে। ছোটদের জন্যে লেখা সবার দ্বারা সম্ভব নয়, অন্তত নিজেকে দিয়ে নয়। আপনার সেই ক্ষমতা রয়েছে বলে আপনাকেই জোর করতে চাই।
(Y)
কী দূর্দান্ত একটা লেখা। ইতিহাসের সব চরিত্রগুলোকে যেন চোখের সামনে দেখতে পেলাম। বিশেষ করে মাইকেল মধুসূদন দত্তের জায়গাটায় এসে সত্যই খুব চমৎকৃত হলাম।
লেখার শেষটাও হল চমৎকার।
@অভিজিৎ,
মাইকেল চমৎকৃত হবার মতনই এক চরিত্র ছিলেন। এরকম মেধাবান পুরুষ বাংলা সাহিত্য আর পায় নি কখনও, এরকম ট্রাজিক চরিত্রও বাংলা সাহিত্য জগতে আসে নি কখনও। তাঁর চেয়ে আধা মেধার রবীন্দ্রনাথকে এখন আমরা পূজো করি, আর তিনি চলে গিয়েছেন বিস্মৃতির আঁধারে।
@ফরিদ আহমেদ,
মাইকেল চমৎকৃত হবার মতনই এক চরিত্র ছিলেন।
তাঁর চেয়ে আধা মেধার রবীন্দ্রনাথকে এখন আমরা পূজো করি
আপনার প্রথম মতটার সাথে একমত, কিন্তু দ্বিতীয় মতটা গলায় আ৺টকে গেল ৷ জানিনা কোন মানদন্ডে বিচার করে রায়টা দিলেন ৷ মেঘনাদ বধ কাব্যের সেই দুর্দান্ত পৌরুষ বাংলা সাহিত্যে বিরল, কিন্তু বাংলা ভাষাভাষীর জীবনের সাথে মধু সুদন দত্তের কয়টা কবিতা জড়িয়ে আছে ৷ রবি ঠাকুরকে কিন্তু আমাদের জীবন থেকে আলাদা করা যায়না ৷ ব্যক্তিগত শোকে দুঃখে হোক, কিংবা জাতীয় কোন উৎসব অনেক ক্ষেত্রেই রবীন্দ্রনাথ বেজে ওঠেন সহজ প্রাণের তাগিদেই ৷ হ্যা৺, কবি মধু সুদন দত্তের মেধাও ছিল অসাধারন, কিন্তু যে কারেনই হোক তিনি খুব বেশি কিছু দিয়ে যেতে পারেননি ৷ তা৺কে খাটো করছিনা কিন্তু বাঙ্গালী জীবনের সব পরিসরে উচ্চারিত হবার মত রচনা তা৺র কম ৷ মাইকেল এর তুলনায় রবীন্দ্র নাথের মেধা অর্ধেক ছিল এই ধা৺ধাটা বোঝা আমার পক্ষে কঠিন কারন আমি বাংলা সাহিত্যের ছাত্র ছিলাম ৷ সাহিত্যের প্রতি অদম্য ঝো৺কেই বাংলা সাহিত্য পড়তে গিয়েছিলাম ৷ এখনও শেখার শেষ হয়নি, আধা মেধার তত্ত্বটা জানালে উপকৃত হব ৷
@শুভ্র,
মেধাকে আমি মেধার মানদণ্ডেই বিচার করেছি, সৃষ্টির পরিমান দিয়ে নয়। রবীন্দ্রনাথ নিঃসন্দেহে সৃষ্টির পরিমানের দিক থেকে বাংলা সাহিত্যের অন্য সবাইকে ছাড়িয়ে গিয়েছেন। কিন্তু এর মানে এই না যে, বাংলা সাহিত্যের তিনিই সবচেয়ে বেশি মেধাবী ব্যক্তি।
আমি আপনার মত বাংলা সাহিত্যের লোক নই। সাহিত্য নিয়ে আমার পড়াশোনাও খুবই স্বল্প। তারপরেও যেটুকু পড়েছি, তাতে রবীন্দ্রনাথের চেয়ে মধুসূদনকে সন্দেহাতীতভাবেই অধিকতর প্রতিভাবান মনে হয়েছে। সেই সাথে অধিকতর আধুনিকও বটে। এটা আমার নিজস্ব মূল্যায়ন, কাজেই আপনার দ্বিমতকে সাদরে আমন্ত্রণ জানাই।
রবীন্দ্রনাথ এবং মধুসূদন এর তুলনা দেওয়া যায় লারা আর শচীনকে দিয়ে। সেঞ্চুরি করা, রান করা, দীর্ঘসময় ধরে খেলা ইত্যাদিতে শচীন শুধু লারাকেই নয়, ছাড়িয়ে গিয়েছে অন্য সবাইকেও। অথচ যাঁরা এই দুজনের খেলা শুরু থেকে দেখেছেন, তাঁরা সবাই জানেন যে, প্রতিভাতে লারা এগিয়ে ছিল শচীনের তুলনায়। কিন্তু কীর্তিতে শচীন ছাড়িয়ে গিয়েছে তাঁর অধিকতর প্রতিভাবান প্রতিদ্বন্দ্বীকে।
এবার আর নিজস্ব মতামত নয়। বিখ্যাত একজন লোককে টেনে নিয়ে আসছি আমার সমর্থনে। মধুসূদনকে নিয়ে হুমায়ুন আজাদের একটা দারুণ প্রবন্ধ আছে ‘মাইকেল মধুসূদনঃ প্রথম বিশ্বভিখারি ও ত্রাতা’ নামে। ঊনিশ শতকের সৃষ্টিশীলতাবিহীন বাংলা কবিতাকে মুক্ত করার জন্য যে অসাধারণ প্রতিভার প্রয়োজন ছিল সেটা মধুসূদন ছিলেন এটা তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন এই বলে যে,
এতো গেল প্রতিভার কথা। এরকমতো অনেকেরই থাকে। কিন্তু তুলনায় মধুসূদন কি রবীন্দ্রনাথের চেয়ে বেশি মেধাবী ছিলেন? হ্যাঁ হুমায়ুন আজাদও সেটাই মনে করতেন। বঙ্কিম, রবীন্দ্রনাথের চেয়ে মধুসূদনকে বেশি মেধাবী বলেই ভাবতেন তিনি। দেখা যাক তিনি কী বলেছিলেন এ বিষয়ে।
আধা শব্দটাকে আক্ষরিক অর্থে না নিলেই খুশি হবো। মধুসূদন যে রবীন্দ্রনাথের চেয়ে বেশি মেধাবী ছিলেন, সেটি বলাটাই আমার মূল উদ্দেশ্য ছিল, পরিমান সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া নয়।
@ফরিদ আহমেদ,
ধন্যবাদ আপনার উত্তরের জন্য ৷ নীল দর্পন নিয়ে আলোচনার আসরে অন্য বিষয়ে আলোচনা দীর্ঘায়ীত করার কোন মানে হয়না ৷ আপনার মত সর্বাংশে মেনে নিতে না পারলেও ভালো লাগলো আপনার আলোচনা ৷ আপনাকে আবারও ধন্যবাদ, সময় বের করে মন্তব্য করার জন্য ৷
@শুভ্র,
সাহিত্য বিষয়ে আলোচনায় অন্য কারো মতকে মেনে নিতে হবে এমন কোনো কথা নেই। সাহিত্য সাবজেক্টিভ। ফলে, একক কোনো দৃষ্টিকোণ থেকে একে দেখার সুযোগ নেই। একেকজনের ভাল লাগা , মন্দ লাগা যেহেতু একেক রকমের, সে কারণে, সিদ্ধান্ত এবং রায়গুলোও হয়ে থাকে ভিন্ন ধরনের। এই ভাল লাগা, মন্দ লাগা এবং নিজস্ব সিদ্ধান্তগুলো প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে গা জোয়ারির বদলে যখন যুক্তিসঙ্গত আলোচনা হয়, তখন সেটি সাধারণত উপভোগ্যই হয়।
আপনার সাথে আলোচনাটা উপভোগ করেছি। শুধু মন্তব্য নয়, মুক্তমনায় নিয়মিত লিখবেন বলেও আশা করছি।
অসাধারণ একটা লেখা। আপাত-বিচ্ছিন্ন সূত্রগুলিকে যেভাবে একটি ন্যারেটিভের আকার দিয়েছেন, এক কথায় চমৎকার।
আমার অবশ্য একটি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি আছে। বাঙালী মধ্যবিত্ত এই আন্দোলনগুলিকে প্রাক-আধুনিক হিসেবে দেখে সচেতন ভাবে বর্জন করেছিল, সাহসের অভাবটা এখানে বড় নয়। কোন কোন ক্ষেত্রে হয়ত পুরো বর্জন নয়, কিন্তু সেই মীর মোশারফীয় “দ্বিধাগ্রস্ত অবস্থান”।
@রৌরব,
প্রস্তুতিহীনতাও একটা কারণ হতে পারে। ব্রিটিশ রাজত্ব শুরু হবার পর থেকে ধীরে ধীরে যে একটা মধ্যবিত্ত শিক্ষিত শ্রেণী গড়ে উঠছিল, তার পরিপুষ্টি কিন্তু এসেছে ইউরোপীয় সাহিত্য এবং সংস্কৃতি থেকেই। ইউরোপের রেঁনেসা যেমন গ্রীক সভ্যতার দান, বাংলার রেঁনেসাও তেমনি ইউরোপীয় সভ্যতার দান। তবে, ইউরোপ থেকে পুষ্টি নিলেও এর শিঁকড় গেড়ে বসেছিল বাংলার মাটিতেই। শুরুর দিকে এই মধ্যবিত্ত শ্রেণী ছিল ব্রিটিশদের পুরোপুরি মুখাপেক্ষী, অপ্রস্তুত। নিজের টিকে থাকা এবং বিকাশের চিন্তাই তাকে করে রেখেছিল ভীরু করে। কিন্তু, ব্রিটিশ শাসনের একশ বছর পরে সেই মধ্যবিত্ত শ্রেণী অনেক বেশি পরিপক্ক, অনেকে বেশি প্রস্তুত, অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসে বলিয়ান। সাদা চামড়া দেখলে এখন সে আর কুঁকড়ে যায় না, বরং প্রয়োজনে সিনা উঁচু করে লড়াই করতে চায়। ইউরোপীয় রসদে বিকশিত হলেও, শিঁকড় বাংলার মাটির গভীরে থাকার কারণে, এরা একদিকে ছিলেন প্রচণ্ড আধুনিক ও আন্তর্জাতিক, আবার অন্যদিকে ছিলেন প্রবলভাবে দেশীয়, স্বজাতির প্রতি ভালবাসায় পূর্ণ। এই নব্য সৃষ্ট আত্মবিশ্বাস এবং স্বজাত্যবোধই হয়তো নীল বিদ্রোহের সঙ্গে একাত্মতা ঘটানোর জন্য উপকরণ হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছিল।
@ফরিদ আহমেদ, (Y)
@ফরিদ আহমেদ,
যুক্তিসঙ্গত বিশ্লেষণ। ভাবনার খোরাক আছে এতে। ওই সময়ে (ঊনিশ শতাব্দীর মধ্যভাগ) ভারতবর্ষ ছিল অগ্নিগর্ভ। সিপাহী বিদ্রোহের রেশ তখনো কাটে নি। বিদ্রোহ-সংগ্রামে উত্তাল ছিল বাংলাসহ সারা ভারত। নিম্নবিত্ত আর খেটে খাওয়া মানুষদের জন্য ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত মধ্যবিত্তের সহানুভূতি ছিল প্রবল। নীলদর্পণ তারই ফলশ্রুতি। আফসোস, বাঙ্গালি (এবং ব্যাপকার্থে ভারতীয়) মধ্যবিত্তের সেই সংগ্রামী চেতনা আস্তে আস্তে ভোঁতা হতে শুরু করে তার পর থেকেই। ইংরেজ শাসনের সুবিধাভোগী শ্রেণীতে পরিণত হয় তারা।
লেখাটা ভাল লাগলো। অনেক নতুন তথ্য জানতে পারলাম।