মনের বিজ্ঞান বলতে কী বোঝায়? মন কি দেখা যায়? মনোবিজ্ঞান নামে বৈজ্ঞানিক গবেষণার বিষয়টি যখন ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠা পেতে থাকলো, তখনের প্রথম দিককার গবেষণা পন্থাগুলো ছিল আচরণবাদী। এর আগে মন নিয়ে মানুষের চিন্তাগুলো মূলত ছিল অন্তর্জ্ঞানমূলক। অর্থাৎ চুপচাপ বসে বসে গবেষক নিজেই নিজের মন নিয়ে চিন্তা করবে, প্রশ্ন করবে, আর এই চিন্তা থেকে মন সম্পর্কে একটা ধারণা তৈরি হবে। সমস্যা হলো, খুব অল্প মানুষই সেই চিন্তা-ভাবনার ফলাফলগুলো নিয়ে একমত হতে পেরেছে। কারণ ব্যক্তিক চিন্তা ব্যক্তিতে উদ্ভূত হয়ে ব্যক্তিতে সমাপ্ত হয়েছে। পুনরুৎপাদনযোগ্য কোন পর্যবেক্ষণ তৈরি করতে পারে নি, যেটা আর দশজনের উপস্থিতিতে যাচাই করা সম্ভব।

বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখার উন্নয়ন ততদিনে বৈজ্ঞানিক প্রকল্পের একটি শক্তিশালী সংজ্ঞা প্রায় দিয়ে ফেলেছে। মানুষ একমত হতে শুরু করেছে অধিবিদ্যক বক্তব্য থেকে বৈজ্ঞানিক বক্তব্য আলাদা হয় এভাবে যে অধিবিদ্যক বক্তব্যকে পর্যবেক্ষণ দিয়ে যাচাই করা যায় না, সত্য মিথ্যা প্রমাণ করা যায় না। বৈজ্ঞানিক বক্তব্য পর্যবেক্ষণ দ্বারা মিথ্যা প্রতিপন্ন হবার ঝুঁকি নেবার সামর্থ্য রাখে। ঊনবিংশ শতকের বিভিন্ন দার্শনিক আন্দোলন এর পেছনে কাজ করেছে বলা যায়। খুব বেশি নির্দিষ্ট করতে চাই না এই সময়টাকে। এ কারণে যে এর পেছনের আন্দোলনগুলো আরও অনেক আগে শুরু হয়েছে। বিভিন্ন দার্শনিক ও বিজ্ঞানীর কাজ একে প্রভাবিত করেছে। এভাবে অ্যারিস্টটল পর্যন্ত যাওয়া সম্ভব। তবে ঊনবিংশ শতকে এসে অধিবিদ্যক বক্তব্যগুলো বিজ্ঞানের সামনে লজ্জাবনত হওয়া শুরু করে দিয়েছে বলা যায়।

এর খুব স্বাভাবিক ফলাফলস্বরূপ মন নিয়ে অন্তর্জ্ঞানমূলক গবেষণাও লজ্জিতবোধ করতে লাগলো। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি হিসেবে এর কদর কমতে থাকলো। আর মনোবিজ্ঞানে যে ধারাটির বিকাশ পেতে শুরু করলো, তার নাম আচরণবাদ (behaviorism)। তারা বললো – মন দেখা যায় না। ফলে সম্ভবত মনকে গবেষণার বিষয় করাটাই বিজ্ঞানসম্মত নয়। যেটা দেখা যায় না, তাকে নিয়ে আবার কী করে পর্যবেক্ষণসাধ্য গবেষণা করা যায়? ফলে মন নিয়ে আমাদের যে সমস্ত প্রশ্ন, এসবেরই বিজ্ঞানসম্মত ভার্শন হবে আচরণকেন্দ্রিক। কারণ আচরণকে দেখা যায়। চিন্তা-ভাবনা, আনন্দ অনুভূতির গবেষণায় বিষয়বস্তু হবে কেবল আচরণ। এসবের একমাত্র পর্যবেক্ষণযোগ্য বহিঃপ্রকাশ ঘটবে কেবল আচরণে। ফলে চিন্তা-ভাবনা, অনুভূতি, এসব সম্ভবত ব্যক্তি আরোপিত বিষয়, বৈজ্ঞানিক গবেষণার বিষয় না। আচরণবাদের ভেতরেই অনেক ভিন্ন আন্দোলন তৈরি হয়েছে। তাদের মধ্যে তফাৎ ছিল। তবে মোটের উপরে এমন একটা দর্শন নিয়েই তারা মনকে গবেষণা করা শুরু করলো। নিউরোবিজ্ঞানের উদ্ভবের পরে পর্যবেক্ষণের উপায় আরও বেড়েছে। ফলে আচরণবাদী গবেষণার মূল ধারাটি ধীরে ধীরে নিউরোবিজ্ঞানের গবেষণায় চলে যেতে থাকে। কিন্তু মনকে আচরণবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার যে উপায়, তার প্রভাব এখনও বিরাজমান। এর মূল কারণ, মন বলে আমরা যে বস্তুকে নির্দেশ করি, তার উপর যথেষ্ট শক্তিশালী বৈজ্ঞানিক প্রকল্প আমাদের হাতে এখনও নেই।

মনকে এখনও যে আমরা পর্যবেক্ষণযোগ্যভাবে উদ্ধার করতে সক্ষম হই নি, এর কারণে আমরা কিন্তু অনেকটা নিশ্চিন্তেই মনকে বিজ্ঞানের গবেষণার বস্তু হিসেবে বাদ দিয়ে দিতে পারি। ইথারের মতো। তবে ইথারের অনস্তিত্ব এক দিনে প্রতিষ্ঠিত হয় নি। হয়েছে ধীরে ধীরে। একসময়ে যখন পর্যবেক্ষণকে ইথারের কোন প্রকার উল্লেখ ছাড়াই পূর্বাভাসক্ষমভাবে বর্ণনা করা সম্ভব হলো, ইথারের মৃত্যু হলো। মনের ক্ষেত্রে আমরা সেই পর্যায়ে নেই ঠিক। তবে মনকে উল্লেখ করেও পর্যবেক্ষণের কোন প্রকার পূর্বাভাসক্ষম বর্ণনা দেয়া যাচ্ছে কিনা সেটাও দেখার বিষয়। বিজ্ঞানের উদ্ভবের অনেক আগে একটি অনিশ্চয়তাকে আমরা মন নাম দিয়ে ফেলেছি। এখন সেই সব অনিশ্চয়তা নিয়ে আমরা আসলে কী কী বৈজ্ঞানিক প্রশ্ন করতে পারি, সেটার অনুসন্ধানকে বাধা দিচ্ছে মন নামটা। আমাদের খুঁজে দেখা উচিত, পর্যবেক্ষণগত অনিশ্চয়তাগুলো কী। কিন্তু আমরা তার বদলে প্রশ্ন করছি, মন কী, মন কীভাবে কাজ করে, ইত্যাদি। এসবের অনেক প্রশ্নেরই কিন্তু পর্যবেক্ষণযোগ্য স্বরূপ নেই। তার চেয়ে বরং পর্যবেক্ষণযোগ্য যে সকল অনিশ্চয়তাকে মন নামটা নির্দেশ করে, সেগুলোর যদি পূর্বাভাসক্ষম বর্ণনা দিয়ে দেওয়া সম্ভব হয় মনের উল্লেখ ছাড়াই, তাহলেই কিন্তু আর কিছু লাগে না। ইথারের মতো মনের মৃত্যু হয়।

মন ঠিক কোন পর্যবেক্ষণগত অনিশ্চয়তাগুলোকে নির্দেশ করে? সেই চিন্তা করলে প্রথমেই কিন্তু আচরণের কথা আসে। আমরা এর সাথে গ্রহ বা নদীর তুলনা করতে পারি। গ্রহকে বোঝা বলতে প্রথমেই আসে গ্রহের গতিকে বোঝা। এমনভাবে এর গতিকে লিপিবদ্ধ করা, যাতে এর ভবিষ্যত অবস্থানগুলো আগে থেকে ঠিক ঠিক বলে দেওয়া যায়। এই গতিকে গ্রহের আচরণও বলা যায়। কিন্তু গ্রহের গতি বেশ একঘেয়ে দেখে ঠিক আচরণের মতো অনিশ্চয়তাপূর্ণ নাম দিতে চাই না আমরা তাকে। তারপরেও আমরা প্রশ্ন করি গ্রহ কেনো ঘোরে? এর উত্তরে আমরা অভিকর্ষ শক্তির ধারণার আনয়ন করেছি, যেটা দুটো বস্তুর পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত একটি বিষয়। বা একে স্থানকালের সাথে বস্তুর পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত একটি বিষয় হিসেবেও বর্ণনা করা যায়। কিন্তু আমাদের প্রয়োজন পড়ে না বলার যে গ্রহ তার নিজের ইচ্ছায় ঘুরপাক খাচ্ছে। বা গ্রহ তার নানা পছন্দের মাঝে ঘুরপাক খাওয়াকে বাছাই করে নিয়েছে। জড় জগতকে তার পছন্দ বাছাই করার ক্ষমতা পুরোপুরি অস্বীকার করে আমরা বর্ণনা করতে পারি। হয়তো কিছু আদি পর্যায়ের জীবের ক্ষেত্রেও পারি। কিন্তু উচ্চতর জীবের মধ্যে আমরা দেখতে পাই বাছাই করার ক্ষমতা। সেই দেখাটা এখনও বিজ্ঞানের দেখায়/পর্যবেক্ষণে পরিণত হয় নি অবশ্য। উচ্চতর জীবকে পুরোপুরি বুঝে ফেলাও যায় নি।

আমরা চিন্তা করতে পারি, জীবও আসলে তার অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন কার্যকলাপের ফলাফল। জীবের আচরণ নির্ধারণ হয় তার সাথে প্রকৃতির আদান প্রদানের ইতিহাস দ্বারা। একটা রোবটের কথা চিন্তা করা যেতে পারে। যেমন আই রোবটের তৈরি রুম্বা। রোবট প্রযুক্তির সাথে অপরিচিত যে কেউ কিন্তু সহজেই সেই রোবটের আচরণের অনিশ্চয়তার মাঝে বাছাই করার ক্ষমতা আরোপ করবে। সে ভাবতে চাইবে যে বস্তুটি তার নানা উপায়ের মধ্যে প্রতি মুহূর্তে একটাকে বাছাই করে নিচ্ছে নিজের পছন্দে। যদিও সেই রোবটের আচরণ প্রকৃতপক্ষে একটি নির্দিষ্ট ক্রিয়াপদ্ধতি বা অ্যালগরিদমকে অনুসরণ করছে কেবল। রোবটটি সেই অ্যালগরিদমের দাস। তার কোনও বাছাই নেই। মানুষের আচরণের অনিশ্চয়তার পেছনেও হয়তো কেবল এমন কিছুই বিরাজ করে। তবে উপায়টা এতোটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, পর্যবেক্ষণের পূর্বাভাসক্ষম বর্ণনা যতটা গুরুত্বপূর্ণ। মানে পেছনে একজন বাছাইকারক বিরাজ করে এমন ধরে নিয়ে যদি কোন প্রকল্প অন্য সকল বর্ণনার চেয়ে বেশি পূর্বাভাসক্ষম হতে পারে, তাহলে সেটার প্রতিই বিজ্ঞানের নির্ভরতা বেশি থাকবে। সেখানে অনুমানগুলো জীবন্ততার বা সত্যাসত্যতার সম্মুখীন হতে অপারগ হলেও। মন নিয়ে বিজ্ঞান ঠিক যে অবস্থায় আছে এখন, এতে এরকম অনুমান একেবারে অসহনীয় নয়।

পাভলভের কুকুর

শেষ করছি আচরণবাদের প্রথম সাফল্যের কথা বর্ণনা করে। প্রাণীর আচরণের অনিশ্চয়তার নাম যদি হয় মন, সেই আচরণকে পূর্বাভাসক্ষম করে তোলাটাই হওয়া উচিত মনের বিজ্ঞানের প্রথম পদক্ষেপ। প্রাণীর আচরণকে পূর্বাভাসক্ষমভাবে বর্ণনা করার প্রচেষ্টা করেছিলেন ইভান পাভলভ। তার অনুসন্ধানের ফলাফলকে বাংলায় বলা চলে ধ্রুপদী আচরণ-পরিবর্তন (classical conditioning)। এটা প্রাণীর একটি বিশেষ আচরণকে পুনরুৎপাদনযোগ্য এবং পূর্বাভাসক্ষমভাবে বর্ণনা করে। যেমন, আমরা জানি যে খাবার পরিবেশন করা হলে ক্ষুধার্ত কুকুরের মুখ থেকে লালা নিঃসৃত হয়। এটা পুনরুৎপাদনযোগ্য এবং পূর্বাভাসক্ষম একটি প্রকল্প। এটা ধ্রুপদী আচরণ-পরিবর্তনের উদাহরণ নয় অবশ্য। তবে একে ব্যবহার করে প্রাণীর আচরণ পরিবর্তন নিয়ে একটি প্রকল্প দেয়া যায়। পাভলভ তার কুকুরকে খাবার পরিবেশন করার আগে একটি ঘন্টাধ্বনি শোনান, যেটার ব্যাপারে সাধারণভাবে কুকুরটির কোন প্রকারের আচরণের বহিঃপ্রকাশই ছিলো না। কিন্তু বারবার এই ঘটনা ঘটানোর ফলে দেখা যায়, ঘন্টাধ্বনি শুনেই কুকুরটির মুখ থেকে লালা নিঃসরণ হওয়া শুরু হয়। অর্থাৎ একটি স্বতঃস্ফূর্ত উদ্দীপকের (খাবার) সাথে নিরপেক্ষ একটি প্রণোদনা (ঘন্টাধ্বনি; স্বাভাবিকভাবে কোন আচরণের উদ্ভব ঘটায় না, কিন্তু কুকুর দ্বারা পর্যবেক্ষণযোগ্য) উপস্থাপনার কারণে নিরপেক্ষ প্রণোদনাটিও কুকুরটির একটি আচরণের উদ্দীপকে পরিণত হয়েছে। ঘন্টাধ্বনি শুনলে এখন খাবার না দেখেই কুকুরটির লালা নিঃসরণ ঘটে। কুকুরের আচরণ পরিবর্তনের একটি ঘটনাকে  পুনরুৎপাদনযোগ্য এবং পূর্বাভাসক্ষমভাবে পাভলভ এভাবে লিপিবদ্ধ করেন।

লিটল আলবার্ট এক্সপেরিমেন্ট

ধ্রুপদী আচরণ-পরিবর্তনের এই ঘটনাকে মানব-শিশুর ক্ষেত্রে প্রদর্শন করেন জন ওয়াটসন। তার পরীক্ষার নাম লিটল আলবার্ট এক্সপেরিমেন্ট। নয়মাসের শিশু আলবার্টের উপর পরীক্ষাটি করা হয়। আলবার্টের স্বতঃস্ফূর্ত আচরণের উদ্দীপক ছিল বিকট আওয়াজ। তার মাথার পেছনে একটি স্টিলের খণ্ডকে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে শব্দ করা। আর স্বতঃস্ফূর্ত আচরণটা ছিল এই যে এতে আলবার্ট এতে ভয় পেয়ে কেঁদে দিতো। স্বতঃস্ফূর্ত আচরণ মানে এই যে পরীক্ষা শুরু হবার আগে থেকেই সে এই আচরণ প্রদর্শন করতো। পরীক্ষা চলাকালে আচরণটি ধারণ করেছে এমন নয়। ইঁদুর, খরগোশ, যেকোন পশমযুক্ত বস্তু প্রদর্শনে আলবার্ট সেরকম কোন আচরণ প্রকাশ করতো না। ওয়াটসন যা করলেন, আলবার্ট যখনই ইঁদুরটাকে স্পর্শ করে, তখনই তার মাথার পেছনে বিকট শব্দটি করা হলো। আলবার্ট ভয় পেয়ে কান্না শুরু করলো। এই পরীক্ষা বারবার ঘটানোর ফলে দেখা গেলো ইঁদুর দেখলেই আলবার্ট ভয় পেয়ে কান্না করতে শুরু করলো। অর্থাৎ ইঁদুরের মতো নিরপেক্ষ বস্তুর সাথে আলবার্টের আচরণ সম্পর্কযুক্ত হয়ে গেছে। এমন কি সে আচরণের সাধারণীকরণও ঘটলো। খরগোশ দেখলে অথবা তার মাকে পশমযুক্ত পোশাক পরিহিত অবস্থায় দেখলেও সে ভয় পেয়ে কান্না করা শুরু করলো। অর্থাৎ আলবার্ট ধ্রুপদী আচরণ-পরিবর্তন প্রদর্শন করলো।

বেশ শক্তিশালী ছিলো এই পরীক্ষার প্রভাব। প্রাণীর অনেক আচরণের জন্যে তখন ধ্রুপদী আচরণ পরিবর্তনকে দায়ী করা হলো অর্থাৎ প্রাণী নিজে তার আচরণকে বাছাই করে নি, বরং তার স্বতঃস্ফূর্ত উদ্দীপকের সাথে নিরপেক্ষ ঘটনা একসাথে সমাবেশের কারণে নিরপেক্ষ ঘটনাটিতে প্রাণীর আচরণ সম্পর্কযুক্ত হয়ে যাচ্ছে – এভাবে দেখা শুরু হলো। যদিও আরও জটিল প্রকল্পের প্রয়োজন দেখা দিলো পরবর্তিতে। তবে ধ্রুপদী আচরণ-পরিবর্তনের উদ্ঘাটন বেশ নাড়া দিয়েছিল মানুষকে। এখানে উল্লেখ্য যে স্বতঃস্ফূর্ত উদ্দীপক (কুকুরের ক্ষেত্রে খাবার বা আলবার্টের ক্ষেত্রে শব্দ) আর নিরপেক্ষ ঘটনার (কুকুরের ক্ষেত্রে ঘন্টাধ্বনি বা আলবার্টের ক্ষেত্রে ইঁদুর দেখতে পাওয়া) সমাবেশের মাঝে সময়ের পার্থক্য খুব বেশি হলে এই আচরণ পরিবর্তনের ঘটনা ঘটে না। সময়ের পার্থক্য যত কম হয়, আচরণ পরিবর্তন তত শক্তিশালীভাবে ঘটে। আর আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় না বললেই নয়। শিশু আলবার্টের পরীক্ষাটি বর্তমান বিজ্ঞান গবেষণার নৈতিক মাপকাঠিতে অসমর্থনযোগ্য। তবে সে সময়ে এরকম বাঁধাধরা নিয়ম ছিলো না।

আচরণবাদীরা এভাবেই প্রাণীর আচরণকে কেবল প্রকৃতির দ্বারা উপস্থাপিত উদ্দীপক বা ইনপুটের ফলাফল হিসেবে দেখতে থাকেন। প্রাণী এখানে আচরণ বাছাই করে না। বিবর্তন তার প্রজাতিগত আচরণের সীমা নির্ধারণ করে আর ঘটমান প্রকৃতি তার সাথে আদান প্রদানের মাধ্যমে তার জীবদ্দশার নিয়ত-পরিবর্তনশীল আচরণ-অভ্যাসগুলোকে নির্ধারণ করে। বলকে লাথি মারলে যেভাবে (মানে প্রকৃতির সাথে বলের আদান-প্রদানে যেভাবে; এখানে লাথি হলো বলের কাছে প্রকৃতির তরফ থেকে আদান-প্রদান) বল একটা নির্দিষ্ট উপায়ে নড়ে (বা আচরণের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়)। মানুষের আচরণ তাদের কাছে বলের আচরণের মতোই। কেবল একটু বেশি জটিল।