সখি, ভালবাসা কারে কয়? <আগের পর্ব : পর্ব-১ । পর্ব -২ । পর্ব-৩| পর্ব-৪ | পর্ব-৫>
কেন হীরার আংটি কিংবা সোনার গয়না হয়ে উঠে ভালবাসার উপঢৌকন ?
প্রিন্স উইলিয়াম এবং কেট বিয়ে করেছেন। মিডিয়ার গরম খবর এটি। এই একবিংশ শতাব্দীর আধুনিক এবং গণতান্ত্রিক বিশ্বের নাগরিক হিসেবে আমার অবশ্য এই সব অথর্ব রাজা রাণী আর তাদের সুপুত্র কিংবা কুপুত্রদের বিয়ে নিয়ে কোন আগ্রহ ছিলো না কখনই। কেবল বিনোদন হিসেবে মাঝে মধ্যে এ ধরনের খবরে চোখ বোলানোই সার হত। কিন্তু গত কয়েক দিন ধরে এই কেট উইলিয়ামের বিয়ে নিয়ে মিডিয়া যা শুরু করেছে তাতে আমি রীতিমতো হতভম্ব। এই একদিন আগে আমেরিকার উপর দিয়ে বয়ে গেছে সময়কালের ভয়ঙ্করী প্রলঙ্করী ঘূর্ণিঝড়। চারশ’র মতো লোক মারা গেছে। আলাবামার অবস্থা তো যাচ্ছেতাই, এমনকি আমি যে জর্জিয়া স্টেটে থাকি সেখানকার আশেপাশের বেশ কিছু বাড়িঘড় ভেঙ্গেছে, মানুষও মারা গেছে কম বেশি। অথচ সিএনএন-এর মত সংবাদমাধ্যম সেসব কিছু বাদ দিয়ে কেবল কেট আর উইলিয়ামের বিয়ের আয়োজন প্রচার করে চলেছে সারা দিন ধরে- যেন পৃথিবীতে এটাই এই মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু! কেট কোন রাস্তা দিয়ে হেটে গেছেন, কীরকম পোষাক পড়েছেন, বিয়ের পরে কীভাবে ব্যালকনিতে পরষ্পরকে চুম্বন করলেন, আট টি স্তরের কত বড় আয়তনের কেক ছিলো বিয়েতে, কীভাবে তারা জনতার উদ্দেশ্যে হাত নাড়লেন – এগুলো নিয়ে বিশ্লেষনের পর বিশ্লেষণ চলছে। অবশ্য মিডিয়ার আর কী দোষ। আমার মতো আদার ব্যাপারীর এই রাজকীয় বিয়ে নিয়ে আগ্রহ না থাকলেও সাড়া বিশ্বের মানুষের আগ্রহের কমতি দেখছি না! ৫০০০ পুলিশ অফিসার সহ আর্মি নেভি আর এয়ারফোর্সের নিয়োগদান সহ কেবল নিরাপত্তা রক্ষার জন্যই নাকি খরচ হয়েছে প্রায় ৩৫ মিলিয়ন ডলার। কাজেই পুরো বিয়ের আয়োজনের খরচ কত হতে পারে সহজেই অনুমেয়! নিঃসন্দেহে এই বিশাল খরচের বড় একটা অংশের ব্যয়ভার বহন করতে হয় সেই জনগণকেই। তাতেও যে কারো কোন আপত্তি আছে তা মনে হচ্ছে না। খোদ বাকিংহাম প্যালেসের বাইরেই নাকি প্রায় ৫০০,০০০ মানুষ জমায়েত হয়েছিলো বর বধুকে একনজর দেখার জন্য। কাজেই এই অপব্যয়িতাকে সাদরে গ্রহণ করার ব্যাপারে নিরাসক্ত হলে আপনিও আমার মত বিবর্তনীয়ভাবে ‘মিসফিট’ বলে বিবেচিত হয়ে যাবেন!
তাই আমার মতো বিবর্তনীয়ভাবে মিসফিট হবার হাত থেকে বাঁচতে হলে দুচারটি কথা জেনে রাখতে পারেন। প্রিন্স উইলিয়াম তার হবু বধু কেট মিডেলটনকে বিয়ের প্রস্তাব দেন আট বছর ধরে প্রেম করার পর ২০১০ সালের নভেম্বরের ১৬ তারিখ। প্রায় ৮ ক্যারট হীরার আংটিটি উইলিয়াম কেট কে সে সময় উপহার দিয়েছেন, সেটি একসময় তার মা প্রিন্স ডায়না পরতেন। কাজেই আংটিটি নিয়ে উইলিয়ামের আবেগ সহজেই অনুমেয়। তিনি সেটা মিডিয়ায় বলেছেনও –‘এটা আমার মায়ের বিয়ের অঙ্গুরি। কাজেই এটা আমার কাছে অবশ্যই বিশেষ কিছু। আমি চাই যে আমার মার স্মৃতি আমার বিয়ের সময় অক্ষুন্ন থাকুক’। কাজেই এই আংটির পেছনে এত আবেগময় স্মৃতি জড়িত যে, কখনো যদি এই আংটি নিলামে উঠে, তবে পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিরাও এই আংটিটি কেনার জন্য দরদাম করতে ভয় পাবেন। এমনকি যদি শুধু হীরার মূল্যমান হিসবেও বিচার করি, তাহলেও খোলাবাজারে এ ধরণের আংটি ২০০,০০০ থেকে ২৫০,০০০ ডলার পর্যন্ত হতে পারে।
কিন্তু কেন এত ব্যয়বহুল বিনিয়োগ? হয়তো ভাবছেন রাজারাজরাদের ব্যাপার স্যাপারই আলাদা। তারা যদি হীরার আংটি নিয়ে লালায়িত না হন, তো হবে কে? কিন্তু আপনি খুঁজলেই দেখতে পাবেন, সাধারণদের মধ্যেও হিরের আংটি নিয়ে বিহ্বলতা কম নয়।
আমার অফিসের এক বান্ধবী প্রায় ৩/৪ ক্যারেটের এক ডায়মণ্ডের রিং পরে অফিসে আসে (যদিও ওটা সত্যিকারের হীরা কিনা আমার কিছুটা সন্দেহ আছে)। হীরকখচিত আঙ্গুল দুলিয়ে দুলিয়ে এমনভাবে কথা বলে যে, হীরার আংটিটার দিকে যে কারো নজর যেতে বাধ্য। আর সুযোগ পেলেই সে সবাইকে শুনিয়ে ফেনিয়ে ফেনিয়ে গল্প শোনায় – কোন সাত সাগর পাড়ি দিয়ে কোন হীরক রাজার দেশ থেকে তার প্রেমিক এই বিশাল এই হীরার আংটি বানিয়ে নিয়ে এসেছিলো, আর কত রোমান্টিকভাবে তাকে বিয়ের প্রস্তাব করেছিলো!
আমার অফিসের আরেক কলিগ গ্রাজুয়েশন করে নতুন চাকরী শুরু করেছে। কিন্তু বেচারা গার্লফ্রেণ্ডকে বিয়ে করতে পারছে না, কারণ গার্লফ্রেন্ডকে তুষ্ট করার মতো হীরের আংটি কেনার মত সামর্থ নাকি এখনো অর্জন করতে পারেনি। তার গার্লফ্রেণ্ড নাকি এমনি তে খুব ভাল, কোন কিছুই চায় না তার কাছে, কিন্তু একটি কথা নাকি সম্পর্কের প্রথমেই তাকে বলে দিয়েছে – বাগদানের সময় যেন তেন হীরের আংটি হলে কিন্তু তার চলবে না। এমন আংটি দিয়ে তাকে প্রপোজ করতে হবে – যেন সেটা সাবাইকে দেখিয়ে বাহবা কুড়াতে পারে। বেচারা বয়ফ্রেণ্ডটি এখন চোখ কান বুজে চাকরি করছে, টাকা জমাচ্ছে। ওভারটাইম করে টু-পাইস একটু বেশি কামানো যায় কিনা – তার নানা ফন্দি ফিকির খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। হীরের আংটি দিয়ে প্রেমিকার মন তুষ্ট করতে হবে না!
পাশ্চাত্যের মত আমাদের দেশেও মেয়েদের মধ্যে গয়নাগাটি পছন্দ করার চল আছে। শুধু চল বললে ভুল হবে, বিয়ের সময় কতভরি সোনার গয়না দিয়ে বৌকে কেমনভাবে সাজানো হল – সেটা সবসময়ই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠে। একটা সুযোগ পেলে অনেক মেয়েই বিয়ের সময় শ্বশুর বাড়ি থেকে পাওয়া গয়নাগাটি বন্ধু বান্ধব আত্মীয় স্বজনদের দেখিয়ে কিংবা কোন বিয়ে বাড়িতে বা বড় কোন পার্টিতে গলা কিংবা কানে স্বর্ণালঙ্কারের ঝলক দেখিয়ে সবার মাঝে বাহবা কুড়াতে পছন্দ করে – এগুলো আমরা হর-হামেশাই দেখি। কেন পাশ্চাত্যে হীরের আংটি কিংবা আমাদের দেশে সোনার গয়না মেয়েদের এত পছন্দের? এই প্রশ্নটা আমার বরাবরই মনে খচ খচ করত। হীরার অঙ্গুরি সোনার গয়নার কোন ব্যবহারিক উপযোগিতা নেই। ভাত, মাংস, পোলাও কোরমা খেয়ে যেমন উদরপুর্তি করা যায়, বিলাস বহুল বাড়িতে থেকে গা এলিয়ে দিয়ে আরাম আয়েশ করা যায়, মার্সিডিস কিংবা রোলস রয়েসে বসে রাজার হালে ঘুরে বেড়ানো যায়, আই ফোনে যেমন সেকেন্ডে সেকেন্ডে কথা বলা যায়, আই প্যাডে যেমন রেস্তারায় বসে কফিরে পেয়ালা হাতে নিয়ে ব্রাউস করা যায় – হীরা কিংবা সোনার সেরকম কোন ব্যবহারিক উপযোগিতা কেউ কখনোই খুঁজে পায়নি। অথচ তারপরেও হীরা বা সোনার গয়নার জন্য সুযোগ পেলেই হামলে পড়ে মেয়েরা। আর ছেলেরাও ভালবাসার প্রমাণ হিসেবে রাজ রাজ্য চষে হাজির করে প্রায়োগিক ভাবে মূল্যহীন কিন্তু নারীর কাছে অমূল্য সেই সব রত্ন পাথর আর সোনা দানা। কিন্তু কেন?
উত্তরটা খুঁজে পেয়েছিলাম অনেক পরে। ডারউইনের সেক্সুয়াল সিলেকশন তথা যৌনতার নির্বাচনের মধ্যেই যে এই জটিল প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে ছিলো সেটা কি আর আমি তখন জানতাম?
প্রানিজগত থেকেই শুরু করি। যৌনতার নির্বাচনের বহুল প্রচলিত ময়ূরের পেখমের উদাহরণটি আবারো এখানে চলে আসবে। আমরা জানি, ময়ূরের দীর্ঘ পেখম টিকে আছে মূলতঃ নারী ময়ূর বা ময়ূরীর পছন্দ তথা যৌনতার নির্বাচনকে প্রাধান্য দিয়ে। কি ভাবে? ১৯৭৫ সালে ইসরাইলী জীববিজ্ঞানী আমোতজ জাহাভি (Amtoz Zahavi) প্রস্তাব করলেন যে, ময়ূরীর এই দীর্ঘ পেখম ময়ূরের কাছে প্রতিভাত হয় এক ধরণের ‘ফিটনেস ইণ্ডিকেটর’ বা সুস্বাস্থ্যের মাপকাঠি হিসেবে। জাহাবির মতে, সততার সাথে সুস্বাস্থ্যের বিজ্ঞাপন দিতে গেলে এমন একটা কিছুর মাধ্যমে সেটা প্রকাশ করতে হবে যাতে খরচের প্রাচুর্যটা এমনকি সাদা চোখেও ধরা পড়ে। সোজা ভাষায় সেই বিজ্ঞপিত অঙ্গটিকে নিঃসন্দেহে হতে হবে ‘কস্টলি অর্নামেন্ট’। ঠিক এজন্যই যৌনতার অলঙ্কারগুলো প্রায় সবসময়ই হয় বেঢপ আকারে বিবর্ধিত, ব্যয়বহুল, অপব্যায়ী কিংবা জবরজং ধরণের জটিল কিছু।
ময়ূরের পেখম কেবল ময়ূরীর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য সস্তা প্রচারণা নয়। ময়ূরের পেখম দীর্ঘ, ভারী আর ভয়ানক বিপদসঙ্কুল। দীর্ঘ পেখম এত অনায়াসে তৈরি করা যায় না, আর এমনকি এই বেয়াক্কেলে পেখমের কারণে তার শিকারীদের চোখে পড়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায় অনেক। বেচারা ময়ূরকে কেবল নিজের দেহটিকেই বয়ে বেড়াতে হয় না, টেনে হিচড়ে নিয়ে বেড়াতে হয় তার পশ্চাৎদেশের সাথে জুড়ে থাকা এই অবিশ্বাস্য বড় ধরণের বাড়তি একটা পেখমের ঝাঁপি (জাহাভির মতে এই বিলাসিতা এমনই দৃষ্টিকটু যে এটা প্রায় পঙ্গুত্বের সামিল, তার তত্ত্বের নামই এজন্য Handicap principle)। এজন্য ময়ূরকে হতে হয় স্বাস্থ্যবান এবং নিরোগ। কখনো সখনো কোন স্বাস্থ্যহীন ময়ূরের দীর্ঘ পেখম গজাতে পারে বটে, কিন্তু সেটা বয়ে নিয়ে বেড়িয়ে খাবার খোঁজা, কিংবা শিকারীরা তাড়া করলে দ্রুত দৌঁড়িয়ে পালিয়ে যাওয়া সেই স্বাস্থ্যহীন ময়ূরের পক্ষে দুঃসাধ্যই হবে। কেবল মাত্র প্রচণ্ড শক্তিশালী কিংবা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ময়ূরের পক্ষেই এই সমস্ত প্রতিবন্ধকতা ডিঙ্গিয়ে এ ধরণের পেখমের বিলাসিতা ধারণ করা সম্ভব হয় ।
তাই পেখমওয়ালা বিলাসী ময়ূর ময়ূরীর পালের কাছে গিয়ে সোচ্চারে ঘোষণা করতে পারে –
“এই যে মহীয়সী ময়ূরী,আমার ন্যাজের দিকে তাকাও; দেখো – আমি সুস্থ, আমি সুন্দর! আমি এমনই স্বাস্থবান আর শক্তিশালী যে, আমি আমার ষাট ইঞ্চি ব্যাসার্ধের পেখম বয়ে বেড়াতে পারি অবলীলায়। আমি আমার খাদ্য আর দৈহিক পুষ্টিকে সাইফন করে আমার পেখমের আকার আকৃতিকে তোমারই জন্য বর্ন্যাঢ্য করে রেখেছি। কোন শিকারী আমাকে পেছন থেকে আক্রমণ করে পরাস্ত করতে পারে না। ভারী লেজ থাকা সত্ত্বেও আমি উসেইন বোল্টের মত এক দৌড়ে শিকারীকে পেছনে ফেলে দিতে পারি, আমার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্দান্ত, আমার দেহ কোন রোগ জীবাণুর আবাসস্থল নয়। তুমি দেখলেই বুঝবে – উজ্জ্বল পেখম আর অন্য সব কিছু মিলিয়ে আমার সঞ্চিত সম্পদ অঢেল; ধন সম্পদ আর প্রচুর্যে আমি ভরপুর। আমাকে সঙ্গি হিসেবে নির্বাচণ করলে তুমি সুখে থাকবে হে নারী…’’।
তাই ময়ূরীকে আকর্ষণের জন্য স্বভাবগতভাবেই ময়ূরকে বিলাসী হতে হয়। আমরা যতই অপচয়কারীকে ‘শয়তানের ভাই’ বলে গালমন্দ করি না কেন, অপচয় এবং ব্যয়বাহুল্য জৈবজগতে যৌনসম্পর্ক গঠণের (sexual courtship) এক অত্যাবশকীয় নিয়ামক।একটা পুরুষ কোকিলকে তার অতিরিক্ত বিশ ভাগ শক্তি ব্যয় করতে নিজের গলাকে সুরেলো করে তুলতে। কারণ এই সুরেলো গলাই তার আকর্ষণের হাতিয়ার। ঠিক একই কারণে হরিণের শিংকে হতে হয় বর্ণাঢ্য, তার প্রয়োজনের চেয়ে ঢের বেশি। তার মানে, যৌনতার নির্বাচনের মাধ্যমে প্রজাতির বিবর্তন হতে গেলে অপচয়প্রবণতার প্রকাশ হতে হবে একরকম অবশ্যাম্ভাবী। এটা যে কেউই বুঝবে যে, একটা ময়ূর তার পেখম না থাকলে বরং আরো ভালভাবে চলে ফিরে বেড়াতে পারতো। তার এই বেঢপ পেখমের পেছনে এত শক্তি অপচয় না করে খেয়ে দেয়ে আমোদ ফুর্তি করে বেড়াতে পারতো। পেখমের পিছনে শক্তি খরচ না করে শক্তি সঞ্চয়ে মনোনিবেশ করতে পারতো। কিন্তু যৌনতার নির্বাচনী চাপ তাদের মানস জগতে অবিরতভাবে কাজ করে যায় বলেই, সে পেখম গঠনের ব্যাপারে নির্লিপ্তভাবে অপব্যায়ী হয়ে উঠে; উঠতে তাকে হবেই।বিজ্ঞানীরা বলেন, প্রকৃতিতে দৃষ্টিকটু রকমের অপব্যয়িতাই হচ্ছে সততার সাথে নিজের সম্পদকে অন্যের সামনে তুলে ধরার একমাত্র সহজ মাধ্যম।
নীচে একটি টেবিলের সাহায্যে দেখানোর চেষ্টা করা হল, কীভাবে নারী অভিরুচিকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে বিভিন্ন প্রজাতিতে ব্যয়বহুল অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কিংবা নানা অপব্যয়ী বৈশিষ্টের উদ্ভব ঘটেছে-
মানব সমাজেও কি আমরা এরকমের অপব্যয়িতার হাজারো প্রমাণ পাই না? যাদের বেশি টাকা পয়সা আছে, তারা দামী অট্টালিকা বানায়, বনেদী এলাকায় থাকে, রোলস রয়েস কিংবা পাজেরো গাড়ি হাঁকিয়ে বেড়ায়, সৌখিন এবং দামী ডিজাইনার ব্র্যাণ্ডের পোষাক আশাক কিংবা জুতো পরে ঘুরে বেড়ায়। বৈষয়িক দিক থেকে চিন্তা করলে এগুলোর কোনটারই কিন্তু দরকার ছিলো না। বরং দামী গাড়ি কিংবা পোশাক আশাকের পেছনে নিয়মিত অর্থ ব্যয় না করে টাকাগুলো ব্যাঙ্কে তুলে রাখলে অপব্যয়িতার হাত থেকে মুক্ত থাকা যেত, পয়সা কড়িও একটু বেশি জমতো। কিন্তু তাই কি হয়? কোন পয়সাওয়ালাই কেবল সুইস ব্যাংকে তার সব টাকা পয়সা তুলে রেখে ছেঁড়া গেঞ্জি, পায়জামা আর ছেড়া স্যাণ্ডেল পরে টো টো করে ঘুরে বেড়ায় না। বরং উলটো – নিজের অর্জিত সম্পদের সংকেতকে বস্তুনিষ্ঠভাবে অন্যের কাছে তুলে ধরতে চায় – আর রাজপ্রাসাদোপম বাড়ি কিংবা দামী গাড়ি, জুতো জামা কেন্দ্রিক অপব্যয়িতাগুলোই হচ্ছে তাদের জন্য সর্বসাধারণের কাছে সম্পদ প্রকাশের ‘ফিটনেস মার্কার’।
নিজের সম্পদকে তথা ব্যয়বহুল অলঙ্কারগুলোকে সততার সাথে প্রকাশ করে নিজের ‘ফিটনেস’কে বিজ্ঞাপিত করতে চায় সকলেই। সম্পদ বলতে কেবল শুধু বাড়ি গাড়ি টাকা পয়সা, জুতো জামার কথাই আমি বোঝাচ্ছি না, সেই সাথে আমাদের বিজ্ঞাপিত সম্পদের তালিকায় চলে আসবে শিক্ষা, বুদ্ধিবৃত্তি, জ্ঞান, সাহস, দৈহিক শক্তি, সঙ্গিত প্রতিভা, বাকচাতুর্য, সুদর্শন চেহারা, কৃষ্টি, নৃত্যপটুতা, প্রগতিশিলতা, অধিকার সচেতনতা, উদ্ভাবনী শক্তি, দৈহিক সৌন্দর্য, সততা, নৈতিকতা, দয়াপরবশতা, রসিকতা, হাস্যরসপ্রিয়তা সহ অনেক কিছুই। কারণ দীর্ঘদিনের বিবর্তনীয় যাত্রাপথে মানুষ শিখেছে যে এই দৃষ্টিনন্দন গুণাবলীগুলোর প্রতিটিই বিপরীত লিঙ্গের কাছে হয়ে উঠে আকর্ষণের বস্তু, আর সম্ভবতঃ যৌনতার নির্বাচনের পথ ধরেই সেগুলো মানব সমাজে বিকশিত হয়েছে বিপরীত লিঙ্গের বিভিন্ন চাহিদাকে প্রাধান্য দিয়ে। কিন্তু তার পরেও বলতে বাধ্য হচ্ছি এর কোনটিই বিয়ের সময় হীরার আংটির মতো গুরুত্বপূর্ণ ‘ভালবাসার উপঢৌকন’ হিসেবে উঠে আসে না। কিন্তু কেন?
চিত্রঃ যৌনতার নির্বাচন যদি সঠিক হয়ে থাকে তবে, প্রকৃতিতে দৃষ্টিকটু রকমের অপব্যয়িতাই হচ্ছে সততার সাথে নিজের সম্পদকে অন্যের সামনে তুলে ধরার একমাত্র সহজ মাধ্যম। সেজন্যই কি হীরার আংটি মানব সমাজে এত পছন্দনীয় ‘নাপশাল গিফট’?
হীরার আংটি দিয়ে প্রস্তাব না করে আপনি আপনার প্রেমিকাকে বাজার থেকে একটা আইদাহ আলু কিনে কিংবা সিলেটি কমলালেবু নিয়ে এসে প্রস্তাব করতে পারতেন। যত হাস্যকরই শোনাক না কেন, আলু কিংবা কমলালেবুর ব্যবহারিক উপযোগিতা কিন্তু হীরা কিংবা সোনাদানার চেয়ে অনেক বেশি। ক্ষুধার সময় আলু খেয়ে কিংবা মনের আনন্দে কমলা চিবিয়ে আপনি খিদে দূর করতে পারেন। কিন্তু হীরার আংটি দিয়ে সেসব কিছুই আপনি করতে পারবেন না। কিন্তু তারপরেও বাগদানের রোমান্টিক সময়ে হীরার বদলে আলু নিয়ে হাজির হলে, আপনার কপালে কী দূর্গতি হবে সেটা বোধ হয় না বলে দিলেও চলবে! আলু পটল তো কোন ছার, এমনকি দামী গাড়ি বাড়ি, কম্পিউটার, আই ফোন কোনকিছু দিয়েই আপনি বিয়ের সম্পর্ক তৈরি করতে পারেবন না, যদিও এগুলোর সবগুলোরই কিছু না কিছু ব্যবহারিক উপযোগিতা আছে। রহস্যটি হল, জাহাভির হ্যাণ্ডিক্যাপ প্রিন্সিপাল অনুযায়ী, বিয়ের প্রস্তাবের (প্রাণিজগতে অবশ্য যৌনসম্পর্কের) উপহার এমন হতে হবে যার কোন ব্যবহারিক উপযোগিতা নেই (এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে তা হতে পারে ময়ুরের পেখমের অপকারী), কিন্তু বিপরীত লিঙ্গের চোখে তা হতে হবে অমূল্য। জৈববিজ্ঞানের পরিভাষায় একে বলে ‘কোর্টশিপ গিফট’ (courtship gift) বা ‘নাপশাল গিফট’ (nuptial gift)[1],[2]। গাড়ি বাড়ি, আইদাহ আলু কিংবা আইফোন সবকিছুরই ব্যবহারিক কিছু না কিছু উপযোগিতা আছে পুরুষের কাছে। তাই সেগুলো কখনোই ‘কোর্টশিপ গিফট’ হয়ে উঠার যোগ্য নয়। কোর্টশিপ গিফট গতে পারে কেবল হীরা কিংবা স্বর্ণালঙ্কারের মত অপদ্রব্যগুলোই, যেগুলোর কোনই ব্যবহারিক উপযোগিতা নেই পুরুষের কাছে, অথচ নারীর মানসপটে সেটি অমূল্য এক ‘ফিটনেস মার্কার’।
গবেষক পিটার সজু এবং রবার্ট সেইমোর ২০০৫ সালের ‘Costly but worthless gifts facilitate courtship’ নামের একটি গবেষণাপত্রে দেখিয়েছেন যে, সম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্রে এ ধরনের ‘কোর্টশিপ গিফট’-ই কার্যকরী যা হবে দৃষ্টিকটুভাবে অপব্যয়ী এবং ব্যবহারিকভাবে মূল্যহীন [3]। মানব সমাজের বিবর্তনীয় যাত্রাপথে সেজন্যই হীরার আংটি কিংবা স্বর্ণালঙ্কার খুব চমৎকার একটি ‘কোর্টশিপ গিফট’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। একটি কারণ এর কোন ব্যবহারিক মূল্য পুরুষের কাছে নেই। কোন পুরুষই হীরা কিংবা সোনার জন্য লালায়িত থাকে না। হীরা বা সোনা দোকানে নিয়ে বেঁচে দেয়া ছাড়া একজন পুরুষ কিছুই করতে পারে না। সেটা নিয়ে সে বাঁচতে পারে না, সেটা খেয়ে উদরপূর্তি করতে পারে না, পারে না আমোদিত হতে। কেবল একটি কাজই সে হীরা দিয়ে করতে পারে – নারীকে উপহার দিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে, আর ভালবাসার সম্পর্কের সূচনা করতে- হতে পারে সেই সম্পর্ক স্বল্পমেয়াদী কিংবা দীর্ঘমেয়াদী। শোনা যায়, কুখ্যাত ‘লুলপুরুষ’ আজিজ মুহম্মদ ভাই নাকি স্বল্পমেয়াদী সম্পর্ক তৈরি করার ক্ষেত্রে হীরার অলঙ্কারের উপর নির্ভর করতেন। চলচিত্রের নায়িকা, গায়িকা, অভিনেত্রী, মডেল থেকে শুরু করে খবর পাঠিকা সহ শোবিজের সাথে যুক্ত বিভিন্ন সুন্দরী ললনাদের শয্যাসঙ্গি করার অভিপ্রায়ে তাদের পৃথিবীর আধুনিক নামি দামি কোম্পানির জুয়েলারি পাঠাতেন। আজিজ মুহম্মদ ভাই তার স্বল্পমেয়াদী সম্পর্ক বা শর্ট টার্ম স্ট্র্যাটিজির জন্য যে ধরণের বিনিয়োগ করতেন দেখা গেছে, সে ধরণের বিনিয়োগ একই রকম কার্যকরী লং-টার্ম স্ট্র্যাটিজির ক্ষেত্রেও। সেজন্যই বাংলাদেশের বিয়েতে সোনাদানা কিংবা পাশ্চাত্যে হীরার অংটি বৈবাহিক সম্পর্কের সূচনায় এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে।
মেরোলিন মনোরোর কথা আমরা সবাই জানি। পঞ্চাশ ষাটের দশকের সুদর্শনা অভিনেত্রী ছিলেন তিনি, এবং মাত্র ৩৬ বছর বয়সে মারা যাবার আগ পর্যন্ত ছিলেন বহু পুরুষের হার্টথ্রব। অভিনয়ের পাশাপাশি ভাল গানও গাইতেন মনোরো। মনোরোর গাওয়া চমৎকার গান আছে ‘Diamonds Are a Girl’s Best Friend’ নামে। মেরোলিন মনোরো গানটি গেয়েছিলেন ১৯৫৩ সালে ‘Gentlemen Prefer Blondes’ নামের একটি ছবির জন্য । গানের কথাগুলো এরকমের –
The French were bred to die for love
They delight in fighting duels
But I prefer a man who lives
And gives expensive jewels
A kiss on the hand may be quite continental
But diamonds are a girl’s best friendA kiss may be grand but it won’t pay the rental
On your humble flat, or help you at the automat
Men grow cold as girls grow old
And we all lose our charms in the end
But square cut or pear shaped
These rocks don’t lose their shape
Diamonds are a girl’s best friend…
গানটি ইউটিউব থেকে শোনা যেতে পারে এখান থেকে –
httpv://www.youtube.com/watch?v=0L8sHIU8YAg
আরেকটা বিখ্যাত গান আছে ‘ডায়মন্ডস আর ফর এভার’ নামে। গানটি ১৯৭১ সালের শন কনরি অভিনিত জেমস বন্ডের একটি সিনেমায় ব্যবহৃত হয়েছিলো। গায়িকা ছিলেন শার্লি ব্যাসি, পঞ্চাশের দশকের আরেকজন জনপ্রিয় শিল্পী (এবং আমার এখনো প্রিয় গায়িকা)। গানের কথাগুলো এরকমের –
Diamonds are forever,
They are all I need to please me,
They can stimulate and tease me,
They won’t leave in the night,
I’ve no fear that they might desert me.Diamonds are forever,
Hold one up and then caress it,
Touch it, stroke it and undress it,
I can see every part,
Nothing hides in the heart to hurt me.I don’t need love,
For what good will love do me?
Diamonds never lie to me,
For when love’s gone,
They’ll luster on….
গানটি শোনা যাবে এখান থেকে –
httpv://www.youtube.com/watch?v=D7_u_46e3Dc
আমাদের দেশ সহ ভারতবর্ষে হীরার মত সোনাকেও ভালবাসার খুব মূল্যবান উপঢৌকন হিসেবে ধরা হয়, এবং সেটাও একই কারণে। সোনা দানার কোন ব্যবহারিক উপযোগিতা পুরুষদের কাছে নেই, কিন্তু বহু নারীর কাছেই তা অমূল্য।
কেন ভারতবর্ষের নারীরা স্বর্ণালঙ্কার ভালবাসে? এর ব্যাখ্যা হিসেবে জনপ্রিয় rediff.com ওয়েবসাইটে দেখলাম বলা হয়েছে[4] –
‘স্বর্ণালঙ্কার (ভারতীয়) নারীর জন্য কেবল কেবল শক্তিশালী আবেগই তৈরি করে না, পাশাপাশি নারীর অবয়বকে সার্বিক পূর্ণতা দেয়। নারী স্বর্ণালঙ্কার পরে নিজেকে মনে করে লাস্যময়ী, সুন্দরী, সফল, আত্মপ্রত্যয়ী, এবং যৌনাবেদনময়ী’।
রোমান কবি অভিড প্রায় একহাজার বছর আগে তার একটি লেখায় বলে গিয়েছিলেন,
“নারীরা কবিতা ভালবাসে। কিন্তু তার জন্য মূল্যবান কিছু উপহার দাও। … Gold buys honor; gold procures love”
অভিডের মৃত্যুর পর সহস্র বছর পার হয়ে গেছে, কিন্তু তবুও আমরা সেই স্বর্ণযুগেই পড়ে রয়েছি!
(দেখি কতদিন চালানো যায়…)
[৫ম পর্ব]
:line:
তথ্যসূত্রঃ
[1] Randy Thornhill, Sexual Selection and Nuptial Feeding Behavior, in bittacus apicalis (insecta: mecoptera), The American Naturalist, 1976.
[2] K Vahed, The function of nuptial feeding in insects: a review of empirical studies. Biol. Rev. 73, 43–78, 1998
[3] Peter D Sozou and Robert M Seymour, Costly but worthless gifts facilitate courtship, Proceedings of the royal society of london, 272 (1575), pp. 1877-1884, 2005.
[4] “Wearing gold not only enhances strong emotional feelings for its wearer but also completes a woman’s appearance – it makes women feel indulgent, beautiful, successful, confident and sexy. Women who wear gold jewellery consider it to be an integral part of their appearance, and consider it as a necessary item rather than just an accessory.”; Why do people wear gold jewellery?, http://www.rediff.com/money/2007/may/23gold1.htm;
উৎসর্গ: @Nourtia Nil এবং Tasbih Chowdhury (নতুন প্রেম শুভ হোক)
সখি, ভালবাসা কারে কয়? <আগের পর্ব : পর্ব-১ । পর্ব -২ । পর্ব-৩| পর্ব-৪| পর্ব-৫>
😀 😀
অমিতাভের একটা সিনেমায় দেখেছিলাম, সে তরমুজ দিয়ে প্রেমের প্রস্তাব দেওয়ায় হেমামালিনীর সে কি রাগ!
অনেক দেরিতে বলছি, অভিজিৎ দা, যথারীতি সেই রকম। :guli:
বিপ্লব দা’র সঙ্গে আলাপ-চারিতায় কিছু না কিছু গুরুতর বিষয়-আশয় বেরিয়ে আসবেই। এবারো তাই হয়েছে। চলুক। :clap
আমার একটা সংস্কৃত শ্লোকের কথা মনে পড়ে গেল। জীবনে মাত্র একটি শ্লোকই মনে গেঁথে গিয়েছিল ১৯৬৭ সালের দিকে। আর তা একটি বিশেষ দিনে কাজেও লাগিয়েছিলাম। (ডিসেম্বর ১৪, ২০০৩ আমার মেয়ের আশীর্বাদ – দূর্বল স্মৃতিশক্তি। কিন্তু, আশ্চর্য, এই শ্লোকটি এত বছর আমার মেয়ের জন্যই বুঝি স্মৃতিতে রয়ে গিয়েছিল)।
শ্লোকটি কিন্তু হীরার আংটির পক্ষে মোটেই বলে না। দেখুন —
রূপম্ কাময়তে কন্যা – কন্যা সুদর্শন পুরুষ কামনা করে।
বিত্তং মাতা – কন্যার মা কন্যার জন্য আর্থিক নিরাপত্তা চান
পিতা শ্রুতম্ – পিতা চান জ্ঞানে-গুনে সমৃদ্ধ ধী সম্পন্ন শিক্ষিত ছেলে
বান্ধবা কুলমিচ্ছন্তি – আত্মীয়-স্বজন সুবংশীয় ছেলে হলেই খুশী
মিষ্টান্নম ইতরে জনাঃ – অন্যরা খুশী ভাল ভূড়ি ভোজনে।।
আমার নিজের মাটির পুতুল খেলার ইতিহাস আছে। সেইসব পুতুলের আবার বিয়ে হত অন্যের পুতুলের সাথে। এক্কেরে অরিজিনাল বিয়ের মত করেই একে একে সমস্ত অনুষ্ঠান করা হত। একটু বড় হয়ে বর-বঁধুও খেলেছি। আমাদের খেলার সাথীদের মধ্যেই কেউ কেউ বরের মা, কনের মা, ভাই-বোন- এসব সাজত। গ্রামের একটা কৃষিজ সমাজ ব্যবস্থার মত ফসল বোনা, সংগ্রহ, তৈরী করা, তারপর মাটির হাড়ি-পাতিলে সেগুলো রান্না করা, খাবার পরিবেশন, লবন কম হলে বউকে মৃদু বকে দেয়া, কঞ্চি-তালপাতা-খেঁজুরপাতা দিয়ে ঘর তৈরী করা- আরো কত কি! সমস্ত লাজ-লজ্জাহীন ভাবে আমরা যেভাবে ঐসব সুচারুভাবে ভাব-গম্ভীর পরিবেশে অভিনয় করে যেতাম। তখন কিভাবে যে অত সিরিয়াস হতাম সবাই- ভাবতেই অবাক লাগে এখন। এই ঘটনায় বড়রা কখনো নাক-চোখ কিছুই গলাতো না।
এই লেখার সাথে আসল ব্যাপারটা এবার বলি-
যে সবচেয়ে সুন্দরী- তাকেই সবাই কনে বানাত। আরো কোনো গুণাবলী বা যোগ্যতা লাগত কিনা- তা এই মুহুর্তে মনে পড়ছে না। তবে বর হতে গেলে অনেক ঝামেলা পোহাতে হত। নারিকেল পাতা আর শলাকা দিয়ে ঘড়ি, কানের দুল (এক প্রকার ফুল দিয়েও এটা করা হত), গলার হার, মুকুট বানাতে হত। বিশেষ করে স্বর্ণলতা দিয়েও নানা প্রকার অলংকার তৈরী করতে হত। এটা অনেক কষ্ট করে বড়ই গাছ থেকে কাঁটার আঘাত সয়ে সংগ্রহ করতে হত। এটা দিয়ে আংটি, বালা, চুড়ি, গলার হার, চেইন- এসব তৈরী করা লাগত। একপ্রকার ফুল (নাম ভুলে গেছি) আনা লাগত আলতা বানানোর জন্য। যার তৈরী জিনিস সবচেয়ে সুন্দর আর টেকসই হত- তার কপালেই বর হওয়ার সুযোগ জুটত। এটা সব মেয়েরা মিলে ঠিক করত।
তারপর ছেলে দেখা, মেয়ে দেখা, এঙ্গেজমেন্ট, বিয়ে, বৌভাত, বাসর- সব অভিনয় হত।
আমি ভাবছি- এই যে অলংকারের ব্যাপার- এটা তো একদিনে হয়নি। আদিকালে তারা হয়তো বন্যফুল-লতাপাতা দিয়ে প্রপোজ করত। কেউ হয়তো একদিন একটা “অন্যরকম পাথর” দিয়ে আংটি বানিয়ে দিয়েছিল। সেই শুরু। তারপর ধীরে ধীরে এই উপহারের রূপভেদ চেঞ্জ হয়েছে। মূলে কিন্তু সেই অমর প্রেম-ভালোবাসারই একটা প্রকাশ মাত্র। তাই আসল প্রেম-ভালোবাসায় ওসবের বাজারদরের চেয়ে এর সাথে জড়িত ভালোবাসা বা আবেগটাই বেশী প্রাধান্য পায়।
কলেজ লাইফে এক বন্ধুর ওয়ালেটে এক টুকরা নারিকেলের শলাকা আবিষ্কার করেছিলাম- বিশাল কাহিনী!
এক মেয়েকে দেখেছি এক টুকরো গুনা খুব যত্ন করে আগলে রাখতে। সেটা আবার একটি পেঁচিয়ে Love সাইনের মত করা ছিল। বুঝেন ঠেলা!
আমার মনে হয় না ওরা কোনোকিছুর বিনিময়ে ঐ দুইটা জিনিস হাতছাড়া করতে চাইত।
@শ্রাবণ আকাশ,
বোঝা গেল সেই ছোট্ট বেলা থেকেই পেখম দেখানোর অভ্যাস ছিল। অসুবিধা নাই, সুবিধা বেশী; কারন মেয়েদের সাথে মেশার সঙ্কোচ কেটে গেল মনে হয় তখনই। তাই না?
হতে পারে। আপনার এই ভাবনাটা তল পেলে পেতেও পারে, আবার নাও পারে। আমার ধারনা যা ঐ সময়ে, ঐ পরিবেশে যা কিছু সহজলভ্য নয়; তার কিছু কিছু বা সব কিছুই হয়ত জয়ের পতাকা ওড়াতে পারে :)) :)) :)) জাস্ট ধারনা 😉
মনে হচ্ছে প্রাণীজগতে একমাত্র মানুষ ছাড়া আর সবারই সঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে ১০০% স্বাধীনতা আছে। বড়ই আফসোসের বিষয়!
বড়দের দোয়া-আশীর্বাদে আসলেই কি কিছু হয় নাকি আমরা সুবিধাবাদী বলে বিয়ে-শাদীর সময় ঐগুলার জন্য নিজেদের প্রেম-ভালোবাসাকে বিসর্জন দিয়ে বাবা-মার ঠিক করে দেয়া পাত্র-পাত্রীর গলায় ঝুলে পড়ি?
আর কতদিন এমন সোশ্যাল সার্ভিস দিয়ে যাব হ্যা? যাইহোক
http://mukto-mona.com/?p=13650
http://blog.mukto-mona.com/?p=13650
দুইটা একজিনিশ না। পেজিনেশন লিংকগুলো ঠিক করে দিন 🙂
@টেকি সাফি,
ধন্যবাদ। এই না হলে টেকি সাফি! 🙂
এই মেরেছে, প্রেম এত কস্টলি এফেইয়ার হলে, আমার মতন পকেট শুন্য প্রেমিকদের কি হাল হবে?
আগে কলেজ জীবনে দু চারটে-এমন কি শয়ে শয়ে কবিতে লিখে কত্ত ম্যানেজ করেছি-এখন লেখক যদি বলেন, মেয়েদের কাছে হীরা বিনা তুমি হেরো–মুশকিলে পড়ে যাব।
আচ্ছা কবিতার ব্যাপারে কি মত? ইয়ে মানি সেটিও আসলে ইউজলেস-কিন্ত দুর্ভাগ্যজনক ভাবে হীরার মতন দুর্মুল্য না-একে বারেই মূল্যহীন! এমন কি পয়সা দিয়েও পাঠক পাওয়া যায় না। চা সিঙাড়া খাওয়ানোর পাঠক চক্র ডাকলে, কিছু পাঠকের উদয় হয়। ঋনাত্বক মূল্যের ধরা যেতে পারে।
আমি কিন্ত প্রেমিকা ধাওয়া করতে হীরা না সেই ঋণাত্মক মূল্যের কবিতার ওপর ভরসা করেছি বেশী। ড্যাশবোর্ডে ডটের সংখ্যা তাতে কমেছে বলে মনে পড়ে না।
প্রেমের ওপর এই ধরনের গবেষনায় বিবর্তন এনে কি কিছু লাভ আছে? মানুষের বিবর্তন প্রায় ৭ মিলিয়ান বছরের কাছাকাছি আর হীরার আলঙ্কারিক বয়স মানব সভ্যতায় ৩০০০ বছর ও না।
৭ মিলিয়ায়ন বছরের এই মানব বিবর্তনে দেখা গেছে পুরুষ যেসব জিনিস দিয়ে নারীদের আকর্ষন করেছে-তার মধ্যে তার দৈহিক গুনাবলি ছারা আর যেকোন “বস্তুই” আসুক না কেন- এফেকশন বা প্রেমিক মন এবং প্রেমিক পারসোনালিটিকেই নারী গুরুত্ব দিয়েছে বিশী। স্তন্যপায়ীদের মধ্যে এফেকশনের চেয়ে বড় রিপ্রোডাক্টিভ কারেন্সি আর কি আছে?
[
Another facet of AET was that the exchange of affection served as an indicator to another individual that he or she was a good prospect for parenthood (Floyd, 2001).
]
আর এফেকশন জানানোর সেরা উপায় ত কবিতা!
http://en.wikipedia.org/wiki/Affection_Exchange_Theory
Floyd, K. (2001, February). Elements of an affection exchange theory: Socioevolutionary paradigm for understanding affectionate communication. Paper presented to Western States Communication Association, Coeur d’Alene, ID
@বিপ্লব পাল, গ্রেট বিপ্লব দা! আমি এমন একটা মন্তব্যের অপেক্ষায় ছিলাম।
কিছু কিছু ব্যাপার আসলে কখনোই মূল্য দিয়ে বিচার করা যায় না, ব্যক্তিত্ব্য এবং ভালোবাসা তেমনই। হীরের আংটি হাত থেকে খসে পড়তেই পারে, কিন্তু ভালোবাসা টুপ করে হৃদয় থেকে খসে পড়েনা, যদি তাতে আসলেই সততা থাকে। পেখম যতই মেলে ধরিনা কেন, ব্যক্তিত্ব্যকে আড়াল করা যায় না। নিরাপত্তার পিছনেও সাইকোলজীকাল ব্যাখ্যা আছে। পরিবেশ পরিস্থিতির ভিন্নতার সাথে সাথে নিরাপত্তার মাত্রা বদলায়।
একজন নারী হিসেবে এটুকু অন্তত জানি, ভালোবাসার নিজস্ব একটা ভাষা আছে যা তার গভীরতাকে পরিপূর্ণভাবে প্রকাশ করে দেয়। সেইসাথে এই মানবিক ব্যাপারটাই মানুষের ব্যক্তিত্ব্যের উপর একটা ছাপ ফেলে দেয়। এরচেয়ে বড় রিপ্রোডাক্টিভ এজেন্ট আসলেই আমি কিছু দেখিনা।
একজন মানুষের পেখম সুন্দর থেকে সুন্দরতর হতে পারে, কিন্তু হৃদয়টা পেখমের সৌন্দর্যের সাথে সাথে বদলায় না। নোবেল বিজয়ী, রাজ্য বিজয়ী, রূপবান/রূপসী হলেই হৃদয় বিজয়ী হওয়া যায় না।
তবে পুরুষের মেটিং স্ট্রাটেজিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কি, আমি এখনো জানিনা, এখনো বুঝিনা, তাদের প্রেম এতো বর্ণময় কিভাবে হয়? শারিরীক রসায়ন নাকি হৃদয়ের রসায়ন? 😕
@নীল রোদ্দুর,
কখনো সখনো এক বছর ধরে ১৫০-২০০ কবিতা লিখে যা করতে হয়েছে, গবেলক ( গবেষক + লেখক) সাহেব যদি বলেন, এত না খেটে একটা হীরার আংটি দিলেই চলত :-X
আমি প্রেমের ক্ষেত্রে কোনদিন কোন মেয়েকে কিছু দিই নি-না কবিতা ছারা কিছুই দিই নি। তাতে কিছু ক্ষতি হয়েছে বলে মনে হয় না। আমার বৌ অবশ্য হীরার আংটির জন্যে পাগল-আমি বলেছি তুমি যখন খুশী কিনে নাও :lotpot: আমার চাপ নেই! :kiss:
@নীল রোদ্দুর,
আপনার আর বিপ্লবের দু’জনের মন্তব্যই দেখলাম। ভাল কিছু পয়েন্ট উঠে এসেছে। তবে কিছু পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। এই যে বিপ্লব বলছে –
ব্যাপারটা মোটা দাগে ঠিক নয়। কবিতার পাঠক আছে। নারীরা অনেকই কবিতাপ্রেমী। বাংলাদেশে বর বড় কবিদের নারী পাঠক অনেকই। এমনকি বহু বোহেমিয়ান কবিকে জানি যাদের নারীসঙ্গিও নেহাত কম নয়। কবিতার মতো ফুলের কথাও বলা যেতে পারে, যা নারীর কাছে প্রিয় বলে বিবেচিত। তাই ভালবাসার ক্ষেত্রে কবিতা এবং ফুল দুটোরই বাজার ভাল। তারপরেও সেগুলো হীরের মত দামী নয়। কেন বলুন তো? কারণ, গোলাপফুল একজন পুরুষের ধন সম্পদের ভাল ইণ্ডিকেটর নয়। এক দিওয়ানা প্রেমিক ইচ্ছে করলেই কারো বাগান থেকে গোলাপ ফুল নিয়ে এসে প্রেমিকার খোঁপায় গুঁজে দিতে পারে। কিন্তু খুব কম মানুষই বিয়ের সময় আট ক্যারেটের ডায়মণ্ডের রিং দেয়ার সামর্থ্য রাখে। তাই দুর্ভাগ্যজনক ভাবে কবিতা বা গোলাপফুল বিপ্লবের আমার আপনার প্রিয় হলেও সনাতন সংস্কৃতির ধারক আর বাহকদের কাছে কোর্টশিপ গিফট হয়ে উঠেনি, হয়ে উঠেছে হীরা বা সোনার অলঙ্কারই। অন্ততঃ আমার তাই মনে হয়।
কিছু জিনিস সত্যই মূল্য দিয়ে বিচার করা যায় না সত্য, কিন্তু কোন না কোন ভাবে বিচার না করা গেলে সেটা বৈজ্ঞানিক আলোচনার অংশ হয়ে উঠে না, আবেগ হয়েই বিরাজ করে। আবেগের মূল্য আমি অস্বীকার করছি না, কিন্তু কিছু বিষয়কে মাত্রায় প্রকাশ না করা গেলে এ নিয়ে আলোচনা অর্থহীন। কিছু উল্লেখ করি –
এই যে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের কসমেটিক্স ইন্ড্রাস্ট্রি টিকে আছে – এর পেছনে কি কারণ বলুন তো? মূল ক্রেতা মেয়েরাই। শুধুমাত্র আমেরিকাতেই প্রতি মিনিটে ১৪৮৪টি লিপ্সটিকের টিউব এবং ২০৫৫ জার স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট বিক্রি হয়। এবং এগুলো ব্যবহার করে মেয়েরাই। কেন বলুন। একটা মূল কারণ আপনাকে সোজাসুজি বলি – কারণ পুরুষেরা মেয়েদের তারুণ্য এবং সৌন্দর্য পছন্দ করে। সাফ কথা। ইদানিং মেয়েদের মধ্যে বোটাক্স, ফেস লিফট, ব্রেস্ট লিফট করার চলও বেড়েছে – এখানেও মূলতঃ মেটিং মাইণ্ডেরই খেলা। এগুলো প্রকারন্তরে কৃত্রিম পেখমই। পেখম মেলে ধরে ব্যক্তিত্ব্যকে আড়াল করা যায় না হয়তো, কিন্তু পুরুষের জৈবিক চাহিদাকে মূল্য দিয়ে তরুনী সাজা কিংবা সাজার চেষ্টা করা যায়, এবং অনেক ক্ষেত্রেই স্ট্র্যাটিজিগত ভাবে আগের চেয়ে সফলও হওয়া যায় (আর যায় বলেই এই বিলয়ন ডলারের ইণ্ডাস্ট্রি টিকে আছে)। 🙂
আবার উলটো দিক দেখি। আট বিলিয়ন ডলারের পর্নোগ্রাফি ইন্ড্রাস্ট্রি টিকে আছে পুরুষের জৈবিক চাহিদাকে মূল্য দিয়ে। মেয়েরা কখনোই পর্ণগ্রাফির ক্রেতা নয়, ছিলোও না কখনো। প্লে বয়ের মত প্লে গার্ল কিংবা ভিভা চালানোর চেষ্টা করা হয়েছিল, চলেনি একেবারেই। এ থেকে পুরুষদের মেটিং মাইন্ড সংক্রান্ত কোন ইঙ্গিত মেলে?
আমি বলছি না যে সমাজ এরকমই হওয়া উচিৎ (উচিৎ অনুচিতের প্রশ্ন আসলে বিজ্ঞানের আলোচনায় অবান্তর, এটা মরালিস্টিক ফ্যালাসি), কিন্তু বস্তুনিষ্ঠভাবে সমাজের প্যাটার্ণ আলোচনা করতে গেলে এভাবেই করতে হবে, উপায় নেই। কেন সমাজ বা মানবপ্রকৃতির বড় একটা অংশ কোন একটা নির্দিষ্ট ছকে আবদ্ধ থাকে সেটা বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের সাহায্যে ব্যাখ্যা করা যায়, সমাজ কিরকম হওয়া ‘উচিৎ’ তা নয়। আরো পরিস্কার করে বললে বিবর্তন কোন অথোরিটি দাবী করে না। কাজেই বিবর্তনের মাধ্যমে পাওয়া তথ্য কেউ ব্যক্তিগত জীবনে কিংবা সমাজে প্রয়োগ করার ঔচিত্যের আহ্বান জানালে সেটা নিঃসন্দেহে একটি ভ্রান্তি বা হেত্বাভাস হবে।
তাই কি ? আমার ধারণা উলটো। ছেলেদের প্রেম অধিকাংশ ক্ষেত্রেই খুব যান্ত্রিক। উপরে পর্ণগ্রাফির উদাহরণটা দিয়েছি লক্ষ্য করুণ। কিছু ইঙ্গিত পাবেন। আরো একটা উদাহরণ দেই। ভায়াগ্রা পুরুষের জন্য কাজ করলেও মেয়েদের জন্য করে না। 🙂 কারণ মেয়েদের প্রেম এত যান্ত্রিক নয়, অনেক বর্ণময়, অনেক ইমোশনের মিশ্রন। ছেলেদের ভায়াগ্রার মতো মেয়েদের জন্য পিঙ্ক ভায়াগ্রা তৈরি করতে গিয়ে বড় বড় কারখানাগুলো চুল ছিঁড়ে ফেলছে সফল হয় নি। কারণ ঐ যে ছোট বেলায় শুনেছি – মেয়েদের মন দেবতারও অগম্য :)) , সত্য কিনা আপনারাই ভাল বলতে পারবেন।
@অভিজিৎ
ছেলেদের প্রেম বৈচিত্রে বর্ণময়, আর মেয়েদের প্রেম আবেগে বর্ণময়। এইজন্যই যান্ত্রিক প্রেমিকদের সাথে আবেগপ্রবণ প্রেমিকাদের প্রেম আমার কেমন অদ্ভুত লাগে। ছেলেদের অধিকাংশ ক্ষেত্রে, সুন্দরী মেয়ে খুঁজে বের করলেই চলে, কিন্তু মেয়েদের তাদের আবেগের সাথে মানানসই কাউকে খুঁজতে হয়। তবে সামাজিক পুরুষের সুন্দরী বউ যেমন সুন্দর জুয়েলারী, তেমনি সামাজিক নারীরও হীরের অলংকার। প্রেমের ব্যাপারটা এভাবে এখন অনেকটাই যান্ত্রিক হয়ে গেছে। প্রেম আসলে আজকাল বেচাকেনা হয়, বাণিজ্যিক পণ্য ছাড়া আর কিছু নয়। সেখানে কবিতার মত জিনিস অচল ফুটো পয়সার মতই।
তবে প্রেম নিয়ে যত কথাই বলিনা কেন, বাংলাদেশের সমাজে মেটিং স্ট্রাটেজি আসলে পাত্র বা পাত্রীকে প্রভাবিত করার চেয়ে তাদের বাবা মা কে করা, অনেক বেশী। হীরের আন্টিং সেখানে মূল্যবান বৈকি। এখানে সফল হতে হলে, পাত্রের পিতাকে ধনবান হতে হবে অথবা পাত্রকে প্রায় ৪০ এর কাছাকাছি বয়সে গিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দিতে হবে। ৪০ এর কাছাকাছি গিয়ে বিয়ের প্রস্তাব তো তাও মানা যায়, পাত্র যা করেছে, নিজের যোগ্যতায় করেছে, ধনবান পিতার পুত্রের তো সোজা হয়ে দাড়াবার অতোটা যোগ্যতাও নেই। কিন্তু মেটিং এর ক্ষেত্রে তারা কিন্তু বাহারী ময়ূর বটে। 🙂
বিপ্লবদা,
কবিতা লিখে প্রেমিকাকে খুশি করাও বোধহয় বিবর্তনীয় মনোবিদ্যা দিয়ে ব্যাখ্যা করা সম্ভব 🙂 উপরে অভিজিৎদাকে দেয়া আমার মন্তব্য দেখতে পারেন।
আমি সজু-সেইমোর-এর পেপারটা পড়লাম। আপনি (অভিজিৎ) কানাজাওয়ারও একটা উদ্ধৃতি দিয়েছেন একই ধরণের দাবি করে — হীরার intrinsic মূল্য নেই ইত্যাদি। যুক্তিটা ওঁরা পুরোপুরি ছিপে তুলতে পেরেছেন বলে মনে হচ্ছে না। অতীতে কোন একসময় হীরার intrinsic মূল্য না থেকে থাকতে পারে, কিন্তু এখন আপনি সহজেই হীরা বিক্রি করে অন্য জিনিস কিনতে পারেন। এই গেইম থিয়োরেটিক ব্যাপারটা ওঁরা ধরতে পেরেছেন কিনা স্পষ্ট নয়। কাজেই extravagant উপহার gold digger দের প্রতিহত করবে, হীরার ক্ষেত্রে এই যুক্তি বোঝা কঠিন। বস্তুত যেসব নারী valuable gift নিয়ে চম্পট দিতে চান, তাঁদরকে সজুর “gold digger” নাম দেয়াটা দারুণ আইরনিক — যেহেতু তাঁদের নিজেদের তত্ব মতেই gold হচ্ছে একটি extravagant উপহার, valuable নয়।
আরো কিছু বিষয় আছে, যেমন মডেলের অতি সরলতা, কিন্তু সেগুলো মূখ্য নয়।
@রৌরব,
হাঃ হাঃ …কানাজাওয়া দেখলেই আপনার মাথায় রক্ত উঠে যায় বুঝতে পারি 🙂 । তবে কানাজাওয়ার উদ্ধৃতিটা কেবল ফারুকের প্রতি মন্তব্যের প্রেক্ষাপটে উঠে এসেছে। আমি অবশ্য জিওফ্রি মিলারের বই থেকেও উদ্ধৃতি দিয়েছিলাম এটা বোঝাতে যে বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের গবেষকরা কোন দৃষ্টিকোন থেকে দেখছেন এই মুহূর্তে। আমার মনে হয় হীরার intrinsic মূল্য না থাকার ব্যাপারটি হীরা কত দামী বা কম দামী সেটা বোঝানো হচ্ছে না। বোঝানো হচ্ছে যে হীরার কোন ব্যবহারিক উপযোগিতা নেই, আলু পটল আইফোন বা কম্পিউটারের মতোন। হীরা বিক্রি করে অন্য জিনিস কিনতে পারা যায়, কারণ হীরা অনেক দামী বস্তু। এবং এই দাম নির্ধজারিত হয়েছে ‘ফিমেইল চয়েস’-এর কারণেই। ফিমেইল চয়েসই জৈববিজ্ঞানে কিন্তু সেক্সুয়াল সিলেকশনের মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করে অধিকাংশ ক্ষেত্রে। চিন্তা করে দেখুন – ময়ূরীর ইচ্ছার কারণেই ময়ূরের পেখম বিবর্ধিত হয়েছে, পুরুষ কোকিলের গলা সুরেলো হয়েছে ইত্যাদি। ঠিক একই কারণে আমরা দেখি – হীরার দাম বাজারে আঁকাশ ছোঁয়া। চিন্তা করে দেখুন তো নারীরা যদি হীরা বা সোনাকে সুন্দর এবং দামী মনে না করতো, লোহা বা এলুমিনিয়ামের মতই একটা সাদা মাঠা দ্রব্য মনে করতো, তাহলে হীরা বা সোনার দাম বাজারে কী এত বেশি হত কখনো?
সজু-সেইমোর গাণিতিক মডেলে সরলতা আছে স্বীকার করছি, কিন্তু আমি মনে করি এটা একটা ভিন্ন এবং শক্তিশালী দৃষ্টিকোন থেকে ব্যাখ্যার প্রয়াস নিয়েছে, যা অতীতে হয়নি। ভবিষ্যতের গবেষণা এবং আরো শক্তিশালী মডেল থেকে হয়তো আমরা আরো ভালভাবে ব্যাপারটা বুঝতে পারব।
@অভিজিৎ,
সে তো ঠিকই। হীরা প্রাথমিক ভাবে কিভাবে দামী হল, সেই ব্যাখ্যায় সজু et al -এর মডেল ঠিক আছে। আমার মূল বিভ্রান্তিটা ছিল যদি বর্তমান পরিস্থিতিতে এই মডেলটাকে প্রয়োগ করতে যান। উনাদের একটা মূল কথা ছিল, extravagant উপহার gold digger দের প্রতিহত করে। কিন্তু সেটা যে হীরার গয়নার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য না, এতো সাধারণ জ্ঞানের ব্যাপার। বিবর্তনীয় কারণেই হোক, আর যাই হোক, হীরার যেহেতু বাজার মূল্য আছে, তাই gold digger রা একে valuable উপহার হিসেবেই দেখবে, extravagant হিসেবে নয়।
ময়ুর পুচ্ছের ক্ষেত্রে মডেলটা অনেক বেশি প্রযোজ্য মনে হচ্ছে। তবে কিনা ময়ুর পুচ্ছ তো ঠিক gift নয়। :-s
@রৌরব,
ইয়ে … পেখম তুলে সেক্সুয়াল ডিস্পলে অনেকটা গিফটই – বিনে পয়সায় পোল ড্যান্সিং দেখা আর কি! 🙂
@অভিজিৎ
এত্তগুলা বছর ভুজুং ভাজুং দিয়ে পার করলাম, ধরা খাইলাম না। টুক টাকের মধ্যে পার। এই লেখা পইড়া আমার বেঙ্গি তো হীরার আংটি ছাড়া কথা কইতাছে না। ……………। এইডা কি কাম করলেন? এক ভক্তরে ডুবাইলেন, আর একটারে ভাসাইলেন। বুইজ্জেন কিন্তু :guli:
@কাজী রহমান,
খাইসে, এবার আপনার জন্য দুঃখ প্রকাশ ছাড়া আর কি করতে পারি, বলুন! 🙂
@অভিজিৎ,
দুশ্চিন্তা কইরেন না, বেঙ্গিরে আবার মূলা দেখাইছি, এইবার সিয়েরা লীওনের মূলা। কইলাম হীরার দ্যাশে গাঞ্জাম লাগছে। গুন্ডা পাণ্ডারা হীরার খনি দখল করলেই এইটার দাম কমব। খনিতে প্রচুর ডিপোজিট থাকার কারনে ওরা লোভের চোটে এইডা সহজলভ্য করব। তখন হীরা আর দূর্লভ থাকব না। তোমার হীরাও পাইলা, আমার পকেটও বাঁচল। আপাতত নিরাপদ। জানি আবার ধরা খামু কারন হীরা যদি দুর্লভই না থাকে এইটার আবার মূল্য কি? :-s
মেয়েরা স্বাস্থ্যবান ও ধনবান সঙ্গী নির্বাচন করতে চায়, আর ছেলেরা? :-s
@তামান্না ঝুমু,
আপনি ভেবেছেন ছেলেরা এত্ত সহজে এই উত্তর দিবে?
@তামান্না ঝুমু,
ছেলে মেয়েদের পছন্দ অপছন্দ আর মেটিং স্ট্র্যাটিজি নিয়ে ভাবছি পরের পর্বটায় লিখব। ব্যাপারগুলো খুবই ইন্টারেস্টিং। 🙂
@অভিজিৎ,
এইবার ভিতরের বিড়াল বাইর হইবো। পুরুষ পেখম দেখিয়ে ঘোষণা করে “এই যে নারী দেখো…” মেয়েরাও নিশ্চয় কিছু দেখায় যাতে করে পুরুষ বুঝে ফেলে কাকে পেখম দেখানো দরকার।
@কাজী রহমান
সবুর করেন, অতিসত্বর উনাদেরও ধরা খাওয়ার ব্যাবস্থা হবে। কী দেখাইতে পারলে পেখম দেখানো হবে সেটাও জানতে পারবো।
খেলা জমসে!! 😀
@টেকি সাফি,
😀 😀 😀
লেখা ভালো লাগলে সেটা না জানানোটা আমার দৃষ্টিতে কারো প্রাপ্য তাকে না দেয়ার মতো অপরাধ! তাই জানিয়ে গেলাম, দারুণ! (Y)
@অনার্য সঙ্গীত,
এই যে অণুজীব গবেষক, পাইছি আপ্নেরে এত্তদিনে। মুক্তমনায় কবে লেখা ছাড়বেন তাই কন। ইমেইল চেক কইরেন।
আর লেখাটা ভাল লেগেছে জেনে আমারো ভাল লাগলো।
@অভিজিৎ দা, ইমেইল পেয়ে অবাক হয়েছি। খুবই অপ্রত্যাশিত ইমেইল! ধন্যবাদ জানিয়ে গেলাম। 🙂
@অনার্য সঙ্গীত, জীবাণুদা, মুক্তমনায় স্বাগতম। 🙂
হাঃ হাঃ সৈকত, এইটাই ক্লাসিক! :))
এ লেখাটি পড়ার পর আমার এক আত্মীয়কে জিজ্ঞেস করলাম, “আপনাকে আপনার হবু স্বামী যদি এক লক্ষ টাকা ও এক লক্ষ টাকার স্বর্ণালংকার দিয়ে বলে এর মধ্যে একটা বাছাই করে নিতে তবে আপনি কোনটা নিবেন?”
তিনি বললেন, ” টাকা” !!
আমি খানিকটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “কেন”?
তিনি বললেন, “তাহলে ওই টাকা দিয়ে আমার পছন্দের স্বর্ণালংকার কিনতে পারব”!!!
মজা করছি না, সত্যিই।
@সৈকত চৌধুরী, এই একটা জায়গায় কারো পছন্দ করা জিনিস তাদের পছন্দ হয় বলে মনে হয় না। গয়নাগাটির সাথে শাড়ি বা পোষাকও যোগ করা যায়।
ফালতু সব বিষয় নিয়ে মাতামাতি করা আমজনতা যেন তাদের একটা নৈতিক দায়িত্ব বলে মনে করে। সামান্য একটা বিয়ে! তাও আবার মান্ধাতা আমলের রাজপ্রথা অনুযায়ী। এ নিয়ে কেন যে মানুষ এতো বাড়াবাড়ি করছে বিষয়টা আমার একদমই বোধগম্য নয়। কয়েকদিন ধরে পত্রিকায় চোখ রাখলেই শুধু এই খবর। প্রথম পাতা, শেষ পাতা, আন্তর্জাতিক পাতা, সবখানে! প্রত্রিকাওয়ালারা পারলে সমস্ত পত্রিকাটাই তৈরি করে এই বিয়ের অনুষ্ঠান নিয়ে। ঐ দিন একটা জাতীয় দৈনিকে দেখলাম, ‘ভূগোলের সাহায্যে চিত্র দিয়ে’ দেখিয়েছে কোথায় কেট-এর জন্ম, কোথায় উইলিয়ামের জন্ম, কোথায় উনাদের প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল! ইত্যাদি ইত্যাদি। মিডিয়ার এই জঘন্যরকম বাড়াবাড়ি দেখলে মনেহয় সবকিছু এক লাথি মেরে মহাকালের নর্দমায় ফেলে দেই। :-X গতকাল সন্ধ্যায় আমার এক রুমমেট টিভিতে ঐ বিয়ের অনুষ্ঠানটা দেখে এসে মহা আনন্দে গদগদ করছে। আমি বিয়ের অনুষ্ঠান দেখি নি শুনে সে বিষ্মিত! তার ভাবখানা এমন, কেট-উইলিয়ামের বিয়ের অনুষ্ঠান দেখে তার জীবন ধন্য, জীবনে আর কিছু না পেলেও তার চলবে। আর আমি দেখি নাই বলে আমি মহাবোকা। মহাবোকা না হলে কি আর কেউ এমন জিনিষ মিস করে?! শুধু আমার রুমমেট-ই না। সন্ধ্যার পর যখন ফেসবুকে ঢুকলাম, একেক জনের স্ট্যাটাস দেখে আমি থ! কেউ লিখেছে, ‘ওয়াও! ওয়াও! হোয়াট এ মেরেজ সিরেমনি ইট ইজ!’; কেউ আবার, ‘কনগ্রাচুলেশন কেট এন্ড উইলি! মে গড ব্লেস ইউ, মে ইউ লিভ লং’; ‘ও ডিয়ার কেট-উইলি, ইউ আর সো সুইট! উই লাভ ইউ! উম্মা!’ ইত্যাদি। যত্তসব পাগলের দল!
@আদম অনুপম,
মনটা একটু হালকা হয়ে গেল। এ রকম পাগলের সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে তথ্য-মাধ্যমগুলোর চরিত্র না পাল্টালে ব্যবসা-বাণিজ্যের দুর্দিন ঘনিয়ে আসবে। তবে তথ্য-মাধ্যমগুলো আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে যাতে পাগলের সংখ্যা না বাড়ে।
@অভিজিৎ ,
উপরে উল্লেখিত প্রায় সব ফিটনেসগুলোর সাথে ১০০% শারীরিক ফিট অর্থাৎ নিরোগ এবং তার সাথে বাড়ী গাড়ী এবং সাদা সোনা দিয়ে বাধা হীরার আংটি য়ুক্ত হলে কি দাড়ায় সেটা আপনার কাছে জানতে কৌতুহলী । একজন আমাকে বলেছেন যে এমন ব্যক্তিকে over- qualified বলে অনেকেই মনে করতে পারেন । এখন মেটিং নির্বাচনে এরকম কথা আমি জীবনে শুনিনি। তাই আপনার মতামত পেলে খুশী হতাম । (@)
@সংশপ্তক,
আগেই গুরুত্ব দিয়েছি ফিটনেস মার্কার -এর যথার্থ বিজ্ঞাপনের উপর। “নিজের অর্জিত সম্পদের সংকেতকে বস্তুনিষ্ঠভাবে অন্যের কাছে তুলে ধরতে হইবেক”। ‘সংসপ্তক’ নাম নিয়ে লুকিয়ে থাকলে আর ব্লগে লেখালিখি করলে কি করে বুঝা যাবে ময়ুরের মত আপনার পেছনেও বিশাল লম্বা পেখম আছে? 🙂 । এদিকে কিছু পয়সা কড়ি ছাড়লে না হয় বুঝতে পারতাম … :))
@অভিজিৎ,
অবাঙালীদের কাছে অবশ্য পেখমটা পরিচিত। 🙂
আমার পেখম দেখানোর পর একটা বহুল পরিচিত “বাংলা উপাধি” লেগে যেতে পারে এই ভয়েই ‘সংশপ্তক’ নামটা থেকে বাংলা মহলে বেড়ুনোর সাহস পাই না । আপনি যদি গ্যরান্টি দেন যে ‘নেমেসিস’ জাতীয় কিছু লেখা হবে না , তাহলে মোসাদের কাছে ছুটির আবেদনটা জমা দিয়ে পয়সা কড়ি নিয়ে আপনার কাছে আসছি। :))
@সংশপ্তক,
😀
অনার্সের রেজাল্টের পরে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটা স্কলারশীপ পেয়েছিলাম। হতদরিদ্র আমি ওটা দিয়েই নিউমার্কেট থেকে আন্নাকে একটা অঙ্গুরী কিনে দিয়েছিলাম। পাছে আমেরিকা প্রবাসী কারো হাত ধরে চলে না যায় সেই প্রচেষ্টায়। বিবর্তনীয় মনোবিদ্যার অকাট(!) যুক্তিকে অকেজো করে দিয়ে চেষ্টাটা কাজে লেগেছিল। 🙂
স্বল্পমূল্যের সেই অঙ্গুরীটি নিয়মিত ব্যবহারে এখন জীর্নপ্রায়। অঙ্গুলীর সাথে নিত্য ঘর্ষণে আর তার মালিকানের অল্প বয়সে করা আবেগীয় ভুলের অনুতাপের নোনা বর্ষণে ঘায়েল হয়ে গিয়েছে বেচারী। আন্না আমাকে অঙ্গুরীর কাহিল দশা দেখায় আর নতুন একটা কিনে দেবার দাবী জানায়। ক্রমাগত হুমকি দেয় এই বলে যে, এক সুলভ অঙ্গুরী দিয়ে আর কতকাল। এটার আয়ু যতদিন আছে, ততদিনই আমি আছি এখানে। তারপর আর খুঁজে পাবে না আমাকে। আমি শুনেও না শোনার ভান করি।
আরেকটা নতুন অঙ্গুরী কিনে দেবার অপ্রয়োজনীয়তা তাকে কীভাবে বোঝাবো, সেটা নিয়েই ব্যতিব্যস্ত এবং বিপদগ্রস্ত সময় যাচ্ছে এখন আমার। 🙁
@ফরিদ আহমেদ,
হেঃ হেঃ আপনি যে ব্লগের নাচনেওয়ালি টাইপ লেখা দিয়ে প্রোপজ না করে অঙ্গুরী কিনে প্রোপজ করেছিলেন, ইহাতে প্রমাণিত হয় যে বিবর্তনীয় মনোবিদ্যার যুক্তিকে অকেজো করেননি, বরং স্বার্থক প্রমাণ করেছিলেন। 🙂
এখন কথা হচ্ছে, সবাই নিজের বাজেট অনুযায়ী মেটিং স্ট্র্যাটিজি ঠিক করে। রহিমুদ্দিন যখন আমিনাকে বিয়ে করার চেষ্টা করে তখন সে চিন্তা করেনা যে চার্লস যখন ডায়নাকে বিয়ে করেছিল তখন ৮ ক্যারটের হীরার আংটি দিয়েছিল -তাই তাকেও সেরকমই দিতে হবে। বরং ভাবে, এক আনি সোনা দিয়ে আমিনাকে একটা নাকফুল কিনে দেই। এখন তিনি রহিমুদ্দিন না হয়ে অভিষেক বচ্চন হতেন তখন ঐশ্বরিয়া রাইকে বিয়ে করার জন্য সেই স্ট্র্যাটিজি আর কাজ করতো না। কাজেই বাজেট অনুযায়ী চিন্তা করতে হয় সবাইকেই।
আর আমার অবস্থাও আপনের মতোই। আমি যে আংটি দিসিলাম বন্যারে এঙ্গেঞ্জমেন্টের সময় তার চেয়ে ছোট হীরার আংটি এই পৃথিবীতে মনে হয় না আর আছে। সেইটা পইড়াই সে ঘুরে ; কি আর করা। সেজন্যই তো ইভলুশনারী ভাবে আমি মিসফিট 🙂
@অভিজিৎ,
বন্যার দেয়া জিনিস কি হারিয়ে ফেলেছেন? সব শুধু দেয়ার কাহিনী , নেয়ার কাহিনী কি নেই?
@গীতাদি,
আরে নেয়ার কাহিনীও আছে। তবে সেটা আরেক কাহিনী, আরেকদিন বলা যাবে। 🙂
আর ঐ জিনিস হারাবো? আমার ঘারে কয়টা মাথা? মাঝে মধ্যে তাড়াহুড়ার মধ্যে আংটি পড়তে ভুলে যাই, তাতেই যা অবস্থা হয় …
অভিজিৎদা,
বিয়ে করিনি, কিন্তু এখন পর্যন্ত আমার বান্ধবীর ভাগ্যে জুটেছে আলুমিনাম ফয়েল পেঁচিয়ে বানানো আংটি। সেটা আঙ্গুলে পড়ে থাকলে ৭ দিন টিকবে কিনা সন্দেহ, তাই সেটা এখন পড়ার টেবিলেই শোভা পায়। বছরখানেক আগে ওই আংটি পেয়ে যতটা সুখী হয়েছিল, আমার মনে হয়না কষ্টশিষ্ট করে ভবিষ্যতে একটা হীরা দিতে পারলে তার বিন্দুমাত্র সুখ পাবে ও। তাই পরবর্তীতে হয়তো ওয়ার্কশপ থেকে বড়জোড় কোন টাইটেনিয়াম স্ট্রিপ, বা গ্লাস ফাইবার কুড়িয়ে সেগুলো দিয়ে আসল আংটি বানাতে বসবো :-s
আমার মনে হয়েছে আমাদের কীর্তিকলাপও বিবর্তনীয় মনোবিদ্যা দিয়ে খুব সুন্দর ব্যাখ্যা করা যায়। ফয়েল পেঁচানো আংটি বানাতে বা বানানোর প্লান করতে কিছুটা হলেও সৃজনশীলতার প্রয়োজন ( হে! হে! নিজের ঢোল পিটাই) । সারভাইভেলের জন্য সৃজনশীলতা একটা রিসোর্স। আংটি নামের অপ্রয়োজনীয় দ্রব্য বানাতে সেই রিসোর্স অপব্যয় করছি আমি।
“কৃত্রিম প্রাণ তৈরি করলেন বিজ্ঞানীরা” প্রবন্ধে মুক্তমনায় লেখা আমার প্রথম কমেন্ট দিয়েছিলাম। সুযোগ পেলে উত্তর দিয়েন।
@জয়,
সময়ের অভাবে সব মন্তব্যের উত্তর দিতে পারছি না। কিন্তু আপনার এই চমৎকার মন্তব্যের উত্তর না দেয়া অপরাধই হবে। আপনার এবং আপনার বান্ধবীর জন্য শুভ কামনা রইলো। আশা করব বিয়ের সময় আলুমিনাম ফয়েল পেঁচিয়ে বানানো আংটি দিয়ে বিয়ে করতে হবে না। তখন সব শুদ্ধ উসুল করে দিয়েন 🙂
হ্যা “কৃত্রিম প্রাণ তৈরি করলেন বিজ্ঞানীরা” প্রবন্ধে আপনার কমেন্ট মনে পড়ছে। ধন্যবাদ আপনাকে সাথে থাকার জন্য। নিয়মিত আলোচনায় অংশ নিন।
ধন্যবাদ আবারো।
ধন্যবাদ অভিজিৎদা। ২০০৬ এর পরে মুক্তমনায় আসা প্রায় ছেড়ে দিয়েছিলাম অনেকটা হতাশা থেকে। মনে হয়েছিল, কি লাভ শুধু মুক্তমনাদের সাথে এসব আলোচনা করে। কিছু বন্ধুত্ব হবে, ব্যাস। যাদের কাছে এসব বক্তব্য পৌঁছানো উচিৎ তারা তো কিছু পাচ্ছে না। ভুল ভেবেছিলাম- বুঝতে পারলাম মুক্তমনায় একদিন এক মাদ্রাসার ছাত্রর মন্তব্য পড়ে। বাংলা ব্লগ যে এতো এগিয়ে গিয়েছে জানতাম না। নতুন করে কিছু হলেও যুক্তিবাদী মানুষ আপনারা তৈরি করতে পারছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকার পর বাস্তবতা কিছুটা হলেও মনে হয় মেনে নিতে শিখেছি- অল্প অল্প করেও সমাজ পরিবর্তন সম্ভব, এবং এই উপায়ে পরিবর্তন যে সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য স্রেয় তা বুঝতে শিখেছি। তবুও ভিতরের অস্থিরতা চলে যায়নি পুরোপুরি। এখনো, হয়তো এই ছোট জীবনের অনভিজ্ঞতার জন্য, আরও তড়িৎ পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখে ফেলি, উপায় খুজতে থাকি। “কৃত্রিম প্রাণ তৈরি করলেন বিজ্ঞানীরা” প্রবন্ধে সে জন্যই কমেন্ট করেছিলাম।
মুক্তমনার জন্য একটা লেখায় হাত দিয়েছিলাম। বাংলাদেশের সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের ব্যাপ্তি, কারন এবং তা কমানোর কিছু engineering solutions. উদাহরণ- বাংলাদেশের বেশির ভাগ বাসে সাধারন কাঁচ ব্যবহার করা হয়। দুর্ঘটনার সময় এইসব কাঁচ ছুরির ফলার মতন মানুষকে আঘাত করে। অথচ দেশেই এখন তুলনামূলক ভাবে নিরাপদ টেম্পারড গ্লাস তৈরি হয়। আইন করে ২-স্ট্রোক ইঞ্জিন ব্যবহার বন্ধ করা গিয়েছে, টেম্পারড গ্লাস ব্যবহার কেন শুরু করা যাবে না? এজন্য দরকার জনসচেতনতা আর সরকারের এই বিষয়ে কিছু জ্ঞান। এবং তা তৈরি করা সম্ভব মানুষকে এই বিষয়ে কিছু সাধারণ বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিয়ে।
লেখাটা আটকে থাকার একটা বড় কারন দুর্ঘটনার কিছু ছবি এবং কিছু পরিসংখ্যানের অভাব। মুক্তমনার কেউ (সাংবাদিক বা রেকর্ড ফাইলে হাত দিতে পারেন এমন কেউ হয়তো) যদি সাহায্য করে আমার জন্য অনেক সহজ হবে ব্যাপারটা। সেমিস্টার শেষ হবার আগে এই লেখা শেষ করতে পারবনা জানি, তবুও পারলে আমাকে এই ব্যাপারে কিছু নেটওয়ার্ক করে দিয়েন অভিজিৎদা। অনেক ধন্যবাদ।
@ফরিদ আহমেদ,
আন্নার দেয়া উপহার অনুল্লেখ থাকা কি সঠিক। দেয়নি? আমার তো মনে হয় দিয়েছিল।আর এ নিয়ে ফরিদের অনুভূতিও কি অনুচ্চারিতই থাকবে?
@গীতা দাস,
হ্যা?? অনুচ্চারিতই থাকবে?? :hahahee: একপেশে ভালবাসা দেখ্যায়া বগল বাজানির দিন শ্যাস! এইডা মুক্তমনা বুঝতে হইবো :))
@গীতা দাস,
ভুলে আপনার কমেন্টের নিচে কমেন্ট করে ফেলেছি। দুঃখিত!
@ফরিদ আহমেদ,
হ্যা?? অনুচ্চারিতই থাকবে?? :hahahee: একপেশে ভালবাসা দেখ্যায়া বগল বাজানির দিন শ্যাস! এইডা মুক্তমনা বুঝতে হইবো :))
বুঝলাম উইলিয়াম ও কেটের বিয়ে নিয়ে মিডিয়ার বাড়াবাড়িতে আপনি বিরক্ত , তাই বলে বিবর্তনীয় ব্যাখ্যা দিতে যেয়ে এমন গোঁজামিল ? মহিলাদের গহণাপ্রীতি নিয়ে অনেক পুরুষই ত্যাক্ত বিরক্ত , তবে এর সাথে ডারউইনের সেক্সুয়াল সিলেকশন তথা যৌনতার নির্বাচনের কোন সম্পর্ক আছে বলে মনে হয় না। নারীদের গহণার চাহিদা পুরনে সক্ষমতা কোন ভাবেই পুরুষের ‘ফিটনেস ইণ্ডিকেটর’ বা সুস্বাস্থ্যের মাপকাঠি নয়। অল্প সংখ্যক সেল্ফ মেড ধনী ছাড়া বেশিরভাগ ধনীব্যাক্তিই উত্তরাধিকারসুত্রে ধনী। ধন সুস্বাস্থ্যের গ্যারান্টি দেয় না। ধনী ব্যাক্তিকে জীবণসঙ্গী করার পেছনে সুস্বাস্থ্য নয় বরং ধন প্রধান চালিকা শক্তি।
@ফারুক,
ফারুক, আমি গোঁজামিল দেইনি। বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের আধুনিক গবেষণার ফলাফল বস্তুনিষ্ঠভাবে প্রকাশ করেছি মাত্র। আমার কথা বিশ্বাস না হলে আপনি জিওফ্রি মিলারের ‘মেটিং মাইন্ড’ বইয়ের ১২৪ – ১২৫ পৃষ্ঠা পড়তে পারেন। আমি কিছু উদ্ধৃত করি –
How could mate choice favor a costly useless ornament over a cheaper more beneficial ornament? Why should a man give a women a useless diamond engagement ring, when he could buy her a nice big potato, which she could atleast eat? ….. The handicap principle suggest that prodigious waste is a necessary feature of sexual courtship. … In nature, showy waste is the only garantee of truth in advertizing.
একই কথা বলা হয়েছে এলেন মিলার এবং কানাজাওয়ার ‘হোয়াই বিউটিফুল পিপল হ্যাভ মোর ডটারস’ বইয়ে একটু অন্যভাবে। আমি উদ্ধৃত করি (পৃঃ ৯৪ – ৯৫)-
Diamonds make excellent courtship gifts from this perspective because they are simultaneously very expensive and lack intrinsic value. No man (or woman) can be inherently interested in diamonds; you cannot drive them, you cannot live in them, you cannot do anything with them. Any man who would buy diamonds for a woman must be interested in making an investment in her. Flowers, another favored gift for women, are also relatively expensive and lack intrinsic value. Of course, diamonds and flowers are beautiful, but they are beautiful precisely because they are expensive and lack intrinsic value, which is why it is mostly women who think flowers and diamonds are beautiful. Their beauty lies in their inherent uselessness; this is why Volvos and potatoes are not beautiful.
আমার মূল বইয়ে পিটার সজু এবং রবার্ট সেইমোর ২০০৫ সালের ‘Costly but worthless gifts facilitate courtship’ নামের একটি গবেষণাপত্রের রেফারেন্সও দিয়েছি। আপনি মনে হয় পড়েন নি। সেই পেপারে গাণিতিক ফরমুলেশন করে দেখানো হয়েছে যে, নাপশাল গিফটের ক্ষেত্রে অপব্যয়ী অপদ্রব্যই মূখ্য হয়ে উঠে ।
আপনি যেটা বোঝেননি সেটা হচ্ছে, আমি বলিনি যে, ধন সুস্বাস্থ্যের একমাত্র গ্যারান্টি। বরং খুব স্পষ্ট করেই বলেছি যে, সম্পদ বলতে কেবল শুধু বাড়ি গাড়ি টাকা পয়সা, জুতো জামার কথাই আমি বোঝাচ্ছি না, সেই সাথে আমাদের বিজ্ঞাপিত সম্পদের তালিকায় চলে আসবে শিক্ষা, বুদ্ধিবৃত্তি, জ্ঞান, সাহস, দৈহিক শক্তি, সঙ্গিত প্রতিভা, বাকচাতুর্য, সুদর্শন চেহারা, কৃষ্টি, নৃত্যপটুতা, প্রগতিশিলতা, অধিকার সচেতনতা, উদ্ভাবনী শক্তি, দৈহিক সৌন্দর্য, সততা, নৈতিকতা, দয়াপরবশতা, রসিকতা, হাস্যরসপ্রিয়তা সহ অনেক কিছুই। সেজন্যই এগুলো বিপরীত লিঙ্গের কাছে প্রিয় হয়ে উঠে। তারপরেও আপনি বলুন কেন পাশ্চাত্যে এঙ্গেঞ্জমেন্টের সময় সব ছেড়ে হীরের আংটি প্রিয় হয়ে উঠে, কিংবা কেন বাংলাদেশেই বিয়েতে সোনার গহনা পরে বিয়ের চল আছে? এর কারণ এ গিফটগুলো সনাতন সম্পদ থেকে আলাদা; সেজন্যই সেগুলো কোর্টশিপ গিফট বা নাপশাল গিফট।
আপনাকে আরো লিঙ্ক দিয়ে আমি সাহায্য করতে পারি। আপনার উচিৎ আরেকটু পড়াশুনা করে আমাকে অভিযুক্ত করা।
@অভিজিৎ, ধন্যবাদ উত্তরের জন্য।
আমি জানি আমার আরো পড়াশুনা করা উচিৎ এবং সেটা করার চেষ্টা ও করি। আপনার যে অনেক পড়াশুনা , সেটা ও আমি জানি এবং সে কারনেই মনে হয় আপনার পক্ষেই সম্ভব গোঁজামিল দিয়ে পার পাওয়া।
কেন আমার কাছে গোঁজামিল মনে হয়েছে সেটা আমার মন্তব্যের বোল্ড করা অংশটুকু লক্ষ্য করলেই বুঝতে পারার কথা। আপনি তার ধারে কাছেও না গিয়ে , নাপশাল গিফটের ক্ষেত্রে অপব্যয়ী অপদ্রব্যই মূখ্য হয়ে উঠে সেটাই বিভিন্ন জনের লেখার উদ্ধৃতির মাধ্যমে প্রতিমন্তব্যে প্রমাণ করেছেন। কিন্তু এটাতে তো আমি আপত্তি করিনি। আমার আপত্তি ছিল নাপশাল গিফটের ক্ষেত্রে অপব্যয়ী অপদ্রব্যকে বিবর্তনের সাথে জড়ানো নিয়ে।
দেখা যাক আপনার পোস্টে কি বলেছেন-
এর সমর্থনে আনলেন ময়ুরের উদাহরন।
ময়ুরের ব্যাপারে ঠিক আছে ,কারন তার বিজ্ঞপিত অঙ্গটি নিঃসন্দেহে ‘কস্টলি অর্নামেন্ট’ এবং এটা তার ‘ফিটনেস ইণ্ডিকেটর’ বা সুস্বাস্থ্যের প্রমাণ। কিন্তু কোন পাগলেও কি বলবে , হীরার আংটি বা সোনাদানা কোন পুরুষের ‘ফিটনেস ইণ্ডিকেটর’ বা সুস্বাস্থ্যের প্রমাণ? এটাকে গোঁজামিল ছাড়া আর কি বলা যায়?
কোন পুরুষ যদি কোন নারীর কাছে যেয়ে বলে , ““এই যে মহীয়সী নারী , আমার দেয়া হীরার আংটির দিকে তাকাও; দেখো — আমি সুস্থ, আমি সুন্দর! আমি এমনই স্বাস্থবান আর শক্তিশালী যে, আমি ৯ ক্যরটের হিরার আংটি গিফট দিতে পারি অবলীলায়।”
ব্যাপারটা কেমন শোনাবে? ভাবতেও হাসি পায়! :hahahee:
@ফারুক,
আপনি যে ভাষায় তর্ক করছেন, সেই ভাষায় আমার জন্য তর্ক করা অসুবিধা জনক। আপনার যদি কোন বিষয়ে জানার আগ্রহ থাকে তাহলে প্রশ্ন করতে পারেন। কিন্তু রেফারেন্স দেওয়ার পর আপনি যদি বলতে থাকেন, ‘সে কারনেই মনে হয় আপনার পক্ষেই সম্ভব গোঁজামিল দিয়ে পার পাওয়া’, কিংবা ‘পাগলেও বুঝবে’ – তাহলে আমি অপারগ। আমি কেবল আপনাকে তথ্যই দিতে পারি। আপনার প্রয়োগ করা বিশেষণের ব্যাপারে আমার কিছু বলার নেই।
আপনার শেষ লাইনটি থেকে বুঝতে পারা যায় যে সেক্সুয়াল সিলেকশনের ব্যাপারটি আপনি ধরতে পারেননি, কিংবা ধরতে পারলেও প্রাণিজগতের (যেমন ময়ূরের) সেক্সুয়াল সিলকশন স্বীকার করে নিলেও মানুষের মেটিং স্ট্র্যাটিজিতেও যে সিলেকশন কাজ করতে পারে – সেটা আপনি মাথায় ঢোকাতে চাচ্ছেন না। অপব্যয়ী অপদ্রব্যকে বিবর্তনের সাথে জড়াতে তো হবেই। কারণ সেক্সুয়াল সিলেকশনের কারণে অপব্যয়ী দ্রব্যগুলো দৃষ্টিকটুভাবে বিবর্ধিত হয়ে উঠে। এটা আমি নই, যে কোন জীববিজ্ঞানী মাত্রই জানেন।
সেক্সুয়াল সিলেকশন এক এক প্রজাতিতে একেক রকমভাবে কাজ করে। ময়ুরের বিবর্ধিত পেখম গজিয়েছে, কোকিলের তো তা হয়নি। কিন্তু কোকিলের সুরেলো গলা তৈরি হয়েছে। বাবুই পাখির ক্ষেত্রে সুরেলো গলা বা পেখম কোনটিই তৈরি হয়নি। বাবুই পাখুর ক্ষেত্রে তৈরি হয়েছে অদ্ভুত বাসা বানানোর ক্ষমতা। গাপ্পি মাছের ক্ষেত্রে উজ্জ্বল গায়ের রঙ। এগুলো সবই ‘কস্টলি অর্নামেন্ট’। কেউ তো বলছে না যে, ময়ুরের ক্ষেত্রে পেখম থাকলে সেটা গাপ্পির ক্ষেত্রেও একই রকমের কিছু হতে হবে, কিংবা বাবুইয়েরও পেখম থেকতে হবে।
মানুষের ক্ষেত্রে সেক্সুয়াল সিলেকশনের অপদ্রব্যগুলো শরীরে নয়, সংস্কৃতিতে নিহিত। সংস্কৃতির বিবিধ উপাদান মানুষের মেটিং স্ট্র্যাটিজিতে ভূমিকা পালন করে। শিক্ষা দীক্ষা, সুস্বাস্থ্য, ধন সম্পদ সহ অনেক কিছুই এখানে অর্নামেন্ট। হীরার আংটি বা সোনাদানা কোন পুরুষের ‘ শরীরের ফিটনেস ইণ্ডিকেটর’ বা সুস্বাস্থ্যের প্রমাণ না, কিন্তু পর্যাপ্ত ধন সম্পদের প্রমাণ। সেটার প্রমাণ আপনি নিজেই জানেন। এজন্যই ধনী শিল্পপতিরা (অনেক সময় নিজেরা কুৎসিৎ দেখতে হওয়া সত্ত্বেও) সহজেই সুন্দরী এবং আকাংক্ষিত নারীকে ঘরে তুলতে পারেন। একজন ফারুকের পক্ষে সম্ভব হয় না কেট , রানী মুখার্জি, ঐশ্বরিয়া রাইকে ডেট করার। যত সুস্বাস্থ্যই থাকুক না কেন, ধন সম্পদ, স্ট্যাটাস এগুলো অবশ্যই বড় ধরণের ইণ্ডিকেটর। সেগুলোই বিভিন্নভাবে মানুষের মেটিং স্ট্র্যাটিজি রচনায় কাজ করে।
স্বাস্থ্যবান নয়, শোনাবে যে আপনি অনেক ধনবান, অনেক সম্পদশালী। আপনি হিলারী ডাফকেও প্রস্তাব দিতে পারবেন 🙂
@অভিজিৎ,মুশকিল হলো , মন্তব্য বা লেখার সমালোচনা করলেই মনে করেন আমি প্রতিপক্ষ।
যাই হোক , ধন্যবাদ , ধৈর্য্য ধরে আমার মন্তব্যের জবাব দেয়ার জন্য।
@ফারুক,
আপনি বুঝতে ভুল করছেন । মেটিং নির্বাচনে সুস্বাস্থের পাশাপাশি সবচেয়ে গুরুত্ত্বপূর্ন ফ্যাক্টরগুলোর অন্যতম হচ্ছে নিজ এবং সন্তান সন্ততির নিরাপত্তা। স্বাধীন পরিবেশে একজন নারী সেই পুরুষকেই তার প্রকৃত সঙ্গী হিসেবে বেছে নেয় যে এই সার্বিক নিরাপত্তাটুকু দিতে পারে। এটা প্রতিটা প্রাণীর ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রযোজ্য। ৯ ক্যরটের হীরার আংটি কেন তার চেয়েও দামী উপহার দেয়ার ক্ষমতা যার আছে , তিনি আর যাই হোক নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন না। গরীবের বউয়ের উপর অনেকে নজর দিলেও ক্ষমতাশালীদের ক্ষেত্রে ব্যপারটা অত সহজ নয়।
একটু আপনার পরিচিত মহলে চোখ বুলান , দুর্দান্ত সাহসী এমনকি চরমভাবে দেখলে দূর্বৃত্ত পুরুষদের স্ত্রীরা কি চশমা পড়া নিরীহ গোবেচারাদের স্ত্রীদের চেয়ে বেশী সুন্দরী নয় ? তাদের কখনও সঙ্গীর অভাব হয় না। the bold and the beautiful শোনেন নি কখনও ?
@সংশপ্তক,
হবে হয়তো। নিরাপত্তা নিয়ে আমাদের দেশে মেয়ের বাপ মা কে যতটা ভাবতে দেখি , মেয়েকে ততটা নয়। প্রেমের ব্যাপারে আমাদের দেশে বা বিদেশে ও মনে হয় না নারীরা নিরাপত্তাকে গুরুত্ব দেয়। আমাদের আন্না ভাবী তার জলজ্যান্ত উদাহরন। আমেরিকা প্রবাসী কারো হাত ধরে চলে না যেয়ে , আমাদের হতদরিদ্র সবল ফরিদ ভাইকে বেছে নিয়েছেন।
সকল প্রাণীর কথা জানি না। তবে সিংহের ব্যাপারটা ব্যাতিক্রম। নুতন যে পুরুষ সিংহটি দলপতি হয় , তার প্রথম কাজটিই হলো পূর্ব দলপতির ঔরশে জন্ম নেয়া সকল সিংহ শাবককে মেরে ফেলা।
ক্ষমতাশালী পুরুষদের কাছে এটা ভাল লাগলে ও মেয়েদের কাছে মনে হয় না ভাল লাগে। মেয়েদের সোনাদানা , হীরা রত্নের অলঙ্কারের প্রতি মোহের কারন হলো এগুলো পরে নিজেকে আকর্শনীয় দেখতে সুন্দর করে তোলা। তাহলে তো নারীদের ক্ষমতাশালীদের বউ না হতে চাওয়ারি কথা। কারন সেক্ষেত্রে তার সৌন্দর্য দেখার লোক পাওয়া যাবে না।
@ফারুক,
কিন্তু সেই মেয়েই আবার মা হয়। ভবিষ্যতের বংশানু রক্ষার মানসিক প্রক্রিয়াটা তার সঙ্গি নির্বাচনের সময়েই তৈরি হয়। এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া।
ছেলেরা যেমন বহু কিছুকে গুরুত্ব দেয়, মেয়েরাও দেয়। সবারই ভিন্ন ভিন্ন স্ট্র্যাটিজি আছে। আপনি যেমন বলেছেন, আমাদের আন্না ভাবী তার জলজ্যান্ত উদাহরন। আমেরিকা প্রবাসী কারো হাত ধরে চলে না যেয়ে , আমাদের হতদরিদ্র সবল ফরিদ ভাইকে বেছে নিয়েছেন, তেমনি আবার অনেকে বলতে পারেন, আন্না ভাবী ফরিদ ভাইকে বেছে না নিয়ে আর্থিকভাবে তার চেয়েও দীন হীন একজন রিক্সাওয়ালা বা মুটে ব্যবসায়ীকে বিয়ে করতে পারতেন। কিংবা ঐশ্বরিয়া রাই অভিষেককে না বিয়ে করে আমার মতো অভিজিৎকে বিয়ে করতে পারতেন। কেন ঐশ্বরিয়ার মত স্ট্যাটাসের মেয়ে অভিজিৎকে বিয়ে করেন না কিংবা আন্না রিকসাওয়ালার ছেলেকে বিয়ে না করে কৃষিবিশ্ববিদ্যালয়ের ফরিদ আহমেদকে বিয়ে করেন, এই রহস্যভেদ করতে পারলেই আপনি ব্যাপারটা ধরতে পারবেন। কিছুটা ইঙ্গিত পাবেন অধ্যাপক ডেভিড বাসের এই গবেষণাপত্রে।
ব্যতিক্রম নয়। এই ব্যাপারটি শুধু সিংহ নয়, একই ধরণের ব্যবহার দৃশ্যমান ছোট স্কেলে গরিলা, বাঘ, চিতাবাঘ প্রভৃতি প্রাণীর মধ্যেও। ‘পূর্ব দলপতির ঔরশে জন্ম নেয়া সকল সিংহ শাবক’ কথাটি এখানে গুরুত্বপূর্ণ। মানব সমাজেও এই ট্রেন্ড কিছুটা হলেও আছে। ছেলে মেয়েদের উপর সৎবাবা কিংবা সৎ মার অত্যাচার জেনেটিক বাবা মার চেয়ে বেশি। ব্যাপারটিকে বলে ‘সিণ্ডারেলা সিণ্ড্রোম। এ নিয়ে কিছুটা আলোচনা করেছিলেম এই পর্বে। আসলে বিবর্তনীয় প্রেক্ষাপটে চিন্তা করলে তাই পাওয়ার কথা। জৈব অভিভাবকেরা তাদের জেনেটিক সন্তান খুব কমই নির্যাতন বা হত্যা করে, কারণ তারা সহজাত কারণেই নিজস্ব জিনপুল তথা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ধ্বংসের চেয়ে রক্ষায় সচেষ্ট হয় বেশি, কিন্তু সৎঅভিভাবকদের ক্ষেত্রে যেহেতু সেই ব্যাপারটি ‘জেনেটিকভাবে’ সেভাবে নেই,অনেকাংশেই সামাজিকভাবে আরোপিত, সেখানে নির্যাতনের মাত্রা অধিকতর বেশি পাওয়া যায়।
ডেভিড বাসের গবেষণায় তার বিপরীত চিত্রই পাওয়া গেছে। ছেলেদের ক্ষেত্রে বিয়ের সময় স্ত্রীর সৌন্দর্য থাকে প্রাইম ফ্যাকটর। কিন্তু মেয়েদের ক্ষেত্রে স্ট্র্যাটিজি থাকে আলাদা। তাদের কাছে স্বামীর সৌন্দর্য গুরুত্বপূর্ণ থাকে না। তারচেয়ে স্বামীর সোশাল স্ট্যাটাস, প্রতিপত্তি ইত্যাদি বেশি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাকট্র থাকে। অবশ্যই ব্যক্তিগত স্কেলে অবশ্যই অনেক ব্যতিক্রম পাওয়া যায়, কিন্তু আমরা যখন বিবর্তনীয় দৃষ্টিকোন থেকে কোন কিছু ব্যাখ্যা করি তা গড়পরতা ট্রেন্ড্রের কথা বলি। মুষ্ঠিযোদ্ধা লায়লা আলীর শক্তিমত্তা আমার চেয়ে বেশি হতেই পারে, কিন্তু তা বলে পুরুষের গড়পরতা শক্তিমত্তা যে মেয়েদের চেয়ে বেশি তা ভুল প্রমাণিত করে না। ঠিক একই কারণে, আমরা বলতে পারি, ব্যতিক্রমী বিচ্ছিন্ন উদাহরণগুলোও বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের সামাজিক প্যাটার্ণগুলোকেও ভুল প্রমাণিত করে না। টম ক্রুজের উচ্চতা তার সঙ্গি কেট হোমসের উচ্চতার চেয়ে ছোট হতে পারে কিন্তু তা বলে এটি ‘মেয়েরা সঙ্গি হিসেবে তাদের চেয়ে লম্বা ছেলে পছন্দ করে’- এই প্যাটার্ণকে ভুল প্রমাণ করে না, ঠিক একইভাবে এস্টন কুচার তার চেয়ে ১৬ বছরের চেয়ে বড় ডেমি মুরকে বিয়ে করলেও এটি ভুল প্রমাণিত করে না যে, ছেলেরা সঙ্গি খোঁজার সময় সাধারণতঃ বিগতযৌবনা নয়, বরং উদ্ভিন্নযৌবনা তরুণীদের (যারা তার চেয়ে অন এভারেজ বয়সে ছোট) প্রতিই লালায়িত হন বেশি। অঞ্জন দত্তের গানে বেলা বোস চাকরী- বাকরীহীন বেকার লোকের প্রেমে পড়তেই পারে, কিন্তু সার্বজনীনভাবে মেয়েরা যে সঙ্গি হিসেবে নির্বাচনের ক্ষেত্রে অর্থবিত্তসম্পন্ন লোককে অধিকতর প্রীতি বা অনুগ্রহ দেখায় বলে বিভিন্ন সমীক্ষায় উঠে এসেছে তা ভুল হয়ে যায় না।
আপনার ঔৎসুক্যগুলো ভাল লাগছে। ভাল লাগলো এ নিয়ে আলোচনা করতে।
@অভিজিৎ,
ওই মিয়া, ভুল তথ্য দাও ক্যান! আন্না যখন আমারে বিয়া করছে তখন আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। মাস্টার্স শেষ করি নাই তখনও আমি। সেই সময় আমার আয় একজন রিকশাওয়ালার চেয়েও কম ছিল। মাথার উপরে ছাদও ছিল না কোনো। গাছ্তলাই ছিল একমাত্র সম্বল।
@ফরিদ আহমেদ,
হাঃ হাঃ … কিন্তু পরে তো কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, আর আমেরিকা প্রবাসী / ক্যানাডা প্রবাসী সবই হৈছেন। নিশ্চয় আপনার সেই সময়কার সাদাসিধা মাগার কস্টলি সিগন্যালগুলা আন্না আপা ধরতে পারসিলো কোন না কোন ভাবে 🙂 ।
বুয়েটের কিংবা মেডিকেলের ছাত্র/ছাত্রীদের বাংলাদেশের বিয়ের বাজারে নাকি অনেক দাম। এর কারণ হৈল ভবিষ্যতের পোটেনশিয়াল রিসোর্সের সিগন্যাল পেতে শুরু করে অভিভাবকেরা তখন থেকেই, সেইটা সে বুঝুক আর নাই বুঝুক।
কি যন্ত্রণা! প্রেমের খায়েশ মিটে গেলো আমার। (U)
পুতুল সেজে ঘুরতে পারুম না।
@নীল রোদ্দুর,
হাঃ হাঃ তা কেন, আপনি বলতে চাচ্ছেন – আপনার মেটিং সরি প্রেমের স্ট্রেটিজিতে হীরা সোনা দানা তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়। ময়ুরী সাম্রাজ্যে আপনি এমন ময়ুরী হতেন, যিনি কিনা পেখমের ব্যাপারে খুঁতখুঁতে নন 🙂 । মানে দীর্ঘ পেখমওয়ালা ময়ুর না হলেও তার চলবে। আপনার স্ট্র্যাটিজির ব্যাপারে লেখায় ইঙ্গিত করেছিই –
তাও যদি না হয়, তবে আপনার হবু প্রেমিকের জন্য আইদাহ আলু হাতে করে আপনাকে প্রেমের প্রস্তাব করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। 🙂
@অভিজিৎ,
ইয়ে মানে ভাইয়া, প্রেমের প্রস্তাব দিলেই আমার আগ্রহ উবে যায়। সে যেই দিক না কেন। আর সম্পদ বলতে আর যা যা কিছু আছে, সেগুলো ভালোই লাগে, সুদর্শনের সুন্দর চেহারার সাথে প্রেমের বচন মনে লাগে না। আমার তো চুপ করে চেয়ে থাকতেই ভালো লাগে, বকর বকর কম করে। আর যার বুদ্ধিমত্তা, উদ্ভাবনী ক্ষমতা আমাকে মুগ্ধ করে সে কখনো প্রেমের বানী শোনালে প্রেম করা তো দূরে থাক, বুদ্ধির ঝলক দেখতেও আর ভালো লাগে না। মহা যন্ত্রণায় আছি… :-X তার চেয়ে আমাকে প্রস্তাব না দেয়াটাই হল বুদ্ধিমানের কাজ। :))
@নীল রোদ্দুর, প্রস্তাব না দিয়ে প্রস্তাব করা! কঠিন ব্যাপার!!
তবে দেখেন শেষ পর্যন্ত আবার “প্রেম একবারই এসেছিল নীরবে…” গানটি গেয়ে কান্নাকাটি না করতে হয়! 🙂
@শ্রাবণ আকাশ, মন শুধু মন ছুঁয়েছে …এটা হলে প্রস্তাবের দরকার হয়না, বিয়েতে দরকার হয়, কারণ সামাজিক ব্যাপার বলে কথা।
এটা হলে তো ভালোই হত। আমার ভাই একটা প্রেম নিয়েই জীবন কাটানোর ইচ্ছা। 🙂
অভিজিৎদার সব লেখাই চমৎকার লাগে। এটাও ভাল লেগেছে। তবে এটা সম্ভবত একটু তাড়াতাড়ি লেখার ফলে আগের পর্বগুলোর মতো হয়ে ওঠেনি।
আচ্ছা কিছুদিন পর যদি খুব স্বল্পমূল্যে কার্বন থেকে হীরক উৎপাদন সম্ভব হয়, তখনও কি প্রেমিকারা প্রেমিকদের কাছ থেকে হীরার আংটি চাইবে?
মানে ধরুন ৪ ক্যারটের একটা হীরার দাম একটা গোলাপফুলের দামের সমান হল। তখনও কি প্রেমিকাদের নিকট হীরার সমমূল্য থাকবে?
পর্বটা চমৎকার লাগল। “সততার সাথে বিজ্ঞাপন”-এর ব্যাপারটা ভাবাচ্ছে। এটা অনেকটা সিকিউর কমিউনিকেশনের মত। ডেটাকে সিকিউর বা রোবাস্ট করার জন্য যেমন তার গায়ে অনেক ত্যানা প্যাঁচাতে হয়, রিডান্ডেন্ট করতে হয়, এখানেও ব্যাপারটা কতকটা এরকমই।
@রৌরব,
ঠিক ধরেছেন। এটাই এই লেখাটার মেইন থিম। আপনি আগের পর্বে জাহাভির হ্যান্ডিক্যাপ প্রিন্সিপালটা নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত ঘটানোর পর থেকেই মাথায় ঘুরছে সেটা। তাই ভাব্লাম এই পর্বে আমিও এ নিয়ে আরেকটু ত্যানা প্যাচাই। 🙂
অন্য পর্বগুলোও পড়েছি দারুন হয়েছে কিন্তু এ পর্বটা মনে হচ্ছে দায়-সারা গোছের হয়ে গেছে 😛
আপনার সিরিজটা পড়তে বরাবরের মতই খুব ভালো লাগছে……………
(দেখি কতদিন চালানো যায়…)
চলতে থাকুক শতাব্দি ধরে……………… (F) (F)
কিন্তু তারপরেও বাগদানের রোমান্টিক সময়ে হীরার বদলে আলু নিয়ে হাজির হলে…………………………………………………………।
আমি আমার প্রেমিকাকে প্রস্তাব করার সময় বই গিফ্ট করবো দেখি কি হয়??
@আসরাফ,
আমাদের সময়ে কিন্তু অনেকের মধ্যে বই দেয়ার চর্চা ছিল।
বৎসর দুয়েক আগে আমার এক সহকর্মীর বাসার গৃহকর্মীর খুব শখ একটি সোনার নাকফুলের। তো আমার সহকর্মী বললেন, ঠিক আছে আমি বানিয়ে দেব। কিন্তু মহিলাটি তা নিতে নারাজ। কারণ নাকফুল সে তার স্বামীর কাছে চায়। এ নিয়ে আমার একটি ছোট গল্পের প্লট আছে। লেখা শেষ হয়নি। অভিজিৎ এর লেখাটি পড়ে তা আবার শুরু করার উপাত্ত পেলাম।
যাহোক, অভিজিৎ সব সময়ই special কিছু দেয়। এবেরও এর ব্যাতিক্রম নয়।
@গীতা দাস,
আমাদের সময়ে কিন্তু অনেকের মধ্যে বই দেয়ার চর্চা ছিল
এখনো তো আছে। আমার মতে এখন বই দেয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। যে বই ই হোক না কেন সচরাচর প্রায় অনেকেই বই উপহার হিসেবে ব্যবহার করে……..
@গীতা দাস, আমি শুনেছি উপমহাদেশের মেয়েরা নাকফুল স্বামীর কাছ থেকে নেয় কারণ নাকফুল সবসময় পরে থাকলে স্বামীর মঙ্গল হয় আর খুলে রাখলে বা হারিয়ে গেলে স্বামীর অমঙ্গল হয়। এরকম কিছু একটা।
@আসরাফ, কোন লাভ নাই। বাংলাদেশে মেয়ের সাথে সাথে মেয়ের আত্বীয় স্বজনরাও মেয়ের হয়ে coutship gift চায়।
আজকের দিনের জন্য যথার্থ লেখা। (Y)
কানাডার তো আবার রানীর নাতির বিয়ে বলে কথা। সারাদিন টিভিতে আর কোন খবর নাই, এইটা ছাড়া। :-X । একবিংশ শতাব্দীতেও রাজা/রানীর বিয়ে নিয়ে মানুষ জনের যা কান্নাকাটি দেখি তাতে একটু চিন্তিতই আমি। বেহুদাই আমরা ঈশ্বরের পেছনে লাগি। :-Y মানুষ জন রাজা/রানীকেই ছাড়তে চায় না, আর আল্লাহ/খোদা/ভগবানকে ছাড়বে এই আশা করা একটু কষ্টকরই?
এই রাজা/রানী প্রীতির ব্যাপারে বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান কি বলে :-s ।
@স্বাধীন,
দারুন বলেছেন। (Y) (Y)
দাসত্বে কি এতই সুখ? 🙁
@সাদাচোখ,
দাসত্ব নয়; মানুষ অভ্যাসের দাস!
@স্বাধীন,
ধন্যবাদ স্বাধীন, চমৎকার মন্তব্যের জন্য।
মোটকু বাপ্পি লাহিড়ির দিকে তাকাইলেই এই তত্ব মিছা পেরমান অইবে। :lotpot:
শিক্ষিত মানুষের কাছে হীরা, স্বর্ণালংকার প্রেমের জন্য অযৌক্তিক বলে বিবেচিত। কিন্তু লেখায় দেখলাম ব্যক্তিত্বও যৌন নির্বাচনে বিরাট বা অর্থালংকারের স্থালাভিসিক্ত হসেবে কাজ করে।
তাহলে উন্নত মননের কাছে কোনটা বড় হওয়া উচিত। যেহেতু এই দুটো জিনিসই একই কাজে লাগছে। বিত্তশালীদের অর্থের নগ্ন প্রচারে তাহলে সমস্যা কোথায়?
টিপিকাল অভিজীতিয় লেখা। অনেক বড়, কিন্তু পড়ার সময় মনে হয়েছে এই শেষ হয়ে গেল।
অসাধারণ!! তবে এইখানে একটু কথা আছে। শুধু হীরার আংটির মাধ্যমে মনুষ্যপ্রজাতিতে সঙ্গী নির্বাচন করিলে ধরা খাইবার প্রবল সম্ভাবনা আছে— কারণ মনুষ্য প্রজাতিতে যেসব পুরুষেরা ‘কোর্টশিপ গিফট’ হিসেবে হীরা কিংবা সোনার গয়না নারীকে উপহার দিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে তারা বেশিরভাগই‘লুলপুরুষ’ আজিজ মুহম্মদ মতোই ‘fit’.
@মৌনতা, :guli:
প্রবন্ধটি বেশি ভাল লাগল না।
সামিরের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সাইটা একেবারে বিষন্ন হয়ে গেছে। একটু বিষন্নতা কাটানোর উদ্যোগ নিলাম। আমিই শুরু করলাম…
@অভিজিৎ,
সহমত। অনেক মুক্তমনাই বেশ ভালো একটি ধাক্কা খেয়েছেন, এমনকি নিজেও, সামিরের এই অকালপ্রয়াণে। আশা করি মুক্তমনার পাঠকেরা নিজেদের ব্যাপারে সব সময় সজাগ থাকবেন। বিশেষ করে যে কোন সময়ে মুক্তমনা ব্লগে যে কোন প্রকার সাহায্য চাওয়ার ব্যাপারে যেন কেউ দ্বিধা না করে। অনেক সময় অপরকে নিজের কষ্ট জানালে কষ্ট অনেক লাঘব হয়ে যায়। মানসিক দুঃশ্চিত দূর করার এটা সবচেয়ে ভালো একটি উপায়। যে কারো জীবনেই কঠিন সময় আসতে পারে। এবং ব্লগ হতে পারে সবচেয়ে ভালো বন্ধু সেই কঠিন সময়ে।
@স্বাধীন,
মানসিক দুঃশ্চিত = মানসিক দুঃশ্চিন্তা :-Y
@স্বাধীন,
আসলেই আমাদের সবার মাঝে আরো যতসম্ভব নৈকট্যভাব হওয়া বাঞ্চনীয়।সবাই যেন একটি পরিবারের অন্তর্ভূক্ত হয়ে নিজেদের সকল সুখ-দুঃখের ভাগীদার হই এ আশা রলো।
আমরা কাউকে আমাদের মধ্য থেকে অকালে ঝরে যাক তা আর দেখতে চাই না।
আসলেই মুক্তমনার ব্যানারে এখন সামিরের ছবি যতবার দেখি ততবারই মনটা কেমন যেন ছ্যাৎ ছ্যাৎ করে উঠে।
আজ আর অভিজিৎতিয় লেখার প্রশংসা কবর না,তবে লেখার নতুনত্ত্বের জন্য ধন্যবাদ না দিয়ে পারা গেল না।