কে তোমায় বলে বারাঙ্গনা মা, কে দেয় থুতু ও- গায়ে?
হয়ত তোমায় স্তন্য দিয়াছে সীতা-সম সতী মায়ে।
না’ই হলে সতী তবু ত তোমরা মাতা-ভগিনীরই জাতি’
তোমাদের ছেলে আমাদেরই মত, তারা আমাদের জ্ঞাতি;
(কাজী নজরুল ইসলাম)
বারাঙ্গনা। বারবণিতা। আমাদের সকলের কাছে একটি ঘৃণ্য নাম, একটি অস্পৃশ্য নাম, একটি কলুষিত নাম। তার ছায়াও আমাদের কারো কাম্য নয়, তার সংস্পর্শ আমাদের কারো কাম্য নয়।আমরা যারা ভদ্র সমাজের বাসিন্দা, তারা তার নাম শুনা মাত্রই আঁতকে উঠি, ভয়ে শিউরে উঠি, ঘৃণায় শিরশির করে উঠি। তার নাম শুনে আমাদের কারো কারো জাত যায়, কেউ কেউ অপবিত্র বোধ করি। কিন্তু আমরা কি কখনো ভেবে দেখি কেন সে বারাঙ্গনা হলো, কে তাকে বারাঙ্গনা বনালো, কে তাকে ঠেলে দিলো এই অন্ধকার পথে? না আমরা তা কখনো ভাবিনা। কারণ তা ভাবার আমাদের কোন দরকার নেই, সময় নেই।
দরিদ্র পিতা দারিদ্রের কারণে তার কন্যাকে বিক্রি করে দিয়েছে এমন ঘটনা বিরল নয়। ভণ্ড-প্রেমিক তার প্রেমিকাকে ছলে বলে কৌশলে অন্য কারো হাতে তুলে দিয়েছে এমন ঘটনা বিরল নয়। দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত গ্রাম্য- সরল-অবলা মেয়েকে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে নারী-ব্যবসায়ী দালাল শহরে এনে বিক্রি করে দিয়েছে এমন ঘটনা বিরল নয় । এভাবে যদি একটি মেয়ে বারাঙ্গনা হয় তবে সেটা কি তার অপরাধ নাকি যারা তাকে বারাঙ্গনা বানালো তাদের অপরাধ? সমাজের চোখে মেয়েটির অপরাধ কারণ আমাদের সমাজে সব অপরাধের বোঝা মেয়েদেরকে বহন করতে হয়, সব কলঙ্কের কালিমা মেয়েদের গায়ে লেপন করা হয়।
একজন গৃহকর্মীকে কেন তার কর্মক্ষেত্রে অপদস্থ হতে হবে? কেন সে তার সম্মান নিয়ে কাজ করতে পারবেনা? গৃহকর্মীকে (দাসী) পুরুষের জন্য হালাল ঘোষণা করা হয়েছে। পবিত্র কোরানে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট একাধিক আয়াত রয়েছে । যার কোন নির্দিষ্ট সংখ্যা নেই। তাই যেকোন বিবেক বিবর্জিত ধার্মিক পুরুষ তার সামর্থ্য অনুসারে সংখ্যাবিহীন দাসী রেখে তাদের সাথে অনায়াসে অবারিত যৌনলীলা চালিয়ে যেতে পারে। তাতে ধর্মীয় কোন নিষেধাজ্ঞা নেই বরং আল্লাহ পাক স্বয়ং নিজে আয়াত নাজিল করে এ মহান কাজে মোমিন মুসলিম ভাইদের উৎসাহ প্রদান করেছেন। মানবাধিকারের ব্যাপারে ধর্ম বেশ অনুদার হলেও এ ব্যাপারে বেশ উদার। কর্মক্ষেত্রে ধর্ষিতা হয়ে অনেক নারীগৃহকর্মী পতিতা বৃত্তিকে পেশা হিসাবে নিয়েছেন এমন দৃষ্টান্তও রয়েছে। কতজন নারীগৃহকর্মী কর্মক্ষেত্রে ধর্ষিতা হন তার কোন সঠিক পরিসংখ্যান নেই। কারণ এক্ষেত্রে নারীটিকেই সমাজ অসতী ঘোষণা করে, পতিতা ঘোষণা করে। তাই সে লজ্জায় মুখ বুজে মূক হয়ে থাকে। আর এভাবে যদি একজন নারী বারাঙ্গনা হয় সেক্ষেত্রে কে দায়ী? সে নারীটি নাকি ধর্ষণে উৎসাহ কারী গ্রন্থটি, নাকি সে গ্রন্থের অনুসারী পুরুষগুলো? অন্য যে কোন পেশাজীবী মানুষ যদি সম্মানিত হন তাদের নিজ নিজ পেশায়, নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে তাহলে একজন গৃহকর্মী কেন সম্মান পাবেননা তার পেশায় তার কর্মক্ষেত্রে? মহান আল্লাহ তালা এ কেমন বিধান লিখে দিয়েছেন তাদের জন্যে? তাকে চরম অসম্মান করার এ কী রকম পবিত্র-বাণী? এ রকম ঘৃণ্যবাণী কীভাবে কোন গ্রন্থে স্থান পেতে পারে?
প্রায় সব মেয়েই স্বপ্ন দেখে কারো ভালবাসা পাবার, একটি সুখের ঘর বাঁধার। কনকনে শীতের রাতে সবাই যখন কম্বল মুড়িয়ে ঘুমায় তখন একজন বারাঙ্গনা অনিদ্র চোখে রঙ মেখে শীতে কাঁপতে কাঁপতে বেরিয়ে পড়ে জীবিকার অন্বেষণে। কিন্তু কেন , কেন সে এ পথে গেল, কে নিয়ে গেল তাকে, কে তাকে বাধ্য করল? সমাজ তাকে নষ্ট বলে। আবার সমাজের মুখোশ পড়া সাধু পুরুষেরাই তার সাথে রাতের আঁধারে ক্ষণিকের অভিসারে যায়। তারা তাকে কখনো ভালবেসে আলিঙ্গন করেনা। করে শুধু কলুষিত পৌরুষ নিবৃত্তির ঘৃণ্য স্পর্শ। সেই স্পর্শে নেই কোন প্রেম, আছে শুধু বিকলাঙ্গ কাম। একটি রাতে সে বিক্রি হয় কয়েকটি হাতে। সেখানে তার কোন অনুভূতি নেই, উচ্ছ্বাস নেই। আছে শুধু প্রয়োজন, শুধু পেটের দায়।নিজের খাদ্য জোগাড় করতে গিয়ে সে নিজেই হয়ে যায় সাধু পুরুষের খাদ্য। অনেক বীর পুরুষই তার কাজের পারিশ্রমিক দেয়না। পারিশ্রমিক চাইলে জ্বলন্ত সিগারেট চেপে ধরে পুড়িয়ে দেয় তাদের শবীর, মার ধোর করে।
তার কৃত্রিম হাসির আড়ালে রয়েছে অকৃত্রিম কান্না। সোডিয়াম বাতির আলোয় তার টলমলে অশ্রুবিন্দু ঝলমল করে। তার বক্ষে চাপা আছে অনেক বছরের কষ্ট, অনেক বছরের যন্ত্রণা। অন্তর দহনের উত্তপ্ত ধোঁয়া তার প্রতিটি দীর্ঘশ্বাসে। তার শরীরে রক্তের পরিবর্তে প্রবাহিত হয় নীল যন্ত্রণার গরল-প্রবাহ। তার কৃত্রিম চাকচিক্য আর সাজ সজ্জার আড়ালে আছে নীল ব্যথা। আমরা তার লিপস্টিক মাখা রাঙা ঠোঁটগুলো দেখি। দেখিনা সেই ঠোঁটের আড়ালে তার অস্পষ্ট চাপা কান্নায় কম্পমান ওষ্ঠ-অধর। আমরা তার পাউডার মাখা চকচকে গাল দেখি, কিন্তু পাউডারের আড়ালে হাজারো কষ্টের ছাপ পড়া তার পাণ্ডুর কপোলগুলো দেখিনা। দেখিনা সেই কপোলে শুকিয়ে থাকা অশ্রুর দাগ। আমরা তার চোখে কামনার ইশারা দেখি, দেখি পুরুষ ভোলানোর জন্যে আঁকা কাজল। কিন্তু দেখিনা সেই কালো কাজলের আড়ালে তার স্বচ্ছ আঁখিজল। দেখিনা বিষণ্ন দুটি চোখে অশ্রুর সুগভীর সরোবর।
কেন সে হয়েছে নিশাচর ? অন্ধকার রাতে ভয়ানক অন্ধকার পথে কেন সে পা বাড়ায়, কে তাকে ঠেলে দিল এ শ্বাপদসংকুল পথে? জগতের কুৎসীৎতম জগতটি কেন সে বেছে নিল? বহুদিনের তন্দ্রায় কাতর ঢুলু ঢুলু চোখে কাজল মেখে কোন কাজলকালো পথে যায় সে? কেন সে আরামের ঘুমটুকু বিসর্জন দিয়ে বেরিয়ে পড়ে নিশীথ রাতে? কেন তার স্বপ্নগুলো দুঃস্বপ্ন হয়ে থেকে যায় চিরতরে? নিঝুম রাতে নিভৃত গৃহশয্যা ছেড়ে কোন অনিশ্চিত পথে বেরিয়ে যায় সে? হয়ত কেউ তাকে বিক্রি করেছে ; হয়ত কেউ তাকে বাধ্য করেছে বিক্রি হতে হাতে হাতে, হাটে হাটে। তিমির রাতের অতল আঁধারের মতোই অতলান্ত অনেক কারণ রয়েছে। নেপথ্যে রয়েছে অনেকেই , আমরা তাদের জানিনা।
তাদের সন্তানদের আমরা জারজ বলে গালি দিই। বলি অসতী মায়ের অপবিত্র সন্তান। কিন্তু তাদের জন্মদাতা আজ্ঞাতনামা কুলাঙ্গার পিতার উদ্দেশ্যে আমরা কখনো কিছু বলিনা। তারা সব সময় থেকে যায় নেপথ্যে , লোক চক্ষুর অন্তরালে।কারণ সব কলঙ্কের অংশীদার নারী, বৈধব্য ও বিবাহের চিহ্ন বহনকারী শুধু একতরফাভাবে নারী। সতীত্বের অগ্নিপরীক্ষা দিতে হয় নারীকে। কবি নজরুল বলেছেন,
জারজ কামজ সন্তানে দেখি কোনো সে প্রভেদ নাই!
অসতী মাতার পুত্র সে যদি জারজ-পুত্র হয়,
অসৎ পিতার সন্তানও তবে জারজ সুনিশ্চয়!
আমার মতে পৃথিবীতে কোন জারজ সন্তান জন্ম গ্রহন করেনা। কোন কোন শিশুর জন্ম অপ্রত্যাশিত হতে পারে, কিন্তু কোন শিশু জারজ হতে পারেনা। কারণ একটি নিষ্পাপ নবজাতক জানেনা তার জন্মের প্রক্রিয়া।এবং সেখানে তার কোন ভুমিকা নেই। তার জন্মে যদি কোন অন্যায় থেকে থাকে সেটা তার বাবা মা করেছে , নিষ্কলুষ শিশুটি নয়। তাই তো কবি নজরুল বলেছেন,
“তব সন্তানে জারজ বলিয়া কোন গোঁড়া পাড়ে গালি?”
আপনার লেখায় অনেক প্রশ্ন আছে, যার সদুত্তর দেওয়া দুস্কর।
শুধু ইসলাম নয়, অন্যান্য ধর্মেও নারীদের নীঁচুভাবে দেখা হয়। যাঁরা বলেন কোরানে যেসব নারী বিরোধী কথাবার্তা আছে তবে বেশির ক্ষত্রেই আজাকাল তা প্রোযজ্য হচ্ছেনা, তাঁদের উচিত মধ্যাপ্রাচ্য এবং আফ্রিকার কিছু ইসলামী স্বর্গ ঘুরে আসা। এই সব ইসলামী স্বর্গগুলিতে দশ বছর পূর্বে মুসলিম মহিলাদের যে অবস্থান ছিল—আজকাল তাদের অবস্থা অনেক খারাপ। মিশরীয় মহিলাদের কিছু চিত্র দেখুন ৩০-৪০ বছর পূর্বের–আর তার সাথে তুলনা করুন আজকের মিশরীয় মহিলাদের। খোদ বাংলাদেশই বা আমরা কি দেখছি–চারিদিকে হিজাব, নিকাব আর বোরখার ছড়াছড়ি।
এর সাথে তূলনা করুন ৩০-৪০ বছরের আগের বাংলাদেশের মহিলাদের!
@আবুল কাশেম,
@আবুল কাশেম,
মনে হয় নারীগণ ভিন্ন কোন গ্রহ নক্ষত্র থেকে পুরুষের পৃথিবীতে অনাহূত হয়ে এসে হঠাৎ বসতি স্থাপন করেছে। তাই নারীর প্রতি পুরুষ রচিত সবগুলো ধর্ম , সমাজ ও পারিবারিক ক্ষেত্রে এরূপ অবজ্ঞা করা হয়েছে। যেসব ধার্মিক ব্যক্তিরা বলে থাকেন কোরানের নারী বিরোধী কথাগুলো আজ কাল প্রযোজ্য নয় তারা কি জানেন না যে কোরানের একটি বর্ণও পরিবর্তনযোগ্য নয়?
বোরখা, নেকাব,হিজাব আজকাল অনেক নারীর স্টাইলে পরিণত হয়েছে।আমরা চেচামেচি করছি তাদের মুক্তির জন্য আর তারা নিজেরাই নিজেদের কারাগারে বন্দী করছে।
@তামান্না ঝুমু,ধন্যবাদ।
আমার এক হিন্দু শিক্ষক আমাকে বাসায় পড়াতেন।উনার স্ত্রী যখন গর্ভবতি ছিলেন,উনি আমাকে একদিন বললেন যে,”আমি ছেলে আর মেয়ের মাঝে কোন পার্থক্য করিনা,তবে আমি চাই আমার প্রথম সন্তান ছেলে হোক”।কারণ হিসেবে উনি বললেন উনি যখন বৃদ্ধ হবেন,তখন উনার ছেলে সংসারের হাল ধরবে।উনি মুখে বলছেন এক কথা আর কাজ করছেন আরেক রকম।আর উনি হলেন আমাদের দেশের একজন শিক্ষিত নাগরিক।তাহলে দেখুন,একটি শিক্ষিত পরিবারেই একটি কন্যা সন্তান জন্মের আগে থেকেই বৈষম্যের শিকার হচ্ছে।তাহলে একজন দরিদ্র পিতার ঘরে আমরা একটি কন্যা সন্তানের নিরাপত্তা কিভাবে আশা করব?আমরা আশা করি,শিক্ষিত নাগরিকগণ সমাজের সব ধরনের অন্যায়,বৈষম্য দূর করবেন তাদের অর্জিত শিক্ষার আলো দ্বারা।কিন্তু,শিক্ষিত মানুষের মাঝেই যদি এরকম মনোভাব থাকে,তাহলে কি আদৌ নারী বৈষম্য দূর করা সম্ভব?আদৌ কি সম্ভব নারীদের সব দুঃখ কষ্ট দূর করা? 🙁
@তটিনী,
আপনি ঠিক বলেছেন, দরিদ্র পিতা-মাতা তো কন্যা সন্তানের জন্মকে অভিশাপ মনে করেন। আর সম্ভ্রান্ত অনেক পিতা-মাতা আছেন যাদের অন্তত একটি হলেও পুত্র সন্তান না হলে চলেনা।শুধু কন্যা সন্তানে অনেকেই সন্তুষ্ট থাকেননা, কয়েকটি কন্যা সন্তানের পরেও পুত্রের আশায় সন্তানের সংখ্যা বৃদ্ধি করে থাকেন।যাদের শুধু পুত্র আছে কন্যা নেই তারাও কন্যা আশা করেন কিন্তু সেটা হচ্ছে শখ। আর পুত্রের আশা হচ্ছে নির্ভরশীলতা।
অবলা নারীদের কে নিয়ে আপনার এই লেখাটি ভাল হয়েছে।তবে,লেখাটি শুধুই ইসলাম ধর্ম ভিত্তিক হয়ে গিয়েছে,বিশ্বে নারীদের প্রতি নির্যাতন তো শুধু কোরান শরিফের কিছু আয়াতের কারণেই হয়না।আরও অনেক কারণ আছে।সেই সব বিষয়ে লেখায় কোন ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।অবশ্য আপনি যদি শুধু গোঁড়া মুসলিম দেশগুলোর প্রেক্ষাপটে লেখাটি লিখে থাকেন,তাহলে ভিন্ন কথা।
@তটিনী,
আমি আরো কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেছি। যেমন,
তাছাড়া,
এখানে হিন্দু ধর্মের কথা বলা হয়েছে।এছাড়া আরো অনেক ভাবে নারীকে প্রতিনিয়ত অপদস্থ হতে হয়।তৃতীয় বিশ্বে আরো অনেক অজানা কারণে একজন নারী বারাঙ্গনা হতে বাধ্য হয়।তাই লিখেছি,
ভাল থাকুন।
কোরান কে “পবিত্র” বললে,তা ধার্মিকদের মতই শোনায়। তখন তার সমালোচনা অর্থহীন হয়ে পড়ে।
@বোকা বলাকা,
কোরানকে বিরাট বিরাট বিশেষনে বিশেষিত করেছেন আল্ললাহ ও তার প্রেরিত রাসুল। মোল্লারাও নতুন নতুন অনেক বিশেষণ যোগ করেছেন।সোবহন আল্লাহ।আমি পবিত্র যোগ করেছি ব্যাঙ্গার্থে । আপনি “পবিত্র” শব্দটির আগে অ বসিয়ে নিতে পারেন।
কিছু লেখক লেখিকা আছেন, যারা আবেগকে পুঁজি করে লেখালেখি করেন। এদের লেখায় তথ্যের অভাব, ভাষাগত দুর্বলতা এবং যুক্তিহীন আবেগপ্রবণতা প্রকাশ পায়। কোরান নিশ্চয়ই খারাপ, তবে এই ব্যাপারে কোরান নিয়ে টানাটানি শিশুসুলভ আবেগপ্রবণতা ছাড়া কিছুই নয় । বারাঙ্গনা কে নিয়ে লিখতে হলে লেখা এতো সংক্ষিপ্ত হলে চলেনা, তথ্যের এবং যুক্তির এত অপর্যাপ্ততা থাকলে চলে না।
নজরুল ছাড়া যেন বারাঙ্গনা নিয়ে আর কেউ লেখালেখি করেননি ! বোঝা যায়, লেখিকা ২-১ জন বাংলাদেশী কবি সাহিত্যিকের কবিতার সঙ্গেই শুধু পরিচিত এবং বারাঙ্গনার দুঃখ দুর্দশা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লেখিকার নেই, তাহলে দেশী বিদেশী লেখক বা কবিদের প্রসঙ্গ আসত ।
কিছু আবেগিক প্রশ্ন করে এবং তার উত্তর না দিয়ে যুক্তি হিসেবে শুধু ধর্ম নিয়ে টানাটানি করাটা শিশুসুলভ মনে হয়েছে। আর আমাদের পাঠকেরা এতই মানসম্পন্ন যে, কোন লেখা বের হলেই দারুণ/ভাল লাগলো/চমৎকার ইত্যাদি মিথ্যে প্রশংসায় ফেটে পড়েন ।
@ডঃ মুশফিক,
ডাক্তার সাহেব, আমি আপনার মত মহা জ্ঞানী নই। আমি একজন অজ্ঞানী মূর্খ মানুষ। তাই সাধ্যে যতটুকু কুলিয়েছে, আমার যতটুকু অজ্ঞান আছে আমি সে অনুযায়ী লিখেছি।আপনি তো জ্ঞানের মহাসাগর আপনার সব বিষয়ে সম্যক জ্ঞান আছে। দেশী বিদেশী লেখক বা কবিদের প্রসঙ্গ টেনে আপনি একটা পোষ্ট দিয়ে দিয়েন। আমরা কিছু জ্ঞান অর্জন করতে পারি কিনা দেখি।
আপনি বলেছিলেন আরজ আলী জ্ঞানী নন তাই তিনি শুধু প্রশ্ন করেছেন উত্তর দিতে পারেননি। আমিও জ্ঞানী নই তাই আমার কাছেও কোন উত্তর নেই শুধু আবেগিক প্রশ্ন আছে। মুক্তমনার পাঠকেরা কেউই মানসম্পন্ন নন, মুক্তমনায় একমাত্র আপনিই গুণ আর মানের সংমিশ্রণে তৈরী এক অতুলনীয় পদার্থ। আপনি মুক্তমনার গর্ব। শিশুসুলভ আচরণ কে করে আপনি না আমি ? আপনি বলেছেন আপনার বয়স অনেক কম । তাহলে শিশু কে?
আপনার এই লেখাটার মধ্যে আবেগ আছে, যুক্তি আছে, আছে অবহেলিত নারীর প্রতি মমত্ববোধ। ভাল লাগলো।
শুধু ওই কোরানের আয়াতগুলোর জায়গাটাই আরোপিত মনে হয়েছে। দুই চারটা গোঁড়া মুসলিম দেশ বাদে ওই আয়াতগুলোর আসলে কোনো ভূমিকাই নেই নারী গৃহকর্মীর ধর্ষিত হবার বা পতিত পথে গমনের।
@ফরিদ আহমেদ,
আপনার সাথে একমত । তবে কয়েকটি গোঁড়া মুসলিম দেশে যে হারে নারী গৃহকর্মী ধর্ষিত হয় তার সংখ্যা কিন্তু কম নয়।
সহমত(Y)
সুইডেনে পতিতালয় নাই,তবে সেক্স কেনাবেচা হয় হরহামেশাই।সেক্ষেত্রে ঐরকম সেক্স কেনাবেচা রোধ করার জন্য আইন হচ্ছে যে ক্রেতা সে হচ্ছে অপরাধী,তার জেল/ জরিমানা হবে/হয়,আর যে বিক্রেতা সে সম্পূর্ন নির্দোষ হিসাবে বিবেচিত হয় ।
কি আজব দুনিয়া…………….:-[
@মাহবুব সাঈদ মামুন,
অদ্ভুত বিচার ব্যবস্থা!
আমার অনেক ভালো লাগলো, অসাধারন।অনেক ধন্যবাদ এ ধরনের লেখা উপহার দেয়ার জন্যে। (Y)
@সুকুমার সাংমা,
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
কন্যা সন্তানকে বিক্রি করে দে’বার বা মেয়েদের দাসী হ’বার বাস্তবতা যদি না থাকে, তো সর্বশক্তিমান আল্লা’তালার বা কোরানের কি গতি হবে?
@স্বপন মাঝি,
আল্লাহ যে সর্বশক্তিমান তারপ্রমান হচ্ছে কোরান। কোরানে তার সর্বশক্তি প্রয়োগ করে তিনি সমস্ত জঘন্যতাকে বৈধ করে দিয়েছেন এবং মানবতাকে হটিয়ে দিয়েছেন।
@তামান্না ঝুমু,
কিছুটা দ্বিমত পোষণ করি একটা যায়গায়। কোরান বা শরিয়া বা ইসলামই এর একমাত্র কারণ নয়। যদি হতো তাহলে ইউরোপ আমেরিকায় পতিতা বা পতিতালয় থাকতোনা। প্রধান কারণটা অর্থনৈতিক, তারপর শিক্ষা ও কর্মসংস্থানে নারীবৈষম্যবাদ।
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর চিন্তাজাগানিয়া সুন্দর একটি লেখা। (Y) (F)
@আকাশ মালিক,
আমিও আপনার সাথে একমত তবে
কেউ বাধ্য হয়ে বা অন্য কারো মাধ্যমে বিক্রি হয়ে এ অন্ধকার জগতে আসা আর স্বেচ্ছায় আসার মধ্যে পার্থক্য আছে।ইসলাম অথবা হিন্দু ধর্মে পত্নীদের যে রকম মর্জাদার বর্ননা আছে তার চেয়ে বারাঙ্গনারা অনেক স্বাধীন। ইসলাম ধর্মে অর্থের বিনিময়ে বৌ কিনে নিতে বলা হয়েছে এবং মোহ কেটে গেলে ছিন্ন বস্ত্রএর মত তাকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়ার অধিকার শুধু স্বামীজি কে দেয়া হয়েছে।
@আকাশ মালিক, Amsterdam এর বেশ্যাপল্লিগুলর সঠিক ব্যাখা কি? সেখানে বেশিরভাগ যৌনকর্মী স্বেচ্ছায় কাজ করেন, কারণ দোকানে সাধারণ কায়িক পরিশ্রম করার থেকে এই পেশায় বেশি রোজগার সম্ভব।এইখানে শোষণের angle কিভাবে আসে? বা ধরুন ভারতে দিল্লী বা মুম্বাই-এর উচ্চবিত্ত পরিবারের মেয়েরা যখন monotony-র হাত থেকে বেরতে বেশ্যাবৃত্তি করে?
অবশ্য ভাববেন না যে আমি বেশ্যাবৃত্তির পক্ষে বা বিপক্ষে সাওয়াল করছি। সংলাপ নামক এক NGO তে কাজ করার সময় এই প্রশ্নগুলি মনে আসে।
http://www.sanlaapindia.org/
ভারতের যৌনকর্মীরা অনেকটাই অধিকার সচেতন বলে মনে হয়েছে। বাংলাদেশে ততটা নয়।
@রৌরব,
মাত্র কয়েক বছর আগেও বাংলাদেশে বারাঙ্গনাদের ব্যাঙ্কে একাউন্ট খোলার অধিকার ছিলনা।
@রৌরব,
বাংলাদেশেও অনেক সচেতন।
বাংলাদেশে যৌন কর্মীদের অধিকার নিয়ে ‘সংহতি’ নামে একটি মোর্চা রয়েছে যার সদস্য বিভিন্ন নারী সংগঠন, মানবাধিকার সংগঠন ও যৌনকর্মীদের সংগঠন। এ সংগঠন টান বাজার থেকে যৌনকর্মীদের উৎখাতের সময় তা প্রতিরোধে আন্দোলন করেছিল। তাছাড়া যৌনকর্মীদের নিজস্ব সংগঠন ‘দুর্জয়’ ও ‘উল্কা’ ঢাকায়,’মুক্তি’ গোয়ালন্দসহ দেশের অন্যান্যখানে অনেক সংগঠন গড়ে উঠেছে ও নিজেদের অধিকার নিয়ে কাজ করছে। যৌনকর্মীদের মৃত দেহ সৎকারের জন্য কবরের ব্যবস্থা সংগ্রাম করে নিজেরাই স্থান আদায় করে নিয়েছে।
বাংলাদেশে যৌনকর্মীদের আন্দোলনের উপরে নারীপক্ষ’র ‘ফিরে দেখা’ নামে একটি বই রয়েছে। সুযোগ হলে পড়ে দেখতে পারেন।