লাল দরজা :
দীর্ঘ চার বছর বন্ধ থাকার পর সৌদি অরব বাংলাদেশ হতে আবার শ্রমিক নেয়া শুরু করছে। আশ্চর্য্যজনক ভাবে এবারে সৌদিদের এক্সক্লুসিভ নজর বাংলাদেশের মেয়েদের প্রতি!
খবরে প্রকাশ: এখন থেকে প্রতি মাসে সৌদি সরকার দশ হাজার করে নারী গৃহ কর্মী নিয়ে যাবে সৌদি আরবে।
খবরটা শুনে কেন যেনো খটকা লাগছে। মধ্যপ্রচ্য জুড়ে যে আগুন জলছে তাতে সৌদি স্বৈরাচারেরা টিকে থাকবার জন্য সৌদি নাগরিকদের নানা রকম পুরষ্কার/ ঘুষ ইত্যাদি দেয়া শুরু করেছে যেন তারা বুঁদ হয়ে থাকে। এর মাঝে সৌদি উটের বাচ্চাদের প্রতি ঘরে ঘরে এক জন করে পরিচারিকা সাপ্লাই দেবার পরিকল্পনা থাকা ও বিচিত্র নয়। বাংলাদেশ হতে এমন ব্যাপক হারে এক্সক্লুসিভ নারী গৃহ কর্মী নেয়ার সংবাদটি নিয়ে তাই ভাবনা এসে যায়। এই বর্বরদের কোন বিশ্বাস নেই!
মোঃমোজাম হক :
সৌদি আরবে সকল দেশেরই নারীকর্মী কাজ করেন।তাদের উপড় যৌন হয়রানির কথা নুতন নয়।
এতোদিন ইন্ডিয়া, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপিন, ইন্দোনেশিয়া, নেপাল এমনকি মিশরীয় মেয়েরা কাজ করতে আসতেন। বর্তমানে প্রায় সবগুলো দেশই গৃহকাজে নারীদের প্রেরন বন্ধ করে দিয়েছেন।
আর তাই তারা বাধ্য হয়ে বাংলাদেশমুখী হয়েছেন।
ঐ আবাল মন্ত্রীকে এখন ভাবতে হবে আমাদের জাতীয় সন্মান। এখন নেপালের মতো দেশও ৬০০ রিয়ালে শ্রমিক পাঠাচ্ছেনা। কোন যুক্তিতে সে শুধুই নারী আর মালী পাঠাতে রাজি হচ্ছে?
পয়গম্বর :
আমাদের প্রধানমন্ত্রী নারী। তিনি ভারতীয়-আমেরিকান মতাদর্শে বিশ্বাসী এবং তাদের তাবেদার হলেও ২৫-৩৫ বছরের যে সকল নারীকে গৃহপরিচারিকার চাকুরীর নামে সৌদীদের হাতে তুলে দেবার পরিকল্পনা হচ্ছে, তাতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একজন নারী হিসেবে বাংলাদেশের অন্য নারীর প্রতি সমমর্মিতা প্রদর্শন করা অবশ্য কর্তব্য বলেই আমি মনে করি। গৃহপরিচারিকার লোভনীয় চাকুরীর আড়ালে দেশ পরিচালনায় ব্যর্থ সরকার সৌদীদের হাতে বাংলাদেশী যুবতী নারীদের ভেট হিসেবে তুলে দেয়াতে সরকারের উপর মহল নিজেদের পকেট কত বেশি ভারী করছে, তা জানার আগে প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন, একজন নারী হয়ে কিভাবে আপনি আপনার স্ব-জাতী অন্য এক নারীকে সৌদীদের হাতে ধর্ষিত হবার পায়তারা করছেন?
বাঘা তেঁতুল :
আমার অনেক ফিলিপাইনা ফ্রেন্ড আছে তারা বলেছে ম্যাক্সিমাম গৃহপরিচায়িকা ধর্ষনের শিকার হয় সৌদিতে , ক্লোজ এক ফ্রেন্ড তো সৌদিতে থাকে তার কাছে একই টাইপের ঘটনা শুনলাম ।
(ফাতেমা আবেদীন নাজলা। সুপরিচিত ব্লগার। তারচেয়েও বড় কথা , বহু বছর মধ্যপ্রাচ্যে ছিলেন। সম্প্রতি নারী শ্রমিক পাঠানো নিয়ে তার নিজস্ব মত এবং ভয়াবহ অভিগ্গতাকে তুলে ধরেছেন ফেসবুকে । আমি হুবুহু তুলে দিলাম।)
আমি দীর্ঘ ৫ বছর সৌদি আরবে ছিলাম ।আমার নিজের চোখে দেখা নারী শ্রমিকদের কষ্টের কথা লিখছি। ভয়াবহ সব দিন কাটানো মানুষগুলোর অনেক গল্পের কয়েকটা গল্প তুলে দিলাম । এটা খুব সামান্য এর চেয়েও ভয়াবহ পরিস্থিতিতে পরতে হয় ওদের কে। আমি নারী শ্রমিক রপ্তানীর বিরোধী নয়। তবে সে ক্ষেত্রে দক্ষ, শিক্ষিত ও ভাষা জ্ঞান সম্পন্ন নারী শ্রমিক পাঠানোর দাবী করি। যারা নিজেদের অধিকার চাহিদা নিয়ে সচেতন। আরবরা ব্যাক্তিগত ভাবে কাজের লোক বা খাদ্দামাদের প্রতি নির্দয়। সদয় পাওয়াও যায় তবে সেটা লাখে একটা। এ ক্ষেত্রে আমাদের দায়িত্ব নিতে হবে আমরা কি আমাদের বোনদের একটি হাইলি একোমডেট কারাগারে পাঠাবো যেখানে সে নিপীড়িত হবে।
দ্শ্য-১
১৭/৪২০০৬ ভোর -৬টা
স্থান: গুলশান সউদি দূতাবাস এর প্রধান ফটকের বাইরে।
সবাই লাইনে দাড়ানো। একজন মহিলা একটা দুধের শিশু কোলে নিয়ে দাড়িয়েছেন, বাচ্চাটা কাদছে অবিরত। একেতো ভোর বেলা ঘুম থেকে উঠে লাইনে এর পরে সামনে একটা বাচ্চার আবিরাম কান্না। মেজাজ খারাপ হলেও করতে পারছিনা মহিলার দারিদ্রমাখা মলিন চেহারা দেখে। অবাক হলাম আপনি এখানে কেন দাড়িয়েছেন এইটা তো ভিসার লাইন। উত্তর দিলেন ভিসার জন্য। কি???????????? মাথা ঘুরে যাওয়ার দশা। ঘুম পুরা উধাও। কি করবেন সউদি গিয়ে? খাদ্দামার কামে যাইমু। খাদ্দামা শব্দটার সাথে পরিচয় ছিলো না কিনতু বোঝার চেষ্টা করলাম, বুঝলাম কাজের লোক। কিন্তু আপনি কি কাজ করবেন? যে কাম দেয় হেইডা করমু। বিস্ময়ের চুড়ান্ত। আরবী বলতে পারেন? না পারি না। কিভাবে কথা বলবেন? হিগগা ফালামু। বাংলা বা ইংরেজী লিখতে পড়তে পারেন? না পড়া লিখা জানি না। কেনো যাচ্ছেন? বইন বড় অভাব গেনদার বাপের কোনো কাম নাই। স্বামীকে দেখালেন। লাইনের বাইরে পার্কের গেটের সামনে বিড়ি ফুকছেন। ভাদাইম্যা শব্দটা তার জন্য যথাযথ। বললাম কিভাবে ভিসা পেলেন? আমার দুলাভাই যোগাড় করছে। কত টাকা লাগছে? ৩লাখ টেকা। টাকা কে দিল? আমার মায়ের যা আছিল বেইচা দিছে। যে বাড়িতে কাজ করবেন ওরা কত টাকা দিবে? জানি না, দুলাভাই জানে। হেরেও টেকা দিতে হইবো।হে ভিসা কিনছে ৪০হাজার টাকা দিয়ে।তখন ও সেই মহিলার প্রবাস জীবনের ভয়াভতা আচ করতে পারি নাই। তবে সন্দিহান ছিলাম আদৌ তার জন্য ভালো কিছু অপেক্ষা করছে কিনা।
দ্শ্য-২
১৮/০৭/০৬
স্থান : আমার ক্লাশরুম
সকাল-৮টাআমাদের স্কুলের আয়া এসে বলল আপা ২টা কাম কইরা দিবেন? বললাম কি? একটা ক্যামেরা আর একটা মোবাইল কিননা দিবেন ফোডো তুলন যায় এমন মোবাইল। বাজেট কত ? আপা ৬০০রিয়াল। ওকে , কি জন্য কিনবেন? আপা আমার পোলাডার লাইগগা কিনমু। পাঠাবেন কি করে? আপারা বাড়ি যাইতেছে ওদের কাছে দিমু। আপার বাসা থেইককা আমার পোলা লইয়া যাব। গুড, ২য় কাজটা কি। আপা একটা চিঠি লিখা দিবেন? মোবাইলে মেলা পয়শা কাটে।ওকে করে দিব।
আপাতত নাটকের বিরতি। আসেন আমাদের আয়ার ফ্লাশবেক এ যাই।
মোটামুটি সম্ভ্রান্ত ঘরের এতিম মেয়ে। অনেক কস্ট করে বড় হয়েছে। বিয়ের পর ২সন্তান রেখে স্বামী মারা যায়। অভাবের তারনায় আর প্রতারকের খপ্পরে পরে সউদি আরব আসা। যাদের আন্ডারে ভিসা নিয়ে এসেছিলেন তাদের চুড়ান্ত অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে পালিয়ে আসেন বাংলাদেশ কনসুলেটে। ছেলেদের ব্যাপারে যতটা নির্দয় হননা কেন মহিলাদের প্রতি আমাদের কর্মকর্তাদের একটা ভালোবাসা আছে। এক কারণ উনাদের বৌদের সোনার বরন কালো হয়ে যাচ্ছে কাজের লোকের অভাবে।সুতরাং বাংলাদেশি একটা কাজের মহিলা হাত ছাড়া করা যায় না। তাদেরকে রাখা হয় কনসুলেটের বিভিন্ন কর্মচারির বাসায়। মোটামুটি নিরাপদ একটা আবাস। এটা তাদের ই কপালে জোটে যারা পালিয়ে আসতে পারেন। আর যারা পারেন না তাদের কথা ধারাবাহিক ভাবে বলছি।
দ্শ্য-৩
তারিখ মনে নাই
স্থান : আমার বাসা
বিকালমোটামুটি সেচ্চাসেবক হিসাবে একটা সুনাম আছে। তার সুবাদে একজন সিনিয়র কলিগ ফোন করে বললেন একটু উপকার করবা ? আমি বললাম কি আপা বলেন।আমার বুয়াটাকে তোমার বাসায় পাঠাচ্ছি একটু কি কোনো মহিলা ড: এর কাছে নিয়ে যাবা। প্রথমেই প্রশ্ন করলাম আপনি বুআ কোথায় পেলেন? বললেন কনসুলেটের এক ভাই যোগাড় করে দিয়েছেন। কিন্তু খুব অসুস্থ। আমি বললাম পাঠিয়ে দিন। যে মহিলাটা আসলেন খুব বিধ্বস্ত চেহারার একজন মানুষ বয়স আনুমানিক ৩৫। যেতে যেতে অনেক কথা হল । কি করে আসলেন কি করেন। পুরানো ঘটনা দালাল নিয়ে এসেছে।ভাষা জানেন না বলে কাজ করতে পারতেন না। মুনিব অত্যাচার করত। সারাদিন ঘরে বন্দি কারোর সাথে যোগাযোগ করতে পারতেন না। ওদের যে খাবার গুলো দিত সেগুলো খেতে পারতেন না। সবচেয়ে বড় যে কষ্ট পেয়েছেন সেটার বেপারে উনি কিছু না বললেও ডঃ জানালেন। পরিক্ষা নিরীক্ষা শেষে বললেন। যে রোগ একটা সময় পর্যন্ত ভালো থাকবেন চিকিৎসা পেয়ে। কিন্তু জের টানতে হবে সারাজীবন। কিছুটা আচ করতে পারলেও প্রশ্ন করলাম নিশ্চিত হওয়ার জন্য। রোগ টা কি? উত্তরে যা জানলাম তার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। উনি যৌন হয়রানির শিকার। একবার না অনেকবার ধর্ষিত হয়েছেন , একজন না অনেকজন দারা। পা থেকে মাথা কেপে উঠল। এখন হয়তো কিছুদিন ভালো থাকবেন কিন্তু ভবিষ্যতে এটি গনরিয়া নামক ভয়াবহ যৌন রোগে পরিণত হবে আপাত দ্ষ্টে লক্ষন তাই বলে। ভাষা হারিয়ে ফেললাম। প্রয়োজন মাফিক ঔষধ কিনে দিলাম। বললাম কেন আসছিলেন এখানে ….বইন ভাবছিলাম সুখে থাকমু কাম করমু পোলার বাপের টেকা পাঠামু জমি জিরাত করমু। টাকা পাঠাতে পেরেছেন?নাগো বইন পালাইয়া আসাতে কাগজ ও রাইখা আইসা পড়ছি যামু কই কি করমু কিছুই জানি না। যদি আপাগো বাড়িতে কাম কইরা কিছু টেকা জমাইতে পারি ধার দেনা শোধ দিয়া বাড়ি যামুগা। এইখানে থাকুম না। খুব মায়া লাগল কিন্তু কিছুই করতে পারছিনা। একবার প্রশ্ন করতে চাইলাম কি অসুখ জানেন কি? করলাম না। ঘরে ফিরে যাবার আশা ভংগ করতে মন চাইলো না। স্বপ্ন তো আমরা সবাই দেখি। কারো স্বপ্ন ভাংগার অধিকার নাইবা নিলাম। ধার শোধ করে বাড়ি ফিরে যাবেন। সংগে এই দেশের কদর্যতা নিয়ে যাবেন। আর তাদের টাকা দিয়েই আমাদের রেমিটেন্স বাড়বে। আমরা গর্ব করে বলব আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে। জানবো ও না এর মধ্যে এমন সব মানুষের পাঠানো টাকা আছে জীবন যাদের কাছে বিভাষিকাময়। এর পর এরা যখন দেশে ফিরে আসবে বিমানবন্দরে কাস্টমস কর্মকর্তারা তাদের মাল রেখে দিবেন । সব হারিয়ে কাদবেন অসহায় একজন মহিলা। এমন ছবি সহ খবর ছাপিয়ে বাহবা কুড়াব।
দ্শ্য-৪
তারিখ : মনে নাই
স্থান : আমার বাসাআমি হঠাত করে খুব অসুস্থ হয়ে পড়ি। একলা মানুষ খাবার দাবার রান্না করা খুব কস্টের ঘরের কাজ করা অসম্ভব হয়ে পড়ায় সকলের পরামর্শ মোতাবেক একজন কাজের লোক রাখি ।এমন ই একজন পালিয়ে আসা বাংলাদেশী মহিলা। বয়স আনুমানিক ৩৩ হবে। আমার কাজের ব্যাপারে খুব খুতখুতানি আছে । নিজের কাজ নিজেই করি । তাই বুআকে আদ্যপোন্ত দেখার সময় দেখলাম হাত ভরা ইনফেকশন। জিজ্ঞাসা করলাম কি হয়েছে। বলল আপা জানি না চুলকাতে চুলকাতে হয়েছে। এখানকার আবহাওয়া এত শুস্ক যে এই ধরনের খুজলী পাচড়া টাইপের রোগ নেই। বললাম আর কারো দেখেছেন? এরকম হয়েছে? বলল যে সউদি বাড়িতে কাম করতাম হেই বাড়ির একজনের ছিল। কার প্রশ্ন করায় উত্তরে অনিহা দেখে আমি আর প্রশ্ন করলাম না। আমি বললাম ঠিক আছে আমি রাতে ডঃ এর কাছে যাব আপনাকে নিয়ে যাব। যথারিতী একি ঘটনা অভাব মোচনে এ পথে পা বাড়িয়েছেন। বাড়িতে টাকা পাঠানোই একমাত্র উদ্দেশ্য। তাই করে চলছেন ৪বছর ধরে। বেশ কিছুদিন হল পালিয়ে এসেছেন। কারণ অনেক অত্যাচার সহ্য করেছেন আর পারছেন না তাই এই পালানো। মাঝখানে একবার মালিকএর বউ মেরে মাথা ফাটিয়েও দিয়েছিলেন। ঋন মোটামুটি শেষ । আমি বললাম তো বাড়ি ফিরে যাচছেন না কেন? যেটা বলল সেটা আরো বেদনার। গেনদার বাপের আমার পাঠানি টেকা দিয়া বাড়ি তুলছে পোলা আর মাইয়ারে বাড়ি থেইকা বের করে দিছে। হে নয়া বিয়া করছে। মানুষ নাকি তাকে বুঝিয়েছে তোমার বউ আর ভালো নাই। বইন দেশে গেলে আর কি করমু। পোলাগো কি খাওয়ামু। তাই মেলা কস্ট কইরা থাকতেছি। পোলারা আমার ভাইয়ের কাছে টেকা তারেই পাঠাই। ওরা মানুষ হইলে আমি বাড়িত ফিরা যামু। রাতে ডঃ এর কাছে নিয়ে গেলাম । আমি মোটামুটি প্রস্তুত ছিলাম কি রোগ জানার জন্য । আবার পুনারাব্ত্তি । বহু মানুষ দাড়া যৌন নির্যাতনের শিকার। যার কারনে শরীরে নানাবিধ রোগ বাসা বেধেছে। নারী হিসাবে লজ্জা পেলাম। কি লাভ এত ত্যাগের। কেও কি এর মুল্য দিবে। দেশে ফিরে গেলে তাকে মানুষ নস্টা বলে অপবাদ দিবে। এক ঘরে করে রাখবে। আর বেশি কিছু কি আশা করতে পারি?
নাস্তিকের ধর্মকথা:
নি:সন্দেহে বিষয়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং, সকলের আলোচনা/কমেন্ট থেকে বুঝা যায়- সবাই খুব উদ্বিগ্ন। লেখা/কমেন্টগুলো পড়তে পড়তে আমার মাথায় যেসব চিন্তাগুলো হাজির হয়েছে- সেগুলো একে একে উপস্থাপন করছি:
# অবশ্যই আমাদের নারীদের সৌদি শেখদের হাতে ভেট হিসাবে তুলে দেয়া যাবে না, এর প্রতিরোধ জরুরী।
# কেবল সৌদিতে নারীদের পাঠানোই নয়- প্রবাসে আমাদের শ্রমিক পাঠানো নিয়ে সবারই আরেকটু ভাবার দরকার। প্রতি বছর সরকার আমাদের রেমিট্যান্সের গল্প শুনায়। কিন্তু কোন শ্রমিক কোথায় কিভাবে এই রেমিট্যান্স আমাদের দেশে পাঠাচ্ছে- তারা কি অবস্থায় আছে- থাকছে- সেসবের খবর বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই আমাদের জানানো হয় না বা আমরা জানি না। কুয়েত সহ মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের শ্রমিকদের অবর্ণনীয় দুঃখ-দুর্দশার কথা মাঝে মধ্যে প্রকাশ হয়ে পড়লে আমরা কেবল একটু বিব্রতই হই, এবং তারপরে ভুলে যাই। কেননা- কষ্টমষ্ট যাই হোক- আমাদের দেশে প্রতিবছর রেমিট্যান্স আসছে তো! আহা! রেমিট্যান্স!
# আমরা যত শ্রমিক পাঠাই তার সিংহভাগই (প্রায় সবই) অদক্ষ শ্রমিক। এদের না আছে কোন ভাষাগত দক্ষতা, না আছে কোন একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড। এরা গিয়ে সেখানে প্রধানত অড জবগুলোই করে। মানে যে কাজগুলো আরব শেখরা করতে ঘৃণাবোধ করে- সেগুলো আমাদের শ্রমিকদের দিয়ে করায়। কাজের প্রতি ঘৃণা যেহেতু আছে- এইসব শ্রমিকদেরও আরব শেখরা ঘৃণা করে- মানে ঠিক মানুষ হিসাবে তারা গণ্য করে না।
# আমরা মাঝে মধ্যে রেমিট্যান্স অর্জনকারী শ্রমিকদের দুঃখ দুর্দশা দেখে দাবী তুলি- আমাদের সরকার যেন ওদের সরকারকে একটু চাপ দেয়- যেন আরব শেখরা এই শ্রমিকদের সাথে ভালো আচরণ করে! মন্ত্রী-মিনিস্টাররা মাঝে মধ্যে টক শোতে বা সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে- কথা দেন যে তারা ঐসব সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করবেন এবং এটা ঢাকা ত্যাগের আগেই ভুলে যান। তারা মূলত চাপ না- তদবির-অনুরোধে ব্যস্ত থাকেন: “হুজুর! দয়া করে আমাগো দ্যাশ থাইকা আরো দুইটা কামের লোক, ম্যাথর-সুইপার, বাবুর্চি, ক্লিনার, ডিশ ওয়াশার ন্যান!” এবং এই কাজের লোক- ক্লিনার-সুইপারদের সাথে ভালো ব্যবহার করার অনুরোধ করার আস্পর্ধা তারা করে না- আসলে কল্পনাই করে না- কেননা তারা নিজেরাও মনে করে না যে এই ধরণের/শ্রেণীর লোকেদের সাথে ভালো ব্যবহার করার কিছু আছে। অন্যদেশে গিয়ে এসব বলবে কি- নিজ দেশে নিজেরাও যে- তাদের মানুষ মনে করে না! মনে আছে- ছোটবেলায় পাড়ায় যে সুইপার ফ্যামিলি থাকতো- তাদের কারো সাথে সামান্য ছোয়াছুয়ি হয়ে গেলেই ঘৃণায় আমাদের মুখ কুচকে উঠতো- ভালো করে সাবান দিয়ে গা না ঘষলে সেই ঘৃণা সহজে দূর হতো না!
# মূল কথা হচ্ছে, এইসব অদক্ষ শ্রমিকদের প্রবাসে পাঠানো বন্ধ করতে হবে। এটা বাদ দিয়ে সবাই (বিশেষ করে মিডিয়া ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা) যখন দাবি তুলে যে প্রবাসী শ্রমিকদের প্রবাসে দেখভাল করতে হবে- নিরাপত্তা প্রদান করতে হবে- প্রবাসী সরকারকে চাপ প্রয়োগ করতে হবে ইত্যাদি এবং সরকারও যখন ভুলভাল আশ্বাস দেয়- তখন আমার সবকিছুই নাটক ছাড়া কিছুই মনে হয় না। যারা এমন দাবি তুলেন বা আশ্বাস দেন- তারা নিজেরাই নিজ দেশে ঠিক উল্টাটা করেন এবং সেই অভিজ্ঞতা থেকেই জানেন যে এইসব ক্লিনার-সুইপার-ডিশ ওয়াশার-কাজের লোকদের দেশে বা বিদেশে “আশকারা” দেয়ার কিছু নেই, ফলত এমন দাবি/আশ্বাস কেবল লোক দেখানো- আসল কথা হচ্ছে রেমিট্যান্স এর ফ্লো ঠিক রাখা দরকার।
# ন্যুনতম শিক্ষাগত যোগ্যতাওয়ালা দক্ষ শ্রমিক (কমপক্ষে ইন্টারপাশ + টেকনিক্যাল ডিপ্লোমা ডিগ্রী + ইংরেজী বা ঐ দেশের ভাষায় রিডিং/রাইটিং দক্ষতা), ডাক্তার / ইঞ্জিনিয়র / আইটি এক্সপার্ট না পাঠিয়েএইসব ক্লিনার – সুইপার- ডিশ ওয়াশার – কাজের মেয়ে এদের পাঠালে – ওদের অত্যাচার-নির্যাতন কোনটাই বন্ধ হবে না।
# তবে সরকারের সেদিকে কোন আগ্রহ আছে বলে মনে হয় না। বর্তমান ব্যবস্থায় সরকারগুলো খুব খুশী কারণ- ক. রেমিট্যান্সের প্রবাহ, খ. দেশে কর্মসংস্থানের চাপ কিছুটা হলেও কমা যেটা তাদের পক্ষে তৈরি করা কঠিন গ. জনগণকে শিক্ষিত/দক্ষ জনগোষ্ঠী হিসাবে গড়ে তুলার দায়িত্ব থেকে কি সুন্দর পার পাওয়া যাচ্ছে।
# সৌদি শেখদের হাতে আমাদের নারী শ্রমিকদের উপর নির্যাতন আর কুয়েতী- ওমানী শেখদের হাতে আমাদের পুরুষ শ্রমিকদের উপর নির্যাতন- আমি তেমন পার্থক্য দেখি না। এখানে এরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে ঠিক- কিন্তু ওখানকার বন্দী জীবন, ১৮/২০ ঘন্টার টানা কাজ, অপ্রতুল/নোংরা খাবার, নোংরা অস্বাস্থ্যকর আবাসস্থল, চরম শারীরিক-মানসিক নির্যাতন এগুলোকে কম কিছু মনে হয় না। ফলে- সৌদিতে আমাদের নারী শ্রমিকদের পাঠানোর ব্যাপারে সকলে যেমন করে প্রতিরোধের কথা বলছেন- আমার মনে হয় যেনতেন কাজে বা যেকোন অদক্ষ শ্রমিক পাঠানোর ব্যাপারেই আমাদের আপত্তি থাকা উচিৎ।
# আমাদের গরীব নারীরা শ্রমিক হয়ে প্রবাসে পাড়ি দিতে কুন্ঠা, ভয়, জড়তা কিছু পাচ্ছে না। এর মূল কারণ দারিদ্র। তারা বাধ্য। বিগত কয়েক দশকে নারীর কর্মসংস্থান নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। গ্রামীণ বা বিভিন্ন এনজিও এর ক্রেডিট নেয়ার চেস্টা করেছে বিভিন্ন সময়ে। আসল সত্য হচ্ছে- সীমাহীন দারিদ্রই নারীকে কাজে নামতে বাধ্য করেছে- মাটি ভাঙ্গা, ইট ভাঙ্গা, গার্মেন্টস থেকে আজ তারা প্রবাসে যেতে চাইছে- একমাত্র কারণ দারিদ্র। বিশাল অংশের মানুষ জমি হারিয়েছে, ভূমিহীন হয়ে দিনমজুর-ছুটা শ্রমিকে পরিণত হয়েছে এবং এসব পেশার আয় এমনই যে- একার আয়ে পুরা পরিবার চালানো অসম্ভব।
# আরব শেখদের হাতে আমাদের নারীদের তুলে দেয়ার সময়ে আমরা যখন খুব আপত্তি করছি- তখন এই চিন্তাও আমার মাথায় আসছে- আমাদের দেশে আমরা যখন কাজের মেয়ে নির্যাতন করি- কেবল মানসিক-শারীরিক (মারধর) নির্যাতনই নয়- যৌন নির্যাতনও করি- তখন সেটার প্রতি আমাদের রিজেকশনটা কোথায়?
নিসন্দেহে বিষয়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং, সকলের আলোচনা/কমেন্ট থেকে বুঝা যায়- সবাই খুব উদ্বিগ্ন। লেখা/কমেন্টগুলো পড়তে পড়তে আমার মাথায় যেসব চিন্তাগুলো হাজির হয়েছে- সেগুলো একে একে উপস্থাপন করছি:
# অবশ্যই আমাদের নারীদের সৌদি শেখদের হাতে ভেট হিসাবে তুলে দেয়া যাবে না, এর প্রতিরোধ জরুরী।
# কেবল সৌদিতে নারীদের পাঠানোই নয়- প্রবাসে আমাদের শ্রমিক পাঠানো নিয়ে সবারই আরেকটু ভাবার দরকার। প্রতি বছর সরকার আমাদের রেমিট্যান্সের গল্প শুনায়। কিন্তু কোন শ্রমিক কোথায় কিভাবে এই রেমিট্যান্স আমাদের দেশে পাঠাচ্ছে- তারা কি অবস্থায় আছে- থাকছে- সেসবের খবর বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই আমাদের জানানো হয় না বা আমরা জানি না। কুয়েত সহ মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের শ্রমিকদের অবর্ণনীয় দুঃখ-দুর্দশার কথা মাঝে মধ্যে প্রকাশ হয়ে পড়লে আমরা কেবল একটু বিবৃতই হই, এবং তারপরে ভুলে যাই। কেননা- কষ্টমষ্ট যাই হোক- আমাদের দেশে প্রতিবছর রেমিট্যান্স আসছে তো! হাহ! রেমিট্যান্স!
# আমরা যত শ্রমিক পাঠাই তার সিংহভাগই (প্রায় সবই) অদক্ষ শ্রমিক। এদের না আছে কোন ভাষাগত দক্ষতা, না আছে কোন একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড। এরা গিয়ে সেখানে প্রধানত অড জবগুলোই করে। মানে যে কাজগুলো আরব শেখরা করতে ঘৃণাবোধ করে- সেগুলো আমাদের শ্রমিকদের দিয়ে করায়। কাজের প্রতি ঘৃণা যেহেতু আছে- এইসব শ্রমিকদেরও আরব শেখরা ঘৃণা করে- মানে ঠিক মানুষ হিসাবে তারা গণ্য করে না।
# আমরা মাঝে মধ্যে রেমিট্যান্স অর্জনকারী শ্রমিকদের দুঃখ দুর্দশা দেখে দাবী তুলি- আমাদের সরকার যেন ওদের সরকারকে একটু চাপ দেয়- যেন আরব শেখরা এই শ্রমিকদের সাথে ভালো আচরণ করে! মন্ত্রী-মিনিস্টাররা মাঝে মধ্যে টক শোতে বা সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে- কথা দেন যে তারা ঐসব সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করবেন এবং এটা ঢাকা ত্যাগের আগেই ভুলে যান। তারা মূলত চাপ না- তদবির-অনুরোধে ব্যস্ত থাকেন: “হুজুর! দয়া করে আমাগো দ্যাশ থাইকা আরো দুইটা কামের লোক, ম্যাথর-সুইপার, বাবুর্চি, ক্লিনার, ডিশ ওয়াশার ন্যান!” এবং এই কাজের লোক- ক্লিনার-সুইপারদের সাথে ভালো ব্যবহার করার অনুরোধ করার আস্পর্ধা তারা করে না- আসলে কল্পনাই করে না- কেননা তারা নিজেরাও মনে করে না যে এই ধরণের/শ্রেণীর লোকেদের সাথে ভালো ব্যবহার করার কিছু আছে। অন্যদেশে গিয়ে এসব বলবে কি- নিজ দেশে নিজেরাও যে- তাদের মানুষ মনে করে না! মনে আছে- ছোটবেলায় পাড়ায় যে সুইপার ফ্যামিলি থাকতো- তাদের কারো সাথে সামান্য ছোয়াছুয়ি হয়ে গেলেই ঘৃণায় আমাদের মুখ কুচকে উঠতো- ভালো করে সাবান দিয়ে গা না ঘষলে সেই ঘৃণা সহজে দূর হতো না!
# মূল কথা হচ্ছে, এইসব অদক্ষ শ্রমিকদের প্রবাসে পাঠানো বন্ধ করতে হবে। এটা বাদ দিয়ে সবাই (বিশেষ করে মিডিয়া ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা) যখন দাবি তুলে যে প্রবাসী শ্রমিকদের প্রবাসে দেখভাল করতে হবে- নিরাপত্তা প্রদান করতে হবে- প্রবাসী সরকারকে চাপ প্রয়োগ করতে হবে ইত্যাদি এবং সরকারও যখন ভুলভাল আশ্বাস দেয়- তখন আমার সবকিছুই নাটক ছাড়া কিছুই মনে হয় না। যারা এমন দাবি তুলেন বা আশ্বাস দেন- তারা নিজেরাই নিজ দেশে ঠিক উল্টাটা করেন এবং সেই অভিজ্ঞতা থেকেই জানেন- এইসব দাবি/আশ্বাস কেবল লোক দেখানো- আসল কথা হচ্ছে রেমিট্যান্স।
# ন্যুনতম শিক্ষাগত যোগ্যতাওয়ালা দক্ষ শ্রমিক (কমপক্ষে ইন্টারপাশ + টেকনিক্যাল ডিপ্লোমা ডিগ্রী + ইংরেজী বা ঐ দেশের ভাষায় রিডিং/রাইটিং দক্ষতা), ডাক্তার / ইঞ্জিনিয়র / আইটি এক্সপার্ট না পাঠিয়েএইসব ক্লিনার – সুইপার- ডিশ ওয়াশার – কাজের মেয়ে এদের পাঠালে – ওদের অত্যাচার-নির্যাতন কোনটাই বন্ধ হবে না।
# সৌদি শেখদের হাতে আমাদের নারী শ্রমিকদের উপর নির্যাতন আর কুয়েতী- ওমানী শেখদের হাতে আমাদের পুরুষ শ্রমিকদের উপর নির্যাতন- আমি তেমন পার্থক্য দেখি না। এখানে এরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে ঠিক- কিন্তু ওখানকার বন্দী জীবন, ১৮/২০ ঘন্টার টানা কাজ, অপ্রতুল/নোংরা খাবার, নোংরা অস্বাস্থ্যকর আবাসস্থল, চরম শারীরিক-মানসিক নির্যাতন এগুলোকে কম কিছু মনে হয় না। ফলে- সৌদিতে আমাদের নারী শ্রমিকদের পাঠানোর ব্যাপারে সকলে যেমন করে প্রতিরোধের কথা বলছেন- আমার মনে হয় যেনতেন কাজে বা যেকোন অদক্ষ শ্রমিক পাঠানোর ব্যাপারেই আমাদের আপত্তি থাকা উচিৎ।
# আমাদের গরীব নারীরা শ্রমিক হয়ে প্রবাসে পাড়ি দিতে কুন্ঠা, ভয়, জড়তা কিছু পাচ্ছে না। এর মূল কারণ দারিদ্র। তারা বাধ্য। বিগত কয়েক দশকে নারীর কর্মসংস্থান নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। গ্রামীণ বা বিভিন্ন এনজিও এর ক্রেডিট নেয়ার চেস্টা করেছে বিভিন্ন সময়ে। আসল সত্য হচ্ছে- সীমাহীন দারিদ্রই নারীকে কাজে নামতে বাধ্য করেছে- মাটি ভাঙ্গা, ইট ভাঙ্গা, গার্মেন্টস থেকে আজ তারা প্রবাসে যেতে চাইছে- একমাত্র কারণ দারিদ্র। বিশাল অংশের মানুষ জমি হারিয়েছে, ভূমিহীন হয়ে দিনমজুর-ছুটা শ্রমিকে পরিণত হয়েছে এবং এসব পেশার আয় এমনই যে- একার আয়ে পুরা পরিবার চালানো অসম্ভব।
# আরব শেখদের হাতে আমাদের নারীদের তুলে দেয়ার সময়ে আমরা যখন খুব আপত্তি করছি- তখন এই চিন্তাও আমার মাথায় আসছে- আমাদের দেশে আমরা যখন কাজের মেয়ে নির্যাতন করি- কেবল মানসিক-শারীরিক (মারধর) নির্যাতনই নয়- যৌন নির্যাতনও করি- তখন সেটার প্রতি আমাদের রিজেকশনটা কোথায়?
@নাস্তিকের ধর্মকথা, আপনার বক্তব্যের সাথে একমত।
শ্রমিকদের নিরাপত্তা প্রদান করে এমন কোনো আন্তর্জাতিক আইন কি আছে?যদি থাকে তাহলে তা প্রয়োগ হয় না কেন?আর যদি না থাকে তাহলে এমন আইন তৈরী করার উদ্যোগ সরকারের তরফ থেকে আসছে না কেন?
@নাস্তিকের ধর্মকথা,
শিক্ষা ও দক্ষতার ভিত্তিতে বৈষম্যটা ঠিক মেনে নেওয়া যাচ্ছে না।
@রৌরব,
শিক্ষা ও দক্ষতার কারণে যে বৈষম্য- সেটা মেনে নেয়া কষ্ট হলেও- এটাই হচ্ছে ফ্যাক্ট। আমি কেবল এটাই বলতে চেয়েছি- এই বৈষম্য কেবল আরব মুলুক/মধ্যপ্রাচ্য- বা মালয়েশিয়া ব্রুনাই লেবানন যেসব দেশে আমাদের অদক্ষ / অশিক্ষিত শ্রমিকেরা যায় সেসব দেশেই বিরাজমান না- আমাদের দেশেও বিরাজমান।
আরো স্পেসিফেক্যলি বললে- এই বৈষম্যের মূল হচ্ছে তার আর্থসামাজিক অবস্থান। অর্থাৎ- দরিদ্ররাই শিক্ষা ও দক্ষতার দৌড়ে পিছিয়ে থাকছে- এবং তারাই দারিদ্রের হাত থেকে বাঁচার তাগিদে এমন নানা পেশা বেছে নিচ্ছে।
@নাস্তিকের ধর্মকথা,
কিছু মনে করবেন না, আপনার ভাবনাগুলো মন্তব্যের ঘরে না লিখে মূল পোস্টে লিখলেই পড়তে ভালো লাগতো। কপি-পেস্ট পোস্টের সমাবেশ না ঘটিয়ে দু-একটি পোস্টের লিংক দেওয়াই বোধহয় ভালো ছিলো। মুক্তমনায় এমন পোস্ট দেখতে চাই না। …ধন্যবাদ। (Y)
@বিপ্লব রহমান,
একমত।
তাছাড়া, বিদেশে নারী শ্রমিক পাঠানোতে সমস্যা নেই। আমাদের কাজ করতে হবে যাতে নারীদের দক্ষ করে পাঠানো হয় এবং পাঠানোর পর দূতাবাসের মাধ্যমে নিবিড় যোগাযোগ রেখে সুরক্ষা দেওয়া হয়।
খুবই দুঃখজনক। সৌদী জংলীগুলা মাটিফুড়ে তেল পাওয়ায় ধরাকে সরা জ্ঞান করে। এই হতভাগা নারীদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্হানের উপায় না করতে পারলে কোন উপায় নাই।
গরীব হবার অসীম জ্বালা, সেই পুরনো কাহিনী। সাবধান সতর্কতার দরকার আছে, তবে কেউ জেনে শুনে পেটের দায়ে যেতে চাইলে কে তাকে আটকাতে পারে।
ধর্ম বিষয়ক বিতর্কে মাঝে মাঝেই শোনা যায় বিশ্বে সবচেয়ে কম রেপ রেট নাকি আরব দেশে।
@আদিল মাহমুদ,
কারণ, সৌদি আরবে যদি কোন নারী অভিযোগ করেন যে তিনি ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, তখন তাঁকে আরও অনেক দুর্ভোগের শিকার হতে হবে। আর ইসলামিক বিশ্বে, কোন নারী একবার ধর্ষিত হলে সেই নারীকে নষ্টা বলে বিবেচনা করা হয়, তাঁকে আর যে কেউ নষ্ট করতে পারে ইচ্ছামত। এই দুর্ভোগও কেউ নিতে চায় না। তাই প্রায় সব রেপ কেস ধামা চাপা পড়ে যায়। আরব দেশের মত সেক্স ফ্রীক কান্ট্রিতে রেপ রেট সবচেয়ে কম তা হতেই পারে না।
@তুহিন তালুকদার,
আসলেই তাই। ধর্মীয় কালচারেই বিভিন্ন ধরণের রেপকে জায়েজ করে দেয়া হয়েছে। ফলে- ঐ সমাজে অনেক রেপ তাদের চোখে রেপই না। সরাসরি কোরআনেই বিভিন্ন রকম রেপকে কেবল বৈধতা না- উৎসাহিত করা হয়েছে। স্বামী স্ত্রীকে যেকোন সময়ে রেপ করতে পারবে- স্ত্রী’র অনিচ্ছায় কেবল স্বামী পেটাবেন তা নয়- ফেরেশতারা পর্যন্ত স্ত্রীকে অভিশাপ দিতে থাকবে। যুদ্ধে নারীদের ধরে ধরে ভাগ করে ভোগ তথা রেপ করা কোরআনে স্বীকৃতই নয়- স্বয়ং নবী-সাহাবিরা দেদারছে পথ দেখায় গেছেন। সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয় হচ্ছে- আপনি মুমিন বান্দাদের সাথে কথা বলে দেখেন- তারাও এগুলোকে রেপ বলে স্বীকার করবেন না। তার মানেই হচ্ছে- এগুলো তাদের কাছে- নরমাল, হতেই পারে। কৃতদাসীদের ভোগ বা ধর্ষণ কোরআন-সুন্নাহ স্বীকৃত ও নবী-সাহাবীরাও এই কাজ কম করেন নাই। এখন কৃতদাসী না থাকলে কি করা- দাসীরা তো আছে! সুতরাং- তাদের ধর্ষণ করাটাও তো জায়েজ!!!
@আদিল মাহমুদ,
রেপের সংজ্ঞা তো ভাই একেক জায়গায় একেক রকম! দাসীকে যদি নিজের সম্পত্তি মনে করে ভোগ করা জায়েজ হয়- তবে সেটাকে রেপ হিসেবে বিবেচনা করা হয় না।
সৌদিআরবে নারীশ্রমিক পাঠানো মানে তো নারী পাচারের সামিল। সরকার এরকম হীন পদক্ষেপ কেন নিতে যাচ্ছেন? এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তোলা উচিত যেকোন ভাবেই এটা রুখতে হবে। অনেক ধন্যবাদ এ বষয়টি সকলের সামনে তুলে ধরার জন্য।
একবার না অনেকবার ধর্ষিত হয়েছেন , একজন না অনেকজন দারা।
উপরে উপরে ইসলাম দেখিয়ে ভেতরে কি করছে এই অমানুষের জাত গুলা!!
একটি ঘটনা আমি পড়েছিলামঃ
শ্রীলঙ্কার এক মহিলা আরবে এক পরিবারে পরিচারিকা হিসেবে ছিলেন, পরে পালিয়ে এসেছেন। আসার পরে তাঁর শরীর থেকে ২৪ টা পেরেক বের করেছেন ডাক্তার, যা তিনি কর্মজীবনের পুরষ্কার হিসেবে পেয়েছিলেন। তার লিঙ্ক দিলাম।
তাছাড়া Google এ Arabs torture housemaids লিখে ওয়েব সার্চ দিলে অনেক রিপোর্ট চলে আসে। যাঁদের মানসিক/স্নায়ুবিক শক্তি ভালো তাঁরা একই Query’র জন্য ইমেজ সার্চও দিয়ে দেখতে পারেন।
সৌদি আরবের গৃহকর্ত্রীরাই অনেকক্ষেত্রে এসব অত্যাচার করে থাকেন। এরপরও বাংলাদেশের নারীদের সেখানে পাঠানোর কোন যৌক্তিকতা আছে বলে আমার মনে হয় না।
খুব ভালো লাগল এমন একটা প্রসঙ্গ তুলে দিয়েছেন লেখক আলোচনা করতে পাঠকদের কে। এমন সতর্ক বানী কী আসলে অনেকে মানবে কিনা জানা নেই।
তবে যাবার আগে একবার কেন হাজার বার ভেবে দেখা দরকার। যে দরকারে যাচ্ছে তাতে কতটুকু বিপদের আশংকা আছে। লেখককে ধন্যবাদ।
@ সেন্টু টিকাদার ,
একদম সঠিক বলেছেন।
সাধুবাদ জানাই সবাইকে যারা ব্যাপারটা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন।
ইন্দোনেশিয়ার মেয়েরা মুসলমানদের পূণ্যতীর্থ সৌদি আরবে আর কাজ করতে যেতে চাইছেনা কারন তারাই সবথেকে বেশী অত্যাচারিত হয় তাদের সৌদি বস হতে। কয়েক মাস আগে সুমাতি নামের ইন্দোনেশি কাজের মেয়েকে তার মহিলা বস শুধু গরম ইস্তিরি দিয়ে সেকা দিয়ে গা পুড়িয়েই দিয়েই নিবৃত থাকে নি। রান্নাঘরের কাঁচি দিয়ে সুমাতির ঠোঁটও কেঁটে দিয়েছে। পাসন্ডদের দেশের সৌদি বিচারক ওই মহিলা মালকিনের কোন দোষ খুঁজে পাই নি।
গত সপ্তাহের খবর আর এক ইন্দনেশি কাজের মেয়ে সৌদি মালিকের বাথরুমে মৃত অবস্থায় ঝুলন্ত পাওয়া গেছে। এই রকম হাজার ঘটনা ঘটছে।
আর এখনত সৌদিদের আরো পোয়া বারো। রাজা তার প্রজাদের নানা ভাবে মনজয়ের ব্যবস্থা করে চলেছেন।
বাংলাদেশ বাংগালী মেয়েদেরকে সৌদি পাঠাবে। এটা নিশ্চিত। তারাও ইন্দোনেশিয়ার মেয়েদের মত ভুগবে। তাদের টনক নড়বে। সরকারের টনক নড়বে। সরকার নানা নিয়ম করবে কাজের মেয়েদের সপক্ষে। কিন্তু কি হবে তাতে? সৌদি সৌদি ই থাকবে।
অসহায় এই সব নারীদের জন্য আমরা কি কিছুই করতে পারবো না?আর কতদিন তারা এই অত্যাচার সহ্য করবে?সৌদি ঐ নরপশু দের প্রতি ঘৃণা আর আমাদের সরকারের কাছে এর একটি ভাল সমাধান চাই।
খটকা লাগছে কেন ? একজন পুরুষ নিজের ইচ্ছায় সৌদিতে কাজ করতে যেতে পারলে একজন নারী যেতে পারবে না কেন ? আপনি খুব বেশী হলে সেই নারীকে না যাওয়ার উপদেশ দিতে পারেন কিন্তু তার স্বাধীন চলাফেরা করার মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ করতে পারেন না। নারীদের অভিভাবক না সেজে নারীদের ভাবনা নারীদেরই করতে দিন। বাসায় যে কাজের মেয়ে আর মহিলারা আছে তাদের আগে মানুষ হিসেবে গন্য করুন। তা না হলো যে , ঠোঁট কাটা মানুষেরা ভন্ডামীর অপবাদ দেবে ।
@ভেরোনিকা, লেখক নারীর স্বাধীন ইচ্ছায় বাধা দিচ্ছেন না। উনি শুধুমাত্র তাদেরকে সতর্ক করে দিয়েছেন। বনে-জঙ্গলে আমি যাবো কি যাবো না তা সম্পুর্ণ আমার নিজের ব্যাপার।কিন্তু কেউ যদি বাঘ আছে বলে সতর্ক করে দেয় তা কি আমার জন্যই ভালো নয়? আপনি বোধহয় শিরোনাম ভালোমত খেয়াল করেননি। লেখক নারীদেরকে সৌদি আরবে যেতে বাধা দেননি, বলেছেন যাওয়ার আগে ভাবতে।
কথাটাতে যুক্তি আছে এবং সত্যতা থাকার সম্ভাবনা অনেক বেশী।
চিন্তার বিষয় বটে।
সমস্যাটি তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ।
খুব ভাল লাগল পড়ে-নিও রিয়াল ব্লগ!
পশ্চিম বঙ্গেও দেখেছি-বাংলাদেশের ব্লগারদের মধ্যেও দেখছি- দেশের সাধারন জনগনের সাথে সম্পূর্ন বিচ্ছিন্নতা। দারিদ্র ্মানুষকে এত কোনঠাসা করে, সে ধর্ষিতা হতেও রাজি থাকে।
বাংলাদেশের দিকে যেমন কাজের মেয়েরা মধ্যপ্রাচ্যে যায়, পশ্চিম বঙ্গ থেকে যায় দিল্লী বা মুম্বাই এ। ধর্ষনের শিকার হয় প্রায় সকলেই-কিন্ত বাড়ির সন্মানহানি, নিজের সন্মান হানির জন্যে তারা অভিযোগ জানায় না। আবার প্রানের ভয় ও আছে। অনেকে্ আশ্রয় নেয় মুম্বাই এর নাচের বারগুলোতে। এমন এক মহিলার সাক্ষাতকার দেখেছিলাম-্কোন মালিক ধর্ষন ত করেইছে, তার সাথে এমন মার মেরেছে, গাল কেটে গেছে। তবুও সে গ্রামের বাড়ি মুর্শিদাবাদের ফিরে আসবে না। সেই সাক্ষাতকার যদি ছোটগল্পে শেষ করতাম-তাহলে লাইনটা হত -“তবুও দুটা খাইতে পাই” । গ্রামের বাড়িতে সেটাও জোটে না।
শুধু আলোচনার জন্য একটা পোষ্ট??
অবশ্যই এ বিষয়ে গণ সচেতনতা তৈরী করা জরুরী