আবদ্ধ একটি স্থান
ভয়ে বুক সদা কম্পমান।
রুদ্ধ ঘরের দ্বার
রুদ্ধ ওষ্ঠ-অধর।

মনেতে দিবারাত্রি ভয়ার্ত ধুকধুক
নাই সস্তি, নাই সুখ।
প্রতিদিন যন্ত্রের মতো রুটিন
যন্ত্রের মতো কাজ।
যন্ত্রডোরে বাঁধা জীবনখানি।
যন্ত্রডোরে বাঁধা সকাল-সাঁঝ।

প্রতিক্ষণে ভয়ে-ভয়ে মন উঠে কেঁপে,
ঘন-আঁধারেতে দু’নয়ন রয়েছে যে ঢেকে।
হৃদয়ে লাগেনি কভু সোহাগের ছোঁয়া
সেথায় রয়েছে শুধু দুঃখের ধোঁয়া।

ইচ্ছে করে আজ,
ক্ষণিকের তরে রেখে সব কাজ,
মুহূর্তের তরে ,
এই রুদ্ধঘরে,
চুপিসারে বসে থাকি জানালার ধারে।

দেখি অনন্ত-আকাশে,
গভীর নীলিমার স্রোতধারা।
দেখি বনবীথিকা আছে ঘিরে
এই সুন্দর ধরণীরে।
সুরভী যাচ্ছে ভেসে সমীরে সমীরে।

আজ এই মনে জেগেছে সাধ,
ভেঙে ফেলি সব বাধ।
ঘুরে বেড়াই অজস্র-ভুবনে।
ছুটে বেড়াই নক্ষত্রের আগে আগে
ভেসে বেড়াই জ্যোৎস্নাধারায়।

আজ ইচ্ছে করে,
শীতল সমীরে
মুছে ফেলি বহুকালের অশ্রুধারা
মুছে ফেলি হৃদয়ের কষ্টের ধারা।

আজ ইচ্ছে করে
গান গাই রুদ্ধ-কণ্ঠ ছেড়ে।
রুখে দাঁড়াই যেইবা আসুক তেড়ে
আমার মুক্তির পথে।

আজ ইচ্ছে করে
দেখি নয়ন ভরে
গাছে গাছে পত্র-পল্লবে গেছে ছেয়ে।
আর্দ্র-শিশিরে তৃণগুলো উঠেছে নেয়ে।
নদীগুলো সাগরের পানে যাচ্ছে বয়ে।
উড়িছে ভ্রমর, ফুলের গুচ্ছে গুচ্ছে
উড়িছে পাখিরা মেঘের পুচ্ছে পুচ্ছে।

আজ কেবলই মনে হয়
এ জীবন শুধু বন্দী থাকার তরে নয়।
অসীম এই বিশ্বচরাচর।
আমার ঠিকানা নয়
কেবল ছোট্ট একখানি ঘর।
আমি তো নই কেবল
এই ছোট্ট কুঠুরির!
আমিও তো বাসিন্দা
এই মহাবিশ্বের।

আজি চাহে আমার মন
করিতে আলিঙ্গন
এই অফুরন্ত মহাবিশ্বকে।
ইচ্ছে করে,
পরাধীনতা আর কর্মভারে বাঁকা
মেরুদণ্ডটিকে সোজা করে দাঁড়াই।