মহান সিঁধুর কথায় যাওয়ার আগে বাংলাদেশ টিমকে নিয়ে কিছু কথা বলে নেই।

কী দেখলাম আজকে, কী দেখালো বাংলাদেশ, এক সপ্তাহ আগের গোহারা হেরে কাঁদতে কাঁদতে বনে চলে যাওয়া সেই দল আর আজকের বাংলাদেশ ক্রিকেট দল কি একই দ্ল? বাংলাদেশ ওয়েস্টইন্ডিজের হাতে বিশাল ভরাডুবির পর আজ যেভাবে ইংল্যান্ডকে পরাস্ত করল তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। আট উইকেট পরে যাওয়ার পর অবস্থা বেগতিক দেখে অনেকেই নাকি স্টেডিয়াম ছেড়ে বাড়ির দিকে রওনা দিয়ে দিয়েছিলেন। এই আল্লা খোদায় অবিশ্বাসী আমিও ভাবছিলাম একটু আল্লা বিল্লা শুরু করুম নাকি। অবশ্য তার দরকার পরে নাই। পিচ্চি শফিউল মাঠে নামার পরেই যেই তান্ডব ছুটালো তা গতকালকের ঝড়কেও ঠান্ডা বানায় দিয়েছে। যেটা ঘটলো তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়, যারা খেলাটা দেখেছেন তারাই শুধু বুঝবেন আমি কী বলতে চাইছি। আগামী দুটি খেলা নেদারল্যাণ্ডস আর সাউথ আফ্রিকার সাথে। এই দুটাতেই জয় চাই আমরা। অন্ততঃ হল্যান্ডের সাথে তো অবশ্যই। নাইলে আবার তাগুদি জনতা বাসে ইটা মারবে, এবারের পাটকেল আর বিদেশী দলের বাসে নয়, নিজেদের ঘাড়ে এসেই পড়বে ।

তবে ইটা মারামারি ছাপিয়ে যে খবরটা ইদানিং খুব বড় মার্কেট পেয়েছে তা হচ্ছে একসময়কার ভারতীয় মারকুটে ব্যাটসম্যান নভজোৎ সিং সিধুর জ্বিহবা । ভদ্রলোক একবার ঘুষি মেরে মানুষ মেরে ফেলেছিলেন। সেটা আশির শেষ দিকে কিংবা নব্বইয়ের শুরুর ঘটনা। তার গাড়ি রাস্তার জ্যামে আটকে গেলে রাস্তার এক লোকের সাথে ঝগড়া ফ্যাসাদ বেধে যায়, আর তার ফলে সিঁধু ঘুষি মেরে লোকটিকে অজ্ঞান করে ফেলেন। হাসপাতালে নিয়ে গেলে, কর্তব্যরত চিকিৎসক লোকটিকে মৃত ঘোষনা করে।

আমি যখন প্রথম খবরটা শুনি, তখনই মোটামুটি টাস্কি খাই। নিরামিষাশী ভারত – যার নেতা ঘুষখোর আজহার উদ্দিন নিরামিশাষীদের পাল্লায় পড়ে গরু খাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলো আর যে কিনা মিন মিন করে কথা বলা ছাড়া কথা বলতে পারত না – সেই দলে কিনা মাইক টাইসনের মত রগ চটা বক্সার। ঘুষি মেরে মানুষ খুন? আমি তো ভেবেছিলাম তখনই ব্যাটার ফাঁসি হয়ে যাবে। মানুষ মারলে তো তাই হয় জানি। কিন্তু মারলে কি হবে, ভারতের জাতীয় দলের খেলোয়ার বলে কথা, সিধু পার পেয়ে গেল। সিধু তো আর সামান্য ফাহিম রেজা না যে কেবল কুমীর দেখাবে।

তবে ঘুষাঘুষিই সিঁধুর একমাত্র সম্বল নয়। দশভুজা দেবীর মত তার দেহের সকল অঙ্গই মাশাল্লা কর্মক্ষম। খেলাধুলা থেকে অবসর নেওয়া হলেও অঙ্গদিয়ে গুঁতাগুতি করার অভ্যাসটা যায়নি। ইদানিং তার হাতের সাথে জীবটাও চলে মাশাল্লাহ। যেকোন গর্ত দেখলেই নাকি তার জীব ঢুকে যায় সযত্নে। আর কোন এক অজ্ঞাত কারণে ভদ্রলোক বাংলাদেশকে দেখতে পারেন না। হতে পারে স্টেডিয়ামে ঢুকার আগে কোন দর্শক হয়তো তার বিখ্যাত পাগড়ি ধরে টান দিয়েছিল, কিংবা কে জানে কোন এক বাঙ্গালী ললনা হয়ত তাকে প্রত্যাখান করেছিল সর্বক্ষণ তার দাঁড়িতে গন্ধ থাকে বলে, কিংবা হয়তো বাংলাদেশের সাথে অজস্রবার শুন্য রানে প্যাভিলিয়নে ফেরাও এর কারণেও হতে পারে, আমার কথা বিশ্বাস না হলে – এই যে দিচ্ছি শুন্য রানে প্যাভিলিয়নে যাওয়া সিধুর সেরম একটা পরিসংখ্যান –

যা হোক যা বলছিলাম, খেলা ছাড়ার পর, একজন ‘জ্বালামায়ী’ ক্রিকেট ভাষ্যকার হিসেবে সিঁধুর আবির্ভাব। ইএসপিএন-স্টার স্পোর্টসেই সিঁধুকে বেশি ধারাভাষ্য দিতে দেখা যায়, আর ধারাভাষ্যে আবোল তাবোল কথা বলাতেই তার বিশেষত্ব। অনিয়ন্ত্রিত কথা বলে এর আগে কয়েকবারই বিভিন্ন মহলের ক্ষোভের কারণ হয়েছিলেন তিনি। প্রথম দিকে এটাকে অনেকে বিনোদন মনে করলেও এখন সিঁধুর কথা শুনলেই মহা বিরক্ত হয় বেশিরভাগ দর্শক। এবারের বিশ্বকাপে ইএসপিএন-স্টার স্পোর্টসে ম্যাচ পূর্ব ও পরবর্তী একটি টকশোতে অংশ নিচ্ছেন নভজোৎ সিং সিঁধু। বিখ্যাত ধারাভাষ্যকার হারশা ভোগলের উপস্থাপনায় এই টক শোনাতে অংশ নিচ্ছেন, ইয়ান চ্যাপেল, সৌরভ গাঙ্গুলি, প্যাট সিমকক্স থেকে শুরু করে ডারমট রীভ ও অন্যান্য সাবেক ক্রিকেটাররা। এই আলোচনায় বাংলাদেশকে তেলাপোকার সাথে তুলনা করেন এই মহাবিস্ময়কর প্রতিভাটি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচের আগে তিনি ইয়ান বোথামের একটি মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বাংলাদেশ সম্পর্কে বলেন, হ্যা পাখিও উড়ে আর তেলাপোকাও উড়ে, ওয়েস্ট ইণ্ডিজো ক্রিকেট খেলে আর বাংলাদেশও ক্রিকেট খেলে।

বাংলাদেশের অগনিত দর্শকেরা তো মহা চটিতং হয়েছেনই, সেই সাথে দিন কয়েক আগে নিয়ে দীপন নামের একজন বাংলাদেশি ক্রিকেটভক্ত আইসিসির প্রধান নির্বাহী হারুন লরগাত বরাবর একটি ই-মেইল পাঠিয়ে প্রতিকারও চেয়েছেন। দীপন সিঁধুকে অভিযুক্ত করেন একজন ‘বর্ণবাদী’ হিসেবে। তাঁর অভিযোগ ছিল, বাংলাদেশ নিয়ে সেই টক শোতে সিঁধু যেসব মন্তব্য করেন, সেগুলো আইসিসির বর্ণবাদ বিরোধী নীতিমালা ও কোড অব কন্ডাক্টের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

আইসিসির প্রধান নির্বাহী হারুন লরগাত দীপনের এই ই-মেইল বার্তাটি যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে তদন্তও চালান। আইসিসি সেই তদন্তে ইএসপিএন-স্টার স্পোর্টসের সেই অনুষ্ঠানটির ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করে সিঁধুর বিরুদ্ধে বর্ণবাদী কথাবার্তার সুস্পষ্ট প্রমাণ পেয়েছে। এই নিয়ে পড়ুন প্রথম আলোর রিপোর্ট

আজকে দেখলাম বাংলাদেশ ইংল্যান্ডকে হারানোর পর দেখা যাচ্ছে সিঁধু ভিজে বেড়াল হয়ে মিউ মিউ করছেন। কোথায় গেল সেই মানুষ খুন করা বক্সারের হম্বি তম্বি? ছালায় পুরে পিটালে বাঘও বিড়াল হয়ে যায়।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, সিধুর এই লাগামহীন বর্ণবাদী মন্তব্যের পর দিন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যান তামিম ইকবালের প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছিলেন ভারতীয় এক সাংবাদিক। তামিম খুব মজার একটা কথা বলেছিলেন তখন সিধু সম্পর্কে। বলেছিলেন, সিধু তো মানসিকভাবে অসুস্থ একজন মানুষ। তামিম বলেন –

 ‘লোকটা পাগল হয়ে গেছে। তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ। সমালোচনা যে কেউই করতে পারে। তবে তার একটা ভাষা আছে!’ সে ভাষাতেই সিধুকে পাল্টা আক্রমণ করেছেন তামিম, ‘১০ বছর আগে সিধুর নিজের দেশ ভারতের ক্রিকেট কোথায় ছিল? অত দূর যেতে হবে না। চার বছর আগের বিশ্বকাপে ভারত কী করেছিল? তিনি তখন কোথায় ছিলেন?’

আমরা সবাই জানি, চার বছর আগের বিশ্বকাপে ভারতকে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় জানিয়েছিল বাংলাদেশ।  সেই বেতের বাড়ির দাগ সিধুর পিঠ থেকে শুঁকায় নাই এখনো। আমার মনে হয় তখন থেকেই বাঘকে তেলাপোকা ভেবে ভয় পায় সিধু। মাথা আউলালে এর’ম অনেক কিছুই ঘটে। সিধু যে একজন মানসিক রোগী তা ভাল টের পেয়েছে তার স্ত্রী। পাগলের সাথে থাকা সম্ভব না মনে করে তার স্ত্রী নাকি আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছিলেন বার কয়েক। এখানে আছে একটি রিপোর্ট, এখানে আরেকটা

অবশ্য তেলাপোকা নিয়ে কিছু উড়োখবর বাজারে চালু আছে। পাবনার হেমায়েতপুর থেকে প্রকাশিত ‘দেশের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য খবরের সাইট’ উরাধুরা নিউজ একটি খবর ছাপিয়েছে নভোজিত সিং সিধুর পতংগ প্রেম শিরোনামে। মুক্তমনায় পাঠকদের বিনোদনের জন্য নিউজটি দেওয়া গেল –

সাম্প্রতিক কালে বর্ণবাদী মন্তব্য করে বিতর্কিত হওয়া সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটার নভোজিত সিং সিধুকে আমরা চিনি একজন দুর্বিনীত ভাষ্যকার হিসেবে। তবে আমরা অনেকেই যে তথ্যটা জানি না সেটা হলো তিনি একজন কীটপতংগ প্রেমী ব্যক্তি। সিধুর ব্যাক্তিগত সংগ্রহে আছে প্রায় হাজার খানেক বিরল ও বিপন্ন কীটপতঙ্গ, যার একটা বিরাট অংশই বিভিন্ন প্রজাতির তেলাপোকা।

“অর্থোপোডা গোত্রের প্রতিটি পতঙ্গই আমার অত্যন্ত প্রিয়, আর তাদের ভেতর আমাকে সবচেয়ে বেশী যে পতঙ্গটি আমার দৃষ্টি আকর্ষন করে তা হলো তেলাপোকা” গর্বের সাথে সিধু বলেন, “আমার কাছে বিভিন্ন স্থান থেকে সংগৃহীত প্রায় শখানেক তেলাপোকা আছে…”

এই সব পতংগ সংগ্রহ করতে গিয়ে ঝক্কিও কম পোহাতে হয়নি সাবেক এই ক্রিকেটারকে। ভিনদেশের হোটেলে গিয়ে তেলাপোকা খুজতে গিয়ে বেশ কয়েকবার হোটেল কতৃপক্ষের বিরাগভাজন হয়েছেন তিনি।

এই নিয়ে সর্বশেষ ঘটনাটি ঘটেছে এই বিশ্বকাপের এক আলোচনা অনুষ্ঠানে, যেখানে বাংলাদেশ আর ওয়েস্ট ইন্ডিস দলের ভেতর শক্তিমত্তার তুলনা করতে গিয়ে পাখি আর তেলাপোকার আকাশে ওড়ার দৃষ্টান্ত দিয়েছেন তিনি। যার ফলাফল হিসেবে আইসিসি সতর্ক করে দিয়েছে পরবর্তীতে মাইকের সামনে বুঝে শুনে কথা বলার জন্য।

“তেলাপোকা বলে আমি কাউকে ছোট করতে চাইনি আমি” বললেন সিধু, “আমার বাসায় একটি ঘরই আছে যার সমস্তটাই তেলাপোকায় ভরা, আমি মাঝে মাঝেই এই ঘরে গিয়ে সময় কাটাই…”

তবে একান্ত আলাপে বোঝা গেছে, পরবর্তীতে এই প্রকার বর্নবাদী কথা বলার অভিযোগ উঠলে আইসিসির পক্ষ থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে তার বিরুদ্ধে, তাই আক্রমনাত্বক ধারায় কথা বলার পুরোনো অভ্যাস ত্যাগ করে টিভির সামনে ভেবে চিন্তে মেপে কথা বলাই এখন অভ্যাস করছেন এই টিভি ভাষ্যকার।

তাই করুন আপনি মহামান্য সিঁধু। ভেবে চিন্তে মেপে কথা বলাই ভাল আপনার জন্য হপে। আপনার জীব যতক্ষণ আপনার মুখের গর্তেই আটকে থাকে আপনিও ভাল থাকবেন, আমরাও ভাল থাকব। ভাল থাকবে নিরীহ তেলাপোকারাও। তেলাপোকারা জ্বলে উঠলে কি দশা হয় আজকে ইংল্যান্ড ভালমতই টের পেয়েছে। আপনিও পাচ্ছেন আশা করি।

কৃতজ্ঞতাঃ ছবি এবং কার্টুনগুলো ইন্টারনেট এবং ফেইসবুক হতে সংগৃহীত।