লিখেছেনঃ মানস রায়

কমলা

ভূমিকা
বেশ কয়েক বছর আগের কথা। সেটাও ফেব্রুয়ারী মাস। সন্ধেয় আড্ডা জমেছে শহর কলিকাতায়। আমার মতন পাতি আড্ডাবাজের সঙ্গে বেশ কিছু নামী-অনামী বুদ্ধিজীবি, নারীবাদী, পরিবেশবাদীরাও আছেন। ফেব্রুয়ারী মাস তাই ভাষা আন্দোলনের কথাও উঠল। কলকাতায় ভাষা আন্দোলনের প্রভাব নিয়েও তর্ক হল, কার্জন পার্কে ভাষা শহীদদের নামে কবর সম কালো বেদীটির কোন শিল্পমূল্য আছে কিনা সেই প্রশ্নও করল কেউ। বেশি কচকচানি হয়ে যাচ্ছে দেখে বন্ধুবর কল্লোল তার আবেগমথিত গলায় গান ধরেছিল, “আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী”।

কল্লোলের গান একটু এগিয়েছে তখনই আমার বোকাবন্ধু সত্য মিত্র মিনমিন করে বলেছিল, আচ্ছা কেউতো এমনো লিখতে পারত …. ‘আমার বোনের রক্তে রাঙানো …’ কথা শেষ করতে পারেনি বেচারা, হইহই করে উঠেছিল সবাই। এ কেমন কথা। যারপরনাই বিরক্ত হয়েছিলেন নারীবাদী নেত্রী। এখানে বোনের কথা আসছে কোত্থেকে ? সমতার জন্য জবরদস্তি নারীশহীদ বানাতে হবে নাকি। ওহে মুর্খ, বাংলাভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছিল যারা তারা সবাই পুরুষ। তুমি হিন্দুর ছেলে মুসলমান নামের লিঙ্গ জ্ঞান নেই।

সত্য তবু বলার চেস্টা করেছিল, ২১শে ফেব্রুয়ারী নয় ১৯শে মে, বাংলা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছিল এক নারী, ষোল বছরের কিশোরী, কমলা ভট্টাচার্য্য, ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিয়েছিল, রেজাল্ট দেখে যেতে পারেনি……। কিন্তু ১৯শে মে পর্যন্ত বলার পর খুব গম্ভীর গলায় সত্যকে থামিয়ে ছিলেন আড্ডার সবচেয়ে মান্যগণ্য ব্যক্তি, এক বিখ্যাত বাংলা পত্রিকার সম্পাদক। বলেছিলেন, ওটা ১৯শে নয় হবে ১৩ই মে। কবি সুকান্তর মৃত্যু দিবস।সুকান্তর মৃত্যু, অকালমৃত্যু কিন্তু তাকে শহীদ বলাটা বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে। সম্পাদক মশাই আরো জানিয়েছিলেন যে ফেব্রুয়ারীর মতন মে মাসও বাংলা ভাষার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ মাস – রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল, দুজনের জন্মই মে মাসে।

বলা বাহুল্য, সম্পাদক মশাই জানতেন না যে আরো একটি কারণে মে মাস বাংলা ভাষার ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৬১ সালে রবীন্দ্র জন্মশতবর্ষে মে মাসের ১৯ তারিখে ভারতের অসম প্রদেশের কাছাড় জেলার সদর শিলচর শহরে বাংলা ভাষার সরকারী স্বীকৃতি দাবীর আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন এগার জন। সেই একাদশ শহীদের একজন এবং একমাত্র নারী কমলা। কমলা ভট্টাচার্য্য সম্ভবতঃ বাংলা ভাষার জন্য প্রাণদাত্রী একমাত্র নারী।…… এই তথ্যটি পশ্চিম বাংলার বেশিরভাগ বুদ্ধিজীবির, বিশেষ করে শিল্প সাহিত্যের সংগে জড়িত মানুষদের, অজানা। কতিপয় যারা জানেন তারা না জানার ভান করেন বা এড়িয়ে যান। তাই ভিয়েতনাম, লাতিন আমেরিকা, প্যালেস্তাইনের জন্য পাতা ভরানো বাঙালী কবির কলমে (ব্যতিক্রম বনফুল, মনীষ ঘটক)শিলচরের স্থান হয় নি। পশ্চিম বাংলার কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন গবেষণাপত্র লেখা হয় নি। কলকাতায় ২১শে স্মরণে বেদী আছে কিন্তু ১৯শে ….. সেটা আবার কি? পশ্চিম বাংলায় যখন এই অবস্থা তখন বাংলাদেশের কাছে কিছু আশা না করাই স্বাভাবিক।

সেই ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে দু চার কথা
বাংলাভাষী শ্রীহট্ট জেলা ১৮৭৪ খ্রীস্টাব্দে অসম প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত হয়। রবীন্দ্রনাথ তাই লিখেছিলেন, ‘মমতাবিহীন কালস্রোতে/ বাংলার রাষ্ট্রসীমা হতে/ নির্বাসিতা তুমি/ সুন্দরী শ্রীভূমি’। অসমে এক সময় সরকারী ভাষা ছিল বাংলা। পরে অসমীয়া প্রধান সরকারী ভাষা ঘোষিত হলেও সমগ্র অসমে বাংলা চালু ছিল সরকারী স্তরে দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় এক বিতর্কিত গণভোটে শ্রীহট্ট জেলাকে অসম থেকে বিছিন্ন করে পূর্বপাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করা হয়, শুধু কাছাড় অংশ ভারতে থেকে যায় অসমের একটি জেলা হিসেবে। একশ শতাংশ বাংলাভাষী কাছাড় জেলায় বাংলাই ছিল প্রধান সরকারী ভাষা। ১৯৬০ সালে অসম সরকার অসমীয়াকে একমাত্র সরকারী ভাষা হিসেবে ঘোষণা করে। এই ঘোষণার বিরুদ্ধে বাংলা ও অনান্য স্থানীয় ভাষার স্বীকৃতির দাবীতে কাছাড়কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে এক প্রবল ভাষা আন্দোলন।

প্রতিক্রিয়ায় অসমীয়া গরিষ্ঠ অঞ্চলে বাঙালীদের ওপর নেমে আসে প্রচন্ড অত্যাচার। অসমের বাংলাভাষী মুসলমানরা তাদের মাতৃভাষা অসমীয়া ঘোষণা না করলে তাদের পাকিস্তানে পাঠানো হবে এই জুজু দেখান হয় (যে প্রচেস্টা আজও অব্যাহত। ২০১১ সালের সেন্সাসে বাংলাভাষী মুসলমানরা যাতে তাদের মাতৃভাষা অসমীয়া ঘোষনা করেন তার জন্য সম্মেলন টম্মেলনও হচ্ছে এবং অসমের বাংলাভাষী মুসলমানরা এ ব্যাপারে বর্তমানে কিছুটা দিধা বিভক্ত।এই বিষয় সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র একটি প্রবন্ধের দাবীদার।)এবং বাংলাভাষার আন্দোলন বাঙালী হিন্দুর মুসলিম বিরোধী কার্য্যকলাপ বলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানো হয়। দাঙ্গা দমন পীড়নকে অগ্রাহ্য করে বাংলাভাষার দাবীতে রাস্তায় নামেন কাছাড় জেলার সর্বস্তরের মানুষ।

১৯৬১র ১৪ই এপ্রিল (১লা বৈশাখ)পালিত হয় সংকল্প দিবস। ১৯শে এপ্রিল থেকে পদযাত্রা শুরু হয় সারা জেলা জুড়ে। ১৮ই এপ্রিল ছাত্র সমাবেশ, বিশাল মশাল মিছিল হল করিমগঞ্জে, শিলচরে (ফেব্রুয়ারীর আন্দোলনের মত এখানেও ছাত্ররা সামনের সারিতে)। পরদিন, ১৯শে মে, পালিত হবে অসহযোগ দিবস, স্তব্ধ হবে সারা কাছাড়, বাংলা ভাষার জন্য নিবেদিত হবে এগারটি প্রাণ, বাংলার নারীর মুখ উজ্জ্বল করবে কমলা ভট্টাচার্য্য।

কমলার কথা
দেশ ভাগের বলি কমলাদের পরিবার শ্রীহট্ট থেকে কাছাড়ে আসে ১৯৫০ সালে। পিতা মৃত। অভাবের পরিবারে দুবেলা পেটভরা অন্নের সংস্থান ছিল না। চার বোন, কমলা তৃতীয়। তিন ভাই – দুজন কমলার বড়, বকুল ছোট। দ্বিতীয় বোন (সেজদি) প্রতিভা এক স্কুলের শিক্ষিকা, তার আয়ে কোনমতে চলে। পড়ার বই, লেখার খাতা কেনার সামর্থ নেই, শতছিন্ন পোষাকে স্কুলে যাতায়াত। অনেকেই পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়ার পড়ামর্শ দিয়েছিল কমলাকে। কমলার এক গোঁ, গ্র্যাজুয়েশন আমি নেবই। সেই গোঁ থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় বসা, আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে থেকেও।

ম্যাট্রিক পরীক্ষা শেষ। পরদিনই পিকেটিংএ যাওয়ার জন্য তৈরী কমলা। আজকে তো এক বিশেষ দিন, আজকের পিকেটিং সারা কাছাড় সারা কাছাড় স্তব্ধ করে নেহেরু-চালিহাদের (চালিহা অসমের ততকালীন মুখ্যমন্ত্রী)জানিয়ে দেবে ভাষার জন্য বাঙালী সব কিছু করতে পারে। কমলাকে আটকায় মা সুপ্রভাসিনী, যাসনে বাইরে আজ। কিন্তু আজ কে কাকে আটকাবে? সেজদি স্কুলে যাওয়ার জন্য কেঁচে ধুয়ে রাখা কাপড়টা না বলেই পড়ে নেয় কমলা। দলবল এল বলে। সেজদি জানতে পেরে খুব রাগ করবে, ভাল কাপড় ওরই বা বেশি কোথায়। যাক সে কথা পরে ভাবা যাবে। ২০-২২ জন মেয়ের একটা দল এসেছে বাড়িতে, কমলাকে ডাকতে। এবার সেজদিও মানা করে, কাচা কাপড়টাও ওর নজরে এসেছে। কিছু হবে না মাসীমা, সেজদি আপনি একদম ভাববেন না। আমরা থাকব রেলস্টেশনে। সকালের ট্রেন আটকে দিলে সারা দিন সব বন্ধ। পায়ে পায়ে বেরিয়ে আসে কমলা। ইতিমধ্যে ছোটবোন মঙ্গলাও সাথ নিয়েছে। চল, তুইও চল। কিছু খেয়ে গেলে হত না? মার মুখ দেখে বুঝল ঘরে কিছু নেই। খাবার দিতে না পারলেও মা কমলাকে একটা বড় কাপড়ের টুকরো দিয়ে দিলেন। সাথে রাখিস, কাঁদানে গ্যাস ট্যাস ছোড়ে যদি।

বাড়িতে মন টেকেনা মায়ের। শুধু মেয়ে দুটো নয়, ছোট ছেলে বকুল, নাতি বাপ্পাকে নিয়ে কখন পিকেটিং এর দিকে হাঁটা দিয়েছে টের পান্নি। নাতি বাপ্পা বড় মেয়ে বেনুর ছেলে। বেনু নার্সের চাকরির ট্রেনিং এ গেছে শিমুলগুড়ি। এবার সুপ্রভাসিনী নিজে বেরুলেন। ছেলে মেয়ে নাতি সব বাইরে, হচ্ছেটা কি? নিজে একবার না দেখলে মন মানেনা। রোদ চড়েছে, রাস্তা খালি, পুলিশের একটা গাড়ি ধুলো উড়িয়ে চলে গেল। কোথায় যাবেন। মেয়েরা স্টেশনে যাবে বলেছিল, ওখানেই যাওয়া যাক। স্টেশনে পাওয়া গেল ছোট ছেলেকে আর নাতিকে। ওদের দুজনকেও পুলিশ ধরেছিল, আবার ছেড়ে দিয়েছে। কতজনকে ধরবে, রাখবে কোথায় ? মাকে দেখে স্টেশনের এক কোন থেকে উদয় হল দুই মেয়ের। একি, মা তুমি ব্লাউজ টাউজ না পরে শুধু কাপড় জড়িয়ে এখানে এসেছ কেন? কমলা বকা দেয় মাকে। ধুলো ভরা পা দেখে স্টেশনের কল থেকে কল এনে পা ধুইয়ে দেয়। এবার বাড়ি যাও তুমি, এখানে সব শান্ত।

তোরা যাবিনা? যাব, আর একটা ট্রেন আটকালেই এখানের কাজ শেষ। ওটা আটকেই বাড়ি ফিরব।
ছোট ছেলে আর নাতিকে নিয়ে বাড়ির দিকে এগোন সুপ্রভাসিনী।

খানিক্ষণের মধ্যে স্টেশনে আবহাওয়া পালটে যায়। সকাল থেকে কতগুলো ট্রেন আটকানো হল। কোন গন্ডগোল নেই। সবাই মিলে বাংলাভাষা চালু করার স্লোগান দিয়ে রেল লাইনে বসে পড়লেই হলো। এবার যেন অন্যরকম। পুলিশের সংখ্যা হঠাত বেড়ে গেছে স্টেশনে। ওরা লাঠি আর বন্দুকের বাট দিয়ে মারতে শুরু করল আন্দোলনকারীদের। কিন্তু পিকেটিং ছেড়ে নড়ছে না কেউ। মার, কত মারবি।

হটাত কমলার কানে এল চীতকার, মঙ্গলার গলা। ধনদি বাঁচাও। ধনদি মানে কমলা। পুলিশের লাঠির ঘায়ে লুটিয়ে পড়েছে মঙলা। কমলা এগিয়ে যায় বোনকে সাহায্য করতে। লাঠির সাথে গুলিও চালানো শুরু হয়েছে তা লক্ষ্য করেনি কমলা। উঠে দাঁড়িয়ে বোনকে সাহায্য করতে যাওয়া উচিত হয় নি কমলার। কিন্তু উচিত অনুচিত ভাবার সময় কই, মঙ্গলাকে ভীষণ ভাবে মারছে পুলিশ। ছুটে যায় কমলা। যাওয়া হয় না।

পুলিশের বুলেট কমলার ডান চোখের পাশ দিয়ে ঢুকে মাথার খুলি চুরমার করে দেয়। আর্তনাদ করে লুটিয়ে পড়ে কমলা। কমলা হয় শহীদ কমলা ভট্টাচার্য্য। বাংলা ভাষার নারী শহীদ।

ছোট শহর শিলচর। রেলস্টেশনে গুলি চলেছে। নিহত অনেক, আহত আরো প্রচুর। মানুষ ভীড় করে হাসপাতালে। ইতিমধ্যে সবাই জেনে গেছে কমলার গুলি লেগেছে। জীবিত না মৃত নিশ্চিত নয় কেউ। হাসপাতাল ঘিরে রেখেছে পুলিশ, মেয়ের দেখা পেলেন না সুপ্রভাসিনী। কমলার সঙ্গীরা কান্নায় ভেঙে পড়ে তার সামনে। নিয়ে গিয়ে ছিলাম আপনার মেয়েকে, ফেরত আনতে পারলাম ন।পাথরের মতন নীরব হয়ে বসে থাকেন তিনি। হঠাত মনে পরে মঙ্গলার কথা মঙ্গলা কোথায়? মঙ্গলার কথা কেউ বলছে না কেন?

মঙ্গলাও তখন হাসপাতালে। পুলিশের লাঠি ও বন্দুকের কুঁদোর আঘাতে বীভতসভাবে আহত, সজ্ঞাহীন। মঙ্গলার জ্ঞান ফিরবে একমাস পর, তারপর সারাজীবন বয়ে বেড়াবেন পুলিশী অত্যাচারের যন্ত্রণা, বেঁচে থাকবেন হার জিরজিরে রোগা শরীরে চিররুগ্ন হয়ে।

শহীদ পরিবারের কথা
কমলার মৃত্যুশোকে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন মা সুপ্রভাসিনী। ঘুম হতো না। ঘুমালে স্বপ্নে ভাসে উঠত কমলার মুখ, তার জেদী ঘোষণা- গ্র্যাজুয়েশন আমি নেবই। ঘুম ভেঙে উঠে বসতেন। কাছাড়ের ডিসি এসেছিলেন আর্থিক সাহায্যের প্রস্তাব নিয়ে, নেন নি। যারা গুলি করে মেরেছে আমার মেয়েকে তাদের হাত থেকে নেব সাহায্য? কক্ষনো নয়। ছুটে যান বাড়ির ছাদে। মানসিক ভারসাম্য না থাকায় পড়ে ছাদ থেকে। সেই থেকে মনোবিকার চিরস্থায়ী। অবস্থার উন্নতি হবে ভেবে তাকে শিলচর থেকে গুয়াহাটি নিয়ে যান বড় ছেলে রামেন্দ্র ভট্টাচার্য্য। লাভ হয় নি। মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় মৃত্যু হয় শহীদ জননীর।

সেজদি ও মঙ্গল দুজনের বিয়ে হয়েছিল। তারাও চলে গিয়েছিলেন গুয়াহাটি। পুলিশী অত্যাচারের যন্ত্রণা সংগ ছাড়েনি সারা জীবিন। যার শাড়ি পড়ে শহীদ হয়েছিল কমলা, সেই সেজদিও পরবর্তি জীবনে মানসিক সমস্যার শিকার হন, বিশেষ করে কেউ কমলার কথা বললে সেই সমস্যা আরো প্রকট হত।

বড়দি বেনু চক্রবর্তী পরে আবার চেস্টা করেছিলেন কিছু সরকারী সাহায্য যোগাড় করতে এই বিধ্বস্থ পরিবারটির জন্য। পারেন নি। তবে বড়দি আসল দুঃখ স্বীকৃতির প্রশ্নে। বাংলাভাষার মূল স্রোতের কাণ্ডারীরা কমলার আত্মত্যাগকে কোনদিন যথচিত সন্মান দেন নি।

হয়তো
হয়তো একদিন সুতানটী গ্রামের বাংলা শিল্প সাহিত্যের নটনটীরা বুঝতে পারবেন যে কমলা ও তা দশ সাথীদের জীবন বলিদান ২১শের চার শহীদের মতন চিরস্মরণীয়। হয়তো একদিন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ ১৯৬১র ২১ শে মে নিয়ে গবেষণা করার মতন প্রাজ্ঞতা অর্জন করবে, হয়তো কফি হাউসের কোন কবি কলমে শিলচর স্টেশনের মহাকাব্য রচিত হবে, হয়তো পশ্চিম বাংলা মে মাস কে বাংলা ভাষার মাস হিসেবে চিহ্নিত করবে, হয়তো কোন নারীবাদী সাহিত্যে কমলার কথা লেখা হবে, হয়তো কলকাতা শহরের কোন রাস্তার নামফলকে শোভা পাবে কমলার নাম, হয়তো ……

তথ্যসূত্রঃ ‘১৯ এর শহীদেরা’, দিলীপকান্তি লস্কর, লালনমঞ্চ প্রকাশনী, করিমগঞ্জ, অসম। প্রকাশনা ২০০২