লিখেছেনঃ ইমন দাশগুপ্ত

১।
২১শে ফেব্রুয়ারী – আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। আমাদের বাংলা ভাষার গৌরবময় সংগ্রামের ইতিহাসের স্বীকৃতি দিয়েছে বিশ্বসভার অন্যতম সংস্থা ইউনেস্কো। এই অপূর্ব ঘটনাটি ঘটেছে ১৯৯৯ সালে । বিশ্বের ১৮৮টি দেশের ৬০০ কোটি মানুষ আজ ২১শে ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করছে। এই ঘটনাটি বাংলা ভাষার জন্য অভূতপূর্ব সম্মানের এবং বাঙালি জাতি তথা বাংলা ভাষা-ভাষী মানুষদের জন্যে এটি একটি বিশাল ও তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। জাতিসংঘের বিজ্ঞান, শিক্ষা ও সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠান ইউনেস্কো এই দিবসটি পালনের সূত্রপাত করায় বিশ্বের প্রায় চার থেকে ছয় হাজার মাতৃভাষার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর প্যারিসে ইউনেস্কোর ৩০তম সাধারণ সম্মেলনের অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে এই প্রস্তাব গৃহীত হয়। এই সঙ্গে সব দেশের মাতৃভাষার অধিকারকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ গ্রহণ করার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির পাশাপাশি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতি-গোষ্ঠীর মাতৃভাষা ব্যবহার, সংরক্ষণ ও স্বীকৃতির পথ উন্মুক্ত হয়েছে। আমার জানা মতে ময়মনসিংহের গফরগাঁয়ে শহীদ দিবস উপলক্ষে একটি ছোট ম্যাগাজিন স্ফুলিঙ্গ-তে প্রকাশিত সম্পাদকীয়তে এই ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করার একটি প্রস্তাব সর্ব প্রথম করা হয়েছিল। পরবর্তিতে এই অসামান্য প্রস্তাবটি নিয়ে কানাডা প্রবাসী বাংলাভাষার সুহৃদ রফিকুল ইসলাম আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বের দরবারে অর্থাৎ জাতিসংঘে উপস্থাপিত করার চেষ্টা করেন বিভিন্ন ভাষা-ভাষী অধিবাসী নিয়ে গঠিত বিশ্বের মাতৃভাষা প্রেমী সংস্থার মাধ্যমে। জাতিসংঘ কর্তৃপক্ষ তখন সেই প্রস্তাব পেয়ে সেটিকে ইউনেস্কোয় পাঠান এবং তাঁরা বলেন যে প্রস্তাবটি আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের সরকার দ্বারা প্রস্তাবিত হতে হবে। এই সংবাদ জানার পর ভাষাসৈনিক কানাডা প্রবাসী রফিকুল ইসলামসহ অন্যান্য বাঙালি মাতৃভাষার জন্যে শহীদ সালাম-জব্বার-বরকত-রফিকদের প্রতিনিধি হয়ে দীর্ঘ ৪৮ বছর পর বাংলাদেশ সরকারকে ঘটনাটি অবহিত করেন এবং তদানীন্তণ সরকার বিষয়টির মূল্য অনুধাবনে সক্ষম হয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করে চূড়ান্ত বাস্তবায়নে সফল হয়। এর ফলে বাংলাদেশ, বাংলার ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য এবং বাংলার মানুষ যারা পৃথিবীর মধ্যে সর্বপ্রথম মাতৃভাষার জন্যে আত্মোৎসর্গ করেছিলেন তাদের সেই চরম ত্যাগ স্বীকারসহ সবকিছুই বিশ্বের দরবারে স্ববিশেষ মর্যাদার অধিষ্ঠিত হয় এবং ২১শে ফেব্রুয়ারী প্রতিবছর সারাবিশ্বের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে প্রতিটি দেশে সর্বস্তরে পালন করার স্বীকৃতি লাভ করে। এই হলো মোটামুটি আমাদের ২১ শে ফেব্রুয়ারীর আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস হয়ে ওঠার ইতিহাস।

উপরের ইতিহাসটুকু বাংলা ভাষাকে যে বিশ্ব দরবারে অতি মর্যাদাপূর্ণ স্থানে আসীন করে এই বিষয়টি সর্বজন স্বীকৃত। ১৯৫২ সালে তৎকালীন পাকিস্তান রাষ্ট্রের যে আগ্রাসন – নির্যাতন – ফ্যাসিবাদী শাসনের বিপরীতে দাঁড়িয়ে আজ আমাদের এই স্বাতন্ত্র্য তার গতি প্রকৃ্তিতে নজর রাখলেই ৫২ এর ভাষা সৈনিকদের উত্তরাধিকারী হয়ে বাংলা ভাষা – সংস্কৃতি ও আমাদের যাপনের ধারা ও পাশাপাশি বাংলাদেশ রাষ্ট্রে বসবাসকারী অন্যান্য জাতিসত্ত্বার ভাষা – সংস্কৃতি – জীবনাচরণ ও খাদ্য উৎপাদন পদ্ধতির স্বাতন্ত্রের প্রতি আমাদের কর্তব্যগুলো সামনে এসে দাঁড়ায়।

২।
পৃথিবীতে মানুষের ইতিহাস কয়েক লক্ষ বছরের । পৃথিবীর সৃষ্টির তত্ত্ব আবিষ্কারের দিকে না গিয়ে আদি মানব-মানবীর খোঁজ পাওয়া সম্ভব নয়। জাতির ভেদাভেদ প্রাচীন কাল হতে চলে আসছে। এর নিদর্শন বর্তমানেও আমাদের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়। বর্তমান বোকা সমাজ আদি মানব-মানবীর কিছু অংশকে উপজাতি বলে পৃথক করে দিয়েছে। এতে কি সব জাতিসত্ত্বার উপর পক্ষপাতদুষ্টতার দায়ভার পরে না? আফ্রিকান অঞ্চল থেকে মানব সভ্যতার বিকাশ শুরু, সেই দু’লক্ষাধিক বছর পূর্বে। মানব জাতির খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, ধর্ম এসবের পাশাপাশি লোভ-লালসার আনন্দ উল্লাসের নানান তাড়নায় ছড়িয়ে পড়েছে মানুষ পৃথিবীর নানা প্রান্তে। ক্ষুদ্র-বৃহৎ জনসংখ্যার স্রোতে এরা বিশাল এক গতি পথে সঞ্চারিত। কখনও কখনও এদের অবস্থান সংকুচিত। কোথাও কোথাও শোষিত হচ্ছে এবং দুর্গত জনতার মাঝে হারিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে কোন কোন আদিবাসী জনগোষ্ঠী পৃথিবী থেকেও বিলুপ্ত হয়েছে। ইতিহাস, ভৌগলিক অবস্থান, রাজনৈতিক গঠন প্রণালী, আবহাওয়ার প্রভাবে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে এই জনগোষ্ঠীর মধ্যে ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়।

আমাদের দেশে বাঙালির পাশাপাশি আদিবাসীদের বিশাল এক জনগোষ্ঠীর বাস। এদের ইতিহাস তিন হতে চারশো বছরের। উত্তরাঞ্চলের সিলেট ও ময়মনসিংহ, পূর্বে ও উত্তর-পূর্বে রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন অঞ্চল এবং দক্ষিণ পূর্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে অধিকাংশ আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বাস। এদের মধ্যে সিলেট অঞ্চলে খাসিয়া ও মনিপুরি, ময়মনসিংহ অঞ্চলে গারো, হাজং, হদি, ডালু, ও সূর্যবংশী বর্মণ, পার্বত্য চট্টগ্রামে চাকমা, মারমা, খুমি ও চাক, রাজশাহী বিভাগে রয়েছে সাঁওতাল, ওঁরাও(উরাও), পাহাড়িয়া, মুন্ডা, হো ও মাহালী। এছাড়া দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রয়েছে রাজবংশী, কোচ, মালো, মাহাতো, বানাই, পাখর, সিং, রাখাইন ও পালিয়া।

বাংলাদেশে বসবাসকারী আদিবাসীদের ভাষা বিশ্লেষণ করে দেখা যায় পৃথিবীর অন্যতম ৪টি ভাষা পরিবারের প্রায় ৩০টি ভাষা রয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ ভাষা পৃথক বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন হলেও কয়েকটি ভাষা পরস্পর এতটা ঘনিষ্ঠ যে এগুলোকে উপ-ভাষিক বৈচিত্র্য বলা যায়। যেমন তঞ্চঙ্গা মূলত চাকমা ভাষারই উপভাষা। অনুরূপ রাখাইন মারমা ভাষার, লালং বা পাত্র গারো ভাষার এবং বিষ্ণুপ্রিয়া মনিপুরী এবং হাজং বাংলা ভাষার উপভাষা হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। আর সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের আদিবাসী ভাষা সংখ্যা হচ্ছে ২৬টি।

৩।
রাজনীতিকরণে স্বাধীনতা পরবর্তী সময় হতে বাংলা ভাষা ও বাঙালি সংস্কৃতির জাতীয়তাকরণ করতে গিয়ে বাংলাকে বাংলাদেশের অন্যান্য আদিবাসীগোষ্ঠির ভাষা-সংস্কৃতির সামনাসামনি সাংঘর্ষিক অবস্থানে দাঁড় করানো হচ্ছে। এই রাজনীতির সমালোচনা করতে গিয়ে বলতে চাই, বাংলা পদটিকে প্রায়শই জাতীয়তাবাদী চেতনার বহিস্থ একটা ধারণা হিসেবে দাবি করা হয়ে আসছে যেখানে ভৌত পরিসরকে জাতীয়তা কিংবা ভাষাভাষিতার প্রশমনকারী হিসেবে হাজির করা হয়। এর অন্তঃসারশূন্যতা দেখার চেয়ে, ঐতিহাসিকভাবেই, ভণিতা হিসেবে একে দেখা কার্যকরী। বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিপরীতে জিয়াউর রহমান প্রচারিত বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ধারণা ও চর্চা থেকেই তা অনুধাবন করা সম্ভব। বাংলার সংস্কৃতি আন্দোলনে কেন্দ্রীয় গুরুত্বের জায়গায় বাংলা পদটি হাজির, এবং এটি ব্যবহৃত হয়েছে পদটির ক্রমাগত-সরলীকৃত ঐতিহাসিক নির্মাণের উপর দাঁড়িয়ে এবং জাতীয়তাবাদের বিতর্কটিকে পাশ কাটিয়ে গিয়ে।

আধিপত্যশীল বাঙালি জাতীয়তাবাদের বয়ানে ইতিহাস চর্চায় এবং এর সরল জবানে হাজার বছরের ইতিহাসের কথা বলা হয়। হাজার বছর তো দূরের কথা, বাস্তবে আকবরের সুবা বাংলা আর আজকের বাংলা স্থান হিসেবেই এক এলাকাকে নির্দেশ করে না। পদটির সঙ্গে সম্পর্কিত সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক প্রবাহকে যদি আপাতত বিবেচনাতে নাও আনি তারপরও বলা যায় ‘বাংলা’ অঞ্চলটি, এমনকি সীমানার দিক থেকেও, অনেক পরিবর্তন ও রূপান্তরের মধ্য দিয়ে গিয়েছে। এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ‘বাংলা’ কেবল একটি স্থানিক সীমানাকে নির্দেশ করে না। বাঙালি জাতীয়তাবাদের উৎপত্তি ও বিকাশের পরিসরে ‘বাংলা’ প্রত্যয়টি বহুমাত্রিক রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সস্পর্কাদি, শর্ত ও পরিবর্তনকে প্রকট ও প্রচ্ছন্নভাবে দ্যোতিত করে। এখানে সমন্বয়বাদী তৎপরতা বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও বাংলা অঞ্চলের ধারণার ক্ষেত্রে প্রকট হলেও জাতীয়তাবাদী ধারণার অনুশীলন ও জাতীয়তাবাদী প্রকল্পের বাস্তবায়নের অনিবার্য শর্ত হিসাবে রাষ্ট্র এবং রাজনৈতিক দলগুলো মুসলমান, দলিত, অস্পৃশ্য, নারী এবং বাঙালি ভিন্ন অন্যান্য জাতিসত্তাকে এই জাতীয়তাবাদ অধস্তন হিসেবে নির্মাণ ও পরিবেশন করে আসছে।ধর্ম, জাতি, বর্ণ, ভুখন্ড, ভাষা, জাতপাত, গোত্র, নৃ-গোষ্ঠী বৈশিষ্ট্য, পূর্ব-পশ্চিম, সভ্যতা, পাহাড়ি-সমতলী, নারী-পুরুষ ইত্যাদি ভেদচিহ্নকে সামনে নিয়ে এসে রাষ্ট্র কতৃক নাগরিকদের একে অপরের অধঃস্তন হিসাবে নির্মাণের রাজনীতিকে তাই আমরা সাম্প্রদায়িক দোষে দুষ্ট বলেই পাঠ করি । এই অর্থে বাংলাদেশ একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র। তাই আমরা যখন একুশের কথা বলি – পলাশের রক্তরাংগা দিনে সকল জাতিসত্ত্বার ভাষা সংস্কৃতি জীবনযাপনের স্বাতন্ত্র্য ও আত্মনিয়ন্ত্রণের কথা বলি তখন আমাদের এই বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও তার সংবিধান আমাদের চোখে আংগুল তুলে দেখিয়ে দেয় এই রাষ্ট্রীয় বয়ান কেবল গাল ভরা কথা।এখানে অধিকার আর ইনসাফের প্রশ্নগুলো এখনো মীমাংসিত হয় নি। তাই একুশ নিয়ে রাষ্ট্রের তরফ থেকে প্রচারিত বয়ান সমূহকে আমরা স্রেফ ভন্ডামী রূপে পাঠ করতে চাই।

৪।
পরিশেষে ২১ ফেব্রুয়ারী ২০১১ তারিখে দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকায় প্রকাশিত একটি খবরের উল্লেখ করবো।

“২০ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করাসহ শিক্ষা সংক্রান্ত ৫ দফা দাবি আদায়ের জন্য বাংলাদেশের তিনটি পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ির শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্লাস বর্জন কর্মসূচি পালন করছিলো তিন জেলার নিবাসী বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা। পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের ডাকা এই ক্লাস বর্জন কর্মসূচি স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালিত হচ্ছিলো। কিন্তু কর্মসূচি পালনকালে ৮ জন শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে বাঙালী সেনা সদস্যরা। এদের মধ্যে ৪ জন ছাত্র রয়েছেন যারা স্কুলে পড়ছে। তারা হলেন-নোয়াদাম জুনিয়র হাই স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র সুমন চাকমা, বরুণাছড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র উজ্জ্বল চাকমা ও কাট্টলী উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্র শুভ চাকমা। আরো একজন ছাত্রের নাম পরিচয় জানা যায়নি। এছাড়াও গ্রেফতার করা হয় রাঙ্গামাটির নানিয়াচর কলেজের ছাত্র অনিল চাকমা, শুদ্ধ চাকমা, মিটন চাকমা ও নরেন চাকমাকে।“

এই বাংলাদেশ রাষ্ট্রে – পার্বত্য চট্টগ্রামে নিজ মাতৃভাষার পক্ষে কথা বলতে গিয়ে গ্রেফতার হতে হয়েছে স্কুল ছাত্রদের। সেই রাষ্ট্র যখন ৫২ এর ইতিহাস – চেতনাকে সামনে রেখে একুশ উদযাপন করে তখন তা নিরর্থক আর হাস্যকর ঠেকে বটে। ১৯৫২ সালের পাকিস্তান রাষ্ট্রে বাঙালিরা ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ। তারপরও তারা বাংলাকে অন্যান্য ভাষাভাষি মানুষের ওপর চাপিয়ে দিতে চায় নি। “বাংলা-কে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করতে হবে” – তাদের দাবি এমনটি ছিলো না। দাবিটি ছিলো বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দানের। এই দাবিতে চাপিয়ে দেয়া ছিলো না – অস্বীকার ছিলো না –ফ্যাসিবাদী আধিপত্যবাদী হুংকার ছিলো না। কিন্তু আজকের বাংলাদেশ রাষ্ট্রযন্ত্র যে অস্বীকারের তৎপরতা চালাচ্ছে তাতে ভুলুন্ঠিত হচ্ছে মহান একুশ। অপরাপর জাতিসত্ত্বার ভাষা – সংস্কৃতির উপর এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আমাদের নির্লিপ্ততা আর প্রতিবাদহীনতা দেখে শহীদ মিনার কি আজ ডুকরে কাঁদে না? লজ্জাবনত শহীদ মিনার আজ আমাদের প্রশ্ন করে একুশ মানে কি অপারাপর জাতিগোষ্ঠীর মাথা নত করে দেয়ার তৎপরতা?

দুনিয়ার সমস্ত নিপীড়িত মানুষের ভাষা মুক্তি পাক। মুক্ত মনের মুক্ত ভাষায় নির্মিত হোক মুক্ত পৃথিবী। সকল জাতিসত্ত্বার ভাষা – সংস্কৃতির উপর এই সাম্প্রদায়িক ও বর্ণবাদী আগ্রাসন প্রতিরোধ ও তাদের স্বকীয় বিকাশে ঐক্যবদ্ধ হোন। একুশ মানে মাথা নত না করা।।