বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষের সাথে তাল মিলিয়ে কিছু মানুষের উদ্যোগে গত ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১১ ঢাকায় ছোট্ট অথচ প্রাণবন্ত পরিবেশে উদযাপিত হলো ডারউইন দিবস। প্রাথমিকভাবে ডারউইন দিবস পালন নিয়ে বেশ কিছু পরিকল্পনা নেওয়া হলেও কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার কারণে পরিকল্পনাতে পরিবর্তন এনে স্বল্প পরিসরেই পাঠচক্র, আড্ডা আর আলোচনার মধ্য দিয়ে এই দিবসটি পালন করা হলো।
মুক্তমনা, সামহোয়্যার ইন বাংলা সহ বিভিন্ন ব্লগ কমিউনিটির সদস্যরা (রায়হান আবির, পারভেজ আলম, আসিফ মহিউদ্দিন, মনির হাসান, রাজসোহান, তাশমিয়া সাবেরা, রওনক মিরাশদার, নিঃসঙ্গ বায়স) ছাড়াও এই আয়োজনের সাথে প্রথম থেকেই একসাথে ছিলো বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ও আরজ আলী মাতুব্বর পাঠাগার- এই দু’টি সংগঠনের সদস্যরাও। কিছুটা বিলম্বে হলেও আনুমানিক ৬টা বাজে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুইমিংপুল সংলগ্ন চত্বরে অনুষ্ঠান শুরু হয়। প্রায় ৪০ জন মানুষের আড্ডা, আলোচনা ও গল্পে পুরো সময় জুড়ে এক অন্যরকম ভালোলাগার পরিবেশ তৈরি হয়।
অনুষ্ঠানের মূল আলোচক ছিলেন রায়হান আবির ভাই। অত্যন্ত হাসিখুশি আর প্রাণবন্ত লোক, মোটেও বিজ্ঞানের কাঠখোট্টা আলোচকদের মত না। প্রথমে মূলত তিনিই আলোচনা করেন বিবর্তনবাদ ও এর বিভিন্ন আনুষঙ্গিক বিষয় নিয়ে। আলোচনার মাঝে মাঝে বিভিন্ন প্রশ্ন উত্তরের পরিক্রমায় আলোচনাটি বেশ জমে ওঠে। এই বইমেলাতেই তার ও অভিজিৎ দা’র যৌথ ভাবে লেখা একটি বই এসেছে – ‘অবিশ্বাসের দর্শন’। রায়হান ভাই আবার বিভিন্ন উত্তর দেওয়ার সময় এই বইটির রেফারেন্স টেনে এনে বইটার বেশ ভালো একটা প্রচারকার্যও চালিয়ে দিলেন আমাদের মাঝে। (H) :lotpot: তবে মজার বিষয় হলো, রায়হান ভাই লিখেন যত ভালো, আলোচনা করেন তার থেকে নিদেনপক্ষে ১০ গুণ ভালো। আলোচনার সময় তার এক্সপ্রেশন দেখে বোঝা যাচ্ছিলো বিষয়গুলোকে কত গভীরভাবে তিনি উপলব্ধি করেছেন। তাই, যারা বিভিন্ন কারণে এই অনুষ্ঠানে থাকতে পারলেন না, আর রায়হান ভাইয়ের আলোচনা শুনতে পারলেন না তাদের জন্য বেশ আফসোসই হচ্ছে। 😛 😛 😛 যাই হোক, এই ধরনের কার্যক্রম আমাদের ভবিষ্যতে চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা আছে, তখন একদিন শুনে নিয়েন আপনারা। :))
আলোচনার শেষে ব্যস্ততার কারণে রায়হান চাই চম্পট দিলেও পারভেজ আলম ভাই সেটা পুষিয়ে দিলেন। এই পর্যায়ে পারভেজ আলম ভাই আর হোরাস ভাইয়ের দু’টি লেখা পড়ে শোনানো হলো। পারভেজ ভাইএর লেখাটা ছিলো- ‘মুসলিম দুনিয়ায় বিবর্তনবাদ’ আর হোরাস ভাইয়ের লেখাটি ছিলো ‘ বিবর্তনের শুরুর ইতিহাস’।
উল্লেখ্য যে, ব্যক্তিগত কারণে হোরাস ভাই স্বশরীরে এই আয়জনে উপস্থিত থাকতে না পারলেও মেইল করে লেখাটি পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।
তো পারভেজ ভাই তার লেখার মধ্য দিয়ে নিজেও বইমেলায় সেদিনই আসা তার বই ‘মুসলিম জগতের জ্ঞানতাত্ত্বিক লড়াই’ বইটারও বেশ ভালো একটা প্রচারণা চালিয়ে নিলেন (Y) :clap :lotpot: । মজার বিষয় হলো , রায়হান ভাই আর পারভেজ ভাই- দুইজনের বই-ই প্রয়াকশিত হয়েছে শুদ্ধস্বর প্রকাশনী থেকে ( চান্সের উপর আমিও একটু প্রচার চালায়া দিলাম তাদের বইয়ের! :)) বাজারে বেশ কাটতি দেখা যাইতেছে বই দুইটার!! ফুরায়া যাবার আগেই কিইনা লন!!! 😛 ) পারভেজ ভাইয়ের আলোচনায় সবচেয়ে মজার হয় একটা জায়গায় এসে। মুসলিম বিজ্ঞানীদের বিবর্তন চিন্তার আলোচনা করতে গিয়ে তিনি ইবনে মিসকাওয়া নামের একজন মুসলিম বিজ্ঞানীর ভাবনা তুলে ধরেন আমাদের কাছে। ইবনে মিসকাওয়া’র অভিমত ছিলো নিম্নরূপ-
“পরম সত্ত্বা থেকে বস্তুর আবির্ভাব হয়েছে। আর এই শক্তি’র বলে এই বস্তুতে পরিবর্তন এসেছে। বস্তুতে ক্রমান্বয়ে বাস্প এবং বাস্প থেকে পানির আবির্ভাব হয়েছে। পরবর্তি পর্যায়ে আবির্ভাব হয়েছে খনিজ পদার্থের, আর এই খনিজ পদার্থ থেকেই আবির্ভাব ঘটেছে প্রবাল এবং প্রবাল থেকে বৃক্ষরাজীর। আর গাছের মধ্যে সবচেয়ে উঁচু পর্যায়ে আছে খেজুর গাছ, খেজুর গাছ হলো বৃক্ষ আর চলন্ত জীবকূলের মধ্যবর্তি প্রাণ। বৃক্ষ থেকে প্রাণী, এবং বিভিন্ন প্রাণীর মধ্য থেকে ক্রমিক বিবর্তনের মধ্য দিয়ে বানরকূলের আবির্ভাব,এবং এই বানরকূলে আদীম বণ্য মানুষের আবির্ভাব এবং এই বণ্য মানুষের বিবর্তনে আধুনিক মানুষের আবির্ভাবের পক্ষে মতামত তুলে ধরেন ইবনে মিসকাওয়া। তিনি আরো বলেন যে মানুষ বিবর্তিত হয়ে সাধু সন্যাসী এবং নবির আবির্ভাব হয়, এর পরবর্তি পর্যায় হলো ফেরেশতা, এবং বিবর্তনের সর্বশেষ পর্যায় হলো আল্লাহ।” :)) :hahahee: :lotpot: :rotfl: :clap
এইটা শুনার পর আর পেটের ভিতর দম থাকে বলুন! উৎসাহী কয়েকজন সাথে সাথে এই মহান দার্শনিক ধারনার সাথে ঐক্যমত পোষণ করি।
এই ভাবে বিভিন্ন আলোচনা, আড্ডা আর গল্পের মধ্য দিয়েই ডারউইন দিবসটি পালিত হয় ঢাকায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গনে।
( মূলত স্মৃতিকথামূলক বা অভিজ্ঞতামূলক লেখা আমি খুব ভালো লিখতে পারিনা। তবু বন্যা দি’র অনুরোধ লিখলাম। কারো ভালো না লাগলে আমার কোনো দোষ নাই!)
সকাল থেকে মুক্তমনায় ঢোকার চেষ্টা করছিলাম, সাইট ডাউন ছিলো।
নিঃসঙ্গ বায়সরে ধন্যবাদ মুক্তমনায় পুরো অনুষ্ঠানকে নিজের মতো করে তুলে ধরার জন্য। আমাদের ডারউইন দিবস নিয়ে পরিকল্পনা ছিল আরো অনেক কিছুই। অনাকাঙ্খিত কিছু কারনে করা সম্ভব হলো না। তবে পাঠচক্রে যেই সরব অংশগ্রহণ দেখেছি তাতে আমি আশাবাদী যে ভবিষ্যতে বড় কিছু করা সম্ভব হবে। উপস্থতিত সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
মুক্তমনায় এইটা আমার প্রথম কমেন্ট মনে হয়। মুক্তমনার পাঠক আমি অনেক দিনের। রেজিস্ট্রেশন করার সরাসরি পদ্ধতি নাই বলে আলসেমি কইরা মন্তব্য করা হয় না কখনো।
@পারভেজ আলম,
হোরাসের মন্তব্যের উত্তরে আপনার কথা গতকাল লিখেছিলাম। সার্ভার মাইগ্রেশনের কারণে হাওয়া হয়ে গিয়েছে মনে হচ্ছে। যা হোক ডারউইন দিবস উপলক্ষ্যে আপনারা নিশ্চয় অনেক খাটাখাটনি করেছেন, একটি সফল আয়োজনের জন্য অভিন্দন। আরো বড় অভিনন্দন আপনার প্রথম বই বইমেলায় বেড়িয়েছে জেনে।
আপনি মুক্তমনার পাঠক হিসেবে কেন থাকবেন, লেখক হিসেবেই না হয় আসুন। এভাবে মন্তব্য করতে থাকুন, সদস্যপদ পেতে সাহায্য করবে। আপনি লেখা মুক্তমনায় পাঠাতে পারেন। আপনার সদ্য প্রকাশিত বইটি নিয়েই কিছু লিখুন না! তাহলে আমাদের ব্লগের পাঠকেরা পরিচিত হতে পারবেন আপনার লেখালিখির সাথে।
মন্তব্য করার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
@পারভেজ আলম,
আপনাকে মুক্ত-মনায় দেখে বেশ আনন্দিত হলাম। আশা করি আপনাকে নিয়মিত পাব এখানে।
স্বশরীরে উপস্হিত না থেকেও অনুষ্ঠানটির সাথে নিজেকে জড়িত করতে পেরে অসম্ভব ভালো লাগছে। এজন্য পারভেজ আলমকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ। আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ সুন্দরভাবে পুরো অনিষ্ঠানটির বর্ণনা আমাদের সামনে তুলে ধরবার জন্য। (F) (F) (F)
আমার দুটি আর অভিজিতের একটি কমেন্ট দেখতে পাচ্ছিনা। কমেন্টগুলো ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে এ্যাডমিনের দৃষ্টি আকর্ষন করছি।
@হোরাস,
আপনার মন্তব্য দেখতে না পেলে দয়া করে পুনরায় কমেন্ট করুন। সব কমেন্ট এই মুহূর্তে ফিরিয়ে আনা সম্ভবত যাবে না।
@মুক্তমনা এডমিন, ;-(
সেদিনের আয়োজন বেশ মজার ছিলো। বিশ পঁচিশজন তো। এপরের বার আশা করি হাজার হাজার হবে…
আর ব্লগ জুড়ে মিথ্যা প্রচারণা চালাবার জন্য হোমোরামগড়ুড়ের ছানা সমীপে আপনার ব্যানের জন্য আবেদন করলাম।
আমন্ত্রন পেয়েছিলাম, বিশেষ সমস্যার কারনে যাওয়া হয়নি। তবে অনুষ্ঠাণ যে সুন্দর হবে তা জানতাম।
ছবিগুলোর সাথে আরেকটু পরিচয় করিয়ে দেয়া যাবে? এই যেমন- বা দিক থেকে… 🙂
উরেব্বাস!!!!!’
প্রথম যেদিন আর. আবীরকে দেখেছিলাম সেদিনই বুঝেছিলাম যে এই ছেলে অচিরেই আর. ডকিন্স হবে :guru: .
@বন্যা আহমেদ,
দিদি, হবে বললে ভুল হবে এখন, হইয়া গেছে অলরেডি। :guru: :rotfl: :clap :guru:
@বন্যাপা,
মিছা কতা 🙁
@রায়হান আবীর,
আসেন দেখি ভাই বন্যা আপা কার কথা বিশ্বাস করে!!! :))
ভাবনার এমন অকপট প্রকাশ যে কোন সমমনাদের কাছে আদৃত হবে বলেই আমার মনে হয়। দুরদেশে বসেও দেশের বিকেল আর আড্ডাতে ভাগ বসাতে পারলাম লেখাটির কল্যাণে। ধন্যবাদ। 🙂
@কাজী রহমান,
আপনাকেও ধন্যবাদ ভাই। কিন্তু আর কয়দিন দেশের বাইরে থাকবেন বলুন?! :-Y (H) কাজ কর্ম শেষ কইরা যত্ত তাড়াতাড়ি পারেন তো দেশে চইলা আসেন… তাইলে সরাসরি ফ্রি তে রায়হান ভাইয়ের লেকচারও শুনবার পারবেন, 😉 আবার আড্ডাও দিবার পারবেন… :))
@নিঃসঙ্গ বায়স,
এইতো, আর মাত্র কয়দিন; মাত্র তো ২০ বছর হোল। আপাতত আপনারা, বই আর মুক্তমনাই ভরসা। ভালো থাকুন। :))
@নিঃসঙ্গ বায়স,
অভিদা আর বন্যাপা দেশে আসলে বড় সড় একটা আয়োজন করা যাবে। ব্লগ পড়ে আসলে বোঝা যায়না, এই দুইজন মানুষকে 🙂
@নিঃসঙ্গ বায়স,
আপনার একটা কমেন্ট ছিল আমার কথার উত্তরে। মনে হয় সার্ভার সমস্যায় উড়ে গিয়েছে। অসুবিধা নাই। আমি মেইল দেখে উত্তর দিচ্ছি, আগামি ডারউইন দিবসে নিশ্চয় আসব। তার আগে মুক্তমনায় জানিয়ে দেবেন, স্থান, সবং সময়। আশা রাখি বেঁচে থাকলে উপস্থিত হবো। 🙂
@আফরোজা আলম,
অবশ্যই আপা। আর হ্যা, আমার একটা কমেন্ট ছিলো আপনার নিচের মন্তব্যটিতে, মডারেটরদের ঝাড়ফুঁকে উইড়া গেছে!!! :lotpot: যাই হোক, পরবর্তি ডারউইন দিবসের আগেই আমাদের আরো অনেক কাজ করার প্ল্যান আছে। :)) সেখানে সকলের সহযোগীতা প্রয়োজন হবে। আগেভাগেই মুক্তমনায় জানানোর কথা দিলাম। (*)
ক্লাসিক! (Y)
এর আগে আপনার ভাবগাম্ভীর্যময় লেখার সাথে পরিচিত হয়েছিলাম, এবার হলাম আপনার রসালো লেখার সাথে।
রায়হান তো দেখি সুপার স্টার হয়ে যাচ্ছে। আমার এতদিন ধারনা ছিলো রায়হান আলোচনার চেয়ে লেখে ভাল। এখন আপনার লেখা পড়ে তো দেখি উলটা! সে নাকি অন্ততঃ দশগুণ ভালো আলোচনা করে। দেখি টিকেট কেটে রায়হান স্যারের একটা লেকচার যদি কখনো শোনা যায় … :))
ডারউইন দিবস পালন এবং মুক্তমনায় এর আপডেট জানানোর জন্য অভিনন্দন।
@অভিজিৎ,
ও ঠিকই আমাদের ডকিন্স!! :guli:
@সৈকত চৌধুরী,
🙂 🙂 🙂
@অভিজিৎ,
কী যে বলেন দাদা, বিয়াপক লজ্জা পাইলাম (লজ্জা পাওয়ার ইমো হইবো)
@অভিজিৎ দা,
মানুষজনরে নিয়া তো মহাবিপদ। খালি মিছা কতা নয় … আমার সাথে আস্তিক এক দোস্ত ছিলো। আমার বক্তব্যের পর সে দেখি পরে এইটা নিয়া মোর লগে আর কথা কয়না। মনে হয় কথাবার্তা পছন্দ হয়নাই 🙁
দারুণ খবর!! সকলকে শুভেচ্ছা।
@সৈকত চৌধুরী,
আপনাকেও ধন্যবাদ।
ভাই অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পরে বলে কি লাভ হল? আগে বলতেন, আমরাও থাকতাম।
@রনবীর সরকার,
ব্লগারদের সাথে যোগাযোগের মূল দায়িত্বটা ছিলো আসিফ ভাই আর পারভেজ ভাইয়ের। তারাই যোগাযোগ করেছে মূলত। আর বললাম না কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার কারণে মূল পরিকল্পনা অনেক ছোট করতে হয়েছিলো। এই কারণেও যোগাযোগে একটু সমস্যা হয়েছিলো। প্রাথমিক পরিকল্পনায় পোস্টার করা, প্রকাশনা করা এরকম আরো অনেক কিছুই ছিলো। শেষ পর্যন্ত এই বছর আর তা হয়ে উঠলো না। সামনের বছর থেকে হবে বলে আশা করছি। তবে এই বছরেই আমরা হয়তো আবারো বসবো। বিজ্ঞানমনষ্কদের একটা আড্ডাখানা হলে মন্দ হয় না, কী বলেন?! 🙂
@রনবীর সরকার, ফেসবুকে সেলফোন নাম্বারসহ আমন্ত্রণ ছিল।