গত কয়েকদিন ধরেই ইজিপ্টের ঘটনায় সাড়া পৃথিবী তোলপার। গত ত্রিশ বছর ধরে ক্ষমতায় জাঁকিয়ে বসে থাকা স্বৈরশাসক হোসনি মুবারকের পতনের দিন মনে হয় সমাগত। অনেকটা আমাদের দেশে নব্বই এর এরশাদ সাবের মতো অবস্থা এখন উনার। ক্ষমতার চেয়ার থেকে পড়ে যেতে পারেন যে কোন সময়েই টুপ করে।
টানা ৬ দিন ধরে কায়রোসহ গোটা দেশে অনবরতভাবে চলছে সহিংস বিক্ষোভ। গণরোষের আগুনে জ্বলছে সরকারি ভবন, গাড়ি-বাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা। জনগনের ধাওয়া খেয়ে পুলিশ ভেগেছে। কালকে পর্যন্ত আর্মির কিছু তৎপরতা থাকলেও আজ থেকে তাদেরকেও দেখা যাচ্ছে না আর রাস্তায় । ফাঁকা মাঠে লুট তরাজ চলছে সমানে। জেল ভেঙ্গে আসামীরাও বেড়িয়ে পড়েছে।
মিশরের ভবিষ্যত এখন কোন দিকে যাচ্ছে? বলা মুশকিল। প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে মুবারক কি এবার গদি থেকে নামছে? কাল পর্যন্তও তো সে সরকারী কাঠমো রদবদলের নাটক করলো।য়ার আমেরিকাও তাকে পরোক্ষ সমর্থন দেওয়ার চেষ্টা করলো। কিন্তু আজ দাবার ছক পালটে গেছে বলেই মনে হচ্ছে। মিশরের জনগনের বিক্ষোভের মাত্রা দেখে ওবামা/বাইডেনের সুরও বদলাতে শুরু করেছে। তাহলে আমেরিকাও কি এখন মুবারকের উপর থেকে তাদের অগাধ সমর্থন প্রত্যাহার করতে বাধ্য হচ্ছে? আমেরিকার সরকার তো বহুদশক ধরেই তেল,ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ কিংবা ইসরায়েলের পশ্চাৎদেশ রক্ষার জন্য সাড়া পৃথিবীব্যাপী এধরণের স্বৈরাচারী সরকারদের সমর্থন দিয়ে এসেছে। এখন আমেরিকার জনগন এমনকি মিডিয়াও তার বিরোধিতা করতে শুরু করেছে।মুবারকের পতনের খুব বেশি কিছু বাকি নেই বলেই মনে হচ্ছে।
আর তারপরেই বা দেশটার ভবিষ্যত কি? এক স্বৈরশাসক যাওয়ার পর আবার গনতন্ত্রের বেশ ধরে আরেক স্বৈরজান্তার আগমন ঘটবে? নাকি ঘটবে কোন ইসলামী বিপ্লব? আয়াতুল্লাহ স্টাইলের ইসলামিক বিপ্লব অথবা মুবারক/মোশারফ স্টাইলের আমেরিকার গৃহপালিত স্বৈরশাসন ছাড়া আর কোন উপায় কি খোলা নেই মিশর বা মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোর ভাগ্যে? ওহ হ্যা,আমেরিকার আরেক ধরনের পাপেট আছে,সৌদি বা কুয়েত বা আরব দেশগুলোর রাজা বাদশাহর দল। শুনেছি আমেরিকার সৈন্য নাকি পাহাড়া দেয় সৌদি বাদশাহর রাজপ্রাসাদ আর হারেমে রাখা শ’য়ে শ’য়ে পত্নী এবং উপপত্নীদের। তবে মিশর নিয়ে যেহেতু আলোচনাটা, বেদুইনী রক্তের আরব বাদশাহদের প্রসংগ আপাতত থাক। এখন যেহেতু মিশরে রাকজীয় ব্যবস্থা নেই,আগামীতেও সেখানে মধ্যযুগীয় রাজা বাদশাহ্র আগমণ ঘটবে না বলেই আশা করা যায়।তাহলে আবারও প্রশ্ন, মিশরের ভবিষৎ কী? আধুনিক গনতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা কি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব এদেশে?
তিউনিশিয়ার ঘটনা থেকে দেখা যাচ্ছে কোন বাইরের হস্তক্ষেপ ছাড়াই মুসলিম দেশগুলোতে গণতন্ত্রের সূচনা হওয়া সম্ভব। এখন শোনা যাচ্ছে ইয়েমেন জর্ডানের মত দেশগুলতেও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। তাহলে কি স্থবির আরব দেশগুলোতে শেষপর্যন্ত পরিবর্তনের হাওয়া লাগতে শুরু করেছে?
মধ্যপ্রাচ্যে সত্যিকারের গনতন্ত্র আসাটা খুবই কঠিন। ওখানকার পরিস্হিতি অনেকটা শাঁখের করাতের মত। হয় একনায়কতন্ত্র নয়ত ইরান, প্যালেষ্টাইনের মত গনতন্ত্রের ছদ্মবেশে মৌলবাদী সরকার। তিউনিশিয়া কিংবা মিশরেই তার প্রমাণ আবারও পাওয়া যাবে। বাইশ বছর পর তিউনিশয়ার নির্বাসিত জনপ্রিয় ইসলামিস্ট আন্দোলনের নেতা রাশিদ ঘানুকি (!!!) দেশে ফিরেই বিপুল ভাবে সমর্থন লাভ করেছেন। মিশরেও মোবারকের পতনের পর যদি আর্মি ক্ষমতায় না আসে তবে ইসলামিক ব্রাদারহুডের ক্ষমতা কব্জা করা সময়ের ব্যাপার মাত্র।
@হোরাস, ব্যাপারটা বেশ জটিল, কিন্তু এই বিক্ষোভগুলোকে ঠিক মত হ্যান্ডেল না করলে, অর্থাৎ মুবারক গো ধরে বসে থাকলে কিন্তু মুস্লিম ফান্ডাদের হাতে ক্ষমতা চলে যাওয়ার সম্ভাবনা আরও বেড়ে যাবে, এখন পর্যন্ত পুরোটাই স্বতস্ফূর্ত সেকুলার মুভমেন্ট। জনগণের মধ্যে মুস্লিম ব্রাদারহুডের নাকি মাত্র ২৫-৩০% সমর্থন রয়েছে। এই লেখাটায় আর কায়দা সম্পর্কে যে কথাগুলো বলা হয়েছে তা আমার কাছে বেশ সঠিক বলেই মনে হয়েছে। দেখা যাক কী হয়, ওবামা শেষ পর্যন্ত আজকে দুটো কঠিন কথা বলতে বাধ্য হয়েছে, কিন্তু মুবারককে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে বলেনি এখনো। এতদিনের পোষা কুকুরকে ঘাড় ধরে বের করে দিতে তো কষ্ট হওয়ারই কথা ;-( । আজকে কোথায় যেন শুনলাম মুবারাক এই তিরিশ বছরে সব বিরোধী নেতাকে নির্মূল করে দিয়েছে, সে জন্যই সেখানে নেতৃত্ব দেওয়ার মত কেউ আর অবশিষ্ট নেই।
@ফাহিম রেজা, আচ্ছা ব্যাপারটা এমন হবে না তো যে ধরেন মিশরে কোনো প্রাকৃতিক সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে। জানে শুধু আমেরিকা। তো এই সরকারের পতন হলে ক্ষমতা চলে গেল আল-কায়দার হাতে। তখন আমেরিকা আসল খেলাটা খেলতে শুরু করবে… 😕 :-s
বেদুইন রক্ত প্রবাহের ধারা এবং এর গলি-উপগলি…
খুব সরলীকরণ বলে মনে হলেও কথাটা হয়তো একেবারে মিথ্যে না- এরা না বোঝে যুক্তি, না বোঝে গণতন্ত্র!
@শ্রাবণ আকাশ,
মিশরীয়দের কথা বলছেন?
@ফাহিম রেজা, বেদুইন রক্ত প্রবাহের ধারা এবং এর গলি-উপগলি…
@শ্রাবণ আকাশ, জাত ধরে এভাবে গালি দিতে কেমন জানি খারাপ লাগে। আমার মনে হয় সঠিক নেতৃত্ব এবং রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক কাঠামো পেলে যে কোন জাতি উন্নতি করতে সক্ষম।
@ফাহিম রেজা, সরি, তবে জাত মিন করিনি। এই জন্যই আগে ভয় ছিল কথাটা যেন খুব সরলীকরণ বলে মনে না হয়।
হ্যাঁ, তবে “উন্নতি”র সাথে পাথর নিক্ষেপ, দোররা মারা- এসবও যে শিল্পের পর্যায়ে উন্নীত হয়ে যাচ্ছে- সেটাই ভয়ের…
সৌদি আরবে বিপ্লব কবে হবে? মিশরের বিপ্লবে তো ইন্টারনেটের একটা জোড়ালো ভূমিকা ছিল। সৌদি আরবে ইন্টারনেটের যে বেহাল অবস্থা, গণসচেতনতা তৈরী করে একটা বিপ্লব অনুষ্ঠিত করার পর্যায়ে এখনও মনে হয় সৌদিরা যেতে পারেনি। আজ পত্রিকায় দেখলাম সৌদি বাদশা হোসনি মুবারকের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করেছে।
@পৃথিবী, সৌদি আরবের মত দেশগুলার ব্যাপারটা একটু অন্যরকম। ওরা তাদের অধেল তেলের পয়সা দিয়ে ওয়েলফেয়ারের ব্যবস্থা করে রেখেছে। হাজার হাজার মধ্যবিত্ত যুবক বেকার থাকলেও অসুবিধা নাই, ফ্রি বাড়ি, হেলথ কেয়ার এমনকি নাকি বিয়ে করার জন্য লোন পর্যন্ত দেওয়া হয়। আমার এক বন্ধু বহুদিন সৌদিতে চাকরি করেছে, তার মতে এদের অনেকেই চাকরি বাকরি করতেও পছন্দ করে না। এদের হুদাহুদাই বিপ্লব-বিদ্রোহ করার দরকারটা কী? এরাও দিব্যি মিনি সাইজের হেরেম (রাজকীয় হেরেমের সাইজের সাথে তো আর পাল্লা দেওন সম্ভব না) বানাইয়া চার বউ চারপাশে নিয়া জীবন কাটায়া দিতে পারে। সুখে থাকলে কেউ বিল্পব করে না, তাই তেলের জোয়ারে ভেসে যাওয়া দেশগুলাতে শেষ পর্যন্ত কি হবে সেটা বলা মুশকিল। সমস্যা হচ্ছে মিশর বা ইয়েমেনের মত আরব দেশগুলাতে যেখানে তেমন তেল নাই, কিন্তু আবার আরব আরব গন্ধটা ঠিকই আছে।
মুবারাককে যখন ভাষন দিতে দেখলাম , তার ভাষ্য শুনে একটা কোম্পানীর চেয়ারম্যানের মতই মনে হয়েছে যিনি সর্বদা out of touch থাকেন । তাকে একজন প্রেসিডেন্ট মনে হয় নি। jargon আর buzzword এ বিশ্বাসী একটা ম্যানেজারের মতই যিনি বললেন , “I understand what you say !” । জনগন যে কি চায় আর পরিস্হিতি যে কোন পর্যায়ে, এই লোকটা সে ব্যপারে পুরো অজ্ঞ।
@সংশপ্তক, ৩০ বছর ধরে একই গদিতে বসে থাকলে এর চেয়ে ভালো আর কি আশা করা যায়? বছরে নাকি ১.৩ বিলিয়ন ডলার পায় মিশর শুধু আমেরিকা থেকেই। এক দিকে ডলারে ভাসে আরেকদিকে নিশ্চিত গদি। ইস্লামিক মৌলবাদ, সুয়েজ খালের নিরাপদ আ্যক্সেস আর ইস্রাইলের নিরাপত্তা, এই তিনটা কার্ড ঠিকমত খেলতে পারলেই তো কেল্লা ফতে…
মিসর, তিউনিসিয়া’র মত দেশগুলিতে বড়ধরনের রাজনীতিক পরিবর্তন অনেক দিন ধরেই বলা যায় ‘বাকী’ হয়ে আছে। এসব দেশের হর্তাকর্তারা একদিকে দেশের জনগনকে ইজরায়েল-আমেরিকা’র জুজু দেখিয়ে, অন্যদিকে ইউরোপ-আমেরিকা কে ইসলামিস্ট দের ভয় দেখিয়ে বেশ ভালই একটা ডাবল-গেম খেলে আসছিলো। কিন্তু বিশ্বজুড়ে আরবদের ক্রমাগত হিউমিলিয়েশন, বিপুল সংখ্যক শিক্ষিত বেকার যুবসমাজ আর গত কয়েক বছর ধরে ব্লগ-ফেসবুক-টুইটারের বিস্তারের সমন্বয়ে ক্রমেই একটি ক্রিটিক্যাল ম্যাস গড়ে উঠছিলো।
এদেশগুলোতে গণতন্ত্রের সূচনা হবে কিনা তানিয়ে কোনো কিছুই জোর দিয়ে বলা সম্ভব না। আমরা বার বার দেখেছি যে সফল বিপ্লবগুলি’র বিপুল সম্ভাবনা কেমন করে দ্রুত মিলিয়ে যায়, যেমন ঘটেছে আমাদের ১৯৯০ এর পরে। তবে আমাদের দেশে অন্তত: ধর্মীয় ফ্যাসিবাদী শক্তি তেমন শক্তিশালী ছিল না বলে প্রচলিত রাজনীতির ব্যর্থতা সত্বেও ধর্মীয় শক্তি রাষ্ট্রক্ষমতা পুরো দখল করে নিতে পারে নি। ভয়ের কথা হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে বড় সেকুল্যার নাগরিক সমাজ থাকলেও তৃনমূল পর্যায় পর্যন্ত বিস্তৃত ধর্মীয় শক্তিগুলোর সাংগঠনিক বিস্তার অনেক বেশী। অধিকাংশ বিশ্লেষকই মনে করেন স্যুট-কোট পড়া ডিক্টেটরদের পতনের সবচেয়ে আশু লাভবান হবে আলখাল্লাওয়ালারাই। তবে সেই ভয়ে পরিবর্তনকে স্বাগত: জানাতে অসুবিধা নেই কারন মধ্যপ্রাচ্যের status quo আসলেই আনসাসটেইনেবল হয়ে উঠেছে। যত দিন যাবে, সম্ভাব্য পরিবর্তন ততই আরো বিস্ফোরক হয়ে পরবে।
একটা আশার কথা যে এমুহুর্তে হোয়াইট হাউসে জর্জ বুশ নেই আছে বারাক হোসেন ওবামা। সুতরাং, এক ইস্লামিস্টরা মার্কিন-সাম্রাজ্যবাদের শ্লোগান তুলে ততটা সফল হবে না আগের মতো। অনেক খবরেই দেখা যাচ্ছে যে মিসর-তিউনিসিয়া’র বিক্ষোভকারীরা আমেরিকার উপরে ক্ষুধ্ধ নয়, এপর্যন্ত কোথাও একটা আমেরিকান পতাকা পোড়ানোর ছবি দেখা যায়নি। তারা বরং আশা করছে মার্কিন সরকার মিসর-তিউনিসিয়া’র জনগনের পক্ষে দাড়াবে। এছাড়া, আরো আশা করা যায় বর্তমান স্টেট ডিপার্টমেন্ট এসব দেশে সেক্যুলার রাজনীতি প্রতিষ্ঠায় সাহা্য্য করবে। এসময়ে যদি ওবামা-হিলারী সফলভাবে আমেরিকান পররাষ্ট্রনীতি চালাতে পারেন তবে হয়তো অবশেষে মধ্যপ্রাচ্যে বহুল প্রত্যাশিত ইস্লামিক রিফর্মেশনের সূচনা হবে এই আন্দোলনগুলির মধ্য হতেই।
@সফিক,
ভাল আলোচনা। খুব আশা করছি এ যাত্রা সত্যিকারের গণতান্ত্রিক একটা বিপ্লব ঘটবে।
@রৌরব, আপনার কি ধারণা, গণতান্ত্রিক একটা বিপ্লব কি সম্ভব মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশগুলোতে? কিছুদিন আগে পাকিস্তানেই বা কি হল দেখুন, মোশারফ গিয়ে বেনজিরের স্বামী জাঁকিয়ে বসলো ক্ষমতায়, কিইবা পরিবর্তন ঘটলো, যেইগার সেই…
@ফাহিম রেজা,
এসব ব্যাপারে আমার ধারণা খুবই কম। তবে তিউনিসিয়া এবং মিশরের জনগণ অপেক্ষাকৃত উদারপন্থী (সৌদি আরব ইত্যাদির তুলনায়) বলে শুনেছি। এই আরকি….
@সফিক,
আসলেই কি বুশ আর ওবামার আন্তর্জাতিক পলিসিতে এতটা পার্থক্য আছে? দেখুন প্রথম দিন বাইডেন এবগ অবামাও কিন্তু মুবারাককে সমর্থন দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। তারপর বেগতিক দেখে কালকে একটু সুর বদলিয়েছিল। আজকে সিএনএন এ হিলারী কি রাজনৈতিক নাচটাই না নাচলো। এখনো বলছে যে মুবারকের অধীনের যে নির্বাচন হওয়ার কথা সেটা যেন হয়! ক্যান্ডি ক্রোলির রিপোর্টিং অনুযায়ী মিশরে ইতিমধ্যেই কিন্তু আমেরিকার এই স্ট্যন্ডগুলোর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়ে গেছে। এখন ভয়টা একটাই, মিশরের এই আন্দোলনের পিছনে কোন রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠী নাই, এই শূন্যতার সুযোগ নিয়ে মুস্লিম ব্রাদারহুডের মত মানুষজন না ক্ষমতায় চলে আসে।
@ফাহিম রেজা,
এদের সব কিছুই স্ট্র্যটেজিক এবং রাজনৈতিক স্বার্থের সাথে জড়িত, মুখে বড় বড় কথা বলাই সার। যতক্ষণ পর্যন্ত এদের নিজেদের স্বার্থ বজায় থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত চরম মৌলবাদী এবং প্রতিক্রিয়াশীল সৌদি রাজতন্ত্রই হোক বা মুশারফের মত ডিক্টেটরই হোক, কোনটাতেই কোন অসুবিধা নেই। হিলারির কথা শুনে মনে হল ওরা এখনও মুবারকের নিয়ন্ত্রনে থেকে নির্বাচন হোক সেটাই চাচ্ছে। এ ধরণের নির্বাচনের যে কোন মূল্য নেই সেটা ইজিপশিয়ানরা খুব ভালো করেই জানে। তবে এটাও ঠিক যে এই সুযোগে মুসলিম ব্রাদারহুডের মত কোন দলের ক্ষমতায় চলে আসাটাও খুব ভালো কিছু হবে না।
@বন্যা আহমেদ,
মোহাম্মেদ আল-বারাদেও কিন্তু মুসলিম ব্রাদারহুডের লোক-যার মূল শ্লোগান”ইসলামী আইন চালু”| গনতন্ত্রের আদলে ইসলামিস্ট চরমপন্থীরা আবার মিশরের ক্ষমতায় না আসে?
কিছু সমীক্ষার কথা বলা যাকঃ
— ট্রান্সপেরেন্সি ইণ্টারন্যাশনাল -এর ২০১০ এর সমীক্ষায় মিশরের দুনীতিতে অবস্থান ৯৮ ( ১৭৮ টি দেশের মধ্যে; বাংলাদেশের চেয়ে অনেক অনেক ভাল!!)
–মিশরের ইসলামিক জিহাদ ৬ বার হোসনে মোবারককে হত্যার চেস্টা করে|
– ১৯৯৫ সালে হোসনে মোবারককে “জহর লাল নেহেরু” পুরস্কার দেয়া হয়|
-২০১১ সেপ্টেম্বরে মিশরের ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মত (২০০৫ -এর পর) সাধারণ ইলেকশন ঘোষনা করা হয়েছে|
– সাম্প্রতিক বিক্ষোভে মিশরের সবচেয়ে পুরানো মিউজিয়াম আক্রমন করা হয়েছে( রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভ থেকে তাজমহল ভেংগে ফেলার মত অবস্থা!!! এটা খুব একটা ভাল লক্ষন নয়! ইসলামী চরমপন্থীদের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে??)
বন্যা যেমন বলেছেন,
“তবে এটাও ঠিক যে, এই সুযোগে মুসলিম ব্রাদারহুডের মত কোন দলের ক্ষমতায় চলে আসাটাও খুব ভালো কিছু হবে না।”
ভয় এবং আশঙ্কা এখানেই| তিউনেসিয়াতেও কিন্তু পালিয়ে থাকা কট্টর ইসলামিক নেতারা দেশে ফিরতে শুরু করেছে বলে খবর রটেছে|
@ফাহিম রেজা, দেখুন সৌদী বাদশাহ, জর্দানী বাদশাহ, মরক্কো বাদশাহ, আমিরাতের গন্ডা গন্ডা আমির, গাদ্দাফী মধ্যপ্রাচ্যের সব গর্দীনশিন লিডারই আছেন মুবারাকের পক্ষে। এই সময়ে ওবামা সরকার যদি সরাসরি মুবারাকের বিরুদ্ধপক্ষ নেয় তবে পুরো মধ্যপ্রাচ্যের লিডারশীপ ওবামা সরকারের বিরুদ্ধে চলে যাবে। এসব নেতাদের আমেরিকার ক্ষমতার অন্দরমহলে অনেক শক্ত খুটি আছে। অর্থনীতির এই নাজুক দশায়, বিশেষ করে তেল যখন আবার ১০০ ডলার ছুই ছুই করছে, ওবামা সরকারের আবার নতুন দিক দিয়ে প্রবল প্রতিপক্ষ তোৈরীতে অনীহা রয়েছে। আমি যতদূর বুঝচ্ছি, ওবামা-হিলারী সবদিক রক্ষা করেই এগুচ্ছে এবং তাদের সমর্থন গনতন্ত্রায়নের পক্ষেই। শুধু মার্কিন সরকারই না, ইউরোপ-এশিয়ার প্রতিটি সরকার অত্যন্ত সতর্কভাবে আমাদের পরিচিত ভাষায়, ‘পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন করছে’।
তিউনিসিয়ায় প্রথম প্রেসিডেন্ট হাবিব বরগুইবা’র দীর্ঘ শসনামলে একটা শিক্ষিত সিভিল সমাজ গরে উঠেছিলো কারন তিউনিসিয়া আরব দেশগুলোর মধ্যে ব্যাতিক্রম হিসেবে প্রথম থেকেই শিক্ষায় অনেক ইনভেস্টমেন্ট করেছিলো, সামরিক ব্যয় সীমিত রেখেছিলো, দেশের ভিতরে ইসলামিস্টদের অত্যান্ত মার্জিনালাইজ করে রেখেছিলো। সুতরাং তিউনিসিয়ার বিপ্লবে বিশ্বে খুব একটা চিন্তার কারন হয় নি। মিশর আরবের সবচেয়ে জনবহুল এবং অন্যতম প্রভাবশালী রাষ্ট্র। মিশর মুসলিম ব্রাদারহুড এবং পলিটিক্যাল ইসলামের তত্বপ্রতিষ্ঠার কেন্দ্রভূমি। সুতরাং মিশরের পরিবর্তন সবাই নার্ভাসভাবে দেখবে এটাই স্বাভাবিক।