সেই আশির দশক। চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে মানবিক শাখায় যশোর বোর্ডে সেকেন্ড স্ট্যান্ড করলো নির্মল কুমার বিশ্বাস নামের প্রত্যন্ত গ্রামের একটি ছেলে। রোজ কলেজে যাতায়াতের জন্য তাকে প্রায় ত্রিশ-বত্রিশ মাইল সাইকেলের ওপর থাকতে হতো। মাধ্যমিকেও সে তৃতীয় হয়েছিল বোর্ড থেকে। পাশ করে সহপাঠীরা কে কোথায় কোন বিষয়ে পড়াশুনা করবে আলাপ হচ্ছিল। সবাই ব্রিলিয়ান্ট নির্মলের দিকে তাকিয়ে ছিল। স্বল্পভাষী বিনয়ী নির্মল কীসব ভেবে বেশ সময় নিয়ে বলেছিল আগামী বিশ বছরের মধ্যে বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায় থাকবে না বলেই আমার ধারণা। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি ভারতের পশ্চিমবঙ্গে চলে যাবার। ওখানে গিয়ে নতুন করে ক্লাস নাইনে ভর্তি হবো। সহপাঠীরা হতবাক। বলে কী এ ছেলে! হিন্দু বলে কেউতো ওকে ফেল করিয়ে দেয়নি। ও ওর যোগ্যতা অনুযায়ী রেজাল্ট করেছে। দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নির্মল কতদূর অব্দি ভেবেছে? এরকম কেনই বা ভেবেছে? পরে শোনা গিয়েছিল ওর দরিদ্র পিতা ওকে ভারতে গিয়ে আবার নতুন করে স্কুলে ভর্তি হয়ে পড়াশুনার করার বাসনা ত্যাগ করতে বলেছিলেন। কিন্তু নির্মল শোনেনি। ওর একসময়ের সহপাঠীরা কৌতুহলে মাঝে মাঝে গিয়ে ওর বাবার কাছে নির্মলের সংবাদ জেনে এসেছে। নির্মল ওখানে গিয়ে আহামরি কোন রেজাল্ট করতে পারেনি। পরবর্তীতে সে নাকি মহাকরণের একজন উচ্চমান সহকারী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেছিল। শোনা কথা।
বন্ধুরা এখনও ভেবে পায় না নির্মলের পরিণামদর্শন আসলেই কতখানি বাস্তবসম্মত ছিল। তবে ভারতে চলে যাবার ধারা বড় বড় শহরগুলোতে আগেই শুরু হয়ে গিয়েছিল। নির্মল সেই ধারাবাহিকতা রক্ষা করেছিল মাত্র। একটু ভালো করে খোঁজ নিলেই দেখা যায় এদেশের শিক্ষিত, ভালো উপার্জনক্ষম হিন্দু মা-বাবারা তাদের দু’তিনজন সন্তানের মধ্যে একজন দু’জনকে ভারতে লেখাপড়া করতে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। এখন এ সংস্কৃতি প্রায় প্রতি সচ্ছল হিন্দু ঘরেই। সুদীপ্তা সরকার একটি সরকারি সংস্থার মধ্যমমাপের কর্মকর্তা। তার স্বামীও একটা এনজিওতে ভালো বেতনে কাজ করেন। তাদের দু’মেয়ে। দু’জনকেই পাঠিয়ে দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের একটা আবাসিক স্কুলে। সুদীপ্তা মেয়েদের জন্য দুশ্চিন্তাগ্রস্থ নন। কিন্তু সারাক্ষণ মনভারি করে বেড়ান। অফিস থেকে বাসায় ফিরে দেখেন ঘর খালি, কথা বলার মানুষ নেই, কবে কোন পুজোর বন্ধে মেয়েরা আসবে তার আশায় ক্যালেন্ডারের পাতার দিকে তাকিয়ে থাকেন আর ভাবেন প্রতিদিন তার মেয়েরা তার চোখের বাইরে একটু একটু করে বড় হচ্ছে। তাদের বেড়ে ওঠা তিনি দেখতে পারছেন না, তাদের মানসিক সঙ্গী হতে পারছেন না, বয়সের এই সন্ধিক্ষণে কত মানসিক পরিবর্তন হয়, কত কৌতুহল, কত প্রশ্ন জাগে মনে তার কিছুতেই তিনি তাদের সাহায্য করতে পারছেন না। কয়েকদিনের বন্ধে ওরা দেশে আসলে দু’জনকে দু’হাত দিয়ে যতক্ষণ পারেন বুকের সাথে লাগিয়ে রাখেন। মায়ের একাকীত্বে মেয়েদেরও কষ্ট হয়। কিন্তু তারা আস্তে আস্তে সেই পরিবেশে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিচ্ছে। যদিও ওখানকার কোন কোন স্কুল-কলেজে ‘র্যাগিং’-এর শিকার হতে হয় বাংলাদেশের ছেলেমেয়েদের, হীনমন্যতায় ভোগারও যথেষ্ট কারণ থাকে, পরদেশে গলা বাড়িয়ে কথা বলারও অধিকার কম তার পরেও তাদের মা-বাবারা নিরুদ্বিগ্ন থাকেন। কেন? রাজেন্দ্র সাহা বলছিলেন কোন বাবা-মা-ই চান না সন্তানকে ছোটবেলা থেকেই দূরে রাখতে। কারণ বিশ্বমানের স্কুল কলেজ বাংলাদেশেও প্রচুর আছে। বরং ভারতে ছেলেমেয়েদের পেছনে যে খরচ ও যাতায়াতের যে ব্যয়ভার তা দিয়ে দিব্যি দেশেই তাদের ভালো শিক্ষার ব্যবস্থা করা যায়। আর মা-বাবা-পরিবারের মধ্যে থেকে বেড়ে ওঠার তো কোন বিকল্প নেই তা কে না জানে? কিন্তু যখনই ভেবেছি দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের কথা, যে পরিবর্তন সংখ্যালঘুদের উচ্ছেদ উৎপীড়নকে উৎসাহিত করে, রাজনৈতিক-সামাজিক অধিকারে বৈষম্য সৃষ্টি করে, নায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করে তখন মনে হয় আমরা নাহয় এসব সহ্য করেছি কিন্তু আমারই চোখের সামনে আমার সন্তান কেন তা ভোগ করবে? আমার বাবা-মায়ের সামর্থ ছিল না বা তারা সচেতন ছিলেন না বলে আমরা নির্যাতন সয়েও থেকে গেছি। কিন্তু আমার একটাই সন্তান। আমি বাবা হয়ে এ বৈষম্যের মধ্যে সন্তানকে বেড়ে উঠতে দিতে পারিনা। শুধু যে হিন্দু সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়েরাই ভারতে পড়তে যাচ্ছে তা কিন্তু নয়। অনেক মুসলমান ছেলেমেয়েও যাচ্ছে। কিন্তু কথা হচ্ছে মুসলমানরা ফিরে আসছে, হিন্দুরা ফিরছে না। এসব ছেলেমেয়েরা ওদেশে পাস করে চাকরি-বাকরি পেয়ে বিয়ে থা করছে। তাদের অনেকের বাবা মা রিটায়ার করে টাকাপয়সা বা ভিটেমাটি বিক্রিবাট্টা করে এদেশের পাট চুকিয়ে চলে যাচ্ছেন। স্বভাবতই ওখানে গিয়ে তারা ভালো থাকছেন না। ওদেশের জীবন আরও কঠিন। তাছাড়া উড়ে এসে জুড়ে বসা শখের উদ্বাস্তুদের স্থায়ী বাসিন্দারা কোন চোখে দেখবে তা আর না বলাই ভালো।
কিন্তু বাংলাদেশের বাস্তব অবস্থা কি সবক্ষেত্রেই সুদীপ্তা রাজেন্দ্রর বর্ণনার মতো? মনে পড়ে সেই ৬৫ সালের যুদ্ধের কথা। তখন শৈশব। ডাঃ লক্ষীনারায়ন কুণ্ডুর তিন মেয়ে আর পাশের বাড়ির আমরা তিন বোন ছিলাম যেন হরিহর আত্মা। ঈদে আমাদের নতুন কাপড়ের সাথে ওদের জন্যও কেনা হতো নতুন কাপড়। দূর্গাপূজোয় মাকে গরদের শাড়ি পাঠাতেন ওদের মা। দুপুরে স্কুল থেকে ফিরে ওরা কোন কোন দিন আমাদের বাড়িতে খেয়ে তবে বাড়ি ফিরতো। লক্ষীপুজোয় সারা রাতদিন ওদের বাড়িতে আমাদের থাকতে হতো। কিন্তু ৬৫ সালের এক ভোরে উঠে ওদের বাড়ি গিয়ে দেখি ওরা কেউ নেই। ওদের ঝকঝকে লাল শানের ঠাকুরঘর দরজাখোলা অরক্ষিত, বিশাল দরদালানের বারান্দার তারে ঝুলছে না কাকীমার ফিনফিনে শাড়ি, কলের পাড় শুকনো খটখটে, কাশীর পেয়ারা গাছের তলায় পড়ে আছে শুকনো পাতা। কেবল ওদের আদরের কুকুর লালু সিঁড়ির এককোণে পায়ে মুখ রেখে নিরবে বসে। সেদিন প্রিয়জন হারানোর ব্যথায় ডুকরে কেঁদে উঠেছিলাম। ছোট্ট মনে কেবল প্রশ্ন ‘ওরা কেন না বলে চলে গেল?’ বাবা-মার কাছ থেকেও কোন সদুত্তর পাইনি সেদিন। এখন মনে হয় ওরাও কি নিরাপত্তাহীনতয় ভুগছিল? অবশ্য কোন কট্টর রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় এলে হিন্দু জনগোষ্ঠি নিরাপত্তহীনতায় ভোগেন। তখন তারা যাতে নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরে যেতে পারেন তারই একটা ক্ষেত্র রচনা করে রাখা আর কি। হিসেব করলে বরং দেখা যায় পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যালঘু মুসলমানরা শিক্ষা, চাকরি, খেলাধুলা, সংস্কৃতিচর্চা ও অন্যান্য সকল সুযোগ-সুবিধায় হিন্দুদের সাথে কোটাপদ্ধতির নির্মম বলি। বাংলাদেশে তো হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য কোন কোটা পদ্ধতি নেই। বরং সংখ্যার অনুপাতে হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্তরাই সরকারি-বেসরকারি উচ্চপদে অধিক আসীন। যেখানে নিম্নপদে এ সংখ্যা কম। অপরদিকে উচ্চপদ উচ্চমর্যাদার চাকরি মুসলমানদের জন্য পশ্চিমবঙ্গে নৈব নৈব চ। নিম্নপদে কিছু দেখা যায়। বর্ধমান মুর্শিদাবাদে মুসলমান মেয়েদের মধ্যে উচ্চশিক্ষার হার দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু তাদের জন্য না আছে ভালো চাকরি, না ভালো বিয়ে। তাদের সাথে যাদের বিয়ে হবে তাদের অবস্থাও যে করুণ। একজন মাস্টার্স পাশ মেয়ে বিয়ে করছেন একজন পুলিশকে না হয় একজন তালিকাভূক্ত (যাদের কোন সরকারি চাকরি নেই কিন্তু ভবিষ্যতে পাবার সম্ভাবনা আছে) প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষককে। উপরন্তু মোটা পণের বিনিময়ে। পুলিশ বা শিক্ষককে বিয়ে না করলে সে মেয়েকে আইবুড়ো থাকতে হবে। কেননা তদঞ্চলে এর বেশি যোগ্যতাসম্পন্ন পাত্র খুঁজে পাওয়া কঠিন। তার মধ্যেও যারা স্বপ্ন দেখেন, সংগ্রাম করেন, অধিকার সচেতন তাদের মধ্যে হাতে গোনা কেউ কেউ বেরিয়ে আসছেন। সে সংখ্যা এতই নগন্য যে তা পরিসংখ্যানে আসে না। কিন্তু কই এতো বঞ্চনা সয়েও তো ওরা মুসলমান অধ্যুষিত বাংলাদেশে সন্তানদের লেখাপড়া তথা জীবনযাপনের জন্য পাঠাচ্ছেন না? কেন? না, ওরা নিজের জাতীয় পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন প্রথমে আমি ভারতীয়, তারপর মুসলমান।
বাংলাদেশ থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের যেসব ছেলেমেয়ে ওদেশে পড়তে যাচ্ছে তারা বেশিরভাগই আর ফিরে আসেন না। তাদের সবাইকে যে মেধাবী নির্মলের মতো করণিকের জীবন বেছে নিতে হচ্ছে তা-ও নয়। কেউ মোটামুটি ভালো বা মধ্যমমানের চাকরি পাচেছন কিন্তু সেটাই কি বড় কথা? যেসব শিশু-কিশোরদের মা-বাবারা ওদের ভালোর জন্য ওদেশে পাঠাচ্ছেন তাদের মনের কথা কেউ কি পড়ে দেখেছেন? ছুটিতে বেড়াতে আসা চার পাঁজজনকে দেখেছি তারা দেশে এসে পাগলের মতো ছুটে বেড়ায়, পুরোনো বন্ধুদের সাথে সারাদিন কাটায়, অবিশ্রাম খেলা করে। তাদের সে মুখ হারানো প্রাপ্তির আনন্দে দিশেহারা, উন্মাতাল। যখন চলে যায় মুখ ছেয়ে যায় অব্যক্ত ভাঙনের অন্ধকারে। বাবা-মার অকাট্য যুক্তির কাছে তাদের আবেগ, ভালোলাগা, স্মৃতি, ছোটবেলা, খেলার সাথী, মাঠ, বাগান, সিঁড়ি, দুরন্ত দুপুর, খেলাভাঙা সন্ধ্যা আর অবাধ স্বাধীনতার পিছুটান নিতান্তই মূল্যহীন পথের ধারে পতিত ধূলোর মতো পড়ে থাকে।
আবার উজ্জীবিত হয়ে উঠি যখন দেখি এর মধ্যেও কিছুসংখ্যক স্বশিক্ষিত, দেশপ্রেমিক, প্রকৃত উদার ধর্মীয় মনোভাবের সংখ্যালঘু সংস্কৃতিবান মানুষ আছেন যারা বাংলাদেশকে নিজের দেশ বলে গর্ব করেন, রক্ত দিয়ে অর্জিত ভাষার জন্য যাদের বুক অহংকারে স্ফীত হয়, স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করে যারা এ দেশটির সমান দাবীদার, যুদ্ধে সবকিছু হারিয়েও যারা এমাটির বুক আঁকড়ে আছেন, যাদের সন্তানদের সাফল্য বাংলাদেশকে বিশ্বদরবারে চিনতে সাহায্য করে, বাংলাদেশের ক্রিকেট টিম ভারতকে হারালে আনন্দে যাদের চোখে জল আসে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায় কমবেশি সবদেশেই বঞ্চনার শিকার। কিন্তু আমরা সম্প্রীতির উদাহরণ সৃষ্টি করতে চাই। আমরা আমাদের বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণ-গোষ্ঠির সন্তানদের এক বাগানে রেখে নানাজাতের ফুল ফোটাতে চাই। মিশ্র সংস্কৃতির সন্তানেরাই বিশ্বে অনন্যসাধারণ মেধার অধিকারী। আমরা আমাদের ক্ষুদ্রতাকে প্রশ্রয় দিয়ে এতোবড় সম্ভাবনাকে কেন অগ্রাহ্য করবো?
“বাবা-মার অকাট্য যুক্তির কাছে তাদের আবেগ, ভালোলাগা, স্মৃতি, ছোটবেলা, খেলার সাথী, মাঠ, বাগান, সিঁড়ি, দুরন্ত দুপুর, খেলাভাঙা সন্ধ্যা আর অবাধ স্বাধীনতার পিছুটান নিতান্তই মূল্যহীন পথের ধারে পতিত ধূলোর মতো পড়ে থাকে”এ সব কিছুর আগে আসে নিরাপত্তা সংখ্যা লোঘূদের নিরাপত্ত যা বাংলাদেশে নামে মাত্র আছে বল্লেও বেসি বলাহয় ।
কয়েকদিন আগে এক অনুষ্ঠানে এডমিন ক্যাডারে ( সিভিল সার্ভিস) কাজ করে এরকম এক পরিচিত হিন্দু ভদ্রলোকের সাথে কথা হল যা শুনলাম বড়ই ভয়াবহ তার নিচের জুনিয়র ২০০ জনকে তাকে টপকে প্রমোশন করে সচিব বানানো হয়েছে অথচ নানা অজুহাত দেখিয়ে তার ন্যায্য প্রমোশন হতে বঞ্চিত করা হয়েছে তাকে কাজ করতে হয় এদের অধীনে অথচ হিন্দু হওয়ার কারণে বিএনপি ও জামাত সরকারের আমলেও ঊনি অনেক বছর ওএসডি ছিলেন, তার ছেলেও বাবার মতো বিসিএস দিতে আগ্রহী হলেও বাবা তাকে নিজের তিক্ত অভিজ্ঞতা হতে শিক্ষা নিয়ে বিদেশে চলে যাওয়ার পরামর্ষ দিয়েছেন। কয়েকদিন পুলিশেও ঊচ্চ পদে পদণ্ণতি প্রদাণের সময়েও এভাবে বঞ্চিত করা হয়েছে এক আদিবাসী ও হিন্দু মেধাবি অফিসারকে , দেশের আর্মির নিয়োগের তো একটা আঘোষিত নিয়ম আছে তা হচ্ছে হিন্দু হলে প্রার্থীর যতোই যোগ্যতা থাকুক তাকে বাদ দেওয়া এ যখন রাষ্ট্রের পলিসি তখন দেশের সংখ্যালঘুরা দেশ ত্যাগ করে ভারতে বা অন্য কোন খানে পাড়ি জমাবেন এটাই বাস্তবতা কারন দেশপ্রেম ঐতিহ্য শিকড়ের দোহাই এসব একজন মানুষের কাছে ফিকে লাগে যখন সে দেখে তার ধর্ম তার দেহের গড়নের একটু ভিন্ন ধরন হওয়ার কারনে তাকে অর্থনীতিক সামাজিক ভাবে প্রতিনিয়ত বঞ্চিত হতে হয় । আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় মুকুর কান্তি খীসা নামে এক চাকমা ভদ্রলোকের সাথে আলাপ হয় উনি আর্মি ও বাঙালী সেটালারদের অত্যাচারে বাংলাদেশ ছাড়েন পরিবার পরিজন নিয়ে ভারতে চলে যান কিশোর বয়সে পরে ইন্ডিয়ান ফরেন সার্ভিসে যোগ্ দেন ৩৫ বছর ফরেন সার্ভিসে চাকুরি করে কংগো, চিলি, কলাম্বিয়া, কিউবা ও আর্জেন্টিনায় ভারতের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করে, দেশ ছাড়ার জন্য তার কি কখনো মন খারাপ হয় জিজ্ঞেস করাতে উত্তর ছিল না ছাড়াটাই সবচেয়ে বড় ভুল হতো।
এটা পড়ে একটা কথা মনে আসল। হিন্দু, মুসলিম নির্বেশেষে প্রায় সব বাংলাদেশীই পৃথিবীর অন্য যে কোন দেশে (যেমন আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, মালয়েশিয়ায়া, মধ্যপ্রাচ্য বা ইউরোপের অন্যান্য দেশ.. এমনকি আফ্রিকান দেশ গুলোতেও) গেলে আর ফিরে আসতে চায় না। অবশ্যই কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া। তবে শুধু ভারতের ক্ষেত্রে হিন্দুরা রয়ে যায় আর মুসলিমরা ফিরে আসে!!!!
পশ্চিম বাংলা তথা ভারত মুসলমানদেরকে চাকরি বাকরি দিতে কৃপনতা করে বলেত পশিম বাংলার কনো ্মুসল্মান বন্ধুদের কাছে শুনিনি।
যারা যোগ্য তাদের চাকরি থেকে বঞ্ছিত করলে যে দেশ পিছিয়ে পড়বে এটা বোধকরি পশিমবাংলা ও ভারতের লোকেরা বোঝে।
ভারতের আই এ এস সি্লেকশন ইন্টারভিউ বোর্ডের চেয়াম্যান ই তো ছিলেন মিঃ কুইরেশি । পুরা নাম মনে নেই। কলকাতা পুলিশের উপ কমিশনার ও ছিলেন ্মুসল মান। মুম্বাইতে ও তাই।
বড় বড় পোস্টে ্মুসলমান ভর্তি তবে হিন্দুর তুলনায় কম।
পশ্চিমবাংলা তথা ভারতের রাজনীতিতেও এম এল এ, এম পি, মিনিস্টারও অনেক। আর প্রেসিডেন্ট ও ভাইস-প্রেসিডেন্ট তো আছেনই। আর চিত্র অভিনেতাদেরত ব্যাপারে ত কথাই ওঠে না।
”
”
এর পিছনে কি কারন? সবসময় কিন্তু সাম্প্রদায়ীক কারন না। এই কারন গুলিকে নিয়ে ভাববার সময় এসেছে। মেধাবি ছাত্র ছাত্রীদের দেশ ত্যগ সেই দেশেরই ক্ষতি। যেমন মুক্তমনার অনেক জিনিয়াস বিদেশে আছেন। তারা দেশে থাকেলে দেশ উপকৃত হত।
যে কোন দেশে, সে ভারত হোক, বা যে কোন দেশ হোক , মুসলমানদের মেইনস্ট্রিমে আসতে হলে তাঁদেরকে ফান্ডামেন্টালিস্ট মুসলিম কেন্দ্রগুলিকে সমুলে উতখাত করতে হবে।
ভারতের সংখালুঘুদের পিছনে কার্জকরি ভাবে প্রশাসন ও সাধারন জনগনের মানবিকতা আছে কিন্তু বাংলাদেশের সংখালুঘুদের পিছনে এইটা তেমন নাই।
উম্মে মুসলিমা, লেখাটির জন্য অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার কথা পুরোপুরি না হলেও আংশিক সত্য । কিছু হিন্দুদের মাঝে উপরে বর্ণিত মনোভাব সত্যিই আছে(দেখাদেখি কিংবা অত্যাচার, নির্যাতনের শিকার হয়ে) । তবে আপনার সাথে আমি দ্বিমত এই জায়গায় যে কিছু হিন্দুরা বাধ্য হয়েই করছে এটা।
কারণ আপনি মানুন আর নাই মানুন দেশে সরকারী ভাবে হিন্দুদের বঞ্চনা করা হয়। আর বলব যে হিন্দুদের মাঝে দেশপ্রেমের অভাব কখোনই ছিলনা, কিন্তূ সেনাবাহিনীতে(কমিশন্ড রেংক) যোগ দিতে গেলে তার নামটাই যখন সবচেয়ে বড় অযোগ্যতা হয়ে দাঁড়ায় তখন কারো যদি দেশের প্রতি অভিমান আসে তখন নিশ্চয় আপনি তাকে দোষ দিতে পারেন না । আর বলব যে জোর করে সম্পত্তি দখল, নারীদের উপর অত্যাচার(সবচেয়ে বড় কারণ),ধর্মান্তরকরণ বাধ্য করে তাদের যেতে। কিন্তু তারা কি আসলেই সুখী হয় যেতে পেরে??? না নিশ্চয়। আর একটা কথা গতবারের নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকায় হিন্দু ভোটার ছিল 17%+ যা এ দেশে তাদের ক্রমবৃদ্ধি বলা যায়………। আর আমি ঘৃণা করি সেইসব হিন্দুদের যারা কিনা লেজগুটিয়ে পালায়, প্রতিবাদ করে না। এদের আসলে কোথাও জায়গা হবে না যেখানেই যাক । কারণ অত্যাচারীর কোণ জাত কিংবা ধর্ম নেই ……।
মূল প্রশ্ন হল ‘নিরাপত্তা’। বৈষম্য আছে এবং থাকবেও হয়তো আরো বহুদিন। পশ্চিম বাংলায় শুধু মুসলমান নয়, বৈষম্যের অভিযোগ করে থাকেন তফশীলি জাতি উপজাতির মানুষরাও। কিন্তু সেই জন্য কেউ ভিটে মাটি ছাড়েন না। অর্থনৈতিক ও সামাজিক ভাবে পশ্চিম বাংলার মুসলমান পিছিয়ে থাকলেও (এর জন্য কতটা সরকার এবং কতটা মোল্লা-ইমাম নির্ভর সমাজ দায়ী তা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে) রাজনৈতিক বা ধর্মীয় ক্ষেত্রে নয় যার উদাহরণ একদিনের দাঙ্গায় তসলিমা বিতাড়ন বা সম্প্রতি (অক্টোবর, ২০১০) দেগংগায় জমি বিবাদের জেরে হিন্দু মন্দির ভাঙচুর ও সম্পত্তির ধ্বংস (ভাবতে পারেন, বাংলাদেশ কিংবা পাকিস্তানে হিন্দুরা মসজিদ ভাঙছে বা মুসলমানদের সম্পত্তি ধ্বংস করছে)। পশ্চিম বাংলার মুসলমানের অভাব অনেক কিছুর, কিন্তু নিরাপত্তার অভাব নেই। বাংলাদেশে হিন্দুর প্রধান সমস্যা নিরাপত্তার।
@মিয়া সাহেব, নিরাপত্তা-তো রাষ্ট্রই দিতে পারে, অন্তত মৌলিক অধিকার রুপে কাগজে-কলমে। বাংলাদেশের হিন্দুরা রাষ্ট্রের কাছেই সে নিরাপত্তা পায় না।
আপনার সাথে এক বিষয়ে একমত; “বাংলাদেশ কিংবা পাকিস্তানে হিন্দুরা মসজিদ ভাঙছে বা মুসলমানদের সম্পত্তি ধ্বংস করছে”। এটা প্রায় অসম্ভব।
দুই বাংলার সংখ্যালঘুর মনমানস বোধহয় একি সুরে বাজে না। তাদের দুঃখ এক হতে পারে, কিন্তু প্রকাশ ও মাত্রা ভিন্ন। আমি কোলকাতায়, ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তান জিতলে সেখানকার সংখ্যালঘুদের বাজি পোড়াতে দেখেছি। আবার বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারত জিতলে নিজগন্ডীতে আমোদিত হওয়ার ঘটনাও বিরল নয়। কিন্তু পার্থক্য-টা বোধহয় রাস্ট্রীয় অধিকারই নির্ধারণ করে। এজন্যই বোধহয় শুধু নির্মল-রাই দেশান্তরী হয়। এর উল্টো ঘটনা প্রায় শুন্যের কোঠায়।
ঊম্মে মুসলিমা আপনাকে :rose2: .
বুঝলাম কিন্তু বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্টরা যে দিন দিন “শিক্ষিত” হচ্ছে। এই সুযোগ্যা ধর্মগ্রন্থের শিক্ষার আলোতে “আলোকিত” হওয়া থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে না। এতদিনে ঠিক বুঝতে শিখেছে যে হিন্দুরা আসলে “বিধর্মী”, আর বিধর্মীদের প্রতি “দায়িত্ব-কর্তব্য” তারা সেই আলোয় আলোকিত হয়ে পরম নিষ্ঠার সাথে পালন করতে আগ্রহী!
আপোসোস: স্বীকার করি আর নাই করি- এখন এই ধরনের আলোকিত লোকের সংখ্যাই বাংলাদেশে বেশী।
পশ্চিম বাংলার মুসলিমদের ব্যাপারে তেমন কিছুই শুনতে পাইনা (হয়ত পশ্চিম বাংলার পত্রিকা গুলি পড়লে শুনতে পেতাম, তবে তাদের তো আবার ইউনিকোড সমস্যা)।
@রৌরব,
ইউনিকোডে আনন্দবাজার পড়তে পারেন
http://anandabazar-unicode.appspot.com/proxy
তবে মুসলমানের (পশ্চিম বাংলার জনসংখ্যার প্রায় ৩০ শতাংশ) খবর খুব একটা পাবেন না। পিছিয়ে পড়া গরীব মানুষরা (সে মুসলমানই হন বা নীচু জাতির) চিরকালই ভাল ‘স্টোরি’র যোগ্য নন। তাছাড়া মুসলমানদের ব্যাপারে খবর লিখতে খুব সাবধানী হতে হয়,একটু এদিক ওদিক হলেই ভাঙচুর- ইসলাম খতরে মে। যেমন,পয়গম্বরকে কটুক্তি করে লেখা ছাপানো হয়েছে হুজুক তুলে (দুই বছর আগে) কলকাতার স্টেটসম্যান পত্রিকা অফিসে তিনদিন লাগাতার হামলা চললেও তা কোন পত্রিকা (আনন্দবাজার সহ) ছাপায় না।
ঠিক বলেছেন বিপ্লবদা। ভারত আর যাই হক সাংবিধানিকভাবে ধর্ম নিরপেক্ষ।
দেশে জামায়াতের গ্রহনযোগ্যতা ধীরে ধীরে কমছে। সম্পূর্ণভাবে সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত হতে এখনও অনেক দেরী, কিন্তু আমার মনে হয় আমরা অসাম্প্রদায়িকতার রাস্তায় ফিরে আসছি।
@পৃথিবী, আমি দেশের ভিতরে/বাইরে “শিক্ষিত” অনেকের কথা জানি। ধর্ম ধর্ম করে জান দিয়ে দিচ্ছে। লীগ/বিএনপিই করে, তবু জামায়াত যতটা না সাম্প্রদায়িক; এদেরকে তার চেয়েও বেশী বলে মনে হয়।
ধনতান্ত্রিক সমাজে “সংখ্যালঘু” ব্যাপারটা সমস্যা না। কারন সেখানে মেরিট একমাত্র বিবেচ্য।
পশ্চিম বঙ্গে মুসলিমদের অবস্থা চাকরিতে বেশ বাজে। এটা সত্য। কিন্ত এখানে সরকারি চাকরি পরীক্ষা এবং প্রতিযোগিতার মাধ্যমেই হয়-ক্যান্ডিডেটের নাম ধাম ঠিকানা পেপারে থাকে না। ভারতে যেহেতু জাত পাত ধর্ম একটা ইস্যু-এই সাবধানতা সব পরীক্ষাতেই নিয়ে থাকে। প্রতিযোগিতাতে পিছিয়ে পড়ার একটা বড় কারন অবশ্যই এই যে তাদের ফামিলি বড়-তারা হয়ত শিক্ষার পেছনে অতটা খরচ করতে পারে না।
আমিত প্রতি মাসেই বিজ্ঞাপন দিচ্ছি লোক নেওয়ার জন্যে। খুব বেশী মুসলিম এপ্লিক্যান্ট দেখি না। সাচার কমিটির রিপোর্ট বলছে মুসলিমদের মধ্যে শিক্ষিতর হার খুবই কম-মেয়েদের মধ্যে আরো কম। আদিবাসীদের থেকেও কম।
এর পেছনে অবশ্য এটা সত্যি ভারত রাষ্ট্রটি মুসলিমদের মুসলিম করে রেখেছে এবং মুসলিমরাও তাই থাকতে চাই বা তাদের তাই বোঝানো হয়।
@বিপ্লব পাল,
বিজ্ঞাপন চোখে পড়লেই এপ্লাই করবো ভাবছি। :-/ । বিজ্ঞাপনের বিষয়ে একটু হিন্টস দেয়া যায় কি?
@মাহফুজ,
বাংলাদেশে পে প্যাল চলে না। নেট খারাপ থাকে অ্ধিকাংশ সময়। সুতরাং ইচ্ছা থাকলেও বাংলাদেশ থেকে কাজ করানো মুশকিল।
@বিপ্লব পাল,
যাই বলুন না কেন, আমার এক কট্টর হিন্দু বসের ধারণা- মেরিট থাকা সত্ত্বেও ইরফান পাঠান শুধু মুসলিম বলে দলে জায়গা পাচ্ছে না। 🙂
খুব ভালো লাগলো একথাগুলো। :yes:
আমি যখন চলে যাচ্ছিলাম পিসি ছেড়ে তখনই ভাগ্যক্রমে আপনার এই লেখার প্রতি দৃষ্টি আটকে গেল।
অত্যন্ত সচ্ছল আর সুন্দর ভাবে উচিত কথাগুলো নির্বিঘ্নে বলে গিয়েছেন।আপনাকে সাধুবাদ জানাই।
দুর্ভাগ্য না সৌভাগ্য বশত আমাদের পূর্বপুরুষের (আমাদের ভাই বোন সহ) জন্মস্থল মুর্শিদাবাদ।
আপনি যেহেতু অল্প কথায় গুছিয়ে বলেছেন তাই এই বিষয় নিয়ে আর কিছু জানালাম না। ওখানকার মুসলমানদের করুণ দশা দেখলে বুক ফেটে যায়।কি ভাবে তারা সেখানে নিগৃহিত হচ্ছে তা নিয়ে কারো মাথা ব্যাথা নেই। চাকরির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সংখ্যালঘুদের প্রতি যে উদার মনোভাব দেখিয়ে থাকে তা কিন্তু ভারতে নেই। যতো যুক্তি এরপরে দাড় করানো হোক না কেন ত্তথ্বটা অপ্রিয় সত্য।
আমরা ওখান থেকে এসেছি আমাদের চাইতে ভুক্তভোগি হবে কারা?
সব শেষে আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ এমন ভালো লেখা উপহার দেবার জন্য।
@আফরোজা আলম,
:no:
দুঃখিত। মোটেই একমত নই। আমার অভিজ্ঞতা তা বলে না। ভারতে মুসলমানদের প্রতি বৈষম্য আছে তা মানতে পারি, তবে বাংলাদেশেও তা প্রকটভাবেই রয়েছে। নির্মলরা শুধু শুধু যায় না নিশ্চয়ই!
উম্মে মুসলিমা,
আপনার লেখায় অনেক অভিজ্ঞতা, সত্যতা ও সুগভীরতম আবেগ দেখে আপ্লুত হয়েছি। সংখ্যালঘু ইস্যুতে এসব যথেষ্ঠ গুরুত্বপূর্ণ ইতিবাচক ভূমিকা রাখে বলে আমি মনে করি। সে জন্য ধন্যবাদ।
তবে,
পরিসংখ্যানের উৎস জানালে উপকৃত হব।