মোকছেদ আলী
লেখাটি পোষ্ট করার শানে নযুল:
[১০ এপ্রিল ২০১০ তারিখে মোকছেদ আলীর তুচ্ছ, কিন্তু ধন্বন্তরী নামে একটি পোষ্ট দেই, সেই সময় ‘একা’ মন্তব্য করেছিলেন- “প্রায় একটা কথা শুনি যে কুরাণে অনেক আগেই চন্দ্র, সুর্য ইত্যাদিতে মহাকাশ ভ্রমন করা হয়ে গেছে। এখনকার বিজ্ঞানীরা আর এমন নতুন কী বা করেণ। আরো একটা বিষয়ে অবাক লাগে অধিকাংশ মুসলিম ডাক্তার কে দেখা যায় তারা একজন রোগীকে চিকিৎসা করেন, আর বলেন আমি কে, আমি নিমিত্ত মাত্র সবই তো আল্লাহর ইচ্ছে। মানে তার ডাক্তারি বিদ্যা ধুলোয় মিশে গেল। এ সব বিষয়ে বক্তব্য কী? তাহলে এতো টাকা পয়সা খরচা করে ডাক্তারি বিদ্যা না শিখে, কেবল কুরাণ পড়ে ঝাড় ফুঁক করে দিলে তো চলে। বড্ড চিন্তার বিষয়।”
তার এই মন্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে উপরোক্ত বোল্ড করা অংশটুকু কোট করে বলেছিলাম- “আপনার এই কথাগুলো হুবহু মোকছেদ আলী ‘তাবিজের গুণ’ নামে একটা লেখায় উল্লেখ করেছেন। হয়তো এক সময় সেটি পোষ্ট করবো।” সেই কথা রাখবার জন্যই পোষ্টটি দিলাম।]
তাবিজের গুণ
আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে মন্ত্রতন্ত্র ঝাঁড় ফুঁকের কার্যকারিতায় আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত লোক বিশ্বাস করতে চায় না। মন্ত্রতন্ত্র ঝাড়ফুঁকের উপকারিতার কথা আলোচিত হলে, তারা নাক সিটকায়। মুখ ভ্যাংচায়ে বলে, ‘ফোঃ, মন্ত্রেতন্ত্রে যদি কাজ হতো, তবে লাখ লাখ টাকা খরচা করে কেউ মেডিকেলে পড়ত না। গাদা গাদা টাকা ব্যয় করে হাসপাতাল তৈরীর প্রয়োজন হত না।’ আর আমার কথা হচ্ছে- “তাহলে এতো টাকা পয়সা খরচা করে ডাক্তারি বিদ্যা না শিখে, কেবল কুরাণ পড়ে ঝাড় ফুঁক করে দিলে তো চলে।”
যাহোক তাদের নাক সিটকানো, মুখ ভ্যাংচানো সত্বেও বহু লোক দোয়া তাবিজ বা মন্ত্রতন্ত্র দ্বারা উপকৃত হয় বলে প্রচার করা হয় পত্র পত্রিকাতে। বিজ্ঞানের এত অগ্রগতির যুগেও তাবিজ কবজ মন্ত্রতন্ত্র বন্ধ হয় নাই। বিপদগ্রস্থ মানুষ মন্ত্রতন্ত্র বা দোয়া তাবিজ জানা ফকিরদের কাছে যাওয়া বন্ধ করেনি।
আমি নিজেও একজন প্রগতিবাদী। মন্ত্রতন্ত্রের উপর আমার কোন আস্থা নাই। কিন্তু কয়েকটি চাক্ষুষ প্রমাণে মন্ত্রতন্ত্র দোয়া কালামের উপর আস্থা না এলেও মাথার মধ্যে কেমন যেন তালগোল পাকিয়ে যায়। নিজের জ্ঞানের অভাবহেতু ব্যাখ্যা দাড় করাতে পারি না। যারা তাবিজ কবজ দেন তাদের বক্তব্য এরূপ: “নেগেটিভ ও পজেটিভ বিদ্যুতের মিলন ঘটলেই যেমন বৈদ্যুতিক শক্তির সৃষ্টি হয়, তেমনি মন্ত্রদাতার ব্যক্তিত্ব ও মন্ত্রে বাক্যের সঠিক মিলন ঘটলেই আপদের উপর কার্যকারী ক্ষমতার সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ মন্ত্র উচ্চারণকারীর মুখের বরকত থাকতে হবে। সর্বপ্রকার মিথ্যা থেকে সরে এসে সত্যের উপর স্থির থাকতে হবে। অন্তর থেকে হিংসা লোভ লালসা দূরীভূত করতে হবে। বৈধ অবৈধ্যর পার্থক্য বুঝে হালাল দ্রব্য ভক্ষণ করতে হবে। এছাড়া তার আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে যে দোয়া কালাম পূর্ণরূপে রোগ ব্যাধি সারানোর ক্ষমতা রাখে।”
এখন আমি চাক্ষুষ একটি ঘটনার কথা বলি-
স্বামীর মৃত্যুর পর রমেছা খাতুন ৫ বছরের একটি ছেলে, ২ বছরের একটি মেয়ে নিয়ে ভাইদের সংসারে আসলো। স্বামীর গৃহে থাকার মত সুবিধা ছিল না। তিন ভাই, একমাত্র বোন রমেছাকে তাদের গৃহে আশ্রয় দিল। পৈত্রিক সম্পত্তির যেটুকুর অংশীদার, তাতেই বিধবা রমেছা নাবালক ছেলে মেয়ে দুটির গ্রাসাচ্ছন চলে যায়। ভাইদের সংসারের দেখা শোনাও করে।
দিন তো আর বসে থাকে না। উদয় অস্তের খেলায় অনেক দূরে চলে যায়। ছেলেটি মামার দোকানে কাজ করে। মেয়েটি এক সময় সেয়ানা হয়ে উঠল। মামারা দেখে শুনে একজন সৎ যুবকের সঙ্গে মেয়েটির বিবাহ দিল। চার মাস স্বামীর ঘর সংসারে থাকল। কোন ঝগড়া ঝাটি গন্ডগোল নাই, বেশ সুখে শান্তিতেই ছিল।
জ্যৈষ্ঠ মাস। বঙ্গদেশের ফলের মৌসুম। আম জাম কাঠাল হরেক ফলের মৌসুম। এই সময় সামর্থবান লোকেরা মেয়ে জামাই নিয়ে আসে। আম দুধ কলা দিয়ে আদর করে। রমেছা বিবিও ব্যতিক্রম নয়। নতুন জামাই মেয়েকে নিয়ে এল। জামাই দুই দিন থেকে চলে গেল। মেয়ে থেকে গেল। আম কাঠাল ফুরে যাক, মেয়ে যাবে। আম কাঠাল ফুরে গেল। লোকমান নিজেই এল স্ত্রীকে নিয়ে যেতে। কিন্তু কি হলো কে জানে, মেয়েটি স্বামীর সঙ্গে কথাটা পর্যন্ত বলল না। মামারা পর্যন্ত ভর্ৎসনা করল। জমিলার এক দাবী, আমি ওর ভাত খাব না, ওদের বাড়িতেও যাব না। অগত্যা লোকমান নিঃসঙ্গ হয়েই চলে গেল।
দিন যায়, মাস যায়। বছরও ঘুরে এল। এর মধ্যে লোকমানের পিতা দুই দুই বার এসেছে পুত্রবধুকে নিয়ে যেতে। কত আদর করে বলেছে, মা তুমি চল, তোমার কোন অসুবিধা হলে বা কেউ তোমাকে কটু কথা বললে আমাকে বলবে, আমি বিহিত ব্যবস্থা করব। কার কথা কে শোনে। জমিলার এক কথা, সে লোকমানের ঘর করবে না। লোকমানের ভাত খাবে না। যদি তোমরা জোর করে পাঠাও আমি থাকব না চলে আসব। আর যদি বেশি বাড়াবাড়ি কর, সোজা গলায় দড়ি দিব। ‘সোজা গলায় দড়ি দেব’ শুনে মা মামা কেউ আর পিড়াপিড়ি কোরল না। বিধবা মায়ের একটাই মেয়ে। বাপ বেঁচে থাকলে হয়ত অন্য বড় ঘরে বিয়ে দিত।
বছর পার হয়ে আরো ছয় মাস উত্তীর্ণ হল। লোকমান ছেলেটি স্ত্রীর প্রতি বিরক্ত হল না। সে বলল, এক সময় ওর বুদ্ধি পাকবে, তখন ও আবার আমার কাছে আসবে। এখন তো ছোট আছে, বুদ্ধি কাঁচা। তাই সে অমন কথাবার্তা বলছে। লোকমানের কথা শুনে কেউ কেউ মন্তব্য করল, ‘ছোট না গ্যাদা, মায়ের বুকের দুধ খায়। ওর চেয়ে ছোট বয়সের মেয়েরা ২/৩ ছেলের মা হয়েছে। তারা কি ঘর সংসার করছে না? আসলে ওকে ভূতে ধরেছে। লোকমান আসলে ম্যাদা, বেটা ছেলেই না। বৌয়ের চুলের ঝুটি ধরে পিঠের ‘পরে কাঁচা কঞ্চি খান দুই ভাঙলে, যাচ্ছি যাচ্ছি করে ছুটে যাবে।” শুনে লোকমান বলল, ‘যে যা বলে বলুক, ও নিয়ে আমার মাথা ব্যাথা নাই।’
মামা দেলোয়ার হোসেন চিন্তিত হল। একটা ভাগ্নি। তাতে পিতৃহীন। বিয়ে দিলাম ভাল ঘর দেখে, খারাপ ঘরে তো দেই নাই। লোকমান ছেলেটি তো খুব অমায়িক, কর্মী। পয়সা রোজগার করে ভাল। অভাব দৈন্য তো নাই। এমন সংসারে জমিলা ভাত খাবে না কেন? মান সম্মানের ব্যাপার তো। লোকেই বা বলে কী?
দেলোয়ারের স্ত্রী কোলের ছেলেটিকে বুকের দুধ খাওয়াতে খাওয়াতে স্বামীকে বলল, তোমরা তিন তিনটা ভাই, খালি মেয়েকে ধমকালে, ভর্ৎসনা করলেই কি মেয়ে স্বামী বাড়ি যায়? তয়-তদবির কিছু করতে হয়। কত গুণি জ্ঞানী কবিরাজ আছে, মোল্লা, ক্বারী হাফেজ আছে, তেনারা দোয়া কালাম তাবিজ, তুকতাক কত কি করে দেয়, তাতে তো সেরে যায়। একবার চেষ্টা করে দেখ না।
স্ত্রীর কথায় স্বামী দেলোয়ার হোসেন বলল, কথাটা তুমি ঠিকই বলেছ। আজ প্রায় দেড় বৎসর পার হয়ে গেল, এজন্য তো আমরা কোন তয় তদবির করি নাই। আমার দোকানের কাছেই এক হাফেজ সাহেব থাকেন, অনেকেই অনেক ব্যাপারে দোয়া তাবিজ নিয়ে যায়। আমি তো কাছে থেকে কোনদিন তার কাছে এসব ব্যাপারের কথা বলি নাই। দোষ তো শুধু আমার না। তুমি আজ বলছ একথা, আগে বললে তো চেষ্টা করে দেখা যেতো।
স্ত্রী বলল, সময় তো আর ফুরে যায় নাই। একবার হাফেজ সাহেবের কাছে খোলাসা করে বল। হয়ত তয় তদবির করে জোড়া লাগায়ে দিতে পারে।
দেলোয়ার হোসেন ঐদিনই বিকালে, হাফেজ সাহেবের কাছে গেল। আদ্যপান্ত সব ঘটনা খোলাখুলি হাফেজ সাহেবের কাছে বলল। সব শুনে হাফেজ সাহেব বললেন, প্রথমেই যদি আমার কাছে বলতেন, তবে তদবির করে দিলে এতদিন ঘর সংসার করতে পারত। আপনেরা ভাই বোনে নাতি পুতির মুখ দেখতে পারতেন। আল্লাহ চাহে তো, আল্লাহর কালামের বরকতে সব শান্তি হয়ে যাবে। আপনি কাউকে দিয়ে এক পোয়া আরবী খেজুর কিনে আনাবেন। তবে খেজুর কেনার সময় খুব সতর্কভাবে কিনতে হবে। কিনতে হবে এক ডাকে। যখন খেজুরের দোকানে কোন ভীড় থাকবে না, সেই সময় এক ডাকে বলতে হবে এক পোয়া খেজুর দেন, বলে টাকা দিতে হবে। দরদাম করবেন না। এক পোয়ার দাম নেবে ২ আনা। কথাটা খেয়াল করে বলে দিবেন।
দেলোয়ার হোসেন হাফেজ সাহেবকে বললেন, আমার দোকানে আমার এক শালা থাকে, খুব চালাক চতুর, ওকে দিয়ে খেজুর আনাবোনে।
দেলোয়ার হোসেন আমার ফুফাতো বোনের স্বামী। অর্থাৎ ফুফাত ভগ্নিপতি। আমি তার দর্জির দোকানে বেচাকেনা করি, আর দোকানের ফাই ফরমাস খাটি। দর্জির কাজ শিখি।
আমি দোকানে বসে পাঞ্জাবীর বোতামের ঘর বানছি। দুলাভাই বললেন, মোকছেদ, বাক্সের মধ্য থেকে ৪ আনা পয়সা নিয়ে কালু পেশোয়ারীর ফলের দোকানে যা। গিয়ে একপোয়া খেজুর নিয়ে আয়। আর শোন এই খেজুর কিন্তু এক ডাকে কিনবি। দেখবি যখন দোকানে কোন খরিদ্দার না থাকে, পেশোয়ারী একলা বসে থাকে, তখন গিয়ে বেশ জোরে শোরেই বলবি, এক পোয়া খেজুর দেন তো। বলেই ৪ আনা পয়সা তাকে দিবি। বুঝলি তো। আমি তার সব কথাই যে পরিষ্কার বুঝেছি, সেই কথাটা তাকে জানিয়ে দিলাম। মাথা দোলায়ে ‘হু, সব বুঝেছি, এক ডাকে খেজুর কিনতে হবে।’
আমি হাতের কাজ শেষ না করেই উঠে ক্যাশ বাক্স থেকে একটা পঞ্চম জর্জ মার্কা সিকি বের করে সোজা হাটা ধরলাম কালু পেশোয়ারীর দোকানে। আমাদের দর্জির দোকান, দর্জি পট্টিতে। ২ গলি পরেই ফল পট্টী। সেখানে কালু পেশোয়ারীর ফলের দোকান। খুব ফর্সা, লম্বা চওড়া লোক। দুই দিকে প্রায় আধা হাত করে লম্বা মুচ। মাথায় কালো টুপি। কাঠের তৈরী তাকের উপর থরে থরে ডালিম, বেদানা, নাশপাতি, আপেল, আরো কত কি ফল সাজায়ে রেখেছে। আর দোকানের সামনের ঝাপের সঙ্গে সুতলী দিয়ে আঙ্গুরের ও মনোক্কার থোকাগুলি ঝুলিয়ে রেখেছে।
দুপুর বেলা। লোকজন মোটেই নাই। কালু পেশোয়ারী কি একখান বই মনে মনে পড়ছেন। আমি গিয়ে দোকানের চৌকি ঘেষে দাড়ালাম। কালু পেশোয়ারী বই থেকে চোখ তুলে আমার দিকে দৃষ্টি দিয়ে বললেন, কি চাও, খোকা। আমি বললাম, একপোয়া ভাল খেজুর দেন। বলেই সিকিটা তার দিকে দিলাম। তিনি সিকিটা হাত থেকে নিয়ে খোলা একটা বাক্সের মধ্যে রাখলেন এবং একটি দু আনি বের করে আমার হাতে দিলেন। আমি সেটা হাতে নিলাম। ছোট দাড়ি পাল্লায় মেপে একপোয়া খেজুর একটা কাগজের ঠোঙ্গায় পুরে আমার হাতে দিলেন। আমি আর কোন কথাবার্তা না বলে সোজা দোকানে চলে এলাম।
দুলাভাই দোকানে বসে ছিল। আমার হাত থেকে খেজুরের ঠোঙ্গাটি নিয়ে ঠোঙ্গার মুখ খুলে দেখল। বলল, এক নম্বর নতুন খেজুর। কালু পেশোয়ারী কাউকে ঠকায় না। আমাকে বলল, তুই দোকানে বয়। আমি হাফেজ সাহেবের কাছ থেকে আসি। বলেই সে খেজুরের ঠোঙ্গাটি হাতে করে চলে গেল।
প্রায় আধা ঘন্টা খানেক পরে ঠোঙ্গাটা হাতে করে ফিরে এসে আমাকে বলল, মোকছেদ, তুই বাড়ি যা, এই খেজুর জমিলার মায়ের হাতে দিবি। জমিলা যেন না দেখে। আর কেউ যেন না খায়। জমিলার মা যদি বাড়ি না থাকে, তবে তোর বোনের হাতে দিবি। আর বলে দিবি এই খেজুর যেন জমিলার মা’র হাতে দেয়। জমিলার মা এই খেজুর ভাত রাধার চাউলের পাতিলের মধ্যে রেখে দেয়, আর জমিলাকে যেন বলে ঐ চাল নিয়ে ভাত পাক করে। জমিলা ভাতের চাল নিতে গিয়ে পাতিলের মধ্যে খেজুর দেখবে, আর সে খেজুর খেয়ে নিবে। বুঝেছিস কথা। আমি ঘাড় কাত করে বললাম, বুঝেছি।
নির্দেশ মত খেজুর রাখা হল। জমিলা সেই খেজুর সব খেয়ে ফেলেছে। দুইদিন পর জমিলা বলল- মা, আমি আমার শ্বশুড় বাড়ি যাব। জমিলার মা খুশিতে আল্লাহর শোকর গুজারী করল। দুপুরে দুলাভাই বাড়ি আসলে জমিলার মা সব কথা খুলে বলল। দুলাভাই ঘোড়ার গাড়িতে করে জমিলাকে তার শ্বশুড় বাড়ি রেখে আসল।
এর পর জমিলার দুই ছেলে হয়। জমিলার সংসার পরম সুখের। মন্ত্রশক্তির গুণ চাক্ষুষ দেখলাম। কিন্তু এর ব্যাখ্যা করতে পারিনা।
:-X যারা তাবিজ বিসাস করতে চাননা, গ্যাঁড়াকলে যেদিন পড়বেন সেদিন বুজবেন তাবিজের কি গুণ। :guru: …………..
কারো গলায় বা শরীরে তাবিজ থাকলে দেখলে অামার গা ঘিন ঘিন করে এমনটাকি কারো হয়?
আমার মনে হয় তাবিজ বা ঝাড় ফুকের ব্যাপারটা প্রবীর ঘোষের “অলৌকিক নয় লৌকিক” বইয়ে বিস্তাড়িত দেয়া আছে।
আমিও তাবিজের কারিগর! বিশ্বাস হয় না? ওকে একটা পোস্ট দিয়াই না হয় প্রমান করব 🙂
@শ্রাবণ আকাশ,
প্রমাণ করাটাই তো মুক্তমনাদের কাজ। আশা করি আপনি আপনার কথা রাখবেন।
এই লেখাটি পড়তে পড়তে তাবিজ ফারুখ নামক মহান শিল্পীর কথা মনে পড়ে গেল।
httpv://www.youtube.com/watch?v=Wr4dv6Ggw1I
@তানভীরুল ইসলাম,
একদিন এই মহান শিল্পীও অন্তরা শোবিজের মালিক হবেন!
@তানভীরুল ইসলাম,
আমাদের সবার জীবন দীপান্বিত হোক।
মকছেদ আলীর সঙ্গে আরজ আলীর বাহাস হওয়া দর্কার ছিলো। তাইলে বুঝা যাইতো হুজুর তথা খেজুরের গুন! 😀
—
মকছেদ আলী চলুক। :yes:
@বিপ্লব রহমান,
দু:খিত। দুজনেই লোকান্তরিত। আসুন, তাদের মাজারে :rose2: দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করি।
@মাহফুজ,
মাজারে গঞ্জিকার ব্যবস্থা থাকলে রাজি আছি।
@রৌরব,
যেখানে মাজার সেখানে তো গঞ্জিকার আসর বসিবেই। (এখনে কল্কির ইমো হবে) দম মারো দম, হরে কৃষ্ণ হরে রাম।
গঞ্জিকার আসরের একটু বর্ণনা দেই (মোকছেদ আলীর ‘মাজার দর্শন’ থেকে সংগৃহীত):
আমি আরো একটু আগাইয়া গেলাম। চমৎকার দৃশ্য। এক স্থানে গোলাকার হইয়া ১০/১২ জন লোক বসিয়া আছে। বেশভূষা, চেহারায় তারা সাধু সন্নাসী। একজন বলিষ্ঠ লোক, খালি গা, পরিধানে ময়লা জীর্ণ ধুতি কি লুঙ্গী বুঝিতে পারিলাম না। উরু হইতে পায়ের পাতা পর্যন্ত উদাম। সে একটি ছোট্ট তক্তার উপর গাঁজা রাখিয়া চাকু দ্বারা কাটিতেছে। গাঁজা কাটারও একটি শিল্প বিদ্যা আছে, সকলে পারে না। তবে এই ব্যক্তির ঐ বিদ্যা খুব ভালোভাবে আয়ত্ব হইয়াছে। আমি দাঁড়াইয়া ঐ দৃশ্য দেখিতে লাগিলাম। কেন জানি না, গাঁজা কাটা শেষ হইলে, কর্তিত গঞ্জিকাগুলি বাম হাতের তালুতে তুলিয়া একটু পানির ছিটা দিয়া, ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়া মর্দন করিতে লাগিল। তাহাতে প্রজাপতির পাখার ন্যায় তাহার বাহু দুখানি উঠা নামা করিতে লাগিল। এই দৃশ্য বড় চমৎকার দেখাইতেছিল। তাহার দক্ষিণ পার্শ্বে আরেকজন সাধু নারিকেলের ছোবড়ার গুলি তৈরী করিতেছিল।
সাধারণ গাঁজার কলিকা অপেক্ষা বড় একটি কলিকাতে গাঁজাগুলি ঢালিয়া দিয়া, তাহার উপর নারিকেল-ছোবড়ার গুলিটি দিয়া দেয়াশলাইয়ের কাঠি জ্বালাইয়া অগ্নি সংযোগ করিল। আস্তে আস্তে ফুঁ দিয়া আগুন জমকাইয়া তুলিল। এবার সাধু ব্যক্তি কলিকা হাতে দুই হাতে তালু দ্বারা জড়াইয়া কি যেন বিড় বিড় করিয়া পাঠ করিল। তারপর, কলিকাটি কপালে ঠেকাইল। অতি ভক্তিভরে কলিকাটি ধরিয়া মুখের সহিত লাগাইয়া টানিতে লাগিল। ২/৩ বার আস্তে আস্তে টান দিয়া সহসা, খুব জোরে একটা টান দিয়া ধোয়া না ছাড়িয়া দম আটকাইল। মস্তক দ্রুত ডান দিকে ঘুরাইয়া বাম হাতে কলিকাটি তাহার বামে উপবিষ্ট লোকটির প্রতি আগাইয়া দিল। লোকটি অতি ভক্তিভরে কপালে তিনবার ঠেকাইয়া মুখে লাগাইয়া টানিতে লাগিল। এই সময় পূর্বোক্ত সাধুটি মুখ হইতে ধোয়া ছাড়িল। নাসিকা দিয়া ধোয়া নির্গত হইল। বাতাসে সেই ধোয়া আসিয়া আমার নাকে প্রবেশ করিল। কিরূপ যেন একটা গন্ধ।
আমিও সফিক সাহেবের সাথে একমত।
আমার বাবার ক্ষেত্রেই এটা দেখেছি। তন্ত্র মন্ত্রে যদি কাজই হত তাহলে আমার বাবা সুস্থভাবে বেঁচে থাকতেন আজ!
এখানেই কিন্তু আসল ভাওতাবাজি। যদি তাবিজে কাজ না হত তাহলে দেখা যেত মানুষ ঠিকই গবেষণা করে বের করে ফেলেছে মোকছেদ আলী যখন খেজুর কিনতে গিয়েছিল তখন পাশে এক লোক ছিল যাকে অন্যমনস্কতার জন্য খেয়াল করেনি বা জমিলা আগেই দেখে ফেলেছিল খেজুর, খেজুরে মাপে কম ছিল, খাটি আরবী খেজুর ছিলনা ইত্যাদি ইত্যাদি…এই কন্ডিশনগুলো দেয়াই হয় যাতে কাকতালীয় ঘটনা না ঘটলে অর্থাৎ তন্ত্র মন্ত্রে কাজ না হলে বলা যায় যে মনে পাপ ছিল,মুখে বরকত নেই,ফুক দেয়া বস্তুটি হালাল ছিলনা ইত্যাদি ইত্যাদি।
ঝাড় ফুকে যে কত কাজ হয় তা আমার ভালই জানা।আমি আগেই অনেক মন্তব্যে লিখেছি,আমার বাবা ৫ বছর ধরে অসুস্থ থাকায় প্রচুর কবিরাজ দেখেছি, অনেক তুক তাক তন্ত্র মন্ত্র দেখেছি। দেখি সময় করে আমার সেই ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতার উপর একটা পোস্ট দেব।
@লীনা রহমান,
ঠিক আপনার বুজরুকির মত।
অনেকদিন পর মকছেদ আলীর একটা লেখা পড়লাম। ভালই লাগল 🙂
@রৌরব,
পড়ার জন্য থ্যাংকু।
তাহলে প্রমানিত আছে আল্লাহ্ আছেন। তাকে অস্বীকার করার উপায় নেই। এই লেখাটি পড়ুণ।
আরো খলাসা হয়ে যাবে।
@Tinku Azizur Rahman,
আপনার লিংক দেয়া লেখাটি পরম যত্নসহকারে পড়েছি। কিন্তু খোলাসা তো হলোই না বরং অবিশ্বাসের ভিতটা মজবুত হলো। আল্লাহ কোরান নাজিল করেছেন- সহজ সরল ভাষায় যাতে মানুষ বুঝতে পারে, আর আপনি যা নাজিল করলেন তা অনেকেই বুঝে নাই এমন মন্তব্যও দেখলাম। আমিও বুঝি নাই। সম্ভবত আল্লাহ আমার দিলে মোহর মেরে দিয়েছেন। আমি তো দেখলাম- লেখক মানুষকে বিশ্বাসী বানানোর কোশেশ করেছেন কোরানের কিছু আয়াত দিয়ে বিজ্ঞানকে তুলে এনে। বেহেস্তকে গ্রহ-ট্রহ বানিয়ে ফেলছেন। বিজ্ঞানীরা যখনই কিছু আবিষ্কার করবে আপনারা বলবেন- এটা তো কোরানেই আছে। বিজ্ঞানকে কোরানের আয়াত দিয়ে তেনা পেচা করা অপবিজ্ঞানের সামিল। মোকছেদ আলী যে ঘটনার কথা বলেছেন, সেই ঘটনার ব্যাখ্যা তিনি উপলব্ধি করতে পারেন নাই বলেই কি বলতে হবে যে ওটা আল্লাহর ইশারা ছিল? আল্লাহ আছেন বলেই কি জমিলা শশুড় বাড়ি গেল?
@Tinku Azizur Rahman,
লিঙ্কটা দেখলাম।বলতেই হবে,”কত রঙ্গ জানরে জাদু”।
শেষ পর্যন্ত মানতে হবে যে বেহেস্ত একটা গ্রহ????? :lotpot:
@সমুদ্র,
কোথায় স্বর্গ কোথায় নরক, কে বলে তা বহু দূর?
মানুষের মাঝে স্বর্গ-নরক, মানুষেতে সুরা সুর।
@মাহফুজ,
এই-ই শেষকথা।
:yes:
জমিলা বিবি দেড় বছর বাপের বাড়ীতে থাকতে থাকতে আস্তে আস্তে নরম হচ্ছিলেন কারন সামাজিক প্রেশারে বুঝছিলেন স্বামীর বাড়ীতে ফেরত না গেলে সামনের জীবনে অনেক প্রবলেম হবে। ইগোর কারনে এতদিন ঘাড় বেকে ছিলেন। যখন খেজুর পড়ার মতো একটা দারুন উপলক্ষ পেলেন, তখন সুরসুর করে চলে গেলেন। ইগো বাচলো, সমস্যাও গেলো। সেই সময়টিতে খেজুর পড়ার বদলে আমপড়া দিলেও মনে হয় একই ফল দিতো।
মন্ত্র তন্ত্রের একটা সাফল্যের বিপরীতে একশটা ব্যর্থতা দেখানো যায়। প্রবাবিলিটির নিয়ম অনুসারেই কখনো কখনো কাক মরে।
@সফিক,
এমনও হতে পারে: গ্রামে পানি পড়া, তেল পড়া, বাটি চালান এসব প্রথা চালু আছে। যেভাবেই হোক জমিলা হয়তো জেনেছিল সে পড়া-খেজুর খেয়েছে। এখন যদি সে শশুড়বাড়ি না যায় তাহলে তার ক্ষতি হতে পারে, এমন ভয় মনে জেগেছিল। সে কারণে ফিরে গিয়েছিল।