আপনার উর্বর মস্তিষ্কের রঙিন কল্পণায়ও কি কখনও – একটি বারও মনে হয়েছে, আকাশের বুকে হাজারো লক্ষ কোটি গ্রহ-তারা-নিহারীকা আর গ্রহানুপুঞ্জ নিয়ে তৈরী এই যে আমাদের এত পরিচিত বিশাল মহাবিশ্ব, এর বাইরেও এমনি ধরনের অসংখ্য মহাবিশ্ব ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে? আপনার আমার কাছে তা যতই অবিশ্বাস্য ঠেকুক না কেন, পদার্থবিজ্ঞানীরা কিন্তু খুব গুরুত্ব দিয়ে এই সম্ভাবনার ব্যাপারটি ভাবছিলেন অনেকদিন ধরেই,এবং অতি সম্প্রতি দাবী করা হয়েছে এর কিছু পরীক্ষালব্ধ প্রমাণেরও হদিস পেতে শুরু করেছেন তারা (দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে)। কিন্তু সেখানে যাবার আগে চলুন আমরা একটু চোখ বুলিয়ে নেই মাল্টিভার্স বা অনন্ত মহাবিশ্বের ধারণাটি আসলে কি বলছে, কীভাবেই বা এই প্রায় ‘সাই-ফাই’ ধারণাটি কাঠকোট্টা বিজ্ঞানে অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেলো।
মাল্টিভার্স কী?
অনন্ত মহাবিশ্বের ধারনা কিন্তু অনেক পুরোন। সেই যে প্রাচীন দার্শনিক জিওর্দানো ব্রুনো (১৫৪৮-১৬০০)র কথা আমরা জানি, যিনি কোপার্নিকাসের সূর্যকেন্দ্রিক তত্ত্ব সমর্থন করতে গিয়ে চার্চের বিরাগভাজন হয়েছিলেন, আর যাকে এই বাইবেলবিরোধী তত্ত্ব সমর্থনের অপরাধে ঈশ্বরপুত্রের দল জীবন্ত পুড়িয়ে মেরেছিলো, তিনি ১৫৮৪ সালে একটি ভয়ঙ্কর এক বই লিখেছিলেন De l’Infinito Universo et Mondi নামে, যার বাংলা করলে দাঁড়াবে – ‘অনন্ত মহাবিশ্ব এবং বহু বিশ্ব নিয়ে’ সেখানে তিনি অনন্ত মহাবিশ্ব থাকার জোরালো সম্ভাবনার ব্যাপারটি তুলে ধরেছিলেন। তিনি বলেছিলেন পৃথিবী তো সৌরজগতের কেন্দ্র নয়ই, এমনকি এই মহাবিশ্বের সংখ্যাও একটি নয়, বরং এর সংখ্যা হতে পারে অনন্ত অসীম। ব্রুনো আরো বললেন, এই মহাবিশ্বের অন্যান্য গ্রহেও প্রাণের অস্তিত্ব থাকা সম্ভব। আবার, সেরকম প্রাণওয়ালা একাধিক গ্রহ থাকতে পারে অন্য মহাবিশ্বেও।
ব্রুনোর এ ধারনাগুলো সে সময়ের তুলনায় ছিলো ভীষণ বিপ্লবী, এমনকি আজকের প্রেক্ষাপটেও তা কম কী? অতিমাত্রায় আজগুবিও হয়তো বলবেন কেউ কেউ। কিন্তু তারপরেও ব্রুণোর কথার গুরুত্ব কিছু কিছু দার্শনিকেরা ঠিকই উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। যেমন, জার্মান দার্শনিক এর্নস্ট ক্যাসিরের ব্রুনোর অনন্ত মহাবিশ্বের চিন্তাধারাকে ‘চিন্তার দাসত্ব থেকে মুক্তির’ প্রথম সোপান উল্লেখ করে লেখেন[1] –
ব্রুনোর অসীম মহাবিশ্বের এই মতবাদটি … মানুষের চিন্তার দাসত্ব থেকে সচেতনভাবে মুক্তির সর্বপ্রথম সোপান। মানুষকে আর সসীম মহাবিশ্বের সঙ্কীর্ণ চৌহদ্দির কারাগারে বন্দী আসামীর মতো জীবন কাটিয়ে যেতে হবে না,সে হবে সত্যিকারের মুক্ত বিহংগ; সে ভেঙ্গেচুরে ফেলবে কাল্পণিক যত দেওয়াল – যা মিথ্যে অধিবিদ্যা এবং জ্যোতির্বিদ্যার মাধ্যমে তার অস্তিত্বকে বন্দি করে রেখেছিলো এক স্বর্গীয় গোলকের অভ্যন্তরে। অনন্ত অসীম মহাবিশ্বের ধারণা মানুষকে দেয় মানুষ হিসেবে সত্যিকার মুক্তির আস্বাদন, সে মানুষের জন্য নির্ধারণ করে না কোন কৃত্রিম দেওয়ালের সীমা পরিসীমা,বরং মানব যুক্তির জন্য হয়ে উঠে সত্যিকারের অনুপ্রেরণা। মানব বুদ্ধিবৃত্তি নিজের অসীমত্ব নিয়ে সচেতন হয়ে উঠে অসীম মহাবিশ্বের মায়াবী ক্ষমতায়’ (Infinite worlds of Giordano Bruno by Antoinette Mann Patterson, 1970)।
এর্নস্ট ক্যাসিরের মতো দার্শনিকেরা গুরুত্ব বুঝলে কী হবে, চার্চের মাথায় যেন বাজ পড়লো।এমনিতেই কোপার্নিকাসের সূর্যকেন্দ্রিক তত্ত্ব সমর্থন করা নিয়ে ব্রুনোর উপর চার্চ মহাখাপ্পা ছিলেন। তারা ভাবতেন, এই পৃথিবীটা একটা বিশিষ্ট গ্রহ যা ঈশ্বরের তৈরি এক বিশেষ সৃষ্টি। পৃথিবীটা বিশিষ্ট গ্রহ বলেই পৃথিবীকে স্থির রেখে এর চারদিকে সমস্ত গ্রহ, তারাকামণ্ডলী সহ সকল মহাজাগতিক বস্তুকণাকে এর চারিদিকে ঘুরার কথা সুস্পষ্টভাবে লেখা আছে বাইবেলে। কাজেই কোপার্নিকাসের তত্ত্ব ছিলো তাদের চোখে সাক্ষাৎ ব্লাস্ফেমি, কারণ তার সৌরকেন্দ্রিক তত্ত্বে আস্থা রাখলে পৃথিবীর বিশিষ্টতা নিমেষেই ক্ষুণ্ণ হয়ে যায়।আর এর মধ্যে অসীম মহাবিশ্ব আমদানী করলে তো পোয়াবারো – মানবজাতি আর তার পুরোধা চার্চের ভূমিকাও গৌণ হয়ে যাবে। অসীম মহাবিশ্বে কি অগনিত মানব জাতি থাকবে, আর তাদের জন্য অগনিত পোপ, কিংবা অগনিত যীশু? ছি ছি রাম রাম…মাথা খারাপ নাকি? দে শালারে পুড়াইয়া …
ঈশ্বরপুত্রদের তাণ্ডবে ব্রুনোর নশ্বর দেহ পুড়ে ছাই গয়ে গেলো। দিনটি ছিলো ১৬০০ খ্রীষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসের ১৭ তারিখ।
চিত্রঃ ইতালির ক্যাম্পো ডি ফিওরির ঠিক যে জায়গাটায় জিওর্দানো ব্রুনোকে ১৬০০ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারি পুড়িয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়, ঠিক সে জায়গায় আজ ব্রুনোর একটি দীর্ঘ ব্রোঞ্জমূর্তি আছে। মুক্তচিন্তার শহীদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি হিসেবে মূর্তিটি পরবর্তীতে নির্মাণ করেছিলেন ইতালির স্থাপত্যশিল্পী এতোরি ফেরারি। গতবছর (২০০৯) ইতালি ভ্রমণের সময় আমার তোলা ব্রুনোর দুটো ছবি।
চার্চ হয়তো ভেবেছিলো গ্যালিলিওকে অন্তরীণ করে রেখে কিংবা ব্রুনোকে পুড়িয়ে দিয়েই পৃথিবীর ঘূর্ণন থামাবেন তারা। আর পুড়ানোর সাথে সাথেই অনন্ত মহাবিশ্বের ধারণাও বোধ হয় পুড়ে ছাই হয়ে যাবে! কিন্তু চার্চের হয়তো জানার বাকি ছিলো যে, ব্যক্তিকে পোড়ানো যায়, কিন্তু তার মতবাদকে নয়। ব্রুনোর অনন্ত মহাবিশ্বের মতবাদ আবারো ফিরে এসেছে বিজ্ঞানে মূলতঃ আধুনিক কোয়াণ্টাম পর্দার্থবিদ এবং জ্যোতির্পদার্থবিদদের হাত দিয়ে। আধুনিক পদার্থবিদের কিছু গবেষক অনেকদিন ধরেই আলামত পাচ্ছিলেন যে, আমাদের পরিচিত মহাবিশ্ব -এটি কোন অনন্য বা ইউনিক কিছু নয়, বরং এমনি ধরনের হাজারো মহাবিশ্ব হয়ত ছড়িয়ে আছে যেগুলো সম্পর্কে আমরা একদমই ওয়াকিবহাল নই। বিগ ব্যাং তত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবার পর আশির দশকে ইনফ্লেশন বা স্ফীতিতত্ত্ব নিয়ে পদার্থবিজ্ঞানের প্রান্তিক গণিতগুলো সমাধান করতে গিয়েই এই অদ্ভুতুরে ব্যাপারটা বেরিয়ে আসছিলো ক্রমশ। যারা সে সময় এ নিয়ে গবেষণা করছিলেন – আলেকজান্ডার ভিলেঙ্কিন এবং আদ্রে লিন্ডে খুব অবাক হয়ে লক্ষ্য করলেন মহাজাগতিক স্ফীতি একবার শুরু হলে আর থামে না[2]। এ ব্যাপারটাকেই বিজ্ঞানীরা আজ ‘চিরন্তন স্ফীতি’ (Eternal Inflation) নামে অভিহিত করছেন। অনন্ত মহাবিশ্বের ধারণা মূলতঃ এই চিরন্তন স্ফীতিতত্ত্বেরই স্বাভাবিক একটি গাণিতিক পরিনতি। তাই অনন্ত মহাবিশ্বের ধারণাটি কোন ঠাকুরমার ঝুলির রূপকথা নয়, নয় কোন স্টারট্রেক মুভি বা আসিমভের সায়েন্সফিকশন। অতি সংক্ষেপে অনন্ত মহাবিশ্বের বৈজ্ঞানিক ধারণাটি এরকম:
আমাদের মহাবিশ্ব যদি কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের মধ্য দিয়ে স্থান-কালের শূন্যতার ভিতর দিয়ে আবির্ভূত হয়ে থাকে, তবে এই পুরো প্রক্রিয়াটি কিন্তু একাধিকবার ঘটতে পারে, এবং হয়ত বাস্তবে ঘটেছেও। এই একাধিক মহাবিশ্বের অস্তিত্বের ব্যাপারটি প্রাথমিকভাবে ট্রিয়ন আর পরবর্তীতে মূলতঃ আদ্রে লিন্ডে এবং আলেকজাণ্ডার ভিলেঙ্কিনের গবেষণা থেকে বেরিয়ে এসেছে। সৃষ্টির উষালগ্নে ইনফ্লেশনের মাধ্যমে সম্প্রসারিত বুদ্বুদ (Expanding Bubbles) থেকে আমাদের মহাবিশ্বের মতই অসংখ্য মহাবিশ্ব তৈরী হয়েছে, যেগুলো একটা অপরটা থেকে সংস্পর্শবিহীন অবস্থায় দূরে সরে গেছে। এ ধরনের অসংখ্য মহাবিশ্বের একটিতেই হয়ত আমরা অবস্থান করছি অন্য গুলোর অস্তিত্ব সম্বন্ধে একেবারেই জ্ঞাত না হয়ে।
চিত্র: আঁদ্রে লিন্ডের দেওয়া তত্ত্ব – কেওটিক ইনফ্লেশনের ফলে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য সম্প্রসারিত বুদ্বুদ এবং প্রতিটি সম্প্রসারিত বদ্বুদই আবার জন্ম দিয়েছে এক একটি ‘বিগ-ব্যাং’-এর। আর সেই এক একটি বিগ-ব্যাং পরিশেষে জন্ম দিয়েছে এক একটি পকেট মহাবিশ্বের। আমরা এ ধরনেরই একটি পকেট মহাবিশ্বে বাস করছি।
আসলে নব্বইয়ের দশকে দেশকাল (spacetime)কীভাবে ‘ফ্লাকচুয়েট’ করে এ নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে কতিপয় বিজ্ঞানী (যেমন, এডওয়ার্ড ফার্হি, এলেন গুথ এবং জেমাল গুভেন প্রমুখ) দেখলেন দেশকালকে কেবল আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব অনুযায়ী ইচ্ছেমত বাঁকানো কিংবা প্রসারিত করাই যাচ্ছে না, সেই সাথে একে টুকরো করে ভেঙ্গেচুরেও ফেলাও সম্ভব। কখনো সখনো বৃহৎ মহাবিশ্ব থেকে বিচ্যুত হয়ে খুব ক্ষুদ্র স্থান বা দেশ জন্ম নিতে পারে। এটিই সেই ‘শিশু মহাবিশ্বের’ উৎপত্তির ধারণা, যেটি নিয়ে স্টিফেন হকিং একটি বই লিখেছিলেন ১৯৯৪ সালে – ‘কৃষ্ণগব্বর এবং শিশু মহাবিশ্ব’ নামে[3]।
সম্প্রতি ক্যালিফোর্ণিয়া ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির স্বনামখ্যাত পদার্থবিদ শন ক্যারলের একটি সুলিখিত বই পড়লাম ‘ফ্রম ইটারনিটি টু হেয়ার’ নামে[4]। কিভাবে ডি-সিটার স্পেস থেকে (যে স্থানে খুব স্বল্প পরিমান ধনাত্মক ভ্যাকুয়াম এনার্জি লুকিয়ে থাকে) ফলস ভ্যাকুয়াম বুদ্বুদের মাধ্যমে শিশু মহাবিশ্বের জন্ম হতে পারে, তা শন ক্যারল ব্যাখ্যা করেছেন তার বইয়ে। সেই সাথে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পাঠকদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। সদ্যজাত মহাবিশ্বকে জনপ্রিয় মিডিয়ায় ‘শিশু মহাবিশ্ব’ নামে অভিহিত করলেও মনে রাখতে হবে যে মহাবিশ্বের ক্ষেত্রে শিশু বিচ্ছিন্ন হবার পর অভিভাবকের সাথে সেই শিশু মহাবিশ্বের কোন সম্পর্কই থাকে না। কাজেই মানুষের জৈবিক সন্তানের সাথে সাদৃশ্য করার চেষ্টা হলেও বেবি ইউনিভার্সের সাথে বায়োলজিকাল চাইল্ডের পার্থক্য রয়েছে। খুব বেশী গাণিতিক জটিলতায় না ঢুকে নীচের ছবির মাধ্যমে শিশু মহাবিশ্ব উৎপত্তি ব্যাখ্যা করা হল –
চিত্রঃ ডিসিটার স্পেসে কোয়ান্টাম দোদুল্যময়তার ফলে অসদ বুদ্বুদ তৈরির মাধ্যমে শিশু মহাবিশ্ব উদ্ভবের প্রক্রিয়া, এবং পুরো প্রক্রিয়াটি অসংখ্যবার অসংখ্যভাবে চালিত হয়ে তৈরি করতে পারে প্রায় অসীম সংখ্যক মহাবিশ্বের (শন ক্যারলের ‘ফ্রম ইটারনিটি টু হেয়ার’ গ্রন্থ হতে উদ্ধৃত)।
সম্প্রতি স্ট্রিং তত্ত্বিকরা তাদের বিখ্যাত এমতত্ত্বের মেলবন্ধনের মাধ্যমে এ বিষয়ে আরো বেশকিছু দূর অগ্রসর হয়েছেন। তাদের গণনা থেকে দেখা গেছে, কোয়ানটাম দোদুল্যময়তার মাধ্যমে এমনকি ১০৫০০ টির মতো ভ্যাকুয়াম স্তরের (vacuum state) উদ্ভব ঘটতে পারে, এবং এ স্তরগুলো থেকে জন্ম নিতে পারে আলাদা আলাদা মহাবিশ্ব, যে সমস্ত মহাবিশ্বে একেক ধরণের পদার্থবিজ্ঞানের সূত্র কার্যকরী হতে পারে। এ ব্যাপারটিই পরিস্কার করেছেন স্টিফেন হকিং তার সাম্প্রতিক ‘গ্র্যাণ্ড ডিজাইন’ গ্রন্থে (গ্র্যান্ড ডিজাইন, পৃষ্ঠা ১১৮)-
‘এম তত্ত্বের নিয়মগুলো তাই ভিন্ন ভিন্ন মহাবিশ্বের অস্তিত্বের ধারণাকে সম্ভাব্য করে তুলে। মহাবিশ্বগুলোর প্রকৃতি কীরকম হবে তা নির্ভর করবে অন্তঃস্থানের (internal space) বক্রতার প্রকৃতির উপর। কাজেই, এম তত্ত্ব থেকে পাওয়া সমাধান অসংখ্য মহাবিশ্ব থাকার সম্ভাবনা তৈরি করেছে, তার সংখ্যা হতে পারে এমনকি ১০৫০০ টিও। এর মানে হল, আমাদের চারপাশে ১০৫০০ টির মতো মহাবিশ্বের অস্তিত্ব রয়েছে, এবং প্রতিটির উপর কাজ করতে পারে ভিন্ন ভিন্ন প্রাকৃতিক সূত্র।’
ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন বনাম মাল্টিভার্স
১৮৩৭ সালে ইংরেজ সাহিত্যিক রবার্ট সৌথি বাচ্চাদের জন্য একটি রূপকথার গল্প লেখেন – ‘গোল্ডিলক্স এবং তিন ভালুকের গল্প’ শিরোনামে। সেই গল্পে গোল্ডিলক্স নামের এক কিশোরী বনের মধ্যে পথ হারিয়ে এক ভালুক-দম্পতির বাসা খুঁজে পায়। ক্ষুধার্ত কিশোরীটি বাবা ভালুকের খাবার খেয়ে দেখলো সেটি খুব গরম -মুখে দিলেই মুখ পুড়ে যায়। মা ভালুকের খাবারটি খেয়ে গোল্ডিলক্স দেখলো সেটি আবার খুব ঠান্ডা। আর বাচ্চা ভালুকের খাবারটা চেখে দেখে সেটা সেটা না-গরম -না ঠান্ডা – একদম ঠিক ঠাক তাপমাত্রার, এবং সুস্বাদু। ঠিক একইভাবে বসার চেয়ার আর শোয়ার বিছানাটা পরীক্ষা করতে গিয়েও দেখে বাবা ভালুকের চেয়ারটা বেশি বড়, আর বিছানাটা খুব শক্ত, মা-ভালুকের চেয়ারটা খুব ছোট, আর বিছানাটা অনেক বেশি নরম। কিন্তু বাচ্চা-ভালুকের বিছানা আর চেয়ার তার খাবারের মতোই নিখুঁত – চেয়ারটা মাপমত, মানে না বড় না ছোট, আর বিছানাটা না-নরম-না-শক্ত, বড়ই আরামের। অর্থাৎ বাচ্চা-ভালুকের জিনিসগুলো একদম গোল্ডিলক্সের মনমতো করেই যেন তৈরি; আর গোল্ডিলক্সের পছন্দ সেটাই।
অনেক দার্শনিক বলেন, আমাদের মহাবিশ্বটাও নাকি ঠিক গোল্ডিলক্সের মতো আমাদের জন্য ‘জাস্ট রাইট’। আর এটি এমনি এমনি হয়নি, এর পেছনে কোন বুদ্ধিদীপ্ত সত্ত্বার সূক্ষ পরিকল্পনা এবং ডিজাইনের আলামত আছে। মাইকেল বিহে, ঊইলিয়াম ডেম্বস্কি, জর্জ এলিস, জন ডি. ব্যরো এবং ফ্রাঙ্ক জে. টিপলার প্রমুখ এ ধারণাগুলোর ধারক এবং সমর্থক। এঁদের যুক্তি হল, আমাদের বিশ্বব্রক্ষ্মান্ড এমন কিছু চলক বা ভ্যারিয়েবলের সূক্ষ্ণ সমন্বয়ের (ফাইন টিউনিং) সাহায্যে তৈরী হয়েছে যে এর একচুল হের ফের হলে আর আমাদের এ পৃথিবীতে কখনই প্রাণ সৃষ্টি হত না। তাঁদের বক্তব্য হল, আমাদের মহাবিশ্বে গ্র্যাভিটেশনাল অথবা কসমলজিকাল ধ্রুবকগুলোর মান এমন কেন, কিংবা মহাবিশ্বের চেহারাটাই বা এমন কেন হয়েছে তার উত্তর পেতে হলে ব্যাখ্যা খুঁজতে হবে পৃথিবীতে প্রাণ এবং মানুষের উপস্থিতির দিকে তাকিয়ে। পৃথিবীতে প্রাণ সৃষ্টির জন্য সর্বোপরি মানুষের আবির্ভাবের জন্য এই মৌলিক ধ্রুবক আর চলকগুলোর মান ঠিক এমনই হওয়া দরকার ছিল – সে জন্যই ওগুলো ওরকম। দৈবক্রমে ওগুলো ঘটে নি, ররং এর পেছনে হয়ত এক বুদ্ধিদীপ্ত সত্ত্বার একটি সুস্পষ্ট উদ্দেশ্য রয়েছে। খ্রীষ্ট ধর্মে দীক্ষিত রক্ষণশীল পদার্থবিজ্ঞানী হিউ রস, যিনি মনে করেন বিগ ব্যাং তত্ত্বের জনক হচ্ছে বাইবেল – তিনি তার ১৯৯৩ সালে প্রকাশিত ‘দ্য ক্রিয়েটর এণ্ড দি কসমস’ নামক এক ছদ্মবিজ্ঞান্ময় গ্রন্থে দাবী করেছেন মহাজগতের প্রায় ছাব্বিশটি প্যারামিটার নাকি সূক্ষ্ণভাবে সমন্বিত, একচুল এদিক ওদিক হলে আমাদের এই পৃথিবীতে প্রাণের বিকাশ ঘটতো না, আমাদের অস্তিত্ব নিয়ে এরকম জ্ঞানগর্ভ আলোচনার জন্য কাউকে খুঁজে পাওয়া যেত না। আর হিউ রসের মতে এটি যীশু খ্রীস্টে বিশ্বাসী হবার জন্য ‘বাস্তব প্রমাণ’।
মূলধারার বিজ্ঞানীরা অবশ্য হিউরস কথিত ছাব্বিশটি প্যারামিটারকে মোটেই গুরুত্ব দিয়ে গ্রহণ করেন না; তারা এটিকে বরং রক্ষণশীল প্রোপাগাণ্ডাই মনে করেন। তারপরেও অনেকে বলেন, ছাব্বিশটি না হোক, অন্ততঃ ছয়টি প্যারামিটার আছে যেগুলো মহাবিশ্বের বুকে আমাদের অস্তিত্বের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ । বিখ্যাত জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানী এবং কেম্ব্রিজের রয়েল সসাইটির রিসার্চ প্রফেসর মার্টিন রীস ২০০০ সালে একটি বই লিখেছেন এ নিয়ে -‘কেবল ছয়টি সংখ্যা’ (Just Six Numbers) শিরোনামে[5]। মার্টিন রীসের বই এবং অন্যান্য প্রামাণিক গবেষণাপত্র থেকে হদিস পাওয়া যে প্যারামিটারগুলোকে সূক্ষ্ণসমন্বয়ের জন্য জরুরী বলে মনে করা হয় সেগুলো হল –
প্যারামিটার | সর্বোচ্চ বিচ্যুতি |
ইলেক্ট্রন ও প্রটোনের অনুপাত | ১০৩৭ ভাগের ১ ভাগ |
তড়িচ্চুম্বকীয় বল এবং মাধ্যাকর্ষণ বলের অনুপাত | ১০৪০ ভাগের ১ ভাগ |
মহাবিশ্বের প্রসারণের হার | ১০৫৫ ভাগের ১ ভাগ |
মহাবিশ্বের ঘনত্ব | ১০৫৯ ভাগের ১ ভাগ |
মহাজাগতিক ধ্রুবক | ১০১২০ ভাগের ১ ভাগ |
এর বাইরে জাগতিক মাত্রার সংখ্যা ৩ হওয়াটাও এক ধরণের সূক্ষ্ণ সমন্বয় বলে অধ্যাপক রীস মনে করেন।
সংশয়বাদী পদার্থবিজ্ঞানীরা অবশ্য বহুভাবেই দেখিয়েছেন যে, এই ছয়টি প্যারামিটারের এ ধরণের মান গ্রহণ করার পেছনে কোন সূক্ষ সমন্বয় নেই,বরং জানা পদার্থবিজ্ঞানের জ্ঞানের সাহায্যেই এর এগুলোর গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা দেয়া সম্ভব[6]।
এ নিয়ে কিছু আলোচনা করা যাক। আমরা সবাই জানি নিউটনের মহাকর্ষ সূত্রে একটি ধ্রুবক আছে, যাকে আমরা বলি মহাকর্ষ ধ্রুবক, G । নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র থেকে দেখা যায় যে দুটি বস্তুকণার মধ্যে আকর্ষণ বলের পরিমাণ নির্ধারিত হবে ঐ মহাধ্রুবকের সংখ্যাবাচক মান দ্বারা। যদি ধ্রুবকটির মান এখন যা আছে তা না হয়ে অন্যরকম হত তাহলে দুটি কণিকার মধ্যে আকর্ষণ বলের পরিমাণও বদলে যেত। সাদা চোখে ব্যাপারটি সামান্য মনে হতে পারে। আকর্ষণ বলের তারতম্য ঘটলে এমন কি এসে যায়। কিন্তু বিজ্ঞানীদের কাছে এটি সামান্য নয়- এর একটি সুদূর প্রসারী প্রভাব পড়বে আমাদের বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের উপর। তাঁরা বলেন যে ঐ মহাকর্ষ ধ্রুবকের বর্তমান মান আসলে আমাদের পরিচিত মহাবিশ্বের প্রকৃতি নির্ধারণ করেছে। ধ্রুবকটির মান একটু অন্যরকম হলে তারকাদের মধ্যে হাইড্রোজেনের পরিমাণ কমে গিয়ে হিলিয়াম উৎপাদনের মাত্রাকে বদলে দিত। হাইড্রোজেন-হিলিয়ামের পর্যাপ্ততা শুধু এই মহাকর্ষ ধ্রুবকের উপরই অবশ্য নয়, মহাকর্ষ ও দুর্বল নিউক্লিয় বলের মধ্যকার শক্তির ভারসাম্যের উপরও অনেকাংশে নির্ভরশীল। যেমন, তাঁরা দেখিয়েছেন যে দুর্বল নিউক্লিয় বলের শক্তি যদি সামান্য একটু বেশি হত, এই মহাবিশ্ব পুরোটাই অর্থাৎ শতকরা একশ ভাগ হাইড্রোজেন পরমাণুতে পূর্ণ থাকত, কারণ ডিউটোরিয়াম (এটি হাইড্রোজেন পরমাণুর মামাতো ভাই, যাকে বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলে ‘আইসোটোপ’) হিলিয়ামে পরিণত হবার আগেই সমস্ত নিউট্রন নিঃশেষ হয়ে যেত। আবার এর উল্টোটি ঘটলে, অর্থাৎ দুর্বল নিউক্লিয় বলের শক্তিমত্তা আর একটু কম হলে সারা মহাবিশ্বে কেবল থাকত শতকরা একশ ভাগ হিলিয়াম। কারণ সে ক্ষেত্রে নিউট্রন নিঃশেষিত না হয়ে তা উৎপন্ন প্রটোনের সাথে যুক্ত হয়ে হাইড্রোজেন তৈরীতে বাঁধা দিত। কাজেই এ ধরণের দুই চরম অবস্থার যে কোন একটি ঘটলে মহাবিশ্বে কোন নক্ষত্ররাজী তৈরি হওয়ার মত অবস্থা কখন সৃষ্টি হত না, ঘটত না আমাদের এই মলয়শীতলা ধরণীতে ‘কার্বন-ভিত্তিক’ প্রাণের নান্দনিক বিকাশ। আবার, বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেছেন যে ইলেকট্রনের ভর নিউট্রন ও প্রটোনের ভরের পার্থক্যের চেয়ে কিছুটা কম। তারা মনে করেন যে এর ফলে একটি মুক্ত নিউট্রন সহজেই প্রোটন, ইলেকট্রন ও প্রতি-নিউট্রিনোতে রূপান্তরিত হতে পেরেছে। যদি ইলেকট্রনের ভর সামান্য বেশি হত, নিউট্রন তাহলে সুস্থিত হয়ে যেত, আর সৃষ্টির প্রারম্ভে উৎপাদিত সকল প্রটোন ও ইলেকট্রন মিলে-মিশে নিউট্রনে পরিণত হত। এর ফলে যা ঘটত সেটি আমাদের জন্য খুব একটা সুখপ্রদ কিছু নয়। এমনতর পরিস্থিতিতে খুব কম পরিমাণ হাইড্রোজেন টিকে থাকত, আর তাহলে নক্ষত্রের জন্য পর্যাপ্ত জালানী অবশিষ্ট থাকত না। জন ডি. ব্যরো এবং ফ্রাঙ্ক জে. টিপলার এ ধরণের রহস্যময় নানা যোগাযোগ তুলে ধরে একটি বই লিখেছিলেন ১৯৮৬ সালে, নাম ‘The Anthropic Cosmological Principle’। তাঁদের বক্তব্য হল, আমাদের মহাবিশ্বে গ্র্যাভিটেশনাল কিংবা অন্য মহাজাগতিক ধ্রুবকসমূহের মান এমন কেন, কিংবা মহাবিশ্বের চেহারাটাই বা এমন কেন হয়েছে এর উত্তর পেতে হলে অনুসন্ধান করতে হবে পৃথিবীতে প্রাণ এবং মানুষের আবির্ভাবের মধ্যে। প্রাণের বিকাশ ও সর্বোপরি বুদ্ধিদীপ্ত মানুষের অভ্যুদয়ের জন্য এসব মৌলিক ধ্রুবকও পরিবর্ত্য রাশিগুলির মান ঠিক এমনই হওয়া অত্যাবশ্যক ছিল, আর সেজন্যই ধ্রুবকগুলির মান এ রকম হয়েছে। হঠাৎ করে বা দৈবক্রমে এটি ঘটে নি, বরং এর পেছনে বিধাতা পুরুষের একটি সুস্পষ্ট ইচ্ছা নিহিত ছিল।
চিত্র: অনেক বিজ্ঞানী বলেন খুব সীমিত পরিসরে (গোল্ডিলক্স এলাকা) জীবনের বিকাশ ঘটেছে; এমন কেন হয়েছে তার উত্তর পেতে হলে ব্যাখ্যা খুঁজতে হবে পৃথিবীতে প্রাণ এবং মানুষের উপস্থিতির দিকে তাকিয়ে।
মানুষকে সৃষ্টির কেন্দ্রে রেখে বিশ্বব্রক্ষ্মান্ডের নিয়ম-নীতিগুলোকে ব্যাখ্যা করবার এই যুক্তিকে বলা হয় ‘অ্যানথ্রোপিক আর্গুমেন্ট’ বা ‘নরত্ববাচক যুক্তি’। আমি আমার ‘আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী’ বইটির শেষ অধ্যায়ে এ সমস্ত যুক্তির কয়েকটি বৈজ্ঞানিক খণ্ডন উল্লেখ করেছি। যেমন, আমি আমার বইয়ে দেখিয়েছি মহাজাগতিক ধ্রুবক আর পরিবর্ত্য রাশিগুলির মান পরিবর্তন করে বিজ্ঞানীরা (যেমন, ভিক্টর স্টেঙ্গরের ’মাঙ্কি গড’ কম্পিউটার প্রোগ্রাম[7]) সিমুলেশন করে আমাদের মহাবিশ্বের মত আরও অসংখ্য মহাবিশ্ব তৈরি করতে পারেন, যেখানে প্রাণের উদ্ভবের মত পরিবেশের সৃষ্টি হতে পারে; এবং এ জন্য ‘ফাইন টিউনিংয়ের’ কোন প্রয়োজন নেই। এছাড়াও আমার বইয়ে আমি ফিজিকাল রিভিউ জার্নালে প্রকাশিত একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধের উল্লেখ করেছি যেখানে বিজ্ঞানী অ্যান্থনি অ্যাগুরি (Anthony Aguirre) স্বতন্ত্রভাবে দেখিয়েছেন মহাবিশ্বের ছয়টি প্যারামিটার বা পরিবর্ত্যরাশিগুলো বিভিন্নভাবে অদলবদল করে নীহারীকা, তারা এবং পরিশেষে কোন একটি গ্রহে বুদ্ধিদীপ্ত জীবন গঠনের উপযোগী পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব[8]। এখানে সেগুলো নিয়ে পুনর্বার আলোচনায় যাবার খুব বেশী ইচ্ছে নেই। এ প্রবন্ধে আমি দেখাবো যে, এতো ধরণের জটিলতায় ( এন্থনি এগুরি সহ বিভিন্ন বিজ্ঞানীদের সমাধান, যা আমি আমার আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী বইয়ে সমাধান হিসেবে হাজির করেছি) না গিয়েও মাল্টিভার্স তত্ত্বের মাধ্যমেও এই রহস্যময় ‘ফাইন টিউনিং’-এর আরো একটি সহজ সমাধান আমরা পেতে পারি।
চিত্র: মালটিভার্স হাইপোথিসিস অ্যান্থ্রোপিক এবং ফাইন টিউনিং আর্গুমেন্টগুলোর একটি সহজ সমাধান দেয়।
আমরা ইতোমধ্যেই জেনে গেছি সাদা মাঠা কথায় মাল্টিভার্স তত্ত্ব বলছে যে, হাজারো-লক্ষ-কোটি মহাবিশ্বের ভীরে আমাদের মহাবিশ্বও একটি। স্রেফ সম্ভাবনার নিরিখেই একটি মহাবিশ্বে চলকগুলোর মান এমনিতেই অমন সূক্ষভাবে সমন্বিত হতে পারে, অন্যগুলোতে হয়ত হয়নি। আমাদের মহাবিশ্বে চলকগুলো কোন একভাবে সমন্বিত হতে পেরেছে বলেই এতে প্রাণের উন্মেষ ঘটেছে; এতে এত আশ্চর্য হবার কিছু নেই! অধ্যাপক মার্টিন রীস সেটিই খুব চমৎকারভাবে একটি উপমার মাধ্যমে উল্লেখ করেছেন[9] :
‘অসংখ্য মহাবিশ্বের ভীরে আমাদের মহাবিশ্বও একটি। অন্য মহাবিশ্বে বিজ্ঞানের সূত্র আর চলকগুলো হয়ত একেবারেই অন্যরকম হবে।… কাজেই ঘড়ির কারিগরের সাদৃশ্য এখানে একেবারেই অচল। তার বদলে বরং আমাদের বিশ্বব্রক্ষ্মান্ডকে অনেকটা পরিত্যক্ত সেকেন্ড হ্যান্ড কাপড়ের দোকানের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। দোকানের মজুদ যদি বিশাল হয় তবে দোকানের কোন একটি জামা আপনার গায়ে ঠিকমত লেগে গেলে আপনি নিশ্চয় তাতে বিস্মিত হবেন না! ঠিক একইভাবে আমাদের মহাবিশ্ব যদি ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য মহাবিশ্বের একটি হয়ে থাকে, দোকানের একটি জামার মতই সূক্ষ-সমন্বয় দেখে আশ্চর্য হবার কিছু নেই’।
সম্প্রতি স্টিফেন হকিংও তার গ্র্যাণ্ড ডিজাইন বইয়ের ‘আপাত অলৌকিকতা’ অধ্যায়ে একই ধরণের মতামত ব্যক্ত করেছেন[10]। তিনি তার বইয়ে বলেন (গ্র্যান্ড ডিজাইন, পৃষ্ঠা ১৬৪)–
‘মহাবিশ্বের পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রগুলোর এতোসব যাবতীয় সূক্ষ-সমন্বয় দেখে অনেকেই ভাবতে বাধ্য হয়েছিলেন এটি বোধ হয় কোন গ্র্যাণ্ড ডিজাইনারের গ্র্যাণ্ড ডিজাইন। কিন্তু এটি কোন বৈজ্ঞানিক উত্তর হল না। আমরা বরং বৈজ্ঞানিকভাবে দেখেছি আমাদের এই মহাবিশ্ব অসংখ্য অগণিত মহাবিশ্বরই একটি – যার প্রতিটিতে কাজ করবে ভিন্ন ভিন্ন প্রাকৃতিক সূত্রাবলী। এই অনন্ত মহাবিশ্বের ধারণা সূক্ষ্ণ-সমন্বয়ের অলৌকিকতাকে ঠেকানোর উদ্দেশ্যে তৈরি হয়নি, বরং এটা ‘নো বাউন্ডারি কন্ডিশন’[11] এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানের অন্যান্য আধুনিক তত্ত্বেরই সফল অনুসিদ্ধান্ত।…ঠিক যেভাবে ডারউইন এবং ওয়ালেস ব্যাখ্যা করে দেখিয়েছিলেন – জীবজগতের আপাত অলৌকিক ডিজাইনের মতো ব্যাপারগুলো যেমনি উদ্ভুত হতে পারে কোন ঐশ্বরিক হস্তক্ষেপ ছাড়াই, ঠিক তেমনি অনন্ত মহাবিশ্বের ধারণা প্রাকৃতিক সূত্রগুলোর সূক্ষ্ণসমন্বয়কে ব্যাখ্যা করতে পারে কোন পরম করুণাময় কোন সত্ত্বার উপস্থিতি ছাড়াই’’।
অনন্ত মহাবিশ্বের ধারণা অনুযায়ী আমাদের মহাবিশ্ব যাকে এতদিন প্রকৃতির পুরো অংশ বলে ভেবে নেওয়া হত, আসলে হয়ত এটি এক বিশাল কোন মহাজাগতিক দানবের (অমনিভার্স) খুব ক্ষুদ্র অংশবিশেষ ছাড়া আর কিছু নয়। আমাদের অবস্থাটা এতোদিন ছিল সেই বহুল প্রচলিত ‘অন্ধের হস্তি দর্শন’ গল্পের অন্ধ লোকটির মত – হাতীর কান ছুঁয়েই যে ভেবে নিয়েছিলো ওইটাই বুঝি হাতীর পুরো দেহটা!
এখানেই কিন্তু গল্প শেষ নয়। এই মালটিভার্স থিওরীর বাই প্রোডাক্ট বা উপজাত হিসেবে আবার ইদানিং উঠে এসেছে আরো এক ডিগ্রী মজাদার তত্ত্ব – সমান্তরাল মহাবিশ্ব বা প্যারালাল ইউনিভার্স। মুহম্মদ জাফর ইকবালের একটি চমৎকার বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী আছে সমান্তরাল মহাবিশ্ব নিয়ে , নাম ইরন। বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর পাশাপাশি সমান্তরাল মহাবিশ্বের ধারণা বৈজ্ঞানিক গ্রন্থ এবং বৈজ্ঞানিক সাময়িকীগুলোতেও ঠাঁই করে নিয়েছে। যেমন, সমান্তরাল মহাবিশ্ব নিয়ে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভিড ডেটচস ১৯৯৭ সালে একটি বই লিখেছেন The Fabric of Reality: The Science of Parallel Universes – And Its Implications নামে। একই দৃষ্টিকোন থেকে পদার্থবিজ্ঞানী মিচিও কাকু ২০০৬ সালে বই লিখেছেন ‘সমান্তরাল বিশ্ব’ নামে[12] । ২০০৩ সালের মে মাসের সায়েন্টিফিক আমেরিকানের সঙ্খ্যায় ম্যাক্স টেগমার্ক Parallel Universes :pdf: নামের একটি প্রবন্ধ লেখেন[13]। লেখাটিতে টেগমার্ক তিনটি মডেলের সাহায্যে অত্যন্ত বিস্তৃত ও আকর্ষনীয় ভঙ্গিতে ‘প্যারালাল ইউনিভার্স’ এর ধারণাকে পাঠকদের মাঝে তুলে ধরেন । প্যারালাল ইউনিভার্সের তত্ত্ব বলছে যে, ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লক্ষ কোটি মহাবিশ্বের মধ্যে কোন কোনটি যে আকার, আয়তন আর বৈশিষ্ট্যে একদম ঠিক ঠিক আমাদের মহাবিশ্বের মতই হবে না, এমন তো কোন গ্যারান্টি নেই। পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রগুলোও সেই মহাবিশ্বে একই রকমভাবে কাজ করার কথা। ম্যাক্স টেগমার্ক আমাদের জানা গনিতের সম্ভাবনার নিরিখেই হিসেব করে দেখিয়েছেন যে, এই মহাবিশ্ব থেকে পায় (১০১০)২৮ মিটার দূরে আপনারই এক ‘আইডেন্টিকাল টুইন’ হয়ত কম্পিউটারের সামনে বসে এই লেখাটি পড়ছে, তা আপনি কোন দিন জানতেও পারবেন না!
চিত্র: বিজ্ঞানী ম্যাক্স টেগমার্ক আমাদের জানা গনিতের সম্ভাবনার নিরিখেই হিসেব করে দেখিয়েছেন যে, এই মহাবিশ্ব থেকে পায় (১০১০)১১৮ মিটার দূরে আমাদের মহাবিশ্বের মতোই অবিকল দেখতে সমান্তরাল একটি মহাবিশ্ব থাকতে পারে যেখানে আমাদের মহাবিশ্বের মতোই একই ধরণের প্রাকৃতিক সূত্র কাজ করছে, এমনকি সেখানে হয়ত আপনারই একজন নকল প্রতিরূপ কম্পিউটারের সামনে বসে এই লেখাটি পড়ছে, তা আপনি কোন দিন জানতেও পারবেন না!
বেশ বুঝতে পারছি মাল্টিভার্সের ধারণাই হয়ত পাঠকদের অনেকে হজম করতে পারছেন না, তার উপর আবার প্যারালাল ইনিভার্স, আইডেন্টিকাল টুইন – হেন তেন চলে আসায় নিশ্চয় মাথা তালগোল পাকিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু বিশ্বাস করুন, উপরের ধারণা, কিংবা তত্ত্বগুলো যতই আজগুবি মনে হোক না কেন ওগুলো নির্মাণ করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা পদার্থবিজ্ঞানের কোন নিয়ম নীতি লংঘন করেননি। তারপরেও সমান্তরাল মহাবিশ্ব এখনো সাই-ফাই, বড়জোর গাণিতিক সংখ্যাতত্ত্বের হিসেবের পর্যায়েই রয়েছে, তারচেয়ে প্রচলিত মাল্টিভার্সের ধারণাগুলো বরং অনেক বাস্তবতা হয়ে উঠছে সাম্প্রতিক সময়গুলোতে। কিন্তু সেখানে যাবার আগে আমাদের একটু অক্কামের ক্ষুর সম্বন্ধে দু’চার কথা জানা প্রয়োজন।
মাল্টিভার্সের ধারণা কি অক্কামের ক্ষুরের লংঘন?
দর্শনশাস্ত্রে ‘অক্কামের ক্ষুর’ নামে একটি সূত্র প্রচলিত আছে। এ নিয়ে আমি একটা পোস্ট লিখেছিলাম এখানে। সোজা বাংলায় এই সূত্রটি বলে – অনর্থক বাহুল্য সর্বদাই বর্জনীয়। আইডির সমর্থক অধ্যাপক জর্জ এলিস অক্কামের ক্ষুরকে ব্যবহার করেছেন মাল্টিভার্সের ধারণার বিরুদ্ধে, বলেছেন এই তত্ত্ব অক্কামের ক্ষুরের সুস্পষ্ট লংঘন। তাঁর যুক্তি হল, একটা মহাবিশ্ব দিয়েই যখন সমস্যা সমাধান করা যায়, হাজার কোটি মহাবিশ্ব টেনে এনে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা আসলে বাতুলতা মাত্র, অনর্থক অপচয়। কিন্তু এ যুক্তিও ধোপে টেকেনি। যেমন, কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ভিকটর স্টেঙ্গর তার ‘টাইমলেস রিয়ালিটি’ এবং ‘হ্যাজ সায়েন্স ফাউন্ড গড’ বইয়ে এই যুক্তি খন্ডন করে বলেন,
পদার্থবিজ্ঞানের সাম্প্রতিক তত্ত্বগুলোর কোনটাই অসংখ্য মহাবিশ্বের অস্তিত্বকে বাতিল করে দেয় না। বরং যেখানে লিন্ডের তত্ত্ব কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের মাধ্যমে অসংখ্য মহাবিশ্ব সৃষ্টির দিকেই ইঙ্গিত করছে, সেখানে কেউ যদি অযথা বাড়তি একটি প্রকল্প আরোপ করে বলেন আমাদের এই মহাবিশ্ব ছাড়া আর কোন মহাবিশ্ব নেই, কিংবা কখনই তৈরী হওয়া সম্ভবপর নয়, তবে সেটাই বরং হবে অক্কামের ক্ষুরের লংঘন।
অধ্যাপক স্টেঙ্গরের মতে, লিন্ডের গবেষণা থেকে বেরিয়ে আসা সমাধানের ভুল ধরিয়ে দিয়ে নিজের সজ্ঞাত ধারণাটি -‘একটি মহাবিশ্বই টিকে থাকতে পারবে’ – প্রামাণ করার দায়িত্ব থাকছে কিন্তু ওই দাবীদারদের ঘারেই -যারা একটিমাত্র মহাবিশ্বের ধারণায় আস্থাশীল । এখন পর্যন্ত কেউই সে ধরণের কোন ‘স্পেশাল নিয়ম’ হাজির করতে পারেননি যার মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে কেবল একটি মহাবিশ্বই শেষ পর্যন্ত টিকে থাকবে, অন্যগুলো বাতিল হয়ে যাবে।
বিজ্ঞানী ম্যাক্স টেগমার্কও তার সায়েন্টিফিক আমেরিকানের প্রবন্ধে অক্কামের ক্ষুরকে খণ্ডন করে লেখেন, একটিমাত্র মহাবিশ্বের চেয়ে অনন্ত মহাবিশ্বই বরং অপেক্ষাকৃত ‘সিম্পলার সলিউশন’ হাজির করেছে।তাই অনন্ত মহাবিশ্বের ধারণা অক্কামের ক্ষুরের কোন লংঘন নয়।
কানাডার প্রিমিয়ার ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক লি স্মোলিন একটু অন্যভাবে সমস্যাটা নিয়ে ভাবছিলেন। কেন আমাদের মহাবিশ্বই টিকে রইল, অন্যগুলো রইলোনা – এ প্রশ্নটির সমাধান দিতে গিয়ে তিনি বলেছেন, বায়োলজি বা জীববিদ্যা হয়ত এক্ষেত্রে আমাদের পথ দেখাতে পারে। জীববিজ্ঞানে এ ধরনের ঘটনার হাজারো উদাহরণ ছড়িয়ে আছে। কড মাছ মিলিয়ন মিলিয়ন ডিম পাড়ে, তার মধ্যে খুব কমই শেষ পর্যন্ত নিষিক্ত হয়, আর নিষিক্ত ডিম থেকে জন্ম নেয়া অধিকাংশ পোনাই আবার বিভিন্ন কারণে মারা যায়, কিংবা অন্য মাছদের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়, শেষ পর্যন্ত দেখা যায় খুব কম পোনাই টিকে থাকে আর তারপর পূর্ণাংগ মাছে পরিণত হতে পারে। বিজ্ঞানীরা হিসেব করে দেখিয়েছেন যে একটা কড মাছের ডিমের নিরানব্বই শতাংশই প্রথম মাসে কোন না কোন ভাবে ধ্বংস হয়ে যায়, আর বাকি যা বেঁচে থাকে তারও নব্বই ভাগ প্রথম বছরেই ধ্বংস হয়ে যায়। মানুষ সহ প্রতিটি স্তন্যপায়ী প্রাণীরই কোটি কোটি স্পার্মের প্রয়োজন হয় কেবল এটি নিশ্চিত করতে যে এদের মধ্যে একটি মাত্র স্পার্মই বিভিন্ন চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ডিম্বানুকে নিষিক্ত করবে আর শেষপর্যন্ত পরবর্তী প্রজন্মকে টিকিয়ে রাখবে। অর্থাৎ প্রকৃতি তুলনামুলকভাবে বেশী উপযুক্ত বৈশিষ্ট্যের অধিকারীদের টিকিয়ে রাখে। এ ব্যাপারটিকেই চলতি কথায় যোগ্যতমের বিজয় বা ‘সার্ভাইবাল অব ফিটেস্ট’ বলা হয়। ডারউইন প্রকৃতির এই নির্বাচন প্রক্রিয়ারই নাম দেন ‘প্রাকৃতিক নির্বাচন’ যার মাধ্যমে তিনি জীবজগতের বিবর্তনকে সার্থকভাবে ব্যাখ্যা করতে পেরেছিলেন।
লি স্মোলিন ভাবলেন, জীবজগতের বিবর্তনের নিয়মের মত ‘কিছু একটা’ সামগ্রিকভাবে মহাবিশ্বের বিবর্তনের জন্যও প্রযোজ্য হতে পারে কিনা। ইনফ্লেশনের ফলশ্রুতিতে মহাবিশ্বের ইতিহাসে যে অগুনতি সিঙ্গুলারিটি তৈরী হয়েছিলো, এমনও তো হতে পারে যে, এদের মধ্যে শেষ পর্যন্ত একটিমাত্রই টিকে রইল, যেভাবে মানবদেহে নিষেক ঘটানোর অভিপ্রায়ে মিলিয়ন শুক্রানুর মধ্যে টিকে রয় একটিমাত্র স্পার্ম বা শুক্রাণু। তাহলে কি যোগ্যতম শুক্রাণুর মত কোন এক যোগ্যতম অদ্বৈতবিন্দু থেকেই ‘প্রাকৃতিক নির্বাচনের’ মাধ্যমে জন্ম নিয়েছে আমাদের এই পরিচিত মহাবিশ্ব? কে জানে, হতেও তো পারে! তাই যদি হয়, তবে ‘ফাইন-টিউনিং’ আর ‘অ্যান্থ্রোপিক আর্গুমেন্ট’-এর জন্য অতিপ্রাকৃত স্বর্গীয় সমাধান খুঁজে আর লাভ নেই। কারণ ডারউইনীয় বিবর্তনবাদী ধারণা বলছে হয়ত এ প্রকারণগুলোই আমাদের মহাবিশ্বকে অন্যগুলো থেকে অধিকতর ‘যোগ্যতম’ হিসেবে আলাদা করে দিয়েছিলো! তাই এটি টিকে গেছে।
অনন্ত মহাবিশ্বের সমস্যা সমাধানে লি স্মোলিনের এই বিবর্তনবাদী দর্শন খুব আকর্ষনীয় সমাধান দিলেও এটি জ্যোতির্পদার্থবিদদের কাছ থেকে কখনই তেমন সমর্থন পায়নি। এর কারণ মুলতঃ দুটি। অধিকাংশ পদার্থবিদদের সবাই পদার্থবিদ্যার জানা নিয়ম নীতির মধ্যে থেকেই এই রহস্যের সমাধান চান- হঠাৎ করেই এক ভিন্ন ধরনের বৈজ্ঞানিক নিয়মের মাধ্যমে একধরনের ‘গোঁজামিল’ দেওয়া ব্যাখ্যা নয়; আর তাছাড়া লি স্মোলিন যে প্রাকৃতিক নির্বাচনের কথা বলছেন তার কোন গানিতিক মডেল উপহার দিতে পারেন নি যা পদার্থবিদদের কাছে গ্রহণযোগ্যতার এক অন্যতম পূর্বশর্ত।
আর তারচেয়েও বড় কথা হল বিজ্ঞানীরা মাল্টিভার্স বা অনন্ত মহাবিশ্বের পরীক্ষালব্ধ প্রমাণ পেতে শুরু করেছেন সম্প্রতি।
এলো মাল্টিভার্সের প্রথম পরীক্ষালব্ধ প্রমাণ
মাল্টিভার্সের ধারণা বিজ্ঞানীরা হাজির করার পর থেকেই একে বিভিন্ন সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছে। কিছুদিন আগ পর্যন্ত মাল্টিভাস নামের এই বিপ্লবাত্মক ধারণার প্রতি সমালোচনার তীর ছুঁড়ে বলা হত- এই অনন্ত মহাবিশ্বের ধারণা সঠিক নাকি ভুল – তা এই মুহূর্তে পরীক্ষা করে বলবার কোন উপায় নেই। কার্ল পপার ‘ফলসিফায়েবিলিটি’র যে বৈশিষ্ট্য বিজ্ঞানের সংজ্ঞা হিসেবে নির্ধারিত করে রেখেছেন, তার আওতায় কিন্তু মাল্টিভার্স পড়তো না বলে ভাবা হতো। সমালোচকরা বলতেন, গাণিতিক বিমূর্ততায় ঠাসা মাল্টিভার্স বা অনন্ত মহাবিশ্বের ধারণা যতটুকু না বাস্তবতার কাছাকাছি, তার চাইতে ঢের বেশী কাছাকাছি অধিপদার্থবিদ্যার (মেটা ফিজিক্স)। কাজেই এটি বিজ্ঞান হয় কি করে?
মাল্টিভার্সের সমর্থকরা ফলসিফায়াবিলিটি বা যাচাইযোগ্যতার খুব ভাল জবাব দিতে না পারলেও সে সময় মিন মিন করে বলতেন, ওই অধিপদার্থবিদ্যা আর পদার্থবিদ্যার মাঝখানের সীমারেখাটা যতই দিন যাচ্ছে ততই ছোট হয়ে আসছে। অতীতে আমরা দেখেছি পর্যবেক্ষনবিরোধী বহু তত্ত্বই – যেমন গোলাকার পৃথিবীর ধারণা, অদৃশ্য বিদ্যুৎ-চুম্বকীয় ক্ষেত্র, উচ্চ গতিতে ভ্রমণকালে সময় শ্লথতা, কোয়ান্টাম উপরিপাতন, স্থান-কালের বক্রতা, কৃষ্ণগহবর ইত্যাদি সবকিছুই শেষ পর্যন্ত বিজ্ঞানের অংশ হয়ে গেছে। অনন্ত মহাবিশ্বকেই বা আমরা তালিকায় রাখতে পারবো না কেন?
এখন অবশ্য সময় পাল্টেছে। মাল্টিভার্সের সমর্থকদের আর মিন মিন করে জবাব দিতে হচ্ছে না। কারণ তত্ত্বকথার পাশাপাশি তারা পরীক্ষালব্ধ প্রমাণও হাজির করতে পারছেন। তাই মাল্টিভার্স আর ধারণা কিংবা ‘স্পেকুলেশন’-এর পর্যায়ে সীমাবদ্ধ নেই, বরং ক্রমশঃ হয়ে উঠেছে শক্তপোক্ত বিজ্ঞান!
বছর কয়েক আগে স্ফীতি তত্ত্বের জনক এলেন গুথ এবিসি নিউজ রিপোর্টারের কাছ থেকে অদ্ভুত এক ফোন কল পেলেন। রিপোর্টার তাকে প্রশ্ন করলেন, আচ্ছা, আমাদের মহাবিশ্ব যদি ইনফ্লেশনের মাধ্যমে সম্প্রসারিত বুদ্বুদের একটি হয়ে থাকে, তাহলে অন্য মহাবিশ্বের ( মহাবিশ্বগুলোকে বাতাসে ভেসে বেরানো অসংখ্য সাবানের বুদ্বুদের মতো কল্পনা করুন) কোন একটির সাথে টক্কর লেগে ধ্বংস হয়ে যাবার সম্ভাবনা কতটুকু? গুথের হাতে তাৎক্ষণিক কোন হিসেব ছিলো না। তবে নিজের কাজের অভিজ্ঞতা থেকে এর একটি সম্ভাব্য উত্তর দিয়েছিলেন তিনি, এবং বলা বাহুল্য, তার উত্তরটি তেমন কোন নাটকীয় কিছু ছিলো না। কিন্তু এবিসির অনুষ্ঠান শেষ হবার পর গুথ প্রশ্নটি নিয়ে খুব গুরুত্ব দিয়ে ভাবা শুরু করলেন। সত্যিই তো এরকম টক্কর লাগলে কী হবে? সেটা কি আমাদের মহাবিশ্বের অন্তিম পরিণতি নিয়ে আসবে? আমাদের পর্যবেক্ষণে কী সেটা ধরা পড়বে? তিনি ব্যাপারটি সমাধানের জন্য তার দুই দিকপাল বন্ধু আলেকজান্ডার ভিলেঙ্কিন এবং জমি গ্যারিগার সাথে মিলে এক গবেষণাদল তৈরি করলেন[14]।
তারা হিসেব করে দেখলেন এধরণের সংঘর্ষ হবার এবং সেই সংঘর্ষে আমাদের মহাবিশ্ব ধ্বংস হয়ে যাবার সম্ভাবনা খুবই কম। কিন্তু ধ্বংস না হলেও ছোটখাট ঠোকাঠুকি কি হতে পারে, যাতে মহাবিশ্বের জীবন সংশয় হয়তো ঘটবে না, কিন্তু মহাবিশ্বের গায়ে তৈরি করবে বেদনার রক্তিম কিছু ক্ষত?
এই ব্যাপারটিই বেরিয়ে এলো লণ্ডনের ইউনিভার্সিটি কলেজের অধ্যাপক স্টিফেন ফিনী আর তার দলবলের অনুসন্ধানী গবেষণা থেকে।তারা জানতেন, যে এ ধরণের ‘ক্ষত’ আবিস্কার করার একমাত্র জায়গা হচ্ছে নাসার উইলকিনসন মাইক্রোওয়েভ এনিসোট্রপি প্রোব ডেটা যাকে প্রচলিতভাবে অভিহিত করা হয় WMAP ডেটা হিসেবে।জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা মহাজাগতিক পশ্চাৎপট বিবিরণ পরিমাপের জন্য এই WMAP ডেটা ব্যবহার করে থাকেন। মহাবিস্ফোরণের পর মহাবিশ্ব প্রসারণের ফলে ধীরে ধীরে যে শীতল হয়ে পরম শূন্যের প্রায় ৩ ডিগ্রী উপরে এসে পৌঁছেছে, সেটা এই WMAP ডেটায় ধরা পড়েছিল, এবং এটিই ছিলো মহাবিস্ফোরণ বা বিগব্যাং-এর প্রথম পরীক্ষালব্ধ প্রমাণ, এর জন্য পেনজিয়াস এবং উইলসন একসময় নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। সেই WMAP ডেটাকে এখন গুপ্ত পদার্থ ও গুপ্ত শক্তি সনাক্তকরণ, মহাবিশ্বের স্ফিতির নিখুঁত হার নির্ণয় সহ বহু গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। সম্প্রতি নাসা তার বিগত সাত বছরের WMAP ফলাফল প্রকাশ করেছে। সেই ফলাফলের উপরেই চোখ রাখলেন স্টিফেন ফিনী। তারা জানতেন অতীতে যদি মহাজাগতিক বুদ্বুদ্বীয় কোন সংঘর্ষ ঘটে থাকে, তবে তার প্রভাব WMAP ডেটায় পড়বে। কারণ এ ধরণের সংঘর্ষ ‘আন্তঃ বুদ্বুদীয় মহাজগতে এক ধরণের বিষমসাত্ত্বিক বিকৃতি (inhomogeneities in the inner-bubble cosmology) তৈরি করবে, যা মহাজাগতিক পশ্চাৎপট বিবিরণে ধরা পড়তে বাধ্য। স্টিফেন ফিনী এবং তার দল ‘মডুলার এজ ডিটেকশন এলগোরিদমের’ সাহায্যে WMAP ডেটায় সংঘর্ষের ক্ষতস্থানগুলো নির্ণয় করলেন। তারা দেখলেন অন্ততঃ চারটি জায়গায় এরকম সংঘর্ষের আলামত পাওয়া যাচ্ছে; তার মানে অতীতে অন্ততঃ চার বার আমাদের মহাবিশ্বের সাথে খুব ছোট স্কেলে হলেও অন্য মহাবিশ্বের বুদ্বুদীয় সংঘর্ষ ঘটেছিলো। স্টিফেন ফিনীর সম্পূর্ণ পেপারটি মুক্তমনা পাঠকদের জন্য দেয়া হল এখানে :pdf: (কৃতজ্ঞতা সংসপ্তক)।
চিত্রঃ মহাজাগতিক পশ্চাৎপট বিবিরণের উপাত্তে খুঁজে পাওয়া চক্রাকার ক্ষত – বুদ্বুদীয় সংঘর্ষ এর আলামত।স্টিফেন ফিনীর গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফলে জানা যাচ্ছে, অতীতে অন্ততঃ চার বার আমাদের মহাবিশ্বের সাথে খুব ছোট স্কেলে অন্য মহাবিশ্বের বুদ্বুদীয় সংঘর্ষ ঘটেছিলো। আমাদের মহাবিশ্বের বাইরেও অন্য অনেক মহাবিশ্ব থাকার প্রথম পরোক্ষ প্রমাণ বলে একে অভিহিত করা হচ্ছে।
একটি ব্যাপার বলা প্রয়োজন। বিজ্ঞানীরা এখনো কিন্তু এই ফলফলকে সংশয়ের চোখেই দেখছেন, এবং স্টিফেন ফিনী নিজেও এটি ভাল করে জানেন। তিনি নিজেই সেটি স্বীকার করে বলেন,
মহাজাগতিক বিকিরণের মতো এতো বড় উপাত্ত-সমাবেশে এ ধরণের ছোটখাট ভিন্নতা থাকাটা আর সেটা খুঁজে পাওয়াটা অস্বাভিক কিছু নয়। নিঃসন্দেহে আমাদের এই গবেষণা এ ব্যাপারে প্রথম পরীক্ষামুলক পদক্ষেপ, কিন্তু এখনো নিশ্চিত কোন প্রমাণ নয় যদিও।
আমাদেরও কিন্তু এই ব্যাপারটি মাথায় রাখতে হবে কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসার আগে। তারপরেও আমি বলব, যদিও আমার মতে স্টিফেন ফিনীর এই পরীক্ষার ফলাফল এখনো চূড়ান্ত নিশ্চয়তাপ্রদানকারী কিছু নয়, কিন্তু নিঃসন্দেহে বিজ্ঞানের জগতে এটি একটি আশাবাদী ঘটনা। আর দর্শনগত দিক থেকে তো ব্যাপারটির গুরুত্ব অসীম। মাল্টিভার্স হাইপথিসিস – যাকে অনেকেই এতোদিন ভ্রু কুঁচকে বিজ্ঞানের বাইরে ঠেলে দিতে চাইতেন, এ ধরণের পরীক্ষা-নিরীক্ষাগুলো একে বিজ্ঞানের জগতে প্রথমবারের মতো পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করে দিলো শক্তিশালীভাবে। এই ধরণের গবেষণা থেকেই বেরিয়ে আসছে যে আমাদের মহাবিশ্বের বাইরেও অসংখ্য মহাবিশ্ব হয়তো ছড়িয়ে আছে, যেগুলোর কোনটির সাথে হয়তো আমাদের মহাবিশ্বের সংঘর্ষ সংগঠিত হয়েছিলো সুদূর অতীতে। আর বিজ্ঞানীরা কেবল এই ফলাফলের উপরেই নির্ভর করে বসে নেই, আমরা জানি, তারা ভবিষ্যতে আরো অনেক পরীক্ষার ব্যবস্থা করবেন এই অনন্ত মহাবিশ্বের ধারণাকে সঠিকভাবে পরীক্ষা করার জন্য। এমনি একটি ভবিষ্যৎ পরীক্ষা হচ্ছে লিসা স্যাটেলাইটের (Laser Interferometer Space Antenna, সংক্ষেপে LISA) উৎক্ষেপণ। বিজ্ঞানীরা এর জন্য এখনই উদগ্রীব হয়ে বসে রয়েছেন। ২০১১ সালের জন্য তফসিল করে রাখা লিসা আমাদের শক-তরংগ শনাক্তকরণের মাধ্যমে আরো নিশ্চিতভাবে জানাতে পারবে সত্যিই বহির্বিশ্বে আরো মহাবিশ্বের অস্তিত্ব রয়েছে কিনা, আর সত্যই অতীতে আমাদের সাথে লেগেছিলো নাকি কারো বুদ্বুদীয় টক্কর। যদি লিসা আমাদের অনুমানকে সঠিক প্রমাণ করতে পারে, তবে জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানের পাঠ্যপুস্তকগুলোকে নতুনভাবে ঢেলে সাজাতে হবে, কারণ এই ফলাফল দিবে অনন্ত মহাবিশ্বের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি, যা সূচনা করবে আরেকটি কোপার্নিকাসীয় বিপ্লবের।
লাস্যময়ী লিসার জন্য অপেক্ষাকালীন সময়গুলোতে আসুন আমরা মাল্টিভার্স নিয়ে মিচিও কাকুর চমৎকার একটি আলোচনা শুনি ইউটিউব থেকে।
httpv://www.youtube.com/watch?v=39qmbl7mpJQ
তথ্যসূত্র
[1] অভিজিৎ রায়, আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী, অঙ্কুর প্রকাশনী, ২০০৫ (পুনর্মূদ্রণ ২০০৬)
[2] বিস্তারিত তথ্যের জন্য The Inflationary Universe: The Quest for a New Theory of Cosmic Origins, Alan H. Guth, Perseus Books Group (March 1, 1998) দেখুন।
[3] Stephen W. Hawking, Black Holes and Baby Universes and Other Essays, Bantam; First Bantam trade paper edition edition, 1994
[4] Sean Carroll, From Eternity to Here: The Quest for the Ultimate Theory of Time, Plume, 2010
[5] Martin Rees, Just Six Numbers: The Deep Forces That Shape The Universe, Basic Books, 2000
[6] এ প্রসঙ্গে আরো দেখুন অধ্যাপক ভিকটর স্টেঙ্গরের ‘দ্য নিউ এথিজম’ (The New Atheism: Taking a Stand for Science and Reason, Prometheus Books, 2009) বইয়ের ‘দ্য ডিজাইন ডিলুশন’ অধ্যায়টি।
[7] Victor Stenger, “Natural Explanations for the Anthropic Coincidences.” Philo 3(2000): 50-67.
[8] Anthony Aguirre, “The Cold Big-Bang Cosmology as a Counter-example to Several Anthropic Arguments”, Journal of Physical Rev, D64:083508, 2001.
[9] Martin J. Rees, Other Universes – A Scientific Perspective,
[10] Stephen Hawking, The Grand Design, Bantam;, 2010
[11] এখানে স্টিফেন হকিং তার ১৯৮৩ সালের হকিং-হার্টলে মডেলের নো-বাউন্ডারি কন্ডিশনের কথা উল্লেখ করেছেন, যে মডেলে তারা সিংগুলারিটিকে বাতিল করেছেন এবং দেখিয়েছেন কোয়ান্টাম প্রভাব গোনায় ধরলে মহাবিশ্বের কোন আদি বিন্দু থাকার দরকার নেই।
[12] Michio Kaku, Parallel Worlds: A Journey Through Creation, Higher Dimensions, and the Future of the Cosmos, Anchor, 2006
[13] Max Tegmark, “Parallel Universes”, Scientific American, May 2003
[14] Zeeya Merali, Will Our Universe Collide With a Neighboring One?, Discover, October 2009 issue; published online November 4, 2009
[…] Main Source – Mukto Mona Blog […]
অভিজিত, আপনি বেঁচে থাকতে আপনার লেখা পড়ার মতো সদজ্ঞান আমার হয় নি। আপনি মরে যাওয়ার চার বছর পর আপনার লেখা পড়ছি… আর গভীর থেকে গভীরতর ভাবে বিস্মিত হচ্ছি। আপনার হাতে ধরা জ্ঞানের হারিকেনটা একটু বেশী আলো দিচ্ছিল, তার জন্য আপনাকে জীবন দিয়ে দিতে হল!! সক্রেটিসদের কি এভাবেই যুগে যুগেই বিষের পেয়ালা মুখে তুলে মরে যেতে হবে!! এই এতোকাল পরে এসেও!!
খুব ভাল লাগল দাদা, কিন্ত বেদে তো অনন্ত কোটি ব্রহ্মান্ডের কথা বলা আছে বহু পূর্বেই।
খুব ভালো লেখা………….ভালো লাগলো পড়ে………। (Y) (F) :clap
আজব তো! গত ডিসেম্বরে লেখা এইরকম গুরুত্বপূর্ণ একটা প্রবন্ধ এতদিনে আমার চোখে পড়লো!!!!!! (নেটে এতই অনিয়মিত হয়ে গেছি !!!)
অসাধারণ এবং কাজের একটা প্রবন্ধ। আরো বারকয়েক পড়তে হবে। কমেন্টগুলোও গুরুত্বপূর্ণ। অসংখ্য ধন্যবাদ।
এই বিষয়ে নতুন আপডেট থাকলে জানাবেন প্লিজ।
পোস্ট করার পরপরই একবার পড়েছি, এর পর মন্তব্য-প্রতিমন্তব্যসহ এখন আরেকবার পড়লাম। এ সুযোগে চমৎকার লেখাটার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে রাখি। কবে যে এমন লিখতে শিখবো! 🙁
আর সব পড়ে মন্তব্য একটাই, মনে হচ্ছে এবার আইন নিজের হাতে তুলে নিতেই হবে। এসব হিসাব-কিতাবের কিছু নিজ হাতে করে না দেখলে কেমন যেন ঝাপসা লাগছে সব। এক ধরণের অস্বস্তিমেশানো কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছে। বেশ তীব্র…
ভয়াবহ! :guli:
চরম! :-Y
এটা পড়ার আগে আমি কেন আরো দশ হাজার বছর পড়ে জন্ম নিলাম না? :-X
@আরাফাত,
আরো দশ হাজার বছর পড়ে জন্ম নিলে কি হত? দেখতেন এই মাল্টিভার্সগুলো আবার কোন এক মেগাভার্সের অংশ। গ্যাঞ্জামের শ্যাষ নাই। 😀
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
একটা ব্যপার পরিস্কার হতে চাই।
)
এটা কি সম্পসারনশীল বুদ্বুদ নাকি সম্প্রসিরিত বুদ্বুদ?? বিগবংটা হয় কখন?যখন মাদার মাহাবিশ্ব এবং বেবি মহাবিশ্ব সংযুক্ত অবস্থায় থাকে তখন? নাকি বিচ্ছিন্ন হবার পরে?
যদি বিচ্ছিন্ন হবার পরে বিগবং হয়ে থাকে। তবে বিগবং এর আগে একটি মহাবিশ্বের অস্তিত্ব ছিল বলে মনে হয় না? :-X
ডি-সিটার স্পেস সম্পর্কে জানার আগ্রহ আছে কিন্তু ইংরেজীবই গুলো ভাল বুঝিনা।
ডি-সিটার স্পেস থেকে বাবল তৈরি হয় কিন্তু ডি-সিটার স্পেস নিজে কিসে রুপান্তরিত হয়?
আপনি এসবও পড়েন? আমার ধারনা ছিল বাংলা বই পড়ার খুব একটা সময় পান না।
@আসরাফ,
আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে অনেক কিছু বলতে হবে। একটু পরেই বেড়িয়ে পড়ছি, থাকব না শহরে কয়েকদিন। তাই শুধু এটুকু বলব, সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, বিগ ব্যাং দিয়ে মহাবিশ্বের শুরু নয়, বরং মহাবিশ্বের শুরু হয়েছে ইনফ্লেশন দিয়ে। অর্থাৎ, বিগব্যাং এর পরে ইনফ্লেশনের মাধ্যমে মহাবিশ্ব তৈরী (যা কিছুদিন আগেও সত্যি বলে ভাবা হত) হয়নি, বরং ইনফ্লেশনের ফলশ্রুতিতেই কিন্তু বিগব্যাং হয়েছে, তারপর সৃষ্ট হয়েছে আমাদের মহাবিশ্ব। আদ্রে লিন্ডের কথায় :
‘Inflation is not a part of big-bang theory as we thought 15 years ago. On the contrary, the big-bang is the part of inflationary model’
আরও মজার ব্যাপার হল, ওই ইনফ্লেশনের ফলে শুধু যে একবারই বিগব্যাং বা মহাবিস্ফোরণ ঘটেছে তা কিন্তু নয়, এরকম বিগ ব্যাং কিন্তু হাজার হাজার, কোটি কোটি এমনকি অসীম-সংখ্যকবার ঘটতে পারে; তৈরী হতে পারে অসংখ্য ‘পকেট মহাবিশ্ব’। আমরা সম্ভবতঃ এমনই একটি পকেট-মহাবিশ্বে অবস্থান করছি বাকিগুলোর অস্তিত্ব সম্বন্ধে জ্ঞাত না হয়ে। এখন পকেট মহাবিশ্ব তৈরি হতে পারে কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের ফলে একেবারে শুন্য থেকে কিংবা আগের কোন মহাবিশ্ব থেকে ‘শিশু’ মহাবিশ্ব হতে উদ্ভুত হতে পারে। আমি উপরে কেওটিক ইনফ্লেশনের যে ছবিটা দিয়েছি সেটা দেখুন, আর পাশাপাশি আদ্রে লিন্ডের The Self-Reproducing
Inflationary Universe প্রবন্ধটি পড়ে দেখতে পারেন।
আর হ্যা, জাফর ইকবালের প্রায় সব সায়েন্সফিকশনই পড়া হয়েছে, এখনো পড়ি।
ভাল থাকুন। নতুন বছরের শুভেচ্ছা।
@অভিজিৎ,
আজকে প্রথম আলো ওয়েব ভার্সনে পোপ শুন্য থেকে বিশ্ব সৃষ্টি নিয়ে একটি সংবাদ ছাপিয়েছে। সেখানে কেউ মন্তব্যে নীচের অংশটুকু বেনামে দিয়েছে যেটি “স্টিফেন হকিং-এর ঈশ্বরবিহীন মহাবিশ্ব!” থেকে পুরো নেয়া।
http://www.prothom-alo.com/detail/date/2011-01-08/news/121725
আমি মুক্তমনা পাঠকদের অনুরোধ করছি সময় পেলে প্রথম আলোর ঐ পাতায় যেয়ে শালীনভাবে কিছু লেখার জন্যে। আমি একটি ছোট মন্তব্য দিয়েছি, জানি না মডারেটর সেটি এলাউ করবে কিনা।
ধম্ম-বিজ্ঞানীরা খুব শিগি্গরিই বলবে- আরে, মাল্টিভাসের কথা তো কোরানের অমুক সুরার অমুক আয়াতেই আল্লাহপাক উল্লেখ করেছেন।
@মাহফুজ,
ধর্ম বিজ্ঞানীদের তো এটাই বৈশিষ্ট কোনো কিছু আবিষ্কার হয়ে যাবার পরই কেবল তারা কোরানের আয়াতে সেটা দেখতে পায়, তার আগে পায় না। :candle:
ভাইয়া, দারুন লেগেছে। এই কয়দিন আমি কেবল এই থ্রেডে আসছি, পড়ছি আর কমেন্ট দেখছি। সত্যি আমার মনে হচ্ছে, এই লেখায় প্রশ্ন করার মত জ্ঞান আমার মত অনেকরই কম আছে, তবে আগ্রহ কারোরই কম জাগেনি। আমার কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যা আর জোতির্বিজ্ঞানে জ্ঞান নাই। কিন্তু সামনে আসলে পড়ার লোভ সামলাতে পারিনা। লেখাটা সাইটে আসার পরই আমার মন ভালো হয়ে গেসিল, দেখার সাথে সাথে! আর একটা ইচ্ছা হয়ছিল, আমি নীল রোদ্দুরের সাথে দেখা করতে চাই। তারপর তারে আমার দুনিয়ায় রেখে আমি তার দুনিয়ায় চলে যাবো। মাল্টিভার্স বা এইধরণের আরো হট কেকের অপেক্ষায় থাকব।
মহাবিশ্ব একটা, এটা আসলেই বদ্ধ কুয়ার মত দম বন্ধ করা একটা ধারণা। যদি, সত্যি মাল্টিভার্স আছে, এটা প্রমানিত হয়, তাহলে আর কিছু হোক আর না হোক, এক মহাবিশ্বের মানসিক বন্দীত্ব থেকে মুক্তি পাবে আত্মা।
একটা ছোট্ট প্রশ্ন, এবং সেটা ক্লাসিকাল ফিজিক্সের। শক্তির নিত্যতা সূত্রের কি হবে?
@নীল রোদ্দুর,
আপনার মন্তব্য পেয়ে ভাল লাগলো। নীল রোদ্দুরের সাথে এমনি এমনি দেখা করতে পারবেন না। নীল সূর্যের কাছে আগে যেতে হবে। হয়তো হেথা নয়, হোথা নয়, অন্য কোন খানে। আপনার নাম নীল রোদ্দুর হওয়ায় তাও নীল সূর্যকে পাওয়ার আশা আছে। আপনার নাম রাত্রি হলে সূর্যকে কীভাবে পেতেন? 🙂
এবার শক্তির নিত্যতা নিয়ে প্রশ্নের জবাব দেই। জবাবটা একটু প্যাচানো। তারপরেও সাদামাঠা উদাহরণের মাধ্যমে দেয়ার চেষ্টা করি। হেলালকে বোধ হয় আগে দিয়েছিলাম অন্য কোন পোস্টে। এখানেও দিচ্ছি। সাদা চোখে মনে হতে পারে কোয়াণ্টাম ফ্লাকচুয়েশনের ফলে স্বতঃস্ফুর্তভাবে মহাবিশ্ব তৈরি হওয়াটা শক্তির নিত্যতার লঙ্ঘন, যদিও আসলে তা নয়। বিজ্ঞানীরা গণনা করে দেখেছেন যে, মহাবিশ্বের মোট শক্তির পরমাণ সব সময়ই শূন্য থাকে। শক্তির যোগ ফল শুন্য হলে এই পৃথিবী সূর্য, চেয়ার টেবল সহ হাজারো রকমের পদার্থ তাহলে আসলো কথা থেকে? বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, মহাবিশ্বের দৃশ্যমান জড়পদার্থগুলো তৈরি হয়েছে আসলে ধনাত্মক শক্তি থেকে, আর অন্যদিকে মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের রয়েছে ঋণাত্মক শক্তি। এই দুটো পরষ্পরকে নিষ্কৃয় করে দেয়। তাই, মহাবিশ্বের শক্তির এলজেব্রিক যোগফল হিসেব করলে সবসময় শুন্যই পাওয়া যায়। স্টিফেন হকিং তার ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম গ্রন্থে ব্যাপারটাকে ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে (A Brief History of Time, Bantam, paper back ed., পৃঃ ১৩৬) –
‘মহাবিশ্বে এই পরিমাণ জড়পদার্থ কেন রয়েছে তা মহাস্ফীতির ধারণা দিয়ে ব্যখ্যা করা যায়। মহাবিশ্বের যে সব অঞ্চল আমরা পর্যবেক্ষণ করতে পারি সেখানে রয়েছে দশ মিলিয়ন মিলিয়ন মিলিয়ন মিলিয়ন মিলিয়ন মিলিয়ন মিলিয়ন মিলিয়ন মিলিয়ন মিলিয়ন মিলিয়ন মিলিয়ন মিলিয়ন মিলিয়ন (অর্থাৎ ১ এর পিঠে আশিটি শূন্য = ১.০ x ১০^৮০) সংখ্যক জড়-কণিকা। কোত্থেকে এগুলো সব এলো? এর উত্তর হল কোয়ান্টাম তত্ত্ব অনুযায়ী শক্তি থেকে কণিকা ও তার প্রতি-কণিকা এই যুগ্ম আকারে কণিকা সৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু প্রশ্ন হল এই শক্তি এল কোত্থেকে? এরও উত্তর হল মহাবিশ্বের মোট শক্তির পরিমাণ হল শূন্য। মহাবিশ্বে জড় সৃষ্টি হয়েছে ধনাত্মক শক্তি থেকে। অবশ্য জড়পদার্থ মহাকর্ষণের দ্বারা নিজেকে পরিপূর্ণভাবে আকর্ষণ করছে। দুটি বস্তুখণ্ড যখন কাছাকাছি থাকে তখন তাদের শক্তির পরিমাণ যখন তারা অনেক দূরে থাকে তা থেকে কম। এর কারণ হল এদেরকে পৃথক করতে হলে যে মহাকর্ষীয় বল দ্বারা তারা পরস্পরের দিকে আকৃষ্ট হচ্ছে সেই বলের বিরুদ্ধে আপনাকে শক্তি ব্যয় করতে হবে। তাই এক অর্থে মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের রয়েছে ঋণাত্মক শক্তি। এমন একটি মহাবিশ্বের ক্ষেত্রে, যা মোটামুটি স্থানিক সুষম (approximately uniform in space), দেখান যেতে পারে যে এই ঋণাত্মক মহাকর্ষীয় শক্তি জড়ের প্রতিনিধিত্বকারী ধনাত্মক শক্তিকে নিখুঁতভাবে বিলুপ্ত করে দেয়। কাজেই মহাবিশ্বের মোট শক্তির পরিমাণ সব সময়ই শূন্য।’
এর মানে হচ্ছে, মহাবিশ্ব ‘সৃষ্টি’র জন্য বাইরে থেকে আলাদা কোন শক্তি আমদানী করার প্রয়োজন হয় নি। সহজ কথায়, ইনফ্লেশন ঘটাতে যদি শক্তির নীট ব্যয় যদি শূন্য হয়, তবে বাইরে থেকে কোন শক্তি আমদানী করার প্রয়োজন পড়ে না। অ্যালান গুথ এবং স্টেইনহার্ট নিউ ফিজিক্স জার্নালে (১৯৮৯) দেখিয়েছেন, ইনফ্লেশনের জন্য কোন তাপগতীয় কাজের (thermodynamic work) দরকার পড়েনি। আমি উপরে যা বললাম তা মূলধারার অধিকাংশ পদার্থবিদদেরই অভিমত।
এর মানে কি? সহজ সলভাবে এর মানে হচ্ছে, মহাবিশ্ব তৈরির ব্যাপারটা অনেকটা সালমান এফ রহমানের ব্যাং থেকে ঋণ নেয়ার মতোন। আপনার কাছ থেকে আমি টাকা নিলে আমি যেহেতু খুব ভাল মানুষ – হয়তো কাল পরশুর মধ্যেই দিয়ে দিব 😀 । কিন্তু ঋণখেলাপি সালমান এফ রহমান সাহেব টাকা ধার নিলে ব্যাংকে প্রায় অনন্ত কাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় বুক কিপিং এর ব্যালেন্স মিলানোর জন্য, তার পরেও ব্যাংক ধুকে ধুকে আশা করে যায় – হিসেব কোন না কোন দিন মিলবেই! 🙂 ঠিক সেরকমই একটা ব্যাপার হয় ফ্লাকচুয়েশনের মাধ্যমে মহাবিশ্ব উদ্ভবের ক্ষেত্রে ক্ষেত্রে। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন প্রায় ভরশূন্য (আসলে ১০^-৬৫ গ্রাম) অবস্থা থেকে ফ্লাকচুয়েশনের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করলে বুক কিপিং এর হিসেব মিলানোর আগ পর্যন্ত মহাবিশ্ব প্রায় অনন্তকাল (অন্ততঃ ১৪ বিলিয়ন বছর তো বটেই) টিকে থাকতে পারে। ব্যাপারটিকে একেবারে আক্ষরিকভাবে না নিলেও পুরো ব্যাপারটা ঘুরে ফিরে প্রায় একই। ইনফ্লেশন তত্ত্বের জনক এম আই টির অধ্যাপক এলেন গুথের একটি চমৎকার বই আছে এ নিয়ে ‘ইনফ্লেশনারি ইউনিভার্স’। সংগ্রহ করে পড়ে খতে পারেন।
এ ছাড়া আরো একটি ব্যাপার হতে পারে (যদিও এটা নিশ্চিত কিছু নয়), হয়তো শক্তির নিত্যতার সূত্র সার্বিকভাবে ‘ফান্ডামেন্টাল’ কোন সূত্র নয়। এরকম অনেক সূত্রের কথাই আমরা জানি যেগুলো আপাত দৃষ্টিতে সূত্র মনে হলেও আসলে ফান্ডামেন্টাল নয়। যেমন, আমরা জানি নিউটনের মাধ্যাকর্ষণসূত্র মাটিতে আপেলের পতনকে ব্যাখ্যা করতে পারলেও অন্তিম কিছু পরিস্থিতিতে ঠিকমতো কাজ করে না, যেমন ব্ল্যাক হোলের কাছাকাছি, কিংবা আলোর বেগের সমান বা তুলনীয় কোন বেগের সময় ইত্যাদি ক্ষেত্রে। আমরা তখন শরণাপন্ন হই আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব -এর। কিন্তু আবার দেখুন, আইনস্টাইনের তত্ত্বও প্লাঙ্ক স্কেলের চেয়ে ছোট জায়গায় কাজ করে না, আমরা শরণাপন্ন হই, কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যার কিছু সূত্রের। তাই সূত্রগুলো হয়তো ফান্ডামেন্টাল কিছু নয়, যা আমাদের মডেলের রেস্ট্রিকশন তৈরি করছে, পদার্থের নয়। এরকম আরো উদাহরণ দিতে পারব। যেমন, কনজারভেশন অব লিনিয়ার মোমেন্টাম নামের সূত্রের কথা যে আমরা জানি, তা আর কনজার্ভড থাকে না যখন স্পেস ট্রান্সলেশন সিমেট্রি ভেঙ্গে যায়। ঠিক একইভাবে এংগুলার মোমেন্টামও যে কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে লংঘিত হয়, কোয়ান্টাম টানেলিং এর সময় নিউটোনিয়ান ব্যারিয়ার কাজ করে না, ইত্যাদি। শক্তির নিত্যতাও কি সেরকম কোন ‘সূত্র’ যা কেবল আমাদের মহাবিশ্বের জন্য আপাত দৃষ্টিতে ‘ফাণ্ডামেন্টাল’ মনে হচ্ছে, কিন্তু ‘অনন্ত মহাবিশ্ব’কে গোনায় ধরলে ফাণ্ডামেন্টাল কিছু নয়, সেটা হয়তো লংঘিত হয়? এর উত্তর আমরা এখনো জানি না, হয়ত ভবিষ্যতে জানবো।
@অভিজিৎ,
আপনি যেভাবে নিশ্চিত উপসংহার টানেন , তাতে মাঝে মাঝেই আমার সন্দেহ হয় , এটা কি আপনার মন্তব্য?
@ফারুক,
আমার নামে যখন মন্তব্য প্রকাশিত হয়েছে, তখন ওটা আমার মন্তব্যই। আ ফিশ ডিড নট রাইট দিস এসে! 🙂
ভাই ফুল নিয়ে বসে আছি। তাড়াতাড়ি লেখা ছারেন আর ফুল নেন। ওয়াইনই দিতাম কিন্তু একটু ব্যয়বহুল হয়ে যায়।
>>>
( আমি বিনায়ক সেন সংক্রান্ত নানান কাজে ব্যাস্ত থাকায় সময় দিতে পারিনি এই থ্রেডে। এটা খুবই ভাল, অভিজিত বিজ্ঞানের নানান দিক নিয়ে বাংলাতে লিখছে-বাংলা সাহিত্যে আজকাল বিজ্ঞান সাহিত্য প্রায় বিরল।)
আমি যদ্দুর জানি এটাকে পারাল্যাল ইউনিভার্স বলে না। প্যারালাল ইউনিভার্সের কনসেপ্টটা হিলবার্ট স্পেস এর একধরনের মেটাফিজিক্যাল ব্যাখ্যা। অর্থাৎ একই ইলেকট্রন একই সাথে যেভাবে অসংখ্য স্টেটে স্পেসে থাকে, প্রতিটা স্পেসেই একটি আলাদা মহাবিশ্ব হতে পারে-এরকম অসংখ্য পারালাল মহাবিশ্ব থাকবে যেখানে ইভেন্ট হবে “কমপ্লিমেটারী”-আইডেন্টিক্যাল না।
আমার মনে হয় প্রবন্ধের শুরুতে একটা প্রিআম্বল টাইপের দেওয়া উচিত ছিল। মাল্টিভার্সের যে চারটে ট্যাক্সোনমী আছে সেই চারটের মধ্যে পার্থক্য আগে বোঝানো দরকার ছিল। কারন MWI এর মহাবিশ্বের ধারনার সাথে ( যার থেকে সমান্তরাল মহাবিশ্বের ধারনা এসেছে) কাওটিক ইনফ্লেশনের ফলে উদ্ভুত মহাবিশ্ব সম্পূর্ন আলাদা। দুটো আলাদা এবস্ট্রাকশন।
@বিপ্লব পাল,
ম্যাক্সটেগমার্কের ফোর লেভেল ব মাল্টিভার্সের পেপারের লিঙ্ক উপরেই দিয়েছি, বিস্তৃত ব্যাখ্যা করতে গেলে প্রবন্ধ আরো দীর্ঘ হত। এমনিতেই সধারণ পাঠকদের অনেকে আভ্যন্তরীণ জটিলতার কথা বলছেন, টেগমার্কের চারটা লেভেল ব্যাখ্যা করতে গেলে ওটা আর ব্লগের আর্টিকেল থাকতো না।
ঠিক একই কারণে আমি হুগ এভার্টের মেনি ওয়ার্ল্ড ইন্টারপ্রিটেশনটাও এড়িয়ে গেছি (এখনো কোয়ন্টাম ফিজিক্সের মূল ধারার ইন্টারপ্রিটেশন কোপেনহেগেনিয়ান, হুগ এভার্টের মেনি ওয়ার্ল্ড ইন্টারপ্রিটেশনটাএমনকি বিজ্ঞানীদের মধ্যেও ‘কন্ট্রোভার্শিয়াল’, এমনকি সেটা টেগমার্কও বলেছেন তার পেপারে)। আমি দেখিয়েছি ‘মেনি ওয়ার্লড ইন্টারপ্রিটেশন’ না এনেও মাল্টিভার্সের ভাল ফরমুলেশন বিজ্ঞানীদের কাছে আছে। তাই সহজ করে আমি মূলতঃ কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন আর স্ট্রিংতত্ত্বের সাম্প্রতিক গবেষণার ভিত্তিতেই প্রবন্ধটা লিখেছি (টেগমার্কের ২০০৩ সালাএর পেপারে স্ট্রিং তত্ত্বের ভ্যাকুয়াম স্টেটগুলোর ফলাফল ছিলো না। ওটা পাওয়া যাবে শন ক্যারল কিংবা হকিং এর সাম্প্রতিক বইয়ে)।
বহু মহাবিশ্বের কিছু হলেও পরীক্ষালব্ধ প্রমান পাওয়া যাচ্ছে এটা আশার খবর। লেখা বরাবরের মতই অসাধারণ। তবে রূপম (ধ্রুব) এর সাথে আমারো মনে হয়ে মাল্টিইউনিভার্স এর বাংলা বহু বা অসংখ্য মহাবিশ্ব বেশি মানান সই হতো। অনন্ত মানে তো যার কোন অন্ত বা শেষ নেই। সেটাকে অনেকে বিশাল বা অসীম আকারের মহাবিশ্ব হিসেবে কল্পনা করতে পারে। তাছাড়া ইংরেজীতে যদি ইনফিনিটি ইউনিভার্স বা আনলিমিটেড ইউনিভার্স বলা হতো সে ক্ষেত্রে অনন্ত লিখলে ঠিক হতো। এই ক্ষেত্রে অসংখ্যা মহাবিশ্ব বা বহু মহাবিশ্বটা শুনতে খটমট শুনালেও আক্ষরিক দিক দিয়ে কাছাকাছি হতো। এই হলি-ডেইজে অভিজিৎ’দার কাছে হতে আরো এমন লেখা পাবো বলে ধরে নিতে পারি 🙂 ।
@স্বাধীন,
আরেকটা ব্যাপার, মহাবিশ্ব যদি ‘একটা’ কিন্তু ‘অসীম’ আকারের হয়, সেটাকেও তো অনন্ত মহাবিশ্ব বলা যেত, যেমন অনন্ত আকাশ? :/
আবার অনন্ত নক্ষত্রবীথি বল হয় অসংখ্য নক্ষত্রকে বোঝাবার জন্যে। দুটিতেই হয়ত ব্যবহার আছে। তবে নিশ্চিত করে বহু ব্যাপারটা বুঝতে একটু কঠিন লাগে এই শব্দে।
@রূপম (ধ্রুব),
সেটাই, আমি তোমার সাথে একমত। অনন্ত আকাশ বললে যেমন অসীমকে ইঙ্গিত করে তেমনি অনন্ত মহাবিশ্ব বললে অসীম আকারকেই ইঙ্গিত করে, অসীম সংখ্যাকে নয়। তাই নিশ্চিত করার জন্য বহু বা অসংখ্য জাতীয় কিছু একটি ব্যবহার করাই ভাল বলে মনে হয়।
@স্বাধীন,
রূপম যে রকম বললেন, অনন্ত নক্ষত্রবীথির ক্ষেত্রে তো ‘অসংখ্য’ হিসেবেই ব্যবহৃত হয়। অনন্তই থাকুক আপাততঃ পরে ভাল কিছু পেলে রিপ্লেস করে দেয়া যাবে। তবে বহু মহাবিশ্ব টা একেবারেই ক্ষ্যাত…
@অভিজিৎ,
না! না! দরকার নেই। এটাই থাকুক।
আপনার জন্য অনেক অনেক :rose2: :rose2: :rose2: :rose2:
@অনন্ত বিজয় দাশ,
এহ আরেকজন ‘অনন্ত’ নাম পাইয়া কী খুশি! 🙂
তোমার ইস্কন নিয়া লেখার নেক্সট পার্ট কই? একদমই তো লেখো না দেখি…
লেখা খুব ভাল হয়েছে। ধন্যবাদ তারজন্য। :yes:
@নির্ভানা,
ধন্যবাদ!
লেখাটি ২-৩ বার পড়লাম। মাথায় কি যেন প্রশ্ন আসতে আসতেও আসছেনা :(।
বরাবরের মতই অসাধারণ লেখা।
@রামগড়ুড়ের ছানা,
আমি জানি তোমার মাথায় কী ঘুরতেসে। ফরিদ ভাইয়ের মালয়শিয়ান মোল্লার চার বউ এর ছবিটার সাথে সাথে এইটাও সার্ভার থকেইকা ডিলিট মারলে কেমন হয়…:-D
@রামগড়ুড়ের ছানা,
আমারও ওই একই অবস্থা। কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছি।
বেশ ক’বছর আগে যখন বিটিভি ছাড়া আর কোন চ্যানেল ছিলো না, তখন প্রতি সপ্তায় একটা ইংরেজি মুভি সিরিয়াল দেখতাম, যার নাম এখন মনে নেই। অদ্ভুত ছোট্ট একটা মহাকাশ যানে করে কিশোর ছেলেটা টাইমফ্রেম ভেঙে আরেকটা প্যারালাল জগতে চলে গেলো। এবং আশ্চর্যজনকভাবে তার নিজের, ছোট্ট বোনের টুইনসত্তার দেখা পেয়ে গেলো সে ! এমনকি মা-বাবাসহ একই পরিবারের প্যারালাল উপস্থিতি। সম্ভবত অস্ট্রেলিয়ান মুভি ছিলো ওটা।
অভিজিৎ দা’র লেখাটা পড়তে পড়তে সেই স্মৃতিটা সামনে চলে এলো। বুঝা যাচ্ছে সমান্তরাল বিশ্বের ধারণা অনেক আগে থেকেই মানুষের মাথায় কাজ করছে। যদিও তা সায়েন্স ফিকশন হিসেবেই। এখন গাণিতিক যুক্তিগুলো এসে তা সত্যের দিকে হয়তো এগিয়ে যাচ্ছে, যেভাবে এককালের অন্য ফিকশনগুলোও সত্যে পরিণত হয়েছে।
যথারীতি আরেকটা দুর্দান্ত লেখা !
@রণদীপম বসু,
ধন্যবাদ রনদীপমদা। আছেন কেমন? আপনাকে তো দেখাই যায় না এখানে। লেখা দেন তাড়াতাড়ি। এই বইমেলায় নতুন কিছু বেরুচ্ছে?
@রণদীপম বসু, ঐ টিভি সিরিজের নাম Spellbinder. একটা ক্লাসিক! এখন দেখলেও মজা পাই।
science fictionটা ভাল লেগেছে। ধন্যবাদ।
@ফারুক,
এটা কেমন মন্তব্য? লেখাটি কে sci-fi বলে উড়িয়ে দিলেন,খুবই ভালো কথা, আপনার দ্বিমত থাকতেই পারে,কিন্তু কেন উড়িয়ে দিলেন সে ব্যাপারে যুক্তিতো দেখাবেন। হুট করে এক লাইনে উড়িয়ে দিলেতো হবেনা।
@রামগড়ুড়ের ছানা, কেন, উড়িয়ে দিলাম কোথায়? বল্লাম তো ভাল লেগেছে।
আচ্ছা আমাকে কি বলবেন sci-fi কাকে বলে? আমি তো জানতাম sci-fi হলো বিজ্ঞানমনস্কদের কল্পনা , যা প্রমানিত নয় এবং এটা বিজ্ঞানের চালিকাশক্তি। জি.ওয়েল্স চাঁদে যাওয়ার গল্প না লিখলে , মানবজাতি চাঁদে যাওয়ার প্রেরণা পেত কিভাবে? অনন্ত মহাবিশ্ব বা বহু মহাবিশ্ব কি প্রমানিত কোন বিষয় বা এমন কোন দাবী কি লেখক এই পোস্টে করেছেন? লেখকের এই অনন্ত মহাবিশ্বের কল্পনা থেকেই তো বিজ্ঞানীরা প্রেরণা পাবেন এটা প্রমানের। একারনেই বলেছি sci-fi । ভুল কি কিছু বলেছি?
@ফারুক,
ও। কি জানি,আমার স্বল্প বুদ্ধিতে আপনার মন্তব্যের টোনটা “উড়িয়ে” দেয়ার মতই লাগল। আর আমি নিশ্চিত আমার মত স্বল্প বুদ্ধির আরো অনেকে তাই ভেবেছে।
@ফারুক, একদম ঠিক কথা কইলেন, আপ্নের সাথে এক্কেবারে একমত এবং সেইসাথে তালিয়া :clap2: :clap2: । এইসব উদ্ভট জিনিসরে সাই ফাই ছাড়া আর কী বা বলা যায়? এইগুলান তো আর জীন, হুর, দুই কান্ধে বসে থাকা ফেরেশতা, সাত আসমান, আদম হাওয়া, ভারজিন মেরি, পাখাওয়ালা বেহশ্তমূখী বোরাকের মত প্রমাণিত জিনিস না 😥 😥 ।
@ফাহিম রেজা,আপনিও একদম ঠিক কথা কইলেন। অনন্ত মহাবিশ্বের প্রমান, মোল্লাদের প্রমানের মতোই। 😛
@ফারুক,
বিগ ব্যাং এর প্রমাণ আপনার কাছে কিরকম প্রমাণ মনে হয়? মোল্লাদের নাকি বিজ্ঞানের? বিগ ব্যাং তো কেউ চোখের সামনে ঘটতে দেখেনি, আপনি ওতে বিশ্বাস করেন কেন? কারণ কসমিক ব্যাকগ্রাউন্ড রেডিয়েশন সহ অনেক কিছুই গেছে বিগ ব্যাং এর পক্ষে। যে কসমিক ব্যাকগ্রাউন্ডকে বিগ ব্যাং এর প্রমাণ হিসেবে হাজির করা হয়, সেই সিএমবি ডেটা থেকেই কিন্তু মাল্টিভার্সের প্রমাণও বেরিয়ে এসছে। অধ্যাপক ফিনীর পেপারটিতো আমি মূল লেখাতেই দিয়েছি, সাথে দিয়েছি আরো একগাদা লিঙ্ক। একটু পড়ে দেখুন না।
আপনার কথামত অনন্ত মহাবিশ্ব মোল্লাদের প্রমাণ হলে – এলেন গুথ, ভিলেঙ্কিন, হকিং, ফিনী, শন ক্যারল – সবাই মোল্লা, নয়তো তারা কেবল ‘সাই ফাই’ নিয়েই গবেষণা করেছেন, তাই না?
আপনার চালাকি করে করা মন্তব্যটার টোন কিন্তু সবাই ধরতে পেরেছিলো, এখন আপনি যেদিকেই নেন না কেন কথা। আগে উত্তর দেইনি, কিন্তু আপনি যেভাবে কথা প্যাচাচ্ছেন, উত্তর দিতে বাধ্যই হলাম এবারে। এর আগে গ্রান্ড ডিজাইন রিভিউতে আপনি এটাকে ‘হিরোইন সেবার’ সাথে তুলনা করেছিলেন। তখন অবশ্য সিএমবির প্রমাণগুলো আসেনি, তাই হাইপোথিসিসটাকে হিরোইনসেবা বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। এখন তো সরাসরি প্রমাণ পাওয়ার দিকেই চলেছেন বিজ্ঞানীরা। বোঝা যাচ্ছে মাল্টিভার্সের প্রমাণ চলে আসতে থাকায় আপনি আবারো আক্রান্তবোধ করছেন। এতো অল্পেই আক্রান্ত হলে ভবিষ্যতে আপনার জন্য কী অপেক্ষা করছে কে জানে!
ভাল থাকুন। ফিনীর প্রমাণের খণ্ডন থাকলে অবশ্যই দিতে পারেন, নয়তো একে মোল্লা, ওকে হিরোয়িনসেবী বানিয়ে অপ্রয়োজনীয় সার্কাজম বা গুতাগুতি এ লেখায় না করলেই খুশি হব।
@অভিজিৎ,
তাহলে স্বীকার করলেন , তখন সিএমবির প্রমাণগুলো ছিল না এবং ওটা হাইপোথিসিস ছিল। তাহলে যারা হাইপোথিসিসকে নিশ্চিত বলে বিশ্বাস করে , তাদেরকে হিরোইনসেবী বললে , আপনারতো ক্ষ্যাপা উচিৎ নয়।
আমি আক্রান্তবোধ করব কেন? এমন অদ্ভুত ধারনা আপনার হলো কেন? আমি কি এমন কিছুর ঠিকাদারী নিয়েছি যে , মাল্টিভার্স প্রমানিত হলে আমি ব্যাক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হব?
আপনি ও ভাল থাকুন। আমার মন্তব্যকে গুতাগুতি না ভেবে সমালোচনা ভাবলেই খুশি হব।
@ফারুক,
প্রমাণ ছিল না বলেই তো ওটা হাইপোথিসিস ছিলো। সব বৈজ্ঞানিক হাইপোথিসিসই তো তাই। ধাপে ধাপে এগোয়। এই যে প্রকৃতির চারটে ফান্ডামেন্টাল বল যে এক সূত্রে গাঁথা সেটাও তো একটা ধারণা বা হাইপোথিস-ই, এখনো ‘সার্বিক’ প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কিন্তু একটি জিগ’জ পাজেল এর প্রায় সবগুলো টুকরো মিলে যাবার পর দু’একটা টুকরো বাকি থাকলে যেমন সবাই অনুমান করতে পারে ওখানে কি বসবে, বিজ্ঞানীরাও পারেন। এভাবেই বিজ্ঞান এগোয়। না বুঝে হিরোইনসেবা বানালে কি আর হবে!
আর শুধু তো প্রমাণ পাবার আগে নয়, ডঃ ফিনীর পেপার থেকে পাওয়া প্রমাণ এর পরও আপনি ওটাকে ‘মোল্লা’ নয়তো ‘সাইফাই’ বলে যাচ্ছেন। এই থ্রেডে আপনার মন্তব্যই দেখুন না। ওগুলো তো করেছেন মাল্টিভার্সের প্রমান পাবার পরে। আপনাকে কি বলা যায় বলুন তো? আপনি তো ভাই আর হিরোইন খান না, পুত-পবিত্র সাফ-সুতরো মানুষ, তাহলে আপনার আচরণ এমন কেন!
আর, আমি ক্ষেপিনি, আপনাকে দেখেই লোকে হাসছে – কারণ বিজ্ঞানের ব’ও আপনি বোঝেন না, কিন্তু সব পদার্থবিদদের প্রান্তিক গবেষণাকে হিরোইনসেবী বলতে ওস্তাদ। মজা না?
সমালোচনা ভাবতে অসুবিধা ছিলো না। কিন্তু হিরোইনসেবন আর মোল্লা বলে ছেড়ে দেয়া তো কোন সমালোচনা হল না। আপনাকে তো কতকগুলো প্রশ্ন করলাম আগে- বিগ ব্যাং কেন বিশ্বাস করেন, সেটার উত্তর দেননি। সএমবি ডেটার উপর আস্থা প্রকাশ করে বিগ ব্যাং এ বিশ্বাস করবেন, অথচ একই ডেটা থেকে পাওয়া ফলাফল থেকে পাওয়া ‘মাল্টিভার্স’ এর প্রমাণ পেলে সেটা ‘সাইফাই’ হবে কেন, আর সেই বৈজ্ঞানিক তত্ত্বে কারো আস্থা থাকলে তিনি মোল্লা হবেন কেন, সেটার উত্তরও পাইনি। ফিনীর পেপারের কোন ভুল দেখিয়ে সমালোচনা করুন – মেনে নেব বলেছিলাম; সেটারও উত্তর দেননি।
অনেক উত্তরই আপনার থেকে পাব না জানি, কারণ আপনি উত্তর দিতে আসেন না, আসেন স্রেফ গুতাগুতি করতে। সেটাই করতে নিষেধ করছি।
@অভিজিৎ,
পুত-পবিত্র সাফ-সুতরো মানুষও যে ধর্মের হিরোইন খেয়ে বুদ হয়ে থাকতে পারে এটাতো জানেন।
@ফারুক,
Knee jerk reaction-টা ভাল লাগে নি। ধন্যবাদ।
@ফরিদ আহমেদ, আমরা কি ফারুক সাহেব কে একতু বেশীই গুরুত্ব দিয়ে ফেলছি না? আমার তো মনে হয় উনি মজা পেয়ে গেছেন! তালি দিলে সবাই গুরুত্ব দেয়। সাই ফাই কইলে জিগায় কেন কইলেন? উনার হাতে বলার মত কিছু থাকলে তো উনি সেটা ব্যাখ্যা করতেন। দয়া করে মুক্তমনায় মজা দেখার জন্য দুটো কথা বললেন, আর আমরা তাই নিয়ে প্রশ্ন করছি। ভুলে যাওয়ার দরকার নেই, উনি “ফারুক”। 😀
@নীল রোদ্দুর,আপনার কি এমন ক্ষতি করেছি , যে আমার বাড়া ভাতে ছাই দিচ্ছেন? কেমন মজা পাচ্ছি , গুরুত্ব পেয়ে ফুলে ঢোল হচ্ছি!! দিলেন তো মাটি করে। 😥
@ফরিদ আহমেদ, আপনার এই মন্তব্যটাও আমার কাছে Knee jerk reaction মনে হয়েছে। মুক্তমনারা যে শুধু স্বগোত্রীয় চামচামি ছাড়া আর কিছুকে সহ্য করতে শেখেনি , তা আপনার এই Knee jerk reactionই প্রমান। তালিয়া দিলেও জ্বলে , ভাল লাগে বল্লেও গা জ্বল্লে আমি যাই কই?
আমার ব্যাকগ্রাউন্ড না দেখে , আমার মন্তব্যগুলো পড়ুন , আশা করি আপনার Knee jerk reaction মনে হবে না।
ভাল থাকুন , আনন্দে থাকুন এবং take it easy.
@ফরিদ আহমেদ, আপনাদের এই ব্লগের একঘেয়েমি প্রশংসার মাঝে আমি যে বৈচিত্রের সুবাতাস বয়ে আনি , তার জন্য কি কিছুটা ছাড় আমি পেতে পারি না? 🙁
@ফারুক,
বৈচিত্র্যের সুবাতাস নয়, বরং সুঢপ পুরীষের পঁচাগলা গন্ধই পাই আমরা। আপনার ছদ্মরূপী ছাগচরিত্রের ছাল এখন উন্মোচিত। মুক্তমনায় যে নানান ছলছুতায় নাদি ছড়িয়ে ছয়লাপ করতে চান, সেটা বুঝে গিয়েছি আমরা। কাজেই, এই ছ্যাবলামি মার্কা ছলন আচরণের ছাড় পাওয়াটা আপনার মত ছারকপালের ভাগ্যে মনে হয় নেই।।
লেখাটা খুব ভাল লাগল । আপনার লেখনী ভঙ্গীমা, বেশ সাবলীল । পড়ে খুব ভাল লাগল। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ।
“প্যারালাল ইউনিভার্স” নিয়ে যদি, আরো বিস্তারিত লেখতেন, তাহলে, খুব খুশী হতাম।
অনেক ভাল থাকবেন।
ধন্যবাদ
@সেজবা,
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
প্যারালাল ইউনিভার্স নিয়ে মিচিও কাকুর একটা চমৎকার বই আছে। পড়তে পারেন। আমি যদি কখনো সময় পাই আরো কিছু লিখব ভবিষ্যতে।
চমৎকার হয়েছে। বেশ প্রয়োজনীয় কিছু বিষয় নিয়ে এসেছেন।
@সৈকত চৌধুরী,
ধন্যবাদ সৈকত।
না, না, একজন হতাশ প্রেম-রসহীন পুরুষবাদী মানুষের কথায় আপনি মাইন্ড করবেন না, ফুলের কি আকাল পড়েছে এই দুনিয়ায়? এই নিন- :rose2: :rose2: :rose2: :rose2: :rose2: :rose2: :rose2: ইমো থাকলে খৃস্টমাসের সময় এক বোতল জ্যাকডানিয়েল দিতাম।
কিন্তু উনার একখান কথার সাথে বিজ্ঞান না বুঝেও আমি শতভাগ সহমত পোষণ করি। আমিও বলি সময়ের শুরু নেই শেষও নেই, তেমনি সৃষ্টির ঊষালগ্নও নেই অস্তলগ্নও নেই।
এরকম একটা কথা কোথায় যেন পড়েছিলাম যে – সৃষ্টির উপাদান যদি পদার্থ হয়, তাহলে নতুন সৃষ্টিতে বা ধ্বংসে পদার্থের রূপ পরিবর্তন হয় মাত্র, পদার্থ নাই হয়ে যায় না।
আরো একটা কথা, বিগব্যাং কি একবারই হয়েছিল এর আগে কখনো হয়নি, আর কোনদিন হবেনা? কি দাদা, বিজ্ঞান না বুঝে তাল-গোল পাঁকিয়ে ফেললাম না কী?
@আকাশ মালিক,
এটার উত্তর এইমাত্র ফরিদ ভাইকে দিয়েছি, দেখে নিতে পারেন।
সময়ের ব্যাপারটা জটিল। আইন্টাইনের পর কেবল সময় বা কাল আলাদা করে উল্লেখ করে লাভ নেই, কারণ স্থান কাল মিলেমিশে এখন স্পেস টাইম হয়ে গেছে। আর আকাশ মালিকের সময় আর অভিজিতের সময়ের পরিমাপ আলাদাও হতে পারে, নির্ভর করবে ফ্রেম অফ রেফারেন্সের উপর। অনেকে আবার মডেলে সময়ের জন্য নেগেটিভ এক্সিসও তৈরি করেছে। আর জুলিয়ান বার্বার তার একটি তত্ত্বে দেখিয়েছেন যে টাইম আসলে একটি ইলুশন। তাল্গোল পাকানোর মতোই ব্যাপার। যা হোক, আমার ইচ্ছে আছে কখনো সময়ের প্রহেলিকা নামে একটি লেখা লেখার।
একেই বলে সাত কাণ্ড রামায়ন পড়ে সীতা কার বাপ! 🙂 আরে, আমি তো বারবারই বলছি – আধুনিক মাল্টিভার্সের তত্ত্ব বলছেই কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের মাধ্যমে বিগ ব্যাং আরো অসংখ্যবার ঘটতে পারে, এবং হয়তো বাস্তবে ঘটেছেও। একেকটি বিগ ব্যাং থেকে জন্ম নিচ্ছে একেকটি মহাবিশ্ব। এখন মুশকিল হল একটা নির্দিষ্ট মহাবিশ্বের অংশ হয়ে বাইরের অন্য মহাবিশ্বগুলোকে ডিটেক্ট করা। সেটাই করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা, তবে পরোক্ষ প্রমাণের ভিত্তিতে।
ও আরেকটা কথা –
সেটাই ভাল মনে হয়। ফুল অপেক্ষা মদ্যপান শ্রেয়! 😀
@অভিজিৎ,
আহ্ হারে, এমনি কি আর কথাটা বারবার রিপিট করতে বলি? বহুত ফজিলত আছে। কেউ সাই-ফাই সায়েন্স ফিকশন বললে একটু টাইট দিতে হবে না? বাইন মাছের মত বারেবারেই তো তারা ফসকে যেতে চায়। কত কষ্টে একটা বিগব্যাং একটা দৃশ্যমান মহাবিশ্ব একটা ইউনিভার্সের সুত্র তারা পেয়েছিল, এখন যদি বলেন- বিগ ব্যাং আরো অসংখ্যবার ঘটতে পারে, এবং হয়তো বাস্তবে ঘটেছেও, আর অগণিত মহাবিশ্ব ক্রমাগত তৈরি হয়ে চলেছে, (নাউজুবিল্লাহ) তাহলে তো মুশকিল। এই একটা কথাতেই তো সব শে—- 😥 😥 😥 —ষ।
আমি যাই, এবার অসংখ্যবার কুন-কুন, কুন-কুন, ফায়াকুন-ফায়াকুনের আয়াত খুঁজতে হবে। নিশ্চয়ই মহাভারত আর কোরানে মাল্টিভার্স তত্ত্বের ইঙ্গীত আছে।
মাল্টিভার্সের ধারণাটা আকর্ষণীয়, এর সম্ভাব্যতাও উচ্চ। কিন্তু, এর স্বপক্ষের এই মুহুর্তের প্রমাণগুলোকে খুব একটা শক্তিশালী বলে মনে হলো না। অবশ্য তুমিও নিজেও এটা উল্লেখ করেছো।
সৃষ্টির উষালগ্ন বললে বা বিগ ব্যাং এর মাধ্যমে মহাজগত সৃষ্টি হয়েছে বললে আসলে কিছু ব্যাখ্যাগত সমস্যা তৈরি হয়। বিগ ব্যাং তত্ত্বের মাধ্যমে স্বাভাবিকভাবেই মেনে নেওয়া হয় যে, বিশ্বজগতের কোনো শুরু ছিল। এই শুরুর আগে কী ছিল সেটা কিন্তু বিগ ব্যাং ব্যাখ্যা করতে পারে না। আর এর সুযোগ নেই সৃষ্টিবাদীরা। মহাবিশ্বের চুড়ান্ত পরিণতি কী হবে সেটাও বিগ ব্যাং দিয়ে বোঝানো যায় না। বিগ ব্যাং এর ফলে মহাবিশ্বের যে সম্প্রসারণ শুরু হয়েছিল তা কি অনন্তকাল চলবে নাকি কোনো এক সময় থেমে যাবে? তারপর সংকোচন শুরু হবে? বিগ ক্রাঞ্চ?
আমার এ কারণে বিগ ব্যাং এর চেয়ে এর বিকল্প তত্ত্ব ‘মহাবিশ্বের কোনো শুরু নেই, শেষ নেই, সবসময়ই এটা ছিল’-কেই বেশি পছন্দ।
সুখপাঠ্য ও চিন্তা-জাগানিয়া কিন্তু জটিল এবং অসহজবোধ্য একটা লেখা দেবার জন্য অভিকে ফুলবিহীন অভিনন্দন।
@ফরিদ আহমেদ,
হ্যা সেজন্যই এটা প্রথম পদক্ষেপ বা প্রাথমিক প্রমাণ হিসেবে ধরা হচ্ছে। খুব একটা শক্তিশালী প্রমাণ না হলেও যথেষ্টই ‘আশা জাগানিয়া’ বলা যায়। তবে এটাই শেষ কথা নয়, যাত্রার শুরু কেবল। আমরা এ সম্বন্ধে আরো ভাল করে আমরা জানবো ভবিষ্যতে লিসার কাছ থেকে প্রাপ্ত ফলাফলে। মিচিও কাকুর যে ভিডিওটা দিছি লেখার শেষ ঐটা দেইখেন। মজার অনেক কিছু জানতে পারবেন।
বুঝলাম – কিন্তু এটা আপনি আপনার ‘ফিলিং’ থেকে বলছেন। বিজ্ঞানীরা বহু আগে থেকেই এই ধরণের একটা মহাবিশ্বের কথা ভেবেছিলেন – যার শুরু নাই শেষ নাই, সেই স্টেডি স্টেট থিওরী। এমনকি বিগ ব্যাং-এর অল্টারনেটিভ তত্ত্ব হিসেবে এটি বহুদিন রাজত্বও করেছিলো। হয়েল- নারলিকারেরা এর মডেলও তৈরি করেছিলো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ঐ মডেল বিগ ব্যাং-এর কাছে হার মেনেছে। হাবলের প্রসারণ, কসমিক মাইক্রোওয়েভ রেডিয়েশন সহ বহু কিছুই গেছে বিগ ব্যাং এর পক্ষে, আর স্টেডি স্টেট মডেলের বিপক্ষে। এর মানে হচ্ছে, আপনি পছন্দ করেন আর নাই করেন, মহাবিশ্বের একটি শুরু ছিল। এইটা অস্বীকার করলে বিপ্লব পালের মতো করে বকে দিব – বিজ্ঞান বুঝেন না মিয়া! 🙂
তবে অনেকে বলতে পারেন যে, আধুনিক মাল্টিভার্স তত্ত্ব আবার স্টেডি স্টেট তত্ত্বকে নতুন মোড়কে ফিরিয়ে এনেছে একটু অন্য ভাবে। কারণ, এই বিগ ব্যাং এর মাধ্যমে শুরুর কথাটা যেটা বললাম – সেটা কেবল – আমাদের এই দৃশ্যমান মহাবিশ্বের শুরু বলা যায়। সব কিছুর শুরু তো এটা নয়। শেষও নয়। এরকম বিগ ব্যাং আরো হয়েছে হচ্ছে, এবং এক একটি বিগ ব্যাং এর ফলে জন্ম নিচ্ছে একেকটি মহাবিশ্ব। এই প্রক্রিয়ার (সম্ভবতঃ) কোন শুরু নাই, শেষ নাই। প্রতিনিয়ত কোয়ন্টাম ফ্লাকচুয়েশনের মাধ্যমে বিগ ব্যাং হচ্ছে – আর অগণিত মহাবিশ্ব ক্রমাগত তৈরি হয়ে চলেছে যেগুলো আমরা পর্যবেক্ষণ করতে পারছি না। সেজন্যই একে বলে ‘ইটারনাল কেওটিক ইনফ্লেশন’।
@অভিজিৎ,
ফিলিং থেকে বলি নি। হয়েল নারলিকারের অল্টারনেটিভ তত্ত্বের কথাও বলছি না। স্টেইনহার্ড এবং টুরকের সাইক্লিক মডেলিং এর কথা মাথায় ছিল বলেই বলেছি। এই দুই বিজ্ঞানী মাত্র কয়েক বছর আগে বিগ ব্যাং এর সরলরৈখিক মডেলের সীমাবদ্ধতাকে কাটিয়ে ওঠার জন্য এই সাইক্লিক মডেল প্রস্তাব করেছিলেন। এটাও যে আল্টিমেটলি বিগ ব্যাং এর কাছে হার মেনেছিল সেটা জানা ছিল না।
বিজ্ঞান না বোঝার জন্য যত খুশি বকা দিতে পারো। অসুবিধা নাই। এইটা আমার একাডেমিক বিষয়ও না, পছন্দের বিষয়ও না। তবে, আমার লজিক বলে যে, মহাবিশ্বের শুরু থাকতে পারে না কিছুতেই। শুরু থাকাটার মানেই হচ্ছে রাজ্যের ভেজাল। এটা পছন্দ, অপছন্দের বিষয় নয়, সাধারণ যুক্তির বিষয়।
এতক্ষণে অরিন্দম কহিল বিষাদে…… 😀
@ফরিদ আহমেদ,
না বিগ ব্যাং এর কাছে হারেনি; নেইল টুর্কের সাইক্লিক মডেলটা ইনফ্লেশনের প্যারালাল হিসেবে চলছে বটে, তবে এটারও বড় ধরণেরর সমস্যা আছে। একটা সমস্যা হল এন্ট্রপি নিয়ে। ওই মডেলকে স্থিতাবস্থায় রাখতে হলে এন্ট্রপিকে কমতে হবে। এখন পর্যন্ত মহাবিশ্বে সার্বিক এন্ট্রপি কমার কোন আলামত পাওয়া যায় নি। শন ক্যারলের ‘ফ্রম এটারনিটি টু হেয়ার’ বইয়ে এ নিয়ে ভাল আলোচনা আছে…
পড়তে পারেন বইটা।
অনেক দিন পর আমার মনের মত একটা লেখা পেয়ে আপনাকে ধন্যবাদ। যদিও বেশ কিছুদিন সাইটটিতে আসার সময় পাইনি, হঠাৎ এসে এ ধরনের একটা লেখা দেখে সাথে সাথেই গোগ্রাসে পড়ে ফেললাম কারন আমার আগ্রহের সবচাইতে প্রিয় বিষয় এটাই। যাহোক, এবার আসল কথায় আসা যাক।
আজ থেকে বছর বিশেক আগে যখন সর্বপ্রথম বিগ ব্যাং বা অতি স্ফীতি তত্ত্ব ইত্যাদির সাথে প্রথম পরিচয় হয়, তখনই আমার নিরেট মাথায় খটকা লেগেছিল যে যদি একটা শূন্য বিন্দু বিস্ফোরিত হয়ে একটা মহাবিশ্ব সৃষ্টি হতে পারে তাহলে আরও শূন্য বিন্দু ও বিস্ফোরিত হয়ে অন্য মহাবিশ্ব সৃষ্টি হতে পারবে না ? এভাবে কেন অসীম সংখ্যক মহবিশ্ব সৃষ্টি হবে না , সাবানের ফেনার বুদ্বুদের মত ? যেখানে প্রতিটি বুদ্বুদ ই একটা আলাদা মহাবিশ্ব অথচ একটি অন্যটির সাথে মিশে যায় না। যাহোক, এটা ছিল আমার অলস মস্তিষ্কের তরল চিন্তা। আমি বিজ্ঞানী নই গবেষকও নই, তাই তখন বিষয়টা কারও সাথে শেয়ার করতে পারি নি। আজকে বিষয়টি শেয়ার করার সুযোগ হয়েছে। আর তাই আমার একটা প্রশ্ন। সেটা হলো – যেখানে বিজ্ঞানীরা এখনও আমাদের মহা বিশ্বের সীমানা এখনও সঠিকভাবে আবিষ্কার করতে পারে নি , সেখানে সে সীমানায় অন্য একটা মহাবিশ্ব যে ধাক্কা খেল তা নির্নয় করল কোন প্রক্রিয়ায়? কারন যদি ধাক্কা খেয়েও থাকে সেখান থেকে যে তরঙ্গ নির্গত হয়েছিল তা তো আমাদের পৃথিবীতে এখনও এসে না পৌছারই কথা। তার মানে কি , বিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যেই আমাদের মহাবিশ্বের সীমানা আবিষ্কার করে ফেলেছে ?
@ভবঘুরে,
ধন্যবাদ আগ্রহ নিয়ে পড়বার জন্য। অনেকদিন ধরে সাইটে আসনে না কেন? আপনার লেখাও কিন্তু পাই না বেশ কিছুদিন ধরে। লিখতে থাকুন।
আপনার চিন্তা ঠিক পথেই এগিয়েছিলো। এটাই আধুনিক মাল্টিভার্সের ধারণা। আপনার সাথে বিজ্ঞানীদের ধারণার পার্থক্য খুব একটা নেই, কেবল তারা এই তত্ত্বের স্বপক্ষে গানিতিক মডেল দাঁড়া করাতে পেরেছেন, এবং তত্ত্বের পরীক্ষনযোগ্যতার কিছু নিয়ামক বাৎলে দিতে পারেছেন। এবং অতি সম্প্রতি কিছু পর্যবেক্ষণগত প্রমাণ পেতে শুরু করেছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারটা আমি ব্যাখ্যা করেছি উপরে হেলালকে উত্তর দিতে গিয়ে। দেখুন এখানে। মহাবিশ্বের সীমা বলতে ১৪ বিলিয়ন আলোকবর্ষের দূরত্বের অদৃশ্য দেয়ালকেই আমরা বুঝব। তবে আমাদের বাসার দেয়ালের সাথে এই দেয়ালের পার্থক্য হল – এই দেয়াল স্ট্যাটিক নয়, ক্রমশঃ প্রসারমাণ। তারপরেও দীর্ঘিদিন ধরে এই দেয়ালের উপর আমরা চোখ রেখে বুঝতে পারি মহাবিশ্বের গতিপ্রকৃতি কোন দিকে চলেছে। মহাজাগতিক পশ্চাৎপট বিবিকরণ আমাদের সেই উপায়টুকু করে দিয়েছে। সেখানে চোখ রেখেই আমরা বুঝতে পারি মহাবিশ্বের বুকে নিরন্তর কি খেলা চলছে।
আপনি ঠিকই বলেছেন এইমাত্র কোন মহাবিশ্বের সাথে আমাদের ধাক্কা লাগলে সেই আলামত পৃথিবীতে এখনও এসে না পৌছারই কথা। সেজন্য আমরা ‘এই মুহূর্তের’ ধাক্কা নিয়ে কিছু বলতে পারব না, বা বলছি না। আমরা পশ্চাৎপট বিকিরণ থেকে যা জানি তা সবই অতীতের। দেখুন – আমি কিন্তু লেখায় স্পষ্ট করেই লিখেছি – ‘স্টিফেন ফিনী এবং তার দল ‘মডুলার এজ ডিটেকশন এলগোরিদমের’ সাহায্যে WMAP ডেটায় সংঘর্ষের ক্ষতস্থানগুলো নির্ণয় করলেন। তারা দেখলেন অন্ততঃ চারটি জায়গায় এরকম সংঘর্ষের আলামত পাওয়া যাচ্ছে; তার মানে অতীতে অন্ততঃ চার বার আমাদের মহাবিশ্বের সাথে খুব ছোট স্কেলে হলেও অন্য মহাবিশ্বের বুদ্বুদীয় সংঘর্ষ ঘটেছিলো’। একটা তুলনা দেই। আমরা এই মুহূর্তে যে সূর্যালোক উপভোগ করছি তা আসলে ৮ মিনিট ২০ সেকেন্ড আগে। কিন্তু সেই আলোই পর্যবেক্ষণ করে যদি দেখি কোন বড় ধরনের গড়বড় পাচ্ছি, তাহলে আমরা ধারনা করতে পারব, ৮ মিনিট ২০ সেকেন্ড আগে সূর্যে নিশ্চয়ই কোন এক ঝামেলা শুরু হয়েছিলো। এখন ক্রমাগতভাবে চোখ রেখে আমরা বুঝতে পারব ঝামেলা বাড়ছে না কমছে, কখন শেষ হবে বা হয়েছিলো। এর জন্য আমাদের যা করতে হবে তা হল কিছু গানিতিক ইন্টারপোলেশন। ঠিক তেমনি কসমিক ব্যাকগ্রাউন্ড রেডিয়েশন থেকেও আমরা এধরনের ইন্টারপোলেশনের মাধ্যমে বাস্তবতা অনুধাবন করতে পারি। এভাবেই আমরা এগুচ্ছি।
আলোচনার জন্য ধন্যবাদ।
@অভিজিৎ,
ধন্যবাদ বিষয়টি ব্যখ্যা করার জন্য।
তার মানে বিজ্ঞানীরা আপাতত: মনে করেন যে পৃথিবী থেকে ১৪০০ কোটি আলোক বর্ষ দুরত্বে আমাদের মহাবিশ্বের কল্পিত সীমানা। এটা আপনি ঠিক বলেছেন যদি অন্য কোন মহাবিশ্ব আমাদের মহাবিশ্বের সীমানায় টক্কর খায় তার প্রতিক্রিয়ায় মহাবৈশ্বিক পশ্চাদপট বিকিরনে কিছু প্রভাব পড়বে আর যা আজকের বিজ্ঞানীরা নিরীক্ষনও করতে পারবেন। তবে সেই বিশ বছর আগে আমার চিন্তা আরও কিছুদুর এগিয়েছিল। তা হলো –
অসীম শূন্য স্থানে অসীম সংখ্যক শূন্য বিন্দুতে বিস্ফোরন বা অতি স্ফীতির মাধ্যমে অসীম সংখ্যক মহাবিশ্ব সৃষ্টি হওয়া যেমন অসম্ভব নয় তেমনি প্রতি নিয়ত বহু সংখ্যক মহাবিশ্ব হয়ত মহা সংকোচনের মাধ্যমে আবার চুপসে গিয়ে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে ও একই সময় অসংখ্য মহাবিশ্বের সৃষ্টিও হচ্ছে ও তারা ক্রমাগত প্রসারিত হচ্ছে আমাদের মহাবিশ্বের মত। আর এ ঘটনা প্রতি নিয়ত ঘটে চলেছে আমাদেরই অগোচরে। যেমন ধরা যাক, যে সব মহাবিশ্বে সৃষ্টির উষা লগ্নে প্রোটন ও ইলেক্ট্রনের ( আসলে তাদেরকে প্রোটন বা ইলেক্ট্রন নাও বলা যেতে পারে , হয়ত অন্য ধরনের কনিকা) ভরের মধ্যে আমাদের মহাবিশ্বের মত অনুপাত হয় নি , হয়ত হয়েছে বেশী বা কম সেসব মহাবিশ্ব হয়ত গ্রহ নক্ষত্র গ্যালাক্সি তৈরী করা ছাড়াই এক ধরনের কনিকার স্যুপ জাতীয় মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছে ও তারা হয় ক্রমাগত প্রসারিত হয়েই চলেছে বা দ্রুত সংকুচিত হয়ে আবার বিলীন হয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ প্রতি মুহুর্তে সৃষ্টি ও ধ্বংসের এক মহাযজ্ঞ চলছে সম্পূর্ন আমাদেরই অগোচরে। আবার এমন হতে পারে যে এমন এক মহাবিশ্ব সৃষ্টি হলো যেখানে আমাদের মত চারমাত্রিক জগতের বদলে পাচ বা ছয় বা তার বেশী মাত্রার জগত সৃষ্টি হয়ে গেল সেখানকার আভ্যান্তরীন ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ায় সেই সৃষ্টির উষা লগ্নে। আর সেসব জগতে এমন ধরনের পরিবেশ সৃষ্টি হলো যে যদি সেখানে কোন জীব জগত সৃষ্টি হয়ে থাকে তাদের চরিত্র সম্পূর্ন আমাদের চেনা জানা জীব জগতের চেয়ে ভিন্ন। আর ঘটনা চক্রে যেসব মহাবিশ্বে আমাদের মহাবিশ্বের কনিকার ভরের অনুপাতের সমান হয়েছে সেসব ঠিক আমাদের মত মহাবিশ্বে পরিনত হয়েছে। আর সেখানে হয়ত আমাদের মত মানুষও কোন এক নক্ষত্রের গ্রহে সৃষ্টি হয়ে গেছে ও তারা ঠিক আমাদের মত বা আমাদের চাইতেও অগ্রসর চিন্তা ভাবনা করছে। তবে তা আমাদের হুবহু প্রতিচ্ছবি হবে সেটা আমার মনে হয় না। কারন যদি আমাদের মত মহাবিশ্ব তৈরী হয়েও থাকে সেখানকার বিবর্তনীয় গতি প্রকৃতি সম্পূর্ন তাদের নিজস্ব হবে, তবে তা আমাদের মহাবিশ্বের সদৃশ হতে পারে, কিন্তু হুবহু এক হবে না। অর্থাৎ সে ধরনের কোন মহাবিশ্বে ঠিক এই মুহুর্তে কোন পৃথিবী( অন্য নামও হতে পারে) নামক গ্রহে একজন ভবঘুরে ব্লগ লিখবে না যেমন সে এখন তা লিখছে এ মহাবিশ্বে। তাই আমাদের মহাবিশ্বের হুবহু প্রতি মহাবিশ্বের ধারনা আমার কাছে উদ্ভট লাগে। একটু ভাল করে চিন্তা করলেই তা বোঝা যায় । হতে পারে আমাদের মহাবিশ্বের সদৃশ , হুবহু প্রতিচ্ছবি নয়। এমন কি তারা যদি ঠিক একই মুহুর্তেও সৃষ্টি হয়ে থাকে তাও নয়।
যাহোক, এসব আজগুবি চিন্তা ভাবনা একবার এক বন্ধুর সাথে শেয়ার করতে গিয়ে ঝামেলায় পড়েছিলাম, বলেছিল আমার নাকি পাবনার হেমায়েতপুরে যাওয়ার আর বেশী দেরী নেই। সেই ভয়ে পরে সব কিছু বাদ দিয়েছিলাম।
@অভিজিৎদা,
আশা করি ফুলগুলো রেখে দিতে পারব এখন
রাখতে পারেন একটা শর্তে- মিস লিসা(LISA) যাওয়ার পর কি কইল হেইডা শোনাইলে। যেভাবে বাতিনি(অজানা যা আল্লাই জানত এতদিন) খবর আসতেছে আশা করা যায় প্যারালাল ওয়ার্ল্ডের আমার দুস্ত হেলালের খবরও দিতে পারবেন।
@হেলাল,
খবর পাইসি। আপনার দুস্ত হেলাল প্যারালাল মহাবিশ্বে বহাল তবিয়তেই আছে। ওইখানে এক ফরিদ আহমেদ নাকি উনাকে নিয়ে সিনেমার স্ক্রিপ্ট বানাচ্ছে। সিনেমার নাম – ‘রেল লাইন বহে সমান্তরাল’ , ইংরেজী টাইটেল -The train 🙂
:yes:
@আসরাফ,
ধন্যবাদ। তবে, খালি বইড়া আঙ্গুল দেখিয়ে ভেগে যাবার জন্য মাইনাস!
যথার্থই ধরেছেন। তালগোল পাকিয়ে গেছে। :-Y :-Y :-Y বুঝিনি কিছুই। যদি পরজন্ম হয় তবে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী হয়ে জন্মাব অভিজিৎ এর লেখা বুঝার জন্য। এ জনমে বুঝার আশা দিয়েছি জলাঞ্জলী।
@গীতা দাস,
হাঃ হাঃ।
আইনস্টাইন বিজ্ঞানের দূরূহ তত্ত্ব মানুষকে শেখানো নিয়ে বলতেন, ‘তুমি যা শিখেছ তা যদি তোমার দাদীকে বোঝাতে না পার, তাহলে তুমি আসলে কিছুই শেখোনি’’। আমি বলব, তুমি যা লিখেছ তা দিয়ে যদি গীতাদিকে বোঝাতে না পার, তাহলে ভাল কোন লেখাই লিখোনি!
লেখকের ব্যর্থতার দায় মাথা পেতে নিচ্ছি গীতাদি। আচ্ছা, সহজ কথায় আমার লেখাটির সারাংশ করলে দাঁড়াবে –
আমাদের মহাবিশ্বের বাইরেও অন্য অনেক মহাবিশ্ব আছে বলে বিজ্ঞানীরা অনেকদিন ধরেই ভাবছিলেন। এখন এর স্বপক্ষে কিছু পরীক্ষালব্ধ প্রমাণ পেতে শুরু করেছেন। এইটুকুই।
এবার কি বোঝানো গেলো?
@অভিজিৎ,
এতক্ষণে গীতা দি কে বলা শুধু ঐ দুটো লাইনই বুঝেছি, তবুও কিছুটা তো বুঝেছি, তাই ভাললাগাটা জানায়ে দিলাম।
@অভিজিৎ,
এটুকু পড়েই তো বাকিটুকু পড়ার সাহস পেয়েছিলাম। পরে–
আর সে ‘সাই-ফাই’ ধারণাটি আর ধারণ করার ক্ষমতা রাখিনি।
যাহোক,আইনস্টাইনের পরামর্শ মত অভিজিৎ যে আমাকে বুঝানোর চেষ্টা করেছে এতেই আমি ধন্য এবং কৃতজ্ঞ। এখন মনে হচ্ছে ছিঁটা ফোঁটা বুঝেছি। ধন্যবাদ।
আর আমার বিজ্ঞান বুঝার অক্ষমতার দায় অভিজিৎ এর নয়। সবাই সব বুঝে না।
আকাশ মালিককে সাথে পেয়ে আরও ভাল লাগল।
কঠিন কঠিন বিষয়গুলো আমাদের মত বিজ্ঞানে বিশেষ-অজ্ঞদের কাছে সহজভাবে উপস্থাপন করেন বলে আপনার প্রতি অনেক কৃতজ্ঞ। আরেকটা ইন্টারেস্টিং লেখা। :yes:
“আলো হাতে চলিয়াছ আধারের যাত্রী” কিনেছি কিন্তু আমি পড়ার আগেই আমার বন্ধু সিন্ডিকেট করে নিয়েছে। :-X পড়ে মতামত জানাবো 🙂
@লীনা রহমান,
ভাল লাগলো আপনার মন্তব্য পেয়ে। সিন্ডিকেটেড বই উদ্ধারের পর পড়ে কেমন লাগল জানালে খুশি হব।
@লীনা রহমান,
অভিজিৎ রায়ের ‘সমকামিতা’ বইটি হারানোর ভয়ে সিন্ডিকেট ( ‘সিন্ডিকেট’ —- ভাল একটি প্রাসঙ্গিক শব্দ শিখলাম) করছিলাম না, যদিও অন্যান্য বই করি। বুদ্ধিটি ভালই। বইটির বহুল পঠনের ব্যবস্থা করা যায়।
পড়ে মুগ্ধ হলাম। সবকিছু যে বুঝেছি তা নয়, আরো কয়েকবার পড়তে হবে। এই ধরনের লেখা বেশ কয়েকবার না পড়লে আবার আমি বুঝতে পারি না। তবে বুঝতে না পারার দায় আমার, লেখকের নয়।
বিষয়টা কঠিন, সন্দেহ নাই। এমন সব বিষয়ে সহজ করে লেখার কাজে অভিজিতের জুড়ি নেই । মুক্তমনার একজন পাঠক হিসেবে আমি কৃতজ্ঞ অভিজিতের কাছে।
মুক্তমনার নতুন-পুরোনো সব লেখককেই তুমি ধন্যবাদ জানাও লেখার জন্য। তোমারও কিন্তু অনেক অনেক ধন্যবাদ পাওনা পাঠকদের কাছ থেকে। ধন্যবাদ অভিজিত।
@ইরতিশাদ ভাই,
আমিও যে বিষয়গুলা খুব বুঝি তা নয়। গুতাগুতি আর আপনাদের সাথে আলোচনা থেকেও অনেক কিছু পরিস্কার হয় আমার। আগেই যে সব বুঝে বসে থাকি তা নয়।
আর কিছু না বুঝে থাকলে তার দায় আমারই, আপনার নয়। 🙂
আপনার নতুন লেখার জন্য অপেক্ষা করছি।
কতো কিছুই জানিনা বা
তোমার লেখা পড়ার আগে জানারও চেশটা কোরিনা।
তোমার সারগর্ভ লেখা শুধু বিমোহিত হয়ে পড়লাম অফিসে বসে, অফিসের কাজ রেখেই।
শুধু বিষ্ময় আর বিষ্ময়।
তোমার অনান্য লেখার মত এই লেখাও অমুল্য।
(আপাততো কনো প্রশ্ন নেই। আবার পড়ার পর যদি কোন প্রশ্ন মনে আসে তব কোরব।)
অনেক ধন্যবাদ।
@সেন্টু টিকাদার,
লজ্জায় ফেললেন সেন্টুদা। প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই বলবেন।
@অভিজিতদা,
প্রথমেই ধন্যবাদ জানাই ইদানিং দ্রুত আপনার মূল্যবান লেখা পাচ্ছি। আসলে আমি অপেক্ষায় থাকি কখন আপনার কাছ থেকে ওহি নাজিল হবে।
ফিজিক্সে আমার খুব একটা নলেজ নাই বলে আমার প্রশ্নগুলি উল্টাপাল্টা মনে হতে পারে ,তাই আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
আমার প্রশ্ন হল-
দীপেন ভট্টাচার্যের লেখায়(http://blog.mukto-mona.com/?p=11286)পেয়েছিলাম যে আমাদের মহাবিশ্বেরই মধ্যে মাত্র ১৪ বিলিয়ন আলোকবর্ষের(দুরত্ব কম-বেশী হতে পারে) বাহিরের দুরত্বের (সিএমবি দেয়ালের বাহিরে) কোন কিছুর খোজ হয়তো আমরা কোনদিনই পাবনা। অর্থাৎ আমাদের মহাবিশ্বের প্রান্তের কোন কিছুর খোজই পাবনা।আর সিএমবি দেয়ালের প্রান্তে যে গ্যালাক্সিটি পাওয়া গেল তার আলো রওয়ানা হয়েছিল বিগব্যাং শুরুর দিকে।
তাহলে অন্য একটি মহাবিশ্বের( সিএমবি দেয়ালের বাহিরে নিশ্চয়) খোঁজ আমরা কিভাবে পেলাম?
তাছাড়া অন্য মহাবিশ্ব আমাদের মহাবিশ্বের সাথে ধাক্কা নিশ্চয় বিগব্যাং এর শুরুর দিকে খায়নি, পরে ধাক্কা লেগেছিল। তাহলে তো কোন ভাবেই সেই মহাবিশ্ব থেকে নিঃসৃত আলো আমাদের কাছে ধরা পড়ার কথা না এবং আমরাও সেটার খবর কখনো জানার কথা না।
(অবশ্য আমার বুঝতে ভুলও হতে পারে।)
আপনার পোষ্টটির জন্য :rose2: :rose2: :rose2: :rose2: :rose2: আর আমার প্রশ্নের উত্তরের জন্য অগ্রিম :rose2: ।উত্তর না পেলে ফুল ফেরৎ।
@হেলাল,
আমি আমার সীমিত জ্ঞান থেকে যতটুকু বুঝেছি তার ভিত্তিতেই উত্তর দিচ্ছি। আপনি লিখেছেন –
দীপেনদা ১৪ বিলিয়ন আলোকবর্ষের যে দূরত্বের কথা বলছেন, তা কিন্তু আমাদের মহাবিশ্বেরই অন্তর্ভুক্ত। বিগ ব্যাং হবার পর ফোটন বিযুক্ত হবার পর যে সময় পেরিয়ে গিয়েছে সেই অদৃশ্য দেয়ালই ১৪ বিলিয়ন আলোকবর্ষের দূরত্ব। আমাদের এই বিগ ব্যাঙের সলে সৃষ্ট মহাবিশ্ব, তার আভ্যন্তরীন গ্রহ, নক্ষত্র, ছায়াপথ এমনকি ডার্ক ম্যাটারগুলোও আমাদের মহাবিশ্বেরই অংশ, বাইরের নয়।
আমাদের মহাবিশ্বের এত বিশাল দূরত্বের সবকিছুর হদিস আমরা পাইনি ঠিকই, কিন্তু তা না পেলেও এর বাইরে কি আছে আমরা অনুমান করতে পারি। একটা তুলনা দেই। খুব বেশি ভাল তুলনা নয় যদিও। আমরা যখন বাংলাদেশে থাকতাম আমাদের দেশের কোন প্রত্যন্ত অঞ্চলের, রুমা উপজেলার ভিতরের একদম অজপাড়াগাঁয়ে কী হচ্ছে তা জানতাম না, কিন্তু আমেরিকায় বুশ বা ওবামা কী করছে, চোখের নিমেষেই আমরা জেনে যেতাম। কীভাবে? টিভি স্যাটেলাইট কিংবা ইণ্টারনেটের সাহায্যে। ওগুলো ছিলো আমাদের জন্য যোগাযোগের দরজা। আমাদের দরজায় নক করে তারা আমাদের উপস্থিতি জানান দিতো।
আরো একটা উদাহরণ দেই; ধরা যাক আপনি বাকিংহাম প্যালেসের মতো কোন এক বিশাল অট্টালিকায় থাকেন, যেখানে শ’খানেক ঘর, যেখানের কোথায় কি আছে তা এখন দেখে শেষ করতে পারেননি। এমনকি কোন ঘরে কে থাকে, কয়জন বাবুর্চি বা কেয়ারটেকার কোন ঘরের তদারকে আছে, তাও বুঝে উঠতে পারেননি এখনো। কোন ঘরের কোথায় কী আছে তা না জানলেও আপনার দরজায় আপনার প্রতিবেশী যদি কখনো নক করে, তাহলে আপনি জানবেন, আপনার অট্টালিকার বাইরে মানুষ আছে, আছে আপনার প্রতিবেশী। কসমিক ব্যাকগ্রাউন্ড রেডিয়েশনের ডেটাগুলো আমাদের কাছে দরজার মতো। আমরা আমাদের পুরো মহাবিশ্ব এখনো দেখে শেষ করতে না পারলেও, আমাদের দরজায় আমরা অন্য কারো নক করার শব্দ শুনতে পাচ্ছি। শুধু নক নয়, আমরা দরজা দেখে বুঝতে পারছি – সেগুলো দরজায় গভীর ক্ষত তৈরি করেছে, গুনে গুনে অন্ততঃ চারটি। কাজেই আমরা ধারণা করছি, আমাদের কোন প্রতিবেশি হয়তো এসে দড়াম দড়াম করে আওয়াজ করে ধাক্কা দিয়েছিলো। যদিও আমরা পুরোপুরি নিশ্চিত নই, দরজার ক্ষতগুলো প্রতিবেশিরা নক করার ফলেই হয়েছিলো কিনা, কিন্তু যতক্ষণ না অন্য ভাল ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছে ততক্ষণ, কেউ না কেউ নক করেছিলো বলেই ধরে নিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা, যদিও সংশয় তাদের কাটেনি। আমরা আশাবাদী হয়েও মূলতঃ এখন ওই সংশয়ের স্টেজেই আছি। আমাদের পরবর্তী গুপ্তচর লিসার থেকে পাওয়া ডেটা থেকে আমরা আরো নিশ্চিত ভাবে জানব আসলে কি হচ্ছে ওখানে।
আপনার সাথে আলোচনা করে ভাল লাগল। আশা করি ফুলগুলো রেখে দিতে পারব এখন। 🙂
উরি সর্বনাশ! এতো কাণ্ড! :yes:
@বিপ্লব রহমান,
হ্যা কান্ডই বটে! 🙂
ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
আর প্যারালাল মহাবিশ্বের হিসেবটা একটু গোলমেলে লাগলো। আমাদের মহাবিশ্বের পারমুটেশান ১০^১০^১১৮ আর মহাবিশ্বের সংখ্যা তো ১০^৫০০, মানে পারমুটেশানের চেয়ে অনেক কম। তাহলে রিপিট হবে কিভাবে আর আইডেন্টিকাল মহাবিশ্বই পাওয়া যাবে কিভাবে? আর আপনি এক জায়গায় মনে হয় ১০^১০^১১৮ এর জায়গায় ১০^১০^২৮ লিখেছেন।
@রূপম (ধ্রুব),
আমার মনে হয় আপনার বোঝায় একটু ভুল হচ্ছে। স্ট্রিং তাত্ত্বিকদের সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে পাওয়া ফলাফল – $latex 10^{500}$ ভ্যাকুয়াম স্টেটকে নির্দেশ করেছে। সেটাই মহাবিশ্বের (সম্ভাব্য) সংখ্যা।
আর যেখানে ১০^১০^১১৮ কিংবা ১০^১০^২৮ -সংখ্যাগুলো এসেছে সেগুলো আসলে দূরত্বের একক; দেখুন সংখ্যাটির পরে মিটার লেখা হয়েছে। কাজেই এই সংখ্যাটি প্রকাশ করছে আমাদের মহাবিশ্ব থেকে কত দূরে আরেকটি ‘আইডেন্টিকাল’ মহাবিশ্ব থাকতে পারে (সম্ভবতঃ ধরে নেয়া হয়েছে সেই আইডেন্টিকাল মহাবিশ্ব আমাদের মত একই ডাইমেনশনে)। এটি মহাবিশ্বের কোন সংখ্যা (বা ভ্যাকুয়াম স্টেট) নয়। এখন ম্যাক্স টেগ্মার্কের সায়েন্টিফিক আমেরিকানের পেপারটি দেখুন। দেখবেন উনি আইডেন্টিকাল টুইনের দূরত্ব হিসেবে ১০^১০^২৮ উল্লেখ করেছেন (প্রবন্ধের ২য় প্যারা দেখুন), কিন্তু ছবিতে (লেভেল ১ মাল্টিভার্সের প্রথম ছবিটা) আইডেন্টিকাল মহাবিশ্বের দূরত্ব হিসেবে ১০^১০^১১৮ উল্লেখ করেছেন। আমার মনে হয় উনি আইডেন্টিকাল মহাবিশ্ব বনাম আইডেন্টিকাল মহাবিশ্বের ভিতর একটি আইডেন্টিকাল গ্রহে আডেন্টিকাল টুইন থাকাটির সম্ভাবনাকে আলাদা ভাবে দেখছেন, কিংবা একটি দীর্ঘ পরিসরে কথা বলছেন। তবে সাধারণ আলোচনার জন্য ১০^১০^২৮ ধরেই এগুনো যেতে পারে।
@অভিজিৎ,
আমার প্রশ্নটা এসছিল চিত্রটার ভেতরের লেখাটা পড়ে। এখন পেপারটা ৩য় পৃষ্ঠা পড়েও একই ধারণাই হল। আপনি বলছেন ১০^১০^১১৮ দূরত্বের একক, মহাবিশ্বের কোন সংখ্যা নয়, কিন্তু দূরত্বের হিসাবটা তো মহাবিশ্বের সংখ্যা গুণে তার সাথে ব্যাস (এবং সম্ভাবনা দিয়ে) গুণ দিয়েই করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। পেপার থেকে উদ্ধৃত করছি-
মানে ওনার বর্ণিত universe এর সংখ্যা যদি “2 to the 10^118” এর চেয়ে বেশি হয়, তখন সেই universe রিপিট হতে বাধ্য। কিন্তু মহাবিশ্বের সম্ভাব্য সংখ্যা কেবল ১০^৫০০। এখন হতে পারে টেগমার্ক অসীম সংখ্যক মহাবিশ্ব ধরে নিচ্ছেন (২০০৩ এর পেপার) অথবা উনি এই লেভেল ১ এ যেটাকে universe বলছেন, সেটা স্ট্রিক্ট অর্থে আপনি প্রথম থেকে যেটাকে মহাবিশ্ব বলছেন, সেটা নয় (আপনার প্রথমে উল্লিখিত মহাবিশ্ব বা ভ্যাকুয়াম স্টেটগুলো হয়তো টেগমার্কের লেভেলের হিসেবে উপরের লেভেলের মাল্টিভার্স)। সেক্ষেত্রে সম্ভবত তিনি আমাদের দৃশ্যমান অংশের বাইরে কিন্তু আমাদের মহাবিশ্বের ভেতরেই এই রিপিটেশান কল্পনা করছেন, মহাবিশ্বের স্থানকে অসীম ধরে নিয়ে। আরেকটা হতে পারে, তিনি দুটি মহাবিশ্বের মাঝের সীমারেখা নিয়ে এখানে সতর্ক বা চিন্তিত নন, কেবল স্থানের হিসেবটাই তিনি করছেন। ফলে যখন ‘সমান্তরাল’ মহাবিশ্ব বলা হচ্ছে, তখন মহাবিশ্ব বলতে আসলে কি বোঝানো হচ্ছে খুব পরিষ্কার নয়।
@রূপম (ধ্রুব),
টেগমার্কের হিসেবের ডিটেল ক্যালকুলেশন আমি পাইনি, তাই বুঝতে পারছি না উনি ঠিক কিভাবে এই ক্যালকুলেশন করেছেন। হিসবও ঠিক পরিস্কার নয় আমার কাছে । যেমন একবার বলছেন That assumption underlies the estimate that your closest identical copy is 10 to the 10^28 meters away. আবার বলছেন, About 10 to the 10^118 meters away should be an entire Hubble volume identical to ours. কি করে আইডেন্টিকাল কপির চেয়ে হাবলের ভলিউম দূরে আমার কাছে পরিস্কার নয়। আমার ধারনা, উল্টোটাই হবার কথা। তবে যা হোক, যেটুকু বোঝা গেছে সমান্তরাল মহাবিশ্ব হচ্ছে মাল্টিভার্সের সেই রিপিটেটিভ অংশ যেটা 10 to the 10^118 মিটার পর পর রিপিট করে বা করতে পারে। এর সাথে মহাবিশ্ব -এর সংখ্যার কোন সম্পর্ক আছে কিনা আমি বুঝতে পারছি না। কারণ ফ্রীডম্যানের ইকুয়েশন অনুযায়ী স্পেস ফ্ল্যাট, এবং বদ্ধ কিছু নয়। তাই বদ্ধবাক্সের মধ্যে ইউনিভার্স আঁটানোটাই কতদূর সঠিক কে জানে।
স্ট্রিং তত্ত্বের ভায়কুয়াম স্টেটের ব্যাপারটা মনে হয়ে অধিকতরগ্রহন যোগ্য। অনেক জায়গাতেই আমি এই মান দেখেছি, এমনকি উইকিতেও আছে।
In string theory the number of false vacua is commonly quoted as 10^500.[1] The large number of possibilities arises from different choices of Calabi-Yau manifolds and different values of generalized magnetic fluxes over different homology cycles.
যা হোক, আমিও একটু দেখি আপনিও দেখুন…
পড়তে পড়তে অনেক পরে গিয়ে বুঝলাম, অনন্ত মহাবিশ্ব বলতে মাল্টিভার্স বুঝাচ্ছেন। অনন্ত মানে তো যার অন্ত নাই। বহুর সমার্থক কি হয়? বহুবিশ্বই সহজ না?
অনেক কিছু জানলাম। বেশ ভালো লাগলো।
@রূপম (ধ্রুব),
বহুবিশ্ব বললে কেমন যেন ‘বহু পৃথিবী’র কথাই মনে আসে। অনন্ত মহাবিশ্বই আমার ভাল লাগছে। আর লিন্ডের মডেলের সলিউশন অসীম সংখ্যক মহাবিশ্বের দিকেই ইঙ্গিত করছ, যদিও পরবর্তীকে স্ট্রিং তাত্ত্বিকেরা $latex 10^{500}$ টি সমাধান হজির করেছেন, সেটা আমার এক্চোখে প্রায় অনন্তই!
অভিজিৎ দা, চমৎকার !
বেশ বড় লেখা- অনেক ব্যস্ত থাকার পরও পড়ে ফেললাম। অসাধারণ… পুরো বিষয়টাকেই খুব সুন্দর গুছিয়ে লিখেছেন।
বিজ্ঞানের ছাত্র হয়েও, অত্যন্ত লজ্জার সাথে স্বীকার করতে হচ্ছে যে জ্যোতিপদার্থবিদ্যা সম্পর্কে বলতে গেলে কিছুই জানি না। তাই একটা প্রশ্ন এসেছে মাথায়। ব্রুনো যে দাবি করেছিলো মাল্টিভার্সের, এর ভিত্তি আসলে কী ? যে বিষয়টা এতোখানিই গাণিতিক যে এখনো পর্যন্ত গবেষণালব্ধ তথ্য দিয়ে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করা যায়নি, সে বিষয়কে আজ থেকে এতো বছর আগে কীভাবে ব্রুনো আন্দাজ করলেন ?
ভালো থাকুন। এ বিষয়ে আরো লেখা পড়ার অপেক্ষায় থাকলাম।
@সবজান্তা, আরে তুমি? আছো কেমন?
এটা একটা প্রশ্ন হলো নাকি? কিছু মানুষ পৃথিবীতে ‘সবজান্তা’ হয়ে জন্মায়, তারা জানে না এমন কিছু নাই!
@সবজান্তা,
আপনাকে এখানে দেখেই আমার ভাল লাগছে। মন্তব্য তো পরের কথা। আমাদের সাইটে আরো লিখলে এবং আলোচনায় অংশ নিলে খুশি হব।
ব্রুনো অনেক আগে আন্দাজ করতে পারেছিলেন, যে রকম আমরা অনেক কিছু গেস করি বা কল্পণা করি, কিন্তু নিঃসন্দেহে সে সময় কোন গানিতিক প্রমাণ ছিলো না এর স্বপক্ষে। তাই ব্রুনোর মতবাদকে আমি দার্শনিক মতবাদ হিসেবেই দেখব, বৈজ্ঞানিক মতবাদ নয়।
মন্তব্যের জন্য আবারো ধন্যবাদ।
@অভিজিৎ দা আপনার লেখাটা পড়ে বেশ ভালো লেগেছে,অনেক গোছানো লেখা তাই ধন্যবাদ।
মাল্টিভার্স নিয়ে সাম্প্রতিক গবেষনা অতন্ত্য সাবলীল ও আকর্ষনীয় ভাবে তুলে ধরার জন্যে অভিনন্দন। অ্যান্থ্রপিক প্রিন্সিপালকে আমার কখন ই অতিপ্রাকৃতিক সৃষ্টির মোক্ষম যুক্তি মনে হয়নি কারন আমরা অস্তিত্বশীল এটিতে শুধু প্রমানিত হয় মহাবিশ্বের ধ্রুবকগুলি আমাদের অস্তিত্বের পক্ষে অনূকুল। ধ্রুবকগুলি অন্যরকম হলে আমরা এরকমভাবে থাকতামও না আর সৃষ্টা নিয়ে তর্কবিতর্কও করতাম না। মাল্টিভার্স তত্ব আমাদের মহাবিশ্বের অনন্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে অতিপ্রাকৃতিকতা আমদানীর প্রয়োজনহীনতা আরো সুদৃঢ় করেছে।
একটি কথা, ডেভিড ডয়েৎজ The Fabric of Reality লিখেছিলেন বেশ আগেই, ১৯৯৭ সালে। এটা একারনেই উল্লেখ করলাম কারন আমি দশ বছরের ও আগে কলকাতায় বইটি কিনেছিলাম এবং বেশ কদিন ধরে কষ্ট করে বইটিকে শেষ করতে পেরেছিলাম। কোয়ান্টাম কম্পিউটিং সম্পর্কে এবইটিতেই প্রথম বিশদভাবে জানতে পেরেছিলাম।
@Shafiq,
আপনার ব্যতিক্রমী মন্তব্যগুলো সবসময়ই ভাল লাগে। আপনি যে অ্যান্থ্রপিক প্রিন্সিপাল-এর কথা বলছেন সেটি উইক অ্যান্থ্রপিক প্রিন্সিপাল, এর বাইরে আছে স্ট্রং অ্যান্থ্রপিক প্রিন্সিপাল এমনকি আছে কম্পলিটলি রিডিকুলাস অ্যান্থ্রপিক প্রিন্সিপাল (ক্র্যাপ)। ওগুলো আধ্ম্যাত্মবাদীরা কাজে লাগান অতিপ্রাকৃতিক ব্যাখ্যায়। তবে ওগুলো তত্ত্ব হিসেবে তেমন কোন জোরালো কিছু নয়, এবং বিজ্ঞানে বাতিলই বলা যায়।
ডেভিড ডয়েৎজ এর বইটির সঠিক বছর উল্লেখ করার জন্য ধন্যবাদ।
আচ্ছা, আপনার নামটি সবসময় ইংরেজীতে আসে। এরপর মন্তব্যের সময় নামটি বাংলায় লিখে পাঠাবেন কি?
অনেক ধন্যবাদ আবারো।
Laser Interferometer Space Antenna (LISA):
http://lisa.nasa.gov/index.html
@আদনান,
ধন্যবাদ আদনান। লিঙ্ক দেয়া ছাড়াও প্রবন্ধটি নিয়ে মতামত জানালে ভাল লাগলতো। তারপরেও লিসার লিঙ্কটির জন্য অনেক ধন্যবাদ।