১
ছোটবেলায় সেই গরু রচনার কথা মনে পড়ছে ইদানিং। সেই যে এক ছাত্র ছিল, তাকে যে বিষয়েই লিখতে দেয়া হোক না কেন সে কোন না কোনভাবে গরু নিয়ে আসবেই। তারপর সেই গতবাঁধা একই কথা।
ঠিক তেমনি আজকের গল্পের নায়ক এই ছাত্রের পছন্দের বিষয় হল কুমীর। যে বিষয়েই তাকে লিখতে বলা হোক, সে যেভাবেই হোক সেটাকে কুমীরে নিয়ে ফেলবেই।
ক্লাসে শিক্ষক হয়তো গরু নিয়ে একটি রচনা লিখতে বলেছেন। ছাত্রটি শুরু করে এভাবে –
গরু একটি গৃহপালিত প্রাণী। গরু শান্ত স্বভাবের। তার একটি লেজ ও চারটি পা আছে। গরুর প্রিয় খাদ্য ঘাস। ঘাস খাওয়ার জন্য গরুকে মাঠে টাঠে নিয়ে যেতে হয়। কিন্তু আপনারা যেখানেই গরুকে ঘাস খাওয়ানোর জন্য নিয়ে যান না কেন, কখনোই নদীর তীরে নিয়ে যাবেন না। কারণ নদীতে কুমীর আছে। কুমীর খুব হিংস্র প্রানী। তার একটি লেজ, চারটি পা এবং মুখভর্তি ধারালো দাঁত আছে। আর তার সারা গা কাঁটা কাঁটা …
শিক্ষক সাহেব খুব বিরক্ত। ভাবেন, শুধু কুমীরের গা না – এই ছেলের মগজও মনে হয় কাঁটা কাঁটা। সামনের বার তারে মহা টাইট দেওয়া লাগবে।
সামনের বার তারে দেওয়া হল বাড়ি নিয়ে রচনা লিখতে। শিক্ষক সাহেব ভাবলেন, এবার নিশ্চয় বাড়ি নিয়ে লিখতে গিয়ে কুমীর নিয়ে আসতে পারবে না। এবার দেখা যাবে কত ধানে কত চাল। ছাত্রটি লেখা শুরু করল এভাবে –
আমাদের বাড়ি শান্তির নীড়। বাড়িতে আমরা চার ভাই এক বোন বাবা মার সাথে থাকি। আমাদের বাড়িতে তিনটি শোয়ার ঘর, একটি বসার ঘর, একটি খাওয়ার ঘর এবং একটি রান্না ঘর রয়েছে। বাড়ি বানানো খুব কঠিন কাজ। তবে আপনারা যাই করেন, বাড়ি কখনো নদীর পারে বানাবেন না। কারণ নদীতে কুমীর আছে। কুমীর খুব হিংস্র প্রানী। তার একটি লেজ, চারটি পা এবং মুখভর্তি ধারালো দাঁত আছে। আর তার সারা গা কাঁটা কাঁটা …
বাড়ি রচনা পড়েতো শিক্ষকের মাথায় বাড়ি। রাগে তিনি দাঁত কিড়মিড় করেন। ভাবেন এই ছাত্রটা মহা ত্যাদর। বাড়ি রচনায় যা লিখেছে তাতে এইটারে ব্যাতের বাড়ি দেওয়া লাগবে। হাত নিশপিশ করে শিক্ষকের। তবে দেশের আইনে এখন ছাত্রকে বেতপেটা করা বেআইনি। আগেকার সেই সুদিন আর নেই। খামোখা এই বেতমিজটাকে তমিজের সাথে বেত পেটা করে জেল খাটার কোন মানে নেই। আইন আদালত থেকে দূরে থাকাই ভালো এটা ভেবে চূপ করে থাকেন তিনি। অনেক ভেবে চিন্তে এক অসামান্য এক টপিক খুঁজে বের করলেন শিক্ষক। ‘পলাশীর যুদ্ধ’।
এবারে শিক্ষকের মুখ হাসি হাসি। ভাবেন, এবার চাঁন্দু যাবি কই। পলাশির যুদ্ধে আর যাহোক কুমীর আসবে না কখনোই। ছাত্রকে কাছে ডেকে একটু বাঁকা হাসি দিয়ে বলেন – বাপধন, এবার পলাশির যুদ্ধ নিয়ে একটা নাতিদীর্ঘ রচনা লিখে ফেলোতো দেখি …
ছাত্র আর কী করে। শুরু করে এভাবে –
বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার সাথে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পলাশী নামক স্থানে যে যুদ্ধ হইয়াছিলো তাহাই পলাশীর যুদ্ধ নামে পরিচিত। ১৭৫৭ সালের জুন মাসের ২৩ তারিখে পলাশীর আম্রকাননে এই যুদ্ধ সংঘটিত হইয়াছিল। এক পক্ষে সিরাজউদ্দৌলার অনুগত অকুতোভয় বীর সেনানী আর অন্যদিকে লর্ড ক্লাইভের ঔপনিবেশিক বেনিয়া সৈন্যবাহিনী।
ঢাক ঢোল বাজিল, যুদ্ধ লাগিল। যুদ্ধে নবাবের জয়লাভের সমূহ সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও তাহাকে পরাজয় বরণ করিয়া নিতে হইলো। কারণ,
সরলমনা নবাব মীরজাফরকে প্রধান সেনাপতি বানাইয়া খাল কাটিয়া কুমীর আনিয়াছিলেন।
আর আপনারা জানেন, কুমীর খুব হিংস্র প্রানী। তাহার একটি লেজ, চারটি পা এবং মুখভর্তি ধারালো দাঁত আছে। আর তার সারা গা কাঁটা কাঁটা …
২
এবার বলি কেন আমার বারবার এই কুমীরের গল্পটি মনে পড়ছে। আমাদের দেশের সরকারের কান্ড কাহিনী দেখে দেখে এই কাহিনী মনে না করে উপায় কি? দেশ স্বাধীন হয়, নতুন নতুন সরকার আসে ক্ষমতায়, বৈধভাবে, অবৈধভাবে। কিন্তু তাতে কী? যে সরকারই ক্ষমতায় বসে সেই আপামর জনসাধারণকে একই কুমীরের কাহিনী শোনায়। রাজা যায় রাজা আসে, নতুন নতুন ঘটনা ঘটে, কিন্তু কুমীরের গল্পের আর যেন কোন পরিবর্তন ঘটে না… এক কুমীর আর কত?
৭১ সাল, সারা দেশের জনগন ঝাপিয়ে পড়েছে স্বাধীনতার যুদ্ধে। সারা দেশব্যাপী গেরিলা যুদ্ধ শুরু হয়েছে। পাকিস্তান সরকারের মুখে একই বুলি, এইটাতো কোন যুদ্ধ না, এ সবই ভারতের চক্রান্ত, বিদ্যাশী চক্রান্তের শিকার হয়ে পূর্ব পাকিস্তানের গুটি কয়েক হাফ মুসলমান এ সব কথা বলছে। আমাদের দ্যাশপ্রেমিক মুসলিম ভাতৃত্ববোধে উজ্জীবিত রাজাকার ভাইয়েরা পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এগিয়ে এসেছেন।
ষড়যন্ত্রের কুমীরকে বিদ্যাশি চক্রান্তের নদীতে ফেলার যাত্রা শুরু হয়েছিল বাংলাদেশ নামক দেশটার জন্মের সময়েই।
৩
দেশ স্বাধীন হল… কত সরকার এল কত সরকার গেল, আজো কেমন যেন সেই বিদ্যাশী ষড়যন্ত্রের গল্পই ঘুরেফিরে বলে চলেছে সব সরকারঃ
পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসীরা তাদের অধিকার রক্ষায় সংগ্রাম করে চলেছে। কিন্তু এই সংগ্রামকে তো কোনভাবেই মেনে নেওয়া যাবে না, এ তো গুটিকয়েক বিচ্ছিন্নতাবাদী আদিবাসীর হঠাৎ করে ক্ষেপে ওঠা ছাড়া আর কিছু নয়। বিদ্যাশী চক্রান্তে দ্যাশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে এইসব সমস্যা সৃষ্টি করা হচ্ছে, দ্যাশের আদিবাসীরা দুধে ভাতে সুখে শান্তিতে জীবন যাপন করছেন বহুকাল ধরেই। মুজিব ভাই বলে দিলেন আদিবাসিদের সবাইরে বাঙ্গালি হইয়া যাইতে। জিয়া ভাই বাঙ্গালি সেটেলার পাঠালেন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আদিবাসিদের সাথে থাকার জন্যি। সেটেলাররা অবশ্য একা গেলো না, সাথে গেল পাকিস্তানী স্বভাবের কিছু কুমির, মানে ফেরদৌসের মত বীর বাঙ্গালি সেনারা। তারপরের কাহিনি সবারই জানা। যথারীতি কুমীর খুব হিংস্র প্রানী। তার একটি লেজ, চারটি পা এবং মুখভর্তি ধারালো দাঁত আছে। আর তার সারা গা কাঁটা কাঁটা। সেই ফেরদৌস কুমীর কল্পনা চাকমার মাংস খেয়ে মৌজ করে বালুতটে রৌদ্র পোহাতে লাগলো। আর তীরে বসে সেটেলার ভাইয়েরা আনন্দে কুম্ভীরাশ্রু বর্ষণ করতে লাগলো।
৪
এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে জনগন তীব্র আন্দোলন শুরু করেছে। এবার এই স্বৈরাচারী, লম্পট এরশাদকে তারা গদি থেকে নামিয়েই ছাড়বে। ছাত্র, শিক্ষক, কবি, রিক্সাওয়ালা, শ্রমিক কেউ বাদ নেই। সবাই ঝাপিয়ে পড়েছে সেই আন্দোলনে। কিন্তু এরশাদ সরকার কিছুতেই শুনবে না, তার একই কথা এ সবই বিদ্যাশী ষড়যন্ত্র। এরশাদের জন্য এ দ্যাশের জনগনের মধ্যে ভালোবাসায় কোন খাদ থাকতেই পারে না। আটষট্টি হাজার পল্লীর পল্লীবাসীরা পল্লীবন্ধুকে ভাল না বেসে পারে নাকি? সব কিছুই নাকি বিদেশী কুমীরের চক্রান্ত। ধিক বেনিয়া কুমীরের দল।
৫
বঙ্গোপসাগরের ভিতর দিয়া নাকি ফাইবার অপ্টিক্স লাইন যাবে,সারা বিশ্বের সাথে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপনের এক মহাসুযোগ উপস্থিত হয়েছে দ্যাশের সামনে। আমাদের মহারথী বিজ্ঞ খালেদা সরকার কি বললেন? চান্দু, আমারে কি বোকা পাইছো? ভাবছো সুন্দরী মাইয়া মানুষের মাথায় বুদ্ধি নাই? আমরা কী সেদিনের শিশু যে গরু রচনা লিখতে বললেই লিখে দেব? এইসব বিদ্যাশী চক্রান্ত আমরা সেই জন্ম থেকে দেখেই বড় হইছি, ফাইবার অপ্টিক্স লাইন বসাই আর তোমরা উইকিলিক্সের মত আমাগো সব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাচার করে নিয়ে যাও! ছেলেখেলা নাকি! আমাদের মত তৃতীয় বিশ্বের (শুনেছি মাঝে মাঝে নাকি চতুর্থ বিশ্বের দ্যাশেও প্রমোশন দেওয়া হয়)দ্যাশের মহামূল্যবান সব তথ্য তোমমরা নিয়ে যাবে চালাকি করে আর আমরা কুমিরের মত চোখ ঢুলু ঢুলু করে দেখব? আমাদের সুইস ব্যাঙ্কের একাউন্টের খবর, মালয়েশিয়ায় পাচারকৃত টাকা, সৌদি আরবে বানানো প্রাসাদের খবর কি এমনি এমনিই দিয়ে দেব? কুমীরকে মাংসের যোগান দেয়া চলবে না। বঙ্গোপসাগরের ভিতর দিয়া ফাইবার লাইন গেলে কুমীর তা গিলে খাবে। কোনক্রমেই তা হতে দেয়া যায় না। দুষ্টু কুমীরের চেয়ে শূন্য সাগর ভাল। আরো ভাল ধানের শীষ।
৬
সংখ্যালঘু জনগনের বড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হল, খালেদা সরকার দৃপ্ত কন্ঠে ঘোষণা দিল, আমাদের দ্যাশে মাইনোরিটিরা মহা সুখে আছে, তাদের গায়ে আঁচড়টাও লাগে নাই, তাদের আমরা মাথায় করে রাখি। দেশবাসী, দুই একটা পূর্ণিমা ধর্ষিতা হলেও আপনারা এইসব বিদ্যাশী চক্রান্ত এবং কূপ্রচারণায় কিছুতেই কান দিবেন না। যদিও আমার শহীদ স্বামী খাল কাটায় ওস্তাদ লোক ছিলেন, কিন্তু আপনারা দেশবাসীরা খাল কেটে কুমীর আনবেন না দ্যাশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে।
৭
হাসিনা সরকার ক্ষমতায় এল প্রথমবারের মত। এবার নাকি রাজাকারদের বিচার হবে! কোথায় কী? না আছে বিচার না আছে এ নিয়ে কোন উচ্চবাচ্চ। বেচারারা কীভাবে করবে রাজাকারদের বিচার? বিদ্যাশীরা তো জোট বেঁধে বসে আছে এ বিচারের বিরুদ্ধে, কিছুতেই নাকি রাজি করানো যাচ্ছে না বিদ্যাশী প্রভুদের, তারা নাকি হুমকী মারে রাজাকারদের বিচারের কথা মুখে আনলেই নাকি সব ওয়ার্কারদের দ্যাশে ফেরত পাঠায় দেওয়া হবে। এত বড় বিদ্যাশী চক্রান্তের বিরুদ্ধে আমাদের মত পুচকী দ্যাশের সরকার কি করবে, কোন মূখে তাদের বিরোধিতা করবে তারা?
২০০৮ সাল। আবারও রাজাকারদের বিচারের মূলা দেখায় ক্ষমতায় এল আওয়ামীলীগ। এবারও বিদ্যাশী চক্রান্তের কথা ভাসে আকাশে বাতাসে। যাই কই, কারে ডাকি, কার কাছে বিচার দেই? সব কুমীরেরই দেখি এক ‘ রা।
৮
২০১০ সাল। মাত্র তিন দিন পরেই বিজয় দিবস। চারদিকে শুরু হয়েছে বিজয় দিসব উদযাপনের প্রস্তুতি। কিন্তু গার্মেন্টস শ্রমিকদের চোখে মূখে সেই বিজয়ের কোন ছাপ নেই। কদিন আগেই তাদেরকে মেরে কেটে থামিয়ে দেওয়া হয়েছে, গায়ের জোরে মেনে নিতে বাধ্য করা হয়েছে তিন হাজার টাকার নিম্নতম মজুরী। সারা বিশ্বের গার্মেন্টস শ্রমিকদের মাঝে নাকি এটাই সর্বনিম্ন মজুরী। রাগে দুঃখে, পেটের ক্ষিধায় ফেটে পড়েছেন তারা বিক্ষোভে। হাসিনার আপার সরকার কী এতই বোকা, গরুর রচনা লিখতে বললেই তারা লিখবেন কেন? মিশুদের মত নেতারা কিসের লোভে এ সব চক্রান্তের ফাঁদে পা দেন তারা কী জানেন না ভেবেছেন? এদের মত দ্যাশদ্রোহীদের জন্য ওয়ারেন্টের কাগজও অপচয় করেনা তারা। দ্যাশের ভাবমূর্তি নষ্টের এহেন ষড়যন্ত্রকে যে কোন মূল্যেই থামাতে হবে। সবই বিদ্যাশী কুমীরের ষড়যন্ত্র! আর আপনারা জানেন, কুমীর খুব হিংস্র প্রানী। তাহার একটি লেজ, চারটি পা এবং মুখভর্তি ধারালো দাঁত আছে। আর তার সারা গা কাঁটা কাঁটা …
অসাধারন ভালো লেগেছে ৷ (Y)
আজকের পেপারে দেখলাম মাননীয় অর্থমন্ত্রী শেয়ার বাজারের পেছনে ‘কিছু চিহ্নিত’ চক্রান্তের কুমীর খুঁজে পেয়েছে –
চক্রান্তকারীরা শেয়ার বাজারকে ঝুঁকিতে ফেলেছে :অর্থমন্ত্রী
যাবতীয় ঝামেলার পেছনে সেই নন্দঘোষ কুমীরই দেখছি 🙂 ।
অনেকেই সুন্দর সুন্দর গান শোনাচ্ছেন। আমি কবিতা শোনাতে চাই। আসলে শোনাতে চাই না, পড়াতে চাই। কুমির নিয়ে একটা কবিতা আছে। কবিতাটি পড়লে মজা পাবেন।
রমেশ করিতেছিল স্নান নদীর জলে,
কুমিরে ধরিল তারে আসি হেনকালে।
চীৎকার করে কহে রমেশ তখন,
কুমিরের মুখে মোর গেল যে জীবন।
রক্ষা কর রক্ষা কর কে আছ হেথায়,
কুমিরে ধরিয়া মোরে দেখ নিয়ে যায়।
শুনিয়া চীৎকার তার, দৌড়াদৌড়ি করে
আসিল গ্রামের লোক ত্বরা নদীর তীরে।
লোকে পরিপূর্ণ হোল তটীনির কুল,
হাহাকার করে সবে হইল আকুল।
সবাই ব্যাকুল বটে দাঁড়াইয়া পারে
কিন্তু কেহ রক্ষ হেতু চেষ্টা নাই করে।
রহিম নামেতে এক যুবা বলবান,
করিতে রমেশে রক্ষা, হলো আগুয়ান।
ঝাঁপ দিয়া পড়িল সে নদীর জলেতে,
সাঁতারিয়া ধরিল সে রমেশের হাতেতে।
কহিল রমেশ তুমি করিও না ভয়
করিবেন রক্ষা খোদা নাহিক সংশয়।
রমেশে অভয় দিয়া রহিম তখন
ডুব দিয়া কুমিরের ধরে দু নয়ন।
কুমির ব্যাথায় অতি হইয়া কাতর
শিকার ছাড়িয়া হোল পলায়ন পর।
অমনি রহিম করি রমেশেরে ক্রোড়ে
উঠিলেক দ্রুতগতি তটীনির তীর।
রমেশের মাতাপিতা পেয়ে পুত্রধন,
রহিমেরে পুত্র জ্ঞানে করে আলিঙ্গন।
ফেলিয়া আনন্দ অশ্রু কহিল সকলে
রহিম তুমি ধন্য এ মহিমন্ডলে।
@মাহফুজ,
এটাই বাস্তব। আমরা যারা এই ব্লগে লেখালেখি করি বা ব্লগ পাড়ায় ঘুরাঘুরি করি তারা ঠিক রমেশের গ্রামবাসীর মতন। ঘটনা ঘটলে আমরা সেই ঘটনা নিয়ে কতই না আস্ফালন করি কিন্তু কেউই সাংগাঠনিক দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে এসে আমাদের কী করণীয় তা বাৎলে দেয় না, এই দায়িত্ববোধ কারও মাথায়ই উদয় হয় না। আমরা শুধু রহিমের অপেক্ষায়ই করে যাই। একজন রহিমের জন্য কুকড়ে মরে আমাদের অক্ষম যৌবন। আমি আমাদের এই চরম ঘৃণ্য স্বভাব বদলাতে বদ্ধ পরিকর। আমি চাইব আমরা এই স্বভাব থেকে বেরিয়ে আসব। কারণ, প্রত্যেকেই রহিম হবার যোগ্যতা রাখে, শুধু দরকার সাহসের। তাহলেই আমরা অথর্ব মূর্তি থেকে মানুষে উত্তীর্ণ হব বলে বিশ্বাস আমার।
ধন্যবাদ মাহফুজ ভাই ভাবনা জাগানো কবিতাটি শোনানোর জন্য। কবিতাটা কার। আপনি এই কবিতাগুলো কোথা থেকে সংগ্রহ করেছেন?
@মুহাইমীন,
আপনার সুন্দর বিশ্লেষণী মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
মোকছেদ আলীর একটি ‘আমার প্রথম কলিকাতা চিড়িয়াখানা দর্শন” নামক একটি পাণ্ডুলিপি রয়েছে। তিনি এক তার এক বন্ধুর সাথে সেই চিড়িয়াখানা দেখতে গিয়েছিলেন। যখন তিনি কুমির দেখেন, তখন তার সঙ্গীকে এই কবিতাটি আবৃতি করে শোনান। কবিতাটি যে কার রচিত তা তিনি উল্লেখ করেন নি। আমি পাণ্ডুলিপিটি পড়তে গিয়ে কবিতাটি পেয়েছিলাম।
রসিকতার মাধ্যমে সত্যকে তুলে ধরেছেন সাবলীল ভাবে।
:yes: :yes: :yes:
লেখাটি পড়ার এবং মন্তব্য করার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
প্রথমে ভাবছিলাম “তালগাছতত্ত্ব” জাতীয় কুমিরের গল্প আসবে পরের দিকে… তবে হতাশ হলাম না শেষ পর্যন্ত…
@ রামগড়ুড়ের ছানা
আপনার ফরিদ আহমেদের লিপিস্টিক দেওয়া কুমীরটা পছন্দ হয় নাই দেখে দুঃখ পেলাম। কি সুন্দর মিকাপ, এক্কেবারে সেই ছোটবেলায় দেখা সিরাজদৌল্লাহর যাত্রার নায়ক নায়িকাদের মত 😥 । আপনার রুচিবোধের মানটা দুঃখজনকভাবে নীচু 😉 । লেখাটা তো শেষ পর্যন্ত কুমীর বনাম রুনা লায়লার ফাইটে পরিণত হল, কি আর করা, (দীর্ঘশ্বাসের একটা আইকন বানিয়ে দ্যান প্লিজ)। রুনা লায়লা আমার খুবই প্রিয় গায়িকা, অভিজিত আর আকাশ মালিক ক্যম্নে এই কাঁটা কাঁটা গায়ের মাংসখেকো কুমীরের সাথে তার তুলনা করতে পারলেন তা আমি জানি না। রুনা লায়লার জন্য অনেক অনেক সমবেদনা।
@ফাহিম রেজা,
ভাই সংসদের কুমীর দেখেছেন, এবার ঘরের কুমীর নিয়ে কিছু লিখেন। ততক্ষন পর্যন্ত রুনা লায়লাই ভরসা। এই বৃষ্টি ভেজা রাতে কুমীরের নয় রুনার আরেকটা গান শুনেন-
httpv://www.youtube.com/watch?v=FcbEpDxQkFI&feature=related
@আকাশ মালিক,
এই বৃষ্টি ভেজা রাতের গান দিয়েতো বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে থাকার কথা মনে করিয়ে দিলেন। 🙂
@ফাহিম রেজা,
রুনা লায়লা শুধু আমার প্রিয় নয়, প্রিয়তম গায়িকা। তার এই অবমাননায় আমিও সংক্ষুব্ধ, বিক্ষুব্ধ। তবে অপ্রতিবাদী। কারণ, এই সমস্ত দূরাচারী কুয়ার ব্যাঙদেরকে শায়েস্তা করার গান রুনা লায়লা অনেক আগেই গেয়ে গিয়েছেন বলে আমাকে প্রতিবাদ করে আর কিছু বলতে হয় নি। 🙂
অসাধারণ হয়েছে লেখাটি। সবুজ রঙের কুমিরটাও ফাটাফাটি। তবে ফরিদদার কুমিরটা………….. থাক কিছু বললাম না 😐
আর কিছু পারুক আর না পারুক, দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রের কুমীর দেখাতে আমাদের সরকার (রাজনৈতিক দল নির্বিশেষে) খুবই পারঙ্গম।
লেখাটা খুব ভাল হয়েছে, ফাহিম রেজার কাছ থেকে এমন লেখা আরো চাই।
ফাটাফাটি ল্যাখা হৈছে রে! … :lotpot:
খাঁজকাটা কুমিরের গল্প হাসির সাথে সাথে ক্ষোভ আর বেদনাও নিয়ে এল।
চমৎকার, জোশ লাগল।
জায়গামত কামড়E দিয়েছেন ভাই।
রম্য রচনাটি বেশ মজার। খালেদা আর হাসিনা সরকারের একই কুমিরের কাহিনী দেশবাসীকে শোনানো ছাড়া আর উপায় কি? কিছুক্ষন হাসাবার জন্য লেখককে ধন্যবাদ।
কুমির কিন্তু সত্যিই একটি ভয়ংকর প্রানী।এরা নিজেদের এলাকায় থাকে কিন্তু জিয়া’র মত লোকজন খাল কেটে তাদের নিয়ে আসে।এলাকায় খাল যখন কাটা হয়েই গেছে তখন সেখানকার লোকজন কুমিরের ভয়ে ভীত হবে সেটাই স্বাভাবিক।
মাঝে মাঝে কুমির আসে এবং অন্যান্য সময় তার ভয়টা শুধু আসে।নানান রূপে তারা আসে তবে, সবাই কুমির নয়,কেউ কেউ কুমির।
তবে এই কুমিরের প্যানিক কে কাজে লাগিয়ে আমাদের রক্ষাকারীরা যে অনৈতিক ভয়ংকর মুনাফা লুটতে অভ্যস্ত সেটাই তো পুরো সিস্টেমটা বিগড়ে দেয়।আর ম্যালফাংশন্ড পরিবেশের নৈরাজ্যমুলক অবস্থায় আমাদের শাষক ও শোষিত দুয়ে মিলেই তার ফায়দা লুটছে।
ধিক্কার জানাই সব পোশাক শিল্প মালিকদের যারা শ্রমিকদের মাসে ৩০০০ হাজার টাকাকে ন্যায্য বলেন যেখানে তাদের কারো নিজেদের সন্তান শুধু একটি সন্ধার জন্য ৩০০০ টাকা যথেষ্ট নয় বলে বেয়াড়া আচরন করে।
অসাধারণ!!!!!!!!!!! :guli: :lotpot:
ফাহিম রেজা রক্স!!
কুম্ভীরকে নায়ক করে কুম্ভকর্ণ রাজনৈতিক কুম্ভিলদের নিয়ে এমন সব রসীয় গল্পের সম্ভার দিয়ে কুম্ভমেলা বসানো দেখে আর গম্ভীর হয়ে থাকা গেল না। একটা কুম্ভীরক হাসি দিতেই হলো।
[img]http://blog.mukto-mona.com/wp-content/uploads/2010/12/crocodile.jpg[/img]
@ফরিদ আহমেদ, এ তো দেখি লিপিস্টিক দেওয়া কুম্ভীর :-/ ।
@ফাহিম রেজা,
লিপিস্টিক না। আমার মনে হয়
♫ পান খাইয়া ঠোঁট লাল করিলো
বন্ধু ভাগ্য হইলো না। … ♫ ♩ ♫
@অভিজিৎ, এরকম আর কী কী গান জানো তুমি :-Y ?
@অভিজিৎ,
ভাল ছবিযুক্ত গান দিতে পারলাম না, পছন্দ না হলে নোটিশ ছাড়াই মুছে দিতে পারেন।
কুম্ভমেলার দুটো কুম্ভীরক গান-
httpv://www.youtube.com/watch?v=VhWtFBnG5uY&feature=related
httpv://www.youtube.com/watch?v=hcjWEhmZndA&feature=related
@আকাশ মালিক,
পুরানা স্মৃতি মনে করায় দিলেন 🙂 আমার মনে হয় বাংলা সিনেমার ভক্তকূলশিরোমনি ফরিদ ভাই আর আদিল মাহমুদ আপনার গানগুলো শুনে খুব খুশি হবে।
আমিও এই সুযোগে দুইখানা ছেড়ে দেই রুনা লায়লা ( বন্যা অবশ্য আমার সুরুচি দেখে উপরের মতো আরেকবার দেওয়ালে মাথা ঠুকবে, কিন্তু কী আর করা!)।
সুখ তুমি কী বড় জানতে ইচ্ছে করে –
httpv://www.youtube.com/watch?v=UHSP-7AK0hk
তবে যেই গানটা শুনে আমি এখনো অভিভূত হই –
যখন থামবে কোলাহল
ঘুমে নিঝুম চারিদিক
আকাশের উজ্জল তারাটা
মিটমিট করে শুধু জ্বলছে…।
httpv://www.youtube.com/watch?v=AwUi4CrsIJs&NR=1
ফাহিম রেজার কুমীরের গল্প যে রুনা লায়লার কন্সার্টে পর্যবসিত হয়ছে, সেটাই বড় কথা। কুমীরের চেয়ে রুনা লায়লা উত্তম। 🙂
@আকাশ মালিক,
আমি অন্য সাধের একটি গান দিচ্ছি-
বনমালী তুমি, পরজনমে হইও রাধা 🙂
@ফাহিম রেজা,
কুম্ভীর বলে কি শুধু কুম্ভীরাশ্রুই বিসর্জন করবে? একটু সাধ আহ্লাদও কি থাকতে নেই এদের?
লেখাটা ভাল লাগলো। ঠাট্টা রসিকতার মাধ্যমে সিরিয়াস বিষয় নিয়ে আসার আপনার কৌশলটা সত্যই অনন্য।
বিশেষ করে নীচের এই লাইনটা পড়ে হাসি চেপে রাখা কঠিনই হল –
:laugh:
লেখাটা পড়তে পড়তে খুব হাসি পাচ্ছিল। এই মন্দার বাজারে কার না একটু হাসতে ইচ্ছে করে? হাসবার লোভ সংবরণ করতে না পেরে, যতই এগিয়ে যাচ্ছি, হাসি যেন ততই উধাও হয়ে যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত আমাদেরকে, আপনি কি-না সত্যি সত্যি কুমিরগুলোর সামনে এনে দাঁড় করালেন?
আপনাদের মত লেখকদের এই এক সমস্যা, কারো হাসি বা সুখ সহ্য হয় না।
অনুগ্রহ করে, কুমিরের ভয় দেখিয়ে আমাদের মধ্যবিত্ত সুখটুকু কেড়ে নেবেন না।