গত প্রায় তিন বছর ধরে চেষ্টার পর অবশেষে সফল হলো ইউসিএসএফের (UCSF=ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, স্যান ফ্র্যান্সিসকো) দলটা। বিকল্প বৃক্ক বা কৃত্রিম কিডনি আবিষ্কারের পথে তারা বিশাল একটা মাইলফলক দাঁড় করালো। সারা যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে এই মুহূর্তে প্রায় জনা চল্লিশেক গবেষক পড়ে আছেন তাঁদের গবেষণাগারে একই কাজ করার জন্যে।

সাফল্য এলো ইউসিএসএফের হাত ধরে; আরো স্পষ্ট করে বললে দলনেতা ইউসিএফের স্কুল অব ফার্মেসি এবং মেডিসিনের যুগ্ম বিভাগ বায়োইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড থেরাপিউটিক সায়েন্সেসের সহকারী অধ্যাপক বাঙালি বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ড: শুভ রায়ের হাত ধরে। আমরা একটু গর্বিত হতেই পারি, এবং বেশ একটু।

গবেষণাগারে ডঃ শুভ রায়

ছোটবেলায় জীববিদ্যায় পড়া, বৃক্ক শরীরের ছাঁকন-অঙ্গ। আমাদের শরীরের তথা রক্তের আবর্জনা পরিস্রুত করে সিমবিচির মতো এই দুটি রেচনাঙ্গ মূত্রথলিতে যা জমায়, তা ত্যাগের আনন্দে আমরা নিতান্তই উদ্ভাসিত থাকি, পুরুষেরা তো যত্রতত্রই। কিন্তু, বিগড়োয় এটা শরীরের অন্য সব কিছুর মতোই। সারা জাঁহানে এ-মুহূর্তে লক্ষ লক্ষ লোক ভুগছে ক্রনিক কিডনি ডিজিজ (CKD)-এ, যার জন্যে প্রযোজ্য চিকিৎসা [Renal Replacement Treatment (RRT)] কেবল বৃক্ক প্রতিস্থাপন অথবা, ডায়ালাইসিসের মাধ্যমে রক্তশোধন। এখন অবধি শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই প্রায় ৪ লাখ আর পৃথিবীজোড়া প্রায় ২০ লাখ রোগী তাঁদের রক্তশুদ্ধি ঘটাচ্ছেন ডায়ালাইসিস করে।

কিন্তু, হাজারো সমস্যা এগুলোর।

স্রেফ খরচ-খর্চা বাদ দিলে (যেটা অবহেলার যোগ্য মোটেও নয়, কিছুটা ধারণা দেবো পরে), নানান সমস্যাও যুক্ত হয়। তবে, বেঁচে থাকার জন্যে সয়ে যাওয়া, এটাই নীরবতার মানে হতে পারে।

সমস্যাগুলোর একটা তালিকা হতে পারে এরকম:

১) বৃক্ক প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে:

ক) দেবেটা কে? টিস্যু ম্যাচিং নামে একটা গুরুতর সমস্যা আছে, যেটার কারণে যথাসম্ভব কাছের আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকেই বৃক্ক সংগ্রহ করা জরুরি। কিন্তু, নানান কারণে সেটা হয়ে ওঠে না। তাই, অপেক্ষা…মৃত্যুর অথবা,…।
একটা পরিসংখ্যান বলছে, স্রেফ যুক্তরাষ্ট্রেই প্রায় ৮৫,০০০ হতভাগ্য হাপিত্যেশ করে আছে একটা বৃক্কের জন্যে অপেক্ষমাণ তালিকায় নাম লিখিয়ে। এই তথ্য অগস্টের। ভাগ্যবান হয়েছে মাত্র ১৭,০০০, গোটা বছর জুড়ে। ভারতে প্রতিবছর প্রায় ১.৫ লক্ষ রোগী আক্রান্ত হচ্ছে CKD-তে, নতুন বৃক্ক প্রতিস্থাপিত হচ্ছে মাত্র ৩,৫০০ জনের আর ৬,০০০ থেকে ১০,০০০ জন নিচ্ছেন ডায়ালাইসিস। বাকিদের ভাগ্যে কী আছে সেটা করুণভাবে অনুমেয়।

খ) এরপরও প্রচুর ওষুধ খেয়ে যেতেই হয়। কারণ, শরীর নানা কারণেই সেই বৃক্কটি প্রত্যাখ্যান করতে পারে। তাই, নানান সমস্যা তৈরি হয় বারবার।

গ) বৃক্কের সাথে নানা রোগ-জীবাণুও দাতার শরীর থেকে ঢুকে যেতে পারে গ্রহীতার শরীরে। মানে, চিকিৎসা করাতে গিয়ে রোগ ফ্রি।

গ) লাগে টাকা। কে দেবে? গৌরীসেন না মুসা বিন শমশের?

২) ডায়ালাইসিসের ক্ষেত্রে:

ক) প্রচুর সময় দিতে হয় চিকিৎসায়। সপ্তায় লাগাতার অন্তত তিনবার (যুক্তরাষ্ট্রে) বা দুবার (ভারতে) হাসপাতালে যেতে হয় এবং প্রতিবার প্রায় তিন থেকে পাঁচ ঘণ্টা কাটাতে হয়। মানে, স্বাভাবিক জীবনের বা কাজের আশা শেষ।

খ) তেমন সফল নয়। কার্যকর বৃক্কের তুলনায় ডায়ালাইসিস মাত্র শতকরা ১৩ ভাগের মতো কার্যকর, আর এটা চালিয়ে পাঁচ বছর বেঁচে থাকেন রোগীদের মাত্র ৩৩-৩৫ ভাগ। যাঁরা মৃত্যুবরণ করেন, তাঁদের বেশিরভাগেরই মৃত্যুর কারণ হৃৎপিণ্ডের কার্যকারিতা বন্ধ হয়ে যাওয়া। ঘটনা হচ্ছে, বৃক্ক শুধু রক্ত পরিশোধনই করে না। আরো কাজ আছে এর। যেমন: রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, বিপাকীয় ও অনালগ্রন্থির ক্ষরণোত্তর কার্যক্রম, ভিটামিন ডি তৈরি ইত্যাদি। এর কোনটাই ডায়ালাইসিসে লভ্য নয়।

গ) শারীরিক দুর্বলতাও উপরি পাওনা। কারণ আগেই বলা। এটা বৃক্কের কাজের মাত্র একটাই করে। তাই, স্বাস্থ্য আর টেকে না।

ঘ) টাকা, মশাই, টাকা। ভালো লাগে না আর এতোবার এক্কথা বলতে!

ডঃ রায়দের দলটি ঠিক এখানেই হাত দিয়েছে। তাঁদের আবিষ্কৃত যন্ত্রটি, বৃক্কীয় সহায়ক যন্ত্র বা রেনাল এ্যাসিস্ট ডিভাইস (RAD), দূর করতে পারবে CKD-এর চিকিৎসায় ব্যবহৃত পদ্ধতির অনেক অসুবিধেই। দাবি প্রমাণের স্বপক্ষে এখন তাঁরা একটা মস্ত ঘরজোড়া প্রোটোটাইপ বানিয়েছেন। সাফল্য দাবি করতে গিয়ে তাঁরা পরীক্ষাও চালিয়েছেন বেশ কয়েক ডজন ইঁদুর আর নাম-না-জানা গন্ডাখানেক শুয়োরের ওপর। তাঁদের দাবি, যন্ত্রটা বেশ ভালোভাবেই কাজ করেছে ওখানটায়। কিন্তু, মানবদেহের ওপর পরীক্ষা তাঁরা এখনো সেরকমভাবে চালান নি।

ডঃ রায় স্নাতক হন ওহিওর আলিয়ন্সের মাউন্ট ইউনিয়ন কলেজ থেকে। স্নাতকোত্তর ডিগ্রি তাঁর প্রকৌশলে, তবে পরবর্তীকালে কাজের ক্ষেত্র হিসেবে বেছে নেন বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং। পিএইচডি অবশ্য তড়িৎ প্রকৌশলে। তাঁর দক্ষতা মেমস (MEMS=Micro-electromechanical Systems) প্রযুক্তি ব্যবহার করে নানান চিকিৎসাসম্বন্ধীয় যন্ত্র আবিষ্কারে। এর আগে তিনি হৃৎপিণ্ডে ঠিক জায়গায় স্টেন্ট বসানোর জন্যে করোনারি প্লাক নির্ধারণে খুদে তারহীন সেন্সর তৈরিতে কাজ করেছেন। ২০০৩ সালে পেয়েছেন টিআর৩৫ পুরস্কার। তাঁর কিছু কাজের সংক্ষিপ্ত বিবরণ পাবেন এখানে।

এই যুগান্তকারী কাজে তিনি একা নন, বলা হয়েছে আগেই। ইউসিএসএফে তাঁদের দলটা ছাড়াও আরো দশটা দল কাজ করছে তাঁর সাথে। এরমধ্যে আছে ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক, যেখানে ডঃ রায় প্রথম এই যন্ত্রটার ব্যাপারে কাজ শুরু করেন। এছাড়া আছে কেস ওয়েস্টার্ন রিজার্ভ ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব মিশিগান, ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটি এবং পেন স্টেট ইউনিভার্সিটি। তিনি নন পথিকৃতও। এর আগের নানামুখী উদ্ভাবন তাঁদের কাজ বহুগুণে এগিয়ে দিয়েছে। মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের নেফ্রোলজিস্ট (রেচনাঙ্গ বিশেষজ্ঞ) ডেভিড হিউমস ২০০৪ সালেই দেখান যে, যেসব রোগীদের বৃক্ক কাজ-করা বন্ধই করে দিয়েছে, তাদের জন্যে কক্ষাকৃতি পরিশোধন যন্ত্রে মানব বৃক্কের কোষ ব্যবহার করে তাদের স্বাস্থ্যের বেশ উন্নতি ঘটানো যায়। অর্থাৎ, বায়োরিএ্যাক্টর বৃক্ক তৈরির সম্ভাবনা তিনিই দেখান। আর, এরপরে ডঃ রায় এবং ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের নেফ্রোলজিস্ট উইলিয়াম ফিসেল একটা অতিক্ষুদ্র ছিদ্রময় সিলিকন ঝিল্লি তৈরি করেন, যেটা ডায়ালাইসিস যন্ত্রগুলো মাপে বেশ ছোট করে আনবে।

হিউমস প্রয়োজনীয় মাত্রায় বৃক্কের কোষগুলো গবেষণাগারে কালচার করার উপায় উদ্ভাবন করেছেন। স্রেফ একটা বৃক্ক থেকেই মোটামুটি ১ লক্ষ যন্ত্রের জন্যে দরকারি কোষ কালচার করতে পারেন তিনি। এছাড়া, ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্যে সেগুলো শীতক কক্ষে সংরক্ষণের সেরা পদ্ধতিও তিনি আবিষ্কার করেছেন। হিউমস রক্তশোধক এবং বায়োরিএ্যাক্টরের সমন্বয় ঘটিয়ে প্রথাগত RRT-কে চ্যালেঞ্জ জানান। তাঁর পিয়ার-রিভিউড প্রকাশনায় তিনি RAD (Renal Assist Device)-র সাফল্য নিয়ে আশা জাগান, বলেন RAD-এর অসুস্থদের বাঁচিয়ে রাখার ক্ষমতা RRT-এর চাইতে অনেক বেশি। ১০ জন রোগীর ওপর পরীক্ষা চালিয়ে তিনি এই সিদ্ধান্ত নেন। এর মধ্যে ৬ জনই ৩০ দিনের ওপরে বেঁচে থাকেন।

তাঁর একটা সাক্ষাৎকারে সরল ভাষায় কিছু কথা বলা আছে, আগ্রহীরা দেখতে পারেন। এছাড়া, তাঁকে নিয়ে ম্যাসেচুসেটস ইন্সটিটিউট অব টেকনলজির অনলাইন পত্রিকা টেকনোলজি রিভিউয়ের একটা রিপোর্টিং পাবেন এখানে।

শুভ রায় এবং তাঁর দল এই বায়োরিএ্যাক্টর বৃক্কটিই উৎপাদন করেছেন, তবে এখনো তাঁরা বলছেন না যে, বৃক্ক প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়াটিই তাঁদের যন্ত্রের মাধ্যমে বাসি হয়ে পড়বে। বরং, তাঁর সহগবেষক ফিসেলের মতে, “বৃক্কে প্রায় ২০ থেকে ৩০ ধরনের কোষ থাকে, নানানটার নানা কাজ। আমরা প্রধানত রেচনাঙ্গ ব্যর্থতার ভয়াবহ ব্যাপারটা সমাধানেই আগ্রহী। আপনি যদি বৃক্ক পাওয়ার জন্যে অপেক্ষমাণ তালিকায় থাকেন, তাহলে এই যন্ত্র আপনার অপেক্ষাটা সার্থক করবে।” তাঁর বক্তব্য, যেসব রোগী অপেক্ষমাণ তালিকায় আছেন, এটা তাঁদের বৃক্ক চাহিদা আর প্রাপ্তির সেতুবন্ধন ঘটাবে।

এবার আসা যাক যন্ত্রটা কিরকম এবং কেমনভাবে কাজ করে সেটা একনজর দেখে নিতে। স্যুপের টিনের মাপের যন্ত্রটার একটা প্রতিরূপও এর মধ্যে তাঁরা তৈরি করেছেন। ওটার মূল অংশ দুটো:

বিকল্প বৃক্কের লম্বচ্ছেদ

১) এর অর্ধেক অংশ জুড়ে আছে শরীরের বিষ(টক্সিন)মোচন অংশ। ওটায় হাজারো সিলিকন ঝিল্লি একসাথে জুড়ে দেওয়া আছে। ওই ঝিল্লির খুদে ছিদ্রগুলো এতো ঘন আর এতো নিখুঁতভাবে তৈরি করা যে, তারা শরীরের নিজস্ব রক্তচাপ ব্যবহার করেই (অর্থাৎ, বাইরের কোন শক্তির ধার না ধেরেই) পরিস্রাবণ প্রক্রিয়া চালু রাখতে পারে। এই ছাঁকনিগুলোর ভেতর দিয়ে রক্ত বয়ে যাবে, আর পরিস্রুত দ্রবণ হিসেবে আলাদা হয়ে বেরিয়ে আসবে বিষ, শর্করা, জল আর লবণ।

বিশুদ্ধ রক্ত আর জলীয় পরিস্রুত দ্রবণ দুটোই এবার যন্ত্রের বাকি অর্ধাংশে যাবে, ওটা একটা আলাদা বদ্ধ অংশ, একটা বায়োকার্ট্রিজ।

২) ওখানে আছে আরো সিলিকন ঝিল্লি, ওগুলো নির্দিষ্ট একরকমের মানববৃক্কের কোষ দিয়ে মোড়ানো। ওপরে-বলা পরিস্রুত রক্ত আর দ্রবণ দুটোই যখন এই বদ্ধ অংশের (বায়োকার্ট্রিজ) ভেতর দিয়ে যায়, তখন যন্ত্রটা কিছুটা জল, শর্করা আর লবণ শুষে নেয়, তৈরি করে ভিটামিন ডি আর রক্তচাপ খুব কমে-যাওয়া রোধ করে। শরীরে বৃক্ক এই কাজগুলোই করে, কিন্তু ডায়ালাইসিস করে এগুলো পাওয়া যাবে না।

যেসব বর্জ্য আত্মীকৃত হলো না একটা নল সেগুলো বয়ে নিয়ে যাবে মূত্রনালীতে আর সেগুলো বর্জ্য হিসেবে ব্যহ্ যায়েগা-ঠিক যেমন কিনা আপনার শরীরের পাম্প মেশিন আকা কিডনি করছে।

আরো একটু স্পষ্ট হতে পারে এবিসিসেভেন টিভির রিপোর্টিঙের এই ভিডিওটা দেখলে।

এবিসিসেভেন টিভির রিপোর্টিং

রক্তচাপের চাইতেও কম চাপে এই যন্ত্র কাজ করতে পারে, যেটা কিনা বিশাল একটা প্রাপ্তি, এতে করে এটা মাপে ছোট করার সম্ভাবনাও বেড়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য গবেষক দলগুলো এখনো শুধু রক্তশোধন প্রক্রিয়া নিয়েই কাজ করছে, কেউ কেউ চেষ্টা করছে পরিধানযোগ্য বৃক্ব বানানোর, সমস্যা হচ্ছে বিপুল পরিমাণ তরল বাইরের পাম্প ছাড়াই কিভাবে বিশোধন করা যাবে সেটা। এরকম একটা যন্ত্র এরই মধ্যে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের দ্বিতীয় ধাপে আছে। কিন্তু, নিরন্তর ডায়ালাইসিস করেও তো বৃক্কের অন্য কাজগুলো করা যাবে না। এখানেই, নীরবে সবার ওপরে ডঃ রায়ের দলটি।

তাঁরা আশা করছেন আরো অর্থের যোগান আর দলগত প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলে তাঁরা বড়মাপের পশু এবং এরপর মানুষের ওপর তাঁদের যন্ত্রের যথার্থতা পরীক্ষা করবেন। তবে, সাধারণ মানুষের নাগালে আসতে আরো প্রায় ৫-৭ বছর লাগবে বলে ডঃ রায় জানান। যদি ঠিকভাবে বাজারজাত করা যায়-এরমধ্যে এফডিএ-র অনুমোদন এবং আরো কিছু মেলে-তাহলে এটার দাম পড়বে প্রায় ২৫,০০০ মার্কিন ডলার, মানে বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৭,৫০,০০০ (সাড়ে সতের লক্ষ) টাকা। তবে, এটা এককালীন খরচ। নিতে হবে না কোন বাড়তি ওষুধ, যেমনটা হয় বৃক্ক প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে, টিকবে অনেক দিন (গবেষকদের দাবি)।

বলেছিলাম খরচের কথা বলবো অন্য চিকিৎসাপদ্ধতিগুলোর। এবার একটু ধারণা দেই। মার্কিন মুল্লুকে ডায়ালাইসিসের খরচ পড়ে বছরে প্রায় ৭৫,০০০ ডলার। আর বৃক্ক প্রতিস্থাপনের প্রতি বছর গড়পড়তা খরচ হয়ে থাকে ২৫,০০০ ডলার। এই খরচ বেশিরভাগই এন্টি-রিজেকশন ড্রাগের, যেটা RDA-তে দরকারি নয়, কারণ কোন দেহকোষ সংক্রমণের জন্যে উন্মুক্ত হয়ে পড়ছে না।

যেটা বলা, আরো পাঁচ-সাত বছর সমস্যা নয় যদি যন্ত্রটা আসলেই কাজ করে। আরো সমস্যাও রয়ে গেছে সমাধানের জন্যে। যেমন, আমাদের প্রাকৃতিক বৃক্ক দিনে প্রায় ৯০ লিটার জলীয় দ্রব্য পরিস্রাবণ করে। সেখানে এখনো তৈরি-করা বায়োকার্ট্রিজটা দিনে মাত্র ৩০-৩৫ লিটার জল পরিস্রাবণের ক্ষমতা রাখে, যেখানে অন্তত ৪৩ লিটার পরিস্রাবণ করতেই হবে। আরো দেখতে হবে যন্ত্রটা যেন রক্ত জমাট বাঁধিয়ে না ফেলে বা ইমিউন রিএ্যাকশন তৈরি না করে। পথটা নেহাৎ ছোট নয়।

এরমধ্যে আরেকটা মজার ব্যাপার।

ভারতীয় মিডিয়াগুলো ডঃ শুভ রায়কে ভারতীয় বা ভারতীয়-আমেরিকান হিসেবে প্রচার করে বেশ আত্মশ্লাঘার ঢেঁকুর তুলছে। যদিও নিউ কেরালা ডটকমের এই লেখাটায় তাঁর জন্ম বাংলাদেশে, তাঁর আত্মীয়স্বজন অনেকেই বাংলাদেশে এখনো আছেন বলে বলা হয়েছে (তাঁর ভাষায়, “আমার বাবার দিকের প্রায় আত্মীয়েরাই এখন ভারতে, মায়ের দিকের বেশিরভাগই বাংলাদেশে), তারপরও রিপোর্টটার শুরুতে তাঁকে পরিচিত করিয়ে দেওয়া হচ্ছে ‘ভারতীয় বংশোদ্ভূত’ হিসেবে। সিএনএন-আইবিএন, ভারতের একটা খবরের চ্যানেল, তাঁকে ভারতীয় দাবি করে রীতিমত একটা রিপোর্টিঙই করে ফেললো। মজার বা দুঃখের ব্যাপার হচ্ছে, কালের কণ্ঠ গত ৫ ডিসেম্বরের পত্রিকায় আনন্দবাজার পত্রিকা অনুসরণে একটা রিপোর্টিং করেছে, যেখানে তারাও যথারীতি তাঁকে ভারতীয় বলেই উল্লেখ করেছে।

httpv://www.youtube.com/watch?v=FUgsn5Z6oBE’

সিএনএন-আইবিএনের রিপোর্টিং

তাঁর পিতামহ চট্টগ্রামের একটা মফস্বলের মহাবিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক হিসেবে সুপরিচিত, বিশেষত ধর্মীয় অনুষ্ঠানে তাঁর জ্ঞানগর্ভ বক্তব্য এখনো অনেক প্রবীণ শ্রদ্ধায় স্মরণ করেন। তাঁর পিতা চট্টগ্রামের এক মোটামুটি পরিচিত ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, যদিও প্রায়ই পায়ের তলায় সর্ষে। তাঁর ছোটভাই ডঃ জয় রায় (১৯৭১-এর শেষদিকে জন্ম, তাই এই নাম) আবার চিকিৎসক (Doctor এবং Doctorate দুইই), সুইডেনের শ্রুতকীর্তি ক্যারোলিনস্কা ইন্সটিটিউটে, যেটা নোবেল পুরস্কার দেয়।

ঠিক বোধগম্য নয় কোন হিসেবে তিনি ভারতীয়! তাঁর কাকারা বা অন্য কিছু আত্মীয় ভারতে হিজরত করেছেন বা করতে বাধ্য হয়েছেন বলে? এভাবেই বোধহয় সালমান খান পাকিস্তানি হয়ে যান। বিশ্বমিডিয়ায় এসব তথ্য অর্থহীন, বুঝতে পারি। কিন্তু, তাঁর নামের সাথে বাংলাদেশের নাম যুক্ত থাকলে দেশের মানুষ হিসেবে কিছুটা বুক-ফুলে ওঠার এই সামান্য-বা-অসামান্য অনুভূতিটাও হারিয়ে ফেলতেই হবে?

অভিযোগ করবো? কিন্তু, কার কাছে?

[লেখক চিকিৎসাবিজ্ঞানসংক্রান্ত ব্যাপারে বিশেষ-অজ্ঞ বলে কেউ যদি ভুল ধরিয়ে দেন, তাহলে কৃতজ্ঞতা জানানো হবে। তবে, ভুল সংশোধন করা হবে কি-না, সেটা নিশ্চিত নয় ;-)। আর, লেখা নিয়ে কোন মন্তব্যের জবাব না দেওয়ারই বিশেষ সম্ভাবনা, কারণ লিখতে গিয়েই সব মেধা বা বিদ্যে খতম! :-(]