পাখিদের কিচির মিচির শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায় আমার। অলস জীব আমি, নয়-দশটা পর্যন্ত না ঘুমালে আমার চলে না, কিন্তু আজ পাখিটের হট্টগলে উঠতেই হল।
বাইরের সাথে যোগাযোগ আমার এমনিতেই কম। প্রতিদিনের কোলাহল, সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান এসব আমাকে ডাকে না। ওরা বেশ ভালো করেই জানে যে আমি অসামাজিক প্রকৃতির-সাত পাঁচ নিয়ে ভাবি না। ব্রাশটা হাতে নিয়ে অলসতায় ভর করে একপা একপা করে এগিয়ে গেলাম। বড় বড় বাড়িগুলোর কোলঘেষে বেরিয়ে আসলাম রাজপথে-দেখি রাস্তার পাশের গাছগুলোর একেবারে লন্ডভন্ড অবস্থা। কারও মাথা নেয়, যার মাথা আছে তার আবার ডালপালা নেয়। যেন নিষ্ঠুর-বর্বর কোন হাত মমতার পরশ বুলিয়ে গেছে ওদের ওপর! আচ্ছা, রাতে কি বড় কোন ঘুর্নিঝড় এসেছিল? জিজ্ঞেস করি ঘরছাড়া পাখিদের। কোন উত্তর মেলে না। সদ্য ডানা গজানো একটি ছানাপাখি লাফিয়ে ওঠে আনন্দে, ‘মহাপতঙ্গ আসছে, মহাপতঙ্গ আসছে!’ মা পাখিটি ধমকের সুরে বলে, ‘চুপ কর, যে আসতে না আসতে ঘর হারালি, সে এসে গেলে না জানি কিই ঘটে!’ মা পাখিটির চোখে মুখে অনিশ্চয়তার ছাপ। আমি অস্থির হয়ে উঠি, দৃষ্টি অবনত করে দেখি, চকচকে রাস্তা, পিচ ঢালা হয়েছে আরও একবার। সুযোগ বুঝে মাটিও শুষে নিয়েছে তার কিছুটা। বেশ ভালোই লাগছে। কিন্তু এমন খাপছাড়া আয়োজন কেন? জিজ্ঞেস করি টোকাইদের কাছে। ‘জানেন না প্রধানমন্ত্রী আসছে! হেঃ হেঃ !’ হেসে ওঠে টোকাই, হেসে উঠি আমি, হেসে ওঠে ন্যাংটো চারপাশ। প্রধানমন্ত্রী আসছে! প্রধানমন্ত্রী আসছে!
টোকাইদের পরনে বস্ত্র নেয়, অন্ন নেয় পেটে অথচ পিচঢালা রাস্তায় উপচে পড়ছে প্রধানমন্ত্রীর আগোমনী আয়োজন। টোকাইদের আপসোস নেয় তাতে, এতো সব সে বোঝে না, বোঝে না যে বাতাস খেয়ে তার হাড়গুলো ফুলিয়ে রেখেছে তার আয়োজনও এখন হুমকির মুখে।
আমি বাড়ি ফিরে আসি। খবরটা দিই কয়েকদিন আগে পৃথিবী আলোতে আসা আমার ছেলেকে,-কোটি কোটি টাকা খরচ করে প্রধানমন্ত্রী আসছে। আনন্দে লাফিয়ে ওঠে সে, আবার থমকে যায়, জানতে চায় আমার কাছে, ‘আচ্ছা বাবা, তাঁর আসতে এত খরচ হয় কেন?’ আমি দাঁত কেলিয়ে জবাব দিই, সিকুইরিটি দরকার যে! ‘যেখানে প্রধানমন্ত্রীর সিকুইরিটি দরকার সেখানে আমাকে সিকুইরিটি দেবে কে বাবা?’ আমি বোকার মত হাসতে হাসতে বলি, কেন আমি!
‘আর তোমার?’
আমি থেমে যাই। থেমে যায় আমার হাসি।
‘যেখানে একটা জীবন্ত মানুষের পেট চিরে বেরিয়ে আসলাম আমি; তাজা রক্ত এখনো আমার দেহে লেগে, সেখানে আমাকে নিয়ে কেউ ভাবছেনা কেন? বের হচ্ছে না কেন কোন মিছিল?’
আমি থেমে যাই, থেমে যায় আমার সকল অনুভূতি। আবার লাফিয়ে ওঠে সে- ‘হে! হে! প্রধানমন্ত্রী আসছে! প্রধানমন্ত্রী আসছে!’ লাফিয়ে উঠি আমি, লাফিয়ে ওঠে বিপন্ন মানবতা : প্রধানমন্ত্রী আসছে! প্রধানমন্ত্রী আসছে!
বি দ্র : লেখাটি ২০০৩ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আসার একদিন আগে একটি লোকাল পত্রিকায় ছাপা হয়। আমি তখন উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র। প্রকাশিত হবার পর আমাকে বড় আকারে হুমকি দেওয়া হয়। এবং ঐ অঞ্চলের কাগজে নিশিদ্ধ ঘোষনা করে।
খবরটা দিই কয়েকদিন আগে পৃথিবী আলোতে আসা আমার ছেলেকে,-কোটি কোটি টাকা খরচ করে প্রধানমন্ত্রী আসছে।
ছো্ট্ট লেখাটি ভালো লাগলো। তবে এটি রম্য রচনা না হয়ে ব্লগাড্ডা হলেই ভালো হতো। লেখায় কিছু টাইপো আছে, আশাকরি ঠিক করে দেবেন।
চলুক। :yes:
২০০৩ সাল থেকে দৃশ্যপট বদলায়নি, তবে এসব ক্ষেত্রে এলাকা ও লোকাল পত্রিকা নাম দিলে লেখাটির গুরুত্ব বাড়ত।