মস্তিষ্কে, অনুরণন সংগোপনে (শূন্য)
এক মহাবিস্ফোরণে ফলে সৃষ্টি হল পৃথিবী, সেই জলন্ত অগ্নিপিন্ড ক্রমেই ঠান্ডা হয়ে এলো একসময়, কিভাবে কিভাবে যেন কেমন জটিল জটিল রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে উদ্ভব হল প্রথম প্রানের, এই কথাগুলো যখন শুনতাম স্কুলবেলায়, কেমন যেন বিস্ময়কর লাগতো! সবই রহস্য! তখন আমার সীমিত জ্ঞানের ভান্ডারকে কেবল বিস্মিত করত না একটা ব্যাপার, প্রথম প্রানের ছিল না মস্তিষ্ক। থাকবে কি করে? তার তো নাকি নিউক্লিয়াসটাই ছিল না সুগঠিত। পৃথিবীর জন্ম, প্রানের উদ্ভব এসব কিছু বিজ্ঞান আর ধর্মের ঘাত প্রতিঘাতে রহস্যময় ঠেকলেও আমার সাধারণ জ্ঞান ঠিকই মেনে নিয়েছিল, বেঁচে থাকার জন্য মস্তিষ্কের প্রয়োজন নেই। মানুষের মস্তিষ্ক থাকলেও মানুষের শরীরে বাসা বাধা ব্যাকটেরিয়াটা মস্তিষ্ক ছাড়াই দিব্যি বেঁচে আছে আর সু্যোগ পেলেই আমা্র মত মানুষকে অসুস্থ করে ফেলছে!
আগেই জেনেছি, আমাদের পৃথিবীতে প্রানের উদ্ভবের প্রায় বহু বহু কাল পরে এতে স্নায়ু কোষের দেখা মিলেছে, প্রায় ৭০০ মিলিয়ন বছর আগে। বিবর্তনের সবগুলো অধ্যায় এখনো আমাদের কাছে অজানা, সেইরকম অজানা এই স্নায়ু কোষ উদ্ভবের প্রক্রিয়াটাও। সাম্প্রতিক কালের বিজ্ঞানীদের ধারণা, সামুদ্রিক স্পঞ্জের মধযেই প্রথম শুরু হয়েছিল স্নায়ু কোষের উদ্ভব প্রকিয়া। পর্যবেক্ষনে দেখা গেছে, স্পঞ্জেরা স্পর্শ বা পারিপার্শ্বিক চাপ অনুভব করতে পারে এবং তাদের শরীর তাতে সংকুচিত হয়। ২০০৭ সালের ৬ই জুন ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, সান্টা বারবাবার বিবর্তনবাদী জীববিজ্ঞানীরা প্রকাশ করেন, স্পঞ্জের স্নায়ুকোষ না থাকলেও স্পঞ্জের মধ্যে খুঁজে পাওয়া গেছে ২৫টা জিন যা মানুষের সাইন্যাপ্সের যোগাযোগ রক্ষাকারী জিনগুলোর অনুরূপ। আর বিস্ময়কর ব্যাপার হল, স্পঞ্জ জিনগুলো যে প্রোটিন তৈরী করে তাও মানবদেহের সিন্যাপ্সের প্রোটিনগুলোর মত করেই নিজেদের মাঝে যোগাযোগ করে। হয়তো সেখান থেকেই শুরু হয়েছিল স্নায়ুতন্ত্র সৃষ্টির প্রক্রিয়া।
স্নায়ুকোষের উদ্ভব কি করে হয়েছিল, তা এখনো আমাদের কাছে অজানা রইলেও বিজ্ঞানীরা স্নায়ুতন্ত্রের কাজ এবং গঠনের ভিত্তিতে একে বেশ কিছুভাগে আলাদা করে ফেলেছেন। স্নায়ুজালক, বিভাজিত স্নায়ুতন্ত্র, গ্যাঙ্গগ্লিয়া, মস্তিষ্ক এদের ধরন পুরোপুরিই আলাদা ধরনের। হালকাভাবে একটু চোখ বুলিয়ে নেয়া যাক এগুলোতে
স্নায়ুজালক
জালের মত গঠনের মস্তিষ্ক বিহীন সরল স্নায়ুতন্ত্রকে বলা হয় নার্ভ নেট বা স্নায়ুজালক। এই ধরনের স্নায়ুজালকের দেখা মেলে হাইড্রা, জেলীফিশ, সামুদ্রিক অ্যানেমোনদের শরীরে। স্নায়ুজালকের স্নায়িকোষগুলো বিচ্ছিন্ন কিন্তু সাইন্যাপ্স দ্বারা অন্তঃসংযুক্ত। এদের শরীরে স্নায়বিক যোগাযোগ উভয়মুখী। সাধারণত, মুখের চারিদিকে স্নায়ুকোষের আধিক্য দেখা যায়। এরাও স্পর্শ, আলো, রাসায়নিক পরিবর্তন ইত্যাদিতে সাড়া দিতে সক্ষম।
সেগমেন্টেড নার্ভ ট্রাঙ্ক বা বিভাজিত স্নায়ুতন্ত্রঃ
সাধারনত ফ্ল্যাটোয়ার্মে এই ধরনের দ্বিপ্রতিসম স্নায়ুতন্ত্র দেখা যায় যাতে থাকে স্নায়ুবজ্জু দিয়ে মইয়ের মত করে সংযুক্ত স্নায়ুজালক। মাথার দিকে থাকে পুঞ্জীভূত স্নায়ুকোষ যা অনেকটা মস্তিষ্কের মত কাজ করে। এই পুঞ্জীভূত স্নায়ুকোষ আবার নিচের মই আকৃতির স্নায়ু জালকের সাথেও সংযুক্ত।
গ্যাঙ্গগ্লিয়া বা পুঞ্জীভূত স্নায়ুকোষঃ
পুঞ্জীভূত স্নায়ুকোষ অনেকটা মস্তিষ্কের মত কাজ করে। সাধারণত দেহের অগ্রভাগে বা মাথার দিকে এই পুঞ্জীভূত স্নায়ুকোষের দেখা মেলে। স্কুইড জাতীয় প্রানীর শরীরে দেখা যায় এদের।
মস্তিষ্কঃ
মেরুরজ্জু সমেত সুগঠিত স্নায়ুতন্ত্রে মূল অংশই হল মস্তিষ্ক। কর্ডেট শ্রেনীতেই এই ধরনের সুগঠিত মস্তিষ্কের প্রাধান্য দেখা যায়। মস্তিষ্ক সুগঠিত হওয়ার সাথে সাথে প্রানীর চলন এবং শারীরিক গঠন হয়ে গেছে জটিলতর। এই মস্তিষ্ক নিয়েই হবে এবার আমাদের আলোচনা।
কর্ডেটের এই ক্রমাগত জটিলতর বিবর্তনে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেছে তাদের সেরেব্রাল হেমিস্ফেয়ার। একটু খেয়াল করলেই বুঝতে পারবো, মাছ থেকে ব্যাঙে, ব্যাঙ থেকে পাখিতে, পাখি থেকে মানুষে বেড়ে গেছে সেরেব্রাল হেমিস্ফেয়ারের আকৃতি। বেড়েছে সেরেব্রাম এবং সেরেবেলাম উভয়েরই আকার। মাছ বা ব্যাঙের ক্ষেত্রে যে মস্তিষ্ক ছিল অনেকটাই ছোট্ট এবং মসৃন, পাখির মস্তিষ্কে ততটা মসৃনতা দেখা যায় না। সবশেষে স্তন্যপায়ী প্রায়ীর ক্ষেত্রে দেখা যায় বেশ খানিকটা ভাঁজ হওয়া মস্তিষ্ক। এই ভাঁজ হওয়া ব্যাপারটাই এই জাতীয় প্রানীকে দিয়ে দিল একটা বাড়তি সুবিধা। অপেক্ষাকৃত ছোট খুলির মধ্যে এখন আগের চেয়ে বড় পৃষ্ঠবিশিষ্ট মস্তিষ্ক ভাঁজ হয়ে হয়ে জায়গা করে নিল। এইভাবে ক্রমেই পূর্বপুরুষদের চেয়ে বেড়েছে দেহের তুলোনায় মস্তিষ্কের পরিমাণ। গঠনের সাথে সাথেই জটিল হয়েছে প্রানীর চলন এবং আচরন। যাই হোক, আমরা মূলত আস্তে আস্তে মানুষের মস্তিষ্ক ও আচরনের দিকেই যেতে চাই। যদিও মানুষের মস্তিষ্কের গঠন অন্য সব প্রানীদের চেয়ে উন্নত এবং জটিল, কিন্তু সব মস্তিষ্ক বিশিষ্ট প্রানীই হয়ত সুদূর অতীতের স্পঞ্জের উত্তরসূরী। আমাদের উত্তরাধিকার স্পঞ্জ থেকেই কিনা, সে নিয়ে বিজ্ঞানীদের সন্দেহ থাকলেও আমরা যে একই আদি প্রজাতির স্নায়ুতন্ত্র পেয়েছি, সে নিয়ে বিজ্ঞানীদের নেই কোন সন্দেহ। কারন সব প্রানীর মস্তিষ্ক বা স্নায়ুতন্ত্রেই আমরা পাচ্ছি কিছু সাধারন বৈশিষ্ট যা প্রমান করে আমাদের অভিন্ন বংশধারা।
মানব বিবর্তনের নেপথ্যে
ট্যাক্সোনমিস্টরা আমাদের ফেলেছেন প্রাইমেট বর্গে, আরেকটু পরিষ্কার করে বললে আমরা পড়ি স্তন্যপায়ী প্রানীদের দলে। প্রানীজগতে আমরা ঠিক কোথায় আছি, তা বোঝানোর জন্য, আমরা মাত্র ২৩০ – ২৭০ টা প্রাইমেটের মাঝে অন্য সবপ্রানীর তুলনায় সামগ্রিকভাবে যোগ্যতায় দক্ষতায় অনন্য এক প্রজাতি, এইটুকু আত্মস্বীকৃতি নেহায়েত কম নয়। ওরাঙ্গওটাং, গরিলা, শিম্পাঞ্জীর সাথে বংশানুক্রমিক মিলের কারনেই আমরা এপ উপদলভুক্তও। নীচের ছবিটাই আমাকে মানব বিবর্তনের ধারা আরো বিশদ ব্যাখ্যার হাত থেকে মুক্তি দিয়ে দিচ্ছে।
খুব সম্ভবত মানুষের এক হোমিনিড পূর্বসুরী ছিল অ্যাস্ট্রালোপিথেকাস যাদের অস্তিত্ব ছিল প্রায় ৪ মিলিয়ন বছর আগে। ফসিল রেকর্ড থেকে পাওয়া তথ্যানুসারে বিজ্ঞানীদের অভিমত, অ্যাস্ট্রালোপিথেকাসেরা সোজা হয়ে দাড়াতে শিখেছিল। তাদের পদচিহ্ন আর হাড়ের গঠনই বলে দেয়, তারা যতটা ছিল এপের মত তার চেয়ে বেশী ছিল মানুষের মত। আস্ট্রালোপিথেকাসদের মস্তিষ্কের আকার প্রায় এপদের মতই ছিল, বিবর্তনের ধারাবাহিকায় ক্রমাগত বেড়েছে তাদের মানব উত্তরসূরীদের মস্তিষ্কের আকার।
প্রাইমেটদের সাধারণ বৈশিষ্ট্য
খুব সাধারণ ভাবলে যদি আমাদের খুব পরিচিত কতগুলো প্রাইমেটের দিকে তাকাই, তাহলেই কতগুলো সাধারণ বৈশিষ্ট চোখে পড়ে যাবে। প্রাইমেটরা সাধারণত তাদের হাতের ব্যবহার নিয়ন্ত্রনে দক্ষ হয়। বিবর্তন পরিক্রমায় তারা পেয়েছে বুড়ো আঙ্গুলকে যথেচ্ছ ঘোরাবার স্বাধীনতা, আর সেই সাথে বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে অবশিষ্ট আঙ্গুলগুলোর অগ্রভাগ স্পর্শ করার ক্ষমতা, যা তাদের যেকোন কিছু হাতের মুঠোয় ধরতে সাহায্য করে। ভাবুন বানরের কথা, তারা কি সুন্দর করে এক গাছের ডাল থেকে আরেক গাছে চলে যাচ্ছে, মুঠোর বন্ধনে গাছের ডাল। এই দক্ষতা এই জাতীয় প্রানী গুলোকে গাছের ফলমূল, পাতা, ইত্যাদি সংগ্রহে দিয়েছিল বিশেষ সুবিধা। আরেকটু ভালোভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, এদের আঙ্গুলের নখর ক্রমাগত নখে রূপান্তরিত হয়ে গেছে।
এইবার দৃষ্টি ফেরাই চোখের দিকে। পাখি বা মাছেদের ক্ষেত্রে চোখের অবস্থান ছিলো মাথার দুপাশে, তাই তাদের পক্ষে একটি চোখে কেবল একটা দিকের বস্তুগুলোই দেখা সম্ভব হত, কোন বিশেষ বস্তু কে দেখার জন্য একসাথে দুটি চোখ ব্যবহার করা সম্ভব ছিলো না। প্রাইমেটদের চোখ এইখানেও পেয়ে গেছে বিশেষ সুবিধা, তাদের চোখ দুটো মাথার সামনের দিকে অবস্থিত হওয়ায় তারা কোন বিশেষ বস্তুকে দেখার জন্য একই সাথে দুই চোখ দেখার ক্ষমতা রাখছে। তাদের এই বাইনোকিউলার দৃষ্টির কারণে তারা ত্রিমাত্রিক বস্তু দেখার সুবিধা পাচ্ছে, বস্তুর উচ্চতা বা গভীরতা অনুধাবন করতে পারছে আর সাথে যুক্ত হয়েছে রঙ। তাই প্রাইমেটদের পৃথিবীটা অন্য প্রানীদের মত একরঙ্গা বা দ্বি-রঙ্গা নয়, রঙ্গে রঙ্গে রাঙ্গা!
সাধারণত, প্রাইমেট বর্গের প্রানীরা, প্রত্যেকবার গর্ভধারনে একটি করেই সন্তান প্রসব করে এবং তাদের গর্ভধারন কালও অন্যদের তুলনায় লম্বা। ফলশ্রুতিতে প্রাইমেট শিশুরা পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠই হচ্ছে অধিক পরিপক্কতা নিয়ে। তারপরও একটি প্রাইমেট শিশুর পরিপূর্ণ অবস্থায় আসতে লেগে যায় অনেক দীর্ঘসময়, দরকার হয় পরিচর্যা। এই সময়কালটা অনেকাংশেই প্রাইমেটদের সামাজিক আচরণের জন্য দায়ী।
অধিকাংশ প্রাইমেটদের ক্ষেত্রেই সোজা হয়ে দাড়াবার বা বসার প্রবণতা দেখা যায়। পরিপূর্ণভাবে মানুষের মত বা আধুনিক মানুষের নিকট পূর্বপুরুষের মত দাড়াতে না পারলেও তারা ক্রমাগত দেহের ভরকেন্দ্রের নিয়ন্ত্রন অর্জন করেছে। আর সাথে, দেহের লম্বা হাড়গুলোর সংযোগস্থলের ঘূর্ণন কোণও বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রাইমেটদের ত্রিমাত্রিক দৃষ্টিশক্তি, নাকের গড়ন এবং মস্তিষ্কের ঘ্রানেন্দ্রিয়ের এলাকায় সংকোচন, জটিল স্বরযন্ত্র, সাজসজ্জার প্রবণতা, সামাজিকতা, সন্তান লালন পালন এইসব বৈশিষ্টের বেশ উন্নত সমন্বয়ই অন্য প্রানীদের চেয়ে তাদের বেঁচে থাকার জন্য দিয়েছে বাড়তি সুবিধা। আর এই সবকিছুর পিছনে মূল চাবিকাঠি হিসাবে কাজ করেছে তাদের উন্নততর মস্তিষ্কের গঠন এবং কার্যক্ষমতা।
দেহের ভরের সাথে মস্তিষ্কের আকারের সম্পর্ক
The Evolution of the Brain and Intelligence বইতে হ্যারি জেফারসন প্রানীর জটিল আচরণের সাথে মস্তিষ্কের আকারের সম্পর্ক বোঝাতে ব্যবহার করেন principle of proper mass. তিনি একটি সূচক ব্যবহার করেন, যাতে তিনি দেখান, মস্তিষ্কের আকার বৃদ্ধি শরীরের আকার বৃদ্ধির প্রায় সমানুপাতিক। কোন প্রানীর ওজন এবং আয়তন থেকে সেই প্রানীর মস্তিষ্কের আকার সম্পর্কে অনুমান করা যায়। এই সূচককে বলা যায়, মস্তিষ্কের আয়তন-দেহের ভর এর অনুপাত। ছবিতে x অক্ষ বরাবর দেহের ওজন এবং y অক্ষ বরাবর মস্তিষ্কের ওজন দেখান হয়েছে। ডায়াগোনাল রেখাটা প্রানীর মস্তিষ্কের প্রত্যাশিত আকার।
মস্তিষ্কের সাথে দেহের অজনের এর অনুপাতকে Encephalization Quotient (EQ) বলা হয়, যা আসলে প্রত্যেক প্রজাতির মস্তিষ্কের ওজনের সংখ্যাগত অনুমান। গাণিতিক ভাবে লিখলে,
EQ= Weight (Brain)/Expected Weight (Brain)। মস্তিষ্কের প্রত্যাশিত ভর বা EW= 0.12 w(Body)^2/3 যদিও কিছু শ্রেনীর জন্য এই ঘাত 2/3 এর বদলে 3/4 ই বেশী নিকটতম।
Encephalization Quotient এর ছবি থেকে স্পষ্ট ভাবেই দেখা যাচ্ছে, হোমিনিডদের দেহের অনুপাতে তাদের মস্তিষ্কের আকার বেড়ে গেছে। এখন প্রশ্ন হল, কেন হোমিনিডদের মস্তিষ্কের আকার বেড়ে গেল? বিজ্ঞানীরা, এই প্রশ্নের উত্তরে নানান মতামত দিয়েছেন, যদিও সবকটা মতামতই অনুমান নির্ভর, তবে অনুমানগুলো অযৌক্তিক নয়।
মস্তিষ্কের আকার বৃদ্ধিতে জলবায়ু এবং পরিবেশগত পরিবর্তন বেশ ভূমিকা রেখেছে বলেই ধারণা করা হয়। প্রানীরা গভীর এবং আদ্র অরণ্যভূমি থেকে যতই শুষ্ক তৃণভূমির দিকে এসেছে, ততই হোমিনিডদের সোজা হয়ে দাড়াবার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। টিকে থাকার চাপের কারণেই এইসব জায়গায় আস্তে আস্তে আধিপত্যবিস্তার করেছে মানব বৈশিষ্টের দিকে বিবর্তিত হোমিনিডেরাই। পরিবর্তন এসেছে তাদের খ্যাদ্যাভাসেও। বিজ্ঞানীদের মতে, হোমো হাবিলিস, হোমো ইরেকটাস, হোমো সেপিয়েন্স সবকটা প্রজাতির বিবর্তনের পিছে এই পরিবেশের প্রভাবই অন্যতম কারণ। পরবর্তিত পরিবেশের সাথে যারা খাপ খাইয়ে নিতে পেরেছে তারাই টিকে গেছে শেষ পর্যন্ত। আর এই সব কটা ক্ষেত্রেই বড় মস্তিষ্কের অধিকারীরাই পেয়েছে সুবিধা, কারণ তাদের ছিলো পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নেবার মত বুদ্ধিমত্তা!
মানব বিবর্তনে মস্তিষ্কের ভূমিকা নিয়ে যেকটা হাইপোথেসিস আছে, তার মধ্যে আমরা সর্বপেক্ষা আলোচিত, গ্রহণযোগ্য তিনটি হাইপোথেসিস নিয়ে আলোচনা করব।
প্রাইমেটদের জীবনধারা
গল্পটা অনেকটা এই রকম, পাকা ফল খেয়ে কোন একটা প্রানী জীবন ধারন করে, তাহলে, তার কয়েকটি বৈশিষ্টের দরকার হবে। প্রানীটিকে ফল পাকা নাকি কাঁচা এটা রঙ দেখে বুঝতে হবে, ফলের এই গাছটি কোথায় আছে, সেটা জানতে হবে, বছরের কোন কোন সময়ে এই গাছের ফল খাওয়া যাবে, তা বুঝতে হবে, পাকা ফল খাওয়ার জন্য তার দক্ষতার সাথে গাছে উঠতে হবে, আর ফল সংগ্রহের জন্য নিজের প্রজাতির মধ্যে এবং অন্য প্রজাতির প্রানীর সাথে সহযোগিতার সম্পর্ক তৈরী করতে হবে। আর এইসব জটিল বৈশিষ্ট অর্জন করতে সন্দেহাতীত ভাবেই প্রয়োজন একটা জ়টিল কর্মসাধনে সক্ষম বড় মস্তিষ্ক। যাদের এই বৈশিষ্টগুলো ছিল, তারাই ফল খেয়ে ভালোভাবে পরিবেশে টিকে থাকতে পেরেছে। বিবর্তনের ধারায় যারা ছিল বড় মস্তিষ্কের উত্তরাধীকারী তারাই সাফল্য অর্জন করেছে টিকে থাকার এই যুদ্ধে। ১৯৯৩ সালে ক্যাথেরিন মিল্টন তার একটা সমীক্ষায় দেখিয়েছেন ফল সংগ্রহ করে জীবনধারনের সাফল্যের সাথে বড় আকারের মস্তিষ্কের গুরুত্ব এবং সম্পর্ক।
মানুষ বড় মস্তিষ্কের উত্তরাধীকারী বলেই বলা যায় মানুষ ফলভক্ষনকারী প্রানীদের উত্তরসুরী। আসলে ফলভক্ষনের কারণে বেড়ে গেছে মানুষের মস্তিষ্কের আয়তন, তা নয়, বরং, বড় মস্তিষ্কের অধিকারীরাই ছিল ফল খেয়ে জীবন ধারণের সক্ষম। ফল সংগ্রহের জন্য তাদের যে অনুসন্ধান চালাতে হত, তা নিঃসন্দেহে প্রতিযোগিতামূলক! উপরের ছবিটা ক্যাথেরিন মিল্টনের উপস্থাপিত তত্ত্বকেই সমর্থন করে। এখানে দেখা যাচ্ছে, স্পাইডার মাংকি, যে তার খ্যাদের প্রয়োজনের শতকরা ৭২ ভাগ ফল ভক্ষন করে মেটায়, তার মস্তিষ্কের ভর ১০৭ গ্রাম, যেখানে হাওলার মাংকি, যার খাদ্যের শতকরা ৪২ ভাগ ফল, তার মস্তিষ্কের ভর মাত্র ৫০ গ্রাম।
শারীরবৃত্তিয় পরিবর্তনঃ
১৯৯০ সালে ডিন ফক নামের একজন নিউরোসাইকোলজিস্ট তার সমীক্ষায় উপস্থাপন করে মস্তিষ্কের বিবর্তনে এই রেডিয়েটর তত্ত্ব। চিন্তা করে দেখুন একটা গাড়ির রেডিয়েটরের কথা, প্রচুর তাপ উৎপাদিত হচ্ছে, তা ঠান্ডা করার ও প্রয়োজন হচ্ছে। রেডিয়েটরের পৃষ্ঠদেশ যত বড় হবে, তা ঠান্ডা করা তত সহজ হবে। এটা রেডিয়েটর কেন, তাপ বিকিরন করে এমন যে কোন পদার্থের জন্যই সত্য। কত দ্রুত উত্তপ্ত বস্তু ঠান্ডা হবে, বা কতক্ষন বস্তুটাকে কার্যকরী অবস্থায় রাখা যাবে, তা নির্ভর করে পৃষ্ঠদেশের ক্ষেত্রফলের মত। আমাদের মস্তিষ্কও কাজ করে অনেকটা গাড়ীর ইঞ্জিনের মতই, প্রতিদিন আমরা যত চিন্তা করছি, যত জটিল কাজে লিপ্ত হচ্ছি, যত আমাদের জীবনযাপন হচ্ছে জটিল, ততই আমাদের মস্তিষ্কের কাজ বেড়ে যাচ্ছে। বাড়ছে তাতে তাপের উৎপাদনও। তাই একে ঠান্ডাও করার প্রয়োজন বেড়েছে। গাড়ির রেডিয়েটর ঠান্ডা করতে আমরা যেমন বাতাস বা পানি ব্যবহার করি, তেমনি আমাদের মস্তিষ্ক ঠান্ডা করতেও প্রয়োজন প্রচুর রক্ত চলাচল। প্রয়োজন বড় পৃষ্ঠদেশ। আর সেই প্রয়োজনের তাগিদেই বেড়েছে মস্তিষ্কের আয়তন। অনেক ভাজে ভাজ হয়ে বেড়েছে বহিঃস্তরে শিরা উপশিরা কৈশিক জালিকা। সেইসাথে আরেকটা ব্যাপারও ঘটে গেছে। অধিক রক্ত চলাচলের কারণে মস্তিষ্ক অক্সিজেন আর গ্লুকোজও পেয়েছে বেশী। বেড়েছে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা। মানুষের মস্তিষ্ক, যা দেহের মোট ভরের ২% ও না, তা একাই ব্যবহার করে আমাদের অক্সিজেন সরবরাহের শতকরা ২৫ ভাগ আর গ্লুকোজ সরবরাহের শতকরা ৭০ ভাগ! এইভাবেই মস্তিষ্কের আয়তন বৃদ্ধি কেবল মানুষকে নিয়ে গেছে প্রয়োজন আর সরবরাহের সাম্যবিন্দুর নিকটে!
আরেকটা লক্ষ্যনীয় পরিবর্তন হল, বিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের চোয়ালের গঠনে পরিবর্তিত হয়েছে। কামড়ানো এবং চিবানোর জন্য যে বড় এবং শক্ত হাড় এবং মাংশপেশী ছিল, তা যখন আগের চেয়ে কম যায়গা নিতে শুরু করল, তখন মস্তিষ্কও আয়তন বৃদ্ধি প্রাপ্ত হবার মত যথেষ্ট জায়গা পেয়ে গেল। হ্যানসেল স্টেডম্যান ও তার দলের মতে (২০০৪), প্রায় ২.৪ মিলিয়ন বছর আগে ঘটা এমন এক মিউটেশনের ফলেই এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে।
অপরিণতবস্থা
একটু অদ্ভুত শোনাচ্ছে শব্দটা, তাই না? ইংরেজীতে শব্দটা হল Neoteny. কোন প্রজাতির পরিণত হবার হার কমে যাবার প্রকিয়াকে বলা হয় নিওটেনি। যখন একটা শিশু জন্মগ্রহন করে, তার মস্তিষ্কের আয়তন থাকে তার শরীরের তুলনায় বেশী। এখন কোন এক জেনেটিক মিউটেশনের কারণে যদি শিশুটির শরীর পর্যাপ্ত পরিমাণ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত না হয়, তাহলে মস্তিষ্কের ওজন-দেহের ওজনের যে অনুপাত তা বেড়ে যাবে। মানুষের পূর্বপুরুষের সাথে তুলনা করলে দেখা যায়, আধুনিক মানুষের সাথেও এমনি একটা ঘটনা ঘটেছে। জন্মের পরবর্তী সময়েই মস্তিষ্ক পরিণত হয়ে উঠলেও সময়ের সাথে সাথে দেহের বৃদ্ধি ঘটেনি যথার্থভাবে। বিজ্ঞানীরা পর্যবেক্ষন করে দেখেছেন, মানব শিশুর মাথার আকৃতির সাথে শিম্পাঞ্জীর মাথার আকৃতির বেশ খানিকটাই মিল পাওয়া যায় কিন্তু পরিনত অবস্থায় আর ততখানি মিল দেখা যায় না। এখানেই ক্ষান্ত নয়, মানব শিশুর অনেক বৈশিষ্টের সাথেই মিল খুঁজে পাওয়া যায় শিম্পাঞ্জী শিশুর। জন্মের পরও মানুষের মস্তিষ্ক বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়েছে যতখানি, ততখানি হয়নি শিম্পাঞ্জীর। কিন্তু শিম্পাঞ্জীর মস্তিষ্ক বৃদ্ধি না হলেও দৈহিক বৃদ্ধি ঠিকই হয়েছে। এভাবেই মানুষ আর শিম্পাঞ্জীর EQ হয়ে গেছে ভিন্ন। ধারণা করা হয়, মানুষ হল শিম্পাঞ্জীর নিওটেনিক রূপ। প্রানী জগতে এমন নিওটেনির উদাহরণ আরো পাওয়া যায়।
ম্যাককিনির মতে (১৯৯৮) নিওটেনির কারণেই মানুষের মস্তিষ্কের কোষগুলো বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হবার জন্য বেশী সময় পেয়েছে। মানুষের ক্ষেত্রে অধিকাংশ মস্তিষ্ক কোষ তৈরী হয় জন্মের আগে এবং পরে (prenatal & neonatal period)। তারপর আর মস্তিষ্ক কোষ জন্মায় না, যা ঘটে তা কেবল দৈহিক বৃদ্ধি। তাই গর্ভকালীন অবস্থা এবং গর্ভপরবর্তী বৃদ্ধি পর্যায় যতই দীর্ঘায়িত হবে ততই বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হবে মস্তিষ্কের আয়তন বৃদ্ধি!
আধুনিক মানুষ হয়ে উঠার পিছনের জেনেটিক বিবর্তন
জীববিজ্ঞানের জগতে মস্তিষ্ক নিয়ে গবেষণা তুলনামূলক ভাবে নবীন একটা শাখা। বিজ্ঞানীদের কাছে বিবর্তন এমন এক বিশাল সমুদ্র, যার মাঝে মানব বিবর্তনকে একটা ক্ষুদ্র দ্বীপপুঞ্জ বলা যায়, সেই দ্বীপপুঞ্জের জন্ম রূপান্তর নিয়ে চলছে তাদের নিরলস গবেষনা। বিবর্তনে মস্তিষ্কের ভুমিকা ও স্নায়ুতান্ত্রিক বিবর্তন নিয়ে আমরা এতোকাল ধরে নানান সমীক্ষা, আলোচনা, যুক্তি দাড় করার চেষ্টা করে আসলেও এর মূল রহস্য কিন্তু লুকিয়ে আছে আমাদের জেনেটিক কোডের মধ্যেই। মানব জিনোম সিকোয়েন্স বের করে ফেলার পরই জীববিজ্ঞানের গবেষনায় চলে এসেছে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন। রেডিয়েটর তত্ত্ব, নিওটেনি আরো কত কিছু নিয়েই না চলছে আমাদের জল্পনা কল্পনা, এই তত্ত্ব গুলো আমাদের একটা একটা করে মানব বিবর্তনের অনুমান দিতে পারলেও কিভাবে আমরা আধুনিক মানুষ হয়ে উঠলাম, তার সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা দিতে পারে না। যার ব্যাখ্যা দিতে পারবে জেনেটিক সিকোয়েন্স।
২০০৯ সালে সায়েন্টিফিক আমেরিকানে প্রকাশিত “What make us Human?” শীর্ষক গবেষণাপত্রে ক্যাথেরিন এস. পোলার্ড প্রকাশ করেছেন আমাদের মানুষ হয়ে ওঠার জন্য দায়ী কতুগুলো জিনের কথা। সিকোয়েন্স গুলোর নাম HAR1, F OXP2, AMY1, ASPM, LCT, HAR2। শিম্পাঞ্জীর সাথে আমাদের জেনেটিক মিল শতকতা ৯৯ ভাগ, অথচ এক ভাগ অমিলের কারণেই আমরা কতটা আলাদা, ভাবতে অবাকই লাগে।
ক্যাথেরিন দেখিয়েছেন, Human Accelerated Region নামে একটি জেনেটিক সিকোয়েন্স মানব বিবর্তনের সময়কালে এসে দাড়াবার আগে খুব কম পরিবর্তিত হয়েছে।
এর ১১৮ টি বেসের মধ্যে যার মুরগি থেকে শিম্পাঞ্জীতে আসতে পরিবর্তিত হয়েছে মাত্র দুটি, আর শিম্পাঞ্জী থেকে মানুষ পর্যন্ত আসতে পরিবর্তিত হয়ে গেছে ১৮টি। এই ১৮টি বেসই মানব কর্টেক্স বিকাশে রেখেছে তাদের ভুমিকা।
এইরকম করে তিনি আরো কতগুলো সিকোয়েন্সের ভূমিকা দেখিয়েছেন যারা মানব বিবর্তনে রেখেছে তাদের অনন্য ভূমিকা। এই লেখায় আমরা মানব মস্তিষ্ক কিভাবে বড় হয়ে গেল, সেই রহস্য উদঘাটনে অনেক সম্ভাব্য কারণ দেখানোর চেষ্টা করেছি, ক্যাথেরিনের গবেষণাপত্র অনুসারে, ASPM সিকোয়েন্সের কারণেই বড় হয়ে গেছে মানব মস্তিষ্ক, যা শিম্পাঞ্জী থেকে আধুনিক মানুষ পর্যন্ত বিবর্তনের সময় কালেই মিউটেশনের কারণের বদলে গেছে। কোনভাবে যদি এই ASPM সিকোয়েন্সে মিউটেশন ঘটে যায় তাহলে মানব মস্তিষ্কের আয়তন কমেও যেতে পারে। সেক্ষেত্রে মানব বিবর্তনে ঘটে যাবে না্টকীয় পরিবর্তন। শুধু তাই নয়, তার মতে, HAR1 সিকোয়েন্সের কার্যকারিতার জন্যই আমাদের মস্তিষ্ক এইভাবে ভাঁজ হয়ে অল্প জায়গার মধ্যেই স্থান করে নিচ্ছে, এই সিকোয়েন্সের কাজ বিঘ্ন হলে মসৃন মস্তিষ্কের উদ্ভব হবে, যা মানুষের মৃতুর কারণ হবে। তার গবেষনার ফলাফলই আমাদের আধুনিক মানুষ হয়ে ওঠার পিছনের জেনেটিক কারণগুলো দেখিয়ে দিচ্ছে। হয়তো তার গবেষণায় চূড়ান্ত নয়, সময়ের সাথে সাথে বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করে ফেলবে আরো চমকদার কিছু মিউটেশনের কাহিনী, তবে একথা আজ পরিষ্কার, মানব বিবর্তনের ইতিহাস এবার আমাদের জিনের মধ্যেই খুঁজে বের করতে হবে। সেই সাথে মস্তিষ্কের পরিবর্তিত হবার গল্পও বলে দেবে জিনই। সেপথেই এগুচ্ছে গবেষনার গতিপথ!
তথ্যসূত্রঃ
1. Introduction to Brain & Behavior by Bryan Kolb / Ian Q. Whishaw, 2001
2. What make us human?, Katherine S. Pollard, Scientific American, 2009
3. “The nervous system of invertebrates: an evolutionary and comparative approach” by Wolfram, Page no: 25-26
4. http://faculty.washington.edu/chudler/invert.html
5. http://anthro.palomar.edu/primate/table_primates.htm
6. http://anthro.palomar.edu/primate/prim_1.htm
7. http://en.wikipedia.org/wiki/Brain-to-body_mass_ratio
@নীল রোদ্দুর,
লিখাটি খুবই ভাল লেগেছে। বিবর্তন নিয়ে আরো বেশী বেশী লিখা ও আলোচনার দরকার। সাধারন মানুষের ভূল ধারনা নিরসনের জন্য এর গুরুত্ব আপিরিসীম। বন্যা আহমেদের ‘বিবর্তনের পথ ধরে’ ও তার অন্যান্য প্রবন্ধ থেকে অনেক কিছু জেনেছি। আপনার লিখা ও মন্তব/আলোচনা থেকেও ওনেক কিছু শিখলাম।
আমরা জানি ‘জীবনের’ উৎপত্তির সেই পথম লগ্ন থেকে ‘ব্যাকটেরিয়ারাই’ প্রকৃতির সমস্ত প্রতিকুল অবস্থাকে অতিক্রম করে সাফল্যের সাথে টিকে আছে, যদিও পৃথিবীর ইতিহাসের অন্যান্য ৯৫% species বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। সেক্ষেত্রে প্রকৃতিতে টিকে থাকার ব্যাপারটিতে, পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নেবার প্রতিযোগীতায়, ‘বড় মস্তিষ্ক ও বুদ্ধিদীপ্ত’ প্রানীরা Unicellular Bacteria -এর তুলনায় বেশী পারদর্শী তা কিন্তু প্রমান হচ্ছে না।
এখানে মনে হচ্ছে ‘মস্তিষ্কের আকার‘ বলতে চেয়েছেন।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
@গোলাপ,
এইখানে আসলে পরিবর্তিত জীবনধারাটাও মনে হয় হিসাবে আনা প্রয়োজন। একটা প্রাইমেটের বেঁচে থাকার জন্য ব্যাকটেরিয়ার সাথে প্রতিযোগিতায় নামতে হচ্ছে না এইখানে। আর প্রাইমেট তার দেহগত যোগ্যতা নিয়ে প্রকৃতির সাথে খাপ খাইয়েই বাঁচবে, ব্যকটেরিয়ার মত করে জীবনধারণ করবে না। ধরে নিন, আমি কোন এক জঙ্গলে গিয়ে পড়লাম, যেখানে ভয়ঙ্কর অনেক জন্তু আছে। আমি যদি আমার বুদ্ধিমত্তা খাঁটিয়ে নিজেকে নিজেকে তার স্বীকার হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারি, তাহলে আমি বেঁচে থাকবো। নাহয় থাকবো না। কিন্তু আমি যদি বেঁচে নাও থাকি তখন, তার মানে এই নয়, আমি ব্যকটেরিয়ার তুলনায় বেঁচে থাকতে অক্ষম। আমার যেভাবে বেঁচে থাকা সম্ভব ছিল আমি সেটা পারিনি, এবং আমার পক্ষে অন্য কোন প্রানীর মত বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ছিল না কোনভাবেই। বিবর্তনের ধারায় বেঁচে থাকতে হয় আসলে প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে, আর সাবজেক্ট (ধরে নিন আমি বা আমরা বা অন্য কোন প্রানী) ছাড়া আর সবকিছুই এইখানে প্রকৃতি ধরা যায়। আমার মত করে টিকে থাকতে হলে, প্রকৃতির কোন সুবিধাটা আমার গ্রহণ করতে হবে আর কোন অসুবিধা থেকে দূরে থাকতে হবে বা কোন প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে সেটা আমাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বড় মস্তিষ্কের অধিকারীরা এই প্রকৃতি থেকে সুবিধাটা বেশী নিতে পারছে, সেই কথাটাই বোঝাতে চেয়েছি।
আর হ্যা, দেহ না মস্তিষ্কই লিখতে গিয়েছিলাম, ভুলে দেহ লিখেছি। 🙂
@নীল রোদ্দুর,
‘বুদ্ধিমত্তা’ নিঃসন্দেহে টিকে থাকার ব্যপারে বাড়তি সুবিধা। কিন্তু টিকে থাকার প্রতিযোগীতায় Adaptability – ইর ক্ষমতাই সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ ও কা্র্যকারী বলে প্রমানিত হয়েছে।
” It is not the strongest of the species that survive, nor the most intelligent, but the one most responsive to change.”
মন্তব্যটি কার তা এ মুহুর্তে মনে পড়ছে না (?চার্লস ডারউইন)!
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
আপু এতদিন পরে দারুণ একটা লেখা পেয়ে সুখী হলাম। 😀
আমার মস্তিষ্কে যতটুকু কুলায় ততটুকু বোঝার চেষ্টা করলাম। ভাল লাগছে সিরিজটা। আরো লেখা চাই। :rose2: :rose2: :rose2:
কি আর বলব আপনাকে আর বন্যা আপুকে শ্রদ্ধাও করি, হিংসাও করি। আমার মাথায় তো কিছুই নাই। 😥
বিবর্তনের ব্যাপারটা ছোট থেকেই মাথায় ঢুকানো দরকার। কি করা যায় বলেন তো? কারণ সংশপ্তক একটা অতি সত্যি কথা বলেছেন
ছোটদের নাগালের মধ্যে এই ব্যাপারটা কিভাবে নেয়া যায় সেটা ভাবছি :-/
@লীনা রহমান,
নতুন avatar-এ আপনাকে কিছুটা সেরাহ পেলিনের মত লাগছে দেখতে 😀
@রৌরব,
আমার কাছে তো কেমন জানি হাসিনা+প্যালিনের একটা হাইব্রিডের মত লাগছে…
@বন্যা আহমেদ, @রৌরব
নেত্রীদের নাম শুনলেই ডর লাগে। আর আগে ছবির এই ব্যাপারটা খেয়াল করিনাই। আমার চেহারা ত তাইলে ভালই 😛
@লীনা রহমান, বিবর্তনের উপর একটা খুব বেসিক বই পড়ে ফেলেন, দেখবেন অনেক কিছু ক্লিয়ার হয়ে যাবে। জেরি কোয়েনের হোয়াই এভুলেশন ইস ট্রুর মত একটা বই পারলে পড়ে ফেলেন।
@বন্যা আহমেদ, আমার বিবর্তনের গুরু তো আপনিই। আর সময় করে বইটা পড়ে ফেলার চেষ্টা করব।
@লীনা রহমান, এইতো বালিকা পথে এসেছে। 🙂
@নীল রোদ্দুর, 😀
বড়ই সৌন্দর্যময় লেখা। আমরা মনে হয় আরেকজন বন্যা আহমেদকে পেতে যাচ্ছি।
@ফরিদ আহমেদ, এহহে ভাইয়া, বন্যাপুর মত হতে আমার কত বছর সাধনা করা লাগবে, সে খেয়াল আছে? হতে পারলে তা ধিন তা ধিন করে নাচবো। নাচানাচির বয়স এখনও আমার ভালই আছে। 😀
@নীল রোদ্দুর,
আরেহ কোনো ব্যাপার না। আল্লাহর উপর আস্থা রাখেন। আপনার মধ্যে সীমাহীন সম্ভাবনা সাঁতার কাটছে। বন্যার মত বাহাত্তরে বুড়ি হওয়া লাগবে না, দেখবেন নাচানাচি করার মত ছুড়ি বয়সেই ওর জুড়ি হয়ে যাবেন আপনি। 🙂
@ফরিদ ভাই, সমস্যা এখানে একটাই, আমার তো বাহাত্তুর ক্যান বিরানব্বই হইতেও সমস্যা নাই, কিন্তু আপনি তো তাইলে ৭৪-৭৫-৭৬-…৯৬ হয়ে যান।
@বন্যা আহমেদ,
পুরুষ মানুষের আবার বয়স। আশিতেও হয় না তারা খাসি। এরশাদ দাদু হচ্ছে তার প্রমাণ। 🙂
@নীল রদ্দুর,
অনেক ধন্যবাদ এরকম একটা জটিল বিষয় নিয়ে লেখার সাহস করার জন্য। আশা করি সিরিজটা অনেকদিন ধরে চলবে।
দেরী হয়ে গেল মন্তব্য করতে, আপাতত, দুই একটা বিষয়ে মন্তব্য করছি, কনফিউসিং কিছু বলে থাকলে পরে এ নিয়ে আরও আলোচনা করা যেতে পারে। এই বিষয়টা এত কাটিং এজ একটা বিজ্ঞানের অংশ যে এ নিয়ে নিত্য নতুন গবেষণার ফলাফল বেরুচ্ছে, কোন কিছুতে ভুল বা পুরোনো তথ্য দিয়ে থাকলে, আশা করছি, এই ব্লগের কেউ সংশোধন করে দিবেন।
তোমার ছবিটাতে সাধারণ পূর্বপুরুষের পরেই অ্যাস্ট্রালোপিথেকাস দেখাচ্ছে। আর্ডিপিথেকাস র্যামিডাস নেই সেখানে। গত বছর এই আবিষ্কারের উপর ফাইনাল রিসার্চ পেপার বের হওয়ার পর আর্ডিকেই সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে ভাগ হয়ে যাওয়ার পরের সবচেয়ে পুরোনো পূর্বসুরী হিসেবে গ্রহণ করা হয়। আরও পুরনো কিছু পূর্বপুরুষের আংশিক ফসিল পাওয়া গেলেও যথেষ্ট সাক্ষ্য প্রমাণের অভাবে তাদেরকে এখনো সেভাবে গ্রহণযোগ্যতা দেওয়া হয় না। আর্ডি যে সেই ৪ মিলিয়ন বছর আগেই প্রায় দ্বিপদী ছিল এটাও বিজ্ঞানীদের বেশ অবাক করেছে।
MYH16 er upor এই মিউটেশনটা হমিনিনদের চোয়ালের পেশীর পরিবর্তনে সাহায্য করেছিল যেটা সম্ভবত ঘটেছিল ২.১- ২.৭ মিলিয়ন বছর আগে, অর্থাৎ আমাদের জেনাস হোমোর বিবর্তনের খুব কাছাকাছি সময়ের খবর। এটা খাদ্য চিবানোর ব্যপারটাতে আমূল পরিবর্তন ঘটেলেও সম্ভবত মস্তিষ্কের আকার বড় হওয়ার জন্য যে ফ্লেক্সিবিলিটি দরকার সেটাও এনে দিয়েছিল। পেশীর গঠনের সাথে হাড়ের গঠনের একটা ঘনিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে, চোয়ালের পেশীর গঠন আমাদের ক্র্যনিওফেশাল স্কেলিটনের উপর প্রভাব ফেলবে। দেখা গেছে যে চোয়ালের পেশীর আকার ছোট হয়ে যাওয়ার ফলে ম্যন্ডিবলের উপর চাপ কমে যেতে পারে যা আবার খুলির উপর চাপ কমাতে সহায়তা করে থাকতে পারে। অর্থাৎ এর ফলে আমাদের খুলির আকার বড় এবং পাতলা হওয়ার সুযোগ পেয়ে থাকতে পারে। তাই তারা মনে করেন যে আমাদের হোমো জেনাসের মস্তিষ্ক বড় হওয়ার পিছনে এটা একটা ভূমিকা রেখে থাকতে পারে। আর সেই সাথে সাথে ভাষার বিকাশের জন্য ম্যন্ডিবলের উপর যে সুক্ষ্ম নিয়ন্ত্রণের দরকার সেটার পিছনেও এর প্রভাব থাকতে পারে।
ক্যাথেরিন কিন্তু বলেননি যে ‘ASPM সিকোয়েন্সের কারণেই বড় হয়ে গেছে মানব মস্তিষ্ক”। মাইক্রোসিফিলির চিকিৎসা করতে গিয়ে তারা ASPM সহ আরো বেশ কয়েকটা জিনের (MCPH1, CDK5RAP2 and CENPJ) সন্ধান পেয়েছেন যারা মস্তিষ্কের আকার বৃদ্ধির পিছনে ভূমিকা রাখতে পারে।এই ASPM এর জিনের মিউটেশনের উপর যেহেতু গত ছয় মিলিয়ন বছরে খুব দ্রুত কিছু পজিটিভ সিলেকশান দেখা গেছে সেজন্য তারা এমন ধারণা করছেন।
একটা জিনিস উল্লেখ করতে চাই, যেটা আমি স্বাধীনের ডোপামিন নিয়ে লেখায়ও উল্লেখ করেছিলাম। এই MYH16 বা ASPM এর মত মিউটেশনগুলো নিয়ে কথাগুলো বলার সময় আমাদের একটু সাবধান থাকা দরকার। এমনভাবে সিদ্ধান্ত টানা উচিত নয় যে যে কোন একটা মিউটেশনের ফলেই আমাদের মস্তিষ্কের বা বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ঘটেছে। যেমন ধর, MYH16 এর মিউটেশন আমাদের মস্তিষ্কের আকার বড় হওয়াতে যদি সরাসরি কোন ভূমিকা রেখেও থাকে আমরা এখনো জানি না এর পরে বা আগে আর কোন কোন মিউটেশন ঘটেছিল এবং তারা কিভাবে বুদ্ধিমত্তার বিকাশে সাহায্য করেছিল। এভো ডেভো এবং জেনেটিক্সের অন্যান্য গবেষণা থেকে দেখা যাচ্ছে যে মানুষের বিবর্তন খুব সম্ভবত বহু প্রজন্মের জটিল এবং মোজাইক বিকাশের মাধ্যমে ঘটেছে, একে যে কোন একটা কি দুটো পরিবর্তন দিয়ে ব্যাখ্যা করা সম্ভব হবে না হয়তো।আমরা আসলে মোটে এ নিয়ে জানতে শুরু করেছি, একে ‘টিপ অফ দ্যা আইসবার্গ’ হিসেবে গণ্য করা উচিত,কোন চূড়ান্ত আবিষ্কার হিসেবে নয়।
@বন্যা আহমেদ, এইরকম একটা মন্তব্যের অপেক্ষায় ছিলাম, যেখান থেকে আমার ভুলগুলো বের হয়ে আসবে। কৃতজ্ঞতা আপু।
ঐ ছবিটা যে বই থেকে নিয়েছি, সেই বইটার ২০০৪ এর এডিশন আমি পেয়েছি হাতে, ঐখান থেকে ছবিটা নেয়ার কারণ হল, আমি একটা তুলনামূলক চিত্র পাচ্ছিলাম, ইন্টারনেটেও অন্য যে ছবিগুলো পাচ্ছিলাম, তার অনুরূপ। সেখানেও আমি আর্ডিকে পাই নি। আর আসলে পাইনি যে সেটা ভুলেই গেছিলাম। আপনার এই লেখাটাও আমি আগেই পড়ছি, তারপরেও ভুলে গেছিলাম। ইন্টারনেট থেকে পাওয়া ছবিটা এইখানে
এখনও দেখলাম, পেলাম না আর্ডির মস্তিষ্কের তুলনাচিত্র। মাথায় রাখলাম জিনিসটা, দেখি আপডেট করা সম্ভব হলে করব।
ঠিকই, এই মিউটেশনের গল্পগুলো সবে আসতে শুরু করেছে, নতুন নতুন গবেষণায় নতুন দিকে মোড় নিবে। এটা আসলে উপসংহার নয়, সূচনা।
@নীল রোদ্দুর ,
২০১৫ সালে কত তাপমাত্রায় , কত অলটিটিউডে , কিভাবে , কত দ্রুত গান শিখবেন অথবা
উত্তর দিতে পারবেন তা ঐ পরিমাপ থেকে না বলতে পারা পর্যন্ত বিজ্ঞান সন্তষ্ট নয়। কোন কিছুকে বিজ্ঞান বলতে হলে পূর্বাভাস যোগ্যতা থাকতে হবে। এ কারনে সনাতন সাইকোএনালিসিসকে বিজ্ঞান মহলে সন্দেহের চোখে দেখা হয় ।
কোন জীন কোন কাজ করে এটা কিভাবে নির্ণয় করা হয়?
@রৌরব, যদিও এই ব্যাপারে আমার জানা খুবই সামান্য, তবে কয়েক জায়গাতেই পড়েছি, কৃত্রিম উপায়ে কাঙ্খিত জেনেটিক মিউটেশন ঘটিয়ে ফলাফল দেখা হয়। এর জন্য ইঁদুর এর উপরই পরীক্ষা নীরিক্ষা চালানো হয়। তবে পরীক্ষার জন্য সবসময় জেনেটিক মিউটেশন ঘটানো হয় না মনে হয়। অনেক সময় বাইরে থেকে এজেন্ট প্রবেশ করিয়েও ফলাফল দেখা হয়।
ব্যাপারটা জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর, আমি এইখানে কিছুই জানিনা, ভুল বললাম কিনা তাও জানিনা। 😕
প্রশ্নটা আসলে আমারও। 😀
@রৌরব,
মানুষসহ মেরুদণ্ডী প্রাণীদের কোন জীন কোন কাজ করে তা নিয়ে গবেষণায় সাধারনত জেব্রা মাছ ( Zebra fish) ব্যবহার করা হয়। এর জেনেটিক কোড সম্পূর্ন সিকোয়েন্স করা আছে । যে ফাংশনটি নিয়ে প্রশ্ন , জেব্রা মাছের সেই জীনটাকে মিউটেট করে ঐ নির্দিষ্ট ফাংশনের অবস্থা পর্যবেক্ষন করা হয় । তারপর যে জীনটাকে মিউটেট করা হয়েছে অনুরূপ জীন অন্য প্রাণীর ( যেমন , মানুষ) দেহে আছে কিনা তা সংশ্লিষ্ট ডিএনএ ডেইটাবেইজে মিলিয়ে দেখা হয় । আনবিক গঠন অনুসারে প্রকারভেদে পৃথিবীতে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট সংখ্যক প্রোটিন অনু আছে ।
@সংশপ্তক,
ধন্যবাদ। অনেক কিছু জানলাম।
যেসব ফাংশন জেব্রা মাছে নেই, ধরা যাক har1 এবং তৎসংশ্লিষ্ট মস্তিষ্কের জটিল কার্যকলাপ, সেসব ক্ষেত্রে উপায় কি?
@রৌরব,
DoD পরিচালিত এধরনের প্রজেক্টগুলোয় সবসময় ‘উপায়” থাকে। প্রজেক্টগুলো সাধারনত লেভেল-৪ এর আওতায় আউটসোর্স করা হয় এবং এধরনের প্রজেক্টগুলোয় কাজ করতে একজন ব্যক্তির SSBI – Single Scope Background Investigation ক্লিয়ারেন্স থাকা বাধ্যতামূলক।
@সংশপ্তক, জেব্রা ফিসই কেন? এদের সাথে বিশেষ কোন সাদৃশ্যের কারণে? নাকি অন্যান্য মাছ বা প্রাণীও ব্যবহার করা হয়? পাফার ফিসের কথাও শুনেছিলাম। এখনতো অনেক প্রাণীর জিনোমই সিকোয়েন্স করা হয়ে গেছে।
@বন্যা আহমেদ,
সম্পূর্ন জিনোম সিকোয়েন্স ছাড়াও জেব্রা ফিসের T cell receptor (TCR) মানুষ এবং স্তন্যপায়ীদের অনুরূপ আচরণ করে। খুব দ্রত ডিম পাওয়া যায় । প্রানী এক্টিভিস্ট , AAALAC, NIH ইত্যাদি সংস্হা এবং সর্বোপরি PHS এবং Animal Welfare Act ( AWA) – এর খবরদারি নেই। গত কয়েক বছরে এসব কারনে জেব্রা ফিসের জনপ্রিয়তা একাজে বেড়ে গেছে।
@সংশপ্তক,
HAR1 এর গবেষণা কি গোপন তাহলে, DoD র কথা তুলছেন যেহেতু? Verify করবার উপায় নেই?
@রৌরব,
DoD র প্রজেক্ট গুলো অফ লিমিট (এমনকি FoI যোগ্য নয়) এবং Verify করবার উপায় টেকনিক্যালি শূন্য । বেসরকারী HAR1 প্রজেক্টগুলোর চুরান্ত সাফল্যের ব্যপারে আমি আশাবাদী নই কারন এর গবেষণার জন্য যে বিশেষ পরিবেশ এবং সুবিধা দরকার তা তাদের পক্ষে যোগান দেয়া সম্ভব নয়।
অন্য দিকে, মস্তিষ্ক নিয়ে DoD র অবসেশন অনেক দিনের পুরোনো। তারা তাদের স্ট্রাটেজিক মোনোপলি নিশ্চয়ই হাতছাড়া করতে চাইবে না যেখানে তারা মাল্টি বিলিয়ন ডলার লগ্নী করে বসে আছে।
@সংশপ্তক,
ক্যাথারিন পোলার্ড (যাকে har1 প্রসঙ্গে উদ্ধৃত করছেন নীল রোদ্দুর) কোন দলে পড়েন (DoD/বেসরকারী)? তার দাবী আমরা কতটুকু বিশ্বাস করতে পারি তাহলে?
@রৌরব,
বেসরকারী।কেইটির modus operandi মূলত জৈবপরিসংখ্যান । ইতিমধ্যেই যে ডেইটা আমাদের হাতে আছে তার উপর ভিত্তি করে স্টাটিস্টিক্যাল মডেল তৈরী করা হয়। এটা অনেক ক্ষেত্রেই ভালো কাজে আসে বিশেষ করে ফার্মা প্রজেক্টগুলোয়। এখন আমি চাইবো কেইটির ধারনাটাকে ইমপিরিকালি পরীক্ষা করতে । অর্থাৎ, মিউটেড করা একটা মানব এমব্রীয় যেটাকে জন্মপরবর্তী দীর্য সময়কাল পর্যবেক্ষন করা যায়।
@সংশপ্তক,
হমম, পোলার্ডের দাবীকে একচিমটি লবন সহ স্যালাইন-রূপে সেবন করতে হবে মনে হচ্ছে। নৈতিকতার মানদণ্ড মেনে ইমপিরিকালি পরীক্ষা সম্ভব কিনা জানিনা, কিন্তু সম্ভব হলে ভাল ভাবে মানা যাবে এই দাবীগুলিকে।
আচ্ছা, জেব্রা মাছে মানুষের HAR1 কপি করে কি দেখা যায় কি হয়? নাকি এই প্রস্তাব অর্থহীন?
@রৌরব, মানব ভ্রুণে মিউটেশন, তেড়ে মারবে তো! বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার স্বার্থে বলা যায়, হলে তো ভালোই হত। কিন্তু বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার জন্য একটি মানব স্বত্তাকে ব্যবহার করা, কেমন কেমন! বরং মানব জিনে মিউটেশনের অনুরূপ ফলাফল দিবে, এমন কোন প্রানীতে করা সম্ভব হলে ভালো হবে। সেক্ষেত্রে ক্রস টেস্টের পথও খোলা থাকে।
@রৌরব,
জেব্রা মাছে HAR1-এর সমগোত্রীয় এক বা একাধিক কোন জীন সিকোয়েন্স না থাকায় এক্ষেত্রে সমস্যা আছে। ব্যাঙ এবং অমেরুদণ্ডী প্রাণীদেরও একই অবস্থা । এর মানে বিবর্তনের অনেক ধাপ পরের পর্যায়ে এর বিকাশ। ইঁদুরে অবশ্য এটা ক্লোন করার চেষ্টা করা হয়েছে এবং তাতে সিজোফ্রেনিয়া রোগের উপসর্গ ধরা পরেছে।
কিন্তু গবেষণার মূল বিষয় যেহেতু মানুষের নিওকরটেক্সের ‘অস্বাভাবিক’ বৃদ্ধি এবং একইসাথে একটা ‘সম্পূর্ন নতুন আরএনএ অনুর’ বিকাশ যা অন্য কোন জীবে অনুপস্থিত , সেখানে অন্য প্রাণীর উপর এই গবেষনা চালানো গবেষণার মূল উদ্দেশ্যের সাথে কতটুকু সঙ্গতিপূর্ণ তা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্নের অবকাশ রয়েছে।
কঠিন বিষয়ে সহজ লেখা। মস্তিষ্কের গঠন আর বিবর্তন বিষয়ে প্রচুর বৈজ্ঞানিক তথ্য-সম্ভারে সমৃদ্ধ এই লেখা। লেখকের প্রাঞ্জল লার্নার্স নোট আমার মতো আরো অনেকের কাজে লাগবে। ধন্যবাদ নীল রোদ্দুর।
@ইরতিশাদ,
ভাইয়া, কাজে লাগবে এটাই আমার জন্য সুখকর একটা খবর। আমরা বাংলাদেশী ছেলেমেয়েরা যে বইপত্র, সুযোগ আর অনুপ্রেরণার অভাবে কোথায় পড়ে আছি, আমার অস্থির লাগে। আমাদের বইয়ের দৌড় নীলক্ষেতের ফটোকপি সাম্রাজ্য। আজিজে যাই, সাহিত্যের বই পাবো অনেক, কিন্তু বিজ্ঞানের বই?
বুয়েটে পড়েও তো দেখেছি, আমাদের সিজিপিএ তোলার জন্য যতটা পড়া লাগে তার চেয়ে বেশী পড়তে নারাজ আমরা। আর আমাদের শেখানোও হয়, জীবনে ভালো কিছু করতে হলে ভারী সিজিপিএ টাই দরকার, বেশী জানা না। দুটো বই বেশী পড়তে সময় এবং শ্রম দুটৈ যায়, লাভ তেমন হয় না। তাই চেয়ে যাই না, বন্ধুদের নিয়ে একটা জম্পেশ আড্ডা দিয়ে আসি। 🙁
অনুপ্রেরণার জন্য ধন্যবাদ। গ্রামীনফোনের বিজ্ঞাপন, Stay Close. 😀
এক কোষী ব্যাক্টেরিয়ারা নিজেদের মধ্যে তথ্য আদান প্রদান করে। ওদের ও নাকি বুদ্ধি আছে। এব্যাপারে আপনার অভিমত কি? কোথায় জানি পড়েছিলাম একধরনের সামুদ্রিক ব্যাক্টেরিয়া আছে , তারা অন্ধকারে একসাথে জ্বলে উঠে , অনেকখানি জায়গা আলোকিত করে তোলে।
@ফারুক,
এক কোষী ব্যাক্টেরিয়া নিজের কোষের মধ্যে যে যোগাযোগ করে তা রাসায়নিক যোগাযোগ। বহুকোষী জীবের মধ্যেও এই আন্তঃ কোষীয় যোগাযোগ হয়।
স্নায়বিক যোগাযোগ তখন বলা যায়, যখন স্নায়ুকোষ উপস্থিত থাকে। খেয়াল করে দেখুন স্পঞ্জের মধ্যে সাইন্যাপ্সের যোগাযোগ রক্ষাকারী জিনের অনুরূপ ২৫টা জিন পাওয়া যাওয়ার পরও তাদের স্নায়ুবিশিষ্ট প্রানীর আওতায় ফেলা হয়নি।
আরেকভাবে দেখলে, স্নায়বিক যোগাযোগ তো আসলে ইলেক্ট্রিকাল পটেসিয়ালের পরিবর্তন, যা হয়, কোষের ভিতরের বাহিরের রাসায়নিক পরিবর্তনের মাধ্যমে। আর কোষ মাত্রই রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে। ঐ অর্থে জেনারালাইজ করতে গেলে সব কোষেই স্নায়বিক কর্মকান্ড হয় যা যেকোন রকম রাসায়নিক পরিবর্তন নির্দেশ করে। কিন্তু স্নায়বিক যোগাযোগের মত ব্যাপারটাকে আমরা এতো সাধারন অর্থে দেখি না।
মোটামোটি আমার ধারণা, স্নায়বিক যোগাযোগ হতে হলে আগে সেখানে স্নায়ুকোষ থাকতে হবে।
@ফারুক,
আপনার ধারনা সম্পুর্ন সত্যি। এ বিষয়ে Princeton Unniversity তে Molecular Biology বিভাগে এই মূহুর্তে প্রচুর গবেষনা হচ্ছে । আপানার প্রশ্নের উত্তর ঐ ফ্যাকাল্টির সহকারী বনি ব্যাসলারের কাছ থেকে নিজ কানে শুনুন এবং দেখুন এখানে :
–>
ভিডিওর সরাসরি লিংক http://www.ted.com/talks/bonnie_bassler_on_how_bacteria_communicate.html
@সংশপ্তক, আপনি দেখি রিসোর্সে ভরপুর! মাঝে মাঝে মনে হয়, কবে আমি এতোখানি জানব, যা আমাকে করে তুলবে দুর্দান্ত আত্মবিশ্বাসী। :-/
লিঙ্কের জন্য ধন্যবাদ।
@নীল রোদ্দুর,
এটা এমন কিছু নয়। বেশীর ভাগ মানুষের নেশা আর পেশা ভিন্নরকম হয়ে থাকে। আমার ক্ষেত্রে তা নয়। আমার নেশা টাই আমার মূল পেশা।
@সংশপ্তক,ধন্যবাদ।
@সংশপ্তক, @নীল রোদ্দুর,
আপনাদের অনেক অনেক ধন্যবাদ। মুক্তমনায় মন্তব্য /আলোচনা পর্ব প্রায় সময়ই মূল লিখার চেয়েও বেশী আকর্ষনিয় ও শিক্ষামূলক। ভিডিও লিঙ্কটি অসাধারন।
মস্তিষ্ক নিয়ে লেখা চলুক :yes: । লেখা বেশ ভালো হয়েছে।
@স্বাধীন,
ভাইয়া, চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা আছে। সময় এবং সামর্থ্যে কুলালেই হল। 🙂
ভাল লাগলো।অনেক কিছু শিখতে পারলাম।আমার একটা প্রশ্ন আছে-আচ্ছা,এককোষী প্রাণী থেকে বিবর্তিত হয়ে আমরা বহুকোষীরা এসেছি।কিন্তু এককোষীরাও তো টিকে আছে।ওদের মধ্যে কী কোন বিবর্তন ঘটেছে?এককোষীদের টিকে থাকার কারণ কী?
@ইমরান মাহমুদ ডালিম,
বিবর্তন ঠিক এভাবে কাজ করে না। বিবর্তন কোন লিনিয়ার প্রোগ্রেশন নয়, বিবর্তন কাজ করে অনেকটা ঝোপের মত, কিংবা বৃক্ষের শাখার মত। গাছে এক শাখা থেকে যেমন অন্য শাখা উৎপন্ন হয়, কিন্তু তার মানে তো এই নয় যে, পূর্ববর্তী শাখাটি বিলুপ্ত বা ধ্বংস হয়ে যাবে। আরেকটা সাধারণ উদাহরণ দেই মানুষের ক্ষেত্রে। একসময় আমেরিকান এবং অস্ট্রেলিয়ানরা ইউরোপিয়ানদের থেকে উদ্ভুত হয়েছিল, কিন্তু এমন তো নয় যে সব ইউরোপিয়ানেরা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। যে কারণে এখনো ইউরোপিয়ান দেখা যায়, ঠিক সেকারণেই এককোষী জীবও দেখা যায়, যদিও এককোষী জীব থেকেই একসময় বহুকোষী জীব এসেছে। ঠিক একই কথা বলা যায় যদি কোন সৃষ্টিবাদী জিজ্ঞাসা করেন যে, মানুষ যদি বানর থেকে বিবর্তিত হবে তাহলে বানরগুলো এখনও পৃথিবীতে রয়ে গেলো কি করে? ওটার উত্তরও হবে এরকমই। আমাদের বিবর্তন আর্কাইভে এধরনের অনেক প্রশ্নের উত্তর দেয়া আছে। সময় নিয়ে পড়ে দেখতে পারেন।
@অভিজিৎ,
ধন্যবাদ।বিষয়টা পরিষ্কার ছিল না।এখন পরিষ্কার হয়েছে।
@ইমরান মাহমুদ ডালিম,
উপরে অভিজিৎ রায় ইতিমধ্যেই আপনার প্রশ্নের উত্তর সুন্দরভাবে দিয়েছেন। এর পাশাপাশি আরো একটা বিষয় আপানাকে জানানো প্রয়োজন মনে করছি। মানুষ আসলে ৯০% ব্যাকটেরিয়া এবং ১০% মানব। এই আবাসিক ব্যকটেরিয়ারা মানব কোষদের লেখাপড়া শেখানো , গোয়েন্দাগিরি, ডাকপিয়নের কাজ সহ রকমারী কাজে মানব কোষদের সাহায্য করে। বিলিয়ন বছরের আত্মীয়তাটা এখনও অটুট আছে। এককোষীদের সার্বকক্ষিনিক সাহচার্য ছাড়া বহুকোষীদের অস্তিত্ব সম্ভব নয়।
@সংশপ্তক,
নায়ুজুবিল্লাহ, আসতাগফিরুল্লাহ। আচ্ছা এ নিয়ে কথা বাড়াচ্ছিনা। এখন প্রশ্ন হলো ঐ যে অভিজিৎ দা বললেন-
তা তো মানলাম, শিম্পাঞ্জি হউক, বানর হউক বা কোন প্রাইমেট হউক এর কোন শাখায় আমাদের উৎপত্তি আর সেই শাখা এখনও আছে। কথা হলো সেই যে কোন এক মহেন্দ্রক্ষণে একবার ঘটনাটি ঘটেছিল, তার কি পুনরাবৃত্তি ঘটা সম্ভব নয়? বৃক্ষ আছে, শাখা আছে কিন্তু সেই গাছে সেই শাখায় আর মানুষ ধরেনা, ব্যাপারটা কী? 😕 😕 :-/
@আকাশ মালিক,
আকাশ মালিক,
এটা বুঝতে হলে আপনার প্রজাতিকরণ বা স্পেশিয়েশনের ব্যাপারটা বুঝতে হবে। এক প্রজাতি তার পূর্ববর্তী প্রজাতি থেকেই বিবর্তিত হয়ে আসে, কিন্তু প্রজাতি তৈরি হয়ে গেলে একটা সময় পরে সেটা আর পূর্ববর্তী প্রজাতির সাথে প্রজনন করতে পারে না। পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন প্রজাতিতে পরিণত হয়। সেজন্যই দেখা যায় নেকড়ে থেকে কুকুর বিবর্তিত হলেও এখন কুকুর কেবল কুকুরেরই জন্ম দেয়, নেকড়ের নয়। কিংবা নেকড়ে গুলোও কুকুরের জন্ম দেয় না। কারণ এরা আজ দুটি সমপূর্ন বিচ্ছিন্ন প্রজাতি। কিন্তু নেকড়ে থেকেই যে কুকুর বিবর্তিত হয়েছিলো তা আমরা বুঝব কি করে? প্রজাতি গঠন দীর্ঘ সময় সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। হাজার লক্ষ বছরও লেগে যেতে পারে প্রজাতি তৈরি হতে। তার পরেও বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন। সেটা বুঝেন তারা ফসিল রেকর্ড থেকে, কিংবা ডিএনএর বিশ্লেষণ প্রভৃতি থেকে। এভাবেই তারা প্রজাতিগুলোর যে জাতিজনি বৃক্ষ বা ফাইলোজেনেটিক ট্রি তৈরি করেছেন এটা বুঝতে – কোন প্রজাতি থেকে কোন প্রজাতি তৈরি হয়েছে। তবে প্রজাতি গঠনের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে প্রজননের ফলে স্টেরাইল সন্তানের জন্ম হয়। যেমন ঘোড়া গাধার প্রজননে খচ্চর কিংবা বাঘ সিংহের মাধ্যমে লাইগারের উদাহরণ আমরা দেখি। কিন্তু এই হাইব্রিড সন্তানেরা বংশবৃদ্ধি করতে পারে না। এর অর্থ হচ্ছে প্রজাতিগতভাবে তারা খুব কাছাকাছি অর্থাৎ হয়তো নিকট অতীতে এরা সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে ভাগ হয়ে আলাদা প্রজাতিতে পরিণত হয়েছে। হয়তো ভবিষ্যতে তাদের মধ্যে বংশগতীয় পার্থক্য আরো বাড়তে থাকলে হাইব্রিড কিছুও আর উৎপন্নই করা যাবে না।
মানুষের ক্ষেত্রেও এই বিচ্ছিন্নকরনের সময় এধরনের ইন্টারব্রিডিং হয়েছিলো বলে বিজ্ঞানীরা ধারনা করেন। আপনাকে আজ আর্ডির সামনে হাজির করা গেলে মানুষের চেয়ে বানরের সাথেই হয়ত বেশি মিল খুঁজে পেতেন। আজ থেকে দুইলক্ষ বছর আমাদের দেখিয়েও ভবিষ্যতের মানুষেরা বলতে পারে আমরা অনেক অন্যরকম ছিলাম! একটা সময় মানুষেরও অনেক প্রজাতি ছিলো কুকুর বিড়ালের প্রজাতির মতই। নিয়াণ্ডারত্থালদের কথা আমরা জানি, জানি হোমোফ্লরেন্সিসদের কথা। এই প্রজাতিগুলো বিলুপ্ত জয়ে গেছে, আমরা হোমোস্যাপিয়েন্সরা বেঁচে আছি। হয়তো আজ থেকে কয়েক লক্ষ বছর পরে আমরা হয়তো থাকব না, হয়ত থাকবে মানুষের ভিন্ন কোন নতুন প্রজাতি। কি হবে কেউ দিব্যি দিয়ে বলতে পারে না। বিবর্তন কোন লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য সামনে রেখে কাজ করেনা। অনেক বিবর্তনই আসলে মিউটেশনের মত আকষ্মিক প্রক্রিয়ার উপর নির্ভরশীল। আবার শুধু মিউটেশন বা জেনেটিক রিকম্বিনেশনের মত ব্যাপারগুলো তো ঘটলেই হবে না, তাকে আবার নির্দিষ্ট কোন সময়ের পরিবেশে সেই জীবকে টিকে থাকার জন্য বাড়তি সুবিধা যোগাতে হবে যার ফলে তা সমস্ত জিন পুল বা জনসমষ্টিতে ছড়িয়ে পড়তে পারবে। আমাদের মধ্যেও অনবরত মিউটেশন ঘটে চলেছে, এক সময় বিচ্ছিন্ন কোন জনগোষ্ঠির মধ্যে এই মিউটেশনগুলো বাড়তে বাড়তে হয়তো নতুন প্রজাতির উৎপত্তি ঘটবে। মানুষের ক্ষেত্রে এখন ব্যাপারটা আরও জটিল হয়ে গেছে কারণ এখন সারা পৃথিবীর মানুষের মধ্যেই কম বেশী ইন্টারব্রিডিং চলে। নতুন প্রজাতি তৈরি হওয়ার জন্য ভৌগলিক বিচ্ছিন্নতা একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আর আগেই বলেছি এটা একটা দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া, তাই চোখের সামনে হয়তো ‘বানর থেকে মানুষ’ ঘটতে দেখা যাবে না, এটি আদপে পুনর্বার ঘটার সম্ভাবনাই খুব কম। এটির কারণ এবং আণুসঙ্গিক ব্যাখ্যায় আর যাচ্ছি না, আপনার প্রশ্নটির খুব ভাল উত্তর আমাদের আর্কাইভেই দেয়া আছে, আপনি পড়ে নিতে পারেন –
যদি বানর সদৃশ জীব থেকে একসময় মানুষের বিবর্তন ঘটে থাকে তাহলে এখন কেনো তা আর ঘটছে না? –এই প্রশ্নের উত্তর।
@অভিজিৎ,
থ্যাংক ইউ অভিজিৎ দা। আসলে এই লেখা যদি বানর সদৃশ জীব থেকে একসময় মানুষের বিবর্তন ঘটে থাকে তাহলে এখন কেনো তা আর ঘটছে না? এবং বন্যাদি’র ‘ বিবর্তনের পথ ধরে’ আগেও পড়েছি। মোটামুটি ভাবে বুঝি ঘটনা রিপিট হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় জিরো। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে অপাড়ার স্যুডো বৈজ্ঞানিকেরা! জানিনা তারা মুক্তমনার ‘বিবর্তন আর্কাইভ’ পড়ে জেনে বুঝে অপবিজ্ঞান ছড়ায়, না কি কিছু বুঝেই না। সহজ সরল সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্তমুক্ত রাখতে বিবর্তনের উপর প্রশ্ন, আলোচনা, মন্তব্য সদা-সর্বদা অব্যাহত রাখতে হবে। আশা করি আমার প্রশ্নের উপরে আপনার উত্তরটি অনেককে সাহায্য করবে যাদের কাছে এতদিন বিষয়টা পরিষ্কার ছিলনা।
@আকাশ মালিক,
এটার একমাত্র সমাধান শিশুদের শিশুকাল থেকেই ভুত-প্রেতের বদলে বিবর্তন সম্পর্কে ধীরে ধীরে স্বচ্ছ ধারনা দেয়া। আমাদের সমাজে আসল ক্ষতিটা করা হয় শিশুকালে যা পরবর্তীতে পিএইচডি করেও সারিয়ে তোলা যায় না।
@সংশপ্তক,
দারুন বলেছেন তো!
আমি সাহস করে দু একটা রূপকথা লিখতে শুরু করেছি। ইচ্ছা আছে, বিজ্ঞান বা দর্শন ছাড়া আর কোন কিছু লিখতে ইচ্ছা হলে রূপকথাই লিখব, ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য, যা আমাদের শিশুদের ভূত প্রেত পরী, রাজা রানী ড্রাগনের হাত থেকে বের করে আনবে। সুন্দর বা অসুন্দের অপব্যাখ্যা না দিয়ে ভিন্ন ভাবে তা চেনাতে। লেখনী আমার রূপকথা লেখার মত শক্তিশালী না, তবুও লিখেছি। দেখি এর পর রূপকথাই বিবর্তন ঢুকাবো। কিন্তু সমস্যা হল, সেটা করে রূপকথা ট্যাগ দিলে তো সমস্যা হয়ে যাবে। কি করা যায়? 😕
@নীল রোদ্দুর,
আপনাকে যেটা এখনও বলা হয় নি তা হলো যে , মস্তিষ্কের সবচেয়ে বড় ভুমিকা ‘ইনপুট ডিভাইস’ এবং ডেইটাবেইজ হিসেবে কাজ করা। সম্পূর্ন রঙ্গিন হাই রেজুলুশন ছবি, শব্দ, ঘ্রান এবং স্বাদ এনকোড করে সম্প্রচারের পাশাপাশি সল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে ধারন করা। একারনে মস্তিষ্কের আশে পাশেই আমাদের চোখ কানের মত সেন্সর গুলো অবস্থিত। যেসব প্রানী সাদা কালো অথবা সেপিয়া ছবি পছন্দ করে , তাদের মস্তিষ্কের কাজ স্বাভাবিক ভাবেই কম হবে। বেশী দিন কোন কিছু মনে রাখার দরকার না হলে একই ভাবে মস্তিষ্কের কাজ কমে যায়।
কিন্তু বুদ্ধিমত্তাটা সম্ভবত পুরোপুরি মস্তিষ্ক কেন্দ্রিক নয় আর বুদ্ধিমত্তার সঠিক সংজ্ঞা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্কের অবকাশ আছে । জীনের একটা বড় ভুমিকা এখানে আছে বলে আমি মনে করি কারন জীন তার তথ্য অদল বদল করতে সক্ষম।
ফিকশন বলে চালানো যায়। এ ছাড়া অনেক অপ্রকাশিত সত্য রূপকথাকেও হার মানায়। স্হান , কাল , পাত্র অদল বদল করে সেসবও লেখা যায়।
@সংশপ্তক,
আগে বুদ্ধিমত্তার ধারণা ঝালাই করি। মানুষ দুইরকম দক্ষতা প্রদর্শন করে। এক. দৈহিক দক্ষতা। দুই. বুদ্ধিভিত্তিক দক্ষতা, যা মস্তিষ্ক থেকে উৎসরিত।
কোন মানুষ গণিতে পারদর্শী, কোন মানুষ ছবি আঁকায়। এই ব্যাপারটা আসলে নির্ভর করে কিসের উপর? গণিতে বা ছবি আঁকায় অধিক মনোযোগ? বেশী সময় কোন কিছুর পিছনে ব্যয় করে যে দক্ষতা অর্জন করা যায় সে জানি। একটা নিয়মের অঙ্ক প্রথমে করতে যে সময় লাগে, কয়েকবার করার পর তার চেয়ে কম সময় লাগে। সহজবোধ্যও লাগে। কারণ মস্তিষ্ক ইতিমধ্যে পরিচিত হয়ে গেছে ঐটার সাথে। দক্ষতা বেড়েছে তুলনামূলকভাবে। এইখানে আমার ধারণা জেনেটিক ভুমিকা ঐ মনোযোগে কেবল। অনেক বাচ্চাকেই দেখা যায়, পড়ালেখা করতে হয়, বাবা মা এই কথাটা মাথায় ঢুকিয়ে দেয়ার আগেই তারা বইয়ের রঙ্গিন ছবির প্রতি আকর্ষনবোধ করে। ছবির পাশে যে অক্ষরটা আছে, সেটা কি বুঝতে চেষ্টা করে। আবার কোন বাচ্চার সেদিকে তেমন আকর্ষনই নেই। এইখানে মনোযোগ সৃষ্টি হওয়ার পিছনে জেনেটিক ভূমিকা আছে বলেই মনে হয়। কিন্তু বাকিটুকু, মানে দক্ষতা অর্জনের জন্য আমরা যা করছি, তা মস্তিষ্কের অনুশীলনের ফল। আমি চিন্তাশীল, ব্যপারটা আমি চিন্তা করতে ইচ্ছুক এবং আমি চিন্তা করতে অভ্যস্ত, দুইটার সমন্বয়। সেই সাথে আরেকটা ব্যাপার, একটা জবা ফুলের রঙ লাল, আরেকটা জবা ফুলের রঙ সাদা, কেন? এই প্রশ্ন তো আমি স্বতঃস্ফূর্তভাবেই করেছিলাম, কেউ তো আমাকে শেখায় নি এই প্রশ্ন করতে। এইভাবে প্রশ্ন করার প্রবণতা কি আমার জেনেটিক কোডেই লেখা নেই?
এখন আরেকটু গভীরে যায়, আমার মস্তিষ্কের গড়ন, কোন বিশেষ অঞ্চলের বিকাশ এইসবের নির্দেশ তো থাকে জিনের মধ্যেই। ডিসলেক্সিয়া আক্রান্ত শিশুদের কিছু নার্ভের বিন্যাস থাকে অবিন্যস্ত। তাই তারা সাধারণ শিশুদের মত অক্ষর সনাক্তকরণে সক্ষম নয়। এইযে সমস্যা, সেটার মূল তো আসলে জিনেই।
এটা গেল বুদ্ধিবৃত্তিক দক্ষতা। আরেকরকম হল দৈহিক। আমার এক সহপাঠীর ৫টা আঙ্গুল না, ছিল ৬টা আঙ্গুল। সেটা অবশ্যই জেনেটিক মিউটেশনের ফলাফল। ৬ আঙ্গুলের জন্য যদি যে কোন বিশেষ সুবিধা পেয়ে থাকে, তবে তা জেনেটিক সুবিধা ছাড়া আর কিছুই তো নয়। তাহলে দেখা যাচ্ছে যেকোন রখম দক্ষতার পিছনেই আছে জিনের ভূমিকা। জিনের এই ভূমিকাগুলো থেকে কি বুদ্ধিমত্তাকে আলাদা করে সংগায়িত করা যায়? বুদ্ধিমত্তার ব্যাপারতো দাঁড়িয়ে আছেই জিনকে ভিত্তি করে। নার্ভসেলগুলো তো সজীব জীব কোষ ছাড়া আর কিছু নয়। মস্তিষ্ক বলি আর স্নায়ুতন্ত্র বলি, তা তো নার্ভ সেলের ই সমন্বয়।
আপনি কি এটাই বোঝাতে চেয়েছেন? আপনার কাছে বুদ্ধিমত্তার যে সঙ্গা, তার ব্যাখ্যাটা কেমন?
@নীল রোদ্দুর,
বুদ্ধিমত্তার সংজ্ঞা বলতে এখানে আমরা নিশ্চয়ই শুধুমাত্র বৈজ্ঞানিক সংজ্ঞার কথাই বলছি। আমার প্রশ্ন বুদ্ধিমত্তার বৈজ্ঞানিক সংজ্ঞা সম্ভব কি না অর্থাৎ এটা পর্যবেক্ষন যোগ্য এবং পরিমাপযোগ্য কি না যার ভিত্তিতে সঠিকভাবে পূর্বাভাস দান করা সম্ভব যা বৈজ্ঞানিক সংজ্ঞার পূর্বশর্ত।
@সংশপ্তক,বুদ্ধিমত্তা পরিমাপের সবচেয়ে জনপ্রিয় পরীক্ষা তো IQ টেষ্ট। কিন্তু এইটার ফলাফল যে সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয় তাও আমাদের জানা কথা। যেহেতু এটা দেহের উচ্চতার মত অপরিবর্তনযোগ্য কিছু নয়, তাই একে মনে হয় সেই অর্থে পরিমাপ যোগ্য বলা যায় না। কিন্তু টেস্টটিউবে পর্যবেক্ষন যোগ্য না হলেও কিন্তু আপাতভাবে পর্যবেক্ষন যোগ্য। আমি গান শিখতে গিয়ে কতদ্রুত তা শিখতে পারছি বা আমাকে কোন প্রশ্ন করা হলে কতদ্রুত আমি তার উত্তর দিতে পারছি এবং তা কতটা সঠিক হচ্ছে, তা তো পরিমাপ যোগ্য। বুদ্ধিমত্তার যতগুলো ভাগ আছে, সবকটা ভাগে আলাদা করে আপাত পরিমাপ করা যায়। এবং এই পরিমাপ গুলো সাধারনত তুলনামুলক। অ্যাবসলিউট নয়।
Intelligence কে সঙ্গায়িত করতে হলে communication, learning, reasoning, problem solving মত অনেকগুলো বিষয়কে বিবেচনায় আনতে হয়, কিন্তু আমি যদি কেবল problem solving ability কে পরিমাপ করতে চাই, তাহলে তার একটা আপাত ফলাফল তো পাওয়া সম্ভব। বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে প্রশ্ন আসে, বুদ্ধিমত্তা বলতে আসলে কি বুঝাচ্ছি, কোন কোন দক্ষতাকে আমরা বিবেচনায় আনছি, কিন্তু প্রবলেম সল্ভিং অ্যাবিলিটির ক্ষেত্রে তো সেই প্রশ্ন আসে না। বুদ্ধিমত্তা একটা আপাত ধারণা। কিন্তু তারপরও বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে সাইকোমেট্রিক অ্যানালাইসিস চলছে।
@সংশপ্তক,
একদম খাঁটি কথা – :yes:
বিবর্তন নিয়ে লেখার মত জ্ঞান গম্যি নেই আমার, তবুও লিখতে হলই এটা। নিউরোনাল এভোলিউশন সম্পর্কে কিছু জানার চেষ্টাতেই লিখেছি। আগের পর্বেই জানিয়েছি, এই সিরিজটা আসলে লার্নার্স নোট, পড়ি, শিখি আর লিখি। ভুল থাকলে ধরিয়ে দেবেন দয়া করে। আর আসলে শুধু লেখার জন্য তো লিখছি না, চাইছি ব্যাপক আলোচনা। আলোচনার মাধ্যমেই আশা করছি পরিষ্কার হবে আমাদের ধারণা, শিখতে পারবো আরো অনেক কিছু।
মডারেটরদের কাছে জানতে চাইছি, কোন ছবি আপলোড করার পর এডিট করব কি করে? পোষ্ট করার পর দেখি একটা ছবি সামান্য কেটে গেছে পাশ থেকে। আবার শিরোনাম দিয়েছিলাম, সেগুলোও আসেনি। কি করতে পারি, একটু জানাবেন?
@নীল রোদ্দুর,
আপনার দ্বিতীয় ছবিটা যেটা পাশ থেকে কেটে গিয়েছিল, সেটা ঠিক করে দেয়া হয়েছে। ছবি ঠিক করার জন্য দুটো কাজ করতে পারেন –
আপনার প্রোফাইলে গিয়ে লেখার সময় ভিজুয়াল এডিটর বন্ধ রাখুন বলে যে অপশনটা রয়েছে, সেটার টিকমার্ক উঠিয়ে দিন। এবার আপনার লেখাটি সম্পাদনা করতে গেলে দেখবেন (বোল্ড ইটালিক বাটনগুলোর উপরে ডানদিকে) ভিজুয়াল এডিটর বলে একটি ট্যাব যুক্ত হয়েছে। সেখানে গিয়ে তারপর লেখায় ঢুকে ছবি বড় ছোট করতে পারবেন মাইক্রোসফট ওয়ার্ডের মতই। কাজ শেষ করে সেভ করুন,ছবির ক্যাপশন না আসলে ক্যাপশন দিন ছবির নীচে। সেভ করুন ফাইলটি।
এবার আবার প্রোফাইলে গিয়ে ভিজুয়াল এডিটর বন্ধ রাখুন অপশনটিতে ক্লিক করে রাখুন, নয়তো ভবিষ্যতে লেখা পোস্ট করতে গেলে ফন্টের গোলমাল হতে পারে।