কর্কশ রব তুলে সবগুলো কাক এলোমেলোভাবে উড়ে যাওয়ার আগে, মুহূর্মুহু গুলির শব্দে কেঁপে উঠলো শহীদুল্লাহ হলের আকাশ বাতাস। হলে অবস্থানরত প্রিয়জনকে দেখতে আসা আত্মীয়স্বজনরা চোখে মুখে আতঙ্ক ফুটিয়ে বুঝতে চেষ্টা করলো, এইখানে এইসব হচ্ছেটা কি। নিজেদের দায়িত্বজ্ঞানহীন সিদ্ধান্তের কারণে ক্ষোভের সীমা থাকল না তাদের; আসবে না আসবে না করেও কোন কুক্ষণে যে আবার এই গুন্ডা-পান্ডাদের আস্তানায় আসবার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো, তার কোন কারণ তারা খুঁজে বের করতে পারলো না। ওদিকে, সহস্রবার না করবার পরও, এই ছেলেটাইবা কেন বিশ্ববিদ্যালয় হলের মত একটা বাজে জায়গায় থাকতে গেলো, সেটা ভেবেও তাদের রাগের মাত্রা বেড়ে গেলো আরো একটুখানি। আতঙ্কিত অতিথি এবং আতঙ্কিত হতে পারবার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলা নির্বিকার ছাত্রদের ঔৎসুক্যের পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে অবশেষে জানা গেল, ক্ষমতাসীন দলের দেশ কিংবা জননেত্রী পল্টন ময়দানে ভাষণ দিয়ে দেশ ও জাতিকে উদ্ধার করার চেষ্টা বা অপচেষ্টা জাতীয় কিছু একটা করতে যাচ্ছেন। কিন্তু কোন অবস্থায় ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের কোন এক নামীদামী ছাত্রনেতাকে ঘুম থেকে উঠানো সম্ভব না হওয়ায়, তাকে ঘুম থেকে উঠানোর জন্য রীতিমত ছয় রাউন্ড গুলির দরকার হয়ে পড়েছিলো।
ওদিকে ‘বিকল্প’ মেসে দুপুরবেলায় খাবারের মূল্য দশ টাকা থেকে বাড়িয়ে কেন সাড়ে দশ টাকা করা হচ্ছে, সেটা নিয়ে মেসের সদস্যদের মধ্যে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। সদস্যদের দাবী খুব সাদামাটা- ‘সপ্তাহে অন্তত একদিন পোলাও কোর্মা খাওয়াতে হবে, এবং গরুর মাংসের কেজি দু’শ টাকা হয়ে গেলেও মিল প্রতি দশ টাকার বেশি নেয়া যাবে না।’ আরো একটু বেশি যুক্তিবাদী ছাত্ররা বলে ওঠে, ‘আরে বাবা! এগারো টাকায়তো রাজদরবারের খাবার খাওয়া যায়, আমরাতো সেটা চাচ্ছি না, আমরা চাচ্ছি সাধারণ খাবার, আতএব কেন মিলের দাম দশ টাকা থেকে বাড়ানো হবে? এসবের কোন মানে আছে?’ অন্যদিকে মেসের ম্যানেজার, যাকে দশটাকার বিনিময়ে কমদামী কিন্তু উন্নতমানের, সুস্বাদু খাবার ম্যানেজ করবার মত নিতান্ত সহজ কাজটি হাতে নিতে হয়, তার মানবেতর জীবন-যাপন শুরু হয়ে যায় দেখার মত করে। নিজের জন্য কোনো নতুন জিনিস ক্রয় করাতো দূরে থাক, পুরোনো জিনিস লুকোতে লুকোতেই পার করে ব্যস্ততম দিন। একটা টুথপেস্ট কিনলেও এমন লোকের অভাব হয় না, যারা নির্দ্বিধায় বলে ফেলবে, ‘মেসের টাকা মেরে টুথপেস্ট কিনে দাঁত ব্রাশ করছে, আবার সেই দাঁত নিয়ে হাসছেও।’
ওদিকে রাত্রি বাড়ার সাথে সাথে হলের ডিম, ভাজী আর পরটার ছোট ছোট দোকানগুলোর কার্যক্রম শুরু হতে থাকে আস্তে আস্তে করে। সমস্ত দিনের শেষে সব গল্পের ঝুলি নিয়ে শুরু হয় আড্ডাবাজী। পৃথিবীর খুব কম জিনিসই আমি দেখেছি। কিন্তু যতটুকু দেখেছি তা থেকে বলতে পারি, এর থেকে অনাবিল আনন্দদায়ক খুব কম জিনিসই আছে পৃথিবীতে। নির্ভেজাল সেই আড্ডা। পরিবারের চিন্তা নেই, ভবিষ্যতের চিন্তা নেই। একটা শব্দই পার্থিব সমস্ত দায়িত্ব থেকে মুক্তি দেয়ার জন্য যথেষ্ট। বড়ই শান্তিময়ী সেই শব্দ- ‘স্টুডেন্ট’। গুটিকয়েক যে-কয়টা সুবিধা বাংলাদেশের মত অনুন্নত দেশেও প্রশংসনীয়ভাবে বিদ্যমান, তার একটা হলো, নাম মাত্র মূল্যে উচ্চশিক্ষা। হতে পারে সেটা সীমিত মাত্রায়, তারপরও রয়েছেতো। শিক্ষা খরচ বহন করতে হয় না বলেই হয়তো স্টুডেন্টরা তাদের পড়াশোনা কিংবা আড্ডাবাজীতে মনোনিবেশ করতে পারে কিছুটা নিশ্চিন্তেই।
আড্ডাবাজীর কোন না কোন সময় টিউশনি বাড়ির গল্পতো আসবেই। রসায়ন বিভাগের মাহমুদ ভাই, এলোচুল দুলিয়ে বলতে শুরু করলেন, ‘আজকে এক বাসায় গেলাম টিউশনির জন্য, মেয়ের বাবা বলে, ‘‘বিকালে নাস্তা করলে আপনি কত নেবেন? আর নাস্তা না করলে কত নেবেন?’’’ আমরা সবাই আকুল হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘মাহমুদ ভাই, আপনি কি বললেন?’ মাহমুদ ভাই বলেন, ‘আমি উনাকে বললাম, ‘আঙ্কেল, ভাত খেলে কত দেবেন, আমি প্রতিদিন ভাত খেতে চাই?’ হলের অন্য আর সব স্টুডেন্টদের মত আমারো টিউশনির শুরু হলে থাকাকালীন সময় থেকেই। বারো রকমের মানুষের সাথে পরিচয় এই টিউশনির সূত্রে। প্রথম টিউশনি শুরু শহীদুল্লাহ হলের তৎকালীন ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের প্রেসিডেন্টের মামাতো বোন ভিকারুননিসার ছাত্রীকে দিয়ে। সেই গল্প অন্য একসময় হবে। কিন্তু আমার সবচেয়ে রোমাঞ্চকর টিউশনির গল্পটা করে ফেলি।
পৌষের কোন এক দুরন্ত বিকেলে হঠাৎ করে ইন্ডেপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির একজন ছাত্রী ফোন করে অনুরোধ করলো, যেভাবে হোক কয়টা দিন অন্তত পড়ানোর জন্য। উল্লেখ্য, আমার বিষয় কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং সে-সময় কম্পিউটার বিজ্ঞানের শিক্ষক খুঁজে পাওয়া খুব একটা সহজ ছিল না। তাছাড়া, মেয়েদের কাকুতি মিনতিকে উপেক্ষা করার সবচেয়ে ভালো বুদ্ধি হচ্ছে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রাজী হয়ে যাওয়া। অন্যদিকে, ব্যক্তিগতভাবে সৌন্দর্য্য এবং ভদ্রতা, এই দু’টো জিনিসের প্রতি আমার আকর্ষণ দুর্ণিবার। সমস্যা হলো, যে মেয়েটি ফোনে কথা বলল, তার কণ্ঠস্বর অত্যন্ত কর্কশ। তাতে কি! পড়াতে গিয়ে আমিতো আর সৌন্দর্য নিয়ে কথা তুলতে পারি না, নৈতিকতা বলে একটা কথা আছে না। তারপরো, নিজেকে নিজে বুঝালাম, আরে কণ্ঠ কর্কশতো হয়েছেটা কি? সেতো খুব সৌম্য চেহারার ভদ্র একটা মেয়েও হতে পারে। আরেকটা সমস্যা হলো, বাসা অনেক দূর, আমাকে হল থেকে অনেক পথ পাড়ি দিয়ে সেখানে যেতে হবে। কিন্তু তার অনুরোধ উপেক্ষা করা আমার মত দুর্বল চিত্ত সম্পন্ন মানুষের জন্য কষ্টকর। অবশেষে কি না কি ভেবে, রাজী হলাম। এবং যথা সময়ে উপস্থিতও হলাম তার বাসায়। তারপর আমার শুধু অবাক হবার পালা। সামান্য একটু কর্কশ কণ্ঠ হবার কারণে কত কিছুই না আমি ভেবেছি। অথচ, এখানে এসে দেখলাম, অন্য আর সবকিছুর তুলনায় কণ্ঠটাই তা-ও কিছুটা চলার মত।
সহ্যের একটা সীমা থাকা চাই। কিন্তু আমার সহ্যার দেখি সীমা নাই। অত্যন্ত যত্ন সহকারে পড়ানো শুরু করলাম। প্রতিদিন মনে হয় সাত সমুদ্র তের নদী পার হয়ে আমি তার বাসায় যাই। আর প্রতিদিন আবধারিত ভাবে আমার জন্য প্রস্তুত থাকে ঠান্ডা হয়ে যাওয়া এক বাটি নুডুলস্। কিন্তু এখানেই শেষ না, মাঝে মাঝে সেই নুডুলস্ এর সাথে একটি করে কারো মাথার চুলও থাকে। তাই ভদ্রতা করে দু’এক চামচ মুখে দেয়ার আগে আমাকে খুঁজে বের করতে হত কোথায় সে চুল। অবশেষে, কোনো এক পড়ন্ত বিকেলে, তার পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলে, টানা নয় মাস মাথার ঘাম পায়ে ফেলে স্বাধীনতা অর্জন করি।
কিন্তু কে কাকে স্বাধীন থাকতে দিতে চায়। পরাধীনতার দুষ্টু চক্র থেকে বের হওয়া সম্ভব নয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে স্বল্প কিছু সময়ের জন্য এমন কিছু রাজা-বাদশা বসবাস করেন, যাদের হীণমন্যতা, রুচিহীণতা ম্লান করে দেয় সমস্ত অর্জন। টিভি রুমে বসে, পাশের সিটে চাবি রেখে বন্ধুর জন্য জায়গা রেখে টিভি দেখছিলো সুজিত। হঠাৎ করে একজন এসে জানালা দিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিলো সেই চাবির রিং। তারপর সেখানটাতে বসে পড়ল। ‘কি ব্যাপার এটা ফেলে দিলেন কেন?’-জিজ্ঞেস করে উঠল সুজিত। উত্তর আসল, ‘তুই আমাকে চিনিস?’ তারপর দুই গালে টানা বিরানব্বইটা চড় খেতে হলো সুজিতকে। কি, সুজিতের জন্য মায়া হচ্ছে? ঠিক দুই বছর পরের ঘটনা, পরিবর্তিত পরিস্থিতি। চোখে মুখে আতঙ্ক নিয়ে, ভয়ে কাবু হয়ে প্রাণপণে হলের ভিতর দিয়ে দৌঁড়াচ্ছে, শহীদ। পিছনে চারজন তাকে স্টাম্প আর রড নিয়ে ধাওয়া করছে। আর সে চারজনের নেতৃত্বে যে রয়েছে, তার নাম কিন্তু ‘সুজিত’।
(চলবে…)
[email protected]
Nov 13, 2010
নিশ্চয়ই পরকালে আপনার জন্য প্রস্তুত থাকবে ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া এক বাটি নুডুলস্… :laugh:
মজা পেলাম পড়ে।
@নির্ধর্মী,
তাতে চুল না থাকলেই হলো। 😀
ভালো থাকবেন।
অগ্রজের লেখা পড়ে বিমূহিত।
হলের অভিজ্ঞতা আসলেই অসাধারণ। বিকল্প মেসও বেশ একটি মেস, আলোচনা করার মত অনেক কিছুই ঘটতে থাকে।
পরবর্তী লেখার জন্য অপেক্ষা করছি। :rose:
@নিশাচর,
অনেক ধন্যবাদ।
আমাদের সময় এক নাম্বার মেস বলেও আরেকটা মেস ছিলো।
এখন আছে কি-না জানি না।
হলের অবস্থা এখন কেমন? ভালো থাকবেন।
@মইনুল রাজু,
এক নাম্বার মেস এখনো আছে। ৩ নং নামে আরেকটি মেস চালুর কার্যক্রম চলছে।
রাজনীতির আখড়া। কয়েকদিন পরপর সংবাদপত্রের শিরোনাম না হলে দেখি চলেই না! হলের অবস্হা ভাল না; অন্তত সাধারণ ছাত্রদের জন্য। :guli:
আপনার লেখার ধরণ আসলেই খুব সুন্দর। আশা করি সিরিজে অনেকগুলো পর্ব থাকবে,সব অভিজ্ঞতা শেয়ার করবেন। 🙂
আমি কম্পিউটার সায়েন্সের ২য় সেমিস্টারে পড়ছি,এখন পর্যন্ত মারামারি দেখিনাই,সাইন্স ফ্যাকাল্টির এদিকে মনে হয় এসব ঝামেলা কম হয়,তবে এখনো অনেক কিছু দেখা বাকি। সফটওয়্যার ল্যাবে বসে কোড লেখা,খাদ্য-পুষ্টি ডিপার্টমেন্টের “চিপায়” ডালপুরি,চাংখারপুলে নান্নার বিরিয়ানী,সাইন্স লাইব্রেরির পাশের গাছতলা,পাশ করার পর খুব মিস করব। অসাধারণ কিছু শিক্ষক আছেন আমাদের ডিপার্টমেন্টে,এত ভালো আমি আশা করিনি,যদিও খারাপ মানসিকতার শিক্ষকও আছে কয়েকজন। বাংলাদেশে (বুয়েট ছাড়া) আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে এত সুন্দর সময় কাটানো যায় বলে আমার জানা নেই।
@রামগড়ুড়ের ছানা,
আমিও আশা করছি, বেশ কিছু পর্ব থাকবে। দেখা যাক।
আপনি আলমের দোকান বাদ দিয়ে ফেলেছেন লিস্ট থেকে। 😀
আসলে সব বিশ্ববিদ্যালয়েই সুন্দর সময় কাটানো যায়। আমি বাংলাদেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরেছি, থেকেছি। বিশ্ববিদ্যালয় জায়গাটাই অন্যরকম। সবখানেই দেখেছি সবাই খুব সুন্দর সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
ভালো থাকবেন।
কম্পিউটার বিজ্ঞান পড়াবেন আর সুন্দরী কোকিলকণ্ঠি ছাত্রী আশা করবেন, তা তো হয়না (ফাজলামী)।
এক কাজ করেন, আজই বিজ্ঞাপন ছেড়ে দিন- ‘কায়দা-সিপারা, আম-পারা পড়াতে চাই’। নিয়তে বরকত, খালিস নিয়ত থাকতে হবে। ঠান্ডা নুডুল আর খেতে হবেনা, ছাত্রীও হবে বেহেস্তের হুরীসম সুন্দরী ইনশাল্লাহ। গরম গরম ব্রেক-ফাষ্ট আর ছাত্রীর মায়ের :-/ নরম নরম বাতচিত, আহলাদী সমাদর গ্যারান্টিড। আর কোরান শরিফ পড়াতে পারলা তো মাশাল্লাহ হরেক রকমের কামিয়াবী, তামান্না, বা মকসুদে মঞ্জীল হাসিল হয়েও যেতে পারে।
@আকাশ মালিক,
আশা করতে আর দোষ কোথায় বলেন… 😀
মাত্রতো একটা কাহিনী শুনলেন, বাকীগুলো শুনেন, তারপর বলেন কি করা উচিৎ। 😛
@মইনুল রাজু,
একটা সত্যি কথা বলতে ভুলে গিয়েছিলাম। আপনার হাতের লেখায় যাদু আছে। আমার দারুণ ভাল লাগে, খুউউউউব পছন্দ। প্রতিটি কথা যেন নিজের জীবনের কোথাও কোন না কোনদিন ঘটে যাওয়া কাহিনি। আমার নিজের ধারণায় নিজের ভাষায় বলি, এই যে নুডুলের মাঝে চুল পাওয়া, এটা যেন দৃঢ় এক সাক্ষী হয়ে রইলো যে ঘটনাটি মোটেই কাল্পনিক নয়।
সন্দেহ করে ছিলাম গল্পের কোথাও এমন একটা কিছু থাকতে পারে তবে নিশ্চিত ছিলাম না।
বাহ, বাহ, সুবহানাল্লাহ। তো এই এক্সাইটিং মোমেন্টটা শেষ পর্বের জন্যে রেখে দিবেন প্লীজ।
আর একটি জব্বর ডাকসাইটে সিরিজ শুরু করার জন্য আগাম শুভকামনা রলো।
চলুক………………………… :yes:
@মাহবুব সাঈদ মামুন,
মামুন ভাই,
সিরিজ না করলে কেন জানি লিখতে বসতে ইচ্ছে করে না।
কি আর করা, আপনাদেরকে আবারো দশটা পর্ব সহ্য করে যেতে হবে। 🙂
@মইনুল রাজু,
১০ টা কেন ১০০ টা সিরিজ হলেও ধৈর্য ধরতে রাজী আছি। :yes:
@মাহবুব সাঈদ মামুন,
হা হা হা। অনেক ধন্যবাদ মামুন ভাই।
আপনারা আছেন বলেই, লিখতে ভালো লাগে।
আমার কোন টিউশনির অভিজ্ঞতা নেই!
লেখা ও মন্তব্যগুলো বেশ মজার!
ছাত্র জীবনের রসালো আড্ডা গুলো খুব মিস করি।
@লাইজু নাহার,
চাইলেতো যেকোনো সময় টিউশনির অভিজ্ঞতা অর্জন করা যায়। একটা পদক্ষেপ নিয়ে দেখতে পারেন। মজার অভিজ্ঞতা।
ভাল থাকুন। 🙂
ভাই টিউশনির কথা আর কয়েননা। স্টুডেন্টেস বাপ-মায়ের মত খারাপ মানুষ আর দুনিয়াতে নাই।এটা নিয়ে আমার এত বিশ্রি অভিজ্ঞতা আছে যে কি বলব।
আমার এক ছাত্রী তার সিক্সে পড়ত কিন্তু যোগ করতে পারতনা কিন্তু তার মা প্রতিদিন বলত তার মেয়ে কত ভাল ছাত্রী। একদিন তাকে ডেকে যখন দেখালাম তার মেয়ে অঙ্কের দুরবস্থা দেখালাম তখন সে তার মেয়ের দিকে হতাশভাবে তাকিয়ে বলত ‘তোমার না কত “ক্যাচি(!!!) ব্রেইন???”‘
আরেক ছাত্রীর মা কারণ ছাড়া আমার বেতন কাটে আর আমাকে দোয়া পড়ে ফু দেয় নামাজের পর। এখন আমি যদি ভাবি উনি ওনার দোয়ার দাম কেটে রাখে তাহলে আমার কি দোষ?? 😉
আর আমার বর্তমান এক স্টুডেন্ট এস এস সি পরীক্ষার্থী সে build কে পড়ে বুইল্ড। কিন্তু তার মার কাছে আমার প্রতিদিন শুনতে হয় ছেলে খুবই ভাল ছাত্র শুধু আমি একটু কড়া হলেই নাকি সে এক্কেবারে এ প্লাস। আমি ভাবছি তাকে কঠিনভাবে শাসিয়ে দেব যে দেখ বাবু বিল্ডকে বুইল্ড পড়বেনা। কারণ বাকি ব্যাপারগুলো শেখানোর জন্য সামনের এক বা দুই বছর তো রইলই। এস এস সি দ্বিতীয় বারের বার সে আর এমন ভুল করবেনা। 😉
আর কত কাহিনি বলব আমার বন্ধুরা আমার কাহিনি শুনে হাসে যে আমি বেছে বেছে এইসব জায়গায়ই কেন যাই। :-X
আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছি দু বছর।ককটেল মারা দেখেছিলাম মাত্র একবার। কিছু কিছু শিক্ষকের হাল দেখলে মনে হয় এখানে কেন আসলাম? এদের দৌরাত্মে ইদানীং ক্লাসের চেয়ে বারান্দা বা মাঠ আমার বেশি পছন্দ।এদের খামখেয়ালির কারণে ভবিষত অনিশ্চিত লাগে প্রায়ই। তারপরও এমন কিছু মানুষের দেখা পেয়েছি এখানে যে জীবন ধন্য মনে হয়। আমি অনেক ভালবাসি আমার বিশ্ববিদ্যালয়কে। এত মিস করব স্টুডেন্ট লাইফ শেষ হয়ে গেলে 😥
@লীনা রহমান,
আমি যেরকম ভাবতে পারেন, তার চেয়ে অনেক বেশি মিস করবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে। নিশ্চিত থাকেন। আমি খুব খুশি যে, সেশান জটের কারণে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় এখানে থাকার সুযোগ হয়েছিলো।
আর টিউশনির অরো কিছু অভিজ্ঞতার কথা পরবর্তী পর্বগুলোতেও লিখব হয়তো। কিন্তু এত কিছু লিখার আছে, দশ পর্বে সব শেষ করতে হবে, অনেক কিছুই হয়তো বাদ পড়ে যাবে। দেখা যাক।
ভালো থাকুন।
@মইনুল রাজু,
দশ পর্বে শেষ করতে বলছে কে? :guli: :guli: । আপনি ১০০ পর্ব লিখুন,কেও আপত্তি করবেনা 🙂 ।
৯৫% গার্জিয়ানের ধারণা তার ছেলে বা মেয়ের ব্রেইন খুবই ভালো,এক্কেবারে আইনস্টাইনের মত, খালি পড়ালেখা করেনা দেখে ভালো করছেনা। নিজে মাত্র ২টা টিউশনি করেছি, এছাড়া অনেকের কাছে গল্প শুনেছি,মোটামুটি সব গার্জিয়ান এধরণের কথা বলে।
@রামগড়ুড়ের ছানা,
কোন বাবা মা বিশ্বাস করতে চায়না যে তাদের সন্তানের ব্রেইন অতটা ভালো না। এটা বিশ্বাস করা কষ্টকর। তাছাড়া এর একটা ভালো দিকও আছে। কখনো হাল ছেড়ে দেয় না। বারবার চেষ্টা করে দেখে।
আমার আগের সব সিরিজই দশ পর্বের। একটা প্যাটার্ন হয়ে গেছে আমার জন্য। জানি না এটা কত পর্ব করতে পারব। ভালো থাকুন।
@রামগড়ুড়ের ছানা, জীবনে মাত্র ২টা টিউশনি করছ তুমি আমাদের দুঃখ কি বুঝবা? আমি এই পর্যন্ত ১০ টার বেশি স্টুডেন্ট পড়িয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিংএও পড়িয়েছি। আমার এত বাজে অভিজ্ঞতা হয়েছে বেশির ভাগ স্টুডেন্টের সাথে যে আমি প্রতিজ্ঞা করেছি আমার বাচ্চা গাধা টাইপের হলে তাকে কোন টিচারের কাছে পড়াবনা, নিজেই পড়াব। কারণ আমার ভুলের মাশুল আমাকেই গুনতে হবে 😛
@রামগড়ুড়ের ছানা,
আমি কি আমার অভিজ্ঞতা বা মতামতটা এখানেই দিবো? নাকি সন্দেশের জন্য আটকে রাখবো????
@সেতু,
এক্কেবার মুক্তমনাতে এসে হুমকি? 😥 😥 । অন্য কেও হলে উল্টা আইপি ব্যানের হুমকি দিতাম এখন নিজেই পালাবো কোথায় ভাবতেসি। থাক কিছু বলার দরকার নাই,বাসায় এসে সন্দেশ খেয়ে যান 🙂
@রামগড়ুড়ের ছানা,
আমার তো এখন শুনতে ইচ্ছে করছে, ব্যাপারটা কি।
আর আইপি ব্যানের কথা বলে লাভ নেই।
দ্বিতীয় বিদ্যা আছে না, তাতে সবাই আস্থা রাখে এখানে। 😀
@মইনুল রাজু,
ব্যাপারতো একটা-দুটা না,অনেক ব্যাপার আছে। আপনিও কি সন্দেশ খেতে চান নাকি? সেতু ভাই খাওয়ার পর আর অবশিষ্ট থাকবে বলে মনে হয়না।
কুদৃষ্টি পাল্টাও রাজু সাহেব। তুমি না শিক্ষক মানুষ।
নাহ। যুগ আসলেই পালটে গেছে। যাও বা মেয়েরা একটু পড়াশোনা করার জন্য ঘরের বাইরে এসেছিল, এই রকম সব চরিত্রহীন শিক্ষকদের কারণে সেটাও আর করতে পারবে না দেখছি। যৌন নিপীড়ন আইনে ধরে ধরে এগুলোকে জেলে ঢোকানো দরকার। যেগুলো মুক্তমনায় আবার রসালো করে এই সব কাহিনি লিখছে সেগুলোকে জেলে ভরার আগে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়াটাও জরুরী। 😛
আমিওতো একসময় শত শত সুন্দরী, অসুন্দরী, কেয়া রোজারিও কণ্ঠী, রানি মুখার্জী কণ্ঠী ছাত্রী পড়াইছি। কোনদিনতো কারো দিকে ফিরেও তাকাই নাই। তাবলিগি হুজুরদের মত খালি ছেলেদের দিকে তাকিয়ে তাকিয়েই লেকচার দিয়েছি আর মাঝে মাঝে রেগেমেগে মেয়েদের বই-খাতা কেড়ে নিয়ে দরজা দিয়ে ছুড়ে ফেলে দিয়েছি। 🙂
@ফরিদ আহমেদ,
পড়াশোনা কাউকে ঘরের বাইরে আনতে পারেনি। কেউ ঘরের বাইরে আসলেও এসেছে চরিত্রহীন শিক্ষকদের কারণে। সমস্যা হচ্ছে, আমরা কষ্ট করে ঘরের বাইরে আনি, আর আপনারা সেখানে উড়ে এসে জুড়ে বসেন। :laugh:
আর ছেলেদের দিকে তাকিয়ে তাকিয়েও লেকচার দেয়া দোষের কিছু না।
অভিজিৎ’দা তো অনেক আগেই দেখিয়ে দিয়েছে, প্রাণিজগতে সমলিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ অতি স্বাভাবিক একটা ঘটনা। তবে হ্যাঁ, হুজুর প্রজাতিতে এটা একটু বেশি। 😀
@ফরিদ আহমেদ, আপনার সাথে সহমত পোষণ করছি। আমি যখন মাস্টার্সের ফাইনাল পরীক্ষার পর আমাদের ইউনির্ভাসিটি কলেজে পড়াতে শুরু করলাম -ভাবলাম যেনো নতুন এক জগতে প্রবেশ করেছি। যেযব ছাত্রীদের সাথে ফাসলামো করতাম -তাদেরকেও নম্ররতার সহীত কথা বলতে-হাসতে শুরু করলাম। ভালো লাগতে শুরু করলো। স্নেহ দিতে শুরু করি -মনুষ্যত্বের গুণাবলীকে পরিপক্ক করানোর জন্য প্রতিদিন একটি করে বাস্তব গল্প শুনাতে শুরু করি। আমার আসার আগে সবাই জড়ো হতো আর আগ্রহ নিয়ে আমার দিকে চেয়ে থাকতো। মন-মানসিকতার পরিবর্তনটা অতীব জরুরী। তবে ব্যক্তিগত জীবনে ও কোনো মেয়ের সাথে আদৌ কোনরকম খারাপ ব্যবহার করতে পারিনি। আমি আশা করবো রাজু ভাই ও একদিন বুঝতে পারবেন, সৌন্দর্যের চেয়ে মনুষ্যত্ববোধ কতথা জরূরী :rose2: (?)
রাজু,
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ঃ দ্যা রিয়েল ফ্যান্টাসি কিংডম্ নিশ্চয়ই দশ পর্বের হবে!
শুরুটার মত অন্যান্য নয়টি পর্বও ভাল লাগবে আশা করছি।আর রাজুর অভিজ্ঞতার সাথে আমাদের অনেকের অভিজ্ঞতা মিলে যে যাবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। লেখা অব্যাহত থাকুক।
@গীতা দাস,
গীতা’দি,
অবশ্যই দশ পর্বের, বেশিও না, কমও না। 🙂
ভালো থাকবেন।
আপনার লেখা অতি মনোরম। মন কেড়ে নেয়।
@আফরোজা আলম,
অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন। 🙂
আপনার টিউশনির অভিজ্ঞতায় সহানুভূতি জানাচ্ছি। টিউশনি অতি জঘণ্য কাজ। বিশেষত ছাত্র/ছাত্রী যদি গাধা হয়।তবুও এই জঘণ্য কাজ আমাদের করতে হয় বড় ঠেকায় পড়ে।এককালে আমার এক ছাত্রী ছিল। এইচ এস সি পরিক্ষার্থিনী সেই ছাত্রী কে একটি রিপোর্ট লিখতে দিয়েছিলাম। সিডর আক্রান্ত মানুষের দূরাবস্থা উল্ল্যেখ করে জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের উদ্দ্যেশে রিপোর্টটি লিখতে হবে।সেই জিনিয়াস এরপর রিপোের্টর নামে যে খেল দেখাল 😀 । প্রথমেই সে জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবকে সম্বোধন করল ‘ডিয়ার বাঙ্কি’ (বান কি মুন) বলে।তার নিচে সে জাতিসঙ্ঘের হেডঅফিসের ঠিকানা লিখল গুলশান,ঢাকা :-X ।এবং রিপোর্টে সে যা লিখল তার সারমর্ম হচ্ছে, ওহে বাঙ্কি,আমার প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ সিডরে আক্রান্ত হয়ে খুব খারাপ অবস্থায় আছে। এখন,এটা তোমার কর্তব্য যে তুমি বাংলাদেশ পরিদর্শন করে আমাকে এ ব্যাপারে একটি রিপোর্ট দিবে। :laugh:
তবে ঢাবির অবস্থা এখন তুলনামূলকভাবে ভাল।গানফায়ার রেয়ার হয়ে এসেছে। অনাবাসিক শিক্ষার্থী হলে ঢাবিকে ভালই লাগবে।
@মিথুন,
:hahahee: :hahahee: :hahahee: :hahahee:
@মিথুন,
আমার কিন্তু টিউশনি করতে ভালোই লাগতো। আমি খুব এনজয় করতাম।
সব জায়গায় ভালো সময় পার হয় না, এটা সত্য। কিন্তু, টিউশনি অনেক বাস্তব অভিজ্ঞতা দিয়েছে আমাকে।
ঢাবির অবস্থা এখন অনেক ভালো। একমত আপনার সাথে। দিন দিন আরো ভালো হচ্ছে। আর অনাবাসিক কেন, আবাসিক শিক্ষার্থী হয়েও ঢাবিকে কখনো খারাপ লাগেনি। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে, এর উপর আমি মহাকৃতজ্ঞ।
ভালো থাকবেন। 🙂