দৈনিক সমকাল পত্রিকায় আজ রাতে ৩১ অক্টোবর ইন্টারনেট সংস্করণে পড়লাম রাজধানীর রমনা কালী মন্দিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জগন্নাথ হলের ছাত্রলীগকর্মীরা মন্দিরের ফটকে দোকানের মালিকানা নিয়ে সংঘাতের জের ধরে দুটি মূর্তি ভাংচুর করেছে। এ ঘটনায় পুলিশ অনিমেষ, গোবিন্দ ও প্রকাশ নামে তিনজনকে আটক করেছে।
মূর্তি ভাংচুরের ঘটনায় ছাত্রলীগের দু’পক্ষ পরস্পরকে দায়ী করছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার রাত দেড়টার দিকে ৪০-৫০ জনের একটি দল চাপাতি, রড, হকিস্টিক, ক্রিকেট স্ট্যাম্প নিয়ে মন্দির এলাকার দোকান ভাংচুর শুরু করে।
মন্দিরের তত্ত্বাবধায়ক শ্যামল কুমার বলেন, এ সময় তারা মন্দিরে রামপ্রসাদ ও সারদা দেবীর মূর্তি ভাংচুর করে। এছাড়া ব্রাহ্মণের কক্ষেও ভাংচুর করে।
এসবি পুলিশের পরিদর্শক মিজানুর রহমান জানান, জগন্নাথ হল শাখা ছাত্রলীগ নেতা উৎপল সাহা গ্র”পের কর্মীরা এ ভাংচুরের ঘটনা ঘটিয়েছে।
তবে গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, দুর্গাপূজা উপলক্ষে মন্দিরে পূজা উদযাপন কমিটি গঠন নিয়ে বিরোধের জের ধরে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে।
শাহবাগ থানার পেট্রোল ইন্সপেক্টর শহিদ জানিয়েছেন, ভাংচুরের পর রাতেই তিনজনকে আটক করা হয়।
ছাত্রলীগ নেতা পঙ্কজ অভিযোগ করেন, পূজা উদযাপন কমিটি নিয়ে বিরোধের জের ধরে উৎপল গ্রুপের কর্মীরা মূর্তি ভাংচুর করেছে। তিনি ফটকের কাছে দু\’টি দোকানের মালিকানার বিষয়টি স্বীকার করেন।
তবে ছাত্রলীগ নেতা উৎপল সাহা মূর্তি ভাঙার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “পঙ্কজের গ্রুপ মূর্তি ভাংচুর করে আমাদের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করছে।”
মানে কি? মানে ধর্ম, রাজনীতি, ক্ষমতা, অর্থলিপ্সা সব একাকার। ছাত্রলীগের হিন্দু নেতারা মারমুখী হত, বিবৃতি দিত যদি না কোন মুসলমান ধর্মাবলম্বী এ ঘটনায় জড়িত থাকত। তথাকথিত প্রগতিশীল গোষ্ঠী এ ঘটনাকে অবশ্য কৌশলে সাম্প্রদায়িক রঙের পোঁছ দিবে। আবার আক্ষরিকভাবেই মুসলিম সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী ফায়দা নেবে হিন্দুদের এ হেন কার্যকলাপকে — মূর্তি ভাংচুরকে নিজ ধর্মের অবমাননা করা বলে, যার সম্প্রসারিত অর্থ করবে হিন্দু ধর্মের ঠুনকো অস্তিত্ব। সনাতন হিন্দু নেতারা কি বলবেন? নিন্দা জানাবেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চাইবেন। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করবেন। এই তো হল আমাদের চর্চা।
নারীকে উত্যক্তকরা বা যৌন হয়রানির মতই মূর্তি ভাঙ্গাও বক্তৃতা বিবৃতির বিষয়বস্তুর মধ্যে সীমাবদ্ধ। বড়জোর আমার মত কলাম লেখা পর্যন্ত সম্প্রসারিত। এ নিয়ে কী অন্য কোন করণীয় খোঁজে পাওয়া যাবে না!
যদি যায় তবে তা কী?
যারা ক্ষমতাহীন, নিরীহ ও যারা রাজনীতি বেচে খায় না সেই সাধারণ জনগনের এ বিষয়ে ভাবনা কি ? আর এ নিয়ে নাস্তিকদেরই বা কি অনুভূতি? তা জানতে ইচ্ছে করে। খবরটি পড়ে এ আমার তাৎক্ষণিক ভাবনার বহিঃপ্রকাশ।
ইওরোপে হাজার বছরে কোন বিবরতন হয় নি। হয়েছে গত সাড়ে তিনশ বছরে। রেনেসা ও শিল্প বিপ্লবের মাধ্যমে।
@মিয়া সাহেব,
নির্ভর করছে কখন থেকে রেনেসাঁর শুরু ধরছেন। দান্তের জন্ম সাড়ে সাতশ বছরের মত হতে চলল।
@মিয়া সাহেব,
সাড়ে তিনশ বছরের অংক কোথা থেকে পেলেন ? বিবর্তন কোন সুনির্দিষ্ট ঘটনা নয়, বরং একটা সুদীর্ঘ প্রক্রিয়া । সেটা প্রাকৃতিক অথবা সামাজিক যাই হোক না কেন।
রঁনেসঁস (Renaissance) বা পূনর্জন্ম আন্দোলন ইউরোপে শুরু হয় ১৩শ শতাব্দীতে যার ব্যপ্তি ছিল ১৭শ শতাব্দী পর্যন্ত। এর ঠিক আগে ব্রিটানিয়ায় ম্যাগনা কার্টা সাক্ষরিত হয় ১২১৫ সালে যা ছিল ইউরোপে সংসদীয় গনতন্ত্রের সূচনা।শিল্প বিপ্লব শুরু হয় ১৯শ শতাব্দীর গোরায়। কিন্তু ইউরোপের সমাজে ১২শ শতাব্দীর গোথিক যুগের একটা বিরাট ভূমিকা আছে , যেমন আছে অষ্টম থেকে একাদশ শতকের নরমান আর ভাইকিংদের ইউরোপব্যাপী অভিযান।
একটা ব্যাকটেরিউম একাই তার ডিএনএ কোডিং পরিবর্তন করে তার গোত্রের লাখো ব্যাকটেরিয়ার আচরন বদলে দেয় শুধুমাত্র সংশোধিত ডিএনএ ছড়িয়ে দিয়ে। মাইক্রো পর্যায় থেকে ম্যাক্রোকে সরাসরি প্রভাবিত করার একটা অনন্য দৃষ্টান্ত আমাদের আদি আত্মীয় এই এক কোষী ব্যাকরেরিয়া। মানুষ তা পারে না কারন মানুষকে একটা বিরাট প্রতিকূলতা সাথে নিয়ে সব সময় কাজ করতে হয়। এই প্রতিকূলতাকে বলা হয় “দুর্বলতম সংযোগ প্রকরণ” বা ” The weakest link factor” । একটা শেকল কখনই তার দুর্বলতম অংশের চেয়ে শক্তিশালী হয় না। আর এরকম দুর্বলতম অংশের সংখ্যা যত বাড়বে সে শেকল তত দূর্বল হবে। তেমনি , একটা দল বা জাতির শক্তিমত্তার , বুদ্ধিমত্তার উচ্চতা নির্ধারিত হয় তার দুর্বলতম সদস্যদের দিয়ে , শক্তিশালীদের দিয়ে নয়।
একটা লোহার শেকলকে সুতো দিয়ে জোড়া লাগালে যেমন তা সুতোর চেয়ে বেশী শক্তিশালী হবে না। তেমনি দু চার জন শিক্ষিত মানুষ দিয়ে গড়া পনের কোটি অশিক্ষিত ও কুশিক্ষিত মানুষে ভরা দেশ কি করতে পারে ? এটা অসম্ভব। যে দেশে শিক্ষা একটা সস্তা কাগজের ছাড়পত্র বৈ কিছু নয় , সে দেশে অশিক্ষিত আর শিক্ষিতের মাঝে তফাৎটা ঐ একটা কাগজের সমানই পুরু।
অতএব , বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হবে ম্যাক্রো পর্যায় থেকে , মাইক্রো পর্যায় থেকে নয়। ইউরোপে কোন একক নেতা সমাজ পরিবর্তন আনেননি। হাজার বছরের সামাজিক বিবর্তনের মাধ্যমে সেখানে একটা সমাজ ব্যাবস্থা গড়ে উঠেছে। কোন ব্যক্তির একক প্রচেষ্টায় যেমন ইউরোপকে আবার মধ্যযুগে ফেরত পাঠানো সম্ভব নয় , তেমনি বাংলাদেশকেও কেউ রাতারাতি মধ্যযুগ থেকে আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায় উত্তরণ করতে পারবে না। ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন আর শপিং সেন্টার একটা জাতির ভোক্তা সংস্কৃতির পরিচায়ক মাত্র , সভ্যতার মাপকাঠি নয়। ধন্যবাদ।
@সংশপ্তক,
বিশ্লেষণধর্মী মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
@সংশপ্তক,
মন্তব্যটি ভাল লাগল ধন্যবাদ
ধন্যবাদ লেখাটির জন্য। ছাত্রলীগের এবারের টার্মের এই আচরণের বিশ্লেষণ কিন্তু আমরা যারা বিশ্লেষণ করতে পারি, তারা করি নি। এটা ছাত্রলীগের জন্য ক্ষতিকর। চক্ষুলজ্জা এড়াতে এ নিয়ে প্রগতিশীল গোষ্ঠী চুপ থেকেছে কিংবা অন্য দলের লোক ঢুকে এসব করছে এমন দাবী পর্যন্ত করেছে। সততার সাথে জিনিসটার পর্যালোচনা প্রয়োজন। গত টার্মে জয়নাল হাজারী যত ক্ষতি করেছে আওয়ামী লীগের, এই টার্মে ছাত্রলীগ তার কয়েক হাজার গুণ করে অলরেডী বসে আছে। বাংলাদেশের মানুষের মন্দের ভালোটাই সহ্য করার মত না। কি যে উপায়!
@ধ্রুব,
আওয়ামীলীগের লাভ ক্ষতি রাজনীতির হিসাব।আমাদের এ নিয়ে মাথা ব্যথা নেই। সাধারণ জনগণের আবেগ নিয়ে রাজনীতি?খেলা। মারামারি। ভাংচুর। :cigarette:
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
গিতাদিদি,
ভাল লিখেছেন। একটা সমশার অনেকগুলও dimension. প্রিথিবির কোন কোন দেশ অনেক বিশয়ে অনেক এগিয়ে গেছে। আর কোন কোন দেশ এখনো primitive issue নিয়ে ব্যস্ত।