দেরিদা[1] খুঁজে বের করেছিলেন, অথবা বলা যেতে পারে, দেরিদা পড়ার পর আমি খেয়াল করে দেখলাম, আসলেই কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো[2] শুরু হয়েছে কমিউনিজমের “ভূত” দিয়ে| ধন্যবাদ দেরিদাকে আরেকটা কারণে, তা হলো শেক্সপিয়ারকে মনে করিয়ে দেবার জন্য| হ্যামলেটকে কি ভুতে ধরেছিল? প্রত্যেকটা আধুনিক মানুষকেই নাকি ভুতে ধরতে পারে, পল ভ্যালেরিরও[3] তাই মত| আপাতত দুনিয়ার মেহনতি মানুষকে নৈতিক ধন্যবাদটুকু দিতে ভূতে ধরা লাগে না বলেই মনে হয়| দেরিদা পড়ে আমি অবাক হই| কারণ দেরিদা text এর অর্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব সহকারে সামনে নিয়ে আসেন| আমার পাঠ সীমিত, তথাপি এটা বোঝা যায়, আমার (ঘাড়ে চেঁপে বসা) ভূত আমাকে সত্যি কথাটা প্রথম দিন বলে দিলেও, সেটার কার্যক্ষেত্রে প্রত্যক্ষণ ও কার্যকরণের জন্য শতাব্দী পেরিয়ে যেতে পারে| আমার ভুতের সমালোচনা ছিল, সে বিপ্লব দেখতে চায়, সে স্বার্থপর, কখনো তাকে “গোলে হরিবোল” বলার দায়ও দেয়া হতো, ইংরেজিতে যাকে বলে “superficial”|
বিদেশে আমার প্রথম দিন| “বিদেশ” না বলে যদি বলি অস্ট্রেলিয়া, তাহলে অর্থে[4] যতটুকু পার্থক্য হয়, তাতে পাঠকের সুবিধা-অসুবিধা দুইই ঘটতে পারে, তবে লেখককে অবশ্যই নিশ্চিত হতে হবে, যদি না লেখক পাঠককে কোন বিশেষ অর্থে দ্বন্দ্ব উপহার দিতে চান, text এর অন্তর্নিহিত ambiguity সেটার জন্য দায়ী হলে তা হবে লেখকের ত্রুটি| তবে এই সকল ত্রুটি থেকে মনোযোগী পাঠক মুক্তি দিতে পারেন, সেটা আবার লেখকের পক্ষে নাও যেতে পারে| ধরে নেয়া যাক কোনো সমগোত্রীয় ভূতের প্রতি সম্বোধন করা হচ্ছে| এটি সবচেয়ে সুবিধার, কেননা “ভালো জ্বিন” “খারাপ জ্বিন”[5] বলে ব্যাপারও থাকতে পারে|
ফিরে যাই ভূতের কথায়| প্রথম দিনেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে দেখি ফিদেল ক্যাস্ট্রো সেজে একজন দাড়িয়ে আছে| মুখে চুরুট আছে, আগুন জ্বলে না, ধোঁয়াও নেই| উদ্দেশ্য দৃষ্টি আকর্ষণ| সুন্দরী নারী লিফলেট বিলাচ্ছে| আমার অভিজ্ঞতায় নতুন| সুন্দরীকে জিগ্গেস করাতে বের হয়ে এলো এটি অস্ট্রেলিয়ান বিপ্লবী সমাজতান্ত্রিক দলের[6] প্রচারণার অংশ| খুশি হয়ে গেলাম| পরী আমার ইমেইল এড্রেস নিল, জেলি আরিয়েনের মিটিংয়ের সিডিউল ধরিয়ে দিল| আরিয়েনকে ফেসবুকে খুঁজে পেলাম, ইনি ইন্দোনেশিয়ার কর্মী[7]|
আরিয়েনের মিটিং টাতে যেতে পারলাম না| কয়েকদিন পর পেলাম আরেকটা দাওয়াত, ইমেইল মারফত| কলম্বিয়ার গেরিলাদের[8] উপর চলচিত্র দেখার| আমি তখন পুরোদমে সিনেমা দেখে সময় কাটাই| The man with the movie camera[9] দেখার ব্যর্থ চেষ্টাও হয়ে গেছে কয়েকবার| ভাবলাম সিনেমা দেখার সুযোগটা অন্তত নেয়া যাক| শনিবার ঠিক ঠিক ট্রেনে করে পার্টি অফিস খুঁজে বের করে চলে গেলাম| গিয়ে দেখি আরম্ভও হয়ে গেছে| বনের ভিতর গেরিলাদের ক্যাম্প| অনেকটা অরুন্ধতীর[10] ভারতীয় মাওবাদীদের বর্ণনার সাথে মিলে যায়|
গেরিলারা স্বতস্ফুর্তভাবে যোগ দিচ্ছে, তাদের হাতে বিষম আকৃতির আগ্নেয়াস্ত্র, ট্রেনিং হচ্ছে, বিজ্ঞান, সমাজবিদ্যাসহ অন্যান্য বিষয়েও, কি কি শেখানো হতে পারে সে বিষয়েও যুক্তি, তাদের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ইত্যাদি বলা হচ্ছে| কয়েকদিন আগেই মাত্র তামিল নিধন হয়ে গেল, শ্রীলংকাতে| এদের প্রধানের চেহারাটা দেখে প্রভাকরণের কথা মনে হলো| আমি ছাড়া বাকি সবাই বেশ পরিণত বয়স্ক| লোক কমই, ৬-৭ জন শ্রোতা ও দর্শক| একজন আবার বাইরে গিয়ে বিয়ার আর সিগারেট চালাচ্ছিল|
একটা ছোট ঘর, কমিউনিস্টদের আস্তানা যেমন হয়: বইয়ের সেল্ফ, দশ-বারোটা চেয়ার, দেয়ালে পোস্টার সাঁটা হরেক রকমের, একটা আবার abortion এর উপর| স্যুপের গন্ধ আসছে রান্না ঘর থেকে,একজন জিগ্গেস করলো আমি কোনো ড্রিঙ্কস চাই কিনা, বা রাতে খাব কি না| খাব না, কারণ পকেটে পাঁচ টাকা নিয়ে এসেছিলাম, তাকে চাঁদা হিসেবে দিয়ে দিলাম, ছেলেটার চোখের দিকে তাকিয়ে লজ্জাই লাগছিল, কিন্তু ওর বেশি তখন আর দেই কি করে?
একটা মেয়ে বলছিল, কেন ক্যাম্পে সন্তান-ধারণ নিষিদ্ধ, কারণ যুদ্ধাবস্থায় শিশু লালন-পালন বা গর্ভাবস্থা কোনটাই আসলে সুবিধার না, দলের জন্যও না, ব্যক্তির জন্যও না| সুরটা ভালো লাগলো না| কারণ কোনো মেয়ে প্রেগনেন্ট হয়ে গেলে তাকে দলত্যাগ করতে হবে, তার পার্টনার সম্বন্ধে কিছুই বলা হলো না| সিনেমা দেখার মোহ কেটে গেল, তথ্যের প্রতি মোহ কাটতেও সময় লাগলো না| উঠে বের হয়ে গেলাম| শীতের রাত| ট্রেনে করে বাড়ি ফিরতে সময় লাগলো না|
ভাবনার বিষয়: abortion কোন অবস্থাতে সমর্থনযোগ্য? অপরাধতত্ত্বেও নাকি গর্ভপাতের আইনের প্রভাব থাকতে পারে[11]| অস্ট্রেলিয়ার বিপ্লবীদের শ্লোগান হিসেবে যে এটি উঠে এসেছে তা টের পেলাম পরের কিছু মেইলে| তারা অস্ট্রেলিয়াতেও abortion বিরোধী আইনের বিরুদ্ধে| ভূত টা সঙ্গেই থাক কিছু দিন| দেখা যাক, গর্ভপাত বিষয়ে বাকি(ভূত) রা কি বলে| উল্লেখ্য বাংলাদেশের সরকারের আইনে, সম্ভবত এক মা কে বাঁচানোর কেস ছাড়া সব ক্ষেত্রে গর্ভপাত দন্ডনীয়। ধর্মগুলি এর বিরুদ্ধে| কিন্তু আম্রিকা ও কিছু সেক্যুলার রাষ্ট্র(যেমনঃফ্রান্স) গর্ভপাতের পক্ষে আইন করেছে, এটাও একটা অধিকার(!)| সেই সাথে আছে নানা মারপ্যাচ, ১২ সপ্তাহ, ১৮ সপ্তাহ ইত্যাদি, ইত্যাদি|
মুক্তমনাতেও[12] এ বিষয়ে লেখা হয়েছে| কিন্তু গর্ভপাতের পক্ষ-বিপক্ষের চিরসবুজ বিতর্কটি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছিল| এখানে সেটিই কাম্য|
Reference:
1. Specters of Marx, the state of the debt, the Work of Mourning, & the New International, translated by Peggy Kamuf, Routledge 1994
2. The Communist Manifesto, Karl Marx, F. Engels
3. Crisis of Mind(1919) – Paul Valery
4. The meaning of meaning – C K Ogden, I A Richards(1923)
5. http://en.wikipedia.org/wiki/Jinn
6. http://rsp.org.au/
7. http://indonesiasolidarityforum.blogspot.com/
8. http://en.wikipedia.org/wiki/Revolutionary_Armed_Forces_of_Colombia
9. http://en.wikipedia.org/wiki/Man_with_a_Movie_Camera
10.http://naxalnaxalitemaoist.wordpress.com/category/arundhati-roy/
11.http://en.wikipedia.org/wiki/Legalized_abortion_and_crime_effect
12. https://blog.mukto-mona.com/?p=6225
বিশেষ ক্ষেত্রে গর্ভপাত প্রয়োজেনীয় হয়ে পড়ে। তবে আমার মনে হয় অবাঞ্চিত গর্ভ রোধ করতে পারলে(সেই ক্ষেত্রে জন সচেতনা প্রয়োজন) গর্ভপাতের সমস্যা ও বিতর্ক থেকে অনেকটাই বাঁচা যাবে। প্রিভেন্সন ইজ বেটার দেন কিউর।
ব্যাপারটা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়ে গেছে ইতোমধ্যেই, তারপরও মন্তব্য করছি। অভিজিতের লেখায় ধ্রুব এর সাথে এ নিয়ে কিছু আলোচনা হয়েছিল। স্বাক্ষর তার লেখা শেষ করেছেন এই বলে,
এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে কি না জানি না, তবে এটি এমনি একটি বিষয় যে এ প্রসঙ্গে ‘শেষ উত্তর’ বলে বোধ হয় এখনো কিছু নেই। অন্ততপক্ষে বৈজ্ঞানিকভাবেই বলেন বা নৈতিকতার মানদন্ডেই বলেন, এর সঠিক উত্তর দেওয়ার মত অবস্থায় আমরা এখনও এসে পৌঁছেছি বলে মনে হয় না। তবে আজকে আমাদের সভ্যতা যে অবস্থায় এসে পৌঁছেছে তা তে করে এটুকু বোধ হয় বলা যায় যে, এর সাথে নারী অধিকারের ব্যাপারটা অত্যন্ত ঘনিষ্টভাবে জড়িত। এবং ‘প্রাণ কি’, ‘ফিটাসের মধ্যে কখন প্রাণের সঞ্চার হয়’ এই দুটি প্রশ্নের উত্তর পাওয়াও অত্যন্ত জরুরী। অনেকেই দেখলাম বলার চেষ্টা করছেন যে এটা সামষ্টিক সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত। এ প্রসঙ্গে একটা কথাই বলার থাকে যে, বেশীরভাগ সমাজেই এখনো সামষ্টিক সিদ্ধান্তগুলোতে ছেলেদেরই প্রধাণ্য থাকে, এখানে ‘সমষ্টি’ বলতে যদি নারী পুরুষের যৌথ সিদ্ধান্তের কথা বোঝানো হয় তাহলে অবশ্য কোন সমস্যা নেই।
এবার আসি আমার ব্যক্তিগত মতামতে। আমি মনে করি আজকের সমাজে গর্ভপাতের অধিকার একটি বেসিক অধিকার হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত। ভ্রূণে কখন প্রাণ সঞ্চার হয় সে প্রসঙ্গে আধুনিক বিজ্ঞানের মতামত এবং গর্ভধারণের পরে একজন নারী তার সন্তানকে রাখতে চান কি চান না সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ৩ মাস সময়কে গ্রহণযোগ্য একটা সময় বলে ধরে নিয়ে বলছি , প্রথম ট্রাইমেস্টারে গর্ভাপাতের লিগালিটি নিয়ে বিতর্কের আর কোন অবকাশ নেই।এর পরে কতদিন পর্যন্ত গর্ভপাতকে লিগাল বলে ধরা হবে বা আদৌ ধরা হবে কিনা এবং কি কি অবস্থায় তা করা যাবে এ নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। এর পরে মায়ের স্বাস্থ্য ( মানসিক এবং শারীরিক), শিশুর স্বাস্থ্য ইত্যাদি বিবেচনা করার প্রশ্ন সামনে চলে আসলে বাবা মা এবং ডাক্তারের সম্মিলিত সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে যে কোন সময় গর্ভপাতের অধিকারও থাকা উচিত। এখন আসি, গর্ভপাতের সিদ্ধান্ত বাবা এবং মা ( বিবাহিত বা অবিবাহিত দম্পতির মধ্যে পার্থক্য করছি না আমি এখানে, বিবাহ বহির্ভূত যৌন সম্পর্ক এবং সন্তান ধারণ কোন সমস্যা নয় বলেই ধরে নিচ্ছি ) এর যৌথভাবে নেওয়ার ব্যাপারটাতে। একজন নারীকে যেহেতু সন্তান ধরাণ এবং লালন পালনের মূল দায়িত্বটা পালন করতে হয় তাই ( আমার মতে) এ সিদ্ধান্তটা শেষ বিচারে নারীরই হওয়া উচিত। তার পুরুষ পার্টনার তাকে প্রভাবিত করতে পারে কিন্তু কোনভাবেই জোর করতে পারে না। এ নিয়ে যদি মতভেদ থাকে তাহলে শেষ সিদ্ধান্তটা নারীরই হওয়া উচিত। একজন নারী যদি সন্তানটিকে না চায় তাহলে ‘শুধুমাত্র অসাবধানতাবশতঃ গর্ভধারণ করে ফেলেছি বলেই তাকে জন্ম দিতে হবে’ , এই ব্যাপারটাকে আমি কোনভাবেই মেনে নিতে পারি না।
@বন্যা আহমেদ,
এখানে ছোট্ট একটি কারেকশান আছে, যেটা রৌরবের মন্তব্যের জবাবে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। হয়তো তারপরেও পুরোপুরি পরিষ্কার করতে পারিনি, নিজের বোঝানোর অক্ষমতার জন্য :-X ।
সামষ্টিক সিদ্ধান্তই সঠিক সবসময় সেটা আমি কখনই বলছি না। আমি যেটা বলার চেষ্টা করছি তা হচ্ছে যখন একটি নীতিমালা রচিত হয় সেখানে, চাই বা না চাই, সামষ্টিক চিন্তাই প্রতিফলিত হয়।
ধর্ম বিশ্বাস কিংবা নৈতিকতা/অনৈকতার ব্যাপারে আমার দৃষ্টিভঙ্গি হল যেগুলোর পরম কোন মানদন্ড নেই সেগুলোকে ব্যক্তির উপর ছেড়ে দেওয়া উচিত, যতক্ষন তা অন্যের ক্ষতি না করে। সেভাবে কেউ যেমন ধর্ম পালন করতে পারে এবং অন্য কেউ কোন ধর্ম পালন নাও করতে পারে। সেভাবে একজন নারী/পুরুষ চাইলে তাঁদের সন্তানকে পৃথিবীতে আনতেও পারেন, অথবা নাও আনতে পারেন। এখানে আমার কাছে সেটা নৈতিক কি অনৈতিক প্রশ্ন অবান্তর।
@স্বাধীন,
এখানে আরেকটু যোগ করি, মানে নিজের বক্তব্যকে আরেকটু পরিষ্কার করি। আমার কাছে গর্ভপাত নৈতিক/অনৈতিক সেটার সমাধান করে সেটাকে মানদন্ড হিসেবে দাঁড় করানোর চেষ্টা করা এই প্রক্রিয়াটিকেই অযৌক্তিক মনে হয়। বরং উপরে ধ্রুবর মন্তব্যে যেটা এসেছে, মানুষকে যত বেশি অপশন দেওয়া সম্ভব সেটাই দেওয়ার চেষ্টা করাই সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা হবে।
অর্থাৎ গর্ভপাত অনৈতিক এটা বলে যেমন কাউকে বাধ্য করতে পারি না গর্ভপাত না করানোর জন্য, আবার তেমনি অবৈধ সন্তান হিসেবে চিহ্নিত করেও কাউকে বাধ্য করতে পারি না গর্ভপাতে। দুই ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট নারী/পুরুষ তাঁদের হাতেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার অপশন থাকা উচিত। এখানে আইন করে গর্ভপাত নৈতিক কিংবা অনৈতিক কোনটাই বলা সম্ভব নয়।
@স্বাধীন,
বরং এই ক্ষেত্রে আইনটি হতে পারে যে গর্ভপাত করা বা না করার সিদ্ধান্ত ব্যক্তির উপর নির্ভর করবে। কেউ চাইলে ধর্ষণজনিত সন্তানও পৃথিবীতে আনতে পারেন, আবার তিনি চাইলে নাও আনতে পারেন। যেখানে ভুক্তভোগী শুধুমাত্র নারী সে ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার কেবল মাত্র তাঁর। কিন্তু একটি সংসার যেখানে নারী-পুরুষ দু’জনের সমান অধিকার সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার কেবলমাত্র তাঁদের হওয়া উচিত।
@বন্যা আহমেদ,
হ্যাঁ কখন গর্ভপাত করা হচ্ছে সেটা গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম ট্রাইমেস্টারের পরে বেশ একটা ধুসর এলাকা আছে বাচ্চা জন্ম নেয়ার আগে পর্যন্ত। এ সময়ে গর্ভপাত সম্বন্ধে আপনার মতামত কি?
“প্রাণ” কি বিষয়ে আমার মন্তব্য, বেদনার অনুভূতি যখন জন্ম নেয় ফিটাসের মধ্যে সেটি একটি ভাল গাইডলাইন হতে পারে।
@রৌরব,
হুমম। একটা ছয় মাসের বাচ্চার কি বেদনার অনুভূতি আছে? বেদনার অনুভূতি আছে কিনা কিভাবে ডিটেক্ট করা যায়? আমার ল্যাবের একটা রোবটে এক ধরনের বেদনার অনুভূতি দেয়া হয়েছে। ওটা প্রাণী বলে গ্রাহ্য হবে?
@ধ্রুব,
প্রথম দুটি প্রশ্নের উত্তর জানিনা। জিগাইতেছি।
রোবটকে আসলেই বেদনার অনুভূতি দিয়েছেন? সেলফ-কনশাসনেস না থাকলে কি তাকে ঠিক অনুভূতি বলা যায়? সত্যি সেলফ-কনশাস হলে এখানে যে আলোচনা হচ্ছে সে অর্থে “প্রাণী” বলব।
@রৌরব,
সেল্ফ কনশাসনেস কিভাবে ডিটেক্ট করে? তবে এটা তো বুঝাই যাচ্ছে, সেলফ-কনশাসনেস না থাকলে যদি অনুভূতি বলা না যায় আর ছয় মাসের বাচ্চা যদি সেলফ-কনশাস না হয়, তাহলে আপনার ডেফিনিশন অনুযায়ী ছয় মাসের বাচ্চা প্রাণী না।
@রৌরব,
রোবট বিশেষ কিছু কর্মের জন্য নেগেটিভ নাম্বার পাচ্ছে আর সে যে এলগরিদম চালাচ্ছে, সেটা থিউরিটিক্যালি প্রাপ্ত নম্বর সর্বোচ্চীকরণ করে, ফলে প্রাপ্ত নেগেটিভ নম্বরকে বেদনা বলা যায়, কারণ সে সার্বিক চেষ্টা করছে এসব নেগেটিভ নম্বর না পেতে। সে সেল্ফ-কনশাসলি করছে কিনা বলার উপায় কি?
কনশাসনেস জিনিষটা কি?
@ধ্রুব,
আমি আগে evolutionary psychology বইয়ের একটি লিঙ্ক দিয়েছিলাম। বইটি আমাদের লাইব্রেরীতে আছে। পড়ে দেখো। তোমার কাজে লাগবে। মস্তিষ্ক কিভাবে কাজ করে, বা কনসাসনেস অথবা ইমোশান কিভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে ধারনা লাভ করা যাবে।
@স্বাধীন,
ধন্যবাদ। লিংকটা কাজে লাগবে। আমাদের মধ্যে একটা প্রচলিত ধারণা আছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তৈরী করতে হলে ব্রেইনের ফাংশান উদ্ঘাটনেই ফিরে যেতে হবে। কিন্তু অনেকক্ষেত্রেই কিন্তু ঘটছে উল্টো। এই দুই ধরনের গবেষণা নিয়েই সচলে আমি আমার প্রথম লেখাটি লিখেছিলাম।
স্বাধীনভাবে তৈরী এলগরিদম পরবর্তীতে সাহায্য করছে ব্রেইনের ফাংশন উদ্ঘাটনে, এমনটি ঘটেছে। যেমন, যে এলগরিদমটির কথা বললাম, ওটা তৈরির এক দশকের মধ্যে তদ্রূপ ফাংশন মস্তিষ্কে পরিকল্পিতভাবে খুঁজতে গিয়ে সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া গেল। এখন আমরা জানি ডোপামিন হচ্ছে আমাদের প্রণোদনার কারেন্সি। অথচ ডোপামিন আবিষ্কার হয়েছিল ১০০ বছর আগে, কিন্তু মস্তিষ্কে তার অবদান বোঝা যায় নি, কারণ সঠিক প্রশ্নটি করা হয় নি।
@ধ্রুব,
প্রথম লেখার লিংক: http://www.sachalayatan.com/guest_writer/26994
@ধ্রুব,
তোমার প্রথম লেখাটি পড়েছিলাম আগেই। আমার একটি প্রশ্ন আছে। আচ্ছা এমন একটি প্রোগ্রাম কি লেখা সম্ভব যেটি নিজে থেকে নিজেকে বৃদ্ধি করতে পারবে। মানে নিজে নিজেকে উন্নত করতে পারবে। প্রতিবার সে ঠেকে ঠেকে যা যা শিখবে সেটাকে সে মনে রাখবে এবং নিজেকে সেটার জন্য প্রস্তুত রাখবে। এভাবে সে নিজেকে বিবর্তিত করবে।
চিন্তা কর ক্ষুদ্র এক কোষী একটি প্রাণীর কথা, যে এক কোষী থেকে বহুকোষী থেকে মিলিয়ন কোষী একটি জটিল জীবে পরিণত হল। অর্থাৎ আজকে যাই দেখছি সেটাকে সেই এক কোষীর জটিল রূপ হিসেবে কি দেখতে পারি।
প্রাথমিক কোডটিকে একটি সয়ংসম্পূর্ণ একটি প্রোগ্রাম হিসেবে চিন্তা করতে পারি। এখন এই প্রোগ্রামটিকে একটি ভার্চুয়াল পরিবেশে চলতে দিতে পারি। এখন প্রোগ্রামটি সেই পরিবেশে নিজেকে টিকিয়ে রাখার জন্য যা করার তাই করার স্বাধীনতা দেওয়া হল। এমতাওবস্থায় সেই প্রোগ্রামটি কি জটিল একটি কোড ধারণ করে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারবে? সম্ভব কি এভাবে চিন্তা করা?
@স্বাধীন,
প্রাণীর বিবর্তনের ক্ষেত্রে ঠেকে ঠেকে শিখার ব্যাপার নেই। এখানে যারা প্রকৃতির সাথে বেশি খাঁপ খেতে পেরেছে তারাই ঠিকে গেছে। যেমন, জিরাফের মধ্যে যারা অধিকতর লম্বা গলা নিয়ে জন্ম নিল তারা অধিক খাবার গ্রহণ করতে পারল(গাছের পাতা খাওয়ার জন্য লম্বা গলা দরকার)। এভাবে যাদের গলা অধিকতর লম্বা তারাই অধিকতর খাদ্যগ্রহণের সুবিধা পাওয়ার ফলে তারা অধিকতর বাচ্চা জন্ম দিতে পারল, অন্যদের সাথে প্রতিযোগিতায় তারাই এগিয়ে থাকল। এখানে মিউটেসনের ব্যাপারটা কাজ করেছে, ঠেকে ঠেকে শেখা নয়।
@সৈকত চৌধুরী,
জ্বি, সেটা জানি। জিনের ক্ষেত্রে মিউটেশানই মূল। কিন্তু মস্তিষ্কের ক্ষেত্রে ঠেকে শেখার ব্যাপার আছে বলে মনে হয় আমার মতে। একটি ছোট্ট শিশুকে দেখলে সেটা বুঝা যায়। একটি শিশুর প্রথম তিন বছরেই মূলতা সব কিছু শিখে। এই বাস্তব জগতের ফিজিকাল ল্য, কিংবা ভাষা, সব কিছুই সে ট্রায়াল এন্ড এররের মাধ্যমেই শিখে বলে মনে হয়। সে জন্যই কথাটি এনেছি, যেহেতু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় আমরা মস্তিষ্ককে রেপ্লিকেট করার চিন্তা করছি। পুরো দেহটিকে নয়।
@স্বাধীন,
এখানে দুইটা অংশ, জীবদ্দশায় প্রাণী কিভাবে ভুল থেকে শিখবে। আরেকটা হলো এসব শিক্ষার মধ্যে টিকে থাকার জিস্ট শিক্ষাটা কিভাবে জেনেটিকালি কোডেড হবে।
প্রথমটার উপর বেশ খানিকটা কাজ হয়েছে। আমার গবেষণা অতার উপরেই। Machine Learning নামে বিশাল একটি শাখা আছে এর উপর। তবে এর একটা বিশাল অংশ খুব স্পেসিফিক এপ্লিকেশনের জন্য এলগরিদম তৈরী করে, যেটা সাধারণ অর্থে কৃত্রিম প্রাণী তৈরির ক্ষেত্রে জেনারালাইজ অতটা হয় না। Temporal difference learning একটা উদাহরণ, যেটা প্রতি মুহূর্তের অভিজ্ঞতা থেকে আর ভুল থেকে শিখতে পারে। ম্যাক্সিমাইজ করে হচ্ছে যে কোনো গিভেন গোল। এখন সেই গোল হতে পারে টিকে থাকা, সেই গোল হতে পারে কেবল দাবা খেলা। সেই গোল আপনি হাতে লিখে দিতে পারেন, অথবা অন্য কোনো উপায়ে কোনো ফাংশন দ্বারা সেই গোল নির্ধারিত হতে পারে। আমাদের ক্ষেত্রে সেই গোল বিবর্তন প্রদত্ত।
দ্বিতীয় অংশ নিয়ে কাজ খুব কম হয়েছে। জেনেটিক এলগরিদম বলে একটা অপ্টিমাইজেশান এলগরিদম আছে, সেটার ব্যবহারের কথা অনেকে চিন্তা করে। এ সম্পর্কে সামগ্রিক ধারণা তেমন তৈরী হয় নি। তবে এই বইটা পড়ে দেখতে পারেন:
What is thought
। আমরা আমাদের মেকিং মাইন্ড রিডিং গ্রুপে পড়েছিলাম। আমাদের লাইব্রেরিতে আছে।
@ধ্রুব,
ভালো ধরেছো। এখানে আরেকটু পরিষ্কার করি। পুরো বিবর্তন প্রক্রিয়া বিলিয়ন বছরের পুরোনো, জটিল প্রক্রিয়া। আমাদের হয়তো এককোষী থেকে বহুকোষী জটিল জীব তৈরীর চিন্তা বাদ দিয়ে শুধু মানুষ নিয়ে চিন্তা করতে হবে। এখন মানুষের মূল অংশ হচ্ছে মস্তিষ্ক। একটি শিশুর জন্মের পর থেকে এই মস্তিষ্ক কিভাবে ডেভেলাপড হচ্ছে সেটা আমাদেরকে বুঝতে হবে। তোমাকে যে বইটার রেফারেন্স দিয়েছিলাম সে বইটা পড়া তোমার জন্য ফরজ হয়ে গেছে। পুরো বইটাই তোমার কাজে লাগবে। আমি শুধু কিছু চুম্বক অংশ তুলে ধরছে।
বইটিতে বলা হয়েছে, বিবর্তনজনিত কারণে আমাদের মস্তিষ্কে হয়তো কিছু কোর বা ব্যাসিক ইউনিভার্সাল কোড নিহীত আছে, যেটা দিয়ে ব্যাসিক এনালাইসিস করা সম্ভব। কিন্তু শুরুতেই একটি শিশুর কোন ভাষা থাকে না, থাকে না বাস্তব পৃথিবীর ফিজিকাল ল্য সম্পর্কে কোন জ্ঞান, কিংবা দিন/রাতের হিসাব, কিংবা সময়ের ধারনা, কিংবা বস্তুর আকারের ধারনা, কিংবা মানুশের মুখ পার্থক্য করার ব্যবস্থা ইত্যাদী। এই সব কিছু গড়ে উঠে ধীরে ধীরে প্রথম তিন বছরের মধ্যে। এই বিষয়টি আমি সবচেয়ে বেশি দেখতে পেয়েছি আমার নিজের ছেলেকে দেখে। তার বেড়ে উঠার প্রতিটি ধাপ আমি চোখের সামনে দেখেছি। একটি শিশু প্রথম তিন মাসে, বা ছয় মাসে বা এক বছরে বা দেড় বছরে বা দু’ই বছরে কোন কোন কাজগুলো সে পারবে সে সম্পর্কে সুন্দর চার্ট পর্যন্ত করা আছে। হয়তো অনলাইনে পাবে। কোন শিশু একটু আগে করে , কিছু পরে করে কিন্ত এভারেজে সবাই একেক্টি নির্দিষ্ট সময়ে একেকটি মেইল ফলক পাড়ি দেয়। যেমন তিন বছর পরেও একটি শিশু জুতার ফিতা বাধতে পারে না, কারণ সেটা অনেক কিছু মিলিত একটি কাজ। এভাবে একটি শিশু কখন হাটতে শিখবে, বা সিড়ি দিয়ে নামতে পারবে, বা নিজের জামা নিজে খুলতে পারবে, বা বোতাম লাগাতে পারবে, বা দু’টি শব্দ দিয়ে একটি বাক্য বলতে পারবে সব কিছুই সে ধীরে ধীরে শিখে। ভাষা আসে সবার শেষে। একটি ছোট্ট বাচ্চা যখন গ্রাভিটি সম্পর্কে ধারনা হয় না, তখন সে বিছানা থেকে নামতে গিয়ে পড়ে যায়। কিন্তু যখন সে এটা বুঝতে পারে যে উপর থেকে পড়ে গেলে ব্যাথ্যা পাবে তখন তার গ্র্যাভিটি সম্পর্কে ধারনা হয়।
এই যে প্রক্রিয়াটি এর কথাই মূলত বলছিলাম। যেখানে ব্যসিক কোড আমাদের মস্তিষ্কে রয়েছে, কিন্তু তার পর থেকে আমরা প্রতিনিয়ত আমাদের সেই জ্ঞানকে আপডেট করে যাচ্ছি। এবং যে কোন কাজ সেই জ্ঞান থেকেই করার চেষ্টা করছি। এখন যদি গোলের কথা চিন্তা করি তাহলে মস্তিষ্কের গোল নির্দিষ্ট নয়। জিনের গোল হতে পারে টিকে থাকা, কিন্তু মস্তিষ্কের গোল শুধু টিকে থাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। আবার আমার মতে মস্তিষ্কের গোল সময়/বয়স ভেদে ভিন্ন হয়। একটি ছোট্ট শিশুর গোল হয়তো জ্ঞান বৃদ্ধি করা। তার পর চার বছর হতে আঠারো বছর পর্যন্ত হতে পারে জ্ঞান বাড়ানো প্লাস উপভোগ করা। আঠারোর পর হয়তো জৈবিক তাড়না কাজ করতে পারে। তখন গোল হতে পারে ভাল সঙ্গী খুঁজা এবং সে জন্য নিজেকে তৈরী করা। সন্তান ধারণেরর পর গোল হতে পারে নিজের উপভোগ প্লাস, বাচ্চাদের শিখানো। এভাবে গোল সেটাও চলক হতে পারে।
প্রশ্ন হল এই শিক্ষাটি কিভাবে আপডেট হবে। অর্থাৎ শিক্ষার জিস্টটি কিভাবে মস্তিষ্কে কোডেড হবে। আমি জেনেটিকালি কোডেড কথা চিন্তা করছি না। আমাএর মস্তিষ্কের সব কিছু জেনেটিকালি কোডেড হয় কিনা জানা নেই। তুমি মেমেটিক্স ঘেটে দেখতে পারো। মেমেটিক্স কি বলে এটা নিয়ে।
আমার নিজেরই তো মনে হচ্ছে গবেষণার লাইন বদলিয়ে ফেলি 😀 ।
@স্বাধীন,
:yes:
জীবদ্দশায় অভিজ্ঞতালব্ধ শিক্ষা মস্তিষ্কে প্রোথিত হবার একটা বড় উপায় হচ্ছে neuroplasticity সংক্রান্ত, synaptic structure পরিবর্তনের মাধ্যমে যেটা ঘটে। এর সাথে মনোবিজ্ঞানের Classical conditioning ধারণা সম্পর্কিত। উইকিপিডিয়া থেকে উদ্ধৃত করছি:
জীবদ্দশায় নিউরনের জন্ম বলে একটা ব্যাপার আছে, যেটার সাথে শিক্ষার সম্পর্ক থাকতে পারে।
নিউরাল স্ট্রাকচার আর সিনাপটিক এসোসিয়েশন পরিবর্তনের ফাংশানটা artificial neural network নামক একটা মডেল দিয়ে প্রকাশ করা হয়। আর্টিফিশিয়াল নিউরনগুলোর মধ্যকার এসোসিয়েশন (বা আমরা বলি ওয়েইট)কে পরিবর্তনের জন্য, নতুন নিউরন তৈরির জন্য, আগের নিউরন ধ্বংসের জন্য অনেক লার্নিং এলগরিদম এসেছে। কাজ চলছে। এর মধ্যে একটা হচ্ছে আমি যে এলগরিদমটার কথা বলেছিলাম, সেটা। অর্থাৎ বলা চলে, এই এলগরিদমগুলো হচ্ছে আপনার উদ্ধৃত প্রশ্নটির সম্ভাব্য উত্তর।
আপনার চিন্তা এই গবেষণার সবচেয়ে ফলপ্রসূ অংশটির প্রশ্নগুলোর পাশাপশিই চলছে। প্রশ্নগুলোকে এখন কেবল স্পেসিফিক, কমপিউটেশনালি ইমপ্লিমেন্টেবল এবং অব্জার্ভেশনালি ভেরিফায়েবল করতে পারলেই এ নিয়ে ডিটেইল গবেষণা শুরু করে ফেলতে পারবেন। আপনাকে এ আই এর জগতে সর্বদা স্বাগতম 🙂
@ধ্রুব,
সে বইটাতে আরেকটি মজার অংশ আছে, যেটা না বললেই নয়।
একটি ছোট্ট গল্প আছে, যেখানে দেখানো হয়েছে যে আমরা নিজেরাও তো একটি রোবট ভিন্ন আর কিছু নই, শুধু আমাদের স্টিল, তার, চিপস্, সার্কিট এগুলোর বদলে রয়েছে মাংস এবং হাঁড়। তো ওখানে দেখানো হয়েছে একদল ভিনগ্রহের জীব এসেছে আমাদের পৃথিবীতে, তারপর আমাদের দেখে বলছে, “আর, ইউ সি রিয়াস, এ টকিং মিট?” “হাউ, ক্যান, এ মিট টক অর ওয়াক, অর ইভেন থিঙ্ক?”
আমরা নিজেদের প্রাণী বলি, যদিও প্রাণের সংজ্ঞা কি জানি না। কিন্তু তাহলে তোমার রোবট যে কিনা হুবুহু মানুষের মত করে কান্না করতে পারে, ব্যাথা পেলে সেটা সে পার্থক্য করতে পারে, তবে ওটাকে কেন প্রাণী বলবো না? আমরা নিজেরাও তো বাহিরের উপাত্তগুলো নিয়ে মস্তিষ্কে প্রসেস করে তারপরে সেটার একটি ফেইস ভেলু, যেমন কান্না বা হাসি বা চিৎকার, আউটপুট হিসেবে দেই। রোবটের সাথে আমাদের পার্থক্য কোথায় 😥 ।
@স্বাধীন,
এখানে একটু ক্লিয়ার করার দরকার আছে। আমার রোবট হুবুহু মানুষের মত করে কান্না করতে পারে কিন্তু। তার action বলতে কেবল মটর হুইল আর চার্জ নেয়া। কিন্তু নেগেটিভ নম্বর পেলে সে যেভাবে ছটফট করে, তা দেখে মনে হয় যেন বলছে ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি। কিন্তু যা করলে ওই নেগেটিভ নম্বর থেকে বাঁচা সম্ভব, সেটা ভালোভাবে খুঁজে সে বের করতে পারে না। আর সেখানেই সমস্যাটা ইন্টারেস্টিং। আমরা সহজেই বুঝি রোবটটা কি করলে তার নেগেটিভ নম্বর পাওয়া বন্ধ হবে, জীবনে তার শান্তি ফিরে আসবে, আমরা চাইলে সেটা হাতে কোড করেও দিতে পারি, কিন্তু তাহলে সেটা রোবটের নিজের নলেজ হবে না। কারণ নলেজ নিজে মেইনটেন করতে হলে নিজেকে ভেরিফাই করতে পারতে হবে। আমার হাতে করা প্রবলেম সলভিং কোড আমার নলেজ, রোবটের না। আমরা চাই তাকে এমন মেকানিজম দিতে যাতে সে নিজে নিজে সমস্যা সমাধান করতে শেখে।
প্রাণীর সংজ্ঞার যেহেতু কোনো মানদণ্ড নেই, সেই ফাঁক গলে আমাদের রোবটটাও প্রাণীই। শামুক লেভেলের প্রাণী।
আপনার চিন্তা একদম আমার সাথে কন্ভার্জিং।
আপনি what is thought পড়েন, আমি evolutionary psychology পড়ি।
@স্বাধীন,
আমার রোবট হুবুহু মানুষের মত করে কান্না করতে পারে না কিন্তু।
@স্বাধীন,
হুবুহু কান্না করানোটা তো বরং সহজ কাজ। নেগেটিভ নম্বর পেলে কান্না তো জাস্ট একটা আউটপুট। মূল সমস্যা তুমি যেটা বললে – নেগেটিভ নম্বর না পাওয়ার জন্য সে নিজে নিজে কি ব্যবস্থা নিবে সেটাই আসল। what is thought বইটা লাইব্রেরীতে হোল্ড দিলাম। ANN সম্পর্কে কিছু ধারনা আছে, কিন্তু এলগরিদম কিভাবে দাঁড় করানো হয় সেটা জানিনা।
তো এইগুলো নিয়েই ছোট ছোট করে সহজ ভাষায় ( 😀 ) কিছু লেখা দাও না কেন? তোমার লেখার চেয়ে মন্তব্যগুলো অনেক সহজ ভাবে বুঝা যায় 😛 । লিখতে বসলে তুমি বেশি কঠিন ভাষা ব্যবহার করে ফেলো। অথচ এই বিষয়টা এত ইন্টারেস্টিং যে এর পাঠকের অভাব নেই। অনেকে বৈজ্ঞানিক কল্প কাহিনী হিসেবেই পড়বে। তুমি গল্পের মত করেই বিষয়গুলো উপস্থাপন করার চেষ্টা করে দেখ না। গল্পের ছলে ছলেই মানুষ জানতে থাকলো আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স নিয়ে বর্তমানে কি হচ্ছে, এর ভবিষ্যত কি, কিংবা মানুষের সাথে এই রোবটদের দ্বন্দ্ব কি হতে পারে, সেগুলো কিভাবে সমাধান হতে পারে এই সব। একটি বড় গল্পের প্লট ধরেও আগাতে পারো। চিন্তা করে দেখো।
@ধ্রুব,
উপরের মন্তব্যটি তোমাকে করা। তোমার মন্তব্যের জবাব দিতে না পেরে নিজেকেই নিজে জবাব দিচ্ছি :-Y ।
@স্বাধীন,
ব্যাকটেরিয়া তো ঠিক তাই করছে যারা কিনা প্রানীকূলের মধ্যে আমাদের চাইতে কয়েক বিলিয়ন বছরের সিনিয়র। অনু পর্যায়ে তারা homoserine lactone বা Autoinducer ব্যবহার করে তাদের পরিবেশগত প্যারামিটারে ইচ্ছামত অদল, বদল , সংযোজন এবং বিয়োজন করছে। এর সাহায্য তারা একটা সম্পূর্ন ব্যাকটেরিয়া গোষ্ঠীর সার্বিক আচরন বদলে দিতে পারে। মানুষের মত বহুকোষী প্রানী তো ব্যাকটেরিয়ার মত অগনিত কোষের সমষ্টি। মানুষ অপেক্ষাকৃত তরুন হলেও মানুষের কোষ কিন্ত বয়সে প্রায় ব্যাকটেরিয়ার সমানই। কয়েক বিলিয়ন বছর ধরে ব্যাকটেরিয়া যাতে হাত পাকিয়েছে , মানুষের কোষ অবশ্যই তা করতে সক্ষম। সবচেয়ে বড় কথা মানুষের কোষের সাথে ব্যাকটেরিয়ার রয়েছে সার্বক্ষনিক কথপোকথন। এ বিষয়ে আমি একটা লেখা মুক্তমনার জন্য তৈরী করছি।
@সংশপ্তক,
সেই চিন্তা থেকেই আমার মন্তব্যটি করেছিলাম। যাক, অবশেষে তাহলে আপনার লেখা পাওয়া যাচ্ছে। লিখে ফেলুন তাড়াতাড়ি।
@রৌরব,
চিন্তার উপসর্গ দেই, এমিবা, শামুক আর উদ্ভিদের কথা ভাবতে পারেন। তারা প্রাণী? তারা সেল্ফ-কনশাস?
@ধ্রুব,
বিভিন্ন ধরণের উপসর্গ দেখা দিয়েছে এর মধ্যেই আমার, এর মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ অন্যতম। কত কয়েক ঘণ্টা ধরে আপনার কনশাসনেস বিষয়ক প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে নিজেই বার কয়েক আন-কসশাস হয়ে পড়বার মত অবস্থায় পড়েছি আমি। অচিরেই তাই আমার উকিলের কাছ থেকে একটি মেডিক্যাল বিল প্রত্যাশা করতে পারেন :guli:
প্রথমত “প্রাণ/প্রাণী” শব্দকূল থেকে রেহাই চাই আমি :)। “প্রাণ” কি তা সংজ্ঞায়িত করার দায়িত্ব এড়িয়ে যেটা বলতে চাই সেটা হল (সেলফ)কনশাসনেস এবং বিশেষত বেদনার অনুভূতি বিকশিত হওয়া অন্তত আমার জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ পরিমাপ গর্ভপাতের ক্ষেত্রে। কনশাসনেস এবং বেদনার সংজ্ঞার ব্যাপারটিতে আসছি নীচে, কিন্তু আপাতত ধরে নিই যে এটি পরিমাপ করার গ্রহণযোগ্য ব্যবস্থা আছে। সেক্ষেত্রে গর্ভস্থ শিশু সেই ক্ষমতা অর্জনের পরে গর্ভপাতের ব্যাপারে হাঁটু কাঁপবে আমার।
সংজ্ঞা: আইন বা নৈতিকতার জন্য বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার দরকার নেই, দরকার একটা গ্রহণযোগ্য পরিমাপের পদ্ধতি। এক্ষেত্রে সহজেই কিছু upper ও lower limit বেঁধে দেয়া সম্ভব। প্রায় পূর্ণ গঠন প্রাপ্ত একটি বাচ্চাকে abort করতে গিয়ে যদি দেখা যায় সে হাত পা ছুড়ে কাঁদছে, সেক্ষেত্রে সে যে তীব্র ভাবে ব্যাথা পাচ্ছে, কনশাসনেস সংজ্ঞায়িত না করেই তা আমি দাবি করতে পারি দ্বিধাহীন ভাবে। আবার উল্টোদিকে, যে ফেটাসের মস্তিষ্কের কোষ একটাও তৈরি হয়নি, সে যে কনশাস না, এ ব্যাপারেও কোন সন্দেহ নেই। সমস্যা মাঝামাঝি সময়ে। বিরাট সমস্যা। পরিষ্কার কিছু জানা নেই আমার, বরং শুনতেই আগ্রহী। তবে আমি বলব, সমস্যাটি সংজ্ঞায়নের নয়, বরং পরিমাপের। যে অর্থে একজন সুস্থ পূর্ণ বয়স্ক মানুষ বেদনার্ত হয়, সেটাই বেদনার গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞা। সমস্যা হল, মাঝামাঝি রকম বিকশিত শিশুর ক্ষেত্রে এটি পরিমাপ করা যাবে কিভাবে।
আমার মতে: কনশাসনেস হচ্ছে complex metadata ad infinitum।
উপরের সংজ্ঞার আলোকে ভাল উত্তর biologist রাই দিতে পারবেন। আমার ধারণা উদ্ভিদ কনশাস নয়। শামুক-ঝিনুকের বেদনা বোধ নেই, এমনটা শুনেছি। তাদের যা আছে তা বোধহয় অনেকটা আপনার রোবটের মত, ওটাকে বেদনা বলা যাচ্ছেনা। বেদনাবোধ/কনশাসনেস বড় ধরণের mammal দের আছে বলেই মনে করি। মাঝামাঝি যারা, মাছ, সাপ, পাখি — তাদের আছে কি? জানি না। এমন হতে পারে যে এখানে একটা quantitative বিবরণে উপনীত হব আমরা — মাছ ২.৫ শতাংশ কনশাস এরকম আরকি।
@রৌরব,
ঠিক আছে।
আমার রোবট নেগেটিভ নম্বর পেলে কিন্তু যা করা শুরু করে, ওটাকে একরকম কান্নাকাটিই বলা যায়। 🙂
সনাতন পেইনের ধারণার সাথে পর্যবেক্ষণগত আচরণ (কান্নাকাটি) আর নার্ভাস সিস্টেম-এর অস্তিত্ব জড়িত। নার্ভে স্টিমুলাস দিলে একটা রিফ্লেক্স হবে। এখন ঠিক এই ফাংশানকে কিন্তু যন্ত্রপাতি দিয়ে, এমন কি কম্পিউটার সিমুলেশন দিয়েও পুরোপুরি প্রকাশের কথা কল্পনা করা যায়। মানে নার্ভাস সিস্টেম ঠিক যে উপাদান দ্বারা গঠিত, সে উপাদান ছাড়া পেইন তৈরী করা যাবে না, সে ধারণা কিছুটা ভাইটালিস্টিক ঠ্যাকে আমার আছে।
লোহার তৈরী ভবিষ্যত রোবট হুবহু মানুষের মত আচরণ কান্নাকাটি করার পরেও যদি বলা হয় সে সত্যিকার অর্থে পেইন পাচ্ছে না, ব্যাপারটা খুব দুঃখজনক হবে। 🙁
http://www.time.com/time/nation/article/0,8599,1566772,00.html
পড়ে যা বোঝা গেল, গর্ভধারণের বিশ সপ্তাহ নাগাদ নার্ভে স্টিমুলাস দিলে রিফ্লেক্স এর আচরণ চলে আসে। তবে ইউথেনেশিয়া দিয়ে গর্ভপাতের প্রস্তাবও আছে। আরেকটা ব্যাপার যেটা, ২০ সপ্তাহের ফেটাস গর্ভের বাইরে সারভাইভ করতে পারে কিনা সেটা নিশ্চিত না। অনেকে যে মনে করেন সার্ভায়ভিলিটি এখানে মেইন ইস্যু, তারা আপনার পেইন ক্রাইটেরিয়াতে বাধ সাধবে।
@ধ্রুব,
একমত।
@রৌরব,
এটা আমার মনে হয় ঠিক নয়। একটি শামুককে স্পর্শ করলে সে নিজেকে গুঁটিয়ে নেয়, তার মানে তার মাঝে অবশ্যই অনুভূতি নামক বস্তুটি রয়েছে। তার মুখে ভাষা নেই, কিন্তু তার যে রিফ্লেক্স, যেটাও একটি ভাষা হতে পারে, দেখে বুঝা যাচ্ছে ব্যাপারটি তার পছন্দ নয়। অর্থাৎ এখানে নেগেটিভ বিষয়টি প্রকাশ পাচ্ছে। এখন সে আসলেই ব্যাথ্যা পাচ্ছে কিনা না লজ্জা পাচ্ছে বুঝা মুশকিল 😀 । আমার মতে যে কোন প্রকার রিফ্লেক্সকে প্রাণ হিসেবে চিন্তা করা যেতে পারে। সেটা আলো, শব্দ, তাপ, রাসায়নিক, যে কোন কিছুর বিপরীতে হতে পারে।
@স্বাধীন,
আসলে সবই সংজ্ঞার ব্যাপার। আমি এখনে অনুভূতি বা বেদনাবোধ বলতে বোঝাচ্ছি শুধু স্টিমুলাস এড়াবার প্রবণতা নয়, “আমি খুব খারাপ স্টিমুলাস পাচ্ছি, আমার খারাপ লাগছে” এই উচ্চতর আত্মচেতনার বোধ, এবং সেটাকেও জটিলতার একটি স্তর পার হতে হবে আমার সংজ্ঞায় তাকে অনুভূতি বলার জন্য। ঠিক কতটুকু জটিলতা, সেটি কাঁটায় কাঁটায় বলে দিতে পারছি না। সেটি পরিমাপ করবার পদ্ধতি কি হবে, তাও অস্পষ্ট। তবে ধ্রুব তার রোবটের যে বিবরণ দিয়েছেন, বা শামুক সম্বন্ধে অল্প যা কিছু পড়লাম এই আলোচনা করতে গিয়ে, তাতে মনে হয়েছে তারা জটিলতার এই স্তর পার হয়নি।
@রৌরব, কনশাসনেস নিয়ে ধ্রুব আপনাকে যে চক্কর খাওয়াচ্ছে তাতে করে আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতেই ভয় লাগছে । তারপরও যেহেতু প্রশ্ন করেছেন সাহস করে উত্তরটা দিয়েই ফেললাম।
প্রথম ১২ সপ্তাহে গর্ভপাতের অধিকার থাকা উচিত, এনিয়ে আমার মনে বিতর্কের কোন অবকাশ নেই বলেই মনে হয়। যারা গর্ভপাত করাতে চান তাদের এই সময়ের মধ্যেই সিদ্ধান্ত নিতে পারার কথা। এর পরের ব্যাপারটা বিতর্কিত, বেশ কিছু গ্রে এরিয়া আছে যেগুলো নিয়ে মতভেদ থাকতে পারে। কিন্তু ফিটাসের এমন কিছু রোগ বা বিকলাঙ্গতা আছে যেগুলো ১৬-১৮ সপ্তাহের আগে ধরা পড়ে না। যদি এমন কোন ফেটাল ব্যাপার ধরা পড়ে যাতে শিশুর বা মায়ের বেঁচে থাকার সমস্যা দেখা দিতে পারে তাহলে এর পরেও গর্ভপাতের অপশান থাকা উচিত বলে মনে করি। অর্থাৎ, আমি যেটা বলতে চাচ্ছি যে, অপশানাল গর্ভপাতের অধিকার ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত থাকা উচিত, এবং তারপরের স্টেজগুলোতে ক্লিনিকাল ( শারীরিক এব্ং মানসিক) যে কোন কারণে ডাক্তার এবং বাবা মায়ের যৌথ সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে গর্ভপাতের অপশানও রাখা উচিত।
@বন্যা আহমেদ,
এখানে যেসব তথ্য পেলাম তার ভিত্তিতে আপনার সমীকরণকে বেশ গ্রহণযোগ্য মনে হচ্ছে। ধন্যবাদ।
@বন্যা আহমেদ,
😀
আলোচনাগুলো কিছুটা বিক্ষিপ্ত মনে হচ্ছে। এর একটি কারণ হতে পারে মূল লেখায় ঠিক কি বিষয়ের উপর আলোচনা হবে সেটা সুনির্দিষ্ট করা হয়নি। শুধু গর্ভপাত নৈতিক কিংবা অনৈতিক কিনা এভাবে আলোচনা শুরু হলে আলোচনা ডাল-পালা গঁজিয়ে নানান দিকে ছুঁটতে থাকবে। যে কারণে এখন আলোচনা চলে যাচ্ছে ভ্রুণে কখন মানুষ্যত্ব আসে সেটা নিয়ে অথবা প্রাণ আসলে কি সেটা নিয়ে।
আমার নিজের অভিমত হল, গর্ভপাত নৈতিক কি অনৈতিক এমন প্রশ্নের পরম কোন জবাব হতে পারে না। পরম নৈতিকতা বলে কিছু নেই, যেমন নেই পরম ঈশ্বর। প্রাণী জগতে যখন ক্যানিবলিজম ঘটে তখন সে চিন্তা করে না, সেটা নৈতিক কি অনৈতিক। তাদের কাছে প্রয়োজনটাই মুখ্য। ছোটবেলায় একটি গল্প পড়েছিলাম “সময়ের প্রয়োজনে”, আমার পড়া অন্যতম সেরা গল্প। এই প্রয়োজনেই আমরা একে অন্যকে মেরে বেঁচে থাকি। এখন যদি মানুষ নিজে একটি জীব হয় এবং আমরা যদি গরু/ছাগল মারার সময় চিন্তা না করি ব্যাপারটা নৈতিক কি অনৈতিক, সে ক্ষেত্রে একটি ভ্রুণে প্রাণ আসুক বা না আসুক, সেটা অবান্তর। যদি আমরা অন্য প্রাণীদের হত্যার সময় নৈতিকতার মানদন্ড নিয়ে না বসি, অন্য প্রাণীদের যখন ক্যানিবলিজম হচ্ছে তখন নৈতিকতার মানদন্ড নিয়ে না বসি, তবে কেন গর্ভপাত বা ভ্রুণ হত্যা অথবা একজন মানুষ হত্যার সময় নৈতিক না অনৈতিক সেটা নিয়ে চিন্তা করি। বিবর্তনের কাজে টিকে থাকার প্রয়োজনটাই মুখ্য। তাই গর্ভপাতের পরম/চরম নৈতিকতা/অনৈতকতা প্রশ্নের জবাব খুঁজা অযৌক্তিক।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে তাহলে সমাজ বা গোষ্ঠীবদ্ধ মানুষ কিভাবে চলবে যদি নৈতিকতা বা অনৈতিকা বলে কিছু না থাকে। সেটা বুঝতে হলে আমাদের অভিজিৎ’দার শেষ লেখায় যেতে হবে, বিবর্তনের দৃষ্টিতে নৈতিকতার উদ্ভব। এখানে যে নৈতিকতা গড়ে উঠেছে তা হচ্ছে ব্যক্তি মানুষের নিজস্বতার ভিক্তিতে একটি সামষ্টিক নৈতিকতা যা একটি গ্রুপকে টিকে থাকতে সহায়তা করে। আপনি যদি সেই গ্রুপে থাকতে চান তবে গ্রুপের নীতিমালা মানতে বাধ্য আপনি। যদি না মানেন তবে গ্রুপও আপনাকে রাখবে না। আপনাকে আপনার নিজের পছন্দের গ্রুপ খুজে বের করতে হবে। কিন্তু যেখানেই যান সেখানকার সামষ্টিক নীতিমালা আপনাকে মেনে চলতে হবে। এই সামষ্টিক নীতিমালাই নৈতিকতা যা কাল ও স্থানভেদে ভিন্ন হতে পারে। ধর্মভিক্তিক সমাজ যদি হয় তবে সেখানে গর্ভপাত নিষিদ্ধ হতে পারে, আবার উদারভিক্তিক সমাজ হলে সেখানে সেটা নিষিদ্ধ না হতে পারে। এক হিসেবেই দু’টোই সঠিক। শুধু পয়েন্ট অফ রেফারেন্স ভিন্ন। এই বিষয়ে সম্প্রতি স্টিফেন হকিং এর লেখা “দ্যা গ্রান্ড ডিজাইনের” তৃতীয় অধ্যায় দ্রষ্টব্য। আমরা পদার্থ বিজ্ঞানে এত দিন একটি ইউনিভার্সাল ল খুঁজতাম। কিন্তু এখন তিনি জানাচ্ছেন যে সেরকম সুত্র হবে না। সব সুত্রই তাঁদের নিজস্ব পয়েন্ট অফ রেফারেন্সে ঠিক আছে। একেক অবস্থান হতে একই ঘটনাকে ভিন্ন ভিন্ন সুত্র দিয়ে নির্দিষ্ট করা সম্ভব। এবং সব সুত্রই তাঁদের রেফারেন্স হতে সঠিক। নৈতিকতা/অনৈতিকতাকেও সেভাবে দেখা যেতে পারে।
আমার এই বক্তব্যের উপর যদি কারো কিছু বলার থাকে সাদরে গ্রহন করবো। আলোচনা চলতে থাকুক।
@স্বাধীন,
আমি যেটা ঠিক বুঝতে পারছি না সেটা হল যে আপনার বর্ণনামূলক ফ্রেম ওয়ার্ক নৈতিকতা (পরম-টরম নয় — আইন, শিক্ষাব্যবস্থা ও সমাজ কাঠামোয় প্রকাশিত “আপাত” নৈতিকতা) গঠনে আমাদের সাহায্য করছে কিভাবে।
“সবকিছুই অমুক” এরকম কাঠামো প্রচুর আছে। সবকিছুই পদার্থবিদ্যা, সব কিছুই অর্থনীতি, সবকিছুই যৌনতা, সবকিছুই ইনফরমেশন, সবকিছুই বিবর্তন এরকম বহু কাঠামো দাঁড় করানো যায় যেগুলি সবই কোন না কোন অর্থে “সঠিক”। কিন্তু “গর্ভপাত নৈতিক কিনা” বা “ফাঁসি তুলে দেয়া উচিত কিনা” এসব ব্যাপারে এ ধরণের উপর-উপর পরিকাঠামোর প্রায়োগিক উপযোগিতা প্রায়-শূণ্য বলে আমি মনে করি।
প্রায়োগিক যে কোন নৈতিকতার প্রশ্ন একটি দৃষ্টিকোণের সাপেক্ষে হয় নিশ্চয়ই। কিন্তু এই পর্যবেক্ষণ আসলে আমাদের কতটুকু সাহায্য করে? ধরা যাক আমি মানবতাবাদকেই আমার দৃষ্টিকোণ ধরলাম। ধরা যাক এ ব্যাপারে আমি ও আপনি একমত। গর্ভপাত সম্বন্ধে আমাদের মতামত কি এক হবে গাণিতিক ফর্মুলার মত? যেকোন প্রায়োগিক পরিস্থিতিতে “একই দৃষ্টিকোণ” ওয়ালা মানুষের মধ্যে কত রকম সূক্ষ্ম পার্থক্য থাকতে পারে তার ইয়ত্তা নেই, এবং অধিকাংশ নৈতিক প্রশ্নের জটিলতা নির্ভর করে কোন কাঠামো বাছব তার উপরে নয় (সেটাও আসতে পারে), কিন্তু কাঠামো বাছাইয়ের পরে। অন্য কথায়, The devil is in the details।
@রৌরব,
আপনার এই প্রশ্নের জবাব আমার এই এক বাক্যে রয়েছে
অর্থাৎ আমি সামষ্টিক নৈতিকতাকে অথবা গড় নৈতিকতা মানদন্ড হিসেবে আনছি। অর্থাৎ একটি সমাজের জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ যেটাকে ভাল/মন্দ হিসেবে বেছে নিবে সেটাই তাঁদের জন্য নৈতিকতা। সতিদাহ প্রথা যতদিন অধিকাংশ মানুষ মেনে নিয়েছিল ততদিন সেটা তাঁদের জন্য অনৈতিক ছিল না। কিন্তু এটাই যখন আবার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ অনৈতিক হিসেবে নিচ্ছে সেটাই তখন সমাজে বলবৎ হচ্ছে। তেমনি দেখতে পারেন বাল্যবিবাহ, বর্ণপ্রথা, দাসপ্রথা এগুলোকে। একটি সময় ছিল যখন এগুলোকে অনৈতিক হিসেবে বিবেচিত হয়নি। তাই বহু ধর্ম, উন্নত দর্শন থাকা সত্বেও মুহাম্মদ কিংবা এরিস্টটল তাঁরা দাসপ্রথার বিপক্ষে কিছু বলেননি। কিন্তু আজকের সময়ে আমরা সেগুলোকে অনৈতিক হিসেবেই দেখছি। এখন পর্যন্ত ফাঁসিকে সবাই অনৈতিক হিসেবে দেখছে না, কিন্তু আবার অনেক রাষ্ট্রেই ফাঁসিকে অনৈতিক হিসেবে গৃহীত হয়েছে। এভাবে সব রাষ্ট্রেই যখন সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ সেটাকে অনৈতিক হিসেবে চিহ্নিত করবে তখন সেটা অনৈতিক হবে।
উপরে আমি যেটা বলেছি তা হল একটি সমাজ অথবা রাষ্ট্রে কিভাবে অনৈতিকতা/নৈতিকতা গড়ে উঠে এবং সেটা কিভাবে নীতিমালায় সংযুক্ত হয়। এখন ব্যক্তি মানুষ যে কোন কিছুওই মনে করতে পারি। একই কাজকে আমি নৈতিক বলতে পারি, আপনি অনৈতিক বলতে পারেন। কিন্তু যখন আপনি সেটাকে নীতিমালার মধ্য সংযুক্ত করতে চাইবেন তখন আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ সেটাকে যখন নৈতিক হিসেবে বিবেচনা করবে তার জন্য। ততদিন আপনি যেটা করতে পারেন আপনার চেষ্টা চালিয়ে যেতে পারেন আপনার যুক্তি/বিশ্বাসকে সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু যদি কোন বিপ্লব অথবা জোর করার চেষ্টা করা হয় তবে সেটার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আসবে। অর্থাৎ সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ যদি পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত না থাকে তবে বিপ্লবের স্বপ্ন না দেখাই ভালো। একই কথা প্রযোজ্য ধর্মহীন সমাজের ক্ষেত্রেও। আমরা আমাদের প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে পারি। কিন্তু যদি সেটা জনগণের উপর জোর করে চাপাতে চেষ্টা করেন সে ক্ষেত্রে হীতে বিপরীত হবে, কারণ জনগণ এখনো ধর্মহীন সমাজের জন্য প্রস্তুত নয়।
@স্বাধীন,
নীতিমালার ব্যাপারেও অনেক সমাজ চরম, অনেক সমাজ উদার| অনেক সমাজ, যদি নীতিতে ঠিক করে অমুক করলে গর্দান যাবে, তো অমুক করলে গর্দান নিয়েই ছাড়ে| 🙂
এখানে মানদণ্ড যেহেতু নেই, সমমনা কিছু মানুষ কি ধরনের নীতিমালা তৈরী করলো, তার কোনো ভালো মন্দ জাজমেন্ট দেয়ার নেই| কোনো সমাজে ক্যানিবালিজম রাখতে চাইল তো চাইল, বা বাল্যবিবাহ, বা সতীদাহ প্রথা! তবে বিধবা বা বালক/বালিকার যদি নিজের মত না থাকে, সে অন্য সমাজে পালাবার চেষ্টা করবে, অন্য সমাজও তাকে রেস্ক্যু করবার চেষ্টা করবে| এবং খুবই স্বাভাবিক যে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের নিজের মত থাকবে না| ফলে বাল্যবিবাহ, বা সতীদাহ প্রথার সমাজও হয়ে যাবে বেশ ভঙ্গুর|
অনেক ছোট ছোট সমাজ হলে ভালো হয়| তাহলে আপনার সমমনাকে বেছে নেয়ার অনেক অপশন থাকে| আধুনিক রাষ্ট্র আকারে বেশি বড়, অতিরিক্ত মানুষকে একত্র করে এক মতে ঠেলে দেবার চেষ্টা করে| আধুনিক রাষ্ট্র একটা মেস| এর আকার সাধারণ মানুষের বিশেষ উপকারের জন্য না| ক্ষমতাবানদেরই সবচেয়ে বেশি লাভ এখানে|
@ধ্রুব,
চমৎকার একটি কথা বলেছো। এবং সে দিকেই আমাদের সমাধান কি ধাবিত হচ্ছে না? আজকের আধুনিক বড় বড় রাষ্ট্র কি ভেঙ্গে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্র হিসেবে জন্ম নিচ্ছে না? এক সময় মানুষ কি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সমাজেই ছিল না?
সব কিছুই বিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, রাষ্ট্র ব্যবস্থা নিজেও। এক সময় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গোত্র ছিল। তারপর ছিল নগর কেন্দ্রীক সমাজ ব্যবস্থা। তারপর হল রাষ্ট্র ভিক্তিক। এখন আবার সুশাসনের জন্য রাষ্ট্র নিজে ভেঙ্গে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্টের জন্ম দিচ্ছে অথবা শাসন ব্যবস্থাকে বিকেন্দ্রীকরণ করছে। এভাবে বিকেন্দ্রীকরণের ফলে রাষ্ট্রের উপযোগীতাই কমে যাবে।
তাই উপরে যেটা বলেছো, মানুষের সামনে যত বেশি অপশন আসবে ততই মানুষ বেশি সুবিধে পাবে। মনোপলি ব্যবসায় যেমন কনজিউমারের কোন সুবিধে থাকে না কিন্তু অনেকগুলো কোম্পানি থাকলে তাঁদের নিজেদের মধ্যকার প্রতিযোগীতায় কনজিউমারের সুবিধে হয়। এখানেও এমনি। অনেক ধর্ম, অনেক বিশ্বাস, অনেক রাষ্ট্র এবং সেই রাষ্ট্রগুলোর মাঝে অবাধ যাতায়াতের সুবিধে থাকলে মানুষের সেগুলোকে বাছাইয়ের সুবিধে পেতো এবং এভাবে খারাপ ব্যবস্থা বাতিল হয়ে যেত এবং ভালো ব্যবস্থা, বিশ্বাস, রাষ্ট্র টিকে থাকতো। তখন টিকে থাকার জন্য বিশ্বাস, রাষ্ট্র নিজেদেরকে মানুষের জন্য উপযোগী করে পরিবর্তিত হতো।
আবহমান কাল থেকে কোনো কিছু নৈতিক বা অনৈতিক ছিল শুধু এর উপর নির্ভর করে আমাদের কোনটা করা উচিত বা অনূচিত এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হবে না। বরং কোনটি ব্যক্তির জন্য, মানুষের জন্য, সমাজের জন্য প্রয়োজনীয় ও উপকারী তার উপর নির্ভর করে যে কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।
এখন একজন মহিলা যদি মনে করেন তার গর্ভজাত সন্তানকে তিনি আর তার গর্ভে স্থান দিতে চান না তবে কেন সমাজ এ মহিলাকে বাধ্য করবে এ সন্তানকে বহন করতে? এ সন্তানকে এ মহিলা যদি বহন না করেন বা গর্ভে ঠাই দিতে না চান তাতে সমাজের বা মানুষের কোন ক্ষতিটা হবে? বিশেষ করে সন্তানটি যদি অনাকাংঙ্খিত হয় বা ধর্ষণজাত হয় তবে তো আর এ ব্যাপারে কিছুই বলার থাকে না যদি ওই মহিলা গর্ভপাত করার সিদ্ধান্ত নেন।
আপনার লেখাটি ও মন্তব্যগুলো খুবই দুর্বোধ্য লাগছে- হয়ত সব সময় সরল ভাবে চিন্তা করি তাই।
@সৈকত চৌধুরী,
ধন্যবাদ|
পৃথিবীর করা মন্তব্য ও পাল্টা মন্তব্যে দৃষ্টি রাখুন|
বাংলাদেশের সরকারী হাসপাতাল, বিশেষ করে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের আওতাধীন মা ও শিশু কল্যান কেন্দ্র এবং উপজেলা পর্যায়ে স্হাপিত পরিবার কল্যান কেন্দ্রগুলিতে বিনা মূল্যে MR (১২ সপ্তাহের গর্ভকাল পর্যন্ত) করানো হয়। এ জন্য প্রতিটি পরিবার কল্যান পরিদর্শিকাকে MR এর উপর প্রশিক্ষন প্রদান করা হয়।
@shahnaz,
ধন্যবাদ এই তথ্যটির জন্য|
@স্বাক্ষর, তোমাকে এখানে স্বাগতম জানানো হয় নি। সুস্বাগতম!
গর্ভপাত বিষয়টি নিয়ে কিছু আলোচনা আমি অভিজিৎ ভাইয়ের লেখায় করার চেষ্টা করেছিলাম। অনেকদূর এগোলেও এর শেষ দেখা হয় নি।
ওখানে আমি মতামত রেখেছিলাম যে পরম নৈতিকতা অধিবিদ্যা ও অবান্তর। কিন্তু সেটাকে প্রশ্নাকারে উত্থাপন করেছিলাম “পরম নৈতিকতা বলে কি কিছু আছে?”।
প্রশ্নটাকে একটা রিজিড রূপ দিতে নিম্নোক্ত প্রশ্নটি করেছিলাম:
আলোচনাটি ওখানে দেখতে পারো। তবে তোমার প্রশ্নটি নৈতিকতা সম্পর্কেই কিনা সে নিয়ে অবশ্য নিশ্চিত নই। যেমন, গর্ভপাত নৈতিকভাবে উচিত কি অনুচিত, এই তর্কে না গিয়েও একটি সমাজ বা রাষ্ট্র বা ব্যক্তি এ ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারে। সেক্ষেত্রে সামষ্টিক সিদ্ধান্তের চেয়ে ব্যক্তি সিদ্ধান্তের প্রতি আমার ঝোঁক বেশি।
দশজনের কি অধিকার আমার ব্যাপারে নাক গলানোর, যেখানে আমার ক্রিয়া তাদের সাথে জড়িত না?
একজন লিবারেল হিউম্যানিস্ট সেদিন বললেন, “যে ভ্রূণ মায়ের পেটের বাইরে এলে নিজে সারভাইভ করতে পারে, সেটা হলো মানব পর্যায়ের প্রাণ আর তার বাঁচার অধিকার আছে। এর আগের লেভেলের ভ্রূণকে মেরে ফেলা যায়, যেভাবে গরু ছাগল মেরে ফেলা যায়।”
এগুলোও সাবজেক্টিভ। কে বলেছে নিজে সারভাইভ করতে পারাটাই এর মানদণ্ড। এখানে কোনো পরম মানদণ্ড নেই। এই ভৌত পৃথিবীতে আমরা তো দুর্ঘটনার মত। কোনো অন্তর্নিহিত উদ্দেহ্স্য নেই আমাদের পেছনে। সেখানে পরম মানদণ্ডের অস্তিত্ব বের করা তো অসম্ভব।
আর যদি মনে করা হয়, আমাদের পিছনে কোনো পরম উদ্দেশ্যের অস্তিত্ব বিরাজ করে, সেই উদ্দেশ্যের সাথে একীভূত হবার একটা চেষ্টা তখন চালানো হয়। অন্যদেরকে সে উদ্দেশ্যে সামিল করার একটা চেষ্টা চালানো হয়। ভিন্ন উদ্দেশ্যের অনুসারীদের হেয় কল্পনা করা হয়। সবকিছুতে একটা ভালো-খারাপের সন্ধান পাওয়া যায়। মানুষের সকল কর্মে একটা জাজমেন্ট দেয়ার প্রবণতা তৈরী হয়। অধিকাংশ ধর্মই এমন, আগ্রাসী রাজনৈতিক মতবাদ, যেমন সাম্যবাদ, ফ্যাসীবাদ, এগুলোও এমন। এইসব কিছু এমন একটা পরম বলে দাবী করা উদ্দেশ্যের জন্য, যে উদ্দেশ্যের পরমত্ব প্রমাণ অসম্ভব। কারণ বিষয়টা পর্যবেক্ষণ-অসাধ্য, অদিবিদ্যার বিষয়।
তাই অধিবিদ্যার বিষয়গুলো নিয়ে মানুষের উপর জোর করা absurd। এই আলোচনাতেও যে সিদ্ধান্তেই উপনীত হওয়া যাক, পরিশেষে সেটা দশজনের উপর `নৈতিক মানদণ্ড’ হিসেবে চাপানো যায় না।
আবার, সমমনের মানুষ একটা আপাত (পরম নয় অর্থে) সিদ্ধান্তে একমত হতেই পারে। এটা হচ্ছে এই সংক্রান্ত আলোচনার দুইটি রূপ। ১) এটা নৈতিক কি নৈতিক না? ২) নৈতিক অনৈতিক নির্বিশেষ, এ ব্যাপারে আমরা কি অবস্থান নিতে পারি। দ্বিতীয় আলোচনায় নৈতিকতার মাথাব্যথা নেই। সমষ্টির সাবজেক্টিভ মতামতের হারমনিটাই প্রধান।
প্রথমটি আধিবিদ্যিক। দ্বিতীয়টি উপযোগবাদী বা প্রায়োগিক। একটা সমাজে কিভাবে এটা আলোচিত হচ্ছে, সেটার উপর নির্ভর করে, কিভাবে এটা ওই সমাজে প্রভাব ফেলবে। আমার পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, আমাদের প্রাসঙ্গিকসমাজে (বাঙালি, মুসলমান) সামাজিক সকল বিষয়েই আদিবিদ্যিক আলোচনা দ্বারা সিদ্ধান্তে উপনীত হবার চেষ্টা করা হয়। আর মানব সভ্যতার ইতিহাস জুড়ে জাতি নির্বিশেষে রয়েছে এই আলোচনা। আমরা ঐসব হোমিওপ্যাথি আলোচনাকে খুব মূল্যবান মনে করতে শিখেছি।
অভিজিৎ ভাইয়ের লেখায় আলোচনাটির লিংক:
http://blog.mukto-mona.com/?p=11067#comment-35979
@ধ্রুব,
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ, আভিজিৎ এর লেখার মন্তব্য আগে চোখে পড়ে নি| এখন পড়ছি|
আপনি এইখানে বলেছেন,
এই জায়গাটাতেই দ্বন্দ্ব সমাধান কর্তব্য বলছেন এরকম মনে হয়, আপনার দেয়া বিকল্পগুলির মধ্যে (ঘ)যদি অস্তিত্বশীল হয়, তবে তা খুঁজে বের করা দরকার| ফলে এই আলোচনাকে, শুধু অধিবিদ্যা দোষে দুষ্ট হয়ে যেতে পারে, সেই অভিযোগে ত্যাগ না করি। আমি যখন, কলেজে পড়তাম তখন প্রথম এই রকম একটি প্রশ্ন আমার মনে আসে, সেটা হলো তামাক(মাদক) সেবন বিষয়ক| সেইখানেও,
খাটে না আপাতত, সেই রকম বিচ্ছিন্ন করে এ বিষয়টিকেও শুধুই সাবজেক্টিভ বলা যাচ্ছে কি? “নৈতিকতার দৃষ্টিকোন” থেকেই ব্যাপারটিকে দেখা যায়, যদি সেরকম আলাদা ব্যাপার ধরে নিলে বলতে সুবিধা হয়|
বন্যা আহমেদ তার মন্তব্যে কিছু পয়েন্ট দিয়ে শুরু করেছিলেন| ঐ খান থেকেই আবার শুরু করা যায়, যেহেতু এখনো “প্রাণের উদ্ভব ঠিক কখন” এটির স্পষ্ট উত্তর নেই, তাই এখন আমি মানবহত্যার দায়টুকু না নেয়াই শ্রেয়তর মনে করি, সেটাকে লিবারেল বলতে পারেন|
শুভম্
@স্বাক্ষর শতাব্দ,
আপাতত একটা প্রশ্ন করি, প্রাণের সংজ্ঞা কি?
@ধ্রুব,
কোন ধরণের পৌনঃপুনিক সংজ্ঞার ধাঁধাঁয় না গিয়ে আমি বলতে পারি, পর্যবেক্ষণজাত এক ধরণের প্রাণের ধারণা আমার রয়েছে| সেটির সংজ্ঞায়ন জরুরী হতে পারে, কিন্তু সাধ্যে কুলাচ্ছে না| 😛
@স্বাক্ষর শতাব্দ,
চমত্কার, এই তো বৈজ্ঞানিক পথে চিন্তা এগুচ্ছে।
@ধ্রুব, সংজ্ঞা দিয়ে সাহায্য করুন, স্রোদিঞ্জারেরটা তো মানেন নি 🙂
@স্বাক্ষর শতাব্দ,
মানি কি করে। ওটা মানলে তো আমার কম্পিউটারটাও প্রাণী। 🙂
কম্পিউটারের প্রতি আমার বিশেষ অবজ্ঞা নেই। আমি বলতে চাচ্ছি প্রাণীর সংজ্ঞায়নটাও একটা মানব সৃষ্ট ধারণা কেবল।
@ধ্রুব,
একটা কমেন্ট মুছে দিয়েছি, আলো দিতে থাকেন| শুভম|
@স্বাক্ষর শতাব্দ,
কমেন্ট মোছে কিভাবে? ঝানতে ছাই!
@ধ্রুব,
সোঝা কাঝ! খতিয়ান(wordpress admin) এ যান, ঐখানে commnets এ গিয়ে ডিলিট করা যায়!
@স্বাক্ষর শতাব্দ,
কর্তব্য হিসেবে ঘোষণা করি না, যাদের কাছে হারমনি প্রধান, তারা এটাকে কর্তব্য হিসেবে দেখছে এমন ভাবা যেতে পারে।
@স্বাক্ষর শতাব্দ,
সাবজেক্টিভ এই অর্থে যে উচিত অনুচিত আধিবিদ্যিক প্রশ্ন এবং এসব প্রশ্নের অবজেক্টিভ (পরম) উত্তর নেই। সিগারেট খাওয়া সরাসরি অন্যকে প্রভাবিত করে, যখন অন্যের সামনে খাওয়া হয়। গর্ভপাতের তদ্রুপ প্রভাবও যদি কল্পনা করা হয়, তারপরেও এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত অবজেক্টিভলি নিতে কিঞ্চিত সুবিধাও হয় না। সমস্যাটা সমষ্টির, শুধু এটুকু হয়ত বলা যায়।
সমষ্টির সমস্যাকে নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যায়, আবার প্রায়োগিক দিক থেকেও দেখা যায়। নৈতিকতা মানুষকে ভালো খারাপ ভাবতে শেখায়। তখন যারা সে পথে চলে না, তাদেরকে খারাপ মানুষ হিসেবে চিনতেও শেখায়। এমন সাবজেক্টিভ বিষয়ের উপরে দাঁড়িয়ে খারাপ ভালোর জাজমেন্ট দেয়া absurd।
প্রায়োগিক আলোচনা ভৌত বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তিত, যেমন কি করলে কি প্রভাব পড়বে, বা পড়বে না, কোন প্রভাবটা আমরা গ্রহণ করব, কোনটা করতে চাই না। এসব ব্যাপারেও সর্বজনবিদিতভাবে একমত হবার সুযোগ নেই, এটা মাথায় রাখার বিষয়। সেই সুযোগ মাথায় রেখেই আলোচনা চালানো হয় গ্রহণযোগ্য সমাধানের লক্ষ্যে। নৈতিক দৃষ্টিকোণের আলোচনা এটা মাথায় রাখতে নারাজ।
@ধ্রুব,
🙁
আপনি বলেছিলেন, “দশজনের কি অধিকার আমার ব্যাপারে নাক গলানোর, যেখানে আমার ক্রিয়া তাদের সাথে জড়িত না?” আমি তামাকের উদাহরণ টানাতে আপনি শুধু একরকম প্রভাব কল্পনা করতে পারেন। তবে আমার উদ্দেশ্য তা ছিল না। আরো হরেক রকম প্রভাব আছে| “সমস্যাটা সমষ্টির”| সেটা বলাই উদ্দেশ্য ছিল| 🙂
আপ্নার কথার সাথে আমি একমত, “সর্বজনবিদিতভাবে একমত হবার সুযোগ নেই” কিন্তু বিষয়টির সাব্জেক্টিভ গুরুত্ব হলোঃ আমি সন্তান জন্ম দিব কি? pre choice
কিন্তু সন্তান হত্যা করব কি? – এটা শুধুই সাবজেক্টিভ বিবেচনার বিষয় না|
@স্বাক্ষর শতাব্দ,
এখানে একটা ব্যাপার গোল পাকাচ্ছে। একটা বিষয় হলো সাবজেক্টিভ বনাম অবজেক্টিভ (ব্যক্তি নিরপেক্ষ)। আরেকটা বিষয় হলো পারসনাল বনাম সামষ্টিক। সামষ্টিক কিন্তু ব্যক্তি নিরপেক্ষ নয়, বরং ব্যক্তির সমষ্টির চিন্তা দ্বারা বায়াস্ড। সাবজেক্টিভ আর পারসনাল দুইকেই আমরা অনেক সময় ব্যক্তিক বলি।
তুমি মনে হয় সাবজেক্টিভ বলতে পারসনাল বুঝাচ্ছ। (একারণেই টেক্সট এত গুরুত্বপূর্ণ 🙂 )| মানব হত্যার সমস্যাটা সামষ্টিক হতে পারে, কিন্তু এটার কোনো অবজেক্টিভ (ব্যক্তি নিরপেক্ষ) সমাধান নেই।
@ধ্রুব,
🙁 গোল! “বনাম” এ গোল| 🙂
সামষ্টিক সমাধানই কাম্য, অবজেক্টিভ সমাধান/সত্য নয়| প্রায়োগিক হয়ে যাচ্ছে, সেই টাই লক্ষ্য|
গর্ভপাত নিয়ে বিতর্ক শুরু করার আগে আমাদের পরিস্কার করা উচিত একটা ভ্রুণ ঠিক কোন পর্যায়ে “মানুষ” হয়। সাধারণত চেতনবোধকে মনুষত্ব্যের প্রতিনিধি ধরা হয়। ভ্রুণদের মধ্যে কখন চেতনবোধ সঞ্চারিত হয় বলবেন কি? এই প্রশ্নটার একটা সর্বজনবিদিত উত্তর পেলেই আলোচনায় অগ্রসর হওয়া যাবে।
ধরেন একটা মেয়ে ধর্ষণের শিকার হয়ে(বিশেষ করে ধর্ষক যদি পরিবারেরই কেউ হয়) গর্ভধারণ করল। সেক্ষেত্রে তার কি করা উচিত বলে মনে করেন?
@পৃথিবী,
“চেতন+বোধ” বুঝতে একটু সমস্যা হচ্ছে, চেতনবোধকে আরেকটু সংজ্ঞায়িত করবেন কি?
জন্মনিয়ন্ত্রণ আর গর্ভপাত দুটি ভিন্ন ব্যাপার| কেউ যদি বলে দেশে অপরাধীর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে/ স্রেফ জনসংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে, গর্ভপাত চালু করা হোক, তাহলে সেটা কোন ভালো যুক্তি হয় না, যদিও গর্ভপাতের ফলে জনসংখ্যা ও অপরাধী উভয়ই কমে যাবার কথা| একই ভাবে কিন্তু আমরা অনাকাঙ্ক্ষিত সন্তান জন্মরোধের কথাও ভাবতে পারি। তবে তা অবশ্যই জন্ম নিয়ন্ত্রণ কাজ না করলে। তার মানে এটি আগে থেকেই সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয়|
আপনি বলেছেন
বিষয়টিকে হলো, “অনাকাঙ্ক্ষিত মানব সন্তান” জন্মরোধে গর্ভপাত| অনাকাঙ্ক্ষিত সন্তান কার কাছে? সমাজের কাছে? সন্তানের পিতা, সন্তানের মাতা, পিতামাতা উভয়েই অথবা অন্যকারো কাছে| ধর্ষণজাত সন্তান, বিকলাঙ্গ সন্তান, নারী সন্তান, পুরুষ সন্তানও কারো কারো কাছে অনাকাঙ্ক্ষিত হতে পারে| আরো নানা কারণে(যুদ্ধ-শান্তি ইত্যাদি) মানব সন্তান অনাকাঙ্ক্ষিত হতে পারে| আলাদা করে বলেছেন বলে ধরে নেয়া যায় ধর্ষণজাত সন্তান এর ক্ষেত্রে আপনি গর্ভপাত প্রয়োগ সমর্থন করতে পারেন, অথবা দ্বিধায় আছেন| এর উত্তর আপনি দিবেন আশা করি| ধরা যাক জন্মনিয়ন্ত্রণ কাজ করলো না| তাহলে? আপনি কি ঐ বিশেষ ক্ষেত্রে/ এই রকম কিছু ক্ষেত্র বিশেষে গর্ভপাতের পক্ষপাতী?
@স্বাক্ষর শতাব্দ,
আমি sentient বোঝাতে চেয়েছি।
জনসংখ্যা কমানোর জন্য গর্ভপাত অবশ্যই হাস্যকর যুক্তি, কিন্তু অপরাধী কমানোর জন্য কেউ গর্ভপাতের দাবি তুলবে এটা আমি কল্পনাও করতে পাচ্ছি না! কিছু কিছু মানুষ জিনগত কারণে আগ্রাসী হয়ে জন্মায়, কিন্তু কেউ অপরাধী হয়ে জন্মায় না। আবার রাজাকারদের মত অনেকে ব্যক্তিজীবনে সুস্থ স্বাভাবিক হলেও আদর্শগত কারণে অপরাধ করে। গর্ভপাতের সাথে অপরাধী কমানোর যোগসূত্রটা ধরতে পারলাম না।
সঙ্গমে যদি বাবা-মা দু’জনেরই মত থাকে, তবে সন্তান নেওয়ার ব্যাপারে দু’জনের মতকেই প্রাধান্য দিতে হবে(এক্ষেত্রে নারীর প্রতি পক্ষপাতটা বোধহয় অনৈতিক হবে না, সন্তানধারণের সাথে সম্পর্কিত সব ঝুঁকি তো তাকেই নিতে হবে)। ধর্ষণের ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী যেহেতু নারী, তাই এখানে নারীর মতটাই প্রাধান্য পাবে। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, লিভ টুগেদার করা কোন নারী যদি গর্ভপাত করতে চায়, তখন সেটা গ্রহনযোগ্য হবে কিনা? সেক্ষেত্রে আমার উত্তরটা নির্ভর করবে গর্ভপাত কোন সময়ে ঘটানো হবে তার উপর। এখানেই মূলত ভ্রুণের “মনুষত্ব্যের” প্রশ্নটা চলে আসে। একটা ভ্রুণ প্রেগনেন্সীর কোন পর্যায়ে মনুষ্যত্ব লাভ করে?
আমি মনে করি প্রেগনেন্সীর যেই সময়টাতে বাচ্চা ডেলিভারী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, ঠিক সেই সময়টাতেই কেবল একটা fetusকে “মানুষ”হিসেবে গণ্য করা উচিত।
@পৃথিবী,
অপরাধী কমানোর জন্য কেউ গর্ভপাতের দাবি করে নাই তবে গর্ভপাত আইনের পরিবর্তনের কারণে মার্কিন দেশে অপরাধ কমে গিয়েছিল(রেফারেন্স ১১ দেখুন)|
আপনি নিজেই একটা কথা বলেছেন, তা হলো, “গর্ভপাত কোন সময়ে ঘটানো হবে তার উপর” নির্ভর করা উচিত, যদিও লিভ টুগেদার বিষয়ে বলেছেন, ধর্ষণজাত সন্তান প্রসংগেও আমি এটি ধর্তব্য মনে করি| সব ক্ষেত্রেই “নারী/মা কেই সন্তানধারণের সাথে সম্পর্কিত সব ঝুঁকি” নিতে হয়| ধর্ষণের ঘটনার ফলে, ঝুঁকি শুধু শারীরিক নয়, মানসিক, নৈতিকও বটে, তথাপি আত্মহত্যার সিদ্ধান্তটির সাথে সাথে ঐ “নির্দিষ্ট সময়ের পর” সন্তান হত্যার সিদ্ধান্তটিও বাতিল করাটাও আমার কাছে মানবিক মনে হয়|
এবার আসা যাক ঐ নির্দিষ্ট সময়টির ব্যাপারে, sentient/চেতনবোধের শুরু আর “প্রেগনেন্সীর যেই সময়টাতে বাচ্চা ডেলিভারী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, ঠিক সেই সময়টাতে” এই দুটি কি কাছাকাছি সময় হলো?
স্তেফান পিঙ্কারের বইটি আমি পড়িনি, সেখান থেকে/বৈজ্ঞানিক কোন সূত্র থেকে এই “বৈধ”/”সঠিক” সময়টির ব্যাপারে কোন কিছু নির্দেশ করতে পারেন| সেরকম কিছুর নির্দেশ যদি আপাতত বিজ্ঞান/অন্য কোন গ্রহণযোগ্য বিদ্যা স্পষ্টভাবে না দিতে পারে, তাহলে আমরা সেই সময়ের ব্যাপারে কি সিদ্ধান্ত নিতে পারি এবং কিভাবে?
শুভম|
@পৃথিবী,
অপরাধতত্ত্বের উল্লেখ করার কারণ, ঐ গবেষণার ফলাফল প্রকাশের একদল গর্ভপাতের পক্ষে সাফাই গেয়েছিল বই কি! তবে গবেষকের উপর সেই দায় চাপানো যায় না| বরং তিনি “ফেটুস” আর “মানব শিশু” এই দ্বন্দ্বের কোন সমাধান নিজেও জানেন না, এরকমই দাবি করেছেন, উপরন্তু নিরাপদ গর্ভপাতের উপর গবেষণারও পক্ষে| তার একটা বিখ্যাত বক্রোক্তির সারঃ গর্ভপাতের ফলে যে পরিমাণ মানব হত্যা হয়েছে, তার পরিমাণ অন্যান্য যে কোন মানব সৃষ্ট প্রাণহানির চেয়ে বেশি! তিনি নির্দিষ্ট পরিমাণ ফেটুসকে একটি মানব শিশুর সমতুল ধরে নিয়েছিলেন|
জটিল প্রশ্ন।
@রৌরব,
জটিল প্রশ্ন কোনটি?
@স্বাক্ষর শতাব্দ,
গর্ভপাতের নৈতিকতার প্রশ্নটি।
আমার মতে গর্ভপাত নারীর ব্যাক্তিস্বাধীনতার উপরেই ছেড়ে দেয়া সবথেকে কাম্য নয় কি?
@মিঠুন,
“নারীর ব্যাক্তিস্বাধীনতা” কি সবক্ষেত্রে মানবিক?
@স্বাক্ষর শতাব্দ,
মানবিকতা কি একটি আপেক্ষিক ব্যাপার নয়? নারীর ব্যক্তিস্বাধীনতা কোন ক্ষেত্রে আপনার আমার কাছে অমানবিক হতে পারে আবার এমনও কি হতে পারে না যে সেই একই স্বাধীনতা পরিবেশ পরিস্থিতি সাপেক্ষে সেই নারীর কাছেই চরম মানবিক একটি সিদ্ধান্ত?
কোনটি মানবিক আর কোনটি অমানবিক তা কিসের ভিত্তিতে তুমি নির্ধারন করবে?
@মিঠুন,
তোমার কথা ঠিক আছে|
তবে আমি এই ক্ষেত্রে একপেশে, “শরীর আমার সিদ্ধান্ত আমার” জাতীয় “ব্যাক্তি”-স্বাধীনতার বিপক্ষে|
আমার কাছে মনে হয়, মানবিকতা কেন্দ্রমুখী, ব্যাক্তিস্বাধীনতা তা নয়| ফলে আমার ভিত্তি একটা ভারসাম্য বজায় রাখার জায়গায়, সেখানে কালিক বাস্তবতার প্রেক্ষিতে বলি, আর ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য বলি, ব্যাক্তিগত কিছু ছাড় দিতেই হচ্ছে| ধর কোন গর্ভবতী মায়ের আত্মহত্যা করার ইচ্ছে হলো| এটাও একেবারেই ব্যাক্তিগত স্বাধীনতার ব্যাপার মনে হতে পারে| এমনও হতে পারে, জীবন ধারণ অমানবিক হয়ে যাচ্ছে| তিনি কিন্তু এক সাথে দুটি জীবন ধ্বংস করার দায় নিয়ে নিচ্ছেন।
তাহলে উক্ত অমানবিক অবস্থার অবসানের জন্য সমাধান কি গর্ভপাত?
কয়েকদিন আগে এক মা তার দুই সন্তান কে মেরে নিজেও আত্মহত্যা করেছেন, সেই ঘটনাটির ব্যাপারেও ভাবা যেতে পারে|
@স্বাক্ষর শতাব্দ,
একমত।
“শরীর আমার সিদ্ধান্ত আমার”- এ জাতীয় একপেশে ব্যক্তিস্বাধীনতার বিপক্ষে আমিও। শরীর টা আমার ঠিক আছে কিন্তু আমার বোধ হয় এটাও বোঝা উচিৎ যে আমার এই শরীরটা আমার পরিপার্শ্বেরও একটি অংশ। কাজেই আমার এই শরীরটা শুধুই আমার, জগতের আর কোন কিছুর জন্য নয় এ হেন ব্যাক্তি স্বাধীনতা কখনও মঙ্গল বয়ে আনতে পারেনা।
@স্বাক্ষর শতাব্দ,
“নারীর ব্যাক্তিস্বাধীনতা” কি সবক্ষেত্রে মানবিক?
লেখাটা পড়তে পড়তে ভাবছিলাম, দেরিদা, শেক্সপিয়ার, মার্কস ও ক্যাস্ট্রো-র নাম উল্লেখ করতে করতে উনি কি জানান দিতে চাচ্ছেন? বুঝলাম না। লেখক কলম্বিয়া হয়ে দেখলেন অরুন্ধতীর ভারতীয় মাওবাদীদের, তারপর সেই চোখে দেখলেন শ্রীলংকা। বুঝলাম না, সবগুলো নাম এক কাতারে দাঁড়িয়ে গেল কি করে? “তাদের হাতে বিষম আকৃতির আগ্নেয়াস্ত্র”, মনে হলো যেনো রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হাতের অস্ত্রগুলো খুবই সুন্দর।
এতগুলো বইয়ের Reference দেয়া হলো, কিন্তু কোন বই থেকে কি সাহায্য নেয়া হয়েছে, তাও বুঝতে পারলাম না।
এত সাধনা আর অধ্যায়নের পর আপনি বললেন, “নারীর ব্যাক্তিস্বাধীনতা” কি সবক্ষেত্রে মানবিক?
আপাত, পরম, নৈতিক ও অনৈতিক সহ শব্দের আরো যত ঝংকার আছে, বাজিয়ে যান। খুব জোর দিয়ে বলছি, গর্ভপাত নারীর ব্যাক্তিস্বাধীনতা নয়, হওয়া উচিত তার সিদ্ধান্ত। অনেক তো আইন তৈরী হলো, হচ্ছে আর সেগুলোকে প্রয়োগ করার জন্য মুখিয়েআছে রাষ্ট্রের অতন্দ্র অত্যাধুনিক বাহিনী। তবুও শুধু মানুষ নয় আজ গোটা পৃথিবী-ই মরতে বসেছে।
@Swapan Majhi,
@Swapan Majhi,
অস্ত্রগুলি আসলেই অনেক ভারী ও বিষম ছিল| হাতে অস্ত্র থাকার যে স্বাভাবিক অভিব্যাক্তি রাষ্ট্রঈয় বাহিনীগুলি দেখায় সেরকম মনে হয় নি|
একটা নির্দিষ্ট সময় নির্দেশ করুন, বৈজ্ঞানিক উপায়ে গর্ভপাতের জন্য| যেমন বন্যা আহমেদ বলেছেন, ১২ সপ্তাহ| এর পরের গর্ভপাত অমানবিক হতে পারে|