আজকের একটি মর্মান্তিক সংবাদ: আমার প্রতিক্রিয়া

সকালে আমি প্রথম আলোর আজকের আ্যলবামখানা দেখছিলাম। তার আগে পড়ছিলাম এই সংবাদ। একটি মন্তব্য সেখানে লিখেছিলাম বটে, যদিও প্রথম আলোর মডারেশন বোর্ড পরবর্তিতে তা ছাপেনি, অন্ততঃ এই লেখাটি এখানে পোষ্ট করা অবধি আমার চোখে পরেনি। ওখানে সাইফুল ইসলাম কল্লোলের তোলা ৩টি ছবি আছে আ্যলবামে। ছবিগুলোর ক্যাপশন নিয়ে আমার কয়েকটা কথা বলার ছিলো। ক্যাপশন গুলো পড়ার পরে আমি যারপরনাই হতাশ হয়েছি। আমার হতাশার কারণ নিয়েই দু-চারটি কথা বলার ইচ্ছে পোষন করছি। তার আগে ক্যাপশন গুলো দেখেনিন:

১। এই ট্রেনটিই কেড়ে নিয়েছে পাঁচজনের জীবন। আর তাই অগ্নিসংযোগ ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে আক্রোশ ঝাড়ছে বিক্ষুব্ধ জনতা
ছবি: সাইফুল ইসলাম কল্লোল

২। অগ্নিসংযোগের পরও ক্ষান্ত নয় জনতা। ঘাতক ট্রেনে ছুড়ে মারছে ইটপাটকেল। একদিকে সমাবেশ, অন্যদিকে মৃত্যু। সিরাজগঞ্জের সয়দাবাদ এলাকায় তাই কিংকর্তব্যবিমূঢ় জনতা
ছবি: সাইফুল ইসলাম কল্লোল

৩। ঘাতক ট্রেনে জনতার অগ্নিসংযোগ ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ
ছবি: সাইফুল ইসলাম কল্লোল

প্রথম ক্যাপশনটির দিকে দেখুন, আগ্নি সংযোগ ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের দায়টি বর্তেছে জনতার ঘাড়ে। ঐ জনসমাবেশে নিরীহ জনগন অগ্নি সংযোগের উদ্দ্যেশ্যে সমবেত নিশ্চই হয়নি। যারা এই ধরনের কর্মকান্ডের সংগে জড়িত এরা সবাই সংশ্লিষ্ট সংগঠনের সংগেই জড়িত বলে আমি বিশ্বাস করি। তাছাড়া দেখুন কতো দ্রুত ঐ ট্রেনটির ৩টি বগিতে আগুন লাগিয়ে দেয়া হলো! এর জন্যে নিশ্চই কোন না কোন পূর্বপ্রস্তুতি ছিলো। এটি একটি স্পষ্ট নাশকতামূলক কর্মকান্ড। এই সংগঠনটির অতীতেও এধরনের ঘটনা ঘটাবার রেকর্ড রয়েছে। এইতো কিছুদিন আগেই এক প্রাইভেট গাড়ির চালককে জামায়াতের সহায়তায় এরা ঢাকার রাস্তায় পুড়িয়ে মারলো! একটি আন্তঃনগর ট্রেন যেখানে থামাবার কথা নয় সেখানে ওকে জোড় করে থামাবার স্পর্ধা এরা পেলো কোথায়? কার ইঙ্গিতে? নাশকতার পূর্বপ্রস্তুতির এটিই এক যথার্থ প্রমান। অথচ ক্যপশন লেখার সময় তথাকথিত রাজনৈতিক নেতাদের মতো প্রথম আলো জনতার কাঁধে ভর করে পার পাবার পাঁয়তারা খুঁজছে বলেই আমার ধারনা। ঐ আক্রমনকারীরা জনতার অন্তর্ভুক্ত হলেও এখানে তারা সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের কোন না কোন অংশের সাথে সম্পৃক্ত। সাধারন জনতা কখনোই এই ধরনের নাশকতায় সম্পৃক্ত হয় না। অথচ আমি নিজে সাধারন জনতার একজন হিসেবে অপমানিত বোধ করছি পথম আলোর এই ধরনের কৌশলী ক্যপশনের কারনে।

জনতা বিক্ষুব্ধ হয় এদেশেও, তবে তার যথার্থ কারন থাকে। বাংলাদেশের মানুষ বারংবার তার প্রমান দিয়েছে। যখনই এদেশের ভাষা, সংস্কৃতি, ভূখন্ড, ঐতিহ্য কখনো কোন ভাবে আক্রান্ত হয়েছে কিংবা হবার উপক্রম হয়েছে তখনই বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে এদেশের মানুষ। অথচ দেখুন, এখানে একটি রাজনৈতিক সমাবেশ এবং সম্ভবতঃ কোন এক নেতার বিতর্কিত হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে তা হচ্ছিল। আর সেখানে নিকেশ করা হলো ৬টি তাজা প্রাণ! এই হলো রাজনীতি ওদের! সেই দায় ওদের মতো প্রথম আলো পুরো ব্যাপারটিই জনতার কর্মকান্ড বলে চালিয়ে দিলো!

২য় ক্যাপশনটিতে কিংকর্তব্যবিমূঢ় জনতা অগ্নি সংযোগের পরেও ক্ষান্ত নয়! জনতা যদি কিংকর্তব্যবিমূঢ়ই হবে তবে অগ্নি সংযোগ করলো কিকরে? কাজেই জনতা ঠিকই ছিলো কিংকর্তব্যবিমূঢ়। যার অগ্নি সংযোগ করার কথা সেই করেছে অগ্নিসংযোগ, প্রথম আলো শুধুমাত্র ক্যমেরার লেন্সের ভেতরদিয়ে দুর্বৃত্তের সাথে জনতাকে গুলিয়ে ফেলেছিলো! প্রথম আলোর সংবাদেই দেখুন, ট্রেনটি হুইসেল বাজিয়ে আগমন বার্তা জানালেও তথাকথিত ক্ষুব্ধেরা সরে না গিয়ে ট্রেনটির গতিরোধের চেষ্টা করে। চালক ভারী যান মুহুর্তেই থামাতে অবধারিত ভাবেই ব্যার্থ হলে ঐ মর্মান্তিক দুর্ঘটনার সুত্রপাত। এখন প্রশ্ন হলো, এই ট্রেন আক্রমনকারীরা যদি জনতা হয় তবে ট্রেনে যাত্রা করছিলো কারা? এই যাত্রীদের নির্যাতন এবং লুটপাট করলো কারা? প্রথম আলোর ক্যাপশন মোতাবেক সমাবেশ করছিলো নিরীহ জনতা আর ট্রেনে করে আসছিলো দুর্বৃত্তরা! তাই ট্রেনটি জনতা জ্বালিয়ে দিয়েছে আর দুর্বৃত্তদের পিটিয়ে সিধে করে দেওয়া হয়েছে!

৩য় ক্যাপশনটি আরো মজার! ট্রেনটি স্বয়ং ঘাতক! কারন, এটি এসেছিলো প্রাণসংহারে! যে দুর্বৃত্তেরা নাশকতার প্রস্তুতি নিয়ে বসেছিলো, এরা রাজনৈতিক নেতা! আমি জনতার হয়ে প্রথম আলোর এই ধরনের দায়িত্ত্ব এড়ানো ক্যাপশনের নিন্দা করি। সেই সাথে এই সব দুর্বৃত্ত কবলিত রাজনৈতিক দল (এরা যেদলেই থাকুক না কেনো) গুলো বয়কট করার আহবান জানাই এদেশের সব শ্রেণীর মানুষকে। আজকের এই ঘটনায় আমি মনে করি সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের নেতার উচিৎ হবে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক ঘটনা এবং ক্ষয়ক্ষতির সকল দায়িত্ত্ব নিজ কাঁধে নেওয়া। এই ঘটনাটি এদেশের মানুষের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোন ইস্যু নয় বরং কোন এক রাজনৈতিক পরিবারের ক্ষমতা পুনঃপ্রাপ্তির ইস্যু। সুতরাং কোন ভাবেই সাধারন জনগন এই ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত হতে পারে না।