কুরবানীর সময় সমাগত হলেই মানুষের মধ্যে ধুম পড়ে গরুছাগল কেনার। প্রতিযোগীতা চলে কে কয়টা গরু কোরবানী দেবে, কত বেশী দামের কোরবানী দেবে। মাঝে মধ্যে এটা নিয়ে পত্রিকায়ও কিছু কিছু খবর প্রকাশ করা হয়। বড় বড় করে লেখা হয়- অমুকে অত লক্ষ টাকা দিয়ে একটা কোরবানীর গরু কিনেছে। সাম্প্রতিক বছর সমূহে অবশ্য কোরবানীতে নতুন সংযোজন ঘটেছে। অথবা বলা যায়- বৈচিত্র এসেছে। তা হলো উট কোরবানী করা। উট হলো মরুর দেশের প্রানী। তথা আরব দেশের জন্তু। ইসলামের জন্মও আরব দেশে। তাই পাবলিক মনে এ ধারনা পোষণ করতে পারে যে – উট কোরবানীতে মনে হয় বেশী ছোয়াব। বেশী নাকি কম ছোয়াব তা সঠিক জানা না গেলেও উট কোরবানী দিলে বাড়ীর আশে পাশের লোকজনের মধ্যে যে একটু প্রচার প্রসার হয় তা নিশ্চিত।
কোরবানীর মূল সূত্রপাত একটি ঘটনা থেকে। হযরত ইব্রাহীম কে আল্লাহ পরীক্ষা করার জন্য বলে যে তার সব চাইতে প্রিয় জিনিসটিকে যেন সে কোরবানী দেয়। তার কাছে মনে হয়েছিল তার সন্তান ইসমাইল হলো সব চাইতে প্রিয়। তাই সে ইসমাইলকে আল্লাহর নামে কোরবানী দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ও কোরবানী দেয়। আল্লাহর কি অসীম কুদরত- কোরবানীর পর দেখা যায় ইসমাইল কোরবানী না হয়ে তার স্থলে পড়ে রয়েছে এক দুম্বা (মতান্তরে ভেড়া)। এ ঘটনা থেকেই কুরবানীর সূত্রপাত। মুসলমানরা এ ঘটনা উপলক্ষ্যে প্রতি বছর এ দিনে কুরবানী দেয় অর্থাৎ পশু জবাই দেয়।
কুরানে কুরবানী সম্পর্কে আছে-
মাংস বা রক্ত কোনটাই আল্লাহর কাছে পৌছায় না, পৌছায় তোমার মনের পবিত্র ইচ্ছা। ২২: ৩৭
এর অর্থ আল্লাহ কুরবানীর জন্য মুসলমানদেরকে উৎসাহিত করেছেন। তবে তিনি বুঝাতে চাচ্ছেন কুরবানী করার সময় যে পবিত্র ইচ্ছা কুরবানী দাতার মনে জাগ্রত হয় শুধুমাত্র সেটাই আল্লাহর সকাশে যায়। কিন্তু বিষয়টা আসলে কি তাই ?
এ বিষয়ে বাংলার সক্রেটিস আরজ আলী মাতুব্বর বেশ দারুন কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন- আল্লাহ ইব্রাহীমের কাছে তার সবচাইতে প্রিয় বস্তুর উৎসর্গের আদেশ দিয়েছিলেন। ইব্রাহীমের কাছে সবচাইতে প্রিয় বস্তু তার ছেলে ইব্রাহীম না হয়ে তার নিজ প্রান কেন হলো না। কথাটায় বেশ যুক্তি আছে আর অর্থবহ। আসলেই তো , মানুষ সবচাইতে বেশী ভালবাসে তার নিজকে, তার পর পূত্র, কন্যা, স্ত্রী, মা-বাবা, ভাই বোন ইত্যাদি। সে অর্থে- নবী ইব্রাহীম কেন নিজেকে কুরবানী না দিয়ে তার ছেলেকে কুরবানী দিলেন এটা যথেষ্ট প্রশ্ন সাপেক্ষ। অনেকে যুক্তি দেয়- ইসমাইল ছিল ইব্রাহীমের বৃদ্ধ বয়েসের পূত্র্ আর তাই তাকেই ইব্রাহীম নিজের চাইতে ভাল বাসতেন। যুক্তি হিসাবে এটা ঠিক শক্ত মনে হয় না। ইব্রাহীম অবশ্যই তার ছেলেকে ভাল বাসতেন কিন্তু তার নিজেকে ভালবাসতেন সবচাইতে বেশী আর সেটাই মানুষের স্বভাব।
আরজ আলী মাতুব্বরের আরও একটা বেশ কৌতুহলীদ্দপক প্রশ্ন। তা হলো -আল্লাহ ইব্রাহীমকে সবচেয়ে প্রিয় বস্তু কোরবানী করতে আদেশ দিয়েছিলেন স্বপ্নে, বাস্তবে নয়। মনোবিজ্ঞান, জ্যোতিশাস্ত্র, ধর্ম সহ সকল শাস্ত্র বলে স্বপ্ন হলো রূপক বিশেষ। আর ইব্রাহীমের বেলায় সে রূপকটির অর্থ ছিল তিনি আল্লাহ কে কতটা ভালবাসেন তা পরীক্ষা করা। তিনি সে পরীক্ষায় উত্তীর্ন হয়েছিলেন। পরীক্ষাটা ছিল শুধুমাত্র ইব্রাহীমের জন্য। তা যদি হয় তাহলে তার পদাংক অনুসরন করে বর্তমানে যারা কোরবানীর নামে নির্মম ও নৃশংসভাবে পশু জবাই করে তারা আল্লাহকে এর মাধ্যমে কি ধরনের ভালবাসা দেখায় ? এতে কি আদৌ আল্লাহর প্রতি ভালবাসা প্রকাশ পায়? বিশেষ করে সে পশুটা যদি হয় কোরবানীর আগের দিন হাট থেকে কেনা ?
আব্রাহামিক ধর্ম বলতে আমরা ইহুদী, খৃষ্টিয়ানিটী ও ইসলামকে বুঝি যাদের মূল উৎস হযরত ইব্রাহীম বা আব্রাহাম। ইব্রাহীমের কোরবানী যদি সার্বজনীন হতো তাহলে সর্বপ্রথমেই ইহুদীদের এর অনুসরন করার কথা। বাইবেলের পুরাতন নিয়মে আমরা দেখি মাঝে মাঝে মুসা নবী বা অন্যান্য নবী তার অনুসারীদের নিয়ে পশু কোরবানী বা বলি দিচ্ছেন কিন্তু সেটা বিশেষ বিশেষ উপলক্ষ্যে, যেমন- কোন রাজ্য জয় করার পর, অথবা কোন দুর্দিনের সময় দুর্দশা থেকে রক্ষা পেতে। কিন্তু তারা চান্দ্র মাসের সেই নির্দিষ্ট দিনে কোরবানী করে না। অর্থাৎ ইব্রাহীমের বিষয়টা তারা একান্তভাবেই ব্যাক্তিগত হিসাবে বিবেচনা করে রেখেছে। এর পরে যীশু খৃষ্টের মাধ্যমে খৃষ্ট ধর্মের আবির্ভাব। তারাও কোন ইব্রাহীমের পদাংক অনুসরন করে বছরের নির্দিষ্ট দিনে কোরবানী উদযাপন করে না। অথচ এর পরের ধর্ম ইসলামে এসে সেই কোরবানীটাকে একটা প্রথা হিসাবে মোহাম্মদ চালু করে দিলেন যা ইব্রাহীম থেকে উদ্ভুত হলেও স্বয়ং ইব্রাহীম নিজেই কিন্তু পরবর্তীতে আর প্রথা হিসাবে সেটা পালন করে যান নি বা তা পালন করার জন্য বলে যান নি। যে কারনেই তার অনুসারী ইহুদীরা এটা প্রথা হিসাবে প্রতি বছর পালন করত না। খৃষ্টানরাও পালন করে নি।তাই আরজ আলী মাতব্বরের প্রশ্ন- তাহলে কোরবানীর ধর্মীয় ভিত্তি বা বৈধতা কি ?
আরও মজার কথা যেটা আরজ আলী মাতুব্বর বলেছেন তা হলো – আল্লাহ ইব্রাহীমকে পরীক্ষা করতে গিয়ে শুধু নিজের সবচাইতে প্রিয় জিনিসের কোরবানী দিতেই বলেন নি, তাকে ভীষণ অগ্নি কুন্ডে পতিত হয়েও ইমানী পরীক্ষা দিতে হয়েছিল। তাহলে মানুষ কেন কোরবানী প্রথা পালনের মত নিজেদেরকে অগ্নি কুন্ডে নিক্ষেপ করে তাদের ইমানী পরীক্ষা দেয় না প্রতি বছর প্রথা হিসাবে ? তা ছাড়া, ইব্রাহীম তার সবচাইতে প্রিয় বস্তু তার পূত্রকে কোরবানী দিয়ে আল্লার প্রতি তার ভালবাসার পরিচয় দিয়েছিলেন , কিন্তু বর্তমানে যারা কোরবানী দেয় তাদের কাছে সব চাইতে প্রিয় বস্তু কি হাট থেকে কিনে আনা পশু? তবে সব চাইতে মজার কথা যেটা বলেছেন তা হলো – কোরবানীতে পশুটির হয় আত্মত্যাগ আর কোরবানী দাতার হয় সামান্য স্বার্থ ত্যাগ। কারন পশুটি নিজেই কোরবানী হয়ে আত্মত্যাগ করে, যেখানে কোরবানী দাতার সামান্য কিছু অর্থ খরচ হয় মাত্র। খরচের একটা বড় অংশ উসুল হয়ে যায় কারন কোরবানী দাতা পশুটির মাংশ মজা করে উপভোগ করে। তাও আবার অধিকাংশ ক্ষেত্রে সে অর্থ আসে অবৈধ পন্থায়। এ ধরনের আত্মত্যাগে পশুটি বেহেস্তে যাবে কিনা সে প্রশ্নই আরজ আলী মাতুব্বর রেখেছেন। সব চেয়ে বড় প্রশ্ন হলো – সৎ বা অসৎ যে পন্থায়ই অর্থ উপার্জন করে পশু ক্রয় করা হোক না কেন , তাদের আত্মত্যগে তারা কোথায় যাবে এ ব্যপারে কোন ব্যখ্যা কোথাও নেই। কিন্তু ব্যখ্যা থাকাটা জরুরী। তবে বেহেস্তে গবাদি পশুদের কোন স্থান আছে কি না তা কিন্তু কোথাও উল্লেখ নেই।
এখন আরজ আলীর মত আমারও প্রশ্ন কুরবানীর মত একটা নিষ্ঠূর নির্মম হত্যাকান্ড দ্বারা কিভাবে আল্লাহ সন্তুষ্ট হতে পারেন। কুরবান শব্দটি হলো পারস্য শব্দ আর কুরবানী হলো উর্দু শব্দ। আরবী শব্দ হলো উধিয়া যার অর্থ হলো রক্ত উৎসর্গ। তার মানে উধিয়া তথা কুরবানী হলো আল্লাহকে সন্তুষ্টির জন্য জন্তু কে জবাই করা। এখন একটা পশুকে নির্মম নিষ্ঠুর ভাবে জবাই করলে ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরোয় আর তা দেখে আল্লাহ সন্তুষ্ট হবেন বিষয়টা অদ্ভুত লাগে শুনতে। শুধু মুসলমানরাই নয়, হিন্দুরাও তাদের মা কালী/ মনসা বা ঐ ধরনের দেবতা বা দেবীদের নামে পাঠা বলি দেয় আর তাতে নাকি দেবতা বা দেবী সন্তুষ্ট হয়। প্রাচীন সভ্যতা বিশেষ করে আমরা মিশরীয় সভ্যতায় নরবলি দিত। মায়া এজটেক সভ্যতায়ও দেবতাকে সন্তুষ্ট করতে নরবলি দিত। ভারতে কাপালিক সম্প্রদায় বলে একটা সম্প্রদায় ছিল এক সময় তারা তাদের সাধনায় সিদ্ধি লাভ করতে তাদের দেবী ভৈরবীর সামনে নরবলি দিত বলে শোনা যায়। বঙ্কিম চন্দ্রের কপালকুন্ডলা নামক উপন্যাস থেকে আমরা এ কাহিনী জানতে পারি। মুসলমানদের কুরবানীর প্রথা মূলত: নর বলি বা জবাই থেকেই আগত। কারন ইব্রাহিম তো তার পূত্র ইসমাইলকে জবাই করার জন্যই তার গলায় ছুরি চালিয়েছিলেন। আর তিনি মনে করেছিলেন তাতেই আল্লাহ যার পর নাই খুশী হবেন। ভাগ্যক্রমে ইসমাইল জবাই না হয়ে হয়েছিল এক দুম্বা বা ভেড়া। সে সূত্রে বর্তমানে মুসলমানরা পশু জবাই করে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার নামে। এখন যদি ইসমাইলই জবাই হয়ে যেত তাহলে কি এখন মুসলমানেরা তাদের পূত্র সন্তানকে জবাই করে কুরবানী করত আল্লাহর সন্তুষ্টি বিধানে ? মনে হয় এ ভাবে আল্লাহ কে সন্তুষ্ট করার জন্য কাউকে তখন খুজে পাওয়া যেত না। তবে দু একজনকে হয়ত বা পাওয়া যেত যারা তার পূত্র সন্তানকে জবাই করত। যেমন- কয় বছর আগে খবরে পড়েছিলাম বাংলাদেশের কোন এক জায়গায় এক লোক তার শিশু পূত্রকে জবাই করে কোরবানি পালন করেছিল। তাকে পরে উন্মাদ বলে সাব্যাস্ত করা হয়েছিল ও যতদুর মনে পড়ে তাকে ধরে কারাগার বা পাগলা গারদে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু ধর্মীয় দৃষ্টি কোন থেকে সে কি সত্যিই উন্মাদ ছিল? মোটেও না। কারন তার কাছে কুরবানীর অর্থ ছিল আল্লাহকে সব চাইতে প্রিয় জিনিস উৎসর্গ করতে হবে। তার কাছে সবচাইতে প্রিয় জিনিস ছিল তার পূত্র সন্তান যাকে সে কুরবানী দিয়েছিল। গরু ছাগলের হাট থেকে কিনে আনা পশু তার কাছে কোন প্রিয় জিনিস ছিল না। তাই আল্লাহর তো বরং বেশী খুশী হওয়া উচিৎ অন্তত: কুরবানীর মূল নিহিত অর্থ অনুযায়ী। আমাদের অবশ্য জানার উপায় নেই যে আল্লাহ কতটা খুশী হয়েছিলেন , এটা জানতে কেয়ামত পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া গতি নেই। এখন আমরা কল্পনা করি , বর্তমান যুগে হযরত ইব্রাহীম আগমন করলেন আর স্বপ্নে আল্লাহর আদেশ পেয়ে তিনি তার পূত্র ইসমাইলকে কোরবানী দিলেন। তাহলে কি গতি হবে তার কপালে ? নিশ্চিত ভাবে তাকেও উন্মাদ ভাবা হবে ও ধরে পাগলা গারদ বা শ্রীঘরে পাঠানো হবে। নিজেকে নবী বলে দাবী করলে পার পাওয়া যাবে না। তো একই ঘটনা তিনি প্রায় তিন হাজার বছর আগে করেছিলেন বলে কথিত আছে। তাহলে আজকের দিনে যেটা উন্মাদনার লক্ষন , তিন হাজার বছর আগের সময় হলেও সেটাও তো সেই উন্মাদনার পর্যায়ে পড়ে। আজকের দিনে যেটা খারাপ কাজ তা হাজার লক্ষ কোটি বছর আগেও খারাপ কাজ ছিল আর পরেও খারাপ থাকবে। হাজার বছর আগে হয়ত মানুষ তাকে খারাপ কাজ বলে বিবেচনা করত না, কিন্তু তাই বলে তা ভাল কাজ হয়ে যাবে না। বিশেষ করে নবীদের ব্যপারে তো মোটেই তাকে অবহেলা করা যাবে না। কারন তারা যা করতেন , বলতেন, আচরন করতেন তাই তার অনুসারীরা অনুসরন করত। আর তাদের আচার আচরন কথা বার্তা ছিল স্বয়ং আল্লাহ কর্তৃক নির্দেশিত। সুতরাং তারা এমন কাজ করতে পারেন না যা হাজার বছর পরে সমালোচনার যোগ্য হতে পারে। যাহোক, সেই উন্মাদনাকে পরম পবিত্র কাজ মনে করে এখনো কিছু লোক তা অনুসরন করে যাচ্ছে আর নির্মম নিষ্ঠূর ভাবে পশু জবাই করছে। তাহলে যারা এ প্রথা অনুসরন করছে তারাও কি একই শ্রেনী তথা উন্মাদের পর্যায় ভুক্ত নয়?
কেন পশু জবাইকে নির্মম বা নিষ্ঠূর বলা হচ্ছে? কারন হলো পশুকে তিনটা পোচে জবাই করতে হবে। তো একটা জন্তুকে যখন পর পর তিনটা পোচ দেয়া হবে ধারালো ছুরি দিয়ে নিশ্চয়ই পশুটি খুব আরাম পাবে না , বরং ফিনকি দিয়ে যখন রক্ত বেরোতে থাকবে তখন সে প্রচন্ড কষ্ট পাবে। প্রচন্ড কষ্ট যে সে পাচ্ছে তা কিন্তু বোঝা যায় পশুটা ছট ফট করা দেখে। কষ্ট না পেলে নিশ্চয়ই ওরকম মরন পন ছট ফট করত না। তবে তারা যাতে বেশী ছট ফট না করতে পারে এজন্য গরুর চার পা কে বেশ শক্ত করে বাধা হয়। হিন্দুরা বরং আমার কাছে মনে হয় বেশ ভাল কাজ করে। এক কোপে মামলা শেষ । পশু কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই তার দেহ থেকে ধড় আলাদা হয়ে যায়। যেহেতু তার মাথা আলাদা হয়ে যায় সেহেতু পশুটার দেহ যতই ছট ফট করুক তাতে তার কোন কষ্ট বোধ হয় না কারন কষ্ট বোধের কাজটাই তো করে মাথা বা মস্তিষ্ক। কিন্তু জবাই করার সময়ে ঠিক তার উল্টোটি ঘটে। তিন পোচ দিয়ে তো জবাই করা হয় তার পর তার স্পাইনাল কর্ড না কেটে মাথাটা দেহের সাথে ঝুলিয়ে রাখা হয় যার অর্থ তার নার্ভ সিস্টেম পুরোই ক্রিয়াশীল থাকে। যে কারনে পশুটা দীর্ঘক্ষন কষ্ট পায়। ঠিক একারনেই আমার কাছে বিষয়টাকে নির্মম মনে হয়। তবে এ ধরনের নির্মম হত্যাকান্ডের সমর্থনে পন্ডিতদের যুক্তি দিতে বিন্দু মাত্র বিলম্ব হয় না। যেমন টিভির এক অনুষ্ঠানে দেখলাম জাকির নায়েক এ ব্যপারে খুব বিজ্ঞের সাথে যুক্তি প্রদর্শন করছে। তার বক্তব্য হলো- খুব ধারালো ছুরি দিয়ে যেহেতু পোচ দেয়া হয় তাই পশু ব্যথা পায় না। কিন্তু যতই ধারালো হোক, পর পর তিনটা পোচ দিলে ব্যথা পাবে না এটা একমাত্র আহাম্মক ছাড়া আর কে বলবে ? কিন্তু সেটাও ব্যথা পাওয়ার মূল কারন না। আমরা জানি ধারালো কিছু দিয়ে কোথাও কেটে গেলে প্রথমে আমরা টের পাই না। কিছু পরে টের পাই। পশুর ক্ষেত্রেও ঠিক সেরকম ঘটতে পারে ধরে নিলাম । কিন্তু স্পাইনাল কর্ড না কাটাতে তার নার্ভ সিস্টেম যে পুরোটাই ক্রিয়াশীল থাকে আর তাতে যে প্রচন্ড যন্ত্রনা পেতে থাকে পশুটা এর বিরুদ্ধে যু্ক্তিটা কি ? কিন্তু এ ক্ষেত্রেও জাকির মিয়ার যুক্তির অভাব নেই। তার বক্তব্য তখন আর পশুটার যন্ত্রনার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। অর্থাৎ যন্ত্রনা তখন তার কাছে মূল বিষয় হয় না।তার বক্তব্য হলো যেহেতু নার্ভ সিস্টেম সক্রিয় থাকে তাই হৃৎপিন্ড চালু থাকে দীর্ঘক্ষন, ফলে দীর্ঘ সময় ধরে পশুটার দেহ থেকে রক্ত বের হয়ে যেতে পারে যে রক্তে নাকি বিপুল পরিমান রোগ জীবানু ইত্যাদি থাকে আর তার ফলে যে মাংস পাওয়া যায় তা হলো স্বাস্থসম্মত। কি চমৎকার যুক্তি! তার মানে দাড়াচ্ছে কোরবানীটা হলো প্রকারান্তরে স্বাস্থসম্মত মাংস পাওয়ার উপায় মাত্র, ঐসব আল্লার উদ্দেশ্যে উৎসর্গের ব্যপারটা এখানে নামকা ওয়াস্তে বা বোগাস। কিন্তু আসলেই কি জাকির মিয়ার বক্তব্য ঠিক? মানুষ মাংস খায় মুলত দুটি কারনে। এক – প্রোটিন ও দুই-রক্তের অতি প্রয়োজনীয় আয়রন পাওয়ার জন্য। যে কারনে ডাক্তাররা রক্তশূন্যতার রুগীকে লাল মাংস খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে। লাল মাংসের মধ্যে রক্ত জমে থাকে পেশীতে।পশুটির রক্তে থাকে প্রচুর পরিমান আয়রন। এখন যদি অধিকাংশ রক্ত পশুটির দেহ থেকে বের হয়ে যায় তাহলে তা দিয়ে আয়রনের চাহিদা মিটবে না। আর পশুর মাংস মানুষ বন্য জন্তুর মত কাঁচা খায় না যে মাংসের ভিতরে যে রক্ত থেকে যাবে তা খেলে মানুষ রোগগ্রস্ত হয়ে পড়বে। মাংসের সাথে পশুর শরীরের রক্ত যে কত জরুরী তা বোঝা যায় বন্য হিংস্র জন্তুর খাওয়ার অভ্যাস থেকে। বাঘ বা সিংহ যখন কোন একটা পশু শিকার করে , প্রথমেই সে চেটে চেটে রক্ত খায়। তা খায় কারন তা নিজের শরীরের রক্তের জন্য ভীষণ জরুরী। আফ্রিকার জঙ্গলে যে সব আদিম প্রজাতির মানুষ এখনও পশু শিকার করে খায় তারা শিকার করা পশুর রক্ত হাত দিয়ে আজলা করে প্রথমেই পান করে। জাকির মিয়া আর একটি যুক্তি দেখাল তা হলো মাংসে রক্ত থাকলে তা দীর্ঘদিন সংরক্ষন করে রাখা যায় না। কথাটা হয়ত ঠিক , কিন্তু মানুষ কুরবানী করে কি দীর্ঘদিন তার মাংস রেখে খাওয়ার জন্য, নাকি তা ফকির মিসকিনদেরকে বিলিয়ে দেয়ার জন্য? মোট মাংসের তিন ভাগের একভাগ কোরবানীদাতা রাখতে পারে। যদি বড় ধরনের গরু হয় তাতেও হয়ত বা অনেক মাংস রয়ে যেতে পারে। কিন্তু তা হলেও মাংস সংরক্ষনের তো এখন সু ব্যবস্থা আছে , যেমন ডিপ ফ্রিজ। আর যখন এ ব্যবস্থা ছিল না তখন তো রক্তশূন্য মাংসও কয়েক ঘন্টার বেশী রাখা যেতে না। মানুষ তখন মাংস খেত বেশ কয় দিন আগুনে জ্বাল দিয়ে। সুতরাং জাকির মিয়ার যুক্তি কাজে লাগতে পারে সেই হযরত ইব্রাহীমের কালে বা চৌদ্দ শ বছর আগের আরবদের যুগে যখন ডিপ ফ্রিজ ছিল না। বর্তমান কালের জন্য নয়।
মানুষ তার আমিষ ও আয়রনের প্রয়োজনে মাংস খাবে এটাই স্বাভাবিক। আর সেটা দরকারও। কিন্তু মানুষ তো হলো সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাকলুকাত। সে কেন একটা পশুকে তিলে তিলে কষ্ট দিয়ে হত্যা করে তার মাংস খাবে । মানুষ তো বন জঙ্গলের হিংস্র পশু নয়। তার আচরন তো হিংস্র পশুর মত হতে পারে না। আর সেটাই যদি হয় তাহলে তার সাথে আর হিংস্র পশুর সাথে কি তফাৎ থাকল ? তাও আবার সেটাকে কিছু লোক ধর্মীয় প্রথা হিসাবে পালন করবে কোন রকম যুক্তি সঙ্গত কারন ছাড়া ? এভাবে পশুকে নৃশংস ভাবে হত্যা করতে উদ্বুদ্ধ করার মধ্য দিয়ে মানুষকে যেন হিংস্র পশু করে রাখারই প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত বহন করে। এদিক দিয়ে হিন্দুরা আরেক কাঠি সরেস। তারা বিশেষ কিছু পুজায় এক সাথে শত শত হাজার হাজার পাঠা বলি দেয়। রক্তের বন্যা বয়ে যায় পুজার স্থানের আশপাশ । যারা সেখানে যায় তাদের শরীর হয়ে যায় রক্তে মাখা মাখি। বড় বিভৎস লাগে দেখতে। কিন্তু যারা এ কাজটা করে তাদের কাছে এটা কোন ব্যপার না, একটা পবিত্র ধর্মীয় অনুষ্ঠান, পূন্য অর্জনের উপায়। এটা যে একটা প্রচন্ড নির্মম নিষ্ঠূর হত্যাযজ্ঞ তা তারা একবারও ভাবে না। তবে ভারতের সব যায়গাতে এ প্রথা নেই। শুধুমাত্র পশ্চিম বঙ্গেই এর আধিক্য। তার মানে অধিকাংশ হিন্দু এ পশু বলি প্রথা পালন করে না। তাই সব হিন্দুকে এর জন্য দায়ী বা দোষী করা চলে না। পক্ষান্তরে প্রায় সব মুসলমান সামর্থ থাকলে সে কুরবানী দিবে সুন্না পালন করার নামে।
কিছু লোক যখন প্রকাশ্যে বার বার পোচ দিয়ে পশু জবাই করবে বা বড় রাম দা হাতে নিয়ে এক কোপে পশুর মাথাটা ধড় থেকে আলাদা করে দেয় তখন তা মানুষের মনে একটা প্রভাব বিস্তার করে। কিছু ব্যাতিক্রম ছাড়া বাকী মানুষ এটাকে একটা অতি পবিত্র কাজ বলে মনে করে আর একই সাথে এ ধরনের হত্যাকে খুব সাধারন মানের ঘটনা হিসাবে ধরে নেয়। ছোট ছোট শিশুরা দেখে কেমন ভাবে ছুরি দিয়ে গরু ছাগল জবাই করা হচ্ছে, ফিনকি দিয়ে রক্ত ছিটকে বেরুচ্ছে। এর ফলে এরা এক ধরনের বিকৃত মানসিকার শিকার হয়। সেটা হলো- হত্যা জখম এসবকে এরা আর অতটা খারাপ কাজ ভাবতে শেখে না। মনে করতে শেখে সাধারন ঘটনা। এমন কি তারা যখন বড় হয় তখন নিজেরাও সময়ে এসব কাজ করতে পিছ পা হয় না। বিষয়টা আসলেই যে তাই তা বোঝা যায় দেশে মাত্রা ছাড়া খুন খারাবির ঘটনায়। মাঝে মাঝে এমনও দেখা যায় – স্কুল পড়ুয়া ছেলেরা তাদের সহপাঠিদের খুন করছে অবলীলায় অকাতরে। খুন করার এ ধরনের মানসিকতা তারা সর্বপ্রথম অর্জন করে কুরবানীর নামে এ ধরনের প্রকাশ্য পশু হত্যা থেকে। অবশ্য এটাই একমাত্র কারন নয়। বর্তমানে টিভিতে যে অসংখ্য চ্যনেল আছে তাতে যেসব ফিল্ম দেখা যায় তার অধিকাংশই ভর্তি থাকে খুন জখম যৌনতা ইত্যাদিতে যা থেকেও মানুষ এ মানসিকতা অর্জন করে। যারা পশু জবাই করে বা বলি দেয় তাদের কাছে এটা একটা ক্রীড়া ছাড়া আর কিছু নয়। ফল হয় ভয়াবহ। পরবর্তীতে ধর্মের নামে বা অন্য যে কোন নামে মানুষ জবাই করতে বা বলি দিতে তাদের হাত কাপে না । ধর্মীয় উগ্রবাদী গোষ্ঠির লোকজনরা যে অকাতরে মানুষ খুন করতে পারে , তার মূল এখানেই নিহিত। পশু হত্যা করা আর মানুষ হত্যা করা দুটোকেই সমান মনে করে। এসব কুরবানী বা বলি প্রথা থেকে তারা হাত পাকায়। তখন খুন খারাবিটা তাদের কাছে একটা ক্রীড়া মনে হয়। যে ক্রীড়ায় তারা মনে করে আল্লাহ বা দেব/দেবীকে সন্তুষ্ট করা যাবে ।
ইহুদী ও খৃষ্টানরা কুরবানীর প্রথা পালন না করলেও মুসলমানরা কেন এটা চালু করল এটার কারন খুজে বের করা কঠিন কিছু নয়। বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে , কুরবানীর প্রচলন মোহাম্মদ মদিনায় যাওয়ার আগে করেন নি। সেই নবী মোহাম্মদের আমলে মদিনার অধিকাংশ লোক ছিল হত দরিদ্র। তারা সব সময় ভাল খাবার পেত না। অতি গরীব লোক জন নিয়মিত মাংস খেতে পেত না। মুহাম্মদ মদিনায় আসার পর যখন মদিনাবাসীরা তার অনুসারী হয়ে গেল তখন মোহাম্মদের মনে হলো মদিনার এসব হত দরিদ্র লোকদেরকে কিছু সুযোগ সুবিধা দেওয়া দরকার। তা না হলে তারা তার অনুসারী থাকবে কেন? তাই কোরবানীর নামে পশু জবাই দেয়ার একটা প্রথা চালু করা জরুরী হয়ে পড়ল যাতে এ উপলক্ষে মদিনার গরীব দু:খীরা ভাল মতো মাংস খেতে পারে। উছিলা হিসাবে ইব্রাহীমের কাহিনী তো আছেই , তাই কোন অসুবিধা নেই। মক্কাতে থাকতে তিনি ঈদ-উল-আজহা যাতে পশু কোরবানী দেয়া হয় তা কখনো উদযাপন করেন নি। কারন মক্কার লোকরা অতটা হত দরিদ্র ছিল না। আর তাই তারা দান খয়রাতের মাংস খাওয়ার জন্য লালায়িত ছিল না। তার নবুয়তের পর দশ দশটি বছর মক্কাতে কাটানোর পরও ,অন্য অনেক কিছুর চেষ্টা মোহাম্মদ মক্কায় করেছেন, কিন্তু কুরবানী করার চিন্তা কখনো করেন নি। সত্যিই যদি কুরবানী পালন করানোর ইচ্ছা আল্লাহর থাকত তাহলে মক্কাতেই সে জন্য নীচের আয়াত নাজিল করতে পারতেন , কিন্তু তা তিনি করেন নি। কারন মক্কায় কোরবানীর মাংস খাওয়ার লোভ দেখিয়ে নিজ দলে ভেড়ানোর মত পরিবেশ ছিল না।
তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ ও ওমরা পরিপূর্নভাবে পালন কর। যদি তোমরা বাধা প্রাপ্ত হও তাহলে কোরবানীর জন্য যা কিছু সহজলভ্য তাই তোমাদের ওপর ধার্য্য। আর তোমরা ততক্ষন পর্যন্ত মাথা মুন্ডন করবে না যতক্ষন পর্যন্ত তোমাদের কোরবানী যথাস্থানে পৌছবে। যারা তোমাদের মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়বে বা মাথায় যদি কোন তাহলে তার পরিবর্তে রোজা করবে বা খয়রাত দেবে কিংবা কোরবানী দেবে। আর তোমাদের মধ্যে যারা হজ্জ ও ওমরা একই সাথে পালন করতে চাও তাহলে যা কিছু সহজলভ্য তা দিয়ে কোরবানী করাই তার ওপর কর্তব্য। বস্তুত যারা কোরবানীর পশু পাবে না তারা হজ্জের দিনগুলোতে রোজা রাখবে তিনটি আর সাতটি ফিরে যাবার পর। এভাবে দশটি রোজা পূর্ন হয়ে যাবে। ০২: ১৯৬
আয়াতটি মদিনায় অবতীর্ণ আর এটাই হলো কুরবানীর সূচনার প্রথম আল্লাহর বানী। আয়াতটিতে সূক্ষ্মভাবে গরিব ও ধনী উভয়ের জন্য সুবিধা আছে। যারা ধনী তারা কোরবানী দেবে । যদি কোন অনিবার্য কারন ঘটে যাতে কোরবানী দেয়া যাবে না তাহলে দান খয়রাত করবে আর যারা গরীব পশু জোগাড় করতে পারবে না তাদের জন্য রোজা রাখলেই চলবে। ধনীদের কুরবানী করতে উৎসাহ দেয়ার জন্য মোহাম্মদ দারুন লোভও দেখিয়েছেন। যেমন-
হযরত জাইদ বিন আকরাম হতে বর্নিত-নবীর সাহাবীরা তার কাছে জিজ্ঞেস করেছিলেন- হে রসুল, কোরবানী কি ? তিনি উত্তর দিয়েছিলেন- এটা তোমাদের পিতা ইব্রাহীমের পথ। তারা আবার জিজ্ঞেস করেছিলেন- কিন্তু তাতে আমাদের কি লাভ ? তিনি উত্তর দিয়েছিলেন- প্রতিটি লোমের জন্য তোমাদের পুরস্কার আছে। তারা জিজ্ঞেস করলেন- উলের জন্য ? তিনি বললেন- প্রতিটি লোমের (কুরবানীর পশুর গায়ের) জন্য তোমাদের জন্য পুরস্কার আছে । -আহমেদ, ইবনে মাজা
কুরবানী করা পশুর প্রতিটি লোমের জন্য আল্লাহ কুরবানী দাতাকে পুরস্কৃত করবেন। তাহলে তার ধনী সাহাবীরা কুরবানী দেবে না কেন ? এর ফলে ধনীরা পশু কুরবানী দিতে বেশী উৎসাহী হবে, বেশী করে পশু কুরবানী দেবে, আর গরীব ফকির মিশকিন বেশী বেশী গোস্ত খেতে পারবে। সুতরাং ধনী ও গরীব দু দলেরই লাভ ও দুদলই খুশী। মানুষকে সম্মোহিত করার এর চাইতে ভাল রাস্তা আর আছে ?
কিন্তু এখানে একটা প্রশ্ন বা সমস্যা উত্থাপিত হতে পারে। তা হলো যারা গরীব ও কুরবানী দেয়ার সামর্থ নেই তাদেরকে বলা হয়েছে রোজা রাখতে আর তা হলে তারা কুরবানী দাতাদের সমান পুরস্কার পাবে। এখন সব পশুর সাইজ এক নয় তাই তাদের গায়ে লোমের সংখ্যারও বিরাট তফাত আছে। ছাগল বা ভেড়ার চাইতে গরুর গায়ে লোম বেশী, আবার গরুর চাইতে উটের গায়ে লোম বেশী। এছাড়াও কেউ একটি, কেউ একাধিক পশু কুরবানী দিয়ে থাকে। তার মানে যে একটি ছাগল কুরবানী দিবে তার চাইতে যে একটা উট বা গরু কুরবানী দিবে সে বেশী পুরস্কার পাবে। আবার যারা বহুসংখ্যক পশু কুরবানী দিবে তারা আরও বেশী পুরস্কার পাবে। এতে করে যারা কুরবানী দিতে সমর্থ হলো তাদের পুরস্কারের পরিমান হিসাব করা সম্ভব। কিন্তু যারা গরীব কুরবানী দিতে পারল না , শুধুমাত্র আল্লাহর বিধান মত নির্ধারিত দিন সমূহের জন্য রোজা রাখল, তাদের পুরস্কার কিসের ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে ? তারা কি একটা ছাগল নাকি একটা গরু নাকি একটা উটের লোমের সংখ্যার সমান পুরস্কার পাবে তা কিন্তু কোথাও পরিস্কার করে বলা হয়নি। তবে আমি জানি ইসলামী পন্ডিতদের কাছে এর উত্তর খুবই সোজা। আমার মনে হয় অধিকাংশ মুসলমানেরও এর উত্তর জানা আছে। আর তা হলো – এর উত্তর একমাত্র আল্লাহ মালিকই জানেন। সব কিছু জানার ক্ষমতা বা অধিকার মানুষের নাই। সমস্যার এখানেই শেষ নয়। কোরানে বলা হয়েছে- মাংস বা রক্ত কোনটাই আল্লাহর কাছে পৌছায় না, পৌছায় তোমার মনের পবিত্র ইচ্ছা। ২২: ৩৭ , তার মানে মনের পবিত্র ইচ্ছাই কুরবানীর অন্তর্নিহিত বিষয়। সে ক্ষেত্রে – যে বেশী ধনী ( ধরা যাক সৎ পথেই ধনী হয়েছে) সে কয়েক ডজন গরু একত্রে কুরবানী দিল, আর যে সাধারন মানের মধ্যবিত্ত সে মাত্র একটি ছোট ছাগল কোরবানী দিল এবং আরও ধরা যাক – দুজনেরই মনের পবিত্র ইচ্ছা সমান তাহলে পুরস্কার কে বেশী পাবে ? বিধি মোতাবেক ধনী ব্যাক্তিটির পাওয়ার কথা। কিন্তু তাই যদি হয় তাহলে আল্লাহ একজনকে গরীব আর একজন কে ধনী করে দুনিয়াতে পাঠালেন কেন ? বলা হয়- যাদেরকে গরীব ঘরে জন্ম গ্রহন করানো হয় তাদেরকে আল্লাহ পরীক্ষা করেন। কিন্তু এখানে দেখা যাচ্ছে আল্লাহর এহেন পরীক্ষার কারনে কেউ বেশী সংখ্যক পশু কুরবানী দিয়ে বেশী পুরস্কার নিয়ে নিচ্ছে আর কেউ বা একটা গরুর সাত ভাগের এক ভাগ অংশীদার হয়ে কুরবানী দিয়ে অতি সামান্য পুরস্কার পাচ্ছে। এটা তো ন্যয় বিচারের উদাহরন হলো না। অথচ আল্লাহ পরম ন্যয় বিচারক। আমি জানি এ সমস্যারও সমাধান হলো- আল্লাহই ভাল জানেন এর সমাধান কি হবে।
সাহল বিন বক্কর বর্নিত- আমি আনাস থেকে শুনেছি – নবী সাতটা উট নিজের হাতে জবাই করেছিলেন। ঈদ উল আজহার দিনে তিনি দুইটা ভেড়া জবাই করেছিলেন যারা ছিল দুই শিং ওয়ালা এবং যাদের গায়ের রং ছিল সাদা ও কাল। সহী বুখারী, বই- ২, ভলূম-২৬, হাদিস-৭৭০
উপরের হাদিস থেকে দেখা যাচ্ছে- আল্লাহর নবী মোহাম্মদ নিজে স্বহস্তে পশু জবাই করতেন। তার মানে প্রানী হত্যা করতে তার হাত কাঁপত না। হয়ত তিনি যখন পশুটির গলায় ছুরির প্রথম পোচ দিতেন আর তাতে পশুটি ছট ফট করতে থাকলে তিনি উল্লাসিত হয়ে উঠতেন এই ভেবে যে আল্লাহর নামে জবাই করাতে পশুটি আনন্দে ছট ফট করছে। কারন একটু পরেই তার রুহ বেহেস্তে দাখিল হয়ে যাবে। অর্থাৎ মোহাম্মদ নিজে নির্মম নিষ্ঠুর আচরন করে তা তার অনুসারীদেরকে শিক্ষা দিয়ে গেছেন। তার নিষ্ঠূর আচরনের বড় দলিল উপরোক্ত হাদিস। তিনি নিজ হাতে পর পর সাত সাতটি উট জবাই করেছেন প্রকাশ্যে সবার সামনে। একমাত্র পেশাদার কসাই ছাড়া এ ধরনের কাজ আর কে করতে পারে ?
কোরবানী করারও নিয়ম আছে। তা হলো সরাসরি পশুটির চোখের দিকে তাকিয়ে ছুরিতে পোচ দিতে হবে। কি দারুন বিধান! তার মানে যখন পশুটি মরন যন্ত্রনায় ছট ফট করতে থাকবে, তার চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরে পড়তে থাকবে, তখন তা তারিয়ে তারিয়ে দেখে আনন্দে উদ্বেল হয়ে উঠতে হবে এই ভেবে যে আল্লাহ এহেন কাজের জন্য অপরিসীম খুশী হয়ে পড়েছেন। আরও বিধান আছে। কুরবানী যথার্থ হতে হলে বাড়ীতে পোষা সবচাইতে প্রিয় পশুটাকে জবাই করাই উত্তম। গ্রামে অনেকেই আছে যাদের বাড়ীতে হয়ত একটা গরু বা ছাগল আছে যেটার প্রতি একটু বেশী ভালবাসা বা মায়া পড়ে গেছে। অনেকেই শরৎচন্দ্রের মহেশ গল্পের মহেশ নামক গরুটির কথা জানেন। বাংলাদেশের গ্রামে গ্রামে এখনও এরকম বহু মহেশের দেখা পাওয়া যাবে। এখন এ ধরনের অতি আদরের পশুটাকে জবাই করা হলো উত্তম কুরবানী কারন তখন সত্যি সত্যি একটা প্রিয় জিনিসকে আল্লাহর নামে উৎসর্গ করা হচ্ছে। এখন যে ব্যাক্তি তার বাড়ীতে পোষা অতি আদরের পশুটিকে জবাই করতে যাবে, তার তো হাত কেঁপে যাবে ছুরি চালাতে। অতি আদরের পোষা প্রানীটির গলায় ছুরি চালাতে গেলে তো এরকম হওয়াই স্বাভাবিক। তাহলে কিন্তু সাবধান, কুরবানী হবে না । হযরত ইব্রাহীম এর হাত কি কেঁপে গেছিল তার প্রানের চাইতে প্রিয় পূত্র ইসমাইলের গলায় ছুরি চালনা সময় ? আর কুরবানীর মূল ভাব তো সেখানেই। শুধু জবাই করলেই হবে না। পরে সে প্রিয় পশুটির মাংস খেতে হবে মজা করে। তবেই সে না কুরবানীর সত্যিকার মাহাত্ম। অর্থাৎ সোজা ভাষায় পোষা কি অপোষা, পশুর প্রতি কোন মায়া দয়া করা যাবে না , হতে হবে সীমারের মত নৃসংশ, নির্মম। হৃদয়ে থাকবে না কোন মায়া দয়া । আর এটারই ব্যবহারিক প্রয়োগ হলো কুরবানী। এ প্রয়োগিক বিদ্যা অন্যত্র কাজে লাগবে আর তারই প্রস্তুতি এটা। কোথায় কাজে লাগবে ? জিহাদের সময়। নিজের জান মাল দিয়ে জিহাদে যেতে হবে। তখন অমুসলিম যত আছে তাদের বিরুদ্ধে আক্রমনাত্মক যুদ্ধ করতে হবে, সে যুদ্ধের সময় অমুসলিমদের প্রতি কোন মায়া দয়া দেখানো চলবে না, হত্যা করতে হবে তাদেরকে যেখানে পাওয়া যাবে সেখানেই প্রচন্ড নৃশংসতায়। আর তারই সুন্দর ও পারফেক্ট রিহার্সাল হলো কুরবানী। তাই কুরবানীর ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষা হলো- পরে যখন জিহাদের নামে বা ধর্মের নামে নিরীহ মানুষের গলায় ছুরি চালাতে হবে বা বুকে গুলি চালাতে হবে বা বোমা মারতে হবে তখন যেন মনের মধ্যে সামান্যতম দ্বিধা দ্বন্দ্ব বা কোমলতা প্রকাশ না পায়। কারন সামান্যতম দ্বিধা বা কোমলতা প্রকাশ পেলে তাতে আল্লাহ রুষ্ট হতে পারেন যে ! তাহলে আর জান্নাতে যাওয়া যাবে না । হৃদয় ও মনে নির্মম ও নিষ্ঠূর হওয়াই হলো কুরবানীর আসল শিক্ষা। কোরবানী দাতা যেমন নির্মম নিষ্ঠূর হবে, সমাজের সবাইকে সেরকম নির্মম নিষ্ঠূর করে গড়ে তুলতে হবে আর সেকারনেই কোরবানীর নামে প্রানীকে প্রচন্ড যন্ত্রনা দায়ক হত্যার অনুষ্ঠান করতে হবে প্রকাশ্য স্থানে, সবার সামনে যেন সবাই তা দেখে ও এ থেকে নির্মম নিষ্ঠূর হওয়ার শিক্ষা লাভ করে। কারন মদিনায় হিজরতকারী মোহাম্মদের তখন দরকার ছিল একটা নির্মম নিষ্ঠূর বাহিনী যাদের দিয়ে তিনি মক্কা দখল করে তথাকার সর্বে সর্বা হবেন। নির্মম নিষ্ঠুর বাহিনী গঠন করার স্বার্থেই তার এ প্রথার প্রচলন যা গোটা মুসলিম সমাজ ভ্রান্তভাবে গত চোদ্দশ বছর ধরে পালন করে আসছে। অথচ এর এখন নতুন ব্যাখ্যা করে বলা হচ্ছে এটা নাকি মানুষের মনের হিংসা, লোভ ইত্যাদিকে জয় করার একটা পাথেয়। কিন্তু আসলেই কি মানুষ এভাবে প্রচন্ড কষ্ট দিয়ে প্রকাশ্যে প্রানী হত্যা করে হিংসা , লোভ ইত্যাদি থেকে মুক্তি পেতে পারে ? নাকি হয় তার উল্টো টা ? রক্ত ক্ষরন ঘটিয়ে মানুষ তো আরও রক্ত লোলুপ হবে, সেটাই তো স্বাভাবিক।
very good comments about mass killing of animal.i am also a muslim.but I always avoid moments of qurbani after eid prayer&hate this culture.
Thank you
আমার উপরের প্রশ্নগুলোর জবাবের আশায় আছি বিদ্যান লেখক সাহেব।
আর আপনার কোরবানীর লেখার সাথে যোগ করছি কাজী নজরুল ইসলামের কয়েকটি কবিতার লাইনঃ
পুত্রেরে কোরবানী দিতে পারে আছে কেউ হেন ত্যাগী?
আল্লাহর নামে, ধর্মের নামে মানব জাতির লাগি।
সেই মুসলিম থাকে যদি কেউ তসলিম করি তারে
ঈদগাহে গিয়া তারি স্বার্থক হয় ডাকা আল্লাহেরে।
অন্তরে ভোগী বারে যে যোগী, মুসলমান সে নয়,
চোগা চাপকানে ঢাকা পরিবেনা সত্য সে পরিচয়।
ধন্যবাদ
ড. হুমায়ুন আজাদ কোরবানীকে বর্ণনা করেছেন এভাবে-
ইসলামে পশু কুরবানীকে জড়িত করা হয় হিব্রু নবি ইব্রাহিমের নিজের পুত্র ইসমাইলকে উৎসর্গ করার উপাখ্যানের সাথে। পশু উৎসর্গ অত্যন্ত পুরোনো পৌত্তলিক যজ্ঞ। মানুষ যখন যাযাবর ছিল, শিকারই যখন ছিল জীবিকা, তখন তারা দেবতাকে তুষ্ট করার জন্যে পশু বলি দিতে শুরু করে। বাইবেলের আবেল ও কেইনের উপাখ্যানে এটা দেখতে পাওয়া যায়। আদি পুস্তকে আছে: হাওয়ার গর্ভে প্রথম সন্তান জন্মে কেইন, পরে আবেল। আবেল (হাবিল) ছিল ছিল মেষপালক এবং কেইন (কাবিল) চাষী। চাষী কেইন ঈশ্বরের উদ্দেশ্য উৎসর্গ তার জমির শস্য, আবেল উৎসর্গ করে পশু। ঈশ্বর আবেলের উৎসর্গ, পশু, গ্রহণ করে; কিন্তু কেইনের উৎসর্গ, শস্য গ্রহণ করেন না। এর ফলেই ঘটে প্রথম নর ও ভ্রাতৃহত্যা; কেইন হত্যা করে ভাই আবেলকে। প্যালেষ্টাইনের ঈশ্বর চাষী পছন্দ করেন না, তার পছন্দ শিকারী, কেননা তিনি মূলত যাযাবরের বিধাতা।
খ্রিষ্টানরা দাবী করে ইসহাককে-
মুসলমানরা দাবী করে ইসমাইলকে-
এর কারণ হচ্ছে- ইসা নবী এসেছিলেন ইসহাকের বংশে; আর মুহাম্মদ এসেছিলেন ইসমাইলের বংশে।
@মাহফুজ,
হুমায়ূন আজাদের ব্যখ্যা যথাযথ।
মোহাম্মদ (সাঃ) কোরবানীর অনুষ্ঠানটি এনেছেন দুঃখী, দরিদ্র মানুষের জন্য, তার জন্মভূমির অর্থনীতি বাড়ানোর জন্য, এই প্রথা সেই সময়, সেই যুগের জন্যে একদম খারাপ ছিলনা। তিনি তার অর্থনীতি দেশ উন্নয়নের জন্য হজ্ব প্রথাও এনেছেন তাও কিন্তু সেই দেশের মানুষের জন্যে খারাপনা। এই অনুষ্ঠানটি আপেক্ষিক, ইহা কোরানের বর্নিত জবেহ নয়।
আবার আমরা আমাদের দেশে যেইভাবে কোরবানী করি, বর্তমান যেই রুপটি দেখা যায় ইহা, তা কিন্তু অনেক দেশেই সেইভাবে করেন না, মালায়শিয়া এইসব দেশে এই রকম করে ঢালাও কোরবানী মনে হয় করেনা। তারপর আবার যদি আসি ইসলামের এত ফের্কা, এত ভাগ- এক ভাগ আর এক ভাগকে কাফের বলছে, মিথ্যা বলছে, এমনও ইসলামের ভাগ আছে- যাদের মধ্যে নামাজ, রোজা, কিছুই নেই, তারাও নিজেদের মুসলমান বলে, তাদের সাথে শুধু একটাই মিল তারা কবর দেয় ইসলামের মত করে।
সুতরাং কি সমস্যা ধরবেন আপনে? সমস্যা কারটা ধরবেন? সুতরাং আপনার দৃষ্টিতে ধর্মটা কিরুপ? একই প্রশ্ন বারবার করছি বিরক্ত হবেন না দয়া করে, তবে জানতে চাই।
ধন্যবাদ
বড় বিপদে ফেললেন ভাই। এত সংজ্ঞা নিয়ে তো চিন্তা করি নাই। তবে কি ধরনের কাজকে আমরা অসভ্য বলি তার কিছু উদাহরন দেয়া যেতে পারে, যেমন-
– পাথর ছুড়ে মানুষ মারা
-প্রকাশ্য জায়গায় উল্লাস সহকারে মানুষ বা জন্তু জানোয়ারকে জবাই করা
-একজন নারীকে আপাদ মস্তক কাপড়ের মধ্যে ঢুকিয়ে কিম্ভুত কিমাকার করে রাখা
-অন্য মানুষকে ইতর প্রানী গন্য করা
-অন্যের বাক স্বাধীনতা বা গনতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করা
আর বলব ?
আপনার কাছে একটা প্রশ্ন ছিল। সভ্য কাজ এবং অসভ্য কাজের সংজ্ঞা কি আপনার কাছে? মানে ঠিক কি দিয়ে আমরা নির্ধারন করব এই কাজটা সভ্য আর এই কাজটা অসভ্য?
@সাইফুল ইসলাম,
ভালত্ব এবং মন্দত্ব বড়ই আপেক্ষিক।
আতীক রাঢ়ী ‘সতা সত্য কথা বলিবে’ নামে সুন্দর একটা পোষ্ট রয়েছে। সেই পোষ্টের মন্তব্যগুলো পড়ে দেখতে পারেন।
@আতিক রাঢ়ী,
আপনার বক্তব্য যথার্থ। সঠিক বা বেঠিক রীতি বা নীতি অথবা মূল্যবোধ এটা নির্ভর করে দেশ , কাল ও পাত্র ভেদে। তাহলেও কিন্তু নিবন্ধের মূল সুরের কোন ঘাটতি হয় না। মূল সুরটা ছিল আমরা জন্তু হত্যা করার জন্য সভ্য উপায় গ্রহন করব নাকি করব বর্বর রীতি।
আজকের দিনে দাস প্রথা খারাপ, কিন্তু আপনার কথাতেই হাজর বছর আগে মানুষ হয়তো বুঝতোনা, কিন্তু তবুও খারাপ। কারন খারাপ সব সময়ই খারাপ।
আজকের ধনতত্র, বহুগামিতা ইত্যাদি যেটা নিয়েই আপাল করি না কেন আমরা এর ভাল -খারাপ নিয়ে একমত হতে পারবনা। তখনকার মানুষও যেমন কিছু ব্যাপারে একমত হতে পারেনি। কিন্তু যেহেতু আজকের মূল্যবোধের সাথে যায়না, তাই খারাপ। এটা দর্শনগত বড় ভুল। ধর্ম এরকম চিরন্তন মানদন্ডে আমাদেরকে বিশ্বাস করতে বলে।
একটা ঘটনা ভাল না খারাপ তা নির্ভর করে আমরা কিভাবে এটাকে দেখছি তার উপর। মেয়ে শিশুর জন্ম একটা ঘটনা। আরবে এটা এখন বাবা-মায়ের জন্য আনন্দের আবার ভারতীয় উপমহাদেশের বাবা-মায়ের জন্য দুঃখের ব্যাপার। একই ঘটনা স্থান ও কাল ভেদে ভিন্ন আবেদন নিয়ে আসে।
ফলে খারাপ সব সময়ই খারাপ, এভাবে চিন্তা করাটা আসলে চিন্তার একটা রোগ বিশেষ। একটা উদাহরন দেই, ৫০ বছর বয়সের পরে পুরুষদের অনেকের ক্ষেত্রে মূত্র নালির কোন স্থান সরু হয়ে আসে। ফলে ত্যাগ করা জলধারাটি রূপনেয় একটি বিচিত্র ফোয়ারায়। ফোয়ারা ভাল না খারাপ সেটা ভিন্ন প্রশ্ন, কিন্তু মূত্র ত্যাগের স্থান যেহেতু নিদৃষ্ট, ফোয়ারা এই কাজে অদক্ষ। সে ছড়িয়ে পড়ে নিদৃষ্ট স্থানের বাইরে।
চিন্তার নালিতেও যদি সমস্যা থাকে সেটাও লক্ষ্যভেদি প্রকাশে ব্যার্থ হয়। ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে, লক্ষ্যে যা পৌছায়, অপচয় হয় তার বহু গুন। আপনার লেখাগুলো ( দুই-একটা ব্যাতিক্রম ছাড়া।) আমার কাছে সেরকমই মনে হয়। কারনটা আজকে বুঝতে পারলাম।
রিচুয়ালিস্টিক রক্তপাত – এর চেয়ে “প্যাগান” ধারণা বোধ করি আর হয়না। পৃথিবীর বড় দুটি আব্রহামিক ধর্মের কেন্দ্রে এর অবস্থান সবসময়ই তাই অট্টহাসির উদ্রেক ঘটায়।
ভবঘুরে চমৎকার লেখাটির জন্য ধন্যবাদ। প্রসঙ্গত, আরজ আলি মাতুব্বরের প্রথম যুক্তিটি আমার কাছে দুর্বল লেগেছে। এধরণের “পারিসংখ্যানিক” যুক্তি শক্ত যুক্তি নয়। নিজের চেয়ে সন্তানকে বেশি ভালবাসা অসম্ভব কোন ব্যাপার না।
@রৌরব, ঠিক।
হুমম..
গতানুগতিক এই কোরবানীর বাইরে আপনার কি কোন মত/দর্শণ আছে, কিরুপে মুসলমানদের কোরবানী হওয়া উচিৎ বা এত আজগুবি অসত্য, কাল্পনিক গল্প গুচ্ছের ভিতরে হয়ত কোন আসল সত্য লুকায়িত আছে যা কিনা মানুষ জানেনা, এইরুপ কিছু কি আপনে বলতে পারবেন? নাকি আপনে কোরবানী বলে মানব কূলে কিছুই থাকতে পারেনা সেটা বলতে চাচ্ছেন?যদিও কোরবানী শব্দটি কোরানে নেই। কোরানে যা আছে তা হল “জবেহ” -অর্থ উৎসর্গ করা, পবিত্র করা বা শুদ্ধিকরন করা।
আপনে কি আল্লাহ খোদা গড মানেন? নাকি সেটা মানেন না? মানে এক শক্তি যে কিনা আমাদের পরিচালনা করছে, লড়াচ্ছে, ফেরাচ্ছে এইরকম কিছু? নাকি আপনে এইসব কিছুই মানেননা। একটু জানালে খুশি হব। আপনার পরীক্ষা নিচ্ছিনা। আগেরবার জিজ্ঞাসা করেছিলাম একটি প্রশ্ন তখন পরীক্ষা নিচ্ছি কিনা বা এই জাতীয় ভেবে উত্তর দেননি। এইবার এমনি জানতে চাওয়ার জন্য।
আপনে কোরানে বিশ্বাসী নন, সাথে মোহাম্মদকে আপনে প্রায় দেখতেই পারেন না। কিন্তু কোথাও কোথাও আপনার লেখার উপরে আল্লাহ বিশ্বাসী বলে একটা সস্তির ঢেকুর পাই, তাই জিজ্ঞাসা করলাম আরকি।
ধন্যবাদ
@Russell,
আপনার কথার উত্তরে এটুকু বলতে পারি – আমি নাস্তিক নই।
@ভবঘুরে,
ধন্যবাদ। চিন্তার ভিতরে ফেলে দিলেন। আচ্ছা আপনে তাহলে আস্তিক ধরে নিতে পারি।
আপনার এই ধর্মীও লেখাগুলোর ভিতর কোনটাতেই তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে দেখলাম না, না কোরানে আপনার সামান্য বিশ্বাস আছে, না নবী (সাঃ) কে আপনে মেনে নিতে পারছেন, না ইসলামকে আপনার দৃষ্টিতে কখনও ভাল দেখলাম। তাহলে আপনার দর্শণ মতে ধর্মটা কিরুপ হওয়া উচিৎ বলে মনে করেন? কোরবানী অনুষ্ঠানটি আপনার দৃষ্টিতে কিরুপ হওয়া উচিৎ? নাকি কোরবানী বলে কিছুই নেই, আচ্ছা যেহেতু কোরবানী শব্দটি কোরানে নেই, কোরানে আছে “জবেহ”-এই শব্দের অর্থ ও ভাবার্থের সাথে কি আপনে একমত? নাকি এতেও আপনার বিশ্বাস নেই।
এক শক্তি- হতে পারে আল্লাহ ভগবান ঈশ্বর যাতেই বিশ্বাস করুন না কেন আপনার কি মনে হয় তারা আসমানেই বসে বসে গুটি চালাচ্ছে অথবা কিছু না কিছু একটা করছে, প্রশ্ন হল তারা কি চায়? কি করছে? এই বিষয়ে যদি জানাতেন তাহলে আমরা কিছু একটা সত্যের দিকে ধাবিত হতে পারি?
অথবা আপনার দৃষ্টিতে সত্য কিরুপ?
যাইহোক আশা বেধে আছি।
@Russell,
কোরবানী আর উৎসর্গ এর মধ্যে তফাত কি ? আর কোরবানের পরিবর্তে উৎসর্গ হলেই বা কি এমন পার্থক্য সৃষ্টি হলো। তাহলে প্রকাশ্যে হৈ হল্লা করে পশু হত্যা করে শুদ্ধিকরন হয় নাকি ? বড় আজব কথা বললেন ভাই । আপনার চিন্তা ভাবনার তারিফ করতে হয়।
@ভবঘুরে,
উত্তেজিত হওয়ার কিছু নেই, আপনে মনে হয় বুঝতে পারেন নাই, প্রশ্ন আমি আপনাকে করেছি। যদি না বুঝেন তাহলে জিজ্ঞাসা করুন। আমরা পাঠক, যেকোন প্রশ্নই বিজ্ঞ লেখকের নিকট করতে পারি। হতে পারে আমাদের প্রশ্ন নগন্য হতে পারে, তাই বলে উড়িয়ে দেওয়ার যুক্তিটা কোথায়? আপনার পক্ষে বিপক্ষে কোন তর্ক করছিনা, না আপনার লেখার উপর মন্তব্য করছি। আপনাকে জিজ্ঞাসা করছি। আমি জানিনা যেই বিষয়, সেই বিষয়।
কোরবানী হোক বা জবেহ যাই হোক। কোরানের সাথে আপনে সহমত নয়, অথচ যদি স্রষ্টার অস্তিত্ব বিষয়ে আপনে একমত থাকেন তাহলে সেই স্রষ্টার মতামত কি? নবী করিম (সাঃ) স্রষ্টার অস্তিত্ব আছে বলেছেন, তিনি তার নাম দিয়েছেন আল্লাহ। সেই স্রষ্টার মত অনুযায়ী জবেহ করতে হবে। তিনি জবেহ, বা কোরবানী কোরানের মতে যেভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন-মানলাম আপনে সেই বিষয়ে নারাজ।
তাহলে প্রশ্ন হল আপনার স্রষ্টার নাম এবং কর্মও কি সেই একই আল্লাহ? যদি হয় তাহলে সেই আল্লাহ আসলে কি বলতে চেয়েছিলেন কোরবানী সম্পর্কে? বা তিনি কোরবানী নিয়ে কোন কথাই বলেন নি।
আর যদি আপনার স্রষ্টা অন্য কেউ হয়ে থাকে বলে মনে করেন তাহলে আপনার স্রষ্টার মতবাদটা কি কি? সে কিরুপ? সে কি চায়? সে কি ভাবে তার এই সৃষ্টি সম্পর্কে?
আপনে কোরান নিয়ে অনেক বিশ্লেষন করেন, অনেক খুত বের করেন, অনেক কথাই বললেন, তাহলে আপনার স্রষ্টা কিরুপ? সে কি কোরানের মত অন্য কিছু পাঠিয়েছেন তার সৃষ্টির জন্য? এই নিয়ে কিছু জানতে চেয়েছি।
আপনে গতানুগতিক কোরান বাদ দিয়ে আপনার স্রষ্টার কথা কিছু বলেন। সে কি কোন ওহী পাঠিয়েছেন? কার কাছে পাঠিয়েছেন? নাকি তিনি কিছুই করছেন না। করেন না।
ধন্যবাদ
@Russell,
আপনি আমাকে উত্তেজিত হতে কোথায় দেখলেন? নাকি ওটা আপনার মনের রোগ ? শোনেন, সৃষ্টিকর্তা আমাদের যথেষ্ট বোধ বুদ্ধি দিয়ে দিয়েছেন আর যা থেকে আপনি কোন রকম হিংসাত্মক বা বর্বর রাস্তা বর্জন করে নিভৃতে বৈজ্ঞানিক পন্থায় পশুকে জবাই করে তার মাংস খাবার হিসাবে খেতে পারেন। এর জন্য সৃষ্টি কর্তার বলে দেয়ার দরকার নেই যে আপনি একটা গরু নিয়ে রাস্তার পাশে দাড়াবেন , আত্মীয় স্বজন বন্ধুবান্ধব নিয়ে মহা উল্লাসে আল্লাহু আকবর বলে তার ওপর অসভ্য বর্বরদের মত ছুরি নিয়ে ঝাপিয়ে পড়বেন যা শুধু দৃষ্টি কটুই নয়, প্রচন্ড রকম বর্বর একটা প্রথা। আমি জানিনা আপনার মাথায় সেটা ঢুকছে কি না। আপনি যদি বিশ্বাস করে মানুষ আশরাফুল মখলুকাত মানে সৃষ্টির সেরা জীব আর আল্লাহ মানুষকে জ্ঞান বুদ্ধি দিয়েছেন তাহলে মানুষ কিভাবে প্রানী জবাই করে খাবে, কিভাবে হাটবে চলবে, অন্য মানুষের সাথে কথা বলবে, বিয়ে করবে , বউয়ের সাথে মিলিত হবে এসব ব্যপার কি আল্লাহর বলে দেয়ার দরকার আছে? এসব তো মানুষই ঠিক করে নিতে পারে। আল্লাহর মনে হয় খেয়ে দেয়ে আর কাজ নেই কোন , কি বলেন ?
@ভবঘুরে,
আপনে কি নিজে বুঝতে পারছেন আপনে কি লিখেছেন?
আচ্ছা, আপনার স্রষ্টা কি নামাজ, রোজা, হজ্ব, যাকাত কোন এইধরনের আইটেম তার সৃষ্টিতে রেখেছেন? যদি রেখে থাকেন তাহলে তা কিরুপ।
আপনে বলতে চাচ্ছেন আপনার স্রষ্টা মানুষকে বোধ শক্তি দিয়ে দিয়েছে বৈজ্ঞানিক পন্থায় পশুকে জবাই করে তার মাংশ খেতে। ভাল। তো এইরকম বিষয় জানতে চাচ্ছিলাম। তো আপনে কি সেই বৈজ্ঞানিক পন্থাটা বলতে পারবেন যা আপনার বোধ শক্তিতে আপনার স্রষ্টা বা আদৌকি কোন বৈজ্ঞানীক পন্থা ঢুকায় দিছেন কিনা? যা থেকে আমরা সেই পন্থায় পশু জবাই করে আমাদের কোরবানী বজায় চলতে পারি।
মানে তাহলে হল কি যে আমরা একটা রিমিক্স করে নিলাম। নিভৃতে বসে আপনার বৈজ্ঞানীক পন্থায় পশু জবাই যাতে পশু হত্যা হবেনা, আর আমরাও মৌজমাস্তি করে নিলাম। কেমন হবে বলুনত? আপনার বৈজ্ঞানীক পন্থায় কি পশুরা ব্যথা পাবে? মানে ছুরি দিয়ে না কি দিয়ে হবে? সেখানে সম্ভবত কোন মানুষ থাকবেনা, হয়ত সব মেশিন মানে অটোমেশন করা থাকবে হয়ত, তাইনা? একটা গরুকে মেশিনের ভিতর প্রেরন করা হবে আর গরু ফ্রাই হয়ে বের হয়ে আসবে। এইরকম কোন বৈজ্ঞানীক পন্থা? যাইহোক ইহা এমনি বললাম। আপনারটা শুনি আগে।
আচ্ছা আমার কৃত প্রশ্নগুলোর উত্তর কিন্তু আপনে দিলেন না, আশা রাখি দিবেন। আমিত বলেই দিয়েছি ইসলাম এর কথা বাদ। আপনার কথা বলেন। ১৫০০ বছর পূর্বে কোন ব্যটা কি করল তার জাতীর জন্য বাদ দেননা। আমাদের দেশের, বিশ্বের অনেকেই সেটা পালন করে -করতে দিন না। আপনে তাদের সব গোমড় ফাস করে দিচ্ছেন, তো এইবার আপনারটা বলুন।
আপনার স্রষ্টা কি বলে? আমিত শুনতে চাইনা তাদের কি ভুল, তাদের কি কাহিনী। আপনারটা বলেন। আপনার লেখা, আপনার বিদ্যা ভাল লেগেছে, আপনার “যুক্তি” যুক্তিযুক্ত মনে হয়েছে। তো এইবার আপনারটা বলেন।
আপনে আমার এই লাইন বাদ দিয়ে অন্য দিকে চলে গেলেন। স্রষ্টা যেহেতু আপনার আছে সেইটাই বা আপনে জানলেন কিভাবে? আপনাকে সে কিছু বলেছেন? বা অন্য কেউ? তার কি কোরানের মত অন্য কোন বই আছে?
ভবঘুরে ভাইজান, পরনিন্দা বাদ দিয়ে এবার নিজের কিছু বলুন। দয়া করে এড়িয়ে যাবেন না। আর অনেকেই এখানে আপনার মত লেখা লেখে। কারওটা আপনার মত এমন মূল্যবান(?) মনে হয়নি। তাই আপনাকেই প্রশ্ন করছি। আপনে আর একটা আর্টিকেল ছাপান- একদম নিরপেক্ষ আপনার স্রষ্টার বিষয়ে। কে কি করল সেইদিকে না যেয়ে।
ধন্যবাদ
এটা একটা সুন্দর প্রশ্ন যে, মুহাম্মদ মক্কায় থাকতে কোরবানি প্রথা শুরু না করে ১০ বৎসর পর মদীনায় এসে করলেন কেন? অথচ ইব্রাহিম যে তার পুত্রকে কোরবানি করতে চেয়েছিলেন সে ঘটনা মুহাম্মদ মক্কায় থাকতে তাওরাত, বাইবেল থেকে এনে কোরানে কপি-পেস্ট করেছিলেন। ইব্রাহিমের সপ্ন দেখার ৩০০০ বছর পর আল্লাহর মনে পড়লো কোরবানির আয়াত নাজিল করার কথা? ইস্লামিস্টদের কাছ থেকে উত্তরটা পেলে ভাল হতো।
@আকাশ মালিক,
ইব্রাহিমের সপ্ন দেখার ৩০০০ বছর পর আল্লাহর মনে পড়লো কোরবানির আয়াত নাজিল করার কথা?
৩০০০ বছর না। যতদুর জানা গেছে খৃ;পূ: ১০০০ এর দিকে ইব্রাহীমের আগমন ঘটেছিল । সে হিসাবে ১৭০০ বছর পর কোরবানীর সূরা নাজিল হয়েছে মনে হয়।
@ভবঘুরে,
ইব্রাহীমের জন্মের তারিখটা কি ঠিক আছে?
আমি তো জানতাম খৃস্টপূর্ব ২১৭০ সালের দিকে নবী ইব্রাহীমের জন্ম।
@আকাশ মালিক,
ইয়েস বস। আপনি ঠিক কথাই বলেছেন। আমার ভুল হয়ে গেছিল। আসলে ওটা খৃষ্ট জন্মের দুই হাজার বছর আগের , এটাই জানতাম, কেন জানি ভুল হয়ে গেল।
ধন্যবাদ আপনার সংশোধনের জন্য।
@ভবঘুরে,
এ রকম একটা প্রবন্ধ যে কত কষ্ট করে নিজের মূল্যবান সময় ব্যয় করে লিখতে হয় তা লেখকই ভাল জানেন। আমি বলবো, আমার কাছে আপনার এই লেখাটি হয়েছে one of the best ones . :yes:
@আকাশ মালিক,
আমিও আপনার সাথে একমত।
আর আপনার লিখা ‘যে সত্য বলা হয় নাই’ আমার কাছে ‘one of the best book’ বলে মনে হয়েছে।আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ পাঠকদের এমন একটি বই উপহার দেওয়ার জন্য। ‘সত্য’ অনেকেই উপলবদ্ধি করেন, কিন্ত সেটা প্রকাশের সৎ সাহস বহু কারনেই অধিকাংশ লোকের পক্ষেই সম্ভব হয় না। অন্যতম কারনের একটি হচ্ছে ‘ Fear of rejection’. আপনি, ভবঘুরে, অভিজিৎ, আবুল কাশেম, হাসান মাহমুদ এবং অন্যান্য যে সমস্ত লেখকরা বহু প্রতিকুলতার মধ্যেও ধর্মিয় ‘বিশ্বসের’ প্রতিকুল বিষয়াদি ভিত্তিক লিখা পাঠকদের উপহার দেন, তখন খুবই ভালো লাগে।
@আকাশ মালিক,
কি যে বলেন ! আসলে অনেকটা বাধ্য হয়েই লেখালেখি শুরু করেছি। চোখের সামনে কাহাতক আর একটা জাতিকে অন্ধ হয়ে থাকতে দেখতে ভাল লাগে ?
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
চমৎকার লেখা। তবে পশুবলির এই খেলা শুধু ইসলামের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। হিন্দুদের যেমন আছে তেমনি আছি ধর্মহীন সংস্কৃতিতেও। উদাহরণ স্বরূপ আদিল ভাই ডলফিন হত্যার কথা যেটা বলেছেন। অর্থহীন এই পশুবলি বন্ধ হোক এই কামনাই করি।
আরেকটি বিষয় কারোর জানা থাকলে সাহায্য করবেন দয়া করে। ইহুদীদের ভাষ্য অনুসারে ইসমাইল নয় ইসহাককেই কোরবানীর জন্য নেওয়া হয়েছিল। এই বিষয়ে আরব্য ইতিহাস কি বলে?
@স্বাধীন,
এ নিয়ে সুন্দর একটি লেখা এখানে পড়ুন-
@আকাশ মালিক,
লিঙ্কটা কেন যেন খুলছে না 😥 । বিকল্প কোন লিঙ্ক আছে? না থাকলে সমস্যা নেই। পড়ে চেষ্টা করবো আবার। ধন্যবাদ লিঙ্কটির জন্য।
@স্বাধীন,
সমস্যা আপনার সেখানে, আমি তো খুলতে পারি।
বিকল্প কোন লিঙ্ক এখানে-
@আকাশ মালিক,
সমস্যা কোথায় বুঝতে পারছি না 😥 । আমার এখানে নাকি মুক্তমনার। কোনভাবেই পিডিফ এর লিঙ্কটা খুলছে না। এডমিনদের কাছে কি কোন জবাব আছে? এটা কি আজকের সার্ভার সমস্যার সাথে সম্পর্কিত কিনা তাও বুঝতে পারছি না। দেখি পরে আবার চেষ্টা করবো।
@স্বাধীন,
আমার মনে হয়না মুক্তমনার, কারণ আমি তো খুলতে পারি। আপনার কমপিউটারে পিডিফ রিডার জনিত কোন সমস্যাও হতে পারে।
@আকাশ মালিক,
উম্মে মুসলিমার ‘প্রাণীহত্যা ও বিবেকবোধ’ নামে আরো একটি সুন্দর প্রবন্ধ আছে মুক্তমনায়।
সেখানে লেখা আছে- ঈদের পর কোথাও কোথাও মেইন রোডের পাশে ব্যানারে টাঙানো দুটো লাইনের একটি শ্লোগান কারো কারো হয়তো নজর কেড়েছে। শ্লোগানটি এরকম ‘মনের পশুরে কর জবাই, পশুও বাঁচে বাঁচে সবাই’। সুশিক্ষিত হওয়ার সাথে সাথে মানুষ বিবেকের দংশনেও জর্জরিত হচ্ছে। ধর্মের প্রচলিত অনুষ্ঠান পালনে বিবেকবান প্রজন্ম নিজের সাথেও প্রশ্নের সম্মুখীন। কী নির্মমভাবে পশুদের হত্যা করা হয়! পশুর পা বেঁধে, তিনচারজন মিলে জোর করে চিৎ করে শুইয়ে চেপে ধরে অসহায় পশুর গলায় ধারালো ছুরি চালানো হয়। আবালবৃদ্ধবনিতা সবাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তা দেখে। অনেক বাচ্চা এ ভয়াবহতায় চোখ ঢাকে। বিবেকহীন ধর্মান্ধ অভিভাবকরা আবার তাদের চোখ থেকে হাত সরিয়ে দেয়। বলে ‘দেখ, দেখ, জবাই দৃশ্য দেখা ভালো। মন শক্ত হয়’। জবাই করা দেখে মন শক্ত করতে হবে কেন? তাহলে কি জবাই করা এবং জবাই দৃশ্য দেখিয়ে প্রকারান্তরে মুসলমানদের খুনের দীক্ষা দেয়া হচ্ছে?
@মাহফুজ,
দারুন মন্তব্য করেছেন। আসলে এটাই আমি বলতে চাইছিলাম যে প্রকাশ্যে এরকম উৎসব করে পশু জবাই শিশু সহ সকল মানুষের মনকে প্রভাবিত করে। আমরা তো সেই প্রাগৈতিহাসিক আমলের গুহাবাসী শিকারী মানুষ নই যে তখনকার প্রথা এখনও ধর্মের নামে পালন করব । বলাবাহুল্য তখন টোটেম প্রথায় মানুষ শিকার নিয়ে ঠিক এরকমই আনন্দ করত কিন্তু সেটা করত যেহেতু তারা সভ্য ছিল না , জানত না যে এটা একটা নৃসংশ কাজ, তদুপরি তাদের এটা করা ছাড়া উপায়ও ছিল না। কিন্তু এখন তো আমাদের উপায় আছে। তাহলে এখনও আমরা কেন তা করব ?
@স্বাধীন,
হিন্দুরা যে এ কাজটা করে তা তো কয়েকবার নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে। আপনার নজরে পড়ে নি মনে হয়। ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান মন্তব্যের জন্য।
ভবঘুরের আরেকটি অসাধারন বিশ্লেষনধর্মী লেখা।
কোরবানী সমর্থনকারীদের মূল যুক্তি লক্ষ্য করেছি যা নিয়ে আমাদের ফুয়াদ ভাই বহুদিন পর হাজির হয়েছেন যে তুমি নিজে মাংস খাও না, তখন তো কোন অরুচি দেখা যায় না। এই অদ্ভূত যুক্তির কি জবাব জানি না। তার মানে কে এই যুক্তি প্রদানকারীরা বলতে চান যে কোরবানীর উদ্দেশ্য মাংস ভক্ষন? এই প্রশ্নে আবার তারা পিছিয়ে যান, উত্তেজিত হয়ে একের পর এক আয়াত কোট করতে থাকেন। এরপর আসে তিন ভাগের এক ভাগ দানের মহাত্ম্য। ভাবখানা এমন যে সেই মাংস দিয়ে গরীব লোকদের দুঃখ দূর্দশা লাঘবে বিরাট সাহায্য হচ্ছে। যে দুবেলা খেতে পায় না তাকে একদিন পেট পুরে মাংস খাইয়ে বিদায় করা তো রসিকতার মতই লাগে। তার আসল সাহায্য হতে যদি তাকে কিছু নগদ সাহায্য করে স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করা যা সেই পশু হত্যার খরচ দিয়ে করা যেত। এই কথা বললেও তারা রেগে যান। কিছুতেই স্বীকার করবেন না যে তাদের মূল যুক্তি হল হাজার বছর ধরে এই রিচ্যূয়াল আল্লাহর নামে পালিত হচ্ছে তাই তারাও সেটা করবেন।
কোরবানীর মূল উদ্দেশ্য মোটেও মাংস ভক্ষন বা দান নয়। মূল উদ্দেশ্য আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একটি নিরীহ অসহায় পশুকে হাত পা বেধে যন্ত্রনাকর উপায়ে জবাই করে তার প্রবাহমান রক্তের ধারা দেখা। এবং এটা আমাদের মুসলমান সমাজের দুই বড় ফুর্তির একটি। আল্লাহ একটি নিরীহ পশুর রক্তপাতে খুশী হন, আমরাও জবাই দৃশ্য দেখে আনন্দে মেতে উঠি। কি চমতকার ব্যাবস্থা। এখনো মনে পড়ে ছেলেবেলায় এই নৃশংস দৃশ্য কি অবলিলাক্রমে দেখতাম, বলতে লজ্জা নেই উল্লসিতও হতাম।
জীব জগতের নিয়মই এই যে বেচে থাকার জন্য জ্ঞাতে বা অজ্ঞাতে অন্য প্রানী হত্যা করতেই হয়। প্রান ধারন, আত্মরক্ষা, বা এমন কোন প্রয়োযনের জন্য জীব হত্যা করতেই হয়, উপায় নেই। তাই বলে আল্লাহ বা দেবী কালীর সন্তুষ্টি বিধানের জন্য ধরে ধরে জবাই দিতে হবে? এই হত্যা কি এড়ানো যেত না?
যে কারনে আমি স্রেফ শিকারের আনন্দের জন্য প্রানী হত্যার নিন্দা করি সেই একই কারনেই আমি কোরবানীর বিরোধীতা করি। বলে রাখা ভাল যে এ ধরনের অর্থহীন প্রানীহত্যা যে কেবল মুসলমানেরাই করছে তা নয়। পশ্চীমা ওয়ালারাও করছে। এলাস্কা মন্টানায় প্লেন থেকে নেকড়ে ভালুক শিকার করা হয়। কারন কি? স্রেফ শিকারের আনন্দ, এটা নাকি স্পোর্টস! হায় রে সভ্যতা। ডেনমার্কের ফারো আইল্যান্ডে তো যা ঘটে তার কাছে কোরবানিও হার মানে। সাবালকত্ব প্রাপ্তি উতসব হিসেবে ছেলেপিলেরা সাগরে নেমে ডলফিনের মত নিরীহ সুন্দর প্রানীকে কুপিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। মহিলাদের গায়ের ফারের কোট বা মিং কোটের জন্যও প্রানী হত্যাও পাপ বলেই মনে করি।
বাংলাদেশের কোরবানীর প্রকাশ্য দৃশ্য দেখে অনেক বিদেশী অসূস্থ হয়েছেন এমন বহু খবর অনেক যায়গায় পেয়েছি।
হযরত ইব্রাহিম নিজে যে কোরবানী পালন করতেন না এমন খবর জানতাম না, খুবই ইন্টারেষ্টিং।
পশু জবাই এর যে বর্ননা দিলেন তা মনে হয় সবাই পড়তে পারবে না। পশ্চীমে আজকাল জবাই ছাড়াও তাই অন্য পন্থা স্লটার হাউজগুলিতে বের হচ্ছে, যেমন ইলেক্ট্রিক শক ইত্যাদী। অবশ্য অনেকের কাছে তারিয়ে তারিয়ে ১৫/২০ মিনিট ধরে হত্যা আর ১ মিনিটে হত্যা একই ব্যাপার হবে।
তবে নবী মোহাম্মদ পশু জবাই করতেন বলেই তাকে নিষ্ঠুর পেশাদার কসাই বলা সমীচিন নয়। তেমন ভাবে জবাই তো কোরবানী ছাড়াও বিশ্বের সব দেশেই এই যুগেও করা হয়, যদিও খাদ্য সংগ্রহের কাজে।
@আদিল মাহমুদ,
একমত। তবে নিজ হাতে মানুষের শিরোচ্ছেদ করার কারণে কী উপাধি তার জন্য যথাযোগ্য হতে পারে, সেটাই ভাবছি।
@নির্ধর্মী,
সেটাও আসলে সময় ও পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে।
আজকের দিনে মানুষের মাথা নামানো অমানবিক, তবে মাত্র ২০০ বছর আগেও সেটাই ছিল প্রানদন্ড কার্যকর করার সর্বসম্মত গ্রহনযোগ্য উপায়। কাউকে না কাউকে তো অপরের মাথা কাটতেই হত। নাহলে প্রানদন্ড শাস্তি কার্যকর হত কিভাবে?
যদিও আল্লাহর নবী যিনি দয়ার সাগর হিসেবে পরিচিত তিনি মানুষের মাথা কেটে নিচ্ছেন (যথাযোগ্য কারন থাকলেও) সেটা ঠিক খাপ খায় না।
@আদিল মাহমুদ,
যথার্থ বিষয়টা ধরতে পেরেছেন। আল্লাহর নবীর কাজ কর্ম এমন হবে যা হাজার হাজার বছর পরেও সমালোচনার উর্ধ্বে থাকবে। অথবা এমন হতে পারে না কি যে নবীদের চরিত্র বা স্বভাব সম্পর্কে আমরা যে চিত্র একে নিয়েছি সেটাই ভূল ?
এমন হতে পারে না কি যে নবীদের চরিত্র বা স্বভাব সম্পর্কে আমরা যে চিত্র একে নিয়েছি সেটাই ভূল?
@আদিল মাহমুদ,
নৃসংশভাবে প্রানী হত্যা অবশ্যই বর্বর কাজ। কিন্তু সেটা যদি আবার কোন ধর্মীয় বিধি বা প্রথা দিয়ে সিদ্ধ করা হয় তখন তা একটা ব্যাধি। বৃটেনে তো এক সময় শুনেছি জঙ্গলে শিয়াল শিকার করে ফুর্তি করত । এখন বোধ হয় প্রথাটা বন্দ হয়ে গেছে। আমার মূল বক্তব্য ছিল – নৃসংশভাবে বর্বর পন্থায় প্রানী শিকার প্রকারান্তরে মানুষকে বর্বর করে তোলে। যদি কোন ধর্ম আবার সেটা প্রথা হিসাবে পালন করে তাহলে সে ধর্ম মানুষকে বর্বর করে তুলতে উৎসাহ দেয় যা সভ্যতার পরিপন্থি।
@ভবঘুরে,
আপনার কথা ঠিক। জামাতি গুন্ডারা কেন জ্যান্ত মানুষের হাত পা রগ কাটায় বিশেষ উতসাহ বোধ করে তার সূত্র হয়ত এখানে আছে। তবে এও মনে রাখতে হবে যে কোরবানী পালনকারী বেশীরভাগ সাধারন মুসলমানই এই দলে নয়।
তবে এসব রক্তারক্তি মানুষের মনে কুপ্রভাব বিস্তার করে তাতে কোন সন্দেহ নেই। পুরো ব্যাপারটার মাঝে একটা পৈশাচিক উন্মাদনা আছে এটা স্বীকার করতেই হবে, যার উতস প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ।
তবে আপনার লেখায় অন্য কিছু ভাল পয়েন্ট এসেছে যা শুধু কোরবানী নয়, সাধারন ভাবেই চিন্তা করার বিষয়।
ইব্রাহিম নবী স্বপ্নে প্রাপ্ত আল্লাহর আদেশে নিজ পুত্রের গলায় ছুরি ধরলে তিনি মহান, আত্মত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত। আমি বা আপনি আজ একই দাবী করে কারো গলায় ছুরি ধরলে আমরা উন্মাদ। বেশ একটা পরস্পর বিরোধীতা আছে। বলা যেতে পারে যে তিনি নবী, তাই নবী স্পেশাল। আপনার মতই বলতে হয় যে নবীদের কার্যকলাপ তো অনুকরনীয়। আর আল্লাহর আদেশ স্বপ্নে পাওয়া তো ধর্মীয় বিশ্বাসে অগ্রহনযোগ্য কিছু না।
একইভাবে বলা যায় যে এক সময় স্বপ্নে আল্লাহর নির্দেশ পাওয়া বা অহি পাওয়া ছিল নওবুওয়ত্বের লক্ষন। আজকের দিনে তেমন দাবী করা হল মানসিক রোগের লক্ষন। এমন দাবী আজকের দিনে কেউ যে করে না তা নয়। অনেকেই করে, তাদের মানসিক চিকিতসা করানো হয়।
@আদিল মাহমুদ,
নবীরা যখন দলে দলে মধ্যপ্রাচ্যে আবির্ভূত হত তখন যদি পাগলা গারদের সিস্টেম চালু থাকত , তাহলে নিশ্চিত তাদেরকে সেখানেই পাঠানো হতো। ভুল করে যদি এসব নবীরা এখন আবার জন্মগ্রহন করে আর অহী পাওয়ার দাবী করে তাহলে এই নবীদের উম্মতরাই তাদেরকে ধরে পাগলা গারদে পাঠাবে এটা নিশ্চিত। এটা বুঝতে পেরেই মনে হয় মোহাম্মদ বলে গেছেন – তিনি হলেন শেষ নবী।
@ভবঘুরে,
:laugh: আপনার রসবোধের পরিচয় আমি সব লেখাতেই পাই।
চমৎকার লাগল লেখাটা।
ছোটবেলা থেকে কোরবানী ব্যাপারটা খুব অপছন্দ করি। ঈদের দিন মসজিদের হুজুররা খুনীদের মত ছুরি নিয়ে ঘুরে বেড়ায়, নিরীহ পশুকে টেনে হিঁচড়ে শোয়ানো, জবাই করা আর চামড়া ছাড়ানো দেখলে কান্না পায় আর বিতৃষ্ণা লাগে। সবাই বলে কোরবানীর মাংস রোগ সারায়, এটা অনেক সুস্বাদু এইসব হাবিজাবি কিন্তু আমি ছোটবেলা থেকে মাত্র কোরবানী করা মাংস খেতে চাইতামনা কারণ আমি মাত্র এই পশুটিকে জবাই হতে দেখেছি আর আমাদের মাংস খাবার নিতান্ত প্রয়োজনে নয়, এমনি এমনি জবাই করা হয়েছে। তাছাড়া রাস্তায় ছড়ানো রক্ত একই সাথে বীভৎস আর নোংরা লাগে। আমি কুরবানীর ঈদ কখনোই পছন্দ করতামনা আর এখন তো একে বিনা দ্বিধায় অস্বীকার করতে পারি।
:yes:
আরজ আলী মাতুব্বরের যত প্রশ্ন পেলাম এখানে সবই যুক্তিসংগত। আপনার বেশ কিছু বিশ্লেষণ ভাল লাগল।
আমি মুক্ত মনার নতুন পাঠক। এটা আমার প্রথম মন্তব্য এবং তা হলো, লেখাটি খুবই ভালো লাগলো 🙂
হাই স্কুল এ ওঠার পর থেকেই কুরবানির যাবতিয় আনুস্ঠানিকতা (অসুস্থতা) থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখা সুরু করি (যদিও তখন আস্তিক-ই ছিলাম :rotfl: ) । আমার বাবা এই ঘটনাটাকে খুব একটা ভালো ভাবে নিতেন না। শুধুমাত্র মা বুঝতে পারতেন যে এ ঘটনায় আমার কষ্ট হয়, তাই তিনি কিছু বলতেন না।
নবী ইব্রাহীমের তো নিজের থেকে আল্লাহকেই বেশি ভালবাসার কথা।
আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) নবী করীম (সঃ)- থেকে রেওয়ায়াত করেন, তিনি বলেছেন ,’ঐ ব্যক্তি ঈমানের স্বাদ উপভোগ করতে সক্ষম, যার মধ্যে এ তিনটি চরিত্র বিদ্যমান,(১) যার কাছে অপরাপর সমুদয় বস্তূ হতে স্বয়ং আল্লাহ ও তাঁর রাসুল(সঃ) বেশি প্রিয়, (২) যে কাউকে ভালবাসে তো আল্লাহর ওয়াস্তে ভালবাসে, (৩) ঈমান গ্রহণের পর পুনরায় কুফরীর দিকে ফিরে যাওয়া এমনভাবে অপছন্দ করে, যেমন সে অগ্নিতে নিক্ষিপ্ত হওয়া অপছন্দ করে।’
তাহলে তো তার ………. কেই…..কু…. দেওয়ার কথা।
তাহলেতো শুধুমাত্র পবিত্র ইচ্ছা করলেই হবে। পূরন করার দায়িত্ব স্বয়ং মাবুদের।
বেহেস্তেতো মানুষ ছাড়া মাত্র তিনটি প্রাণী যেতে পারবে। আসহাবে কাহাপের প্রহরী কুকুর(সুরা কাহাপ),মোহাম্মদকে বহনকারী উটটি আর একটা কি যেন।
গবাদি পশুরা বেহেস্তে না গেলে বোধহয় তা তাদের জন্য ভালই হবে। বেহেস্ত আবার বেচারাদের জবাই হতে হবে না।
আসলে আমারতো মনে হয় তিনি নিষ্ঠুর নির্মম হত্যাকান্ড সন্তুষ্ট না হলেও অন্তত অসন্তুষ্ট হন না। নতুবা তিনি যদি চাইতেন পৃথিবীজুড়ে শান্তি বজায় থাকুক তাহলে কি আর পৃথিবীতে যুদ্ধ-বিগ্রহ ঘটতে পারে? মাবুদের ইচ্ছাতেইতো সব কিছু হয়। সোবাহানাল্লাহ
আল্লাহ যদি চাইতেন সৃষ্টির সেরা জীব আশারাফুল মাখলুকাত এই ধরনের নিকৃষ্ট প্রানীহত্যা করবে না, তাহলে তিনি তো ইচ্ছা করলেই আমাদের খাদ্য হিসেবে অন্য কিছু নির্বাচন করতে পারতেন। তাকেতো আর বিবর্তনের উপর নির্ভরশীল হতে হয় না।
এজন্যই কি মদীনার ছোটশিশুরাও যুদ্ধে অংশগ্রহন করতে একটুও ভয় পেত না?
তিনি শুনেছি প্রাণীদের ভালবাসতেন। তাহলে এরকম নৃশংস কাজ তিনি কেমন করে করলেন।
@রনবীর সরকার,
কিন্তু আল্লাহকে কোরবানী করে দিলে তো ধর্ম থাকবে না, ধর্ম না থাকলে অনেকের পেটে ভাত পড়বে না। বেকারত্বের হার সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্যই আল্লাহর বদলে নিজের সন্তানকে কোরবানী করাটা প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছিল।
কোরবানীর উদ্দেশ্যটা হাস্যকর এটা ঠিক, কিন্তু এটা “অমানবিক” হয় কেমনে সেটা বুঝি না। মানুষের নৈতিকতাকে কি আমরা পশুদের প্রতি প্রসারিত করতে পারি? এখন কেউ যদি আমাকে জিজ্ঞেস করে যে আমি রাস্তাঘাটে বিনা কারণে কুকুর পিটিয়ে মারতে পারব কিনা, তখন আমার উত্তর অবশ্যই না হবে। বিনা কারণে কুকুর পিটিয়ে মারাটা আমার কাছে ধর্ষকাম মনে হলেও কেউ যদি খাওয়ার উদ্দেশ্যে কাজটা করে, তখন সেটার প্রতিবাদ করার মত যুক্তি খুজে পাই না। বছরের একটা দিনে ছুরি হাতে প্রকাশ্যে গরুর উপর ঝাপিয়ে পড়াটাকে আমি “অমানবিক” না বলে অপচয় বলব।
গরুকে রাস্তার পাশে কচুকাটা না করে যদি ইঞ্জেকশন দিয়ে মারি, তাতেও নৃশংসতা বিন্দুমাত্র কমবে বলে মনে হয় না। খুন তো খুনই। গরুর মাংস এমনেও খাব ওমনেও খাব, কিভাবে গরু হত্যা করছি সেটা কি খুব একটা জরুরী? স্রেফ ফল-সবজি দিয়ে তো সুষম খাদ্যের তালিকাকে সম্পূর্ণ করা যায় না, তাই জীবহত্যার কোন বিকল্প আছে বলে মনে হয় না।
@পৃথিবী,
নদীর ছোট মাছ হাজার হাজার হিসাবে যখন মারেন, তখন কোথায় থাকে এই দরদ, যখন প্রতি দিন হাজার হাজার মুরগি বা চিকেন কে মারা হয়, তখন কোথয় থাকে এই দরদ। আসলে এই মায়া তখনই থাকে যখন ইনিয়ে বিনিয়ে একটি জাতির বিরুদ্ধে নিয়ে যাওয়া যায়। তাহলে আমি একে দরদ বলব, নাকি বলব মিথ্যা নৈতিকতার এক অপূর্ব লজ্জাহীন প্রকাশ।
ফরিদ ভাইয়ের ভাষায়
হ্যা ফরিদ ভাই, আপনার নিজের দিকে চেয়ে দেখুন, আপনি কি কোন অংশে ভিন্ন তাদের থেকে যাদের যুগ কে অন্ধকার যুগ বলেছেন। ছোট মাছ, কিংবা মুরগির মাংশ খাওয়া ছেড়ে দিন, আর যদি ভেজিটেরিয়ান হয়ে থাকেন, তাহলে অযথা অসহায় গাছ পালা কে আপনি কেন মারবেন? তারা কি কোন ক্ষতি করেছে আপনার ? কখন কি আপনাকে কঠিন কোন কথা বলেছে? তাহলে, কেন এদের কষ্ট দিবেন। চলুন শুরু করুন, উদ্ভিদভোজ ও বাদ দিয়ে দিন। আর তাহলে কোন মানুষ আপনাদের সহজে প্রমান সহ ভন্ড বলতে পারবে না।
@ফুয়াদ,
নদীর মাছ আর একটা পশু কি এক হলো ? অবশ্য যাদের মধ্যে কোন যুক্তি বোধ কাজ করে না , যাদের হৃদয়ের অর্গলগুলি বন্দ, তাদের কাছে এক হতেই পারে। বিষয়টা হলো – পশু হত্যার পদ্ধতি। ধরুন একজন অপরাধীকে আদালতে তার কৃত কর্মের জন্য মৃত্যূদন্ডের শাস্তি প্রদান করা হলো। এখন সভ্য মানুষ হিসাবে আপনি কোন পথে তার মৃত্যুকে পছন্দ করবেন ? তাকে কি গন ধোলাইয়ে মারতে চান , নাকি চার হাত পা বেধে পাথর ছুড়ে মারতে চান, নাকি উপুর্যুপরি ছোরা চাকু দিয়ে আঘাত করে মারতে চান, নাকি ফাসির দড়ি বা ইলেক্ট্রিক চেয়ারে বসিয়ে মারতে চান ? যদি আপনি সভ্য মানুষ হন তাহলে সেভাবেই মারতে চাইবেন যে পথে মানুষটির তাড়াতাড়ি মৃত্যু হবে ও যত দুর সম্ভব কম যন্ত্রনা ভোগ করবে। তবে আরও সভ্য হলে মৃত্যুদন্ডটাই আপনি মানবেন না। তবে আপনার মন্তব্য দেখে মনে হয় আপনি ভিন্ন কোন পন্থায় মারতে চান মানে পাথর ছুড়ে বা ছুরি চাকু মেরে। সভ্যতা আর অসভ্যতার এটাই তফাৎ।
@ফুয়াদ,
তখনও অবশ্যই দরদ থাকে। কিন্তু প্রকাশ্য দিবালোকে লোকজনকে দেখিয়ে আনন্দ উল্লাস করতে করতে, ঢাক ঢোল পিটিয়ে, কে কতো দামের পশু জবাই করছে তার উচ্ছাস দেখিয়ে, মাংস খাওয়ার অদম্য লোভে চোখ চক চক বানিয়ে, ফিনকি দিয়ে রক্ত ঝরা উপভোগ করতে করতে একটা পশুকে যখন বলী দেয়া হয় তখন এই পুরো প্রসেসটা আদিম যুগের একটা নিষ্ঠুর প্রক্রিয়া ছাড়া আর কি হতে পারে?
@পৃথিবী,
পশু জবাই করার পরিবেশ পরিস্থিতি ও পদ্ধতিটাই অমানবিক। মানুষ কোন হিংস্র জানোয়ার না যে তারা এভাবে পশু হত্যা করে মজা পাবে ও মজা করে খাবে। অবশ্যই পশুর মাংস খাওয়া দরকার তবে সভ্য মানুষ হিসাবে তাকে নিধন করারসভ্য উপায় অবলম্বন জরুরী যাতে এর বিভৎস রূপ প্রকাশ্যে গোচর না হয়। তার পর আবার এ ধরনের হত্যা হলো একটা ধর্মীয় প্রথা। তার মানে মানুষকে বিভৎস ও নির্মম হওয়ার শিক্ষা দেয়ার তালে আছে ধর্ম। কিন্তু মানুষ তো দাবী করে তারা সভ্য। তাই না ? সভ্য মানুষ কেন অসভ্য প্রথার অনুসরন করবে ? সমস্যাটা আসলে দৃষ্টিভঙ্গির ও সভ্যতার।
@পৃথিবী,
বিশাল ডাইনোসাররা (the largest animal in history of evolution) ছিলো তৃণভোজী। সুসাস্থের জন্য মাংশাসী হওয়া জরূরী নয়।
@পৃথিবী,
বিবর্তন ইতিহাসের সবচেয়ে বিশালাকার প্রাণী ‘ডাইনোসার’ রা ছিলো মূলতো তৃণভোজী। সুসাস্থের জন্য মাংশাসি হওয়া জরুরী নয়।
কোরবানী নামের একটা বিভৎস হত্যাযজ্ঞ নিয়ে আলোচনার জন্য ভবঘুরেকে ধন্যবাদ। বৎসরের একটি নির্দিষ্ট দিনে একটি নিরিহ পশুকে টেনে হিচড়ে মাটিতে ফেলে ধারালো ছুড়ি নিয়ে কি নারকীয় উল্লাসে পশুটার উপর ঝাপিয়ে পড়ে ভাবতেই গায়ে কাটা দেয়।
@ব্রাইট স্মাইল্,
এটা হলো নিজের মনের যাবতীয় কালিমা মোচন করার মারেফতি উপায় ভাই। পশুকে এভাবে হত্যা করলে নাকি মনের সব কালিমা পশুর ফিনকি দিয়ে ঝরতে থাকা রক্তের সাথে ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যায়।
@ব্রাইট স্মাইল্, ঠিক।
দুর্দান্ত একটা লেখা।
কোরবানির মত একটা অন্ধযুগের অমানবিক প্রথা যে আমাদের সমাজে শুধু টিকে আছে তাই নয়, উত্তোরত্তর এর শ্রীবৃদ্ধিই ঘটে চলেছে দিনকে দিন। বাংলাদেশে এখন মোটামুটি প্রতিযোগিতা করে নিরীহ পশু হত্যার উৎসব করা হয় কোরবানির নামে। এতে কি উৎসর্গ করা হয়, সেটা যারা উৎসর্গ হিসাবে গরু ছাগলকে চার পা চেপে ধরে গলায় ছুরি চালায় তারাই সবচেয়ে ভাল বলতে পারবে। আমাদের মোটা মাথায় তা ঢোকে না। পশ্চিমা বিশ্বের কোনো লোককে যদি কোরাবনির দিন ঢাকায় ঘুরিয়ে আনা হয়, তবে আমি নিশ্চিত যে সেই লোক পুরোপুরি বদ্ধ উন্মাদে পরিণত হয়ে যাবে আমাদের চরম নৃশংসতা দেখে।
আরজ আলী মাতুব্বরের ‘জীব হত্যায় পুণ্য কি?’ এবং বেনজীন খানের ‘ইসমাইল না ইসহাক উৎসর্গীকৃত কে?’ এই লেখা দুটো পাওয়া যাবে এখানে।
@ফরিদ আহমেদ,
এরকম উৎসর্গ করে তারা নিজেদের মনের সব কলুষতাকে কোরবানী দেয়। মনে হচ্ছে আপনি ইদানিংকার ওয়াজ নসিহত তেমন শোনেন না। 🙁
লেখাটার তারিফ করার জন্য নিজেকে ধন্য মনে করছি। আপনাকেও ধন্যবাদ।
ইসলাম ধর্মের আরেক নৃশংসতার নাম — কোরবানী। আমার ভাবতে লজ্জা হয়, নিরীহ পশু হত্যার এই মহোৎসেবর দিনগুলোতে বাংলাদেশে হিন্দু ধর্মালম্বীরা মুখ লুকিয়ে রাখেন। যদিও সব ধর্মীয় চেতনার ভিত্তিই অবিজ্ঞান। :deadrose:
ভবঘুরেকে অনেক ধন্যবাদ। :rose:
@বিপ্লব রহমান,
আপনাকেও ধন্যবাদ।
কোরবানী মানেই নৃশংসতা শেখার উপায়।
@বিপ্লব রহমান,
ভাই, আপনার লিখার মন্তব্য করার আগে আমার জানা দরকার আপনি মুসলমান না অন্য কিছু?
কারণ যে কায়দার নাম রেখেছেন তাতে বুঝার উপায় নেই যে…………।
যদি মুসলিম হন তা হলে সরা সরি কুরআন অধ্যয়ণ করে ইসলামকে জানুন। কারণ ইসলামের প্রথম ছবক হচ্ছে পড়া-জ্ঞানার্জন করা।
আর যদি ধর্মের বা ভিন্ন জাতের কিছু হোন তবে বলব, অন্য ধর্মের মৌলিক কোন বিষয়ে অহেতুক মন্তব্য করার অধিকার আপনার নেই।
ভবঘুরে,
আপনাকে অনেকে অনেক ধন্যবাদ আরেকটি চমৎকার লিখা উপহার দেওয়ার জন্য। ‘কুরবানীর’ পশুহত্যার বিভৎসতা যারা আমরা এটা ছোটকাল থেকে দেখে আসছি তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বুঝতে না পারলেও যে মানুষ এ দৃ্শ্যের সাথে পরিচিত নয় তারা এর ভয়াবহতায় অসুস্হ হয়ে পরে। বিশেষ করে শিশুদের মনে এর যে কি প্রতিক্রিয়া তা ভুক্তভুগী অনেক প্রবাশীই হয়তো জানেন। তিন বছর আগে যখন আমার ছয় বছরের মেয়েটিকে নিয়ে ১ম বারের মত কুরবানী ঈদে দেশে গিয়েছিলাম অনেক সাবধানতার পরেও কোন এক মুহুর্তে ‘জবাই করা ঝুলুন্ত’ খাশীর চামড়া ছিলার দৃশ্য দেখে সে ভয়ে তার মায়ের কাছে দৌড়ে আসে। সে কাঁদে নি, ভয়ে থর থর কারে কাঁপছিলো। রাতে তার জ্বর। এখনও সেটা তার মনে আছে।
‘Normal blood is sterile’, আর অসুস্থ পশু কুরবানীর উপযুক্ত নয়। তাই রক্তে ‘বিপুল পরিমানে রোগ জীবানু’ থাকে এ তথ্য মিথ্যা। ডাক্তার হিসাবে জাকির নায়েকের এ তথ্য না জানার কোন কারন নাই।
মদীনার আরবরা ছিল হত দরিদ্র, কিন্তু ইহুদীরা ছিলো ধনী।ইহুদীদের যে কোন ভাবে ভিটে মাটি ছাড়া করতে পারলে তাদের সমপত্তির মালিক “Booty” হিসাবে জায়েজ করা যায়। Banu Qaynuqa (April, 624, CE),
Banu Nadir (August, 625 CE), Banu Mustaliq, Banu Qurayza
(April, 627 CE), Khaybar (May, 628 CE) – ইহুদীদের আক্রমনের পর তাদেরকে ভিটে মাটি ছাড়া করে তাদের সম্পত্তি দখলের পর মুসলমানদের আর দরিদ্র থাকতে হয় নি।
৬১০ থেকে জুন, ৬২২ (হিযরত) পর্যন্ত এয় প্রায় তের বছরে মুহম্মাদ শুধু মাত্র ১০০ – ১৫০ জন লোককে তার দলে আনতে পেরেছিলেন। সুতুরাং কুরবানীর মতো কোন প্রথা চালু করা তার পক্ষে সম্ভব ছিলো না।
In the Biography of Prophet Muhammad (SWS) by pious Muslims list 70-100 failed or successful battle (expedition /Raid), undertaken by him, in his last 10 years of residence in Medina (622-632 CE). In his first expedition (Sif Al-Bahar), seven month after Hijra (March, 623 CE), he sent Hamza along with 30 emigrants to intercept the trading caravan of Quraysh. He sent his 2nd and 3rd expedition eight months after hijra with 66 and 60 Emigrants respectively. No Ansar (helper, Muslims in Medina) took part in any of these expeditions. All three were unsuccessful His first successful expedition was in ‘Nakhla’ in January, 624 CE.
(references Tabari, Vol 7, page 1265-1266).
@Golap,
এটাই তো আসল সমস্যা। দশ বছর ধরে ওই সব মুমিন মুসলমানদেরকে নবী কোরবানীর মত একটা পবিত্র সুন্না থেকে বঞ্চিত রেখেছেন। আমার তো মনে হয় এর জন্য মোহাম্মদকে আল্লাহর কাছে জবাব দিহি করতে হবে।
@ভবঘুরে,
চমৎকার বিশ্লেষণ। আপনার সব লেখাগুলোয় মন দিয়ে পড়ি।অনেক সময় মন্তব্য করা হয় না। তবুও আমি আপনার লেখার নিয়মিত পাঠক।
@আফরোজা আলম,
আমার লেখা যে মন দিয়ে পড়েন এতেই আমি নিজেকে কৃতার্থ মনে করছি। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
@ ভবঘুরে,
কোরবানীর আসল উদ্দেশ্য যে কী তা সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন।
লেখাটি পড়ার সময় মোকছেদ আলীর ইদুল আজহা নামে একটি পাণ্ডুলিপির কথা মনে পড়লো। সেই পাণ্ডুলিপিতে কোরবানীর দিনের বর্ণনা রয়েছে। সেখান থেকে একটু অংশ তুলে দিলাম।
….কয়েকজন বলিষ্ঠকায় যুবক, গরুটিকে পায়ে দড়ির ছাদন দিয়া, আরেকজন গরুর মুখ ও শিং বলিষ্ঠ বাহুর দুই হাতে ধরিয়া প্রবল শক্তিতে মোচড় দিল। গরুটি একটা আর্তচিৎকার দিয়া ভূপাতিত হইল। দড়ি দিয়া সামনের পা ও পিছনের পা কষিয়া বাধন দিল। তারপর একজন লেজ ধরিয়া সকলে মিলিয়া গরুটিকে রক্তপড়া গর্তের নিকট পজিশন মত করিয়া শোয়াইল।
ইমাম কলেমা বলিয়া বিছমিল্লাহে আল্লাহু আকবার বলিয়া গরুর হুলকমে সজোরে ছুরি চালাইয়া দিল। চামড়া কাটিয়া জবেহ হইয়া গেল। তীব্র স্রোতে কল কল শব্দে গরুর রক্ত গর্তে পড়িয়া গর্ত ভরিয়া গেল। মৃত্যু যন্ত্রণায় গরুটি গোঙ্গাইতে লাগিল। চার পা ছুড়িয়া দাঁড়াইবার চেষ্টা করিল। কিছুক্ষণ পা ছুঁড়িয়া নিথর হইয়া গেল। খালেছ নিয়তে কোরবানী করিলে আল্লাহর নিকট কবুল হইয়া যায়।
দয়াদ্রচিত্ত এয়াকুব মিঞা, গরু জবেহ দেখিতে পারে না, এজন্য সে গরু জবেহের সময় গৃহকোণে আত্মগোপন করিয়াছিল।
ইমাম বালতিতে রক্ষিত পানি লইয়া রক্তমাখা হাত ও ছুরি ধৌত করিল। বুদু ইমামের হাতে একটি বদনায় করিয়া পানি ঢালিয়া দিল। কে একজন সাবান আনিয়া দিল। সাবান দিয়া ভাল করিয়া হাত ধুইল। আমার ছোট ছেলেটি আমার নিকট দাঁড়াইয়া হাত ধোয়া প্রত্যক্ষ করিতেছে। রক্তের ছিটা গায়ের জামায় পড়িয়াছে, তাহা দেখিয়া আমার ছেলে কহিল, “আব্বা আপনার জামায় রক্ত।” কহিলাম, “বাড়ি গিয়ে সাবান দিয়ে কেচে দিব।”
একজন একটা শুষ্ক গামছা আনিয়া দিল। আমি গামছাতে হাত মুখ মুছিয়া স্বাভাবিক হইলাম। এয়াকুব মিঞা আসিয়া কহিল, “ভাই আমি জীবনে কোনদিন একটা মুরগীর ছাও পর্যন্ত জবেহ করি নাই। আমি কোন জীব হত্যা করতে পারি না। কোন জীব জন্তু জবেহ করাও দেখতে পারি না। কেন জানি না খুব দয়ামায়া লাগে।”
কে একজন বিজ্ঞের মত কহিল, দুনিয়ার সব মানুষ এক মতের হয় না। একেকজন একেক মনোভাবাপন্ন হয়। কেহ জবেহ করিতে আনন্দবোধ করে, কেহ কোন জীবের সামান্য আঘাত সহ্য করিতে পারে না।
আহা, ইয়াকুব মিঞার মত যদি সবাই দয়াদ্রচিত্ত, মমতাময় হইত, তবে দুনিয়ায় যুদ্ধ বিগ্রহ বলিয়া কোন শব্দই থাকিত না। অভিধান এই দুইটি শব্দ বর্জিত হইত! পৃথিবীটা সমস্ত দুনিয়াটা শান্তি নিকেতন হইতো!….
@মাহফুজ,
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। আমিও ভাই অনেকটা আপনার ইয়াকুব মিয়ার মত। একটা মুরগীও জবাই করতে পারি না। আর তাই মাংস খাওয়াই ছেড়ে দিয়েছি।
@মাহফুজ, কুরবানী বা কালীদেবীর সামনে বলিদান সব হল নিষ্ঠুরতার অনুশীলন।