আগের দিনে মানুষেরা বাড়ি থেকে একটু দূরে থাকা পুকুরের অপর পাড়ে রাতের অন্ধকারে হঠাৎ আগুন জ্বলতে দেখে ভাবতো সেটা বুঝি কোনো ভুত-জ্বিন-পরীর কাজ। এরপর মঞ্চে আসলো বিজ্ঞান। বিজ্ঞান এসে আমাদের জানালো মিথেন গ্যাসের কথা। আমাদের মনে থাকা জ্বিন পরীর গল্পকে শিরিষ কাগজ দিয়ে ঘষে সেখানে বসিয়ে দিলো আসল সত্য। এখন আর কেউ পুকুর পাড়ে আগুন জ্বলতে দেখলে ভয় পায়না, তারা জানে এটা সম্পূর্ন প্রাকৃতিক ব্যাপার।
পৃথিবী জুড়ে থাকা অসংখ্য কুসংস্কার বধে সারাজীবন তরবারী উঁচিয়ে দৌড়ে বেড়িয়েছে বিজ্ঞান। বিজ্ঞানের এই গুনের কারণে এই ধারণাটিকে আমরা সবাই ভালো পাই, আশীর্বাদ মনে করি। কিন্তু যেই বিজ্ঞান আমাদের মনের সবচেয়ে বড় কুসংস্কার সম্পর্কে কিছু বলতে যায়, ওমনি শুরু হয়ে যায় আমাদের তাচ্ছিল্য। আমাদের মনের কুসংস্কারটিকে সমূলে উৎপাটিত করে দিবে বিজ্ঞান, আমাদের মৃত্যু পরবর্তী সুখের জীবনকে তছনছ করে বিজ্ঞান, অবচেতন মনের এই ভাবনায় আমরা কখনই বিজ্ঞানের সেই কুসংস্কার নিয়ে কথা বলা মেনে নিতে পারিনা।
ইণ্টারনেটে ধর্ম ও বিজ্ঞান নিয়ে লিখতে গিয়ে এমন মানুষের মুখোমুখি হতে হয় প্রায়ই। অনেকেই বলেন, বিজ্ঞান হলো যুক্তি আর ধর্ম হলো বিশ্বাস। বিজ্ঞান দিয়ে কোনভাবেই ঈশ্বর নামক বিষয়ে কথা বলা যাবেনা। তারা বিজ্ঞান ভালোবাসেন কিন্তু একই সাথে মনে করেন যে, ঈশ্বরের অনস্তিত্ব প্রমানে বিজ্ঞানকে টেনে আনাটা খুবই হাস্যকর। অথচ তারা ভুতে “বিশ্বাসের” মতো বিষয়ে বিজ্ঞানকে টেনে নিয়ে এসে এই বিশ্বাসকে কচুকাটা করাটাকে হাস্যকর মনে করেন না, কোনভাবেই। শুধু ধর্ম বিষয়ে কথা বললেই, হা রে রে রে রে করে উঠেন তারা।
নব্য নাস্তিকদের বিজ্ঞানের তথ্য-উপাত্ত, জ্ঞান দিয়ে ঈশ্বর আলোচনার কড়া সমালোচক খ্রিষ্টান ধর্মবেত্তা ডেভিড মার্শাল। The Truth behind the New Atheism বইয়ে তিনি বলেন,
এই নব্য নাস্তিকরা বাস্তবতার বিভিন্ন দিক একেবারেই বুঝতে পারেনা। প্রথমত, বোকা নাস্তিকদের বিজ্ঞানের সীমারেখা সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণা নেই। দ্বিতীয়ত, তাদের তত্ত্বগুলো অসংখ্য বাস্তবতাকে সরাসরি উপেক্ষা করে। তৃতীয়ত, গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা থেকে তারা সবসময় নিজেদের বিরত রাখে। চতুর্থত, তাদের তত্ত্বকে ভরাডুবির হাত থেকে বাঁচাতে তারা চমৎকার এক ছলনার আশ্রয় নেয়, সেই ছলনা হলো- “মনে করি”(১)।
বিজ্ঞানের সীমারেখা বুঝতে অপারগ একজন বোকা কিংবা চালাক নাস্তিকের নাম উল্লেখ করেননি, মার্শাল। নব্য নাস্তিকদের বই, তাদের বিভিন্ন প্রবন্ধ, ইয়ুটিউবে থাকা শতশত ভিডিও লেকচারে আমি কখনও তাদের বলতে শুনিনি, যে বিজ্ঞানের সীমারেখা অসীম। অদ্ভুত ব্যাপার হলো, এদের লেখা বইগুলোতেই বরঞ্চ সংগীত, ছবি, কবিতা, নারীপুরুষের ভালোবাসার সম্পর্ক সহ আরও অসংখ্য প্রকৃতিপ্রদত্ত অ-বৈজ্ঞানিক বিষয় নিয়ে চমৎকার মনমুগ্ধকর আলোচনা পড়ার সৌভাগ্য হয়েছে আমার (২)। আমি নিজেও গান ভালোবাসি, ভালোবাসি ছবিতা, কবিতা, ভালোবাসি ভালোবাসতে, ভালবাসা পেতে। কিন্তু একই সাথে অন্যান্য অনেকের মতো মনে করিনা যে, এই অবৈজ্ঞানিক বিষয়গুলো বিজ্ঞানের সাহায্য ছাড়া চমৎকারভাবে উপভোগ করা সম্ভব। গানের ফিজিক্স বোঝার মাধ্যমে আমরা একে আরও ভালোভাবে উপভোগ, উপস্থাপন করার সুক্ষ্মতা উদ্ভাবন করেছি, আমরা আবিষ্কার করেছি নানা যন্ত্রপাতি। রেকর্ডিং করার উপায় আবিষ্কারের মাধ্যমে আমরা সবরকম পরিস্থিতিতে গানকে নিজেদের সাথে রাখার উপায় পেয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হবার পর খেলা ধূলার অভাবে মুটিয়ে যাওয়া শরীরকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য চিন্তা করেছিলাম সকাল বেলা নিয়মিত দৌড়ানোর। কিন্তু কোনভাবেই মনে জোশ আনতে পারছিলাম না। তারপর সিংগাপুর ফেরত বড় ভাইকে দিয়ে সনির চমৎকার এক হেডফোন নিয়ে আসলাম, এখন আমি দৌড়াই আর সাথে আমার মাথায় দৌড়ায় প্রিয় ব্যান্ড বিটলস। বিজ্ঞান দিয়ে আমরা খুব সহজের এখন ছবি চোরদের চিহ্নিত করতে পারি। বিজ্ঞানের কারণে আমরা নিজেরাও এখন ছবি তুলে/ এঁকে সেগুলো ফ্লিকারে আপলোড করার মাধ্যমে সবার সাথে শেয়ার করতে পারি। দুনিয়ার প্রায় সকল কবিতা, গল্প খুব কিছুদিনের মধ্যেই চলে আসবে ইন্টারনেটে। স্টিফেন হকিং এর নতুন বই পড়ার জন্য মানুষের এখন আর বছর খানেক অপেক্ষা করতে হয়না, তারা আমাজনে চট করে অর্ডার দিয়ে পরের দিন হাতের কাছে পেয়ে যায়। (বাংলাদেশের অতীব বুদ্ধিমান সরকারের কারণে এখনও আমাদের হয়, হয়তো খুব বেশিদিন নেই, যেদিন আমরাও…)
মার্শাল তার তৃতীয় ও চতুর্থ পয়েণ্ট, বাস্তবতাকে পাশ কাটানো, এবং “মনে করি” ব্যাপারটাকে কটাক্ষ করে কি বোঝাতে চেয়েছেন সে ব্যাপারে বিন্দুমাত্র ধারণা আমার নেই, একটা উদাহরণ পাইনি তার বইয়ে বিষয় দু’টি নিয়ে।
বুদ্ধিদীপ্ত ডিজাইন (Intelligent Design) নামক ছদ্মবিজ্ঞানের এক মুখোপাত্র ডেভিড বারলিনস্কি (David Berlinski) বিজ্ঞানীকদের চরিত্র নিয়ে গবেষনার পর প্রবন্ধে লিখেন, অধিকাংশ বিজ্ঞানিরা গোঁয়ার, অন্তসারশূন্য, রাজনীতিতে অপরিপক্ক, অলস এবং অহংকারী (৩) । রেফারেন্স ছাড়াই বেশ কিছু বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধের লাইন তুলে ধরে তিনি বলেন, বিজ্ঞানীরা সবকিছু বিশ্বাস করতে প্রস্তুত (৪) । অবশ্যই বিজ্ঞানীরা যে কোন কিছু বিশ্বাস করতে প্রস্তুত যদি সেটা বিশ্বাস করার মতো পর্যাপ্ত প্রমান থাকে। হ্যাঁ! মাঝে মাঝেই বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক ধারণা পড়ে আমাদের সেটা অর্থহীন, অসম্ভব বলে মনে হয়, কিন্তু সেটার দোষ তো বিজ্ঞানীদের না। ব্যাপারগুলো আমাদের দৃষ্টিভংগিতে অর্থহীন বলে মনে হলেও বাস্তবে তা নয়। কারণ প্রতিটি বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার সম্পন্ন হয় বস্তুনিষ্ঠ নৈর্ব্যক্তিক পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে। প্রতিটি আবিষ্কার বা বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব আরও অসংখ্য তত্ত্বের সমন্বয়ে গঠিত হয়। প্রতিটি বৈজ্ঞানিক ধারণা যিনি আবিষ্কার করেছেন শুধু তার জন্য সত্য না, বরঞ্চ সেটা পৃথিবীর যে কোন ল্যাবরেটরিতে, যে কোন মানুষ দ্বারা স্বাধীনভাবে পরীক্ষা যোগ্য।
গ্রুপ মেইলে হঠাৎ করেই একবার ধর্ম- নির্ধর্ম আলোচনায় আমার এক সহপাঠী বিশাল এক মেইল করে বসলো। আস্তিকতা- নাস্তিকতা বিষয়ে অনেক বই সে পড়েছে, এই দাবীসম্বলিত বিশাল মেইলে নাস্তিকদের উদ্দেশ্য করে বলা কথাটির সারমর্মঃ ঈশ্বরের মতো একজন যিনি স্থান, কালের উর্দ্ধে তার অস্তিত্ব মাপার জন্য দুনিয়াবী পরিমাপ, ওজন, গনিত ব্যবহারের মতো হাস্যকর কিছুই আর হতে পারেনা। নাস্তিকতার বিপক্ষে প্রচলিত এই কথাটি অযৌক্তিক হলেও অসংখ্য বিজ্ঞানী দুঃখজনকভাবে এটি সমর্থন করে থাকেন। ধর্মবেত্তা দিনেশ ডি’ সুজা জীব বিজ্ঞানী ডগলাস এরউইনকে উদ্ধৃত করে বলেন, বিজ্ঞানের অন্যতম একটি নিয়ম বা ধারা হচ্ছে, সকল ধরণের মিরাকলের অস্তিত্ব অস্বীকার করা (৫)। তার মানে কি এই দাঁড়ালো যে, সত্যিকার অর্থেই ব্যাখ্যাতীত মিরাকলের সন্ধান পাওয়া গেলে বিজ্ঞান সেটা অস্বীকার করবে?
দিনেজ সু’জা জীববিজ্ঞানী ব্যারি পালেভিটয কে উদ্ধৃত করে আরও বলেন, “প্রাকৃতিক মহাবিশ্বকে জানান জন্য অতিপ্রাকৃত ব্যাখ্যা এমনিতেই বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। (৬)” এখন যদি অতিপ্রাকৃত কোন ব্যাখ্যা চমৎকারভাবে কাজ করতে থাকে তখন সেটাও কি বাদ দিয়ে দেওয়া হবে?
শুধু তাই নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্স বিজ্ঞান এবং অতিপ্রাকৃত ঘটনা সম্বন্ধে একই ধরণের অযৌক্তিক ধারণা পোষণ করেঃ “প্রাকৃতিক মহাবিশ্বকে জানার জন্য বিজ্ঞান ব্যবহার করা হয়। প্রাকৃতিক কারণের আলোকে প্রাকৃতিক মহাবিশ্ব ব্যাখ্যা করা পর্যন্তই বিজ্ঞানের সীমারেখা। অতিপ্রাকৃত ব্যাপার নিয়ে বিজ্ঞানের বলার কিছু নেই। সুতরাং ঈশ্বর আছে কি নেই, এমন প্রশ্ন বিজ্ঞানে অবান্তর, যতক্ষণ পর্যন্ত এটি নিরপেক্ষ’ (৭) । ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সের সদস্যদের মধ্যে মাত্র সাত শতাংশ ঈশ্বরে বিশ্বাসী, সুতরাং বাকিরা হয় নাস্তিক কিংবা অজ্ঞেয়বাদী, এবং এদের কারোরই অধিকাংশ ধার্মিক আমেরিকানদের সাথে দার্শনিক ধর্মযুদ্ধে লিপ্ত হবার বাসনা নেই।
বিখ্যাত প্রত্নতাত্ত্বিক (এবং নাস্তিক) স্টিফেন জে গুল্ড তার শেষ বইয়ে ধর্ম ও বিজ্ঞানের মধ্যে একটি সমঝোতা আনার চেষ্টা করেছেন। বিজ্ঞান ও ধর্মকে তিনি চিহ্নিত করেছেন দুইটি “non-overlapping magisteria (NOMA)” হিসেবে, যেখানে বিজ্ঞান কাজ করে প্রাকৃতিক মহাবিশ্বকে বুঝতে, আর ধর্ম নৈতিকতা বজায় রাখতে (৮) ।
অসংখ্য সমালোচক গুল্ডের বক্তব্য পর্যালোচনা করে বলেছেন, তিনি ধর্মকে নৈতিকতার দর্শন হিসেবে সংজ্ঞায়িত করছেন। যদিও বাস্তবতায় আমরা দেখতে পাই, কেবল মাত্র নৈতিকতার দর্শনেই ধর্মের কর্মকান্ড সীমাবদ্ধ নয়। ধর্ম প্রাকৃতিক মহাবিশ্ব সম্বন্ধেও নানা ধরণের মতামত প্রদান করে। ধর্ম মতামত করে জীবনের উৎপত্তি নিয়ে, মতামত প্রদান করে মহাবিশ্বের সূচনা নিয়ে- যেই দাবীগুলো সত্যতা বৈজ্ঞানিক পক্রিয়ায় জানা সম্ভব।
এবার আসা যাক নৈতিকতা প্রসংগে। মানব সভ্যতার পথপরিক্রমায় ধর্ম এই একটি ক্ষেত্রেও যে খুব অবদান রেখেছে বা রেখে চলছে তাও নয়। এটি সমর্থন করেছে দাস প্রথা, সমর্থন করেছে রাজার একচ্ছত্র অধিকার, সমর্থন করেছে মৃত্যুদণ্ড, অংগচ্ছেদন, হরণ করেছে নারীর স্বাধীনতা। ইরান সহ আরও কিছু মুসলিম দেশে এখনও ইসলামী শরীয়া অনুযায়ী মেয়েদের পাথর ছুড়ে হত্যা করা হয়। নানা সময়ে নানা জায়হায় ধর্ম ওষুধ গ্রহন করতে বাধা দিয়েছে, বাধা দিয়েছে জন্মনিয়ন্ত্রক বড়ি ব্যবহারের। সর্বাধিক এইডস আক্রান্ত আফ্রিকায় এইডসের সংক্রামক থেকে নিজেকে রক্ষা করার অন্যতম উপায় যৌনমিলনের আগে কনডম ব্যবহার, সেটাকেও বাধা দিয়েছে চার্চ।
মানুষকে মিথ্যা বলা থেকে বিরত রাখা, সৎ রাখা কিংবা খুনাখুনি থেকে বিরত রাখার জন্য উপরওয়ালার ভয়ের প্রয়োজনীয়তা কতোটুকু সেটাও ভাববার বিষয়। বইয়ের একটি অধ্যায়ে এই ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা আমরা করবো। কিন্তু বাস্তবতা হলো, সাধারণ নৈতিক ব্যাপারগুলো (সত্য কথা বলা, সৎ থাকা, হত্যা না করা) বড় বড় ধর্ম শুরু হবার বহু আগে থেকেই মানব সমাজে প্রচলিত ছিলো। সুতরাং ধর্মের যদি কোন উপকারীতা থেকেও থাকে, সেগুলো ধর্ম ছাড়াও সমানভাবে থাকবে (৯) ।
ন্যাশনাল একাডেমি এবং এর সদস্যরা যারা মনে করে থাকেন, বিজ্ঞানের ঈশ্বর সম্পর্কে বলার কিছু নেই, তারা আসলে চোখের সামনে থাকা বাস্তবতাকে উপেক্ষা করছেন। হার্ভাড ইউনিভার্সিটি, ডিউক ইউনিভার্সিটি এবং মেয়ো ক্লিনিকের মতো পৃথিবী বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীরা প্রার্থনার কোনো উপকারীতা আছে কিনা তা নিয়ে গবেষণা করছেন (১০)। এখন এই গবেষণাগুলোতে প্রাপ্ত ফলাফল যদি ধনাত্মক হয় এবং এগুলো যদি বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ধরণের মানুষের উপর একই ধরণের ফলাফল প্রদান করে তাহলে আমরা নব্য নাস্তিকরা অবশ্যই ঈশ্বর বলে একজন থাকতে পারে, এমন ধারণা করে আরও গবেষণায় আগ্রহী হবো।
হ্যাঁ! উপরের গবেষণাগুলোয় প্রার্থনা কাজ করে এমন কোন প্রমান পাওয়া যায়নি। তবে সেটা ব্যাপার না, ব্যাপার হলো পাওয়া যেতে পারতো। তখন ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সের সদস্যদের মতামত কি হতো? আমরা কি সেই গবেষনা বাতিল ঘোষণা করতাম? করতাম না। ঈশ্বরের মতো একজন, যিনি মানুষের প্রার্থনা শুনেন এবং সেটা কবুল করেন তাকে অবশ্যই বৈজ্ঞানিক ভাবে পরীক্ষা করা সম্ভব। কারণ প্রার্থনা কবুলের ফলাফল অনেকসময় পৃথিবীতেই পাওয়া যায়। পৃথিবীতে যখন পাওয়া যায় তখন সেটা বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার জন্য উন্মুক্ত হয়ে পড়ে।
তবে ধর্মবেত্তা এবং হুজুরের এখন অতিপ্রাকৃত বিষয় পরীক্ষায় বিজ্ঞানকে যতই তাচ্ছিল্য করে থাকুক না কেন, আজকে যদি প্রার্থনার উপকারীতা বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় প্রমানিত হতো তাহলে আমরা অসংখ্য টিভি- চ্যানেল, পত্র- পত্রিকায় বড় করে খবর দেখতাম, “মাওলানা অমুক আল্লাহর অস্তিত্বের প্রমানকে স্বাগত জানিয়েছেন!”
বিজ্ঞানও কি বিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত?
অনেকেই বলে থাকেন, বাস্তব জীবনের সকল ঘটনা যৌক্তিকভাবে ব্যাখ্যা করা সম্ভব, এমন একটি অন্ধবিশ্বাস লালন করে থাকে নাস্তিকরা, বিশেষ করে নব্য নাস্তিকরা (১১)। চারপাশকে তবে কি হিসেবে মনে করা উচিত? অযৌক্তিক? আসলে জগৎ যৌক্তিক কিংবা অযৌক্তিক কিছুই না। যৌক্তিক কিংবা অযৌক্তিক হলো মানুষের মন, মানুষ। আমরা যখন কোনো বিষয়ের উপর নিজের মতামত প্রকাশ করবো তখন আমাদের চয়ন করা শব্দগুলো হতে হবে অর্থবোধক, আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের পথ হতে হবে যৌক্তিক। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একটি পদার্থ বিজ্ঞান সেমিনারের কথা। সেমিনারের মূল বিষয় মহাবিশ্বের সূচনা। পৃথিবীর সেরা পদার্থবিজ্ঞানীরা এ বিষয়ে নিজেদের গবেষণা, গবেষণার ফলাফল তুলে ধরছেন। তাদের প্রতিটি গবেষণা পদার্থবিজ্ঞানের অন্যান্য সূত্রকে আমলে নিয়ে হয়েছে, অর্থাৎ সেগুলো বর্তমান বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের সাথে ধারাবাহিক। এমন সময় মিস্টার যদু মঞ্চে উঠে বললেন, মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে ক্রিমিয়াম নামক এক এলিয়েনের কারণে। এক ছুটির দিনে ঘরে বসে বিয়ার তৈরীর সময় হঠাৎ সেখানে বিস্ফোরণ হয়, আর এই বিস্ফোরণই আসলে তথাকথিত “বিগব্যাংগ”- যার মধ্য দিয়ে সৃষ্টি হয়েছে আমাদের এই মহাবিশ্বের।
সঠিক উত্তর পাবার জন্য কোন পক্রিয়াটি সঠিক বলে আপনার মনে হয়?
বিখ্যাত লেখক পল ডেভিস ২০০৭ সাথে ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’ এ লেখা একটি প্রবন্ধে বিজ্ঞানকে আখ্যায়িত করেন ধর্মের মতো নতুন একধরণের বিশ্বাস ব্যবস্থা হিসেবে। ব্যাপারটি ব্যাখ্যা করতে যেয়ে তিনি বলেন, “প্রকৃতি যৌক্তিক এমন একটি বিশ্বাসকে পুঁজি করে বিজ্ঞান এগিয়ে চলে” (১২)। তিনি আরও বলেন, “যদি ঈশ্বর থেকেই থাকে সেক্ষেত্রে বিজ্ঞানের বাস্তবতা পর্যবেক্ষণ করে পাওয়া সিদ্ধান্ত নয় বরঞ্চ ব্যক্তিগত আধাত্ম্যিক অভিজ্ঞতাই পারবে তা জানতে। (১৩)”
কেন? বিজ্ঞান পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে কাজ করে। ব্যক্তিগত আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা যাই হোক না কেন, সেটা পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব। আর যখনই কিছু পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হবে তখনই বিজ্ঞান সেটি নিয়ে কাজ করতে সক্ষম। বাংলাদেশেই আমরা অনেক আধ্যাত্মিক ক্ষমতা সমৃদ্ধ পীর ফকিরের কথা শোনা যায়, যারা ফুঁ দিয়ে মানুষের রোগ নিরাময় করে দিতে পারেন। এখন ফুঁ দেওয়াটা পীর ফকিরের আধ্যাত্মিক ক্ষমতা কিন্তু আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতার ফলে রোগীর রোগ নিরাময় তো আমরা নিজের চোখে দেখতে পারি। সুতরাং বিজ্ঞান দিয়ে আমরা জানতেও পারবো, আসলেই রোগ সারে কিনা। আমি তার সামনে একশজন রোগী নিয়ে বসাবো, তিনি ফুঁ দিবেন, তারপর আমরা পরীক্ষা করে দেখবো আসলেই একশ জনের রোগ ভালো হয়ে গিয়েছে কিনা।
এছাড়াও ভিক্টর স্টেংগর তার নিউ এইথিসজম বইয়ে প্রচুর সংখ্যক ব্যক্তিগত ধর্মীয় অভিজ্ঞতার উদাহরণ দিয়ে দেখিয়েছেন, কিভাবে সেগুলোও বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার আওতাধীন।
ধর্মবেত্তা জন হট বলেন, বিবর্তন মানুষের অনুভব করার ক্ষমতাকে ব্যাখ্যা করতে পারেনাঃ “আমাদের বাস্তবতার বিভিন্ন বিষয় অনুভবের যে ক্ষমতা দেখলে বোঝা যায় বিবর্তন ছাড়াও অন্য এক শক্তি আমাদের উপর কাজ করেছে যার ফলে আমরা চিন্তা করতে পারি, যার ফলে আমাদের মন অন্য সবার থেকে আলাদা” (১৪) ।
তার এই কথা সম্পূর্ন ব্যক্তিগত মতামত। এই ধরণের মতামতকে সাবেক অক্সফোর্ড অধ্যাপক রিচার্ড ডকিন্স “অজ্ঞতাপ্রসূত কথা” বলে অভিহিত করেন। বিবর্তনের ফলে বিভিন্ন মানসিক ক্ষমতার উদ্ভব কিভাবে হয়েছে সেটা হট জানেন না মানে এই না যে, কোন অতিপ্রাকৃত শক্তি তা করেছে। আর বিবর্তন ব্যাখ্যা করতে পারবেন না কেন? এই বিষয়ে ইতিমধ্যেই উল্লেখযোগ্য পরিমান কাজ হয়েছে এবং এমন কোন বিপরীত যুক্তি পাওয়া যায়নি যার ফলে আমরা বলতে পারবো এই চিন্তা-ভাবনা করা, অভিজ্ঞতা থেকে জ্ঞান আহরণ, অনুভব করার মতো বিষয় বিবর্তন ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়।
আমরা কি আমাদের মনকে বিশ্বাস করতে পারি?
ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়ে সন্দেহ জেগেছে? চারপাশে তাকাও তারপর চিন্তা করো গভীর ভাবে। তাহলেই তাকে উপলব্দি করতে পারবে, দূর হয়ে যাবে সকল সংশয়- এমন কথা হরহামেশাই শুনতে পাই আমরা। সত্যের সন্ধান পাবার জন্য মনের উপর শতভাগ আস্থা জ্ঞাপনের আবেদন জানান মসজিদের ঈমান থেকে শুরু করে, ইসলামিক টেলিভিশনের আলোচক, চার্চের ফাদার সবাই।
“মনকে কেন আমরা বিশ্বাস করবো তার সবচেয়ে ভালো উত্তর দিতে সক্ষম ধর্ম। আমরা মনকে বিশ্বাস করবো এই কারণে যে, বস্তুবাদী জ্ঞান, যুক্তি এসব কিছুর ছাড়িয়ে আমাদের মন এক মহাশক্তিধরের গুণাবলী সত্য, সুন্দর দ্বারা আবদ্ধ”
হিটলার বিশ্বাস করেছিলেন তার মনকে, যে মন তাকে বলেছিলো জার্মান জাতির গৌরব ফিরিয়ে আনার জন্য সকল ইহুদীকে হত্যা করতে হবে। গোলাম আযম থেকে শুরু করে আজকের খ্যাতনামা ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা আবুল কালাম আজাদরা বিশ্বাস করেছিলেন “সকল মুসলমান ভাই ভাই তত্ত্বে”। তাদের মন বলেছিলো পাকিস্তান রক্ষার করতে হবে। বলেছিলো পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ইসলামী রাষ্ট্র সমুন্নত রাখতে গেলে হাত একটু ময়লা করতেই হবে। তাই ধর্মের দোহাই দিয়ে নিজের ভাইকে হত্যা করেছিলো তারা বিনা দ্বিধায়, নিজের বোনকে ধর্ষণ করেছিলো বিনা গ্লানিতে।
নব্য নাস্তিকরা অন্যের মন তো দূরের কথা, নিজের মনকেও বিশ্বাস করেনা। এই কারণেই আমরা বিজ্ঞানের দারস্থ, দারস্থ যুক্তির। অন্যদিকে আমাদের ধার্মিকরা সিদ্ধান্তে পৌঁছান কেমন করে? মনে মনে চিন্তা করে। অবশ্য বেশিরভাগ সময়ই সেই চিন্তা অক্ষরে অক্ষরে ধর্মগ্রন্থকে অনুসরনের মাধ্যমে হয়না। হলে খ্রিস্টানরা দেখতে পারতেন, নিজের সন্তান কথা না শুনলে তাকে পাথর ছুঁড়ে হত্যার হুমুক, দেখতে পেতেন, জোসেফ স্মিথকে ঈশ্বর হুমুক করছে, একজন মানুষ যতজন ইচ্ছা স্ত্রী গ্রহণ করতে পারে। বিল মার তার মকুমেন্টারি রিলেজুলাস এ চমৎকার ভাবে ব্যাপারটি বলেছিলেন। মানুষ প্রথমে নিজ স্বার্থ চরিতার্থের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, তারপর যায় ধর্ম গ্রন্থের কাছে। সেখান থেকে তার সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে এমন আয়াত খুঁজে বের করে তারপর কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এ কারণেই জঙ্গীরা নিরীহ জনগন হত্যাকে কুরআনের আয়াত দিয়ে সঠিক কাজ হিসেবে, ঈশ্বরের কাজ হিসেবে প্রচার করে। এ কারণেই ইরানের আয়াতুল্লাহ গোষ্ঠী মেয়েদের পাথর ছুড়ে জীবন্ত হত্যা করে।
বিশ্বাসের সবচেয়ে ভয়ংকর দিকে এটাই। চেক এণ্ড ব্যালেন্সের কোনও উপায় নেই। আয়াতউল্লাহ মেয়েদের হত্যা করতে চেয়েছেন পাথর ছুঁড়ে তারপর সবাইকে দেখিয়েছেন কুরআনের আয়াত। ধর্মবিশ্বাসীরা সেই আয়াতকে অস্বীকার করতে পারবেনা, পারেনি, তাই আজকে ইরানে স্বতস্ফুর্ত ভাবেই হয় এই ঘৃণ্য মানবতা বিরোধী কাজ।
ধর্ম গ্রন্থে অন্ধ বিশ্বাসের ফলে, নিজের মনে আসা ব্যাখ্যাকে ঈশ্বরের কথা বিবেচনা করার ফলে কোটি কোটি মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে, অসংখ্য সভ্যতাকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়েছে, অসংখ্য নারীকে নির্যাতনের মুখোমুখী হতে হয়েছে।
শেষ পর্ব থাকবেঃ বিজ্ঞান ও ধর্ম কি সাংঘর্ষিক?, বিজ্ঞান ও ধর্মের সাম্যবস্থা বজায় রাখা কি আদৌ সম্ভব?, আইনস্টাইনের ধর্ম, বিজ্ঞান কি ঈশ্বরের অনস্তিত্ব প্রমান করতে সক্ষম?
এ লেখাটা মূলত লিখেছি স্টেংগরের নিউ এইথিসজম বইয়ের সোর্ড অফ দ্য সায়েন্স চ্যাপ্টারের সাদৃশ্যে। লেখার মূল গঠনে স্টেংগরকে অনুসরণ করলেও ভেতরটা আমাদের পরিস্থিতি অনুযায়ী লেখার চেষ্টা করেছি। সকল তথ্যসূত্র আগামী অর্থাৎ শেষ পর্বে দেবো।
খুব ভালো হয়েছে আপনার লেখাটা। কালকেও সামুতে একটা লেখা দেখলাম বিজ্ঞান দিয়ে ধর্মের যৌক্তিকতা বিচার না করবার জন্য। সে হিসাবে লেখাটা খুবই প্রয়োজনীয় এবং সময়োচিত। :yes:
উচ্চারণটা আসলে ‘মেয়ো’ ক্লিনিক। আশা করি এই ছোট্ট ভুলটি নিয়ে কথা বলার জন্য কিছু মনে করবেন না।
@হোরাস,
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। আপনার লেখা/ মন্তব্য ফলো করি অনেকদিন ধরেই, আজকে প্রথম ইন্টারেকশন হয়ে ভালো লাগলো।
আর, মনে করার কি আছে। আমি প্রতিবর্ণীকরণে বেশ দূর্বল, এমন অসংগতি পেলে ধরিয়ে দিলে কৃতজ্ঞ থাকবো বৈকি!
রায়হান, খুবই চমৎকার একটা বিষয়। তবে লেখাটার স্টাইল নিয়ে একটু মন্তব্য করি। কিছু জায়গায় ‘আমি’টা মনে হয়েছে ভিক্টর স্টেঙ্গর আর কিছু জায়গায় মনে হয়েছে সেই ‘আমি’টা তুমি নিজে। কেমন যেন খটকা লাগলো পড়তে। লেখাটার একটা প্রিন্ট আউট নিয়ে ভিক্টর স্টেঙ্গরের বইএর সান্নিধ্য থেকে অনেক দূরে কোথাও চলে গিয়ে পড়লেই ব্যাপারটা মনে হয় বুঝতে পারবে। বেশ কিছু জায়গায় ব্লগীয় ভাষা দেখলাম, (বেশ কিছু টাইপোও আছে) আশা করি বইটাতে সেগুলো থাকবে না, আর তাছারা বইএ কি বলে দিবে যে লেখাটা স্টেঙ্গরের লেখার ভাবার্থ বা সাদৃশ্যে লেখা?
@বন্যাপা,
আপনার কথাটা সঠিক। আমি বিষয়টা যথাসম্ভব এড়ানোর চেষ্টা করছি- কিন্তু বোধহয় আরও এফোর্ট দিতে হবে।
সমস্যা যেখানে বাধে সেটা হলো, স্টেংগর নিজেকে বিজ্ঞানী হিসেবে কথাবার্তা বলেন, কিন্তু আমি সেটা বলতে পারিনা। এই কারণে একটু কনফ্লিক্ট হচ্ছে। তবে ঠিক করার চেষ্টা থাকবে শেষ পর্বে, আর এই পর্বটাও কাটছাট করবো।
বইয়ে কি করবো, ঠিক বুঝতেছিনা!!
রায়হান,
লেখা কিন্তু খুবই ভাল হয়েছে। আর লেখাটা খুব গুরুত্বপূর্ণও। সহজ সরল ভাষায় লেখা চমৎকার প্রবন্ধ। স্বাভাবিক কারণেই লেখাটি নিয়ে সবাই প্রশংসা করছে। আমি না হয় একটু উলটো স্রোতে দাঁড় বাই – কিছুটা নিন্দা করি বরং। আফটার অল লেখাগুলো যদি বই হয়ে উঠে তবে তার আগে কিছু ক্রিটিকাল রিভিউ হওয়া জরুরী। আশা করি রায়হান কিছু মনে করবে না।
এই উক্তিটি দিয়ে শুরু করি –
তরবারী উঁচিয়ে দৌড়ে বেড়িয়েছে – এই বাক্যটি পড়লে মনে হয় মুহম্মদ বা পরশুরামের মত তরোয়াল বা কুড়াল হাতে বিজ্ঞান দৌঁড়ে বেরাচ্ছে। এটাকে আরেকটু শিরিষ কাগজ দিয়ে ঘষা দরকার। এমন কি বলা যায় – ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় – মানুষের মনে জমে থাকে থাকা অসংখ্য কুসংস্কারের কালো নিকষ আঁধার দূর করে আশার প্রদীপ জ্বালিয়েছে বিজ্ঞান।
২য় পয়েন্ট হল – ‘এই ধারণাটিকে আমরা সবাই ভালো পাই’ এই বাক্যটি ব্যাকরণগতভাবে অশুদ্ধ। – এই অশুদ্ধ ব্লগীয় ভাষায় বই লিখলে সাহিত্য অনুরাগীরা তেড়ে আসবে। 😀
এখানে আমাদের মনের ‘প্রকৃত’ কুসংস্কারটিকে লিখতে পারো।
ভিক্টর স্টেঙ্গর যেভাবে লিখেছেন সেটা ঠিক আছে, কিন্তু তোমার বই তো বাঙ্গালী পাঠকদের টার্গেট করে। কাজেই মার্শালের বদলে শমশের আলী, জাকিরা নায়েক বা এমন কারো প্রাসঙ্গিক উক্তি ব্যবহার করতে পার। আর ডেভিড মার্শালের উদ্ধৃতি ব্যবহার করলে উনার পরিচয় আরো বিস্ততিতভাবে বলা প্রয়োজন। যাদের জন্য তুমি বই লিখছ তাদের কেউই মার্শালকে চেনে না, কিন্তু জাকিরা নায়েক ইয়াহিয়াদের এক নামে চেনে। ফলে স্টেঙ্গর যেই উদাহরণ ব্যবহার করেছেন সেটা তুমিও একইভাবে ব্যবহার করলে একটা ‘সাংস্কৃতিক গ্যাপ’ তৈরি হয়।বই লেখার সময় এই ব্যপারটা মাথায় রাখতে হবে। খালি ‘বিদিশি’ নাম দেইখাই মইজা যাইও না।
এর পরের অংশে তোমার হেড ফোনে গান শুনে দৌড়ানো, স্টিফেন হকিং এর বইয়ের ব্যাপারগুলা জোশ হইসে। কিন্তু এই ধরনের উদাহরণগুলা পুরো প্রবন্ধ জুড়েই থাকা চাই। কারণ এগুলো মানুষকে কানেক্ট করতে পারে, তমার ফিল্ডমার্শাল সাহেব না। একই ব্যাপার ডিনেশ সুজার জন্যও প্রযোজ্য।
এই অংশটার একটা রেফারেন্স দিতে পার। রেফারেন্স পাবে এখানে।
খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ভারতে সতীদাহের কথা, ডাইনী পোড়ানোর কথা এগুলোও আনতে পার প্রাসঙ্গিকভাবে। আর, যৌনমিলনের আগে কনডম ব্যবহার, সেটাকেও বাধা দিয়েছে চার্চ – এই বাক্যটিতে সেটাকেও বাধা দিয়েছে চার্চ না বলে সেটাকেও একসময় বাধা দিয়েছে চার্চ বলতে পারো।
বাংলাদেশেই আমরা অনেক আধ্যাত্মিক ক্ষমতা সমৃদ্ধ পীর ফকিরের কথা শোনা যায়, যারা ফুঁ দিয়ে মানুষের রোগ নিরাময় করে দিতে পারেন।
তুমি যেভাবে বলেছ – খুব আক্ষরিক হয়ে গেছে।
ব্যাপারটা একটু ঘুরিয়ে বলতে পার। বলতে পার, ধর্মগ্রন্থে লেখা থাকলেও বহু ধার্মিকই ধর্মগ্রন্থের নৃশংসতা গুলোকে অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলেন না। করলে মুসলিম তথা মহুম্মদের অনুসারীরা ইহুদী নাসারাদের যেখানে দেখতো সেখানেই হত্যা করতো, খ্রিষ্টানরা নিজের সন্তান কথা না শুনলে তাকে পাথর ছুঁড়ে হত্যার হুকুম দিত,কিংবা যতজন ইচ্ছা স্ত্রী রাখতে পারতো (জোসেফ স্মিথকে ঈশ্বর হুমুক করছে, একজন মানুষ যতজন ইচ্ছা স্ত্রী গ্রহণ করতে পারে), কিংবা হিন্দুরা এখনো মুসলমানের ছোঁয়া লাগলে গঙ্গাজল দিয়ে স্নান করার জন্য দৌড় লাগাতো ইত্যাদি।
আর বাকি সমালোচনাগুলো অন্যরা করেছে। সেটা দেখো। শুধু দেখলে হবে না, সেই অনুযায়ী তোমার লেখাটাকে বদল করতে হবে, নাইলে বেইল নাই। 🙂
@অভিজিৎ,
নীচ থেকে শুরু করি। বদল অবশ্যই করবো। শেষ অংশটা লিখা শেষ করেই, তারপর পুরোটা নিয়ে বসবো। এটা প্রথমদিকের চ্যাপ্টার, এইটা ভালো না হলে পাঠক আর ভেতরে ঢুকবেনা।
ইংরেজি নাম যথাসম্ভব এড়ানোর চেষ্টা করছি। স্টেংগর আরও লাখ লাখ উদ্ধৃতি দিয়েছেন, এর মধ্যে আমি আনছি দুই তিনজন। এর একটা কারণ হতে পারে, বাংলা রেফারেন্স খুব কম। আমার কাছে শমসের আলীদের কিছু বই আছে, কুরআন ও বিজ্ঞান, বিজ্ঞান না কুরআন এইটাইপ। তবে সেগুলো সব পাতায় গৎ বাধা একই লেখা, আমি যতপড়ি তত ঘুম পায়, তারপরও কিছু জোগাড় করছি। কারণ আমিও বুঝতেছি, ইংরেজি নামের প্রকোপ পাঠকের মেজাজ খ্রাপ এর কারণ হবে। আর সাংস্কৃতিক গ্যাপের কথাটাও সঠিক- খেয়াল করে দেখবেন, যথা সম্ভব চেষ্টা করেছি সেগুলো এড়ানোর। আরও ভালোভাবে লিখতে হবে।
কালকে তানভীর ভাইয়ের সাথেও আলাপ হলো এই বিষয়ে। সবাই যে এতো আন্তরিক ভাবে লেখা নিয়ে মন্তব্য করছেন, তাতে আমি মুগদ্ধ। আমার আর একদিনের লেখা বাকি। তারপর আমি সব ঠিক করতে বসবো।
চমৎকার বলছেন!
একদম অসাধারণ !!
পরের পর্বের অপেক্ষায়।
একজন বিতর্কে আমাকে বলেছিল- ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণের ক্ষমতা বিজ্ঞান এখনো অর্জন করে নাই! আমি শুনে অনেক ক্ষণ হাসছিলাম। আগেই নিশ্চিত যে ঈশ্বরের অস্তিত্বের ব্যাপারে সে আর প্রমাণ দিয়ে করবে কি?
@সৈকত চৌধুরী,
😀
ভাল লাগল।
@রৌরব,
ধন্যবাদ।
দুর্দান্ত! আরও দ্রুত পরের পর্ব আশা করছি। কিছু কিছু জায়গায় অনুবাদ আড়ষ্ট, একটু খেয়াল রাখার অনুরোধ রইল।
@ব্লাডি সিভিলিয়ান,
সহমত! আরও ভালোভাবে ঠিকঠাক করতে হবে। ব্লগে দিলাম এইজন্যই। ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
আপনার লেখা পড়ে বরাবরই ভাল লাগে। এটাও ভাল লাগল।
:yes: মন খুলে দেখলে বা মন যা বলে তা শুনলেই যে তা ভাল কিছু হবে এটি একেবারেই বাজে কথা। জ্ঞান ও যুক্তি যদি পাথেয় হয় তবে সে পথই শ্রেয়।
আপনার লেখার শেষ থেকে ৩য় প্যারার প্রথম অংশের বক্তব্য কেমন যেন অসংলগ্ন মনে হয়েছে। এই অংশ
এ অংশটা খেয়াল করতে অনুরোধ করছি।কি বোঝাতে চেয়েছিলেন? 🙂
@লীনা রহমান,
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। ঐ অংশটায় হুকুম এর জায়গায় দুই দুইবার হুমুক হয়ে গেছে, আর ভাবটাও ঠিকমতো বোঝাতে পারিনাই। নীচে অভিদাও বলেছেন, ঠিক করবো।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ, প্রেরণা পেলাম।
আপনার লেখাটি পড়ে ভাল লাগল। হায় ধর্ম তুমি সত্যকে মিথ্যা করতে শতহস্ত। বিজ্ঞান চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানো সত্যেও আজো অনেক অন্ধবিশ্বাস বিশ্ব সমাজে প্রতিষ্ঠিত। আমরা সেইদিনের অপেক্ষায় লড়াই করতে হবে। যতদিন না সাধারণ মানুষরা এইসব ধর্মের আসাড়তা বোঝে। আমরা আশা করব অতি শিঘ্রই আপনার বাকী অংশটি পড়তে পারব।
@সুমিত দেবনাথ,
ধন্যবাদ।