এই ব্লগে কেউ কি আমাকে একটু বুঝিয়ে বলবেন ‘দীপক চোপড়া’ নামের এই ভদ্রলোক আসলে কি বলতে চান? প্রত্যেকবার এর কথাবার্তা, ইন্টারভিউ, আলোচনা শুনে আমার মাথাটা কেমন কেমন যেন করে, অবাক হয়ে ভাবি সমস্যাটা কার – আমার নাকি আমেরিকার এই সেলিব্রিটি ব্যক্তিত্বটির? এ আসলে বলতে কী চায় তাইই বুঝতে পারি না আমি। একবার ভাবি, এ নিশ্চয়ই আমারই ব্যর্থতা¸ তাবৎ মিডিয়া মাতানো এত বড় ব্যাক্তিত্বের কথা কি আর পাগলের প্রলাপ হতে পারে নাকি! পঞ্চাশটারও বেশি বই লিখেছেন তিনি। তার প্রতিটা ‘লেকচারের’ মূল্য নাকি একলাখ ডলারেরও বেশি। মাইকেল জ্যাকসন, ম্যাডোনা, অলিভিয়া নিউটন জন থেকে শুরু করে কেই বা তার পদধূলি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন? তারপরই আমার মোটা মস্তিষ্কের আরেকটা অংশ কেমন যেন গুঁতা মেরে বলে স্যারা প্যালিনও তো আমেরিকার বিশেষ এক ব্যক্তিত্ব, হাজার হাজার মানুষ উপচে পড়ে তার তিড়িং বিড়িং করা বক্তৃতা শোনার জন্য, জুলিয়া রবার্টসের মত সেলিব্রিটি গেরুয়া পরে পুরোহিতের সামনে বসে হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়। তাহলে এই চোপড়াই বা কেন পারবে না বিশাল কোন বড় ব্যাক্তিত্ব বনে যেতে?

এর আলোচনাগুলো খুবই মজার, আপনি কেমন যেন প্রথম প্রথম ঘরের এক কোনা থেকে আরেক কোণায় আছাড় খেয়ে খেয়ে পড়বেন, আর ভাববেন অ্যা, এ কি বললো, আমি কি ঠিক শুনলাম? তারপর একটু সময় গেলেই উঠে বসবেন এবং বলবেন এ তো দেখি আমাদের দেশের বাসে বাসে মলম বিক্রি করা ছেলেগুলোর শিক্ষিত পশ্চিমা গুরু! ওদের উচিত এর কাছ থেকে দীক্ষা নিয়ে যাওয়া! একবার দেখি স্পিনোজাকে কান ধরে টেনে নিয়ে এসে বলে গড বলে কিছু নেই, গড নাকি তার সৃষ্টিতেই বিলীন হয়ে গেছে। তার পরেই বলবে কনশাসনেস বা চেতনা নাকি নন-লোকাল। মানে? তাহলে চেতনা কি মঙ্গলগ্রহের বাসিন্দা? সেদিন দেখলাম ল্যারি কিং এর অনুষ্ঠানে এসে বললো, বিজ্ঞান নাকি মানুষের মস্তিষ্ক এবং চেতনাকে ব্যখ্যা করতে পারে না। সেখানে কোন জীববিজ্ঞানী উপস্থিত না থাকায় এই মিথ্যা দাবীটির উওরও কেউ দিতে পারলোনা। আর এই ল্যারি কিং এর মত লোকদের বুদ্ধিরও কি বলিহারি! স্টিফেন হকিং আর লেখক লিওনার্ড ম্লডিনোর লেখা ‘দ্যা গ্র্যান্ড ডিজাইন’ বইটি নিয়ে আলোচনা করার জন্য নিয়ে আসা হল কাদের? না এক জিসাস ঠ্যালা পাদ্রি আর আরেক আয়ুর্বেদীয় বৈদ্য দীপক চোপড়াকে! এধরার বুকে স্টিফেন হকিং এর মত বিজ্ঞানীর ইন্টারভিউ নিয়ে আলোচনা করার জন্য এদের চেয়ে যোগ্য ব্যক্তিত্ব আর কেই বা থাকতে পারে।

লিওনার্ড ম্লডিনোর সাথে চোপড়ার এই কথোপকথনের ভিডিওটা দেখুন;

httpv://www.youtube.com/watch?v=-y5D7q1O1Uk

গড়াগড়ি করে হাসব না কাঁদবো ঠিক বুঝতে পারছিলাম না, তবে আমি যেভাবেই গড়াগড়ি দেই না কেন ম্লডিনো যে আন্তরিকভাবে বিনোদিত হয়েছেন চোপড়ার জ্ঞানের বহর দেখে সেটা নিয়ে কিন্তু সন্দেহের কোন অবকাশই নেই। বেচারা ম্লডিনো চোপড়ার চোপাবাজী সহ্য করতে না পেরে শেষ পর্যন্ত কোয়ান্টাম মেকানিকক্স এর উপর একটা কোর্সই অফার করে বসলেন। চোপড়ার মুখ থেকে ‘সুপারপজিশন অফ পসিবিলিটিস’ কথাটা শুনে ম্লডিনো যে উত্তর দিলেন এবং সেই সাথে যে মুচকি হাসিটা উপহার দিলেন তার অর্থটা অনেকটা এরকম দাঁড়ায়, প্রত্যকটা শব্দের অর্থ আলাদা আলাদা করে বুঝলেও একসাথে এদের পুরো অর্থ কি দাঁড়ায় তা আমি কেন আমার বাপ দাদা চোদ্দগুষ্ঠিরো বোঝার ক্ষমতা নেই!

ল্যারি কিং লাইভে চোপড়া ম্লডিনোকে দেখলাম গার্ডেলের থিওরি খাওয়ানোর চেষ্টা করলেন কিছুক্ষণ, সেখানেও তার স্বভাবসুলভ মিষ্টি হাসি দিয়ে ম্লডিনো বললেন, সব কিছুই ঠিক আছে, তবে একটা ছোট্ট সমস্যা! চোপড়া যার উপর ভিত্তি করে পদার্থবিদ্যা নিয়ে এত বড় বড় বিজ্ঞ সব কথা বললেন সেটা আসলে পদার্থবিদ্যার ক্ষেত্রে খাটেই না! পদার্থবিদ্যা কাজ করে তত্ত্ব এবং পর্যবেক্ষণের সমন্বয়ে। না বুঝে গার্ডেলের থিওরির সাথে এটাকে না মেলানোই ভাল। এটা ল্যারি কিং লাইভ না হয়ে ফজলে লোহানীর ‘যদি কিছু মনে না করেন’ হলে হয়তো চোপড়াকে জিজ্ঞেস করা যেত, ‘কইঞ্চেননি, আফনে কি ইচ্ছা কইরা বিজ্ঞানরে বিকৃত করেন নাকি বিজ্ঞানের ব্যফারস্যাফারগুলা আফনের নন-লোকাল মাথায় ঠিকমত ধরে না?’

আরেক নোবেল বিজয়ী পদার্থবিদ মারি গেল-ম্যান (Murray Gell-Mann) চোপড়ার কোয়ান্টাম ধানাই-পানাইকে একেবারে ‘কোয়ান্টাম ফ্ল্যাপডুডুল’ বলে উল্লেখ করেছেন। পদার্থবিদ ভিক্টর স্টেঙ্গারও তার ‘কোয়ান্টাম গডস’ বইয়ে চোপড়াকে ‘কোয়ান্টাম কোয়েকারি’ করার দায়ে অভিযূক্ত করেছেন। এর পরেও তার ‘কোয়ান্টাম হাম্পটি ডাম্পটি’ টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে না তাই আমার মোটা মাথায় ঢুকে না। রিচার্ড ডকিন্স কীভাবে চোপড়ার ভুজুং ভাজুং ফাঁস করে দিয়েছেন, তা দেখুন এই ভিডিওতে –

httpv://www.youtube.com/watch?v=Z-FaXD_igv4

চোপড়া বিজ্ঞানের কিছু ইতং বিতং, প্রাচীন ভারতীয় আধ্যাত্মিকতা, আর তার সাথে রহস্যময় ম্যাজিক এবং মরমীবাদের সমন্বয়ে এক অদ্ভুত খিঁচুড়ি তৈরি করেন। কেউ বলে সে বেদান্তবাদী, আবার কেউ বলে সে নাকি নাস্তিক। আসলে সে যে কি তা বোধ করি তার নন-লোকাল চেতনাধারী ঈশ্বর ছাড়া কেউ জানে না। কি সে মহিমা এই মডার্ণ সাই বাবার। মাইকেল শারমার দীপক চোপড়াকে নিয়ে তার এই লেখায় বলেছেন যে দীপক আসলে আধুনিক বিজ্ঞানের মোড়কে পুরে সেই পুরানো কাসুন্দিই পরিবেশন করে চলেছেন। দেখুন এই টেবিলটি –

প্রাচীন ধর্মীয় ঈশ্বর

চোপড়ার

কোয়ান্টাম ঈশ্বর

omnipresent
fully man/fully God
miracle
leap of faith
transubstantiation
Council of Rome
supernatural forces
heaven
hell
eternity
prayer
the Godhead
the Trinity
forgiveness of sin
virgin birth
resurrection

non-local
wave/particle duality
wave-function collapse
quantum leap
Heisenberg uncertainty principle
Copenhagen interpretation
anti-matter
dark energy
dark matter
space/time continuum
quantum entanglement
general relativity
special relativity
quantum erasure
quantum decoherence
virtual reality

মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের ব্যবসা এই লোকের, তার এই ভন্ডামী খাওয়ার লোকের কোন অভাব নেই। কই যে যাই, কই যে লুকাই, মঙ্গল গ্রহেও পালিয়েও মনে হয় কোন লাভ নেই, চোপড়ার নন-লোকাল চেতনা যে ওইখানের লোকাল বাসিন্দা হয়ে হুক্কা টানছে না – তাই বা কে জানে?