আকাশ মালিকের “বিচ্ছিন্ন ভাবনা” এবং বিপ্লব পালের “৯/১১ – কোরান পোড়ানোর স্বাধীনতা বনাম অসভ্যতা” থেকে চিন্তা এবং আমার শঙ্কা থেকেই এই লেখাটি। আকাশ মালিকের নিবন্ধ থেকে নেয়া –
“ ‘সারা বিশ্ব জুড়ে যে সন্ত্রাস চলছে এর সাথে মুসলমান জঙ্গীবাদের সম্পৃক্ততা আছে কি না, অথবা মুসলিম জঙ্গীবাদের উৎস কোথায়, পশ্চিমে না আমেরিকায় না কোরানে না অন্য কোথাও’?
Islam: What the West Needs to Know
Radical Islam’s War Against the West
The lions of Luton
Islamic revolution in Britain

সবিনয়ে অনুরোধ – উপরের লিঙ্কের ভিডিও গুলো না দেখলে এই নিবন্ধটি পড়বেন না। আমার শঙ্কার কারণ ঐ লিঙ্কগুলোতে। আমার ইসলাম অনুরাগী হওয়ার কোন কারণ নেই। আমি গ্রাউন্ড জিড়োর ধারে কাছে মন্দির বা মসজিদ জাতীয় যেকোন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বানানোর বিরোধী। একজন নিরীশ্বরবাদী হিসেবে আমি কোন ধর্মকেই সমর্থন করিনা।

ম্যানহ্যাটন পৃথিবীর অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের ক্যাপিট্যাল। জায়গাটা বানিজ্যের কাজে লাগুক। প্রার্থনা বা ধ্বংসাত্মক কাজের জন্য নয়। প্রস্তাবিত মসজিদ যে মানবতা বিরোধী কাজে ব্যবহৃত হবে না, চাইলে আব্দুল রউফ তার একশটা কাগুজে গ্যারান্টি দিতে পারবেন এটা ঠিক। কিন্তু সমসাময়িক ঘটনাবলীর আলোকে আমি চোখ বুঝেই বলতে পারিনা এটি কোন ধ্বংসাত্মক কাজের সাথে জড়িত থাকবে না। এখানে একটি বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হলে উৎপাদন বাড়বে। লাভের একটা অংশ ফেডারেল ব্যাঙ্কে জমা হবে। মসজিদ হলে উৎপাদনশীল জায়গাটার অপচয় হবে। একটি দেশের ৬৮% লোকের সবাই মস্তিষ্ক বিহীন নয়। এই গরিষ্ঠ সংখ্যক লোক মসজিদটিকে দেশের শান্তির জন্য হুমকি হিসেবেই দেখছে। ইসলামিস্টরা অদুর ভবিষ্যতে ইসলামিজম স্থাপন করার জন্য দেশের সাংবিধানিক সুযোগ নিয়ে তাদের প্রাথমিক দূর্গ গড়ে তোলার আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই যুদ্ধে তারা সফল হবেই। কারণ এই দেশটির নাম আমেরিকা। তাই আমার ভয়।

প্রথমে কিছু সংজ্ঞা ঠিক করে নিই। ১) ইসলাম একটি ধর্ম, শান্তিপ্রিয় গরিষ্ঠ সংখ্যক মুসলমানরা ধর্ম হিসেবেই এটিকে অনুসরণ করে, ২) কমুনিজমের ন্যায় ইসলামিজম হল ইসলাম ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার একটি রাজনৈতিক দর্শন, ৩) ইসলামিস্ট হল ইসলাম ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে দীক্ষিত নিবেদিত সৈনিক, উপরের ভিডিওতে এর নমূণা পাওয়া যাবে, এবং ৪) ইসলামী জংগী হল একই উদ্দেশ্যে বিশ্বাসী কিন্তু উগ্রপন্থী সৈনিক, উপরের ভিডিওতে নমূণা আছে।

ইসলামী জঙ্গীদের ধৈর্য্যবোধ নাই। সারা পৃথিবীতে আল্লাহ্র ইসলাম এখনও প্রতিষ্ঠিত করতে না পারার জন্য এরা অপরাধ বোধ করে। হোয়াইট হাউসে শীগ্রই আমীর বসানোর পায়তারায় আছে এরা (উপরের ভিডিও লিঙ্ক)। স্বল্পতম সময়ে অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছুতে এরা সদা প্রস্তুত। এরা ধ্বংসাত্মক কাজ চালাতেও দ্বিধা করে না। সামনে শান্তির বানী নামক মূলো ঝুলিয়ে ইসলামী রাষ্ট্রপ্রতিষ্ঠায় একটা চতূর পথ অনুসরণ করছে ইসলামিস্টরা। জংগীগুষ্টি তাদের এই পথকে অনবরত পিচ্ছিল করে দিচ্ছে। তালেবান, আলকায়দা, নিডাল মালিক হাসান জাতীয় বহু জংগী ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ত্বরান্বিত করার নামে বিঘ্ন সৃষ্টি করছে।

টেরী জোন্স নামে একজন প্যাস্টর ৯/১১ এর নয় বছর পূর্তিতে কুরান পুড়ানোর হুমকি দিয়ে কুখ্যাত হয়েছেন। CNN যথারীতি অনেক মস্করা করেছে এই প্যাস্টরকে নিয়ে। কুরান পুড়ানো অর্বাচিনতার কাজ। আমি তাৎক্ষনিক ভাবেই বলেছি এটা একটা হুমকি মাত্র। শেষমেষ তিনি কুরান পুরানোর অংগীকার থেকে সরে এসেছেন। প্রশ্ন করা স্বাভাবিক – ৯/১১ অব্যবহিত পরেই কুরান পুড়ানোর ঘোষনা না দিয়ে দীর্ঘ নয় বছর পরে হঠাৎ কেন দিলেন। দেশে কী এমন নতুন পরিস্থিতির উদয় হল যার জন্য তিনি এমন নিন্দনীয় ঘোষনাটি এখন দিলেন?

লিস্ট করতে গেলে বড় হবে। তারপরও অনেক ঘটনা বাদ পড়ে যাবে। এই পৃথিবীর এক হিরো ইতিমধ্যেই ঘোষনা করেছেন Holocaust একটি মিথ। ৯/১১ ঘটনাটিও একটি মিথ হবে। নমূণা শুরু হয়ে গেছে। মুসলিম বিশ্বকে নাজেহাল করার জন্যই নাকি আমেরিক্যানরাই ৯/১১ ঘটনাটি তৈরী করেছে। এমন একখানা ডিভিডিও বাজারে আছে। প্রমাণের চেষ্টা করা হচ্ছে, তথাকথিত উনিশ জন টেরোরিস্টের কেউ নাকি সৌদি বা মিডল-ইষ্টের কোন দেশেরই নাগরিক নয়। নিডাল মালিক হাসান, নাজিবুল্লাহ জাজী, কলীন লারোজ, ফয়সল সাহজাদ, জামি পলিন রামিরেজ, জেমস ক্রমি, সৈয়দ হারিস আহমেদ, ডেভিড কোলম্যান হেডলি, নাসিল ব্যাটিস্ট ইত্যাদি টেরোরিস্ট আমেরিকার মাটিতে তৈরি হয়েছে। প্রতিটি টেরোরিস্ট কোন না কোন মসজিদের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। প্যাস্টর জোন্স এসব জানেন। কিন্তু কিছুই বলেন নি। এখন আবার দেখছেন ৯/১১ ঘটনার ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের অনুভূতির প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ
দেখিয়ে ওখানেই অতিকায় একটি মসজিদ হচ্ছে। আব্দুল রউফ বলছেন এটি ইস্লামিক কালচারাল সেন্টার হবে। আন্তর্ধর্মীয় মিলন কেন্দ্র। এখানে টেরোরিজমের কোন স্থান নেই। প্যাস্টর জোন্স দীর্ঘ নয় বছরে কত কিছু নিজ চোখে দেখেছেন। এইসব কিছুর পরেও প্যাস্টর জোন্সকে আব্দুল রউফের মিঠা কথায় বিশ্বাস করতে হবে। নীচে দেওয়া প্যাস্টর জোন্সের দশটি্র (কৃতজ্ঞতা – বন্যা আহমেদ) মধ্যে কোনটি অযৌক্তিক, আমি বুঝি না।
Ten Reasons to Burn a Koran – by Pastor Terry Jones
On 9/11/10 we are burning Korans to raise awareness and warn. In a sense it is neither an act of love nor of hate. We see, as we state in the Ten Reasons below, that Islam is a danger. We are using this act to warn about the teaching and ideology of Islam, which we do hate as it is hateful. We do not hate any people, however. We love, as God loves, all the people in the world and we want them to come to a knowledge of the truth. To warn of danger and harm is a loving act. God is love and truth. If you know the truth it can set you free. The world is in bondage to the massive grip of the lies of Islam. These are:
One
The Koran teaches that Jesus Christ, the Crucified, Risen Son of God, King of Kings and Lord of Lords was NOT the Son of God, nor was he crucified (a well documented historical fact that ONLY Islam denies). This teaching removes the possibility of salvation and eternal life in heaven for all Islam’s believers. They face eternal damnation in hell if they do not repent.
Two
The Koran does not have an eternal origin. It is not recorded in heaven. The Almighty God, Creator of the World, is NOT it’s source. It is not holy. It’s writings are human in origin, a concoction of old and new teachings. This has been stated and restated for centuries by scholars since Islam’s beginnings, both Moslem and non-Moslem.
Three
The Koran’s teaching includes Arabian idolatry, paganism, rites and rituals. These are demonic, an ongoing satanic stronghold under which Moslems and the world suffer.
Four
The earliest writings that are known to exist about the Prophet Mohammad were recorded 120 years after his death. All of the Islamic writings (the Koran and the Hadith, the biographies, the traditions and histories) are confused, contradictory and inconsistent. Maybe Mohammad never existed. We have no conclusive account about what he said or did. Yet Moslems follow the destructive teachings of Islam without question.
Five
Mohammad’s life and message cannot be respected. The first Meccan period of his leadership seems to have been religiously motivated and a search for the truth. But in the second Medina period he was “corrupted by power and worldly ambitions.” (Ibn Warraq) These are characteristics that God hates. They also led to political assassinations and massacres which continue to be carried out on a regular basis by his followers today.
Six
Islamic Law is totalitarian in nature. There is no separation of church and state. It is irrational. It is supposedly immutable and cannot be changed. It must be accepted without criticism. It has many similarities to Nazism, Communism and Fascism. It is not compatible with Western Civilization.
Seven
Islam is not compatible with democracy and human rights. The notion of a moral individual capable of making decisions and taking responsibility for them does not exist in Islam. The attitude towards women in Islam as inferior possessions of men has led to countless cases of mistreatment and abuse for which Moslem men receive little or no punishment, and in many cases are encouraged to commit such acts, and are even praised for them. This is a direct fruit of the teachings of the Koran.
Eight
A Muslim does not have the right to change his religion. Apostasy is punishable by death.
Nine
Deep in the Islamic teaching and culture is the irrational fear and loathing of the West.
Ten
Islam is a weapon of Arab imperialism and Islamic colonialism. Wherever Islam has or gains political power, Christians, Jews and all non-Moslems receive persecution, discrimination, are forced to convert. There are massacres and churches, synagogues, temples and other places of worship are destroyed.

প্রস্তাবিত মসজিদটিই প্যাস্টরের নয় বছর পরে কোরান পুড়ানোর মত এমন একটি ঘৃন্য হুমকি প্রদর্শনের অন্যতম কারণ বলেই প্রতীয়মান হয়। প্যাস্টর তার সিদ্ধান্ত বাতিল করেছেন। আমি সাধুবাদ জানাই। আব্দুল রউফকে আমি আহ্বান জানাই তিনিও মসজিদ অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার ঘোষনা দেবেন। আমি সাধুবাদ জানাব। সারা আমেরিকা জানাবে। সন্দেহ এবং সঙ্ঘাত দিয়ে যার যাত্রা, সেটি অশান্তি ছাড়া শান্তি কখনোই আনবে না। অনেক দেরী তিনি ইতিমধ্যেই করে ফেলেছেন। আর দেরী না করে মসজিদ অন্যত্র সরিয়ে নিন। তখন জোরগলায় বলতে পারবেন – দেখ ইসলাম কত মহান এবং শান্তির ধর্ম। আমরা ৯/১১এ ক্ষতিগ্রস্থদের অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধাবশত মসজিদটি অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছি। ল্যাঠা চুকে যাক। বিতর্কিত মসজিদ বানিয়ে সর্বধর্মীয় শান্তির মিলন মেলা নামে অশান্তি সৃষ্টির দরকার কী? শান্তি তো এতদিন ছিলই। মসজিদ বানানো নিয়েই তো অশান্তির যাত্রা। আপনার কালচারাল সেন্টারে শুধুই শান্তির ফুল ফুটবে বললেই তো হবে না। এফবিআই দিবারাত্র পাহাড়া দেবে। মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ হবে। আমার ট্যাক্সের টাকা অনুৎপাদন খাতে ব্যয় হবে পাহাড়া দেওয়ার জন্য। তাই আমি চাইনা ওখা্নে মসজিদ, মন্দির বা গীর্জা হউক।

আমার শঙ্কা
ইসলাম শব্দের অর্থ শান্তি। ধর্মটি প্রচারের শুরুতে অনেক বাঁধা-বিঘ্ন ছিল। তাই হজরত মুহম্মদ “শান্তি” শব্দটি প্রচুর ব্যবহার করেছেন। অনেক মিঠা মিঠা কথা বলেছেন। Surah 109. Al-Kafirun এর ৬ নং আয়াতে শান্তির কথা বলা আছে।“ Unto you your religion, and unto me my religion.” এই আয়াতটি নাকি ধর্ম প্রচারের শুরুতে নাজিল হয়েছিল। সমগ্র কোরানে এরকম আয়াত দ্বিতীয় কোথাও চোখে পড়েনি।

আমেরিকাকে ইসলামিক রাষ্ট্র বানানোর জন্য আব্দুল রউফও মুহম্মদের পদাংক অনুসরণ করছেন। মিঠা মিঠা কথা। আন্তর্ধর্মীয় মিলনের সেতু-বন্ধন। আব্দুর রউফের মনের ভিতর কী আছে তা জানার উপায় নেই। কিন্তু উপরের ভিডিওগুলোতে কিছু সাচ্চা ঈমানদার মানুষ আছে। তাদের “আল্লাহু আকবর” ধ্বনি শুনলে আমার শঙ্কা হয়। দুই, তিন এবং চার নম্বর ভিডিওতে যারা কথা বলছেন তাদের মুখের এবং মনের ভিতরের কথা কিন্তু এক। এরাই সাচ্চা মানুষ। এদের বুঝা বা জানা সোজা। এদের ভাষা পরিষ্কার। এদেশে এরা ইসলামী ঝান্ডা উড়াবে। গনতন্ত্র ধ্বংস করে আল্লাহ্র শরীয়া আইন প্রতিষ্ঠিত করবে। পরিষ্কার বলেছে। রউফ কিন্তু তা বলেন না। তিনি মিঠা কথা বলেন। কে জানে রউফের হাত ধরেই ঐ ভিডিওর লোকেরাই এদেশে অনুপ্রবেশ করবে। তখন আমার নাম বদল করে আমাকেও বলতে হবে, “আল্লাহু আকবর।” আমাকে না হলেও আমার ভবিষ্যৎ বংশধরদের করতে হবে। আমি তারই পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছি। এই শান্তির দেশটি তখন গোল্লায় যাবে। এই দেশটি সৌদি আরব হবে। হয়ত হবে ইরান, বা বিন লাদেন আর মোল্লা ওমরের আফগানিস্তান। তাই আমি শঙ্কিত।

পুনশ্চ
বিষয়টি জটিল ও স্পর্শকাতর। সবগুলো দিক তুলতে পারিনি। সম্ভবও না। তাই মুলত একটা দিক তুলে ধরতে চেষ্টা করেছি। ইসলামিস্ট এবং জংগীরা বিরক্ত হবেন জানি। কিন্তু আমার ভরশা, বৃহত্তর মুসলিম গোষ্ঠী (body) আমার বক্তব্য পজিটিভলি নেবেন। আলোচনায় অনেক ভাল জিনিষ বেরিয়ে আসবে আশা করি।

টেক্সাস, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১০।