সৃষ্টিকর্তার রূপ এবং তাঁর প্রতিনিধি
উত্তর পুরুষ
মানুষ স্বভাবত ধর্ম ও সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী। সৃষ্টিকর্তাকে কেউ দেখতে না পেলেও সকল প্রকার উত্তম গুণের অধিকারী হিসেবে তাঁকে সবাই দেখতে চায়। এই সত্য উপলব্ধির পাশাপাশি মানুষ বাস্তবে এমন কাউকে দেখতে চায়, যার সকল গুণাবলী সমুহ সততায়, নিষ্ঠায় ও বিচক্ষণতায় ভরপুর। অনেকটা সৃষ্টিকর্তার মতো, কিন্তু ঠিক সৃষ্টিকর্তা নয়। অবশেষে সেই মানুষকে সৃষ্টিকর্তার প্রতিনিধি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে মানুষ তাঁদেরকে শ্রদ্ধাঞ্জলী অর্পণ করে। হিন্দু ধর্মের রাম ও কৃষ্ণ, বুদ্ধো ধর্মের গৌতম বুদ্ধো ইসলাম ধর্মের হযরত মোহাম্মদ, খৃষ্টান ধর্মের যীশু খ্রীষ্ট, ইহুদি ধর্মের (মোসেস) বা মুসা, চায়নীজ ধর্ম দর্শনের গুরু কনফুসিয়াস এবং তাওবাদের তাও, এমনকি ভারতের শিখ ধর্মের গুরু নানককে এভাবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। বাস্তবে আরও দেখা গেলো এসব প্রতিনিধিগণ জীবিত থাকা অবস্থায় যে সমস্ত গুণাবলীর অধিকারী ছিলেন মৃত্যুর পর সেই গুণাবলী সমুহ পাহাড় সমান উঁচু করে তাদের চরিত্রের উপর লেপন করা হয়েছে। আর ত্রুটি সমুহকে চিরকালের জন্য চাপা দিয়ে সীলমোহর করে রাখা হয়েছে। পৃথিবীতে কল্যাণকামী মানুষ কিংবা আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে বিবেচিত মানুষেরা কোনদিন কোন ভোজবাজি কিংবা অলৌকিক ঘটনা দেখাননি। এসব তৈরি করেছে এক ধরণের গল্প বিলাসী মানুষ। তারা আবেগের তাড়নায় ভাবে গদগদ হয়ে, কখনও বা নিজের জাতি গোষ্ঠীর প্রভাব বিস্তারের জন্য এসব ঘটনার জন্ম দিয়ে গুজব সৃষ্টি করেছে। হয়তো এর পেছনে অতি আংশিক সত্য আছে। কিন্তু ঐ যুগে তা না করে বরং ঐসব ঘটনায় রংচং লাগিয়ে, তিলকে তালে পরিণত করা হয়েছে। পরবর্তীতে সমাজে তা পৌরাণিক উপাখ্যান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে মানুষের মনে আসন গেড়েছে। এসবের পেছনে কোন নিখুঁত ও বিশুদ্ধ ইতিহাস নেই। ধর্মীয় বিশ্বাস এসমস্ত ঘটনার রেফারেন্স মাত্র। এবারে আসা যাক সৎ গুণের চিন্তা ও বিশ্বাস থেকে সৃষ্টিকর্তার প্রতি যে অগাধ বিশ্বাসের জন্ম নেয়, সেই সৃষ্টিকর্তার রূপ ও আকার কি ?

পৌরাণিক বেদ বলে দিয়েছে ইশ্বর নিরাকার। তা সত্ত্বে ও পরবর্তীকালে অতি রক্ষণশীল হিন্দুরা ইশ্বরের ভিন্ন ভিন্ন শক্তি ও রূপকে এক এক নাম দিয়ে সে নামে তৈরি করেছে ভিন্ন মূর্তি । যা তাদের নিজস্ব কল্পনা ব্যতীত কিছু নয় । অপরদিকে ইসলাম ও বলেছে আল্লাহ এক ও সর্বত্র বিরাজমান, সর্বত্রই রয়েছে তাঁর অস্তিত্ব। আবার কোরআনের কিছু কিছু উক্তি থেকে সৃষ্টিকর্তার আংশিক আকারের চিত্র পাওয়া যায়। এতে করে সৃষ্টিকর্তা সম্বন্ধে (স্ববিরোধিতা বা ) দ্বিমুখী কথা বার্তার সূত্রপাত হয়। একারণে স্বভাবতই মানুষের মনে প্রশ্ন জাগে, ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক নবী হযরত মোহাম্মদ কি নিজের জ্ঞান বিবেক থেকে এধরণের পরিচয় দিয়েছেন ? সৃষ্টিকর্তা সম্বন্ধে কোরআনের আয়াতে যে আংশিক রূপ পাওয়া যায় তা’হলো ;
(ক) আল্লাহ আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর জ্যোতি ; তাঁর জ্যোতির উপমা যেন কুলুঙ্গি যার মধ্যে আছে এক প্রদীপ। প্রদীপটি একটি কাচের আবরণের মধ্যে স্থাপিত, কাঁচের আবরণটি উজ্বল নক্ষত্র সদৃশ্য। পবিত্র জয়তুন বৃক্ষের (তৈল থেকে) এ প্রজ্জ্বলিত হয়। যা প্রাচ্যের ও নয় প্রতীচ্যের ও নয়, অগ্নি সংযোগ না করলে ও মনে হয় তার তৈল যেন উজ্জ্বল আলো দিচ্ছে । জ্যোতির উপর জ্যোতি। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাঁর জ্যোতির দিকে পথ নির্দেশ করেন। আল্লাহ মানুষের জন্য উপমা দিয়ে থাকেন এবং আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ। ছুরা নূর, আয়াত ৩৫। আয়াতটি থেকে স্পষ্টই বুঝা যাচ্ছে আল্লাহর রূপ এক আলোকবর্তিকাময় এবং তা উজ্জ্বল আলোর আবরনীতে ঢাকা। আবরণটি উজ্জ্বল নক্ষত্রের মত দ্যোতিময়। এ আলো, প্রদীপ, নক্ষত্র ইত্যাদির উপমা, বিশালতা যদিও বর্ণনাতীত, এবং ব্যাখ্যা করা কঠিন তথাপি মানুষের মানসরাজ্যে এর একটি বিশেষ চিত্ররূপ ফুটে উঠে। পৃথিবীর বহু বিজ্ঞ জ্ঞানী গুণী এবং জ্যোর্তিবিদরা এরকম মনোভাব পোষণ করেন।
(খ) কেয়ামতের দিন সমস্ত পৃথিবী তাঁর (আল্লাহর) হাতের মুঠোয় থাকবে এবং আকাশমন্ডলী থাকবে ভাঁজ করা অবস্থায় ডান হাতে। অনুবাদ মতান্তরে আকাশ মন্ডলী থাকবে হাতের কব্জিতে মাত্র এক প্যাঁচ। ছুরা জুমআর আয়াত ৬৭।
উক্ত আয়াত থেকে আল্লাহর রূপ বা আকার সম্বন্ধে একটি ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, যেহেতু এখানে হাত এবং মুষ্টির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এতে করে একটি “মহাবিশাল শারীরিক অবয়বের” চিত্র মানসপটে ভেসে উঠে। অপরদিকে হাদীছবেত্তাগণ ও আলীম উলামাগণ স্পষ্ট ভাষায় বলছেন এরকম অনুমান বা ধারণা নিতান্তই অন্যায় এবং পাপ, কারণ আল্লাহ যে কোন শারীরিক কাঠামোর সাদৃশ্য থেকে বাইরে। আল্লাহর বিশালতা ও ক্ষমতা সম্বন্ধে বুঝাতে গিয়ে উপমা হিসেবে তা বলা হয়েছে। কিন্তু কোরআনে তা উপমা কি না কিছুই উল্লেখ করা হয়নি। অথচ উপরে উল্লেখিত ছুরা নূর এর ৩৫ আয়াতে সত্যতা ও উপমার কথা স্পষ্টই উল্লেখ রয়েছে। সুতরাং এখানে দুইটি ছুরার মধ্যে আল্লাহর রুপ ও আকার নিয়ে একটি দ্বন্দ্ব বিরাজমান। অতএব মানুষ কোনটিকে মেনে নেবে ?

(গ) বিশ্ব প্রতিপালকের জ্যোতিতে উদ্ভাসিত হবে বিশ্ব, আমলনামা উপস্থিত করা হবে এবং নবীগণকে ও সাক্ষীদের উপস্থিত করা হবে। ছুরা জুমআর আয়াত ৬৯। উক্ত আয়াত থেকে বুঝা যাচ্ছে আল্লাহর রূপ এক বিশেষ আলোয় গঠিত, যার জ্যোতি ও ক্ষমতা সকল শক্তির উৎস, যা নিজেই সর্বেসর্বা। এখানেও তা উপমা কি না উল্লেখ করা হয়নি। যা সত্য হিসেবে ইসলাম বিশ্বাসী মানুষগণ মেনে নেন।
(ঘ) ফেরেশতাগণ আকাশের প্রান্তদেশে দন্ডায়মান হবে এবং সেদিন আট জন ফেরেশতা তাঁদের প্রতিপালকের আরশকে ধারণ করবে উর্ধ্বদেশে। ছুরা হাক্কাহ আয়াত ১৭।
এ আয়াত থেকেও আল্লাহর একটি বিশেষ অবস্থার চিত্র উপলব্দি করা যায়, যা আজও পৃথিবীর বহু সামাজিক ও রাজকীয় আচার-অনুষ্ঠানে দৃষ্টিগোচর হয়। অতীতে রাজার অনুগত দেহরক্ষী, ক্রীতদাস বা রাজকর্মে নিয়োজিত পেশাদারীরা রাজাকে সিংহাসনে বসিয়ে তা কাঁধে বহন করে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যেত। সুতরাং এরকম বর্ণনা মানুষের মনে আল্লাহর আকার এবং রুপ সম্বন্ধে বিশেষ ধারণার জন্ম দেয়। এরকম ধারণা জন্ম নেওয়ার জন্য মানুষ নিজে দায়ী নয়। মানুষকে আকার ইঙ্গিতে কিছু বলা হবে, অথচ এক স্থানে বলা হবে উপমা অন্য স্থানে কিছুই বলা হবেনা এবং তা নিয়ে কল্পনা করতে কিংবা অনুমান করতে নিষেধ করা হবে এমন আচরণ সত্যকে সুপ্রতিষ্ঠিত করবে কি ভাবে ? এর পর কথা হলো আকাশের প্রান্তদেশ বলতে কি বুঝায় ? আজকের বিজ্ঞান আকাশের প্রান্তদেশ কোথায়ও খুঁজে পায়নি। এরপর ফিরিশতাগণ দণ্ডায়মান হবেন কোন ভূমির স্পর্শে ? না ভাসমান অবস্থায় থাকবেন ? নাকি উড্ডয়ন অবস্থায় আরশ কাঁধে বহন করবেন ? এর ব্যাখ্যা ও নেই।

ইসলাম ধর্মের উপকরণ
উত্তর পুরুষ
হযরত ঈসা (আঃ) বা যীশু খৃষ্টের জন্মের পাঁচশত বৎসর অবদি মধ্যপ্রাচ্যে মানুষের জীবন যাত্রা ও আচার আচরণের মধ্যে যা উল্লেখযোগ্য ছিল তাহলো ; পশু পালন, শিকার, জল প্রাপ্য এলাকায় আদিম পদ্ধতিতে চাষাবাদ, তেজারতি ও সুদ ব্যবসা। মধ্যবিও, গরীব ও মেহনতি মানুষেরা ছিল এই সুদের ক্রীড়নক। দেনার দায়ে এরা নিঃশেষ হতে হতে শেষ অবদি পরিণত হত ক্রীতদাসে। এছাড়া যুদ্ধে পরাজিত সৈনিক এবং বিভিন্ন সামাজিক অপরাধে দন্ডিত অপরাধীরাও ক্রীতদাসে পরিণত হতো। একবার কেউ এ অবস্থায় পরিণত হলে সে আর সামাজিক পূর্ব মর্যাদায় ফিরে যেতে পারতোনা। সুদের প্রর্বতন ও ক্রীতদাস প্রথা কবে থেকে শুরু হয়েছিল তার সঠিক ইতিহাস নেই। তবে সকল ঐতিহাসিকেরা এ কথা জোর দিয়ে বলেন তা শুরু হয়েছিল প্রাচীন মেসোপটেমিয়া ও মিশরীয় সভ্যতার উন্নয়নের সাথে সাথে।
মধ্যপ্রাচ্যের যে এলাকায় জলসেচ ও চাষাবাদের সুযোগ সুবিধা কম ছিল সে এলাকায় মানুষ কিভাবে জীবন যাপন করতো সে বিষয়ে একটু অনুমান করা হলে ব্যাপারটি স্পষ্ট হয়ে যায়। কারণ আজকের যুগের মত তারা এত ব্যস্ত ছিলনা। এই ধারণা পাওয়া যাবে যদি আমরা আজকের পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আদিম মানুষের জীবন যাত্রা অবলোকন করি। বর্তমানে যদিও তারা হুবহু আদিম নয়, কিন্তু যুগের বিচারে তা ভাবা হয়। যেমন আফ্রিকার মাছাই, জুলু, বান্টু, মধ্য আমেরিকার মায়ান ও রেড ইন্ডিয়ান, পাপুয়া নিউগিনির পিগমী, নিউজিল্যান্ডের মাউরী এবং কানাডার এস্কিমো। এমন কি বর্তমান তৃতীয় বিশ্বের বেকার মানুষদের জীবন যাত্রার দিকে দৃষ্টি ফেরালে তার কিছুটা ইঙ্গিত পাওয়া যাবে। অথচ আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বৎসর আগে মধ্যপ্রাচ্য এলাকায় মানুষের দৈনন্দিন জীবন যাত্রা ও কথাবার্তার মধ্যে কি কি বিষয় বস্তু অধিক প্রচলিত ছিল তা সহজে’ই অনুমেয়।
“আরবে কাহিনী বর্ণনার প্রচলন ছিল ব্যাপক। একজন দক্ষ কাহিনী বর্ণনাকারী তার কাহিনী বলা শুরু করতো। মানুষ অত্যন্ত আগ্রহ ও আন্তরিকতার সাথে কাহিনী শ্রবন করতো” (সুত্র: সীরাতুন্নবী প্রথম খন্ড পৃষ্ঠা-৭৮ লেখক আল্লামা শিবলী নোমানী ও সৈয়দ সোলাইমান নাদভী রা: আ:)
সমস্ত মধ্যপ্রাচ্য এলাকাটি তখনও মুসা নবী ও ফেরাউন রাজাদের কাহিনী নানা আকারে নানা প্রকারে সমাজের রন্ধ্র রন্ধ্রে ছড়িয়ে রয়েছিল। ছড়িয়ে রয়েছিল যীশু খৃষ্টের কর্ম ও ধর্ম কাহিনী যত্র তত্র। অপরদিকে পিরামিড রাজাদের বিলুপ্ত সভ্যতার বহু কিংবদন্তী ছড়িয়ে রয়েছিল সর্বত্র। তৎসঙ্গে পূজাপার্বণ, নাচ গান, স্তুতি, বশীকরণ ও নানাবিদ উৎসবের সংস্কৃতি ছিল তাদের ঐতিহ্য। আর ছিল দৈত্য-দানব, যাদুকর, ভূতপ্রেত, ডাইনী, জি্ন পরী, পাতালরাজ্য, রাজকুমার, রাজকুমারীর গল্প। স্বর্গের দেবতা সাগর আর মহাকাশ নিয়ে প্রচলিত ছিল আজব আজব গল্প। এছাড়া ঐ সমস্ত এলাকায় হযরত ইব্রাহী, নুহ, লুৎ, হুদ, ইউনুস, ইউসুফ, জাকারিয়া, আইউব, সোহাইব, সালেহ, ইদ্রিস এরকম বহু নবীগণের কেচ্ছা কাহিনী ছড়িয়ে রয়েছিল সর্বত্র। এসমস্ত নবীগণ মারা যাওয়ার পর তাঁদের অনুসরণকারী বা সমপ্রদায়ের কতক তাঁদের ভুলে গেল। আবার সম্প্রদায়ের কিছু সংখ্যক লোক ধর্মীয় রীতি মেনে চললো। এই ধর্মীয় রীতি সম্বন্ধে বিভিন্ন মতামত ও মতভেদ সৃষ্টি হওয়াতে, জাতি ও গোত্রগুলো বহু দলে এবং উপদলে বিভক্ত হয়ে অরাজকতায় জড়িয়ে পড়লো।
সব নবী’তো আর এক সাথে আসেননি, সেজন্য বিভিন্ন কওমের মধ্যে নতুন নবীদের আগমনে পুরাতন নবী সম্বন্ধে মানুষের মনে সন্দেহ এবং সংশয় দেখা দিলো। নতুন এবং পুরাতনের ব্যবধানে মানুষ বহু দ্বিধা বিভক্ত হলো। দূরদৃষ্টির অধিকারী নবী হযরত মোহাম্মদ পূর্ববর্তী সমাজের এই অবস্থা থেকে এবং ব্যক্তিগত প্রতিকুল অভিজ্ঞতা থেকে মনেপ্রাণে এমন একটা সমাজ ব্যবস্থা গঠনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন যাতে সকলের মধ্যে ঐক্য স্থাপিত হয়। এখানে প্রশ্ন জাগতে পারে হযরত মোহাম্মদ লেখাপড়া জানতেননা, তিনি কেমন করে অভিজ্ঞতা পেলেন ? অভিজ্ঞতা তিনি পেয়েছেন তৎকালীন সামাজিক পরিবেশ, প্রচলিত কিংবদন্তী ও প্রচলিত প্রথার মানসিক গবেষণাজাত অনুসন্ধান ও গভীর অনুমানের যুক্তি থেকে।
সেযুগে স্মরণ শক্তি ও বাকশক্তিতে যারা ছিলেন পটু তারা হতেন সমাজের মুখপাত্র ও নেতৃত্ব দানের অগ্রপথিক। এসমস্ত গুণাবলীর জন্য তারা রাজা বা সমাজপতিদের দৃষ্টিগোচর হলে লাভ করতেন বিশেষ বিশেষ পদ, নাহয় ক্ষমতা। সমাজেও তাদের প্রবল প্রতিপত্তি বেড়ে যেতো। ধর্ম প্রচারের জন্য তাঁরা বিভিন্ন ধরণের অলৌকিক ঘটনা মানুষকে দেখাতেন। কিন্তু এজাতীয় ঘটনা যতটা না সত্য, তার চেয়ে হাজার গুণ বেশি ছিল গুজব বা রটনা। গবেষণা এবং ইতিহাস আলোচনার প্রেক্ষাপটে জানা যায়, বিজ্ঞান ভিত্তিক জ্ঞানের অভাবের জন্য এসব ঘটনা অলৌকিক ঘটনা হিসেবে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে স্থান পায়। এমনকি এ যুগেও আমরা পৃথিবীর কোন কোন স্থানে এমন কিছু কিছু মানুষের সন্ধান পেয়ে থাকি, যাদের অনেক ক্রিয়াকর্ম অলৌকিক রহস্যের মত অনুদঘাটিত। পৃথিবীর বহুদেশের লাইব্রেরীতে খোঁজ নিলে মিরাকুল বা অলৌকিক ঘটনাবলীর উপরে লিখিত বহু পুস্তকাদি পাওয়া যায়। যা এই বিজ্ঞানের যুগেও মানুষকে হতভম্ভ করে দেয়। তাই বলে মানুষ বিভ্রান্তিতে ভোগেনা এবং অপপ্রচারেও মত্ত হয়না। মানুষ শুধু এইটুকু বুঝে যে, এর পেছনে নিশ্চয়ই কোন কারণ জড়িত আছে যা এখনও অনুদঘাটিত।
হযরত মোহাম্মদ (সঃ) বাল্যকাল থেকে এতিম হলেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত স্বাধীন। মাতা পিতা না থাকার কারণে দাদা মোতাল্লেব এবং চাচা আবু তালেবের সহানুভুতি ছিল খুব প্রখর। তিনি আদরে সোহাগে অতি স্বাধীনতায় লালিত পালিত হয়েছিলেন। এই স্বাধীনতার জন্য তিনি খুব মুক্তমনে চিন্তা করতে পারতেন। তৎকালিন সমাজের অবস্থা তাঁর হৃদয়ের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে গিয়ে তাঁকে ভাবিয়ে তুলেছিল। আজকের যুগের একটি নেহায়েত গরিব দেশের একটি নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের মতো নবী মোহাম্মদ (সঃ) যদি অনেকগুলো ভাইবোন ও মা বাবা নিয়ে একান্নবর্তী পরিবারে থাকতেন, তাহলে তিনি বুঝতে পারতেন পরিবারের প্রত্যেকটি ব্যাপারে একেক ভাইয়ের একেক মতামত। এক ভাই স্বার্থপর, এক ভাই কৃপণ, এক ভাই সরল, এক ভাই বদরাগী, এক ভাই অতি চালাক। তাদের মধ্যে একেক ভাইয়ের বউ একেক রকমের কূটনীতিতে ওস্তাদ। কে রোজগার করেনি ? কে রোজগার করে ? কার বউ মুখবাজ, কার বউ বেশি খাটুনি খাটছে ? দৈনন্দিন তেল, নুন মরিচ ইত্যাদির অপব্যবহার নিয়ে মন কষাকষি। কার ছেলে বেশি খায় ? কার ছেলে খাবার সুযোগ পায়নি, এসব নিয়ে ভেতরে ভেতরে অসন্তোষ। তাদের ঝগড়াঝাটি নিয়ে বড়দের মধ্যে তিক্ততা। জাগা জমিনের ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে মনোমালিন্যতা। বোনের সংসারে বনিবনা নেই। বোন স্বামীর উপর রাগ করে চলে এসেছে বাপের বাড়ী । আসার সময়ে দুধের বাচ্চাকে নিয়ে এসেছে, কিন্তু আরও দু’টো বাচ্চা রয়েছে বাপের কাছে। তা নিয়ে সংসারে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা । মা বাবা অসুস্থ, চিকিৎসার সুব্যবস্থা নেই। আজ ভালো তো কাল মন্দ। মা বাবা কোন সময় হলে এক ছেলের পক্ষ দেন, আবার অন্য ছেলেকে ভয় পান। আবার অন্য সময়ে মেঝো বউয়ের উপর দোষ চাপান আবার কখনও কখনও তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন। এজাতীয় বহুমুখী সমস্যায় নবী হযরত মোহাম্মদকে ভোগতে হয়নি, দুশ্চিন্তা ও করতে হয়নি। এতিম হলেও তিনি ছিলেন দায়ভারমুক্ত অত্যন্ত স্বাধীন। কম খেয়ে পরে ও ছিলেন মোটামুটি শান্তিতে। এজন্য কেবল’ই তাঁর চিন্তা ছিল কি ভাবে এই অধঃপতিত সমাজকে ঠিক করা যায়। ধর্ম প্রবর্তনের জন্য এই দুশ্চিন্তাহীন জীবন ছিল তাঁর জন্য অতি সহায়ক।
ইসলাম ধর্মের মানুষ বিশ্বাস করেন নবী হযরত মোহাম্মদ (সঃ) কখনও কিছুই অনুসরণ করেননি। কারণ তিনি লিখা পড়া জানতেন না এবং তিনি যা তথ্য দিয়েছেন তা সরাসরি ওহীর মাধ্যমে আল্লাহর কাছ থেকে পেয়েছেন। কিন্তু তিনি লেখা পড়া না জানলেও তাঁর চোখ, মন, কান সব’ই খোলা ছিল, সজাগ ছিল। অতীতের ধর্মীয় কাহিনী তিনি যে শোনেননি এবং মধ্যপ্রাচ্যের তৎকালিন সামাজিক পরিবেশ (যা উপরে বর্ণনা করা হয়েছে) তা থেকে দূরে লালিত পালিত হয়েছিলেন এমন কোন প্রমাণ নেই। মধ্যপ্রাচ্যের ঐ চলতি সভ্যতায় যুগে যুগে নবীদের আর্বিভাব হওয়া ছিল একটি ঐতিহ্য বা ট্র্যাডিশন। একারণে আজ থেকে প্রায় ছয় হাজার বৎসর আগ পর্যন্ত শুধু মধ্য প্রাচ্যে চব্বিশ হাজার নবীগণের আর্বিভাব হয়েছিল বলে কিংবদন্তী শোনা যায়। কিন্তু তাদের সবার নাম জানা যায়নি। ধর্মীয় পুস্তক ঘাটাঘাটি করে যতটুকু জানা গেছে এতে সংখ্যায় প্রায় (৩০০) তিনশোর বেশি নাম পাওয়া যায়নি। জ্ঞানীদের বিশ্বাস ধর্মের গুরুত্বকে অতিমাত্রায় মুল্যায়ন করার জন্য এ অপপ্রচার চালানো হয়েছে। রক্ষণশীল সমাজের মানুষেরা এই তত্ত্বকে বিশ্বাস না করলে ভীষণ পাপ হতে পারে সেজন্য পাপের ভয়ে তারা এই অপপ্রচারকে বিশ্বাস করেছে।

ইসলাম ধর্মের মুল ব্যক্তিত্ব হযরত মোহাম্মদ সেই মধ্যপ্রাচ্যের মিশ্র সভ্যতার এক উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব। অন্যান্য শিশুর মত তিনিও প্রাণভরে গল্প শোনতে ভালোবাসতেন। স্মৃতিশক্তি ছিল অত্যন্ত ভাল। কথায় কাজে যখনই যা শোনতেন তা তাঁর স্মৃতিকোঠায় সংরক্ষিত থাকতো দৃঢ় হয়ে। তাঁর দার্শনিক চিন্তাধারা ছিল অতিশয় বলশালী। তাঁর আধ্যাত্মিক চিন্তা ও মানসিক বিভিন্ন গুণাবলীর জন্য তিনি শয়নে, স্বপনে, হাটতে বসতে অনুভব করতেন একধরনের ধর্মীয় অনুভুতি। আধ্যাত্মিক অনুভুতির কারণে তিনি প্রতিটি নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে অদৃশ্য মনোশক্তির আল্লাহকে তাঁর সঙ্গী করে নিয়েছিলেন মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত। এটাও ছিল তার একটা কৌশল যা তিনি কখনও মুখ ফুটে বলেন নি। অথচ ভিতরে ভিতরে মনের কল্পনা ও নক্সাকে গুহায় বসে বুনতেন একাধারে। মানুষ যে কত বিচিত্র ও ভয়াবহ চরিত্রের অধিকারী হতে পারে তা এই একবিংশ শতাব্দীতে জ্ঞানে বিজ্ঞানে উন্নতির শিখরে না পৌছালে তা কিছুতেই জানা যেতো না। অথচ প্রায় দেড় হাজার বছর আগে এসবের কোন নাম গন্ধ ছিল না। মানুষের চরিত্রকে বিশ্ষেষণ করা কিংবা ব্রেইনের কর্মক্ষমতা সম্পর্কে মানুষের কোন ধারণাই ছিলনা।
যাইহোক তৎকালিন জীবনের নিষ্ঠুর অধোগতি ও সমাজ ব্যবস্থার ত্রুটি হযরত মোহাম্মদকে ভীষণ ভাবে ভাবিয়ে তুলে। তিনি মনোকষ্টে বার বার আহত হতেন। তা থেকে তিনি নিজের সাথে নিজেই প্রতিজ্ঞায় আবদ্ধ হলেন ‘এ সমাজ ব্যবস্থাকে ভাঙতে হবে’। তিনি তা করলেন এবং এসব করতে গিয়ে যে মিশ্র সভ্যতার আবহাওয়ায় লালিত হয়েছিলেন সেই মিশ্র সভ্যতা থেকেই সমস্ত ধর্মের উপকরণ নিয়ে এলেন। যা উপরে উল্লেখ করেছি। নিজে ছিলেন বুদ্ধিমান, তাই মিশ্রসভ্যতার উপকরণ থেকে’ই তার সব টুলস বা হাতিয়ারগুলো সুক্ষ্ণতার কষ্টিপাথরে যাচাই করে করে গড়ে তুললেন এক সংগ্রামী সমাজ ব্যবস্থার ভিত্তি।
ঈসা নবী যেহেতু তাঁর পূর্বতম নবী তাই ঐ নবীর দৈহিক মৃত্যুকে এবং আরও বহু নবীর অকাল মৃত্যু কাহিনীকে তিনি জীবনের পরম উৎসর্গ বলে মনে প্রাণে মেনে নিয়েছিলেন। যার ফলে তিনি ছিলেন অকুতোভয়। আজকের যুগের সাধারণ মোল্লা মামারা জেহাদের নামে নিজের প্রাণ বিসর্জনকে যেমন পুণ্য ও স্বর্গের প্রবেশপত্র বলে মনে করেন, তেমনি নবী মোহাম্মদও মনে করতেন আদর্শের জন্য অন্যান্য নবীদের মতো নিজের প্রাণ উৎসর্গ করা নবীদের আসল দায়িত্ব ও কৃতিত্ব। তাই মৃত্যু ছিল তাঁর কাছে তুচ্ছ ব্যাপার। নিজ আদর্শের বাস্তবায়ন ছিল মুখ্য ব্যাপার। তিনি জানতেন নবীগণ মানুষকে লাঠিপেটা করে সৎপথে আনেননি, সৎপথে এনেছেন মগজ ধোলাই করে। অতএব এপথ অবলম্ভন ছাড়া আর গতি কি ? অতীতের নবীগণ যে তথ্য দিয়েছেন তা অস্বীকার করা হলে নিজের কোন তথ্য বা কথাবার্তা কেউ গ্রাহ্য বা গ্রহণ করবেনা। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন নিজের আদর্শকে বাস্তবায়িত করতে হলে অতীতের আদর্শকে সাথে রাখতে হবে। এই সুত্রের ভিত্তিতেই গুটি গুটি পায়ে শুরু হলো তাঁর সংগ্রামী যাত্রা। তৎকালিন সামাজিক অবস্থায় তিনি তাঁর হৃদয়কে নিয়ে বাধ্য হলেন একটি নতুন ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নিতে। তিনি সে উদ্যোগ নিলেন স্বাধীন মুক্ত চিন্তার মধ্যে। তাঁর স্বাধীন চিন্তাকে প্রসার ও পরিব্যাপ্ত করার জন্য বেছে নিলেন আরও নির্জন স্থান হেরা পাহাড়ের গুহা।
নবী হওয়ার বাসনায় তিনি সেখানে ধ্যান সাধনার মোরাকাবা করতেন নিয়মিত। নবীগণ আধ্যাত্মিক ধ্যান সাধনায় অতিমাত্রায় নিমগ্ন হলে বাল্যকালের রূপকথার স্মৃতিতে কল্পনা আর অনুমানের প্রচণ্ডতায় বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দে শোনতে পান ফেরেশতার ডানা ঝাপটানোর শব্দ। অতিমাত্রায় আধ্যাত্মিক চিন্তায় আচ্ছন্ন হযরত মোহাম্মদ সেভাবেই জিব্রাইলের সন্ধান পেয়েছিলেন। নির্জন স্থানের যে কোন প্রাকৃতিক শব্দের বাস্তবতাকে অনেকে ভিন্ন ভাবে উপলব্দি করে। যেমন ; বাতাশের শোঁ শোঁ শব্দে কেউ ভাবতে পারে ওটা ডাইনী বুড়ির কান্না, কেউ ওটা অনুভব করে পরীদের বাঁশি, কেউ ভাবে পাখি বা কীট পতঙ্গের গান। মরুভূমিতে ধুলিঝড়ের শব্দ, কিংবা পাহাড়ে বাতাস প্রতিহত হওয়ার শব্দ, গুহার মুখে বাতাসের ঘুর্ণি ও আবর্তন-সৃষ্ট শব্দ কিংবা পাহাড়ের মধ্যে শব্দের প্রতিধ্বনিতে মানুষ যে কোন কিছু ভেবে নিতে পারে। অতিমাত্রায় আধ্যাত্মিক ভাববাদের চিন্তায় আচ্ছন্ন হযরত মোহাম্মদ সেভাবেই সামাজিক চিন্তার প্রতিফলনে জিব্রাইল এবং ওহীর সন্ধান পেয়েছিলেন। আগের নবীগণ প্রায় এরকম কিছুটা তারতম্যের মধ্যে না হয় স্বপ্নযোগে ওহী লাভ করতেন। নবী হযরত মোহাম্মদ, ঈসা মুসা ও তৎপূর্ব মহাপুরুষদের ধর্মগুলোকে সত্য বলে মেনে নিয়ে ধর্মপ্রাণ মানুষের সহানুভুতি লাভ করেন। তা থেকে নিজের ইচ্ছা, প্রজ্ঞা ও মেধাগুণের আদর্শে আরেকটি নতুন সমাজ ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠিত করার পরিবেশ তিনি পেয়ে যান। শেষ অবধি তাই হলো, নতুন ধর্মের জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠিত হলো। তা প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে অসীম ধৈর্য ত্যাগ তিতীক্ষার পরীক্ষায় তাঁকে চলতে হয়েছিল। মক্কা ও মদীনার মধ্যে এসব সামপ্রদায়িক ধর্মযুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল। তরবারি ও বর্শা বল্লমের ব্যবহারে অসংখ্য রক্তপাতের মধ্য দিয়েই যুদ্ধ নিস্পত্তি হয়েছে। (ছোট্ট বড় প্রায় ৭৩টি দাঙাযুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল, সুত্র : আর রাহীকুল মাখতুম পুস্তক) যুদ্ধের সমস্ত ক্ষয়ক্ষতি, ক্রন্দন, আহাজারিকে সামাল দেয়া হয়েছিল তিনটি বিষয়বস্তু দিয়ে। (এক) অন্যায় ও দুর্নীতিকে উপড়ানোর আনন্দ দিয়ে (দুই) এসব যুদ্ধ আল্লাহর পক্ষের যুদ্ধ বিনিময়ে স্বর্গ প্রাপ্তির নিশ্চয়তা দিয়ে (তিন) গণিমতের মাল ভোগের আনন্দ দিয়ে।
এসব যুদ্ধের ফলে আরবদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একটি ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কুরাইশ বংশের আধিপত্য। উদ্ধার হয়েছে মূর্তি পূজকদের হাত থেকে ঐতিহাসিক কাবাঘর এবং অর্থনৈতিক আয়ের একটা সুব্যবস্থা। এই জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে মুসলমানরা হয়েছে তৎকালিন শিক্ষা-বঞ্চিত ইহুদী এবং খৃষ্টানদের ঘৃণা ও ইর্ষারপাত্র। গড়ে উঠেছে আলাদা ভাববাদী আধ্যাত্মিক সংস্কৃতি। এই সংস্কৃতির সাথে সামাজিক ভাবে একাত্ম হয়ে মুসলমানরা না চলতে পারে ইহুদীদের সাথে, না খৃষ্টান, বৌদ্ধ, হিন্দু কিংবা কোন উপজাতীয়দের সাথে। এজাতি পরিণত হলো এক সংবেদনশীল জাতিতে। মনের দিকে দিয়ে তারা কাউকে সহজে গ্রহণ করতে পারেনা। তাদের আন্তরিক উপেক্ষার ভাষা হলো ওরা সকলেই বেদ্বীন। তাই কথায় কথায় বিজ্ঞ আলেমগণ কোরাআন হাদীছের বিভিন্ন উক্তি বা বাক্যাবলী প্রয়োগ করেন। এই সংস্কৃতি এই জাতীয়তাবাদ এসেছে মক্কা ও তৎসংলগ্ন এলাকার মানুষের জন্য কিন্তু হাজার হাজার মাইল দুরের পাক-ভারতের মানুষগণ কেন এই সংস্কৃতির জন্য এত উন্মাদ তা আমার মাথায় খেলে না।
যাহোক নবী হযরত মোহাম্মদ নতুন ধর্মে আল্লাহ সম্বন্ধে দিলেন অনেক তথ্য। এসমস্ত তথ্য আগেকার নবীরাও তাদের জাতিকে বলে দিয়েছেন। যেমন তিনি সর্বত্র বিরাজমান, তিনি এক এবং অদ্বিতীয়। তার সমকক্ষ কেউ নেই। তিনি সর্বেসর্বা মহাপরাক্রমশালী। অনেক তথ্যের মধ্যে তিনি আরও দিলেন আল্লাহর শাসন কার্য পরিচালনার বিশেষ বর্ণনা। যা তাঁর নিজের জ্ঞান ও অনুমান থেকে সাধনালব্ধ। মানুষ মনে করে এরকম একটি পদ্ধতি বা ব্যবস্থা না থাকলে আল্লাহ কেমন করে মহাবিশ্ব চালাবেন ? (যেমন করে এক আরবী বুদ্দু টেবিল টেনিস খেলার বল দেখে জিজ্ঞাসা করেছিল এই ডিমটি কোন দেশের মুরগী প্রসব করেছে ? ) মানুষ এভাবেই নিজেদের জাগতিক জীবন থেকে আল্লাহর জীবনকে অনুমান করে। প্রকৃত পক্ষে আল্লাহ কিভাবে এই মহাবিশ্ব নিয়ন্ত্রণ করেন যা তিনি ছাড়া কেউ জানেনা এবং তা তাঁরপক্ষে অতি সহজ কেননা তার সৃষ্টি কৌশলের দিকটি বিবেচনা করে মানুষ সহজে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়। এজন্য ধর্মের সব কথা সত্য বলে প্রমাণ করা যায় না।