সৃষ্টিকর্তার রূপ এবং তাঁর প্রতিনিধি
উত্তর পুরুষ
মানুষ স্বভাবত ধর্ম ও সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী। সৃষ্টিকর্তাকে কেউ দেখতে না পেলেও সকল প্রকার উত্তম গুণের অধিকারী হিসেবে তাঁকে সবাই দেখতে চায়। এই সত্য উপলব্ধির পাশাপাশি মানুষ বাস্তবে এমন কাউকে দেখতে চায়, যার সকল গুণাবলী সমুহ সততায়, নিষ্ঠায় ও বিচক্ষণতায় ভরপুর। অনেকটা সৃষ্টিকর্তার মতো, কিন্তু ঠিক সৃষ্টিকর্তা নয়। অবশেষে সেই মানুষকে সৃষ্টিকর্তার প্রতিনিধি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে মানুষ তাঁদেরকে শ্রদ্ধাঞ্জলী অর্পণ করে। হিন্দু ধর্মের রাম ও কৃষ্ণ, বুদ্ধো ধর্মের গৌতম বুদ্ধো ইসলাম ধর্মের হযরত মোহাম্মদ, খৃষ্টান ধর্মের যীশু খ্রীষ্ট, ইহুদি ধর্মের (মোসেস) বা মুসা, চায়নীজ ধর্ম দর্শনের গুরু কনফুসিয়াস এবং তাওবাদের তাও, এমনকি ভারতের শিখ ধর্মের গুরু নানককে এভাবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। বাস্তবে আরও দেখা গেলো এসব প্রতিনিধিগণ জীবিত থাকা অবস্থায় যে সমস্ত গুণাবলীর অধিকারী ছিলেন মৃত্যুর পর সেই গুণাবলী সমুহ পাহাড় সমান উঁচু করে তাদের চরিত্রের উপর লেপন করা হয়েছে। আর ত্রুটি সমুহকে চিরকালের জন্য চাপা দিয়ে সীলমোহর করে রাখা হয়েছে। পৃথিবীতে কল্যাণকামী মানুষ কিংবা আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে বিবেচিত মানুষেরা কোনদিন কোন ভোজবাজি কিংবা অলৌকিক ঘটনা দেখাননি। এসব তৈরি করেছে এক ধরণের গল্প বিলাসী মানুষ। তারা আবেগের তাড়নায় ভাবে গদগদ হয়ে, কখনও বা নিজের জাতি গোষ্ঠীর প্রভাব বিস্তারের জন্য এসব ঘটনার জন্ম দিয়ে গুজব সৃষ্টি করেছে। হয়তো এর পেছনে অতি আংশিক সত্য আছে। কিন্তু ঐ যুগে তা না করে বরং ঐসব ঘটনায় রংচং লাগিয়ে, তিলকে তালে পরিণত করা হয়েছে। পরবর্তীতে সমাজে তা পৌরাণিক উপাখ্যান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে মানুষের মনে আসন গেড়েছে। এসবের পেছনে কোন নিখুঁত ও বিশুদ্ধ ইতিহাস নেই। ধর্মীয় বিশ্বাস এসমস্ত ঘটনার রেফারেন্স মাত্র। এবারে আসা যাক সৎ গুণের চিন্তা ও বিশ্বাস থেকে সৃষ্টিকর্তার প্রতি যে অগাধ বিশ্বাসের জন্ম নেয়, সেই সৃষ্টিকর্তার রূপ ও আকার কি ?
পৌরাণিক বেদ বলে দিয়েছে ইশ্বর নিরাকার। তা সত্ত্বে ও পরবর্তীকালে অতি রক্ষণশীল হিন্দুরা ইশ্বরের ভিন্ন ভিন্ন শক্তি ও রূপকে এক এক নাম দিয়ে সে নামে তৈরি করেছে ভিন্ন মূর্তি । যা তাদের নিজস্ব কল্পনা ব্যতীত কিছু নয় । অপরদিকে ইসলাম ও বলেছে আল্লাহ এক ও সর্বত্র বিরাজমান, সর্বত্রই রয়েছে তাঁর অস্তিত্ব। আবার কোরআনের কিছু কিছু উক্তি থেকে সৃষ্টিকর্তার আংশিক আকারের চিত্র পাওয়া যায়। এতে করে সৃষ্টিকর্তা সম্বন্ধে (স্ববিরোধিতা বা ) দ্বিমুখী কথা বার্তার সূত্রপাত হয়। একারণে স্বভাবতই মানুষের মনে প্রশ্ন জাগে, ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক নবী হযরত মোহাম্মদ কি নিজের জ্ঞান বিবেক থেকে এধরণের পরিচয় দিয়েছেন ? সৃষ্টিকর্তা সম্বন্ধে কোরআনের আয়াতে যে আংশিক রূপ পাওয়া যায় তা’হলো ;
(ক) আল্লাহ আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর জ্যোতি ; তাঁর জ্যোতির উপমা যেন কুলুঙ্গি যার মধ্যে আছে এক প্রদীপ। প্রদীপটি একটি কাচের আবরণের মধ্যে স্থাপিত, কাঁচের আবরণটি উজ্বল নক্ষত্র সদৃশ্য। পবিত্র জয়তুন বৃক্ষের (তৈল থেকে) এ প্রজ্জ্বলিত হয়। যা প্রাচ্যের ও নয় প্রতীচ্যের ও নয়, অগ্নি সংযোগ না করলে ও মনে হয় তার তৈল যেন উজ্জ্বল আলো দিচ্ছে । জ্যোতির উপর জ্যোতি। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাঁর জ্যোতির দিকে পথ নির্দেশ করেন। আল্লাহ মানুষের জন্য উপমা দিয়ে থাকেন এবং আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ। ছুরা নূর, আয়াত ৩৫। আয়াতটি থেকে স্পষ্টই বুঝা যাচ্ছে আল্লাহর রূপ এক আলোকবর্তিকাময় এবং তা উজ্জ্বল আলোর আবরনীতে ঢাকা। আবরণটি উজ্জ্বল নক্ষত্রের মত দ্যোতিময়। এ আলো, প্রদীপ, নক্ষত্র ইত্যাদির উপমা, বিশালতা যদিও বর্ণনাতীত, এবং ব্যাখ্যা করা কঠিন তথাপি মানুষের মানসরাজ্যে এর একটি বিশেষ চিত্ররূপ ফুটে উঠে। পৃথিবীর বহু বিজ্ঞ জ্ঞানী গুণী এবং জ্যোর্তিবিদরা এরকম মনোভাব পোষণ করেন।
(খ) কেয়ামতের দিন সমস্ত পৃথিবী তাঁর (আল্লাহর) হাতের মুঠোয় থাকবে এবং আকাশমন্ডলী থাকবে ভাঁজ করা অবস্থায় ডান হাতে। অনুবাদ মতান্তরে আকাশ মন্ডলী থাকবে হাতের কব্জিতে মাত্র এক প্যাঁচ। ছুরা জুমআর আয়াত ৬৭।
উক্ত আয়াত থেকে আল্লাহর রূপ বা আকার সম্বন্ধে একটি ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, যেহেতু এখানে হাত এবং মুষ্টির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এতে করে একটি “মহাবিশাল শারীরিক অবয়বের” চিত্র মানসপটে ভেসে উঠে। অপরদিকে হাদীছবেত্তাগণ ও আলীম উলামাগণ স্পষ্ট ভাষায় বলছেন এরকম অনুমান বা ধারণা নিতান্তই অন্যায় এবং পাপ, কারণ আল্লাহ যে কোন শারীরিক কাঠামোর সাদৃশ্য থেকে বাইরে। আল্লাহর বিশালতা ও ক্ষমতা সম্বন্ধে বুঝাতে গিয়ে উপমা হিসেবে তা বলা হয়েছে। কিন্তু কোরআনে তা উপমা কি না কিছুই উল্লেখ করা হয়নি। অথচ উপরে উল্লেখিত ছুরা নূর এর ৩৫ আয়াতে সত্যতা ও উপমার কথা স্পষ্টই উল্লেখ রয়েছে। সুতরাং এখানে দুইটি ছুরার মধ্যে আল্লাহর রুপ ও আকার নিয়ে একটি দ্বন্দ্ব বিরাজমান। অতএব মানুষ কোনটিকে মেনে নেবে ?
(গ) বিশ্ব প্রতিপালকের জ্যোতিতে উদ্ভাসিত হবে বিশ্ব, আমলনামা উপস্থিত করা হবে এবং নবীগণকে ও সাক্ষীদের উপস্থিত করা হবে। ছুরা জুমআর আয়াত ৬৯। উক্ত আয়াত থেকে বুঝা যাচ্ছে আল্লাহর রূপ এক বিশেষ আলোয় গঠিত, যার জ্যোতি ও ক্ষমতা সকল শক্তির উৎস, যা নিজেই সর্বেসর্বা। এখানেও তা উপমা কি না উল্লেখ করা হয়নি। যা সত্য হিসেবে ইসলাম বিশ্বাসী মানুষগণ মেনে নেন।
(ঘ) ফেরেশতাগণ আকাশের প্রান্তদেশে দন্ডায়মান হবে এবং সেদিন আট জন ফেরেশতা তাঁদের প্রতিপালকের আরশকে ধারণ করবে উর্ধ্বদেশে। ছুরা হাক্কাহ আয়াত ১৭।
এ আয়াত থেকেও আল্লাহর একটি বিশেষ অবস্থার চিত্র উপলব্দি করা যায়, যা আজও পৃথিবীর বহু সামাজিক ও রাজকীয় আচার-অনুষ্ঠানে দৃষ্টিগোচর হয়। অতীতে রাজার অনুগত দেহরক্ষী, ক্রীতদাস বা রাজকর্মে নিয়োজিত পেশাদারীরা রাজাকে সিংহাসনে বসিয়ে তা কাঁধে বহন করে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যেত। সুতরাং এরকম বর্ণনা মানুষের মনে আল্লাহর আকার এবং রুপ সম্বন্ধে বিশেষ ধারণার জন্ম দেয়। এরকম ধারণা জন্ম নেওয়ার জন্য মানুষ নিজে দায়ী নয়। মানুষকে আকার ইঙ্গিতে কিছু বলা হবে, অথচ এক স্থানে বলা হবে উপমা অন্য স্থানে কিছুই বলা হবেনা এবং তা নিয়ে কল্পনা করতে কিংবা অনুমান করতে নিষেধ করা হবে এমন আচরণ সত্যকে সুপ্রতিষ্ঠিত করবে কি ভাবে ? এর পর কথা হলো আকাশের প্রান্তদেশ বলতে কি বুঝায় ? আজকের বিজ্ঞান আকাশের প্রান্তদেশ কোথায়ও খুঁজে পায়নি। এরপর ফিরিশতাগণ দণ্ডায়মান হবেন কোন ভূমির স্পর্শে ? না ভাসমান অবস্থায় থাকবেন ? নাকি উড্ডয়ন অবস্থায় আরশ কাঁধে বহন করবেন ? এর ব্যাখ্যা ও নেই।
ইসলাম ধর্মের উপকরণ
উত্তর পুরুষ
হযরত ঈসা (আঃ) বা যীশু খৃষ্টের জন্মের পাঁচশত বৎসর অবদি মধ্যপ্রাচ্যে মানুষের জীবন যাত্রা ও আচার আচরণের মধ্যে যা উল্লেখযোগ্য ছিল তাহলো ; পশু পালন, শিকার, জল প্রাপ্য এলাকায় আদিম পদ্ধতিতে চাষাবাদ, তেজারতি ও সুদ ব্যবসা। মধ্যবিও, গরীব ও মেহনতি মানুষেরা ছিল এই সুদের ক্রীড়নক। দেনার দায়ে এরা নিঃশেষ হতে হতে শেষ অবদি পরিণত হত ক্রীতদাসে। এছাড়া যুদ্ধে পরাজিত সৈনিক এবং বিভিন্ন সামাজিক অপরাধে দন্ডিত অপরাধীরাও ক্রীতদাসে পরিণত হতো। একবার কেউ এ অবস্থায় পরিণত হলে সে আর সামাজিক পূর্ব মর্যাদায় ফিরে যেতে পারতোনা। সুদের প্রর্বতন ও ক্রীতদাস প্রথা কবে থেকে শুরু হয়েছিল তার সঠিক ইতিহাস নেই। তবে সকল ঐতিহাসিকেরা এ কথা জোর দিয়ে বলেন তা শুরু হয়েছিল প্রাচীন মেসোপটেমিয়া ও মিশরীয় সভ্যতার উন্নয়নের সাথে সাথে।
মধ্যপ্রাচ্যের যে এলাকায় জলসেচ ও চাষাবাদের সুযোগ সুবিধা কম ছিল সে এলাকায় মানুষ কিভাবে জীবন যাপন করতো সে বিষয়ে একটু অনুমান করা হলে ব্যাপারটি স্পষ্ট হয়ে যায়। কারণ আজকের যুগের মত তারা এত ব্যস্ত ছিলনা। এই ধারণা পাওয়া যাবে যদি আমরা আজকের পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আদিম মানুষের জীবন যাত্রা অবলোকন করি। বর্তমানে যদিও তারা হুবহু আদিম নয়, কিন্তু যুগের বিচারে তা ভাবা হয়। যেমন আফ্রিকার মাছাই, জুলু, বান্টু, মধ্য আমেরিকার মায়ান ও রেড ইন্ডিয়ান, পাপুয়া নিউগিনির পিগমী, নিউজিল্যান্ডের মাউরী এবং কানাডার এস্কিমো। এমন কি বর্তমান তৃতীয় বিশ্বের বেকার মানুষদের জীবন যাত্রার দিকে দৃষ্টি ফেরালে তার কিছুটা ইঙ্গিত পাওয়া যাবে। অথচ আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বৎসর আগে মধ্যপ্রাচ্য এলাকায় মানুষের দৈনন্দিন জীবন যাত্রা ও কথাবার্তার মধ্যে কি কি বিষয় বস্তু অধিক প্রচলিত ছিল তা সহজে’ই অনুমেয়।
“আরবে কাহিনী বর্ণনার প্রচলন ছিল ব্যাপক। একজন দক্ষ কাহিনী বর্ণনাকারী তার কাহিনী বলা শুরু করতো। মানুষ অত্যন্ত আগ্রহ ও আন্তরিকতার সাথে কাহিনী শ্রবন করতো” (সুত্র: সীরাতুন্নবী প্রথম খন্ড পৃষ্ঠা-৭৮ লেখক আল্লামা শিবলী নোমানী ও সৈয়দ সোলাইমান নাদভী রা: আ:)
সমস্ত মধ্যপ্রাচ্য এলাকাটি তখনও মুসা নবী ও ফেরাউন রাজাদের কাহিনী নানা আকারে নানা প্রকারে সমাজের রন্ধ্র রন্ধ্রে ছড়িয়ে রয়েছিল। ছড়িয়ে রয়েছিল যীশু খৃষ্টের কর্ম ও ধর্ম কাহিনী যত্র তত্র। অপরদিকে পিরামিড রাজাদের বিলুপ্ত সভ্যতার বহু কিংবদন্তী ছড়িয়ে রয়েছিল সর্বত্র। তৎসঙ্গে পূজাপার্বণ, নাচ গান, স্তুতি, বশীকরণ ও নানাবিদ উৎসবের সংস্কৃতি ছিল তাদের ঐতিহ্য। আর ছিল দৈত্য-দানব, যাদুকর, ভূতপ্রেত, ডাইনী, জি্ন পরী, পাতালরাজ্য, রাজকুমার, রাজকুমারীর গল্প। স্বর্গের দেবতা সাগর আর মহাকাশ নিয়ে প্রচলিত ছিল আজব আজব গল্প। এছাড়া ঐ সমস্ত এলাকায় হযরত ইব্রাহী, নুহ, লুৎ, হুদ, ইউনুস, ইউসুফ, জাকারিয়া, আইউব, সোহাইব, সালেহ, ইদ্রিস এরকম বহু নবীগণের কেচ্ছা কাহিনী ছড়িয়ে রয়েছিল সর্বত্র। এসমস্ত নবীগণ মারা যাওয়ার পর তাঁদের অনুসরণকারী বা সমপ্রদায়ের কতক তাঁদের ভুলে গেল। আবার সম্প্রদায়ের কিছু সংখ্যক লোক ধর্মীয় রীতি মেনে চললো। এই ধর্মীয় রীতি সম্বন্ধে বিভিন্ন মতামত ও মতভেদ সৃষ্টি হওয়াতে, জাতি ও গোত্রগুলো বহু দলে এবং উপদলে বিভক্ত হয়ে অরাজকতায় জড়িয়ে পড়লো।
সব নবী’তো আর এক সাথে আসেননি, সেজন্য বিভিন্ন কওমের মধ্যে নতুন নবীদের আগমনে পুরাতন নবী সম্বন্ধে মানুষের মনে সন্দেহ এবং সংশয় দেখা দিলো। নতুন এবং পুরাতনের ব্যবধানে মানুষ বহু দ্বিধা বিভক্ত হলো। দূরদৃষ্টির অধিকারী নবী হযরত মোহাম্মদ পূর্ববর্তী সমাজের এই অবস্থা থেকে এবং ব্যক্তিগত প্রতিকুল অভিজ্ঞতা থেকে মনেপ্রাণে এমন একটা সমাজ ব্যবস্থা গঠনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন যাতে সকলের মধ্যে ঐক্য স্থাপিত হয়। এখানে প্রশ্ন জাগতে পারে হযরত মোহাম্মদ লেখাপড়া জানতেননা, তিনি কেমন করে অভিজ্ঞতা পেলেন ? অভিজ্ঞতা তিনি পেয়েছেন তৎকালীন সামাজিক পরিবেশ, প্রচলিত কিংবদন্তী ও প্রচলিত প্রথার মানসিক গবেষণাজাত অনুসন্ধান ও গভীর অনুমানের যুক্তি থেকে।
সেযুগে স্মরণ শক্তি ও বাকশক্তিতে যারা ছিলেন পটু তারা হতেন সমাজের মুখপাত্র ও নেতৃত্ব দানের অগ্রপথিক। এসমস্ত গুণাবলীর জন্য তারা রাজা বা সমাজপতিদের দৃষ্টিগোচর হলে লাভ করতেন বিশেষ বিশেষ পদ, নাহয় ক্ষমতা। সমাজেও তাদের প্রবল প্রতিপত্তি বেড়ে যেতো। ধর্ম প্রচারের জন্য তাঁরা বিভিন্ন ধরণের অলৌকিক ঘটনা মানুষকে দেখাতেন। কিন্তু এজাতীয় ঘটনা যতটা না সত্য, তার চেয়ে হাজার গুণ বেশি ছিল গুজব বা রটনা। গবেষণা এবং ইতিহাস আলোচনার প্রেক্ষাপটে জানা যায়, বিজ্ঞান ভিত্তিক জ্ঞানের অভাবের জন্য এসব ঘটনা অলৌকিক ঘটনা হিসেবে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে স্থান পায়। এমনকি এ যুগেও আমরা পৃথিবীর কোন কোন স্থানে এমন কিছু কিছু মানুষের সন্ধান পেয়ে থাকি, যাদের অনেক ক্রিয়াকর্ম অলৌকিক রহস্যের মত অনুদঘাটিত। পৃথিবীর বহুদেশের লাইব্রেরীতে খোঁজ নিলে মিরাকুল বা অলৌকিক ঘটনাবলীর উপরে লিখিত বহু পুস্তকাদি পাওয়া যায়। যা এই বিজ্ঞানের যুগেও মানুষকে হতভম্ভ করে দেয়। তাই বলে মানুষ বিভ্রান্তিতে ভোগেনা এবং অপপ্রচারেও মত্ত হয়না। মানুষ শুধু এইটুকু বুঝে যে, এর পেছনে নিশ্চয়ই কোন কারণ জড়িত আছে যা এখনও অনুদঘাটিত।
হযরত মোহাম্মদ (সঃ) বাল্যকাল থেকে এতিম হলেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত স্বাধীন। মাতা পিতা না থাকার কারণে দাদা মোতাল্লেব এবং চাচা আবু তালেবের সহানুভুতি ছিল খুব প্রখর। তিনি আদরে সোহাগে অতি স্বাধীনতায় লালিত পালিত হয়েছিলেন। এই স্বাধীনতার জন্য তিনি খুব মুক্তমনে চিন্তা করতে পারতেন। তৎকালিন সমাজের অবস্থা তাঁর হৃদয়ের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে গিয়ে তাঁকে ভাবিয়ে তুলেছিল। আজকের যুগের একটি নেহায়েত গরিব দেশের একটি নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের মতো নবী মোহাম্মদ (সঃ) যদি অনেকগুলো ভাইবোন ও মা বাবা নিয়ে একান্নবর্তী পরিবারে থাকতেন, তাহলে তিনি বুঝতে পারতেন পরিবারের প্রত্যেকটি ব্যাপারে একেক ভাইয়ের একেক মতামত। এক ভাই স্বার্থপর, এক ভাই কৃপণ, এক ভাই সরল, এক ভাই বদরাগী, এক ভাই অতি চালাক। তাদের মধ্যে একেক ভাইয়ের বউ একেক রকমের কূটনীতিতে ওস্তাদ। কে রোজগার করেনি ? কে রোজগার করে ? কার বউ মুখবাজ, কার বউ বেশি খাটুনি খাটছে ? দৈনন্দিন তেল, নুন মরিচ ইত্যাদির অপব্যবহার নিয়ে মন কষাকষি। কার ছেলে বেশি খায় ? কার ছেলে খাবার সুযোগ পায়নি, এসব নিয়ে ভেতরে ভেতরে অসন্তোষ। তাদের ঝগড়াঝাটি নিয়ে বড়দের মধ্যে তিক্ততা। জাগা জমিনের ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে মনোমালিন্যতা। বোনের সংসারে বনিবনা নেই। বোন স্বামীর উপর রাগ করে চলে এসেছে বাপের বাড়ী । আসার সময়ে দুধের বাচ্চাকে নিয়ে এসেছে, কিন্তু আরও দু’টো বাচ্চা রয়েছে বাপের কাছে। তা নিয়ে সংসারে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা । মা বাবা অসুস্থ, চিকিৎসার সুব্যবস্থা নেই। আজ ভালো তো কাল মন্দ। মা বাবা কোন সময় হলে এক ছেলের পক্ষ দেন, আবার অন্য ছেলেকে ভয় পান। আবার অন্য সময়ে মেঝো বউয়ের উপর দোষ চাপান আবার কখনও কখনও তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন। এজাতীয় বহুমুখী সমস্যায় নবী হযরত মোহাম্মদকে ভোগতে হয়নি, দুশ্চিন্তা ও করতে হয়নি। এতিম হলেও তিনি ছিলেন দায়ভারমুক্ত অত্যন্ত স্বাধীন। কম খেয়ে পরে ও ছিলেন মোটামুটি শান্তিতে। এজন্য কেবল’ই তাঁর চিন্তা ছিল কি ভাবে এই অধঃপতিত সমাজকে ঠিক করা যায়। ধর্ম প্রবর্তনের জন্য এই দুশ্চিন্তাহীন জীবন ছিল তাঁর জন্য অতি সহায়ক।
ইসলাম ধর্মের মানুষ বিশ্বাস করেন নবী হযরত মোহাম্মদ (সঃ) কখনও কিছুই অনুসরণ করেননি। কারণ তিনি লিখা পড়া জানতেন না এবং তিনি যা তথ্য দিয়েছেন তা সরাসরি ওহীর মাধ্যমে আল্লাহর কাছ থেকে পেয়েছেন। কিন্তু তিনি লেখা পড়া না জানলেও তাঁর চোখ, মন, কান সব’ই খোলা ছিল, সজাগ ছিল। অতীতের ধর্মীয় কাহিনী তিনি যে শোনেননি এবং মধ্যপ্রাচ্যের তৎকালিন সামাজিক পরিবেশ (যা উপরে বর্ণনা করা হয়েছে) তা থেকে দূরে লালিত পালিত হয়েছিলেন এমন কোন প্রমাণ নেই। মধ্যপ্রাচ্যের ঐ চলতি সভ্যতায় যুগে যুগে নবীদের আর্বিভাব হওয়া ছিল একটি ঐতিহ্য বা ট্র্যাডিশন। একারণে আজ থেকে প্রায় ছয় হাজার বৎসর আগ পর্যন্ত শুধু মধ্য প্রাচ্যে চব্বিশ হাজার নবীগণের আর্বিভাব হয়েছিল বলে কিংবদন্তী শোনা যায়। কিন্তু তাদের সবার নাম জানা যায়নি। ধর্মীয় পুস্তক ঘাটাঘাটি করে যতটুকু জানা গেছে এতে সংখ্যায় প্রায় (৩০০) তিনশোর বেশি নাম পাওয়া যায়নি। জ্ঞানীদের বিশ্বাস ধর্মের গুরুত্বকে অতিমাত্রায় মুল্যায়ন করার জন্য এ অপপ্রচার চালানো হয়েছে। রক্ষণশীল সমাজের মানুষেরা এই তত্ত্বকে বিশ্বাস না করলে ভীষণ পাপ হতে পারে সেজন্য পাপের ভয়ে তারা এই অপপ্রচারকে বিশ্বাস করেছে।
ইসলাম ধর্মের মুল ব্যক্তিত্ব হযরত মোহাম্মদ সেই মধ্যপ্রাচ্যের মিশ্র সভ্যতার এক উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব। অন্যান্য শিশুর মত তিনিও প্রাণভরে গল্প শোনতে ভালোবাসতেন। স্মৃতিশক্তি ছিল অত্যন্ত ভাল। কথায় কাজে যখনই যা শোনতেন তা তাঁর স্মৃতিকোঠায় সংরক্ষিত থাকতো দৃঢ় হয়ে। তাঁর দার্শনিক চিন্তাধারা ছিল অতিশয় বলশালী। তাঁর আধ্যাত্মিক চিন্তা ও মানসিক বিভিন্ন গুণাবলীর জন্য তিনি শয়নে, স্বপনে, হাটতে বসতে অনুভব করতেন একধরনের ধর্মীয় অনুভুতি। আধ্যাত্মিক অনুভুতির কারণে তিনি প্রতিটি নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে অদৃশ্য মনোশক্তির আল্লাহকে তাঁর সঙ্গী করে নিয়েছিলেন মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত। এটাও ছিল তার একটা কৌশল যা তিনি কখনও মুখ ফুটে বলেন নি। অথচ ভিতরে ভিতরে মনের কল্পনা ও নক্সাকে গুহায় বসে বুনতেন একাধারে। মানুষ যে কত বিচিত্র ও ভয়াবহ চরিত্রের অধিকারী হতে পারে তা এই একবিংশ শতাব্দীতে জ্ঞানে বিজ্ঞানে উন্নতির শিখরে না পৌছালে তা কিছুতেই জানা যেতো না। অথচ প্রায় দেড় হাজার বছর আগে এসবের কোন নাম গন্ধ ছিল না। মানুষের চরিত্রকে বিশ্ষেষণ করা কিংবা ব্রেইনের কর্মক্ষমতা সম্পর্কে মানুষের কোন ধারণাই ছিলনা।
যাইহোক তৎকালিন জীবনের নিষ্ঠুর অধোগতি ও সমাজ ব্যবস্থার ত্রুটি হযরত মোহাম্মদকে ভীষণ ভাবে ভাবিয়ে তুলে। তিনি মনোকষ্টে বার বার আহত হতেন। তা থেকে তিনি নিজের সাথে নিজেই প্রতিজ্ঞায় আবদ্ধ হলেন ‘এ সমাজ ব্যবস্থাকে ভাঙতে হবে’। তিনি তা করলেন এবং এসব করতে গিয়ে যে মিশ্র সভ্যতার আবহাওয়ায় লালিত হয়েছিলেন সেই মিশ্র সভ্যতা থেকেই সমস্ত ধর্মের উপকরণ নিয়ে এলেন। যা উপরে উল্লেখ করেছি। নিজে ছিলেন বুদ্ধিমান, তাই মিশ্রসভ্যতার উপকরণ থেকে’ই তার সব টুলস বা হাতিয়ারগুলো সুক্ষ্ণতার কষ্টিপাথরে যাচাই করে করে গড়ে তুললেন এক সংগ্রামী সমাজ ব্যবস্থার ভিত্তি।
ঈসা নবী যেহেতু তাঁর পূর্বতম নবী তাই ঐ নবীর দৈহিক মৃত্যুকে এবং আরও বহু নবীর অকাল মৃত্যু কাহিনীকে তিনি জীবনের পরম উৎসর্গ বলে মনে প্রাণে মেনে নিয়েছিলেন। যার ফলে তিনি ছিলেন অকুতোভয়। আজকের যুগের সাধারণ মোল্লা মামারা জেহাদের নামে নিজের প্রাণ বিসর্জনকে যেমন পুণ্য ও স্বর্গের প্রবেশপত্র বলে মনে করেন, তেমনি নবী মোহাম্মদও মনে করতেন আদর্শের জন্য অন্যান্য নবীদের মতো নিজের প্রাণ উৎসর্গ করা নবীদের আসল দায়িত্ব ও কৃতিত্ব। তাই মৃত্যু ছিল তাঁর কাছে তুচ্ছ ব্যাপার। নিজ আদর্শের বাস্তবায়ন ছিল মুখ্য ব্যাপার। তিনি জানতেন নবীগণ মানুষকে লাঠিপেটা করে সৎপথে আনেননি, সৎপথে এনেছেন মগজ ধোলাই করে। অতএব এপথ অবলম্ভন ছাড়া আর গতি কি ? অতীতের নবীগণ যে তথ্য দিয়েছেন তা অস্বীকার করা হলে নিজের কোন তথ্য বা কথাবার্তা কেউ গ্রাহ্য বা গ্রহণ করবেনা। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন নিজের আদর্শকে বাস্তবায়িত করতে হলে অতীতের আদর্শকে সাথে রাখতে হবে। এই সুত্রের ভিত্তিতেই গুটি গুটি পায়ে শুরু হলো তাঁর সংগ্রামী যাত্রা। তৎকালিন সামাজিক অবস্থায় তিনি তাঁর হৃদয়কে নিয়ে বাধ্য হলেন একটি নতুন ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নিতে। তিনি সে উদ্যোগ নিলেন স্বাধীন মুক্ত চিন্তার মধ্যে। তাঁর স্বাধীন চিন্তাকে প্রসার ও পরিব্যাপ্ত করার জন্য বেছে নিলেন আরও নির্জন স্থান হেরা পাহাড়ের গুহা।
নবী হওয়ার বাসনায় তিনি সেখানে ধ্যান সাধনার মোরাকাবা করতেন নিয়মিত। নবীগণ আধ্যাত্মিক ধ্যান সাধনায় অতিমাত্রায় নিমগ্ন হলে বাল্যকালের রূপকথার স্মৃতিতে কল্পনা আর অনুমানের প্রচণ্ডতায় বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দে শোনতে পান ফেরেশতার ডানা ঝাপটানোর শব্দ। অতিমাত্রায় আধ্যাত্মিক চিন্তায় আচ্ছন্ন হযরত মোহাম্মদ সেভাবেই জিব্রাইলের সন্ধান পেয়েছিলেন। নির্জন স্থানের যে কোন প্রাকৃতিক শব্দের বাস্তবতাকে অনেকে ভিন্ন ভাবে উপলব্দি করে। যেমন ; বাতাশের শোঁ শোঁ শব্দে কেউ ভাবতে পারে ওটা ডাইনী বুড়ির কান্না, কেউ ওটা অনুভব করে পরীদের বাঁশি, কেউ ভাবে পাখি বা কীট পতঙ্গের গান। মরুভূমিতে ধুলিঝড়ের শব্দ, কিংবা পাহাড়ে বাতাস প্রতিহত হওয়ার শব্দ, গুহার মুখে বাতাসের ঘুর্ণি ও আবর্তন-সৃষ্ট শব্দ কিংবা পাহাড়ের মধ্যে শব্দের প্রতিধ্বনিতে মানুষ যে কোন কিছু ভেবে নিতে পারে। অতিমাত্রায় আধ্যাত্মিক ভাববাদের চিন্তায় আচ্ছন্ন হযরত মোহাম্মদ সেভাবেই সামাজিক চিন্তার প্রতিফলনে জিব্রাইল এবং ওহীর সন্ধান পেয়েছিলেন। আগের নবীগণ প্রায় এরকম কিছুটা তারতম্যের মধ্যে না হয় স্বপ্নযোগে ওহী লাভ করতেন। নবী হযরত মোহাম্মদ, ঈসা মুসা ও তৎপূর্ব মহাপুরুষদের ধর্মগুলোকে সত্য বলে মেনে নিয়ে ধর্মপ্রাণ মানুষের সহানুভুতি লাভ করেন। তা থেকে নিজের ইচ্ছা, প্রজ্ঞা ও মেধাগুণের আদর্শে আরেকটি নতুন সমাজ ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠিত করার পরিবেশ তিনি পেয়ে যান। শেষ অবধি তাই হলো, নতুন ধর্মের জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠিত হলো। তা প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে অসীম ধৈর্য ত্যাগ তিতীক্ষার পরীক্ষায় তাঁকে চলতে হয়েছিল। মক্কা ও মদীনার মধ্যে এসব সামপ্রদায়িক ধর্মযুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল। তরবারি ও বর্শা বল্লমের ব্যবহারে অসংখ্য রক্তপাতের মধ্য দিয়েই যুদ্ধ নিস্পত্তি হয়েছে। (ছোট্ট বড় প্রায় ৭৩টি দাঙাযুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল, সুত্র : আর রাহীকুল মাখতুম পুস্তক) যুদ্ধের সমস্ত ক্ষয়ক্ষতি, ক্রন্দন, আহাজারিকে সামাল দেয়া হয়েছিল তিনটি বিষয়বস্তু দিয়ে। (এক) অন্যায় ও দুর্নীতিকে উপড়ানোর আনন্দ দিয়ে (দুই) এসব যুদ্ধ আল্লাহর পক্ষের যুদ্ধ বিনিময়ে স্বর্গ প্রাপ্তির নিশ্চয়তা দিয়ে (তিন) গণিমতের মাল ভোগের আনন্দ দিয়ে।
এসব যুদ্ধের ফলে আরবদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একটি ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কুরাইশ বংশের আধিপত্য। উদ্ধার হয়েছে মূর্তি পূজকদের হাত থেকে ঐতিহাসিক কাবাঘর এবং অর্থনৈতিক আয়ের একটা সুব্যবস্থা। এই জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে মুসলমানরা হয়েছে তৎকালিন শিক্ষা-বঞ্চিত ইহুদী এবং খৃষ্টানদের ঘৃণা ও ইর্ষারপাত্র। গড়ে উঠেছে আলাদা ভাববাদী আধ্যাত্মিক সংস্কৃতি। এই সংস্কৃতির সাথে সামাজিক ভাবে একাত্ম হয়ে মুসলমানরা না চলতে পারে ইহুদীদের সাথে, না খৃষ্টান, বৌদ্ধ, হিন্দু কিংবা কোন উপজাতীয়দের সাথে। এজাতি পরিণত হলো এক সংবেদনশীল জাতিতে। মনের দিকে দিয়ে তারা কাউকে সহজে গ্রহণ করতে পারেনা। তাদের আন্তরিক উপেক্ষার ভাষা হলো ওরা সকলেই বেদ্বীন। তাই কথায় কথায় বিজ্ঞ আলেমগণ কোরাআন হাদীছের বিভিন্ন উক্তি বা বাক্যাবলী প্রয়োগ করেন। এই সংস্কৃতি এই জাতীয়তাবাদ এসেছে মক্কা ও তৎসংলগ্ন এলাকার মানুষের জন্য কিন্তু হাজার হাজার মাইল দুরের পাক-ভারতের মানুষগণ কেন এই সংস্কৃতির জন্য এত উন্মাদ তা আমার মাথায় খেলে না।
যাহোক নবী হযরত মোহাম্মদ নতুন ধর্মে আল্লাহ সম্বন্ধে দিলেন অনেক তথ্য। এসমস্ত তথ্য আগেকার নবীরাও তাদের জাতিকে বলে দিয়েছেন। যেমন তিনি সর্বত্র বিরাজমান, তিনি এক এবং অদ্বিতীয়। তার সমকক্ষ কেউ নেই। তিনি সর্বেসর্বা মহাপরাক্রমশালী। অনেক তথ্যের মধ্যে তিনি আরও দিলেন আল্লাহর শাসন কার্য পরিচালনার বিশেষ বর্ণনা। যা তাঁর নিজের জ্ঞান ও অনুমান থেকে সাধনালব্ধ। মানুষ মনে করে এরকম একটি পদ্ধতি বা ব্যবস্থা না থাকলে আল্লাহ কেমন করে মহাবিশ্ব চালাবেন ? (যেমন করে এক আরবী বুদ্দু টেবিল টেনিস খেলার বল দেখে জিজ্ঞাসা করেছিল এই ডিমটি কোন দেশের মুরগী প্রসব করেছে ? ) মানুষ এভাবেই নিজেদের জাগতিক জীবন থেকে আল্লাহর জীবনকে অনুমান করে। প্রকৃত পক্ষে আল্লাহ কিভাবে এই মহাবিশ্ব নিয়ন্ত্রণ করেন যা তিনি ছাড়া কেউ জানেনা এবং তা তাঁরপক্ষে অতি সহজ কেননা তার সৃষ্টি কৌশলের দিকটি বিবেচনা করে মানুষ সহজে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়। এজন্য ধর্মের সব কথা সত্য বলে প্রমাণ করা যায় না।
আপনার লেখার উপরেই আবার আলোচনা করি,এর আগের পর্বে করেছিলাম কিন্তু আপনার কোন সাড়া শব্দ পাইলাম না। আপনে এর আগের বারেও যা লিখেছিলেন, এবারও ঠিক একই জিনিস লিখেছেন সেটা হলঃ মোহাম্মদ সেই সময়কার অন্ধ, বর্বর জাতিকে ঐক্য বদ্ধ করার জন্য, সমাজকে নতুন দিক নির্দেশনার ইত্যাদি ইত্যাদি… জন্য উঠে পড়ে লেগেছিলেন…
যাইহোক প্রথমে মানলাম তিনি আল্লাহর নাম ভাঙ্গাইয়ে এইসব কাজ করেছিলেন, নিজেকে নবী দাবি করেছিলেন ইত্যাদি…
কিন্তু একটা বিষয় লক্ষনীয় সেটা হল যাই করুক তিনি সমাজকে ঐক্য করার চিন্তা করেই করেছিলেন, তাইনা? আপনার লেখা অনুযায়ী। তাহলে খারাপ কি? আগেরবারেও বলেছিলাম, এইবারও বলিঃ আপনেও যদি যুবক হয়ে থাকেন, তাহলে আপনেও চলে যান কোন গুহায়, দেখুননা আমাদের মত বাংলাদেশকে ঐক্য, সুস্থ স্বাধীন সুন্দর চিন্তার মানুষ তৈরি করতে আপনেও পারেন কিনা? দেখুন না আপনার কতজন মতানুসারী হয়। কথা দিলাম আমিও আপনার সাথে ২৫ বছর পর এক হব। বা চলেন আমিও আপনার সাথে যাই। আরাধনার বিষয়টি আপনে একটু দেখুন – নিজের যৌবন কাল একটি গুহার পিছনে কাটিয়ে দেয়া মুখের কথা নয়। আধ্যাত্ন কি সেই বিষয়েও আশা রাখি আপনার তখন একটু ধারনা আসত। ইহা শুধু মনের কল্পনা, বা ভাব যে নয় সে বিষয়ে একটু ধারনা নেয়া দরকার। হয়ত দেখবেন তখন মুক্তমনায় যতজন আপনার এই লেখায় তালি বাজাচ্ছে হয়ত তারাও আপনার অনুসারী হবেন। মোহাম্মদ তিনি সেই যুগে সেই দেশের, জাতির জন্য হেদায়েত স্বরুপ ছিলেন- (যদিও সমগ্র বিশ্বের উপর তিনি রহমত স্বরুপ, আরও অনেক কিছু, থাক সেই বিষয় না বলি- আপনার লেখার উপরেই হালকার উপর ঝাপসা আলোচনা করি)- পরবর্তিতে একধরনের ভোগ বাদি, লোভি, কামুকদের হাতে পড়ে ইসলামের সর্বনাশ হয়, সেই ভোগিদের দেয়া মিথ্যা তফসিরের উপর আপনে আলোচনা না করে বরং আসুন তিনি তার দেশের জন্য যেমন করেছিলেন আপনে সেইরকম করেন। সব যখন বুঝেই ফেলেছেন তাহলে রাস্তায় নামতে দোষ কি? আর রাস্তায় নামলে যুদ্ধ হতই আর বিশেষ করে ভোগবাদী আমাদের দেশের মানুষের উপর যখনই সত্যের আঘাত আনবেন যুদ্ধ বাদবেই- তখন আপনে গনিমতের মাল কি করতেন? নাকি আপনে যুদ্ধ দেখলেই দৌড় দিবেন আপনার অনুসারীরে রেখে?
যাইহোক মনে কিছু করবেন না। গল্প লেখক হিসাবে আপনার হাত খারাপ না, তবে এই বুদ্ধি দিয়ে মোহাম্মদ (সাঃ) যাচাই করতে যেয়েন না। হয়ত এখানে অনেকের হাতের তালি পাবেন, কিন্তু আসলে সমস্ত রচনা পড়ে দেখলাম শেষে আপনার চিন্তা একদমই শুন্য। অনেক ধৈর্য নিয়ে লেখেন বুঝা যায় তবে আপনার ভিতরে সত্য খোজার ধৈর্য নাই বলে মনে হল। কিছু মনে করবেন না। আমি খোটা দিয়ে, বা অন্য কোনভাবে ব্যঙ্গ করে বলছিনা।
যাইহোক লেখা একটু বড় হয়ে গেল।
@ফুয়াদ,
কেউ কোন বাজে মন্তব্য করে নি , হাদিসের আর কোরানের বানী ঘেটে মোহাম্মদের যে পরিচয় পাওয়া গেছে নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে সেটাই লেখা হয়েছে। আপনার মন আর চোখ অন্ধবিশ্বাসে অন্ধ তাই আপনি কোন কিছু দেখেন না । আপনি অন্ধ হলে আমাদেরকেও অন্ধ হতে হবে , এ রকম ধারনা আপনার হলো কি করে ? এখানে কেউ বাজে মন্তব্য করেনি কারন এখানে কেউ আপনার চাইতে বিদ্যা বুদ্ধি বা সৌজন্যতা প্রদর্শনে কেউ কম না ।
ইহা একটি মিথ্যা কথা। ইহা তার নামে একটি অপবাদ, যদিও তিনি নিজেকে সেইভাবে শিক্ষিত আকারে কখনই প্রকাশ করেন নি- তবে তিনি অশিক্ষিত ছিলেন না। পরবর্তিতে তার নামে মিথ্যা হাদিস বের করা হয়। যিনি সেই সময়ে খুব ভাল পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন, যিনি ছোটকাল থেকেই ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছিলেন, বিভিন্ন দেশে ভ্রমন করেছিলেন তিনি অশিক্ষিত হয় কিভাবে? সব থেকে বড় কথা হল সম্ভবত তিনি কোরানে দুইটি শব্দ যোগ করেছিলেন (লাম-আলিফ, হামজা)। তিনি অশিক্ষিত হয় কিভাবে ?
@Russell, আচ্ছা ভাই আপনি কি আমাদের সেই কোরান ওনলি মতবাদের রাসেল নাকি ?
@ভবঘুরে,
ইনি আবার কে?
@Russell,
আপনি ঠিকই বলেছেন- মুহাম্মদ অশিক্ষিত ছিলেন এই কথা ঠিক নয়। আমি একটু অন্যদৃষ্টিতে এটার প্রমাণ দেখতে পাই।
স্বয়ং জিব্রাইল ফেরেস্তা মুহাম্মদকে লেখাপড়া শিখিয়েছেন। জিব্রাইল এসে মুহাম্মদকে বললেন- ‘পড়, তোমার প্রভুর নামে, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।’ অতএব মুহম্মদের শিক্ষক ছিলেন স্বয়ং জিব্রাইল। জিব্রাইল মুহাম্মদকে বুকে জড়িয়ে ধরে চাপ দিয়ে অক্ষর জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছেন।
আহা, এমন সৌভাগ্য যদি আমার হইতো ….তাহলে আমি আল্লারে প্রণাম করতাম। অবশ্য গাজা খাইলে এমন হইতেও পারে। চিন্তা করছি আগামী কয়েকদিনের মধ্যে একটু মাজারে মাজারে ঢু মারবো।
@মোস্তাফিজ,
আপনার বুদ্ধিতে যা আছে আপনে সেইটাই করবেন।
মহম্মদ যে আল্লার বাণী প্রচার করেছিলেন তা কি গাজা খেয়ে। কারণ ইসলামে মদ নিষিদ্ধ হলে অ গাজা নিষিদ্ধ নয়। যেমন হিন্দু সাধুরা গাজা খেয়ে তপস্যা করত আর অলীক কল্পনায় ভগবান দেখত।আর প্রচার করত তার ভগবানের সাথে সাক্ষাত হয়েছে। যেমন আমার পাশের বাড়ীর এক গেরুয়া সাধু আছে সে সন্ধ্যার পর প্রচুর গাজা খেয়ে শুয়ে থাকত আর তার বিশ্বাস রোজ মহাদেব তার সংগে ঘুমান। একদিন রাতে হয়েছে কি? সেই সাধুর চিৎকারে আমরা তার ঘরে গিয়ে দরজা ভেংগে দেখলাম তার গলায় একটা চাদর এমন ভাবে জড়িয়ে গেছে যে প্রায় মরণাপন্ন অবস্থা। আমরা যদি অ তাকে রক্ষা করলাম। পরদিন সে গেয়ে বেড়াতে লাগল মহাদেবের গলার সাপ নাকি তার গলায় পেচিয়ে ধরেছিল। :rotfl:
@সুমিত দেবনাথ,
কিছু লোক ভাবেন ঈশ্বরের কাছে চলে গেছেন (ঈশ্বরের পেয়ারা বান্দা)। সিদ্ধি খেয়ে সিদ্ধিলাভ করেন। যেমন, আপনার গেরুয়া সাধু।
ধূর্ত লোকেরা ঈশ্বর সৃষ্টি (fictitous) করেন নিজের মত (image) করে। আমজনতাকে নিয়ে আসেন নিজের অধীনে। লুটতে থাকেন ইহজাগতিক যত ফায়দা। এই যুগে নতুন ঈশ্বর সৃষ্টি করা দুরুহ ব্যাপার হয়ে গেছে। তাই পুরনো ঈশ্বর নিয়েই ফায়দাবাজরা ফায়দা লুটছে।
Fictitous ঈশ্বর বাদ দিয়ে এ যুগে আসল ঈশ্বর সৃষ্টি হচ্ছে। মাওবাদের, মাও, মার্ক্সবাদের মার্ক্স, মুজিববাদের মুজিব, জিয়াবাদের জিয়া – এরা যুগের ঈশ্বর। এদের নাম ভাঙ্গিয়ে ধান্দাবাজেরা গদিতে বসছে। ফায়দা লুটছে।
মানুষ সত্য ভালবাসে। মানুষের মগজে ঢুকাতে হবে এই পথই আসল পথ, সত্য পথ।
ভাববাদের সত্য ব্যাপারটা আপেক্ষিক। একই জিনিষ একজন ভাবে সত্য। আর একজন ভাবে মিথ্যা।
@সৈকত চৌধুরী,
কেন যুদ্ধ লব্ধ গনিমতের মাল কোথায় যেত? যুদ্ধ লব্ধ লুটের মালের এক পঞ্চমাংশ তো মোহাম্মদের ঘরেই যেত গনিমতের মাল হিসাবে। তাই তো তার এক ডজন বউ আর সেই পরিমান দাসী পুষতে কোনই কষ্ট হতো না। গনিমতের মাল নিয়ে যাতে কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে সেজন্যে আল্লাহর কাছ থেকে ওহী আনতে বেশী দেরী করেনি মোহাম্মদ্।
@ভবঘুরে,
আরেকটি লাইন যোগ করুন।
“গনিমতের মালের পাঁচ ভাগের এক ভাগ ছিল আল্লাহর জন্য।আল্লাহর অশেষ করুনায় সেই এক ভাগেরও মালিক হতেন মোহাম্মদ।”
@ফরহাদ,
না, লুটের মালের পাচ ভাগের এক ভাগ যে গনিমতের মাল হিসাবে আল্লাহর খাতায় জমা হতো সেটাই মোহাম্মদ জিম্মাদার হিসাবে গ্রহন করতেন আর তার ওপর তিনি তার এক ডজন স্ত্রী ও ততোধিক দাসী নিয়ে রাজার হালে দিন কাটাতেন। তাই মোহাম্মদ খাবারের অভাবে না খেয়ে দিন কাটাতেন এটা সম্পূর্নতই একটা মিথ। ২৫ বয়সে ধনী খাদিজাকে বিয়ে করার মূল উদ্দেশ্যই ছিল যাতে দারিদ্র থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আর তা ছাড়া তার চাচা আবু তালিবের তত্ত্বাবধানে যতদিন ছিলেন তার তো কষ্ট হওয়ার কথা না কারন আবু তালিব মক্কার একজন সম্ভ্রান্ত নেতা ছিলেন তিনি খাদ্য সংকটে থাকতেন তা বিশ্বাস করার কোন কারনই নেই। যার মূল কথা হলো – মোহাম্মদ মাঝে মাঝে না খেয়ে থাকতেন এটা সম্পূর্নই কাল্পনিক ব্যপার ।
ঊত্তম পুরুষ, আপনি সব ধর্ম গুরুর সাথে গৌতম বুদ্ধকে ও ঈশ্বর পেরিত পুরুষ হিসেবে উল্লেখ করেছেন, আপনি হ্য়তো জানেন না বৌদ্ধ ধর্মে ঈশ্বর ও অপিরিবর্তনশীল আত্মা কে শিকার করে না, এবং বুদ্ধ কখনো ঈশ্বর পেরিত পুরুষ বলেন নি,কোন ধর্ম প্রবত্তক সম্পর্কে কিছু বলার আগে তার ধর্ম ও দর্শন সম্পর্কে জানা প্রয়োজন বলে মনে করি। আশা করি বৌদ্ধ ধর্ম জানার জন্য সত্য-দর্শন গ্রহন্থটি পড়তে পরেন। তবে এই একটি ভুল ছাড়া লেখাটি আমার ভালো লেগেছে।
@Arupa,
গৌতম বুদ্ধকে হিন্দুরা তাদের ভগবান বিষ্ণুর অবতার মনে করে। তার কারনও আছে। বর্ণ বিভক্ত হিন্দু সমাজের নিম্ন বর্ণের হিন্দুরা যখন উচ্চ বর্ণের হিন্দুদের অত্যাচার নির্যাতনের শিকার তখন গৌতম বুদ্ধ তাদের জন্য মুক্তির বানী বয়ে নিয়ে আসে। নিম্ন বর্ণের হিন্দুরা দলে দলে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহন করতে থাকে। ফলে বৌদ্ধ ধর্ম যে হিন্দু ধর্মেরই একটা শাখা এটা প্রমানের জন্য হিন্দুরা গৌতম বুদ্ধকে তাদের বিষ্ণুর অবতার বানিয়ে ফেলেছে। বুদ্ধি আছে বটে এসব হিন্দু মোল্লাদের।
@ভবঘুরে, গৌতম বুদ্ধকে হিন্দুরা ভগবান বিষ্ণুর অবতার মনে করলে ও বৌদ্ধরা মনে করে না। বর্ণ বিভক্ত ভারতে নিম্ন বর্ণের হিন্দুরা যে বুদ্ধের ধর্ম গ্রহণ করছে তা নয়, রাজা, মহারাজা, অভিজাত শ্রেণীর ব্যাক্তিরা ও বুদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেছিল। হিন্দু্রা বুদ্ধ ধর্মকে হিন্দু ধর্মের শাখা বানাতে চাইলে ও এখন ও প্রমাণ করতে পারেনি। আপনার কথায় সুর মিলিয়ে বলি, বুদ্ধি আছে বটে এসব হিন্দু মোল্লাদের। ধন্যবাদ।
নবী মোহাম্মদ (স) নিরক্ষর ছিলেন, এটাও মনে হয় একটা মিথ। এরকম বুদ্ধিমান মানুষ, যিনি ব্যবসা বাণিজ্য করতেন, তিনি কেন সখ করে নিরক্ষর থাকবেন???
@Atiqur Rahman Sumon,
ইহা অবশ্যই একটি মিথ। যিনি নিরক্ষর- আমার জানা মতে তিনি আরবীতে দুইটি শব্দের সংযুক্ত করেন( লাম আলিফ, আর সম্ভবত হামজা) , ইহা অবাস্তব। এর সাথে মোল্লারাই তাকে গরিব বানিয়ে কান্দেন, ইহাও এক মিথ। তিনি কখনই গরিব ছিলেন না।
বিপ্লব ভাই,
আপনার কথাবার্তা আমার ভালো লাগে, আপনি নিরপেক্ষ। ধর্মের বিবর্তনের ইতিহাস নিয়ে আপনার একটা বই লেখা উচিত।
আদনান
আপনার কল্পনাশক্তি প্রশংশার দাবী রাখে।
যে কৌশল তিনি কখনও মুখ ফুটে বলেন নি, তা আপনি জানলেন কেমনে?
@ফারুক,
নবী মোহাম্মদ পরবর্তী জীবনে যে খেলা বা একটিভিটিজ দেখিয়েছেন তা থেকেই সহজে বুঝা যায়। যার ঘরে পরবর্তী দিনের খাবার নেই, সেই লোক যু্দ্ধ করার মত নিষ্ঠুরতার মনোভাব কোথায় পান? সেটাই আমাকে ভাবিয়েছে খুব বেশী। ধর্মের দাঙ্গা যুদ্ধে শুধু সমর্থনকারী পুরুষ শহীদ হবার বিষয় একক ভাবে ভাবলে চলবে না। ভাবতে হবে সেই সব প্রতিবেশী যারা প্রতিপক্ষ হিসেবে মারা যাবে তাদের কথাও। সেই সাথে ভাবতে হবে কত নারী বিধবা হবে ? কত শিশু এতিম হবে ?এদের অর্থনৈতিক মুক্তির পেছনে কি এমন নিরাপত্তা ছিল ? এই পরিণতির কথা , দুর্নামের কথা যার মনোবৃত্তিকে দমায়নি, শুধু পরজীবনের স্বর্গ এবং সুপারিশের লোভ দেখিয়ে যে ব্যক্তি গরীব এবং গোষ্ঠীর মানুষকে সম্মোহিত করতে পারেন তিনি অনেক বড় কেরামতির জ্ঞান রাখতেন ভেতরে ভেতরে। সেটাতো একটু চিন্তা করলেই বুঝা যায়। যায় না ?
@উত্তরপুরুষ,
যেখানে যুদ্ধ লব্ধ সম্পদের এক পঞ্চমাংশ গনিমতের মাল হিসাবে মোহাম্মদের ঘরে যায়, তা ছাড়া তার ছিল ধনী স্ত্রী খাদিজার কাছ থেকে প্রাপ্ত সম্পদ সে ব্যক্তির ঘরে পরদিন খাওয়ার মত খাবার থাকে না- এটা মনে হয় মোহাম্মদ সম্পর্কে প্রচলিত অসংখ্য মিথের অন্যতম একটা মিথ। একটু গভীর ভাবে চিন্তা করলেই এটা যে একটা মিথ তা ভাল মতোই বোঝা যায়। আমি একটা উদারন দেই। মোহাম্মদকে আল আমীন বলা হয় তার অতি সততার জন্য। মজার ব্যাপার হলো- গোটা হাদিস চষে বেড়ালেই তার আল আমীনত্ব প্রকাশের তেমন উল্লেখযোগ্য কোন ঘটনার বর্ননা নেই। আর একটা মিথের নমুনা দেখুন। মহানবী শিশুদেরকে খুব ভালবাসতেন। আয়শা বর্নিত একটি হাদিসে বলা আছে- যখনই আয়শা তার বন্ধুবান্ধবের সাথে শৈশবে পুতুল খেলত, মাঝে মাঝে মোহাম্মদ সেখানে হাজির হয়ে গভীরভাবে তা দেখত। আর এ ভাবে দেখতে দেখতেই কিন্তু তার মনে শিশু আয়শাকে বিয়ে করার ধান্ধা মাথায় আসে। এখন যে লোক শিশুদের এত ভাল বাসে সে কোনদিন একটা শিশুকে বিয়ে করার কথা কল্পনা করতে পারে ?
@উত্তরপুরুষ,
:yes: :yes:
———————————-
@ফারুক
আপনিও জানতে পারতেন যদি নির্মোহ নিরপেক্ষভাবে কোরান আর হাদিস পড়তেন। আগে থেকেই আপনি বিশ্বাস করে নিয়েছেন মুহাম্মদ আল্লাহর নবী, কোরান আল্লাহর বাণী। যতদিন পর্যন্ত এই বিশ্বাস ত্যাগ করে কোরান না পড়েছেন মুহাম্মদকে চেনা আপনাদের পক্ষে কোনদিনই সম্ভব নয়। এক মুহাম্মদকে ঘিরে আপনারা বিশ্বাসী মুসলমানগণ শতভাগে বিভক্ত কেন? কেন একদল আরেকদলকে মুসলমান মানতেই রাজি নয়। কেন আপনাদের মধ্যে এত মারামারি কাটাকাটি খুন-খারাবি হিংসে বিদ্বেষ? কারণ সেই মুহাম্মদের ম্যাজিক। মুহাম্মদের এই ম্যাজিক হাতে তার নিজের বংশের গোত্রের, দলের তথা সারা মুসলিম জাহানের জন্যে এক বিষবৃক্ষ রোপন করে গিয়েছিলেন। সেই বৃক্ষের বিষাক্ত ফলের প্রতিক্রীয়া দেখতে হলে ইসলামের ইতিহাস পড়ুন, স্পষ্টই দেখবেন উসমানের প্রাসাদে আবু বকরের ছেলে মুহাম্মদ অস্ত্রহাতে দন্ডায়মান, আলীকে হত্যার জন্যে আয়েশার হাতে খোলা তরবারী, মুয়াবিয়ার হাতে আলী বংশ নিপাতের নীল নকশা, মুয়াবিয়ার ফরমান হাতে কারবালায় হোসেনের গলা কাটার দৃশ্য, পরিষ্কার শুনতে পাবেন, মসজিদের মিম্বরে দাঁড়িয়ে নবী বংশকে লানত দেয়ার আওয়াজ, সেই ধারাবাহিকতা আজও চলছে। এখানে নাস্তিকদের ওয়াজ শুনানোর চেয়ে শতভাগে বিভক্ত বিভ্রান্ত যারা মুহাম্মদকে নবী আর কোরানকে আল্লাহর বাণী বলে বিশ্বাস করেন সে সকল বিশ্বাসীদেরকে আপনাদের বিশ্বাস মতবাদ সিদ্ধান্ত ব্যাখ্যা আগে জানানো উচিৎ নয় কি?
@আকাশ মালিক,
এই যেমন আপনি আমাকে উদ্দেশ্য করে মন্তব্য করলেন , তখন তো জবাব দেয়াই লাগে নাকি? আর জবাব দেই যখন দেখি মুক্তমনারা মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে অন্ধের মতো ইসলামকে আক্রমন করে লেখা দেয় , তখন মিথ্যাটুকু দেখিয়ে দেয়ার জন্য। অন্যান্য ব্লগে আমার বিশ্বাস নিয়ে আমি লিখে থাকি , তার সাক্ষী আপনি নিজেই।
আপনি কতটুকু ইসলামের ইতিহাস পড়েছেন আমি জানিনা , তবে আপনার লেখা পড়লেই বোঝা যায় , আপনার লেখা শুধুমাত্র ঈমাম তাবারীর রসূলের মৃত্যুর ২৫০ বছর পরে লেখা বিভ্রান্তকর ও মিথ্যায় ভরপুর ইতিহাসের উপর নির্ভরশীল। আমি ইসলামের সত্যিকার ইতিহাস জানার জন্য অমুসলিমদের লিখিত ইসলামের ইতিহাস ও পড়ি এবং জানার চেষ্টায় আছি।
@ফারুক,
ভাই ইসলামের সত্যিকার ইতিহাস পড়তে কার লেখা বই পড়তে হবে যদি দয়া করে বলেন। আপনি তো আবার হাদিসও মানেন না । মোহাম্মদের সময় কেউ কোন ইতিহাস বই লেখেও নি। তাহলে উপায় ?
@ভবঘুরে,
মোহাম্মদের সময় কেউ কোন ইতিহাস বইনা লিখলে সমস্যা কোথায় , তা আগে বলুন। তাহলে না হয় উপায় বাৎলানোর চেষ্টা করা যাবে।
আমি যেটা বুঝি , কোরান-ই যথেষ্ঠ। ইতিহাস বা হাদীস না জানলেও কোন অসুবিধা নেই।
@ফারুক,
তা যা বলেছেন দাদা। ওটা তো আপনাদের গলার কাটা। ওটা জানা না থাকলে তো আপনাদের সুবিধাই হয় 😉
@ফারুক,
মুক্তমনা সাইটে এ পর্যন্ত কোরানের মধ্য থেকে যত প্রকার স্ববিরোধী বক্তব্য, অবৈজ্ঞানিক কথা বার্তা তুলে ধরা হয়েছে এ পর্যন্ত তার একটাকেই আপনাকে খন্ডাতে দেখা যায় নি। আপনি বার বার লালন , নজরুল ইত্যাদির উদ্ধৃতি দিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে গেছেন। আর এখন বলছেন কোরান ই যথেষ্ট ? পারলে একটা নিবন্ধ লেখেন যেখানে কোরানের যত স্ববিরোধী বা অবৈজ্ঞানিক কথা আছে তার জবাব যুক্তিপূর্ন ভাবে উপস্থাপন করেন। তাতে আপনার কথাকে গুরুত্ব দেয়া হবে নইলে আপনার কথা বার্তা স্রেফ পাগলের প্রলাপ বলে মনে হবে।
@উত্তরপুরুষ,
আমারো প্রশ্ন এটা। দয়াল নবী(!) এত অভাবী যদি ছিলেন তবে এতগুলো স্ত্রী পাললেন কিভাবে? আর খাদিজাকে বিয়ে করার পর তার পেশা কি ছিল? তিনি কি তাহলে বিয়ের পর শুধু খাদিজার অঢেল সম্পত্তি বসে বসে খেয়ে ভবিষ্যতে নবী হওয়ার স্বপ্নে দিন গুজরান করছিলেন?
প্রথমেই ভুল। মানুষ মোটেও ঈশ্বরে বিশ্বাস নিয়ে জন্মায় না। ৫ বছর বয়স থেকে সমাজ, পরিবার তার ব্রেইন ওয়াশ করে-তাই তার ঈশ্বরে বিশ্বাস জন্মায়।
এটাই আসল কথা। আমিও বুঝিনা। ইসলামের রিচুয়াল বলতে যা কিছু সবই আরব বেদুইন সংস্কৃতি। সেটা পালন করতে এই উপমহাদেশের লোকেদের এত ভাল লাগে কেন।
বাঙালীদের অনেকেই হিন্দিগান এবং হিন্দি সিনেমার সংস্কৃতি বাংলার থেকে বেশী পছন্দ করে-কারন বাংলা শেখে নি। বা বাংলার বুকে যে গভীর লোকায়েত দর্শন আছে, সেটা তারা জানে না। নইলে কোরানের জ্ঞান গম্যিত লালনদের গভীর আত্মোপলদ্ধির কাছে বালখিল্যতা। সেটাই আমার আসল কারন বলে মনে হয়। আমরা মাটির দর্শনের গভীরতার সন্ধান পায় নি-নইলে কেও ওই সব আরব দেশের অর্ধশিক্ষিত সংস্কৃতির হনুকরন করে-কথাটা যারা হিন্দি সংস্কৃতির নকল করে তাদের জন্যেও সত্য।
@বিপ্লব পাল,
প্রিয় বিপ্লব পাল,
আমার গোড়ায় গলদটি আপনি যে দেখিয়ে দিলেন, সেজন্য অজস্র ধন্যবাদ। আমি কিন্তু অত গভীরে যাইনি। কারণ শিশুরা তো শিশুই থাকে, যে পরিবেশে বড় হয়ে উঠে সেখান থেকেই সে সমাজে মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি পায়। তাই শিশুদের বিশ্বাস অবিশ্বাস নিয়ে আমরা হয়তো মাথা ঘামাইনা। আমরা মাথা ঘামাই তাদের নিয়ে যাদের বিচার ভেদ বুদ্ধি সবই বয়সের তোড়ে প্রাপ্ত হয়েছে, নিজস্ব চিন্তার স্বাধীনতা আছে অথচ সত্য মিথ্যা যাচাই করে না। যদি আমি বলতাম “মানব শিশু স্বভাবতই ধর্ম ও সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী” তাহলে সেটা হতো আমার বিরাট ভুল।
@বিপ্লব পাল, আসলেই মানুষ ধর্মবিশ্বাস নিয়ে জন্মে না, নারী হয়ে জন্মে না। পরিবার তাকে ধর্মান্ধ ও নারী বানিয়ে ফেলে।
@বোকা মেয়ে, হা তা ঠিক জন্ম থেকে কেউ ইশ্বর বিশ্বাস নিয়ে জন্মায় না। কেউ কোন জাত নিয়ে জন্মায় না। প্রথমত পারিবারিক মগজ ধোলাই, দ্বিতীয়ত সামাজিক মগজ ধোলাই, তৃতীয়ত প্রাতিষ্ঠানিক মগজ ধোলাই । নিরমা ডিটারজেন্ট পাউডার দিয়ে এতবার ধোলাইর পর কিভাবে একটা মানুষ মুক্তমনে থাকতে পারে। তবে আপনি বলেছেন কেউ নারী হয়ে জন্মায় না। এই ব্যাপারে বলতে চাই নারী নারী হয়ে জন্মায় পুরুষ পুরুষ হয়ে জন্মায়। তবে কেউ কম অধিকার নিয়ে জন্মায় না। এখানে ও সেই মগজ ধোলাই তুমি নারী তাই তুমি কম অধিকারের অধিকারী তুমি পুরুষ তাই তোমার একছত্র অধিকারের অধিকার। এক জন নারী তোমার কাছে ভোগ্য পণ্য। নারীরাও সেই অভ্যাসে অবস্থ তাই প্রতিবাদের ভাষা কম। মধ্যযুগে একজন নারী কথাকারের দুটি লাইন দিচ্ছি ” খিড়কি থেকে সিংহ দুয়ার এই তোমাদের পৃথিবী, এর বাইরে জগত আছে তোমরা জান না তোমরা নিজে মানই মানা না। তোমাদের কোনটা আসল কোনটা নকল কোনটাই বা জবর দখল তোমরা নিজেই জান না………………..
@বিপ্লব পাল,
খাঁটি সত্য কথা। জন্ম নেওয়ার পর থেকেই একটা শিশুর indoctrination চলতে থাকে। যেকোনো শিশুর বুদ্ধিমত্তা বিকাশের প্রথম ধাপ হল-প্রশ্ন।সে প্রশ্ন করে উত্তর জানতে চায়। উত্তর বিচার করার বোধ তার হয়না।তাই তাকে যাই বলা হয় সে বিশ্বাস করে নেয়। বাল্যকালের indoctrination থেকে যে বিশ্বাস জন্মে সারা জীবনেও তা আর ভাঙে না।বিশ্বাস করে নেন বলে অনেকেই আর যাচাই করার কথা ভাবেন না। আর ধর্মগ্রন্থগুলো তো চিন্তা করার রাস্তাই বন্ধ করে দিয়েছে মহার্ঘ বাণী দিয়ে।
” বিশ্বাসে মিলায় কৃষ্ণ, তর্কে বহদূর “
ব্লগে ইসলামকে আক্রমণ বন্ধের জন্য পিটিশান http://www.petitiononline.com/dbblog/petition.html
এটার কথাই মাহফুজ মনে হয় বলতে চেয়েছিলেন তার পোস্টে যেখানে কমেন্ট করা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সবাইকে লিংকটি দেখতে অনুরোধ করছি।
@রামগড়ুড়ের ছানা,
সরকার চাইলে বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করতে পারে ঠিকই, তবে সে চেষ্টা আর করবে বলে মনে হয় না, যদি ফেইসুবকের ঘটনা থেকে শিক্ষা নেয়। ভয় নেই, মুক্তমনা বন্ধ করা হলে এর প্রতিবাদ হবেই, এবং সেই বন্ধ বেশিদিন টিকিয়ে রাখতে পারবে না বলেই বিশ্বাস 🙂 ।
@স্বাধীন,
আমারো তাই মনে হয়। তবে, মুক্তমনাতে ধর্মের সমালোচনা হলেও পাগলামি ছাগলামি কিংবা ঢালাও গালাগালিকে কখনোই উৎসাহিত করা হয় না। যৌক্তিক আলোচনা/ সমালোচনা তো আমাদের সবার জন্যই ভাল। কিন্তু অন্য দু’ চারটা ‘আন মডারেটেড’ ব্লগে গিয়ে দেখেছি – চোদ্দ গুষ্টি তুলে গালাগালি করা হয়। মুনিম নামে যে ভদ্রলোক পিটিশনটি লিখেছেন তিনি সম্ভবতঃ আমার ব্লগ কিংবা সামহোয়্যারইনে লেখেন। আজকে আমার ব্লগে ঢু মেরে দেখি এগারসিন্দুর এক্সপ্রেস নামে একজন পোস্ট দিয়েছেন – মসজিদের গুম্বুজ যৌবনা নারীর স্তনের ন্যায় কেন?। এ ধরণের অর্থহীন পোস্ট কি মুক্তমনায় কখনো দেয়া হয়েছে?
আমার মনে হয় না এগুলো নিয়ে এত চিন্তা করার কিছু আছে। মুক্তমনা ব্লগ ভালই চলছে, প্রতিদিনই ভাল ভাল লেখা প্রকাশিত হচ্ছে। প্রতি বছর আমাদের বই বেরুচ্ছে বই মেলায়। যুক্তি, মুক্তান্বেষা, মহাবৃত্ত সহ সব ম্যাগাজিনই নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে। আমরা বরং এগুচ্ছি, ভয় পেয়ে পিছাচ্ছি না।
@অভিজিৎ,
জ্বি একই কথা আমিও বলতে চাই। মুক্তমনায় ধর্মকে নিয়ে প্রশ্ন করা হয়, সমালোচনা করা হয়, কিন্তু ব্যঁঙ্গ বা ঢালাও ভাবে কাউকে কটাক্ষ করা হয় না। সে রকম কিছু চোখে পড়লে নিজেও সেটার প্রতিবাদ করেছি। এ কারণেই মুক্তমনাকে নিয়ে ভয় পাই না। আর পিটিশনে কোথাও মুক্তমনাকে বুঝাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। তাই আমি কলা খাই না, সে ধরণের রব না তোলাই বরং ভাল।
মুক্তমনায় যে ধরণের লেখা আসে সেগুলোকে ব্যান করতে হলে তো আগে আরজ আলী মাতুব্বর , হুমায়ুন আজাদ, আহমেদ শরীফ, অভিজিৎ (আপনে তো বড় পাপী, সমকামিতা ছড়াচ্ছেন) উনাদের বইগুলোকেও ব্যান করতে হবে 😀 ।
@অভিজিৎ,মুক্তমনা অবশ্যই ভিন্নমাত্রার এক অসাধারণ ব্লগ। এখানে বিজ্ঞান আছে, ধর্ম বিরোধীতা আছে যুক্তিসংগত ভাবে, অশ্লিলতা নেই। মুক্তমনার সবাইকে ধন্যবাদ। আশাকরি মুক্তচিন্তার এ কণ্ঠস্বর কেউ বন্ধ করবে না।
@অভিজিৎ,
অভিজিত দা, সত্যের সাক্ষীদেন । এখানে রাসুল সঃ এবং উনার ফ্যামেলি নিয়ে অনেক বাজে বাজে কথা বলা হয়েছে। পুরো মুসলিম জাতি কে নিয়েও কত কিছু বলা হয়েছে। হ্যা, আপনাদের মধ্যে কেউ না কেউ কিছু কিছু প্রতিবাদ করেছে, এবং নিজেদের মধ্যেও ঝগরা হয়েছে। তাছাড়া, ভবঘুরে, বিজয় এবং আল্লাচালাই না নিকগুলো বেশীর ভাগই এই রকম। তাছাড়া কাউরো কাউরো লেখাগুলিতে সাধারনত ফেইথ ফ্রিডম, আন্সারিং ইসলামের মাল মশলা দিয়ে বাংলায় লিখিত কিছু পোষ্ট মাত্র, যেগুলো তাদের নিজেদের মগজ আগত কিছুই নেই। এরূপ অনেক প্রমান ই আছে। আপনি অস্বীকার করতে পারবেন না।
@ফুয়াদ,
প্রমান আছে প্রমান আছে বলে না চেচিয়ে প্র্রমানটা পেশ করুন। আমরা মনে করি, নবী মুহাম্মদ তো বহু দূরের কথা স্বয়ং আল্লাহও সমালোচনার উর্দ্ধে নয়। কারন কোন একনায়ক যদি তার কৃতকর্মের জন্য জবাবদিহিতার উর্দ্ধে থাকেন তবে তার শাসন দু:শাসনে পরনিত হয়। তাই কোরান হাদিসের বস্তুনিস্ঠ বিশ্লেষনের মাধ্যমে আপনার আল্লাহ আর নবীর প্রাপ্য সমালোচনা করতে আমরা কখনই ভীত নই।তবে হ্যা, কেউ কেউ যে অযথা ব্যক্তি আক্রমন বা ঢালাও ভাবে সমগ্র মুসলিম জাতিকে নিয়ে বিরুপ মন্তব্য করেছে। তবে আপনি নিশ্চয়ই জানেন যে মুক্তমনার পক্ষ থেকে তার প্রতিবাদ করা হয়েছে। আমি নিজেও করেছি।
যাই হোক আপনার কথায় মনে হচ্ছে যদি কোন বিশ্লেষন যদি নবীর গুনগান না প্রকাশ করে সামান্য দোষ খুজে বের করে তবে আপনার কাছে তা বাজে বাজে কথা হয়ে যায়। তাই যদি হয় আমাদের আর বেশী কিই বা করার আছে বলুন?
@মিঠুন,
সহমত।
ফুয়াদ সাহেবের কথা হলো- যত যা বলা হোক না কেন মোহাম্মদের সমালোচনা করা যাবে না । তার মানে হলো উনি আজে বাজে বানোয়াট ফালতু কথা বলে যাবেন আর আমাদের তা মানতে হবে। মামা বাড়ীর আবদার আরকি। দেখুন ফুয়াদ সাহেব, কেউ যদি মোহাম্মদকে তার নিরীহ বানিজ্যিক বহরে হামলা করে তাদের মালামাল লুট পাট করে নেয়া কাজের জন্য লুটেরা বলে, তার ১৩/১৪ ব্উ এর জন্য তাকে বহুগামী বা নারীলোলুপ বলে, নিরীহ জনপদে বিনা উস্কানীতে আক্রমন করে খুন করার জন্য মোহাম্মদকে খুনী বলে- আপনার উচিত উপযুক্ত প্রমান সাপেক্ষে প্রমান করে দেয়া যে মোহাম্মদকে যা বলে হেয় করা হচ্ছে তা সম্পূর্ন ডাহা মিথ্যা। আপনি দেখবেন যখন কেউ মোহাম্মদের বিরুদ্ধে কোন নেতিবাচক মন্তব্য করে তখন সে উপযু্ক্ত প্রমান দিয়ে তারপর তা করে। অথচ আপনার দাবি হলো- উপযুক্ত প্রমান থাকলেও মোহাম্মদকে ফুলের মত পবিত্র চরিত্র বলতে হবে। এটা মুক্তমনা সাইট, এখানে মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে। কেউ খিস্তি খেউড় করে না এখানে। উপযুক্ত প্রমান সহকারে মানুষ মত প্রকাশ করে এখানে। আপনার যুক্তি থাকলে আপনি তা প্রকাশ করুন আর প্রমান করুন অন্যরা যা বলছে তা মিথ্যা। আমরা সবাই আপনার কথা মেনে নেব। আপনাদের নিয়ে সমস্যা কোথায় জানেন, আপনারা স্বাধীন মতামত সহ্য করতে পারেন না , কেউ করলে তার কল্লা কাটার জন্য রেডি হয়ে যান। এখন বলুন, এটা কি কোন সভ্য মানুষের পরিচয় হলো ?
@অভিজিৎ,
মুক্তমনার নিয়মিত পাঠক হলেও কোনো মন্তব্য কখনো করা হয়নি। কিন্তু এই ইন্টেরেস্টিং পিটিশনটার ব্যাপারে কিছু তথ্য শেয়ার করার লোভ সামলাতে পারলাম না।
ব্যাপারটির উদ্যক্তা মুনিম নামের জনৈক ব্যাক্তি, যিনি কিনা একসময় আমারব্লগে রামনারায়ন নিক নিয়ে সাম্প্রদায়িক কমেন্ট করে বেড়াতেন। তারপর ধরা খেয়ে যে কৈফিয়ত দিয়েছিলেন তা আরো ইন্টেরেস্টিং -আমারব্লগ এর মালিক মালাউন সুশান্ত নাকি মুসলিম নামটা দেখে রেজিস্ট্রেশন করতে দেননি, তাই প্রতিশোধ নিতে উনি এসব করেছেন। এটার স্ক্রীনশট পেলাম না, কিন্তু উনি নিজেই সেটা স্বীকার করেন এখ্ন, আর পুরোনো ব্লগার রা সবাই সেটা জানে। পুরোনো যে কাউকে জিজ্ঞাসা করলেই সাক্ষ্য পাওয়া যাবে।
মরোক্কের রোজনামচা নামক একটা সুড়সুড়ি-মার্কা সিরিজ লিখে ওনার জনপ্রিয়তা প্রাপ্তি, আর সেই সুবাদে ব্লগের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ওনার যাতায়াত শুরু হয়। আমারব্লগ এর এক পুরস্কার বিতরনী অনুষ্ঠানে ওনার উপস্থিতি নিয়ে একসময় ব্লগারদের মধ্যে ধুন্দুমার কান্ড বেধে গিয়েছিল। ওনার অত্যন্ত নোংরা সাম্প্রদায়িক মানসিকতা আর জামাত মনস্কতার কারনে সবাই ওনার উপস্থিতি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন। ওই ক্যাচালে অন্তত গোটা দশেক পোষ্ট পড়েছিল, বহু ব্লগার ব্লগ ছাড়ার হুমকী দিয়েছিলেন। বহুল প্রচারিত এই ঘটনার আর লিঙ্ক খুঁজে বের করলাম না, কারো সন্দেহ থাকলে আমারব্লগ এর যে কাউকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন, অথবা আমিও লিঙ্ক দিতে পারি, একটু খুঁজতে হবে এই যা।
হযরত হয়রানপুরী দেওয়ানবাগীশ এর এই সুযোগ্য শিষ্য আমার ব্লগ এর সমস্ত নাস্তিককেই মনে করেন আসলে নাস্তিক মুখোশধারী হিন্দু এবং সেই অনুযায়ী ওনার কাউনটার এটাক চলান হিন্দুদের উপর। অন্য ধর্মের ব্যাপারে কুৎসা রটনায় (কোনো সমালোচনা নয় কেবল হিন্দুধর্মের কামলীলা গুলোকে আধুনিক চটি আকারে উপস্থাপনাতেই উনার আগ্রহ) প্রবল পারদর্শী এই ব্যাক্তির পক্ষেই এরকম পিটিশন করা মানায় বটে!
[img]http://i34.tinypic.com/35l9h4y.jpg[/img]
আর এই কাজে ওনার প্রধান সহযোগী রাজমোহন নামের এই জামাত ছাগু সম্পর্কে কিছু বলার দরকার নেই নীচের স্ক্রীনশটটাই আশা করি যথেষ্ট হবে।
[img]http://i33.tinypic.com/5ltqux.jpg[/img]
@সবুজ সাথী,
আপনার মন্তব্য পড়ে আমি যারপরনাই বিস্মিত।
বিভিন্ন ব্লগে অবিশ্বাসীদের লেখা আমি দেখেছি। তাঁরা যুক্তি দিয়ে ধর্মীয় গ্রন্থের সমালোচনা করেন।
কিন্তু তর্কে পরাভূত করার জন্য এইরকম ভাষা ব্যবহার করে এইসব মুনিম বা রাজমোহনেরা ধর্মের স্বরূপ আরও ভালোভাবে জানাচ্ছে।
আবার এরাই পিটিশান বের করে ধর্ম বাঁচানোর জন্য! নাস্তিক্যবাদীদের কখনও আশা করি এমন পিটিশান বের করতে হবে না। গলা ফাটিয়ে আস্তিকদের গালি দেওয়া নাস্তিকের কাজ নয়।
তবে খুব ভাল লাগলো জেনে বাংলাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে মেয়েদের ধর্মীয় পোশাক পরা আর বাধ্যতামূলক নয়। বাংলাদেশ অবশেষে সেক্যুলারিসম(ধর্মনিরপেক্ষতা) এর পথে যাত্রা শুরু করেছে।
@পাপিয়া চৌধুরী, শুনে ভাল লাগল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিজাব তুলে দেওয়া হচ্ছে। হিজাবের কোন অর্থ আমি খুঁজে পাই নি। তা যে কারণে বলা হয় তা একজন পুরুষের জন্য যেমন লজ্জা জনক তেমনি একজন নারীর জন্য লজ্জা জনক।প্রচুর অমুসলিম দেশ আছে যেখানে কেউ হজিাব পরে না কন্তিু সেখানে পুরুষরা মেয়েদের উপর ঝাপয়ে পড়ে না।
@সবুজ সাথী, ভাই আমি বোঝতে পারচ্ছি আপনি অদের নগ্নতা বুঝাতে গিয়ে এই ইমেজ দিয়েছেন। তা সরিয়ে নেওয়াই ভাল কারণ একটি সভ্য সমাজে এই সব ভাবা যায় না আর মুক্ত মনাতে তো এইসব দেখতে খারাপ লাগছে। আমরা নাস্তিক হলে আমাদের একটা ধর্ম আছে সেটা হল সুস্থ সুন্দর সভ্য মানবিকধর্ম।
@সুমিত দেবনাথ,
আপনার আপত্তির কারণটা বুঝতে পারছি, তবে ওদের পরিচয়টা সবার কাছে উন্মুক্ত করাটাও বোধ হয় জরুরী ছিল। বিশেষ করে উনারা যখন একটা “মহান” ব্রত নিয়ে মাঠে নেমেছেন।
দুঃখিত ভাই, মন্তব্য সরানোর/ এডিট করার ক্ষমতা আমার নেই। ব্যাপারটি নিতান্তই আপত্তিকর মনে হলে মডারেটর কে বলতে পারেন।
@অভিজিৎ, পিটিশনটি ভাল করে পড়লাম। তা থেকে বুঝলাম প্রত্যক্ষ নাম না নিলে ও মৌলবাদীরা মুক্তমনার বিরুদ্ধে তৎপর । যদি ও বলা হয়েছে ধর্মকে আঘাত করতে গিয়ে অস্লীল ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু আমি মুক্তমনার কোন ব্লগে কোন অশ্লীল কিছু দেখতে পাই নি। আমার মনে হয় মুক্তমনাতে শুধু সুন্দর সুন্দর লেখা না লেখে আমাদের এক হতে হবে। শক্তি সঞ্চয় করতে হবে। মনে রাখতে হবে আমাদের আছে সুযুক্তি বল আর ওদের আছে ছলনা, কুযুক্তি। আমাদের মানুষের কাছে পৌছতে হবে। অভিজিত বাবুর কাছে আমার একটি আবেদন আমরা বিছিন্ন না থেকে যাতে এক হতে পারি এবং লড়াই করতে পারি তার একটা উপায় ব্যর করুন।
@অভিজিৎ,
(কমেন্টস-এর অপশন বন্ধ থাকায় এখানে উল্লেখ করলাম)
মাহফুজ সাহেব, আপনি নিজের প্রবন্ধ নিজ নামেই ডিফেন্ড করতে পারেন। মোস্তাফিজ নামের আড়ালে নয়। আমি মডারেটর হিসেবে দেখতে পাচ্ছি আপনার (মাহাফুজ) আইপি এড্রেসের সাথে মোস্তাফিজ-এর আইপি মিলে যাচ্ছে (আপনি প্রমাণ চাইলে স্ক্রিনশট দিতে পারি)।
ড. অভিজিৎ রায়,
শুভেচ্ছাসহ কৌতুহলদ্দীপক মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ।
আমি মোস্তাফিজ। আমাকে উদ্দেশ্য করে জানতে চেয়েছেন- মাহফুজ কেন মোস্তাফিজ নামের আড়ালে ডিফেন্ড করছে। আপনার ধারণা হচ্ছে মোস্তাফিজ ও মাহফুজ একই ব্যক্তি। মাহফুজকে নিয়ে এ ধরনের রহস্যময় জটিলতা আগেও সৃষ্টি হয়েছে; অনেকেই মাহফুজ এবং মোকছেদ আলীকে একাকার করে গুলিয়ে ফেলতেন। মাহফুজ বিষয়টি কখনও পরিষ্কার করেনি বলে কৌতুহলী পাঠকের এমনতর মতামত ছিল। যদিওবা মাহফুজ প্রতিটি পোষ্টে উল্লেখ করেছে- ‘মোকছেদ আলী (১৯২২-২০০৯)।’ মাহফুজ এগুলো পাঠককে জোর করে বিশ্বাস করাতে চায়নি। মুক্তমনায় যারা বিচরণ করেন, তাদের অধিকাংশই সূক্ষ্ণ জ্ঞান, যুক্তির অধিকারী। জনাব ফরিদ আহমেদ পথিককে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন- “মোকছেদ আলীকে নিয়ে আপনার সন্দেহ থাকলেও আমার কোন নেই। কারণ, তাঁর লেখা পড়তে পড়তে তাঁকে চিনে ফেলেছি আমি। মোকছেদ আলীর ঝোলা থেকে যেদিন ‘অভিজিৎ’ নামের এই লেখাটি বের হলো সেদিনই মনে হলো যে তিনি আমার অনেকদিনের চেনাজানা লোক। সেই থেকে তাঁর বালসুলভ বদনখানা আর নিষ্পাপ চাহনি চিরতরে চিত্রিত হয়ে গিয়েছে আমার চিত্তে। এরপর যখন তাঁর এই ‘লেখা নিয়ে বকবকানি’ লেখাটির শিরোনাম দেখলাম তখনই বুঝলাম যে কতখানি ভাল করে চিনি তাঁকে আমি।”
তিনি সন্দেহের উপলব্ধিতেই বলেছিলেন- ‘কতখানি ভালো করে চিনি তাঁকে আমি।’ চন্দ্রবিন্দুর বাহারি দেখেই বুঝা যায় ফরিদ আহমেদের উপলব্ধি চেতনা। অন্য পাঠকরা ফরিদ আহমেদের মন্তব্য থেকে কতটুকু বুঝতে পারবে সে দায়িত্ব পাঠকেরই। এটা অনেকটা পাজেলের মত।
মাহফুজের পোষ্ট করা লেখাগুলোকে মাহফুজ কোনো সময়ই গুরুত্বপূর্ণ মনে করে না। নিমেসিস, শিশুমন, প্রেম এগুলোর তুলনায় ‘আমার যা পছন্দ অনেকের কাছেই তা অপছন্দনীয় নয়’ পোষ্টটি অতি নিম্নমানের। কোনোই উপকার নেই এই পোষ্ট থেকে যা পাওয়া গেছে উপরোক্ত পোষ্ট থেকে। অনেকে পছন্দ করবে না, ধারণার বশবর্তী হয়েই মুক্তমনা কর্তৃপক্ষকে সরিয়ে বা মুছে ফেললেও আপত্তি থাকবে না বলে উল্লেখ করেছে।
লেখাটি মাহফুজ না লিখে অন্য কোনো সাধারণ পাঠক দিতো তাহলে এটার গুরুত্ব থাকতো। কারণ মাহফুজকে নিয়ে আপনাদের মস্তিষ্কের মধ্যে প্রোগামড হয়ে রয়েছে বলেই বোধ হচ্ছে আমার।
এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে-
ড. অভিজিৎ রায়ের কিছু হলে রাফিদা আহমেদ বন্যা কিম্বা রাফিদা আহমেদ বন্যার কিছু হলে ড. অভিজিৎ রায় কি ডিফেন্ড করতে আসবেন? নাকি চুপ-চাপ মজা দেখবেন? হ্যাঁ মাহফুজ এবং মোস্তাফিজ একমতের, সমমনা, সহযাত্রী, সহযোদ্ধা, উপরন্তু এরা আলাদা ধরনের সমকামী, যেমন রয়েছে স্বঘোষিত পুরুষবাদী। তবে এই দুইজন পৃথক ব্যক্তিসত্বা। এরা দীর্ঘ ১৪ বছর পরষ্পর পরষ্পরকে জানে। একই পাতিলের ভাত খায়। একই স্থানে, একই ছাদের নিচে বসবাস ও একই কম্পিউটার ব্যবহার করে।
মাহফুজ এ মুহূর্তে শারিরীক দূরত্বে রয়েছে। শারিরীক দূরত্বে রয়েছে বলেই আমি তার কম্পিউটার ব্যবহার করে মন্তব্য করছি। ডিফেন্ড করা আর না-করা বড় ব্যাপার নয়। আপনার সামান্য টাইপো ‘অ’ নিয়ে অপমান করার মনোভাব মাহফুজের নাই, এটা নিশ্চিত থাকতে পারেন। তারপরেও যদি সেরকম বোধের উদয় হয়, তাহলে আপনি আপনার স্বপক্ষে যুক্তি পেশ করতে পারেন। সে যে আপনাকে কতটুকু ফীল করে তা তার নোট-বইয়ের পাতা থেকে একটুখানি উল্লেখ করছি- “আজ অভিজিৎ-এর একটি লেখা পড়ে আমার চোখ ভিজে গেছে, হৃদয় ছোঁয়া লেখা, অসাধারণ বাকভঙ্গী। অর্গলবদ্ধ করে একাকী চিৎকার করে কেঁদেছি। অঝরে ঝরেছে অশ্রু। একজন বিবর্তনবাদী মানুষও আবেগ তৈরী করতে পারে লেখনীর মারফত, কী আশ্চর্য্যের ব্যাপার! বিনম্র চিত্তে শ্রদ্ধা জানাই …।”
আপনি “এদের দুজনের সম্পর্ক না থাকলে ব্যাপারটা আরো সন্দেহজনক” বলে উল্লেখ করছেন। কথাটা শুনে একটু অন্য ধরনের সুখ লাগছে। আপনিই পারবেন মানুষকে সমকামিতা বুঝিয়ে দিতে। অথচ দেখুন- পরিচিত মহলে এদের সম্পর্ক নিয়ে অনেক কানাঘুষা চলে, অনেকে সন্দেহ পোষণ করে। যাহোক আমাদের দু’জনের মধ্যে যে কী সম্পর্ক, সেটার কথা নৃপেন্দ্র সরকারের “নিষ্পাপ শিশুরা: এগারো নম্বর পাঠক” মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গল্পে মুক্তমনায় দেয়া আমার প্রথম মন্তব্যের মধ্যে উল্লেখ করেছি এভাবে-“…এবং যখনই বিশেষ কোনো গুরুত্বপূর্ণ লেখা পেয়েছেন সাথে সাথে, আমিসহ, তাঁর কয়েকজন সহকর্মীকে ডেকে তা পাঠ করে শুনিয়েছেন।” সেটা পড়েও যদি পরিস্কার না হয় তাহলে আপনাকে আরো একটু পিছিয়ে ‘একুশে টিভিতে: কবি নাজনিন’- প্রতিবেদনে যেতে হবে। আমিও আমার প্রিয় কবি হাসান আব্দুল্লাহর জবানের ন্যায় উচ্চারণ করি- “মাহফুজকে সঙ্গী হিসেবে পেয়ে আমি গর্বিত যেমন জাঁ-পল সার্ত্রে ছিলেন সিমোন দ্য বোভোয়ারকে পেয়ে এবং অভিজিৎ রায় আছেন বন্যা আহমেদকে পেয়ে।”
আশা করি খানিকটা হলেও ব্যাপারটা বুঝাতে পেরেছি। এরপরও যদি মাহফুজ-মোস্তাফিজ সম্পর্কটি পরিষ্কার না হয় তাহলে মাহফুজের ব্যাপারে আপনি নৃপেন্দ্র সরকার ও আফরোজা আলমের মন্তব্যে যেসব প্রত্যুত্তর করেছেন, সেগুলো আরো একটু গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলেই, সম্পর্কটা আঁচ করতে পারবেন। আরো পরিস্কার করতে চাইলে যে শব্দ উচ্চারণ করা হবে, তাতে হয়তো অশোভনীয় কিম্বা কুৎসিত শোনাবে। মুক্তমনার মত অসাধারণ প্লাটফর্মে সেই শব্দ মাহফুজের ন্যায় উচ্চারণ করা থেকে বিরত থাকছি। মাহফুজ যদি কখনও মুক্তমনার নীতি বহির্ভূত কোনো আচরণ করে তাহলে কর্তৃপক্ষ অবশ্যই তাকে শাস্তি দিতে পারেন। আর যদি তার প্রকাশভঙ্গীর বড়ই অভাব ঘটে. তাহলে মুক্তমনার পরিবারের সদস্য হিসেবে তাকে ম্যানারস জ্ঞান শেখানোটাও দায়িত্বের মধ্যে এসে পড়ে।
কমেন্টস করার অপশন বন্ধ থাকায়, আমার এই চিঠিটি আপনার কাছে কিভাবে পাঠাবো বুঝতে পারছিলাম না। ইচ্ছে করলে আমার এই চিঠিটি ‘অভিজিতের প্রতি-খোলা চিঠি’ হিসেবে ব্লগে দিতে পারেন। ব্লগে দিলে কমেন্টস অপশন বন্ধ রাখার অনুরোধ করবো, কারণ অধিকাংশ পাঠকবৃন্দ মূখ্য বিষয় উপেক্ষা করে গৌণ বিষয়ের দিকে ঝুকে পড়ে। এতে মূল্যবান পোষ্ট পড়ার সময়কে ক্ষতিগ্রস্ত করে। আবার ব্যক্তিগত চিঠি হিসেবে গোপনও রাখতে পারেন। দু’ধরনের অধিকারই ভোগ করার বিবেচনায় আপনি সম্পূর্ণ স্বাধীন।
ভালো থাকবেন। মুক্তমনা দীর্ঘজীবী হোক।
আপনার শুভ কামনায়-
মোস্তাফিজ।
২৭.৮.২০১০