আমার কাছে যেটা পছন্দের অনেকের কাছেই সেটা অপছন্দনীয় নয়

উপরোক্ত বাক্যটি অভিজিৎ রায়ের। এই বাক্যটিকে বিশ্লেষণ করা উচিত। বাক্যটিকে নিয়ে প্রশ্ন করা উচিত। প্রশ্নে প্রশ্নে জর্জরিত করে এর ভেতরের মর্ম উপলব্ধি করা উচিত। অপছন্দীয় শব্দটি তিনি কি অকারণে বা স্বকারণে দিয়েছেন? কিসের উপর ভিত্তি করে তিনি ভাবছেন যে, যেটা তার কাছে পছন্দের, সেটা অনেকের কাছেই অপছন্দনীয় নয়? তিনি কি এ ব্যাপারে জনমত যাচাই করেছেন? কিম্বা ‘অনেকে’ বলতে তিনি কাদেরকে বুঝিয়েছেন?

বাক্যটি পড়লে স্বভাবতই প্রশ্ন জেগে ওঠে মনের মধ্যে। বাক্যটির সরল অর্থ হচ্ছে- অভিজিৎ এর কাছে যেটা পছন্দনীয় সেটা অনেকের কাছেই পছন্দনীয়। প্রশ্ন জাগতেই পারে- বাক্যটির মধ্যে কতটুকু সত্য লুকিয়ে আছে? তিনি হয়ত ভাবছেন কিম্বা বিশ্বাস করছেন- তার পছন্দীয় বিষয় অনেকের নিকটই গ্রহনীয়। কীভাবে এটার প্রমাণ দেবেন তিনি? তিনি তার পক্ষে যুক্তি দাড় করিয়ে এর প্রমাণ দিতে কি সক্ষম?

যে পোষ্টে তিনি এই মন্তব্য করেছেন সেই পোষ্টটি তানভীরুল ইসলামের ‘স্থবিরতার ইতিবৃত্ত’ প্রবন্ধে। সেই প্রবন্ধের একটি অংশ এখানে তুলে ধরছি।

তানভীরুল ইসলাম বলছেন-
একটা জিনিশ আমি সব সময়ই মানি। যেটা কদিন আগে দেখলাম অ্যান্থ্রপলজিস্ট মার্গারেট মীড খুব সুন্দর ভাবে বাক্যে প্রকাশ করেছেন, ‘Never doubt that a small group of thoughtful, committed citizens can change the world. Indeed, it is the only thing that ever has.’ অনেকে হয়তো ভাবতে বা প্রশ্ন করতে পারে ‘কেন একটা স্মল গ্রুপের চিন্তাকে পুরো বিশ্ব রিফ্লেক্ট করবে?’ এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার দায়িত্ব আপনারই। আমি এটা মানি। এটা আমার মানসের ছাপচিত্রেরই অংশ। এবং এ বিষয়ে সমমনা মানুষদের আমি খুঁজে বেড়াই সব সময়। খুব বেশি তো লাগবে না। একটা ‘স্মল গ্রুপ’ হলেই চলবে।

মুক্তমনা এমন একটি ওয়েব সাইট যা সবাই পছন্দ করে না। এমনকি এটাতে ঢুকতেও ভয় পায়। মুক্তমনা গ্রুপ খুব বেশি বড় নয়। এটা একটা স্মল গ্রুপ। এই গ্রুপটাই পুরো বিশ্বকে রিফ্লেক্ট করে চলেছে। আমরা জানি, ভালো ভাবেই জানি- মুক্তমনাকে ব্যান করা হয়েছে মধ্য প্রাচ্যের কয়েকটি দেশে। এটা তো গেলো বাইরে। আমাদের দেশের মধ্যেও চলছে নানা ষড়যন্ত্র।

যদি প্রশ্ন করা হয়, বাংলায় মুক্তমনার মত ওয়েব সাইট কী আরো রয়েছে? এর জবাব কী?

মুক্তমনার ব্যাপারে, ড. নৃপেন্দ্র সরকার প্রায়ই বলে থাকেন- মুক্তমনা মুক্তচিন্তার ক্ষেত্রে এক অসাধারণ প্লাটফর্ম। কিন্তু এই অসাধারণ প্লাটফর্মকে ধ্বংস করার জন্য মৌলবাদী চক্র উঠে পড়ে লেগেছে। অনলাইনে পিটিশন করে স্বাক্ষর নেয়ার অভিযান চলছে।

সরাসরি মুক্তমনার নাম উল্লেখ না করলেও পিটিশনের বিষয়বস্তুতে প্রমাণ করে যে সেই পিটিশন কাদের বিরুদ্ধে?

আমরা যারা মুক্তমনাকে ভালোবাসি, মুক্তমনার দীর্ঘায়ু কামনা করি আমাদেরও তো দায়িত্ব কর্তব্য রয়েছে। মুক্তমনার বিরুদ্ধে খর্গ হস্ত হলে মুক্তমনার সদস্যদের কী কী করণীয় রয়েছে?

শেখ মুজিবের নাম এলেই বাংলাদেশের নাম এসে যায়, তেমনি অভিজিৎ-এর নাম এলেই মুক্তমনার কথা এসে যায়। শেখ মুজিব ভাবতেন- উনার তেমন শত্রু নেই। কেউ তার ক্ষতি করবে না। অনেকেই তাকে ভালোবাসে, পছন্দ করে। কিন্তু শেষতক তার সেই ভালোবাসা, বিশ্বাস-এর চরম মূল্য দিতে হয়েছিল। ঠিক একইভাবে যদি অভিজিৎ চিন্তা করে থাকেন, তাহলে তিনি শেখ মুজিবের মতো ভুল করছেন কিনা তা ভেবে দেখা দরকার।

আসুন আমরা এই বিষয়টি নিয়ে কিছুক্ষণ ব্লগাড্ডায় মাতি এবং নতুন নুতন চিন্তা ভাবনা সংযুক্ত করি।

(মুক্তমনা কর্তৃপক্ষ যদি মনে করেন এই পোষ্টটি তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয় কিম্বা এখানে আলোচনা করার কোনই প্রয়োজন নেই, তাহলে নির্দ্বিধায় পোষ্টটি সরিয়ে বা মুছে ফেলতে পারেন, এতে আমার কোনই আপত্তি থাকবে না।)