[মুক্তমনায় আমার প্রায় প্রতিটি লেখাই নাস্তিকতা বা বিজ্ঞান নিয়ে। তবে ওই দুই শ্রেণীর লেখা লিখতে অনেক খাটনি লাগে। সম্প্রতি কাজে ব্যস্ত হয়ে যাওয়ায় আর লেখার পেছনে অতটা সময় দিতে পারি না। তাই ফাঁকিবাজী করে অর্থনীতি আর রাজনীতির এই টপিকে আলোচনা রাখলাম। এটা দেশের পলিসি নিয়ে আলোচনা, আর মতামত আমার ব্যক্তিগত – অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ইন্টারনেটে পাওয়া বিভিন্ন খবর ও টুকরো লেখা থেকে সংগ্রহ করা। লেখার শেষ পর্বে আমি লিঙ্কগুলো একত্রিত করে দিয়ে দেব। ]
আজ থেকে প্রায় বছর পঞ্চাশেক আগের কথা। তৎকালীন এক উন্নয়নশীল দেশের এক গাড়ি-নির্মাতা কোনো এক উন্নত দেশে গাড়ি রপ্তানী করার প্রচেষ্টায় ছিল। তার আগে পর্যন্ত অবশ্য কোম্পানীটি নিজের দেশে কিছু নিম্নমানের গাড়ি বানিয়েই বাজার ধরে রেখেছিল। তাদের নিজস্ব পরিকল্পনাও বিশেষ একটা ছিল না অটোমোটিভ ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে, মূলত অন্যান্য গাড়ির সস্তা নকল বের করত নিজের দেশে। তাও যতই হোক, উন্নত দেশের রপ্তানীর খবর পেয়ে দেশের লোকজন গর্ববোধ করেছিল, “মধ্যবিত্ত বুর্জোয়া দেশপ্রেম” বলে কথা।
তবে উন্নত দেশের লোকজনে এই গাড়িটাকে বিশেষ একটা ভালভাবে নেয়নি। তাদের নামজাদা সংবাদপত্রের রিভিউতে আসে গাড়িটা চার চাকার ওপর একটা অ্যাশট্রে ছাড়া আর কিছুই না। গাড়ি বাজারে চলেনি। উন্নত দেশে ততদিনে সবাই জেনে গেছে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে শিল্পের নাম করে শুধুই উন্নত দেশের পণ্য নকল করা হয়। নকল ঠুনকো কোনো গাড়ি কিনে কে ই বা ঠকতে যায় – তাতে দাম কিছুটা কম হলেও পোষায় না।
অন্যদিকে, উন্নয়নশীল দেশটিতে ততদিনে এক বিশাল বিতর্কের সূত্রপাত হয়। এইভাবে গাড়ি বানিয়ে বিদেশে বদনাম কুড়োনোর কি মানে? এর বছর কুড়ি আগে উন্নত দেশ থেকে সব গাড়ি আমদানী বন্ধ করেছেন উন্নয়নশীল দেশটি, আর বছর দশেক আগে দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচিয়েছে সরাসরি সরকারী হস্তক্ষেপে। বুদ্ধিজীবীদের অনেকেরই মত হল কোম্পানীটিকে আবার পুরোনো ব্যবসায় – অর্থাৎ টেক্সটাইল মেশিনারি বানানোর ব্যবসায় নামিয়ে দিতে হবে। আর দেশের বাজারে আবার উন্নত দেশ থেকে গাড়ি আমদানী করতে হবে। তাহলে দেশেও সস্তা ঠুনকো গাড়ি থেকে মুক্তি মেলে, বিদেশেও অযথা বদনাম হয় না। তাছাড়া, পঁচিশ বছর ধরে চেষ্টা করে কোম্পানীটি যদি গাড়ি বানানোর প্রকৌশল ভালভাবে আয়ত্তে না আনতে পারে, তাহলে ভবিষ্যতেই যে পারবে তার নিশ্চয়তা কোথায়? আর অন্য কিছু বুদ্ধিজীবী আবার অন্য চিন্তা করেছিলেন, তাদের মতে সময় আরো কিছুটা দরকার। গাড়ি শিল্পে উন্নত দেশগুলোর প্রকৌশল কয়েক দশকের – উন্নয়নশীল দেশের জন্য আরো সময় না হলে এতে সফল হওয়া সম্ভব নয়।
সরকারের ওপর দ্বিতীয় শ্রেণীর বুদ্ধিজীবীর প্রভাব হয়ত বেশী ছিল। সদ্য যুদ্ধ সেরে ওঠা দেশে দেশপ্রেমের ফল্গুধারা ছিলই। ফলে, কোম্পানীটা উৎপাদন জারি রাখল, চেষ্টা করল রপ্তানীরও। দেশটার নাম জাপান। কোম্পানীটার নাম টয়োটা। সালটা ১৯৫৮। জাপান ১৯৩৯ সালে দেশে ফোর্ড আর জি-এম এর গাড়ি আমদানী বন্ধ করেছিল। আর যে গাড়িটা প্রথম রপ্তানী করার চেষ্টা হয়েছিল – তার নাম টয়োপেট। আজ প্রায় বছর পঞ্চাশেক পরে, জাপানী গাড়ি উন্নত দেশগুলোতেও ফরাসী ওয়াইন বা আমেরিকান সফটওয়ারের মতই সর্বজনবিদিত। আর টয়োটা আজ বিশ্বের এক নম্বর গাড়ি বিক্রেতা। অথচ মাত্র পঞ্চাশ বছর আগেও অধিকাংশ মানুষ আর একশ্রেণীর জাপানীও ভেবেছিল যে জাপানে গাড়ি তৈরী করার সিদ্ধান্তই ভুল। ভেবে দেখুন?
আজ যখন মুক্ত বাণিজ্যের কথা চারদিকে, তখন এই উদাহরণগুলো মাথায় এলে হিসাবটা এলোমেলো হয়ে যায়। জাপানী গাড়ি শিল্প কিন্তু মুক্ত বাণিজ্যের হাত ধরে দাঁড়ায় নি – দাঁড়িয়েছে দেশীয় রক্ষাকবচের তলায়। শুধু জাপান বলে নয়, আজকের উন্নত বিশ্বের ইংল্যান্ড বা আমেরিকা – নিজেরাও রক্ষাকবচের তলায় রেখেই দেশীয় শিল্পকে বড় করে তুলেছে।
১৭২১ সালে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ওয়ালপোল এক নতুন শিল্পনীতির ঘোষণা দেন – যার ফলে বিদেশী শিল্পজাত পণ্য আমদানীতে চড়া শুল্ক বসানো হল, কিন্তু কাঁচামাল আমদানীতে ভর্তুকি দেওয়া শুরু হল। তার লক্ষ্যই ছিল দেশে ম্যানুফাকচারিং শিল্পে জোয়ার আনা। এতে কাজও হয়েছিল। ১৮৬০ সাল অবধি এই নীতি জারি ছিল ও এর আওতায় ৫০-৬০% শুল্ক বসানো ছিল। পরে ব্রিটিশ শিল্প উপনিবেশের কাঁচামালের সুবিধা পেতে শুরু করায় আর এই নীতি রাখার প্রয়োজন পড়ে নি।
মার্কিন দেশের ইতিহাস আরেকটু ইন্টারেস্টিং। প্রথম থেকেই এ দেশে দুটো মতামত ছিল – মুক্তবাণিজ্যের পক্ষে ও বিপক্ষে। ১৭৮৯ সালে প্রথম মার্কিন ট্রেসারী সেক্রেটারী আলেক্সান্ডার হ্যামিল্টন শিল্পনীতির প্রস্তাবনা দেন। এতে একরকম ব্রিটিশ নীতির মতই সব ধারা ছিল। কিন্তু শুরু থেকেই উনি বিরোধিতার মুখে পড়েন। বিরোধীদের মধ্যে সর্বাগ্রে ছিলেন প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ অ্যাডাম স্মিথ – যাকে আজকের মুক্তবাণিজ্য নীতির তত্ত্বের জনক বলা যেতে পারে। স্মিথের তত্ত্ব সহজে বললে দাঁড়ায় যে দেশের পক্ষে যেটা সবথেকে ভাল শিল্প তার শুধু সেটা নিয়েই কাজ করা উচিত, বাকি সব কিছু বাইরে থেকে আমদানী করাই দেশের সমৃদ্ধির পক্ষে ভাল। তিনি ইউরোপ থেকে ম্যানুফাকচারড দ্রব্য বিনাশুল্কে আমদানীর পক্ষপাতী ছিলেন। পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জেফারসনও স্মিথের দলেই ছিলেন।
এর বিরুদ্ধে হ্যামিল্টনের যে যুক্তি ছিল তা-ই আজও ইনফ্যান্ট ইন্ডাস্ট্রি প্রোটেকশন নামে খ্যাত। তার বক্তব্য ছিল দেশ কোন শিল্পে দক্ষ, তা জানার জন্যই সব শিল্পকে একরকম সুযোগ দিতে হবে। সেটা শিল্পভেদে ভিন্ন সময়কাল হতে পারে। (জাপানের গাড়ি শিল্প পঁচিশ বছর পরেও দেশের কাঁধে বোঝা হিসাবেই ছিল, কিন্তু ষাট বছর পরে দৃশ্যপট বদলেছে) । অন্যান্য দেশের সাথে প্রতিযোগিতার আগেই যদি ধরে নেওয়া হয় আমরা এই শিল্পে কিছুই করে উঠতে পারব না, তাহলে দেশের প্রকৃত পোটেনশিয়াল তো অঙ্কুরেই বিনষ্ট হতে পারে।
স্মিথ ও অন্যান্য মুক্ত বাণিজ্যপন্থীদের পালটা উত্তর ছিল কতদিনে কোনো শিল্প প্রতিযোগিতার উপযুক্ত হবে তা জানার কোনো উপায় নেই। বরং, দেশীয় শিল্পকে শুল্ক ও ভর্তুকির রক্ষাকবচ দিয়ে গেলে উলটে সেই শিল্পগুলো রাষ্ট্রের ঘাড়ে চেপে বসতে পারে। পরে যদি বোঝাও যায় যে দেশে এই শিল্পের বিকাশ সম্ভব নয়, তখনো শুধু অনেক মানুষের জীবিকা-রক্ষায় ভর্তুকি ও শুল্ক জারি রাখতে হবে, যদিও তাতে আখেরে দেশের ক্ষতিই হবে। শিল্পের মালিকেরা কখনই শুল্ক ও ভর্তুকির রক্ষাকবচ তুলে দিতে চাইবে না।
এর পরে মার্কিনিরা ইংল্যান্ডের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে ও একরকম রাজনৈতিক ভাবেই আমদানীকৃত শিল্পজাত দ্রব্যের ওপর চড়া শুল্ক বসানো হয়। উদ্দেশ্য ছিল ব্রিটিশদের সাথে টক্কর দেওয়া। এই শুল্ক চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ শতাংশের মধ্যে ঘোরাফেরা করত। আর তা জারি ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ হওয়া অবধি, যখন মার্কিন ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্প দাঁড়িয়ে গেছে কিন্তু যুদ্ধের ফলে ইউরোপের শিল্প মারা পড়েছে। অর্থাৎ প্রতিযোগিতায় যখন জয় সুনিশ্চিত, তখনই খোলা হল দরজা।
(এরপরে পরের পর্বে … )
এ বিষয়ে কৌতুহল অনেকদিন থেকেই। লেখাটা আগ্রহ নিয়ে পড়লাম। তারচেয়ে বেশি আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় রইলাম পরের পর্বগুলোর।
সুন্দর লেখার জন্য ধন্যবাদ। 🙂
পড়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ। এই সপ্তাহান্তেই লেখাটা শেষ করতে পারব বলে মনে করি। তবে সব লেখাটা প্রোটেকশনিজমের পক্ষে যাবে না, কিছুটা মুক্ত-বাণিজ্যের পক্ষেও কথা থাকবে।
@দিগন্ত,
মুক্তমনায় আপনাকে দেখে ভালো লাগছে। অনেকদিন পর আপনার একটি লেখা পড়ার সুযোগ হলো। পরের পর্বের অপেক্ষায়।… :yes:
গুরুত্বপূর্ণ টপিক। পুরোটা পড়ার আগ্রহ হয়েছে। পরে মন্তব্য, অবশ্য যদি কিছু করার থাকে।
সিরিজের শুরুটা বেশ :yes: । আরো কয়েকটি পড়ে মন্তব্য করব।
সামষ্টিক অর্থনীতি বড়ই আকর্ষণীয় লাগে। সিরিজে নিয়মিত হলাম।
আমার নিজের যা বুঝ তা হচ্ছে কাছাকাছি জিডিপির দেশের মধ্যে মুক্তবানিজ্য হলে দু’পক্ষই একে অন্যের চেয়ে নিজস্ব প্রযুক্তিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে লাভবান হতে পারে।
কিন্তু অসম জিডিপির দুদেশের মধ্যে মুক্তবানিজ্যে দরিদ্র দেশটির কোন লাভ নেই বরং ক্ষতিই হবে। কোন অবস্থাতেতেই দরিদ্র দেশটি উন্নত দেশটির প্রযুক্তির সাথে পাল্লা দিয়ে পারবে না। প্রটেকশানিজমে অনেক ক্ষেত্রে কাজ হয়তো হয় না, কিন্তু কোন প্রকার প্রটেকশান ব্যতীত নিজস্ব প্রযুক্তি গড়ে উঠার কোন সম্ভাবনা নেই, যদি না সেটা অন্য কেউ দান করে। তাই নিজস্ব শিল্প গড়ে উঠার লক্ষ্যে সীমিত আকারে প্রটেকশান দিয়ে হলেও নিজস্ব প্রযুক্তির উপর গবেষণা চালিয়ে যেতে হবে।
এই ক্ষেত্রে আমেরিকার সাম্প্রতিক একটি ঘটনার কথা স্মরণ করছি। আমেরিকার অর্থনীতির উদ্ধারের জন্য বেইল আউটের অর্থের কার্যকর ব্যবহারের জন্য প্রটেকশনের আইন করা হয়েছিল, যেটা নিয়ে কানাডা খুবই চিন্তার মাঝে ছিল। কানাডা-ইউএস এর অর্থনীতি ব্যবসা বানিজ্য বেশ ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। ইউএসের অনেক শিল্পই কানাডাতে অবস্থিরত। তাই কানাডা আশা করেছিল যে অন্তত তারা প্রটেকশানের আওয়াতায় আসবে না। কিন্তু ইউএসে সে ছাড় দেয়নি। সুতরাং নিজস্ব অর্থনীতি মজবুত করার জন্য যে প্রটেকশান দরকার সেটা মুক্ত বানিজ্যের ধ্বজাধারীরাও বুঝে, শুধু যখন নিজের দরকার হয় তখন। ইউএস খুব ভাল করেই বুঝে যে তাঁদের বেইল আউটের অর্থ দিয়ে কানাডা বা ইউরোপের শিল্পের উন্নতি হলে তাঁদের সারা জীবন বেইল আউটই করে যেতে হবে। শুধু আমদানী করে আসলে কোন অর্থনীতি টিকে থাকতে পারে না। এমনটাই আমি মনে করি, এখন পর্যন্ত।
:yes: :yes:
পরের পর্বের অপেক্ষায়।
চমৎকার একটা লেখায় হাত দিয়েছেন। শুধু মুক্ত-বাজারের হুজুগে মেতে আমরা যে কোথায় যাচ্ছি তা ভেবে দেখার জন্য আর সময় নেয়ার অবকাশ নেই। মুক্ত-বাজার অর্থনীতি আমাদের কল্যাণ করবে, কিন্তু কিভাবে করবে তা কখনো আমার কাছে বোধগম্য হয়ে উঠেনি। যেভাবে বিভিন্ন মডেল দেখিয়ে আমাদের বিভ্রান্ত করা হয় তা বাস্তবে যে মোটেও খাটে না বরং অন্যান্য বিভিন্ন ফ্যাকটর এখানে কাজ করে এসব বিষয় থেকে যায় সম্পূর্ণ আগোচরে। উন্নয়নশীল দেশ গুলোর সমস্যা বহুমুখী, একেতো আসচেতন জনগোষ্টী তার উপর অনিবার্যভাবে আসে অসৎ সরকার যারা ভিন দেশের কোম্পানি গুলোর কাছে বিক্রিত হতে মোটেও দ্বিধা করে না।
মুক্ত-বাজার অর্থনীতির হুজুগে না মেতে তা কখন, কতটুকু, কিভাবে দেশের কাজে আসবে তা অন্তত উন্নয়নশীল/অনুন্নত দেশগুলোর ভেবে দেখা অবশ্যই দরকার ।
বন্যাদিকে সমর্থন করলাম।
দিগন্ত, চমৎকার হয়েছে শুরুটা, নিশ্চয়ই আরও ভিতরে যাবে বিষয়টার পরের পর্বগুলোতে। আজকের বিশ্বর্থনীতি এবং একবিংশ সালের পুঁজিবাদ এক নতুন রূপ নিয়েছে, বিশ বছর আগের মডেলও এখন আর কাজে নাও লাগতে পারে। ভারতের প্রোটেকশানিজমে কাজ হয়নি ( বিপ্লবের কথার ভিত্তিতে বলছি, কতটা কাজ হয়ে তা আমি সঠিভাবে জানি না) বলে অন্য দেশেও হবে না বা সিলেক্টিভ কোন কোন ক্ষেত্রে হবে না তা হয়তো ঠিক নয়। আর বিশ্বায়ন মানেই বোধ হয় অবাধ বানিজ্য নয়, এক্ষেত্রেও যে যেরকমভাবে পারে নিজের বা জাতীয় সুযোগ সুবিধা লুটে নেয়, বা নিজের দেশের সুবিধামত নিয়ম কানুন তৈরি করে। আজকে ওয়ালমার্ট বা ইন্টেল বিশ্ব জুড়ে ব্যাবসা করে বলে তারা জাতীয়তার উর্দ্ধে উঠে গেছে বলে মনে হয় না। বা ওদিকে চীনের মত দেশ তার প্রয়োজন মত নিজস্ব মূদ্রানীতি চালিয়ে যাচ্ছে… এরকম হাজারো উদাহরণ দেওয়া যায়। হ্যা, আগের তুলনায় আমরা এখন অনেক বেশী কানেক্টেড, চায়নার উপর আমেরিকা বা ইউরোপ অনেক বেশী চাপ সৃষ্টি করতে পারে বৈশ্বিক বানিজ্যের কারণে, কিন্তু তার ফলে যে জাতীয় স্বার্থের উর্দ্ধে উঠে গেছে সব কিছু তা কিন্তু ঠিক নয়। এখনও জাতীয় বাউন্ডারিগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। কর্পোরেট পুঁজি বনাম জাতীয় স্বার্থ কিভাবে কাজ করবে বা পুঁজিবাদের মধ্যে থেকে আসলেই কখনও জাতীয় বাউন্ডারি ঘুচানো যাবে কিনা সেটা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। আমার কাছে মাঝে মাঝে মনে হয়, এই বিশ্বায়নের কারণে পুঁজিবাদের বিকাশ কিভাবে ঘটছে বা ঘটবে সেটা চোখের সামনে দেখাটা একটা খুবই মজার বিষয়।
আপনার পরিবেশ বিষয়ক লেখাগুলি কিন্তু দারুন হয়, খুবই তথ্য ও যুক্তি ভিত্তিক। কিন্তু কিপ্টেমী করে বেশী লেখা দেন না।
আমি ক্ষুদ্র জ্ঞানে যতটুকু বুঝি যে মুক্তবাজার অর্থনীতি মোটামুটি সমান মানের দেশগুলির জন্য প্রযোজ্য। যেমন ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের দেশগুলি। অসম দেশের মধ্যে মুক্তবাজার চালু হলে ফল হবে খুবই এক তরফা।
ভাল। তবে এম্পিরিসিজম এসব ক্ষেত্রে খাটে না। অর্থনীতিতে সূত্র বলে আজ পর্যন্ত যা কিছু দাবী করা হয়েছে, তার সব কিছুই স্থান কাল স্পেসিফিক। যা কাল খেটেছে-আজ নাও খাটতে পারে।
ভারতের প্রটেকশনিজমে কোন লাভ হয় নি-ওই এম্বাসাডার গাড়ি
প্রোটেকশনের সুযোগে শুধু লাভ করেছে-কোন উন্নতি করে নি। বরং লিব্যারাল জমানাতে তাও বিশ্বমার্কেটের সুযোগ নিতে ভারতীয় কোম্পানীরা গ্লোবালাইজ করছে। ২০২০ সালের মধ্যে ইউরোপ এবং আমেরিকার কোম্পানীরগুলোর বৃহত্তর শেয়ার ভারতীয় এবং চাইনিজদের দখলে যাবে। তখন প্রোটেকশনিজমের অর্থ থাকবে না। ফাইনান্স ক্যাপিটাল যেখানে গ্লোবাল হচ্ছে-সেখানে উৎপাদন এবং গবেষনা স্থানীয় রাখা অসম্ভব।
@বিপ্লব পাল,
তবে প্রাথমিক ভাবে প্রোটেকশনের প্রয়োজন আছে বইকি! নইলে আজকের অর্থনৈতিক শক্তি কি ভারত অর্জন করতে পারতো? যদিও তা পর্যাপ্ত নয় বলেই আমি বিশ্বাস করি। আমার কিন্তু মনে হয় বিশ্বায়নের ফলে আমাদের মতো দেশ গুলো অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। কারন আন্তর্জাতিক অসম প্রতিযোগীতা। এই প্রতিযোগীতায় টিকতে হলে আগে টেকনোলজীকে বিশ্বমানের হতে হবে। আমরা তো সেই পর্যাযে এখনো পৌঁছুইনি। আর তাই সরাসরি রাষ্ট্রীয় প্রোটেকশনের একটা পর্যায় পর্যন্ত প্রয়োজন আছে বলেই আমার মনে হয়।
@কেশব অধিকারী,
কার্ল মার্ক্স যেকারনে প্রটেকশন বিরোধি ছিলেন-আমিও সেই কারনে প্রটেকশন বিরোধি।
আন্তর্জাতিকতাই ভবিষ্যত। প্রটেকশনিজম জাতীয়তাবাদের হাতকে শক্ত করে মাত্র।
হ্যাঁ, মুক্তমনার লেখাগুলো নির্দিষ্ট দুইভাগে ভাগ হয়ে গেছে। ধর্ম ও বিজ্ঞান। মাঝে মাঝে দু- একটা গল্প কবিতা ক্ষণিকের জোনাকির আলোর মত জ্বলে উঠে। পূর্বে কিন্তু মুক্তমনায় ধর্ম ও বিজ্ঞানের পাশাপাশি রাজনীতি-অর্থনীতি, পুজিবাদ-সমাজতন্ত্র নিয়েও প্রচুর লেখা আসতো। কী ভীষণ হেভিওয়েইট তর্ক যে হতো। এবার ওদিক থেকেও আমাদেরকে কিছু উপহার দিন।
দাদা, আপনার লেখা মিস করেছি, বহুদিন পর আপনাকে মুক্তমনায় দেখে আনন্দিত হলাম।
@আকাশ মালিক,
আমাদের লেখা কি তবে জোনাকি? :brokenheart: 😥
লেখাটি বেশ ভালো লেগেছে,ধন্যবাদ এমন একটি লেখা দেয়ার জন্য।
অনেকদিন পরে মুক্তমনায় দিগন্তের দেখা মিললো। লেখার জন্য অনেক ধন্যবাদ।