কথা হচ্ছিল একজন শিক্ষকের সাথে। তিনি ভীষণ রোজাদার মানুষ। নামাজ এক ওয়াক্তও কামাই করেন না। রমজানে ত্রিশ দিনই রোজা রাখেন। তাকে জিজ্ঞেস করলাম- এত রোজা রেখে, নামাজ পড়ে কি হবে? খামোখা এত কষ্ট করারই বা কি দরকার? তার সেই গতানুগতিক উত্তর যা আমি সবার কাছ থেকেই পেয়ে থাকি তা হলো- পরকালের রাস্তা পরিস্কার করতেই এত নামাজ রোজা. দুনিয়া তো মাত্র দুদিনের জন্য আসল জগত তো সেই পরকাল। কি অদ্ভুত কথা বার্তা! যে জগত কেউ কোন দিন দেখেনি, যাকে কোনভাবেই প্রমান করা যায় না, যার অস্তিত্ব সম্পর্কে সামান্য কোন আভাসও পাওয়া যায় না , একজন শিক্ষিত মুমিন মুসলমান বান্দার কাছে সেটাই হলো আসল জগত আর যে জগতে আমরা দিব্বি চলে ফিরে বেড়াচ্ছি, ভাল ভাবে বেচে থাকার জন্য প্রতি নিয়ত যুদ্ধ করছি সে জগত তার কাছে নিতান্তই মিথ্যা বা ফালতু। আমার মনে হয় একজন মুসলমান ও অমুসলমান এর মধ্যে এটাই সব চাইতে বড় মানসিক তফাৎ। যে কারনে একজন মুসলমান হয় ভয়াবহ রকমের অন্ধ বিশ্বাসী ও বাস্তবতা বর্জিত দৃষ্টি ভঙ্গির অধিকারী যেখানে একজন অমুসলিম হয় যুক্তিবাদী ও বাস্তব মানসিকতার অধিকারী। এ দৃষ্টি ভঙ্গীগত পার্থক্যই আসলে গড়ে দেয় মুসলমান ও অমুসলমান সমাজের আর্থ সামাজিক ভিত্তি। যেখানে মুসলমান জাতির অধিকাংশ মানুষ কল্পিত দোজখের আগুন থেকে বাচার জন্য অহরহ নামাজ রোজা হজ যাকাত এসব বাস্তব জগত বর্জিত বিষয় নিয়ে তার অধিকাংশ সময় ব্যস্ত থাকে ঠিক তখনই অমুসলিম জাতির অধিকাংশ লোক তাদের অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য প্রানান্ত পরিশ্রম করে যায়। ফলাফলও কিন্তু বাস্তব। পরিনতিতে অমুসলিম সমাজ জ্ঞান-বিজ্ঞান, ন্যয়বিচার ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা, নাগরিকদের স্বাধিনতা ও সম অধিকার প্রতিষ্ঠা, অর্থনৈতিক উন্নতি সর্ববিষয়ে মুসলমানদের চেয়ে হাজার বছরের চেয়েও বেশী অগ্রগামী। অমুসলিমরা যেখানে রকেটে চড়ে মঙ্গল গ্রহে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে, মুসলিমরা সেখানে মসজিদ আর মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার পেছনে তাদের লব্ধ সম্পদ ব্যয় করে চলেছে প্রান পনে।

তার সাথে কথা আর একটু বিস্তৃত করলাম ইচ্ছে করেই। বললাম- মুসলমানরা নামাজ রোজা করে তো গরীব আর অনুন্নতই রয়ে গেল। তাহলে লাভ কি হলো?

তার সোজা উত্তর- অমুসলিমরা তাদের জ্ঞান বিজ্ঞান অর্জন করেছে কোরান রিসার্চ করে। বলা বাহুল্য, আমি অনেক্েকই দেখেছি তারা এই ইংরেজী শব্দটাই ব্যবহার করে আর সেটা হলো-রিসার্চ।

-তাই যদি হয়, তাহলে মুসলমানরা সেটা পারল না কেন ? সহজাত প্রশ্ন আমার।

-মুসলমানরা হলো নামে মুসলমান, তারা তাদের ধর্মের আমল ঠিক মতো করে না।

আমি জিজ্ঞেস করি- তাহলে এত মানুষকে দেখি রোজা রাখে, নামাজ পড়ে এরা যথার্থ মুসলমান না ? তাছাড়া অমুসলিমরা তো কোন দিনে রোজাও রাখে না , নামাজও পড়ে না, কোরান হাদিসের বিধি নিষেধও কখনো মেনে চলে না , তাহলে তারা কোন রকম আমল না করেই এত উন্নতি করে বসল কিভাবে ?

তার নিরুদ্বেগ উত্তর- এরা মুসলমান তবে নামে , কামে নয়। তাছাড়া হাদিসে বলা আছে অমুসলিমরা ইহজগতে অনেক উন্নতি করবে।

তার এ ধরনের কথা শুনে আমি হাসব নাকি কাদব তাই ঠিক করতে পারলাম না। তবে বোঝা যাচ্ছে সে নিজেই নামে মুসলমান ও বলাবাহুল্য সে ইসলাম বা কোরান বা হাদিস কি তা মোটেই জানে না। পড়ে দেখারও দরকার বোধ করেনি কোন দিন। তাই আসলে যথার্থ মুসলমান যে কারা সে সম্পর্কে তারও ধারনা পরিষ্কার নয়।

আমি আবার জিজ্ঞেস করি- তাহলে কামের মুসলমান কারা ?

তার উত্তর-যারা নবীজির আদর্শ ও উপদেশ এবং কোরান পুর্ন ভাবে মেনে চলে তারাই হলো কামের মুসলমান।

আমি একটু উস্কে দেয়ার জন্য তাকে বলি- তাই যদি হয়, তাহলে একজন মুসলমানকে ১৩/১৪ টা বিয়ে করতে হবে ও তার মধ্যে কয়েকটা আবার দুগ্ধ পোষ্য মেয়ে শিশুকে বিয়ে করতে হবে যেমন নবীজি করেছিলেন আয়শাকে তার ৬ বছর বয়েসে, যখন তখন বিয়ে করে আবার তাদেরকে তালাকও দিয়ে দিতে হবে যা নবীজি করেছিলেন, যারা মুসলমান না যদি তারা দুর্বল হয়, তাহলে তাদেরকে আতর্কিতে আক্রমন করে পুরুষ মানুষগুলোকে সব হত্যা করে তাদের যুবতী নারীদেরকে গনিমতের মাল হিসাবে ভোগ করতে হবে যা নবীজি করেছিলেন যা তিনি করেছিলেন বিনা উস্কানিতে ইহুদি অধ্যুষিত খায়বার আক্রমন করে, কেউ ব্যভিচার করলে তাকে পাথর ছুড়ে মেরে ফেলতে হবে যা নবীজি করেছিলেন, দুর্বল ও অমুসলিম মম্প্রদায়ের বানিজ্য কাফেলাতে হঠাৎ করে আক্রমন করে তাদের সব সম্পদ লুঠ করে ভাগাভাগি করে নিতে হবে যা নবীজি করেছিলেন ওহুদের যুদ্ধের মাধ্যমে, কোরানের বানী অনুযায়ী একজন সাচ্চা মুসরমান স্ত্রীকে যখন তখন সামান্য কারনে তালাক দিয়ে দেবে বা তাকে মারধোর করবে, যারা মুসলমান না তাদেরকে ঘৃনা করতে হবে, পারলে তাদেরকে যেখানে পাওয়া যাবে সেখানেই আক্রমন করে হত্যা করে ফেলতে হবে। এতগুলো কথা বলে আমি তাকে মুক্তমনা সাইটের কিছু লেখা দেখানোর চেষ্ট্ াকরলাম।

এবার তার প্রতিক্রিয়া হলো দেখার মত। সর্বপ্রথমেই বলল- আপনি ইহুদি নাসারাদের কিছু ওয়েব সাইট থেকে এসব কথা বলছেন , কোরান বা হাদিস ভাল করে পড়েন নি। ইহুদি নাসারারা বর্তমানে ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে, দুনিয়া থেকে ইসলাম উৎখাত করার পায়তারা করছে আর তারাই বর্তমানে নানা ওয়েব সাইট খুলে এ ধরনের অপপ্রচার করছে।

সে আরও বলল- একমাত্র ইসলামই নারীদেরকে পূর্ন মর্যাদা ও সম্মান দিয়েছে। তার গলায় সেই গতানুগতিক সুর।

আমি তাকে পাল্টা প্রশ্ন করলাম- নারীকে যে বিপুল সম্মান দিয়েছে ইসলাম কোরান হাদিস ঘেটে তার কোন উদ্ধৃতি দিতে পারবেন ? তাকে আরও জিজ্ঞেস করলাম , আপনি নিজে কোরান মাতৃভাষায় পড়েছেন কখনো গোড়া থেকে শেষ পর্যন্ত?

এবার সে বেশ ফাপরে পড়ে গেল। বলাবাহুল্য সেও অন্য ৯৯% মুসলমানের মত কোরান মাতৃভাষায় মোটেই পড়েনি। তাই কোন উদ্ধৃতি দিতে না পেরে বলল- ইসলামে মায়ের পায়ের নীচে সন্তানের বেহেস্ত লুকিয়ে আছে একথা বলেছে। এটা বলে নারীকে বিপুল সম্মান প্রদর্শন করেছে।

সাথে সাথে আমি তাকে প্রশ্ন করলাম- দুনিয়ায় এমন কোন ধর্ম আছে যেখানে সন্তানের কাছে তার মাকে অসম্মান বা অশ্রদ্ধা করতে বলা হয়েছে? শুধু সভ্য জগত কেন এমন কোন অসভ্য বা আধা সভ্য সমাজ আছে যেখানে সন্তানকে বলা হয়েছে তার মাকে অসম্মান বা অশ্রদ্ধা করতে? সকল ধর্মেই সন্তানকে বলা হয়েছে তার মা তথা পিতা মাতাকে চুড়ান্ত সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে , হিন্দু সনাতন ধর্মে তো পিতা মাতাকে দেবতা জ্ঞানে পূজো করতে বলা হয়েছে। তার মানে হিন্দু সমাজে দেখা যাচ্ছে , মুসলমানদের চাইতেও নারীদেরকে অনেক বেশী সম্মান ও শ্রদ্ধা করতে বলা হয়েছে। এই যদি হয় অবস্থা সেখানে ইসলামের আর বিশেষ বিশেষত্ব কি থাকল ? আর তা ছাড়া নারী ও পুরুষের মর্যাদা নির্ধারিত হয়, মায়ের সাথে তার সন্তানের পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে নয়, সেটা নির্ধারিত হয় একজন নারীর সাথে তার জীবন সঙ্গী তথা স্বামীর সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে। এ বিষয়ে কোরান হাদিস কি বলেছে সেটা পারলে বলেন।

তখন আমি তাকে কোরানের বেশ কতকগুলি বহুল প্রচলিত আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়ে দেখালাম যেখানে বলা হয়েছে একজন পুরুষ চারটা বিয়ে করতে পারবে, স্বামী তার স্ত্রীকে যে কোন সময় স্ত্রীর অমতেও তালাক দিতে পারবে, স্ত্রীকে সামান্য কারনে মারধর করতে পারবে, স্বাক্ষীর ক্ষেত্রে একজন পুরুষের সমান দুইজন স্ত্রী লোক, স্ত্রী হলো শস্যক্ষেত্র আর তাকে যখন খুশী ভোগ করার একচ্ছত্র অধিকার স্বামীকে দেয়া হয়েছে এসব। কিন্তু কে শোনে কার কথা, তার ঐ এক কথা আরও ভাল করে কোরান পড়ার উপদেশ যদিও সে নিজেই কখনো তা পড়েনি ভাল করে। আর বলাবাহুল্য এর পর আর কথা বাড়ে না।

এর পর সে এ বিষয়ে আর কথা বাড়াতে নিষেধ করল। বলল সে আর এ বিষয়ে কথা বলতে চায় না। এ হলো মুসলিম মানসের বাস্তব রূপ। যখন তর্কে পারবে না তখন সে নিজের পরাজয় স্বীকার না করে চুপ করে যাবে। আর বলবে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার কথা কোরানে বলা আছে , তাই সে আর এ বিষয়ে কথা বলতে চাইবে না কিন্তু তারা এটাও জানে না , ধর্ম নিয়ে জবরদস্তি না করার যে কথা কোরানে বলা হয়েছে তা মোহাম্মদ বলেছিল যখন সে মক্কাতে ভীষণ ভাবে দুর্বল ছিল, তার কোন অনুসারী ছিল না , আর তাই তার মুখ থেকে ও ধরনের শান্তির বানী নিসৃত হয়েছিল। সেই মোহাম্মদ যখন মদিনাতে একটা লুটেরা বাহিনী গঠন করে তার সর্দার হয়ে বেশ শক্তি সঞ্চয় করে বসল তখন মোহাম্মদের মূখ থেকে রাতারাতি শান্তির বানী উধাও হয়ে গেল। তখন তার মুখে খালি খুন খারাবির কথা, হত্যা, লুন্ঠনের কথা। কিন্তু অধিকাংশ মুসলমানই আবার এসব ঘটনাকে সঠিক বা ন্যয় সঙ্গত বলে বিশ্বাস করে। হাদিসে ঘটনাগুলোকে এমন ভাবে বর্ননা করা হয়েছে যেন মোহাম্মদ এগুলো মহান কোন দায়িত্ব পালনের জন্য করেছিল আর সেভাবেই প্রতিটি মুসলমান শৈশব থেকে জেনে এসেছে। ফলে এখন যতই ভিন্ন যুক্তি প্রদর্শন করা হোক না কেন বাস্তব নিরিখে তা তাদের কাছে গ্রহনযোগ্য হয় না।

বলাবাহুল্য আমার পরিচিত এ শিক্ষক কিন্তু ব্যক্তিগত ভাবে দারুন বন্ধুবৎসল, উদারমনা ও মিশুক। হিন্দু মুসলমান খৃষ্টান এদের মধ্যে কোনই পার্থক্য করেন না। সবার সাথে সমান ভাবে মেশেন । অনেকটা বলা যায় তথাকথিত মডারেট মুসলমান। আর তার এ মডারেট হবার মূল কারন হলো ইসলাম সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান না থাকা। তার যদি সত্যিকার অর্থে কোরান হাদিস বর্নিত ইসলামী জ্ঞান থাকত তাহলে তিনি কোনমতেই মডারেট মুসলমান হতে পারতেন না।যেমন কোরানে বলা আছে-

চায় যে তারা যেমন কাফের তোমরা তেমনি কাফের হয়ে যাও,যাতে তোমরা ও তারা সমান হয়ে যাও। অতএব তাদের মধ্য হতে কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহন করো না যতন পর্যন্ত তারা আল্লাহর পথে হিজরত করে আসে। অতঃপর তারা যদি বিমুখ হয় তাহলে তাদেরকে পাকড়াও কর, এবং যেখানে পাও হত্যা কর। তাদের মধ্যে কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহন করো না, সাহায্যকারী রূপে গ্রহন করো না। সূরাঃ নিসা, আয়াত: ৮৯

সুতরাং একজন সাচ্চা মুসলমান কখনো অমুসলিমকে বন্ধু রূপে গ্রহন করা তো দুরের কথা, একজন মুসলমান হিসাবে তার নৈতিক দায়িত্বই হলো, অমুসলিমকে ইসলামের দাওয়াত দেয়া, যদি সে দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করে তাহলে তাকে পাকড়াও করে হত্যা করতে হবে। সুতরাং মডারেট মুসলমান বা মডারেট ইসলামের নাম করে যারা প্রচার চালাচ্ছে তারা আদৌ মুসলমানই নয় অন্ততঃ কোরানের বিধান অনুযায়ী। কিন্তু কথিত মডারেট মুসলমানের কাছে যদি উক্ত আয়াত উল্লেখ করে তার যথাযথ ব্যাখ্যা দেয়া হয়, উনি কিন্তু সাথে সাথে বলে বসবেন এসব আয়াত বিশেষ এক সময়ের প্রেক্ষিতে নাজিল হয়েছিল। অথচ তিনি একথা বলে যে কোরানেরই বিরোধিতা করছেন-যেমন কোরান বলছে, কোরানের বিধান কিয়ামতের আগ পর্যন্ত বহাল থাকবে, কোন নড় চড় হবে না- তা নিজেই বুঝতে পারছেন না। তিনি আরও পরামর্শ দেবেন – কোরান আরও ভাল করে পড়তে হবে, এ আয়াতের আগে পরে কি লেখা আছে তাও ভাল করে তফসির সহকারে পড়তে হবে আর তাহলেই এ আয়াতের যথার্থ অর্থ খুজে পাওয়া যাবে। কিন্তু কোন মতেই তাকে বুঝানো যাবে না যে- মহান আল্লাহ যার নাকি দয়া সীমাহীন তিনি কখনই এমন ধরনের নিষ্ঠুর কথা বলতে পারেন না তার সৃষ্ট বান্দাদের ব্যপারে। অথচ আলোচ্য আয়াত কিন্তু খুবই সহজ সরলভাবে এর মূল বক্তব্য পরিষ্কারভাবে বর্ননা করেছে একে বারে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটা পাঠ্য বইয়ের মত। বাইবেল, গীতা, ত্রিপিটক ইত্যাদি নানা ধর্মীয় গ্রন্থ পড়লে দেখা যাবে তাতে সরল অনেক বাক্যের সাথে অনেক গভীর তত্ত্ব মূলক বাক্য আছে যার অর্থ আপাত বোঝা দুরুহ, কিন্তু কোরানের বাক্যগুলো তার ধারে কাছেও যায় না , একেবারে সহজ সরল অনাড়ম্বর এর ভাষা। এবার এ আয়াতের আগে পরে একটু দেখা যাক কি লেখা তাতে-

আল্লাহর রাহে যুদ্ধ করতে থাকুন, আপনি নিজের সত্ত্বা ব্যতিত অন্য কোন সত্ত্বার জিম্মাদার নন। আর আপনি মুসলমানদেরকে উৎসাহিত করতে থাকুন। শীঘ্রই আল্লাহ কাফেরদের শক্তি সামর্থ খর্ব করে দেবেন। আর আল্লাহ শক্তি সামর্থের দিক থেকে অত্যন্ত কঠোর ও কঠিন শাস্তিদাতা। সূরাঃ নিসা, আয়াত -৮৪

যে লোক সৎকাজের জন্য একটি সুপারিশ করবে, তা থেকে সেও একটি অংশ পাবে। আর যে লোক মন্দ কাজের জন্য সুপারিশ করবে সেও তার বোঝা থেকে তার অংশ পাবে। বস্তুতঃ আল্লাহ সর্ব বিষয়ে মতাশীল। সূরাঃ নিসা, আয়াত-৮৫

আর তোমাদেরকে কেউ যদি দোয়া করে, তোমরাও তার জন্য দোয়া করো। তার চেয়ে উত্তম দোয়া বা তার মতই দোয়া কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ব বিষয়ে হিসাব রাকারী। সূরা ঃ নিসা, আয়াত-৮৬

আল্লাহ ব্যতিত আর কোন উপাস্য নেই। অবশ্যই তিনি তোমাদেরকে সমবেত করবেন কিয়ামতের দিন- এতে বিন্দু মাত্র সন্দেহ নেই। তাছাড়া আল্লাহর চাইতে বেশী সত্য কথা আর কার হবে। সূরাঃ নিসা, আয়াত-৮৭

অতঃপর তোমাদের কি হলো যে মুনাফিকদের সম্পর্কে তোমরা দুদল হয়ে গেলে? অথচ আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে ঘুরিয়ে দিয়েছেন তাদের মন্দ কাজের জন্য। তোমরা কি তাদেরকে পথ প্রদর্শন করতে চাও, যাদেরকে আল্লাহ পথ ভ্রুষ্ট করেছেন ? আল্লাহ যাকে পথ ভ্রুষ্ট করেন তোমরা তার জন্য কোন পথ পাবে না । সূরাঃ নিসা, আয়াত-৮৮

কিন্তু যারা এমন সম্প্রদায়ের সাথে মিলিত হয় যে, তোমাদের মধ্যে ও তাদের মধ্যে চুক্তি আছে অথবা তোমাদের কাছে এমন ভাবে আসে যে তাদের অন্তর তোমাদের সাথে ও তাদের স্বজাতির সাথে যুদ্ধ করতে অনিচ্ছুক। যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন তাহলে তাদেরকে তোমাদের ওপর প্রবল করে দিতেন। ফলে তারা অবশ্যই তোমাদের সাথে যুদ্ধ করত। অতঃপর যদি তারা তোমাদের কাছ থেকে পৃথক থাকে তোমাদের সাথে যুদ্ধ না করে এবং তোমাদের সাথে সন্ধি করে তবে আল্লাহ তোমাদেরকে তাদের ওপর কোন পথ দেন নি। সূরাঃ নিসা, আয়াত-৯০

আমি ৮৪ থেকে ৯০ আয়াতের তাফসির পড়ে বোঝার চেষ্টা করলাম আসলে কোন প্রেক্ষিতে এ আয়াত গুলো নাজিল হয়েছিল , দেখা গেল তাফসিরে সুপারিশ এর নানা রকম ব্যখ্যা দেয়া আছে কিন্তু আয়াত গুলোতে যে প্রচন্ড রকম হিংসাত্মক বানীর প্রকাশ ঘটেছে তার ব্যপারে তেমন কিছুই লেখা নেই। বরং সেখানে বলছে যে আল্লাহ যাদেরকে পথ ভ্রুষ্ট করে দিয়েছেন তারা কোন পথ পাবে না । তার মানে দাড়াল কেউ কেউ যে পথ ভ্রুষ্ট হয়ে বিপথ গামি হয় এটা আল্লাহই করেন , বিপথগামীদের কোন দোষ এখানে নেই। এর পর আল্লাহ যদি মুমিন মুসলমানদেরকে হুকুম দেন তাদেরকে যেখানে পাওয়া যাবে সেখানে হত্যা করতে তাহলে সে দোষটা কার ঘাড়ে যায়? নিশ্চয়ই আল্লাহর ঘাড়ে যায়। যারা সাচ্চা মুসলমান তারা বিষয়টা ভালমতোই বোঝে আর বোঝে বোলেই তারা কিন্তু বোমা হামলা বা অন্য কোনরকম হামলার মাধ্যমে অমুসলিমদের হত্যা করতে বিন্দু মাত্র দ্বিধা করে না।

তবে যে ঘটনার প্রেক্ষিতে আয়াতগুলো নাজিল হয়েছে তা হলো মক্কার কিছু লোক মদিনাতে এসে মোহাম্মদের কাছে পেশ করল যে তারা মুসলমান হতে চায় ও সেমতে মুসলমান হয়ে গেল কিন্তু ওরা যেই মক্কাতে ফিরে গেল অমনি আবার ইসলাম ত্যাগ করে মুশরেক হয়ে গেল। আর এ ঘটনাটা ছিল বদর যুদ্ধের পরের । বদর যুদ্ধ ছিল মক্কাবাসীদের বানিজ্য কাফেলায় আতর্কিতে হামলা করে মক্কাবাসীদের মালামাল লুঠ করে নেয়ার মোহাম্মদের এক কুমতলবের ফল। মক্কা থেকে সিরিয়াগামী বানিজ্য পথ মদিনার পাশ দিয়ে চলে গেছে। মোহাম্মদ ইতোমধ্যেই সে পথে মক্কাবাসীদের বানিজ্য কাফেলার ওপর আতর্কিতে আক্রমন করে তাদের মালামাল লুটে নেয়া শুরু করেছে। যা মক্কা বাসীদের জন্য একটা মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি করেছে কারন মদিনা মক্কা থেকে প্রায় একশ মাইল দুরে আর এত দুরে মক্কাবাসীদের পে তাদের বানিজ্য কাফেলার নিরাপত্তা প্রদান খুব কঠিন।ঠিক সেকারনেই নিরাপদে বানিজ্য করার মতলবে মক্কার কিছু লোক মদিনাবাসীদের কাছে মুসলমান হওয়ার ভান করত আর মক্কায় চলে গেলে আবার তারা আগের ধর্মে ফিরে যেত। খেয়াল করুন মক্কা বাসীরা এখানে শুধুমাত্র তাদের বাচার তাগিদে, মোহাম্মদের লুটেরা বাহিনীর লুট তরাজের হাত থেকে বাচার জন্যেই এই অভিনয় টুকু করত, তারা কখনই আগ বাড়িয়ে মদিনা আক্রমন করার কথা ভাবত না।কারন মক্কাবাসীদের বেচে থাকার জন্য সিরিয়ার সাথে বানিজ্য এর উপর পুরো পুরি নির্ভর করতে হতো। এটা ছিল তাদের বাচা মরার বিষয়। তাই কৌশলগত কারনেই তারা মদিনা বাসীদেরকে শত্রু বানানোর কথা চিন্তা করত না। এখন তাদের এ অভিনয় টুকুর কারনে মোহাম্মদ কোরানের বানীর নামে কি বলছে সেটা তো উপরোক্ত আয়াতগুলোতে খুব ভাল ভাবে ফুটে উঠেছে , তা হলো তাদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহন করা যাবে না , যেখানে পাওয়া যাবে পাকড়াও করে হত্যা করে ফেলতে হবে। ৯০ নম্বর আয়াতে দেখা যাচ্ছে , যদি কাফের বা মোশরেকরা সন্ধি করতে চায় তাহলে তাদের সাথে সন্ধি করা যেতে পারে, আর তখন তাদের ওপর আক্রমন করা যাবে না। এ থেকে মনে হতে পারে মোহাম্মদ বিশাল কোন মহানুভবতার পরিচয় দিচ্ছে। আসলে ব্যপারটা মোটেই তা নয় একটু বিশ্লেষণ করলেই তা খুব ভাল ভাবে বোঝা যাবে। এ কাজটি করে মোহাম্মদ একজন কৌশলী যুদ্ধবাজ গোষ্ঠি নেতার মত আচরন করছে।এ বিষয়টিকে বিশ্লেষণ করলে কিন্তু একটা খুব মজার জিনিস বেরিয়ে আসে। তা হলো কোন যুদ্ধ ক্ষেত্রে সাধারনত কোন্ দল সন্ধি করার জন্য আগ বাড়িয়ে এগিয়ে আসে? সে দলই আগ বাড়িয়ে এগিয়ে আসে যারা ভাবে যে তারা দুর্বল. যুদ্ধে জেতার কোন সম্ভাবনাই নেই । আর এ ক্ষেত্রে তারা আগ বাড়িয়ে সন্ধি করতে আসলে সন্ধির শর্তগুলো কিন্তু পুরো পুরি বিরোধী শক্তিশালী দলের অনুকুলেই থাকে কারন তারা জানে যে তাদের বিপ দল নিজেদের দুর্বলতার কারনেই সন্ধি করতে চায় আর তাই তারা সেই সুযোগ টিকে পুরো মাত্রায় গ্রহন করে চুক্তির শর্তগুলি পুরো পুরি তাদের অনুকুলে রাখারই চেষ্টা করে। আর সেটা কি ? সেটা হলো মক্কাবাসীর সবাই তো আসলে মোহাম্মদের সাথে সন্ধি চুক্তি করতে চাইতো না আর মক্কায় ছিল বেশ কিছু গোষ্ঠি। সব গোষ্ঠি মোহাম্মদের সাথে চুক্তি করতে রাজীও ছিল না। মোহাম্মদ তাই আলাদা আলাদা গোষ্ঠির সাথে চুক্তি করত আর চুক্তির শর্তে উল্লেখ থাকত যারা মোহাম্মদের সাথে চুক্তি করতে রাজী নয় চুক্তি বদ্ধ গোষ্ঠিগুলো চুক্তির আওতার বাইরের গোষ্টিগুলোকে কোন রকম সাহায্য সহযোগীতা করতে পারবে না। চুক্তির বরখেলাপ হলেই বিপদ , তাহলে তাদের বানিজ্য কাফেলার ওপর হামলা হবে। এধরনের চুক্তির ফলাফল সুদুর প্রসারী ছিল। এর ফলে মক্কার গোষ্ঠি গুলোর মধ্যে পারস্পরিক শত্র“তা ও দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করা সম্ভব হয়েছিল কারন চুক্তি বদ্ধ গোষ্ঠি চুক্তির বাইরের গোষ্ঠির সাথে কোন লেন দেন করতে চাইতো না, কোন সাহায্য করতে চাইতো না। যার ফলাফল হলো আভ্যন্তরীন গন্ডগোল। এর ফলে এরা পরস্পর কোন্দলে লিপ্ত থেকে নিজেদের শক্তি য় করত ও ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়েছিল। ঠিক সেকারনেই মোহাম্মদ যখন সদলবলে মক্কা দখল করতে এগিয়ে আসে তখন মক্কাবাসীরা সামান্যতম প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি, সম্পূর্ন বিনা বাধায় সে মক্কা বিজয় সম্পন্ন করে। সুতরাং ্উক্ত আয়াতের বক্তব্য আসলে কোন মহানুভবতার পরিচায়ক নয়, এটা হলো একটা সুদুরপ্রসারী যুদ্ধ কৌশল। ’

পরিশেষে , আমার এ প্রতীতি জন্মেছে যে , যুদ্ধ কৌশল বা রাজনীতির কিছু কিছু ক্ষেত্রে মোহাম্মদের নীতি বা কৌশল আজকের যুগেও গ্রহন করা যেতে পারে মোহাম্মদকে একজন জাতিয়তাবাদী নেতা হিসাবে স্বীকার করে নিয়ে কিন্তু কোন মতেই তার কোরানের বানীকে আল্লাহর বানী হিসাবে মেনে নেয়ার কোন কারন ঘটেনি। এখন সমস্যা হচ্ছে মুসলমানরা বুঝে বা না বুঝে মোহাম্মদকে আল্লাহর নবী মেনে তার কোরানকে আল্লাহর বানী মেনে নিয়ে হুবহু তার জীবনাদর্শ অনুসরন করে এ যুগে ইসলামী শাসন কায়েম করতে চায় যা এ যুগের সাথে নিতান্তই বেমানান। এ ধরনের শাসন ব্যবস্থা সেই চোদ্দ শ বছর আগের জন্য প্রজোয্য ছিল . বর্তমানে এর কোনই উপযোগীতা নেই।তবে তার কিছু কিছু শিক্ষা আমরা রাষ্ট্র পরিচালনার জন্যে গ্রহন করতে পারি ঠিক অন্য দশজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের নীতি যেভাবে আমরা গ্রহন করেছি। মুসলমানরা যত তাড়াতাড়ি এ সত্যটা বুঝতে পারবে যে মোহাম্মদের মূল ল্য ছিল গোষ্ঠি বিভক্ত আরব জাতিকে একটা ঐক্যবদ্ধ জাতি হিসাবে গড়ে তোলা যেখানে তার ভুমিকা ছিল একজন জাতিয়তাবাদী নেতার আর তা করতে গিয়ে তিনি যৌক্তিক ভাবেই বিভিন্ন গোষ্ঠির ধর্মীয় মতবাদকে উচ্ছেদ করে দিয়ে নতুন ধরনের মতবাদ চালু করেছিলেন যা ছিল যুগের দাবী তখনকার আমলে কিন্তু বর্তমানে সেই পরিবর্তিত যুগের দাবী অনুযায়ী ইসলামের আর কোনই আবেদন নেই বড়জোর মোহাম্মদের কিছু কিছু রাজনৈতিক বা সামরিক কৌশল তার গ্রহন করতে পারে, ততই তাদের মঙ্গল। অন্যথায় তারা মোহাম্মদ ও তার যাবতীয় শিাকে অন্ধভাবে অনুসরন করে সেই মধ্যযুগীয় জীবন ধারায় ফিরে যেতে পারে যেমন গেছিল তালেবানরা আফগানিস্থানে, কিন্তু তাতে ভবিষ্যতে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাই কঠিন হয়ে পড়বে বলে আমার যথেষ্ট বিশ্বাস জন্মেছে।