হনহন করে পা চালাচ্ছে খোকা।মাঝেমাঝে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। পা চালাতে গিয়ে হোচঁট খেল খোকা। বাজে খিস্তি এল মুখে। বাড়ি থেকে বের হবার সময় বাধা পেয়েছিল।
–আব্বু ক’দিন পর গেলে হয়না?আমার পরীক্ষা,গাড়ি না থাকলে যাবো কী দিয়ে? তিথী বলে ওঠে।
-কাজ আছে যেতেই হবে।গাড়িটার কাগজ ঠিক করতে চট্টগ্রাম যাব।

–ক’দিন কষ্ট কর।নিরুপায় তিথী চুপ হয়ে যায়। বিথী দরজার কোনে দাঁড়িয়ে। খোকা বিরক্ত হল। নীরা কাছেই দাঁড়িয়ে, নীরা জানে বলে লাভ নেই। তবু সে চিন্তিত, মেয়েটার ভারসিটি বেশ দু্রে।

–কিছু বলবে? খোকার চোখে প্রশ্ন বোধক চিহ্ন।
—নাহঃ কি বলবো,যাও তুমি।খোকা এ’কথায় দাঁত কড়মড়িয়ে উঠল মনে মনে। অহংকারী নীরা।
বিথী তিথী কে একটু মাথা ঝাঁকিয়ে আদর করে চলে গেল। নীরা দেখল লিফট ক্রমশঃ চার থেকে শুন্যে নেমে গেল।
নীরা আস্তে করে ঘরে এসে জানালার কাছে দাঁড়াল। তিথীর মেজাজ ভালনা। কেন আব্বু এ সময় গেল?কালকে সেমেস্টার ফাইনাল, কি করে যাবে এই চিন্তা করতে করতে ক্লাসের বন্ধু কে ফোন করল।
–কাল যাবার সময় নিয়ে যাস তো? আমার বাবার এ সময় কাজ পড়ল। ও দিক থেকে কি জবাব এলো বোঝা গেল না। ফোনটা দড়াম করে রেখে দিল।

রাস্তার এক কোনে গাড়িটা রাখা।খোকা গালে হাত দিয়ে অনূভব করল চার আঙ্গুলে চারটে আংটি পরা। বরণা ছোটো একটা ব্যাগ নিয়ে রাস্তার কোনে দাঁড়িয়েছিল।
—এতো দেরি?
—–আর বলোনা হয়ে গেল আর কি, চল জলদি।
—-আসার সময় যখন টুকিটাকি জিনিষ ভরছিল ছোট সুটকেসে নীরার বিস্মিত চেহারা। খোকা নিজে কোনোদিন গোছায় না।বরাবর শেভিংক্রিম,ব্রাস,পেস্ট যা কিছু সব নীরা গুছিয়ে দেয়।আজকাল খোকাই সব করে।মুখের খোঁচাখোঁচা পাকা দাড়ি কামিয়ে ক্লিন শেভ করল।
—–মম ড্যাড চলে গেল এতো রাতে?বিথী জড়িয়ে ধরে মা’কে।বিথী বেশ বড়সড়ো হয়েছে।সুন্দর তার দু’টি মেয়েই।ডাগর চোখ দু”টি মেয়েরই।
বালাই ষাট। মায়ের এসব ভাবতে নেই।মায়ের নজর নাকি ডাইনির নজর। কি ভেবে নীরা একটা এস,এম,এস দিল “পৌঁছানর পরে খবর দিও’।আজকাল তার কথা বলতে ভাললাগে না।বরঙ দুই মেয়েকে নিয়ে হৈচৈ করতে আনন্দ লাগে।বছর দুইয়েক আগের সেই ঘটনার পর নীরার জীবনে আমূল পরিবর্তণ।
দোদুল্যমান জীবনকে কোনভাবে স্থির করেছে মেয়েদু’টোর নিঃস্পাপ মুখ দেখে।তিথী, বিথী এখন মায়ের বন্ধু। তিথী জেদি এক রোখা। আবার খুব সহনশীল, বিচক্ষণ। বিথী বড় হচ্ছে,তবু তিড়িং বিড়িং করে। তিথী পড়া শেষ করলে এক ধাপ এগিয়ে যাবে নীরার জীবন। খাবার টেবিল গোছাতে গিয়ে আনমনা হল নীরা।সুন্দর সেতারের স্বর কোথা থেকে আসছে?রবি শংকর মনে হচ্ছেখুব প্রিয নীরার।কাজ শেষে রোজকার মত বারান্দায় দাঁড়াল নীরা।

বরণা তার হাতকাটা ব্লাউসটা একটু সামলে নিয়ে নড়েচড়ে বসলো।নিজের ছেলেমেয়ে দু’টো কে স্বামীর বাড়ী পাঠিয়ে দিয়েছে।
—- ইশশ ওল্ড লেডী। মনে মনে গজরাতে থাকে শাশুড়ির উদ্দেশ্যে। ভাগ্যিস সেদিন পাতানো ঝগড়াটা করে বাবুলের বাড়ি ছেড়ে মায়ের বাড়ি এলো।নইলে খোকার সাথে যেতে পারতোনা বরণা। বুড়ির ঘ্যানর ঘ্যানর ক’দিন শুনতে হবে না।ফস করে একটা সিগারেট ধরাল। খোকার ঠোঁটে ঝুলিয়ে দিল।
—– তোমার স্বামী কে কী বলে এসেছ? খোকার প্রশ্ন।
—– আর বলোনা,ওর সাথে আমি ইচ্ছে করেই কথা বলিনি, একরাশ জবাব দিতে হবে।আমি’তো এ জন্যে ঝগড়া করে মায়ের বাড়ি এলাম।
—– আমিও। আড় চোখে গাড়ীর আয়নায় ড্রাইভার এর নির্লিপ্ত মুখ দেখে নিলো। কানের কাছে ফিস ফিসিয়ে বলল – বোরিং লাইফ বুঝলে? তাইতো দু’জনা বেরিয়ে পড়লাম।গাড়ির হর্ণ এর শব্দে দু’জনার হাঁসির আওয়াজ চাপা পড়ে গেলো।

[২পর্ব]
গভীর শোকে পাথর নীরা নিজকে আত্বস্থ করেছে। কেবল মেয়ে দু’টোর দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল নীরা।ঝলমলে দিনগুলো তার কাছে ক্রমশঃ যেন ফিকে হয়ে যাচ্ছে।জীবন মানেই একটা প্রশ্নবোধক বিষয় হয়ে গেল।খোকার সাথে প্রতিটা দিন মনে হয় অভিনয় করে যাচ্ছে। চোখ বন্ধ করলেই সেই দৃশ্যটা ভেসে ওঠে। খোলা থাকলেও ভেসে ওঠে।কখনো কখনো খোকার উষ্ণ সান্নিধ্য তার কাছে ঠান্ডা সাপের সাথে সঙ্গম মনে হয়।নীরা আয়নায় দাঁড়ালে মনে হয় এটা সে নিজে না তার তেজস্বিতা, তার নৈতিকতা কোথায় হারালো? এইসবের বিরুদ্ধে লড়াই করে ক্লান্ত নীরা।
—- তুমি কী এমন করেই চলবে ?আয়না নীরাকে প্রশ্ন করে।
—- আমি কী করতে পারি ? এসময়ে দু’টো মেয়ে কে ফেলে যাই কি করে?
—- তবে তোমার আদর্শ? সব জলাঞ্জলি দিলে? ছিঃ নীরা ছিঃ।
—– না না এমন করে বলোনা ।ডু্করে ওঠে নীরা।
সমাজ আমাকেই দোষারোপ করবে। আমার মেয়েদের বিয়ে হলে আঙ্গুল দিয়ে দেখাবে…ঐ তোর মা স্বামীর ঘর করেনি। আমি কি করতে পারি? আর্তনাদ নীরার কন্ঠে।
–মর তুমি গলায় দড়ি দিয়ে।ব্যঙ্গ আয়নার প্রতিচ্ছবির কন্ঠে। নীরা হাঁটু মুড়ে বসে পড়ে।
—– মা কী হয়েছে ?কার সাথে কথা বলো?বিথী কাছে দাঁড়ায়।
বিহবল চোখে নীরা তাকায়। ধোঁয়াটে লাগে।বিথী তার আদরের সন্তান। বুকে টেনে নেয় সে।

ছয় মাস আগে নীরা স্পষ্ট বুঝে তার শরীরের গোপন অঙ্গে কী যেন হয়েছে।খুব অস্বস্তি লাগে।হাঁটতে চলতে। নীরার চিন্তা ক্রমশঃ বাড়তে থাকে। দিন যায় অস্বস্তি বাড়তে থাকে।

বরণার সাথে খোকার পরিচয় পর্বটা কাকতালীয় না। ঘটা করেই পরিচয়। তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু নয়ানের সাথে জুয়ার আসরে কথায় কথায় নয়ান বলেছিল একটা কাজ সে পেয়েছে। তার কাজটা পাইয়ে দিয়েছে বরণা নামের মহিলাটা। এর মাঝে নয়ান বলে—“চলো আমরা নৌবিহারে যাই। বরণার সাথে পরিচয় হবে, তার স্বামীর সাথেও দেখা হবে’।
নয়ানের একটা অভ্যেস, কথা বলার সময় বারবার নাক খোঁচানো, নয়তো এদিক ওদিক তাকায়। বড্ড অস্থির চিত্তের লাগে তাকে।যাই হোক, একদিন মনস্থির করে খোকা আর নয়ান গেল স্ব-স্ত্রীক নৌ-বিহারে। রাত্রি যাপন ওখানেই। যারযার ভাগে একটা কেবিন পেলো। ওখানেই পরিচয় বরণা এবং তার স্বামীর সাথে। সব মিলে ষাট পয়ষট্টিজন মানুষ হবে ।সারা রাত ধরে চলে মদ্যপান আর আড্ডা। এক সময় নীরা এসব দেখে অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। বরণার হাতে বিয়ারের টিন। সবাইকে আপ্যায়নে ব্যস্ত। সে দেখতে একটু স্থুলকায় ও শ্যামবর্ণ এবং বেশ খাটো। কিন্তু কথাবার্তায় তুখোড়।
সকালে নাস্তা শেষ করে ছোট্টো জাহাজ ঘাটে ভিড়লো। যে যার ঠিকানায় চলে এলো।

খোকার ইদানিং একটা কেমন যেন অদ্ভুত ব্যাপার লক্ষণীয়। প্রায়শঃ মেয়ে সংক্রান্ত কথা বলে। বন্ধুদের ঠাট্টা করে বলে মেয়ে সঙ্গি পেলে একজন মন্দ হতনা। তার ক্লাস ফ্রেন্ড সাফিয়া আবার এনে হাজির করে বরণাকে।সেই থেকে বরণার সাথে খোকার এক প্রেম-প্রেম খেলা শূরু।মাঝে মধ্যে অফিসে আসে সে আর বান্ধবী সহ। একসাথে মদ্য পান । ধীরে ধীরে প্রেম নামক রোগটা গাঢ় হতে থাকে।নীরা দেখে সর্বদাই খোকা মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত।ঘরের এ কোন থেকে ও কোন। নইতো বারান্দায়, কার সাথে কথা বলে বুঝে ওঠেনা।খোকার মোবাইল ফোন ধরা নিষেধ। তবু বীথি মাঝে সাঝে বাবার ফোনটা নিয়ে বান্ধবীদের ফোন করে।
মা’কে বলে –“ মা জানো ড্যাড কার সাথে যেনো ইয়ে করে”।মেসেজ গুলো ভালো লাগে না।
নীরা ধমক দেয়—-বাবার ফোন ধরিস না। বকুনি খাবি। কে শোনে কার কথা।
আগে ছিল ভাসমান নারী। এখন হয়েছে পাকাপোক্ত সম্পর্কের বরণা।নীরা টের পায় আস্তে-আস্তে। আগে খোকা বাড়িতে থাকলে হইচই মজা আনন্দ করতো। এখন মনেহয় এক বিশাল সত্য তার ধরা ছোঁয়ার মাঝে চলে আসছে। নীরার মাঝে মাঝে অদ্ভুত লাগে , এ সংসার তার নিজের না।আসলে সংসার কারো হয়না। চাইলেও সবাই সবাইকে ভালবাসেনা ।নীরার নিজকে খুব বোকাবোকা লাগে।

[পর্ব ৩]
ড্রাইভার গাড়ীর স্পীড বাড়িযে দিয়েছে। ছোট পানির বোতলে মেশান মদে এ আস্তে আস্তে চুমুক দিচ্ছে। বরণা অনেকক্ষন চুপ করে ছিল, হঠাৎ বড় শ্বাস ফেলে খোকার হাতে হাত রাখল।খোকা যেন অন্য জগৎ থেকে ফিরে এল।মাঝে মঝে নীরার জন্যে কোথায় যেন কষ্ট লাগে।খোকা নিজেও বুঝেনা বরণার হাতটা আস্তে করে সরিয়ে দিল।বিয়ের পর নীরাকে নিয়ে হুটহাট ঘুরে বেড়ানোর স্মৃতিগুলো চোখের সামনে ভেসে উঠল।সাথেসাথে আর এক চুমুক মদ গলায় ঢেলে গাড়ির সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করল। কেন নিজের এই পরিবর্তন? হাঁতড়ে খুঁজে বের করতে চাইল। কিছু না পেয়ে মাথা তালগোল পাকিয়ে গেল।

[পর্ব-৪]
নীরার অস্বস্তি যখন চরমে পৌঁছাল এমন সময় খোকা চট্টগ্রাম গেল ক’দিনের কাজে।নীরা আর দেরি না করে একাই চলে গেল গাইনকলজিষ্টের কাছে। তিনি খুব যত্ন নিয়ে দেখে বল্লেন
—-আপনার সেকচুয়্যাল ডিসিস। আঁতকে ওঠে নীরা।
—- তবে? কী করে এল? ডাক্তার সাহেব বলুন তো?
— তাতো এই মুহুর্তে বলতে পারছিনা। তবে সম্ভবতঃ আপনার স্বামীর কাছ থেকে এসেছে।এখন যত দ্রুত সম্ভব এটা সারাতে হবে ।
—– আমাকে কী করতে হবে ? নীরা কাঁদো কাঁদো।চশমাটা খুলে টেবিল রাখলেন ডাক্তার।
—— দেখুন আরো আগে আসা উচিৎ ছিল আপনার। আপনার হিসাব আনুযায়ি অসুখ’টা ৩/৪ মাস আগে থেকে ।তা এত দেরি করে এলেন কেন?নীরা নিরুত্তর। সে বলতে পারেনা খোকা’কে কতো দিন বলেছে। সে কোনো গুরুত্তই দেইনি। খোকা গুরুত্ত দেবে ও না।চশমাটা আবার চোখে দিয়ে ডাক্তার বল্লেন।
—– হুম দেরি যখন হয়েই গেছে তখন সাধারণ ঔষধে কাজ হবে না। আপনার এই ঘা’টা অপারেশন করে রিমুভ করতে হবে।
আপনি কবে করতে চান বলুন। আমি ওটি রেডী রাখতে বলব।
——কাল? কালকেই করুণ। নীরা যেনো ভাঙ্গা কাঁচের টুকরা।
—আচ্ছা আমি কিন্তু সাময়িক অজ্ঞান করব।তারপর হবে। পূরোদিন নার্সিং হোমে থাকবেন।ইচ্ছা হলে রাতে বাড়ি যেতে পারেন। কত টাকা লাগবে বলে দিলেন। এত টাকা কোথায় পাবে নীরা?যাই হোক ধার করতে হবে। নীরা সম্মতি জানিয়ে বের হয়ে এলো ডাক্তারের চেম্বার থেকে।বাড়ি ফিরে নীরা ফোন করে বড় আপাকে।
—–কাল রেডী থেকো,আমার সাথে ডাক্তারের কাছে যাবে।বড় আপা জিজ্ঞেস করাতে নীরা জানালো সাক্ষাতে বলব। ফোনে এতো কিছু বলা যায়না।ঘরের টুকিটাকি কাজ সারে তিথীকে বলে,
-আমি একটু জরুরি কাজে বাইরে যাবো কাল।দেরি হবে আসতে।
—- কেন মা?
— বল্লাম না কাজ আছে? ওখান থেকে তোমার খালাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাবো। দেরি হবে।
ঠিক রাত্রে খোকা হাজির। নীরা শংকায় পড়লো। খোকা ডাক্তারের কাছে যাওয়া পছন্দ করেনা। তার পর ইনি পুরুষ ডাক্তার। যাক যা হয় হবে “–আমার জীবন আমাকে বাঁচাতে হবে”।মনে মনে স্থির প্রতিজ্ঞ হয়ে খোকা কে বলে —“আমি কাল ডাক্তারের চেম্বার এ যাবো, ফিরতে দেরি হবে”।
টিভি চ্যানেল ঘোরাতে ব্যস্ত খোকা,শুনেও শোনেনা। নীরার দুঃখ লাগেনা, কষ্ট লাগেনা। বিথী তিথী যখন পেটে আসে তখন দু’একবার গিয়েছিল ডাক্তারের কাছে নীরাকে নিয়ে। এরপর আর যেতনা। নীরা একাই যেত।দশটা মাস কি কষ্টই না করেছে। বুকের পাথরটা এখন জমাট হয়ে গেছে ।
——————————————-
কখন সন্ধা ফুরিয়ে রাত নেমেছে নীরা বুঝেনা। রাত গভীর নীরা বারান্দায় দাঁড়িয়ে খেয়ালও নেই। আত্মমগ্ন নীরা আমেনার ডাকে ঘুরে দাঁড়ায় ।
—–আফা ঘুমাইবেন না? কখন তরি দাঁড়াইয়া রইসেন ।
—– ও হ্যাঁ যাই। টেবিলে তাকিয়ে দেখে ভাত তরকারি সব ঠান্ডা।এক গ্লাস পানি খেয়ে শুয়ে পড়ে। এসব তো ক’দিন আগেরই কথা।শুয়ে আছে নীরা। ঘুম নেই চোখে। গানের কলিগুলো বড্ড মধুর।লালন এর গান। “ পারে লয়ে যাও আমায় “ কোথায় মনটা উধাও হয়ে গেল। ছোটবেলা থেকে গান শোনা নীরার একটা অভ্যাস।
কেন জানিনা দু’চোখের পাতাটা ভিজে গেলো। বালিশের মধ্যে টুপ করে ঝরে পড়ল দু’ ফোঁটা অশ্রু, মাথা ব্যথা কমে গেছে। শরীরটা একটু হাল্কা লাগল। গুটিসুটি মেরে কখন দু’চোখের পাতা বন্ধ হয়ে গেল।

[৫পর্ব]
কাঁটায় কাঁটায় রাত তিনটের দিকে পৌঁছাল বরণা আর খোকা। সুটকেস, ব্যাগ ধুপ করে মেঝেতে ফেলল হোটেলে। হোটেলের রেজিস্টার খাতায় নিজের বউ হিসেবে বরণার নাম লিখতে গিয়ে খোকার হাত কি কেঁপে উঠেছিল?খোকা আর বরণা রাতের খাবার কুমিল্লাতে সেরে নিয়েছে। অতএব তারা মোটেই ক্ষুধার্ত না।

বরণা আয়নায় দাঁড়িয়ে। বয়স লুকানো যায়না মোটেই। বিরক্ত হয়। তার বেঢপ পেট’টার দিকে তাকিয়ে। কথাবার্তা ছাড়াই খোকার সামনেই কাপড় বদল করতে লাগলো।এমন সময় দরজায় টোকা।
—- ইয়েস কাম ইন। ইশারা করাতে বরণা দ্রুত বাথরুমে ঢুকে যায়।
—– কিছু লাগবে স্যার?
— নাহ!
পানি গ্লাস রেখে বেয়ারা চলে গেল। বাথরুম থেকে বরণা বেরিয়ে এল। খোকা তাকিয়ে থাকল। নীরার সাথে কতো পার্থক্য। বেডকভারটা শরীরে পেঁচিয়ে বরণা একহাতে মদের গ্লাস নেয়। কোনার সোফায় খোকা বসে। আহ্লাদি ভঙ্গিতে খোকার কোল ঘেঁসে বসে বরণা। কেন জানিনা খোকার ভালো লাগছেনা। সে বরণা কে সরিয়ে বিছানায় শরীর এলিয়ে দিল।কোথা থেকে রাশিরাশি ঘুম তার দু’চোখের পাতায় ভর করলো। ঘুমিয়ে গেলো খোকা।

[৬পর্ব]
পর দিন নীরা ১১/১৫ মিনিট এ একটা এস,এম এস পায় “আমি ঠিক ঠাক পৌঁছিয়েছি রাত ৩ টায়”। নীরা এতেই সন্তুষ্ট। যাই হোক ঠিক মতো গেছে খোকা। রাস্তায় কোনো দূর্ঘটনা ছাড়াই। প্রায়ই’তো একটা না একটা অঘটন ঘটেই। গেল বার বন্ধু নিয়ে রাঙ্গামাটি থেকে ফেরার পথে গাড়ি এক্কেবারে ট্রাকের নিচে। ভাজ্ঞিস ট্রাকটা থামানো ছিল।খোকার কপাল ফেটে কাঁচের টুকরা ঢুঁকে গিয়েছিল। তাই শুনে নীরা তড়িঘড়ি চলে গিয়েছিল ওখানে। সেবার ভালো হতে অনেক সময় লেগেছিল। এ’বছরের শুরু থেকেই খোকার অনেক পরিবর্তণ লক্ষণীয়।
নীরা দেখেও দেখে না। যেন জাগতিক কিছুই তাকে স্পর্শ করেনা।খোকা অনেক ধরা ছোঁয়ার বাইরে অবস্থান করছে।

সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত হাল্কা পাতলা ব্যস্ততায় কাটলো। ফাঁকে মনে পড়লো ক’দিন আগে ঈদের এক দিন পর একটা অদ্ভুত এস,এম,এস পড়েছিল খোকার। বাথরুমের সেভিং এর জায়গায় প্লাগ পয়েন্ট। ওখানে চার্জ দিতে গিয়েছিল খোকার মোবাইলে। ভোরে উঠে মুখ ধুতে গিয়ে মোবাইলটা বেজে ওঠে।
কি ভেবে নেড়ে চেড়ে দেখল একটা এস,এম,এস “ আমি যখন বাড়ি ছাড়তে চাই , তুমি বলছ কাউকে দুঃখ দিয়ে কিছু করতে চাওনা।তাহলে কি হয় ? তোমার মেসেজ পড়ে হাউ মাউ করে কেঁদে ঘুমিয়ে গেলাম” কে এই মেসেজ প্রদান কারি? মহিলা সন্দেহ নাই।নীরা চিন্তিত হলো।ফোন করলো খোকার এক বন্ধু কে,
— এই নং টা প্লিস দেখবেন?
— আচ্ছা ভাবী। আমি আধ ঘন্টার মাঝে জানাচ্ছি।নিজের অস্থিরতায় নিজেই বিস্মিত হয়। খুব পরিচিত নাম্বার। অস্থিরতা প্রবল হয়ে ওঠে। সে নিজে জানেনা যে এই অদ্ভুত কারণে তার মন ভার।
————————————————

ওদিন বড় আপাকে নিয়ে যথারীতি নার্সিং হো্মে গেল। গেল বছরের কথা। ভাবলে নীরার গা এখানো শিউরে ওঠে।অপারেশন জন্যে প্রস্তুত করে নীরা’কে ওটিতে নিয়ে গেল। বড় আপা সই করল ওভিভাবক হিসেবে চুক্তি পত্রে। লাইট জ্বলে উঠল। ১,২ ,৩ নীরা জ্ঞান হারাল। কতক্ষনে জ্ঞান এল মনে নেই। শরীর শিথিল। তাকে পোষ্ট অপারেটিভে রাখা হল। পা’টা নাড়াতে চাইল, নার্স ছুটে এল।
— প্লিস আরো দু’ ঘন্টা পর পারবেন। হাতে স্যালাইন।
—– চোখ খোলো নীরা।আমি খোকাকে ফোন করেছি, আসছে।আপা বলে।মনে পড়ে নীরার, ডাক্তারের কথা
—– আপনার স্বামী কি মানুষ ? স্ত্রীর এত বড় ঘটনা – তিনি নেই কেন?
নীরা কি বলবে ? কি বলা উচিত ? মনেমনে বলে — আমি নিজেই বুঝতে পারছিনা। খোকার নিষ্ঠুর স্বভাব। জানে খুঁচিয়ে তাকেই জর্জরিত করবে।খোকা এলো। সাথে বোন, বোনের জামাই। নীরা মুখ ফিরিয়ে নিল অন্য দিকে।খোকা কোন কথা না বলে বেরিয়ে গেল। নীরার দু’চোখের কোন বেয়ে অশ্রু।
কার পাপের বোঝা কে বইছে । দেহের কষ্টটুকু এড়ানোর জন্যে মুখ ফিরিয়ে শুয়ে থাকে। বড়ো আপা একবার ঘর একবার বারান্দা করছে।নীরার লজ্জা লাগে। আপা সব জানলো। কী করবে?দিবালোকের মত সত্য কে চাপা দিবে কী দিয়ে ?
রাত দশটায় কোন মতে টলতে টলতে উঠে দাঁড়াল।নার্স এসে কাপড় পরিয়ে দিল। যত্ন নিয়ে সবাই তাকে গাড়িতে তুলে দিলো। বড়ো আপা নেমে গেল তার বাড়িতে।নীরা হাঁতড়ে হাঁতড়ে নিজের ঘরে খাটে বসলো।
— কী হয়েছে মা?তিথী বিথী দৌড়ে এলো।
একটা ফোঁড়া হয়েছিল মা। ওটা অপারেশান করেছি।
— সে কী? আমাদের বলোনি কিছু? আব্বু তো চিৎকার করে বাড়ী মাথায় তুলছে। তুমি নাকি বলোনি কিছু? নীরা কিছুক্ষণ নিঃস্পলক তাকিয়ে থাকে। প্রতারক খোকা অনেক কিছুই পারে। নিজের পাপকে নীরার দেহে দিয়ে আবার উল্টো তাকেই দোষারোপ।এরপর চেকআপ করতে গেলো। দু”বার যাবার পর ডাক্তার বললেন
“ আবার অপারেশন করতে হবে”। নীরা ঝরঝর করে কেঁদে ফেলে। ডাক্তার বারবার বলে দিলেন ত্রিতীয়বার অপারেশান হলে খুবই শারিরীক ক্ষতি হবে। এ জন্যে যেন তার স্বামী অবশ্যই দেখা করে।
খোকা বলে ,
— বোগাস ডাক্তার! মিছে কথা বলে। তোমার সমস্যা তুমি যাও।আমি কেন?
—– তুমি দায়ী না বলতে চাও? তোমার উচ্ছসৃংখল জীবন যাপনের ফসল বয়ে বেড়াচ্ছি। খোকা অযথা ঝগড়া করে ।
খোকা যায় না। নীরা দ্বীতিয় দফা অপারেশন করে বাড়ি ফেরে। ক্ষতটা ইলেকট্রিক শক দিয়ে বার্ণ করা হয়েছে। প্রচন্ড কষ্ট। নীরা খোকার পাশে শোওয়া বন্ধ করলো।

————— আফা দুপুর শেষ ভাত খাইবেন না? আমেনার কথায় বাস্তবে ফিরে এলো। যন্ত্রণার দিনগুলো এখনও মনে পড়ে।
—যাচ্ছি, যাও তুমি। মাথার ভেতর অজস্র চিন্তা জট পাকাচ্ছে। কী জীবন! “ইসলামে আছে স্বামী যখন আহবান করিবে স্ত্রীকে অবশ্যই শয্যায় যেতে হবে” –ইত্যাদি। অথচ পুরুষের ক্ষেত্রে কী বলা আছে জানা নাই নীরার। মুখ দিয়ে ভকভক করে মদের গন্ধ বের হয়। আগে মিলনকে সুখ ভাবত। এখন মিলন মানে ঘৃণা, যন্ত্রণা। ভাতের থালা নিয়ে নাড়াচাড়া করে উঠে পড়ে। তিথী এলো,বিথী এলো স্কুল থেকে।
—- কী রকম পরীক্ষা হলো তিথী? চায়ে চুমুক দিতে প্রশ্ন করে নীরা
—- মোটামুটি আম্মু, আসবার সময় কি ঝামেলা যে হল। নুডলস খেতে খেতে তিথী বলে।
— আমি খালি চা খাবো আর কিছু না। বিথী জিদ করে।
—- খালি চা খায়না মা,শরীর খারাপ করবে। বিথী মুখ গোমড়া করে। এই মেয়েটা এক আজব হয়েছে। খাবে দুনিয়ার যতো উল্টোপাল্টা খাবার খাবে।
সন্ধ্যার পাঠ চুকলো। নীরা টিভি নিয়ে বসলো। কি ভেবে খোকার মোবাইলে ফোন করল, বেজে বেজে থেমে গেল। ঘুমুচ্ছে মনে হয়। আবার টিভি, খবর পড়ছে নতূন মেয়ে। কতো যে চ্যানেল, কতো যে নতূন মুখ। আধ ঘন্টা নয়, প্রায় এক ঘন্টা পরেই ও দিনই খবর পেলো ঐ মোবাইলের মালিক কে। খোকার বন্ধুর স্ত্রী। বন্ধুর স্ত্রীর সাথে খোকার কী সম্পর্ক?
মাথাটা টলে ওঠে নীরার। মনে পড়ে ঈদের দিন তারা স্বামী স্ত্রী এসেছিল রাত করে।

[৭পর্ব]

ছেলে বেলায় ঈদ মানেই ছিলো আনন্দ আর আনন্দ। বিয়ের পর থেকে ঈদের আনন্দ ক্রমশঃ ফিকে হয়ে গেল। বিবাহিত জীবনে ঈদ নীরার কেন জানিনা ভাল লাগে না। বিশেষ করে মা বাবার অভাব খুব অনূভব করে। এখন আপন সন্তানদের নিয়ে ঈদের দিনটা রান্না এবং অতিথী আপ্যায়নে সীমাবদ্ধ।
এবারকার ঈদে একটা চমৎকার অভিজ্ঞতা হল। বিথী চঞ্চল। বেড়াতে বেরিয়েছে যথারীতি নতূন কাপড় চোপড় পরে। বড়টা একটু দেরী করে বের হল। আর নীরা একটা টাঙ্গাইলের শাড়ী পরে কপালে টিপ দিয়ে বাড়িতেই থাকল। কখন অতিথী আসবে নানা কারণে।
নীরা ভাবে বাবা বেঁচে থাকতে ছোট বেলায় চাঁদ দেখার পর হারমনিয়াম নিয়ে গাইতেন
“ ওমন রমজানের ঐ রোজার শেষে এল খুশির ঈদ “ ক’টা বছর হলো বাবা গত হয়েছেন চোখের পাতা ভারি হয়ে এল বাবার কথা ভাবতে গিয়ে ।

খোকা এক ধরণের কুঁড়ে মানুষ। দেরিতে ওঠা তার অভ্যাস। ঈদের দিন ও তার নিয়ম ভঙ্গ করেনা। বিকেল তিন’টের দিকে ফ্লাটের এক ভদ্র লোক দরজায় বেল টিপলেন। দরজা খোলার পরই তাঁর চিৎকার। চেঁচামেচিতে কিছুক্ষন হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকল নীরা। পরে বুঝলো তাঁর মেয়ে সহ বিথী বেড়াতে বের হয়েছে তাই। কিছুই বল্লো না নীরা।
সন্ধ্যা সাতটা , আবার অতিথী । এক দম্পতি। নীরার স্বামীর বন্ধু এবং পত্নী। মহিলার বিচিত্র সাজ সজ্জা। বয়স গোপণের একটা প্রচেষ্টা দেখে নীরার হাঁসি পেল।
লক্ষ্য করল তিনি (মহিলা ) নীরার চাইতে নীরার স্বামীর সাথে কথা বলতে পছন্দ করছেন।
তা করুণ ,করতেই পারেন। হঠাৎ নীরার শরীরটা খারাপ বোধ করায় তাদেরকে বলে বিছানায় শুয়ে পড়ল। প্রেসার মাপার পরে দেখা গেল উপরে ৯০/ নিচে ৪০। কথা বলতে খারাপ লাগছে।

কে কী খাচ্ছে জানে না। মেয়ে দু’টো দু’পাশে। ঘন্টাখানেক পরে সুস্থ্য বোধ করল একটু। বিছানা ছেড়ে উঠতে পারলনা। জানতে পারল খোকা নীচের তলার ভদ্র লোককে ফোনে বলছে তাঁর কারণেই নীরার এই অবস্থা, কেননা নীরা কিছুই বলতে পারে না। অপমানটা হজম করে গেছে।

ছোটবেলার কথা মনে এল। সকালে স্নান করে বের হত। কতো ঘুরে বেড়াত তার শেষ নেই।
নীরা ভাবে আমার মেয়ে বেড়াতে গেছে, তাঁর মেয়েকে যেতে না দিলে ই পারতেন। বিচিত্র মানুষ। যাই হোক ঘরের ঐ অদ্ভুত দম্পতি বেশ রাত করে গেলেন। যাবার সময় চোখে ভাসছিল তার হাতা কাটা ব্লাউস। যদিও নীরাও এক সময় পরেছে। তবে ঘরে, বাইরে না। মেয়েরা বড় হচ্ছে। অবশ্য যার যা ইচ্ছে।
যাবার সময় নীরার সুন্দর বরের দিকে যে দৃষ্টি হেনে গেলেন নীরা এখানও ভুলতে পারে না । গভীর রাত অব্দি নীরার শরীর ভাল গেল না।
[৮ পর্ব]
—————————————————————-

পর পর দুই’টা নাম্বার দিয়ে কন্ঠ শুনলো। নীরা নিঃশ্চিত হলো এই নারী কন্ঠটা ঐ মহিলারই । বেশ আঞ্চলিকতার টান আছে কথায় ।

তবু নীরা ভেবে পায় না। মহিলার স্বামী আছে তাহলে খোকার সাথে তার কি হলো ? মূহুর্তের মধ্যে অজানা আশংকায় শরীর হীম হয়ে যায়। তার মানে বিবাহিত মহিলা নিয়ে এইবার ?
খোকার মানসিক সমস্যা সম্পর্কে বিন্দু মাত্র সন্দেহ থাকেনা আর। এ্যালকোহলে তাকে শারিরীক মানসিক দু’দিক দিয়েই গ্রাস করছে।

আমেনা খাবার জন্যে ডাকলো। বিথী ব্যস্ত কম্পিউটার নিয়ে। তিথী খুব হাঁসছে, কার সাথে ফোনে কথা বলছে। সুন্দর ফুলের মতো মেয়ে দু’টি বাড়ছে। ওদের হাঁসি দেখলে নীরার খুব ভালো লাগে । কোথা থেকে যেন মুঠো মুঠো শান্তির পরশ নীরার শরীর মনকে ঝাপ্টা মেরে যায়। ওরা যেন এমন অনাবিল আনন্দে হেসে খেলে জীবন পার করতে পারে ।

বিথী ইদানিং বাবার পিঠে শোওয়া বন্ধ করেছে। কারণ অজানা। অথচ বিথীকে কতো নিষেধ করেছিল নীরা এক সময়
— বিথী তুমি বড়ো হচ্ছ একটু শান্ত হও। কে শোনে কার কথা।
–আর একটু ঘুমাই মম ।
বিথী লতার মতো পেঁচিয়ে ধরে বাবাকে পেছন থেকে, এর এক দফা ঘুম। আর প্রতিদিন স্কুলে যাবার সময় হুড়াহুড়ি।

[৯ম পর্ব]
———————————————————-
বেশ সকালেই উঠে পড়ে বরণা ঘুম থেকে। গায়ে পাতলা স্বচ্ছ নাইটি। বাথরুমে গিয়ে দাঁত ব্রাস করে চেয়ারে এসে বসে। একটা সিনেমার ম্যাগাজিনের পাতা উল্টাতে গিয়ে হঠাৎ তার মনে পড়ে, তার স্বামী কী করে তাকে এ পথে নিয়ে আসে। এখন বরণা স্থির করেছে আর বাবুলকে কিছু দেবে না। গতবার এক এম,পির ছেলেকে পটিয়ে আটলক্ষ টাকা পায়। অর্ধেকটাই স্বামী নিয়ে গেছে। খোকা’কে বিয়ে করতে পারলে বিশাল বিত্তশালী খোকার কিছু অংশ হলেও পাবে।অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে খোকাকে হাতে পেয়েছে। খোকা যাই করুক স্ত্রীকে সে অসম্ভম ভালবাসে। টের পায় বরণা। আনমনা বরণা বেল টিপে বেয়ারা কে চা দিতে বলে।

প্রচন্ড জেদ পেয়েছে বরণার। স্ত্রীকে খোকার জীবন থেকে সরাতেই হবে। অহঙ্কারী বউয়ের প্রতি এতো ভালবাসা তাকে আরো হিংস্র করে তোলে।আড়মোড়া ভেঙ্গে খোকা ওঠে বিছানা থেকে। ঘড়িতে দেখে সকাল দশটা।
—বাপ রে! নীরা’কে জলদি এস,এম।এস করতে হবে। টাওয়েলটা নিয়ে বাথরুমে ঢোকে।
হঠাৎ মনে হল সিগারেট আনেনি। ভেতর থেকে বরণাকে বলে —- সিগারেটের প্যাকেট দাও তো?
— তুমি বেরিয়ে এসে নিতে পারো না? আমি রেডি হচ্ছি। খোকা ভেতরে ভেতরে উত্তপ্ত হয়। নীরা হলে দরজায় টোকা দিয়ে সিগারেট আর দেয়াশালায় দিতো। শত হলেও স্ত্রী। কতো পার্থক্য! খোকা বেরিয়ে এলো। সিগারেট লাইটার নিয়ে আবার বাথরুমে ঢোকে। কমোডে বসলে রাজ্যের চিন্তা ভর করে খোকার। তার ধারণা পৃথিবীর তাবৎ এবং জটিল এবং জরুরি কথা বাথরুমেই মনে পড়ে।

[১০পর্ব]
বরণার বায়না। রাঙ্গামাটি যাবে। মাঝে মধ্যে মহিলার এসব ছেলেমি
ভাললাগে না। কি করা! বৈচিত্র খুঁজতে গিয়ে এসব কথা, এসব আবদার মানতেই হয় তার। উপায় নেই। তখনই পুরো প্ল্যান’টা গুছিয়ে নিল সে। বেলা ১২ টা নাগাদ হোটেল ছাড়ল তারা।
—– বাসা থেকে ফোন এসেছিল রে?
—- জী স্যর। ম্যাডাম ফুন করসিল কইসি আপনে একা – “কোন বন্ধুর কথা বলেনি”? খোকা সিগারেট সরিয়ে জিজ্ঞেস করল। কেননা নীরা জানে খোকা এতবড় যাত্রায় একটা না একটা বন্ধু জুটিয়ে নিয়ে সাথে নিয়ে যায়।
— হ স্যার বলসি কেউ নাই। স্যার একলা।
–হুম মনে থাকে যেন।
— না স্যর মাতাডা খারাপ?

সন্তুষ্ট চিত্তে ওরা গাড়িতে বসে। গাড়ি রাঙ্গামাটির পথে যাত্রা শুরু করে।বিকেল নাগাদ পৌঁছে গেল ওরা। চমৎকার জায়গা। পাহাড় আর পাহাড়। মাঝে আঁকাবাঁকা রাস্তা। খোকার মন বলে কোথায় যেন এক’টা ভুল করল সে। হাঁতড়ে কোন কিছু খুঁজে পেলনা। ভুলটা কোথায়। যাক এখানে মোবাইলের নেটওয়ার্ক নাই। শান্তিতে থাকবে ক’দিন।রাঙ্গামাটির প্রথম দিকেই একটা হোটেল পেল। ড্রাইভার আর গাড়ি ওখানেই রেখে দিল, সঙ্গে কিছু টাকা।
— এইটা রাখ খাবি আর ঘুরবি। আমরা অন্য জাগায় যাচ্ছি।
–কই যান স্যর? বলেই দাঁত কামড়ে ধরল। ড্রাইভার ভাবল প্রশ্নটা তার করা উচিৎ হয়নি।
—তা জানার দরকার কি? খোকার কন্ঠে উষ্মা। –তুই থাক আমরা যে কোন সময় তোকে নিয়ে যাব। ক’দিন থাকব। একটা রিকশা ডেকে উঠে পড়ে।ছিমছাম রাস্তা। কিছুটা চড়াই উতরাই আছে। একটা ঝুপড়ি হোটেলে দেখে বরণা রিকশা থামায়।
—কি হল? বরণার এক একটা অদ্ভুত আচরণে বিরক্ত হয় সে। ঝুপড়ির সামনে পা নড়বড়ে বেঞ্চের ওপর আয়েশ করে চা খেল বরণা। খোকা দেখে চটা ওঠা কাপ। ছোটো খাটো বাজারের মত। খুব কাছেই বসতি আছে। লোকজন ওদের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। কিছু পাহাড়ী মানুষ আছে।
—-অনেরা যাইবেন কই? আঞ্চলিক ভাষায় প্রশ্ন করে এক চ্যাপ্টা মুখের চাকমা ছোকরা। দৃষ্টি তার বরণার দিকে। বরণা জলদি চায়ের কাপ নামিয়ে রাখে। দোকানির হাতে পয়সা দিয়ে খোকা দ্রুত রিকশায় উঠে পড়ে।জবাব না পেয়ে জটলা পাকান মানুষগুলো তাকিয়ে থাকে।

—- সামনে চলো। খোকা রিকশাওয়ালাকে বলে উঠে। উঁচু নিচু রাস্তা। প্রাণপনে রিকশাওয়ালা পা চালায়। কোথাও ঢালু রিকশা গড়িয়ে পড়ে এমন অবস্থা। অবশেষে একটা ভালো দেখে হোটেল খুঁজে বের করল তারা। বেলা তখন শেষের দিকে। সুর্য হেলে পড়েছে। হোটেলে ঢুকে সশব্দে দরজা লাগায় খোকা।
—এমন আর কোন দিন করবে না বুঝলে? চিৎকার করে খোকা।
–আমি কী করলাম? চা খেতে ইচ্ছে করল। দুপুরে’তো কিছু’ই খাইনি। সুটকেস খুলতে খুলতে বরণার
ঝাঁঝাল জবাব।
—-খাবে তো, সময় না হয় একটু পারই হলো। তাই বলে ঝুপড়িতে? তুমি জানো? এই গ্রাম্য সরল মানুষ কে? কে স্বামী কে স্ত্রী ওরা ঠিকই বুঝে।
–বুঝুগ গে ।
ঝাপ্টা দিয়ে বরণা বাথরুমে ঢুকে যায়। রাজ্যের ময়লা চুলে গায়ে।খোকা বেয়ারা’কে ডেকে বৈকালিক খাবার দিতে বলল। বেলা তখন শেষ। ভাত খাওয়া যাবে না।

[১১ম পর্ব] রাত এখন বেশ গভীর। শীত এদিক’টায় পড়ে গেছে।তবু পাহাড়ী এলাকায় শীত বেশি লাগে। ঘরে একটা নীল রঙের বাতি জ্বলছে।এ’সময় উজ্জ্বল আলো না থাকাই ভাল। পরিপক্ক বরণা। ধীরে ধীরে গ্লাসে চুমুক দিচ্ছে। ভাবছে খোকা কখন তাকে একান্তে হাত বাড়াবে।মাংশের টুকরায় শেষ কামড়টা দিয়ে এক চুমুকে বাকি মদটা গলায় ঢেলে দিল খোকা।
বরণার পাশে শুয়ে তার সারা শরীরে হাত বুলাতে গিয়ে চকিতে নীরার মুখ মনে পড়ল। ধাক্কা দিয়ে বরণাকে সরিয়ে দিল। বাথরুমে গিয়ে হড়হড়িয়ে বমি করল।
–কি হয়েছে জান ?

–পানি দাও । খোকা পানির জন্যে হাত বাড়ায়। একটু সুস্থ্য হয়ে আবার বোতলের ছিপি খুলে।
–নাহ! নেশাটা কেটে গেছে । আরো একটু গলা ভেজানো যাক।
–আমার জান আমাকে ধরো। টের পাচ্ছে নিজে ট্যাবলেটের গুনে শরীর আরো উত্তেজিত। নীরা একদিন তার পকেটে ট্যাবলেটের খোসা দেখে প্রশ্ন করেছিল – এটা কিসের ট্যাবলেট ?

— ও কিছু না । একজনের খাওয়া একটা ওষুধ দেখতে এনেছি। একটু কেশে বলল খোকা।
— অন্যের জিনিষ কেনই বা আনো? আমি না হলে অন্য কেঊ দেখলে নির্ঘাত ভুল বুঝত।
— আরে নাহ! মাথা খারাপ? ফেলে দাও ওটা। নীরা ফেলে দেয়না। ঔষধের দোকানে গিয়ে পরে ট্যাবলেট সম্পর্কে জেনে নেয়। স্তম্ভিত নীরা। অন্যমনষ্ক ভাবে বাড়ি আসে। এলোমেলো ভাবনা ঘুরপাক খেতে লাগল। সে স্থির করল খোকাকে ডাক্তারের কাছে নিতে হবে ।
–কি হল জানু ? এত চুপচাপ হয়ে গেলে? বরণা সাপের মতো পেঁচিয়ে ধরে। — নাহ! কিছু না।এর পরে পৃথিবীর আদিম খেলায় দু’জন হারিয়ে যায়।
— জাহান্নামে যাক সব মনে মনে বলে খোকা।
— ওল্ড লেডী !
শাশুড়ীর উদ্যেশ্যে শাপ শাপান্তর করে বরণা। খোকার বুকে মুখ গুঁজে দেয়। বরণার শরীরের সাথে
মিশে যেতেযেতে চকিতে খোকার মনে হল নীরাকে সে খবর দেয়নি সে, যে তিনদিন চট্টগ্রাম থাকবেনা।
ভুলটা ওখানেই। এত ভাবার সময় নেই। শরীরটা পালকের মতো হয়ে গেল। সারা বিশ্ব যেন উড়ে বেড়াবে।চোখের সামনে লাল,নীল শত রঙের আতশবাজি হচ্ছে।হঠাৎ অবোধ শিশুর মত কেঁদে ফেলে খোকা। জানেনা কার জন্য অশ্রু।
—————————————-

[পর্ব ১২]

ত্রিতীয় দিন সন্ধ্যা হয়হয়। রোদের মিষ্টি আমেজ শেষ হতে চলল, তখন বিথী বাড়ি এল। এসেই প্রথম প্রশ্ন ,

–আব্বু কই? কি খবর বলবে নীরা। সারাদিন ধরে এদিক ওদিক ফোন করে তোলপাড়।নাই তো নাই। মানুষটা কি হাওয়ায় মিলিয়ে গেল? তাতো হয় না। তবে কি হলো? অজানা আশঙ্কায় মাথাটা ঘুরে গেল। চট্টগ্রামের সমস্ত হোটেল তল্লাসি করা হয়েছে লোক দিয়ে, নাই।
–মম মামাকে বল না কিছু করতে। তিথী ঝরঝর করে কেঁদে ফেলে।
হঠাৎ নীরার মনে হল, যাবার সময় খোকা কিছু মূল্যবান কাগজ পত্র নিয়ে গেছে। কিছুদিন আগে,মাস ছয়েক হবে। এক ব্যবসায়ি অপহরণ হয়েছিল। আজ পর্যন্ত তার জীবিতবা মৃত লাশ ও পাওয়া যায়নি।

–দেখি কি করা যায় । ভাইকে ফোন করল নীরা। ভাই আরো ভয় পেল। সে সমস্ত থানায়
খবর দিল। বিভিন্ন জায়গা থেকে খবর এলো অমুক জায়গায় দেখা গেছে। আরে বাবা অমুক জায়গা
থাকলে তো হবে না। খোকা তার সাথে যোগাযোগ করতোই। কিছুতেই বিশ্বাস হয়না নীরার।
রাত দশটা। ধানমন্ডি থানায় নীরা নামল রিকশা থেকে। পা দু”টো কাঁপছিল তিথীর বন্ধু সাব্বির তাকে হাত ধরে নামাল। থানায় ঢুকে যা দৃশ্য দেখল,
–কি দরকারে এসেছেন ?
–আমার স্বামী তিনদিন নিখোঁজ ।
— ও আচ্ছা। ওই চেয়ারে বসুন এর সাথে কথা সেরে ফেলি।
ও,সি সাহেব মোবাইল চোরের সাথে বচসা করছেন। আর কাঠি দিয়ে দাঁত খোঁচাচ্ছেন। নীরা
ঠায় বসে থাকল।রাতেও তেমন কিছু খেলোনা ওরা। তিনজনই যেন মরা লাশ হয়ে থাকল। ঠিক রাত সাড়ে বারোটায়
আবার ফোন এলো কক্সবাজার থানা থেকে। কোনো এক্সিডেন্ট এর খবর তাদের হাতে নেই। অতএব খোকার গাড়ি এক্সিডেন্ট করেনি নিশ্চিত হওয়া গেল।
রাত প্রায় পনে দু”টো , বাচ্চা দু”টো না খেয়ে ঘুমিয়ে গেছে। ফোন বেজে উঠল। চট্টগ্রাম পুলিশ
কমিশনার – আপা , আপনাকে কিছু গোপণীয় তথ্য দিতে চাই। আপনি কাউকে বলবেন’না
কিন্তু। কি গোপণীয় তথ্য? নীরা বুঝে ওঠেনা। খোকা নেই। খোকা নিখোঁজ, এর সাথে গোপণীয়
তথ্য কী হতে পারে?

–বলুন ।নীরার দম আটকে আসে। যেন কী মৃত্য পরোয়ানা শোনাবেন তিনি।
—দেখুন আপনার স্বামী এক মহিলা সহ চট্টগ্রাম অমুক হোটেল ছিলেন। তারা ঐ দিনই দুপুরে বার’টায় হোটেল ত্যাগ করেন। আমরা চেষ্টা করছি মহিলা সহ এরেস্ট করতে। আপনি একথা
কাউকে বলবেন’না আমাদের সুবিধার কারণেই আপনি তথ্যটা গোপন রাখবেন। স্তম্ভিত নীরা!

চোখের সামনে ভোর হলো।রাত্রির কালিমা কেটে ভোরের আলো উঁকি দিল। সকাল আট’টা পর্যন্ত কোন খবর নেই। বেলা বারটায় খবর এলো। তিথী বিথী তখনও ঘুমাচ্ছে। রাতে ওরা ঘুমায়নি ।
বারোটায় ব্যবসায়ি পার্টনার জানালেন – খোকা সাহেব ফোন করেছেন। তিনি ভালো আছেন। এটুকুই বলতে বলেন।
–তবে আমাকে একটা ফোন করে না কেন? তিনি নিরুত্তর।

বিকেল তিন’টে। খোকার প্রথম এস,এম,এস – আমি রাগ করে ব্যবসায় পার্টনারের সাথে রাঙ্গামাটি গিয়েছিলাম। এখন পুলিশ আমাকে হাজিরা দিতে বলছে “

নীরা বুঝতে পারছে না খোকা তাকে ফোন করছে না কেন? দিনটায় বুক চিতিয়ে রোদ নেমেছে।
হাওয়াটা কেমন যেন না গরম না ঠান্ডা। তবুও নীরার শরীরে চিকন ঘাম।

কক্সবাজার থানা থেকে জানা গেল সব। বরণা নামে এক মহিলাকে নিয়ে খোকা রাঙ্গামাটি গিয়েছিল। এখন তাকে থানায় মহিলা সহ হাজিরা দিতে হবে। নীরা জানেনা এই সময় কী করতে হয়।এই অবস্থার ব্যাখ্যা কী ? একটা অসহায় অবোধ শিশুর মত শুয়ে থাকল সারাদিন।
[পর্ব ১৩]
রাঙ্গামাটি থেকে হুট করেই সিধান্ত নিল খোকা আর থাকবেনা। ব্যাগ গুছিয়ে হোটেল থেকে ড্রাইভার আর গাড়ী নিয়ে বেরিয়ে পড়ল।
আবার সেই আঁকাবাঁকা রাস্তা। মোবাইলের নেট ওয়ার্কের আওতায় আসতেই প্রথম ফোন এল – —–হ্যালো চট্টগ্রাম থানা থেকে বলছি। আপনি দয়া করে হাজির হন। পুলিশের গলা,
—- আপনার স্ত্রী আপনাকে খুঁজছেন। আপনি স্বশরীরে হাজির হন।খোকার বুক ধড়াস করে উঠল।এইখানেই ভুল ছিল। তার খুঁতখুঁতে মন তখন এই কারণটাই খুঁজছিল। এখন আর কিছু করার নেই। অগত্যা গাড়ি ঘুরিয়ে আবার চট্টগ্রামের উদ্দেশ্য করে যাত্রা।রাস্তার মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ গাড়ীর নাম্বার মেলালো। রিতীমত হুলুস্থুল অবস্থা। খোকা নার্ভাস হয়ে গেল।
ও জানত নীরা ১২ ঘন্টা পেরোলেই খুঁজবে।কতবার মদ খেয়ে বেহেড খোকাকে রাত দুপুরে থানা থেকে ছাড়িয়ে এনেছে। মাথার চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে।
ভুল বড্ড ভুল করেছে খোকা। যে নীরা তাকে সারা জীবন বাঁচিয়ে এল। আজ ও বাঁচাতে এগিয়ে এসেছে। কিন্তু নীরা জানেনা অজান্তে খোকার জন্য কী অপেক্ষা করছে। নীরা নিখোঁজ অনুসন্ধান করছে, আর খোকা ভাবছে নীরা ইচ্ছে করেই তাকে হেনস্তা করছে।আর খোকা না জানিয়েই আনন্দ উল্লাস করতে গিয়েছে।
উহঃ কি ভুল টাই না করেছে সে। ইদানীং নীরাকে হেয় করা তার অভ্যাস হয়ে গিয়েছে।
বরণার সাথে খোকা মেলামেশার পর থেকে নীরাকে তার আর ভাললাগে না। এটা তার ওপর থেকে মনে হয়। কিন্তু নীরাকে অস্বীকার করতে পারে না। নীরার প্রচন্ড
জেদ কে সে ভুল বুঝেছিল। খোকা ভালো করেই জানে যে, নীরা কিছু জানে না,আর তাই ব্যকুল হয়ে অনুসন্ধান করছে।তবু প্রচন্ড ক্ষোভের সঞ্চার হলো তার।কোনমতে বরণাকে একটা ঢাকাগামী বাসে তুলে দিল। চট্টগ্রামে স্বশরীরে থানায় গেল। বিরক্তিকর প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে নাজেহাল অবস্থা।

থানা থেকে ছাড় পেয়ে আবার রওয়ানা দিল কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে। ওখানেও যেতে হবে। পথের মাঝে আরো থানা, আরো পুলিশ, গোয়েন্দা বাহিনী, স্পেশাল ব্রাঞ্ছ।
নীরা কী পৃথিবী চছনছ করে দিয়েছে? খোকা হতবুদ্ধি!কক্সবাজার পৌঁছাতে খোকার সন্ধ্যে হয়ে গেল। ও’দিন আর যাওয়া হলনা থানায়। ফোনে বলে দিলো পর দিন খুব ভোরে আসবে। সারারাত ঘুম হল না। আধো ঘুম আধো জাগরণে কাটল।
—মহিলার নাম কী? সরু চোখ ওসি সাহেবের।
–কোন মহিলা? খোকা আকাশ থেকে পড়ল।
–ন্যাকা সাজবেন না। সব রেকর্ড আছে। আপনি মহিলার সাথে অবৈধ ব্যবসা করেন, অবৈধ সম্পর্ক। সমস্ত রিপোর্ট আছে। মিথ্যে বললে সাজা হবে।
–আমার বন্ধু।–
–বন্ধু? মেয়েছেলে নিয়ে ফুর্তি মারছেন। বন্ধু কী? –মদ খেয়ে এসেছেন ?
-হ্যাঁ-
–কেন?
–মদ না খেলে ঘুম হয়না। হাত পা কাঁপে।
— ও ইয়েস। আপনি হাসপাতালে ভর্তি হন।
কি ভেবে বলল – আপনার স্ত্রীর জন্য আমরা ছেড়ে দিলাম এ যাত্রা। বেঁচে গেলেন। কিন্তু, খেয়াল রাখবেন আবার আসতে হবে ।কোনমতে থানা থেকে নাজেহাল হয়ে বের হয়ে এল খোকা ।

[পর্ব ১৪]
বেশ রাত করে নীরা এস,এম,এস পেল। “তোমার সাথে আমার সম্পর্ক শেষ। আমার জীবন থেকে তুমি মুছে গেছ। কেবল কাগজে সম্পর্ক থাকবে আর না” নীরা জানে না তার অপরাধ কী। নীরা অবোধ সন্তানরা কী অপরাধ করল।তাদের কথা কি খোকা একবার ও ভাবলো না?আবার এস,এম এস এল “ বাচ্চাদের বলে দিও তাদের বাবা মরে গেছে “
নীরা কী বলবে? নীরা আবার সাগরে সাঁতার দিতে লাগল। সাগরে তলিয়ে যেতেযেতে একটা খড় কুটো পেল। আবার বাঁচতে চায়। নীরা আবার স্বপ্ন দেখে। খড় কুটোকে চেনার চেষ্টা করে বড্ড ঝাপসা লাগে। সাগরের গহীনে খড়কুটো। নীরা ডুব সাঁতার দিয়ে খড়কুটো’টার নাগাল পেতে চাইল। জানেনা নীরা খড় কুটোটা হাত ফস্কে চলে যাবে কী’না। সন্তানদের দিকে তাকিয়ে হাত মুষ্টিবদ্ধ করল। তাদের বাঁচাতে হবে। ঘরে কতো মানুষ! কাউকে চেনেনা, নীরা ঘুমের গভীরে তলিয়ে গেল। জানেনা কাল সুর্যের মুখ দেখতে পাবে কী না।

( সমাপ্ত )