[ভূমিকাঃ নৃপেন্দ্র সরকারের “কৃষ্ণপক্ষের চাঁদ সংখ্যালঘু জীব (৩) এক রাজকাপুরের প্রথম মৃত্যু” লেখাটা পড়ে অনুপ্রাণিত হয়ে এই লেখাটা ব্লগে দেয়া। এ বছরের একুশের বই-মেলায় ‘আমেরিকার গল্পঃ রঙ দিয়ে যায় চেনা’ নামে আমার একটা বই বের হয়েছে। আমার লেখা প্রথম প্রকাশিত বই। এই গল্পটা বইয়ের ১৪ টা গল্পের মধ্যে একটা। আগ্রহী পাঠকরা নিম্নোক্ত ওয়েবসাইট থেকে বইটা কিনতে পারেনঃ
সবাইকে ধন্যবাদ]
কৈশোর ও যৌবনে বই পড়ার ভীষন বাতিক ছিল আমার। প্রায় সব ধরনের বই কম-বেশী পড়লেও আমাকে সবচেয়ে বেশী আকর্ষন করতো ওয়েষ্টার্ন সিরিজগুলো। এ্যাপাচী যোদ্ধা, কাউবয়, গরুর র্যা ঞ্চ, মরুভূমির লাগামছাড়া যাযাবর জীবন,…… সবকিছুই আমাকে আকর্ষন করতো খুব। তখন কি কখনও কল্পনা করেছি পশ্চিমের সেই মরু অঞ্চলে একদিন আবাস হবে আমার?
সিটি অব স্কট্স্ডেল (City of Scottsdale) কে বলা হয়, ‘the West’s Most Western Town’। এ্যারিজোনা স্টেইটের ফিনিক্স মেট্রো শহরে অবস্থিত অত্যন্ত ধনী সিটি হলো স্কট্স্ডেল। স্কট্স্ডেলের জনসংখ্যার প্রায় ৯৭% হলো সাদা (৯০% ককেইশিয়ান ও ৭% হিস্প্যানিক বা স্প্যানিশভাষী)। এই সিটির অধিবাসীদের মাথাপিছু বাৎসরিক আয় ১১০,৩০০ ডলার (পারিবারিক আয় ৯২,৩০০ ডলার; ২০০৭ সালের জরীপ অনুযায়ী)। গড়পড়তা বাড়ীর দাম ৪৪৫,০০০ ডলার।
‘বৈচিত্র্য’ সম্ভবতঃ মানুষের অবচেতন মনের এক চাহিদা। আর তাই দেখা যায়, একই ধরনের জীবন যাপনে, কিম্বা আশ-পাশে সবসময় এক ধরনের মানুষ দেখতে দেখতে একসময় মানুষ হাঁপিয়ে ওঠে; একঘেয়েমিতে পেয়ে বসে তাকে। মানুষ তাই ‘বৈচিত্র্য’ খোঁজে পরিবর্তনের জন্যে। ডাইভারসিটি বা বহুমুখিতা নিয়ে আসতে পারে সেই বৈচিত্র্যকে।
গত আট বছরে আমেরিকার চাকরি জীবনে বরাবর প্রাইভেট সেক্টরে কাজ করে এসেছি, যদিও আমেরিকায় সরকারী চাকরি করার গোপন একটা বাসনা মনে মনে ছিলই। নিউজার্সী থেকে বছর দু’য়েক আগে এ্যারিজোনা মুভ করেছিলামও বেসরকারী চাকরি নিয়েই। এ্যারিজোনাতে আসার তখন এক বছরও পুরো হয়নি আমাদের। ২০০৮-এর শুরুর দিকে। কি খেয়ালে যেন স্টেইট আর সিটির ‘জব্-অপরচুনিটি’ গুলো অনলাইনে ঘেঁটে-ঘুঁটে দেখছিলাম একদিন। সিটি অব স্কট্স্ডেলের একটা ‘জব্-অপরচুনিটি’ হঠাৎ করেই আমার দৃষ্টি আকর্ষন করলো “সিনিয়র স্টর্মওয়াটার ইঞ্জিনিয়ার” (Sr. Stormwater Engineer)। কাংখিত যোগ্যতার লম্বা তালিকার অনেক গুলোই দেখা গেল আমার ব্যাকগ্রাউন্ডের সাথে মেলে। এ্যাপ্লিকেইশন ক্লোজিং-এর তখনও দিন তিনেক বাকি। তাড়াহুড়ো করে এ্যাপ্লিকেইশন ফিল্ আউট করে হাতে হাতে সিটি অব স্কট্স্ডেলের হিউম্যান রিসোর্সেস অফিসে জমা দিয়ে এলাম। সপ্তাহ খানেক পর অভাবিত ভাবে ফোন এলো ইন্টারভিউ-এর জন্যে। যথারীতি ইন্টারভিউ দিলাম। এবং তার দিন পনের পরেই চাকরির অফার পেলাম। পশ্চিমের সবচেয়ে পশ্চিমা সিটির এমপ্লয়ি হয়ে গেলাম সেই থেকে।
সিভিক সেন্টারের দোতলায় ‘পাবলিক ওয়ার্ক্স্’ ও ‘ট্রান্সপোর্টেশন’ ডিপার্টমেন্ট। গোটা ফ্লোরে প্রায় শ’ দেড়েক এমপ্লয়ি। গেব্রি (Gebre) আর আমি বাদে বাকি সবাই সাদা। গেব্রি ইরিত্রিয়ান। কালো। ‘স্টর্মওয়াটার প্ল্যানার’’। সিটিতে যোগ দিয়েছে আমার কিছুদিন আগে।
একটু আগে ডাইভারসিটির কথা বলছিলাম। ডাইভারসিটির উল্লেখ ও আমার বেসরকারী থেকে সরকারী চাকরিতে সুইচ্ করার গল্প থেকে কারো কারো মনে হতে পারে যে, আমি বোধহয় আমার চাকরির বৈচিত্র্যের কথা বলছি। আসলে তা না। ব্যাপারটা তাহলে খুলেই বলি।
সিটি অব স্কট্স্ডেলের মেয়র, কাউন্সিল্পারসন্স ও সিটি ম্যানেজারের সম্বিলিত গৃহিত সিদ্ধান্ত এবং তদানুযায়ী হায়ারিং ম্যানেজার ও হিউম্যান রিসোর্স-এর উপর নির্দেশ হলো, বিভিন্ন রেস্ (race) ও ব্যাকগ্রাউন্ডের যোগ্য প্রার্থীদেরকে সিটিতে এমপ্লয় করার প্রচেষ্টা করা যেন স্কট্স্ডেল ক্রমে ডাইভার্সিফাইড হয়ে ওঠে; অনন্তকাল যেন কেবল সাদাদের আবাসভূমি না হয়ে থাকে। ব্যাপারটা নিঃসন্দেহে ইন্টারেষ্টিং। ভিন্ন ভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসা সংখ্যালঘু এমপ্লয়ীরা যেন সংখ্যাগরিষ্ট সাদা এমপ্লয়ীদের সাথে সহজে মিশতে পারে এবং কেউ যেন কোনভাবে ডিস্ক্রিমিনেইটেড না হয়, সে জন্যে আলাদা একটা ডিপার্টমেন্টও প্রতিষ্ঠা করেছে সিটি “অফিস অব ডাইভারসিটি এ্যান্ড ডায়ালগ” নামে। এই অফিসের কাজ হলো, এমপ্লয়ীদেরকে ডাইভারসিটি সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞান বা ট্রেইনিং দেয়া এবং কোন ধরনের ডিস্ক্রিমিনেইটিং কমপ্লেইন পেলে তা তদন্ত করে দেখা ও উপযুক্ত সমাধান করা।
আমার আজকের গল্প ডাইভারসিটির উপর সিটি অব স্কট্স্ডেলে করা আমার সেই ট্রেইনিং প্রসঙ্গে। সিটির প্রত্যেক নতুন এমপ্লয়ীর জন্যে চাকরি শুরু করার সুনির্দিষ্ট একটা সময়ের মধ্যে এই ট্রেইনিং-এ অংশগ্রহন করা বাধ্যতামূলক। পুরোনো এমপ্লয়ীদের মধ্যে যারা আগে কখনো এই ট্রেইনিং-এ অংশগ্রহন করেনি, তাদের জন্যেও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এই ট্রেইনিং কে। ট্রেইনিং সেশনের টাইটেল হলো, “Beyond Race & Gender: Becoming Culturally Competent”। দৈনিক আধা দিন করে তিন দিন ব্যাপী এই ট্রেইনিং সেশন।
হিউম্যান রিসোর্সেস অফিসের সুবিশাল কনফারেন্স রুমে শুরু হলো আমাদের ট্রেইনিং। জনা ত্রিশেক ট্রেইনী। আমি ছাড়া ট্রেইনীদের বাকি সবাই সাদা। বেশীর ভাগই ককেশিয়ান; সাথে হাতে গোনা দু’চার জন হিসপ্যানিক। অবশ্য তিনজন ট্রেইনারের মাঝে কেবল একজন সাদা; বাকি দু’জনই কালো- আফ্রিকান আমেরিকান।
ট্রেইনিং সেশন শুরু হলো পরিচয় পর্বের মাধ্যমে। একে একে উঠে দাঁড়িয়ে নিজের পরিচয় দিতে হবে- কোথায় জন্ম, কোথায় বড় হয়েছে, সিটির কোন্ ডিপার্টমেন্টের সাথে যুক্ত এবং সিটিতে কতদিন যাবৎ কাজ করছে, ইত্যাদি। বলা বাহুল্য, আমি বাদে ট্রেইনী এবং ট্রেইনারদের সবার জন্ম আমেরিকায়। তবে অনেকেই যে স্টেইটে জন্মেছে, সেখানে হয়ত বড় হয়নি; বড় হয়েছে অন্য আরেক স্টেইটে। একসময় আমার পালা এলো পরিচয় দেবার। উঠে দাঁড়ালাম। বললাম, “My name is Mohammad. I was born and brought up in Bangladesh……..””। বলা বাহুল্য, ট্রেইনী এবং ট্রেইনার- সবার চোখেমুখে অদম্য এক কৌতুহল ফুঁটে উঠলো, যা পরিষ্কার নজরে পড়লো আমার।
ট্রেইনিং সেশনের একটা অংশ ছিল ট্রেইনীদেরকে পরীক্ষা করা যে, আমরা অন্য ধর্মের বা এথ্নিক গ্রুপের রীতিনীতি সম্বন্ধে কে কতটুকু জানি। উদ্দেশ্য এটাই যে, আমাদের জানার বাইরেও অন্য ধর্মের বা এথ্নিক গ্রুপের কত অসংখ্য ধর্মীয় আচার ও জাতিগত কালচার আছে এবং এসব ডিফারেন্সকে এ্যাকোমোডেট্ করেও কিভাবে একটা প্রতিষ্ঠান সফলতা পেতে পারে- ধর্মীয় ও জাতিগত পার্থক্যের উপরে উঠে। পরীক্ষার শিরোনাম ছিল, “Developing Cultural Competency” এবং প্রশ্নগুলো ছিলঃ
১। What is Hanukkah?
২। Name two traditionally Black US colleges
৩। Do you know somebody who was born outside of the US?
৪। What is Cinco de Mayo?
৫। What is the name of the head covering worn by many Muslim women?
৬। Are you bi-lingual or multi-lingual?
৭। Who are Intuit and where do they live?
৮। What country lies between Pakistan and Bangladesh?
৯। Do you have a living Abuela?
১০। How do most Canadians pronounce the last letter of the alphabet?
১১। Why did the Irish immigrated to the US in the 1840s?
১২। What are the names of the two religious sects in Iraq?
১৩। Do you know what your Chinese birth sign is?
১৪। What is the meaning of an upside-down pink triangle?
১৫। What is the meaning of the word “Kosher”?
সাদা অধ্যুষিত, পশ্চিমের সবচেয়ে পশ্চিমা শহরের সিটি এমপ্লয়ীদের ট্রেইনিং-এর জন্যে বাছাই করা গুটিকয়েক প্রশ্নের মাঝে বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে সেট্ করা প্রশ্নটা দেখে গর্বে বুকটা ভরে গেল আমার। পৃথিবীর সাম্প্রতিক গ্লোবালাইজেইশনে এবং কেব্ল্ নিউজের কল্যানে অনেক আমেরিকানই হয়ত আজ বাংলাদেশের নাম জানে। কিন্তু ৩,৫০০ এমপ্লয়ী সমৃদ্ধ সুবিশাল একটা প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেক এমপ্লয়ী কেবল নামে নয়, বরং ভৌগলিক অবস্থানের দিক দিয়েও বাংলাদেশকে চেনার সুযোগ পাচ্ছে, একজন বাংলাদেশী হিসেবে তা জেনে গর্বে ও আনন্দে প্রাণটা ভরে উঠলো আমার।
আমেরিকানদের জেনেরাল নলেজ নিয়ে অনেক মজার মজার গল্প প্রচলিত আছে বাজারে। টিভি শো গুলোতে মজার মজার অনেক অনুষ্ঠানও হয় এসব নিয়ে। যেমন, অধিকাংশ আমেরিকান তাদের প্রেসিডেন্টের নাম জানলেও, ভাইস প্রেসিডেন্টের নাম জানেনা। আমেরিকার বর্ডার কোন্ কোন্ দেশের সাথে তা অধিকাংশ আমেরিকানই জানেনা। আপনি দোকান থেকে একটা জিনিষ কিনলেন যার দাম ৫.৪৫ ডলার; সেল্স্পারসনকে একটা ১০ ডলারের নোট ও সাথে খুঁচরো ৪৫ সেন্ট দিলেন যেন সে আপনাকে একটা ৫ ডলারের নোট ফেরৎ দেয়; অধিকাংশ ক্ষেত্রে আপনাকে চারটে এক ডলারের নোট ও আপনার ৪৫ সেন্টসহ আরও ৫৫ সেন্ট আপনাকে ফেরৎ দেবে দোকানী…… ইত্যাদি, ইত্যাদি। পাঠক, এরপর কি আর বলার প্রয়োজন আছে, ট্রেইনীদের মাঝ থেকে উপরের প্রশ্নগুলোর সবচেয়ে বেশী সংখ্যক সঠিক উত্তর দিতে পেরেছিল কে?
আমি নিশ্চিত, অধিকাংশ পাঠকই উপরের বেশীরভাগ প্রশ্নেরই উত্তর জানেন। তারপরও, সবার জানার সুবিধার্থে উত্তরের তালিকাটা নীচে দিয়ে দিচ্ছিঃ
১। Jewish Holiday
২। Howard College, Florida A&M, North Carolina A&T, Texas Southern College, etc.……..
৩। আমার পরিচয় জানার পর ট্রেইনীদের সবার উত্তর ছিল ‘Yes’
৪। Observed on May 5 in celebration of Mexican unity and patriotism
৫। Hijab
৬। আমি সহ দু’চার জন ছাড়া বাকি সবার উত্তর ছিল ‘No’
৭। Polar people who live in the far north of Canada, Alaska and Greenland
৮। India
৯। ‘Abuela’ means ‘grandmother’ in Spanish
১০। ‘Zed’ (আমেরিকানরা ‘Z’ কে উচ্চারন করে ‘জি’)
১১। Mainly due to great Irish Potato Famine
১২। Shiites and Sunnis
১৩। আমাদের সবার উত্তর ছিল ‘No’
১৪। Gay Rights movement
১৫। Food prepared in accordance with Jewish dietary law
আমেরিকানদের অনেক কিছুই আমি পছন্দ করিনা। আবার আমেরিকানদের যা যা পছন্দ করি, তার তালিকাও নেহায়েত ছোট নয়। এদেশে বসবাসকারী প্রতিটা মানুষের সম-অধিকার প্রতিষ্ঠা করার যে অনন্ত প্রচেষ্টা চলছে প্রসাশনিক ও সামাজিক প্রতিটা পর্যায়ে, তার কেবল মৌখিক প্রশংসা করলে মনেহয় অনেক কম করা হবে। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে সংখ্যালঘূদের আনুপাতিক সংখ্যা ছিল প্রায় ২০%। আজ তা এসে ঠেকেছে ১০%-এর নীচে। স্বেচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক, অর্ধেকের বেশী সংখ্যালঘূ ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ছেড়ে migrate করেছে পাশের দেশে। কারন জিজ্ঞেস করলে আমরা এক দল আরেক দলের দিকে অঙ্গুলী নির্দেশ করি; দোষারোপ করি একে অন্যকে। এ তো গেলো রাজনীতিবিদদের কথা। সবচেয়ে দুঃখজনক হলো, আমরা সাধারন সংখ্যাগুরুরাও অধিকাংশ ক্ষেত্রে ইঙ্গিত করি সংখ্যালঘূদের প্রতিই; প্রশ্ন করি তাদের দেশপ্রেমকে। আজ আমেরিকার মত সাম্যবাদী, সম-অধিকারের দেশে বসেও একজন সংখ্যালঘূ হিসেবে আমার কেবলই মনে হয়, সংখ্যাগুরু প্রতিটা বাংলাদেশীকে একেকজন সংখ্যালঘূর জুতায় পা ঢুকিয়ে যদি বাংলাদেশের প্রসাশন ও সমাজ কে দেখানো যেত, তবে তারা প্রত্যেকেই হয়ত দেখতে পেতো “অনেক কিছুর সংগাই তার জন্যে আলাদা””।।
আব্দুর রহমান আবিদ
রচনাকালঃ এপ্রিল, ২০০৯
১৯৭১ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর পরই দেশে কে হিন্দু কে মুসলমান এ বিষয়টা গুরুত্বপূর্ন ছিল না। সর্বপ্রথম গুরুত্বপূর্ন হয়ে ওঠে জিয়ার আমলে। এরশাদ এর সময় বিষয়টা কেমন জানি চাপা পড়ে গেছিল, যদিও এরশাদ ইসলাম নিয়ে রাজনীতি করার পায়তারা করেছিলেন কিন্তু ব্যক্তিগত এরশাদ মনে হয় নিরপেক্ষ মনের। বিষয়টা প্রচন্ডভাবে আবার ফিরে আসে ১৯৯১ সালে বেগম জিয়া ক্ষমতায় আসার পর। এরপর আওয়ামী লিগ বা বিএনপি যারাই ক্ষমতায় আসুক না কেন, তাতে কোন লাভ হয়নি, ক্রমশ দেশে হিন্দু মুসলিম পরিচয় একটা বিরাট ফ্যক্টর হয়ে দাড়িয়েছে। অসাম্প্রদায়ীক বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়ীক রাজনৈতিক দলগুলো ভালমতোই সাম্প্রদায়ীক করে ফেলেছে- এটা আর অস্বীকার করার উপায় নেই। এ নিয়ে দাঙ্গা হাঙ্গামা বা রায়ট খুব প্রকাশ্য না হলেও পরোক্ষ্য ভাবে সংখ্যালঘুদের নির্যাতন শোষণ করাটা একটা ট্রেন্ড হয়ে দাড়িয়েছে দেশে। চাকুরীর ক্ষেত্রেও বিষয়টির প্রভাব পড়েছে ব্যপক ভাবে। ২০ বছর আগেও সংখ্যালঘুরা যে ভাবে মেধার ভিত্তিতে চাকুরীতে ঢুকতে পারত, এখন তা তিরোহিত হয়েছে। শিক্ষক জাতিয় কিছু চাকরী ছাড়া সংখ্যালঘুরা আর কোথাও তেমন চাকরী পাচ্ছে না। আর সংখ্যালঘুদের নারীদের ওপর সংখ্যা গরিষ্ঠের একটা লোলুপ দৃষ্টি সব সময়ই ছিল যা সংখ্যালঘুদের মনে সব সময় একটা নিরাপত্তা হীনতা বোধের জন্ম দেয়। এ কারনেই সম্পন্ন সংখ্যালঘুরা বাংলাদেশকে আর খুব একটা নিরাপদ জায়গা ভাবতে পারে না। এ বিষয়টির সমাধানে কোন রাজনৈতিক দল কখনই তেমন আন্তরিক হয়েছে বলে দেখা যায় নি। আর তাই বাংলাদেশকে এখন আর ধর্ম নিরপেক্ষ দেশ হিসাবে বিবেচনা করা বোকামী। একই সাথে এটা এখন তথাকথিত মডারেট মুসলিম দেশ কিনা সেটাও বিশেষ বিবেচ্য।
@ভবঘুরে,
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আপনার পর্যবেক্ষণগুলো যুক্তিপূর্ণ। মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ।
ডাইভার্সিটি নিয়ে আবিদ সাহেবের গুরুত্বপূর্ণ লেখাটি পড়লাম। আবিদ সাহেবের এধরণের লেখার হাত চমৎকার। কারণ এ লেখাগুলো একেবারে সামাজিক অভিজ্ঞতার প্রতিফলন হিসেবে উঠে আসে। যে উদাহরণগুলো তিনি দিয়েছেন এগুলো আমাদের সবারই অভিজ্ঞতা। সংখ্যালগুরা সর্বত্রই সংখ্যালগু। হিন্দুরা বাংলাদেশে যে যন্ত্রানায় থাকেন, ঠিক একই ধরনের যন্ত্রণা হয়তো একটি মুসলিমও ভোগ করেন অন্য কোন রাষ্ট্রে। ৯/১১ এর ঘটনার পরে নির্বিচারে মুসলিমদের গায়ে সন্ত্রাসের ট্যাগ লাগিয়ে হেনস্থা করা হয়েছে আমেরিকা সহ অনেক রাষ্ট্রেই। অনেক নিরপরাধীকেও জেল জরিমানা খাটতে হয়েছে প্রমাণ ছাড়াই, কেবল সন্দেহের ফলশ্রুতিতে। এগুলো নিয়ে অনেক বেশি লেখা হওয়া দরকার। তার বিগত কয়েকটি কোরান হাদিস ডিফেন্ড করা লেখার চেয়ে এই লেখাটি অনেক যৌক্তিক মনে হয়। যদিও এটা আমার ব্যক্তিগত অভিমত। আবিদ সাহেবকে আমার অভিমত মানতে হবে এমন কোন কথা নেই।
সংখ্যালঘুত্ব, এথনিক কনফ্লিক্ট, ডাইভার্সিটি প্রভৃতি নিয়ে তো সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ব্যাখ্যা অনেক দেয়া হয়েছে। ইদানিং বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান নিয়ে পড়ছি; একটা সিরিজও লিখছি। সেই দৃষ্টিকোন থেকে কিছু মতামত দেই। এ ব্যাখ্যাগুলো এরকমভাবে আগে কোথাও দেয়া হয়নি। হয়তো পাঠকেরা কিছু নতুনত্ব খুঁজে পেতে পারেন।
বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের ধারণা অনুযায়ী, আমরা জাতীয়তাবোধে কিংবা দেশপ্রেমে কিংবা জাতিগত ভাতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হই খুব সহজ কারণে, এবং সেই কারণটি নিহিত আছে (রাজনীতি, সংস্কৃতি এবং অর্থনীতির পাশাপাশি) জীববিজ্ঞানে। প্রতিটি মানুষ, যতই উদার হোক না কেন,খুব স্বার্থপর ভাবেই প্রথমে নিজের সন্তান এবং পরিবারের (ছেলে মেয়ে, ভাই বোন, বউ, বাবা মা…)মঙ্গল অমঙ্গলের ব্যাপারটা অবার আগে দেখে। এটা জানা কথাই। কারণ, জেনেটিকভাবে চিন্তা করলে তারাই একটি মানুষের সবচেয়ে ‘আপন জন’, তাই সবচেয়ে কাছের জিনপুলকে সে রক্ষা করতে চায়,তারপরে একটু দুরের (যেমন, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু বান্ধব, পাড়া প্রতিবেশী)এবং এ ব্যাপারটা জৈবিকভাবেই অঙ্কুরিত। এগুলো আমাদের সমাজে হরহামেশাই দেখি। ঠিক আমরা যে কারণে সন্তান কিংবা পিতামাতা এবং পরিবারের মঙ্গলের জন্য জৈবিক তাড়না অনুভব করি, ঠিক একই কারণে স্বজাতিমোহেও উদ্বুদ্ধ হই। ‘স্বজাতি’ ব্যাপারটা আর কিছুই নয় আমাদের ‘এক্সটেন্ডেড জেনোটাইপের’ দ্বারা নির্ধারিত ‘এক্সটেন্ডেড পরিবার’ (extended family)। বিবর্তনের মূল কাজই হচ্ছে যত বেশি সংখ্যক প্রতিলিপি তৈরি করা আর ‘নিজস্ব’ জিনপুলকে রক্ষা করে চলা। কাজেই বিবর্তনে আমাদের সেই সমস্ত প্রচেষ্টাই ‘অধিক হারে’ উপযোগিতা পাবে, যেটি সদৃশ কিংবা কিংবা সমরূপ জিনকে রক্ষা করে চলবে। জোসেফ এম হুইটমেয়ার নামের এক বিজ্ঞানী এ নিয়ে গবেষনা করছিলেন বহুদিন ধরেই। তিনি বলেন, গানিতিকভাবে এটি দেখানো যায় যে, একটি জিন সেই দিকেই ঝুঁকে পড়বে কিংবা টিকে থাকার উপযোগিতা দেখাবে যেখানে এটার বাহক, বা তার সন্তান সন্ততি কিংবা নাতিপুতির সমবৈশিষ্ট্য সম্পন্ন জিনের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের সুযোগ কিংবা সম্ভাবনা থাকবে (Whitmeyer Joseph M. 1997. “Endogamy as a Basis for Ethnic Behavior.” Sociological Theory 15 2: 162-178.)। হুইটমেয়ারের যুক্তি হল, এথনিক গ্রুপগুলো আসলে পরষ্পরের সম্পর্কিত ‘বর্ধিত পরিবার’ (extended family) বই কিছু নয়, কারণ তাদের দূরবর্তী সদস্যদের মধ্যে ভবিষ্যতে সম্পর্কের সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে।
ঠিক এই কারণেই সম্ভবতঃ বাংগালী আমেরিকায় পাড়ি দিয়েও বাঙ্গালি কমিউণিটি খুঁজে ফিরি, অফিসেও দেখা যায় ইন্ডিয়ানরা একসাথে নিজেরা লাঞ্চে যায়, চৈনিকেরাও তাদের স্বজাতি খুঁজে ফেরে। ব্যাপারটি আর কিছুই নয়, ‘বর্ধিত পরিবার’হিসেবে বিবেচনা করে জিনপুল রক্ষার প্রচেষ্টা।
এই ব্যাখ্যা অনুযায়ী, মানুষ আসলে জন্মগতভাবেই কিছু রেসিস্ট বৈশিষ্ট নিয়ে জন্মগ্রহণ করে (যতই অস্বস্তি লাগুক না কেন শুনতে)। নিজের সম্প্রদায়কে সবার আগে ভালবাসা মানুষের মজ্জাগত, তাই স্বভাবগতভাবেই কিছুটা হলেও সাম্প্রদায়িক বলা যেতে পারে। পরবর্তীতে সামাজিকীকরণ, শিক্ষা, সুগুণের চর্চার মাধ্যমে আমরা সাম্প্রদায়িকতার বলয় থেকে বেড়িয়ে আসতে পারি, তবে অনেকেই পারেন না সেটাও কিন্তু দেখি। অনেক সময় একভাবে সাম্প্রদায়িকতা অস্বীকার করলেও আবার ভিন্নভাবে সাম্প্রদায়িকতার উদগীরণ ঘটে। কিছু উদাহরণ আমাদের হাতের কাছেই আছে। আমরা ১৯৭১ সালে পাকিস্তান থেকে স্বাধীন হয়েছিলাম রক্তাক্ত যুদ্ধের মাধ্যমে। আমরা অস্বীকার করতে পেরেছিলাম জিন্নার দ্বিজাতিতত্ত্বকে। অনেকেই একাত্তুরে বাংলাদেশের অভ্যুদয়কে অসাম্প্রদায়িক চেতনার ফসল হিসেবে দেখেন। ভাল কথা। কিন্তু সেই ‘অসাম্প্রদায়িক’ আমরাই আবার দেশপ্রেমের মোহে উজ্জীবিত হয়ে চাকমাদের উদ্বাস্তু করেছি, গৃহহীন করেছি, তাদের গায়ে ‘পাকিস্তানী কায়দায়’ লেবাস লাগিয়েছি রাষ্ট্রদ্রোহিতার। পাকিস্তানী কায়দায় ধর্ষণ, অত্যাচার কোন কিছুই বাদ দেইনি। রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোন থেকে বিভিন্ন ব্যাখ্যা দেয়া গেলেও জৈববৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা উহ্যই ছিলো। এদিক থেকে ব্যাপারটার ব্যাখ্যা খুব সহজ। পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে আমরা সহজেই ঐক্যবদ্ধ হতে পেরেছি, একসাথে যুদ্ধ করতে পেরেছি কারণ আমরা বাঙ্গালী জাতি নিজেদের একটি ‘বর্ধিত পরিবার’বলে ভাবতে পেরেছি, আমরা জেনেটিকভাবে পাকিস্তানীদের তুলনায় অনেক কাছাকাছি। কিন্তু স্বাধীনতার পরে আমরাই আবার চাকমাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছি, কারণ চাকমারা আবার জনেটিকভাবে আমাদের থেকে একটু দূরের। এই ক্ষেত্রে ‘বর্ধিত পরিবার-এর মাধ্যমে তৈরি হওয়া দেশপ্রেমই রূপ নিয়েছিল অন্ধ স্বজাতি মোহে, যা চাকমাদের বিরুদ্ধে আমাদের প্রয়োগ করতে বাধেনি। এ ধরণের অনেক উদাহরণই দেয়া যায়, মন্তব্যের আকারের কথামনে রেখে একটি উদাহরণেই আপাততঃ সীমাবদ্ধ রইলাম।
এখন কথা হচ্ছে, এই কনফ্লিক্ট দূর করার উপায় কি? যেহেতু আমরা প্রত্যেকেই কিছু না কিছু রেসিস্ট এবং এথনোসেণ্ট্রিক টেণ্ডেন্সি নিয়ে জন্মাই, এবং বড় হয়ে বিভিন্ন পরিবেশে এবং সময়ে এর পরিস্ফুটন ঘটে, আমরা হয়তো কখনোই এ ধরণের কনফ্লিক্ট পুরোপুরি দূর করতে পারবো না। কিন্তু পুরোপুরি দূর না করতে পারলেও কমিয়ে আনতে পারি, সেটা কিন্তু ঠিক। শিক্ষা, মানবিকতার চর্চা কিংবা সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড প্রভৃতি মানসজগতকে ঋদ্ধ করতে পারে সেগুলো আমরা জানি। নিজের জগতে কূপমুণ্ডুক হয়ে না পড়ে থেকে যদি আমরা ভিন্ন সংস্কৃতি সম্বন্ধে জানতে চেষ্টা করি, নিজেদের মনের দুয়ার উদার করতে পারি – অনেক ক্ষেত্রেই আমরা সাম্প্রদায়িকতার বলয় থেকে বেরিয়ে আসতে পারি। তারপরেও ব্যাপারগুলো আরোপিত। জেনেটিক ব্যাপারটায় আসলে কোন প্রভাব ফেলছে না সেভাবে। জেনেটিকভাবে তৈরি রেসিজম কমাতে হলে একভাবেই আমরা তা কমাতে পারি। জোসেফ এম হুইটমেয়ার-এর গানিতিক মডেল বলছে – সমাধান হচ্ছে ক্রস কালচারাল ইন্টারম্যারেজ। তাদের মতে পারষ্পরিক সঙ্ঘাতময়তা প্রদর্শনকারী গ্রপের সদস্যরা যদি স্বজাতিমোহ ছেড়ে অন্য সংস্কৃতির/ধর্মের সদস্যদের বিয়ে করতে শুরু করে, তবেই একমাত্র কনফ্লিক্ট (মজ্জাগত রেসিজম?) কমে আসবে।
নিঃসন্দেহে এটা বলা সহজ, কিন্তু করা কঠিন। এথনোসেন্ট্রিক ব্যবহার আমাদের মজ্জাগত বলেই আমরা বাংগালীরা বিয়ের সময় আরেকজন বাঙ্গালীই খুঁজি। যারা ট্রাডিশনাল তারা আবার পরহেজগার মেয়ে খুঁজবেন, আর যারা একটু উদার তারা গান গাওয়া একটু আধটু সংস্কৃতির চর্চা করা মেয়ে খোঁজেন। কিন্তু শেষ্পর্যন্ত সেই সীমাবদ্ধ ছকেই। জাতিসত্ত্বাকে অস্বীকার করতে পারি খুব কমই। কিন্তু বিজ্ঞানীরা অন্ততঃ আশা দেখেন এই ক্ষেত্রেই। যদিও আমার কাছে এটি অনেকটা ‘ডিম আগে না মুরগী আগে’ জাতীয় সমস্যা। কনফ্লিক্ট থাকার কারণে ‘ ক্রস কালচারাল ইন্টারম্যারেজ’ হচ্ছে না, নাকি ক্রস কালচারাল ইন্টারম্যারেজ হচ্ছে না বলে কনফ্লিক্টগুলো মানব সমাজে বজায় আছে, তা বের করা কঠিনই। তারপরেও হুইটমেয়ার-এর সমাধান অন্ততঃ এই মুহূর্তে দ্বিতীয়টির দিকেই।
@অভিজিৎ,
মজ্জাগত রেসিসম অবশ্যই কমে আসবে। এ সুফল বেশী পাওয়া যাবে বিয়ের পরে ধর্মটা উভয়ের জন্য যদি গৌণ বিষয় হয়। আর যদি কোন একটি ধর্মে কনভার্ট হওয়ার চাপ থাকে তা হলে বাড়তি বিদ্বেষ সৃষ্টি হতে পারে। যেমন গতকালের একটি পুরনো সংবাদ – দুই মেয়ে হিস্প্যানিক ছেলের সাথে সম্পর্ক গড়ে উঠার কারণে মেয়ে দুটোকেই বাবা খুন করে ফেলেছে। এক্ষেত্রে খুন না করে থাকলেও বিদ্বেষ বাড়তে পারত। এটা একটা একক ঘটনা। একটা মাত্র ঘটনা নিয়ে কোন উপসংহার হয় না। কিন্তু একক ঘটনার সমন্বয়েই তো গুষ্টি ঘটনার সৃষ্টি হয়।
@অভিজিৎ,
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্যে। আপনার বিশ্লেষনগুলো ভাল লাগলো। তবে আমার সম্পর্কে আপনার
পর্যবেক্ষণটা সম্ভবত সঠিক নয়। আমি হাদিস, কোরান ডিফেন্ড করে মুক্তমনায় কোনো নিবন্ধ লিখেছি বলে মনে পড়েনা। মডারেট মানসিকতার মুসলমানের অস্তিত্ব আছে কি নেই, সেটা নিয়ে সাম্প্রতিককালে কিছু নিবন্ধ লিখেছি সত্যি; তবে তার কোনোটাতেই সম্ভবত হাদিস-কোরানের কোনো উল্লেখ ছিলনা।
এনিওয়ে, আমার এই লেখাটা আপনার কাছে যৌক্তিক মনে হয়েছে জেনে খুশী হলাম। আমার লেখার প্রশংসা করায় আপনাকে আবারও ধন্যবাদ।
@অভিজিৎ,
পুনশ্চঃ আমার আগের মন্তব্যে লেখা
বলতে আমি আসলে ডিফেন্ড অর্থে বুঝিয়েছি। literally উল্লেখ করা বুঝাইনি। আশা করি আপনিও সেটা বুঝেছেন। একই মন্তব্যে দুবার প্রতিমন্তব্য করা খানিকটা খারাপ দেখায় অনেকের চোখে। তবে আমার বাসার এই কম্পিউটার থেকে মন্তব্য এডিট করতে গেলে বেশীরভাগ সময় ইন্টারনেট হ্যাং হয়ে যায়। কাজেই একই মন্তব্যে দুবার প্রতিমন্তব্য করতে হলো। আশা করি আপনি কিছু মনে করবেননা। ধন্যবাদ।
@অভিজিৎ,
হুইটমেয়ারের “সমাধান”-এর ব্যাপারে উৎসাহ বোধ করতে পারছি না। সবাই অমুক কাজটা করলে পৃথিবীতে আর সমস্যা থাকবেনা — একথা তো ধর্মগুলো অহরহই বলে আসছে। যেমন, সবাই যদি খৃস্টান হয়ে যায় তাহলে আর ধর্মীয় বিভাজন থাকছে না। সঙ্গী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কারো যদি বিশেষ সংস্কৃতি বা জাতির প্রতি মোহ থাকে, সেটাও একধরণের ডিভার্সিটি, অন্য কারো ক্ষতি না হলে সেটারও স্থান থাকা উচিত।
আপনার শিরোনামের মধ্যেই আসল কথাটা লুক্কায়িত আছে। আসল কথাটা হল: ডাইভারসিটি কাংখিত কিনা একটা সমাজের কাছে? মতামতের, ধর্মের, বিশ্বাসের, গায়ের রংয়ের, যৌন ব্যবহারের বৈচিত্র, চাই না চাই না? উত্তরটা খুবই সোজা। ফেয়ার এন্ড লাভলি মাখা consensus ভিত্তিক সমাজের বৈচিত্র পছন্দ হবার কোন কারণ নেই।
@রৌরব,
সাংঘাতিক অবজারভেশন একটা। এক কথায় অসাধারন।
আমার মনে হয় ভারতীয় উপমহাদেশের লোকেদের অন্য সম্প্রদায়ের
ওপর যে মনোভাব তা লালিত করা হয় রাষ্ট্রীয় ভাবেই।
ইউরোপে অন্য রেসের ওপর বৈষম্যের শাস্তি আছে!
সংবিধানেও এ ব্যাপারে আইন করা হয়েছে।
যাতে সবাই সমান অধিকার পায়।
দূর্বল সংখ্যালঘুষ্ঠদের সংবিধানই রক্ষা করে।
এটাই শান্তিপূর্ণ সহঅবস্থানকে সম্ভব করেছে!
@লাইজু নাহার,
ওরকম আইন তো কাগজে কলমে বাংলাদেশ ভারতেও আছে।
@লাইজু নাহার,
কথাটা ঠিক। আবার এটাও সত্যি যে লোকগুলোর মনোভাব সাম্প্রদায়িক বলে রাষ্ট্রও সংখ্যালঘুদের অধীকার সংরক্ষনে আইন প্রনয়ন করতে ভ্য় পায় পাছে আবার জনপ্রিয়তা হারাতে হয়।
@লাইজু নাহার,
ভারতীয় উপমহাদেশের ক্ষেত্রে আপনার পর্যবেক্ষণ সঠিক। কাগজ-পত্রে, সংবিধানে যাই থাকুক না কেন, আইন-কানুন প্রয়োগের ক্ষেত্রে সম্ভবত রাষ্ট্রীয়ভাবেই বৈষম্যতাকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ইন্ধন দেয়া হয়, যা সত্যিই দুঃখজনক।
‘আমেরিকার গল্পঃ রঙ দিয়ে যায় চেনা’ আর আকার আকৃতি দিয়েও যায় চেনা।
কিন্তু আমাদের দেশে চেনা যায় আচার আচরণ আর লেবাস দিয়ে।
সিটি অব স্কট্স্ডেলের বৈচিত্র্যের মধ্যে একত্মতা সৃষ্টির প্রয়াস ভাল লেগেছে। ভাল লেগেছে আপনার প্রকাশভঙ্গিটিও।
@গীতা দাস,
কম্প্লিমেন্ট্স্-এর জন্যে ধন্যবাদ। লেখাটা আপনার ভাল লেগেছে জেনে খুশী হলাম।
ভালো লাগলো। ব্যবহৃত ‘কাংখিত’ বানানটা কি ‘কাঙ্ক্ষিত’ হবে না?
@প্রদীপ দেব,
সম্ভবত আপনার কথাই ঠিক। আসল বানানটা সম্ভবত ‘কাঙ্ক্ষিত’ই হবে। ভুল ধরিয়ে দেবার জন্যে ধন্যবাদ।
খুব ভাল লাগল আপনার এ লেখাটি। কোন রকম জটিল বিশ্লেষন নেই, একদম সোজা সরল লেখা, পরিষ্কার বক্তব্য,এবং অতি অবশ্যই অকাট্য।
আমি যখন প্রথম এ দেশে আসি খালি মনে হত, আহা রে মানুষ কি করে এত উদারমনা হয়। আমাদের দেশ এইটুকু মাত্র,তাতেই দেখা যায় কে কুমিলার লোক, কার বাড়ি চট্টগ্রাম এসবের দলাদলি। আর এখানে আমি কোথাকার এক বাংলাদেশের লোক যেই দেশের নামও অনেকে শোনেনি,যারা শুনেছে তারাও কেবল খারাপই শুনেছে; সেই দেশের আমাকে এরা নিজেদের একজন হিসেবেই দেখে। আমার চামড়া,ধর্ম এসবের কোন বালাই নেই। আমার পরিচয়,আমি মানুষ। এতে কোন ভানও নেই।
এদের উন্নতি হবে নাতো কাদের হবে? মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখতে না পারলে কি বড় কিছু অর্জন সম্ভব?
@আদিল মাহমুদ,
ঠিক বলেছো আদিল। ছোটখাট জিনিষ নিয়েও আমরা বেশীর ভাগ সময় খুব দলাদলি করি। লেখাটা তোমার ভাল লেগেছে জেনে খুশী হলাম।
“সাম্যবাদ” শব্দটির দ্বারা একটি একটি অর্থনৈতিক সমাজ ব্যবস্থাকে বুঝায় । যেমন “পুজিবাদ” শব্দ দ্বারা ভিন্ন আর একটি অর্থনৈতিক সমাজ ব্যবস্থাকে বুঝায় । আমেরিকা সাম্যবাদী দেশ নয়, পুজিবাদী দেশ । পুজিবাদের সুষ্ঠু বিকাশের জন্য সকল নাগরিকের সম-অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন হয়, যার বর্ণনা আবিদ সাহেব দিয়েছেন । সামন্তবাদী সমাজ ব্যবস্থায় ধর্মীয় সংখ্যালঘুসহ বিভিন্ন প্রকার সংখ্যালঘু ও বর্ণের প্রশ্ন আসে, যার মূল কারণ হলো সংখ্যালঘুদের সম্পত্তি দখল করা ও বিনা মুল্যে অন্য বর্ণের শ্রম ব্যবহার করা । মহিউদ্দীন 🙂
@A. H. Mohiuddin,
:yes:
@A. H. Mohiuddin,
মূল শব্দটা সাম্যবাদ না হয়ে সম্ভবত সাম্যতা হবে। ভুলটা ধরিয়ে দেবার জন্যে ধন্যবাদ।
আপনার এই লেখাটা আমার প্রাণটা ভিজিয়ে দিয়ে গেল। আমার আর ভাষা নেই।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
লেখাটা আপনার ভাল লেগেছে জেনে খুশী হলাম। দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ও ডিসক্রিমিনেইশনের কিছু কিছু বাস্তব স্মৃতি আমার চোখে আজও ভাসে। কখনও সময়-সুযোগ হলে লিখবো। ধন্যবাদ।
স্বাগতম একটি লেখা নিয়ে ফিরে আসবার জন্য।
@রৌরব,
ধন্যবাদ। তবে আমি কিন্তু চলে যাইনি। ব্যস্ততার জন্যে অনেকদিন অবশ্য মাঝখানে লেখার সুযোগ হয়নি। নৃপেন্দ্র দার লেখাটা পড়ে অনুপ্রাণিত হয়ে পুরোনো এই লেখাটা দেয়া। অনেকটা কপি-পেইষ্ট। জানিনা নিয়মিত থাকতে পারবো কিনা। তবে চেষ্টা করবো। আবারও ধন্যবাদ।