আমি ‘জীবন মানে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা’ নামে একটি সিরিজ শুরু করেছিলাম। সিরিজটিতে মূলতঃ ভায়োলেন্সের একটি নৃতাত্ত্বিক, সামাজিক বিশ্লেষণ হাজির কারার চেষ্টা ছিলো আধুনিক বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের পটভুমিকায়। দুইটি পর্ব আগে দেয়া হয়েছে। সে হিসেবে এই পর্বটি হওয়া উচিৎ ছিলো জীবন মানে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা -৩। কিন্তু সুপ্রিয় এবং শ্রদ্ধেয় গীতাদি (গীতা দাস) দ্বিতীয় পর্বটিতে অভিযোগ করলেন শিরোনামটি বেশি গতানুগতিক না সাদামাঠা হয়ে গেছে। তাই ম্যাড়ম্যাড়ে শিরোনাম বদলে একটু আকর্ষনীয় করার চেষ্টা করা হল এবারে। লুল পুরুষ শব্দটি নতুন শেখা (কৃতজ্ঞতা – বিপ্লব রহমান, বাংলা ব্লগের অপ-শব্দসমূহ…)। সঙ্গত কারণেই শিরোনামে এটি ব্যবহারের লোভ সামলাতে পারলাম না। 🙂
:line:
আমি আগের পর্ব শেষ করেছিলাম এই বলে যে, সাহসিকতার মত গুণগুলোকে আমাদের আদিম পুর্বপুরুষেরা যৌনতার নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের অজান্তেই নির্বাচিত করেছিলো। এখনো সেই গুণগুলোর উৎকর্ষতার চর্চাকে ইনিয়ে বিনিয়ে মহিমান্বিত করার অফুরন্ত দৃষ্টান্ত দেখি সমাজে। জেমসবন্ড, মিশন ইম্পসিবল কিংবা আজকের ‘নাইট এণ্ড ডে’র মতো চলচিত্রগুলো ফুলিয়ে ফাপিয়ে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়, যার কেন্দ্রে থাকে প্রায় অমানবীয় ক্ষমতাসম্পন্ন হিরোইক ইমেজের একজন পুরুষালী চরিত্র, যে অসামান্য বুদ্ধি, ক্ষিপ্রতা আর সাহসের মাধ্যমে একে একে হাজারো বিপদ পার হয়ে চলেছে, আর অসংখ্য নারীর মন জয় করে চলেছে।
তবে, শুধু জেমসবন্ডের ছবি নয়, বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান নিয়ে গবেষণারত বিজ্ঞানীরা সমাজের বিভিন্ন প্যাটার্নের ব্যাখ্যা হিসেবে সম্প্রতি খুব চমৎকার কিছু বিশ্লেষণ হাজির করেছেন (সব কিছু নিয়ে পূর্ণাঙ্গ আলোচনা হয়তো সম্ভব নয়, আমি এই পর্বে এবং আগামী কিছু পর্বে মূলত আমার আলোচনা ভায়োলেন্স বা সহিংসতা বিষয়েই কেন্দ্রিভূত রাখার চেষ্টা করব)।
অধ্যাপক মার্টিন ড্যালি এবং মার্গো উইলসন ১৯৮৮ সালে একটি বই লেখেন হোমিসাইড নামে[1]। তাদের বইয়ে তারা দেখান যে, হত্যা, গণহত্যা, নারী ধর্ষণ, শিশু হত্যা, অভিভাবক হত্যা, পুরুষ কর্তৃক পুরুষ হত্যা, স্বামী কর্তৃক স্ত্রী হত্যা, স্ত্রী কর্তৃক স্বামী হত্যা -সব কিছুর উৎস আসলে লুকিয়ে রয়েছে বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের ব্যাখ্যায়। সেই দৃষ্টিকোন থেকে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যাক।
কেন সিণ্ডারেলার গল্প কম বেশি সব সংস্কৃতিতেই ছড়িয়ে আছে?
শিশুনির্যাতন বিষয়টাকে অভিভাবকদের ব্যক্তিগত আক্রোশ কিংবা বড়জোর সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক কারণ হিসেবে এ পর্যন্ত চিত্রিত করা হলেও, এর সার্বজনীন রূপটি আসলে অব্যক্ষাত ছিলো। কিন্তু অব্যক্ষাত থাকলেও অজানা ছিলো না। সবাই কম বেশি জানতো যে, প্রতিটি সংস্কৃতিতেই সিণ্ডারেলা কিংবা স্নো হোয়াইটের মত লোককথা কিংবা গল্পকাহিনী প্রচলিত, যেখানে সৎবাবা কিংবা সৎমা কর্তৃক শিশুর উপর নির্যাতন থাকে মূল উপজীব্য হিসেবে।
ছবি – পৃথিবীর প্রায় সব সংস্কৃতিতেই সিণ্ডারেলা বা স্নো হোয়াইটের মত লোককাহিনী বা রূপকথা প্রচলিত আছে, যেখানে বিবৃত থাকে সৎ মার অত্যাচারের বেদনাঘন কাহিনী ।
ছোটবেলায় রুশদেশীয় উপকথার খুব মজার মজার বই পড়তাম। আশি আর নব্বই দশকের সময়গুলোতে চিকন মলাটে বাংলায় রাশিয়ান গল্পের (অনুবাদ) অনেক বই পাওয়া যেত। আমি সবসময়ই তীর্থের কাকের মত বসে থাকতাম নতুন নতুন গল্পের বই পড়ার আশায়। প্রতি বছর জন্মদিনের সময়টাতে তৃষ্ণা যেন বেড়ে যেত হাজারগুণে। কারণ, জানতাম কেউ না কেউ রুশদেশীয় উপকথার বই নিয়ে আসবে উপহার হিসেবে। অবধারিত ভাবে তাই হত। এমনি একটি জন্মদিনে একটা বই পেয়েছিলাম ‘বাবা ইয়াগা’ (Baba Yaga) নামে। গল্পটা এরকম- এক লোকের স্ত্রী মারা গেলে লোকটি আবার বিয়ে করে। তার প্রথম পক্ষের স্ত্রীর ছিলো এক ফুটফুটে মেয়ে। কিন্তু সৎ মা এসেই মেয়েটির উপর নানা ধরণের অত্যাচার শুরু করে। মারধোর তো ছিলোই, কিভাবে চিরতরে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়া যায় সেটারও পায়তারা চলছিল। শুধু তাই নয়, মেয়েটিকে ছলচাতুরী করে সৎমা তার বোনের বাসায় পাঠানোর নানা ফন্দি ফিকির করে যাচ্ছিল। সৎমার বোন আসলে ছিলো এক নরখাদক ডাইনী। যা হোক, গল্পে শেষ পর্যন্ত দেখা যায় – কোন রকমে মেয়েটি নিজেকে ঘোর দুর্দৈব থেকে বাঁচাতে পেরেছিল, আর মেয়েটির বাবাও বুঝে গিয়েছিল তার নতুন স্ত্রীর প্রকৃত স্বরূপ। শেষমেষ গুলি করে তার স্ত্রীকে হত্যা করে মেয়েকে ডাইনীর খপ্পর থেকে রক্ষা করে তার বাবা।
আমি জার্মান ভাষাতেও এ ধরনের একটি গল্প পেয়েছি যার ইংরেজী অনুবাদ বাজারে পাওয়া যায় ‘জুপিটার ট্রি’ নামে। সেখানে ঘটনা আরো ভয়ানক। সৎমা তার স্বামীর অনুপস্থিতিতে সৎ ছেলেকে জবাই করে হত্যা করার পর দেহটা হাঁড়িতে জ্বাল দিয়ে রেধে খেয়ে ফেলে। আর হাড়গোড়গুলো পুতে ফেলে বাসার পাশে এক জুপিটার গাছের নীচে। তারপর সৎমা নির্বিঘ্নে ঘুমাতে যায় সব ঝামেলা চুকিয়ে। কিন্তু জুপিটার গাছের নীচে পুতে রাখা ছেলেটার হাড়গোড় থেকে গভীর রাতে জন্ম হয় এক মিষ্টি গলার গায়ক পাখির। সেই পাখি তার কন্ঠের যাদুতে সৎমাকে সম্মোহিত করে বাড়ির বাইরে নিয়ে আসে আর শেষ পর্যন্ত উপর থেকে পাথর ফেলে মেরে ফেলে। এখানেই শেষ নয়। পাখিটি তারপর অলৌকিকভাবে সেই আগেকার ছেলেতে রূপান্তরিত হয়ে যায় আর তার বাবার (genetic father) সাথে সুখে শান্তিতে জীবন কাটাতে থাকে।
রুশ দেশের কিংবা জার্মান দেশের উপকথা স্রেফ উদাহরণ হিসেবে নেয়া হয়েছে। আসলে এধরণের গল্প কিংবা উপকথা সব সংস্কৃতিতেই কমবেশি পাওয়া যায়। এমনকি আমাদের সংস্কৃতিতেও রূপকথাগুলোতে অসংখ্য সুয়োরানী, দুয়োরাণীর গল্প আছে, এমনকি বড় হয়েও দেখেছি বহু নাটক সিনেমার সাজানো প্লট যেখানে সৎমা জীবন অতীষ্ট করে তুলছে একটি ছোট্ট মেয়ের। নিশ্চয় মনের কোনে প্রশ্ন উঁকি মারতে শুরু করেছে – কেন সবদেশের উপকথাতেই এ ধরণের গল্প ছড়িয়ে আছে? আসলেই কি এ ধরনের গল্পগুলো বাস্তব সমাজের প্রতিনিধিত্ব করে, নাকি সেগুলো সবই উর্বর মস্তিস্কের কল্পণা? পশ্চিমে ঘটনাপ্রবাহের দিকে তাকানো যাক। আমেরিকার মতো জায়গায় বিবাহবিচ্ছেদের হার তুলনামূলকভাবে বেশি, স্টেপ বাবা কিংবা স্টেপ মা’র ব্যাপারটা একেবারেই গা সওয়া হয়ে গেছে, দত্তক নেয়ার ব্যাপারটাও এখানে খুব সাধারণ। কাজেই ধরে নেয়া যায় যে, এই সমস্ত অগ্রসর সমাজে সৎঅভিভাবক কর্তৃক শিশু নির্যাতনের মাত্রা কম হবে। সত্যিই তা কম, অন্ততঃ আমাদের মতো দেশগুলোর তুলনায় তো বটেই। কিন্তু ড্যালি এবং উইলসন তাদের গবেষনায় দেখালেন, এমনকি পশ্চিমেও সৎঅভিভাবক (step parents) কর্তৃক শিশু নির্যাতনের মাত্রার চেয়ে জৈবঅভিভাবক (biological parent)দের দ্বারা শিশু নির্যাতনের মাত্রা তুলনামূলকভাবে অনেক কম পাওয়া যাচ্ছে। অর্থাৎ, এমনকি অগ্রসর সমাজে সৎঅভিভাবকদের দ্বারা শিশু নির্যাতন কম হলেও জৈব অভিভাবকদের তুলনায় তা আসলে এখনো অনেক বেশিই। যেমন, পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, আমেরিকার আধুনিক সমাজেও জৈব অভিভাবকদের দ্বারা শিশু নির্যাতনের চেয়ে সৎ অভিভাবক কর্তৃক শিশু নির্যাতন অন্ততঃ ১০০ গুণ বেশি। ক্যানাডায় জরিপ চালিয়েও একই ধরণের ফলাফল পাওয়া গেছে। সেখানে স্বাভাবিক অভিভাবকের তুলনায় সৎঅভিভাবকদের নির্যাতনের মাত্রা ৭০ গুণ বেশি পাওয়া গেলো।
ছবি – মার্টিন ড্যালি এবং মার্গো উইলসন তাদের গবেষনায় দেখিয়েছেন যে, সৎঅভিভাবক কর্তৃক শিশু নির্যাতনের মাত্রার চেয়ে জৈবঅভিভাবকদের দ্বারা শিশু নির্যাতনের মাত্রা সবসময়ই তুলনামূলকভাবে কম পাওয়া যায়।
আসলে বিবর্তনীয় প্রেক্ষাপটে চিন্তা করলে তাই পাওয়ার কথা। জৈব অভিভাবকেরা তাদের জেনেটিক সন্তান খুব কমই নির্যাতন বা হত্যা করে, কারণ তারা সহজাত কারণেই নিজস্ব জিনপুল তথা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ধ্বংসের চেয়ে রক্ষায় সচেষ্ট হয় বেশি, কিন্তু সৎঅভিভাবকদের ক্ষেত্রে যেহেতু সেই ব্যাপারটি ‘জেনেটিকভাবে’ সেভাবে নেই,অনেকাংশেই সামাজিকভাবে আরোপিত, সেখানে নির্যাতনের মাত্রা অধিকতর বেশি পাওয়া যায়। ব্যাপারটা শুধু মানুষ নয়, অন্য প্রাণিজগতের ক্ষেত্রেও খুব প্রবলভাবে দৃশ্যমান। আফ্রিকার বণভূমিতে সিংহদের নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে দেখেন, সেখানে একটি পুরুষ সিংহ যখন অন্য সিংহকে লড়াইয়ে পরাজিত করে গোত্রের সিংহীর দখল নেয়, তখন প্রথমেই যে কাজটি করে তা হল সে সিংহীর আগের বাচ্চাগুলোকে মেরে ফেলে। আফ্রিকার সেরেঙ্গিটি প্লেইনে গবেষকদের হিসেব অনুযায়ী প্রায় শতকরা ২৫ ভাগ সিংহসাবক তার বৈপিত্রের খপ্পরে পড়ে মারা যায়[2]। একই ধরণের ব্যবহার দৃশ্যমান গরিলা, বাঘ, চিতাবাঘ প্রভৃতি প্রাণীর মধ্যেও। এখন মানুষও যেহেতু অন্য প্রানীদের মতো বিবর্তনের বন্ধুর পথেই উদ্ভুত হয়েছে, তাই তার মধ্যেও সেই ‘পশুবৃত্তি’র কিছুটা ছিটেফোঁটা থাকার কথা। অনেক গবেষকই মনে করেন, প্রচ্ছন্নভাবে হলেও তা পাওয়া যাচ্ছে। মার্টিন ড্যালি এবং মার্গো উইলসনের উপরের পরিসংখ্যানগুলো তারই প্রমাণ।ডেভিড বাস তার ‘দ্য মার্ডারার নেক্সট ডোর’ বইয়ে সেজন্যই বলেন[3] –
‘Put bluntly, a stepparent has little reproductive incentive to care for a stepchild. In fact, a stepparent has strong incentives to want the stepchild out of the way. A stepfather who kills a stepchild prevents that child’s mother from investing valuable resources in a rival’s offspring. He simultaneously frees up the mother’s resources for investigating in his own offspring with her.’
এই ব্যাখ্যা থেকে অনেকের মনে হতে পারে যে বৈপিত্রের হাতে শিশু হত্যাটাই বুঝি ‘প্রাকৃতিক’ কিংবা অনেকের এও মনে হতে পারে যে, সৎ অবিভাবকদের কুকর্মের বৈধতা অবচেতন মনেই আরোপের চেষ্টা হচ্ছে বুঝি। আসলে তা নয়।সিংহর ক্ষেত্রে যেটা বাস্তবতা, মানব সমাজের ক্ষেত্রেও সেটা হবে তা ঢালাওভাবে বলে দেওয়াটা কিন্তু বোকামি। আর মানব সমাজ এমনিতেই অনেক জটিল।জৈব তাড়নার বিপরীতে কাজ করতে পারার বহু দৃষ্টান্তই মানব সমাজে বিদ্যমান; যেমন পরিবার পরিকল্পণার মাধ্যমে সন্তান না নেয়া, অনেকের সমকামী প্রবণতা প্রদর্শন, দেশের জন্য আত্মত্যাগ, কিংবা আত্মহত্যার দৃষ্টান্ত, সন্তানদের পাশাপাশি মা বাবার প্রতি ভালবাসা, পরকীয়ার কারণে নিজ সন্তানকে হত্যা, সন্তান থাকার পরেও আরো সন্তান দত্তক দেয়া, আবার পরের ছেলে কেষ্টর মায়ায় কাদম্বিনীর গৃহত্যাগ (শরৎচন্দ্রের মেজদিদি গল্প দ্রঃ) সহ বহু দৃষ্টান্তই সমাজে আমরা দেখি যেগুলোকে কেবল জীববিজ্ঞানের ছাঁচে ফেলে বিচার করতে পারি না। মনে রাখতে হবে, আধুনিক বিশ্ব আর সিণ্ডারেলা আর সুয়োরাণীর যুগে পড়ে নেই; নারীরা আজ বাইরে কাজ করছে, ভিক্টোরিয় সমাজের তুলনায় তাদের ক্ষমতায়ন এবং চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় সামাজিক সম্পর্কগুলো দ্রুত বদলে যাচ্ছে।পাশ্চাত্য বিশ্বে বিবাহবিচ্ছেদ যেমন বেড়েছে, তেমনি পাল্লা দিয়ে দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে উঠছে ‘স্টেপ ড্যাড’ আর ‘স্টেপ মম’এর মত ধারণাগুলো। এমনকি সমকামী দম্পতিদের দত্তক নেয়ার দৃষ্টান্তও বিরল নয়। বহু পরিবারেই দেখা যায় জৈব অভিভাবক না হওয়া সত্ত্বেও সন্তানের সাথে অভিভাবকদের সুসপম্পর্ক গড়ে উঠাতে কোন বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। আর বৈপিত্রের দ্বারা সন্তান হত্যার পেছনে আদি জৈবিক প্রভাব যদি কিছু মানব সমাজে থেকেও থাকে, সেটার বিপরীত প্রভাবগুলোও ‘প্রাকৃতিক’ভাবে অঙ্কুরিত হতে হবে জিনপুলের টিকে থাকার প্রয়োজনেই। সেজন্যই দেখা যায় বিবাহবিচ্ছিন্ন একাকী মা (single mother) যখন আরেকটি নতুন সম্পর্কে জড়ান, তখন তার প্রাধান্যই থাকে তার সন্তানের প্রতি তার প্রেমিকের মনোভাবটি কিরকম সেটি বুঝার চেষ্টা করা। কোন ধরণের বিরূপতা লক্ষ্য করলে কিংবা অস্বস্তি অনুভব করলে সম্পর্কের চেয়ে সন্তানের মঙ্গলটাই মূখ্য হয়ে উঠে অধিকাংশ ক্ষেত্রে। আবার অনেক ক্ষেত্রে তার নতুন পুরুষটি প্রাথমিকভাবে ততটা বাঞ্ছিত না হলেও যদি কোন কারণে সন্তানের প্রিয়পাত্র হয়ে উঠে, তবে সম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্রে মার কাছে অগ্রগামীতা পেতে বাড়তি দূরত্ব অতিক্রম করে ফেলেন তিনি। আবার সম্পর্ক তৈরির পরে কখনো সখনো ঝগড়াঝাটি হলে স্থায়ীভাবে অযাচিত টেনশনের দিকে যেন ব্যাপারটা চলে না যায়, সেটিও থাকে সম্পর্কের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। এগুলো সবকিছুই তৈরি হয় টিকে থাকার জন্য বিবর্তনীয় টানাপোড়নের নিরিখে।
কেন দাগী অপরাধীদের প্রায় সকেলেই পুরুষ?
মার্টিন ড্যালি এবং মার্গো উইলসন তাদের বইয়ে দেখিয়েছেন যে, ইতিহাসের একটা বড় সময় জুড়ে মানবসমাজ আসলে একগামী ছিলো না, বরং সেসময় পুরুষেরা ছিলো বহুগামী। মানব সমাজ ছিলো পলিজাইনাস (polygynous) যেখানে শক্তিশালী কিংবা ক্ষমতাশালী পুরুষেরা একাধিক নারীকে বিয়ে করতে পারতো, কিংবা তাদের দখল নিতে পারতো[4]।পলিজাইনাস সমাজে কিছু সৌভাগ্যবান পুরুষ তাদের অতুলনীয় শক্তি আর ক্ষমতার ব্যবহারে অধিকাংশ নারীর দখল নিয়ে নিতো, আর অধিকাংশ শক্তিহীন কিংবা ক্ষমতাহীন পুরুষদের কপালে থাকতো অশ্বডিম্ব! যতো খারাপই লাগুক, এটাই ছিলো রূঢ় বাস্তবতা। নারীর দখল নেয়ার জন্য পুরুষে পুরুষে একসময় প্রতিযোগিতা করতে হতো; আর এই প্রতিযোগিতা বহুক্ষেত্রেই ‘শান্তিময়’ ছিলো না, বরং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই প্রতিযোগিতা রূপ নিতো রক্তাক্ত সংঘাতে, আর তার পরিনতি হত হত্যা আর অপঘাতে। পুরুষেরা সম্পদ আহরণ করতো কিংবা লড়াই আর যুদ্ধের মাধ্যমে শক্তিমত্তা প্রদর্শন করতো মূলতঃ নারীদের আকর্ষণের জন্য। যারা সম্পদ আহরণে আর শক্তি প্রদর্শনে ছিলো অগ্রগামী তারা দখল নিতে পারতো একাধিক নারীর। সম্পদ আর নারী নিয়ে এই প্রতিযোগিতার কারণেই সমাজের পুরুষদের মধ্যে বিভিন্ন ধরণের সহিংসতার চর্চার (সঙ্ঘাত, খুন, ধর্ষণ, অস্ত্রবাজি, গণহত্যা প্রভৃতি)প্রকাশ ঘটেছিলো। বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন, পুরুষালি সহিংসতার বড় একটা উৎস আসলে নিহিত সেই চিরন্তন ‘ব্যাটেল অব সেক্স’-এর মধ্যেই। এমনকি আধুনিক কালে ঘটা বিভিন্ন অপরাধ এবং ভায়োলেন্সগুলোকেও বহু সময়েই এর মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা যায়।
আধুনিক বিশ্বেও পুরুষেরা সম্পদ আহরণের জন্য, ক্যারিয়ারের জন্য, অর্থ উপার্যনের জন্য মেয়েদের তুলনায় অধিকতর বেশি শক্তি এবং সময় ব্যয় করে। কারণ এর মাধ্যমে তারা নিশ্চিত করে অধিকসংখ্যক নারীর দৃষ্টি, এবং সময় সময় তাদের অর্জন এবং প্রাপ্তি। অর্থাৎ, একটা সময় পুরুষেরা নারীর দখল নিতে নিজেদের মধ্যে শারীরিক প্রতিযোগিতা আর দ্বন্দ্বযুদ্ধে নিজেদের নিয়োজিত রাখতো, এখন সেটা পরিণত হয়েছে অর্থ, বৈভব, ক্যারিয়ার তৈরির লড়াইয়ে। বিত্তশালী ছেলেরা বিএমডাব্লু কিংবা রোলসরয়েসে চড়ে বেড়ায় নিজেদের বৈভবের মাত্রা প্রকাশ করতে, কিংবা হাতে ফ্যাশানেবল মোভাডো ঘড়ি কিংবা ব্র্যাণ্ডনেমের কেতাদুরস্ত কাপড় পরিধান করে, যার মাধ্যমে নিজেকে ‘শো অফ’ করে অন্য পরুষদের চেয়ে ‘যোগ্য’ হিসেবে প্রতিপন্ন করতে চায়। শুধু কেতাদুরস্ত কাপড় কিংবা ঘড়ি নয়, কথাবার্তা, চালচলন, স্মার্টনেস, শিক্ষাগত যোগ্যতা, রাজনৈতিক বা সামাজিক ক্ষমতা বা প্রতিপত্তি সবকিছুকেই পুরুষেরা ব্যবহার করে নারীকে আকর্ষণের কাজে। সেজন্যই বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন, অর্থ-প্রতিপত্তি আর ক্ষমতায় বলীয়ান পুরুষেরাই বেশি পরকীয়ায় বেশি আসক্ত হন বেশি (এ নিয়ে পরবর্তী অনুচ্ছেদে আলোচনা করা হয়েছে)। যৌনতার এই ধরণের পার্থক্যের কারণেই পুরুষেরা সামগ্রিকভাবে অধিকতর বেশি ঝুঁকি নেয়, ঝুঁকিপূর্ণ কাজকর্ম, পেশা কিংবা খেলাধুলায় (কার রেসিং, বাঞ্চি জাম্পিং কিংবা কিকবক্সিং) জড়িত হয় বেশি, একই ধারায় অপরাধপ্রবণতার জগতেও তারা প্রবেশ করে অধিক হারে। এর সত্যতা মিলে সহিংসতা নিয়ে গবেষকদের বাস্তব কিছু পরিসংখ্যানেও। সাড়া বিশ্বে যত খুন খারাবি হয় তার শতকরা ৮৭ ভাগই হয় পুরুষের দ্বারা[5]। আমেরিকার মধ্যে চালানো জরিপে পাওয়া গেছে যে শতকরা ৬৫ ভাগ ক্ষেত্রে পুরুষ দ্বারা পুরুষ হত্যার ঘটনা ঘটে। শতকরা ২২ ভাগ ক্ষেত্রে পুরুষের হাতে নারী হত্যার ঘটনা ঘটে। খুন খারাবির ১০ ভাগ ক্ষেত্রে নারী হত্যা করে পুরুষকে, আর মাত্র ৩ ভাগ ক্ষেত্রে নারী হত্যা করে নারীকে[6]। সারা বিশ্বে পুরুষদের হাতে পুরুষদের হত্যার হার আরো বহুগুণে বেশি পাওয়া গেছে ভিন্ন কিছু পরিসংখ্যানে। যেমন, ব্রাজিলে শতকরা ৯৭ ভাগ ক্ষেত্রে, স্কটল্যাণ্ডে ৯৩ ভাগ ক্ষেত্রে, কেনিয়ায় ৯৪ ভাগ ক্ষেত্রে, উগাণ্ডায় ৯৮ ভাগ ক্ষেত্রে এবং নাইজেরিয়ায় ৯৭ ভাগ ক্ষেত্রে পুরুষ কর্তৃক পুরুষের হত্যার ঘটনা ঘটে থাকে[7]। এর মাধ্যমে পুরুষ –পুরুষ প্রতিযোগিতা, দ্বন্দ্ব, সংঘাত এবং জিঘাংসার বিবর্তনীয় অনুকল্পই সঠিক বলে প্রমাণিত হয়।
গড়পরতা নারীরা পুরুষদের চেয়ে কম ঝুঁকি নেয়। বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানী এনি ক্যাম্পবেল (Anne Campbell) মনে করেন, অনর্থক ঝুঁকি নেবার ব্যাপারগুলো মেয়েদের জন্য কোন রিপ্রোডাক্টিভ ফিটনেস প্রদান করে না[8]। আদিম কাল থেকেই ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত হয়ে নিজের জীবন বিপন্ন করার চেয়ে মেয়েরা বরং সন্তানদের দেখভাল করায় অর্থাৎ জিনপুল রক্ষায় নিয়োজিত থেকেছে বেশি। অনেক গবেষকই মনে করেন, মেয়েরা যে কারণে পুরুষদের মত ঘন ঘন সঙ্গি বদল করে না, ঠিক সেকারণেই তারা ঝুঁকিপূর্ণ কাজেও জড়িত হয় কম, কারণ, বিবর্তনগত দিক থেকে সেগুলো কোন প্রজননগত উপযোগিতা (reproductive benefit) প্রদান করে না। এ কারনেই মেয়েদের মানসজগৎ কম প্রতিযোগিতামূলক এবং সর্বোপরি কম সহিংস হিসেবে গড়ে উঠেছে। যে কোন সংস্কৃতি খুঁজলেই দেখা যাবে, নৃশংস খুনি বা সিরিয়াল কিলার পুরুষদের তুলনায় নারীদের মধ্যে একেবারেই কম, ঠিক যে কারণে পর্নোগ্রাফির প্রতি আসক্তি মেয়েদের মধ্যে কম থাকে পুরুষের তুলনায়।
কেন ক্ষমতাশালী (লুল)পুরুষেরা বেশি পরকীয়ায় আসক্ত হয়?
বিল ক্লিন্টন ২৪ বছর বয়স্ক মনিকা লিউনেস্কির সাথে নিজের অফিসে দৈহিক সম্পর্ক তৈরি করেছিলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেবার পর। ১৯৯৮ সালের ২১ শে জানুয়ারী তা মিডিয়ার প্রথম খবর হিসবে সাড়া বিশ্বে প্রচারিত হয়ে যায়।
ছবি-মনিকা লিউনস্কি এবং বিল ক্লিন্টন
অনেকেই অবাক হলেও অবাক হননি ডারউইনীয় ইতিহাসবিদ লরা বেটজিং (Laura Betzig)। তিনি প্রায় বিশ বছর ধরে ডারউইনীয় দৃষ্টিকোন থেকে রাজনীতিবিদদের কিংবা প্রভাবশালী চালচিত্র নিয়ে গবেষণা করে যাচ্ছিলেন[9],[10]। খবরটা শোনার পর তার প্রথম প্রতিক্রিয়াই ছিল, “কি, বলেছিলাম না?”[11]। তার এহেন প্রতিক্রিয়ার কারণ আছে। তিনি বহুদিন ধরেই বলার চেষ্টা করছিলেন যে, ইতিহাসে প্রভাবশালী এবং প্রতিপত্তিশালী পুরুষেরা তাদের ‘বৈধ’ স্ত্রীর পাশাপাশি সব সময়ই চেষ্টা করেছে অধিক সংখ্যক নারীর দখল নিতে এবং তাদের গর্ভে সন্তানের জন্ম দিতে। ইতিহাসে রাজা বাদশাহদের রঙ বেরঙের জীবন-কাহিনী পড়লেই দেখা যাবে, কেউ রক্ষিতা রেখেছে, কেউ দাসীর সাথে সম্পর্ক করেছিলেন, কেউ বা হারেম ভর্তি করে রেখেছিলেন অগনিত সুন্দরী নারীতে। সলোমনের নাকি ছিলো তিন শো পত্নী, আর সাত হাজার উপপত্নী। মহামতি আকবরের হারেমে নাকি ছিল ৫০০০ এর উপর নারী। ফিরোজ শাহ নাকি তার হারেমে প্রতিদিন তিনশ নারীকে উপভোগ করতেন। মরোক্কান সুলতান মৌলে ইসমাইলের হারেমে দুই হাজারের উপরে নারী ছিল, এবং ইসমাইল সাহেব বৈধ অবৈধ সব মিলিয়ে এক হাজারের উপর সন্তান সন্ততি তিনি পৃথিবীতে রেখে গেছেন[12]। রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার, দ্বিগবিজয়ী আলেকজান্ডার কিংবা চেঙ্গিসখানের নারী-লালসার কথাও সর্বজনবিদিত। তাদের সন্তান সন্তদিদের সংখ্যাও অসংখ্য। এর মাধ্যমে একটি নির্জলা সত্য বেড়িয়ে আসে, ইতিহাসের ক্ষমতাশালী পুরুষেরা তাদের প্রজননগত সফলতার (reproductive success) মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেছিল বহুনারীর দখলদারিত্বকে। আজকে আমরা যতই ‘মনোগামিতা’র বিজয়কেতন উড়াই না কেন, পুরুষের ক্ষমতা বৃদ্ধির সাথে বহুগামিতার প্রকাশ ঘটে বহু ক্ষেত্রেই খুব অনিবার্যভাবে। কিংবা আরো পরিস্কার করে বললে বলা যায়, মানসিকভাবে বহুগামী পুরুষেরা নারীদের আকর্ষণ এবং ভোগ করার আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়িত করতে পারে যদি তাদের হাতে পর্যাপ্ত যশ, প্রতিপত্তি আর ক্ষমতা থাকে।
আমাদের দেশেও আমরা দেখেছি প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ, আজিজ মোহাম্মদ ভাই, জয়নাল হাজারির মত ‘লুলপুরুষেরা’ কীভাবে ক্ষমতা আর প্রতিপত্তিকে নারীলোলুপতার উপঢৌকন হিসেবে ব্যবহার করেছেন। শুধু রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার শীর্ষে থাকা পুরুষেরা নয় অর্থ বিত্ত বৈভবে শক্তিশালী হয়ে উঠলে সাধারণ পুরুষেরাও কীভাবে আকর্ষনীয় নারীর দখলে উন্মুখ হয়ে উঠতে পারে জনপ্রিয় কথাশিল্পী হুমায়ুন আহামেদের জীবনালোচনা করলে এর সত্যতা মিলে। হুমায়ুন আহমেদ যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ‘সাধারণ’ শিক্ষক ছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়া ফ্ল্যাটে থাকতেন, এত পয়সাকড়ি ছিলো না, তখন গুলতেকিনকে নিয়ে সংসারী ছিলেন তিনি। কিন্তু অর্থ বিত্ত বাড়ার সাথে সাথে তার চাহিদাও বদলে গিয়েছিলো। তার কন্যার বয়সী শাওনের প্রতি তিনি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন।পরবর্তীতে তার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে তার প্রেমিকা শাওনকে ঘরে তুলেন তিনি।
হুমায়ুন আহমেদ যে কাজটি বাংলাদেশে করেছেন সে ধরণের কাজ পশ্চিমা বিশ্বে পুরুষেরা বহুদিন ধরেই করে আসছেন। পাশ্চাত্যবিশ্বকে ‘মনোগোমাস’ বা একগামী হিসেবে চিত্রিত করা হলেও, খেয়াল করলে দেখা যাবে সেখানকার পুরুষেরা উদার বিবাহবিচ্ছেদ আইনের (Liberal divorce laws) মাধ্যমে একটার পর একটা স্ত্রী বদল করেন। ব্যাপারটাকে অনেকেই ‘সিরিয়াল পলিগামি’[13] (তারা আইনকানুনের বাধ্যবাধকতার কারণে একই সাথে একাধিক স্ত্রী রাখতে পারেন না, কিন্তু বিবাহবিচ্ছেদের মাধ্যমে একের পর এক সঙ্গি বদল করেন) হিসেবে অভিহিত করেছেন। সিএনএন এর প্রাইম টাইম নিউজ হোস্ট ল্যারি কিং ইতোমধ্যেই আটটি বিয়ে (সিরিয়ালি) করেছেন। আমাদের বিবর্তনের পথিকৃত সুদর্শন রিচার্ড ডকিন্সও তিনখানা বিয়ে সেরে ফেলেছেন সিরিয়ালি। অবশ্য মেয়েদের মধ্যেও এ ধরনের উদাহরণ দেয়া যাবে। যেমন – হলিউডের একসময়কার জনপ্রিয় অভিনেত্রী এলিজাবেথ টেলর (যিনি আটবার সঙ্গিবদল করেছেন), কিন্তু তারপরেও পরিসংখ্যানে পাওয়া যায় যে, পশ্চিমা বিশ্বে প্রভাবশালী পুরুষেরাই সাধারণতঃ খুব কম সময়ের মধ্যে উদার বিবাহবিচ্ছেদ আইনের সুযোগ একাধিক স্ত্রী গ্রহণ করেন, নারীদের মধ্যে এই প্রবণতা তুলনামূলকভাবে কম। অর্থাৎ, ‘সিরিয়াল পলিগামি’র চর্চা পুরুষদের মধ্যেই বেশি, এবং ক্ষমতা আর প্রতিপত্তি অর্জনের সাথে সাথে সেটা পাল্লা দিয়ে বাড়ে।
বিভিন্ন ধর্মের প্রচারকদের জীবনী বিশ্লেষণ করলেও এর সত্যতা মিলবে। পদ্মপুরাণ অনুসারে (৫/৩১/১৪) শ্রীকৃষ্ণের স্ত্রীর সংখ্যা ষোল হাজার একশ। এদের সকলেই যে গোপবালা ছিলেন তা নয়, নানা দেশ থেকে সুন্দরীদের সংগ্রহ করে তার ‘হারেমে’ পুরেছিলেন কৃষ্ণ স্বীয় ক্ষমতার আস্ফালনে। হিন্দু ধর্মের ক্ষমতাবান দেবচরিত্রগুলো – ইন্দ্র থেকে কৃষ্ণ পর্যন্ত প্রত্যেকেই ছিলেন ব্যভিচারী,ক্ষমতাবান ব্রাহ্মণ মুণিঋষিরা ছিল কামাসক্ত, বহুপত্নিক এবং অজাচারী, এগুলো তৎকালীন সাহিত্যে চোখ রাখলেই দেখা যায়। এই সব মুণিঋষিরা ক্ষমতা, প্রতিপত্তি আর জাত্যাভিমানকে ব্যবহার করতেন একাধিক নারীদখলের কারিশমায়। ইসলামের প্রচারক মুহম্মদ যখন প্রথম জীবনে দরিদ্র ছিলেন, প্রভাব প্রতিপত্তি তেমন ছিলো না, তিনি খাদিজার সাথে সংসার করেছিলেন। খাদিজা ছিলেন বয়সে মুহম্মদের ১৫ বছরের বড়। কিন্তু পরবর্তী জীবনে মুহম্মদ অর্থ, বৈভব এবং সমরাঙ্গনে অবিশ্বাস্য সফলতা অর্জন করার পর অপেক্ষাকৃত কম বয়সী সুন্দরী নারীদের প্রতি আকৃষ্ট হন। খাদিজা মারা যাওয়ার সময় মহানবীর বয়স ছিল ৪৯। সেই ৪৯ থেকে ৬৩ বছর বয়সে মারা যাবার আগ পর্যন্ত তিনি কমপক্ষে হলেও ১১ টি বিয়ে করেন[14]। এর মধ্যে আয়েশাকে বিয়ে করেন আয়েশার মাত্র ৬ বছর বয়সের সময়। এ ছাড়া তার দত্তক পুত্র যায়েদের স্ত্রী জয়নবের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে তাকে বিয়ে করেন (সে সময় আরবে দত্তক পুত্রের স্ত্রীকে বিয়ে করার রীতি প্রচলিত ছিল না, কিন্তু মুহম্মদ আল্লাহকে দিয়ে কোরেনের ৩৩:৪, ৩৩:৩৭, ৩৩:৪০ প্রভৃতি আয়াত নাজিল করিয়ে নেন); এ ছাড়া ক্রীত দাসী মারিয়ার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন (সে সময় মুহম্মদ হাফসাকে মিথ্যে কথা বলে ওমরের বাড়ি পাঠিয়েছিলেন বলে কথিত আছে[15]) যা হাফসা এবং আয়েশাকে রাগান্বিত করে তুলেছিলো; যুদ্ধবন্দি হিসেবে জুয়ারিয়া এবং সাফিয়ার সাথে সম্পর্ক পরবর্তীতে নানা রকম বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিভিন্ন বৈধ অবৈধ পথে নারীর দখল নিতে মুহম্মদ আগ্রাসী হয়েছিলেন তখনই যখন তার অর্থ প্রতিপত্তি আর ক্ষমতা বেড়ে গিয়েছিল বহুগুণে।
চলবে
——————————————————————————–
তথ্যসূত্রঃ
[1] Margo Wilson and Martin Daly, Homicide, Aldine Transaction, 1988
[2] Martin Daly and Margo Wilson, The Truth about Cinderella: A Darwinian View of Parental Love, Yale University Press.
[3] David M. Buss, The Murderer Next Door, Why the Mind is Designed to Kill, Penguin Books, 2005, p 177.
[4] Margo Wilson and Martin Daly, পূর্বোক্ত, pp 137-161
[5] David M. Buss, The Murderer Next Door, Why the Mind is Designed to Kill, Penguin Books, 2005
[6] David M. Buss, The Murderer Next Door, পূর্বোক্ত, পৃঃ ২২।
[7] Margo Wilson and Martin Daly, পূর্বোক্ত।
[8] Anne Campbell, Staying Alive: Evolution, Culture, and Women’s Intrasexual Aggression, Behaviour and Brain Sciences, v.22 , pp203-52
[9] Laura Betzig, Despotism and differential reproduction: A cross cultural correlation of conflict asymmetry, hierarchy, and degree of polygyny. Ethology and Sociobiology, 3: 209-221, 1982.
[10] Laura Betzig, Despotism and differential reproduction: A Darwinian View of History, Newyork, Aldine Transaction, 1986.
[11] Alan S. Miller and Satoshi Kanazawa, Why Beautiful People Have More Daughters: From Dating, Shopping, and Praying to Going to War and Becoming a Billionaire– Two Evolutionary Psychologists Explain Why We Do What We Do, Perigee Trade; Reprint edition, 2008
[12] Laura Betzig, Despotism and differential reproduction: A Darwinian View of History, পূর্বোক্ত।
[13] Quoted from Alan S. Miller and Satoshi Kanazawa, Why Beautiful People Have More Daughters:
“Contemporary westerners who live in nominally monogamous societies that nonetheless permit divorce are therefore in effect polygynous; they practice serial polygamy।”
[14] ইরানি স্কলার আলি দস্তি তাঁর ‘Twenty Three Years: A Study of the Prophetic Career of Mohammad’ গ্রন্থে প্রফেটের জীবনে ২২ জন রমণীর উল্লেখ করেছেন, এদের মধ্যে ১৬ জনকে তিনি বিবাহের মাধ্যমে অধিগ্রহণ করেন, এ ছাড়া তিনি সম্পর্ক করেছিলেন ২ জন দাসী এবং অন্য ৪ জনের সাথে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক ছিল।
[15] William Muir, ‘Life of Mahomet’ Vol.IV Ch.26 pp. 160-163
বিবর্তনীয় প্রেক্ষাপটে সিন্ডারেলা প্রভাবের বিশ্লেষণ এবং নর-নারীর যৌনতার মনস্তাত্ত্বিক বিবর্তন নিয়ে অনেক ডিটেইল লিখেছেন।
চিন্তার খোরাক জাগানোর মত লেখা।
(Y)
Mohammed Marmaduke Pickthall অনুদিত কোরাণে একটুখানি বিস্তৃত তথ্য পাওয়া যায়। অনুমিত হয় তাতক্ষনিক ভাবে একটি শূন্য ঘরের প্রয়োজনে হাফসাকে বাইরে কোথাও পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু ব্যাপারটি এই অনুবাদে নেই। উপরন্তু, অনুবাদটি মূল ঘটনায় বেশী জোড় দিয়েছে।
Mr. Pickthall প্রতিটি সূরার আগে সূরার প্রেক্ষিত যোগ করেছেন। ক্রীতদাসী মারিয়ার ঘটনাটি সূরা LXVI (Al-Tahrim – Banning) শুরুর আগে এভাবে লিপিবদ্ধ আছেঃ
Presented girl মানে একটি উপহার (a gift). তাঁকে ক্রীতদাসী (Purchased maid) কেন বলা হচ্ছে? মিলাতে পারছি না। Present এবং Purchased এক কথা হওয়ার কথা নয়। Status এর অনেক তফাত।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
আমি এই স্পর্শকাতর বিষয়টি নিয়ে তর্ক করতে চাচ্ছি না। ক্রীতদাসী বলা হয়ছে slave-girl অর্থে, প্রেসেন্টেড মেইড বললেও খব বেশি অর্থের পরিবর্তন হবে না।
কিছু স্কলারের ইন্টারপ্রিটেশন নীচে দিলাম –
১) The woman who came into his possession from among the slave-girls granted by Allah. According to this the Holy Prophet selected for himself Hadrat Raihanah from among the prisoners of war taken at the raid against the Banu Quraizah. Hadrat Juwairiyyah from among the prisoners of war taken at the raid against the Bani al-Mustaliq, Hadrat Safiyyah out of the prisoners captured at Khaiber, and Hadrat Mariah the Copt who was presented by Maqauqis of Egypt. Out of these he set three of them free and married them, but had conjugal relations with Mariah on the ground of her being his slave-girl. In her case THERE IS NO PROOF that the Holy Prophet set her free and married her. (Maududi, The Meaning of the Qur’an, English rendered by the Late Ch. Muhammad Akbar, edited by A.A. Kamal, M.A. [Islamic Publications (Pvt.) Ltd., Lahore Pakistan, 4th edition, August 2003], Volume IV, fn. 88, p. 124)
২) The Prophet (peace and blessings of Allaah be upon him) had four concubines, ONE OF WHOM WAS MARIYAH.
৩) Praise be to Allaah.
The Prophet (peace and blessings of Allaah be upon him) DID NOT MARRY MARIYAH AL-QIBTIYYAH, RATHER SHE WAS A CONCUBINE who was given to him by al-Muqawqis, the ruler of Egypt. That took place after the treaty of al-Hudaybiyah. Mariyah al-Qibtiyyah was a Christian, then she became Muslim (may Allaah be pleased with her).
Ibn Sa’d said:
The Messenger of Allaah (peace and blessings of Allaah be upon him) lodged her – meaning Mariyah al-Qibtiyyah and her sister – with Umm Sulaym bint Milhaan, and the Messenger of Allaah (S) entered upon them and told them about Islam. He took Mariyah AS A CONCUBINE and moved her to some property of his in al-‘Awaali… and she became a good Muslim.
Al-Tabaqaat al-Kubra, 1/134-135
Ibn ‘Abd al-Barr said:
Mariyah died during the caliphate of ‘Umar ibn al-Khattaab, in Muharram of 16 AH. ‘Umar gathered the people himself to attend her funeral, and he led the funeral prayer for her. She was buried in al-Baqee’.
Al-Isti’aab, 4/ 1912
Mariyah (may Allaah be pleased with her) WAS ONE OF THE PROPHET’S CONCUBINES, NOT ONE OF HIS WIVES. The Mothers of the Believers are the wives of the Prophet (peace and blessings of Allaah be upon him). Allaah says (interpretation of the meaning):
ইত্যাদি। অনেক স্কলার আবার মারিয়াকে হাফসার অধীনস্ত দাসী বলে মত দিয়েছেন। আলী সিনা Mariyah the Sex Slave of the holy Prophet প্রবন্ধে মারিয়াকে হাফসার স্লেভগার্ল উল্লেখ করে লিখেছেন –
একই তথ্য পাওয়া যায় Sir William Muir এর ‘Life of Mahomet’ গ্রন্থে (pp. 160-163)
Volume iv. Ch.26: Narrated by Muhammad ibn Sad-al Tabkat al-Kobra��One day Prophet (PBUH) asked Hafsa to visit her father Hazrat Umar who had requested a visit of his daughter Hafsa. Hafsa went to pay a visit to her father, Umar, but Umar was not at home. When he (Umar) returns, he asked Hafsa why she had come. Hafsa said it was him (Umar) who asked her to come! Then Umar replied that he never asked for her visit.
At that time, Muhammad was staying at her quarter. Hafsa returned unexpectedly and found Muhmmad sleeping with Mary in her own private room. She was furious and threatened to disclose the secret. Afraid of scandal and to appease her, Muhammad begged her to keep the matter quiet and promised to desert Mary altogether. Hafsa, however, did not bother to keep the promise. She told this secret to Aisha who was equally indignant over the affair. The scandal soon spread over the entire harem. Muhammad developed displeasure for his wives. At this time he received a message from heaven not to separate himself from Mary. Then he chided Hafsa and other wives. He threatened to divorce all them for their insubordination and disloyalty. He then withdrew himself and went into seclusion for a whole month and lived alone with Mary. Umar and Abu Bakr were greatly disturbed at the desertion of their daughters for a menial concubine. They went to Muhammad and pleaded him to come out of his recluse. Gabriel came and told Muhammad about the good qualities of Hafsa and recommended him to take her back. So, Muhammad pardoned them all and returned to their apartments as before.
এ ছাড়া সহি বুখারির একটি হাদিসেও একই ঘটনার ইঙ্গিত আছে। তবে ঘটনা সত্য ছিলো নাকি মিথ্যা ছিলো এ নিয়ে আমি এখানে তর্ক করতে চাইছি না। আমার মূল প্রবন্ধের সাথে এর সম্পর্ক একেবারেই কম।
@অভিজিৎ, ধন্যবাদ। আমিও এটা নিয়ে আলোচনা করতে চাই না। তবে হাতে কোরাণ থাকতে হাদিস টানতে চাইনা। অনেক কিছুরই সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না। আর এগুলোর সঠিক তথ্য পেলেই বা কি না পেলেই বা কি?
বইয়ের নাম নির্বাচনে লেখকের সম্পুর্ণ এবং একক স্বাধীনতা লেখার মৌলিকত্বের স্বার্থে একান্ত প্রয়োজন । বইয়ের বিষয়বস্তুর ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য । চিন্তা করে দেখুন যে , গ্যালিলিও যদি সেই সময়কার মার্কেটিং পন্ডিতদের কথা আমলে নিতেন , তাহলে কি হতো ?
ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারে কমেন্ট করতে মাঝে মাঝে সমস্যা হচ্ছে। এই ব্রাউজারটা এখনো মানুষ হয়নি। যাই হোক কমেন্ট করার পর নিজের কমেন্ট না দেখতে পেলে আবার করা দরকার নেই,কমেন্ট পাবলিশ হয়ে যাবে। নতুন সিস্টেমে এ সমস্যা হলেও কমেন্ট করার সময় পেজ রিলোড হয়না,সহজে কমেন্ট করা যায়,তাই এটা বদলাতে চাচ্ছিনা। অন্য কোনো ভালো ব্রাউজারে সমস্যা হলে আমাকে জানাতে অনুরোধ করছি।
বরাবরের মতই অভিদা অসাধারণ লিখেছেন। কিন্তু এবার নামের শিরোনামটা আমার পছন্দ হয়নি,আগেরটাই ভালো ছিল।
আজ একটা বই দেখলাম যার মূল অংশের থেকে পরিশিষ্ট বড় 😀 :rotfl: ।
@রামগড়ুড়ের ছানা,
:yes:
শিরোনামটি আমারো পছন্দ হয়নি বিশেষ। শুধু বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান দিলেই আমার মতে যথেষ্ট বিষয় সম্পর্কে বুঝার জন্য। বইয়ের ক্ষেত্রে বিষয়টি মাথায় রাইখেন।
@রামগড়ুড়ের ছানা,
বইটার নাম বোধ হয় – ‘বারো হাত কাঁকুড়ের তেরো হাত বীচি’। টাউট প্রকাশনা। দাম ৪২০ টাকা, সত্ত্বাধিকারী – শাফায়াত 😀
আসলে এইটা আমার বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের বইয়ের একটি অধ্যায়ের (ষষ্ঠ অধ্যায়) অংশ। অধ্যায়টার নাম ‘জীবন মানে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা’ই থাকবে সম্ভবত। কিন্তু আগের পর্নবে গীতা দাসের মন্তব্যের পরে পুরো অধ্যায়ের অংশগুলো জীবন মানে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা- ১, জীবন মানে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা- ২ না দিয়ে প্রতিটা অংশের আলাদা আলাদা নাম দিব ভেবেছিলাম। সেজন্যই এই নামটি চলে এসেছে। চিন্তার কোন কারণ নেই, এই পর্বের পরে আর এই টাইটেল থাকছে না। তবে পরের পর্বে আরো বিদঘুটে কিছু আসার সম্ভাবনা কিন্তু উড়ায় দেয়া যায় না। 🙂
আচ্ছা এবারে একটু সিরিয়াস সাজেশন চাই, সবার কাছ থেকে। আগামী বছর বিবর্তন মনোবিজ্ঞান বিষয়ে একটা বই বের করার প্ল্যান আছে। আমার ই-বইটার সাথে যুদ্ধবাজির এই লেখাগুলো যোগ করে কিছু একটা দাঁড়া করানোর চেষ্টায় আছি। আপনাদের কাছ থেকে বইটার একটা ভাল শিরোনাম চাই।
নীচের কিছু শিরোনাম আছে সাজেশন হিসেবে –
১) মানব প্রকৃতির জৈববিজ্ঞানীয় ভাবনা
২) ভালবাসা কারে কয়? আধুনিক বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে, প্রেম, ভালবাসা, আত্মত্যাগ, ঘৃণা, সঙ্ঘাত এবং পরার্থতার জৈব-বৈজ্ঞানিক উৎস সন্ধান
৩) বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান – জৈববিজ্ঞানের চোখে সমাজের বিভিন্ন প্যাটার্ণ অনুসন্ধান
প্রথমটা খুবই কাঠখোট্টা, দ্বিতীয়টা আবার বেশি তরল। তৃতীয়টা একেবারেই পছন্দ না। আপনাদের কাছ থেকে এ ব্যাপারে সাজেশন চাচ্ছি। সিরিয়াসলি। বইয়ের জন্য ভাল কিছু নাম বলুন।
@অভিজিৎ,
ভালবাসার বিবর্তন
@রৌরব,
ধন্যবাদ রৌরব। অন্যদের কাছ থেকেও বইয়ের জন্য ভাল কিছু নাম চাই।
@অভিজিৎ,
বিবর্তনে আবর্তিত মানবিক মূল্যবোধ
অভিজিতের লেখা মানেই দারুণ নতুন জ্ঞানের সমাবেশ। আরো অনেকবার পড়তে হবে।
@প্রদীপ দেব,
ধন্যবাদ প্রদীপ – লেখাটি পড়া এবং পাঠ-প্রতিক্রিয়ার জন্য।
@অভিজিৎ,
বিষয়টা আসলে আমাকে যথেষ্ট চিন্তায় ফেলে দিয়েছে । বিশেয করে , বিবর্তন মনোবিজ্ঞানী প্রফেসর সারাহ হরডীর “The Langurs of Abu: Female and Male Strategies of Reproduction” (Harvard University Press, 1977)” – এ বইটা পড়ার পর্ ।
প্রফেসর সারাহ ভারতের লান্গুর হনুমানের ওপর কিছু গবেষনা চালিয়ে দেখেন যে , লান্গুর হনুমান যে হারে একাধিক পুরুষ হনুমানের সাথে যৌন ক্রিয়ায় লিপ্ত হয় তা প্রজনন গত চাহিদার অতিরিক্ত । এছাড়াও , দেখা গেছে যে , স্ত্রী লান্গুর হনুমানের যুগপৎ বহুগামিতা খুবই স্বাভাবিক একটা ব্যপার । স্ত্রী গোষ্ঠীর বহুগামিতা বিভিন্ন প্রানীর মধ্যে বিদ্যমান, যেমন , কিছু ইউরোপীয় পেঁচা এবং প্রেয়রী কুকুর । এমনকি কিছু দক্ষিন আমেরিকান ইন্ডিয়ান উপজাতীয় নারীরা যুগপৎ বহুগামিতা চর্চা করে থাকে ।
আমার মতে , বর্তমান সমাজে এখনও নারীর বহুগামিতাকে একটা সামাজিক Taboo হিসেবে দেখা হয় ।
@সংশপ্তক,
সারাহ বাফার হার্ডি আমারো খুব পছন্দের একজন লেখিকা। যদিও যে বইটির উল্লেখ করেছেন সেটা পড়া হয়নি। উনার বেশ কিছু প্রবন্ধ আর ডকুমেন্টরি দেখেছি, খুবই কৌতুহলোদ্দীপক।
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
অভিজিৎ, আমার মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আপনার লেখার শিরোনাম বদলে ফেলেছেন দেখে নিজেকে খুব সৌভাগ্যবান মনে করছি এবং আপনার সহিংসতা, নির্যাতন এবং ‘লুল পুরুষ’ উপাখ্যান – একটি বিবর্তনীয় অনুসন্ধান লেখাটিসহ এ বিষয়ে আপনার মন্তব্যসমূহ আমার নারী বিষয়ক সংবাদ পর্যালোচনা নামক লেখায় কাজে লাগবে। কাজে লাগবে আমার পেশাগত জীবনেও ।
পুরুষ এবং নারীর যৌনতার বায়োলজিক্যাল রিডাকশনিজম করাটা ঠিক না। প্রথমত সেক্স ড্রাইভ কথাটার বৈজ্ঞানিক সংজ্ঞা হয় না-অনেকটাই সাবজেক্টিভ ব্যাপার স্যাপার। দ্বিতীয়ত এই সব লাইনের গবেষনার রেজাল্ট নানান আর্থ সামাজিক পরিস্থিতিতে আলাদা হবে। সেই জন্যে সমাজকে পুরো বাদ দিয়ে ছেলেরা এই বা মেয়েরা এই বলা মুশকিল।
জীবন মানে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা ১, ২ পড়েছি। এবারের শিরোনাম ভিন্ন। তবে এখানেও যুদ্ধ রয়েছে।
মোকছেদ আলীর ‘যুদ্ধ’ নামে একটি লেখা রয়েছে। সেখান থেকে কিছু অংশ তুলে ধরছি- ….আমাদের প্রত্যেকেই প্রতি মুহূর্তেই বেঁচে থাকার জন্য জীবনযুদ্ধ বা struggle for existence করতে হয়। যুদ্ধ দিয়েই যাদের জীবন- অশিক্ষার বিরুদ্ধে যুদ্ধ, রোগ বালাইয়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ, ঘাটতি খাদ্যপূরণের জন্য যুদ্ধ করতেই হয়। সর্বোপরি ক্ষুধার বিরুদ্ধে যুদ্ধ। যুদ্ধ ছাড়া একটি মুহুর্ত আমাদের বেঁচে থাকার উপায় নেই। জাতিসংঘই হউক আর জাতিপুঞ্জই হউক যুদ্ধ দমন কেউ কখনও করতে পারবে না। শান্তির যতই কপোত উড়াই, আর মুখরোচক বুলি বলি- যুদ্ধ অনিবার্য,…।
কোনো এক সময় পুরো লেখাটি পোষ্ট করে দিবো।
আপনার এই সিরিজ পড়ে যাচ্ছি। নিজেও একটি বই পড়ছি একই সাথেঃ Evolutionary psychology : an introduction
Workman, Lance । দেখা যাক, বইটা শেষ হলে আপনার পুরো সিরিজটা আবার এক সাথে পড়বো। তখন না হয় যদি কোন প্রশ্ন থাকে জিজ্ঞেস করবো অথবা নিজেই নিজের চিন্তাগুলো জড়ো করে একটি লেখা দিব।
@স্বাধীন,
বইটা কেমন লাগসে জানাইও। আমিও একই টাইপের একটা বই দিয়ে এক সময় বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান পাঠের যাত্রা শুরু করছিলাম –
Introducing Evolutionary Psychology, Dylan Evans, Totem Books।
বেশ ভাল লেগেছিল বইটা।
@অভিজিৎ,
আপনার কয়টা চোখ?
বারট্রান্ড রাসেল না কে যেন বলেছিল না,আহা রে আমার যদিমাছির মত হাজারটা চোখ থাকত তবে আরো কতই না বই পড়তে পারতাম…আপনি কি আসলে মানুষই, নাকি মানুষবেশী মাছি?
@আদিল মাহমুদ,
হাঃ হাঃ, রাসেল বলসিল নাকি এই কথা? তাইলে মাছিই হমু। তয় কানা মাছি।
কানা মাছি ভো ভো…
@আদিল মাহমুদ,
প্রদীপদেব সহ অনেকের সাথে আমিও এই নিয়ে অনেক সময় মন্তব্য করেছি অভিজিত আসলে কয়টা চোখ ও মাথা নিয়ে পৃথিবীতে জন্মাইছে??? :-/ :-/ :-/
অভিজিত কে বলছি ঃ—- এই সিরিজটি যত পড়ছি তত বেশী এক জটিল মানব জীবনের একেবারে গভীর ভিতরের অবস্থাগুলি জানতে ও বুঝতে সক্ষম হচ্ছি।
চলতে থাকুক,আমাদের জ্ঞানের ভান্ডার উত্তারাত্তোর বৃদ্ধি পাক। :yes: :yes: :yes:
@মাহবুব সাঈদ মামুন,
কথা সত্য।
কইতেই হইব এত গিয়ানের রহস্য কি? আমাগো থুইয়া হেয় একলাই গিয়ান লইব, না?? হইতে দিমু না।
কইতেই হইব এর রহস্য। 😀
@সাইফুল ইসলাম,
এবার জেম্ স বন্ড এর নায়কের মতো রহস্য উদ্ঘাটনে নেমে পড়েন। তারপর আমাদের মতো সাধারন আম-জনতা কে পরে জানাইলে কৃতজ্ঞ থাকব।
আদিল মাহমুদ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করেছেন, তার উত্তর দেয়াটা হবে আমার প্রয়াস। আপার্থিব কিছু উত্তর আগেই দিয়েছেন, আমি আর কিছু যোগ করছি। কিছু জায়গায় আমি অপার্থিবের ব্যাখ্যার সাথে কিছুটা পার্থক্য করব, ঠিক কোথায় সেটাও ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা হবে। প্রথমেই আসি আদিল মাহমুদের এই প্রশ্নটিতে –
বায়োলজির একদম বেসিক থেকে শুরু করি। আসলে বায়োলজিকালি ডিম্বানু এবং শুক্রানু আলাদা। পুরুষের স্পার্ম বা শুক্রাণু উৎপন্ন হয় হাজার হাজার, আর সেতুলনায় ডিম্বানু উৎপন্ন হয় কম। ডিম্বানুর আকার শুক্রানুর চেয়ে বড় হয় অনেক। অর্থাৎ, বায়োলজিকালি চিন্তা করলে ’sperm is cheap’ আর ‘egg is valuable’। স্পার্ম চিপ বলেই (সাধারণভাবে) পুরুষদের একটা প্রবণতা থাকে বহু সংখ্যক জায়গায় তার প্রতিলিপি ছড়ানোর। সেজন্য তথাকথিত আধুনিক ‘মনোগোমাস’ সমাজেও দেখা যায় পুরুষেরাই বেশি প্রতারণা করে সম্পর্কে, আর আগেকার সময়ে রাজা বাদশাহদের হারেম রাখার কিংবা শক্তিশালী সেনাপতিদের যুদ্ধ জয়ের পর নারী অধিকারের উদাহরণগুলোর কথা না হয় বাদই দিলাম। অপর দিকে এগ ভালুয়েবল বলেই প্রকৃতিতে women are choosy, তারা নিশ্চিত করতে চায় কেবল উৎকৃষ্ট জিনের দ্বারাই যেন তার ডিম্বানুর নিষেক ঘটে। সেজন্যই দেখা যায়, পুরুষ ময়ুর পেখম তুলে দাঁড়িয়ে থাকে, ‘খুতখুতে’ ময়ূরী নির্বাচন করে যোগ্যতম ময়ূরকেই তার সৌন্দর্যের ভত্তিতেই। পুরুষ কোকিল সুমিষ্ট গলায় গান গায়, আর স্ত্রী কোকিল নির্বাচন করে সেই কোকিলকে যার সুরের যাদু তার কাছে বেশি মনোমুগ্ধকর। যে বাবুই পাখি ভাল বাসা বানাতে পারে, সে হয় স্ত্রী বাবুইদের কাছে হার্টথ্রব, ইত্যাদি।
এখন মানুষের প্রসঙ্গে আসি। সাধারণভাবে বললে, একজন পুরুষ তার সারা জীবনে অসংখ্য নারীর গর্ভে সন্তানের জন্ম দিতে পারে, কুখ্যাত চেংগিস খানের মত কেউ কেউ সেটা করে দেখিয়েছিলোও। (ইতিহাসে একজন পুরুষের সবচেয়ে বেশি সংখক সন্তানের হিসেব পাওয়া যায় – ব্লাড থার্স্টি মোলে ইসমাইল-এর – ১০৪২ জন সন্তান) । তাত্ত্বিকভাবে সে করতে পারে প্রতি মিনিটেই। অপরদিকে একজন নারী বছরে কেবল একটি সন্তানেরই জন্ম দিতে পারে। সে হিসেবে সাড়া জীবনে তার সন্তান সর্বোচ্চ ২০-২২টির বেশি হবার কথা নয় (যমজ সন্তানের কথা গোনায় না আনলে)। বিবর্তনীয় পটভুমিকায় দেখা গেছে নারীরা যদি ক্রমাগত পার্টনার বদল করলে তা কোন ‘রেপ্রোডাক্টিভ বেনিফিট’ প্রদান করে না। জীববিজ্ঞানীরা নারী পুরুষদের মধ্যকার যৌনতার পার্থক্যকে Fitness varience এবং Fitness floor/celing এর মাধ্যমে প্রকাশ করেন। সেই টার্মে আলোচনা করতে গেলে একটু জটিল দিকে মোড় নেবে, তাই সেদিকে যাচ্ছি না।
মূলতঃ নারী পুরুষের যৌনতার পার্থকের কারণেই পুরুষরা মূলতঃ এগ্রেসিভ। আমি আমার প্রবন্ধে দেখিয়েছি যে, ইতিহাসের একটা বড় সময় জুড়ে মানবসমাজ আসলে একগামী ছিলো না, বরং সেসময় পুরুষেরা ছিলো বহুগামী। মানব সমাজ ছিলো পলিজাইনাস (polygynous) যেখানে শক্তিশালী কিংবা ক্ষমতাশালী পুরুষেরা একাধিক নারীকে বিয়ে করতে পারতো, কিংবা তাদের দখল নিতে পারতো। এখনো বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মানব সমাজ মনোগোমাস নয়, বরং মাইল্ডলি পলিগোমাস। এ ধরনের সমাজে স্বাভাবিকভাবেই পুরুষে পুরুষে দ্বন্দ্ব হয়, হয় প্রতিযোগিতা। এই প্রতিযোগিতার কারণেই বিভিন্ন ধরণের সহিংসতার চর্চার ( আধুনিক মানব সমাজে সঙ্ঘাত, খুন, ধর্ষণ, অস্ত্রবাজি, গণহত্যা প্রভৃতি হচ্ছে কিছু উদাহরণ) প্রকাশ ঘটে।
হয়ত যৌতার পার্থক্যের সাথে সহিংসতার সম্পর্ক মানতে আপনার কষ্ট হবে। জীববিজ্ঞান থেকে কিছু উলটো উদাহরণ হাজির করলে সম্ভবতঃ সেরকমটি লাগবে না। কিছু মাছ আর পাখি আছে যেখানে অন্য স্পিশিজে নারীরা নয় মাস ধরে যে গর্ভ ধারনের কাজটা করে, পুরুষেরা তার সমতুল্য কিছু নমুনা প্রদর্শন করে থাকে। যেমন, মাছের ক্ষেত্রে কিছু পুরুষ মাছ নিজেদের মুখে ডিম নিয়ে বসে থাকে যতক্ষন না তা থেকে বাচ্চা বের হয়। কিছু পুরুষ পাখি আছে যারা একই রকমভাবে ‘ফার্টিলাইজড এগ’ ক্যারি করে। সে ধরণের প্রজাতিগুলোতে নারীদের ‘ fitness celing’ অনেক বেশি থাকে পুরুষদের তুলনায়। কারণ এখানে নারীরা বোহেমিয়ানভাবে ইচ্ছেমত ‘ঘুরে ফিরে’ বেড়াতে পারে, আর পুরুষেরা ‘গর্ভবতী’ থাকে (আক্ষরিক অর্থে নয়) থাকে আর বাচ্চার তদারক করে। কি ভাবছেন? যা ভাবছেন তা ঠিকই। এই ধরণের প্রজাতিতে নারীরা অধিকতর ভায়োলেন্ট, এগ্রেসিভ এবং কম্পিটিটিভ (Tim Clutton-Brock, Sexual Selection in Males and Females, Science 21 December 2007)। বোঝা গেল?
সিরিয়াল কিলিং এর ব্যাপারটা আগেই ব্যাখ্যা করেছি আমার লেখায়। মানব সমাজে বায়লজিকাল কারণেই গড়পরতা নারীরা পুরুষদের চেয়ে কম ঝুঁকি নেয়। বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানী এনি ক্যাম্পবেল (Anne Campbell) মনে করেন, অনর্থক ঝুঁকি নেবার ব্যাপারগুলো মেয়েদের জন্য কোন রিপ্রোডাক্টিভ ফিটনেস প্রদান করে না। সিরিয়াল কিলার পুরুষদের তুলনায় নারীদের মধ্যে একেবারেই কম, ঠিক যে কারণে পর্নোগ্রাফির প্রতি আসক্তি মেয়েদের মধ্যে কম থাকে পুরুষের তুলনায়। এনিয়ে আরো কিছু মজার বিশ্লেষন হাজির করব পরের পর্বগুলোতে। যেমন ‘এজ ক্রাইম কার্ভ’ এবং ‘এজ এন্ড এক্সপ্লেনেশন অব ক্রাইম’ নিয়েও লেখার ইচ্ছে আছে। যে কোন দেশেই দেখা গেছে গড়পরতা সবচেয়ে বেশি হত্যাকান্ড এবং সহিংসতা পুরুষেরা করে থাকে যখন তাদের বয়স থেকে বিশ থেকে উনত্রিশের মধ্যে। যত বয়স বাড়তে থাকে সহিংসতা কমে আসে। এমনকি সিরিয়াল কিলাররাও একটা নির্দিষ্ট বয়েসের পরে সেভাবে আর হত্যা করে না। এর কারনটাও স্পষ্ট। কারণ এই বয়স পরিসীমাতেই পুরুষেরা রিপ্রোডাক্টিভ কম্পিটিশনের চূড়ায় থাকে। সেজন্যই ডেভিড বাস তার ‘মার্ডারার নেক্সট ডোর’ গ্রন্থে বলেছেন, ‘What these numbers reveals that murder increases dramatically as males enter the years of reproductive competition’ (পৃঃ ২৩)। সামনে আসবে সেগুলো।
আসলে একটু ভুল হচ্ছে। বিবর্তন কোন লক্ষ্য রেখে কাজ করে না – এটা ঠিক আছে। কিন্তু সিলেকশনের ব্যাপারটা র্যান্ডম নয়। প্রথমিকভাবে মিউটেশনের ফলে বিভিন্ন প্রকারণের অভ্যুদয় র্যান্ডমলি ঘটে অনেক ক্ষেত্রেই, কিন্তু তার পরের ধাপগুলো র্যান্ডম নয়। বিবর্তনের পেছনে মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে প্রাকৃতিক নির্বাচন। প্রাকৃতিক নির্বাচন ব্যাপারটি কোন কোন চান্স নয়। প্রাথমিক পরিব্যক্তি (মিউটেশন) গুলো র্যান্ডম হতে পারে, কিন্তু তার পর বৈশিষ্ট্যগুলো ন্যাচারাল সিলেকশনের মাধ্যমে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে পড়ার ব্যাপারটি কিন্তু র্যান্ডম নয়, বরং ডিটারমিনিস্টিক, কারণ তা নির্ভর করে বিদ্যমান উপযুক্ত পরিবেশের উপর। যেমন, চোখের উদাহরণ হাজির করি। আদি অবস্থায় কোন র্যান্ডম মিউটেশনের কারণে ফটো সেন্সিটিভ সেলের উদ্ভব ঘটেছিলো জনপুঞ্জে। কিন্তু তার পর থেকে সেটা আর র্যান্ডম ছিল না, বরং দিয়েছিলো বিবর্তনীয় উপযোগিতা। যে জনপুঞ্জে সবাই কানা, সে রাজ্যে একচোখা পাইরেটই কিন্তু রাজা আর সে টিকে থাকার ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা পাবে। তাই হয়েছিলো আদিতে। এভাবে অন্ধযুগ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধাপে ধাপে পরিমিত ভিন্নতার মধ্য দিয়ে চোখ বিবর্তিত হতে পারে। যখনই এ ধরনের কোন পরিবর্তন – যা কিছুটা হলেও বাড়তি সুবিধা প্রদান করে, তা ধীরে ধীরে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে জনপুঞ্জে ছড়িয়ে পড়ে। কাজেই পুরো ব্যাপারটি র্যান্ডম মনে করা ভুল হবে।
আর সেক্সুয়াল সিলেকশন ব্যাপারটি তো র্যান্ডম নয় মোটেই। এক সময় ময়ুরীরা তাদের যৌনতার অভিলাসের মাধ্যমে বড় পুচ্ছওয়ালা ময়ুরকে নির্বাচন করেছিল। র্যান্ডমলি নয়। ঠিক তেমনি, জিওফ্রি মিলার তার The Mating Mind: How Sexual Choice Shaped the Evolution of Human Nature গ্রন্থে খিয়ছেন, আমাদের বহু চাহিদা, অভিলাস পছন্দ আসলে ডিটারমিনিসটিকভাবে যৌনতার নির্বাচনের ফল। কিছু উদাহরণ দেই। পুরুষ দির্ঘকাল ধরে যুদ্ধবিগ্রহের মধ্য দিয়ে নিজেকে নিয়ে গেছে বলে স্বভাবে হয়ে উঠেছে অনেক সহিংস। আবার নারীরাও একটা সময় পুরুষদের এই সহিংসতাকে প্রশ্রয় দিয়েছে, কারণ এ ধরণের পুরুষেরা নিজ নিজ ট্রাইবকে রক্ষা করতে পারত বহিঃশত্রুর হাত থেকে। এ ধরণের সমর দক্ষ পুরুষেরা ছিলো সবার হার্টথ্রব – এরা দিয়েছিলো নিজের এবং পরিবারের জন্য বাড়তি নিরাপত্তা। এ ধরণের সাহসী পুরুষেরা নিজেদের জিন ছড়াতে পেরেছে অনেক সহজে, আমার মত কাপুরুষদের তুলনায়! ফলে নারীরাও চেয়েছে তার সঙ্গিটি কাপুরুষ না হয়ে সাহসী হোক, হোক বীরপুরুষ! এই ধরণের চাহিদার প্রভাব এখনো সমাজে দৃশ্যমান। ডেট করতে যাওয়ার সময় কোন নারীই চায় না তার সঙ্গি পুরুষটি উচ্চতায় তার চেয়ে খাটো হোক। সম্পর্ক রচনার ক্ষেত্রে এ যেন এক অলিখিত নিয়ম, শুধু আমেরিকায় নয়, সব দেশেই! বাংলাদেশে বিয়ে করতে গেলে পাত্রের উচ্চতা বউয়ের উচ্চতার চেয়ে কম দেখা গেলেই আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে গাই-গুই শুরু হয়ে যায় মুহূর্তেই। খাটো স্বামীকে বিয়ে করতে হলে স্ত্রীরও মনোকষ্টের সীমা থাকেনা। নারীর এই চাহিদা আসলে কিছুই নয়, আমাদের এন্সেস্টরদের সেক্সুয়াল সিলেকশনের ফল।
আবার পুরুষদের মানসজগতেও নারীদেহের কিছু বৈশিষ্ট নিয়ে উদ্গ্র আগ্রহ দেখা যায় সম্ভবতঃ বিবর্তনীয় তথা যৌনতার নির্বাচনের মাধ্যমে মানসপট তৈরি হবার কারণেই। যে কোন দেশের সাহিত্যের পাতা উল্টালেই দেখা যাবে – নারীর পিনোন্নত স্তন, সুডোল নিতম্ব আর ক্ষীন ক’টিদেশ নিয়ে যুগের পর যুগ কাব্য করেছে পুরুষ – সকল সংস্কৃতিতেই। কারণ নারীদেহের এই বৈশিষ্টগুলোই সকল পুরুষের কাছে মহার্ঘ্য বস্তু। কিন্তু কেন? কারণ হিসেবে বিজ্ঞানীরা বলেন, আদিম সমাজে পুরুষদের কাছে বৃহৎ স্তন এবং নিতম্বের মেয়েরা অধিকতর আদৃত ছিলো প্রাকৃতিক কারণেই। বিপদ সঙ্কুল জঙ্গুলে পরিবশে মেয়েদের বাচ্চা কোলে নিয়ে পুরুষদের সাথে ঘুরতে হত, বাচ্চাকে বুকের দুধ খাইয়ে দীর্ঘদিন টিকিয়ে রাখতে হত এলাকায় খাদ্যস্বল্পতা দেখা দিলে। অতি আধুনিক কালের কৃষিবিপ্লবের কথা বাদ দিলে মানুষকে আসলেই শতকরা নব্বই ভাগ সময় যুদ্ধ করতে হয়েছে খাদ্যস্বল্পতার বিরুদ্ধে। যে নারী দীর্ঘদিন খাদ্যস্বল্পতার প্রকোপ এড়িয়ে বুকের দুধ খাইয়ে বাচ্চাকে বাঁচিয়ে রাখতে পেরেছে, তাদের টিকে গেছে অনেক বেশি হারে। কাজেই কোন নারীর বৃহৎ স্তন পুরুষদের কাছে প্রতিভাত হয়েছে ভবিষ্যত-প্রজন্মের জন্য ‘অফুরন্ত খ্যাদ্যের ভান্ডার’ হিসবে। এ এক অদ্ভুত বিভ্রম যেন। এই বিভ্রম দীর্ঘদিন ধরে পুরুষকে করে তুলেছে পৃত্থুল স্তনের প্রতি আকর্ষিত। তারা লালায়িত হয়েছে, লুব্ধ হয়েছে – এ ধরণের দৈহিক বৈশিষ্ট সম্পন্ন নারীর সাথে সম্পর্ক করতে উদ্বুদ্ধ হয়েছে জৈবিক তাড়নায়। ঠিক একই ভাবে, বহিঃশত্রু যখন আক্রমণ করেছে তখন যে নারী বাচ্চাকে কোলে নিয়ে দৌড়ে বাঁচতে পেরেছে, তাদের জিন রক্ষা পেয়ছে অনেক সহজে। এই পরিস্থিতির সাথে তাল মিলাতে গিয়ে নারীর কোমড় হয়েছে ক্ষীণ, আর নিতম্ব হয়েছে সুদৃঢ়। আর এ বৈশিষ্টগুলো পুরুষদের কাছে হয়ে উঠেছে অনেক বেশি আদরনীয়। পুরুষেরা যে নারীর টান টান চামড়া, হিপ- ওয়েস্ট রেশো ০.7, সিমেট্রিকাল ফিচার ইত্যাদি পছন্দ করে তা র্যান্ডমলি ঘটেনি, বরং আমাদের পুর্বপুরুষেরা কেয়ারফুলি সিলেক্ট করেছিল এই সব বৈশিষ্টগুলোকে। আমি আমার বিবর্তন মনোবিজ্ঞান নিয়ে ই-বইয়ে এগুলো উল্লেখ করেছিলাম।
আমি ঠিক জানিনা অপার্থিব ঠিক কোন দৃষ্টিকোন থেকে মহিলাদাদের সেক্স ড্রাইভ পুরুষের মতই বলেছেন, তবে আমি মনে করি নারী পুরুষের যৌনতার প্রকাশভঙ্গিতে পার্থক্য আছে। আবারো একই কথা বলতে হয় প্রথমে যা বলেছি। আসলে বায়োলজিকালি ডিম্বানু এবং শুক্রানু আলাদা। পুরুষের স্পার্ম বা শুক্রাণু উৎপন্ন হয় হাজার হাজার, আর সেতুলনায় ডিম্বানু উৎপন্ন হয় কম। ডিম্বানুর আকার শুক্রানুর চেয়ে বড় হয় অনেক। অর্থাৎ, বায়োলজিকালি চিন্তা করলে ’sperm is cheap’ আর ‘egg is valuable’। স্পার্ম চিপ বলেই (সাধারণভাবে) পুরুষদের একটা প্রবণতা থাকে বহু সংখ্যক জায়গায় তার প্রতিলিপি ছড়ানোর। ব্যাপারটা নারীর ক্ষেত্রে সেরকম ভাবে নেই। নারীপুরুষের এ ধরণের চাহিদার পার্থক্য আরো প্রকট হয়েছে নারী-পুরুষদের মধ্যকার যৌনতা নিয়ে ‘ফ্যান্টাসি’ কেন্দ্রিক গবেষনাগুলোতেও। ব্রুস এলিস এবং ডন সিমন্সের করা ইউনিভারসিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার গবেষণায় বেড়িয়ে এসেছে যে, পুরুষ এবং নারীদের মধ্যকার যৌনতার ব্যাপারে ফ্যান্টাসিগুলো যদি সততার সাথে লিপিবদ্ধ করা হয়, তাহলে দেখা যাবে তিনজনের মধ্যে একজন পুরুষ একাধিক নারীর সাথে যৌনতার ফ্যান্টাসিতে ভোগে, এমনকি সারা জীবনে তাদের পার্টনারের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে কল্পনা করে তারা আমোদিত হয়ে উঠে- আর মেয়েদের মধ্যে সে সংখ্যাটা মাত্র ৮ ভাগ। এলিস এবং সিমন্সের সমীক্ষায় অংশগ্রহণ করা অর্ধেক সংখ্যক নারীরা অভিমত দিয়েছে, যৌনতা নিয়ে কল্পনার উন্মাতাল সময়গুলোতেও তারা কখনো সঙ্গী বদল করে না, অন্য দিকে পুরুষদের মধ্যে এই সংখ্যাটা মাত্র ১২ ভাগ। মেয়েদের যৌনতার ফ্যান্টাসিগুলো তার নিজের পরিচিত যৌনসঙ্গিকে কেন্দ্র করেই সবসময় আবর্তিত হয়, আর অন্যদিকে পুরুষদের যৌনতার ফ্যান্টাসিগুলো সময় সময় সম্পূর্ণ অপরিচিত মেয়েকে নিয়েও উথলে ওঠে । একারণেই গবেষক এলিস এবং সিমন্স তাদের গবেষণাপত্রে (B.J. Ellis, D. Symons (1990), “Sex Differences in Sexual Fantasy: an Evolutionary Psychological Approach”, Journal of Sex Research, Vol. 27 pp.527 – 555. ) এই বলে উপসংহার টেনেছেন –
‘পুরুষদের যৌনতার বাঁধন-হারা কল্পনাগুলো হয়ে থাকে সর্বব্যাপী, স্বতঃস্ফুর্ত, দৃষ্টিনির্ভর, বিশেষভাবে যৌনতাকেন্দ্রিক, নির্বিচারী, বহুগামী এবং সক্রিয়। অন্যদিকে মেয়েদের যৌন অভিলাস অনেক বেশী প্রাসঙ্গিক, আবেগময়, অন্তরংগ এবং অক্রিয়।’
আমার আগামীতে একটা বই লেখার ইচ্ছা আছে এই সব কিছু নিয়ে। দেখা যাক সিলেকশনের গতি প্রকৃতি কোন দিকে যায়। 🙂
@অভি, আমার আসলে এ জায়গাটাতেই বিবর্তনীয় সাইকোলজি নিয়ে রিজারভেশন বা সমস্যাটা হয়। পার্থক্য আর সমতার মধ্যে তালগোল পাকিয়ে ফেলার সম্ভাবণা খুব বেশী থাকে এখানে। সেক্স ড্রাইভ এক জিনিস আর কিভাবে সেটা বাস্তবায়ন করা হয় সেটা আরেক জিনিস ( আদিলঅকে দেওয়া আগের উত্তরে এ নিয়ে কিছু কথা ইতোমধ্যেই বলেছি)। ঠিক এই বিতর্কই করা যায় ছেলে এবং মেয়ের বুদ্ধিমত্তা নিয়ে। ছেলে এবং মেয়ের পার্থক্য আছে সেটাকে ধরে নিয়েই তো আগানো উচিত। কিন্তু পার্থক্য আছে বলেই সেখানে বেশী কি কম বা সমতা অসমতার ব্যাপার নিয়ে আসতে হবে এটা ঠিক নয়। বিশেষ করে আজকের এই লিঙ্গিক এবং যৌণ স্বাধীনতার যুগে সেক্স ড্রাইভ বেশী কি কম সেটা নিয়ে বিতর্ক করাটা আমার কাছে কেমন যেন অদ্ভুত শোনাচ্ছে। তুমি নিজেই কিন্তু পার্থক্যের কথা বলছ, পরিমাণের কথা বলছ না, আর আমার কাছে আদিলের কথা শুনে কিন্তু মনে হয়েছে উনি সেক্স ড্রাইভের পরিমাণের কথা বলছিলেন। যে বায়োলজিকাল কারণে ছেলেরা প্রতিলিপি ছড়ানোর জন্য বহুগামী হত তার অনেক কিছুই এখন আর এই আধুনিক সমাজগুলোতে প্রযোজ্য নয়, এখন ছেলেরা বহু জায়গায় গেলেও সন্তান উৎপাদন না করার চেষ্টাটাই থাকে মূখ্য। বিবর্তনীয়ভাবে বিভিন্ন ঐতিহাসিক ট্রেন্ড থেকে গেলেও এখানে কিন্তু ছেলে এবং মেয়েরা বিভিন্ন দিক থেকেই লেভেল প্লেইয়িং ফিল্ডে চলে আসতে শুরু করেছে। এখানেও মানুষের বুদ্ধিমত্তা এবং তার ফলশ্রুতিতে ঘটা সাংষ্কৃতিক বিবর্তন বিশাল ভূমিকা রেখেছে, তাই মানুষের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ফিজিকাল বিবর্তনের কথা বললে ভুল হয়ে যাবে। একটা মেয়ের যদি গর্ভধারণের কথা চিন্তা করতে না হয়, চাইলে গর্ভপাতের অধিকার নিশ্চিত থাকে, সন্তানের নিরাপত্তার জন্য সেভাবে ভাবতে না হয়, নিজের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা থাকে ( হয়তো এখনো পুরোপুরি এসব হয়ে ওঠেনি , কিন্তু আমরা যে সেদিকেই যাচ্ছি বা যাওয়ার চেষ্টা করছি তা নিয়ে তো সন্দেহের অবকাশ নেই) তাহলে সে যেভাবে তার সেক্স ড্রাইভকে চালিত করবে তার সাথে এই সীমাবদ্ধতাগুলোসহ একটা পরিবেশে সে অন্যভাবে চালিত হবে। মেয়েদেরক বেশীর ভাগ ট্রেডিশনাল সমাজেই সেক্স ড্রাইভ অবদমিত করে রাখতে বাধ্য করা হয়েছে, হিন্দু ধর্মে বিধবাদের রিচুয়াল, মুসলমান ধর্মে মেয়েদের পর্দা ইত্যাদি সেগুলোরই সাক্ষ্য বহন করে। কিন্তু এ থেকে তার সেক্স ড্রাইভের পরিমাণ কম কি বেশী তা কিভাবে নির্ধারিত হয় সেটা আমার বোধগম্য হচ্ছে না।
@বন্যা,
ঠিক কথা। আমি তো পার্থক্যের কথাই বলেছি, সমতার কিংবা অসমতার নয়। পার্থক্য থাকলেই সেটাকে অসাম্য ভেবে ডিস্ক্রিমিনেশন ভাবা হবে কেন? 🙂
একমত। ছেলে এবং মেয়ের পার্থক্য আছে সেটাকে ধরে নিয়েই তো আগানো উচিত। আমি তো তাই এগিয়েছি। কিন্তু অনেকে অসাম্যের ভয়ে পার্থক্যটুকু উল্লেখ করতেই ভয় পান।
অবশ্যই। সবকিছু যদি পুরুষের মর্জিমাফিক হত, তাহলে সমাজ এখনো বহুগামী থাকত। নারীরা লেভেল প্লেইয়িং ফিল্ডে চলে আসতে শুরু করেছে বলেই ব্যাপারটা পাল্টাচ্ছে।
তারপরেও বেসিক অনেক জায়গাতেই পার্থক্য আছে। নারীপুরুষের এ ধরণের চাহিদার পার্থক্য বোঝা যায় নারী-পুরুষদের মধ্যকার যৌনতা নিয়ে ‘ফ্যান্টাসি’ কেন্দ্রিক গবেষনাগুলোতে, সেই উদাহরণ তো আমি দিয়েছিই। সেক্সুয়াল ড্রাইভে পার্থক্য না থাকলে পর্নগ্রাফির প্রতি আগ্রহ নারী পুরুষ বিশেষে সমান হত। কোন সংস্কৃতিতেই এটা সমান পাওয়া যায় না। ঠিক যেমন নারী সিরিয়াল কিলার খুব বেশি দেখা যায় না। সম্পর্কে প্রতারণা পুরুষেরাই বেশি করে। পতিতাপল্লীতে পুরুষেরাই বেশি যায়। বায়োলজিকাল কারনেই এটা ঘটে।
হিন্দু ধর্মে বিধবাদের রিচুয়াল, মুসলমান ধর্মে মেয়েদের পর্দা কি নারীর সেক্সুয়াল ড্রাইভের কম বা বেশির কারণে হয়? আমার মতে এগুলো মেয়েদের সেক্সড্রাইভের ‘পরিমানে’র কারণে নয়, ‘কাকোল্ড্রির’ পরিপ্রেক্ষিতে পুরুষতান্ত্রিক সেক্সুয়াল জেলাসির কারণে। সোজা কথায় পুরুষতান্ত্রিক ঈর্ষা। এটা ব্যাখ্যা করেছিলাম এখানে।
মহিলাদের কম বহুগামিতার কারন নিজে চিন্তা করেও কোন দিশা পাইনি। কম ভায়োলেন্সের কারন অবশ্য এভাবে না হলেও মোটামুটি বুঝতে পেরেছি। মেয়ে সিরিয়াল কিলার কেন কম হয় তার সাথে মনে হয় পুরুষের পাওয়ার ফাইট বা রিপ্রোডাক্টিভ ফিটনেস এ জাতীয় ব্যাখ্যা খাপ খায় না। সিরিয়াল কিলার পুরুষেরাই কেন বেশী হয় এ নিয়ে আমার বেশ কৌতূহল আছে।
বিপ্লবের সাথে সুর মিলিয়ে বলব যে মানুষ অর্থ বিত্ত হলেই যে হুমায়ুন সাহেব বা ক্লিন্টন/এরশাদ সাহেবের মত কৃষ্মলীলা শুরু করে এমন তো মনে হয় না। আমার তো মনে হয় যে এ ধরনের বাসনা কম বেশী সবারই থাকে। কেউ হয়ত অর্থ বিত্ত ক্ষমতার কারনে এ জাতীয় লালসা চরিতার্থ করার সুযোগ বেশী পেয়ে যায়। আর কেউ হয়তবা সেই সুযোগের অভাবে গুডি বয়ই থেকে যায়।
পুরুষের বেশী বহুগামি, ঝুকি নেবার প্রবনতা; তার বিপরীতে নারীর অপেক্ষাকৃত সংযত যৌন জীবন, কম ঝুকিনেবার প্রবনতা – এর মাঝে কি প্রকৃতি বা আল্লাহ যাই বলা হোক না কেন একটা ব্যালেন্সের ছাপ দেখা যায়? আমি মাঝেই মাঝেই ভাবি যে মহিলারাও যদি সাধারন পুরুষদের মত অতি সহজে অপোজিট সেক্স দেখলেই সহজে বিগলিত হত তাহলে পৃথিবীর চেহারা কেমন দাড়াতো?
রুশ দেশের উপকথার শোক আবার নুতন করে চাগিয়ে উঠল। বিদেশে থানা গাড়ার কিছু স্থায়ী ক্ষতির মাঝে এই ক্ষতি অপূরনীয়। জমেই গরিনিচ, বাবা ইয়ায়াগার মুরগীর পায়ের উপর ঘূর্নায়মান বাড়ি, পাঁশুটে নেকড়ে, বোকা ইভান এগুলো কি ভোলাযায়?
আমাদের দেশের হাউ মাউ খাউ মানুষের গন্ধ পাউ এর সাথে ব্রিটিশ রুপকথার ফি-ফাই-ফো-ফান স্মেল অফ আ ব্রিটিশ ম্যান এর কেচ্ছা কি করে এত মিলে? কে কারটা চোথা মেরেছে?
@আদিল মাহমুদ,
সিভকা বুর্কা
চেকনাই ঘোড়া
সামনে এসে দাঁড়া!…
মনে পড়ে?
@অভিজিৎ,
মনে না পড়ে উপায় আছে?? সাথে ছবিগুলা, আহা রে…
আলিউশা বোনটি আমার
ইভানুশকা ভাইটি আমার…
৯৫ সালের দিকে নীলক্ষেতে বইটা পেয়ে গেছিলাম। দেশে যাবার পর বাড়িতে আর খুজে পাইনি। আমি বিদেশ যাবার পর এক স্মার্ট কাজের ছেলে বেশ কিছু বই সের দরে হাপিশ করে দিয়েছে; তার মধ্যে এটা আর রুশ সাম্রাজ্যের ইতিহাস দুটা বইই বোধ করি ছিল।
@আদিল মাহমুদ,
এটার তো সহজ ব্যাখ্যা আছেই। মেয়েরা বহুগামী হলে সন্তান ধারণ করার ফাঁদে পড়ে যায়। ছেলেরা পালিয়ে গিয়েই খালাস। নারীদের বহুগামীতার কারণে জন্ম নেয়া সন্তানের দায়িত্ব তাকেই নিতে হয়, আর তার একজন স্বামী থাকলে সেও অন্যের ঔরসজাত সন্তান পালনে অস্বীকৃতি জানাবে, আর সে জেনেও যাবে এ তার সন্তান নয়। পুরুষদের ওরকম কোন সমস্যাতেই পড়তে হয় না। বরং তাতে তার প্রজননগত সুবিধাই বটে, তারই ঔরসজাত সন্তান অন্যরা লালন পালন করবে, তার কর্মের কোন সাক্ষ্য প্রমাণ থাকে না! নিখরচায় বংশাণু বিস্তার!। এ সবই বললাম বিবর্তনের দৃষ্টিতে ঐতিহাসিক কারন হিসেবে। বর্তমান সমাজ অবশ্য এই প্রাকৃতিক অবিচার রোধে আইন প্রণয়ন করে অনেকটা প্রতিকার করে ভারসাম্য এনেছে।
এটাই তো বিবর্তনের কাজ। একটা ব্যালেন্স আনয়ন করা। বিবর্তনের ব্যাখ্যা মানলে আল্লাহ কে এই ব্যালেন্সের কারণ হিসেবে দেখার দরকার নেই। তখন আল্লাহর প্রয়োজন হবে বিবর্তনের কারণ (সঠিক ভাবে বললে বিবর্তনের কারণের কারণ অর্থৎ পদার্থ বিজ্ঞানের নিয়মের কারণ) হিসেবে দেখার জন্য।
এটা একটা মিথ যে মহিলারা যৌন আকর্ষণ কম বোধ করে। বিগলিত তারা ঠিকই হয়, তবে ছেলেদের চেয়ে তাদেরকে বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়, যেটা আগেই উল্লেখ করেছি। এই সতর্কতার প্রয়োজন কমে গেলে তারা তাদের এই যৌন তাড়না আরো সহজে প্রকাশ করতে পারে। এই জন্যই পশ্চিমে মেয়েদের জন্য SEX TOUR এর আয়োজন করা হয়। ঘুরে ফিরে সে সুযোগএর কথাটাই আসে। যখন নিরাপদ, ঝুঁকি কম, তখন যৌনতার প্রকাশে ছেলে মেয়ের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।
@অপার্থিব,
ধন্যবাদ আপনার চমতকার ব্যাখ্যার জন্য।
– বিবর্তন সম্পর্কে যা জেনেছি তাতে তো এই প্রসেসটা র্যান্ডম, কোন হিসেব নিকেশ করে হয় না। বিবর্তন কোন লক্ষ্য রেখে কাজ করার কথা না।
মহিলাদাদের সেক্স ড্রাইভ পুরুষের মতই এ তত্ত্বের সমর্থনে কি কোন ষ্ট্যান্ডার্ড মেডিক্যাল রিপোর্ট আছে?
@আদিল মাহমুদ,
জ্বি আছে। “পুরুষের অষ্টগুণ স্ত্রীলোকের কাম” — কৃত্তিবাসী রামায়ণ।
@রৌরব,
এই রেফারেন্সের উপর তো আর কিছু চলে না।
ধন্যবাদ।
@আদিল মাহমুদ,
এটা ভুল ধারণা। বিবর্তন প্রসেসটা র্যান্ডম নয়। প্রকৃতির নিয়ম কোন র্যান্ডম ব্যাপার নয়। বিবর্তন কোন লক্ষ্য রেখে কাজ করে না সেটা বলাও ভুল। সব কিছুই পদার্থ বিজ্ঞানের নিয়ম মাফিক ঘটছে। সেটা র্যান্ডম বলা যায় কি ভাবে। বিবর্তনের ক্ষেত্রে লক্ষ্যটা হল তাপ গতিবিদ্যার দ্বিতীয় সুত্রকে মেটান। অর্থাৎ এন্ট্রপি বাড়ান। অবৈজ্ঞানিক পাঠকদের এটা বলা হয় যে বিবর্তনের কোন লক্ষ্য নেই যাতে তারা এতে ইশ্বরের হাত বা মানুষের ধারণার লক্ষ্যকে না বুঝে। তাপ গতিবিদ্যার দ্বিতীয় সুত্রকে মেটান একটা বৈজ্ঞানিক লক্ষ্যই বটে।
মেডিক্যাল রিপোর্টের কথা জানিনা, তবে বিজ্ঞানীদের লেখায় তা বলা আছে। আপনি হয়ত আমার পূর্বের দুটো আরটিক্ল “নারীরা সব পারে-২” আর “বিবর্তনের আলোকে প্রেম” পড়েননি। ঐ দুই প্রবন্ধে আমি এ ব্যাপারে আলোকপাত করেছিলাম। যাহোক পুরো প্রবন্ধটি পড়তে অনিচ্ছুক হলে আমি প্রথম লেখার প্রাসঙ্গিক অংশটা উদ্ধৃত করছিঃ
১। হেলেন ফিশার তাঁর “প্রেমের বিশ্লেষণ” (Anatomy of Love) বই এর ১২৪ পৃষ্ঠায় লিখেছেনঃ
“All these data certainly lead one to suspect that women avail themselves of illicit lovers with relish, perhaps even as avidly as men”
(এই সব উপাত্ত নিশ্চিতভাবে এই সন্দেহেরই উদ্রেক করে যে নারীরা পরম তৃপ্তির সাথেই অবৈধ প্রেমিকদের ভোগ করে।)
একই বইএর ৯৪ পৃষ্ঠায়ঃ
“You may wish to argue that these women (and women in many other cultures) all engaged in prostitution for purely economic reasons. But many say they like the sexual variety. And the women who pursue this vocation are not alone. The animal kingdom is rife with loose females.”
(তুমি হয়ত এই যুক্তি দিতে পার যে এই নারীরা (এবং অন্য অনেক সংস্কৃতির নারীরা) বেশ্যাবৃত্তিতে নিয়োজিত হয় স্রেফ দারিদ্র্যের কারণে। কিন্তু তাদের অনেকে বলে তারা বিভিন্ন যৌন অভিজ্ঞতা পছন্দ করে। আর এই পেশায় নিয়োজিত নারীরা একা নয়। প্রাণিজগৎ ভ্রষ্টা মেয়েতে ভরপুর)
৯৫ পৃষ্ঠায়ঃ
” There is no evidence whatsoever that women are sexually shy or that they shun clandestine sexual adventures. Instead both men and women seem to exhibit a mixed reproductive strategy: Monogamy and adultery are our fare ”
(এমন কোন সাক্ষ্য প্রমাণ নেই যে মেয়েরা যৌনতার ব্যাপারে লাজুক বা তারা গোপন যৌন অভিযান এড়িয়ে চলে । বরং পুরুষ ও নারী উভয়েই এক মিশ্র প্রজনন কৌশল প্রদর্শন করেঃ একগামিতা অ বহুগামিতা দুটোই আমাদের স্বভাবজাত অভ্যাস)
২। Meredith Small তাঁর “What’s Love got to do with it?” বইএর ১২২ পৃষ্ঠায় লিখেছেনঃ
“The difference between men and women in sexuality is not natural, i.e it is not true that men are genetically coded to have more sex than women, but simply a product of sexual repression by males, a policy that developed to control paternity ; without repression women would presumably have sex as often and with as many partners as men”
(ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে পার্থক্য স্বাভাবিক নয়। এটা সত্যি নয় যে ছেলেরা বংশাণুগত কারণে মেয়েদের চেয়ে বেশী যৌনক্রিয়ায় লিপ্ত হয়। এর কারণ হল পুরুষদের যৌনদমন, যা পিতৃত্ব নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যেই সৃষ্ট। এই দমন উনুপস্থিত থাকলে নারীরাও পুরুষদের মত যখন ও যত খুশী সঙ্গীর সাথে রতিক্রিয়ায় লিপ্ত হত)
একই বইএর অন্যত্র লিখেছেনঃ “Women would be as interested in sex had they not had to fear a male stranger.” (যদি অচেনা পুরুষ কে ভয় করতে না হত তাহলে নারীরাও যৌনক্রিয়ায় একই ভাবে উৎসাহী হত)
১৫৭ পৃষ্ঠায়ঃ
“In the short term, when women have the opportunity and freedom, I maintain that women are just as interested in sexual partners, and frequent sex, as men”. “both men and women compromise between two conflicting impulses.”
(আমি জোর দিয়ে বলতে চাই যে স্বল্প মেয়াদে, যখন সুযোগ ও স্বাধীনতা আসে, মেয়েরা পুরুষদের মতই একই হারে যৌনসঙ্গীতে উৎসাহী হয়। )
৩। Daylle Deanna Schwartz তাঁর “All men are Jerks until proven otherwise” বই এর ৯৩ পৃষ্ঠায় বলেনঃ
“Although women may hesitate to admit it, many of us love sex far more than just the emotional gratification. Our reluctance to acknowledge the basic natural pleasure is related to messages that have taught us that its unladylike to enjoy sex too much”
(যদিও নারীরা এটা স্বীকার করতে অস্বস্তি বোধ করতে পারে, বাস্তবে আমাদের অধিকাংশই যৌনসম্ভোগকে ভালবাসি, এবং তা শুধু মানসিক তৃপ্তির জন্যই নয়। আমরা যে এই মৌলিক আনন্দকে অস্বীকার করি তার কারণ আমাদের এই বার্তাই শেখান হয় যে অধিক যৌনসম্ভোগ নারীসুলভ নয়)
৪। Joan Rodgers তাঁর “Sex: A natural History” বইএর ৩৫২ পৃষ্ঠায় লিখেছেনঃ
“Every sexual anthropologist, from Alfred Kinsey to Helen Fisher, has concluded that given a level social playing field and absence of severe punishment, women, not men are the promiscuous sex, seeking variety.”
(প্রত্যেক যৌন নৃতত্ববিদ, আলফ্রেড কিন্সলী থেকে শুরু করে হেলেন ফিশার, সবাই এ সিদ্ধান্তেই উপনীত হয়েছেন যে, যদি সামাজিক খেলার মাঠটা সমতল হত (অর্থাৎ সবার প্রতি একই নিয়ম কানুন প্রযোজ্য হত) ও কঠোর শাস্তি বিধান না থাকত, তাহলে পুরুষের চেয়ে নারীরাই বেশী নির্বিচার যৌনতায় লিপ্ত হত, ভিন্ন স্বাদের খোঁজে)
৫। উপরের বইএর ৩৮১ পৃষ্ঠা থেকেঃ
“April Gorry of UCSB conducted studies of female white tourists (sex tourism) in Carribbean found that women were more promiscuous there, choosing men of lower status than themselves, prioritizing male appearance etc”.
(সান্টা বারবারায় অবস্থিত ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের April Gorry ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে ভ্রমনকারী শ্বেতাংগ নারী ট্যুরিস্টদের (যৌন ভ্রমণ) উপর এক সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছেন যে মেয়েরাই সেখানে নির্বিচার যৌনতায় বেশী আগ্রহী, তারা নিজেদের চেয়ে নীচের স্তরের পুরুষদের বেছে নেয়, তাদের দৈহিক দিককেই প্রাধান্য দিয়ে)
৮। Joan Rodgers তাঁর “Sex: A natural History” বইএর ৭৯-৮০ পৃষ্ঠা থেকেঃ
“Survey shows that women disapproves casual sex far more than men, but still participate in it, a double standard that belies the biological roots of our stone age ancestors and is perhaps a frustrated bow to social conventions and male dominated social structures.”
(জরীপে এটা দেখা গেছে যে , নারীরা যদিও দৈবাৎ যৌনক্রিয়াকে পুরুষদের চেয়ে অনেক কম সমর্থন করে, কিন্তু আবার এতে লিপ্তও হয়। এটা একটা কপটাচারই বটে। এর কারণ দৈবাৎ যৌনক্রিয়া আমাদের প্রস্তর যুগীয় পূর্বপুরুষদের জীববৈজ্ঞানিক শিকড়ে নিহিত হলেও, সামাজিক বিধিনিষেধ ও পুরুষ আধিপত্যের কাছে সমর্পনই এই দৈবাৎ যৌনক্রিয়া অসমর্থন এর কারণ)
৯। Naomi Wolf এর লেখা “Promiscuities” বই থেকে কিছু উদ্ধৃতঃ
p–xxvi :
“But anatomists and sex educators over the last 30 years have found more and more evidence that women are not only designed anatomically to be at least as sexually intense as men – but even that women’s capacity for pleasure is extreme in a way we have yet to accept”
“That the male gender is more driven by lust – is a fairly recent historical invention. For most of recorded history, women’s status as the more carnal sex was pretty much granted, so much so that women’s presumed carnality was used to justify their persecution”
(শারীরস্থানবিদ ও যৌনশিক্ষা বিশারদেরা কিন্তু গত তিরিশ বছর এই সাক্ষ্য প্রমাণই পেয়েছেন যে মেয়েরা যে ছেলেদের মতই শারীরিকভাবে যৌনক্রিয়ার জন্য তৈরী তাই নয়, এর মাত্রা যে অনেক চরমও হতে পারে সেটা এখনো আমরা মানতে পারিনি।
ছেলেরা যে যৌনলালসা দ্বারা অধিক চালিত হয় সেটা এক আধুনিক ঐতিহাসিক আবিষ্কার। লিখিত ইতিহাসের অধিকাংশ সময়েই কামতাড়িত যৌনতায় নারীদের স্থান যে অনেক উপরে, সেটা ধরেই নেয়া হত, এবং এতটাই ধরে নেয়া হত যে নারীর এই কথিত কামুকতার কারণকেই নারী নির্যাতনের অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে)
@অপার্থিব,
আমার মতে বিবর্তন লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য সামনে রেখে কাজ করে না বলে বিবর্তন কিছু নিয়ম মেনে কাজ করে এটা বলাই বোধ হয় সঠিক। লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য বলতে আমরা একটা নীল নক্সা, ভবিষ্যতের প্ল্যানিং ইত্যাদি বুঝি। বিবর্তনের বেশ কিছু ভ্যারিয়েবল আছে, যেমন ধরুন মিউটেশনকে মনে হয় র্যান্ডম বলেই ধরা হয়, এটার পিছনে কোন নিয়ম কাজ করলেও সেটা বোধ হয় আমরা এখনও জানি না। আবার প্রাকৃতিক নির্বাচনকে আপাত দৃষ্টিতে র্যান্ডম মনে হলেও আসলে প্রকৃতির বেশ কিছু নিয়ম মেনেই সে কাজ করে। তাহলে বিবর্তনের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য আছে বলাটা কি সঠিক? এটা বললে কিন্তু আমরা আবার সেই বিশেষ উদ্দেশ্য বা লক্ষ্যেই ফিরে যেতে পারি, কি বলেন?
@বন্যা আহমেদ,
একমত।
এখানে সেম্যান্টিক্স একটা সমস্যা। লক্ষ্য কে নিশানা (Target) অর্থে নিলে বলাটা ঠিক না সত্য। তবে উদ্দেশ্য (Purpose) অর্থে বললে বলাটা একেবারে ভুল হবে না, যেটা আমি আগেই উল্লেখ করেছি, এন্ট্রপি বাড়ান। আমি যদি বলি আমার উদ্দেশ্য হল জীবনকে সুখী করা, যে অর্থে ঠিক হবে তেমনই বিবর্তনের উদ্দেশ্য এন্ট্রপি বাড়ান বলাটাও সেই অর্থেই ঠিক হবে।
সেম্যান্টিক্স বাদ দিলে মূল কথা হল তোমার আগের উদ্ধৃত মন্তব্য, যার সাথে আমি একমত।
@অপার্থিব,
আপনার এবং বন্যার কথাবার্তা থেকে বিবর্তন পুরো লক্ষ্যহীন কিনা সে ব্যাপারটা আরেকটু পরিষ্কার হল। বিবর্তনের ফিলোসপির সাথে এন্ট্রোপির ধারনাও জানা ছিল না। ইন্টারেষ্টিং।
রেফারেন্সগুলির জন্য ধন্যবাদ, আমার ধারনা ছিল না যে এ ধরনের কোন কালেক্টিভ বৈজ্ঞানিক গবেষনা আছে।
এ বিষয় আগে এভাবে চিন্তা করিনি, বেশ কৌতূহল হচ্ছে, আপনার লেখা দুটো অবশ্যই পড়ে দেখব।
@আদিল মাহমুদ,
অপার্থিব সব কিছুই বলে দিয়েছেন, তাই এ নিয়ে আর বিস্তারিত আলোচনায় যাচ্ছি না। তবে একটা উপদেশ দেই, এক কাজ করুন না, কিছু মহিলার সাথে কথা বলে ফেলুন। আপনি যে দেশে থাকেন সেখানে আমি অনেকদিন থেকে এসেছি, সেখানে অনেক মেয়েই এ নিয়ে কথা বলতে আগ্রহী হতে পারে, আর আপনার নিজের দুই একজন ভালো মেয়ে বন্ধু (গার্ল ফ্রেন্ড বলিনি কিন্তু!) থেকে থাকলে তো কথাই নেই। আপনি যদি পাশ্চাত্যের এসব দেশে খেয়াল করে দেখেন তাহলে খুব সহজেই দেখতে পারবেন যে, মেয়েরা তাদের পার্টনার পছন্দ করার ব্যাপারে ছেলেদের চেয়ে একটু বেশী পিকি বা চুজি হতে পারে, বা ছেলে এবং মেয়ের পছন্দ অপছন্দ ইত্যাদি ব্যাপারে পার্থক্য থাকতে পারে কিন্তু তাদের সেক্স ড্রাইভ (এই কথাটাতে আমার আপত্তি আছে তবে আর কোন বেটার শব্দ না পাওয়ায় এটাই ব্যাবহার করলাম)কম এটা বলা কোনভাবেই আর ঠিক না। কয়েক হাজার বছর আগেও এভাবে চিন্তা করা হত না। গত দেড়-দুই হাজার বছরে আধুনিক ধর্ম এবং পুরুষতান্ত্রিক মধ্যযুগীয় ধ্যান-ধারণা নারীদের সম্পর্কে এ ধরণের মনোভাব প্রতিষ্ঠা করতে একটা বিশাল ভূমিকা রেখেছে। বিংশ শতাব্দীতে এসে মেয়েরা যেহেতু গর্ভধারণ, গর্ভপাত, ডিভোর্স, নিজেদের দৈহিক নিরাপত্তা, নিজের বাচ্চাদের ভবিষ্যত নির্ধারণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে স্বাধীনতা পেতে শুরু করেছে এখন আপনি কিন্তু ছেলে এবং মেয়ের সেক্সুয়াল এনগেজমেন্ট বা ইনভল্ভমেন্টের মাত্রায় তেমন কোন পার্থক্য দেখতে পাবেন না।
কথাটা কিন্তু একটু আপত্তিকরই শোনালো। মেয়েদের বিগলিত হতে বাঁধা কোথায়? আবারো বলি, তারা চুজি হতে পারে, কিন্তু বিগলিত হয় না এটা সম্পূর্ণভাবেই পুরুষতন্ত্রের তৈরি করা একটা মিথ ছাড়া আর কিছু নয়। আম তো পাশ্চাত্যে সব বয়সের মেয়েদেরই বিগলিত হতে দেখি, তাতে করে পৃথিবী ধ্বসে পড়ছে বলে ত মনে হচ্ছে না।
@বন্যা আহমেদ,
সেক্স ড্রাইভ বলতে কিন্তু আমার প্রকাশ ভঙ্গীর পার্থক্যের কথা বলিনি। ওটা আমার কাছে পরিষ্কার। পুরুষ মহিলার মানসিকতার পার্থক্যের কারনে প্রকাশ ভংগীতে পার্থক্য থাকবেই। আমি জানতে চেয়েছি বিশুদ্ধ বায়োলজিল্যাক দৃষ্টিতে সেক্স ড্রাইভ বা যৌন তাড়নার ক্ষেত্রে নারী পুরুষের পার্থক্য আছে কিনা সেটা। কারন আমি এ ব্যাপারে পরস্পর বিরোধী মতবাদ শুনি (ধর্মীয় মতবাদ নিশ্চয়ই এখানে বোঝাচ্ছি না)। কারো মতে পার্থক্য আছে, পুরুষের যৌন তাড়না জন্মগত ভাবেই বেশী, মেয়েদের কম। আবার কারো মতে সমান।
অবশ্য সেক্স ড্রাইভ বলতে আমরা যা বুঝি সে প্রক্রিয়াটা কতটা শারিরীক আর কতটা মানসিক সেটাও আমি সঠিক জানি না। ব্যাপারটার মূল তো আসলে মস্তিষ্ক, যতদুর জানি।
পশ্চীমের মেয়েরা নিঃসন্দেহে আমাদের দেশের থেকে অনেক আলাদা। তারপরেও আমার মনে হয়নি সেক্সের ব্যাপারটা তারা পুরুষের মতই একই ভাবে ফিল করে বলে। আমার কোন মহিলাকে জিজ্ঞাসা করার মত ঘনিষ্টতা অবশ্য নেই, দুয়েকজনকে জিজ্ঞাসা করে মনেও হয় না কোন ফল হবে বলে।
– আমি বাধা দেব বা হলে পছন্দ করব না তেমন কিছু বলিনি। শুধু আমার অবজার্শেন উল্লেখে করেছি। নিতান্তই ব্যাক্তিগত উপলব্ধি। আমার চোখে এখানে প্রকৃতির কেমন যেন একটা ব্যালেন্স আছে, যা অপার্থিব বিবর্তনের নিয়ম বলে ব্যাখ্যা করেছেন। উনিও অবশ্য বলেছেন যে মেয়েরা কম যৌন আকর্ষন বোধ করে এ ধারনা ভ্রান্ত। সেজন্যই আমি কৌতুহলী হয়ে কোন রেফারেন্সের কথা জিজ্ঞাসা করেছিলাম। প্রকাশ ভঙ্গী ভিন্ন, মেয়েরা চুজি হয় বা সতর্ক হয় বেশী সবই মানি, কোন সন্দেহ নেই। এর সাথে সেক্স ড্রাইভের সম্পর্কে নেই বুঝলাম। আমার কাছে যা মনে হয়েছে তা হল যে মেয়েদের মননে এই বৈশিষ্ট্যগুলি না থাকলে মনে হয় ফলাফল সামগ্রিকভাবেই খুব শুভ হত না। ছেলেদের কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে মেয়েরা ইভ টিজিং করছে, পরকীয়ার ব্যাপারে ছেলেদের মতই একই হারে করছে এমন শুরু হলে কি হত তাই চিন্তা করে কথাটা বলেছি। আশা করি বুঝতে পারছেন কি বলতে চাচ্ছি।
মেয়েদের ব্রেন নাকি পুরুষের তূলনায় ওজনে কম, এটা কি সত্য নাকি? তাহলে কি মেয়েদের বুদ্ধি গড়পরতায় পুরুষের তূলনায় এমন ধারনা কি বিজ্ঞান সম্মত? আশা করি অন্যভাবে নেবেন না।
@আদিল মাহমুদ,
ছেলেদের ব্রেনের আকার গড়পরতা মেয়েদের মস্তিস্কের চেয়ে অন্ততঃ ১০০ গ্রাম বড় হয়,কিন্তু ওদিকে মেয়েদের ব্রেন ছেলেদের চেয়ে অনেক ঘন থাকে। মেয়েদের মস্তিস্কে কর্পাস ক্যালোসাম এবং এন্টেরিয়র কমিসুর নামক প্রত্যঙ্গ সহ টেম্পোরাল কর্টেক্সের যে এলাকাগুলো ভাষা এবং বাচনিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে সহায়তা করে বলে মনে করা হয়, মেয়েদের ক্ষেত্রে সেগুলো ছেলেদের চেয়ে অন্ততঃ ২৯ ভাগ বিবর্ধিত থাকে। শুধু তাই নয়, মেয়েদের মস্তিস্কে রক্তসঞ্চালনের হার ছেলেদের ব্রেনের চেয়ে শতকরা ১৫ ভাগ বেশি থাকে। কাজেই ‘বড়’র ব্যাপারটা নির্ভর করছে আপনি কোন দিক থেকে দেখবেন।
আর বড় ছোটতেই বা কি এসে গেল? হাতীর ব্রেন মানুষের ব্রেনের চেয়ে অনেক বড়। কেউ বলবে না যে হাতীর বুদ্ধি মানুষের চেয়ে বেশি, তাই না? 🙂
@অভিজিৎ,
খুব ইন্টারেষ্টিং ব্যাপার তো। কিছু ধর্মীয় বই পত্রতে ধর্মের পুরুষ ঘেষা রীতিনীতির সাফাই গাওয়াতে প্রায়ই এটা দেখি। বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় নাকি প্রমানিত যে নারীর বুদ্ধি শুদ্ধি কম, কারন মগজের ওজন। কিছুটা হলেও বিভ্রান্ত ছিলাম।
বিবর্তন বিষয়ক লেখাতেই প্রায়ই দেখি মগজের ওজন দিয়ে বুদ্ধিমত্তার পরিমাপ হচ্ছে। আমার কাছেও প্রশ্নবোধক ঠেকেছিল যে এটা কতটা সঠিক? নীল তিমির বুদ্ধি তো তাহলে আমার থেকে অনেক বেশী। কে যেন ব্যাখ্যা করেছিলেন যে এটার তূলনার জন্য মগজের ওজনের সাথে শরীরের মোট ওজনের অনুপাতের তূলনা করতে হবে।
@আদিল মাহমুদ,
ভালই হতো, ইভ টিজিং, পরকীয়া প্রেম ইত্যাদি টার্মস্গুলো আর থাকতোনা। সমাজ ব্যালেন্সড হয়ে যেতো।
@আদিল মাহমুদ,
হ্যা আপনি যে এটা বলতে চেয়েছেন তা বুঝেই আনাকে উত্তরটা দিয়েছিলাম।
আমার মতে পশ্চিমের মেয়েরা আলাদা নয়, আমাদের দেশের তুলনায় প্রায় সব দিক থেকেই এদের সুযোগ সুবিধা এবং অধিকার বেশী বলে এদের দৃষ্টভংগী এবং কাজকর্মে পার্থক্য দেখা যায়। আমার নিজের অভিজ্ঞতা, এখানে আমার চারপাশের মেয়ে বন্ধুদের ( যাদের অনেকেই বাংলাদেশ, ভারত বা চায়নার আর আমেরিকান বা কেনেডিয়ান তো আছেই) দেখে এটুকু বলতে পারি যে এদেশের মেয়েদের মধ্যে এমন কিছু দেখিনি যা দিয়ে বলতে পারি যে তারা আলাদা। সামাজিক সাংস্কৃতিকভাবে যতটুকু পার্থক্য কথা অনেকে বলেন সেটা অন্য বিষয়, সেটাও পরিবেশের কারণেই বদলাতে পারে।
না আসলে বুঝতে পারিনি, এবং বুঝলেও আপনার সাথে একমত হতে পারছি না ঃ)। আমার তো মনে হয় বরং, মেয়েদেরও ছেলেদের কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে ইভ টিজিং করার ক্ষমতা থাকলে, বা অনাকাঙ্খিতভাবে ইভ টিজিং করা ছেলেগুলোর কানটা ধরে দুটো চটকানা লাগিয়ে দিতে পারলে আমরা দেশে একটা সুস্থ পরিবেশ গড়তে পারতাম! এদেশের মেয়েদের তো আমাদের দেশের মত এত কিছু সহ্য করতে হয় না( তবে একেবারেই যে হয় না তা অবশ্য নয়) বা তারাও ইচ্ছে করলে ইভ টিজিং করতে পারে তা তে করে কোন মহাভারতটাই বা অশুদ্ধ হয়ে গেছে? বরং তো মনে হয় এসব ব্যাপারে এখানকার সমাজের মূল্যবোধ বা নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার মত বিষয়গুলো আমাদের সমাজের চেয়ে অনেক বেশী এগিয়ে গেছে । আর মেয়েরাও অনেকই পরকীয়া করে, সংখ্যাগত দিক দিয়ে কত বেশী বা কম তা জানি না, কিন্তু ছেলেদের সাথে সাথে মেয়েরাও যে পরকীয়া করে তা তো কোন নতুন সংবাদ নয়।
@অপার্থিব,
আপনার বিশ্লেষনটি চমৎকার লাগলো। ধন্যবাদ।
@অপার্থিব,
এই সতর্কতার ব্যাপারটি কি কোন পর্যায়ে কাজ করে? আমি হয়ত পরিভাষা ব্যবহারে ভুল করছি, কিন্তু আমার প্রশ্নটা অনেকটা এরকম — এই সতর্কতা কি শুধুই conscious সতর্কতা, নাকি বিবর্তনের ফলে এটা জীনগত পর্যায়ে কাজ করে যার ফলে সতর্কতার আদি কারণ না থাকলেও সেটি পুরোপুরি বিদায় নেয় না? একই প্রশ্ন পুরুষদের অসতর্কতার ক্ষেত্রেও করা যায়।
@রৌরব, মানুষের বিবর্তনে শুধু জিনগত দিকটি বিচার করা বোধ হয়ঠিক নয়। আমরা জিনগত অনেক বৈশিষ্ট্যকেই বুদ্ধি দিয়ে বা সাংষ্কৃতিকভাবে অভিযোজিত করে নিতে সক্ষম আর এজন্যই মানুষের বিবর্তন অন্যান্য প্রাণির বিবর্তনের তুলনায় অঙ্কে বেশী জটিল দিকে মোড় নিয়েছে। এই সতর্কতা পুরোপুরি জিনগত কিনা সেটা হলফ করে বলা সম্ভব নয়, তবে চারপাশের পরিবেশ এবং সীমাবদ্ধতাগুলো বদলে গেলে এই সতর্কতার পরিমাণও যে বদলে যেতে পারে তা পাশ্চাত্যে মেয়েদের যৌনতার চর্চা বা সাংষ্কৃতিক পরিবর্তন থেকেই বোঝা যায় (এই লেখায় আগে করা বেশ কয়েকটি মন্তব্যে এ নিয়ে আরও কিছু কথা বলেছি, তাই এখানে আর সব কিছু রিপিট করছি না)। বিবর্তনের বিভিন্ন নিয়মই এখন আর সেভাবে প্রযোজ্য নাও হতে পারে, যেমন ধরুন এখানে বংশবৃদ্ধির হার নেগেটিভ এ চলে গেছে অনেক দেশেই। এটা মানব সভ্যতার জন্য ভালো কি খারাপ সেটা অন্য আরেক বিতর্ক কিন্তু এর ফলে মেয়েদের যে যৌন স্বাধীনতার সুযোগ ঘটেছে তা কিন্তু বিবর্তনের অনেক প্রচলিত নিয়মকে ভায়োলেট করে।
@রৌরব,
আমার মনে হয় পুরুষরা সহজেই ভিজ্যুয়ালি মেয়েদের
প্রতি আকৃষ্ট হয়।
মেয়েরা মনের মিল বা ভালবাসা জন্মালেই
পুরুষের দিকে এগোয়।
বিভিন্ন মনোবিশ্লেষনে এ কথাটাই উঠে এসেছে!
এজন্য একজন নারীর সাধারনতঃ সঙ্গীর অভাব হয়না।
ছেলেরা সাধারনতঃ ভিজ্যুয়ালি রিএ্যাক্ট করে।
তাছাড়া মেয়েরা ছেলেদের ব্যক্তিত্ব বাচনভঙ্গি এগুলোও বিবেচনায় নেয়।
@অপার্থিব,
সমস্ত লেখাটার সারমর্ম আমি ভুল বুঝে না থাকলে এই মন্তব্যে পাওয়া যাবে।
আভিজিৎ দা প্লিজ ভুল হলে শুধরে দিন। 🙂
‘লুল পুরুষ’ এরশাদকে নিয়ে লিখতে গিয়ে কিছু স্মরনীয় উক্তি মনে পড়ে গেল। এগুলো এরশাদ জামানায় আর পরে দারুণ মার্কেট পেয়েছিল
‘আমার শরীরটা অ্যাথলেটদের মতো। দড়ির মতো পাকানো। মেয়েরা যদি অন্যরকম আকর্ষণ বোধ করে তো আমি কি করতে পারি?’
-এরশাদ।
‘এরশাদের যদি বাবা হওয়ার ক্ষমতাই থাকত তাহলে দেশ এতদিনে কচি-কাচার আসরে ভরে যেতো।’
-জিনাত।
‘লেজ হিসেবে নামের শেষে এরশাদ বা হুসেইন নামটা যোগ করলেই সবাই এরশাদের সন্তানের মা হতে পারে না।’
-বিদিশা।
‘এরশাদ সাহেব, আপনে নাকি জেনা করেন?’
-চর মোনাইয়ের পীর।
‘সুন্দরবনের সব গাছের কাঠ যদি কলম হয়, বঙ্গোপসাগরের সব জল যদি কালিও হয়, তবু এরশাদের গুণগান লিখে শেষ করা যাবে না।’
-মাওলানা মান্নান ।
‘এরশাদের ডাকে আমি রাস্তা ঝাড়ু দিতেও রাজি আছি।’
-আনোয়ার জাহিদ।
‘জীবনে যতবার এরশাদ এরশাদ করেছি, ততবার আল্লাহকে ডাকলে অলি-আউলিয়া হয়ে যেতাম।’
-শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন।
কোটেবল এরশাদ নামে কেউ বই লিখায় হাত দিতে পারেন 🙂
@অভিজিৎ,
এরশাদের আরেকটি যোগ করছি, হুবহু মনে নেই, ৯৯ সালের ঘটনা যতদুর মনে পড়ে।
তার দলের কর্মী সভায় তিনি অংগীকার করেন, “আর যদি আমার নামে কোন নারী কেলেংকারী শোনেন তবে আপনারা আমার দুই গালে জুতার বাড়ি দিবেন”।
শাহ মোয়াজ্জেমের ডায়লোগ অনন্য।
মনে পড়ে এরশাদ আমলে একবার উন্মাদে তার প্যারোডি আঁকা হয়। একটি বড়সড় ষাঁড় আকৃতির কুকুর, চোখে চশমা পরানো যা হুবহু শাহ মোয়াজ্জেমের মুখভাব এনে দিয়েছে। সাথে ডায়লোগ, “সরকারী কুকুর চাষ প্রকল্পে প্রজননের কাজে ব্যাবহৃত হইবে”।
একই লেখায় কাজি জাফরেরও ছিল, পুরো মনে নেই; অনেকটা এমন; কাজি ফাপর লুইচ্চা…চিনি খাই চাইট্টা…
@আদিল মাহমুদ,
হাঃ হাঃ, এরশাদের জামানায় শাহ মোয়াজ্জেম আর চিনি চোরা জাফর ব্যাপক বিনোদনের উৎস ছিলো। মিস করি সেই সময়কার বিটিভির নিউজ আর আমাগো ফার্স্ট লেডি রওশন এরশাদের ‘ভাষণ’। 😀
@অভিজিৎ,
আসলেই ব্যাপক বিনোদন তারা দিয়েছেন। রাজনীতিবিদদের প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ক্লাউন ষ্ট্যাটাস দেবার জন্য এনারা পূর্ন কৃতিত্বের অধিকারী। বিটিভি সফল ভাবে নাম পায় সাহেব বিবি গোলামের বাক্স রূপে।
এখনো চোখে ভাসে শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনের চাপাবাজি, জিরো আর জিরো যোগ করলে জিরোই হয়।।
আনোয়ার জাহিদের তাবিজ বেচা ষ্টাইলে কম্পমান গলায় এরশাদ বন্দনা…বাগদাদের চোর নামে খ্যাতিমান মাহমুদুল হাসানও কম বিনোদন দেননি।
সে সময় অনেকে দোকানে গিয়ে বলত, এক সের কাজি জাফর দেন 🙂 ।
@অভিজিৎ দা,
লুল পুরুষ এরশাদকে নিয়ে নয়ের দশকে একটি ব্যাঙ্গাত্নক শ্লোগান ছিল:
—
পুরুষের শক্তিমত্তা ও বহুগামিতা নিয়ে আপনার লেখাটি বরাবরের মতোই খুব ভাল। চলুক। :yes:
আমার হঠাৎ মনে পড়ল, এই বিবর্তন এবং পুরুষের বহুগামিতা নিয়ে ৫ বছর আগে
একটা গল্প লিখেছিলাম-যার মূল বক্তব্য ছিল এই প্রবন্ধের বক্তব্য-তবে সেটা ছিল গল্প!
অন্য পৃথিবীঃ
ডাউনলোড করে পড়তে হবে-অনলাইন পিডি এফ ঘেঁটে গেছে।
পশ্চিমের বিবাহবিচ্ছেদ আইনকে আমদের দেশের চেয়ে উদার বলা যায় না। অন্তত আমেরিকায় বিবাহ বিচ্ছেদ আইনে পুরুষদের যথেষ্ট ক্ষতি স্বীকার করতে হয়। Alimony, Childcare এর আইনগুলি অন্তত পুরুষদের বিপক্ষেই যায় বলে বেশিরভাগ পুরুষেরা মনে করে। যার কারণে Mens Rights Group গঠিত হয়েছে। আর এই কারণে সাধারণ পুরুষদের বিবাহ বিচ্ছেদের আগে ভেবে চিন্তে এগোতে হয়। আমদের দেশে সেরকম কোন আইন নেই। বরং নেতিবাচক সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গীর কারণেই বিবাহ বিচ্ছেদের দিকে এগোয় না ইচ্ছা থাকলেও। কাজেই উপরের উক্তিকে ঘুরিয়ে “পশ্চিমা বিশ্বে প্রভাবশালী পুরুষেরা তাদের প্রভাবের জন্যই কঠিন বিবাহবিচ্ছেদ আইন সত্বেও একাধিক স্ত্রী গ্রহণ করার সুযোগ করে নিতে পারেন” বলাটা বেশি ঠিক হত।
পুরুষের একাধিক নারী গমণের ইচ্ছা নিয়ে বিতর্ক নেই-বিতর্ক নেই এর পেছনের থাকা বিবর্তন জনিত কারন নিয়েও-কিন্ত ক্ষমতাশালী মাত্রই পরকীয়াতে নিমগ্ন বা বেশী ইচ্ছুক-এগুলো অতি সরলীকরন।
প্রথমত ক্ষমতাবানদের পরকীয়া সামনে আসে-তাই দেখা যায়। তার মানে এই নয় যে যেসব পুরুষের ক্ষমতা নেই-তারা পরকীয়া করে না-বা সমান সংখ্যায় করে না। তাদের পরকীয়ার খবর মিডিয়াতে আসে না বলে তাদের বাদ দেওয়া ঠিক না।
দ্বিতীয়ত অনেক ক্ষমতাবান পুরুষই যথেষ্ঠ ভদ্র জীবন জাপন করেছেন। বিলগেটস, স্টিভ জবস , বা আম্বানীদের জীবনে একাধিক নারী ভোগের কেচ্ছা কেও শোনে নি। হুমায়ুন আহমেদের প্রেমকে নারীলোলুপতা বলে চালানো ঠিক না-তাহলে প্রেম মাত্রই লোলুপতা বলে মানতে হয়।
@বিপ্লব পাল,
ভাল মন্তব্য। অনেক ক্ষমতাবান পুরুষই যথেষ্ঠ ভদ্র জীবন জাপন করেছেন। কাজেই ক্ষমতাবান হলেই কেউ পরনারীতে আসক্ত হবে এর কোন মানে নেই। ঠিক কথা। কিন্তু তুমি নিজেই প্রথম লাইনেই পুরুষের বহুগামিতার লালসার ইঙ্গিত করে বলেছ – ‘পুরুষের একাধিক নারী গমণের ইচ্ছা নিয়ে বিতর্ক নেই’। বাস্তবতা হল, পুরুষেরা ক্ষমতাশালী হয়ে উঠলে সেই লালসা পুরিস্ফুটনের সুযোগ থাকে বেশি, ব্যাপারটা ত্বরান্বিত হয় অনেক ক্ষেত্রেই। সেটাই বলার চেষ্টা করা হয়েছে। ক্ষমতা থাকলেই কেউ এরশাদের মত নারীলোলুপ হয় না। কিন্তু এরশাদের মত এত ব্যাপকহারে নারীলোলুপতা বাস্তবায়িত করতে হলে রাজৈনৈতিক, সামাজিক বা অর্থনৈতিকভাবে যথেষ্ট ক্ষমতাশালী হওয়া চাই। সেটাই বলার চেষ্টা করেছি। আকবরের পক্ষেই সম্ভব ছিলো ৫০০০ নারীর হারেম পোষার, রহিমুদ্দিনের পক্ষে নয়। 🙂
লরা বেটজিগের এই বইটা বেশ ভাল – Despotism and Differential Reproduction: A Darwinian View of History
@অভিজিৎ,
আসল কথা হল ঝুঁকি নেয়ার ইচ্ছার মাত্রা ও সুযোগ। রাজৈনৈতিক, সামাজিক বা অর্থনৈতিকভাবে যথেষ্ট ক্ষমতাশালী না হয়েও শুধু ঐ দুই কারণের জন্যেও বহুগামী পুরুষ দেখা যায়। আমাদের দেশে বস্তীতে গরীবদের মধ্যেও প্রায়ই এরকম দেখা যায়। বহু স্বামীহীন নারীকে দেখা যায় যারা একাধিক সন্তানের দায় বয়ে বেড়াচ্ছে, আর তার প্রাক্তন স্বামী আরেক নারীকে বিয়ে করে (অনেক সময় বিয়ে না করেও) সন্তান তৈরী করছে। এবং এটা চলতেই থাকে। বস্তী জীবনে সামাজিক রীতিনীতির বাধানিষেধ (Social Inhibition) বা চাপ না থাকাটা ঝুঁকি নেয়ার ইচ্ছার মাত্রা ও সুযোগ কে বাড়িয়ে দেয়।
@অপার্থিব,
সার্বিকভাবে ঝুঁকি নেয়ার ইচ্ছার মাত্রা ও সুযোগের ব্যাপারটা ঠিক আছে। কিন্তু বৃহৎ স্কেলে দেখলে ক্ষমতাশালী পুরুষেরাই অধিকহারে সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারে। বস্তির সহায় সম্বলহীন কলিমুদ্দিনের পক্ষে কেবল আমিনাকে ছেড়ে রহিমার দিকে যাওয়াতেই সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু মরোক্কোর সুলতান মৌলে ইসমাইল যেভাবে ১০৪২জন সন্তান সন্ততি তিনি পৃথিবীতে রেখে গেছেন, সেটা কখনোই হত না যদি না তিনি ‘সুলতান’ হতেন। চেঙিস খান যুদ্ধ জয়ের সময় ক্ষমতার দাপটে পুরো অঞ্চলের এত নারীদের ভোগ করেছেন যে এখন এশিয়া মাইনরের নাকি আটভাগের একভাগ জনপুঞ্জে নাকি চেঙ্গিসের জিনের রুট ট্র্যাক করা যায়। এটা বস্তিবাসী কলিমুদ্দিনের পক্ষে সম্ভব না। সেজন্যই সাতোসি কানাজাওয়া তার বইয়ে বলেছেন এভাবে –
Powerful men of high status throughout the history attained very high reproductive success, leaving a large number of offspring (legitimate or otherwise), while countless poor men in the country died mateless and childless. …In other words, reproductive access to women is the goal, political office (in modern times) is but one means. …
@অভিজিৎ,
“কিন্তু” যোগ করার কোন দরকার ছিল্ না। সুযোগ থাকলেই না সুযোগের সদ্ব্যবহারের প্রশ্ন উঠে। আমি সুযোগের কথা বলেছিলাম সেখানে সদ্ব্যবহার প্রচ্ছন্ন ছিল। যেখানে যে সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে সেটাই সদ্ব্যবহার করা হচ্ছে। এটা বস্তীবাসীদের বেলায় যতটা সত্য সুলতানদের বেলায় ও ততটা সত্য। সুলতানদের সুযোগ বস্তীবাসীদের চেয়ে বেশি, আর বস্তীবাসীদের সুযোগ তোমার আমার চেয়ে বেশি। 😉
একটা গুরুত্বপূর্ণ নিবারক (Constraint) কথা বলতে ভুলে গিয়েছিলাম উপরের মন্তব্যে। সেটা হল বিবর্তন প্রোথিত নৈতিকতাবোধ। সুযোগ থাকলেও সুলতানদের মত বা বস্তীবাসীদের মত বহুগামিতা অনেকেই করবে না। এটা তাদের সহজাত রুচিতে বাধবে। আমার “বিবর্তনের আলোকে নৈতিকতা” প্রবন্ধে সেটাই জোর দিয়েছিলাম যে বিবর্তনের সহজাত প্রবৃত্তি পারিসাংখ্যিক, সবাই একই রকম প্রবৃত্তি বোধ করে না। সেটাও একটা গুণক হিসেবে মনে রাখতে হবে এই আলোচনায়।
@অপার্থিব,
কিন্তু একটি জিনিস আমরা ভুলে যাচ্ছি। রিসোর্স একুমুলুলেশনের ব্যাপারটা। প্রত্যেকেই তাদের ‘স্ট্যাটাস’ বাড়াতে চায় – অর্থ কড়ি, প্রভাব প্রতিপত্তি। বেপারটার পেছনে ‘সাইকোলজিকাল ড্রাইভ’ হচ্ছে অধিক নারীদের দখল আর অর্জন। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে হয়তো কোন বস্তিবাসী আমার আপনার থেকে বেশি সুযোগ পেতে পারে, কিন্তু স্বাভাবিক ট্রেন্ড হচ্ছে প্রভাবশালী বা ক্ষমতাশালী হলে তার অর্জিত ধন সম্পদ এবং স্ট্যাটাসের মাধ্যমে সে অধিকতর নারীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে। এমনকি প্রভাবশালীরা আইনকানুনকেও কাঁচকলা দেখাতে পারে। সেজন্য টেন্ডিন্সি থাকে রিসোর্স একুমুলেশনের। আর একবার সেটা অর্জিত হয়ে গেলে তাদের অনেকে (সবাই নয় অবশ্যই) বিনিয়োগ করে নারীর আকর্ষণের ক্ষেত্রে।
আর বিবর্তন প্রোথিত নৈতিকতাবোধের যে ব্যাপারটা বলেছেন সেটার সাথে অবশ্যই একমত।
মনস্তাত্ত্বিক বিবর্তন নিয়ে বাংলাভাষায় লেখালেখি খুব একটা চোখে পড়েনা । অামার মত অনেকে আপনার এ লেখা যথেষ্ট উৎসাহ নিয়ে পড়বে বলে অামার বিশ্বাস । বিবর্তনে কয়েক হাজার বছর পরও নারীরা এখনও কেন বহুগামীতায় নিরুৎসাহ বোধ করে – এ ব্যপারে আপনার মতামত আগামীতে জানতে পারলে অতীব আনন্দিত হব ।
@সংশপ্তক,
ধন্যবাদ মন্তব্য করার জন্য। নারীরা শুধু নয়, আধুনিক বিশ্বে বহু পুরুষেরাও বহুগামিতায় নিরুৎসাহিত বোধ করে, যদিও বিবর্তনীয় পথপরিক্রমায় পুরুষতান্ত্রিক বহুগামিতার ছাপ স্পষ্ট। মনোগামিতার ব্যাপারগুলোকে (যদিও মানব সমাজ পুরোপুরি মনোগোমাস নয়) বিবর্তনের গেম থিওরীর টানাপোড়নে ব্যাখ্যা করা যায়। একটি ব্যাখ্যা হল, বহুগামী সমাজে প্রতিপত্তিশালী পুরুষেরা অধিকাংশ নারীর দখল নিয়ে নিত, আর অধিকাংশদের ক্ষেত্রে কিছুই জুটত না। আগেকার সময় যখন রাষ্ট্র ছিলো না, মানুষ বনে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতো, শিকার আর ফলমূল সংগ্রহ করতো, তখন সহিংস এবং প্রতিপত্তিশালী পুরুষেরা বাড়তি সুবিধা পেত, কারণ লড়াইয়ে প্রতিপক্ষদের হারিয়ে নারীর দখল নিতে তারাই সামনে থাকতো। কিন্তু আধুনিক রাষ্ট্রগঠনের এবং গণতান্ত্রিক আইন কানুনের চর্চার ফলে সেটা বদলে গেছে, এখন আধুনিক রাষ্ট্রে অধিকাংশ পুরুষেরা পলিগামিতা নয়, মনোগামিতা থেকেই অধিকতর প্রজননগত সুবিধাভোগ করে। এখানে বিল গেটস-এরও একটিই স্ত্রী থাকে, আর বাংলাদেশের রহিমুদ্দিনেরও। এমন নয় যে বিল গেটসের বহ্য পয়সা কড়ি আর যশ বলে প্রায় সব নারীর দখল নিয়ে নিবে, আর রহিমুউদ্দিন বুড়ো আঙ্গুল চুষবে। কাজেই এই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাটা ‘অধিকাংশ পুরুষের’ জন্য ভালো। আর নারীরা জৈবিকভাবে সঙ্গি নির্বাচনের ব্যাপারে ‘খুতঁখুতে’। এই ‘ফিমেল চয়েস’ ব্যাপারটা অনেক বেশি ত্বরান্বিত হয়েছে ভিক্টোরিয় সময় পার হয়ে আধুনিক ব্যবস্থায় – যখন তারা বাইরে কাজ করেছে, অর্থিনৈতিক স্বাধীনতা ভোগ করছে অনেক বেশি। ‘ফিমেল চয়েস’ রূপ নিয়েছে ‘ফিমেল ভয়েস’-এ। কাজেই আজকের মনোগামী ব্যাবস্থাটা নারী পুরুষ সবার জন্যই এক ধরণের উইন-উইন সিচুয়েশন এই মুহূর্তে। ভিক্টোরিয় সমাজে কিংবা আগেকার রাজাবাদশাদের আমলে ব্যাপারটা সেরকম ছিলো না। তখন হতদরিদ্র রহিমুদ্দিনের স্ত্রী হবার চেয়ে বরং হারেমে ৫০০০ স্ত্রী পোষা আকবরের ‘জোধা বাঈ’ হয়ে থাকলেই তারা অধিকতর সুবিধা ভোগ করত একটি নারী – ক্ষমতা, প্রতিপত্তি সবকিছুতেই। তাই পুরুষ নারী সবার ক্ষেত্রেই মনোগামিতার সোশাল ডায়নামিক্স এর পরিবর্তন আমার মতে খুবই সাম্প্রতিক। এ নিয়ে পরে কিছু লেখার ইচ্ছে আছে।
@অভিজিৎ,
কিন্ত অন্তত অমুসলিমদের ক্ষেত্রে তো একটা আইনগত বাধাও আছে। সেটা না থাকলে বহুবিবাহ একেবারে হত না, তা কি বলা যায়? অর্থাৎ, ব্যাখ্যাটা পুরো বিবর্তনীয় কিনা।
বহুবিবাহ-নিরোধী আইনটা ভাল কিনা, এ ব্যাপারেও হয়ত তর্ক চলে, তবে সেটা আপনার প্রবন্ধের মূল বক্তব্যের সাথে অততটা সংশ্লিষ্ট নয়।
@রৌরব,
ঠিক বুঝলাম না। আইনগত বাধার ব্যাপারটা কি বলতে চাচ্ছেন? মনোগামী ব্যাবস্থাটা নারী পুরুষ সবার জন্যই এক ধরণের উইন-উইন সিচুয়েশন দেয় বলেই গণতান্ত্রিক আইনকানুনে মনোগামিতাকেই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। এই ‘উত্তোরণ’টা খুবই সাম্প্রতিক। বিবর্তনীয় স্কেলে হিসেব করলে ইতিহাসের একটা বড় অংশেই পুরুষেরা ছিল বহুগামী। সেই র্যামনেন্ট এখনো বেশ ভালভাবেই বর্তমান। তাই পশ্চিমে একসাথে একাধিক স্ত্রী না রাখা গেলেও সিরিয়াল পলিগামিতা তো আছেই। আর কিছু মুসলিম বিশ্বে সেরকম অন্যান্য ট্র্যাডিশনাল সমাজে বহুগামিতা সরাসরিই দৃশ্যমান। আগে হিন্দু বা খ্রীষ্টান সমাজেও এরকম ছিলো। আমাদের গ্রামে আমার ঠাকুর দাদার আমলে এক ব্রাহ্মণকে ষেটে বামুন ডাকা হত, কারণ তিনি ষাটটি বিয়ে করেছিলেন।
@অভিজিৎ,
আপনি আগে কোথাও কথাপ্রসংগে ডারউইনীয় গ্যাস্ট্রোনমির কথা বলে ছিলেন, গরমের দেশের লোকেরা বিবর্তনীয় কারণে মসলা বেশি খায় ইত্যাদি। কিন্তু মসলা বেশি খেতে হবে এমন কোন আইন তো নেই!
এটি কি সত্যিই বলা চলে যে আমাদের আইন-কানুন সব বংশবিস্তারের অপটিমালিটির প্রকাশ? এক বিয়ের ব্যাপারটার সাথে তো নারী অধিকার ভীষণভাবে জড়িত বলেই জানি।
অবশ্য কুলীন ব্রাহ্মণদের রীতিরকম পেশা হিসেবে হিসেবে বিয়ে করাটা নারী মুক্তি (যতটুকু অর্জিত হয়েছে) এবং সামাজিক-অর্থনৈতিক কারণে আইন গত বাধা না থাকলেও বোধহয় আর হত না।
@রৌরব,
আইনের কারণে তো নয়, গরম দেশে রান্না বান্নায় বেশি মসলা ব্যবহার করা হয় জীবানু থেকে রক্ষার পাওয়ার প্রয়োজনে। গরম দেশে খাবার দাবার খুব তাড়াতাড়ি পঁচে যায়। মসলাপাতিগুলো এই খাবার পঁচে যাওয়া কিংবা পঁচা খাবার খেলে যাতে পেটে ঝামেলা না করে – এগুলো থেকে রক্ষা করে। তাই শীতপ্রধান দেশ অপেক্ষা গ্রীষ্মপ্রধান দেশের খাবারে বেশি মশলা ব্যবহার করা হয়। এটার সাথে অবশ্য বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের কোন সম্পর্ক নেই। 🙂
অবশ্যই। এর কারণ পুরুষেরা স্বভাবগতভাবে বহুগামী। তারা সুযোগ পেলেই সেটার প্রকাশ ঘটায়। কাজেই চাপটা আসতে হবে মেয়েদের তরফ থেকেই। সেটা হয়েছেও। হয়েছে মূলতঃ অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনের মাধ্যমেই। ভিক্টোরিয় সমাজে কিংবা আকবরের আমলে সে সুযোগ তাদের ছিলো না।