যে কোন বইয়ের অনুবাদ একশত ভাগ সঠিক নয়। এমনকি যে কোন বইয়ের লিখিত ভাষাতেই লেখক ছাড়া অন্যের বক্তব্য বা ব্যাখ্যা একশত ভাগ সঠিক নয়। এর কারণ অনুবাদের ক্ষেত্রে অনুবাদকের নিজস্ব চিন্তা চেতনা, লক্ষ্য উদ্দেশ্য, পক্ষপাতিত্ব ইত্যাদি কাজ করে। সেই কারণেই কুরানে কোন কিছু ভুল পেলেই কুরানের ডিফেন্ডাররা বলে উঠেন এটা কুরানের ভুল নয়, এটা অনুবাদকের বা ব্যাখ্যা দাতার ভুল, পাঠকের বুঝার অক্ষমতা। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে কুরানের লেখক তো আজ বেঁচে নেই, এ ক্ষেত্রে অনেকগুলো অনুবাদ থেকে কোনটি সঠিক তা বুঝার উপায় কি?

আমার মতে একশত ভাগ সঠিক কোন অনুবাদই পাওয়া হয়তো সম্ভব নয়, তবে আমরা সঠিক অনুবাদ নির্ণয়ের কয়েকটি মাপকাঠি নির্ধারণ করতে পারি এভাবে-

• অনুবাদক কতটা ব্যাকরণের নিয়ম অনুসরণ করেছেন।
• মূল শব্দের আলোকে শব্দের অর্থ পেতে অনুবাদকের প্রচেষ্টা।
• সমার্থক শব্দের ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন।
• একই ধরণের বাক্যে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন অর্থ না করা।
• যে সময় ও জনগোষ্ঠিকে উদ্দেশ্য করে বইটি লিখা, সে জনগোষ্ঠির জাগতিক জ্ঞান ও বইটি অনুসরণে জীবনাচারের প্রতি অনুবাদকের জ্ঞান।
• অনুবাদকের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
• দীর্ঘ সময় ধরে অনুবাদের গ্রহন যোগ্যতা ও লেখকের সমকালীন যুগে অনুবাদ ও ব্যাখ্যা সমুহের গ্রহন যোগ্যতা।
ব্যাপারগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাকঃ

• যে কোন ভাষা শুদ্ধ রুপে লিখতে পড়তে ও বলতে পারার জন্যে ব্যাকরণের শিক্ষা অপরিহার্য। অন্য ভাষার ব্যাকরণের উপর যার যত বেশী দখল। সে ব্যাকরণের সে ভাষা নির্ভুল ভাবে লিখতে ও পড়তে পারে। আর তাই যে কোন অনুবাদের ক্ষেত্রে অনুবাদক ব্যাকরনের নিয়ম যত বেশী অনুসরণ করবেন, তত বেশী বিশুদ্ধ হবে তার অনুবাদ। যেমন ব্যাকরণ না জানা থাকায় এক ব্যক্তি একজন অনুবাদকের ভুল ধরতে পারেন নি। বিস্তারিত নিয়ম আলোচনা না করে উক্ত অনুবাদকের অনুবাদ করা দুটি আয়াতের থেকেই অনুবাদকের কারসাজির উদাহরণ দিচ্ছি।

أَفَمَن زُيِّنَ لَهُ سُوءُ عَمَلِهِ فَرَآهُ حَسَنًا فَإِنَّ اللَّهَ يُضِلُّ **مَن** يَشَاء وَيَهْدِي مَن يَشَاء فَلَا تَذْهَبْ نَفْسُكَ عَلَيْهِمْ حَسَرَاتٍ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ بِمَا يَصْنَعُونَ (35:8)

35:8 (Asad) Is, then, he to whom the evil of his own doings is [so] alluring that [in the end] he regards it as good [anything but a follower of Satan]? For, verily, God lets go astray him that wills [to go astray], just as He guides **him** that wills [to be guided]. [6] Hence, [O believer,] do not waste thyself in sorrowing over them: verily, God has full knowledge of all that they do! –

قُلْ أَيُّ شَيْءٍ أَكْبَرُ شَهَادةً قُلِ اللّهِ شَهِيدٌ بِيْنِي وَبَيْنَكُمْ وَأُوحِيَ إِلَيَّ هَذَا الْقُرْآنُ لأُنذِرَكُم بِهِ وَ**مَن** بَلَغَ أَئِنَّكُمْ لَتَشْهَدُونَ أَنَّ مَعَ اللّهِ آلِهَةً أُخْرَى قُل لاَّ أَشْهَدُ قُلْ إِنَّمَا هُوَ إِلَـهٌ وَاحِدٌ وَإِنَّنِي بَرِيءٌ مِّمَّا تُشْرِكُونَ (6:19)

6:19 (Asad) Say: “What could most weightily bear witness to the truth?” Say: “God is witness between me and you; and this Qur’an has been revealed unto me so that on the strength thereof I might warn you and all **‘whom** it may reach.” Could you in truth bear witness that there are other deities side by side with God? Say…
ব্যাকরণের নিয়ম মেনে বাক্যের মাঝে “মান” শব্দ আসায় এর অর্থ whom করা হয়েছে। যেটা আগের আয়াতে করা হয়নি। এরপরেও আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে পথভ্রষ্ট করেন নাকি যে চায় তাকে পথ ভ্রষ্ট করেন ব্যাপারটি মীমাংসায় আসতে না পারেন। তাহলে চলুন আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করি।

رَبَّنَا لاَ تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِن لَّدُنكَ رَحْمَةً إِنَّكَ أَنتَ الْوَهَّابُ (3:8)

3:8 (Asad) “O our Sustainer! Let not our hearts swerve from the truth after Thou hast guided us; and bestow upon us the gift of Thy grace: verily, Thou art the [true] Giver of Gifts. –

3:8 (Y. Ali) “Our Lord!” (they say), “Let not our hearts deviate now after Thou hast guided us, but grant us mercy from Thine own Presence; for Thou art the Grantor of bounties without measure

হে আমাদের পালনকর্তা! সরল পথ প্রদর্শনের পর তুমি আমাদের অন্তরকে সত্য লংঘনে প্রবৃত্ত করোনা এবং তোমার নিকট থেকে আমাদিগকে অনুগ্রহ দান কর। তুমিই সব কিছুর দাতা। একি! এ দোয়া তো যে বিপথে যেতে চায়, তার করার কথা নয়। এ দোয়া করছে আল্লাহর পথে চলতে চায় যে ব্যাক্তি। আর তাকে আল্লাই শিখিয়ে দিচ্ছেন, তোমাকে আমি হেদায়েত করেছি, আর আমি চাইলেই তোমাকে বিপথে নিব। তাই আমার কাছে চাও আমি যাতে তোমাকে বিপথে না নেই। আল্লাহ যদি না চাইতেন, তবে এ কথা বলার মানে কি যে হেদায়েতের পর তুমি বিপথে নিও না? কোন অনুবাদকই অনুবাদের কারসাজি করেন নি এ আয়াতে। সত্য লংঘনে প্রবৃত্ত করার কর্মটি তো আল্লাই ঘটাচ্ছেন। আর তা না করতেই বান্দার অনুরোধ!

• আরবী ভাষার সকল শব্দ তিনটি অক্ষরে গঠিত মূল থেকে আগত। সেই মূলের একটিই অর্থ হয়ে থাকে। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে অন্য ভাষায় যখন অনুবাদ করা হয়, তখন সমার্থক শব্দ ব্যবহার করা হলেও সম্পুর্ন বিপরীত অথবা সমগোত্রীয় শব্দ অনুবাদের ক্ষেত্রে পরিহার করা হয়। শব্দের মূল খুঁজেই জাকির নায়েক ধরা খেয়েছিলেন। তিনি দাহাহা শব্দের অর্থ করেছেন ডিম্ব। কারণ সেটি নাকি দুহিয়া থেকে এসেছিল, অথচ দুহিয়া নিজেই ইসম (নামবাচক শব্দ) এবং সেটি মূল শব্দ নয়। সুতরাং মূল শব্দ খুঁজেও অনুবাদকের কারসাজিগুলো ধরা যায়।

• একই বাক্য বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ভাবে অনুবাদ করলেও অনুবাদকের কারচুপি বা ছলচাতুরি ধরা পড়ে। এ প্রসঙ্গে এই ব্লগেই একজনের সাথে আলোচনা হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন تَعْتَدُواْ অর্থ আগ্রাসন। আমি বলেছিলাম এর অর্থ সীমালঙ্ঘন। দুটি সম্পুর্ন বিপরীত অর্থ বহন করে। আগ্রাসন হল আগে থেকে আক্রমন। আমেরিকা তার সেনাবিহিনীকে আগ্রাসনের আদেশ দিল, কিন্তু কিছু সীমা বেধে দিল যা অতিক্রম করতে প্রেসিডেন্ট বারণ করে দিলেন। এ অবস্থায় সেনাবাহিনীর যুদ্ধে জড়ানো সমস্যা নয়। কিন্তু প্রেসিডেন্ট যদি বলতেন যে আগ্রাসন করোনা তাহলে সীমা লঙ্ঘনের প্রশ্নই আসত না। আমার মনে হয় সেই আসাদ সাহেবের অনুবাদ পড়েই তিনি বিভ্রান্ত হয়েছিলেন। আসুন এবার আমরা আসাদ সাহেবের ছলচাতুরি দেখিঃ

وَقَاتِلُواْ فِي سَبِيلِ اللّهِ الَّذِينَ يُقَاتِلُونَكُمْ “”وَلاَ تَعْتَدُواْ إِنَّ اللّهَ لاَ يُحِبُّ الْمُعْتَدِينَ”” (2:190)

2:190 (Asad) AND FIGHT in God’s cause against those who wage war against you, but **do not commit aggression-for, verily, God does not love aggressors**. [167] –
উপরের আয়াতে কমার ভিতরের অংশ দেখুন। এবার নিচের আয়াতটি লক্ষ্য করুন

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ لاَ تُحَرِّمُواْ طَيِّبَاتِ مَا أَحَلَّ اللّهُ لَكُمْ ”’وَلاَ تَعْتَدُواْ إِنَّ اللّهَ لاَ يُحِبُّ الْمُعْتَدِينَ”’ (5:87

5:87 (Asad) O YOU who have attained to faith! Do not deprive yourselves of the good things of life which God has made lawful to you, [100] but **do not transgress the bounds of what is right: verily, God does not love those who transgress the bounds of what is right**

বুঝতেই পারছেন। অনুবাদক কুরানের আয়াতকে কিছুটা মানবিক প্রমান করতে আগের আয়াতে ভুল অনুবাদ করেছেন এবং পরের আয়াতে ঠিক অর্থটাই নিয়েছেন। মূলত تَعْتَدُواْ শব্দটি ‘আইন’ ‘দাল’ ‘ওয়া’ থেকে আগত। এর অর্থ সীমা। কুরানে অসংখ্য জায়গায় এ শব্দটি উপরোক্ত অর্থেই ব্যাবহার করা হয়েছে। উক্ত পাঠককে তাই দুটি আয়াত দিয়েছিলাম অনুবাদ করার জন্যে। জেনে শুনে তিনি ফসকে গিয়েছেন এটা আমি মনে করি না। মুহাম্মাদ আসাদ মূলত ভাবার্থ করে থাকেন। মূল অনুবাদ তিনি করেন না। এর কারণটি পরে আলোচনা করছি। পাঠকের সুবিধার্থে মুফতি তাকি উসমানীর অনুবাদ দিলাম উপরোক্ত দুটি আয়াতের।

[2:190]
Fight in the way of Allah against those who fight you,’’ and do not transgress. Verily, Allah does not like the transgressors’’.

[5:87]
O you who believe, do not hold as unlawful the good things that Allah has made lawful for you, ‘’and do not transgress. Verily, Allah does not like the transgressors’’.

পার্থক্যগুলো আশা করি পাঠকের চোখে পড়বে।

• যে কোন বই অনুবাদের ক্ষেত্রে বইটির প্রণেতার সমকালীন সময়ের সমাজ ও মানুষের জ্ঞানের পরিধি সম্পর্কে অনুবাদকের জ্ঞান থাকা আবশ্যক। যেমন ধরা যাক কেউ গ্রীক একটা বই অনুবাদ করছেন। তিনি দেখলেন যে গ্রীকরা জগতে চারটি রাসায়নিক উপাদানের কথা বলছে। পানি, মাটি, বাতাস ও আগুন। এখন অনুবাদক আজকের জ্ঞান অনুসারে গ্রীকদের এ জ্ঞানকে ভুল বলতেই পারেন। এবং সেটাই যুক্তিযুক্ত। এখন কেউ যদি দাবী করে বসে যে গ্রীকরা চারটি উপাদান বলতে আসলে রাসায়নিক উপাদানগুলর চুড়ান্ত অবস্থা বুঝিয়েছে। মাটি বলতে পদার্থের কঠিন অবস্থা, পানি বলতে পদার্থের তরল অবস্থা, বায়ু বলতে পদার্থের বায়বীয় অবস্থা এবং আগুন বলতে পদার্থের তেজস্ক্রিয় অবস্থা। তাহলে আমাকে বলতেই হবে যে সেই ব্যাক্তি ততকালীন গ্রীকদের জ্ঞানের পরিধির ব্যাপারে জ্ঞান রাখেন না। এরকম কিছু বুঝিয়ে থাকলে সেই বই এর লেখক তা উল্লেখ করেই দিতেন। কুরানের অনুবাদকেরা এ কাজটিই করে থাকেন। কোন কোন ক্ষেত্রে তারা ভুল জানাটাকেই লুকাতে চেষ্টা করেন। ব্যাপারটি বুঝানোর জন্যে আবার একটু ব্যাকরণের কাছে যেতে হচ্ছে।
আরবীতে ‘ছুম্মা’ শব্দের অর্থ তারপর। আরবীতে এর বিশেষ ধরণের ব্যবহার রয়েছে। ‘ছুম্মা’ শব্দটি ধারাবাহিকতা বুঝায়। তবে দুটি কাজের মাঝে সময়ের ব্যবধান নির্দেশ করে না। যেমন

وَعَلَّمَ آدَمَ الأَسْمَاء كُلَّهَا ”ثُمَّ” عَرَضَهُمْ عَلَى الْمَلاَئِكَةِ فَقَالَ أَنبِئُونِي بِأَسْمَاء هَـؤُلاء إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ (2:31)

2:31 (Asad) And He imparted unto Adam the names of all things; [23] **then** He brought them within the ken of the angels and said: “Declare unto Me the names of these [things], if what you say is true.” [

দেখুন কখন ‘ছুম্মা’ এসেছে। শিক্ষা অর্জনের ব্যাপারটি ঘটার পর উপস্থাপনার কাজটি ঘটেছে। এ দুটি ব্যাপার সংযুক্ত করতে আরবী কনজাঙ্কশন ‘ছুম্মা’ ব্যবহার করা হয়েছে। কারণ ‘ওয়া’ শব্দটি ধারাবাহিকতা বুঝায় না এবং ‘ফা’ শবটি immediate sequence বুঝায়।
পাঠকদের মনে হতে পারে ব্যাপারটিকে এত গুরুত্ব দিচ্ছি কেন। কারণ এই ‘ছুম্মা’ এর উপর ফিকাহ শাস্ত্রে একটি অধ্যায় আছে। যেখানে এরকম বিধান আছে যে, কোন ব্যক্তি যদি তার স্ত্রীকে বলে- যদি তুমি প্রথম ঘরে প্রবেশ কর ছুম্মা (তারপর) দ্বিতীয় ঘরে প্রবেশ কর। তাহলে তুমি তালাক। এক্ষেত্রে স্ত্রী যদি বিপরীত অর্ডারে কাজ করে। তাহলে তালাক হবে না। এবার বুঝুন ব্যাপারটি!
এখন এ ছুম্মা নিয়ে আধুনিক অনুবাদকেরা কী কী কারসাজী করলেন তা আমরা লক্ষ্য করি। কয়েক শতক আগেও মানুষ জানত যে মহাজগত পৃথিবী কেন্দ্রিক। আগে পৃথিবী পরে পৃথিবীর উপর আকাশ বানানো হয়েছে। তারপর আকাশকে সুর্য চন্দ্র দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে। আজকের বিজ্ঞানের আলোকে এ ব্যাপারটি প্রমণিত ভুল জ্ঞান। কিন্তু কুরানেও এ ভুলটিই উল্লেখ করা হয়েছে। পাঠক, উপরের আয়াতটির ‘ছুম্মা’ এর ব্যবহার লক্ষ্য রেখে নিচের কারসাজিগুলো দেখুন-

هُوَ الَّذِي خَلَقَ لَكُم مَّا فِي الأَرْضِ جَمِيعاً ”ثُمَّ” اسْتَوَى إِلَى السَّمَاء فَسَوَّاهُنَّ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ وَهُوَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ (2:29)

2:29 (Asad) He it is who has created for you all that is on earth, and has applied His design to the heavens and fashioned them into seven heavens; [20] and He alone has full knowledge of everything.

উপরের আয়াতে then “তারপর” শব্দটি খুঁজে পাওয়া কি যায়? এবার একটা পুরনো অনুবাদ দেই-

[2:29]
It is He who created for you all that the earth contains; “then” He turned to the heavens and made them seven skies – and He is the knower of all things.

এবার কি then খুঁজে পেয়েছেন? মূলত ‘ছুম্মা’ এর সঠিক অর্থ ব্যবহার করলে ছয় (স্পাইস)দিন ও আট দিন এবং পৃথিবীর পরে আকাশ সৃষ্টি। এসব সাধারণ ভুলগু্লো ধরা পড়ে যায়। তাই আধুনিক অনুবাদকেরা সজ্ঞানে এসব কারসাজি করে চলেছেন। মজার ব্যপার কি, আসাদ ও ইউসুফ আলী সাহেবের অনুবাদ সমুহে আসমান ও পৃথিবী সৃষ্টির আয়াতগুলোতেই ‘ছুম্মা’ (তারপর) এর খোঁজ পাওয়া যায় না। অথচ অন্যান্য জায়গায় এসকল আধুনিক অনুবাদকেরা ‘ছুম্মা’ এর সঠিক অর্থেই ব্যবহার করেছেন! এভাবে আমরা যদি রাসুলের যুগের মানুষের জ্ঞানের পরিধির প্রতি খেয়াল করি তাহলে কুরানে আমরা ভু-কেন্দ্রিক জগতের মডেল দেখতে পাই। কিন্তু অনুবাদকেরা এ ব্যাপারটি উপেক্ষা করে থাকেন।

• অনুবাদের ক্ষেত্রে অনুবাদকের লক্ষ্য উদ্দেশ্যর প্রতি খেয়াল রাখা দরকার, এর ওপর অনুবাদটির সঠিকতা নির্ভর করে। কুরানের বেশীর ভাগ অনুবাদ আক্ষরিক ভাবে করা। এক্ষেত্রে আগের সব অনুবাদক ও তাফসির কারকেরা ব্যাকরণ অনুসরণ করেছেন মাত্র। তবে মাওলানা মওদুদির তাফসীর তাফহিমুল কুরআন ও মুহাম্মাদ আসাদের অনুবাদ পড়লেও পাঠক বুঝতে পারবেন যে এটি আক্ষরিক অনুবাদ নয় বরং ভাবানুবাদ। যেখানে অনুবাদকের মনগড়া ও তার পক্ষপাতিত্বমুলক অনুবাদ দেখা যায়। মওদুদির লক্ষ্য ছিল রাজনীতি। তাই তিনি রাজনীতি কেন্দ্রিক ভাবানুবাদ করেছেন। সুতরাং তার অনুবাদ সঠিক হবার সম্ভবনা খুবই কম। আবার আসাদ আধুনিক বিজ্ঞান মনষ্ক মানুষের কাছে কুরানের ভুল ত্রুটিগুলো ঢাকতে নিজের মত করে ভাবানুবাদ করেছেন।

অথচ তার পুর্বে কুরানের বিখ্যাত সব অনুবাদ, তাফসিরে জালালাইন, ইবনে কাসির, ইবনে আব্বাস ইত্যাদি গ্রন্থগুল নিয়ে বিতর্ক ছিল না। অনুবাদ মূল কুরআন নয় এরুপ ধারনা থাকলেও কুরানের ভুলগুলো মানুষের অজানা ছিল। ফলে এসব অনুবাদ নিয়ে বিতর্ক ছিল না। বিজ্ঞানের অগ্রগতি ও মানুষের নৈতিক বোধের পরিবর্তনের ফলে কুরানের অনেক কিছুই আজ অমানবিক ও বৈজ্ঞানিক ভাবে ভুল মনে হচ্ছে, এবং সেটা শুধু অমুসলিমদের কাছে নয়, মুসলিমদের কাছেও। তার প্রমাণ অনুবাদে উপরোক্ত কারসাজিগুলো। দাসীদের ব্যাপারে কুরানের অনু্মোদন, নারীর ব্যাপারে নিম্ন শ্রেনীর বক্তব্য, অমুসলিমদের গালাগালি ও হুমকি ধমকি, যুদ্ধ বিগ্রহ বাধানোর আদেশ এসকল বিষয় আজ খোদ মুসলিমদের কাছেই অগ্রহনযোগ্য মনে হচ্ছে বলেই নতুন করে মানবিক প্রলেপ লাগিয়ে কুরান অনুবাদের এ প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা। তবে আমি এ প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানাই। কুরান মানবিক হোক মানুষের ছোঁয়ায়।

তথ্য সুত্রঃ

১. http://www.explorethequran.com

২. http://www.ourholyquran.com/

৩. http://www.altafsir.com/

4. http://www.ilmfruits.com/thumma-wa-and-fa

5. আনোয়ারুত তানযিল। আরাফাত পাবলিকেশন।

৬. উসুলুশ শাশী। আল বারাকা লাইব্রেরী