আহা-রে-দাড়ি !!!
রম্য রচনা
উত্তর পুরুষ
হুজুর
গত ২১ অক্টোবর ২০০৯ এম জামিলুল বাশারের লিখা “দাড়ি পোশাকের ভূমিকা” প্রবন্ধটি একটি ওয়েব পত্রিকায় পাঠ করিয়া অত্যন্ত অভিভুত হইয়াছি, যাহা ভাষায় প্রকাশ করিতে হইলে আমি অধমের গায়ে ঘাম ঝরিতে থাকিবে। তাই নিয়া মনের মধ্যে নানাবিদ প্রশ্ন আকুলি বিকুলি করিতেছে। এই দাড়ি লইয়া কত না আজব আজব গল্প আছে। আবার দাড়ির গুরুত্ব নিয়া কত না মাস্আলা আছে, তাহা নিশ্চয়ই আপনার জানা আছে। দাড়ি রাখা সুন্নত , দাড়ি রাখিলে রসুলের দিদার পাওয়া যাইবে। রসুলের একটা সুন্নত পালন করিলে দোজখ হারাম হইবে। প্রত্যেকটি দাড়িতে যতটি চুল আছে দুরুদ পড়ার সাথে সাথে ততটি ছওয়াব ফিরিশতাগণ আমল নামায় লিখিয়া রাখিবেন। অন্ধকার কবরের মধ্যে দাড়ি হইতে আলো বিকিরণ করিবে। কবরের ফিরিশতারা দাড়িতে ধরিয়া সজাগ করিয়া দিবেন। দাড়িতে ধরিয়া প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিবেন । এই ভাবে দাড়ির কথা নিয়া আমাদের সমাজে কত কথা প্রচলিত আছে। ছড়াও আছে যেমন : “আল্লাহর দেয়া নুর – না ছুয়াইও ক্ষুর ” অর্থাৎ দাড়ি সমুলে কর্তন করিও না। মনে প্রশ্নের উদয় হইলো কেন নবী রসুলগণ দাড়ি রাখিলেন ? নিশ্চয়ই আল্লাহর আদেশ কিংবা উপদেশ ছিল। আল্লাহ দাড়ি ভালবাসেন বলিয়াই হয়তো তিনি দাড়ি পছন্দ করেন। তাই যদি হইয়া থাকে তা হইলে নিশ্চয়ই আল্লাহরও দাড়ি আছে। এইটা যুক্তির কথা মনে না হইলেও মনের মধ্যে ঘুরপাক খাইতেছে তা হইলে কি আল্লাহর দাড়ি আছে ? আল্লাহর দাড়ি থাকা না থাকা অবশ্যই হাদীস লেখকগণের কিতাবের মধ্যে থাকিতে হইবে। এইটা আমার বিশ্বাস। কারণ এত পুণ্যময়, মর্যাদাময় ও সম্মানজনক দাড়ির ব্যাপারে যদি কোন কথা না থাকে তা হইলে ধর্মকে বিশ্বাস করিব কেমন করিয়া ? আল্লাহর শেষ নবী হযরত মোহাম্মদ (সাল্লাল্ লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহকে দেখিবার জন্য বোরাকে চড়িয়া অক্সিজেন বিহীন বাতাস ঝাপটাইয়া উড়াল দিয়া সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত পৌছিয়াছেন। মরিয়া যাওয়া নবীগণের সাথে এক এক আসমানে সাক্ষাত করিয়াছেন। দোজখ দেখিয়াছেন, বেহেশত দেখিয়াছেন। এত কিছুই যখন দেখিলেন তখন কেন তিনি আল্লাহর দাড়ি দেখিবেন না ? আর যদি দাড়ি না দেখিয়া থাকেন তবে তিনি কেন দাড়ি রাখিবেন ? কেনই বা অন্যকে দাড়ি রাখিতে উপদেশ দিয়া ছাগল বানাইবেন ? কেনইবা বুড়া মানুষদের বুড়া বান্দর বানাইয়া হি হি করিয়া হাসিবেন ? আর যদি আল্লাহর রাছুল দাড়ি দেখিয়া থাকেন তাহইলে আপনারা হাদিস কিতাব ঘাটিয়া আমাকে কি দয়া করিয়া বলিবেন আল্লাহর দাড়ি কি রেশমের মত উজ্জ্বল ও মিহি ? উহা হইতে কি জাফরান ও মৃগনাভি কস্তুরীর মতো ঘ্রান ছড়াইয়া পড়ে ? আরও প্রশ্ন জাগে এই দাড়ি কি কাঁচা পাকা ? না চকচকে মেহেন্দি লাগানোর মতো লাল ? যদি দাড়ি লাল হইয়া থাকে তাহা হইলে আল্লাহর দাড়িতে কে মেহেন্দি মাখাইয়া দিল ? যীশু নবীর সম্মানিত মাতা মরিয়ম ? না ফিরিশতার দল ? আর যদি দাড়ি সফেদ হইয়া থাকে, তা হইলে আল্লাহর বয়েস কত হইয়াছে তাহা জানিবার জন্য মনটা হু হু করিয়া কাঁন্দিতেছে। আছেন কি কোন দীন-এ-বুজুর্গ আমার এই প্রশ্নের উত্তর দিয়া আমার মনে শান্তির বেহেশতি বাতাস বহাইবেন ? আমি খ্রীষ্টান হইতে মুসলমান হইয়াছি এই জন্য আমার প্রশ্ন একটু অদ্ভুত শুনাইতেছে। খ্রীষ্টান পুরোহিতরা যীশুর পিতা কে ছিলেন ? এবং তার জীবদ্দশায় মুর্দা মানুষ জীবিত করার কোন দালিলিক প্রমাণ দেখাইতে পারে নাই বলিয়া আমি ঐ ধর্ম ত্যাগ করিয়াছি। এখন আপনারা যদি আমার প্রশ্নের জবাব দিতে না পারেন তা হইলে বুঝিমু আপনারা ও ধর্মের মুখোশধারী ভুয়া ধার্মিক। কোরআন হাদিছের ব্যাখায় জানা যায় আল্লাহর চোখ আছে তাই তিনি সব কিছু দেখিতে পারেন। আল্লাহর কান আছে তাই তিনি সবকিছু শুনিতে পারেন। আল্লাহর জিহবা ও জবান আছে তাইতো তিনি নবীদের জন্য ওহী বয়ান করিতে পারেন। তা হইলে নিশ্চয়ই দাড়িও আছে।
দাড়ি সম্বন্ধে আমার কতকগুলো সুন্দর ধারণা আছে। কিন্তু আপনাদের দৃষ্টিতে ইহা এক ধরণের ফাজলামি বলিয়া অভিহিত হইতে পারে। কিন্তু বিশ্বাস করুন প্রশ্ন গুলোর যুক্তি-সঙ্গত জবাব পাইলে আমি বিনয়ে শ্রদ্ধায় ও ভক্তিতে আপনাদের পদ-প্রান্তে লুটাইয়া পড়িব। আমার বিশ্বাস দাড়ি লম্বা করিয়া রাখিলে উহা চুলকাইবার ভান করিয়া কিংবা আঙ্গুল দ্বারা খিলাল করিবার ভান করিয়া দুর হইতে সুন্দরী সতী সাধবী রমণীকে ইশারা দিয়া ভালোবাসার মনোভাব প্রকাশ করা যাইবে। দাড়ি যদি বেশ শক্ত ও কয়েক ফুট লম্বা হয় তা হইলে ধর্মীয় জলসাতে যথেষ্ট ইজ্জত পাওয়া যাইবে। আর বিশ্ব-গিনিস বুকে প্রতিযোগিতা করার একটা দুর্দম খায়েশ পুরণ হইবে। দাড়ি বেশ লম্বা চওড়া হইলে বিল ঝিল বা খালের পানিতে চুবাইয়া চিবুক নাড়াচাড়া করিলে দাড়ির ফাঁকে ফাঁকে তরকারির সাথে একবেলা খাওন যায় ঐ পরিমাণ ইছা মাছ দাড়ির মধ্যে আটকা পড়িবে। এই ভাবে দাড়ির কত যে উপকারিতা আছে তার যেন ইয়ত্বা নাই। আমি এই জন্য বড়ই কৌতুহলের সাথে অপেক্ষায় আছি। আপনারা যদি দয়া করিয়া আমাকে জবাব দেন তা হইলে এই অধম হতভাগার কপালে সৌভাগ্যের পরশমনি অংকিত হইবে।

***********************************************************