প্রশ্নটা যে বড় বেশি সরলীকৃত তাতে কোন সন্দেহ নেই। প্রশ্নটার উৎপত্তিও নাস্তিকদের কাছ থেকে হয়নি। প্রশ্নটা সম্প্রতি উঠেছে অস্ট্রেলিয়ার অনেক ধার্মিকদের কাছ থেকে।বিশেষ করে বিরোধী দলীয় ক্যাথলিক গোষ্ঠীর কাছ থেকে। কারণ আবারো একজন নাস্তিক অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন।

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জুলিয়া গিলার্ড অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবার সময় যখন এতদিনের প্রথা অনুসারে ‘পবিত্র বাইবেল’-এ হাত রাখতে প্রকাশ্যে অসম্মতি জানালেন- খোদ সরকারের মধ্যেই অনেকে অস্বস্তি বোধ করলেন। অস্ট্রেলিয়ার সংবিধানে ব্যক্তিগত ধর্মবিশ্বাসের স্বাধীনতা এতটাই আছে যে রাষ্ট্রপ্রধান প্রকাশ্যে নিজেকে নাস্তিক বলে ঘোষণা করলে ‘গেল গেল’ বলে চিৎকার করেও খুব একটা সাড়া পাওয়া যায় না। এদেশে ধর্মীয় স্বাধীনতা আর যৌন স্বাধীনতাকে সমার্থক মনে করা হয়।

ব্যক্তিগত ধর্ম-বিশ্বাসের স্বাধীনতা পৃথিবীর অনেক দেশেই আছে। কিন্তু সেসব দেশেও দেখা যায় রাষ্ট্রপ্রধান বিশ্বাসীদের ভোট হারানোর ভয়ে নিজের অবিশ্বাসের কথা কোনদিনই প্রকাশ করেন না। আর ধর্মীয় বিশ্বাসের ব্যাপারটাকে এতটাই স্বাভাবিক বলে ধরে নেয়া হয় যে – সারাজীবন কোন ধরনের ধর্মীয় আচার আচরণে অংশ না নিয়েও মানুষ দিব্যি ‘আস্তিক’ থাকতে পারেন। পবিত্র ধর্মগ্রন্থগুলোতে যে সব বিধি-নিষেধ আছে সেগুলোকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েও মানুষ ‘ধার্মিক’ বলে পরিচিত হতে পারেন। কেবল প্রকাশ্যে ধর্ম-পালনের ভান করলেই হলো। মোহাম্মদ আলি জিন্নাহ বা হোসেন মুহাম্মদ এরশাদ ব্যক্তিগতভাবে কতটুকু ধর্মপালন করতেন বা করেন তা সবাই জানেন, তারপরও তাঁদের আস্তিকতা নিয়ে কেউ সন্দেহ প্রকাশ করবেন না।মোদ্দা কথা হলো নাস্তিকতার ব্যাপারটা নিজেকেই প্রকাশ করতে হয়। অবশ্য যে সমাজে নাস্তিকতার স্থান নেই, সেখানে উদ্দেশ্যমূলক ভাবে কোন কোন গোষ্ঠী কাউকে কাউকে ‘নাস্তিক’ ঘোষণা করেন এবং তাঁদের মাথার মূল্য নির্ধারণ করে দেন।এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়- যাদের ‘নাস্তিক’ ঘোষণা করা হয় তাঁরা বিবৃতি দিয়ে নিজেদের ধর্ম-বিশ্বাসের কথা প্রচার করেন। কিছু উজ্জ্বল ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে- তবে তাঁদের সংখ্যা সেই সব সমাজে খুব কম।

প্রধানমন্ত্রী জুলিয়া গিলার্ড সরাসরি বলেছেন, তিনি যা বিশ্বাস করেন না তা করার ভান তিনি করতে পারবেন না। তাঁর ধর্মীয় অবিশ্বাস নিয়ে তর্ক-বিতর্ক চলছে।টিভি অনুষ্ঠানে এ নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। তবে তা কিছুতেই মাত্রা ছড়ায় নি। কারণ অস্ট্রেলিয়ায় কারো ব্যক্তিগত ধর্ম-বিশ্বাস নিয়ে হৈ-চৈ এর শব্দ বেশিদূর যায় না।

টিভিতে প্রচারিত একটা অনুষ্ঠানের অংশবিশেষ ইউ টিউবে এই লিংক থেকে দেখা যেতে পারে।

httpv://www.youtube.com/watch?v=NXgtjwOBdM0

অস্ট্রেলিয়ার সংসদে প্রতিদিন অধিবেশন শুরুর আগে বাইবেল থেকে পাঠ করা হয়। সংসদের স্পিকার এই কাজটি করে থাকেন। এখন অনেকেই যৌক্তিক প্রশ্ন তুলছেন যে এর কোন দরকার আর আছে কি না।

কয়েক বছর আগে বাংলাদেশের দ্বৈত নাগরিকত্বের অধিকারের সুযোগ নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছি। নাগরিকত্বের শপথ পাঠ করান কমনওয়েলথ সরকারের একজন প্রতিনিধি। অনুষ্ঠানে দু’ধরণের শপথ ব্যবস্থা থাকে। আস্তিকদের শপথে ‘ঈশ্বরের নামে শপথ করছি’ কথাটি উল্লেখ থাকে। আর নাস্তিকদের শপথে ওই বাক্যাংশটি থাকে না। আমি ভেবেছিলাম নাস্তিকদের সংখ্যা খুব একটা বেশি হবে না। কিন্তু বাস্তবে দেখলাম নাস্তিকদের সংখ্যা প্রায় আস্তিকদের সমান।

অস্ট্রেলিয়ায় ঈশ্বরে অবিশ্বাসীদের সংখ্যা ক্রমশঃ বাড়ছে। এখানে যারা জন্মেছেন তাদের মধ্যে তো বটেই, অন্য দেশ থেকে যারা এখানে আসছেন তাদের ভেতরও ঈশ্বরের ধার ধারেন না এমন ব্যক্তির সংখ্যা প্রচুর। এই ব্যাপারটা আস্তিকদের জন্য কিছুটা অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠছে।