পবিত্রতার চরণতলে
উত্তর পুরুষ
কোন কিছু জানা বা জানতে চাওয়া মানুষের প্রাকৃতিক স্বভাব। শিশু বয়স থেকে শুরু হয় এর অপ্রতিরোধ্য যাত্রা। শেষ হয় মৃত্যুর বাকস্তব্ধ থাবায়। প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে আছে ঢেউ খেলানো অসংখ্য প্রশ্নের ছড়াছড়ি। জীবনে তার কিছু কিছু অংশ হয় জানা, আবার অনেক কিছু রয়ে যায় বাকি। যা জানা হয়েছে তাতেও আছে বিশ্বাস, সন্দেহ আর অজানা রহস্যের দ্বন্ধাঘাতে এক মিশ্র যন্ত্রনা। জানার সাগরে এ যেন এক ফোটা জল নিয়ে আমরা শুধু খেলা করে যাচ্ছি। তাই জানতে চাওয়া নিশ্চয়ই কোন অপরাধ নয়।
আমরা পবিত্র হওয়ার জন্য কত কথা বলি। সুন্দরের জন্য কী না করি ! পরিচ্ছন্নতার মধ্যে সুস্বাস্থ্যের সোনালী বীজকে খুজি। পরিচ্ছন্নতার মধ্যে পবিত্রতার অমিয় সুধাপান করি। পবিত্রতার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর সাহ্নিধ্য পাবার ব্যাকুল কামনা করি। পবিত্রতার প্রশ্নে সৃষ্টির মহাত্মতা ঘোষিত হয়। পবিত্রতার প্রশ্নে স্বর্গের সম্পর্ক স্থাপিত হয় এক সুন্দর নিপুণতায়। আল্লাহকে যখন মাথা নুইয়ে প্রণিপাত করবো, তখন দেহ মন স্থান ও বেশ-ভুষা সবই হতে হবে পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন। এটাই প্রার্থনার পূর্বশর্ত। প্রার্থণার আগে পানি দ্বারা অযু কালীন সময়ে হাত মুখ ধৌত করতে গিয়ে একটা চুল শুকনো থাকলে তা শুদ্ধ হচ্ছে না। পেট থেকে সামান্য বায়ু বাহির হলেও রেহাই নেই, আবার পবিত্র হতে হবে। পবিত্র হতে হবে আবার সকল অঙ্গ প্রত্যঙ্গ নিয়ে। অথচ আমাদের পেটের মধ্যে পচনশীল সমস্ত খাদ্য দ্রব্যই ঘুরপাক খাচ্ছে অবিরত বাইশ ফুট লম্বা ক্ষুদ্রান্ত্রের মধ্যে। সেখানে মল এবং কীট কৃমি কেঁচোরও বসবাস। কিডনীর ভেতরে ও গ্রন্থিগুলোতে আছে ঝাঁঝালো ও গন্ধেভরা ক্ষার ও অম্লযুক্ত পানি। ভেতরের এই ময়লা আবর্জনা নিয়েই আমরা ধর্মীয় প্রার্থণা চালিয়ে যাচ্ছি। এ পবিত্রতা আমার কাছে “লেফাফা দুরস্ত” বলে মনে হয়। তাহলে আমরা একটি বিষয় দেখতে পাচ্ছি বাইরে পবিত্র এবং ভেতরে অপবিত্র। অথচ ভেতরের এই নাপাকিকে উপেক্ষা করে আমরা পবিত্রতা সম্বন্ধে নিশ্চিন্ত। ব্যাপারটি আমার কাছে ঘোলাটে। তাই মনে প্রশ্ন এসেছে এবং এর উত্তর ও খুঁজছি।

আল্লাহতো ইচ্ছে করলে আমাদের ভেতরটা গাছপালার মত তৈরি করতে পারতেন, যেখানে কোন ময়লার আদান প্রদান হতনা। অথবা ময়লা দুর্গন্ধ সৃষ্টি না হওয়ার জন্য শরীরের মধ্যে এমন ধরনের কেমিক্যাল বা জৈব-রস উৎপাদন করতে পারতেন যার প্রভাবে কিছুতেই শরীরের ভেতরের অর্গান গুলোতে কোন ময়লা দুর্গন্ধের নাম নিশানা থাকতোনা। ধর্মীয় কেতাবের বর্ণনা অনুযায়ী আল্লাহ তো মহাবিজ্ঞানী, মহাপ্রকৌশলী। তাঁর কাছে এসব সৃষ্টি বা তৈরি করণ কোন কঠিনও নয়, অসম্ভবও নয়, অথচ তা তিনি করেননি। কেন করেননি কেউ তা জানেনা। এটা আমার কাছে রহস্যময়। রক্ষণশীলদের কাছে এ প্রশ্ন অবান্তর বা অযৌক্তিক। অযৌক্তিক এজন্য যে তারা এর সঠিক জবাব জানেন না। আর জানেন না বলেই উনারা ধমক দেন প্রশ্নকারীকে। আখ্যাদেন নাস্তিক, কমিউনিষ্ট ইত্যাদি। তাহলে সবচেয়ে ভাল ভীরু কাপুরুষদের মতো চুপ করে থাকা। মনের মধ্যে এক অব্যক্ত যন্ত্রনা নিয়ে রোগীর মত পড়ে থাকা। অথচ আল্লাহ অন্তরের খবর জানেন বলে চুপ করে থাকতে পারিনে।
একই ভাবে মানুষ জাতি তার বাঁচার তাগিদে মাছ ও পশুপক্ষী, শাক সবজি ইত্যাদি নিধন করে। অথচ যে কোন হত্যা বা নিধন মানবতার দৃষ্টিতে, বিবেকের দৃষ্টিতে পাপ বা অপরাধ বলেই মনে হয়। ইশ্বরের প্রতিনিধি হিসেবে দাবিদার রসুলগণ বা অবতারগণ ভেবে দেখলেন যে এসব জীব হত্যা ব্যতীত মানুষের বাঁচার কোন বিকল্প পথ নেই কিন্তু মানুষকে তো বাঁচতেই হবে। আবার মানুষের মনের ভেতর থেকে পাপবোধ বা অপরাধ বোধটাকে ও তাড়াতে হবে। তাইতো অনেক চিন্তা ভাবনা করে বলা হলো এসব স্থলচর জলচর প্রাণী হত্যার পূর্বে ইশ্বরের নাম নাও এতেই আল্লাহ খুশ হয়ে যাবেন। আমার প্রশ্ন এতে ইশ্বর বা আল্লাহর খুশ হওয়ার কারণ কি ? তাঁর মুনাফা’ই বা কি ? ভীষণ কষ্টের মধ্যে একটি প্রাণী যখন ছটফট করে মারা যায় তখন আল্লাহ খুশি হওয়ার কথা নয়। কারণ তিনি ভোজন বিলাসী নন। লাভ আর ক্ষতি হওয়ার কথা মানুষ জাতির। কারণ তারা ক্ষুধায় আক্রান্ত তৃষ্ণায় জর্জরিত। আচ্ছা ! মনকে শান্তনা দেবার জন্য হয়তো ধরে নিলাম আল্লাহ জীব হত্যায় খুশি হন। তবে খুশিতে ডগমগ হবার প্রমাণ কোথায় ? যে প্রাণী বাঁচার তাগিদে কিংবা হত্যার পূর্বে প্রাণপনে পলায়ন করতে চায়, সেই নিরীহ প্রাণী ও খুশি হবার কথা নয়। ধর্মীয় রক্ষণশীলরা বলেন ওসব প্রাণীকে নিধন করার জন্য ইশ্বর নাকি বোবা করে সৃষ্টি করেছেন যাতে প্রাণীটি প্রতিবাদ করতে না পারে। তাই যদি হয় তাহলে তো ইশ্বর নিশ্চয়ই প্রাণীর মগজের মধ্যে এই অনুভুতিটা ও দিয়ে দেবার কথা যে যখনই মানুষ ওদেরকে হত্যা করতে চায় ওরা তখনই যেন কোন সাড়া শব্দ না করে খুশিতে ডগমগ হয়ে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ে গলাটা লম্বা করে বাগিয়ে দেয়, যাতে অতি সহজেই আল্লাহর নামে তাদেরকে জবাই কিংবা হত্যা করা যায়। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় প্রাণীগুলো প্রাণে বাঁচার জন্য সে তার সর্বশক্তি নিয়োগ করে। শিং, দাত, পা, নখ কিংবা বিষাক্ত কাঁটা ইত্যাদি অস্ত্র হিসেবে প্রয়োগ করে বাঁচতে চায়। ধর্মীয় রক্ষণশীলরা এর পক্ষে ও নানাবিধ যুক্তি দেখান। যেমন: মানুষ আল্লাহর উপাসনা করবে বলেই তো মানুষকে তিনি ভালবাসেন। মানুষ আল্লাহর মায়ার বান্দা। আর সেজন্য মানুষের আহার হিসেবে ঐ প্রাণীগুলোকে বোবা করে সৃষ্টি করেছেন। এখানে একটি যুক্তি দেখানো হয়েছে আল্লাহ মানুষকে ভালবাসেন, মানুষ আল্লাহর মায়ার বান্দা। সুতরাং এই মায়ার বান্দা খেয়ে দেয়ে আল্লাহর উপাসনা করবে। সে জন্য নিয়ামত স্বরূপ আল্লাহ এসব প্রাণীকে হত্যা করা হালাল করে দিয়েছেন। খুবই মানান সই যুক্তি ! আল্লাহ মানুষকে ভালবাসেন, আল্লাহর মায়ার বান্দা মানুষ। মানুষ যদি আল্লাহর মায়ার বান্দা আর আল্লাহ যদি মানুষকে ভালবেসে থাকেন তাহলে এই মায়ার মানুষকে আল্লাহ কেন বার বার গজব দেন ? এই যে ফসলে গজব, শরীরে গজব, অভাবের গজব, দুশ্চিন্তার গজব, দুর্ঘটনার গজব জীবনভর লেগেই আছে । উপাসনা করলেও গজব না করলেও গজব। কাজেই আপনি মায়ার বান্দা হলেন কি ভাবে ?।
আপনি হয়তো পুনরায় বলবেন এসব গজব টজব হয় ঈমান পরীক্ষার জন্য। তাই যদি হয় তাহলে ইমানের বীর শ্রেষ্ঠ দাবীদার পুরুষ হযরত মোহাম্মদকে যুদ্ধের ময়দানে ঠেলে দিয়ে আল্লাহ কেন দাত ভাঙ্গালেন ? কেন মাথায় ও শরীরে হৃদয় বিদারক জখমে জর্জরিত করেছিলেন। কেন লৌহ কঠিন ইমানের অধিকারী মায়ার বান্দা সাহাবীগণের অনেকেই করুণ ভাবে মৃত্যু বরণ করেন ? আর তাদের স্ত্রী ও শিশুরা ইয়াতীম হয়ে রাস্তার ভিখারীতে পরিণত হলো ? বিধবারা অসহনীয় কান্না ও অভাবের যাতনায় আজীবন দরিদ্রের কষাঘাতে মৃত্যু বরন করেছেন ? এত কিছুর পর ও বলা হবে এসব ত্যাগ তিতীক্ষার জন্য রয়েছে মৃত্যু পরবর্তী “ জান্নাত ”। হাঁ যখন কোন যুক্তিতে কাজ আসে না, প্রমাণ ও দেয়া সম্ভব হয়না তখন শেষ অস্ত্র হিসেবে এর জবাব দেয়া হয় ‘ জান্নাত’। স্বর্গ !!!!! যেখানে সুখ আর আনন্দের সীমা নেই, মৃত্যু নেই। শুধু সুখ আর সুখ। এটি হচ্ছে মানুষকে হাবাগোবা বানিয়ে শান্তনা দেয়ার শ্রেষ্ঠ এবং শেষ মহৌষধ। যার জন্য কোন প্রশ্ন করা হয়না, প্রমাণ দেয়া লাগেনা। ঈমান তথা অন্তরের বিশ্বাস দিয়ে সমস্ত ধোঁকাবাজিকে জীবন্ত কবর দেবার এটাই সর্বর্শ্রেষ্ঠ হাতিয়ার। আমি যদি বলি ঘুমিয়ে যাবার পর আপনি যেমন দুনিয়া ও সংসার কিছুই বুঝেন না ঠিক তেমনি মৃত্যুর পর আপনি আর কিছুই বুঝবেন না। আর যদি বুঝেও থাকেন সেটা হবে ভয়-উদ্বেগ বিহীন এক জীবন। যে জীবনের বোধ নিয়ে আপনি ভালমন্দ দুখ কষ্ট কিছুই বুঝবেন না। আপনার জীবন ওখানেই হয়ে যাবে বিলীন, নিরুদ্দেশ। তাহলে বিষয়টি আপনি অবিশ্বাস করবেন কোন যুক্তিতে ? আসলে ঈমান পরীক্ষা বলে কিছু নেই এসব হচ্ছে ধর্মকে টিকিয়ে রাখার জন্য কতকগুলো যুক্তির সমাবেশ। প্রাণী হত্যার কথায় ফিরে যাচ্ছি। প্রাণী হত্যায় পুণ্য কিংবা প্রাণী হত্যা আল্লাহ জায়েজ করেছেন এসব ভুয়া কথা বাদ দিয়ে সোজাসুজি বলেন:
“ আমরা বেঁচে থাকার তাগিদেই প্রাণী হত্যা করতে হয়। এছাড়া আমাদের উপায় নেই। সুতরাং এই প্রাণী হত্যা করতে গিয়ে মানুষ হিসেবে মনের মধ্যে যে পাপবোধ বা অপরাধবোধ কাজ করে সেটা থেকে শান্তনা পাওয়ার জন্য ধর্মের উপর বাহানা দিয়ে, অদৃশ্য আল্লাহর নামে কতকগুলো ভুয়া কথাকে সাজিয়ে গুছিয়ে প্রতারণা করছি মাত্র”। এরকম সত্যবাদি বক্তব্য হবে সুন্দর ও সৃষ্টিকর্তার প্রতি সম্মান দেখানোর প্রমাণ।

ধর্মের বাণী থেকে জানতে পারি মানুষের অন্তরে যখন আল্লাহর প্রতি কোন সন্দেহ থাকে সে অন্তর ব্যধিপূর্ণ। যে অন্তরে দুষ্টুমী চিন্তা বা কলুষতা থাকে সে অন্তর নিশ্চয় শুদ্ধ নয়, আর শুদ্ধ নয় মানেই তো পবিত্র নয়। পরিষ্কার নয়। অতএব ভিতর থেকে কলুষতা, অপবিত্রতা দুর না হলে প্রার্থণা, উপাসনা কিছুই কার্যকরী হবে না। তাই পবিত্রতার জন্য মন বা অন্তকরণ পরিষ্কার অত্যাবশ্যক। অথচ দেহের ক্ষেত্রে দেহের ভিতরটা তদ্রূপ পরিষ্কার ও পবিত্র হওয়া উচিৎ ছিল। কিন্তু তা না হওয়াতে এক অজানিত কৌতুহলে আমি হাবুডুবু খাচ্ছি। হৃদয়ের একুল ওকুল, দু’কুলে লেগে আছে আগ্রহের ব্যাকুল বাতাস। হয়তো দেহের সাথে আত্নার কোন সম্বন্ধ নেই তবু দেহের উপর আসছে বহু নীতিগত চাপ। মহাবিশ্ব সৃষ্টির মহানায়ক আল্লাহর তরফ থেকে এ জবাব কি ভাবে খুঁজে পাব ভেবে পাচ্ছি না। ভেবে পাচ্ছিনা পবিত্রতার চরণতলে কিভাবে সৎচিন্তাশীল মানুষেরা নিজেদের উৎসর্গ করবে ? কেউ কি আছেন আমার এই প্রশ্নটির সুন্দর ও যুক্তিপূর্ণ জবাব দিতে পারেন ? কেউ যদি এমন জবাব দেন যে উহা তো কোরআান হাদীসে বলা হয়েছে এভাবেই মানুষ পবিত্র হবে, এটা আল্লাহর নির্দেশ। তাহলে আমি বলবো এ উত্তর আমার জানা। এটা আল্লাহর নির্দেশ হলে কষ্ট করে আমি এই নিবন্ধটি লিখতামনা। এর বাইরে যদি যুক্তি ও বিবেকি কোন উত্তর আপনার জানা থাকে তা হলে বলুন, কিন্তু অন্যের ধার করা যুক্তি আমার মাথায় চাপাবেন না। বরং নিজের মাথায় যা আসে তাই বলুন।

আমি হারিয়ে যাচ্চি
উত্তর পুরুষ
আল্লাহ সর্বশক্তিমান ও প্রজ্ঞাময়। তিনি অন্তরযামী। অতীত ভবিষ্যৎ সব তিনি জানেন। একজন মানুষের অন্তরের কণায় কণায় কি আছে, না আছে তা তিনি জানেন। বিশ্বের প্রতিটি বস্তুকণা তিনি তৈরি করেছেন এবং তিনি নিয়ন্ত্রণ করেন। তিনি ইচ্ছে করলে প্রতিটি মানুষকে এমন ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, যাতে সেই মানুষের মনে পাপ কিংবা দুরর্নীতির উদ্রেক হলে তাকে (তাহাকে) বিরত থাকার ক্ষমতা দিতে পারেন। তিনি কারো কারো মন বক্র করে রাখেন, কারো হৃদয়ে চিন্তা, জ্ঞান ইত্যাদির সীমিত পরিমাণ দিয়ে সীলমোহর করেন। আবার তিনি মানুষের পেছনে লেলিয়ে দিয়েছেন শয়তান। যে শয়তান তার প্রভাব ফেলে অহরহ রক্তে, হৃদয়ে। অতএব মানুষতো পথ ভ্রষ্ট হবেই। তাঁর এ খেলার জবাব নেই বলেই আমরা দিশেহারা। কোরআনে যা কিছু লিখা আছে, তার প্রত্যেকটি বাক্যকে বিশ্বাস না করা হলে ঈমান থাকবেনা। হতে হবে বেঈমান। এজন্য বার বার ঈমানের উপর প্রচুর আয়াত বা বাক্য সমুহ আছে। বেঈমান হলে কিন্তু উপায় নেই “মৃত্যুর পর তৈরি আছে প্রজ্জ্বলিত অগ্নি। আরও অসংখ্য রকমের শাস্তি। এক এক পাপের জন্য একেক রকম শাস্তি। যা শুধু শুনতে ভয়ঙ্কর নয়, ভাবতে ও শিউরে উঠতে হয়।এই বিভীষিকাময় ভয় হচ্ছে একটি বিশাল শক্তিশালী মারণাস্ত্র। ধর্মীয় মহাপুরুষ নামে খ্যাতিমান ব্যক্তিগণ, এই অস্ত্র দিয়েই কাবু করেছেন পৃথিবীর তাবৎ বিশ্বাসী মানুষদের। তাদের মগজে ঢুকিয়ে দিয়েছেন এক সর্বনাশা ভয়ের বিষ। এবিষ একবার যার মগজে প্রভাব ফেলেছে, ঐ প্রভাব আর কোন দিন মুছেনা। সাদা কাগজে কিংবা কাপড়ে সিগারেটের আগুনের সামান্য ফুলকিতে যে দাগ পড়ে, সেটা কি কখনও মোছা যায় ? ঠিক তদ্রূপ। দুর্বল মানুষ জাতি জীবনের অভিজ্ঞতায় বুঝতে পেরেছে ‘মৃত মানুষ শ্বাস প্রশ্বাস নিতে পারেনা, একটু নড়াচড়া ও করতে পারেনা। মাটিতে পুতে না রাখলে কিংবা না পুড়ালে সেই শরীর পঁচে গলে যায়’। এসব দেখে শোনে মানুষজাতি ভয়ে দিশেহারা। এখন যদি মৃত্যুর পর আবার জীবিত করে শাস্তি দেয়া হয় তাহলে কী হবে ? কী মর্মান্তিক ব্যাপার তাই না ? এই ভয়ের অস্ত্র দিয়েই ধর্মাবতারগণ প্রতিষ্ঠিত করেছেন তাদের বিশাল ধর্মীয় বিশ্বাসের সাম্রাজ্য।

এখন আর সেই যুগ কিংবা কাল নেই যে, যা ইচ্ছে তাই বিশ্বাস করতে হবে। এজন্য ধর্মাবতারগণ আগে বাগেই পলায়ন করেছেন, বোকা মানব গোষ্ঠীর সাথে নানা ভাবে কৌশল ও চালাকি করে। এখন আর তাদের আর্বিভাবের প্রয়োজন হবেনা। আর্বিভাব হলে এ যুগের সাধারণ স্কুল পড়ুয়া বিজ্ঞানের ছাত্রের কাছে তাঁরা হেরে যাবেন এতে কোন সন্দেহ নেই। তাই আগে বাগে কৌশল করে সকলে বলে গেছেন তাদের নিজ নিজ ধর্ম, শেষ ধর্ম এবং এটা ইশ্বর কর্তৃক নির্ধারিত। বিজ্ঞান মানুষের অতীত বর্তমান এবং সভ্যতার বির্বতন নিয়ে গবেষণা করে প্রচুর সত্য তত্ত্ব আবিস্কার করেছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের আওতায় মানুষের মনোজগত নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা ও গবেষণা করে আরও বাস্তব সত্য তথ্য আবিস্কৃত হয়েছে। ব্রেইনের কোষগুলো কি ভাবে তৈরি, এগুলো কি ভাবে কাজ করে ? এসব কোষ কি কি রাসায়নিক প্রভাবে প্রভাবিত ইত্যাদি। প্রকৃতি ও সমাজের সঙ্গে মানুষের যে নিবিড় সম্পর্ক দিনে দিনে স্থাপিত হয়, তখন এই ব্রেইন কোষগুলো কিভাবে সময়ের তালে তালে কাজ করে ও বহুমুখী প্রভাব বিস্তার করে ? এসব বিস্তারিত ব্যাপার নিয়ে লিখা হয়েছে বিশাল বিশাল পুস্তক। এসব পুস্তক পাঠ করে কেবল বিস্মিত হতে হয়। সুতরাং এসব বিশ্বাস করার পেছনে যেমন বাস্তবতা আছে তেমনি যুক্তি ও আছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের এসব তথ্যের উপর ভিত্তি করে আজকাল ব্রেইন এবং হৃদপিণ্ডের চিকিৎসা, অস্ত্রোপচার ইত্যাদি হচ্ছে নির্দ্বিধায়। অথচ শয়তান নামের প্রাণী মানুষকে যে অহরহ ধোঁকা দিচ্ছে তার তো কোন প্রমাণ নেই। নিজেদের অসৎ কাজকে অপরের ঘাড়ে ফেলে দিয়েই আমরা বাঁচতে চাই। কারণ আমাদের ব্রেইন ও মনোজগত কি ভাবে কাজ করে তার কোন ব্যাখ্যা আমরা জানিনা বলে শয়তান নামের এক অদ্ভুত ও অদৃশ্য প্রাণীর আমদানি হয়েছে ঐ ধর্মীয় বুদ্ধিমানদের কথা অনুযায়ী। সত্যতার নিরীখে আরও বলা যায় পৃথিবীর সকল বস্তু বা প্রাণীর যেমন বিভিন্ন গুণাগুণের উপাদান থাকে। মানুষের মনে ও তদ্রূপ থাকে। প্রত্যেকটি গুণাগুণের বিপরীতে অন্য ধর্মী আরেকটি উপাদান থাকে। মানুষের মনে যেমন ক্রোধ থাকে, তদ্রূপ এর বিপরীতে দয়া মায়া ও থাকে। ঠিক এভাবে মানুষের মনে যেমন সততা থাকে তদ্রূপ অপর পার্শে কুবুদ্ধি বা অগঠনমুলক উপাদান থাকে। এগুলো বিভিন্ন সময়ে মাথা চাড়া দিয়ে উঠে এবং সক্রিয় হয়। এবিষয়টি আগের ধর্মাবতারগণ জানতেন না। তাই তারা অনুমানের উপর নির্ভর করে শয়তানের উৎপাদন ঘটিয়েছেন মানুষের জীবনে। না হয় লোক মুখে শোনা প্রাচীন উপকথা থেকে এসব ধার করা । যাইহোক এভাবে যা কিছু ধর্মগ্রন্থে বলা হবে তাই বিশ্বাস করতে হবে। কিন্তু এই বিশ্বাসের কোন ভিত্তি যদি না থাকে তাহলে সেটা বিশ্বাস করা যায় কেমনে ? এক সাধারণ বিবেকবান ব্যক্তি একদিন খুব গোস্বা করে বলে ছিলেন:- মানুষের কাঁধে দু’জন ফেরেশতা থাকেন সেটা যদি কোন ধর্মীয় প্রতিনিধি দেখাতে পারেন তাহলে আমি তাকে দু’কোটি টাকা উপহার দেব। নইলে এমনতর মিথ্যে বেঈমানী কথা আপনারা বাদ দেন। আমাদের বিশ্বাসকে পুঁজি করে আপনারা মানুষের সাথে ভুয়া ও প্রতারণা করছেন। এক ধর্মীয় ক্লাসের ছাত্র তার শিক্ষককে বলেছিল ‘মেহরাজের (উর্ধাআকাশে গমন) সময়ে নবী যখন বোরাকে সওয়ার হয়ে সাত আসমান জমিন ঘুরেছিলেন তখন কত বেগ অক্সিজেন সাথে নিয়েছিলেন’? এবং সুর্যের আলট্রা ভায়োলেট রশ্মি থেকে বাঁচার জন্য কি কি ধরনের কাপড় চোপড় নিয়েছিলেন ? অষ্টম শ্রেণীর এই ছাত্রের কোন জবাব শিক্ষক দিতে পারেন নি। ভবিষ্যতে বেশি করে হাদিস পড়লে সব বুঝতে পারবে বলে সেদিন তিনি মুখ রক্ষা করেছিলেন। ইসলাম যদি শেষ ধর্ম, তাহলে আল্লাহ কেন মানব সভ্যতার প্রথমেই তা দিয়ে দিলেন না ? তাহলে মানুষের মধ্যে বহুজাত, বহু ধর্মের বিভেদ সৃষ্টি হতনা। তিনি কেন নানা বর্ণের মানুষ সৃষ্টি করে বর্ণ বৈষম্যের বিভেদ বাড়ালেন ? এক ভূখণ্ডে মুল্যবান খনিজ সম্পদ দিলেন, অন্য ভূখণ্ডে মরুভূমি, অন্য ভূখণ্ডে জলের বন্যা। একজাতির মগজে জ্ঞানের প্রচুর ভাণ্ডার। অন্য জাতিদের মগজে তার চেয়ে বহু কম। এসবের কারণ এবং যুক্তি আমরা ধর্মীয় উপদেশ বাণীর পু্স্তকেও পাই। সব কিছু দেখেশোনে মনে হচ্ছে মানুষ যে ভাবে তার কল্পনা প্রবণ মন দিয়ে ইশ্বরের গল্প তৈরি করে মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সাথে মার্জ বা মিল দিয়েছে, তাতে করে মনে হচ্ছে ইশ্বর বা আল্লাহ এমন চরিত্রের যিনি “ সবকুলের তাতী ও মাঝের বৈরাতি ” এই ভুমিকা পালন করে যাচ্ছেন।
দুনিয়াতে কেউ তো নিজ ধর্ম বা সমাজিক আচার আচরণের বিশ্বাস থেকে হঠতে চায়না। তাইতো পৃথিবীতে এত জাতের সৃষ্টি। সুতরাং এসব থেকে ও ইতিহাস থেকে এটা স্পষ্ট প্রমাণিত যে, যুগের উপযোগি মহাপুরষদের আগমন সব সময়েই ঘটেছে। দোষ করেছে কেবল বিগত কয়েক শতাব্দি। যে কারণে মহাপুরুষদের আগমন পৃথিবীতে বন্ধ হয়ে গেল। পৃথিবীতে আজকাল যে পরিবর্তন ও যুগ এসেছে, এ যুগের সাথে অতীত যুগ গুলোর দিনরাত তফাৎ। পৃথিবীর প্রতিটি ভূখণ্ডে বেড়েছে বিশাল জনতা। আমরা মানবজাতি এখনও বহুমত বহুনীতি নিয়ে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন ও দিশেহারা। জীবনের তৎপরতা এমনভাবে বেড়েছে যে, আমরা ভাল বা সুস্থ মনে শ্বাসটি নেবারও সময় পাচ্ছি না। এঅবস্থায় আমরা অনেকেই ভাবনার সাগরে দিশেহারা। সৃষ্টিকর্তা যদি এ যুগের জন্য আমাদেরকে আরেকজন খাঁটি মহাপুরষ পাঠাতেন তা হলে হয়তো আমরা আর বিভ্রান্ত হতাম না। হৃদয়ে অসংখ্য চিন্তার ভিড়। ঐ ভিড়ের মধ্যে আমি হারিয়ে যাচ্ছি। এই হারিয়ে যাওয়া থেকে কেউ কি আমায় উদ্ধার করতে পারেন ?