বিনিদ্র রজনী: সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা
-মোকছেদ আলী*
সম্ভবত ১৯৬০ সাল। বৈশাখ মাস। চৈত্র মাসেও মেঘ চোয়াইয়া এক ফোটা জল নামলো না মাঠ ঘাটে। বৈশাখেও আকাশ নীলই থাকলো।
শুকনো কাঠের চলার মত শুকনো মাটির ঢেলা,
আগুন পেলেই জ্বলবে হেথা জাহান্নামের খেলা।
নতুন শাক সবজী তরিতরকারীতে এই সময় কাঁচা বাজার ভরে যায়। লাল শাক, ডাটা, জালি কুমড়া, পটল, উচ্ছে, কাচা মরিচ, ঝিঙ্গা, ঢেড়স। কিন্তু এবার এসব সবজির কিছুই দেখা যায় না কাঁচা বাজারে।
রাত্রেও গরমে মানুষ অস্থির। টিটু পক্ষীর ডাক রাত্রেও শোনা যায়। দিনের বেলা খালি পায়ে মাঠে যাওয়া যায় না। চরের বালুতে ধান দিলে খৈ হয়। মানুষের মন মেজাজ তিরিক্ষি। কারো কথা যেন কারো গায়ে সয় না।
পাবনা শহরে খবর ছড়ায়ে পড়ল। মালদহ শহরের মুসলমানদের জবাই করছে- হিন্দুরা। পাকিস্তান থেকে যে সব হিন্দুরা চলে গেছে মালদহে, তারা গিয়ে সহানুভূতি পাবার জন্য মিথ্যা মনগড়া আজগুবি গল্প ছড়াচ্ছে হিন্দুদের কাছে। পাকিস্তানে হিন্দুর জান মালের নিরাপত্তা নাই। পাকিস্তানী যুবকেরা দলবেধে হিন্দু পাড়ায় ঢুকে হিন্দু যুবতীদের ধরে স্তন কেটে দিচ্ছে। ঘরে আগুন দিচ্ছে। জোর করে সব লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। বলেই হাউ মাউ করে মায়াকান্না জুড়ে দিচ্ছে। আর তাই শুনে- মালদহের হিন্দুগণ বিচার বিবেচনা না করেই চড়াও হচ্ছে মুসলমানদের উপর। সেসব খবর নিয়ে আসছে মোহাজের হয়ে আসা মালদহের মুসলমানগণ, তারাও শরণার্থী হিন্দুদের মতই বলছে- আমাদের জানমালের নিরাপত্তা নেই।
পাবনা জেলা প্রশাসকের বাড়ি মালদহে। গুজব ছড়িয়ে পড়ল, মালদহে অবস্থানরত ডিসি সাহেবের বাপমাকে জবাই করেছে এখান থেকে চলে যাওয়া হিন্দুরা।
পাবনায় মুসলমান নেতারা গোপন বৈঠকে সলাপরামর্শ হলো- হিন্দুদের কচু কাটা হবে। এতদূর আস্পর্দা, আমাদের ডিসি সাহেবের মা বাপকে হত্যা। এর প্রতিশোধ নিতেই হবে। সুতরাং আগামীকাল সন্ধ্যার পরই হিন্দুদের উপর চড়াও হতেই হবে। লুট করতে হবে তাদের সহায় সম্পদ। জোর গুজব, ডিসি সাহেব স্বয়ং এই নৃশংস অপকর্মের হুকুম দিয়েছেন। নিছক গুজব। একজন দায়িত্বশীল প্রশাসক যিনি উচ্চ শিক্ষিত, এরূপ হুকুম দিতে পারেন না।
শুনে ফজর গুন্ডা প্রতিবাদ করে বলল- তোমাদের কি ইতিহাস জানা নাই। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার বছর, হিন্দু মহাসভার বড় নেতা শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী হিন্দুদের প্রকাশ্যে হুকুম দিলো, মুসলমানগণ খেজুর তলার লোক। ওদের পাঠিয়ে দাও খেজুর তলায়। আর কিরূপ হুটাপাটা লেগে গেল। হিন্দুরা মুসলমানদের কচুকাটা করল। শ্যামাপ্রসাদ তো বড় শিক্ষিত লোক। স্যার আশুতোষ মুখার্জীর ছাওয়াল। সে যদি শিক্ষিত লোক হয়ে এরূপ হুকুম দিতে পারে, তবে কি ডিসি পারে না, অবশ্যই পারে। এরা শিক্ষিত হলেও সুশিক্ষা তো পায়নি। খালি বই পুস্তক মেলা মেলা পড়লেই শিক্ষিত হয় না। আসলে শিক্ষিত বেটারাই যত সব গন্ডগোলের মূল। যত বড় বড় যুদ্ধ হয়, সেই সব যুদ্ধের হুকুম দেয় কারা। গরীব অশিক্ষিতরা নাকি ঐসব শিক্ষিতরা, কও দেহি? সুতরাং লেখাপড়া জানা লোকেরাই আসলে পাজি। পৃথিবীর ইতিহাস, অর্থাৎ ওয়ার্ল্ড হিস্ট্রি পড়ে দেখ। অতীতকালের, আর আধুনিককালের সব ইতিহাসেই লেখা আছে যত বড় বড় যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে, যুদ্ধের কারণে লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি লোক মারা গেছে, কত ঘর বাড়ি, কল কারখানা, ধ্বংস হয়েছে, পুড়ে ছারখার হয়েছে- ভালো করে পড়ে দেখ, এর মূলে রয়েছে শিক্ষিত লোক। প্রাচীনকালের সর্ব ধর্মের লোকই তো মারামারি কাটাকাটি করে দেশের ও অন্য দেশের সহায় সম্পদকে ধুলিস্যাৎ করে দিয়েছে তার মূলে কে আছে? সেতো শিক্ষিত লোকেরাই। এই দুই দুইটা বিশ্ব যুদ্ধ সংঘটিত হয়ে গেল। দুনিয়ার কত মানুষ, নারী শিশু বৃদ্ধ-বৃদ্ধা মারা গেল। শুধু মারা গেল কথাটা বললে সেই বিভীষিকা চোখের সামনে ভেসে উঠে না। কল্পনায় তা প্রত্যক্ষ করা যায় না। সেদিনের বাস্তব দেখা একটা ঘটনার কথা উল্লেখ করি। খিদিরপুরের ডক। কলিকাতার জাহাজ মেরামতের বিশাল কারখানা। কত সামুদ্রিক বিকল জাহাজ এখানে মেরামত করা হয়। আবার যখন মেরামতের কাজ থাকে না তখন ছোট ছোট আভ্যন্তরিণ নদী পথে চলার উপযোগী জাহাজ নির্মাণ করে। ১৯৪০ সনের শেষাশেষি। সমগ্র ইউরোপে, যুদ্ধের ভয়াবহ বিভীষিকায়, সাধারণ মানুষ দিশেহারা। মিত্রশক্তির বিরুদ্ধে গেল জাপান। জার্মানীর সঙ্গে যোগ দিয়ে ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করল। সেই দিনই খিদিরপুরের ডকে বোমা বর্ষণ করে একে ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিল। নিরীহ মানুষ প্রাণভয়ে কলিকাতা ত্যাগ করে যেতে লাগল। কিন্তু যাবে কিসে? একমাত্র রেলপথে দারুন ভীড়। সারাদিনের মধ্যে শিয়ালদহ থেকে একখানা গাড়ী ছাড়ে। আর হাওড়া থেকে ছাড়ে দুই খানা। মানুষ হ্যান্ডেলে বাদুর ঝোলা হয়ে জীবনের ঝুকি নিয়ে চলে। জাপানীরা শুধু খিদিরপুর ডক ধ্বংস করেই ক্ষান্ত হল না। তারা ফেনীতে বোমা বর্ষণ করে পূর্বাঞ্চলীয় জনগণের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে দিল। শহর ত্যাগ করে লোক সকল পিপিলিকার সারির মত লাইন ধরে পল্লী অভিমুখে ধাবিত হল। তাদের মুখে ভয় আর আতঙ্কের সুষ্পষ্ট চিহ্ন ফুটে উঠল। শিশু ও নারী, বৃদ্ধ ও বদ্ধাদের দুর্দশা এমন পর্যায়ে পৌছল যে পথিমধ্যেই অনেক বৃদ্ধ ভবলীলা সাঙ্গ করল। আচ্ছা এখন বলতো এই যে মানুষের দুঃখ দুর্দশা সৃষ্টি করল এর জন্য দায়ী কে? শিক্ষিত লোকেরাই তো যুদ্ধ বিগ্রহ বাঁধায়ে দুনিয়াময় অশান্তি সৃষ্টি করে। সুতরাং ডি সি সাহেব যে অশান্তি সৃষ্টিকারী পরামর্শ দিবেন না এরূপ বাক্য জোর দিয়ে বলা যায় না।
চৈত্র মাস। এবার চৈত্র মাসে বৃষ্টি বাদল হয় নাই। সব শুকে কাঠ হয়ে গেছে। শুকনো কাঠের চেলার মতো শুকনো মাটির ঢেলা, আগুন পেলেই জ্বলবে হেথা জাহান্নামের খেলা।
হ্যাঁ, জাহান্নামের খেলাই শুরু হয়ে গেল। সুর্যাস্তের পরে দলে দলে মুসলমানগণ হিন্দু এলাকায় হিন্দুদের কচুকাটা করতে লাগল। ঘরবাড়িতে আগুন দিল। লুটতরাজ করতে লাগল। সেদিন মুসলমানগণ আর মানুষ ছিল না। এক বিভৎসরূপী পশুতে পরিণত হলো।
আমার বাড়ির চারদিকেই হিন্দু বাড়ি। মুসলমান পাড়া থেকে দলে দলে গুন্ডারা এসে আমার বাড়ির সামনের পাড়ায় অগ্নি সংযোগ করল। কয়েকজনকে ড্যাগার দিয়ে হত্যা করল। রিনা নামক এক যুবতীকে পেটে ছোরা মেরে হত্যা করল। রিনার পিতা মাতাকে হত্যা করল। তারপর তাদের ঘরে আগুন দিল। ঘরে যা ছিল লুটপাট করে নিয়ে গেল।
বাড়িতে আমি পুরুষ মানুষ একা। আমার স্ত্রী, বোন, ভাগ্নে বেটার বৌ। গুন্ডারা হল্লা করতে করতে আমার বাড়ির গেটে এলো। আমি গরু জবাই করা ছোরাখানা হাতে করে দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। দলের মধ্য থেকে একজন বলল, ভাই আপনার বাড়ির ভিতর হিন্দুরা আশ্রয় নিয়েছে। আমরা তাদেরকে চাই। আমি আমার স্ত্রী, বোন, ভাগ্নে বৌ সবাই আমার পিছনে। তাদের প্রত্যেকের হাতেই হাইস্যা দা। আমার স্ত্রীর হাতে বল্লম।
আমি বললাম, ক্রোধ ভরেই বললাম, আগে আমাকে হত্যা করতে হবে। তবেই বাড়ির ভিতর প্রবেশ করতে পারবে। গুন্ডারা সবাই আমার পরিচিত। দলের মধ্য থেকে একজন বলল, চল যাই। ভাইয়ের আর খেয়ে দেয়ে কাজ নেই, হিন্দুদের রাখবে বাড়ীতে। বলেই তারা ঝড়ের বেগে আমার পাশের হিন্দু বাড়ী গিয়ে অগ্নি সংযোগ করে চলে গেলো।
আমি একটা লাঠি হাতে দ্রুত গিয়ে লাঠির আঘাতে অগ্নি নির্বাপিত করলাম। অগ্নি নির্বাপিত করে বাড়ি ফিরছি, আমার একহাতে লাঠি আরেক হাতে হেরিকেন। সহসা একটি পুলিশ ভ্যান এসে আমার গতিরোধ করল। আমি দাঁড়ালাম। পুলিশ অফিসার আমাকে গাড়ীতে উঠতে হুকুম দিল। আমি বললাম, “কোন অপরাধে আমি গাড়ীতে উঠব।” সে বলল, “তুমি আগুন লাগাতে গিয়েছিলে।” আমি ক্রোধভরে বললাম, “আপনি কি স্বচক্ষে দেখেছেন? আমি আগুন নিভিয়ে দিলাম। হ্যাঁ আমি গাড়িতে উঠতে পারি, আমার বাড়িতে আমার মা বোন স্ত্রী আছে, তাদের রক্ষার দায়িত্ব নেন।” আমার কথার আওয়াজ শুনে আমার বোন এসে পুলিশকে বলল, “আপনারা গুন্ডাদের ধরতে পারেন না? যে নিরীহ তাকে ধরতে চান? এইটা কি আপনাদের দায়িত্ব?” আমি বললাম, ‘একদল গুন্ডা এই দিকে এই মাত্র গেল।’ পুলিশের অফিসার ড্রাইভারকে হুকুম দিল- ‘চালাও।’
গুন্ডারা যেদিকে গেছে, সেই দিকে গাড়ী চলে গেল। আমি বাড়ির ভিতর গেলাম। আমার বাড়ীতে গোপাল ও তার স্ত্রী, তার মা, ছেলেমেয়ে দিয়ে ৬/৭ জন। রেখা, রেখার মা, বোন ৭/৮ জন। ফনি ঠাকুরদের বাড়ির সবাই এসে আমার ঘরের মধ্যে কাঁপছে। আগুন বাতাসে উড়ে এসে আমার টিনের চালে পড়ছে। আমার বোন, স্ত্রী, ভাগ্নি, ভাগ্নে বৌ কুয়া থেকে পানি তুলে চালে ছুড়ে মারছে। কি আতঙ্ক!
একদল গুন্ডা আবার এল। আমি বললাম, তোরা শিগগির পালা। এইমাত্র পুলিশের গাড়ী এসেছিল। এক্ষুনি আবার আসবে। পুলিশ, শব্দটা মন্ত্রের মত কাজ করল। গুন্ডারা ভয়ে বিপরীত দিকে দৌড় দিল।
আমি গোপালকে বললাম, তোমরা আমার বাড়িতে থাকলে যে কোন মূহুর্তে বিপদ হতে পারে। তার চেয়ে পায়খানার পাশের বেড়া খুলে দিচ্ছি- এদিক দিয়ে বাঁশ ঝাড়ের মধ্য দিয়ে আমু ভাইয়ের বাড়িতে যাও। সে তো আমার মত ভালো লোক। তাদের পাকা বাড়ি, বন্দুকও আছে।
আমার কথায় রাজী হয়ে গেল। বেড়া খুলে দিলাম। তারা সবাই চলে গেল। কেবল গোপালের বৃদ্ধা মাতা রয়ে গেল। পুলিশের ভ্যান মাইক দিয়ে ঘোষণা দিল, শহরে কারফ্যু জারী করা হোল। বেলা আটটা পর্যন্ত কারফ্যু বলবৎ থাকবে। কাউকে রাস্তায় দেখামাত্রগুলি করা হবে। কেউ ঘর থেকে বের হবেন না।
বাড়ি ঘর সব ভস্ম হয়ে এক সময় আগুন নিভে গেল। আমার স্ত্রীর কোলে ৬ মাসের ছেলে। স্ত্রী কোরান পড়তে বসল। আমার বোন শুধু আয়াতুল কুরসী পড়তে লাগলো। সেই রাত্রে আমরা সবাই আতঙ্কে কাটিয়েছি, কারো চক্ষে ঘুম নাই। সেই দিনের সেই বিনিদ্র রজনীর কথা আজও স্মরণ আছে।
—————————–
*মোকছেদ আলী (১৯২২-২০০৯)। স্বশিক্ষিত। জন্মস্থান- সিরাজগঞ্জ জেলার বেলতা গ্রাম। গ্রামটি বর্তমানে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
পড়লে শুধু পড়তে ইচ্ছা করে। কি জাদু ……লেখাতে………
মাহফুজ,
জীবন্ত নিষ্ঠুর ইতিহাস !
যুগে যুগে হিটলারের উত্তরসুরীরা এভাবেই পৃথিবীকে অশান্ত রাখছে।
ধন্যবাদ!
@লাইজু নাহার,
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
আর মুক্তমনার উত্তরসূরীরা পৃথিবীটাকে শান্ত রাখার চেষ্টায় নিবেদিতপ্রাণ।
মোখছেদ আলীরা গ্রামে গ্রামেই ছিল। আমাদের হাজীপুর গ্রামে ছিল আবু তাহের মিয়া। বাবার বন্ধু। শুনেছি ষাটের দশকে উনি পাহারা দিয়ে আমাদের গ্রামের হিন্দুদের রক্ষা রেখেছেন।
মাহফুজ এর মত ধৈর্য ও একনিষ্ষ্ঠ চরিত্র হলে তাঁদেরকে জনসন্মুখে আনা সম্ভব।
মোকছেদ আলীর বর্ণনায় সাম্প্রদায়ীক দাঙ্গার ভায়াবহ চিত্র যেনো স্লাইড শো’র মতো চোখের সামনে ঘটতে দেখলাম! ধর্মান্ধতা মানুষকে কোথায় নামিয়ে দেয়!
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে সে সময় লোকমুখে একটি জনপ্রিয় ফিরতো:
সা রে গা মা পা ধা নি,
বোমা ফেলেছে জাপানি।
বোমার আগায় গোক্ষুর সাপ,
বৃটিশ বলে, বাপ রে বাপ!
অনেক ধন্যবাদ। :yes:
এই লেখাটিকে আমার একটি ভিডিও চিত্র মনে হচ্ছে। মোকসেদ আলীর লেখায় একটি স্বত্নত্র ঢং বা গাথুনি আছে। আমাকে উনার যেকোন গল্পের একটি প্যারাগ্রাফ দিলেও সনাক্ত করতে পারব এটি মোকসেদ আলীর লেখা। এই স্বকীয়তা আমি আর কোথাও দেখিনি।
ধন্যবাদ লেখাটির জন্য। আমি আর একজন মোকসেদ আলীকে দেখেছি হিন্দুদেরকে রক্ষা করতে। লিখব কোন এক সময়।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
তাই? আপনার লেখাটি পড়ার অপেক্ষায়…
@নৃপেন্দ্র সরকার,
কেউ যদি মোকছেদ আলীর ঢঙে বা স্টাইলে লিখে বলে- এই লেখাটা মোকছেদ আলীর, তখন কী বলবেন?
অবশ্যই লিখবেন। আমার তো এখনই শুনতে ইচ্ছে করছে।
সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে লেখাটা চমৎকার হয়েছে। এই হচ্ছে আসল চিত্র। কিন্তু,একটা প্রশ্ন প্রায়শঃ
জাগে তা হচ্ছে কেবল কী এই দেশেই এমন ঘটনা ঘটে?প্রতিবেশী দেশে কী খুব শান্তিপূর্ণ রেখেছে মুসলমানদের বা রেখেছিল সারা জীবন? কেউ বলতে পারবেন কি?
তাই যদি হয় তবে এতো মুসলমান প্রতিবেশী দেশ থেকে কেনো চলে এলেন? জানতে ইচ্ছে করে।
হিন্দু/মুসলিম দাঙ্গার উৎপত্তি কবে? বা কোথায় শুরু হয়েছিল? ইতিহাস ঘাটলে কী থলের বিড়াল কিছু বের হবে না?
@আফরোজা আলম,
মন্তব্য ও চিন্তাজাগনিয়া প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ। আমাদের ইতিহাস খুজে দেখতে হবে হিন্দু/মুসলিম দাঙ্গার উৎপত্তি কোন সময় থেকে শুরু হয়?
আমি যতদূর জানি- যখন কায়েদা আজম মোহম্মদ আলী জিন্নাহ সতন্ত্র পাকিস্তান (ধর্মভিত্তিক) রাষ্ট্র দাবী করলেন, তখন থেকেই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার শুরু হয় এই উপমহাদেশে।
@মাহফুজ,
আমারও তাই মনে হয়। মোঘল আমলে এ জাতীয় ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাংগা হয়েছে বলে জানা নেই। বীজ বপন করেছিল ব্রিটিশ (বলা ভাল মনে হয় ব্রিটিশে বীজে সার পানি দিয়েছিল মাত্র), শুরু হয়েছে দেশভাগের পর থেকে, চলছে এখনো।
এই আমলে এসেও মানবতার এহেন অপমান আমাদের দেখতে হয়। এই ৬০ সালের দাংগাতেই মনে হয় নটরডেম কলেজের ততকালীন প্রিন্সিপাল (ফাদারের নাম মনে হচ্ছে না) সাহেব দাংগা থামাতে গিয়ে ডেমরায় নিজেই নৃশংসভাবে নিহত হয়েছিলেন।
@আদিল মাহমুদ,
আরও একটু তথ্য দেয়ার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তারপরও ইতিহাস খুঁজে দেখতে হবে- কেমন ভয়াবহ ছিল এই দাঙ্গা। তবে এই দাঙ্গাকে রায়ট বলা হতো, এতটুকু জানি।
ধন্যবাদ সুন্দর উপলব্ধির জন্য।
@আদিল মাহমুদ,
রায়টের সংজ্ঞা খুঁজতে হয়। ব্যাপারটি যদি এরকম হয়ঃ
১) দুই পক্ষই সমানে একে অপরকে মারছে
২) এক পক্ষ মারছে আর এক পক্ষ জান নিয়ে পালাচ্ছে
এর দুটোই কি রায়ট? না কি একটি? একটি হলে কোনটি? অন্যটাকে কী বলে?
@নৃপেন্দ্র সরকার,
কথাতা মাহফুজ সাহেবের। আমিও ঠিক নিশ্চিত নই রায়ট আর দাংগার মধ্যে পার্থক্য কতটা?
আমার জানা মতে দাংগা বা রায়ট দুটো একই, যেখানে দুই পক্ষই একে অপরকে মারে।
ব্যাপারটা এক পক্ষীয় হলে মনে হয় সেটাকে রায়ট/দাংগা বলা যায় না, হামলা বলাই যুক্তিসংগত।
মাহফুজ সাহেব কি বলেন দেখা যাক।
@আদিল মাহমুদ,
রায়ট (riot) শব্দটির অর্থই হচ্ছে- দাঙ্গা, খুনখারাবী। আমি বলেছি- এই দাঙ্গাকে রায়ট বলা হতো এতটুকু জানি। আমার নানীকে বলতে শুনেছি (তিনি অতীতের কোন স্মৃতি উল্লেখ করতে গেলে বলতেন)- ঘটনাটা রায়টের আগে। কিম্বা বলতেন- রায়টের সময়। আবার বলতেন- রায়টের পরে। তার দৃষ্টিতে ১৯৪৭, ১৯৬০, ১৯৭১ এই তিনটি রায়ট। কখনও কখনও গণ্ডগোলের বছরও বলতেন। ১৯৭১ টাকে একটু আলাদা করার জন্য ‘সংগ্রামের সময়’ শব্দটা ব্যবহার করতেন।
মোকছেদ আলীর অন্য আরেকটি পাণ্ডুলিপিতে রায়ট শব্দ পেয়েছি।
জিন্নাহ ১৯৪৬ সনে ১৬ আগস্টকে প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবসের ডাক দেন। এর ফলে ভারতে ব্যাপক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হয়। বাংলা বিহারে দাঙ্গা ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে। কলকাতায় যখন মুসলিম নিধন শুরু হয়, তখন গান্ধী ছুটে এলেন কলকাতায়। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে নিয়ে দাঙ্গা থামানোর চেষ্টা করে। বাংলায় দাঙ্গা বন্ধ হলেও অন্যত্র তা ছড়িয়ে পড়ে। এই সময়টাকেও রায়ট বলা হয়েছে।
এখনও যদি কোন বৃদ্ধদের কাছে দাঙ্গার বিষয়ে জিজ্ঞেস করা যায়, তাহলে রায়টের কথা বলবে।
@আফরোজা আলম,
হিন্দুরা দাঙ্গা শুরু করেছিল। মুসলমানরা ভারত আক্রমন করে ছিল। সেটা ছিল বাহিনীর ব্যাপার। হিন্দু বাহিনী প্রতিরোধ যুদ্ধ চালিয়ে গেছে। মুসলমান বাহিনীর হাতে বহু হিন্দু অকাতরে মরেছে। কিন্তু এর কোনটাই দাঙ্গা ছিল না।
দাঙ্গা হচ্ছে বেসামরিক লোক জন যখন একে অপরকে মেরেছে।ইংরেজ আমলে এসে মুসলমানদের দাহিনীর সহায়তা শেষ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু বহু যুগের অভ্যাস বসত তারা তখনও চাইত হিন্দুদের মারতে। এবারে হিন্দু জনগন প্রতিরোধ শুরু করল, আর সেই সাথে শুরু হল দাঙ্গা।
মানে হিন্দুরা যদি প্রতিরোধ না করত, তবে কোন দাঙ্গা হতনা। ফলে আমরা এই সীদ্ধান্তে আসতে পারি যে, দাঙ্গা শুরু করেছিল হিন্দুরা। 😀
@আতিক রাঢ়ী,
ধরুন আপনাকে আমি আপনার বাড়ি গিয়ে প্যাঁদালাম।আপনি বাধা দিলেন বা পাল্টা মার দিলেন এবং দুপক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তি হল।এখানে কোনোভাবেই কি অশান্তি ছড়ানোর জন্য আপনাকে দায়ী করা যায়, এই বলে যে কেন আপনি বাধা দিতে গেলেন মুখ বুজে মার খেয়ে গেলেন না?
@আফরোজা আলম,
আমাদের দেশে মুসলমান সম্প্রদায় নির্ভয়ে বাস করেন যার প্রমাণ স্বাধীন ভারতে গুজরাত দাঙ্গা ছাড়া বড়োমাপের সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের অনুপস্থিতি ।আর প্রতিবেশী বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার প্রমাণ বছর বছর
হিন্দু নিধন যজ্ঞ।
ভারতে সংখ্যালঘুরা কেমন আছেন তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ হজ সাবসিডি।