লেখাটি ব্লগে দিব কিনা এ নিয়ে একটু দ্বিধায় ছিলাম। কারণ প্রথমতঃ লেখাটি হাতীর মতই বিশালকায়, আর এই লেখাটি ব্লগের জন্য নয়, আমার বিবর্তনীয় মনোবিদ্যা বিষয়ক বইয়ের কথা মাথায় রেখে লেখা। কিন্তু ব্লগে দিতে গেলে খন্ডিত আকারে বা ছোট ছোট করে দিতে হয়। আর খন্ডিত আকারে দিলে যেটা হয় – পর্বগুলোতে এক ধরনের অসম্পূপুর্ণতার ভাব থেকে যায়। তার চেয়েও মারাত্মক ব্যাপারটি হল – সম্পূর্ন লেখাকে খন্ড করে ব্লগে দেওয়ার ফলে লেখার ভুল ইন্টারপ্রিটেশন হতে পারে। যেমন, এ পর্বটি পড়ে অনেকেরই মনে হতে পারে লেখায় সংঘাত বা ভায়োলেন্সের বৈজ্ঞানিক বৈধতা দেয়া হচ্ছে। আসলে তা নয়। এই পুরো সিরিজটির মাধ্যমে আমি ভায়োলেন্সের একটি নৃতাত্ত্বিক, সামাজিক বিশ্লেষণ হাজির কারার চেষ্টা করবো মূলতঃ আধুনিক বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের পটভুমিকায়। অনেকেরই হয়তো মনে আছে যে, আমি বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের উপর একটি ই বই লিখেছিলাম। এ লেখাটি সেটারই সম্প্রসারণ বলা যায়। তবে শুধু ভায়োলেন্সের উৎস সন্ধান করাই এই লেখার উপজীব্য নয়, বরং ভায়োলেন্সের রক্তাক্ত পথ পাড়ি দিতে গিয়েই কীভাবে মানব সমাজে পরার্থতা, নৈতিকতা এবং মূল্যবোধের উদ্ভব ঘটেছে সেটাও এই সিরিজের মাধ্যমে দেখানোর চেষ্টা করা হবে।
:line:
যুদ্ধ মানে শত্রু শত্রু খেলা,
যুদ্ধ মানেই আমার প্রতি তোমার অবহেলা’
… (নির্মলেন্দু গুণ)
মানবিকতার নমুনা
অনেকেই খুব সরল চিন্তাভাবনা থেকে ধরে নেন, মানুষ বোধ হয় খুব শান্তিপ্রিয় একটা জীব, আর সহিংসতা জিনিসটা পুরোটাই কেবল পশুদের প্রবৃত্তি। এই পশুপ্রবৃত্তিকে মানুষ আবার আলাদা করে ‘পাশবিকতা’ বলে ডাকে। এমন একটা ভাব যে, আমরা মানুষেরা তো আর পশু নই, আমরা সৃষ্টির সেরা জীব। আমরা কি আর পশুদের মতো সহিংসতা, খুন ধর্ষণ, হত্যা – এগুলোতে জড়াই? আমরা মানব। পাশুদের কাজ ‘পাশবিক’ আর আমাদের কাজ সব ‘মানবিক’। তো,সৃষ্টির সেরা জীব মানুষের এই খোদ বিংশ শতাব্দিতে ঘটানো কিছু ‘মানবিক’ কাজের খতিয়ানে নজর দেয়া যাক[1] –
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মারা যায় দেড় কোটি লোক, আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি লোক । পাকিস্তানী বাহিনী ১৯৭১ সালের নয় মাসের মধ্যে ৩০ লক্ষ বাংলাদেশীকে হত্যা করে, ধর্ষণ করে প্রায় ২ লক্ষ নারীকে। ল্যান্সেট সার্ভে অনুযায়ী আমেরিকার ইরাক দখল এবং যুদ্ধে এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৬ লক্ষের উপর । খেমারুজ বাহিনী কম্বোডিয়ায় ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৯ সালের মধ্যে হত্যা করে অন্ততঃ ২০ লাখ মানুষকে। চীনে চেয়ারম্যান মাও এর শাসনামলে গৃহযুদ্ধ দুর্ভিক্ষসহ নানা কারণে মারা যায় ৪ কোটি লোক। চীনের সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময়েই মৃত্যু সংখ্যা ছাড়িয়ে যায় ৩০ লক্ষের উপর। এছাড়া সোভিয়েত ইউনিয়নে ২ কোটি লোক, ১০ লাখ লোখ ভিয়েতনামে, ২০ লাখ লোক উত্তর কোরিয়ায়, ২০ লাখ লোক কম্বোডিয়ায়, ১০ লাখ লোক পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে, দেড় লাখ লোক পূর্ব ইউরোপে, ১৭ লাখ লোক আফ্রিকায়, ১৫ লাখ লোক আফগানিস্তানে কমিউনিস্ট শাসনামলে নিহত হয়। বিশ্বযুদ্ধত্তোর পৃথিবীতে আমেরিকার আধিপত্যের ঝান্ডার উদাহরণগুলোও এখানে প্রাসঙ্গিক। মার্কিন আধিপত্যবাদ প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে শুধু ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময়ই উত্তর ও দক্ষিণ ভিয়েতনামের প্রতি বর্গমাইল জায়গার উপর গড়ে ৭০ টনের বেশি বোমা ফেলেছিলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। অন্য ভাষায় বললে, মাথাপিছু প্রতিটি লোকের জন্য ৫০০ পাউন্ড বোমা। এমন কি গাছপালা ধ্বংসের রাসায়নিকও ছড়িয়ে দিয়েছিলো দেশের অনেক জায়গায়। নিউজ উইকের এক সাংবাদিক যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইউরোপে কাজ করতেন, তিনি লিখেছেন নাৎসীরা বিশ্বযুদ্ধের সময় ইহুদিদের উপর যে অত্যাচার চালিয়েছিলো, ভিয়েতনামে মার্কিন নির্যাতন তাকেও হার মানিয়েছিল। ভিয়েতনামের মাইলাই হত্যাকান্ড মানব সভ্যতার ইতিহাসের এক ঘৃন্য অধ্যায়। ১৯৬৮ সালের ১৬ই মার্চ সকাল সাড়ে তিনটায় সাম্রাজ্যবাদী মার্কিনবাহিনী দক্ষিণ চীন সাগরের উপকুলে একটি ছোটট গ্রাম মাইলাইতে প্রবেশ করে, এবং গ্রামের নিরস্ত্র সাধারণ লোকের উপর হামলা চালিয়ে নারী, শিশু বৃদ্ধসহ ৩৪৭ জন গ্রামবাসীকে কয়েকঘন্টার মধ্যে হত্যা করে। নারী আর শিশুদের বিকৃত উপায়ে ধর্ষন করে ওই আবু-গারীবের কয়েক ডিগ্রী উপরের মাত্রায়। গ্রামের সাধারণ মানুষের উপর নির্যাতন এতই ভয়াবহ ছিল যে, খোদ মার্কিনবাহিনীরই দুই-একজন (হিউ টমসন) এর বিরোধিতা করে গ্রামবাসীর পক্ষে অস্ত্র হাতে রুখে দাঁড়ায়। অনেকদিন ধরে সারাবিশ্ব এই ঘটনা সম্পর্কে বিন্দু-বিসর্গ জানতে পারে নি। এ ধরণের বহু নজিরবিহীন ধ্বংসলীলা ঘটেছে দেশে দেশে রক্তলোলুপ মার্কিন সাম্রাজ্যের হাতে এই বিংশ শতাব্দীতে। সাড়া বিশ্বে প্রতি বছর পাঁচ হাজার নারী মারা যায় ‘অনর কিলিং’-এর শিকার হয়ে। মুসলিম প্রধান দেশগুলোতে এই মৃত্যুর হার সর্বাধিক। সাড়া বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ১৪ লক্ষ নারী ধর্ষণ এবং শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়। হাই স্কুলে গমনরত প্রায় ১৭ ভাগ ছাত্রী কখনো না কখনো শারিরীক নির্যাতনের শিকার হয়, ১২ ভাগ ছাত্রী শিকার হয় যৌন নিগ্রহের। আন্তর্জাতিকভাবে প্রতি বছর সামাজিক নিপীড়ন, ধর্ষণ, হেনস্তাসহ বিভিন্ন কারণে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয় দশ লক্ষ লোক। সাড়া বিশ্বেই প্রায় ১৬ লক্ষ লোক সহিংসতার শিকার হয়ে মারা যায়। তার অর্ধেকই মারা যায় আত্মহত্যায়,এক তৃতীয়াংশ গনহত্যায়, এবং এক-পঞ্চমাংশ সসস্ত্র সঙ্ঘাতে। প্রতি বছর সাড়া দুনিয়া জুড়ে চোদ্দ হাজারেরও বেশি সন্ত্রাসবাদী কর্মকান্ড ঘটে, মৃত্যুবরণ করে ২২০০০ লোক। দলীয় কোন্দল, অস্ত্রবাজি প্রভৃতির শিকার হয়ে জাপান, অষ্ট্রেলিয়া ইংল্যান্ড প্রভৃতি দেশে প্রতি বছর মারা যায় পনের থেকে পচাত্তুর জন লোক, আর ব্রাজিল, দক্ষিন আফ্রিকা, কলম্বিয়া আর আমেরিকায় এই সংখ্যা বছরে দশ হাজার থেকে শুরু করে চল্লিশ হাজার ছাড়িয়ে যায়।
চিন্তা করে দেখুন – উপরে আমাদের ‘মানবিক’ কীর্তিকলাপগুলোর যে গুটিকয় হিসাব কিতাব উল্লেখ করেছি তা কেবল এই বিংশ শতাব্দী বা তৎপরবর্তী সময়ের ঘটনা। বিশাল সিন্ধুর বুকে কেবল বিন্দুমাত্র, তাই না? কিন্তু তারপরেও ‘মানবিক বিভৎসতার’ সামান্য নমুনা দেখেই যে কারো চক্ষু চরকগাছ হতে বাধ্য।
হয়তো অনেকে ভাবতে পারেন যে,পারমানবিক অস্ত্র আর আধুনিক অস্ত্র সস্ত্রের ঝনঝনানি বৃদ্ধি পাওয়াতেই বোধ হয় সহিংসতা বিংশ শতাব্দীতে এত মাত্রাতিরিক্ত বেড়ছে। আগেকার পৃথিবীর সময়গুলো নিশ্চয় খুব শান্তিময় ছিলো। আমাদের বুড়ো দাদা দাদী কিংবা বয়োবৃদ্ধদের প্রায়ই সুর করে বলতে শুনি – ‘তোরা সব গোল্লায় যাচ্ছিস, আমাদের সময়ে আমরা কত ভাল ছিলাম’।তো আপনিও যদি আপনার দাদা দাদী আর বয়োজ্যেষ্ঠদের মত সেরকমই ভেবে থাকেন যে, ‘দিন যত এগুচ্ছে সমাজ তত অধঃপতিত হচ্ছে’, তাহলে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে বড় সড় বিস্ময়। স্টিভেন পিঙ্কারের উদ্ধৃতি দিয়েই বলি[2] –
‘আসলে আমরা আমাদের এই বিংশ শতাব্দীতেই তুলনামুলকভাবে সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ এবং সহিষ্ণু সময় অতিক্রম করছি, আমাদের পূর্বপুরুষেরা ছিলো আক্ষরিক অর্থেই বর্বর’।
হয়তো পিঙ্কারের কথাটা অত্যুক্তি মনে হবে। কিন্তু আপনি যদি নিরপেক্ষভাবে মানব জাতির ইতিহাসের পাঠ নেন,এবং তথ্য বিশ্লেষণ করেন তাহলে আর সেটাকে অবাস্তব কিংবা অত্যুক্তি কোনটাই মনে হবে না। আসুন, সেটার দিকে একটু নজর দেই।
আমাদের আদিম পূর্বপুরুষ যারা প্লেইস্টোসিন যুগের পুরো সময়টাতে শিকারী সংগ্রাহক হিসেবে জীবন যাপন করতো তাদের জীবনযাত্রা থেকে কিছু বাস্তব পরিসংখ্যান হাজির করা যাক। ১৯৭৮ সালে প্রত্নতত্ত্ববিদ ক্যারোল এম্বার তার গবেষণায় দেখান যে, আদিম যুগে শিকারী সংগ্রাহক সমাজের শতকরা ৯০ ভাগ গোত্রই হানাহানি মারামারিতে লিপ্ত থাকতো আর এর মধ্যে শতকরা ৬৪ ভাগ ক্ষেত্রে যুদ্ধ সংগঠিত হতো প্রতি দুই বছরের মধ্যেই[3]। প্রত্নতত্ত্ববিদ লরেন্স কিলী (Lawrence Keeley) আধুনিক বিশ্বে বিংশ শতাব্দিতে ঘটা ইউরোপ আমেরিকার সহিংসতার সাথে আমাদের পূর্বপুরুষদের সহিংসতার তুলনা করে দেখিয়েছেন যে, বিংশ শতাব্দীতে বিভিন্ন যুদ্ধে যে হারে মানুষ মারা গেছে (দুই বিশ্ব যুদ্ধে নিহতদের সংখ্যা গোনায় ধরেও) সেটা আদিম কালে আমাদের পূর্বপুরষদের সহিংসতার তুলনায় অত্যন্ত নগন্য[4]।
ছবি – আদিম কালের শিকারী-সংগ্রাহক সমাজ এবং আধুনিক বিংশ শতাব্দীর সমাজের তুলনামূলক রেখচিত্র (প্রত্নতত্ত্ববিদ লরেন্স কিলীর ‘ওয়ার বিফোর সিভিলাইজেশন’ থেকে সংগৃহিত)।
উপরের গ্রাফটি লক্ষ্য করুন। উপর থেকে শুরু করে প্রথম আটটি গ্রাফ শিকারী সংগ্রাহক সমাজের। আর শেষটি যেটি ‘প্রায় অদৃশ্যমান’ অবস্থায় কোন রকমে অস্তিত্বের জানান দিচ্ছে, সেটি আধুনিক কালের সহিংসতার নিদর্শন। গ্রাফটি দেখলেই আপনি তুলনামূলক সহিংসতার নমুনাটি বুঝতে পারবেন, আধুনিক কালের তুলনায় আদিমকালে সহিংসতা কি হারে বেশি ছিলো। এখনো মানব সমাজে নিউগিনি হাইল্যান্ডস এবং আমাজন এলাকায় কিছু আদিম শিকারী সংগ্রাহক সমাজের অস্তিত্ব দেখা যায়। সেখানকার জিভারো (Jivaro) কিংবা ইয়ানোমামোর (Ya̧nomamö) শিকারী সংগ্রাহক সমাজে যে পরিমাণ সহিংসতা হয় তাতে একজন ব্যক্তির অন্তত শতকরা ৬০ ভাগ সম্ভাবনা থাকে আরেজন শিকারির হাতে মারা যাবার, সেখানে গেবুসিতে (Gebusi) সেই সম্ভাবনা শতকরা মাত্র ১৫ ভাগ। আর আধুনিক সমাজে সেটা ২ ভাগেরও কম। আদিম সমাজে যে হারে মারামারি কাটাকাটি চলতো, সেই হারে আধুনিক সমাজ পরিচালিত হলে বিংশ শতাব্দীতে একশ মিলিয়ন নয়, দুই বিলিয়ন মানুষ মারা যেত বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। সেই হিসেবে আমরা পিছাইনি, বরং এগিয়েছি।
প্রাচীন কালে শুধু যুদ্ধ বিগ্রহ নয়,যুদ্ধের পর যুদ্ধবন্দীদের উপর যেভাবে অত্যাচার করা হত তা শুনলে আজকের নরম হৃদয়ের মানুষেরা অক্কা পাবেন নিঃসন্দেহে। এক গোত্র আরেক গোত্রের উপর আক্রমণ চালিয়ে শুধু ‘স্পয়েল ওব ওয়ার’ হিসেবে নারীদের ধর্ষণ, উপভোগ কিংবা দাস তো বানাতোই (এগুলো ছিলো একেবারেই মামুলি ব্যাপার), যুদ্ধবন্দীদের বসিয়ে রেখে তাড়িয়ে তাড়িয়ে চোখ উপড়ে ফেলা হতো, হাত পা কেটে ফেলা হত, অনেক সময় আবার আয়েশ করে উপড়ানো মাংস ভক্ষণও করা হতো আনন্দের সাথে[5],[6]। পাঠকদের হয়ত বর্ণনাগুলো পড়ে বিকৃত হরর ছায়াছবির মত মনে হতে পারে, কিন্তু মনে রাখতে হবে আজকের দিনের হরর ছায়াছবিগুলোই ছিল সেসময়ের নির্মম বাস্তবতা। সে সময় যুদ্ধের ব্যাপারে কোন নিয়ম নীতি ছিলো না, ছিলো না কোন ‘জেনেভা কনভেনশন, ছিলো না নারী কিংবা শিশুদের প্রতি কোন বিশেষ সুব্যবহারের নির্দেশ। একতরফা ভাবে যুদ্ধে করে প্রতিপক্ষকে কচুকাটা করাই ছিলো যুদ্ধের একমাত্র লক্ষ্য।
বিংশ শতাব্দীতে আমরা পারতপক্ষে মারামারি হানাহানি খুনোখুনি একদম বাদ না দিতে পারলেও অনেকটাই কমিয়ে এনেছি বলা যায়। এমনকি যুদ্ধের সময়ও কিছু ‘এথিক্স’ পালন করি, যেমন, বেসামরিক জায়গায় হত্যা, লুন্ঠন, বোমাবাজিকে নিরুৎসাহিত করি, যুদ্ধবন্দিদের উপর যতদূর সম্ভব আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী মানবিক ব্যবহার করার চেষ্টা করি। এর পেছনে গনতান্ত্রিক আইন প্রয়োগ,শিক্ষার বিস্তার, মানবিক অধিকারের প্রতি সচেতনা বৃদ্ধি প্রভৃতিকে উল্লেখ করা যায়। শুধু তাই নয়, আমাদের সভ্য জীবনযাত্রা লক্ষ্য করুন। অনেক কিছুতেই আমরা প্রাণপণে ‘পলিটিকালি কারেক্ট’ থাকার চেষ্টা করি। বক্তব্যে কিংবা লেখায় উপজাতির বদলে বলি আদিবাসী, নিগ্রো শব্দের বদলে বলি আফ্রিকান আমেরিকান। সভ্য সমাজে অফিস আদালতে কাজ যারা করেন তারা সচেতন থাকেন আরো একধাপ বেশি – লক্ষ্য রাখেন কারো ধর্ম, বর্ণ, জেন্ডার কিংবা বয়স নিয়ে কোনক্রমেই যেন বক্রোক্তি যেন প্রকাশিত না হয়ে যায়। আমরা আজ সমবেতভাবে গ্লোবাল ওয়্যামিং নিয়ে দুশ্চিন্তা করি, বিলুপ্তপ্রায় পান্ডা কিংবা মেরু ভল্লুকদের রক্ষার ব্যাপারে আমাদের মন কেঁদে উঠে অহর্নিশি। অথচ এই ষোড়শ শতকে আমাদের ‘মহা শান্তিপ্রিয়’ পূর্বপুরুষেরাই প্যারিসের রাস্তায় জীবন্ত বিড়াল দড়িতে ঝুলিয়ে দিতো, তারপর তাতে তেল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিতো। সেই জীবন্ত বিড়াল যখন আগুনে পুড়ে ব্যাথায় কোঁকাতে থাকতো, সেটা ছিলো তাদের বিনোদনের উৎস। বিড়ালের চারপাশে সমবেত জনতা হাততালি দিয়ে চিৎকার করে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতো। তাদের চোখের সামনে অসহায় বিড়ালটি একদল পাষন্ড লোকের বিনোদনের খোড়াক যোগাতে পুড়ে অঙ্গার হয়ে যেতো[7]।
ইতিহাস পরিক্রমায় দেখা যায় ফোনিকান, হিব্রু, ক্যানানাইট, মায়া, ইনকা, এস্টেক, ওলমেক্স, গ্রীক, রোমান কার্থাগিনিয়ান, টিউটন্, সেল্ট, ড্রুইড, গল, থাই, জাপানি, মাউরি, তাহিতিয়ান, হাওয়াই অধিবাসী – সবাই নিজ নিজ ধর্ম অনুযায়ী দেদারসে শিশু, নারী, পুরুষ বলি দিয়েছে তাদের অদৃশ্য দেব-দেবীদের তুষ্ট করতে। কিছু সভ্যতায় দেখা যায়, যখন কোন নতুন প্রাসাদ কিংবা ইমারত তৈরি করা হত, তার আগে সেই জায়গায় শিশুদের জীবন্ত কবর দেওয়া হত – এই ধারণা থেকে যে, এটি প্রাসদের ভিত্তি মজবুত করবে। অনেক আদিম সমাজেই বন্যা কিংবা অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কুমারী উৎসর্গ করার বিধান ছিল; কেউ কেউ সদ্যজন্মলাভ করা শিশুদের হত্যা করত, এমনকি খেয়েও ফেলত। কোন কোন সংস্কৃতিতে কোন বিখ্যাত মানুষ মারা গেলে অন্য মহিলা এবং পুরুষদেরও তার সাথে জীবন্ত কবর দেওয়া হত, যাতে তারা পরকালে গিয়ে পুরুষটির কাজে আসতে পারে। ফিজিতে ‘ভাকাতোকা’ নামে এক ধরনের বিভৎস রীতি প্রচলিত ছিল যেখানে একজনের হাত-পা কেটে ফেলে তাকে দেখিয়ে দেখিয়ে সেই কর্তিত অংগগুলো খাওয়া হত। আমাদের ভারতবর্ষেই এক সময় প্রচলিত সতীদাহের কথা তো আমাদের সকলেরই জানা। সেই ভীতিকর বর্বর অবস্থা থেকে আমরা অনেকটাই নিজেদের সরিয়ে আনতে পেরেছি, এটা নির্দ্বিধায় বলা যায়।
আজকে বরং এ পর্যন্তই থাকুক। পাঠকদের জন্য স্টিভেন পিঙ্কারের ভায়োলেন্স নিয়ে বক্তৃতা –
httpv://www.youtube.com/watch?v=ramBFRt1Uzk
চলবে …
তথ্যসূত্র
[1] cited from various known statistics including –
Case Study: Genocide in Bangladesh, 1971;
Lancet surveys of Iraq War casualties;
Surveillance for Fatal and Nonfatal Injuries – 2001, Centers for Disease Control and Prevention National Vital Statistics System;
World Report on Violence and Health, World Health Organization, 2002;
Report on Terrorist Incidents, 2006 (issued April 2008), National Counterterrorism Center (NCTC);
Selected Death Tolls for Wars, Massacres and Atrocities Before the 20th Century
Marc Hauser, Moral Minds: How Nature Designed Our Universal Sense of Right and Wrong, Harper Perennial, 2007 etc.
[2] A Biological Understanding Of Human Nature: A Talk With Steven Pinker, Science at the Edge, 2008
[3] Ember, Carol R. 1978 Myths about Hunter-Gatherers Ethnology. 17 (4) 439-448
[4] Lawrence H. Keeley, War Before Civilization: The Myth of the Peaceful Savage, Oxford University Press, USA, 1997
[5] Michael Ghiglieri, The Dark Side Of Man, Basic Books, 2000
[6] Lawrence H. Keeley, War Before Civilization, পূর্বোক্ত।
[7] Sam Harris, The End of Faith: Religion, Terror, and the Future of Reason (2004), pp. 170
শ্বদন্ত মানে কি???
বিপ্লবের সাথে আলোচনা আর অপার্থিবের শেষ মন্তব্যটির পর এবং বন্যার সাথে আলোচনার পরে সিরিজটার কাঠামো একটু বদল করবো ভাবছি। তাদের চমৎকার মন্তব্যগুলো পর্বটির আকর্ষণ বাড়িয়েছে নিঃসন্দেহে। ভায়োলেন্স কমে আসছে এব্যাপারটি ঢালাওভাবে বলা আসলেই হয়তো সরলীকরণ, যদিও লরেন্স কিলি, স্টিফেন লেব্লাঙ্ক, ব্রুস নফট কিংবা স্টিভেন পিঙ্কারেরা সেটা তাদের গবেষণায় দেখিয়েছেন যে সভ্যতার আগে ভায়োলেন্সের হার এখনকার ভায়োলেন্সের চেয়ে অনেক বেশি ছিলো। তারপরেও এই বিশ্লেষণগুলো শেষ পর্যন্ত ব্যক্তিগত বিশ্লেষনেরই রকমফের, কারণ ট্রাইবাল সমাজগুলো ঠিক কিরকম ছিলো, তা সত্যিকার অর্থে আমরা জানি না। সেজন্য আমাদের নির্ভর করতে হয়েছে বিভিন্ন পরিসংখ্যানের উপর, আর পরিসংখ্যান কখনোই হার্ডকোর সায়েন্স নয়। ব্যাপারটা মাথায় রেখে আমার লেখায় কিছুটা পরিবর্তন আনার চেষ্টা করব। ভায়োলেন্স যদি নাও বা কমে থাকে, কিন্তু আদিম কালের যুদ্ধহীন শান্তিময় সমাজের ব্যাপারটা যে এক ধরনের ‘মিথ’ সে নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। ভাবছি সে ব্যাপারটাই আসলে ফোকাস হওয়া উচিৎ, ভায়োলেন্স কতটুকু বাড়ছে বা কমছে সেটা নয়। পরের পর্বে কিছুটা ইঙ্গিত করেছি এ নিয়ে। বলেছি,
কিন্তু যত আশাবাদীই হই কিংবা হওয়ার অভিনয় করি নাকেন কেন, সত্যি বলতে কি মানুষের বেঁচে থাকার ইতিহাস আসলে শেষ পর্যন্ত সহিংসতারই ইতিহাস। যে কোন প্রাচীন ইতিহাসভিত্তিক জনপ্রিয় চলচিত্রগুলোতে চোখ রাখলেই দেখা যায় এক রাজা আরেক রাজার সাথে যুদ্ধ করছে,কেউ ষড়যন্ত্র করছে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য, কেউবা পার্শ্ববর্তী রাজ্য আক্রমণের জন্য মুখিয়ে আছে, কখনো গ্ল্যাডিয়েটরদের ক্ষুদার্থ সিংহের খাঁচায়, কখনো বা নরবলি দেয়া হয়েছে কিংবা কুমারী নারী উৎসর্গ করা হয়েছে রাজ্যের সমৃদ্ধি কামনায়। আমরা ইতিহাসের সিঁড়ি ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে যত পেছনের দিকেই যাই না কেন, এ ধরনের যুদ্ধ এবং অমানবিক নৃশংসতার হাত থেকে আমরা নিস্তার পাই না। আমাদের আদিম পূর্বপুরুষেরা কেউ বা যুদ্ধ করেছে লাঠি সটা দিয়ে, কেউ বা বল্লম দিয়ে, কেউ বা তীর ধনুক দিয়ে কিংবা কেউ বুমেরাং ব্যবহার করে। আদিম গুহাচিত্রগুলোতে চোখ রাখলেই দেখা যায় তীক্ষ্ণ সেসব অস্ত্র ব্যবহার করে তারা পশু শিকার করেছে, কখনো বা হানাহানি মারামারি করেছে নিজেদের মধ্যেই। তারপরেও আমাদের স্কুল কলেজের বই পত্রে শেখানো হয়েছে কিংবা জনপ্রিয় মিডিয়ায় বহুদিন ধরে বোঝানো হয়েছে আমরা নাকি খুব শান্তিপ্রিয় জীব। তারা পশুদের মত নির্বিচারে হানাহানি মারামারি করে না। আসলে মানুষ খুব ‘শান্তিপ্রিয় প্রজাতি’ – সমাজে গেড়ে বসা এই মিথটিকে স্টিভেন পিঙ্কার তার ব্ল্যাঙ্ক স্লেট চিহ্নিত করেছেন ‘মিথ অব নোবেল স্যাভেজ’ (Myth of Nobel Savage)হিসেবে।…।
দেখা যাক, কিভাবে এগুনো যায়। ভায়োলেন্সের ব্যাপারটা জটিল। এই জটিলতাকে পূর্ণাঙ্গভাবে ব্যাখ্যা করার মডেল সেভাবে আছে কিনা সেটাও ভাবনার বিষয়। চেষ্টা থাকবে, এ প্রসঙ্গে আধুনিক বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানীদের ধারণাগুলো পাঠকদের সামনে তুলে ধরতে।
এবারে অপার্থিবের শেষ মন্তব্যে করা দুই একটি পয়েন্ট নিয়ে কথা বলি।
আমি আসলে এখানে জৈববিবর্তনের কথা বলছি না (যদিও সেখানেও প্রেডিকশন না হোক রেট্রোডিকশন হয়), আমি আসলে লেখাটা ব্যাখ্যা করতে চাইছি আধুনিক বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের পটভূমিকায়। সেই ভূমিকায় চিন্তা করলে বলা যায় যে, ভবিষ্যদ্বানী করা দূরূহ নয়। কিছু উদাহরণ দেই।
১) বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানীরা অনেকদিন ধরেই ভাবছিলেন, জৈব অভিভাবকদের তুলনায় স্টেপ প্যারেন্টদের দ্বারা শিশু নির্যাতনের হার বেশি। প্রতিটি সংস্কৃতিতেই কিন্তু সিণ্ডারেলা কিংবা স্নো হোয়াইটের মত লোককথা কিংবা গল্পকাহিনী প্রচলিত ছিলো, যেখানে সৎবাবা কিংবা সৎমা কর্তৃক শিশুর উপর নির্যাতন থাকে মূল উপজীব্য হিসেবে। আমাদের সংস্কৃতিতেও, নাটকে সিনেমায় এমনকি ঠাকুরমার ঝুলিতেও এর অনেক উপকরণ আছে। কিন্তু মার্টিন ড্যালি এবং মার্গো উইলসন তাদের গবেষণায় দেখিয়েছেন আমেরিকার আধুনিক সমাজেও জৈব অভিভাবকদের দ্বারা শিশু নির্যাতনের চেয়ে সৎ অভিভাবক কর্তৃক শিশু নির্যাতন অন্ততঃ ১০০ গুণ বেশি। ক্যানাডায় জরিপ চালিয়েও একই ধরণের ফলাফল পাওয়া গেছে। এর ব্যাখ্যা খুবই সহজ। জৈব অভিভাবকেরা তাদের জেনেটিক সন্তান খুব কমই নির্যাতন বা হত্যা করে, কারণ তারা সহজাত কারণেই জিনপুল ধ্বংসের চেয়ে রক্ষায় সচেষ্ট হয়, কিন্তু সৎঅভিভাবকদের ক্ষেত্রে যেহেতু সেই ব্যাপারটি সেভাবে নেই, সেখানে নির্যাতনের মাত্রা বেশি পাওয়াটাই স্বাভাবিক, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাই পাওয়া যায়।
২) আরো একটা আকর্ষনীয় উদাহরণ দেই। ভায়োলেন্স ব্যাখ্যা করার চেষ্টা জটিল মনে হলেও এর প্যাটার্ণ ব্যাখ্যা এমনকি প্যাটার্নের ভবিষ্যদ্বানী কিন্তু করা যায় অনেক ক্ষেত্রেই। যেমন, ভবিষ্যদ্বানী করা যেতে পারে যে, যে কোন সংস্কৃতিতেই যে কোন দেশেই পুরুষদের মধ্যে সহিংসতা , নারীদের তুলনায় বেশী পাওয়া যাবে। এর কারণ হচ্ছে, বিবর্তনীয় পথপরিক্রমায় ইতিহাসের বড় একটা অংশ জুড়েই মানব সমাজ ছিলো ‘ইফেক্টিভলি পলিগোমাস’ (সঠিকভাবে বললে বলা উচিৎ, পলিজাইনাস) যেখানে সমর দক্ষ সহিংস পুরুষেরা একাধিক নারীর দখল নিতো। । পলিজাইনাস সমাজে কিছু সৌভাগ্যবান পুরুষ তাদের অতুলনীয় শক্তি আর ক্ষমতার ব্যবহারে অধিকাংশ নারীর দখল নিয়ে নিতো, আর অধিকাংশ শক্তিহীন কিংবা ক্ষমতাহীন পুরুষদের কপালে কিছুই জুটতো না। এটাই ছিলো বাস্তবতা। ভায়োলেন্সের একমাত্র না হলেও অন্যতম জৈববৈজ্ঞানিক উৎস সম্ভবত সেখানেই নিহিত। কিছুটা আলোচনা করি। নারীর দখল নেয়ার জন্য পুরুষে পুরুষে একসময় প্রতিযোগিতা করতে হতো। কাজেই পুরুষের মানসজগত গড়ে উঠেছিল ‘হাইলি কম্পিটিটিভ’ হিসেবে। আর সম্পদ আর নারী নিয়ে এই প্রতিযোগিতার কারণেই তৈরি হয়েছিলো সমাজে বিভিন্ন ধরণের ভায়োলেন্সের চর্চা বা সহিংসতা (সঙ্ঘাত, খুন, ধর্ষণ, অস্ত্রবাজি, গণহত্যা .. প্রভৃতি)। বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন, পুরুষালি সহিংসতার বড় একটা উৎস আসলে নিহিত সেই ‘ব্যাটেল অব সেক্স’-এর মধ্যেই। এমনকি আধুনিক রাষ্ট্রে ঘটা বিভিন্ন অপরাধ এবং ভায়োলেন্সগুলোকেও বহু সময়েই এর মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা যায়। ঠিক একই ভাবে বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের প্রেক্ষাপটে ব্যাখ্যা করা যায় গড়পরতা নারীরা কেন পুরুষদের চেয়ে কম ঝুঁকি নেয়, কেন তাদের মানসজগৎ কম প্রতিযোগিতামূলক এবং সর্বোপরি কম সহিংস। যে কোন সংস্কৃতিতেই নৃশংস খুনি বা সিরিয়ল কিলার নারীদের মধ্যে একেবারেই কম, ঠিক যে কারণে পর্নোগ্রাফির প্রতি আসক্তি মেয়েদের মধ্যে কম থাকে পুরুষের তুলনায়। কারণ এ ধরণের ব্যাপারগুলো মেয়েদের জন্য কোন রিপ্রোডাক্টিভ ফিটনেস প্রদান করে না। বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানী এনি ক্যাম্পবেল সহ অনেকেরই এ নিয়ে খুব ভাল গবেষণা আছে। আমি আমার সিরিসের তৃতীয় পর্বে এ নিয়ে বিস্তৃত ভাবে লেখার ইচ্ছে পোষণ করি।
৩) বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের আরেকটি প্যাটার্নের কথা বলি। পুরুষদের মধ্যে ভায়োলেন্স সার্বজনীন হলেও এর ব্যপ্তির বৃদ্ধি বা হ্রাস নির্ণয় করা সম্ভব। যে কোন দেশেই দেখা গেছে গড়পরতা সবচেয়ে বেশি হত্যাকান্ড এবং সহিংসতা পুরুষেরা করে থাকে যখন তাদের বয়স থেকে বিশ থেকে উনত্রিশের মধ্যে। যত বয়স বাড়তে থাকে সহিংসতা কমে আসে। এমনকি সিরিয়াল কিলাররাও একটা নির্দিষ্ট বয়েসের পরে সেভাবে আর হত্যা করে না। এর কারনটাও স্পষ্ট। কারণ এই বয়স পরিসীমাতেই পুরুষেরা রিপ্রোডাক্টিভ কম্পিটিশনের চূড়ায় থাকে। সেজন্যই ডেভিড বাস তার ‘মার্ডারার নেক্সট ডোর’ গ্রন্থে বলেছেন, ‘What these numbers reveals that murder increases dramatically as males enter the years of reproductive competition’ (পৃঃ ২৩)
৪) প্রাসঙ্গিকভাবে ট্রাভিস হার্সি এবং মাইকেল গটফ্রেডসন প্রমুখের ‘এজ ক্রাইম কার্ভ’ এবং ‘এজ এন্ড এক্সপ্লেনেশন অব ক্রাইম’ নিয়েও লেখার ইচ্ছে আছে। এজ-জিনিয়াস কার্ভের সাথেও একে সম্পর্কযুক্ত গবেষণাগুলোও আসবে। আমি দেখাবো, ঠিক যেকারনে প্রতিযোগিতামূলক চাহিদার (কম্পিটিটিভ ডিসায়ার) চূড়ায় পুরুষদের সৃজনশীলতার প্রকাশ ঘটে, ঠিক সেকারণেই খুনীদের মধ্যেও মধ্যেও জীবনের রিপ্রোডাক্টিভ সময়ের পিক -এ সহিংসতা বাড়ে।
৫) বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের অনুকল্প অনুযায়ী যৌনতা সংক্রান্ত হিংসা কিংবা ঈর্ষার ব্যাপারটি আসলে জৈবিকভাবে (biologically) পুরুষদের মধ্যে অঙ্কুরিত। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে – কেবল পুরুষদেরই সেই ঈর্ষা থাকবে কেন? কারণ হচ্ছে, সঙ্গমের পর গর্ভধারণ এবং বাচ্চা প্রসবের পুরো প্রক্রিয়াটা নারীরাই নিজেদের মধ্যে ধারণ করে, পুরুষদের আর কোন ভূমিকা থাকে না। ফলে পুরুষরা নিজেদের পিতৃত্ব নিয়ে কখনোই ‘পুরোপুরি’ নিশ্চিত হতে পারে না। সত্যি কথা বলতে কি – আধুনিক ‘ডিএনএ’ টেস্ট আসার আগ পর্যন্ত আসলে কোন পুরুষের পক্ষে একশত ভাগ নিশ্চয়তা দিয়ে বলা সম্ভব ছিলো না যে তিনি তার সন্তানের পিতা। কিন্তু মাতৃত্বের ব্যাপারটা কিন্তু তা নয়। মাকে যেহেতু গর্ভধারণ করতে হয়, প্রত্যেক মাই জানে যে সেই তার সন্তানের মা। অর্থাৎ, পিতৃত্বের ব্যাপারটা শতভাগ নিশ্চিত না হলেও মাতৃত্বের ব্যাপারটা নিশ্চিত। এখন চিন্তা করে দেখি – আমাদের পূর্বপুরুষেরা যখন বনে জঙ্গলে ছিলো অর্থাৎ শিকারী-সংগ্রাহক হিসেবে জীবন চালাতো, তখন কোন সুনিয়ন্ত্রিত একগামী পরিবার ছিলো না। ফলে পুরুষদের আরো সমস্যা হত নিজেদের ‘পিতৃত্ব’ নিয়ে। পিতৃত্বের ব্যাপারটা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বিবর্তনের সার্থপর জিনের (selfish gene) ধারকেরা স্বার্থপরভাবেই চাইবে কেবল তার দেহেরই প্রতিলিপি তৈরি হোক। কিন্তু চাইলেই যে নিশ্চয়তা পাওয়া যাবে তা তো নয়। সম্পর্কে প্রতারণা হয়। তার স্ত্রী যে অন্য কারো সাথে সম্পর্ক তৈরি করে গর্ভ ধারণ করবে না, তা সে কিভাবে নিশ্চিত করবে? আদিম বন-জঙ্গলের কথা বাদ দেই, আধুনিক জীবনেও কিন্তু প্রতারণার ব্যাপারটা অজানা নয়। গবেষণায় দেখা গেছে, আমেরিকায় শতকরা প্রায় ১৩ থেকে ২০ ভাগ পুরুষ অন্যের সন্তানকে ‘নিজ সন্তান’ ভেবে পরিবারে বড় করে। জার্মানীতে সেই সংখ্যা ৯ থেকে ১৭ ভাগ, ইত্যাদি। বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় অন্যের (অর্থাৎ নন- জেনেটিক) সন্তানকে নিজ সন্তান ভেবে বড় করার এই প্রতারণাকে বলা হয় কাকোল্ড্রি (cuckoldry), যার বাংলা আমরা করতে পারি – কোকিলাচরণ । এখন কথা হচ্ছে, জীববিজ্ঞানের দৃষ্টিকোন থেকে এর প্রভাব কি? প্রভাব হচ্ছে, কাকোল্ড্রি বা কোকিলাচরণ ঘটলে সেটা পুরুষের জন্য এক ধরণের অপচয়। কারণ সে ভুল ভাবে অন্যের জিনের প্রতিলিপি নিজের প্রতিলিপি হিসেবে পালন করে শক্তি বিনষ্ট করবে। এর ফলে নিজের জিন জনপুঞ্জে না ছড়িয়ে সুবিধা করে দেয় অন্যের জিন সঞ্চালনের, যেটা ‘সেলফিশ জিন’ পরতপক্ষে চাইবে না ঘটতে দিতে। ফলাফল? ফলাফল হচ্ছে, পুরুষেরা মূলতঃ ‘সেক্সুয়ালি জেলাস’ হিসেবে বিবর্তনের ধারাবাহিকতায় বেড়ে উঠে। এজন্যই ইসলামিক দেশগুলোতে কিংবা অনুরূপ ট্রেডিশনাল সমাজগুলোতে মেয়েদের হিজাব পরানো হয়, বোরখা পরানো হয়, কিংবা গৃহে অবরুদ্ধ রাখা হয়, কিংবা বাইরে কাজ করতে দেয়া হয় না – এগুলো আসলে প্রকারন্তরে পুরুষতান্ত্রিক ‘সেক্সুয়াল জেলাসি’-রই বহিঃপ্রকাশ। আসলে এগুলো করার মাধ্যমে পুরুষেরা নিশ্চিত করতে চায় যে, কেবল তার জিনের প্রতিলিপিই তার স্ত্রীর শরীরে তৈরি হোক, অন্য কারো নয়। কারণ স্ত্রীর কোকিলাচরণ ঘটলে সেটা তার জন্য হয়ে উঠে ‘সময় এবং অর্থের অপচয়’। ঠিক এ কারণেই তরুণদের মধ্যে সহিংসতা বেশি হলেও বয়স্ক ব্যক্তিরা ঢের বেশি তরুণী স্ত্রীদের হত্যা করে। কারণ তরুণী স্ত্রীরা সেক্সুয়ালী অনেক ভালনারেবল থাকে, আর তাদের বৃদ্ধ স্বামীরা থাকে অধিকতর ‘সেক্সুয়ালি জেলাস’। এগুলো নিয়ে আলোচনা হবে সামনে।
আসলে ব্যাপারটিকে মানবতার সাথে না গোলানোই ভাল। আসলে আমরা প্যাটার্নের বিশ্লেষণেই বেশি আগ্রহী, ব্যাপারটা মানবতাবাদের দিকে যাচ্ছে কি যাচ্ছে না তা নিয়ে নয়। যেমন খাদ্যাভাসের প্যাটার্ন থেকে বলতে পারি, আমেরিকায় লোকজন ইদানিং ‘ওবিজ’ হয়ে উঠছে কিনা, কিংবা মানুষের মধ্যে পরিবেশ সচেতনতা, স্বাস্থ্যসচেতনতা বাড়ছে কিনা ইত্যাদি। এখন দেখানো যেতে পারে – আমাদের পূর্বপুরুষদের শ্বদন্তের আকার অনেক বড় ছিলো, সে তুলনায় আমাদের শ্বদন্ত অনেক ছোট হয়ে এসেছে। চোয়ালের আকারও কমে এসেছে। অনেকভাবেই দেখানো যায়, আমাদের সমাজ পলিজাইনাস থেকে মনোগামীর দিকে যাচ্ছে। এগুলোর বিভিন্ন ইন্টারপ্রিটেশন হতে পারে, একটা ইন্টারপ্রেটেশন তো অবশ্যই যে, নারীর দখল নেয়ার জন্য পুরুষে পুরুষে রক্তাক্ত যুদ্ধ আগের চেয়ে কমে এসেছে (হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বায়োলজিকাল এন্থ্রোপলজি’ বিভাগের অধ্যাপক রিচার্ড র্যাংহ্যামসহ অনেকেই তাই মনে করেন)। তবে স্বীকার করছি – সার্বিকভাবে ভায়োলেন্স কতটুকু বাড়ছে বা কমছে সেটা বলা সত্যই জটিল, এবং অনেকাংশেই ব্যক্তি বিশেষের বিশ্লেষণের উপর নির্ভরশীল।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি চমৎকার আলোচনার জন্য।
অনেক দেরিতে পড়লাম। মারাত্মক সূচনা, পরের পর্ব পড়ি এখন…
এই প্রবন্ধের উপর কিছু মন্তব্য করতে চাই বিশেষ করে অভিজিৎ ও বিপ্লবের মধ্যে যে বিতর্ক চলছে তার পরিপ্রেক্ষিতে। বিপ্লবের যুক্তি হল গত কয়েক শতাব্দির তুলনায় আধুনিক কালের সহিংসতা কম তো নয়ই বরং বেড়েছে, বিশেষ করে আধুনিক মারণাস্ত্রের ব্যবহারের দরুণ। অভিজিৎ অবশ্য সেই পয়েন্ট সরাসরি অস্বীকার না করে প্রাগৈতিহাসিক যুগের সাথে বর্তমান কালের সহিংসতাকে পরিসঙ্খ্যানের সাহায্যে তুলনা করে দেখাচ্ছে যে গুহা যুগে বা কয়েক সহস্রাব্দ আগে সহিংসতা বেশি ছিল। দুটোরই পক্ষে যুক্তি দেয়া হয়েছে। এ দুটো একই সাথে সত্য হতে পারে। তবে বৃহৎ চিত্রে এই পরিসঙ্খ্যান ভিত্তিক সিদ্ধান্তকে খুব বেশী সিরিয়াসলি নেয়া ঠিক নয়, কারণ এটা হার্ড সাইন্স নয়। এখানে অনেক গুণক বা ফ্যাক্টর আছে যার কারণে আদিম ও বর্তমান যুগের সহিংসতা পরিসঙ্খ্যানের ভিত্তিতে তুলনা করার কোন উপযোগিতা বা যৌক্তিকতা নেই। হার্ড সাইন্স ছাড়া অন্য সব ফিল্ডে অনুদান লাভের তাগিদে আর প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার কারণে অনেক পরিসঙ্খ্যান ভিত্তিক গবেষণার কাজ নেয়া হয় একাডেমিক ফিল্ডে। তার অনেকগূলিরই কোন উপযোগিতা বা গভীর কোন তাৎপর্য্য নেই। এই পরিসঙ্খ্যানে এত বেশী প্যারামীটার বা ভেরিয়েব্ল থাকে যে এর প্রকৃত কোন উপযোগিতা বা তাৎপর্য্য বের করা ব্যক্তিমূল্যবিচারের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। আদিম যুগের সহিংসতা তখনকার পারিপার্শ্বিকতা আর অন্যান্য অনেক ফ্যাক্টরগুলির আলোকে বিচার্য্য, যা বর্তমান কালে অনুপস্থিত, এর উল্টোটাও বলা যায়। তখন বা এখনকার সহিংসতা সবই শেষ বিচারে বিবর্তনের অমোঘ নিয়মেই নিয়ন্ত্রিত ও বিবর্তিত। বিবর্তনের নিয়মে কোন উদ্দেশ্য বা দিক নির্দেশনা নেই, এই মন্ত্র তো বিবর্তনে বাদেই বলে। কাজেই সহিংসতা যে ক্রমশঃ কমছে বা কমতে থাকবে এমন ধারণা শুধু পরিসঙ্খ্যানের ভিত্তিতে করা ঠিক নয়। বা বাড়ছে বা বাড়বেই এমনো বলা যায় না। বিবর্তনের নিয়মের দ্বারা কোন ভবিষ্যৎবানী করা যায়না বলেই জানি। তবে একটা কথা বলা যায় সেটা হল যে মানুষের মধ্যে সহিংসতার প্রবৃত্তি কমে নি। এখনও ভাল ভাবেই তা শিকড় গেড়ে আছে। শুধু তা প্রকাশ পাওয়ার পরিস্থিতি বা রাস্তা বদলিয়েছে যার কারণে সেটা অনেক সময় পরিলক্ষিত হয় না, সুযোগের অভাবে। তবে সুযোগ পেলেই তা নগ্ন ভাবে প্রকাশি হয়। প্রথম ইরাক যুদ্ধের সময় পলায়নরত ইরাকী সৈন্যদের উপর মার্কিন বাহিণীর নির্মম গোলা বর্ষণ্ যেটা হাইওয়ে অব ডেথ নামে কুখ্যাত, যার দরুন প্রায় কয়েক লাখ ইরাকী মারা যায় বা মার্কিন অবরোধের কারণে যখন ৫ লাখ শিশু মারা যায়, যাকে ভূতপূর্ব মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যাডেলাইন অলব্রাইট যথার্থ বলেছিলেন (It was worth it) , এগুলি এই কঠিন সত্যকেই মনে করিয়ে দেয়। ৭১ এ নিরীহ বাঙ্গালীদের উপর পাক মিলিটারীর বর্বরতা,আবার কিছুদিন আগের পীলখানার বিভৎস হত্যাযজ্ঞ, যা ঠান্ডা মাথায় করা হয়েছিল, এগুলিও একই কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। যদি ব্যক্তিগত পর্যায়ের সহিংসতার কথাও চিন্তা করি তাহলে এখন যে সহিংসতা কমেছে এমনটি মনে করার কোন কারণ দেখি না। বিশেষ করে যখন আধুনিক কালে সমাজ মানবতাবোধের শিক্ষা ও চেতনায় পুরোপুরি সিক্ত, তারপরও সামান্যতম কারণে চাপাতি মেরে গলা কেটে ফেলা বা বুকে রাম দা দিয়ে কোপ মেরে নিষ্ঠুর ভাবে হত্যা করা, যা বাংলাদেশে অহরহ ঘটে। খবরের কাগজ খুললে আজকাল দেখা যায় প্রতিপক্ষ ছাত্রকে ঘায়েল করতে রামদা বা চাপাতি হাতে ছাত্ররা ধাওয়া করছে। পশ্চিমা দেশে বসেও, যেখানে মানবাধিকার কে গুরুত্ব দেয়া হয় সেখানেও দেখা যায় অনার কিলিং এ নিষ্পাপ মেয়ে বলি হয় বাবা বা ভাইয়ের দ্বারা।
একটা কথা বলে শেষ করি। যাঁরা মানবতার জয় হচ্ছে বা হবে বলে এক আদর্শবাদী আশা পোষন করেন তাদের স্মরণ করিয়ে দেই যে বিবর্তন মানবতার তোয়াক্কা করেনা। মানবতা বা সভ্যতা এ সবই বিবর্তনের তাগিদে মানুষের মস্তিষ্কে প্রোথিত এক অনুভূতি বিশেষ। মহান আদর্শ, মানবতাবোধ এগুলি প্রাকৃতিক নিয়মের ভেতরে অন্তর্নিহিত কিছু না, হলেও আমরা তা জানি না। একই কথা বলা যায় সহিংসতার প্রবৃত্তির ব্যাপারে। যারা এই আদর্শ, মানবতাবোধের প্রচার করে তারাই আবার বিশেষ ক্ষেত্রে সহিংসতাকে সমর্থন করে, ম্যাডেলাইন অলব্রাইটের কথা আবার মনে করিয়ে দেই। কাজেই যেটা বলতে চাইছি সহিংসতার ব্যাপারে আশাবাদী বা নিরাশাবাদী হওয়াটা একটা ব্যক্তিনির্ভর বিচার ছাড়া কিছু নয়, বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে আশাবাদী বা নিরাশাবাদী হওয়ার কোন কারণ দেখি না।
বিমান আবিস্কারের পর পর ্মানুষ একে কাজে লাগিয়েছে বোমা ফেলা
আর গুলি বর্ষনের জন্যে। রাইট ভাইদের বিমান আবিস্কারের একদম কয় মাসের মধ্যেই আমেরি্কা ইংল্যান্ড এবং জার্মানিতে এই নিয়ে কাজ শুরু হয়।
তাহলে বিংশ শতাব্দির সভ্য মানুষদের সাথে এদের পার্থক্যকি?
আমেরিকা ভারত চীন-এই সব দেশের গবেষনার সব থেকে বড় অংশ ব্যায় হয় মিলিটারির জন্যে। এই সব সভ্য লোকেদের সাথে তথা
কথিত অসভ্য আদিবাসি দের মানসিকতার পার্থক্য কি?
অভিজিৎ,
আমরা যে শান্তির দিকে —– ইতিবাচক বোধোদয়ের দিকে এগুচ্ছি তা ঐতিহাসিক প্রমাণসহ উপস্থিত করেছেন। আপনার দেওয়া তথ্য অনেক কাজে লাগবে। আপনার পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম। এ প্রসংগে কিছু হালকা কথা বলার লোভ সামলাতে পারলাম না। যেমনঃ অন্ততপক্ষে ভারতবর্ষের রাজনৈতিক ইতিহাস পর্যালোচনা করলেও তাই পাব। সিংহাসনের লোভে অশোকের ৯৯জন ভাইকে হত্যার মত ঘটনা তো আর ঘটে না। (অবশ্য বেনজির ভুট্রোর ভাই হত্যা নিয়ে নিন্দুকেরা কেউ কেউ অপবাদ রটিয়েছে)। শাজাহানের পুত্রদের কলহও আর ঘটে না। অন্তত পরিবারের একজনের রাজত্ব পরিচালনায় অন্যরা ক্ষমতার স্বাদ পেয়ে আর আর্থিক সুবিধা পেয়েই সন্তোষ্ট।
আর সামাজিক ইতিহাস তো আরও ইতিবাচক। আমরা সভ্য হচ্ছি। নারী মানুষ হিসেবে গণ্য হচ্ছে।
সর্বোপরি আপনার বরাবরের লেখার মতই এটিও ভাল লেগেছে , ব্যতিক্রম কিছু নয়। আপনি আমাদের প্রত্যাশা পূরণ করেই লিখেন সব সময়।
ফুয়াদ, মুসাইলামার নাম শুনেছেন?মুসলমানরা যাকে ভন্ড নবী হিসেবে জানে। খলিফা আবু বকরের সময় “খালিদ বিন ওয়ালিদ” এর নেতৃত্যে ১০,০০০ সেনা, আর মুসাইলামার সাথে ৪০,০০০ সেনা “ইয়ামামার যুদ্ধে” লিপ্ত হয়।আপনার কথানুযায়ী সেনাপতি সেনাপতি মল্ল যুদ্ধ হয়। মল্ল যুদ্ধে মুসাইলামার সেনাপতি হেরে যায়। কিন্তু মুসলিমররা সদ ইচ্ছার পরিচয় দেয় নি। মুসাইলামা ৭,০০০ সেনা নিয়ে এক খেজুর বাগানে আশ্রয় নেয়।খালিদ তাদের ঘেরাও করে কচুকাটা করে। আজও সেই বাগান “মৃত্যুর বাগান” নামে পরিচিত। অবশ্য সেই যুদ্ধে মুসলমানরা পরাজিত হলে আজ মুসলমানরা শাহাদা পডত “লা ইলাহা ইল্লেল্লাহ,মুসাইলামা রাসুল আল্লাহ”।
[১] আধুনিক রাষ্ট্রএর উৎপত্তির সাথে সাথেই প্রথম এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ হয়েছে-যেখানে % হারের মৃত্যুও অনেক বেশী ( বাই দি ওয়ে-প্রাক ঐতিহাসিক সমাজে অধিকাংশ লোক দাঁতের রোগে মারা যেত বলে জানতাম-ত্রিশের বেশী কেও বাঁচত না। যেখানে রোগভোগে অধিকাংশ লোক মরত-সেখানে যুদ্ধে মরার সৌভাগ্য কজনের হত জানি না।) আমি তোমার বই গুলোর দেওয়া তথ্যের সাথে প্রামান্য ইতিহাসকে মেলাতে পারছি না। আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধে ২৩,০০০ এর মধ্যে ১৫,০০০ মরেছিল রোগে।
যুদ্ধে ব্যাপক ভাবে লোক মারা যাওয়া শুরু হয়েছে আ) আধুনিক অস্ত্র ব) আধুনিক চিকিৎসা আসার জন্যে যখন অনেক যুবককে মিলিটারি তে পাওয়া যেত।
১৮৭০ সালে ইউরোপে বাস করত্ ২৭০ মিলিয়ান
১৯৩০ সালে বাস করত ৫৩০ মিলিয়ান
সুতরাং জন সংখ্য দ্বিগুন হয়েছে-আর একই সময়ে যুদ্ধে মারা গেছে প্রায় ৪০ গুন বেশী লোক। সুতরাং জন সংখ্যা দিয়ে ভাগ করলেও ২০ গুন বেশী লোক মারা গেছে যুদ্ধে ১৯০০-১৯৫০। পৃথিবীর সমগ্র ইতিহাসে কোনদিনই এই অনুপাতে লোক মরে নি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মারা গেছে ৫০ মিলিয়ান-যখন ইউরোপে ছিল ৫০০ মিলিয়ান লোক। মানে প্রায় ১০% লোক মারা গেছে একটা গোটা ভূখন্ডে যুদ্ধের কারনে। ইউরোপের ইতিহাসে কোন সময় ইউরোপের ১০% লোক যুদ্ধে মারা গেছে? তুমি বই ছেরে আমাকে সালটা জানও। রোমানদের পর থেকে ইউরোপের ইতিহাস খুব ওয়েল ডকুমেন্টেড। এমন কি হুনদের সময়ে ইউরোপে ছিল ৩০ মিলিয়ান মতন লোক-সারা বছর যুদ্ধে তখন খুব বেশী হলে লাখ খানেক লোক মারা যেত যা ১ % ও হবে না।
আমি তোমার কোন বই এর সাথেই সহমত নই। কারন আগে লোকেরা রোগ ভোগে এত মারা যেত জন সংখ্যার খুব কম শতাংশই মিলিটারিতে ঢুকতে পারত। দাঁতের এবং নানাবিধ রোগের জন্যে যেখানে মানুষের গড় আয়ু দীর্ঘ দিন ২১-থেকে ৩৩ ছিল-সেখানে খুব কম শতাংশ লোকই যুদ্ধে যেতে পারত-যা প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকে আমূল বদলে যায়।
সুতরাং পৃথিবীর রোগভোগের এবং মিলিটারি ইতিহাস এটাই বলে যে ১৯০০-১৯৫০ সালেই মধ্যেই মানব হিংসা চূড়ান্ত রূপ পায়। এর পর থেকে তা অবশ্যই কমছে।
আমি কিন্ত ঐতিহাসিক তথ্য দিয়েই প্রমান করলাম হিংসার পিক ছিল ১৯০০-১৯৫০। তোমার দেওয়া বই এর রেফারেন্স গুলোতে কোন ডিটেল মিলিটারি তথ্য বা ঐতিহাসিক ডেমোগ্রাফিক তথ্য নেই।
কি বলেছের থেকে ইতিহাস থেকে তথ্য এনে প্রমান করাই ত ভাল।
@বিপ্লব পাল,
এক্ষেত্রে আমার খুব বেশি কিছু করার নেই। আমি যাদের বইয়ের রেফারেন্স দিয়েছি তারা এ বিষয়ে মাঠ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ। লরেন্স কিলি, স্টিফেন লেব্লাঙ্ক, ব্রুস নফট কিংবা স্টিভেন পিঙ্কারেরা এ নিয়ে বহুদিন ধরেই গবেষণা করছেন। আমি তাদের গবেষণালব্ধ ফলাফলই লিপিবদ্ধ করেছি। তুমি উৎস জানতে চেয়েছিলে, আমি দিয়েছি। এর বেশি আমার কিছু বলবার নেই।
এটা অবশ্য ঠিক বলেছ। তবে তুমি যে ইতিহাসের কথা বলছ, আমি বোধ হয় ঠিক সেটা বলছি না। আমি আসলে ভায়োলেন্সের বিবর্তনীয় উৎস এবং পরিক্রমনা নিয়েই বেশি আগ্রহী ছিলেম, উনিশ শতকে বেশি লোক যুদ্ধে মারা গেছে নাকি বিশ শতকে – ঠিক তা নিয়ে নয় (আর এ ব্যাপারে আমার খুব বেশি জানা শোনাও নেই। তাই মতামত দিতে পারছি না। হয়তো তোমার কথাই ঠিক)। আসলে আমি বার বারই বলার চেষ্টা করছি – উনিশ শতক বা বিশ শতক মানব প্রজাতির বিবর্তনের ইভোলুশনারি স্কেলে হিসেব করলে একটি বিন্দুর চেয়েও ক্ষুদ্র। মানুষ শিকারী-সংগ্রাহক ছিল প্লাইস্টোসিন যুগের পুরো সময়টাতে: ২৫ লক্ষ বছর পূর্ব থেকে ১২,০০০ বছর পূর্ব পর্যন্ত। “হোমো” গণ এর উদ্ভবের সময়কালটাও ২৫ লক্ষ বছর আগের দিকে। তার মানে মানুষের ২৫ লক্ষ বছরের বিবর্তনের ইতিহাসে ৯৯% সময়ই তারা ছিল শিকারী-সংগ্রাহক। কাজেই আমার তুলনাটা ছিলো মূলতঃ সেই সময়ের সাথে। অর্থাৎ তুলনাটা হওয়া উচিৎ বড় পরিসরে – শিকারী সংগ্রাহক জীবনের সহিংসতার সাথে বর্তমান সময়ের সহিংসতার, আঠারো, উনিশ বা বিশ শতকের মধ্যে নয়। শিকারী সংগ্রাহক সমাজে সহিংসতা অনেক বেশি ছিল। এখনো মানব সমাজে নিউগিনি হাইল্যান্ডস এবং আমাজন এলাকায় কিছু আদিম শিকারী সংগ্রাহক সমাজের অস্তিত্ব দেখা যায় সেগুলো নিয়েও গবেষণা করে গবেষকেরা একমত যে, সেখানে গুপ্ত হত্যা, খুন, ওয়ার ফেয়ারে মানুষ মারা যাওয়ার হার আমাদের ‘সভ্য’ সমাজ থেকে বহুগুন বেশি। জন টুবি, লিডা কসমাইডস, রিচার্ড র্যাংহাম তাদের বেশ কিছু গবেষণায় দেখিয়েছেন, যে ট্রাইবাল সোসাইটিগুলোতে সহিংসতা শক্তিশালী পুরুষদের উপযোগিতা দিয়েছিল টিকে থাকতে, এবং তারা সেসময় যুদ্ধ করতো নারীর দখল নিতে (প্রাসঙ্গিকভাবে জন টুবির The Evolution of War and its Cognitive Foundations পেপারটা পড়তে পার) । ভেনিজুয়ালার আদিম ট্রাইব ইয়ানোমামো (Ya̧nomamö)দের নিয়ে গবেষণা করে। নৃতত্ত্ববিদ নেপোলিয়ন চ্যাংনন এই ট্রাইব নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে খুব অবাক হয়েই লক্ষ্য করেন, – এরা শুধু সম্পদ আহরণের জন্য যুদ্ধ করেনা, এরা যুদ্ধ করে নারীদের উপর অধিকার নিতেও’।দেখা গেল ট্রাইবে যতবেশি শক্তিশালী এবং সমর-দক্ষ পুরুষ পাওয়া যাচ্ছে, তত বেশি তারা নারীদের উপর অধিকার নিতে পেরেছে।
সেই ভায়োলেন্ট সমাজের র্যাম্নেন্ট আমরা বহন করছি এখনো। পুরুষদের এই সনাতন আগ্রাসী মনোভাবের পরিচয় পাওয়া যায় আজকের সমাজে ঘটা যুদ্ধের পরিসংখ্যানেও। এখনো চলমান ঘটনায় চোখ রাখলে দেখা যাবে – প্রতিটি যুদ্ধেই দেখা যায় অসহায় নারীরা হচ্ছে যৌননির্যাতনের প্রথম এবং প্রধান শিকার। বাংলাদেশে, বসনিয়া, রুয়ান্ডা, আলবেনিয়া, কঙ্গো, বুরুন্ডিয়া, প্যালেস্টাইন, ইরাক, ইরান সহ প্রতিটি যুদ্ধের ঘটনাতেই সেই নগ্ন সত্যই বেরিয়ে আসে যে, এমনকি আধুনিক যুগেও নারীরাই থাকে যুদ্ধের অন্যতম প্রধান লক্ষ্যবস্তু। হয়ত কখনো উনিশ শতকে কম মরেছে যুদ্ধে, বিশ শতকে হয়তো বেশি (তুমি সেটা তমার ডেটায় দেখিয়েছ), কিন্তু ব্যাপারগুলোকে আলাদাভাবে না দেখে বিবর্তনীয় বৃহৎ কালের পরিসরে চিন্তা করতে হবে।
যা হোক, একটা মজার ঘটনা পড়েছিলাম কিলির বই থেকে। সেটা বলে শেষ করি। বিজ্ঞানীরা বিমান নিয়ে নিউগিনির এক জঙ্গলে শিকারী সংগ্রাহক সমাজের উপর গবেষণা করতে গেলেন। ট্রাইবের নেতা বিমান দেখে প্রথমেই বললেন, তোমাদের বিমানে কি আমাদের রাইড দিতে পার?
বিজ্ঞানীরা বললেন, কেন, এটা দিয়ে কি করবে?
ট্রাইবের নেতা বললেন, ‘আরে দূরেই আরেকটা গোত্র থাকে। আমাদের শত্রু। আমরা তোমাদের বিমানে ভারী পাথর নিয়ে গিয়ে তাদের মাথার উপর ফেলব, দেখি শালারা কি করে এবার!’ 🙂
এ থেকে একটা ধারণা পাওয়া যায় – শিকারী সংগ্রাহক পরিস্থিতিতে আমাদের আদিম পূর্বপুরুষদের মানসিকতা কেমন ছিলো!
বিপ্লব,
আগে যুদ্ধে কম লোক মারা যেত, কারণ লোকসংখ্যাও কম ছিল। কিন্তু সংখ্যায় কম মারা গিয়েছে বলে সেই সময় শান্তিপূর্ণ ছিল ভবলে ভুল হবে। আমি তুলনা করেছি সে সময়কার যুদ্ধ এবং সঙ্ঘাতে মারা যাওয়া হারের সাথে বর্তমান সময়ের হারের। আদিম সমাজে যে হারে মানুষ সঙ্ঘাতে মারা যেতো, সেই হারে এগুলে বিংশ শতাব্দীতে একশ মিলিয়ন নয়, দুই বিলিয়ন মানুষ মারা যেত বলে অনুমান করা হয়।
তুমি প্রত্নতত্ত্ববিদ লরেন্স কিলীর War Before Civilization: The Myth of the Peaceful Savage বইটা পড়ে দেখো –
Lawrence H. Keeley, War Before Civilization: The Myth of the Peaceful Savage, Oxford University Press, USA, 1997
এখানে কিছু তথ্য আছে।
এ ছাড়া পিঙ্কারের ব্ল্যাঙ্ক স্লেট বইয়েও তথ্যগুলো পাবে। পিঙ্কারের এই লেখাটাও দেখতে পার – A HISTORY OF VIOLENCE
কিছু প্রাসঙ্গিক লাইন কোট করি –
It is true that raids and battles killed a tiny percentage of the numbers that die in modern warfare. But, in tribal violence, the clashes are more frequent, the percentage of men in the population who fight is greater, and the rates of death per battle are higher. According to anthropologists like Lawrence Keeley, Stephen LeBlanc, Phillip Walker, and Bruce Knauft, these factors combine to yield population-wide rates of death in tribal warfare that dwarf those of modern times.
আর উন্নত বিশ্বে যে সহিংসতা কমে এসেছে সে প্রসঙ্গে –
Social histories of the West provide evidence of numerous barbaric practices that became obsolete in the last five centuries, such as slavery, amputation, blinding, branding, flaying, disembowelment, burning at the stake, breaking on the wheel, and so on. Meanwhile, for another kind of violence—homicide—the data are abundant and striking. The criminologist Manuel Eisner has assembled hundreds of homicide estimates from Western European localities that kept records at some point between 1200 and the mid-1990s. In every country he analyzed, murder rates declined steeply—for example, from 24 homicides per 100,000 Englishmen in the fourteenth century to 0.6 per 100,000 by the early 1960s.
লেখাগুলো পড়। আর মূল লেখায় পিঙ্কারের যে বক্তৃতাটা ইউটিউব থেকে দেয়া হয়েছে সেটাও একটু দেখে নাও। আর আমি যে চার্টটা ব্যবহার করেছি লেখায় সেটা পাবে এখানে।
@অভিজিৎ,
জন সংখ্যার অনুপাতে ভাগ করলেও হিসাব মেলানো যাচ্ছে না।
১৯০০-১৯২০ ঃ এই হিসাব অনুযায়ী প্রায় ৩০ মিলিয়ান লোক যুদ্ধে মারা গেছে-যুদ্ধের সংখ্যাও অনেক বেশী। এবং দেখা যাচ্ছে প্রতি দশকে প্রায় ১০-২০ মিলিয়ান লোক মারা গেছে ১৯০০-১৯৫০ সালের মধ্যে। সেখানে ১৮৫০ থেকে ১৯০০ সাল পর্যন্ত দেখতে পাচ্ছি একটি দশক বাদ দিলে, প্রায় সব দশকে খুব বেশী হলে ৫ লাখ লোক মারা যেত যুদ্ধে।মাত্র ৫০ বছরের তফাতে জন সংখ্যা খুব বেশী হলে ৩ গুন বেড়েছিল-সেটা ধরলেও হিসাব মেলে না। সেই স্কেলিং এর পরেও বিংশ শতাব্দিতে দেখা যাচ্ছে অন্তত ৫ গুন বেশী লোক মরেছ যুদ্ধে।
@বিপ্লব পাল,
আমার মনে হয় একটু ভুল হচ্ছে, কিংবা আমিই হয়তো বোঝাতে পারছি না। হার নিয়ে তুমি যা বলেছ, তার সাথে আমি মোটেও একমত নই কারণ জনসংখ্যা বিগত শতকগুলোতে প্রায় এক্সপোনেনশিয়ালি বেড়েছে, কিন্তু সে হারে হত্যা খুন ভায়োলেন্স বাড়েনি, বরং কমেছে। ম্যানুয়েল ইশার সহ বিভিন্ন গবেষকদের ডেটাই তা প্রমাণ করে। তারপরেও সাংখ্যিকভাবে যা ডেটা ওয়েব সাইট থেকে তুমি দিয়েছ তা নিয়ে আমার কোন প্রশ্ন নেই। তোমার কথা যদি ঠিকও হয়, এটা আমার মূল বক্তব্যকে ম্লান করে না। আসলে তুমি বোধ হয় বুঝতে পারছ না যে, বিবর্তনীয় স্কেলে আঠারো শতক উনিশ শতক আর বিশ শতকের পার্থক্য খুব সামান্যই। কাজেই পরিসংখ্যানে কিছু উনিশ বিশ হতেই পারে। আমার মূল বক্তব্য ছিল যে, মানুষ যখন হান্টার-গ্যাদারার হিসেবে বাস করত, তখন সহিংসতায় যে হারে মানুষ মারা যেত, এখন (বর্তমান সময়ে) সে হারে যায় না। এটা বোঝা কিন্তু কঠিন নয়। রাষ্ট্রীয় আইন, গণতান্ত্রিক নিয়ম কানুন এখন দুর্বলদের যেরকম নিরাপত্তা দেয়, রাষ্ট্র গঠনের আগের সময়গুলোতে মানুষ সেই নিরাপত্তা কিভাবে পেত? নারী, শিশু বৃদ্ধদের রক্ষা কিংবা দেখভাল করার কোন আইনই তো ছিল না। সেখানে তখন ভায়োলেন্ট পুরূষেরাই রাজত্ব করেছে, দেদারসে বর্বরতার চর্চা করেছে। আসলে সত্যি বলতে কি ‘শান্তিপ্রিয় মানব প্রজাতি’র ব্যাপারটা একটা মিথ বই কিছু নয়। ‘মিথ অব নোবেল স্যাভেজ’ (Myth of Nobel Savage)। এই অযাচিত মিথটিকে জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে নৃতাত্ত্বিক এবং সমাজতাত্ত্বিকদের অবদানও ফেলে দেবার মতো নয়। তারা প্রথম থেকেই উৎসাহী ছিলেন আমাদের অন্ধকার জীবনের ইতিবৃত্তগুলো বেমালুম চেপে গিয়ে একধরণের আশাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি জনমানসে প্রোথিত করতে। সে সব ‘শান্তিকামী নৃতত্ত্ববিদেরা’ এক সময় সোৎসাহে বলে বেড়াতেন যে, ছোট খাট যুদ্ধ টুদ্ধ হলেও মানবেতিহাসের পাতায় কোন নরভক্ষণের (canabalism) দৃষ্টান্ত নেই। তারপর তারা নিজেরাই নিজেদের কথা গিলতে শুরু করলেন যখন সহিংসতা,হানাহানি, যুদ্ধ, হত্যা এবং এমনকি নরভক্ষণেরও গণ্ডায় গণ্ডায় আলামত বেরিয়ে আসতে শুরু করলো। প্রাথমিক একটি দৃষ্টান্তের উল্লেখ পাওয়া যায় প্রায় আটশ হাজার বছর আগেকার পাওয়া ফসিলের আলামত থেকে। অ্যারিজোনা স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ববিদ ক্রিস্টি জ়ি টার্নার বহু পরিত্যক্ত মানব হাড়-গোড় বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্তে আসেন যে, সেগুলো আসলে রান্না করে ভক্ষণ করা হয়েছিলো, আর তা করেছিলো সমসাময়িক মানুষেরাই। তাদের সে সময়কার থালা বাসন এবং অন্যান্য রন্ধন সামগ্রীতেও মায়োগ্লোবিনের (পেশী প্রোটিন) নিদর্শন স্পষ্ট ।এমনকি আমরা হোমোস্যাপিয়েন্সরা আজ থেকে ৫০,০০০ বছর আগে নিয়ান্ডার্থালদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেলাম এবং সম্ভবত তাদের অবলুপ্তির কারণ ছিলাম আমরাই – শান্তিপ্রিয় আধুনিক মানবদের পুর্বসূরীরা । শুধু তাই নয়,গবেষক ফার্নান্ডো রেমিরেস রোসির গবেষণা থেকে জানা গেছে,কিছু জায়গায় যুদ্ধজয়ের পরে হোমোস্যাপিয়েন্সরা ঘটা করে নিয়ান্ডার্থালদের মাংস ভক্ষণ করে উৎসব পালন করতো। কাজেই মানব প্রজাতির উদ্ভবের ইতিহাস মূলতঃ বর্বরতারই ইতিহাস। প্রাককৃষিপূর্ব সমাজে সহিংসতা এবং আগ্রাসনের মাধ্যমে জোর করে একাধিক নারীদের উপর দখল নিয়ে পুরুষেরা নিজেদের সহিংসতাকে ভবিষ্যত প্রজন্মে ছড়িয়ে দিয়েছিল, এ ব্যাপারটা আজ কেউ অস্বীকার করতে পারে না।
বস্তুতঃ আধুনিক রাষ্ট্রের উৎপত্তির পর এবং শিক্ষা এবং সমাজব্যবস্থা উন্নতির সাথে সাথে ভায়োলেন্স আসলে আগের চেয়ে কমে এসেছে। এটাই ছিলো আমার মূল বক্তব্য।
ধন্যবাদ তোমাকে আলোচনার জন্য।
এই চার্টে আরো পরিস্কার হবে। ১৮৬০ থেকে হিসাব আছে কোন যুদ্ধ কত মারা গেছে। কোন সন্দেহ ই নেই ১৯০০-১৯৫০ সালের মধ্যে সব থেকে বেশী মৃত্যু হয়েছে। তার আগে অনেক অনেক কম লোক যুদ্ধে মরত। তার পর থেকে আবার কিছুটা করে কমে আসছে।
অভিজিত তথ্য গুলো কোথা থেকে পেল আমি জানি না-কিন্ত % এ মিলছে না।
আমি পৃথিবীর বৃহত্তম গণহত্যার সংখ্যাগুলোর লিস্ট দিলাম-যা রাষ্টীয় মদতে হয়েছে-যুদ্ধ করে হয় নি-কিন্ত রাষ্ট দুর্ভিক্ষ লাগিয়ে তাদের হত্যা করেছে।
স্টালিনের হত্যার সংখ্যা ইউক্রেনে ২০-৩০% ছাড়িয়েছিল। হলডোমারকে গণহত্যাই বলা যায়। বিংশ শতাব্দির ইউরোপের আগে উনবিংশ শতাব্দিতে ইউরোপে যুদ্ধে বেশী লোক মারা গেছে এই তথ্য যদিও অভিজিত দেয় নি-আমার কাছে বিস্বাসযোগ্য না। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে একটা যুদ্ধে বড় জোর
দশ বিশ হাজার মারা যেত। ৮ বছরের আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধে সব মিলিয়ে ২৩,০০০ মারা যায়-তাও অর্ধেকের বেশী রোগে। সেখানে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে প্রতিদিন বোধ হয় তার থেকে বেশী লোক মারা যেত। বিংশ শতকের আগে ১০০,০০০ এর বেশী সেনা বাহিনী একমাত্র বৃটিশ, অটোমান , ফ্রান্স আর রাশিয়া ছারা ইউরোপে কারুর ছিল না। উন বিংশ শতকের যুদ্ধগুলোর মধ্যে ফ্রাঙ্কো প্রাশিয়ান যুদ্ধ এবং গ্রীসের স্বাধীনতা যুদ্ধ ছারা বড় যুদ্ধ নেই। সেগুলোও জনহত্যায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ধারে কাছেও আসবে না।
কিছু আদিবাসি দের মধ্যে কিভাবে কতজন মারা যায়, সেটার সাথে ইতিহাসের তুলনা করা গোলমেলে। আমি প্রায় নিশ্চিত শুধু প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যত লোক মরেছে উনবিংশ এবং অষ্টদশ শতকের সব যুদ্ধ মিলিয়েও অত লোক মরে নি। কারন অত মারণঅস্ত্রই ছিল না।
আর পরম অহিংসার ধর্ম জৈন ধর্ম আজ থেকে ২৩০০ বছর আগে এসেছে। যার একটা পোকাকে মারাও সমর্থন করে না। বৌদ্ধ এবং জৈন ধর্মের স্বর্ন যুগে ভারতে খুব বেশী যুদ্ধ হয় নি। এখনকার লোকজনের নৃশংসতা যেমন ব্যাতিক্রান্ত ব্যাবহার-ভারতে সেই যুগেও নৃসংস আচরনকে বৌদ্ধ এবং জৈন ধর্মে নিন্দা করা হয়েছে। কিছুদিন আগে পশ্চিম বঙ্গে যষ্ঠি দলুই বলে এক তৃনমূল কর্মীকে সিপিএমের গুন্ডারা তপ্ত লোহার রড দিয়ে চোখ তুলে নিয়ে, তারপরে রডটাই দেহে ঢুকিয়ে দেয়। আমি ওর ৯ বছর বয়স্ক ছেলের ইন্টারভিউ নিয়েছিলাম-যাদের হৃদয় শক্ত না, প্লিজ শুনবেন না। পশ্চিম বঙ্গে এখন বছরে ৭০০-৯০০ এর মতন রাজনৈতিক খুন হচ্ছে-যার অধিকাংশই এত বিভৎস। বৃটিশ আমলে বাংলাতে এত রাজনৈতিক খুন হত বলে জানা নেই।নক্সাল আমলে এমন হয়েছে-এখন আবার নক্সলরা ফিরে আসায়- সমান তালে খুন চলছে।
আমরা এখন ভাল আছি-এটা মানতে আপত্তি নেই। কারন উন্নত চিকিৎসা-উন্নত বাসস্থান-যানবাহন। উন্নত খাদ্য উৎপাদন। এবং গণতন্ত্রের প্রসার।
উন্নত খাদ্য উৎপাদনের জন্যে হিংসা অনেক কমেছে-সেটাও ঠিক। কিন্ত যেসব জায়গায় যথেষ্ঠ খাদ্য এখনো নেই-আমি আমাদের দেশের কথাই বলবো-সেখানে হিংসা মোটেও আগের থেকে কমে নি। আমি ত বেশীই দেখছি।
অভিজিৎ দা,
লেখা টি খুব ভালো লাগল। সংগ্রহ করার মত ভালো কিছু তথ্য আর চিন্তার প্রচুর খোরাক পেলাম।
অভি, লেখাটার একটা সমালোচনা করবো 🙂 ?
আমার কাছে লেখায় টাইম স্কেল্টা কেমন যেন একটু মিলে ঝুলে গেছে মনে হচ্ছে। একদিকে তুমি শিকারী সংগ্রাহক সমাজের কথা বলেছ আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে খুব নিকট অতীতের কথাও নিয়ে এসেছ। এখানে কি এ দু’টো একটু আলাদা করা প্রয়োজন? আসলে যে আমরা গ্র্যাজুয়ালী এখানে এসে পৌঁছেছি, কয়েকশ’ বছর আগে এখনকার চেয়ে বেশী ভায়োলেন্স হত, আবার শিকারী সংগ্রাহক সমাজে তার চেয়েও বেশী হত, ব্যাপারটা কি সেরকম?
@বন্যা ,
শুরুটা শিকারী সংগ্রাহক ব্যবস্থা দিয়ে শুরু করলেও ব্যাপারটাকে আমি সেখানেই সীমাবদ্ধ রাখতে চাইনি। অনেকেই আসলে খুব নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ভাবেন দিন যত যাচ্ছে, পরিস্থিতি খুব খারাপ হচ্ছে, আগেকার দিনই ভাল ছিল ইত্যাদি। ব্যাপারটা যে আসলে সেরকমভাবে ঠিক নয় সেটা দেখানোও প্রবন্ধের একটা উদ্দেশ্য।
আমার কাছে তো তাই মনে হয়। আমার প্রথম মন্তব্যে অধ্যাপক রিচার্ড র্যাংহ্যাম এর একটা উক্তি দিয়েছি –
Human beings appear to be becoming, increasingly, a peaceful form of a more aggrasive ancestor
তার মতে ভবিষ্যতে ভায়োলেন্স আরো কমে আসবে। আমরা একটা মধ্যবর্তী স্তর অতিক্রম করছি।
পরের অধ্যায়গুলোতে আসবে কি করে আদিম কালের সহিংস আচরণ থেকেই আবার মানব সমাজে নৈতিকতা আর মূল্যবোধের জন্ম হয়েছিল।
লেখাটা বেশ ভাল লেগেছে। পুরাটাই হরর ছবির স্ক্রিপ্টের মত, মানুষ যে এত খুনোখুনি করে গেছে সেটা দেখে নিজের-ই লজ্জা হচ্ছে। এগিয়ে যাচ্ছিলাম ভালোই, কিন্তু মনে হল কেউ মেসির পায়ে ফাউল করে বলটা কেড়ে নিল! মানে হঠাৎ করে এমনভাবে শেষ করে দিলেন এখন বাকিটা পড়তে মন চাচ্ছে! তাড়াতাড়ি পোস্ট দিয়ে দেন প্লিজ!
আচ্ছা একটা প্রশ্ন আছে,
মানবজাতির সমরাস্ত্রের উন্নয়নের সাথে কি টোটাল ভায়োলেন্স হ্রাস যাওয়ার কোন সম্পর্ক আছে? মানে এখন মানুষের হাতে যেমন ম্যাস ডেস্ট্রাকশনের ক্ষমতা আছে তা স্বত্বেও ভালোয়েন্সের সূচক পড়তি বলে এটা মনে হল। ভবিষ্যতে যদি সাইবার ওয়ার ও রোবোটিক ওয়ার হয় তাহলে প্রাণহানির সংখ্যা আরো কমে যাবে। তারমানে কি এই অস্ত্র প্রতিযোগিতার কি একটা পজিটিভ সাইড ইফেক্ট দেখা যাচ্ছে? :-/
পিংকারের ভিডিওটা নামিয়ে দেখে আরো প্রশ্নমালা নিয়ে হাজির হচ্ছি! আর এখন বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান বন্যাপু অনুমোদিত কিনা সেটা একটু জানতে চাচ্ছি! 🙂
@পথিক, লেখার আগে অভি কেন এত বড় একটা ডিস্ক্লেইমার দিসে তা বুঝতে পারো নাই? যাতে আমি বেশী কিসু বলতে না পারি 🙂
আসলে আমার সমস্যা বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান নিয়ে নয়। আমার ভয় হচ্ছে সতর্ক না থাকলে খুব সহজেই তা ভুল ব্যাখ্যার দিকে নিয়ে যেতে পারে (বিশেষত যারা বিবর্তন তেমন বুঝেন না, যাদের সংখ্যাতো আবার খুব কম নয়)। এটা দিয়ে যে আসলে কোন কিছু জাষ্টিফাই করা হয় না, শুধুমাত্র অতীত ( বা বর্তমানের) কার্যকরণের বিবর্তনীয় ব্যাখ্যা হাজির করা হয় এবং বেসিক ট্রেন্ডটা বোঝানো হয় সেটা বোঝা এবং পাঠককে বোঝানো খুব জরুরী। অনেক সময়ই একটা দিক বললে আরেকটা দিক নিয়ে সংশয় দেখা দিতে পারে। যেমন ধর ডিস্ক্লেইমারটা না দিলে অনেকেই এই লেখাটা পড়ে ভাবতে পারে যে এখানে ভায়োলেন্সকে জাষ্টিফাই করা হচ্ছে। আমার কাছে অনেক সময়ই মনে হয় যে, মানুষের বিবর্তনে গত কয়েক হাজার বছরে বুদ্ধিমত্তার বিকাশ এবং সাংষ্কৃতিক বিবর্তন যে বিশাল ভূমিকা রেখেছে তাতে করে অনেক ক্ষেত্রেই হান্টার গ্যাদারার বা অপেক্ষাকৃত দূরের অতীতের বিবর্তনের প্রক্রিয়া দিয়ে অনেক কিছু ব্যাখ্যা করা নাও যেতে পারে। এরকম ক্ষেত্রগুলোতে আমাদের আরেকটু সতর্ক থাকতে হবে। এই আর কি……
@পথিক,
এটা কি আর জানো না? বন্যার অনুমোদন ছাড়া গাছের পাতাটাও নড়ে না, আর বিবর্তন মনোবিজ্ঞান তো তুচ্ছ। 🙂
রামগড়ুড়ের ছানা উপরে শ্বদন্ত ধার করতে চাইছিলো। আদিল মাহমুদের কাছে না গিয়ে এদিক থেকেও ধার নিতে পারে সে।
@অভিজিৎ,
আচ্ছা, মহিলাদের বিশেষ স্বদন্তের অধিকারী হবার ব্যাপারে বিবর্তনবাদের ব্যাখ্যা কি?
ব্যাপারটা এমন হতে পারে। আদিকাল থেকেই স্বামী-স্ত্রীতে খিটিমিটি লেগে থাকত, বলাই বাহুল্য তা রক্তারক্তি পর্যায়েও যেত। মনে হয় মিউটেশনের ফলে যেসব মহিলাদের স্বদন্ত ছিল তারাই কেবলমাত্র ন্যাচারাল সিলেকশন তত্ত্ব অনুযায়ী টিকে যায়। আর সেসব বেচারী যাদের স্বদন্ত ছিল না তারা এই অস্তিত্বের লড়াইয়ে স্বামী শ্রেনীর সাথে সুবিধে করতে পারেনি, তাই কালের আবর্তে লুপ্ত হয়ে যায়। টিকে থাকল কেবল স্বদন্ত ওয়ালা মহিলারাই। জিরাফের ঘাড় লম্বা হবার মতন আর কি।
আশা করি কেউ বক্রভাবে বা ব্যাক্তি আক্রমন হিসেবে নেবেন না। বিশুদ্ধ বিজ্ঞানের চোখে চিন্তা করার চেষ্টা করছি।
@আদিল মাহমুদ, হা হা হা হা ।। :laugh:
আপনি আর বিবর্তনীয় ব্যাখ্যা দিয়েন না প্লিজ, এবার ক্ষ্যামা দ্যান। জীববিজ্ঞানীরা আত্মহত্যা করতে পারে দলে দলে…… 🙂 ।
@বন্যা আহমেদ,
:brokenheart:
ভেবেছিলাম এতদিনে অন্তত একবার হলেও আমার অর্জিত জ্ঞানের প্রসংশা শোনার সৌভাগ্য হবে! কত মাথা খাটিয়ে একতি বিবর্তনীয় ব্যাখ্যা দাড়া করালাম!
@অভিজিৎ,
এক কথায় অসাধারণ। চারিদিকে এত যন্ত্রনা আর ভায়োলেন্স দেখে Old is Gold ধারণা নিয়েই ছিলাম । ভায়োলেন্স কমছে এটা খেয়ালই করিনি।
অভিজিৎ রায়ের এই নিবন্ধটি না পড়লে স্টিভেন পিঙ্কারের এত মূল্যবান একটি বক্তৃতাটিও মিস করতাম।
ধন্যবাদ, মুক্তমনা।
মানব জীবনের জটিল,হিংসাত্বক, মারামারি,হানাহানির ধারাবাহিক অগ্রগতির সাথে আস্তে আস্তে কিছুটা হলেও মানবিকতার দিকে ধাবিত হওয়া স্বমন্ধে জানার জন্য এক দারুন লেখা।
পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
লেখা ভালো লাগলো, পুরোটা হলে আরও ভালো লাগতো। এত বড় মনে হচ্ছে না। উপসংহারের জন্য অপেক্ষা করছি। আমাদের পূর্বপুরুষদের আমি মনে করি জ্ঞানে, পরপক্কতায়, মানবতায়, উন্নতিতে, সহানুভুতিতে আমাদের বর্তমান সময়ের মানুষদের চেয়ে কয়েক অর্ডার অফ ম্যাগনিচিউড নীচুস্তরের। অন্য সবকিছুভুলে যান- বস্তুত আজ থেকে ৫০০ বছর আগে বেঁচে থাকা একজন মানুষকে যদি এই ২০১০ সালের পৃথিবীতে বসবাস করতে দেয়া হয় তবে একটা জন্তুর মতোই সে গন্য হবে শুধুই তার হাইজিন সেন্স বর্তমান সময়ে জীবিত একজন মানুষের হাইজিন সেন্সের সাথে যেই বিশাল ব্যবধান ফেলে তার কারণে। হেয়ার রিমুভাল পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়নি বিধায় আজ থেকে এমনকি ২০০ বছর আগের রাজকন্যার হাত-মুখও হয়তো ভর্তি থাকবে বড় বড় লোমে আর গায়ের গন্ধে ভুত উদাস হয়ে যাবে পুরুষদের এক আলোকবর্ষ র্যাডিয়াসের ভিতর, এবং সেই সমসাময়ীক নারী পুরুষদের কাছে এটাই সম্ভবত হবে পরষ্পরের গরমতম সৌন্দর্য।
@আল্লাচালাইনা,
একটি সেরা মন্তব্য :yes:
তবে-
সময়টা বোধ হয় একটু কম হয়ে গেছে তাই ভয় হয়, কারণ ১৫০০ বছর আগে বেঁচে থাকা মুহাম্মদ ও তার সাহাবী সাহাবীনীদের (বাংলায় সাহাবীর স্ত্রী লিংগ কী হবে?) জন্তুর ক্যাটাগরিতে ফেলা ব্লাস্ফেমি আইনের আওতায় পড়ে যেতে পারে।
@আকাশ মালিক,
আমরা সাধারন মানুষেরা সবাই আমাদের সময়ে জগতে আবদ্ধ। দুই সময়ের দুই মানুষের লাইফ ষ্টাইলের তূলনা তাই হাইপোথিটিক্যাল। আরো হাজার বছর পরের মানুষ মনে হয় আমাদের জীবন যাত্রারও অনেক কিছুকে হাস্যকর, নোংরা, বর্বর, নিষ্ঠুর এসব বলবে।
মহাপুরুষ বলা যাবে তাদেরই যারা তাদের কালকে অতিক্রম করতে পারেন তাদেরই। নইলে আর সাধারন মানুষের সাথে তাদের রইল কোথায়?
সবাই মন্তব্য করা বন্ধ কইরা দেন তাইলেই অভিদা চামে পইরা পরের লেখাটা দিয়া দিব।হেহেহেহে 😀
@সাইফুল ইসলাম,
ভালই বুদ্ধি। কিন্তুক, এক লেখা প্রথম পেইজে থাকা অবস্থায় আরেক লেখা দিলে মডারেটর আমারে ধাতানি দিবো না? 🙂
@অভিজিৎ,
আইন সবার জন্য সমান 🙂 :rotfl:
@অভিজিৎ দা,
বড়োই দুঃখজনক। 😥
অভিজিৎ, দারুন লেখা। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
অভি, তোমার বউ বহুদিন ধরেই আমাকে বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান নিয়ে খোঁচায়। তোমার লেখাটা আরও একবার মন দিয়ে পড়ে দেখি, যুদ্ধে নামার কি এখনই সময় 🙂
@স্নিগ্ধা,
খাইসে। আমি আবার নারীযোদ্ধা ভীষণ ভয় পাই। 😀
লেখাটা ভাল লাগল!
নূতন অনেক কিছু জানলাম!
আমি নিজে ভয়াবহ নষ্টালজিয়ায় ভুগি। খালি মনে হয় আহা রে, আগেকার দিনগুলি কি মধুরই না ছিল। নিজের ছেলেবেলা খুব ভাল কেটেছিল বলেই মনে হয় এমন হয়। আমার স্ত্রীর মতে এই মানসিকতা হল বুড়োদের লক্ষন।
এটা ঠিক যে আমাদের এখনকার সময়ে মানবতার সংজ্ঞা হয়েছে অনেক বিস্তৃত, উন্নত। সামগ্রিকভাবে মানবাধিকার হয়েছে অনেক অনেক উন্নত। তবে সাথে সাথে যে কিছু অবনতিও হয়নি তাও বলা যায় না। তাই আগেকার দিন ভাল ছিল বলে দীর্ঘশ্বাস ফেললেও সুযোগ পেলে সেসব যুগে নিঃসন্দেহে ফিরে যেতাম না।
@আদিল মাহমুদ,
হাঃ হাঃ। এই সত্য কথনের জন্য আপনার স্ত্রীকে আমার পক্ষ থেকে একটা সেলাম জানিয়ে দিয়েন।
একবার আব্দুল্লাহ আবু সাইদের একটা বক্তৃতা শুনছিলাম। উনি শুরু করলেন এই বলে – প্রত্যেক যুগেই দেখা যায় তারুন্যের উদ্যম সহ্য করতে না পারা কিছু বুড়ো বুড়িরা চিপায় বসে গল্প করে, আর উচ্ছনে যাওয়া ছেলে মেয়েদের দেখিয়ে বলে – “দ্যাখ দ্যাখ, ওরা না ক্যামোন!”
– “আমাদের সময়ে কি আর ওরকম ছিল?”
অন্য বুড়ো বুড়িরা তখন সুর করে বলতে থাকে –
“না, না! আমাদের সময় কত্ত ভাল ছিল”।
কিন্তু মুশকিল হল, সেই বুড়ো বুড়িরাও যখন আবার তরুনী ছিল, তাদের দেখিয়েও একই কথা বলত তাদের বয়োজ্যোষ্ঠ বুড়ো-বুড়িরা।
সেই বয়োজ্যোষ্ঠ বুড়ো-বুড়িরা যখন তরুনী ছিলো তারাও হজম করেছে একই ধরণের তীর্যক কথা – তাদের সময় কত খারাপ, আর আগেরগুলা ভাল!
এখন এই বুড়ো বুড়ি করে করে যদি আমরা পেছাতে থাকি ক্রমশঃ, তখন প্রথম বুড়ির জেনেরেশনে আমরা নিশ্চয় এমন বুড়ি পাব যে কিনা এতই ভাল যে ভাজা মাছটিও উলটে খেতে পারতো না।
কিন্তু আদিমকালের সহিংসতার পরিসংখ্যান তো তার পক্ষে কথা বলে না । 😀
@অভিজিৎ,
সালাম যথাসময়ে পৌছে দেওয়া হবে, সাথে সাথে আপনাকে কড়া ধিক্কার! সত্য কথনের এই হল মুশকিল।
যার যেই আমল ভাল কাটে তার সেই আমলের প্রতিই আকর্ষন থাকে, সেটাই স্বাভাবিক। এর সাথে মনে হয় না বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের তেমন যোগ আছে। আমার ঊদয়নের এক বন্ধু তাপস, তার বাবা যুবলীগ করতেন। ফলে জিয়ার আমলে তার ছেলেবেলা কেটেছে ভয়াবহ কষ্টে, বাবা পলাতক (এখন উনি বার কাউন্সিলের সভাপতি) খালার বাড়িতে তারা সপরিবারে আশ্রিত। তার কাছে পুরনো দিন মানেই ভয়াবহ কষ্টের স্মৃতি।
ভাল লাগুক কি খারাপ লাগুক, তেমন কিছুই করার নেই। সময়কে পেছানো যায় না। সেটাই বড় কথা।
@আদিল মাহমুদ,
চাচা,চাচী কেমন আছে ?
@অভিদা: আমার একটা স্বদন্ত দরকার, কি করা যায়?
@রামগড়ুড়ের ছানা,
সে ভালই আছে। আমি ঢুলু ঢুলু চোখে বাল্য স্মৃতিচারনা শুরু করলে শুধু স্বদন্ত দেখায়।
তোমার দরকার হলে তার কাছ থেকে ধার করতে পারো।
অভিদা, আপনার ভয় পাবার কিছু নেই। আপনি সব কিছু পানির মত সহজ ভাবে বলার কায়দা ভাল ভাবেই রপ্ত করেছেন। লেখাটা আরো বড় হওয়া উচিৎ ছিল। মনে হল হঠাৎ করেই শেষ হয়ে গেল।
যাই হোক, আপনার মন্তব্যের ব্যাপারে আমার একটা প্রশ্ন আছে,
শ্বদন্তের আকার অনেক বড় হবার কারন- আগুনের ব্যাবহার জানার আগে তাদেরকে কাচা মাংস খেতে হত বলেই এরকমটি হত বলে জানতাম। নিজেদের মধ্যে লড়াইয়ে ব্যাস্ত থাকার জন্য শ্বদন্তের আকার বড় হবার পিছনে কি ধরনের অনুমান বা যুক্তি আছে ?
@আতিক রাঢ়ী,
আসলে শ্বদন্তকে কেবল কাঁচা মাংস ভক্ষনের নিয়ামক ভাবলে ভুল হবে – শ্বদন্ত আসলে আমাদের প্রজাতির মধ্যে বিদ্যমান মারামারি এবং থ্রেট পরিমাপেরও ভাল নিয়ামক বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন। এমনকি শ্বদন্তের আকার ছোট হয়ে যাওয়া অনেকের কাছে এটি বহুগামিতা থেকে মনোগামিতায় উত্তোরণের নিয়ামকও। আর্ডির ফসিল পাওয়ার পর এ নিয়ে খুব বড় ধরণের আলোচনা হয়েছে। শুধু শ্বদন্ত নয়, পুরুষদের দৈহিক আকার মেয়েদের চেয়ে বেশি হওয়া, শক্তিমত্তা এবং আপার বডি ম্যাস – সব কিছুই প্রমাণ করে বিবর্তনীয় পথ পরিক্রমমায় খুব ভায়োলেন্ট পুরুষ -পুরুষ প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে আমাদের যেতে হয়েছে। শুধু মাংস খাওয়ার ব্যাপারটাই যদি শ্বদন্তের একমাত্র কাজ হত, তাহলে পুরুষদের শ্বদন্ত মেয়েদের চেয়ে বড় হবার কোন কারণ ছিলো না। অনেক প্রজাতিতে স্ত্রীদের মধ্যে কোন সুদৃঢ স্বদন্তের উপস্থিতিত লক্ষ্য করা যায় না। এমনি ডারউইনও ব্যাপারটি লক্ষ্য করেছিলেন, তিনি তার Descent of Man বইয়ে সেজন্যই লিখেছিলেন –
Male animals which are provided with efficient cutting or tearing teeth for the ordinary purposes of life, such as the Carnivora, Insectivora, and rodents, are seldom furnished with weapons especially adapted for fighting with their rivals. The case is very different with the males of many other animals. We see this in the horns of stags and of certain kinds of antelopes in which the females are hornless. With many animals the canine teeth in the upper or lower jaw, or in both, are much larger in the males than in the females, or are absent in the latter, with the exception sometimes of a hidden rudiment.
বিবর্তনের পথপরিক্রমায় পুরুষেরা ছিলো শিকারী, টিকে থাকার স্বার্থেই তাদের ভায়োলেন্সের চর্চা করতে হয়েছিল একটা সময়। আর যারা এ ধরণের ভায়োলেন্সের মধ্য দিয়ে নিজেদের টিকিয়ে রাখতে পেরেছিল, তারা বহু নারীর দখল নিতে সমর্থ হয়েছিল। পুরুষের এই ব্যাপারটা আবার মেয়েদের সে সময়কার চাহিদা তথা সেক্সুয়াল সিলেকশনের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছিল, কারণ যাদের এ ধরনের হান্টিং স্কিল ছিল, তারা সাম্রাজ্য বাড়াতে পেরেছিল, শত্রুর হাত থেকে স্বীয় গোত্রকে রক্ষা করতে পেরেছিল। ফলে সে সমস্ত ‘ভায়োলেন্ট’ পুরুষেরা ছিল সে সময় মেয়েদের কাছে কাংক্ষিত, অন্ততঃ শিকারী সংগ্রাহক পরিস্থিতিতে তো বটেই।
@অভিজিৎ,
ধন্যবাদ অভিদা, সময় নিয়ে বিষয়টা পরিস্কার করার জন্য। আসলেই তাই, শুধু কাচা মাংস খাওয়ার ব্যাপার হলে পুরুষ আর নারীতে শ্বদন্তের আকারে খুব বেশি পার্থক্য থাকার কথা না।
পশুদের মধ্যেও দেখা যায় বাচ্চা পুরুষ গুলো মারামারি অনুশীলনে ব্যাস্ত থাকে।
@অভিদা,
বরাবরেই মতই সুন্দর লেখা। আমার কাছেও মনে হয়েছে হটাৎ করেই শেষ হয়ে গেছে।
ফুয়াদ সাহেবের মন্তব্যও ব্যপক হয়েছে। শুধুমাত্র ওনার পক্ষেই সম্ভব। আমার ধারনা উনি আদিম লোক বলতে কয়েক পুরুষ আগের লোক বুঝেছেন। এই ধরুণ আমার দাদার বাবা হয়তো আদিম লোক ছিলেন। :hahahee:
যাদের কসমিক স্কেলের সবচেয়ে বড় সময় ১৪০০ বছর তাদের কাছে আদিম মানুষের সংগা ভিন্ন বৈকি।
@নিদ্রালু,
হ। তার জ্ঞানের বহর (কোন জ্ঞান জানি না) দেইখা হাস্তেইআছি, হাস্তেইআছি। :hahahee: :hahahee: :hahahee:
লেখাটি তো হঠাৎ করেই শেষ হয়ে গেল মনে হল। হাতীর মত মনে হল না যে। যা হোক, একটি অনুরোধ করছি। যেহেতু বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান নিয়ে লিখছেন, তাই বিবর্তনীয় সমাজবিজ্ঞান নিয়েও যদি সম্ভব হয় তবে দু’একটি চ্যাপাটার রাখবেন। অন্তত এ নিয়ে কী কী গবেষনা এই পর্যন্ত হয়েছে তা যদি জানতে পারতাম ভাল লাগতো। আমি সম্প্রতি একটি বই পড়ছিলামঃ ডারুইনিয়ান কনফ্লিক্ট থিউরিঃ by Stephen Sanderson. পুরোটা বুঝে উঠতে পারিনি। আপনি কিছু লিখলে হয়তো বুঝতে সুবিধে হতো।
বিবর্তন জীববিজ্ঞানে যতটা প্রমানিত, সমাজ বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ততটা নয়। তারপরেও নৃ-তত্ত্ব, মনোবিজ্ঞান, ইতিহাস ইত্যাদির আলোকে চেষ্টা চলছে মানুষের একক বা গোত্রগত আচরণ, গতিপ্রকৃতিকে বুঝার। মনোবিজ্ঞানীরা বিবর্তনকে যেভাবে কাজে লাগাচ্ছে সমাজ কিংবা রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা সেভাবে কাজে লাগাচ্ছে না। আমার কাছে মনে হয়েছে মানুষের জন্য রাজনৈতিক কোন সমাধান পেতে হলে আমাদেরকে বিবর্তনের সাহায্য নিতেই হবে।
@স্বাধীন,
হেঃ হেঃ সবে তো হাতীর পা-এর দর্শন পেয়েছ। পুরো দেহ দর্শন এখনো বাকি।
তোমার বাকি পয়েন্টগুলো দেখলাম। দেখি ধীরে ধীরে সেগুলো লেখায় নিয়ে আসার চেষ্টা করবো।
@স্বাধীন,
মোটেও ঠিক বললে না। বিবর্তন সমাজ বিজ্ঞান বা ইভ্ল্যুশনারী সোশিওলজিতে প্রচুর গবেষনা হচ্ছে। বায়োলজিক্যাল রিডাকশনিজম ইন সোশিওলজি দিয়ে সার্চ দাও। সাবজেক্টটার নাম বায়োলজিক্যাল রিডাকশনিজম।
@বিপ্লব’দা
আমি যেটা লিখেছি সেটা Stephen Sanderson এর লেখা থেকেই লিখেছি। আমি যে বই থেকে উদ্ধৃতিটি দিলাম সেটি ২০০৬ এর একটি কনফারেন্স এর বই থেকে। ইভুল্যাশেন ইন স্যোসিয়লজি নিয়ে ২০০৬ তে একটি কনফারেন্স হয়েছিল। সুতরাং খুব বেশি আগের দিনের কথাও নয়।
কাজ যে হচ্ছে না তা নয়। কিন্তু মনোবিজ্ঞানীরা যেভাবে বিবর্তনকে কাজে লাগাচ্ছে সেভাবে মেইন স্ট্রীমের সমাজ বিজ্ঞানীরা নাকি এখনো বিবর্তনকে সেভাবে কাজে লাগাচ্ছে না। অন্তত লেখকের সেটাই মনে হয়েছে এবং তিনি অনুরোধও করেছেন মেইনস্ট্রিমের সমাজ বিজ্ঞানীদের বিবর্তন নিয়ে আরো বেশি করে কাজ করার জন্য। লেখকের ভয় সমাজ বিজ্ঞানীরা এগিয়ে না আসলে sociology পেছনে পরে রবে এবং মনোবিজ্ঞান এগিয়ে যাবে।
আপনার দেওয়া “কি ওয়ার্ড” দিয়ে খোঁজ লাগাবো।
আমার আগের একটি কমেন্টে ফরিদ ভাই, এবং মিঠুন ভাই দুইজন ব্যাপক প্রতিবাদ করেছিলেন। আপনার এই লেখা দেখে কমেন্ট করার ইচ্ছা হল, কারন প্রাসংগিক মনে হল। সময়ের বিভিন্ন ধারা উপধারায় বর্তমান সমাজ বেশ ভাল অবস্থানে এসেছে বলা যায়, তবুও কথা থেকে যায়, কারন আদিম কালে লেখা লেখির উতৃসের বেশ প্রাধান্য না-থাকায়, তাদের জ্ঞানের পরিব্যাপত্তি অনেক কম ছিল, হয়ত সে জন্য তারা অনেক ব্যাপার ই বুঝতে পারেনি, কিন্তু বর্তমান কালে জ্ঞানের এত সুযোগ থাকা সত্তেও মানুষের মধ্যে যুদ্ধ বিদ্রহ হবার ঘটনা দেখে এই মানুষে স্বদ ইচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তুলা যায়। কারন আমাদের মনে রাখতে হবে, আদিম মানুষের এই খারাপ আচরন গুলির পাশে এমন সব মহৎ আচরনের প্রমান পাওয়া যায়, যা বর্তমানে পাওয়া প্রায় ভাগ্যের ব্যাপার। যেমন মনেকরুন, আমাদের এলাকার রাজ পথে একটি পরিবার(পরিবারের চেয়ে বাড়ি বলা ভাল) সব সময় পানি এনে রাখত যাতে পথিক এই পানি পান করতে পারে। তারা বংশপরস্পর এই কাজ করে যেত। এ জন্য তারা কোন মূল্য চাইতো না। এরূপ বহু ত্যাগ আর তিথিক্ষার সাক্ষি আমাদের আদিম সমাজ। যা আপনাদের মত জ্ঞানী(কোন জ্ঞান জানি না) ব্যাক্তিরা উল্লেখ করতে চান না এই জন্য যে আমরা নিজেদের অদিম দের থেকে যেন অধিক সভ্য ভাবি। আর এতে করেই আমাদের মনে অহংকার যাতে জন্ম হয়। আর বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে এই কথা বলা যায়, যে অহংকারী হৃদয় সত্য বুঝে না। আসলে আদিম সমাজের সরলতার জন্য অনেক সময় রাজনিতিক দের খেলার স্বীকার খুব সহজেই হয়েছে। তাদের জ্ঞানের উতৃসের প্রাপ্যতা সহজ ছিল না, তাই খুব সহজেই খেলায় আক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু তাদের মধ্যে সদ-ইচ্ছার কোন কমতি ছিল তা জানা যায় না। ঐ সদ-ইচ্ছার দৃষ্টি কোন থেকে দেখলে অবশ্য-ই তাদের শ্রেষ্ঠত্ব আপনাদের মত বুদ্ধিমান জ্ঞানীদের(কোন জ্ঞান জানি না) মানতে হবে। দেখুন আদিম কালে যেমন মানুষ মানুষ যুদ্ধ হত, ঠিক তেমনি সেনা-পতি সেনা-পতিতেও যুদ্ধ হত, যেখানে সেনাপতি হারলেই পুরোদল হেরেগেছে,কোন খুনা খুনি নেই। এতেই তাদের সদ-ইচ্ছার প্রমান পাওয়া যায়। তাছাড়া, তাদের কঠোর জীবন আচরন আর সময়ের পরিস্থিতিতে যুদ্ধ করা এবং শিখা বাঞ্চনীয় ছিল। আর এ বিষয় তাদের অস্বীকার করার উপায় ও ছিল না। তাদের বেচে থাকতে হত, শুধু মানুষের সাথে যুদ্ধ করে নয়, পুরো পরিবেশ আর জীব জগতের সাথেই যুদ্ধ করে। তাই তাদের ঐ কর্মকান্ডের বাধ্যতা থাকা সত্তেও তাদের ভালবাসা আর ত্যাগ দেখলে শুধুই অবাক হয়ে যেতে হয়। বর্তমানে যেখানে মৃত্যু পথযাত্রী সহযোগী ব্যাক্তি বাস এক্সিডেন্টে মারা যাওয়ার মূহূর্তে, নিজের মোবাইল ফোন আর বাসার নাম্বার দিয়ে এই আবদার করে, ভাই আমার বাসায় একটি ফোন দিয়েন যে আমি আক্রান্ত। কিন্তু ঐ আধুনিক মানব, মাত্র মোবাইলের লোভে একটি ফোন দিয়েও বাসায় জানাইলো না। এই না হল, চরম শিক্ষিত, ব্যাপক ভাল মানুষে সুকাজ। আসলে একেক যুগ ছিল একেক ব্যাপারের। এক যুগ ছিল যুদ্ধ বিদ্রহের(এই সময় শুধুই, যুদ্ধ বিদ্রহ ই দেখা যায়), এক যুগ ছিল রিভুলোশনের(এই যুগে বিভিন্ন প্রকার রিভুলোশন দেখা যায়, এবং ওই যুগেই রিভুলোশন করা সহজ ছিল, বর্তমানে চাইলেও ঐরূপ রিভুলোশন আপনি করতে পারবেন না), এখন অধিকার আদায়ের যুগ কিংবা অন্য কিছুর। (আবার ভিন্ন ভিন্ন যুগের ট্রেন্ডেসির উপর ব্যাপক জ্ঞান প্রকাশ করতে আসিয়েন না, কারনে এখানে আমি জাস্ট বুঝার সুবিধার্থে সংক্ষেপে যুগের ট্রেন্ডিসির কথা বর্ননা করেছি মাত্র)
আমার আগের কমেন্টের ব্যাক্ষা সরূপ এখন যে কথা গুলি বলব তা, এগুলো বিষয় বিপ্লব দা, কিংবা ফরিদ ভাই, কিংবা মিঠুন ভাই অথবা আদিল মাহমুদ ভাইদের চোখে না পরলেও আমার চোখে ঠিক ই পরে। যেমনঃ ন্যাচারাল সিলেকশনে মিরমদন আর মহোন লাল নামক বিশ্বস্ত ব্যাক্তিরা হারিয়ে যাচ্ছে। মনেকরুন বিশ্বস্থ ব্যাক্তিরা দেশের প্রতিও বিশ্বস্থ, তাই দেশের জন্য বিশ্বস্থতার সাহিত তারা যুদ্ধে যায় এবং মারা পরে। আর টিকে যায় যারা সুযোগ সন্ধানী আর মিথ্যাচারী ব্যাক্তিরা। এভাবেই নুতুন সিলেকশন চলতেছে(আরো বিষয় আছে, আমি শুধু আমার কমেন্টের প্রয়োজনে একটি বিষয় ব্যাবহার করলাম) । মনেকরুন বাকি ভাল মানুষ গুলিও পরিবেশের চাপে, নিজেদের মধ্যে পরিবর্তন হয়ে এরাও খারাপ হয়েগেল। (ধরে নিলাম এই ঘটনাও ঘটবে না)
কিন্তু ধর্মের বেড়াজালে নিয়ন্ত্রীত কিছু মানুষ, যাদের অচিন্তিনীয় বেহেস্ত আর ভয়ঙ্কর দুজকের শাস্তির ভয় দেখিয়ে নিয়িন্ত্রনে রাখা হয়েছে তারা নাস্তিক হলে কি হবে বিবেচনা করুন। আসলে সমাজে ধর্মের প্রভাব এখনো অসাধারন। এজন্য-ই সমাজে কিছু ভাল কাজ টিকে আছে। মনেকরুন সমাজে ধর্ম নেই, সেইখানে প্রচন্ড লোভী আর আক্রমনাত্তক জীনটাইপ এর ব্যাক্তির আচরন কেমন হবে। সে বিজ্ঞানের তুরাই কেয়ার করবে। সে জ্ঞান আর ভাল কাজের তুরাই কেয়ার করবে। আর তার দ্বারাই রচিত হবে ভয়ঙ্কর সব কর্মকান্ড। কিন্তু সে সময় ভয়ংকর সব কর্মকান্ডকে আবার আপনারা ভাল কর্ম বলে সার্টিফিকেইট দিলেও দিতে পারেন। কারন আপনাদের ন্যায়ের কোন ভিত্তি নাই।
সে যাইহোক, তিলি তিলে ভাল মানুষ গুলির তাদের নিজেদের চোখের সামনে হারিয়ে যাবে, মারক পরবে আপনারদের মত ভয়ংকর নাস্তিকদের হাতে। টিপু সুলতানদের যেমন ইংরেজদের সাথে হেরে যাওয়া ছিল সময়ের বাস্তবতা, ঠিক তেমনি নাস্তিকতার সাথে ধর্মের হেরে যাওয়া হয়ত সময়ের বাস্তবতা{ভাবিয়েন না এখন-ই হেরে যাবে, পৃথিবীতে আরো অনেক কাহিনী ঘটে যাবে}(এ ও হয়ত আল্লাহ পাকের ইচ্ছা)। কিন্তু নাস্তিকতা যখন তার আসল রূপ প্রকাশ করবে তখন হয়ত কিছু বিবেক বান ব্যাক্তি বলবে, এ আমি কি করলাম।
যাইহোক, আমাদের একটি কথায় আপনাদের ব্যাপক এলার্জি আছে। কথাটি হল, সব বিষয় আল্লাহ পাক-ই ভাল জানেন। সব সময় এটি-ই আমাদের প্রথম এবং শেষ কথা। ধন্যবাদ।
@ফুয়াদ,
আপনি লিখেছেন ভালই ভাই, কিন্তু বানানে অনেক ভুল আছে।এই দিকে নজর দিলে আরো সুন্দর ফুটে উঠত আপনার বক্তব্য।
@ফুয়াদ,
এ ঘটনাটি আদিম কালের কোন পর্বে ঘটেছিল? :rotfl:
আধুনিক কালে কি এরকম উদাহরণ বিরল হয়ে গিয়াছে। আগে মানুষ শুধু নিজের বা গোত্রের বা নিজ দেশের মানুষের কল্যাণের কথা ভাবত। সারা বিশ্বের মানুষের কল্যাণের জন্য বাস্তব ভিত্তিক ভাবনা কিন্তু আধুনিক যুগেরই বৈশিষ্ট্য। রাজা-রাজড়াদের আমলে রাজায় রাজায় যুদ্ধ লেগেই ছিল, কারণে অকারণে যুদ্ধ। মুহাম্মদ জীবনের শেষ দিনগুলো পর্যন্ত যুদ্ধের আয়োজনে ছিলেন, যুদ্ধের পর যুদ্ধ লাগিয়েই থাকতেন। আর যুদ্ধ বন্দীদের তারা শিশু হলেও দাস-দাসী হিসাবে ব্যবহার করা হত।
আর আগেকার যুগে মানুষ বিপদে পড়লেই সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ত?? এখন কোনো লোক এক্সিডেন্ট করলে এম্বুলেন্স আসবে, বিপদে পড়লে পুলিশ আসবে যা আগের যুগে ভাবাও যেত না। এছাড়া হাসপাতাল ব্যবস্থা, আদালত ব্যবস্থা কোন কালের অবদান?
সকল মানুষ সমান অধিকার পাবে, সে নারী হোক বা পুরুষ হোক, কালো হোক বা সাদা হোক, দূর্বল হোক বা শক্তিশালী হোক -এই চিন্তার বাস্তবায়ন কিন্তু আধুনিক কালেই শুরু হয়েছে।
আর আপনি হয়ত মনে করেছেন মানুষ কোনো ভয়ংকর জীব, তাই তাদেরকে ধর্ম নামক খাঁচায় আবদ্ধ করে না রাখলে সব খেয়ে ফেলবে। এ ভাবনা বিপদজনক ও ভুল।
যখন অভিদার লেখাটি পড়ে মাথাটি খানিক ভারী হয়ে উঠেছে ঠিক তখনই ফুয়াদ সাহেবের অতুলনীয় মন্তব্য মাথাটাকে হালকা করে দিল। অভিদার সব লেখার শেষে ফুয়াদ সাহেবের এমন দুয়েকটি মন্তব্য কামনা করছি। :guli:
@ফুয়াদ,
ভাই, ভালো মন্দ দুই ধরনের মানুষই সব সময়ই থাকেন। আদিম যুগে আপনি ভালো কাউকে দেখাতে পারলে বর্তমান যুগে আমি মহাত্মা গান্ধী, মাদার তেরেসাকে দেখাতে পারব।
সবারই দোষত্রুটি থাকে। আদিম যুগ সম্পর্কে আমরা বর্তমান বা কাছাকাছি সময়ের তুলনায় অনেক কম জানি বলে আদিম যুগের মানুষের ভালো মন্দ গুলো আমাদের চোখে ধরা পরে কম। বর্তমান যুগের ভালো নেতার নাম বলতে গিয়ে আমি যদি কাস্ত্রো,মাহাথির,ইয়াসির, শেখ মুজিবের নাম বলি তাহলে তাদের পেছনে হয়ত আপনি বা অন্য কেউ এক গাদা দোষ দেখিয়ে দিতে পারবেন। যেকোন এক নেতার কোন একটা দোষ নিয়ে আপনি আমাকে ধুয়ে দিতে পারবেন। কিন্তু যত পুরোনো ইতিহাস আমরা ঘাটব তত ব্যপারগুলো ঝাপসা হতে থাকবে, কারন সেগুলো আমাদের প্রত্যক্ষ ঘটনা না। আর ইতিহাস রচনা করে সব সময় বিজয়ীরা এবং রাজার চাটুকার রা। তাই সূদুর অতীতের ইতিহাস থেকে ভালো খারাপ বিবেচনা করা সহজ কাজ না। সেদিক থেকে বিজ্ঞানের কথা বললে বলতে হয় যে বিজ্ঞান প্রমাণ ছাড়া কোন মতামত দেয় না। যথা যথ প্রত্নতাত্তিক প্রমাণ সাপেক্ষেই বিজ্ঞান এরকম সিদ্ধান্তে আসতে পারছে।
চরম ফাউল কথাবার্তা। যতবেশি ভাগাভাগি, তত বেশি মারামারি। জায়গা জমির ব্যপারেই দেখুন, ভাগাভাগির পর্ব যখন বেড়ে যায় তখন আপন ভাইয়ে ভাইয়েও মারা মারি লাগে। দেশে দেশে ভাগাভাগি হয়ে দেশে দেশে মারামারি হচ্ছে। তাই যদি সব মানুষ নিধার্মিক হয়ে যায়, তবে বাস্তবিক অর্থে অন্তত ধর্মের কারনে মারামারিটা বন্ধ হবে। আর বাকি যে সব কারনে মানুষ অন্যায় করে, সেগুলো নগদ নগদ জেল খানার ভয় দেখিয়েও বন্ধ রাখা যায় না!!! আর সেখানে আপনার “দুজক” তো যোজন যোজন দূরের ব্যপার!!!
বাস্তবে ভয় দেখিয়েই মানুষকে অপরাধ করা থেকে থামানো যাচ্ছেনা, আর সেখানে কল্পনার সাধ্য কতদূর সেটা আপনি নিজেই চিন্তা করে দেখুন গে।
@তানভী,
তানভী বলেছেনঃ
সুন্দর বলেছেন :rose2:
তানভী বলেছেনঃ
সময় জবাব দিবে।
মানুষ মানুষ দলাদলি আছেই। ন্যাশনালিজম এর নামে কি কম মারামারি হয়েছে। ধর্ম না থাকলে মানুষ আরেকটা কিছু বের করে নিজেরা নিজেরা মারা মারি করব। আর নাস্তিকবাদী সমাজ একে অন্যের সাথে প্রতিযোগিতা করে মারা মারি করবে। এখন কার মানুষের তো কিছুটা হলেও আল্লাহ পাকের ভয় আছে, এদের থাকবে না। এরা কি করে তখন থাকলেই বুঝতে পারবেন। চিন্তা করা লাগবে না।
@ফুয়াদ,
লিখেছিলেন ভালই 🙂 । বহুদিন পর আপনাকে পূর্ন রূপে পেয়ে ভাল লাগল। খালি মনে আশা ছিল আমার নাম হয়ত আপনার কমেন্টে দেখব না। আশাভংগ হল।
আবারো আপনার ধৈর্য্য অধ্যাবসায়ের প্রসংশা করতেই হয়। অভিজিত বা সব নাস্তিকদের প্রতি যে কি পরিমান ঘৃনা বিদ্বেষ মনে চেপে রেখে আপনি অনেক কষ্ট করে এসব লেখেন তা বুঝলে মনে শ্রদ্ধা না এসে পারে না।
@ফুয়াদ,
আচ্ছা ফুয়াদ ভাইয়া, “তুরাই” মানে কী?
@স্নুগ্ধা,
তুমার বুদ্ধি আর উলো না। তুরাই বুজু না? তুরাই উলো গ্যানিগুনি জুন- যারা তুরাগ নদীর তিরে বাছ কুরে আর সবসুমুয় মুরফতি গান গাই – আমি কি দুরাই কুভু বিকারি রাগুবে! 😛
@অভিজিৎ,
বাপ রে বাপ!!!! তোমার মন্তব্য পড়ে খ্যাক খ্যাক করে এত হাসছি যে নিশ্চয়ই পাড়া প্রতিবেশীর ঘুম ভাঙ্গাইসি 😀
@অভিজিৎ, :lotpot: :lotpot: :lotpot:
@স্নিগ্ধা,
“সামান্য”
@ফুয়াদ,
‘তুরাই’ মানে সামান্য? বাহ, নতুন একটা শব্দ শিখলাম আজকে! তবে, আপনাকে আরও একটু বিরক্ত করতে হচ্ছে – এটা কি কোন বাংলা শব্দ?
@স্নিগ্ধা,
জানি না, তবে আমি মানুষ কে এই শব্দ ব্যাবহার করতে দেখেছি। সম্ভবত আঞ্চলীক শব্দ কিংবা সঠিক শব্দের আঞ্চলীক রূপ।
@ফুয়াদ,
ওহহহহ, এবার বুঝলাম – শব্দটা আসলে ‘থোড়াই’!!!
আপনার লেখায় এতো ভয়ংকর বানান ভুল থাকে যে অনেক সময় কোন শব্দের বানানটা ভুল, নাকি শব্দটাই ভুল সেটা ঠিকমতো বুঝে উঠতে পারি না। আর তাছাড়া আপনি মনে হয় ফোনেটিক্যালি বাংলা টাইপ করার নিয়মের মতো ফোনেটিক্যালি বাংলা শব্দ পরিবর্তনও করেন। সব মিলিয়ে তাই ‘ধর্ম মহান’ শুধু এই জিস্টটুকু ছাড়া আপনার লেখার আর বেশি কিছু বুঝতে পারি না। আমারই সমস্যা 🙁
@ফুয়াদ,
মনে হয় কথাগুলো ঠিক না।পৃথিবীর অনেক দেশেই ধর্মের তেমন প্রভাব নেই।
কিন্তু সেখানে আইনের শাসন আছে,দূর্বলরাও ন্যায় বিচার পায়।মানুষ নির্লোভ,
অপেক্ষাকৃত গরীবের সম্পদ আত্মসাত করেনা,ধর্মের নামে বিধর্মীদের ওপর
অত্যাচার চালায় না।
যে গুলো আবার তথাকথিত ধর্ম মানা দেশ গুলোতে ঘটে থাকে!
আপনি মনে হয় ধর্ম আর মানবিকতাকে একসাথে গুলিয়ে ফেলেছেন।
ধন্যবাদ!
@ফুয়াদ,
ভাইছাব, আপ্নের মন্তব্যে ব্যাফক আমোদিত হৈসি। মন্তব্যখান তাঁরাইলাম। খিকজ। 😛
@বিপ্লব রহমান,
ভাল ত, আপনারা তো পারেন ই একটি কাজ হাসতে, হাসুন মন খুলে হাসুন, কিন্তু দেইখেন, হাসতে হাসতে পাশের লোকদের কোন সত্য কথা বলে দিন কিনা? ঐ সত্য কথা আপনার উপকারে না আসলেও আপনার পাশের লোকদের আসতে পারে। তাই, আপনাকে হাসিয়ে আমি কোন খারাপ কাজ করে নি। তাই ভাল করে হাসুন। ………………………………….. :rotfl: :rotfl: :rotfl: :rotfl: :rotfl: :rotfl: :rotfl: :rotfl: :rotfl: :rotfl: :rotfl: :rotfl: :rotfl: :rotfl: :rotfl: :rotfl: :rotfl: এই ভাবে হাসুন ।
@ অভিজিৎ দা,
পড়ে ফেললাম বিরতি ছাড়াই। আদিম যুদ্ধ আর আধুনিক যুদ্ধ ধরণ, প্রকৃতি কেমন ছিল তা জানলাম। ঐতিহাসিক অনেক নতুন তথ্য পেলাম। যেগুলো জানতাম না।
তার মধ্যে একটি হচ্ছে-
ফিজিতে ‘ভাকাতোকা’ নামে এক ধরনের বিভৎস রীতি প্রচলিত ছিল যেখানে একজনের হাত-পা কেটে ফেলে তাকে দেখিয়ে দেখিয়ে সেই কর্তিত অংগগুলো খাওয়া হত।
দু:খের বিষয় স্টিভেন পিঙ্কারের ভায়োলেন্স নিয়ে বক্তৃতাটি শোনা আর হলো না। আমার পিসিতে সাউন্ড আসে না বেশ কিছুদিন যাবত। তাছাড়া আমি ভিডিও ক্লিপ খুব কমই দেখি। এমনিতে পেজ ওপেন হতে সময় লাগে। তার উপর ভিডিও ক্লিপগুলো ওপেন হতে আরো প্রচুর সময় নেয়। আমাদের এখানে নেট স্পীড খুবই স্লো।
বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান বলতে মানব প্রকৃতির জৈববিজ্ঞানীয় ভাবনা’র কথা বলতে চাচ্ছেন তো, আগে একবার পড়েছি। আরেকবার পড়বো।
আসলে বিবর্তনের পথ পরিক্রমায় ‘ভায়োলেন্ট’ মানব প্রজাতিটি যে ধীরে ধীরে ক্রমশঃ ‘শান্তিকামী’ হয়ে উঠছে, তার প্রকাশ আমাদের বিভিন্ন শারীরিক বৈশিষ্ট্যেও রয়ে গিয়েছে। আমাদের পূর্বপুরুষদের ফসিল বিশ্লেষনে বেড়িয়ে এসেছে যে তাদের শ্বদন্তের আকার অনেক বড় ছিলো, এ থেকে বোঝা যায় তারা নিজেদের মধ্যে সঙ্ঘাত আর লড়াইয়ে ব্যস্ত থাকতো অধিকাংশ সময়েই। সে তুলনায় আমাদের শ্বদন্ত অনেক ছোট হয়ে এসেছে। চোয়ালের আকারও কমে এসেছে। আমাদের সমাজ এখন বহুগামী থেকে মনোগামীতে রূপ নিয়েছে, ফলে নারীর দখল নেয়ার জন্য পুরুষে পুরুষে রক্তাক্ত যুদ্ধ কমে এসেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে আমরা বিবর্তনীয় পথ পরিক্রমার সঙ্ঘাত থেকে শান্তির ভূবনে প্রবেশের এক মধ্যবর্তী সময় অতিক্রম করছি, এবং এই পরিবর্তনের সূচনা হয়েছিলো মূলতঃ বিশ – ত্রিশ হাজার বছর আগে যখন আমরা স্থায়ী ভাবে গ্রামে বসবাস শুরু করেছিলাম। হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বায়োলজিকাল এন্থ্রোপলজি’ বিভাগের অধ্যাপক রিচার্ড র্যাংহ্যাম বলেন –
Human beings appear to be becoming, increasingly, a peaceful form of a more aggrasive ancestor
আমার মনে হয় এটা অনেকাংশেই সত্যি।
@অভিজিৎ,
লেখাটা হয়তো স্বল্প পরিসরে দিয়েছেন কিন্তু অপূর্ব হয়েছে এককথায়। সমস্ত লেখায় তৎকালীন পটভূমিকার একটা ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছে। তখনকার এমন ভয়াবহ অবস্থার কিছু বই পড়া আছে। আজ আরো জানলাম। ভবিষ্যতে আরো লিখবেন আশা করি।
@আফরোজা আলম,
আপনাকেও ধন্যবাদ লেখাটি পড়বার জন্য এবং মন্তব্য করার জন্য।
@অভিজিৎ দা,
আপনার আরো একটি মাস্টার পিস এই লেখা। কৃতজ্ঞতা জানিয়ে গেলাম। :rose: