লেখা নিয়ে বকবকানী
-মোকছেদ আলী*
ধুত্তুরী, ঘুম চাপছে। লিখতে মন চাচ্ছে না। ভেঙ্গে ভেঙ্গে লিখতে গেলে লেখাও ভাল হয় না, ভাষাও শুদ্ধ বা প্রাঞ্জল হয় না। সকালে লিখতে বসলাম। বলপেনের কালি গেলো ফুরিয়ে। লেখার সময় একটা মুড বা ভাব আসে, লিখতে লিখতে যদি বাধা প্রাপ্ত হওয়া যায়, তাহলে সেই মুডও আর থাকে না। বলপেন কেনা খুব ঠকা। কেন ঠকা বলছি- ইকোনো বা ইকোল্যাক যে নামেরই হোক না কেন, সবই এক, কারণ একই মেসিনে একই কাঁচামাল দিয়ে তৈরী করে শুধু নাম আর প্রচারের জোরে কোনো কোনোটা ভাল মনে হয়। একটা বলপেন তা যে কোন প্রতিষ্ঠানের হউক না কেন খুচরা দাম তিন টাকা নেয়। ঐ পেন দ্বারা ২ তা কাগজের বেশি লেখা যায় না। তারপর গোটা কলমটাই ফেরত দিতে হয়, মানে ফেলে দিতে হয়। ফেলে দিতে হয় লিখতে গিয়ে ফ একারে ফে লিখেই ল একার দিব কিন্তু হঠাৎ মনটা চলে গেল এক দূর অতীতে, দ্রুত লিখতে গিয়ে ফেরত দিতে লিখলাম। যাহোক ফেরত আর ফেলে দেওয়া প্রায় একই সমান। ফেলে দিলে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। ফেরত দিলেও তাই। সুতরাং ফেরত আর ফেলে দেয়ার মধ্যে বানানের দিক দিয়ে যদিও তুচ্ছ মনে করে, কিন্তু অর্থের দিক থেকে সমার্থবোধক।
আমার লেখা নাকি ভালো লাগে পড়তে, বলল আমার নাতি উৎসব। যাহোক লিখতে যখন শুরু করেছি, লিখি। কেননা হাতের লেখাটাও ভালো করা চাই। ঘুমের আলিস ধরেছে, কি করি আটটায় আজান হবে। তারাবীর নামাজ পড়তে যেতে হবে, সেজন্য লেখা বন্ধ করে, হেরিকেনটা বাম হাতে নিয়ে মসজিদ অভিমুখে রওনা দিলাম। বাম হাতে হেরিকেন, ডাইনে ছায়া পড়েছে, আমি হাটছি, আমার পায়ের বিশাল ছায়া প্রেতবৎ নাচছে। আব্বাছদের মহিষের গোরার নিকট দিয়ে পথ। গোরার নিকট উপস্থিত হতেই, গোবর চোনা, পচা জাবের গন্ধ মিলে এক বিকট গন্ধ ছড়িয়েছে। নাক ডান হাতের আঙ্গুল দিয়ে চেপে ধরে সমুখ পানে হাটতে লাগলাম। কিছুদূর এসে নাক থেকে হাত সরিয়ে নিলাম।
ওয়াজেদের বাগানের হাসনাহেনা ফুলের সুবাসে মন প্রাণ মেতে উঠল। সেই জন্যই বলে দুঃখের পর সুখ। বিকট গন্ধে পেটের নাড়িভুড়ি বের হওয়ার জোগাড়। আর এখন কি অপূর্ব মন মাতানো সৌরভ।
আমার নিকট যত ফুলই থাকুক; হাসনা হেনা, মাধবী লতা ও কামিনী ফুলের সৌরভ খুব ভালো লাগে। হাসনা হেনা, কামিনী, মধু মালতী, রজনীগন্ধা, প্রভৃতি ফুল রাত্রে সুগন্ধ ছড়ায়। যেই সূর্য অস্ত গেলো অমনি ফুলের সুবাস ছড়িয়ে পড়লো। আবার যেই মাত্র সূয পূর্ব গগণে উদিত হয়ে আলো ছড়িয়ে দিল, আধার দূরে পালিয়ে গেলো, অমনি আধারের সাথেও এই সব ফুলের সুবাস অন্তরহিত, বানানটা কি ভুল হলো, অন্তর্হিত হবে, নাকি অন্তরহিত হবে, আমি সঠিক বুঝতে পারছি না। বুঝতে, মানে সঠিক কিনা বুঝতে হলে একজন বাংলা ভাষায় অভিজ্ঞ শিক্ষক নিকটে থাকা প্রয়োজন। কিন্তু সেটা সম্ভব নহে। মাষ্টার বা পণ্ডিত রাখতে গেলে, অনেক অসুবিধা আছে, যেমন মাষ্টারের বেতন, থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা, সর্বক্ষণ আমার নিকটে থাকা। যেমন ধরো- ভোর ৪ টার সময় সেহরী খেয়ে আবোল তাবোল লিখতে শুরু করলাম। আবোল তাবোল হাবি জাবি অশ্লিল, না না অশ্লীল, যাই লিখি না কেন সেই শব্দগুলিতো শুদ্ধ হতে হবে। অশুদ্ধ বা ভুল লিখলে সেটা থেকে তো কোনই জ্ঞান আহরণ করা যাবে না। তা হলে শুদ্ধ অশুদ্ধ বুঝিয়ে দিয়ে সংশোধন করবেন যিনি, তিনিই তো ভাষার ব্যাকরণবিদ বা নৈয়ায়িক। আগেই বলেছি এই নৈয়ায়িক সাহেবকে তো সর্বক্ষণ কাছে রাখা সহজও নয়, সম্ভবও নয়। তাহলে আমি শিখবো কেমন করে। শুদ্ধ অশুদ্ধ নির্ণয় করবো কিরূপে?
আছে, আছে, খুব সহজ পন্থা আছে। তোমরা হয়তো চেঁচামেচি করে জিজ্ঞেস করবে, কি, কি, কী, সেটা কি?
সেটা কি তা কি তোমরা এখনও বুঝতে পারছো না? আর পারবেই বা কি? বর্তমানে তোমাদের চিন্তাধারা তো সুষ্ঠু নয়। তোমাদের চিন্তাধারা শুধু মারিং কাটিং। কাকে ধরবো, কাকে মারবো, কার টাকা পয়সা জমি জমা কেড়ে নিয়ে নিজের সম্পদ বৃদ্ধি করবো। এই সব স্বার্থপর চিন্তাই তো তোমাদের ব্যস্ত করে রেখেছে। সুতরাং সদচিন্তা কোরতে তোমাদের মন মগজ ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। তাহলে আমি বলি, আর আমি না বলে তো পারছি না। কারণ জিজ্ঞেস করলে সহজ উত্তর, আমি না বললে তোমরা, মানে আমার নাতি নুতকার, ভাইস্তা, ভাজতি, ভাইগনা, ভাগনি, পাড়ার ছোট বাচ্চা কাচ্চারা শিখবে কোথা থেকে। আমার বয়স যে সাড়ে তিন কুড়ি। আমি এই বিপদ সংকুল দুনিয়ায় মোট মাট ৫ কুড়ি বছর বসবাস করতে চাই। কিন্তু বাওয়া, চাইলেই তো আর হবে না। সেটা তো আর আমার নিজের উপর নির্ভর করছে না। প্রকৃতির নিয়মে একদিন যেতেই হবে। তার চেয়ে এক সেকেন্ডও বেশি থাকা যাবে না। ঠিক কিনা বল?
তোমরা আজকাল টাইট প্যান্ট পরা ছেলে পেলে তো, মানে মিজান সাহেবের ভাষায়, খাড়া মুতুইন্যারা বলবে, আরে দীর্ঘ জীবন লাভের তো সহজ উপায় বৈজ্ঞানিকগণ বাতলে দিয়েছেন। ভিটামিনযুক্ত পুষ্টিকর খাদ্য খাও। প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য খাও। তাহলে ১০০ বছর দুনিয়ার উপর ঘোরাফেরা করতে পারবে।
তোমাদের সেই সহজ কথাটা বলে দেই। হায়াত মউতের কথাতো বলা যায় না। যদি সুযোগ সুবিধা না পাই তখন তোমরা আফসোস করতে করতে পেটের অসুখ করে ফেলবে। তার চেয়ে উত্তরটা দিয়েই দেই। ভালো দেখে একখানা বাংলা অভিধান কাছে রাখলে শিক্ষকের কাজ হবে। অভিধানে যা লেখা আছে প্রায় সব শুদ্ধ। ভুল থাকে না তেমন। যাহোক বর্তমানে একখানা বাংলা অভিধানের মূল্য ২০০ টাকা হবে। বাংলা টু ইংরেজী ও ইংরেজী টু বাংলা অভিধান রাখলেও চলবে। তবে বাংলা টু বাংলা, ইংরেজী টু ইংরেজী, ইংরেজী টু বাংলা মোট ৫ খানা, নাকি ছয় খানা; আচ্ছা হিসাব করে দেখা যাক- বাংলা টু বাংলা ১ টা, ইংরেজী টু ইংরেজী ১ টা, মোট হলো ২ খানা। আর বাংলা টু ইংরেজী ১ খানা, হলো ৩ খানা। আর ইংরেজী টু বাংলা ১ খানা, মোট ৪ খানা। এই ৪ খানা অভিধানের দাম গড়ে সরে হাজার টাকা। যদি বাড়িতে এই কয়খানা কেতাব থাকে তাহলে পড়াশোনায়, লেখার সময় ভুল ত্র“টি হলে কিম্বা সন্দেহ হলে; বাস্, কেতাব খুলে দেখো। মাষ্টার সাহেব কাছে না থাকলেও আসল মাষ্টার তো তোমার হাতেই রয়েছে। অসুবিধা সহজেই দূরীভূত করে দেয়া সহজ হবে।
আমার এক চাচা, তার একখানা বাংলা টু বাংলা অভিধান ছিল। আশুতোষ দেবের সংকলিত। সেই অভিধান আমার কাছে ছিলো। আমি সময়ে অসময়ে ঐ অভিধান দেখে ভুল শুধরে নিতাম। কি বলব, বাংলাদেশের অভ্যূদয়ের দিন, কোথা থেকে কারা এসে দিল আমার ব্যক্তিগত পাঠাগারে আগুন। হা হা করে সব গ্রাস করে খেয়ে নিল। খালি কি ঐ অভিধান গেছে? আমার সখের কত সংগ্রহ ছিলো তার তো কোনো হিসাব নেই। সব শেষ।
আগে আমার একটা নেশা বা হবি ছিলো। সেটা get to word বা শব্দ পুরণ প্রতিযোগীতা খেলা। এই খেলায় লোকসানের চেয়ে লাভ বেশি। লেখাপড়ার দিকে আগ্রহ বাড়ে। যেমন- ইতিহাস, ভুগোল, স্বাস্থ্য, বিজ্ঞান, কবিতা, সাহিত্য প্রভৃতি বিভিন্ন সাবজেক্ট থেকে সূত্র নির্বাচন করে দেয়। সঠিক উত্তর লেখার জন্য ঐ বিষয়গুলি পড়াশোনা করে আলোচনা করা দরকার। তাহলে পুরস্কার পাওয়া যেতে পারে। আর পুরস্কার যদি নাও পাওয়া যায় তাতে কোনো দুঃখ নাই। জ্ঞান তো আহরণ হোল। একটা উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দেই। একটা clue ছিলো এরূপ। the pilot should know of his plane . হাইট – ওয়েট।
হাইট মানে উচ্চতা। আর ওয়েট মানে ওজন। সাধারণভাবে উত্তরটা ওজন বলেই মনে হয়। কারণ একটা প্লেন কতখানি ওজন নিয়ে আকাশে উড়লো এটা তার অবশ্যই জানা দরকার। তাই খেলায় ওয়েট লিখে দিলাম। রেজাল্ট বের হলো। উত্তর হাইট দিয়েছে। আমার রাগ হলো- এরা সঠিক উত্তর দেয় নাই। নিজেদের মনগড়া উত্তর দিয়েছে। তখন চিন্তা করতে লাগলাম। হাইট হয় ক্যামনে? বিমান বিষয়ে নানা প্রবন্ধ পড়তে লাগলাম। অবশেষে এক পাইলটের লিখিত চমৎকার একটা আকাশ ভ্রমণ কাহিনী পড়লাম। পাইলট লিখেছেন- আমার প্লেন ৮ হাজার ফিট উপর দিয়ে চলছিল। রাডারে আবহাওয়ার তথ্য পেয়ে প্লেনকে ১২ হাজার ফুট উচ্চে নিয়ে এলাম। তারপর গভীর মনোযোগ দিয়ে মিটার লক্ষ্য করলাম আর কত উচুতে উঠলে আমার প্লেন ঝড়ের কবল থেকে রক্ষা পাবে, আরো দ্রুত ১ হাজার ফিট উচুতে উঠে গেলাম। একজন বিমান চালককে তার বিমানের মাটি থেকে কত উঁচুতে অবস্থান করছে সে সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞান রাখা একান্ত প্রয়োজন। এই প্রবন্ধ বা ভ্রমণ কাহিনী পড়ে জানতে পারলাম- ওয়েট নয়, হাইট-ই ঠিক উত্তর।
কাজেই দেখ, গেট এ ওয়ার্ড খেললে বই পুস্তক পড়ার আগ্রহ সৃষ্টি হয়। আর শব্দের অর্থ না জানলে তো সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব হবে না। সুতরাং আমেরিকার বিশ্ববিখ্যাত লেক্সিকোগ্রাফার, জন ওয়েবস্টার সম্পাদিত বৃহৎ ডিকশনারী তৎকালীন সময়ে ১৫৫ টাকা দিয়ে কিনলাম পাবনার বিপিন বিহারী লাইব্রেরী থেকে। আমার সেই শখের কেতাব ওয়েবষ্টার ডিকশনারী খানাও পুড়ে ছাই ভষ্ম হয়ে গেছে।
যাহোক মোদ্দা কথা, হাতের কাছে যদি একখানা অভিধান থাকে তবে জ্ঞান আহরণের সুবিধা হয়। যারা এই অভিধান তৈরী করে বাজারে বিক্রয় করে, আসলে তারা ব্যবসা করে না। যা করে তা হলো মানুষের কল্যাণ বা মঙ্গল। দুনিয়ার সমস্ত প্রধান প্রধান ভাষার অভিধান আছে। বাংলায় আশুতোষ দেব সম্পাদিত দেব সাহিত্য কুটির হতে প্রকাশিত অভিধানই বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ অভিধান। অনেকেই অভিধান সংকলন করে বাজারজাত করে কিন্তু দেব সাহিত্য কুটিরের অভিধানের মত এত বেশি শব্দ, নিখুঁত ছাপা, মনোরম বাঁধাই সুলভ মূল্য অন্য কোন অভিধানে পাওয়া যাবে না। তবে সুবলচন্দ্র মিত্র রচিত অভিধান মোটামুটি ভালো। মোটামুটি ভালো বললাম এ কারণে যে আমি সুবলচন্দ্র রচিত বাংলা অভিধানে আমার প্রয়োজনীয় বা কাঙ্খিত কয়েকটি শব্দ পাই নাই। যাহোক তবুও সুবলচন্দ্রের অভিধান দ্বারা শতকরা ৯৭ ভাগ কার্য উদ্ধার হয়।
ইংরেজী বাংলা অভিধান বা ইংলিশ টু ব্যাঙ্গলী ডিকশনারীতে যে সমস্ত শব্দ আছে তাতে মনে হয়, আচ্ছা হিসাব করলেই পাওয়া যাবে- একটি পাতায় মোটামুটি ১০০ টা শব্দের অর্থ দেয়া আছে। তাহলে ৩০০০ পাতায় কতগুলি শব্দ থাকতে পারে। আচ্ছা হিসাব করেই দেখা যাক, ৩০০০ গুণন ১০০, তিন লক্ষ শব্দ আছে। এই তিন লক্ষ শব্দ চয়ন করতে, এ্যালফাবেটিক্যালি শব্দ বাছাই করতে তাদের কিরূপ পরিশ্রম করতে হয়েছে, ভেবে দেখো। বুঝা গেছে তো আমার কথা। আর আমার মতো পাগলের বকবকানী বুঝার কি-ই বা দরকার আছে তাই না?
——-
*মোকছেদ আলী (১৯২২-২০০৯)। স্বশিক্ষিত। সিরাজগঞ্জ জেলার বেলতা গ্রামে জন্ম। গ্রামটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
অনুলেখক: মাহফুজ।
মুক্তমনার সব সদস্যরা মনে হয় এই খাড়া মুতুইন্যা। চখাহার মত চ্যালেঞ্জ ছুড়ে মারলাম…।
@ আফরোজা আলম,
আফরোজা আলমের উদ্দেশ্যে নিবেদিত-
আমার দুর্নাম, আমার লজ্জা,
আমার অপমান জান।
তিরস্কারে আমার মনোভঙ্গ,
আমি অবসন্ন হলাম।
সহানুভূতির অপেক্ষায়-
দেখি পাশে কেউ নেই।
সান্ত্বনাকারীর খোঁজ করি-
সেখানেও কেউ নেই।
@মাহফুজ,
আপনাদের আমি ভুলে যাবোনা। আমি যতোদিন বেঁচে থাকি মনে রাখব। কেবল বলবো দোয়া করবেন, যেনো সুস্থ্য থাকি।
@আফরোজা আলম,
ভাইরে ভুলে যাওয়ায় সহজ, মনে রাখাটাই কঠিন। – আবেগ অনুভূতি, বড়ই ক্ষণস্থায়ী।
দোয়ায় কি কোন কাজ হবে? এব্যাপারে ফরিদ ভাইয়ের এক লেখা আছে। লেখাটার নাম- প্রার্থনা কি কোন কাজে আসে? পড়ে দেখবেন। তবুও সেখান থেকে একটি লাইন তুলে দিচ্ছি-
ভক্তদের হৃদয় উজাড় করা প্রার্থনা আর আকুল হয়ে কান্নাকাটি সত্বেও দেখা যায় যে ঈশ্বর সব প্রাথর্নার সাড়া দেন না।
ড. হুমায়ুন আজাদ তার অবিশ্বাস বইতে বলেন-
নিরর্থক সব পুণ্যশ্লোক, তাৎপর্যহীন প্রার্থনা,
@ নৃপেন্দ সরকার,
এখন বুঝতে পারছি আমার দ্বারা কিচ্ছু হবে না। সাধারণ প্রাইমারীর যোগ বিয়োগ পারলাম না। ভীষণ লজ্জার ব্যাপার।
বেখেয়ালে শব্দটা বলে আমাকে রক্ষা করলেন, এজন্য ধন্যবাদ।
@মাহফুজ,
রাত বেশী হয়েছে, তোমার এখন ঘুমোতে যাওয়া দরকার। অথবা ধুতুরা ফুলের আছর হয়েছে।
@নৃপেন্দ্র দাদা,
তাই তো দেখছি। প্রথম কারণটাই ঠিক। দ্বিতীয় কারণ যদি হয়, তাহলে জলদি জলদি ঔষধের ব্যবস্থাপত্র দেন। মানে একটু ঝাড় ফুক কিম্বা পানি পড়া। নিশ্চিত ঠিক হয়ে যাবো।
তারপরও—-
আপনার হুকুম অমান্য করি ক্যামনে? শুভ রাত্রি বলার আগে তারামন বিবি সম্বন্ধে শর্তহীন পরী মানব মানে কুলদা রায়ের লেখাটি পড়ার অনুমতি প্রার্থনা করছি।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
আজকের দিনে মনে হচ্ছে দ্বিতীয় কারণটি ঠিক, আমাকে ধুতুরায় ধরেছিল। কারণ বেশ কয়েকবার লিংক ক্লিক করে চখাহার ধুতুরায় ঢুকতে হয়েছিল। সেই আছর কাটেনি এখনও।
@ফরিদ আহমেদ,
অনুলিখনের সঠিক সংজ্ঞা বা ব্যাখ্যা কি হবে? বিষয়টা বুঝা আমার জন্য জরুরী। আমি তো মুক্তমনায় লক্ষ্য করেছি বেশ কয়েকজন অন্যদের লেখা সংগ্রহ করে এনে মূল লেখকের নামেই পোষ্ট করেছেন এবং নিচে অনুলিখন লিখে নিজের নাম দিয়েছেন। যেমন- সুমিত্রা পদ্মনাভনের ’মানুষের ধর্ম-মানবতা’ টিতে অনুলেখনে: অনন্ত উল্লেখ আছে।
তারপরও বলছি-
এভাবে আমার ক্ষেত্রে অনুলিখন লেখা যদি ভুল হয়, তাহলে টাইপে কিম্বা কম্পোজে মাহফুজ দিতে পারি। এর চেয়ে ভালো পরামর্শ যদি থাকে, তাহলে জানাবেন।
আমি তো প্রায় অবিকৃতভাবেই পাঠকের কাছে তুলে দিচ্ছি। তবে লেখার মধ্যে বানানগুলো শুদ্ধ করি। আর দু একটি লেখা সাধু থেকে চলিত-এ রূপান্তর ঘটিয়েছি।
মুক্তমনার নীতিমালাতে আছে- ভাষারীতি লেখ্যভাষা হিসেবে প্রচলিত প্রমিত বাংলা হওয়াই শ্রেয়। আশা করি এই পরিবর্তন খুব একটা দোষনীয় নয়।
@মাহফুজ,
কাজেই সম্পাদনায় মাহফুজ বলা যায় কি?
@গীতা দাস,
হয়তো বলা যায়, কিন্তু সম্পাদনা যিনি করেন তাকেই তো সম্পাদক বলে। সম্পাদক নামে আখ্যায়িত হতে চাই না। তার চেয়ে ‘সংগ্রহে- মাহফুজ’ লিখলেই মনে হয় ভালো হবে।
ঐসব পদ টদ নিয়ে ঝামেলা বাড়াতে চাই না।
সম্পাদকের পদটি অন্য কারো উপর বর্তালেই ভালো।
@মাহফুজ,
আপনি সংগ্রহের চেয়েও বেশি কিছু করছেন। কাজেই সম্পাদকের পদটি অন্য কারো জন্যে রাখা দরকার নেই।
@গীতা দাস,
পদ টদ বড় কথা নয়, কাজ করাটাই আসল।
নিদ্রালু এর মত আমারও একই অবস্থা ছিল। এখন সংশয় দূর হল।
মাহফুজ তো ধাঁ ধাঁয় ফেলছে আমাদের। তার নিজের বাড়ি কোথায় ? সে থাকে কোথায় আর মোকছেদ আলী সাহেবকে পেল কোথায়?
রহস্যময় নয় কি?
মোকছেদ আলী সম্পর্কে আরও একটু বিস্তারিত জানতে পারি কি? তাঁর লেখার বিষয় বৈচিত্র্য ও ধরণ
খুব ভাল লাগে। তাঁর লেখা পড়ার সময় কোন কার্যকারণ সম্পর্ক ছাড়াই আমার আরজ আলীর চেহারা চোখে ভাসে। উদ্ভট হলেও আমি আমার মনের কথাটাই বললাম।
@গীতা দাস,
মাহফুজ নিজেই রহস্যমানব ধরা দিয়েও ধরা দিতে চায় না।
হ্যা, মোকছেদ আলীর লেখায় তাঁর নিজস্ব একটি Style বা ঢং আছে যেটা আমার প্রথম দিন থেকেই ভাল লেগেছে। মনে আছে আমি মাহফুজকে লিখছিলাম – আপনি তো বরাবরই ছক্কা মারছেন। সবিনয়ে উত্তর ছিল – ছক্কা আমার নয়, মোকছেদ আলীর। ছক্কা মারায় মাহফুজও কম নন দিনদিনই বুঝা যাচ্ছে।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
গর্বে বুক ভরে যাচ্ছে। :coffee: :cake: :rose: :heart: সবকিছু উজাড় করে দিলাম।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
চ র ম স হ ম ত। :rose:
কিন্তু মোকছেদ আলী যখন থেকে চলিত ভাষায় লিখছেন, তখন পাঠ-গতিতে জড়তা এসে যাচ্ছে। অবশ্য এটি পাঠাভ্যাসের কারণেও হতে পারে কিনা জানি না। :deadrose:
@বিপ্লব রহমান,
আমি আগেও একবার বলেছি যে, মোকছেদ আলীর কিছু কিছু লেখা আমি সাধুরীতি থেকে চলিতরীতিতে রূপান্তর ঘটিয়েছি। এ ব্যাপারে আমি মতামতও চেয়েছিলাম, কিন্তু সে সময় কেউ কিছু বলেনি। এখন অনেকের কাছ থেকে গঠনমূলক পরামর্শ পাচ্ছি। তাই সকলের পরামর্শ মেনে চলেই লেখা পোষ্ট দেবো ভাবিছি।
@গীতা দাস,
আমার আবার উলটো। কোন কারণ ছাড়াই তাঁর লেখা পড়লে ফুটফুটে এক বালকের ছবি ভেসে উঠে মনের মাঝারে। 😛
@ফরিদ আহমেদ,
ভাবছি- প্রোফাইল থেকে ঐ ছবিটা সরাতে হবে। আর এই ছবিটা যে বালকের তা ভাবছেন কেন, বালিকারও তো হতে পারে।
আর আমি মাহফুজ না হয়ে মাহফুজাও তো হতে পারি। কারণ আপনি যেভাবে আজকাল পুরুষদেরও পোয়াতী বানিয়ে দিচ্ছেন!!! (বাক্যটা নিয়ে সন্দেহে আছি)
নাস্তিকের ধর্মকথা যেভাবে প্রোফাইলে আরজ আলী মাতব্বরের ছবি দিয়েছেন, আমিও মোকছেদ আলীর ছবি দেব। দুজনের চেহারা কিন্তু প্রায় একই রকম। অনন্ত বিজয় দাস এর কাছ থেকে বিষয়টা জেনে নিতে পারেন।
@মাহফুজ,
আমি কি আপনার প্রোফাইল পিকচার নিয়ে কিছু কইছি? :-/
@ফরিদ আহমেদ,
অযথা সন্দেহ করছি, হতভাগা এই বাচালটারে মাফ কইরা দিয়েন। :guru:
@গীতা দাস,
ছোটবেলায় খুব ধাধা খেলা খেলতাম। যে ধাধা ধরতো, সে উত্তর দিত না। যাদের কাছে বলা হতো তারা চিন্তা করে জবাব বের করতে চেষ্টা করতো। আশা করি আপনিও পারবেন।
তার সম্পর্কে লেখার সর্বনিম্নে দেয়া আছে। আর বিস্তারিত বলতে গেলে এতটুকুই বলি যে, তার আত্মজীবনী নিয়ে কাজ করছি। আপনার ‘তখন ও এখন’ এর মত করে কিস্তিতে কিস্তিতে পোষ্ট করবো।
আরজ আলী মাতব্বর একটি নির্দিষ্ট দর্শনকে সামনে নিয়ে লিখেছেন। মোকছেদ আলীর মধ্যে ঐরকম দর্শন হয়তো পাও যাবে না। তবে একটা দিকে মিল পাই তা হচ্ছে দুজনেই স্বশিক্ষিত। মোকছেদ আলী কখনো সন্দেহবাদী, কখনও বিশ্বাসী, আবার কখনও নাস্তিক্যবাদী। অবশ্য এটা আমার ব্যক্তিগত অবজারভেশন।
লেখাটা কী আগে একবার দিয়েছিলেন?
@নিদ্রালু,
জ্বী। কিন্তু সেটা পোষ্ট করার পরই পরই (ঠিক মনে নেই কতটুকু সময় পর) মুছে ফেলেছি। আগে যখন দেয়া হয়েছিল তখন কি পুরোটা পড়তে পেরেছিলেন? এখন প্রশ্ন করতে পারেন, কেন পোষ্ট করে মুছে দিলাম। তিনটি কারণ ছিল:
১) প্রথম পাতায়, আমার পোষ্ট করা আরেকটি লেখা ছিল।
২) একজনের প্রতি সম্মান দেখানোর জন্য।
৩) ফরিদ ভাইয়ের লেখা ‘বানান নিয়ে আরো বকরবকর’ টি এই হালকা চালের লেখার তুলনায় বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
আপনার সতর্ক দৃষ্টির জন্য ধন্যবাদ। চোখের জ্যোতি আরও বৃদ্ধি পাক, এই কামনা করি।
@মাহফুজ,
না। আসলে আমি তখন পুরোটা পড়িনি তবে শুরুটা পড়েছিলাম। এবার পুরোটা পড়লাম।যথারীতি ভাল লেগেছে। মোটা দাগে লেখাটাকে কী তৎকালীন আভিধানের রিভিউ বলে চালানো যায়?
@নিদ্রালু,
লেখাটি পড়ে আপনি তৎকালীন অভিধানের রিভিউ (মোটা দাগের) ধারণা পেলেন, এমন বিশ্লেষনী ভাবনা তো আমার মাথায় আসেনি।
ধন্যবাদ আপনার ভাবনা শেয়ার করার জন্য।
@মাহফুজ,
মোকছেদ আলী সাহেবের লেখাগুলোর সাথে লেখার সময় কাল (যদি লেখার দিন তারিখ থেকে থাকে(available)) জুড়ে দিলে কেমন হয়?
@নৃপেন্দ্র সরকার,
দাদা, আপনি একটা ভালো পরামর্শ দিয়েছেন। হ্যাঁ, তার কিছু কিছু পাণ্ডুলিপিতে তারিখ দেয়া আছে। পরবর্তীতে দিয়ে দেব। তবে এই লেখাটি কোন্ সময় লিখেছিলেন, তার এক হিসাব আমি বের করতে পেরেছি। লেখক বলছেন- বর্তমানে আমার বয়স সাড়ে তিন কুড়ি। তিনি প্রয়াত হয়েছেন ২০০৯ সালে। জন্মকাল ছিল ১৯২২। জন্মকালের সাথে সাড়ে তিন কুড়ি অর্থাৎ ৬৫ যোগ করতে হবে। তাহলে হলো (১৯২২+৬৫)= ১৯৮৭। তাহলে বোঝা যাচ্ছে মৃত্যুর ২২ বৎসর আগে তিনি লিখেছিলেন।
ধন্যবাদ পরামর্শের জন্য।
@মাহফুজ,
লেখার শিরোনাম কি তাঁর দেওয়া, নাকি আপনার?
@ফরিদ আহমেদ,
আবোল তাবোল লেখা নামে তার একটি পাণ্ডুলিপি আছে। সেখানে নানা বিষয়ে লেখা। আমি শুধু এই অংশটুকু তুলে এনেছি। লেখক লেখার শেষে বলছেন- আর আমার মতো পাগলের বকবকানী বুঝার কি-ই বা দরকার আছে তাই না? এখান থেকেই নামটির আমি শিরোনাম দিয়েছি, লেখা নিয়ে বকবকানী। যেদিন আমি আপনার ’বানান নিয়ে বকবকানী’ পড়ি সেদিনই মোকছেদ আলীর এই লেখাটির কথা মনে পড়ে। এবার যখন আপনি বানানা নিয়ে বকরবকর করছেন, তখনই চিন্তা করেছি- লেখাটি পোষ্ট করবো। আমি পোষ্টও করেছিলাম। পরে তা মুছে দিয়েছি। কেন মুছে দিয়েছি তার তিনটি কারণও সেচ্ছায় নিদ্রালুর মন্তব্যের প্রতিত্তরে বলেছি।
ধন্যবাদ প্রশ্ন করার জন্য।
@মাহফুজ,
তাঁর যদি পাণ্ডুলিপি থেকেই থাকে, তবে আবার অনুলিখন করেন কেন? মোকছেদ আলীর লেখা অবিকৃতভাবে পাঠকের কাছে তুলে দেওয়াটাই কি সঠিক কাজ হতো না?
@ফরিদ আহমেদ,
আমারও তাই মনে হয়েছিল।
@মাহফুজ,
বেখেয়ালে অংক করেছ – সাড়ে তিন কুড়ি = ৭০ হবে।
সময় কালটা থাকলে আমরা জানতে পারব – কখন তিনি টাকায় একটা বল পেন পাওয়া যেত। কোন বয়সে তিনি কী কী ধরণের লেখা লিখতেন, ইত্যাদি। ফলে নিবন্ধের ঐতিহাসিক মান অনেক বেড়ে যায়।
@মাহফুজ,
আপনার সব লেখা আমি মনোযোগ দিয়ে পড়ি। আর খুব অনূভব করি। তবে গবেষনা করে উঠতে পারিনি। ভালো লাগাটাই থাকুক। আরো চাই। তবে ধীরে– ।
@আফরোজা আলম,
আমি মুক্তমনার নীতি লঙ্ঘন করে পোষ্ট দিচ্ছি না। আপনি আমাকে বলছেন ‘ধীরে’। এই কথাটি আপনার নিজেকেই বলা উচিত।
আসুন আপনার এবং আমার পোষ্ট নিয়ে পরিসংখ্যানটি দেখি-
মাস ——– আপনি ——— আমি
মার্চ ২ ৩
এপ্রিল ৭ ১০
মে ৪ ২
জুন ৫ ৪
আপনার থেকে আমি মাত্র দুটো বেশি। আমার নিজের লেখা পোষ্ট মাত্র তিনটি, বাকিগুলো মোকছেদ আলীর।
তাই অন্যকে ধীরে বলার আগে নিজেকে ধীরে বলা উচিত। (আঘাত পেলে, ক্ষমা চাই)।
@আফরোজা আলম,
পরিসংখ্যানটি পুনরায় দিচ্ছি- (শুধু স্পেস দিয়ে করাতে সংখ্যাগুলি এক সাথে হয়ে গেছে)
মাস ——– আপনি ——— আমি
মার্চ —— ২ ———৩
এপ্রিল —–৭ ——– ১০
মে ———৪——— ২
জুন ——–৫——— ৪
আপনি ১৮ টি, আমি ২০ টি।
@মাহফুজ,
আপনাকে আমি কথা দিচ্ছি,মুক্ত-মনায় আমার লেখা খুব একটা আর পাবেন না ভবিষ্যতে। তাই পরিসংখ্যনের দরকার হবে না।
ভুল বলে থাকলে ক্ষমা করে দেবেন আশা করি।
@আফরোজা আলম,
আমার কথায় এমন সিদ্ধান্ত কেন নিচ্ছেন? মুক্তমনা তো আপনারও প্লাটফর্ম। লেখক হিসেবে আপনার অধিকার রয়েছে। তাছাড়া আপনার লেখার হাত অনেক সুন্দর।
প্লিজ, এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে মুক্তমনার অন্যান্য পাঠকদের আপনার লেখা থেকে বঞ্চিত করবেন না।
আপনার নতুন লেখা পড়ার অপেক্ষায় রইলাম। সে সাথে আপনার সুস্থতা কামনা করি।
এখন থেকে ধীরেই চলবো, কথা দিলাম।
@মাহফুজ,
না না আমার সিদ্ধান্ত আগেরই আপনার দুঃখিত হবার কিছু নেই। আর “মুক্ত-মনা”ই আমার একমাত্র লেখক জীবনের প্ল্যাটফর্ম না। আমি অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন যাগায় লিখি।মুক্ত-মনায় আগমন আমার মাত্র ক’দিন। আগে সুস্থ হয়ে নি। ফানুস শেষ করে বিদায় নেবার ইচ্ছে আছে। আর আজকাল
আর লিখতেও ভালো লাগে না। কী জানি আবার অনেক দিন পরে কলম হাতে নেব কিনা জানিনা।
@আফরোজা আলম,
একজন লেখকের এ অধিকার এবং স্বাধীনতা থাকবেই। কোথায় কোথায় লিখেন জানালে সেখানে গিয়েই আপনার লেখা পড়বো।
হতাশ হবেন না। অসুস্থতার কারণে হয়ত এমন মানসিক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ফানুসের জন্য হাজার পাঠক অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছে।
@আফরোজা আলম,
আশা করি আমাদের ফেলে চলে যাবেন না!
আমরা সবাই আপনার শুভাকাংখি।
ভাল থাকবেন!
আর প্লিজ চলে যাবেন না।
মন ভাল করার জন্য :rose2: