২০১০ সালের ১৬ জুন দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত ‘ভাতে চুল তাই স্ত্রীকে ন্যাড়া করে দিয়েছে স্বামী’ এরকম শিরোনামে একটি খবর পড়ে ছোটবেলায় নিজের আর সমবয়সীদের মাথা ন্যাড়া হওয়ার কথা মনে পড়ল। সাধারণত প্রায় বছরই গ্রীস্মের বা রমজানের ছুটিতে বোন ও ঠাকুমা আমাদের দুইবোনের মাথা ন্যাড়া করে দিতেন। গ্রীস্মেই বেশি করতেন। উছিলা ছিল গরম কম লাগবে এবং দীর্ঘ ছুটিতে ন্যাড়া মাথায় চুল একটু উঠবে যা স্কুলে গেলে আমাদের ঠুল্লা মাথার হাস্যকর পরিস্থিতিতে থেকে কিছুটা রক্ষা করবে। ন্যাড়া মাথা আঞ্চলিক ভাষায় বলতাম ঠুল্লা মাথা। খেপানোর জন্যে আরেকটা শব্দ ছিল বেল মাথা।
শৈশবে এ ঠুল্লা মাথা হাসির খোরাক ছিল। ন্যাড়া মাথাকে ছড়া বলে ভেঙানো হতো —-
‘ঠুল্লা মাথা
বেলের পাতা
আর কবিনি মিছা কথা?’
অর্থাৎ মিথ্যা কথা বলার অপরাধেই যেন ন্যাড়া মাথা করা হয়েছে।
আরেকটা ছিল —
‘ঠুল্লা মাথা
বেল বেল
পইড়া গেল মাথার তেল।’
অর্থাৎ ন্যাড়া মাথায় তেল দিলে গড়গড়িয়ে পড়ে যাওয়ার চিত্রকল্প।
অনেকে ঠুল্লা মাথায় ঠাল্লা অর্থাৎ চাটি মেরে ছোটদের ব্যথা দেয়াকে উপভোগ করত।
ভাইদের মাথা ন্যাড়া করতেন না। ঠাকুমা ও বোনের তাদের ধারণা ছিল যতবার ন্যাড়া করবে চুল তত ঘন হয়ে উঠবে। আর মেয়েদের ঘন চুল বিয়ের বাজারে রূপের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। কাজেই চুল দীর্ঘ করা ছিল আমাদের মাথা ন্যাড়া করার অলিখিত উদ্দেশ্য। তখন আমার বোধ এ সব অলিখিত উদ্দেশ্য বোঝার মত এতটা তীক্ষ্ণ ছিল না। তবে আমাদের ভাইবোন সবার মাথার চুলই কিন্তু ঘন। ঠাসা।
বিদ্যালয়ের উচ্চ শ্রেণীতে উঠার পর বোন চুল বিলিয়ে বিলিয়ে খাঁটি নারকেল তেল বা হিমকবরী তেল মাখিয়ে কাল ফিতা দিয়ে কষে চুল বেঁধে রঙিন ফিতায় ফুল তুলে দিতেন। এ কষে বাঁধায় চুল লম্বা হয় বলে ধারণা ছিল। আমার এখনকার চুলের ইচ্ছাকৃত আকার দেখলে ঠাকুমা ও বোন বেঁচে থাকলে তাঁদেরকে হতাশ হতে হতো বৈকি।
হিন্দু ধর্মাবলম্বী পুরুষদের মা বাবা মারা গেলে শ্রাদ্ধের আগে মাথা ন্যাড়া করার রেওয়াজ রয়েছে। এ ধর্মের সদ্য বিধবারাও নিজের রূপ ঢাকতে শোকের উছিলায় মাথা ন্যাড়া করে থাকেন। অর্থাৎ ন্যাড়া মাথা শোকের আমেজ বহন করে এবং বিষয়টি তথাকথিত শাস্ত্রীয় প্রচ্ছদে ঢাকা হয়।
হিন্দু ধর্মে তীর্থযাত্রীরা মহিলা পুরুষ নির্বিশেষে গয়া কাশি বৃন্দাবন ঘুরে আসলে এবং ইসলাম ধর্মে পুরুষরা হজ্ব করে আসলে দেখি ন্যাড়া মাথা। অর্থাৎ আপাত সংসারত্যাগী পূণ্যার্থীরা মাথা ন্যাড়া করেন।
আমাদের ছোট বেলায় দেখেছি চুরি করে ধরা পড়লে শাস্তি হিসেবে মাথা ন্যাড়া করে বাজারে ও গ্রামে ঘুরানোর রেওয়াজ প্রচলিত। এখনও মাঝে মাঝে এ ধরণের খবর পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। চোরের এ শাস্তির প্রভাবেই ছোটরাও ন্যাড়া মাথা নিয়ে বিব্রত হতো। ন্যাড়া মাথা দেখে অন্যরা দুষ্টুমি মাখা হাসি হাসত যার অর্থ দাঁড়াত, কি দোষে মাথা মুড়িয়ে দেয়া হল?
দৈনিক পত্রিকার পাতায় খবরটি ছিল —–
‘‘ভাতে চুল পাওয়ার স্ত্রীর মাথা ন্যাড়া করে দিয়েছে রহিদুল ইসলাম (৩৭) নামের এক ব্যক্তি। গতকাল দুপুরে নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার চরকানাই ডাঙ্গাপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। প্রতিবেশি আলাউদ্দিন ও রাজ্জাক জানিয়েছেন, রহিদুল দুপুরে খেতে বসে ভাতের মধ্যে একটি চুল পান। এ নিয়ে তার স্ত্রী শাহিদা আক্তারকে (৩০) গালিগালাজ করেন তিনি। এক পর্যায়ে ব্লেড এনে স্ত্রীর মাথা ন্যাড়া করে দেন রহিদুল। খবর পেয়ে শ্বশুর- শাশুড়ি আসলে স্থানীয়ভাবে বিষয়টি মিমাংসা করা হয়।’’
খবরে প্রকাশ রহিদুল ইসলাম ও শাহিদা আক্তারের দশ বছরের দাম্পত্য সম্পর্ক। এক দশক ঘর করেও স্ত্রী তার স্বামীর কাছে এতটুকু মর্যাদা পেল না। এ ন্যাড়া মাথা তো অপমানের এক দগদগে ঘায়ের উদাহরণ। এরপরও স্ত্রীটি সংসার করছে ঐ স্বামীটিরই সাথে। শাহিদারা আমাদের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় ঘটিত নাটকের উপায়হীন ও সহায়হীন বাস্তব চরিত্র। বাংলাদেশের কোন স্ত্রী তার স্বামীর সাথে এ ধরণের ঘটনা করেছে বলে আমার জানা নেই। করার মত অবস্থা ও অবস্থানও এদেশের কেন সারা বিশ্বের নারীদেরই নেই। আর কোন স্বামী এর চেয়ে কম দোষ করলেও এমন স্ত্রী নিয়ে ঘর – সংসার করত না।
স্বামীটি মার-ধর করেনি, নারীটি ধর্ষণের শিকার হয়নি তবুও শাহিদা আক্তারের এ অপমানকর, অবমাননাকর ও অধঃস্তনতার উদাহরণ নারী মাত্রই গায়ে লাগার কথা। এ কাজটি করার জন্যে আইনের চোখে রহিদুলকে কেউ অভিযুক্ত করায়নি, সামাজিকভাবেও অভিযুক্ত হয়নি, তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজে এ খবরটি পড়ে অপমানবোধ করছি এবং লোকটির মাথা মুড়িয়ে দেয়ার মত প্রতিহিংসাপরায়ণ মনোবৃত্তি না জাগলেও সামাজিকভাবে রহিদুললে অভিযুক্ত করার উদ্যোগ নেবার মত মনোভাব পোষণ করছি।
আমি এবং আমার ভাইবোনেরা,আমাদের পাড়ার সব পড়ুয়ারাই শব্দ করে পড়তাম। শব্দ করে না পড়লে অভিভাবকদের কাছ থেকে তাড়া পেতাম, পড়া বন্ধ কেন? কাজেই কেউ মাছির মত ভন ভন করে কেউ চিল্লিয়ে পড়া চালিয়ে যেতাম।
শব্দ করে পড়ার ফলে সোনাকাকা অন্যত্র বসেই উচ্চারণ শুদ্ধ করে দিতেন। আমার এক জেষ্ঠ্যতুত ভাইয়ের বাংলা পড়া নিয়ে হাসাহাসি হতো। ধ্বংস শব্দটি পড়তেন ধ বংস উচ্চারণে। এমনি বিস্ময়কে বিসময়, গ্রীস্মকে গীস ম বলা ছিল তার উচ্চারণ রীতি। তা শুধরাতে সোনাকাকার বেশ সময় লেগেছিল।
ইউনিভার্সিটির হলে থাকতে আমার এ অভ্যাস আমার রুমমেটদের অনেক বিরক্তি উৎপাদন করলেও আমি ছিলাম অসহায়। কারণ, জোরে শব্দ করে না পড়লে আমার মুখস্থ হতো না।
কিন্তু আমার ছেলেমেয়ের পড়া শব্দহীন। তারা টিভি দেখতে দেখতে অংক করতে পারে। গান চালিয়ে পড়তে পারে। আমি অফিসে নিচু স্বরে গান শুনার চেষ্টা করে দেখেছি কাজ করতে পারি না। গানে মন চলে যায়। ছোটবেলা পড়া মুখস্থ করতাম জোরে,কারণ অন্য শব্দ কানে আসলে আমার মনোযোগ নষ্ট হয়ে যেত। এখন অফিসেও একই অবস্থা। কাজ করতে করতে ভাল না লাগলে একটু সময় গান শুনি। গান শুনতে শুনতে কাজ করতে পারি না। গান আমার কাছে সুরের সাথে কথা এবং কণ্ঠও গুরুত্বপূর্ণ। রবীন্দ্র সংগীতের সুর ও কথার সাথে কন্ঠও অনুভব করি। সবার কণ্ঠে তো সব গান ভাল লাগে না। অন্যের ফোনের কথোপকথনও আমার মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটায়। আমি এও বুঝি আমার টেলিফোনের কথোপকথন অন্যকে বিরক্ত করে। আর দিন দিন মনোযোগ অনেক বেশি মনোযোগ চায়।
প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতার জন্যে তা করতে পারি না। মুক্ত-মনার এডমিন এ বিষয়ে সহযোগিতার হাত বাড়ালে উপকৃত হব। আর আমিও ইতোমধ্যে শিখে নিতে চেষ্টা করব।
ধারাবাহিকটির প্রতি পর্বে আগের পর্বটির লিংক জুড়ে দিলে পুরনো লেখাগুলো খুঁজে পেতে সুবিধা হতো। ধন্যবাদ। :rose:
মাহফুজকে ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা । সত্যিই আপনি দুইদিন যাবৎ আমার তখন ও এখন নিয়ে মেতে ছিলেন ভাবতেই ভাল লাগছে। বই আকারে বের করার মত কোন চিন্তা এখনও করিনি এবং সুযোগও আছে কি না তা খুঁজিনি। দেখা যাক, কেউ এগিয়ে আসেন কি না।
বিপ্লব রহমানকে তাঁর আগ্রহের জন্যে ধন্যবাদ। ৪০ পর্ব থেকে ফিরে যাবার মত ধৈর্য আছে দেখে খুশি হলাম।
ফরিদকে ধন্যবাদ লিংকগুলো দেয়ার জন্যে। একদিন চেষ্টা করেও মাহফুজের চাহিদা মেটাতে পারছিলাম না।
@গীতা দাস,
মেতে ছিলাম মানে? এখনও মেতে আছি। ১০ নং পর্বটি পড়ছি। আমি তো আরো একবার খতম দেবো।
গীতা দাস,
মায়াময় শৈশব ও নারী মুক্তির বিষয়টি খুব সুন্দর করে আপনার লেখায় ফুটে উঠেছে। লেখার সারল্যটুকু ছুঁয়ে গেলো। চলুক। :yes:
পুনশ্চ: ৪০তম পর্ব থেকেই ধারাবাহিকটি শুরু করলাম। আস্তে আস্তে বাকী সব পর্ব পড়ে ফেলার আশা রাখি। :rose:
@বিপ্লব রহমান,
পড়ুন পড়ুন। পড়তে পড়তে কখন যে হারিয়ে যাবেন শৈশবে টেরই পাবেন না। পুরো ৪০ টি পর্ব একবার খতম দিয়েছি। আরো একবার খতম দেয়ার ইচ্ছা আছে। বই আকারে যেদিন বের হবে সেদিন বইটি বউকে উপহার দিব ভাবছি। কিন্তু গীতা দাস আমার সেই আশা পূর্ণ করবেন কিনা জানি না। আপনি তো সাংবাদিক মানুষ, লেখালেখি করলেই কাজ হয়ে যায়। একটু চেষ্টা করে দেখবেন নাকি?
@মাহফুজ,
হুমম…আস্তে আস্তে পড়ছি। খুবই সাবলীল লেখা। এটি বই আকারে বের হলে সব লেখা এক মলাটে পড়তে পারবো– এ কথা ভাবতেই ভালো লাগছে।
লেখিকার সার্বাত্নক সাফল্য কামনা। :clap2:
@বিপ্লব রহমান,
বইটার ১০০০ কপি প্রিন্ট করতে কেমন খরচ পড়তে পারে? আপনার তো ঢাকায় বসবাস, একটু খোঁজ নিয়ে দেখবেন নাকি? এই বইটি কিন্তু মুক্তমনায় প্রদত্ত কমেন্টসহ প্রকাশ করতে হবে। এ ব্যাপারে গীতা দাসের সঙ্গে আলাপ করা প্রয়োজন।
@মাহফুজ,
আপনি লেখিকার মত নিয়ে ই-বার্তায় আমাকে জানাতে পারেন। তিনি রাজী হলে ‘শুদ্ধস্বর’ প্রকাশনীর সঙ্গে আলাপ করে দেখতে পারি। 🙂
@ গীতা দাস,
ইউরেকা! ইউরেকা!
শেষ পর্যন্ত পেলাম। আপনার ই-মেইলে প্রদত্ত নির্দেশিত মোতাবেক আর্কাইভে গিয়েই পেলাম। ডাউনলোডও করে ফেললাম। এখন শুধু পড়ার পালা।
অসংখ্য ধন্যবাদ।
@ গীতা দাস,
‘এত মজা পাচ্ছি আপনার তখন ও এখন পড়ে তা লিখে বুঝানোর সাধ্যি আমার নেই। বাকীগুলো পড়ার আগ্রহ এতই বৃদ্ধি পেয়েছে যে, ই-মেইল ঠিকানা না পাঠিয়ে থাকতে পারলাম না। জলদি পাঠান।
@ গীতা দাস,
সাত রং এ নাই। সেখানে ৩৪-৩৮ পর্বগুলো পিডিএফ ফাইলে রয়েছে।
ই-বার্তায় মেইল ঠিকানা পাঠিয়ে দিচ্ছি।
@ গীতা দাস,
তখন ও এখন এর ২০, ২১, ২২ পর্ব ছাড়া সব পর্বগুলো পড়ে শেষ করলাম। বাকী এই তিনটি পর্ব পাবার উপায় কী?
@মাহফুজ,
আমিও ভাবছি কি করে আপনি তখন ও এখন এর ২০, ২১, ২২ পর্ব পড়বেন। আমিও লিংক দেওয়ার মত প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারছি না। মুক্ত-মনায়ও পাচ্ছি না। আপনার ই মেইল নম্বর দিলে আমি পাঠাব। অথবা http://www.satrong.org এর লেখক আর্কাইভ এ আছে।
@গীতা দাস,
অনেক ধন্যবাদ। আমি সাতরং এ যাচ্ছি। যদি সেখানে খুঁজে না পাই তাহলে ই-বার্তার মাধ্যমে আপনাকে আমার ই-মেইল ঠিকানা পাঠিয়ে দেব।
@মাহফুজ,
২০, ২১ এবং ২২ পর্বের লিংকঃ
http://www.mukto-mona.com/Articles/Gita_Das/tokhon_ekhon_20.htm
http://www.mukto-mona.com/Articles/Gita_Das/tokhon_ekhon_21.htm
http://www.mukto-mona.com/Articles/Gita_Das/tokhon_ekhon_22.htm
@ফরিদ আহমেদ,
আপনার দেয়া লিংক পাবার আগেই পেয়ে গেছি।
তারপরও ধন্যবাদ সাহায্য করার জন্য। এমননিভাবে পাশে পেলে নিজেকে ধন্য মনে করবো। আপনি আসলেই একজন ভালো মানুষ। এটা কিন্তু স্তুতি করে বিব্রত করার মত কথা নয়।
@ গীতা দাস,
খুবই দুঃখজনক এবং অপমানকর ঘটনা। আইন প্রয়োগ করে বা সামাজিকভাবে অভিযুক্ত করা যাবেনা জেনেই রহিদুল ইসলামের মতো লোকেরা এই ধরনের ঘৃন্য কাজ করার সাহস পায়। ছেলে মেয়ে যেই হউক, কাউকে এভাবে শক্তির জোরে অন্যায়ভাবে অপমান করার কোন শাস্তি কি বাংলাদেশে নেই?
@ব্রাইট স্মাইল্,
যার বিরুদ্ধে অপরাধ সে তো অন্যায়, অপরাধ, অপমান মাথা পেতে নেয়। তাকে হতে হয় সর্বংসহা এবং তা না হয়েও উপায় নেই। কাজেই কীভাবে শাস্তির ব্যবস্থা করা সম্ভব!
আপনাদের এই যে অনুভূতির সৃষ্টি — তা হতে হতেই একদিন এর প্রতিকার হবে।
@ গীতা দাস,
একটা প্রশ্ন আমার মাথার মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরেই ঘুরপাক খাচ্ছে। আপনি যেহেতু নারীদের নিয়ে কাজ করেন তাই প্রশ্নটি আপনাকেই করতে চাই-
আমাদের দেশের কর্মজীবী নারীরা তাদের উপার্জিত অর্থ স্বামীর হস্তে অর্পন করে, এ বিষয়টিকে আপনি কেমন চোখে দেখেন?
মাহফুজ,
মুক্ত-মনারই লেখকদের যে আর্কাইভ আছে সেখানে পাবেন। ধন্যবাদ আমার লেখা পড়ার আগ্রহের জন্যে।
@গীতা দাস,
আপনার ছোলবেলার বিভিন্ন স্মৃতি পাঠের সাথে সাথে আমার নিজেরটাও অটোমেটিক ভেসে উঠছে। হারিয়ে যাচ্ছি ছোট্ট বেলায়।
আমার আগের মন্তব্য লেখার পর পরই আর্কাইভে গিয়ে (১-১৯) পর্বগুলো পেয়েছি। ১-১৯ পর্যন্ত একটা ফাইলে কপিও করেছি। কারণ বার বার এক ফাইল থেকে আরেক ফাইলে যাওয়া বড়ই ঝামেলার ব্যাপার। মাঝে মাঝে পেজ আসতেই চায় না।
কপি করার পর পরই ফাইল পড়া শুরু করেছি। বর্তমানে ১৪ নং পর্বে আমি।
হঠাৎ করে মনে হলো ব্লগে কোনো মন্তব্য আছে কিনা দেখি। দেখলাম আপনার মন্তব্য।
আমার মনে পড়ছে আপনার কিছু লেখা পিডি এফ ফাইলে ছিল। সম্ভবত আর্কাইভ থেকে সেগুলো সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
আপনার লেখা পড়ে মনে হচ্ছে আপনি বয়সের দিক দিয়ে আমার তুলনায় বেশ বড়। আপনার তিনটি সন্তানও রয়েছে, যারা এখন অনেক বড় হয়েছে।
সুন্দর লেখা ও বয়সের জন্যই আপনার প্রতি আমার শ্রদ্ধা রইল।
আপনার কোন লেখা বই আকারে কি প্রকাশ হয়েছে? হলে জানাবেন।
অনেক ধন্যবাদ।
@মাহফুজ,
আমার তিনটি নয় দুটি ছেলেমেয়ে। তবে এখনো তাদের লেখা পড়া শেষ হয়নি।
না, আমার নিজস্ব কোন বই প্রকাশিত হয়নি, তবে নারী উন্নয়নে অবদান রেখেছেন বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের এমন নারীদের জীবনী নিয়ে সম্পাদিত বই একটি ও নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের তৃণমূল পর্যায়ে নারী সংগঠনের আন্দোলনের গাঁথা নামে আরেকটি বই সম্পাদনা করেছি। দুটি বই ই নারীপক্ষ থেকে প্রকাশিত।
আমার ব্যক্তিজীবন নিয়ে আপনার আগ্রহের জন্যে ধন্যবাদ।
@গীতা দাস,
এই মাত্র ১৯ পর্ব শেষ করলাম। ২০, ২১, ২২ পর্বগুলো খুঁজে পাচ্ছি না। এগুলো কি আপনি মুক্তমনায় পাঠান নি। ২৩-৪০ পর্যন্ত প্রোফাইল থেকে পেলাম।
আপনার অন্যান্য লেখাও ধীরে সুস্থে পড়বো।
@মাহফুজ,
ছেলেবেলা- মেয়েবেলা, ছোট্টবেলা-বড়বেলা-
বিষয়টা কী দাদা?
অঃ ট- বিপরীত শব্দের একটা তালিকা কোথায় পাই? নর্তকী আর বেশ্যার পুংলিংগ কী হয় খোঁজে পাচ্ছিনা।
@আকাশ মালিক,
ছোট্টবেলা লিখতে গিয়ে ছোলবেলা হয়েছে। কি-বোর্ড মিসটেইক।
আপনারও কিন্তু বানান ভুল হয়েছে। খোঁজে হবে না, হবে খুঁজে।
তসলিমা নাসরিন একটা বই লিখেছেন, বইটির নাম “আমার মেয়েবেলা।”
হুমায়ুন আহমেদ একটা বই লিখেছেন, বইটির নাম “আমার ছেলেবেলা।”
সকালবেলা, সন্ধ্যাবেলা, রাত্রিবেলা, সাঝের বেলা। বেলার ছড়াছড়ি। এখন আপনার কি কোনো বেলা নেই? বেলা থাকলে বলতে পারেন।
ডিকশনারীতে না থাকলে আসুন নিজেরাই তৈরি করি।
মনে হচ্ছে নর্তকীর পুংলিংঙ্গ হবে নতর্ক।
আর বেশ্যারটা হবে গেলমান।
@মাহফুজ,
:lotpot:
@আকাশ মালিক,
প্রত্যেকটা শব্দের পিছনেই ঐতিহাসিক এবং সামাজিক প্রেক্ষাপট থাকে। মানুষ তার প্রয়োজনেই নিত্য নতুন শব্দ সৃষ্টি করে। বাংলা ভাষায় যে লৈঙ্গিক বৈষম্য রয়েছে তার ভিত্তিমূলও সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। নারী যত বেশি আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে তার অবস্থানকে মজবুত করবে ততই ধীরে ধীরে এই সমস্ত বৈষম্য ঘুচে যেতে থাকবে। জোরাজুরি করে শব্দকে পরিবর্তনের কিছু নেই বা লৈঙ্গিক বৈষম্যমূলক শব্দ নিয়ে বিশাল ক্যাঁচালেরও প্রয়োজন দেখি না। সমাজব্যবস্থা পরিবর্তনের সাথে সাথে এগুলো এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে।
এই সমস্যা শুধু বাংলাতেই নয়, প্রায় সব ভাষাতেই রয়েছে। ইংরেজিতে যেমন একসময় চেয়ারম্যান, ক্যামেরাম্যান ইত্যাদি শব্দ ছিল, এখন তার পরিবর্তে বলা হচ্ছে চেয়ারপারসন বা ক্যামেরাপারসন। বাংলাতেও অনেক পুরুষবাচক শব্দকেই এখন উভবাচক শব্দ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। উদাহরণ হচ্ছে, লেখক, কবি, পাঠক ইত্যাদি।
হ্যাঁ, বেশ্যা শব্দের কোন পুরুষবাচক শব্দ বাংলায় নেই। এই শব্দটি এসেছে সংস্কৃত থেকে। এর অবশ্য একটা ক্লীববাচক শব্দ আছে। সেটা হচ্ছে বেশ্য। ইংরেজিতেও প্রস্টিট্যুট শব্দের কোন পুরুষবাচক শব্দ ছিল না। সেইসময় পুরুষেরাই নারীদেহকে পণ্য হিসেবে কিনে নিতেন, নারীদের সেই অধিকার ছিল না, কাজেই এই শব্দের নারীবাচক শব্দের কোন প্রয়োজনীয়তা তখন ভাষায় দেখা দেয় নি। পাশ্চাত্য নারীরা যেদিন থেকে পয়সা দিয়ে পুরুষদেহ কেনা শুরু করলো সেদিন থেকেই এর পুরুষবাচক পরিশব্দও তৈরি হয়ে গেল জিগালো নামে। বাংলাতেও আমরা বেশ্যার পুরুষবাচক কোন শব্দ তৈরি করে নিতে পারি অথবা জিগালোকেই ব্যবহার করতে পারি, কিংবা মাহফুজ সাহেবের প্রস্তাব অনুযায়ী গিলমানও বলতে পারি।
আচ্ছা, আকাশ ভাই, একটা কথা বলেনতো দেখি। কাপুরুষ শব্দের স্ত্রীবাচক শব্দ আপনার জানা আছে কি? কানারী নাকি?
@ফরিদ আহমেদ,
বর্তমানে লেখক, কবি, পাঠক শব্দ ছাড়াও শিক্ষক শব্দকে উভলিঙ্গ হিসেবে ধরা হচ্ছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে ছাত্র পুংলিঙ্গ, এর স্ত্রী লিঙ্গ হিসেবে ছাত্রী ব্যবহার করা হচ্ছে। এখনও ছাত্র শব্দকে উভলিংঙ্গ ব্যবহারের প্রচলন শুরু হয়নি।
কিছু কিছু শব্দ রয়েছে যেগুলো নিত্য স্ত্রী লিঙ্গ। যেমন: পোয়াতী, সতীন, কুলটা।
কাপুরুষ শব্দটি নিত্য পুংলিঙ্গ হিসেবেই ধরা হয়।
ভীত স্বভাবের পুরুষদের কাপুরুষ বলা হচ্ছে। ভীত স্বভাবের মহিলাদের কী বলে ডাকা হবে? আপনার উদ্ভাবিত কানারী বলা যেতে পারে কিম্বা কামহিলাও বলা যেতে পারে। অনেকে নারীকে মহিলা বলতে পছন্দ করে না। কারণ মহিলা বলতেই মহলে থাকে এমন কিছু বুঝায়।
এ ব্যাপারে আমাদের ভাষাবিজ্ঞানী ড. হুমায়ুন আজাদের অর্থবিজ্ঞান বইটি পড়তে হবে।
@মাহফুজ,
এই ভদ্রলোক দুই দুইবার পোয়াতি হয়েছেন। এখন পোয়াতিকে নিত্য স্ত্রী লিঙ্গ বলবেন কীভাবে? পোয়াতির পুংলিঙ্গ খুঁজে বের করার সময় হয়ে গিয়েছে আমাদের।
কেন? মেয়েরা কি সব বীরপুরুষ থুক্কু বীরনারী। ভয় টয় পায় না বুঝি তারা?
আচ্ছা, কাপুরুষ না হয় বাদই গেল। ধর্ষক শব্দটাও কি নিত্য পুংলিঙ্গ? মেয়েরা বুঝি ধর্ষণ টর্ষণও করে না? এই ভদ্রমহিলা যে ছুরি দেখিয়ে তেরো বছরের এক ছেলেকে ধর্ষণ করলো, একে এখন কী বলবেন? ধর্ষক না ধর্ষিকা? এটাকে যদি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ভেবে থাকেন তবে ভুল ভাবছেন। বিভিন্ন গবেষণা ঘেটে যে পরিসংখ্যান পাওয়া গিয়েছে তাতে দেখা গেছে বয়স্ক নারী কর্তৃক বালক ধর্ষণের হার শতকরা চার ভাগ থেকে শতকরা ষাট ভাগের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
@ফরিদ আহমেদ,
হুম বড়ই চিন্তার বিষয়!
ঐ সমস্ত ঘটনা তো আমাদের দেশে হচ্ছে না। হচ্ছে অন্যদেশে। তারা তাদের প্রয়োজনে শব্দও বানিয়ে ফেলছে। যেমন আপনার ভাষ্যমতে- পাশ্চাত্য নারীরা যেদিন থেকে পয়সা দিয়ে পুরুষদেহ কেনা শুরু করলো সেদিন থেকেই এর পুরুষবাচক পরিশব্দও তৈরি হয়ে গেল জিগালো নামে।
আমাদের দেশে যখন ঐ ধরনের পরিস্থিতি ঘটবে তখন নিশ্চয়ই বৈয়াকরণগণ নতুন শব্দের আবিষ্কার ঘটাবেন।
আমার মনে আছে, তখন তসলিমা নাসরিনের লেখা নিয়ে ভীষণ হৈচৈ হচ্ছিল। তার নির্বাচিত কলামের কোন এক জায়গায় লেখা ছিল- আজ থেকে নারীও ধর্ষণ করতে শিখুক।
এই শব্দগুলো নিয়ে বন্ধুদের মধ্যে আলাপ আলোচনাও হতো, মজাও করতো। তো একবন্ধু যখন তসলিমার ঐ বাক্যগুলো উচ্চারণ করলো, তখন আরেক বন্ধু বলল- তাতে আমাগোই তো লাভ।
যদিও সেগুলো ঠাট্টা মশকারী ছিল। কিন্তু পুরুষের মধ্যে বিকৃত এই অহংবোধ ফুটে উঠেছিল।
সত্যিই, সময়ের সাথে সাথে নতুন নতুন শব্দের আবিষ্কার প্রয়োজন। আর তা হয়েও যাবে একদিন।
@ফরিদ আহমেদ,
আজ বিকালে একটু হাটতে বের হয়েছিলাম। হঠাৎ করেই কলেজের বাংলা শিক্ষকের সাথে দেখা। সাথে আরও বেশ কয়েকজন ছিল। কথাচ্ছলে জিজ্ঞেস করলাম, কাপুরুষ শব্দের পুংবাচক কী হবে? উত্তর দিলেন- কানারী। বললাম, এটা তো ডিকশনারীতে নাই। বললেন, সবকিছু কি ডিকশনারীতে থাকতে হবে? আমাদের মাথা নাই?
আরেকজন বললেন, কানারী শব্দটি শুনলে মনে হচ্ছে ‘কানা’ এর স্ত্রীবাচক।
এভাবে অনেক মজা হলো। আর তাই সেটা আমার সাথে শেয়ার করলাম।
@ গীতা দাস,
২৩-৪০ পর্ব পর্যন্ত পেলাম। পড়তে ভালো লাগে, একেবারে জীবন্ত জীবন-কাহিনী। আগের পর্বগুলো কিভাবে পাবো, দয়া করে জানাবেন কি?
আমাদের এলাকায় ন্যাড়া মাথাকে টাক্কু মাথা বলে। ছোটবেলার কথা মনে পড়লো- বড় ভাইকে টাক করে দেয়া হয়েছে। তা দেখে মেজ ভাই টাক হওয়ার বায়না ধরেছে। তাকেও টাক করে দেয়া হলো। সেটা দেখে ছোট ভাই টাক হবার জন্য কান্নাকাটি করলো। তাকেও টাক করে দেয়া হলো। এই তিন ভাই টাক মাথা নিয়ে ঘুরে বেড়াল। তাদের দেখাদেখি ঐ সব বয়সের ছেলেরাও টাক করা শুরু করলো। বলতে লজ্জা নেই যে, আমিও তাদের দলের একজন ছিলাম। সময়টা গ্রীষ্মকাল।