জীবন যেখানে যেমন
বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে; হাত বাড়িয়ে দিই, ছুঁতে ইচ্ছে করছে প্রচন্ড। বৃষ্টির ফোঁটাগুলো হুড়িমুড়ি খেয়ে হাতে এসে পড়ছে তারপর পাল্লা দিয়ে গলে পড়ছে হাতের ফাঁক-ফোঁকর দিয়ে। ইট বিছানো মাটিতে চূর্ণ-বিচুর্ণ হয়ে যাচ্ছে প্রতিটির দেহ; শেষবারের মতন ককিয়ে উঠছে তীব্র বেদনায়; মাটি গভীর মমতায় শুষে নিচ্ছে বৃষ্টির বেদনাগুলো, নাকি গোগ্রাসে গিলছে বৃষ্টির আর্তনাদ, মেটাচ্ছে জন্মের পিপাসা! মানুষ হওয়ার এই এক অসুবিধে ঃ কারণে-অকারণে অনেক ভাবনাই মাথায় আসে। ট্রেনটা নিশ্চয় এমন করে ভাবছে না!
ট্রেন ভেড়ামারায় এসে থামল; একজোড়া নারী-পুরুষ আমার সামনের আসনে এসে তড়ি-ঘড়ি করে বসল। ট্রেন ছেড়ে দিল। বাম পাশের সিটে বসা যে মানুষটি এতক্ষণ বকর বকর করে মাছের হাট বানিয়ে রেখেছিল কামরাটি, সে তড়িৎ গতিতে ট্রেন থেকে নেমে গেল। লোকটি গল্পে এতটাই মশগুল ছিল যে আর অল্পক্ষণ গত হলেই এখানে আর নামতে হত না তাকে। হঠাতই আমার মনে হল, মাছের বাজার থেকে চলে এসেছি সোজা কাঁচামালের বাজারে যেখানে লোক সমাগমের ঘাটতি নেই বটে তবে জিনিসপত্রের দাম শুনে যেন বাকশূন্য জনতা ফ্যালফেলিয়ে চাইছে ইতি-উতি! পাশে বসা ছেলেটি আমার মাথার উপর দিয়ে বৃষ্টিতে নেয়ে ওঠা প্রকৃতি দেখায় মহাব্যস্ত, যেন গোগ্রাসে গিলছে বৃষ্টিস্নাত প্রকৃতির আটসাট যৌবন। পৃথিবীতে লম্বা হওয়ার যতগুলো সুবিধা আছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল অনায়াসে অনেক কিছু দেখতে পাওয়া। ও যে আমার থেকে অনেক লম্বা এই বিষয়টি আমাকে বোঝানোর জন্য থেকে থেকে আমার মাথায় ওপর দিয়ে হাত চালিয়ে দিচ্ছে জানালার দিকে।
ট্রেন চলতে শুরু করেছে; আমি বাইরে চোখ মেলে দিলাম।বৃষ্টিস্নাত প্রকৃতি এখন নিশ্চুপ, শব্দহীন যেন সদ্য জন্ম নেওয়া শিশু এইমাত্র পেট পুরে খেল, এখন তার ঘুমানোর পালা। প্রকৃতির এই নিষ্পাপ চেহারা আজই প্রত্যক্ষ করছি তা কিন্তু নয়; ইতিপূর্বে বহুবার করেছি, তবে আজকের এই অনুভূতি আজই প্রথম। ট্রেনের শব্দটা এখন আমার কাছে মনে হচ্ছে ঘুম পাড়ানি গান; প্রকৃতিকে ঘুম পাড়াতে ব্যস্ত সে। এই মুহূর্তে মার কথা মনে পড়ছে খুব করে। মা গান জানতেন না। সংসারের সাতকাহন সামলাতে গিয়ে গান গাওয়া কিংবা শোনার ফুসরৎ মেলেনি তাঁর। সাতবোকার একটি গল্প জানতেন এবং এই একটি গল্প দিয়েই তাঁর ন’টি সন্তানকে ঘুম পাড়িয়েছেন। তারপর একদিন ক্লান্ত হয়ে তিনি নিজেই ঘুমিয়ে পড়লেন। আমার বোনেরা মার কানের কাছে সুর করে কালিমা তাইয়েবা পাঠ করছিলেন। ঘুম পাড়ানোর এই তরিকাটা আমি সে দিনই প্রথম পর্যবেক্ষণ করলাম। তবে আমার ধারণা, ঐ সময় পৃথিবীর কোন শব্দই মার কানে প্রবেশ করেনি। ধ্যান করার প্রথম কারণ হচ্ছে নিজের চারপাশে ভ্যাকুয়ম বলয় সৃষ্টি করা। নিজের সত্বাকে transcend করানো মানেই হচ্ছে তাকে শব্দের জগত থেকে বের করে আনা। এবং সোল যখন পারফেক্টলি transcend করে তখনই তো আমরা বডি ধরে কান্নাকাটি করি! আমারা যাকে মৃত্যু বলি সে শুধু দেহেরই ঘটে; আমাদের ভালোবাসা শুধুই বস্তুকে ঘিরে। মানুষের যদি দৃষ্টি না থাকতো তাহলে বস্তুর আবেদন অনেকখানি কমে যেত; এক্ষেত্রে প্রাণীকূলের সেরা জীব হত বানর গোছের কিছু একটা।
২
সামনের আসনে বসা নারী-পুরুষ দুটি পরস্পরের হাত ধরে একটি করে কথা বলছে আর অট্টহাসিতে একে অন্যের গায়ে ঢলে পড়ছে। দুজনেরই বয়স ২৮ থেকে ৩৫ এর মধ্যে হবে; আচরণে মনে হচ্ছে সদ্য বিবাহ হয়েছে। সদ্য বলছি এ জন্য যে বেশি দিন সংসার করা নারী পুরুষেরা বাইরে এসেও সংসারের গাণিতিক হিসাব মেলাতে ব্যস্ত থাকেন; ভালোবাসা তাদের কাছে মধ্যরাতের বিছানাতেই শোভা পায়। তবে এরা প্রেমিক-প্রেমিকাও হতে পারে। চার্লস ল্যাম্ব আজীবন ব্যাসেলর ছিলেন। তাঁর একটি রচনায় লিখেছিলেন যে তিনি কোন বিবাহিত বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে গেলে তারা স্বামী- স্ত্রী মিলে তাঁর সামনে এমন ভান করে যেন তারা প্রচণ্ডভাবে একে অপরকে ভালোবাসে এবং তারা ল্যাম্বকে বলতে চায়, দেখ ব্যাটা তুই কত অসুখী! এরা দুজন কি এখন আমাদেরকে সুযোগ পেয়ে সেরকমই কিছু বলতে চাইছে, না হলে বউকে নিয়ে তো ঘরের মধ্যে যেভাবে ইচ্ছে সেভাবে লটর-পটর করতে পারে! এভাবে ট্রেনের তালে তালে একে অন্যের গায়ে হেলে পড়ার মানে কি! আমার বামদিকের কোনায় মাঝবয়সী এক হুজুর বসে আছে। হুজুরটি সুবিধা মত এঙ্গেলে আমার সামনের মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছে; তাকানোর ভঙ্গিমাটা এমন যেন ক্ষুধার্ত মানুষ রাস্তায় দাঁড়িয়ে হোটেলে কাচ দিয়ে ঘেরা মিষ্টি দেখছে, পেলেই টপাটপ গিলে ফেলবে। মেয়েরা যদি খাদ্য হয় তবে আমরা যাকে চরিত্রহীন বলি তাকে ভোজনরসিক বললেও চলে। শুনতে খারাপ লাগলেও অনেকে একমত হবে মেয়েরা পুরুষদের কাছে খাবারই বটে। পার্থক্য হচ্ছে, এদেরকে ডাইনিং টেবিলে পরিবেশন না করে বিছানাতে করা হয়। আমাদের দেশে হুজুরদের বিনোদনের মাধ্যম বলতে শুধুমাত্র স্ত্রী মানে নারী আর কী, ফলে হুজুরদের বৌ’দের বেশ ধকল সহ্য করতে হয়। আমার দূর সম্পর্কের এক ভাবীকে, যার স্বামী বেশ নামকরা হুজুর ছিলেন, বলতে শুনেছিলাম যে তার স্বামীর ভালোবাসা এখন তার কাছে অত্যাচারের মতন মনে হয়। দিন নেই রাত নেই যখন তখন…!
একটু ঝিমুনি এসেছে মাত্র এমন সময় একটা হাতের আলতো পরশে হকচকিয়ে উঠলাম; দেখি একজন অর্ধউলংগ ভিখারী সমস্ত হাত জুড়ে খ্যাত খ্যাতে ঘা, বৃষ্টির পানিতে ভিজে হাতটির দশা বর্ষায় আমার পাড়ার গলির মতো ঃ গরুর গোবর, চুনার সাথে টয়লেটের ট্যাংক উপচে পড়া নোংরা আর ড্রেনের পানির এক অদ্ভূত মিশ্রণ! লোকটির চারিদিকে মাছি ভন ভন করছে। আমার তো প্রায় বমি হবার উপক্রম। আমি ঝট করে চোখ সরিয়ে নিলাম। লোকটি হাত প্রসারিত করে বলতে থাকে, ‘ভাই-আফারা, শরীরে আমার কঠিন ব্যামো, আল্লার বান্দা, দু’এক টাকা দিয়ে সাহায্য করেন, আল্লাহ আপনাদের মঙ্গল করবে।’ মনে হচ্ছে এই ব্যামোটাই ওর ব্যাবসায়ের মূলধন। ভিক্ষাবৃত্তিকে যদি এক ধরনের ব্যবসা বলা হয় তবে আমাদের দেশে এই ব্যবসায়ে শুধু আল্লাহর নাম এবং আল-কুরআনের দু’একটি লাইন জানা থাকলেই চলে। আমার মন বলছে আরেকবার লোকটির হাতের দিকে তাকাতে, কিন্তু আমি জানি তাকালে এই মনই ভেতর থেকে বমি খিচিয়ে বের করে আনবে। মনের একই সাথে এই দ্বিমুখী আচরণে আশ্চর্য না হয়ে পারি না। এই বিশ্রী জিনিসটার প্রতি তার এত টান কিসের!
ফকিরটা যেতে না যেতেই এক হকার এসে শুরু করলো তার তোষামুদে বক্তৃতা। কথা বলা যে লোক ঠেকানোর এবং ঠকানোর জন্য খুবই কার্যকরী এক শিল্প তা এই হকার এবং রাজনীতিবিদদের বক্তব্য শুনলে বোঝা যায়। একজন চকলেট বিক্রেতাও আমাদের কামরায় প্রবেশ করল। ‘ভাই-বোনেরা আমার, আমি অন্ধ মানুষ, চকলেট বিক্রি করি পেট চালাই, সবাই একটি করে চকলেট কিনি সাহায্য করেন’বলে বিক্রেতা এদিক ওদিক হাত বাড়িয়ে দিল। লোকটিকে আমার বেশ ভাল লাগল।
এমনিতেই মানুষ অলস জাতের প্রাণী; বসার অবকাশ পেলেই ঘুমানোর চিন্তা করে। কিন’ এই মানুষটার কণ্ঠে কি যেন একটা পেলাম যা আমাকে…। সৃষ্টিকর্তা লোকটির দেখার শক্তি কেড়ে নিলেও মনের শক্তি কেড়ে নিতে পারেননি। সৃষ্টিকর্তার এই পরাজয়ে স্বয়ং সৃষ্টিকর্তাও খুশি হবেন নিশ্চয়।
৩
ট্রেন সমান মমতায় সকলকে তার বুকে আশ্রয় দিয়েছে। ট্রেনের কাছে জাত ধর্ম ভেদাভেদ নেই। হয়ত নিজের কোন জাত ধর্ম নেই বলে…! আর আমরা মানুষেরা দশ জন একজায়গায় হলেই একটি শ্রেণী গড়ে তুলি। তাইতো কৌশলে ট্রেনের ভেতরটাকে বিভক্ত করা হয়েছেজ্জ প্রথম শ্রেণী, দ্বিতীয় শ্রেণী, তৃতীয় শ্রেণীতে। দারিদ্র্যকে এত ভয় কিসের! সমাজের সকলে যদি সত্যি-সত্যিই চাই তাহলে পরবর্তী প্রজন্ম দারিদ্র্যকে দেখতে জাদুঘরে কোন সন্দেহ নেই তাতে। কিন’ দারিদ্র্য আর ধর্ম এই দুটো জিনিস না থাকলে যে ওদের বড় ধরনের সর্বনাশ হয়ে যাবে! মানুষ হয়ে মানুষকে ঠকানোর এর থেকে মস্ত হাতিয়ার যে এখানো আবিষ্কার হয়নি।
পিছনের কামরায় একজন তিলের খাজা বিক্রেতা একটা বাচ্চা মেয়ের পাশে অনেকক্ষণ থেকে ঘুর ঘুর করছে। মেয়েটির বোধহয় তিলের খাজা পছন্দের না। বিক্রেতা আমাদের কামরাই চলে আসলো। নেবেন ভাই, কুষ্টিয়ার বিখ্যাত তিলের খাজাজ্জলোকটি গড় গড় করে বেশ কয়েবার বলল। আমি লোকটাকে চিনি, বাড়ি ফরিদুপুরে। তিলের খাজাও ওখানকার। আমার চোখে চোখ পড়তেই দ্রুত অন্য বগিতে চলে গেল। একবার এক ব্যক্তিকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, পৃথিবীর কোন জিনিসটা আপনার দেখতে সব থেকে বেশি ভালো লাগে? অপরাধ ধরা পড়ার পর একজন অপরাধীর চেহারাজ্জউত্তরে ভদ্রলোকটি বলেছিলেন।
ট্রেনটি এইমাত্র পাকশি ব্রিজের ওপর পা রাখলো। ট্রেনের ক্ষেত্রে পা না বলে চাকা বলাই ভালো। তবে আজ এ personification টা বেশ গুরুত্ব বহন করে; অন্তত আমার কাছে। এখন বর্ষাকাল। নদীর ভরা যৌবন উথলে পড়ছে। প্রকৃতিকে যারা ভোগ করতে জানে তাদের কাছে এ এক অসম্ভব শুভ সময়। ওয়ার্ডওয়ার্থ কিংবা জীবনানন্দ যদি আজ ট্রেনে থাকতেন আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি এখনই জন্ম হয়ে যেত বেশ কিছু কবিতার। আমার এই মুহূর্তেই ইচ্ছে করছে নদীর বুকে লাফিয়ে পড়ি। প্রকৃতির কাছে এর থেকে সুখের আত্মসমর্পণ আর হতে পারে না! উঁচুতে উঠলেই মানুষের মনে এক ধরনের লাফ দেয়ার প্রবণতা কাজ করে। দর্শনের ভাষায় একে বলা হয়, Antipathitic-Sympathy, Sympathetic-Antipathy। শেষ পর্যন্ত লাফ আর দেয়া হল না। ট্রেন এখন স্থলদেশে। এখানে লাফ দেওয়ার মাঝে কোন রোমান্টিকতা নেই। মাঝখান থেকে শুধু শুধু দেহের হাড়গোড়গুলো হারানো। ট্রেন এখন ঈশ্বরদীর খুব কাছাকাছি। ওখানে গিয়ে ট্রেনটি কিছুটা সময় জিরিয়ে নেবে। সেই সাথে আমি চা গেলার কাজটি সেরে নেবো। চা খেলে নাকি বুদ্ধি খোলে এই কথাটি কবে যেন শুনেছিলাম! কথাটি শোনার পর থেকে চা পান করার পর নিজেকে বেশ বুদ্ধিমান মনে হয়।
৪
কিছুক্ষণের মধ্যে ট্রেন ঈশ্বরদী থেকে রাজশাহী অভিমুখে ছেড়ে যাবে। আমার সামনে বসা জুটিটা এখন বাদাম খাচ্ছে। আমার দূর সম্পর্কের এক মামা বাদামকে বলতেন প্রেমফল; দুজনার খাওয়ার ভঙ্গিমা দেখে আজ তার কথার সত্যতা মিললো। মহিলাটি আমার দিকে বাদামের ঠোঙাটি এগিয়ে ধরে বললেন, নেন ভাই বাদাম খান। আমি বিনয়ের সাথে প্রত্যাখ্যান করতে গেলে পাশের জনটি বলল, আপনার আপা এত করে যখন বলছে নেন না। কয়েকটা বাদাম ঠোঙা থেকে উঠিয়ে নিলাম। না এরা বোধহয় বিবাহিত না। বিবাহিত হলে লোকটি ‘আপনার আপা’না বলে বলত ‘আপনার ভাবি’; এক্ষেত্রে সচরাচর এমনটিই ঘটে। এখন মনে হচ্ছে আমার দ্বিতীয় ধারণাটাই ঠিক।
একটা অল্প বয়স্কা মেয়েকে কয়েকজন ধরে আমাদের বগিতে উঠালো। মেয়েটি চিৎকার দিয়ে বুক চাপড়িয়ে কাঁদছে। কান্নার ভাষা বোঝার চেষ্টা করলাম। বিশেষ কিছু বোঝা যাচ্ছে না তবে প্রতিটি বাক্যের আগে অথবা পিছনে মা শব্দটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। মেয়েটির মা মারা গেছে বিষয়টি বুঝতে বেশি সময় লাগেনি। বেশ দুঃখের কথা, কিন’ আমি কেমন জানি একটা স্বস্তি অনুভব করলাম। যে মারা গেছে সে অন্য কেউ, আমি না। ইভান ঈলিচের মৃত্যুর সংবাদ পড়ে তার বন্ধুদের এমনটি মনে হয়েছিল। মেয়েটি কাঁদছে বিরতিহীন।
আসে-পাশের সকলে মেয়েটির দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দেখে পাশের মা গোছের মহিলাটি মেয়েটির খসে পড়া বুকের কাপড় ঠিক করে দিলেন। আমার যখন মা মারা গিয়েছিল আমিও তখন এমনি করে কেঁদেছিলাম, আমার নানি মারা গেলে মা কেঁদেছিল; এ কান্না বংশ পরম্পরায় হয়ে আসছে, খুবই স্বাভাবিক, খুবই চিরন্তন এই কান্না। একেক কান্নার আপিল আবার একেক রকমের হয়; শিক্ষকদের পিটুনি খেয়ে যে কান্না তাতে থাকে অপমান, বাবার বকুনি খেয়ে যে কান্না থাকে তাতে থাকে জেদ, মার বকা খেয়ে যে কান্না তাতে থাকে অভিমান, স্বামীর বকুনি খেয়ে যে কান্না তাতে থাকে জ্বালা, আর আপনজন হারানোর যে কান্না তাতে থাকে বিস্ময়কর আবেদন। যে আবেদনে সাড়া দিতে গিয়ে এখন ট্রেনের এই বগিতে বেশ মেঘলা আবহাওয়া বিরাজ করছে। সন্ধ্যার সমস্ত নিরবতাকে ভেদ করে মানব জীবনের সবচেয়ে অসহায়ত্বটি ট্রেনের কামরায় কামরায় উত্তর খুঁজে ফিরছে। বিশ্বাসীরা অস্থির হয়ে উঠেছে, সংশয়বাদীরা নড়ে চড়ে বসছে, অবিশ্বাসীরা চুপচাপ বসে আছে।
ট্রেনটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের সামনে এসে থামলো; এখানে থামবার কথা না, বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটা ছাত্র চেন টেনেছে। আমার পাশের লম্বুটি প্রথমবারের মত রাজশাহী আসছে, ও ভেবেছে এটাই রাজশাহী স্টেশন!
ট্রেন স্টেশনে প্রবেশ করছে; অল্পক্ষণের মধ্যে আমরা নেমে পড়বো। আমার জায়গায় অন্য কেউ আসবে, অন্যভাবে ভাববে সবকিছু, বাস্তবের চরিত্রগুলো কিছুক্ষণের জন্য হয়ে উঠবে গল্প জগতের বাসিন্দা।
মাস কতক পরে কুষ্টিয়ার সোনালী বাজারে আমার সামনে বসা লোকটির সাথে দেখা হয়েছিল। আমি জানতে চেয়েছিলাম, আপা কেমন আছে? ‘ও এখন শ্বশুড় বাড়ীতে, ভালো আছে’ লোকটি হাসতে হাসতে বলেছিল। তাদের সম্পর্কটা শেষ পর্যন্ত রহস্যই থেকে গেল।
মোজাফফর হোসেন,
প্রায় একই লেখা দ্বিতীয়বার একই ই-পত্রিকায় প্রকাশ না করলেই কি নয়।
পড়াতে গিয়ে দেখলাম আগেই কোথায় যেন পড়েছি।পরে আপনার প্রোফাইল এ গিয়ে দেখলাম আমার অনুমানই সঠিক। মে মাসেই একবার প্রকাশ করেছিলেন।
দুঃখিত এমন অনাকাঙ্ক্ষিত মন্তব্যের জন্যে।
@গীতা দাস,
আমিও দেখেছি। কিন্তু সেই আগের লেখাটি অপেন হলো না।
যাই হোক আমার পড়া ছিলনা। ভালো লাগল।
@আফরোজা আলম,
সুস্থ হয়ে উঠেছেন দেখছি :rose: । ফানুস এর মন্তব্যগুলোর জবাব দেবার জন্য কি প্রস্তুতি নিচ্ছেন?
@গীতা দাস, there were some problem, so i did it again, anyway, hope, next time i will careful about that…thanks a lot
এক নি:শ্বাসে পড়ে ফেললাম চার অংশে ভাগ করা ট্রেন জার্নি। পড়ার সময় মনে হচ্ছিল, আমিও ভ্রমণ করছি লেখকের সাথে। ট্রেনের মধ্যে ছোট ছোট ঘটনাগুলো চমৎকারভাবে বর্ণনা করেছেন সে সাথে রয়েছে দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গী।
আমরা প্রতিদিনই তো কত ভ্রমণ করি, কিন্তু এভাবে কতজনই বা লিখতে জানি।
হুজুরকে :guli:
আল্লাহকে :clap2:
ট্রেনের মধ্যে সামনে বসা যুবককে :brokenheart:
আর লেখককে :rose2:
@মাহফুজ, thanks a lot