বিবর্তন নিয়ে চারটি ভ্রান্ত ধারণা
মূল : চার্লস সুলিভান ও ক্যামেরন ম্যাকফারসন স্মিথ
অনুবাদ : অভীক দাস
আমেরিকার Committee for the Scientific Investigation of Claims of the Paranormal প্রতিষ্ঠানটি সংক্ষেপে CSICOP নামেই বেশি পরিচিত। অতিপ্রাকৃত-অলৌকিক দাবিকৃত বিভিন্ন ঘটনা-বিষয়ের উপর বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান পরিচালনা করার জন্য CSICOP -এর রয়েছে জগতজোড়া খ্যাতি। প্রতিষ্ঠানটির মুখপত্র Skeptical Inquirer -এরও দীর্ঘদিন ধরে জনমানসে বিজ্ঞানমনস্কতা, যুক্তিবাদিতা প্রচার-প্রসারে রয়েছে ভূয়সী ভূমিকা। Charles Sullivan and Cameron McPherson Smith -এর লেখা Getting the Monkey off Darwin’s Back: Four Common Myths About Evolution শিরোনামের আলোচ্য প্রবন্ধটি লেখকদ্বয়ের অনুমতিক্রমে Skeptical Inquirer–এর মে-জুন, ২০০৫ (ভলিউম ২৯, সংখ্যা ৩, পৃষ্ঠা ৪৩-৪৮) থেকে অনূদিত। লেখাটির ওয়েব ঠিকানা : http://www.csicop.org/si/show/getting_the_monkey_off_darwins_back । আলোচ্য প্রবন্ধটিতে উল্লেখিত ‘বিবর্তন নিয়ে চারটি ভ্রান্ত ধারণা’র সাথে আরও ছয়টি ভ্রান্ত-ধারণা যোগ করে পরবর্তীতে বিস্তৃত পরিসরে লেখকদ্বয় ‘The Top Ten Myths About Evolution’ (Prometheus Books, 2006), ২০০৬) নামের বই রচনা করেছেন। বইটির ওয়েব এড্রেস : http://www.toptenmyths.com ।
Charles Sullivan ইংরেজি এবং দর্শন শাস্ত্রে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেছেন এবং আমেরিকার Portland Community College শিক্ষক। প্রত্নতত্ত্বে (archaeology) ডক্টরেট Cameron McPherson Smith পোর্টল্যান্ড স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক।
——————————————————————————–
চার্লস ডারউইনের ‘অরিজিন অব স্পিসিজ’ প্রকাশিত হবার ১৫০ বছর পরেও বিবর্তন তত্ত্ব জনসাধারণের কাছে ব্যাপক পরিসরে ভুলভাবে উপস্থাপিত হয়ে আসছে। কিন্তু বিবর্তন কোনো কম গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব নয় কিংবা বোঝার জন্য জটিল কোনো বিষয়ও নয়। অথচ সদ্য পরিচালিত জরিপ থেকে দেখা যাচ্ছে, অর্ধেকের বেশি আমেরিকানরা মনে করেন, মানুষ তার বর্তমান কাঠামো নিয়ে আজ থেকে দশ হাজার বছর আগে সৃষ্টি হয়েছে।( Brooks 2001, CBS 2004)। একই সংখ্যার জনসাধারণ মানুষের অন্য প্রজাতির প্রাণী থেকে বিবর্তিত হওয়ার তত্ত্বটিকে ভুল বলে মনে করেন। (National Science Board 2000)।
সাক্ষ্য-প্রমাণ থেকে স্পষ্ট, শুধু মনুষ্য প্রজাতিই নয়, কোনো প্রজাতিই হঠাৎ করে আসেনি। প্রতিটি জীবেরই বিবর্তনের ইতিহাস রয়েছে এবং এই ইতিহাসগুলো প্রত্যেকেই একে অপরের সাথে জটিলভাবে বিন্যস্ত। আমরা যদি এই জটিল বিবর্তনের ধারা বুঝতে না পারি, তাহলে আমাদের নিজেদের এবং অন্য প্রজাতির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হব। আমরা কি জিনগতভাবেই ‘বিশেষায়িত’ মানুষ? আমাদের খাদ্যশষ্য কেমন হওয়া উচিৎ? কিংবা বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে মানব জীবনে কি রকম প্রভাব ফেলবে? এই সকল প্রশ্নের উত্তর এবং অনেক মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্তও সঠিকভাবে তুলে ধরা সম্ভব হবে না, বিবর্তনের প্রক্রিয়াটি যদি আমরা ভালো করে অনুধাবন করতে না পারি।
গণমাধ্যমগুলোতে বিবর্তন প্রক্রিয়াকে যেভাবে তুলে ধরা হয়, তা পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় এতে প্রচুর গলদ রয়েছে; যেমন বিবর্তন সম্পর্কে সঠিক ব্যাখ্যার অভাব। এই প্রবন্ধে আমরা সাধারণভাবে ব্যবহৃত এরকম কয়েকটি ‘শব্দগুচ্ছ’ চিহ্নিত করেছি, যথা : ‘বিবর্তন বা ক্রমবিকাশ শুধুই একটি থিওরি’, ‘উন্নতির সোপান’, ‘মিসিং লিঙ্ক’, ‘শুধু শক্তিমানরাই টিকে থাকে’। এই শব্দগুচ্ছগুলো আসলে বিকৃতভাবে উপস্থাপনের ক্ষেত্রে শীর্ষে এবং সাধারণ দৃষ্টিতে ভুলের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ভুল। শব্দগুচ্ছগুলো অনেক পুরনো অর্থ ধারণ করে, শতাব্দী প্রাচীন ধারায় জীববিজ্ঞানকে ব্যাখ্যা করে; যা অনেকটা অপরিপক্কভাবে চিত্রণের চেষ্টা করে বিবর্তন কী এবং কীভাবে কাজ করে।
বিবর্তন বা ক্রমবিকাশ শুধুই একটি থিওরি
আপনি হয়তো শুনেছেন, বিবর্তন সম্পর্কে কেউ এই বলে চ্যালেঞ্জ করছে ‘এটি শুধুই একটি থিওরি’? জর্জিয়ার The Cobb County School District ঠিক এই কাজটিই করেছে। তারা স্কুলের জীববিজ্ঞানের পাঠ্য বইয়ে ‘জীবনের উৎসের আলোকে বিবর্তন শুধু একটি থিওরি, সত্য নয়’ এমন অতিরিক্ত বক্তব্য জুড়ে দিয়েছে(১). এমন ধরনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ‘থিওরি’ শব্দটি নিয়ে দুটি ভিন্ন ধরনের সমস্যার উদ্ভব ঘটে। সাধারণের বহুল ব্যবহারে ‘থিওরি’ হচ্ছে ‘অপ্রমাণিত অনুমানমাত্র’; যেমন রাতের আকাশে আলোর রেখা থেকে যেনতেনভাবে ভিনগ্রহের প্রাণীর মহাকাশযান বলে বোঝাবার চেষ্টা। কিন্তু যখন বিজ্ঞানীরা ‘থিওরি’ শব্দটি ব্যবহার করেন, তখন তারা অবশ্যই থিওরি শব্দের মাধ্যমে যৌক্তিক, পরীক্ষিত, সর্বসমর্থিত কোন ব্যাখ্যার সহিত কোনো ফ্যাক্টকে উপস্থাপন করেন(২)। এ আলোকে বলা যায়, বিবর্তন হল অভিকর্ষ তত্ত্ব বা পদার্থ-রসায়ন বিজ্ঞানের এই ধরনের আরো পরীক্ষিত-বিজ্ঞানসম্মত তত্ত্বের ন্যায় একটি যথেষ্ট ব্যাখ্যাসমৃদ্ধ তত্ত্ব। যদিও এ কথা সত্য বিবর্তনের অনেক সাক্ষ্যই পদার্থ ও রসায়ন বিজ্ঞানের মতো গবেষণাগারে পরীক্ষণের মাধ্যমে অর্জিত হয়নি, যেমনটা হয়নি মহাকাশ-বিজ্ঞান এবং ভূতত্ত্বের ক্ষেত্রে।
একজন ভূতাত্ত্বিক কখনোই সময়ের পিছন দিকে গিয়ে পৃথিবীর প্রথম দিককার বহিরাবরণের গঠন দেখে আসতে পারবেন না, বা মহাকাশ-বিজ্ঞানী যেমন পারবেন না একটি নক্ষত্রের কৃষ্ণ গহ্বরে পরিণত হওয়া প্রত্যক্ষ করতে। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে এই বৈজ্ঞানিক থিওরি বা তত্ত্বগুলো একেবারে ‘অপ্রমাণিত অনুমান’। কিছু বৈজ্ঞানিক থিওরি রয়েছে, যেগুলো ফ্যাক্টকে খুব স্পষ্টভাবে উপস্থাপন করতে পারে। জীববিজ্ঞানে ‘বিবর্তন তত্ত্ব’ ব্যতীত একটি বৈজ্ঞানিক তত্ত্বও নেই যা বিবর্তনের চেয়ে বেশি ভাল ব্যাখ্যা করতে পারে। জীববিজ্ঞানী থিওডোসিয়াস ডবঝানস্কি (Theodosius Dobzhansky) এই বিষয়টিই খুব সুন্দর করে উপস্থাপন করেছেন : ‘বিবর্তনের আলো ব্যতীত জীববিজ্ঞানে কোন কিছুই অর্থবোধক নয়।’
অনেকেই ফরাসি প্রকৃতিবিজ্ঞানী জ্যাঁ ব্যাপতিস্তে ল্যামার্ক (১৭৪৪-১৮২৯)-এর প্রতিষ্ঠিত ল্যামার্কবাদের সাথে ‘বিবর্তন তত্ত্ব’-কে গুলিয়ে ফেলেন। এক দিক দিয়ে ল্যামার্ক-ও বিবর্তনবাদী ছিলেন কারণ তিনি মানতেন, নতুন প্রজাতিসমূহ প্রাচীন প্রজাতি থেকে বিবর্তিত হয়েছে কিন্তু তিনি প্রজাতির পরিবর্তনে প্রয়োজনীয় সময় এবং জৈববিবর্তনের পদ্ধতি নির্ণয়ে ভুল করেছিলেন। ল্যামার্ক জৈববিবর্তনের পদ্ধতি সম্পর্কে ভেবেছিলেন- একটি জীবের জীবনকালে পরিবেশ থেকে অর্জিত বৈশিষ্ট্য পরবর্তী প্রজন্মে প্রবাহিত হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে তাঁর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উদাহরণ ‘জিরাফ’। ল্যামার্কের মতে, জিরাফের পূর্বপুরুষদের তুলনামূলক ছোট গলা ছিল এবং এরা উঁচু গাছের পাতা খেতে গিয়ে গলাটাকে লম্বা করার চেষ্টা করত। জিরাফের এই উঁচু ডাল থেকে পাতা খাওয়ার প্রবণতা পরবর্তী প্রজন্মে ছড়িয়ে যায় এবং বংশধরেরা লম্বা গলা লাভ করে। এমন কী, ল্যামার্ক আরো মনে করতেন, নতুন প্রজাতির বিবর্তন অল্প কিছু প্রজন্মে বা এক প্রজন্মেই হওয়া সম্ভব। ঐ সময়ে ল্যামার্কের ধারণা হয়তো ন্যায়সঙ্গত ছিল কিন্তু বর্তমানে এই ধারণাগুলি ভুল প্রমাণিত হয়েছে।
অর্জিত বৈশিষ্ট্য বংশধরদের মধ্যে প্রবাহিত হয় না(৩)। আপনি যদি কোন দুর্ঘটনায় আপনার হাত হারান, তবে আপনার পরবর্তী প্রজন্ম হাতছাড়া অবস্থায় জন্ম লাভ করে না। পেশি শক্ত করতে বা বৃদ্ধি করতে আপনি যদি ভার উত্তলন করেন, তবে আপনার উত্তরসূরির কেউই সেই শক্ত পেশির বৈশিষ্ট্য জন্ম থেকেই লাভ করে আসবে না। ইহুদিরা (মুসলমানরাও) শত শত প্রজন্ম ধরে খৎনা প্রথা মেনে চলছে কিন্তু আজ পর্যন্ত এই অর্জিত বৈশিষ্ট্য জৈবিকভাবে প্রবাহিত হওয়ার কোন লক্ষণ (ছেলে সন্তানের খৎনা করা লিঙ্গ নিয়ে জন্ম) পাওয়া যায়নি।
আধুনিক বিবর্তন তত্ত্ব (নব্য-ডারউইনবাদ) (৪) অনুসারে জিরাফের কিছু পূর্বপুরুষের ‘রেন্ডম মিউটেশনের’ মাধ্যমে তুলনামূলক লম্বা ছিল। এরা তাদের প্রজাতির অন্য প্রাণীদের তুলনায় উঁচু ডালের পাতা খেতে পারত, এর ফলে তারা তুলনামূলক বেশি স্বাস্থ্যবান এবং দীর্ঘ জীবন লাভ করে। এভাবে প্রজাতির অন্য জীবের চেয়ে লম্বা গলার জিরাফেরা বেশি সুবিধা ভোগ করে এবং পরবর্তী প্রজন্মে লম্বা গলার জিন প্রবাহিত করে। একটি নতুন প্রজাতির বৃদ্ধিজনিত পরিবর্তন বা লম্বা গলার জিরাফের উদ্ভবের জন্য দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন।
জিরাফ অথবা অন্য কোন জীবের বিবর্তনকে একটি মাত্র প্রক্রিয়ার আলোয় দেখা ঠিক হবে না। বিবর্তনের ধারণাকে দাঁড় করাতে হলে কমপক্ষে তিনটি স্বতন্ত্র প্রক্রিয়ার প্রয়োজন; যথা রেপ্লিকেশন বা প্রতিলিপিকরণ, ভ্যারিয়েশন বা প্রকারণ, এবং সিলেকশন বা নির্বাচন। রেপ্লিকেশন হচ্ছে প্রয়োজনীয় বংশবিস্তার, প্রকারণ বলতে বোঝায় বংশধরদের মধ্যে মিউটেশন বা পরিব্যক্তির মাধ্যমে র্যা ন্ডম পরিবর্তন উদ্ভব হওয়া, যাতে তাদের পিতা-মাতার সাথে পার্থক্য সূচিত হয়। নির্বাচন বলতে বোঝায়, যে প্রক্রিয়ায় কোন জীব পরিবেশের সাথে ভালোভাবেই অভিযোজন ঘটাতে পারে, টিকে থাকতে পারে এবং তাদের জিনকে পরবর্তী প্রজন্মে পৌঁছে দিতে পারে। এই তিনটি প্রক্রিয়া প্রতিনিয়তই আমাদের প্রকৃতিতে ঘটে চলছে এবং এদের সম্মিলিত ক্রিয়াকেই আমরা বিবর্তন (ক্রমবিকাশ) বলে অভিহিত করে থাকি।
এখন যদি নতুন কোন বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব জীববিজ্ঞানের বিষয়গুলোকে বিবর্তন তত্ত্ব থেকে আরো ভালভাবে ব্যাখ্যা করতে পারে, তবে অবশ্যই ল্যামার্কবাদের মত নব্য-ডারউইনবাদও পুরোপুরি মুছে যাবে। সৃষ্টিবাদ এবং বুদ্ধিদীপ্ত নক্সা (Intelligent Design) বৈজ্ঞানিক কোনো তত্ত্ব হিসেবে প্রতিযোগিতা করার যোগ্যতা রাখে না কারণ এগুলো বৈজ্ঞানিক-প্রক্রিয়াধীন নয়। এরা জীববিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে প্রাকৃতিক ব্যাখ্যা প্রদান করতে পারে না বরঞ্চ অতিলৌকিক ব্যাখ্যা হাজির করে, যা কখনই বিজ্ঞানসম্মতভাবে পরীক্ষা করা যায় না। নব্য-ডারউইনবাদ বিবর্তনের সত্যতার ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক ব্যাখ্যা প্রদান করে এবং অতিলৌকিক বক্তব্য বাতিল করে।
বিবর্তন তত্ত্ব সম্পর্কে আলোচনা করার সময় আমাদের অত্যন্ত প্রয়োজনের সহিত বুঝতে হবে, কেন বিবর্তনকে ‘শুধুমাত্র একটি থিওরি’ বলে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। বিবর্তন অবশ্যই একটি তত্ত্ব যার স্বপক্ষে রয়েছে প্রচুর সাক্ষ্য-প্রমাণ আর রয়েছে জীববিজ্ঞানের বিষয়গুলিকে প্রাকৃতিকভাবে ব্যাখ্যা করার বিপুল ক্ষমতা যা জীববিজ্ঞানের অন্য কোন তত্ত্বে নেই।
অগ্রগামিতার সিঁড়ি
‘বিবর্তন’ শব্দটি অনেক সময় উন্নতি বা অগ্রগতি অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সাধারণেরা অনেক সময় আলাপ-আলোচনায় নির্দিষ্ট সাংস্কৃতিক পরিবর্তন বোঝাতে ‘নৈতিক বিবর্তন’ শব্দ ব্যবহার করে থাকেন; যেমন নারী অধিকারের স্বীকৃতি ধীরে ধীরে বাড়তে থাকা। আধুনিক প্রযুক্তিকে যখন প্রাচীনকালের শিকারির অস্ত্রের সাথে তুলনা করা হয়, তখন বলা হয় ‘প্রযুক্তির বিবর্তন’। আসলে এক্ষেত্রে ‘বিবর্তন’ বলতে এমন কিছু বোঝানো হচ্ছে যা নির্দেশ করে তুলনামূলক উন্নত পর্যায়ে অগ্রগতি লাভ করা। এই অজৈবিক বিবর্তনের বহুল প্রচারে কারণে মানুষ জৈববিবর্তন সম্পর্কেও ভাবে, ‘নীচু থেকে উঁচু স্তরে গমনের কোন সিঁড়ি হিসেবে।’
বিবর্তনের সিঁড়ি ধারণার মূলে রয়েছে প্রাচীন গ্রিক এবং মধ্যযুগীয় ইউরোপের বিশ্ব-প্রকৃতি সম্পর্কে ধারণায়। এই ধারণাকে অত্যন্ত স্পষ্টভাষায় প্রকাশ করে ‘গ্রেট চেইন’; যা পঞ্চদশ থেকে অষ্টাদশ শতকব্যাপী ইউরোপে সবচেয়ে প্রভাব বিস্তারকারী মতবাদ হিসেবে পরিচিত ছিল। গ্রেট চেইন-এর মূল বিষয়গুলো এরকম : ঈশ্বর এবং তার সৃষ্টির একটি পদক্রম (hierarchy) রয়েছে, যার একেবারে নীচে রয়েছে সবচেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ বস্তু বা জীব আর একদম শীর্ষে রয়েছেন ঈশ্বর নিজে। নীচ থেকে উপরের ক্রমটি অনেকটা এভাবে সাজানো : শিলা, খলিজ, উদ্ভিদ, প্রাণী, মানুষ, দেবদূত, ঈশ্বর।
গ্রেট চেইন-এর এই ধারণাটি মোটেই বিবর্তনকে সামনে রেখে তৈরি করা হয়নি। ঐ সময় বদ্ধমূল বিশ্বাস ছিল ঈশ্বর বহু বছর আগে প্রত্যেক জীবকে একেবারে নিখুঁতরূপে আধুনিক গঠনে সৃষ্টি করেছেন। গ্রেট চেইনকে বর্ণনা করা যায় শ্রেণীবিন্যাসের একটি পদ্ধতি হিসেবে এবং ডারউইনিয় বিপ্লবের আগেই এটি জনসমর্থন হারাতে থাকে। পরবর্তীতে ডারউইনের তত্ত্ব ও এর পরিমার্জিত রূপ গ্রেট চেইনের সকল শাখা-প্রশাখা ভেঙে গুঁড়িয়ে ফেলে।
আধুনিক জীববিজ্ঞানে বিবর্তন প্রকৃতির ঊর্ধ্বমুখী উদ্দেশ্যের পানে কোনো অগ্রগামিতাকে নির্দেশ করে না(৫)। জিনের পরিব্যক্তি (mutation) সম্পূর্ণ দৈবচয়নের (random) ভিত্তিতে হয়ে থাকে।
গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের ডারউইনের ফিঙ্গে (Finch) পাখির ডিএনএ নিয়ে পরিচালিত একটি গবেষণায় (Petren et al. 1999) অত্যন্ত চমৎকারভাবে জানা গেছে, ‘কেন অগ্রগামিতা বা উন্নতির ধারণা বিবর্তনের সাথে মেলে না।’ গবেষণার ফলাফল হতে দেখা যায়, প্রথম যে ফিঙ্গে পাখিগুলো, ওয়ার্বলার ফিঙ্গে (Certhidea olivacea) এই দ্বীপপুঞ্জে আসে, যাদের তীক্ষè ঠোঁট তাদেরকে ভাল পতঙ্গভূক বানিয়েছে। ওয়ার্বলার ফিঙ্গে থেকে পরে কিছু সংখ্যক ফিঙ্গে পাখি বিবর্তিত হয়েছে, যাদের মধ্যে একটি হল Geospiza ভূমি ফিঙ্গে, তাদের বড় ও প্রশস্ত ঠোঁট বীজ ভাঙার উপযুক্ত; আরেকটি Camarhynchus গেছো ফিঙ্গে পাখি, তাদের ভোঁতা ঠোঁট গাছ-গাছড়া খাওয়ার জন্য খুব ভালভাবেই অভিযোজিত হয়েছে।
যদিও এই বীজ খেকো, গাছ খেকো ফিঙ্গে পাখিগুলো পতঙ্গভূক ফিঙ্গে পাখিগুলো থেকেই বিবর্তিত হয়েছে কিন্তু কোন বিবর্তনের সিঁড়ি অনুসারে পূর্বসূরিরা উত্তরসূরি অপেক্ষা উন্নত বা উচ্চশ্রেণীর নয়। গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জে ফিঙ্গে পাখিদের বিবর্তন প্রাথমিকভাবে খাদ্যসংস্থানের উপর ভিত্তি করে তাড়িত হয়েছে; যেমন ভূমির ফিঙ্গে পাখিরা বীজ, গাছের ফিঙ্গে পাখিরা গাছের বাকল এবং ওয়ার্বলার ফিঙ্গে পাখিরা পতঙ্গের উপর নির্ভরশীল। যদি গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জে কোন কারণে বীজের সংকট দেখা দিত, তবে কল্পনা করা যায় বীজভূক ফিঙ্গে পাখিরা এই দ্বীপপুঞ্জ থেকে বিলুপ্ত হয়ে যেত। অন্যদিকে ‘বেশ পুরনো প্রজাতি’ পতঙ্গভূক ফিঙ্গে পাখিরা আরো ভালোভাবে টিকে থাকত। অর্থাৎ গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের ফিঙ্গে পাখির বিবর্তনের আলোকে বলা যায়, ‘উঁচু’-‘নীচু’ ধারণাটি জৈববিবর্তনের সাথে মোটেই সম্পর্কিত নয়। পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতা বা অভিযোজন-ই প্রধান। প্রজাতি কিভাবে পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নেবে, সেটা আগে থেকে ভবিষ্যদ্বাণী করা সম্ভব নয়; যদি পরিবেশের কোন কারণে তীব্র পরিবর্তন ঘটে তবে যে অভিযোজন ক্ষমতা প্রজাতির টিকে থাকার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারত, সে অভিযোজন ক্ষমতা তখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে প্রযোজ্য নাও হতে পারে।
যদিও জীববিজ্ঞানীরা জৈববিবর্তনের ক্ষেত্রে ‘গ্রেট চেইন’ বা এই ধরনের অগ্রগামিতার সিঁড়ি’র ধারণাকে জোরালোভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন, তবে এই ধরনের ধারণা এখনো জনসংস্কৃতিতে ব্যাপক পরিসরে বিদ্যমান। একটি নির্ভুল সাদৃশ্যপূর্ণ ধারণা একটি ঝোপের মত হতে পারে, যা বিভিন্ন দিকে তার ডালপালা-শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে রয়েছে। বিবর্তনকে যদি এভাবে চিন্তা করা যায়, তবে উন্নতির ধারণার দ্বারা আমাদের বিভ্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেক কমে যাবে; কারণ একটি ঝোপের শাখা-প্রশাখা বিভিন্ন দিকে তিন মাত্রাতেই বৃদ্ধি পেতে পারে, এবং নতুন শাখা পুরনো শাখার কাছের গুঁড়ি হতে অধিক দূরবর্তী কোন গুঁড়ি সৃষ্টি হতে পারে। একটি সদ্য নতুন গজানো শাখা পুরাতন কোনো শাখা হতে বেরিয়ে এসেছে, যেমন প্রজাতিগুলো আরেকটি প্রাচীন প্রজাতি থেকে বিবর্তিত হয়েছে, এর অর্থ এই নয় যে তা কোনো অগ্রগতি বা উন্নতি নির্দেশ করে। প্রকৃতিতে টিকে থাকতে হলে প্রজাতিকে তার নিজের পরিবেশের সাথেই প্রয়োজনীয় অভিযোজন করে নিতে হবেই।
মিসিং লিঙ্ক
১৯৯৯ সালের ২২ এপ্রিল আমেরিকার ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায় একটি রিপোর্ট বেরিয়েছিল, “ফসিলগুলো হতে পারে মানুষের হারানো সূত্র।” ইথিয়োপিয়াতে আবিষ্কৃত ফসিল সম্পর্কে পত্রিকাটির ভাষ্য হচ্ছে : “…এটা হতে পারে মানুষের ঠিক আগের পূর্বপুরুষ।” আজ থেকে প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে বিখ্যাত প্রত্নতত্ত্ববিদ রবার্ট ব্রুম (Robert Broom) দক্ষিণ আফ্রিকার গুহা থেকে তাঁর আবিষ্কৃত ‘এপ-ম্যান’দের ফসিল নিয়ে একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেন, ‘Finding the Missing link’ (১৯৫০)। ঐ ১৯৫০ সাল থেকে পরবর্তীতে ‘মিসিং লিঙ্ক’ (হারানো সূত্র) নিয়মিত আবিষ্কার হচ্ছে। কিভাবে এই ‘হারানো সূত্র’ বারবার আবিষ্কৃত হচ্ছে?
এই সমস্যাটি একটি ভুল ‘রূপক’ শব্দের উপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে আছে। আমরা যখন ‘মিসিং লিঙ্ক’ শব্দটি বলি, তখন আমরা একটা রূপকার্থক শিকলের সাথে জড়িত হয়ে পড়ি : ‘যে শিকল অনেক পেছনের সময় পর্যন্ত বিস্তৃত। প্রত্যেকটি লিঙ্ক একেকটি প্রজাতিকে নির্দেশ করে; একেকটি জীবনের বৈচিত্রের সাথে সম্পর্কিত। প্রতিটি লিঙ্ক আরো দুটি লিঙ্কের সাথে সংযুক্ত; একটা ইঙ্গিত করে অতীতের, আরেকটি ভবিষ্যতের। একটি লিঙ্ক ভাঙার মাধ্যমে এই শিকলের অংশগুলোকে আলাদা করা যায়, মধ্যবর্তী সম্পর্কও ভেঙে দেওয়া যায়। আবার হারিয়ে যাওয়া লিঙ্ক খুঁজে পেলে পুনরায় সেই শিকল জুড়ে দেওয়া যায়। এই আকর্ষণীয় রূপকটির পক্ষে একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল, এটা বহু আকাঙ্ক্ষিত অধরা ‘মিসিং লিঙ্ক’ সন্ধানের নাটক চালু রাখতে সহায়তা করে।
কিন্তু এই রূপক শব্দটি যতটা আকর্ষণীয়, ঠিক ততটাই বিভ্রান্তিকর। জীববিজ্ঞানের টাইপোলজিক্যাল (typological) যুগ থেকে প্রচলিত ছিল- প্রতিটি প্রজাতি জীবনের ‘গ্রেট চেইন’-এর সাথে সংযুক্ত এবং প্রজাতিরা সবাই অপরিবর্তিত।’ জন রে (১৬২৭-১৭০৫) এবং ক্যারোলাস লিনিয়াস (১৭০৭-১৭৯৭) উভয়েই জীববিজ্ঞানে শ্রেণীবিন্যাসকরণের স্থপতি (তাঁদের কেউই বিবর্তনবাদী ছিলেন না), জীবিত প্রজাতিগুলোকে একটি ধারায় বর্ণনা করার চিন্তা করতেন। এটি এমন একটি ধারা, ঈশ্বর যা স্থাপন করে দিয়েছেন। (জন রে মনে করতেন, হুল ফুটানো পোকার ‘ঈশ্বর প্রদত্ত’ কাজ হল পাপীদের আঘাত করা)। কিন্তু একটি শিকলের সংযোগগুলো যেখানে ধারাবাহিকতাহীন, অপরিবর্তনীয়, এবং সহজেই সংজ্ঞায়িত করা যায়, সেখানে জীবের গ্রুপকে এভাবে সহজেই সংজ্ঞায়িত করা যায় না(৬)। সাধারণভাবে আমরা ‘প্রজাতি’ বলতে বুঝি, নিজেদের মধ্যে বংশবিস্তার করতে পারে এমন গ্রুপ, যা অন্য গ্রুপের সাথে বংশবিস্তার করে না বা করতে পারে না। কিন্তু প্রজাতি স্থির নয় (সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয়), আর এটাও নিশ্চিত করা কঠিন যে, কোথায় একটি প্রজাতির শেষ হবে এবং অন্য প্রজাতির উদ্ভব ঘটবে। এই কারণে অনেক আধুনিক জীববিজ্ঞানীরা একটি ‘পরম্পরাগত রূপক’কে বেশি গুরুত্ব প্রদান করে থাকেন, যেখানে ক্রম হতে একটি প্রাণীর রূপভেদ (shade) উদীয়মান অন্য প্রাণীর উদ্ভবের আলো হয়ে দেখা দেয়(৭)। জীবন এভাবে কোন সংযোগের পর সংযোগের মাধ্যমে সজ্জিত নয় বরং ক্রমান্বয়ে পরিবর্তিত হয়ে থাকে। এই শিকল (মিসিং লিঙ্ক) যতটুকু শুনতে ‘রূপকার্থ’; বাস্তবিক (অর্থগতভাবে) এটি অনেক অনেক বেশি দূরে।
অর্থাৎ ‘রূপকার্থে শিকল’ পুরোপুরি ভুল। আজকে আমরা জীববিজ্ঞান সম্পর্কে যা জানি, এই শব্দগুচ্ছ তার কোনটিই প্রকাশ করে না। বরং চারশত বছর আগে জীববিজ্ঞান সম্পর্কে যা জানা গিয়েছিল, তাই তুলে ধরে। তারপরও রূপকথাটির বর্তমানে টিকে থাকার কারণ হল এর সুবিধা; সহজেই বোঝায়, প্রজাতি হচ্ছে (জীবের মধ্যে) ‘অসংলগ্ন কতিপয় বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন কোন শ্রেণীমাত্র’, দুটি প্রজাতির মধ্যেকার পর্যায় নয়। স্কুলে থাকতে আমরা উদ্ভিদ ও প্রাণীর সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যগুলো পাঠ করেছি। সমস্যা এখানে নয়, সমস্যা তখন, বিবর্তনের প্রধান শাখাটি প্রায় প্রকাশ করতে পারে না যে, কোন সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যগুলো সময়ের সাথে পরিবর্তিত হবে।
ওয়াশিংটন পোস্টের প্রবন্ধ, কিংবা রবার্ট ব্রুমের বই, উভয় জায়গাতেই Australopithecenes -এর আবিষ্কার সম্পর্কে বলা হয়েছে; ওরা আফ্রিকান হোমিনিড(৮) আজ থেকে প্রায় ত্রিশ লক্ষ বছর আগে বাস করত। তারা বর্তমানের আধুনিক মানুষদের মত সোজা হয়ে হাঁটতে পারত, কিন্তু তাদের শিম্পাঞ্জি-সদৃশ বড় দাঁত ছিল এবং (শিম্পাঞ্জি-সদৃশ) ছোট মস্তিষ্ক। অস্ট্রেলোপিথেসিনরা শিম্পাঞ্জিদের ঢিবির উইপোকা খাওয়ার জন্য তৈরি ভোঁতা প্রান্তবিশিষ্ট সরু লাঠির তুলনায় জটিল অনুন্নত পাথরের হাতিয়ার তৈরি করতে পারত কিন্তু তা Homo গণ (Genus) অন্তর্ভুক্ত আমাদের পূর্বপুরুষদের তৈরি হাতিয়ারের তুলনায় সাদামাটাই ছিল। শরীরসংস্থানবিদ্যা আর আচরণের ভিত্তিতে দেখলে অস্ট্রেলোপিথেসিনদের ‘অর্ধ-মানব’ বলা যায়। এও মনে করা হয়, হয়তো অস্ট্রেলোপিথেসিনদের কিছু ভিন্ন জাতি থেকে Homo জিনাসের প্রথম দিককার পূর্বপুরুষ উদ্ভূত। ব্রুম সঠিক ছিলেন এবং ওয়াশিংটন পোস্টও; একটি ‘মিসিং লিঙ্ক’ সত্যিই খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল। নাম হচ্ছে Australopithecus । এই Homo গণের মতোই Australopithecus গণের অনেকগুলো প্রজাতি ছিল; এবং ঐড়সড় জিনাসের আগের ক্রম হিসেবে আলাদা করে Australopithecus জিনাসের ধারাবাহিকতাহীন কোন রেখা অঙ্কন করা সম্ভব নয়। আর ‘হারানো সূত্র’ (Missing link) গরংংরহম ষরহশ) শব্দের ব্যবহারের বদলে বরং বলা উচিত আমরা কিছু ‘ক্রম’ (grade) বা ‘রূপভেদ’ (shade) খুঁজে পেয়েছি(৯)।
আমরা আমাদের শব্দ ব্যবহারকে পরিবর্তন করে ‘রূপক’-এর ভুল প্রয়োগ থামাতে পারি। ক্লাসরুমের ভিতর, পাঠ্যবইয়ে, ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে আলোচনায়, প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আমাদের বলা শুরু করা উচিতআমরা ‘একটি হারানো সূত্র’ খুঁজছি, ‘হারানো সূত্রটি’ নয়। আরো ভালো হয় যে, আমরা ‘মিসিং লিঙ্ক’ (হারানো সূত্র) শব্দগুচ্ছটির স্থলে অন্য কোন নিখুঁত শব্দ ব্যবহার শুরু করি।
শুধুমাত্র শক্তিমানরাই টিকে থাকে
আজ হতে প্রায় দশ লক্ষ বছর আগে, বর্তমানে Gigantopithecus নামে পরিচিত বিশাল আকৃতির এপরা দক্ষিণ এশিয়ার বাঁশের বনে বিচরণ করত। এরা লম্বায় ৯ ফুট এবং ওজন ছিল ৬০০-১০০০ পাউন্ড, এবং বাঁশ ভাঙার জন্য এদের চোয়াল ছিল অনেকটা বর্তমানকালের চিঠি রাখার বাক্সের সমান। নিঃসন্দেহে এরা ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী প্রজাতি। কিন্তু আজকে এই Gigantopithecus এপদের রয়েছে দাঁত ও চোয়ালের কিছু ফসিল, যা জাদুঘরের ভল্টে সংরক্ষিত।
যদি শুধু শক্তিমানরাই টিকে থাকে, তবে কিভাবে Homo গণের (Genus)-এর অন্তর্ভুক্ত দ্বিপদী আদিমানবেরা এ Gigantopithecus এপদের তুলনায় অর্ধেক মাত্র শারীরিক কাঠামো নিয়ে একই সময় একই স্থানে জীবন ধারণ করেছিল? এই জীবদের মধ্যে কি কোন সংঘর্ষ হয়নি, যার ফলে এই সবল স্বাস্থ্যের অধিকারী এপদের বিনাশ ঘটে?
গতকালের দানবরা আজ জাদুঘরের নিদর্শন হতে পারে। যদি শুধু শক্তিশালী বা বলবানরা টিকে থাকে তবে কিভাবে এটা সম্ভব? মানুষ এখন হয়তো পৃথিবীতে রাজত্ব করতে পারে, কিন্তু কোনোভাবে যদি সকল যন্ত্রপাতি এবং তার মানসিক বিকাশ কেড়ে নেওয়া যায়, তবে এই মানুষেরা পৃথিবীতে সবচেয়ে অসহায় প্রাণীদের মতই হবে।
শক্তিমত্তা বিভিন্নভাবে পরিমাপ করা যায়। পেশিশক্তি একটি মাত্র ভিত হতে পারে, এবং মস্তিষ্ক হতেও পারে। কিন্তু জনমানসে ‘শক্তিমত্তা’র এই বিভিন্ন ধরনের পার্থক্যটি প্রায়ই বাদ পড়ে যায়। আমরা যখন ‘শক্তিশালী’, কিংবা ‘সবচেয়ে উপযুক্ত’ শব্দগুলো ব্যবহার করি তখন বেশির লোকই তৎক্ষণাৎ ভেবে বসে কতিপয় একক সত্ত্বার মধ্যে প্রতিযোগিতা; যারা কোনো বিবর্তনের মঞ্চে লড়াইয়ের জন্য মুখোমুখি হয়েছিল বেঁচে থাকতে এবং সঙ্গীর জন্য। শক্তিশালীরাই বাঁচে এবং তাদের জিন পৌঁছে দেয় পরবর্তী বংশধরদের কাছে আর পরাজিতরা তাদের বংশধরসহ বিলুপ্ত হয়ে যায়।
কিন্তু এই ধরনের ‘একটি স্থানে প্রতিযোগিতার একক লড়াইয়ের’ মনঃকল্পিত ধারণা খুবই সাধারণ মানের। বাস্তবে প্রত্যেক এককই ডজনেরও অধিক স্থানে ডজনেরও অধিক বাধা-বিপত্তির মুখোমুখি হতে হয়। হয়তো প্রতিটি জীবের একটার সাথে আরেকটার সরাসরি একটি প্রতিযোগিতা হচ্ছে, কিন্তু প্রতিদিনই এদের এক স্থান হতে অন্য স্থানে গমন করতে হয়। যদি নদী শুকিয়ে যায়, তবে পানি রক্ষার জন্য, তাপমাত্রা হঠাৎ কমে গেলে, তাপ রক্ষার জন্য (বেঁচে থাকতে হলে) আমাকে-আপনাকে নামতে হবে। নিরামিষ যা খাওয়া হয়, যদি এগুলোর স্বাস্থ্যগুণ পরবর্তীত হতে থাকে তবে বিপাকক্রিয়ার বহুমুখিতার মুখোমুখি হতে হবে।
অল্পকথায়, একটি ময়দানে এককের মধ্যে লড়াইয়ে যেমনটা বোঝানো হয়, ‘বেঁচে থাকার লড়াই’ ধারণাটি তার থেকে অনেক বেশি জটিল। টিকে থাকার জন্য প্রত্যেক জীবকে বিভিন্ন ফ্যাক্টর (খাদ্যের সংকট, বাসস্থানের সংকট, সীমিত সম্পদ, জনসংখ্যার আধিক্য ইত্যাদি)-এর সাথে সংগ্রাম করতে হয় এবং প্রায়ই একই সময়ে একাধিক ফ্যাক্টরের সাথে লড়াই হয়। জীববিজ্ঞানে এই ফ্যাক্টরগুলিকে বলে ‘Selective Pressures’।
‘Selective Pressures’ পরিবর্তিত হতে পারে। একটি সিলেক্টিভ প্রেসার একটি নির্দিষ্ট সময়ে জন্য হয়তো প্রবল চাপ সৃষ্টি করে বিবর্তনের ক্রম তৈরি করতে পারে, কিন্তু পরবর্তীতে এই সিলেক্টিভ প্রেসার দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। পরিবেশ যেখানে সর্বদাই পরিবর্তনশীল কোন প্রজাতিই সেখানে নিশ্চিত হতে পারে না, আগামী কোন কোন সিলেক্টভ প্রেসারের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হবে। এ ধরনের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ধারণায় সব প্রজাতিই পরিবেশের পরিবর্তন হওয়াকে বাধা দিতে চায়। (হরিণ কি কখনো বন্দুক আবিষ্কারের কথা ভেবেছিল?)। বিবর্তন সর্বদাই ক্রিয়াশীল; প্রজাতিকে অতীত ও বর্তমান পরিবশে অনুসারে আকার লাভ করে, কিন্তু কখনো ভবিষ্যৎ ‘দেখে’ না(১০)।
আমরা মানুষেরা এবং সকল জীব কোন একটি মাত্র ক্ষেত্রে সংগ্রাম করে বাঁচি না; আমরা বাঁচি নিয়ত পরিবর্তনশীল ও অকল্পনীয় রকমের জটিল বিশাল সিলেক্টিভ প্রেসারের জালের সাথে লড়াই করে। ‘টিকে থাকার লড়াই’ সাদামাটাভাবে জীবের নিকট সদস্যদের পরাজিত করা থেকে আরো ব্যাপক অর্থ ধারণ করে।
কেন বিবর্তন সম্পর্কে এই ধরনের একক লড়াইয়ের ‘উপকথা’ (myth) রয়ে যায়? এই প্রশ্নের উত্তর হয়তো পাওয়া যাবে রেনেসাঁস যুগের ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবাদের মূল্যবোধের মধ্যে; যা এখানে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করাটা জটিল বটে(১১)। কিন্তু ঊনবিংশ শতাব্দীর (হার্বাট স্পেনসার প্রণীত) ‘সামাজিক ডারউইনবাদ’ (Social Darwinism)-স্পষ্টই সম্পর্কিত। সামাজিক ডারউইনবাদীরা চার্লস ডারউইনের জৈববিবর্তনের মূল ধারণাগুলোকে মানবসমাজ এবং অর্থনীতির সাথে সংযুক্ত করেছেন। তাদের মতে, মানবসমাজের অপূর্ণতাগুলোকে সরিয়ে দেবার মাধ্যমেই কেবল প্রগতি আসবে এবং এটা প্রতিযোগিতার মাধ্যমেই সবচেয়ে বেশি সম্ভব। প্রতিযোগিতার বিষয়টাকে খুব সুন্দর করে ফুটিয়ে তোলা হয় হার্বাট স্পেনসারের সেই বিখ্যাত টার্ম দিয়ে : ‘Survival of the fittest’ (জোর যার মুল্লুক তার); যা প্রকাশ করে ইন্ডিভিজুয়ালদের মধ্যেকার প্রতিযোগিতাকে। লক্ষণীয় যে আজকালকার টিভি-রিয়েলিটি অনুষ্ঠানগুলোও এই রূপক শব্দমালায় ডুবে আছে; যেখানে টিকে থাকার ধারণায় নির্মম ব্যক্তিগত প্রতিযোগিতাই শ্রেয়তর।
বিবর্তন সম্পর্কে এই মিথ বা উপকথাকে ভেঙে দেওয়ার সবচেয়ে ভাল পন্থা হচ্ছে, সবাইকে এই শিক্ষা দেওয়া যে পেশিশক্তি দীর্ঘ সফলতার নিশ্চয়তা দেয় না। সত্যি বলতে, কোনো একক বৈশিষ্ট্যই তা দেয় না। আরো গুরুত্বপূর্ণ হলো, আমাদের বুঝতে হবে, দীর্ঘ সফলতার কেন একক কোনো চাবিকাঠি নেই? কারণ আমরা জানি না, আমাদের পরিবেশ কিভাবে-কখন পরিবর্তিত হতে যাচ্ছে। মানুষের ক্ষেত্রে সাফল্যের জন্য, টিকে থাকতে হলে একমাত্র আশা নমনীয় থাকা এবং অভিযোজন করা। এই অভিযোজন ক্ষমতাই হল প্রকৃত শক্তি, যা জেনেটিক ভ্যারিয়েশন থেকে আসে।
উপসংহার
সাধারণ মিথগুলোর উপর ভিত্তি করে বিবর্তনের যে চিত্র আমরা এঁকেছি, বলা যায় ‘বিভ্রান্তির এক মোজাইক’। বিভ্রান্তির এই প্রতিধ্বনি আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ; কারণ আমরা নিজেদের সম্পর্কে এবং পৃথিবীর অন্যান্য প্রজাতি সম্পর্কে কিভাবে ভাবি, আমরা বিবর্তনকে কিভাবে বুঝতে পারি তার সাথে সরাসরি সংযুক্ত। হয় আমরা নিজেদের জীবজগত থেকে ‘আলাদা’ করে দেখি পৃথিবী বিবর্তনের এক নাট্যমঞ্চ(১২) অথবা আমরা নিজেদেরকে দুনিয়া জুড়ে ঘটে চলা অনেক প্রজাতির সহবিবর্তনের সঙ্গী হিসেবে বিবেচনা করব। প্রথমটি তখনই ঘটবে যখন আমরা অপ্রচিলত এবং ভুল ব্যাখ্যার দ্বারা বিবর্তনকে বর্ণনা করে যাব। আর দ্বিতীয় যেটা সঠিক, প্রকাশ করবে ভাষার তুলনামূলক নির্ভুল ব্যবহার এবং গত ১৫০ বছরে জীববিজ্ঞান হতে কি শিখেছি তা স্বীকার করার মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠিত হবে(১৩)।
বিবর্তন সম্পর্কে এই সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে চলতে গেলে অবশ্যই বিবর্তন কি, বিবর্তন কিভাবে ঘটে ব্যাখ্যা করতে ভাষা ও শব্দের সঠিক ব্যবহার করতে হবে।
নোট
১. জীববিজ্ঞানের বইয়ের উপর একটি স্টিকার লাগানো হয়েছে, যেখানে লেখা রয়েছে: “পাঠ্যপুস্তকটি বিবর্তনের ওপর। জীবনের উৎসের আলোকে বিবর্তন একটি নিছক থিওরি মাত্র, বাস্তব কোন ঘটনা নয়। খোলা মনে এর বিষয়বস্তু দেখা উচিত, সাবধানতার সাথে পাঠ করা এবং সমালোচনার দৃষ্টিতে বিবেচনা করা উচিত।- এই বক্তব্য যোগ করার কারণে County School District বনাম Selman’ মামলা কোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। ২০০৫ সালের ১৩ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় বিচারালয় পাঠ্যবইয়ে এই ধরনের স্টিকার লাগানোকে ‘অসাংবিধানিক’ বলে রায় প্রদান করে।
২. উদাহরণস্বরূপ দেখুন : “What’s Wrong with ‘Theory not Fact’ Resolutions.” National Center for Science Education. 7 December 2000. Available at: www.ncseweb.org/resources/articles/8643_whats_wrong_with_theory_not__%2012_7_2000.asp.
৩. ফলের মাছির উপর সদ্য পরিচালিত গবেষণা থেকে জানা গেছে, কিছু বংশগতির ইনস্ট্রাকশন হয়তো ডিএনএ’র মধ্যে সংকেত আকারে আবদ্ধ থাকে না, বরং এই উপাদানগুলো ডিএনএ’র চতুর্দিকে আবদ্ধ থেকে সন্তান-সন্ততির মধ্যে পৌঁছায়। (Lin et al. 2004)|
৪. নিউ-ডারউইনিজম (বিবর্তনের আধুনিক সংশ্লেষণী তত্ত্ব নামেও অভিহিত করা হয়) ১৯৩০ সালের দিকে প্রতিষ্ঠা লাভ করে; যা ডারউইনের প্রাকৃতিক নির্বাচন তত্ত্বের সাথে গ্রেগর মেন্ডেল এবং পরবর্তী অন্যান্য জীববিজ্ঞানী দ্বারা প্রবর্তিত বংশগতির উত্তরাধিকার তত্ত্ব অঙ্গীভূত করে।
৫. জীববিজ্ঞানীদের মধ্যে ‘জটিলতা সম্পর্কিত বিবর্তনীয় প্রবণতা’ নিয়ে মতভিন্নতা রয়েছে; কারণ সাধারণভাবে কিভাবে জটিলতাকে সংজ্ঞায়িত করা হবে এবং এর পরিমাপ করা হবে।
৬. প্রজাতির ধারণাটি Strickberger (1985:747-756) থেকে নেওয়া হয়েছে এবং সাথে সাথে আমরা কিভাবে প্রজাতিকে সংজ্ঞায়িত করে থাকি, তা Mallet (1995)–এর লেখা থেকেও পর্যালোচনা করা হয়েছে।
৭. বাঘ ও সিংহ একসময় প্রকৃতিগতভাবে ভারতে সহাবস্থান করত। বাহ্যিকভাবে খুবই ভিন্ন হলেও তারা অনেক সময় পরস্পরের সাথে যৌনমিলনের মাধ্যমে টাইগন বা লাইগার জন্ম দিতে পারে। (বিপরীত লিঙ্গের বাঘ ও সিংহকে বদ্ধ অবস্থায় রাখলে অনেক সময় এটি ঘটে থাকে)। তবে এরকম সংকর জাত সচরাচর প্রকৃতিতে দেখা যায় না; কেননা তারা স্বাভাবিক অবস্থায় পরস্পরের সাথে মিলিত হয়ে সংকর বাচ্চা জন্ম দেয় না। তাই বাঘ ও সিংহকে ‘জিনগতভাবে একই প্রজাতি’তে শ্রেণীবদ্ধ করা যায় কিন্তু তাদের বাহ্যিকভাবে বা আচরণগতভাবে এতই ভিন্নতা রয়েছে যে তাদেরকে জীববিজ্ঞানীরা আলাদা আলাদা প্রজাতিতে ফেলতে পারেন এবং প্রকৃতিতে এরা নিজেরা আপন স্বাতন্ত্র বজায় রাখে। Wilson 1977:7.
৮. হোমিনিডরা (Hominids) বৃহৎ প্রাইমেট, যারা সোজা হয়ে হাঁটতে পারে। ঐ Australopithecus গণ বা Genus (যা মানুষের গণ ‘Homo’-এর পূর্ববর্তী)-কেই australopithecines বুঝিয়ে থাকে। ৪০ লক্ষ বছর আগে তাদের দেখা যেত। হোমিনিডের অনেকগুলো ভ্যারাইটি অতীতে অস্তিত্বশীল ছিল কিন্তু বর্তমানে শুধু Homo sapiens sapiens টিকে রয়েছে।
৯. ‘মিসিং লিংক’ রূপক শব্দটির ব্যবহারে মনে হতে পারে, যে কোন প্রজাতিকে কেবলমাত্র একটি চেইন দ্বারা উপস্থাপন করা যায়; যেমন হোমিনিডদের রেখাচিত্রে দেখা যায় প্রথমে হাতের আঙুলগুলোর উপর ভর করে হাঁটা (knuckle-walking), পরে কুঁজো বা আধাদণ্ডায়মান অবস্থা এবং তারপর পুরো দণ্ডায়মান আধুনিক মানুষ। অবশ্য এই রেখাচিত্র অন্যান্য দ্বিপদী হোমিনিড যেমন robust australopithecenes (৪০ লক্ষ বছর আগে তাদের দেখা যেত এবং ১০ লক্ষ বছর আগে এরা বিলীন হয়ে গেছে) অথবা নিয়ান্ডার্থাল প্রজাতি (৩ লক্ষ বছর আগে তাদের দেখা যেত এবং ৩০ হাজার বছর আগে এরা বিলুপ্ত হয়ে গেছে)-এর সাথে আমাদের সম্পর্ক রয়েছে, তা প্রদর্শন করে না। এ ধরনের বর্ণনা শুধু একটি অখণ্ড চেইনকে বুঝাতে পারে, যথা চতুর্পদী থেকে দ্বিপদী, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আরো অনেক দ্বিপদী ছিল যারা পূর্বেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে, উপরন্তু অনেক চতুর্পদী প্রজাতি বর্তমানে টিকে রয়েছে।
১০. মানব প্রজাতি আসলেই অনন্যসাধারণ কর্মী। আমরা ভবিষ্যৎ সম্পর্কে পরিকল্পনা করতে পারি, সব ধরনের সামাজিক-জৈবিক প্রক্রিয়ার সাহায্যে আমাদের বিবর্তনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। বিভিন্ন জটিল সামাজিক সম্পর্ক ও বৈবাহিক নিয়ম যা মানব জনপুঞ্জতে জিন-প্রবাহ নিশ্চিত করে, তা সামাজিক প্রক্রিয়ার অন্তর্গত। জনসাধারণকে পোলিও ও গুটিবসন্তের টিকা দান জৈবিক প্রক্রিয়ার অন্তর্গত।
১১. উদাহরণস্বরূপ দেখুন : Shanahan (2004); এ বিষয়ে আরো আকর্ষণীয় বক্তব্য পাওয়া যাবে : Commager (1965:82-83), and Butterfield (1965:222-246)।
১২. আমরা মনে করি, মানবজাতির এই দৃষ্টিভঙ্গি সীমিত সম্পদের অপব্যবহারে অবদান রাখছে; যেমন সমুদ্রে মাছ শিকারের নতুন এলাকা আবিষ্কারের সাথে সাথেই মানুষ সেখান থেকে অবিরাম মাছ শিকারে নেমে পড়ে। দ্রষ্টব্য : Jackson et al. (2001)|
১৩. আমরা যেসব পুরাতন শব্দগুচ্ছ বা অভিব্যক্তি ভুলভাবে ব্যবহার করি, সেগুলো শুধু ব্যাখ্যা করলে হবে না বরং এর সাথে সাথে নতুন শব্দ বা শব্দগুচ্ছ-ও তৈরি করে নিতে হবে। পুরাতন শব্দগুচ্ছকে ধরে রেখে কি লাভ, যখন এগুলো সঠিক ব্যাখ্যা প্রদর্শন করে না? উদাহরণস্বরূপ ‘বিবর্তনের সিঁড়ি’ (The Ladder of Evolution) শব্দগুচ্ছের আমরা পরিবর্তে বলতে পারি ‘বিবর্তনের ঝোপময় পথ’ (The Bush of Evolution) বা ‘বিবর্তনের সর্পিল পথ’ (The Labyrinth of Evolution)|।
সহায়ক গ্রন্থপঞ্জিঃ
• Brooks, D.J. 2001. Substantial numbers of Americans continue to doubt evolution as explanation for origins of humans. The Gallup Organization. Available online at www.gallup.com/poll/content/login.aspx?ci=1942.
• Broom, R. 1950. Finding the Missing link. London: Watts & Co.
• Butterfield, H. 1965. The Origins of Modern Science, New York: Macmillan.
• CBS News Pools. 2004. Creationism trumps evolution. CBSNEWS.com. Available online at www.cbsnews.com/stories/2004/11/22/opinion/polls/main657083.shtml.
• Commager, H.S. 1965. The Nature and study of History. Columbus, Ohio: Charles E. Merrill Books.
• Dobzhansky, Theodosius. 1973. Nothing in Biology makes sense except in the light of Evolution. The American Biology Teacher 35:125-129.
• Jackson, J., M. Kirby, W. Berger, K. Bjorndal, L. Botsford, et al. 2001. Historical overfishing and the recent collapse of coastal ecosystems. Science 297:629-637.
• Lin, Q., Q. Chen, L. Lin, and J. Zhou. 2004. The Promoter Targeting Sequence mediates epigenetically heritable transcription memory. Genes & Development 18:2639-2651.
• Mallet, J. 1995. A species definition for the modern synthesis. Trends in Ecology and Evolution 10:294-299.
• National Science Board. 2000. Science and Engineering Indicators. Washington, D.C. US Government Printing Office. Available online at www.nsf.gov/sbe/srs/seind/pdf/c8/c08.pdf.
• Petren, K., B.R. Grant, and P.R. Grant. 1999. A Phylogeny of Darwin’s finches based on microsatellite DNA length variation. Proceedings of the Royal Society of London B266: 321-329.
• Shanahan, T. 2004. The Evolution of Darwinism: Selection, Adaptation and Progress in Evolutionary Biology. New York: Cambridge University Press.
• Strickberger, M.W. 1985. Genetics. New York: Macmillan.
• Suplee, C. 1999. Fossil find may be that humans’ immediate predecessor. The Washington Post, April 23. pp. A3, A11.
Wilson, E.O. 1977. Sociobiology. Harvard, Massachusetts: The Belknap press of Harvard University Press.
[লেখাটি অনন্ত বিজয় দাশ কর্তৃক সম্পাদিত যুক্তি ম্যাগাজিন, সংখ্যা ৩ এ প্রকাশিত। যুক্তি ম্যাগাজিনে প্রকাশিত লেখাগুলো ক্রমান্বয়ে মুক্ত-মনায় দেয়া হচ্ছে। তবে যাদের পুরো ম্যাগাজিন একসাথে প্রয়োজন তারা ডাউনলোড করতে পারেন এখান থেকে –
http://www.mediafire.com/download.php?xdyn340njqx
(সাইজ 1.97 MB, pdf ও word ফরম্যাটে zip ফাইলে দেয়া হয়েছে। pdf ফাইলের জন্য adobe reader লাগবে, ফ্রি ডাউনলোড করেন এখান থেকে http://get.adobe.com/reader যাদের adobe reader নেই তারা word ফাইলটি দেখতে পারেন)]
মিডিয়াফায়ার লাগবে কেন, পিডিএফ করে মুক্তমনাতেই রেখে দেয়া যায়। যুক্তির আগের পর্বগুলো তো ই-বই আকারে আমাদের আর্কাইভে রাখা আছেই। এই পর্বটাও রাখা যাবে। আমি অপেক্ষা করছিলাম এই ভেবে যে, যুক্তির এই তৃতীয় সংখ্যার লেখাগুলো যদি আলাদা আলাদা ভাবে ইউনিকোড করে পোস্ট দেয়া হয়, তবে মূল সংখ্যাটিতেই লিঙ্ক করে রেখে দেয়া যেত। দেখেছেন বোধ হয়, সিদ্ধার্থ এবং আপনার অনুবাদ দুটো – যেগুলো আলাদাভাবে পোস্ট হিসেবে এসেছে – সেগুলো ইতোমধ্যেই লিঙ্কায়িত হয়েছে। অন্য লেখাগুলো আপনাদের কেউ নিয়মিতভাবে পোস্ট করার উদ্যোগ নিলে মূল সংখ্যাটিই ইবই হয়ে উঠতে পারে। আলাদা ভাবে পিডিএফ এর হ্যাপো আর পোহাতে হয় না।
ভেবে দেখবেন আশা করছি।
@অভিজিৎদা,
আমার লেখা আবার পড়ার জন্য ধন্যবাদ। যুক্তির ৩য় সংখ্যাকে মুক্তমনায় কিভাবে আনা যায় সেটা অবশ্য অনন্তদা ও সৈকত ভাই ভাল বলতে পারবেন।
@অভীক,
আলাদা ভাবে যুক্তির ৩য় সংখ্যাকে মুক্তমনায় নতুন করে আনতে হবে না। কেবল যুক্তি পত্রিকায় প্রকাশিত লেখাগুলো এক এক করে আপনি, সৈকত বা অনন্ত নিজেদের সুবিধামত সময়ে পোস্ট করতে থাকলেই হবে। লিঙ্ক টিঙ্ক করা সহ বাকি কাজটুকু না হয় আমি করলাম।
একটা কাজ করলে হয়, আপনাদের যাদের যাদের লেখা যুক্তিতে আছে, তারা সেগুলো নিজ উদ্যোগে প্রকাশ করলেই কাজ কিছুটা এগিয়ে যায়। আপনি আর সিদ্ধার্থ তো করেছেন, এবারে অন্যরা শুরু করুক।
যুক্তি অনলাইনে দেবার জন্য ধন্যবাদ। আগের দুটি সংখ্যা মোবাইল ফোনের ই-বুক রিডার দিয়ে ক্লাসের মধ্যে(!) বেশ কয়েকবার পড়ে শেষ করেছি।
এডোবি রিডার এর মত ভারী ও ধীরগতির সফটওয়্যার ব্যবহার করার থেকে ফক্সিট রিডার ব্যবহার করা অনেক ভালো। ডাউনলোড করে দেখুন, মাত্র সাড়ে ৬ মেগাবাইট।
@রামগড়ুড়ের ছানা,
ভাইয়া ঠিক বলেছ। আমিও ফক্সিট রিডার ব্যবহার করি। তবে ফক্সিট রিডার দিয়ে ওটা পড়তে সমস্যা হয়, বিভিন্ন জায়গায় ড্যামেজ দেখায়। আর ফক্সিট পিডিএফ প্রিন্টার দিয়ে পিডিএফ করলে এর সাইজ ১০০ মেগাবাইটের বেশি হয়ে যায়।
@রামগড়ুড়ের ছানা,
আমি আগে ফক্সিট রিডার ব্যবহার করতাম। এখন আমার পছন্দের রীডার হল STDU Viewer দুই মেগাবাইটের নীচে। খুব ফাস্ট আর এটাতে ডকুমেন্টের উজ্জ্বলতা কমান বাড়ানোর অপশান আছে।
যুক্তিতে আগেই পড়েছিলাম। এবারে মুক্তমনায় দেখে ভাল লাগলো।