ভাদ্র আশ্বিনে এই দৃশ্য দেখতাম বাড়ির জানালা থেকে-সব ইতিহাস হতে চলেছিল

খবরটা নানান বাংলাদেশী ব্লগে কালকেই পড়েছিলাম। আজ আরেকটু জানলাম। জেনেটিক্স বিজ্ঞানী মাকসুদল আলম ঢাকাতেই তৈরী করেছেন পাটের জেনোম। যার ফলে তৈরী করা যাবে নতুন ধরনের পাট-যা পাটচাষ এবং শিল্পের অনেক সমস্যার সমাধান করবে। তৈরী করা যাবে উন্নত মানের ফাইবার, খরচ কমানো যাবে জাগ দেওয়ার ( জলে পাট পচানো) । অথবা সেচের।

মাকসুদল আলম আমেরিকাতে বিজ্ঞানী ছিলেন-পেঁপের জেনোম নিয়ে কাজ করেছেন। বাংলাদেশে পাটের জন্যে কিছু করতে চাইছিলেন-এবং এক সংবাদপত্রে তার প্রবন্ধের সূত্র ধরে বাংলাদেশের বর্তমান হাসিনা সরকার ঢাকাতে তার গবেষনার ব্যাবস্থা করে দেন। বাংলাদেশের অনেক বিজ্ঞানী এবং প্রযুক্তিবিদ তার প্রকল্পের সাথে যুক্ত ছিলেন-সরকারই অর্থের ব্যাবস্থা করেছে। অবশেষে এল সাফল্য!

অনেক কারনেই এই সংবাদ আমার জন্যে দারুণ আনন্দের। আমি বহুদিন থেকে বলে আসছি-পাট শিল্পের সমস্যাগুলির জন্যে রাজনীতি করলে সমস্যা বাড়বে। দরকার বিজ্ঞান গবেষনার-উন্নত প্রযুক্তির যাতে পাট মার্কেটে টিকে থাকতে পারে। পশ্চিম বঙ্গের অধিকাংশ পাটকল বন্ধ। শুধু লক আউট । দলাদলি। শ্রমিকদের আত্মহত্যা। আমাদের ব্যারাকপুরে একটি পাট গবেষনা কেন্দ্র আছে-লোকমুখে শুনেছি সেখানে পাটের মেটিং এর বদলে পার্টির মিটিং হয়। সব থেকে বড় কথা ভারতে ১৫০ টি কৃষিবিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষনাকেন্দ্র আছে। তারা পাটচাষিদের জন্যে কি করেছে?

আমার ঠাকুরদা পাট ব্যাবসায়ী এবং পাটচাষি ছিলেন। সেই সূত্রে ছোটবেলায় দেখেছি পাটের ব্যাবসার রমরমা। পাটের সিজন ছিল ফেস্টিভ। আনন্দমুখর। নৌকা করে পাট আসত আমাদের গ্রামের বাড়ি থেকে। নৌকাতে পাটের ওপর চেপে কত এদিক ওদিক করেছি মুফতে! তারপর আশির দশক থেকেই কেমন যেন সব গুটিয়ে গেল। কারনটা সিম্পল। পাট চাষের খরচ বাড়ছিল, অথচ দাম বাড়ছিল না। কোলকাতার পাটের কলগুলো একের পর এক বন্ধ হচ্ছিল। পাট সাধারণত চৈত্র-বৈশাখ মাসের দিকে বোনা হয়।প্রচুর জল লাগে প্রাথমিক অবস্থায়। সেচের খরচ বেড়েছে, কীটনাশকের খরচ বেড়েছে। আর দাম কমেছে। আমার মফঃশহরে ছিল শখানেকেরও বেশী পাটের গুদাম। নব্বই দশকের শেষে সেখানে দেখেছি পাট পচছে।

আর আমাদের রাজনীতিবিদরা ( সিপিএম কংগ্রেস সব সমান) কি করছিলেন? একে অপরকে গালাগাল দিয়ে পাটকলের মালিকদের থেকে দু পয়সা নিয়ে, তাদেরকে শ্রমিকদের পি এফ এবং গ্রাচুইটির টাকা মারতে সাহায্য করেছেন। গবেষনা এবং উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে যে এই সমস্যার সমাধান করতে হবে-এই চিন্তাটা তাদের মাথাতেই নেই। তারা শুধু জানেন কি করে রাজনীতি করে নিজেদের গোছানো যায়।

শেখ হাসিনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ উনি বাংলাদেশকে সঠিক পথ দেখাচ্ছেন। জয় ওয়াজেদ দেখলাম বাংলাদেশে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্যে আই টি সিস্টেম কে কাজে লাগাতে চান। শেখা হাসিনা এবং জয় ওয়াজেদ যা হাতে করে দেখাচ্ছেন-এই জিনিসগুলি নিয়ে আমি অনেকদিন লিখে আসছি-ভারতে অনেক ব্লগারই এই নিয়ে লিখছেন। কিন্ত আমাদের রাজ্যের রাজনীতিবিদরা এত নিরক্ষর এবং নিজেদের মধ্যে মারামারি খেয়োখেয়ি করতে ব্যাস্ত, তাদের এসব নিয়ে ভাবার সময় নেই। দিল্লীতে বরং এই নিয়ে চিন্তা ভাবনা অনেক হচ্ছে-কিন্ত এত দালাল ওখানে, সেখানেও ভাল কিছু হওয়া কঠিন। এই জন্যে শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ যে উনি একটা পায়োনিয়ারিং কাজ করে দেখালেন-দালাল আর নিরক্ষর রাজনীতিবিদদের পাশ কাটিয়ে , তৃতীয় বিশ্বে এটা করা সত্যিই কঠিন ছিল।