হূমায়ূন আহমেদের “আজ রবিবার” একটি জনপ্রিয় হাসির নাটক। ষোল আনা হাসির সাথে এক আনা সময় নিয়ে বত্রিশ আনা রূঢ় বাস্তব সত্য কথাটি ধরিয়ে দিতে হূমায়ুন আহমেদের জুড়ি নেই। হিমু জীবন-বিমূখ একটি অদ্ভূত চরিত্র। নাটকে উপস্থিতি নেই বললেই চলে। হলুদ রংএর কাপড় গায়ে রাতের বেলা ঘুরে বেড়ায়। নাটকের মূল বিষয়বস্তুতে হিমুর কোন অংশ নেই। অর্থ, বিত্তমত্ত সমাজের বাইরে যে বিরাট একটি অবহেলিত ক্ষুধার্ত সমাজ আছে নাটকের শেষ মিনিটে হিমু সেটাই দেখায়। হিমুর গান আমাকে সোনার খাঁচার দিনগুলোর কথাই মনে করিয়ে দেয়।
গ্রামের নওজোয়ান, হিন্দু-মুসলমান
মিলিয়া বাউ্লা গান আর মুর্শিদী গাইতাম।
আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম।
“সোনার খাঁচার দিন গুলি মোর রইল না।” গ্রামের মাঝখানে কালি ভিটা, শতাব্দীর সাক্ষী পাহাড়ের মত সুউচ্চ বটবৃক্ষ (এত উচু গাছ আমি কোথাও দেখিনি, শুনিনি)। সামনে খেলার মাঠ। শতাধিক হিন্দু আর গোটা তিরিশেক মুসলমান পরিবার নিয়ে সংস্কৃতিমনা ঈর্শনীয় একটি আদর্শ গ্রাম। খালেক মুসলমানের ছেলে আর আমি হিন্দুর ছেলে আমরা কেউ বুঝতাম না। লেখাপড়ায় আশেপাশের কোন গ্রামই সমকক্ষ ছিল না। এই গ্রাম থেকে প্রচুর পিএইচডি, ডাক্তা্র, ইঞ্জিনীয়ার, কৃষিবিদ সহ সব ধরণের টেকনোক্র্যাট বেরিয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের অর্থ উপদেষ্টা, জাতীয় সংসদ সদস্য, বিদেশী দূতাবাসে সচিব সহ রাস্ট্রদূত পর্য্যন্ত এই গ্রাম থেকে হয়েছে। এক সময়ের মাত্র ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটির উপচার্য্যও হয়েছেন এই গ্রাম থেকে। সূর্য্য ডুবার পরে বাইরে খেলতে গেলে বাঘের ভয়ে চোখকান খোলা রাখতে হত। কখন সংবাদ আসে – বাঘ এ পথেই আসছে; খেলার সরঞ্জাম ফেলে সবাই একেবারে ভ্যানিস। এই ব্যাঘ্রটির নাম ছিল – জগদীশ চন্দ্র রায়। ১৯৬০ সালের দিকের কথা। জগদীশ রায় তখন আমাদের ফুটবল টিমের ক্যাপ্টেন। তখন প্রতি বছর টিমে টিমে খেলা হত। বিশ মাইল ব্যাসের মধ্যে কোন গ্রাম ছিল না আমাদের গ্রামকে টেক্কা দিতে পারে।
১৯৮৮ সালে বন্যায় দেশ ভেসে গেছে। ঢাকা নগরীতে তখন নৌকা চলে। টেলিভিশনে নিত্যদিনের খবরের দৃশ্য – প্রেসিডেন্ট এরশাদ বুক জলে হেটে টাকা বিলাচ্ছেন। শাপলা চত্ত্বরের পাশেই পুবালী ব্যাঙ্ক। রিকশার পাদানি জলে ডুবা, পা উচু। পুবালী ব্যাঙ্কের বারান্দায় লাফ দিয়ে নামলাম। ময়মনসিংহের পুবালী ব্যাঙ্কে দু হাজার ডলারের সমপরিমাণ অর্থ জমা দিয়ে এসেছি। এখান থেকে একটি সার্টিফিকেট দিবে। সেটা টেক্সাস এ এন্ড এমএ পাঠাতে হবে। অগ্রিম টুইসন ফী। অফিসার বললেন – ময়মনসিংহ পুবালী ব্যাঙ্কে ফিরে যান। ওরা এইখানে ভুল করেছে। ঠিক করে নিয়ে আসুন। কোন অসুবিধা নেই। আপনার অসুবিধা নেই, কিন্তু আমার তো মহা মসিবত। ঢাকা-ময়মনসিংহ রোড তখন জলের নীচে। শেষ বাসে এসেছি। এখন তো যাওয়াই যাবে না। হাতে সময়ও নেই।
– আইন বহির্ভূত কাজ আমরা করি না। আপনি যান ঠিক করিয়ে নিয়ে আসেন। অসুবিধা নাই।
– সব বন্ধ, যাই কী করে? আর তা ছাড়া ভুল তো আমি করিনি। আপনাদের এক শাখাই করেছে। তার জন্য আমাকে বিপদে ফেলছেন কেন?
কে আমার কথা শুনে। বাইরে জলমগ্ন শাপলা চত্ত্বর। লোকজন পা রিক্সাওয়ালার সীটে তুলে বসে আছে। আর বেচারা রিক্সাওয়ালারা রিক্সা টেনে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। আমার চোখে অন্ধকার। ঢাকার অফিসেও আমার জন্য বিপদ! সামনেই কাচের দেওয়ালের ভেতরে ম্যানেজার সাহেব বসে কাজ করছেন। ভেতরে কেউ নেই। আমি ভীতু প্রকৃতির জীব। মানুষের কাছ থেকে ঠেলা খেতে খেতে আরও ভীতু হয়ে গেছি। পৈত্রিক নামটিও লুকিয়ে রাখি। রাস্তায় নামলেই ঘরের জল পানিতে ভাষান্তরিত হয়। অন্তরাত্মা বলল, তোর তো আর হারানোর কিছু নেই। করে দেখ একটা শেষ চেষ্টা!
ম্যানেজারটি ভদ্র বংশীয় হবেন। (নামটি টুকে রাখিনি – নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে এখন।) মুখের দিকে তাকিয়েই বুঝলাম, ভদ্রলোক বুঝে ফেলেছেন, নিশ্চয় বড় কোন বিপদে পড়েই আমি তাঁর দ্বারস্থ হয়েছি। সমস্যার কথা বললাম। সমস্যাটি্র ধারে কাছে না গিয়ে সহসাই জিজ্ঞেস করলেন,
– আপনার দেশ কোথায়?
– ঢাকা।
– ঢাকা কোথায়?
– ধামরাই।
– ধামরাই কোথায়?
– আপনি ধামরাইএর সব চিনেন নাকি?
– বলেন না, ধামরাই কোথায়?
আমি ততক্ষনে ভরশা পেতে শুরু করেছি। বললাম,
– কুশুরা।
– কুশুরা কোথায় সেইটা বলেন।
– গ্রামের নাম বলব?
– বলেন।
– বৈন্যা।
যেন কোন মন্ত্র কাজ করছে। ম্যানেজার সাহেব আর কিছু বললেন না। কলিং বেল টিপলেন। এক পিয়ন প্রবেশ করল। বললেন, এই ফাইলটা নিয়ে যাও মহিউদ্দিনের কাছে। সব ঠিক-ঠাক করে দিতে বল এখনই। যদি কোন ঝামেলার কথা বলে, বলবে সব দ্বায়িত্ব আমার।
আমি হতভম্ব। অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে আছি – একি স্বপ্ন, নাকি মায়া! নাকি আর কিছু!
ম্যানেজার সাহেব কথা বললেন – পচিশ-তিরিশ বছর আগের কথা আপনি মনে করিয়ে দিলেন। আমার বাড়ি এলাশিন। আপনার গ্রাম থেকে বিশ মাইল উত্তরে। আপনি নরেশ এবং রমেশের গ্রামের ছেলে। এই দুটো ছেলে আমাদের ফুটবল টিমের জন্য ছিল ত্রাসের কারণ। দুজন সামনে দু পাশে খেলত আর হরিণের গতিতে এরা ছুটত। চোক্ষের নিমিষে গোল করে ফেলত। আমরা সবাইকে হারিয়ে ফাইনালে উঠতাম। কিন্তু বৈন্যার সাথে পারার আশা করতে পারতাম না শুধু এই দুজনের কারণে।
– রমেশ-নরেশ এরা কী করে এখন? কেমন আছে?
– দুজনেই ইন্ডিয়া চলে গেছে।
– কেন, ইন্ডিয়া গেল কেন?
– যে কারণে অন্য হিন্দুরা যায় সেই কারণেই।
– ওদের তো কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
– তা ঠিক। হয়তো ছেলে মেয়েদের ভবিষ্যতের কথা ভেবেছে। দিন দিনই তো খারাপ হচ্ছে।
– ওখানে কী করছে ওরা, কেমন আছে?
– রমেশদার কথা জানিনা। নরেশদা মারা গেছেন।
ম্যানেজার সাহেব খুবই কষ্ট পেলেন। এমন একটা দুঃসংবাদের জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। উনার মস্তিষ্কে নরেশ-রমেশরা এখনও সেই আঠার-বিশ বছরের তরুণই আছে। মাথাটি নীচু হয়ে গেল। নিঃশব্দে কয়েকটি মিনিট চলে গেল। তারপর অস্ফুটে বেরিয়ে এল – নরেশ মারা গেছে!
আমি তখন ছোট, খুবই ছোট। আমার নাম কোন ক্লাশে তালিকাভূক্ত হয়েছে কিনা তাইই মনে নেই। ১৯৫০ দশকের মাঝামাঝি হবে। বিরাট নৌকা করে আমাদের টিম যাচ্ছে খেলতে। আমিও যাব। খেলা দেখার আকর্ষণে নয়। নৌকায় কোথাও যাওয়াটাই আসল কথা। নৌকায় যেই এক পা দিয়েছি, সহস্র মুখে একই প্রশ্ন, আরে, তুই কোথায় যাবি, নাম, নাম।
পেছনের গলইএর দিকটা থেকে মাথা বেড় করলেন ছয় ফুট লম্বা আমাদের দলের গোল-রক্ষক, আবু হোসেন ভাই। বললেন, ওকে আসতে দে। “পাশ” পেয়ে “বান্নল” গ্রামের মাঠে খেলা দেখতে গেলাম। খেলা শুরু হল। আমরা মাঠের পুব পাশে। মিনিট পাঁচেকের মাথায় গন্ডগোল শুরু হয়ে গেল। আমাদের লেফট হাফ যতীনদার পায়ে কেউ ঠ্যাঙ্গা মেরেছে।
যতীনদা – ২৩ শে ডিসেম্বর ২০০৮
বান্নলের মাঠ। চতুর্দিকে সারা গ্রামের মানুষ। আমি বাদে আমরা বড়জোড় বিশ-পচিশ জন। হলে কি হবে! আমাদের বাঘের মাথায় তখন রক্ত চড়ে গেছে। কানের নত্তি ছেড়ার সময় হয়েছে। পড়নে ধূতি, হাতে ছাতা। ছাতিপেটা করার জন্য এক লাফে জগদীশ রায় মাঠের মধ্যিখানে চলে গেছেন।
– কোন বানর ওর গায়ে হাত দিয়েছে। কানের নত্তিটা ছিড় আগে।
এই হল তখনকার দিনের বাঘ, জগদীশ চন্দ্র রায়। বাঘ তো নয়, শের – ব্যাঘ্র। এখন স্বপ্নেও ভাবা যায় না ধূতি পড়ে কোন হিন্দু মাঠের মাঝখানে প্রবেশ করবে। তাও আবার ভিন গ্রামে ওদেরই কারো কানের নত্তি ছেড়ার জন্য।
ইয়াছিন ভাই রাইট হাফ থেকে দৌড়ে এসেছেন। জগদীশদা আপনি মাঠের বাইরে যান তো। আমার খেলা এখনও শুরু হয়নি। ইয়াছিন শুরুতে প্রতিপক্ষের দুটি ভাল খেলোয়ার সনাক্ত করবেন। তারপর বল নিয়ে কাছে যাবেন। রেফারিও বুঝতে পারবে না। শুধু দেখা যাবে খেলোয়ারটি মাটিতে পড়ে কাতরাচ্ছে। সেই খেলাটি এখনও শুরু করেননি।
১৫ মে ২০০৭ এর ইয়াছিন ভাই
ইয়াছিন ভাই যতীনদার কানের কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন – কয় নম্বর জার্সি।
মাত্র এক মিনিট। ইয়াছিন ভাই এক ঠ্যাঙ্গা মেরে ফেলে দিলেন খেলোয়ারটিকে। সঙ্গে সঙ্গে ওদের দুজন ইয়াছিন ভাইএর ঘাড়ের উপর। ইয়াছিন ভাইএর পিঠাপিঠি বড়ভাই ইউসুফ ভাই মিড-ফরোয়ার্ডে খেলেন। তিনি দুই লাথি মেরে দুটোকে ফেলে দিলেন। মাঠ ততক্ষনে জনারণ্যে পরিনত হয়েছে। সবাই ইউসুফ ভাইকে মারবে। কানাই তাড়াতাড়ি নিজের গায়ের জামাটা খুলে ইউসুফ ভাইএর জার্সির উপর দিয়ে পড়িয়ে দিলেন। ইউসুফকে আর খুঁজে পাওয়া গেল না। একেবার হাওয়া। গন্ডগোল থামলে খেলা শুরু হল। আমরা এক গোলে জিতে বাড়ি ফিরলাম।
কানাই লাল বিশ্বাস। ১২ ডিসেম্বর ২০০৮
কানাই দেশ ছেড়েছেন ১৯৬০ সালের মাঝামাঝি সময়ে। এখন থাকেন কুচবিহার জেলার একটি গ্রামে। ছবি থেকে বুঝা যাচ্ছে হতদরিদ্র অবস্থা। পাশের বাড়ি থেকে মেজো ছেলেটি প্লাস্টিকের চেয়ার নিয়ে এল আমাকে আর আমার ভাতিজাকে বসতে দেয়ার জন্য।
২০০৩ সালে আবু হোসেন ভাইকে শেষ বারের মত দেখেছি। ২০০৭ সালে যেয়ে শুনলাম মারা গেছেন। দেখা হল ইউসুফ ভাইএর সাথে। স্ত্রী বিয়োগ হয়েছে। কানে এইড লাগিয়েও ভাল শুনতে পান না। ২০০৮ সালে যেয়ে শুনি ইউসুফ ভাইও গত হয়েছেন।
এর পরের ঘটনাগুলো বিষাদময়। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর পূর্ব পাকিস্তানে অনেক গুলো রায়ট হয়ে গেছে। এক একটি রায়ট শেষ হয় আর জানিয়ে দিয়ে যায়, তোমরা হিন্দু, ভারত তোমাদের দেশ। এতদিন রায়ট হত ঢাকা কেন্দ্রিক; ঢাকা, জয়দেবপুর, সাভার, টুংগী। এগুলো নাকি বিহারীরা করে থাকে। গ্রামাঞ্চলে বিহারীরা থাকে না। তাই রায়টের হিংস্র থাবা তখনও প্রবেশ করেনি। তবে অনেকের হাত চলকানি শুরু হয়ে গেছে। রায়ট কী ভাবে হয়! শুধু ঢাকাতে কেন! এখানে হলে মন্দ কি! দেখতাম হিন্দু গুলো কেমন করে! শুরুটা আর হচ্ছে না।
১৯৬৪ সালের ডিসেম্বরে অপেক্ষার অবসান হল। বেরশ স্কুলের কুক্ষাত হেডমাস্টার, চান খার নেতৃত্বে স্কুল গৃহে মিটিং হল। তারপর এক নিকষ কালো রাত্রিতে শকুনেরা ঝাপিয়ে পড়ল নিরীহ গ্রামবাসীর উপর। তিন তিনটি গ্রামে নারকীয় তান্ডব চলল। পরে কোন এক পর্বে এ বিষয়ে লেখার আশা রইল।
দিনে দিনে বাড়তে থাকে বেদনাবহ মর্মান্তিক ঘটনা সমূহ। ১৯৬৪ এর রায়ট বাঘটিকে গর্জন বন্ধ করার ইঙ্গিত দিয়ে গেল। তারপর ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধ হিন্দুদের জীবন বিষময় করে তুলল। বাঘটি আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে এল। দেশ স্বাধীন হল ১৯৭১এ। নতুন আশা। ভাবল এবার বুঝি সবকিছু ১৯৫০ দশকের মত হবে। মান-সন্মান নিয়ে বেঁচে থাকা যাবে। বছর দুই যেতে না যেতেই সে ভুল তাঁর ভাংগল।
২০০১ সালে যখন দেশে যাই তখন জগদীশ রায়ের সাথে শেষ বারের মত দেখা। বাঘের গর্জন অনেক আগেই শেষ। এবারে মুখের ভাষাও স্তিমিত। দৈনন্দিন প্রয়োজনে বাজারে যান আর আসেন। এই তাঁর নিয়মিত কর্মসূচী। সামান্য কারণে উনার হাটুর বয়েসী এক নেতা উনাকে অপদস্ত করেছে। বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৯৯এর ‘ম’ অনুচ্ছেদে লেখা আছে – “হিন্দুরা শুধুই আওয়ামী লীগের সমর্থক থাকবে। অন্যের সমর্থক হওয়া সংবিধান বহির্ভূত কার্যকলাপ।” আর বাংলাদেশ সরকার তার সাজা দেওয়ার দ্বায়িত্ব দিয়েছে ঐ নেতার উপর। নেতাটি একটি সম্ভ্রান্ত রক্ষনশীল পরিবারের সন্তান। আমার শিশুপাঠ সময় থেকেই বন্ধু। আমার জন্য হাটু জলে নামার দরকার হলে বন্ধুটি এখনও গলা জলে নামে। ওদের অন্দর বাড়িতে বাইরের কোন মুসলমানেরও প্রবেশ নিষেধ। কিন্তু এরও ব্যতিক্রম আছে – সেটি শুধু আমার জন্য। তার বাবার সাথে নাকি আমার বন্ধুত্ব আরও গাঢ়। এসব নিয়ে অন্য আর এক পর্বে আলোচনা করার আশা রাখি।
আমার বন্ধু তাঁকে অপদস্ত করেছে। তাই অনুযোগটি আমাকেই শুনতে হল। এককালের বাঘ। ভয়, শ্রদ্ধা, সন্মান সবই ছিলো সারা গাঁয়ে। বন্ধুটির বাবাও তাঁকে যথাযথ সন্মান ও স্নেহ করতেন। অথচ মামূলি বিষয় নিয়ে আজকাল অপদস্ত করতে কেউ দ্বিতীয়বারটি চিন্তা করে না। বুক ভরা কষ্টের কথা কাউকে বলতেও পারেন না। কেউ কোনদিন বলেও না এর একটা বিহিত হওয়া দরকার, বা আমরা একটা কিছু করব, ইত্যাদি। এক সময় বলেই ফেললেন – দেশে আর থাকতে পারলাম না, ওপারে যাওয়া ছাড়া আর পথ দেখছি না।
এই বয়সে আর কোথায় যাবে! থাকা যাবে না এই কথাটা হরহামেশাই হিন্দুরা বলে থাকে। এতে একটু কষ্ট লাঘব হয়। তার উপর ষাট বছর বয়সে দেশত্যাগ আর আত্মহত্যা একই কথা।
বন্ধুটির বড়ভাই ছেলেদের সাথে দীর্ঘদিন যাবত বিদেশে বসবাস করছেন। টেলিফোনে উনার সাথে আমার নিয়মিত আড্ডা চলে। আমরা কেউ কাউকে দেখিনা। তাই আড্ডাটা কখনও কখনও বেশ নীচু স্তরেই নেমে যায়। ২০০২ সালের প্রথমার্দ্ধে বড়ভাইটি দীর্ঘদিন পর “বিদেশ” থেকে দেশে গেলেন। তারই বর্ণনা দিচ্ছিলেন। এক সময় হঠাত করে হাজার জনের পেটের কথা তাঁর মুখ থেকে বেরিয়ে গেল।
– এতদিন পরে দেশে গেলাম। অনেকেই দেখা করতে এল। কিন্তু জগদীশ আমার বাড়ির পাশ দিয়ে বাজারে যায় আসে, আমার সাথে দেখা করতে এল না। একদিন ডাকালাম। বললাম, প্রত্যেকদিন আপনি বাড়ীর পাশ দিয়ে যান, আসেন; অথচ আমার সাথে দেখা করেন না, ব্যাপারটা কী? পিস্তলটা বের করে দেখালাম। বললাম, এতদিন আমরা আপনাকে আদাব দিয়েছি। এদেশে থাকতে হলে এখন আমাদেরকে আপনারই আদাব দিয়ে থাকতে হবে।
আমি হতবাক! আমি ঠিক শুনছি তো! এই পরিবারটির প্রতি আমি দারুণ শ্রদ্ধাশীল। সারাটি গ্রামের মাথা এই পরিবারটি। যে কয়টা হিন্দু পরিবার এখনও টিকে আছে এই পরিবারটির ভরশাতেই আছে। এদের জন্যেই অনেকে হিন্দুদের গায়ে আচড় দিতে এক পা এগিয়ে দু পা পিছিয়ে যায়। সেই বাড়ীর সন্তান কীভাবে জগদীশের মত একটি ইতিহাসকে এই ভাষায় কথা বলতে পারে! মাথা ঠিক আছে তো? মাথা আসলে ঠিকই আছে। এই বড় ভাইটি বিশেষ একটি ব্যক্তিত্বের ছেলে হওয়া ছাড়া জীবনে তেমন কিছু একটা করতে পারেন নি। ছোট বেলার আসল চেহারাটি মাঝে মাঝেই বেরিয়ে পড়ে, যা অন্য ভাইদের সন্মান হানির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তিনি “বিদেশ” থেকে এলে জগদীশ কেন, তেমন কারোরই যে দেখা করতে যাওয়ার কোন কারণ নেই তিনি সেটিও বুঝেন না।
আমি একটা দম নিলাম। বছরের পর বছর টেলিফোনে আড্ডা দিয়েছি। সেই থেকে অনেক কিছু বলার সাহসও পেয়েছি। সেটিই কাজে লাগালাম। বললাম – বাংলাদেশে হিন্দুরা অতিশয় নিরীহ জীব। এদেরকে পিস্তল কেন, লাঠি দেখানোটাও বেশী বেশী বাড়াবাড়ি। আপনার এত যদি সাহস থাকে, দেখান না আপনার পাশের বাড়ির কাউকে। আপনার আশেপাশের বাড়ির অর্দ্ধেক লোকও আপনার ভাইকে কখনও ভোট দেয় না। পিস্তলটা একদিন ওদের দেখাবেন। দেখি কত বড় বীর আপনি।
২০০২ সালের মাঝামাঝি একদিন আমার এক দাদা বললেন জগদীশ ওপারে চলে গেছে। “ওপারে”র অর্থ মৃত্যু নয়। বাংলাদেশের হিন্দুরা ভারতে যাওয়াকে ওপারে যাওয়া বলে। কেউ শুনে ফেললে আবার কোন বাড়তি বিপদ হয় তাই সংকেতে কথা বার্তা। ঘরের ভিতর থেকেও একই সংকেতে কথা বলতে শুনেছি। এত ভয়।
দিনে দিনে জগদীশের হৃদয়ে দুঃখ-বেদনা পূঞ্জীভূত হয়েছে। কেউ কোন দিন অনুভব করার কথা ভাবেও নাই। হিন্দু হয়েছিস – তোরা তো আওয়ামী লীগেই ভোট দিবি। মুসলমানের বিএনপি করাতে দোষ নেই। হিন্দু হয়ে বিএনপি করা মানে দেশের গঠনতন্ত্র বিরোধী কাজ। হিন্দুরা একগালে থাপ্পড় খেয়ে আর একগাল আগিয়ে দেয়। তবু প্রাণটা তো বাঁচুক। এভাবেই দয়া আর দাক্ষিণ্য নিয়ে বেঁচে থাকতে শিখে গেছে এই নির্জীব জীব গুলো।
ভারতে জগদীশের জন্য কেউ বাড়িঘর বানিয়ে বসে নেই। দেশত্যাগ আঠার–বিশ বছর বয়সে ঠিক আছে। ষাট বছর বয়সে দেশ ছাড়ার সময় নয়। এ যে আত্মহত্যার পথে পা বাড়ানো। আমি দাদাকে বললাম – জগদীশ দুবছরের বেশী বাঁচবে না। আমার কথাই ঠিক হল। কেউ জানল না, শুনল না। একফোটা চোখের জলও কেউ ফেলল না। ভিন গায়ের মাঠে সেই গাঁয়েরই খেলোয়ারের কানের নত্তি ছিড়তে যাওয়া ধূতি পড়া ব্যাঘ্রটি এক বছরও টিকল না। পৃথিবী থেকে একবুক কষ্ট নিয়ে একদিন নীরবে চলে গেল।
কৃষ্ণপক্ষে চাঁদের ক্ষয় শুরু হয়। চাঁদটি ক্রমশঃ ছোট আর দূর্বল হতে থাকে। তারপর একদিন নিঃশেষ হয়ে যায়। আকাশে ঐ চাঁদ আর উঠে না। নতুন চাঁদ তার জায়গাটি দখল করে নেয়।
১২ জুন ২০১০, টেক্সাস।
বাংলাদেশে আমাদের প্রতিবেশী আপনার ধর্মের।
তাদের মেয়ে আমার ছোটবেলার খেলার সাথী ছিল।
বয়স্ক প্রতিবেশীনিকে দিদিমা ডাকতাম।মাই এই নামে ডাকতে বলেছিল।
একাত্তরে ওরা বাড়ীঘর ছেড়ে ভারতে চলে গিয়েছিল।
ফিরে এসে বাড়ি পেয়েছে জিনিসপত্র বিহারীরা লুট করেছে।
এখনও দেশে গেলে ছোটবেলার সাথীর সাথে দেখা হয়।
সহমর্মীতা আগের মতই আছে!
তবে আপনার গল্পই এখন বেশী ঘটে!
দুঃখজনক!
এজন্য রাজনীতিবাদরাই মূলতঃ দায়ী।
এসব ঘটনা গ্রামেই বেশী ঘটে থাকে।
কিভাবে তাদের মানসিকতা এত বদলালো?
উত্তর জানা নেই!
ছোটবেলায় কিভাবে যেন আমার সব টিউটর ‘হিন্দু’ ছিলেন, ওনাদের বাসায় সবসময় যেতাম, আমাদের বাসায় ঈদে ওনারা দাওয়াত খেতেন, আমরা পুজার দাওয়াত খেতে ভারতেশ্বরী হোমসে যেতাম। কখনো বুঝতে পারিনি ওনারা ভিন্ন কোন ‘জাতি’ । বড় হতে হতে বুঝলাম ওনারা নাকি আমাদের দেশে ‘সংখ্যালঘু’! এই কাহিনিগুলো পড়লে মন খারাপ হয়, জিদ হয়, অসহায় লাগে, মনে হয় ব্লগে বসে দুই চার কথা বলে কি বা লাভ। তাই অনেক সময় মন্তব্য করি না।
আমার খুব একটা গ্রামে যাওয়া হয় না। তবুও গ্রামের খবর টবর পাই মাঝে মধ্যে। একটা কাহিনী এরকমঃ আমাদের গ্রামে একসময় আওয়ামি লীগের ব্যাপক দাপট ছিল। এখনও আছে অবশ্য। যাই হোক, চেয়ারম্যানের ভাতিজাদের একবার ঘর তৈরী করার দরকার হল। বাড়ি তো হবে বিরাট(না হলে কি আর প্রেস্টিজ থাকে নাকি?) তার জন্যে অনেক কাঠও দরকার। বিশাল টাকার প্রয়োজন। তো টাকা ছাড়া কাঠ কিভাবে জোগার করা যায় সেই নজির দেখিয়ে দিলেন চেয়ারম্যানের ভাতিজারা। পাশেই হিন্দু পাড়া ছিল। সেখান থেকে গিয়ে যতটুকু কাঠ দরকার ততটুকু নিয়ে আসল এবং বাড়ির কাজও শেষ করল। কে গাছের মালিক তা খোজার তাদের দরকার পড়েনি। আজ পর্যন্ত কেউ টাকা দাবী করতেও আসেনি। হিন্দুদের ঘাড়ে আপনার আমার মত একটাই মাথা তো তাই পিতৃপ্রদত্ত মাথাটি আর হারাতে চায় নি। এই হল আমাদের দেশের শান্ত শিষ্ট লেজ বিশিষ্ট মুসলমানদের চরিত্র। এরা সুযোগ পেলে সব করতে পারে।
@সাইফুল ইসলাম,
কথাটা কি ঠিক হলো? চেয়ারম্যান সাহেবের ভাতিজাগণ ছাড়া কাজটা অন্যরা করতে হয়তো সাহস করতোনা। পেছনে একটা অদৃশ্য শক্তির বলে এটা করা হয়েছে। হয়তো আপনার মত অনেকেই কাজটা ভাল চোখে দেখেন নি, মনে মনে দুঃখ প্রকাশ করেছেন যদিও প্রতিবাদ করার সাহস করেন নি।
আমার অনুমান ভুল হতে পারে তবে আমাদের দেশের শান্ত শিষ্ট লেজ বিশিষ্ট মুসলমান
কথাটা মেনে নিতে পারলাম না।
জগদীশ রায় প্রায় প্রত্যেক গ্রামেই আছে। আছে বিদেশ থেকে আগত নেতারাও।
আদমশুমারী দেখলেই বুঝা যায় জফদীশ বাবুরা কমছে। ১৯৫১ সালে এ দেশে হিন্দু ছিল ২২%, ১৯৬১ সালে ১৮.৫%, ১৯৭৪ সালে ১৩.৫% , ১৯৮১সালে ১২.১%, ১৯৯১ সালে ১০.৫ এবং ২০০১ সালে ৯.২% ।
অপেক্ষায় আছি এবং অনুমান করতে পারি ২০১১ সালে তা নিম্নগামিই হবে।
আমিও এ ইতিহাসই লিখতে চাচ্ছি আমার সংখ্যালঘুর মানচিত্র ধারাবাহিক লেখায়। আমার তখন ও এখন এর কয়েকটা পর্বে এ বিষয়ে আলোকপাত করার চেষ্টা করেছি।
নৃপেন্দ্র সরকারকে ধন্যবাদ তার অভিজ্ঞতাকে হৃদয়গ্রাহী ভাষায় ফুটিয়ে তোলার জন্যে।
মন খারাপ করা লেখা যদিও, কিন্ত পড়তে ভালো লাগলো। গ্রামের পরিবেশের, তখনকার এবং বর্তমানের সুন্দর ছবি এঁকেছেন।
অসাম্প্রদায়িকতার মুখোশ পড়া রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, অনেকেই ভাবেন এটা বামপন্থীদের নিছক প্রচারণা, আর কিছু নয়। কিন্তু কোনরকম তত্ত্বের কচকচানি ছাড়াই আপনি স্পষ্ট করেই দেখিয়ে দিলেন তৃণমূলে সাম্প্রদায়িকতা কিভাবে বিষবাস্প ছড়ায়, কিভাবে মানুষকে ঘরছাড়া করে, কিভাবে নিজের চিরচেনা দেশ, নিজের গ্রাম অচেনা, অপরিচিত হয়ে যায়। জগদীশবাবু যেন সারা বাংলাদেশের হিন্দুসম্প্রদায়ের প্রতীক।
আরো লিখুন।
@ইরতিশাদ, আপনি পড়েছেন দেখেই ভাল লাগছে।
নিছক আত্মতৃপ্তির জন্য অনেক সন্মানিত লোকদের হয়রানির শিকার হতে নিজ চোখে দেখেছি। কষ্ট লেগেছে নিরপরাধ লোকগুলোর দূর্দশা দেখে। কিছুই করতে পারিনি। হাল্কা এবং সাবধানী একটা প্রতিবাদ পর্য্যন্ত নয়। আমার বন্ধুটি এই লেখাটি দেখলে অসুবিধা হতে পারে ভেবে আমার নিকট জনেরা এর মধ্যেই আমাকে সাবধান করে দিয়েছে – এসব কিছু না লেখার জন্য। বন্ধুটি আহত হবে, দুঃখ পাবে নিশ্চয়। হয়ত ভাববে আমাকে বললেই পারতিস। কিন্তু আপনি যেমনটা বলেছেন, আমি তো শুধু একজন জগদীশের চিত্র তুলে ধরিনি। জগদীশদের কথা বলতে চেষ্টা করেছি মাত্র।
মুক্তমনা একটা প্ল্যাটফর্ম দিয়েছে। আপনাদের মত পাঠকেরা পড়ছেন। এতে মনের কষ্ট অনেক লাঘব হচ্ছে। জগদীশ রায়ের দুই ছেলে বাংলাদেশেই আছে। ওদের একদিন দেখাব লেখাটি, সাথে আপনাদের মন্তব্য। ওদের হৃদয়ের ময়লা-যন্ত্রনা ধূয়ে যাবে আশা করি।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
নৃপেনদা,
লাল গোলাফ শুভেচ্ছা :rose2: :rose2: এমন একটি বাস্তব আপনার নিজের জীবনে দেখা গঠনাগুলি আমাদের সামনে হাজির করার জন্য।কি করুন বিষাদময় হতে পারে যদি কোনো রাষ্ট্র ধর্মকে ব্যবহার করে ধর্মীয় পরিচয়ে বাঁচতে জনগনকে শিক্ষা দেয়। অথচ কি ট্রেজেডী ঐ ধর্মীয় পরিচয়,সাম্প্রদায়িক চেতনার বিলোপ,অথর্নীতির শোষনও ভাষার শোষনের বিরুদ্ধে ৩০ লাখ জীবনের বলিদান দিয়েও তা আমরা আজো অজর্ন করতে পারি নি।কি অন্ধকার মধ্যযুগে আম রা আমাদের দেশকে নিয়ে গেলাম ?? :-/ :-/
আশায়থাক লাম।
এই বর্বর ও অমানবিক অবস্থার পরির্বনের কোন লক্ষন দেখা যাচ্ছে না। অবস্থা দিন দিন কেবল খারাপই হচ্ছে। আওয়ামিলীগ ক্ষমতায় যাবার পরেও অবস্থার কোন উন্নতি নাই। এর আগের বারে আওয়ামিলীগ নতুন মাদ্রাসার অনুমোদন দিয়েছিল তার আগের সরকারের চেয়ে বেশী।
ধর্ম যতদিন আমাদের রাজনীতিবিদদের রুটি-রুজির মামলা থাকবে, ততদিনে অবস্থা ভাল হবার কোন কারন নেই।
ধর্মগ্রন্থগুলোতে সমস্যা আছে কিন্তু্ সেগুলি ইন্ধন ছাড়া বেকার। গ্রন্থগুলো তখনো ছিল যখন আব্দুল করিম নিচের গানটি গেয়েছেনঃ
গ্রামের নওজোয়ান, হিন্দু-মুসলমান
মিলিয়া বাউলা গান আর মুর্শিদী গাইতাম।
আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম।
গ্রন্থগুলো আগের মতই আছে। আগেও কেউ খুব একটা পড়তোনা, এখনো পড়ে না। কিন্তু এর রাজনৈ্তিক ব্যাবহারের ফলে আজকে আর হিন্দু-মুসল্মানের পক্ষে সুন্দর দিন কাটানো সম্ভব হচ্ছে না।
@আতিক রাঢ়ী,
গানটি আব্দুল করিমের জানতাম না। ধন্যবাদ উল্লেখ করার জন্য।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
এই লিঙ্কটা দেখতে পারেন আপাতত। সময়সুযোগ পেলে আরো কিছু লিঙ্ক দিয়ে যাবো ভবিষ্যতে।
নৃপেনদা,
অনেক কিছুই মনে পড়ল। কৃষ্ণপক্ষই বটে। কিন্তু আপনি অনেককেই শুধু স্মৃতিতেই রাখেন নি, তাদের জীবনকে অনুসরণ করেছেন। আপনি পেরেছেন। কেন যেন আপনার লেখায় মনে পড়ল ৭১ সালের কিছু কথা। সেই সময় কিছু দিনের জন্য আমাদের অদূরবর্তী গ্রাম মগরায় আশ্রয় নিয়েছিলাম হরেন পাল ও গাদু পালের বাড়িতে। স্কুলের ছাত্র ছিলাম। কিন্তু মনে আছে বিশাল একান্নবর্তী পরিবার ছিল তাঁদের, বিরাট জায়গা জুড়ে দেয়াল ঘেরা কয়েকটা দালান, পাশে দুটো পুকুর। এমনই সুরক্ষিত ছিল সেই বাড়ি যে ডাকাতরা রাতে বাড়ি ঘিরে রাখলেও আক্রমন করতে সাহস পায় নি। আর ১৯৮০’র মধ্যে সেই বাড়ির প্রতিটি লোক চলে যায়, কোথায় গেল কে জানে, ভারতে, অন্য কোথাও। ‘৮০ সালে সেখানে গিয়ে সেই দালানগুলোর ধ্বংসাবশেষের মধ্যে হেঁটেছি, ৭১ সালেও যে বাড়ি বেঁচে গিয়েছিল পাকিস্তানী আক্রমন থেকে, স্বাধীনতার নয় বছরের মধ্যে তার কিছুই রইল না বাকি, ভুতূড়ে ভাঙ্গা ইটের ভিটা মাটির সাথে মিলিয়ে যাচ্ছিল। আমি নিশ্চিত আজ ৩০ বছর পরে সেই জায়গা আর ফাঁকা নেই। এই আর কি। লেখাটার জন্য ধন্যবাদ।
পড়তে অসুবিধে হচ্ছে, ফন্ট এত ছোট দেখাচ্ছে কেন দাদা?
@আকাশ মালিক,
নিশ্চয় কোথাও ভুল করেছি। মনে পড়ছে এরকম ভুল আরো একজন অতীতে করেছিলেন। সমাধানটি মনে পড়ছে না এই মূহুর্তে। দুঃখিত বলা ছাড়া আমার কিছু করার নেই।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
ভালো লাগলো আপনার লেখা, দেশ ত্যাগের ঘটনা দু’ই অঞ্চলেই হয়েছে। এই রকম অভিজ্ঞতা দু’ই অঞ্চলেই আছে। বড্ড করুণ, বিষাদময় ,কাকে দোষ দেয়া যায়,জানিনা। আপনার লেখার সাথে আমাদের মত অনেকেরই পুর্ব পুরুষ যাঁরা এপার-ওপার হয়েছেন,কষ্ট কিন্তু দু’পক্ষেরই একই রকম।
যেমন পশ্চিম বঙ্গে এ দেশ থেকে চলে গিয়েছে যারা তাদের “বাঙ্গাল” বলে, এ দেশেও তেমন ঐ দেশ থেকে যারা এসেছে তাদের “ঘটি” বলে। গ্রহণ করতে পারেনা এখন ও মনে প্রানে।
অবাক লাগল কি জানেন? এই নিয়েই আমি লিখতে বসেছি।আর এর মাঝেই আপনার লেখা।
@আফরোজা আলম,
ধন্যবাদ।
অপেক্ষা করছি আপনার লেখার জন্য।
জগদীশ রায় আমার জেঠু।
আমরা এখন ভারতে আছি।