ঢাকার নিমতলীতে ঘটে গেল স্মরণকালের ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা। একশবিশ জনের কাছাকাছি লোক মারা গেছে। তার একদিন আগেই আমরা পেপারে পড়লাম তেজগাঁও-এর বেগুনবাড়িতে পাঁচতলা বাড়ি ধ্বসে অধিবাসীদের মৃত্যুর খবর। খবরগুলো এখন এতোটাই গা সওয়া হয়ে গেছে যে, আমাদের আর বিচলিত করে না। একটু আধটু হয়ত হা পিত্যেস করি, বড় জোর আড্ডায় কিংবা ব্লগে গলাবাজি করি, সরকারের তরফ থেকে ঘটা করে এক দিন দুদিন শোক দিবস পালন করা হয় – তারপর আবার যেই কি সেই।
অথচ এই মৃত্যুগুলো আমাদের চোখে বার বারই আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় কি অপরিণতভাবে আমাদের ‘তিলোত্তমা’ ঢাকা নগরী বেড়ে উঠেছে। পঙ্গপালের মত পিল পিল করা ‘মনুষ্যমন্ডলী’, যেখানে সেখানে পরিকল্পনাহীন দালান কোঠা, আর ময়লা আবর্জনার স্তুপ তো আছেই। আর সবচেয়ে ভয়াবহ মনে হয় পুরানো ঢাকার অবস্থা। কানা ঘুপচি গলি, দুই হাত বিঘতের চিপা চাপা রাস্তা, আর দুপাশে সারি সারি অবিন্যস্ত ‘শহুরে বাড়ি’। একই জায়গায় রাসায়নিক কারখানা, তার পাশেই হয়তো কাগজের মিল বা বইয়ের দোকান, আর তার পেছনেই থাকবে কাঠের দোকান আর সিঙ্গারা ডালপুরির ‘রেসটুরেন্ট’, আর সামনে হয়তো কাঁচা বাড়ি ঘর। কাজেই আগুন লাগলে কারো বাপের সাধ্য নেই সেই আগুন ছড়িয়ে পড়া ঠেকায়। সত্যি বলতে কি – আগুন লাগলে আমি আর অবাক হইনা, অবাক হই এই ভেবে এতদিন ধরে এরকম গরম চুল্লির উপর বাস করেও আগুন লাগেনি কেন! যেখানে ট্রান্সফর্মার, তার পাশেই কেমিক্যালের গো-ডাউন, তার পাশেই সারি সারি ভবনগুলো মিলে মিশে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে মাথা উঁচু করে বসবাস করে! সত্যি সেলুকাস, কী বিচিত্র এই দেশ।
হাইতির ভয়াবহ ভূমিকম্পের কথা যখন পত্রিকায় পড়েছিলাম – প্রথমেই মনে এসেছিল একটা হিমশীতল ভাবনা – ঢাকায় এ ধরণের ভূমিকম্প হলে কত লক্ষ মানুষ একদিনে মারা যাবে? বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ইন্দো-বার্মা-হিমালয়ান টেকটোনিক প্লেটের সঞ্চালনের কারণে বাংলাদেশ ভূমিকম্প বলয়ে আছে খুব ভাল ভাবেই। কাজেই বাংলাদেশও যে হাইতি হয়ে উঠবে না কে বলতে পারে হলফ করে? যে শহরে হাজার হাজার ঝুঁকিপূর্ণ বিল্ডিং, ঘুপচি ঘুপচি ঘর বাড়ি, ফায়ার এক্সিট বিহীন গ্যাস চেম্বারের মত গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি, যেখানে আগুন লাগলেও শ্রমিকেরা বের হতে পারে না, যে শহরে পয়ঃপ্রনালী আর ওয়াসার লাইন প্রায়শঃই এক হয়ে যায়, যেখানে পানির জমাটবদ্ধতা আর দুর্গন্ধ কুঁড়ে কুঁড়ে খায় প্রতিদিন, সেই শহর কতদিন আর প্রকৃতির চোখ রাঙ্গানি অপেক্ষা করে টিকে থাকবে? সামনে আসছে আরো বড় দুর্দৈব।
নিমতলীর ঘটনায় আমি মর্মাহত। নিহতদের জন্য শোক প্রকাশের শব্দও হারিয়ে ফেলেছি। যারা বেঁচে আছেন – তাদের সম্পর্কে আর নতুন কিছু বলার নেই। ঢাকা শহরের টিকে থাকাটাই আমার মতে শতাব্দীর বড় বিস্ময়। সেই বিস্ময় প্রতি নিয়ত পদদলিত করে সেখানে বাস করে যারা টিকে থাকার সংগ্রাম করে যাচ্ছেন প্রতিদিন – তাদের জানাই আমার শ্রদ্ধা।
এই শহরে যান দুর্ঘটনায় মানুষ মরে, ভবন ধসে বা আগুনে পুড়ে মানুষ মরে, মাথার উপর বিলবোর্ড, এমনকি ব্রিজ ভেঙে মানুষ মরে, ভবন ভাঙতে গিয়েও মানুষ মরে। …যত রকম নাগরিক দুর্ঘটনায় মানুষ মরতে পারে– সব রকম দুর্ঘটনা এখানে ঘটেই চলে। আর আমরা কিছুদিন এই নিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলি, হা-হুতাশ করি, মনে মনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলি–যাক, নিহতদের তালিকায় আমার স্বজন বা প্রিয়জন কেউ নেই, তারপর নির্লজ্জর মতো সব কিছু ভুলে যাই।…
হঠাৎ আরো কোনো দুর্ঘটনা আবার আমাদের খানিকটা ভাবায়– এই যা; এ রকমই হচ্ছে, হয়ে চলছে, আশা করা যায়, আগামী ২০/২৫/৫০/১০০ বছর ধরে হয়ে চলবে।
যখন ভাবি, শুধুমাত্র ভাতের জন্য এই মৃত্যুকূপে আমার বাধ্যগত বসবাস, তখন খুব অসহায় লাগে।… 🙁
@বিপ্লব রহমান,
সহজ কারন হল এতকিছুর পরেও ঢাকায় থাকা বাদে উপায় নেই। এটাই সত্য। ব্যাবস্থাই গড়া হয়েছে এভাবে। প্রতি বছর এইরকম ১০ টা দূর্ঘটনা আর ৫০ টা বাড়ি ভাংগলেও ঢাকাগামী জনস্রোত থামবে না, ঢাকাবাসীরাও কেউ ঢাকা ছেড়ে মফস্বলে যেতে মন্ত্রনালয়ে তদবীর করবে না।
@আদিল মাহমুদ,
ঢাকার মধু বড়োই মিষ্টি…!
এতকিছুর মধ্যেও বেঁচে যে আছি, এতেই তো বোঝা যায় ঈশ্বর আছেন 😛
আমি মারা-টারা গেলে আমার নামে একটা ব্যানার ঝুলানোর তীব্র দাবি জানায়ে গেলাম মুক্তমনা কর্তৃপক্ষের কাছে। 😀
@ব্লাডি সিভিলিয়ান,
তেমন অঘটন (হয়ত বা ঘটনা) ঘটে গেলে আপনার শেষ ইচ্ছা অবশ্যই পূরন করা হবে। তবে আপনার আসল নাম দিয়ে যাবেন। আপনার যা নিক তা দিয়ে সাধারণত আমাদের দেশের দেশপ্রেমের একচ্ছত্র দাবীদার জলপাই ভাইয়েরা আমাদের গালিগালাজ করেন। ওটা ওনাদের জন্যই তোলা থাক।
@ব্লাডি সিভিলিয়ান,
আপনি পুরান ঢাকায় থাকেন নাকি? এত আগুন লাগার পরেও যখন আগুন আপনের টিকিটা ধরতে পারে নাই, তাহলে মনে হইতেছে আপনের কই মাছের প্রাণ। এত সহজে মরবেন না। ভানুর মতোই বলতে হয় – একমাত্র বজ্রাঘাত ছাড়া আপনার মারা যাওয়ার কোন চান্স নাই। একটা ত্রিশুল যোগাড় করে নিয়ে আসেন, সেইটা আপনের পিঠে বসিয়ে আর্থিং করে দেই, তাহলেই আপনে মৃত্যু-প্রুফ।
–আপনার পিঠে ত্রিশুল ওয়ালা ছবিটা মনে করেই রোমাঞ্চিত হয়ে উঠছি। ওরকম একটা ছবিই ব্যানারে যেতে পারে। …।
আর ছবির নীচে লেখা থাকবে …
ব্লাডি সিভিলিয়ান স্মরণে –
এনেছিলে সাথে করে মৃত্যুহীন প্রাণ
বজ্রাঘাতে তাই করে গেলে দান… 😀
@ব্লাডি সিভিলিয়ান, যাক ঈশ্বরের ইচ্ছায় আপনি যে এখনও বেঁচে আছেন এইতো বেশী :-)। আমাকে উধাও হয়ে গেছে নাকি জিজ্ঞেস করে নিজেই তো দেখি হাওয়া হয়ে গেলেন। আপনাকে বিবর্তনের আর্কাইভের দ্বিতীয় প্রশ্নটা পাঠিয়েছি, দেখে দিয়েন।
আবাসিক এলাকায় যে কোন বিপজ্জনক শিল্প কারখানা, দোকান বা গুদাম ইত্যাদির ক্ষেত্রে সরকারের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি ও সত্বর তা প্রয়োগের ব্যবস্থা করার জোর দাবি করছি। ভবিষ্যতে এ জাতীয় মানবসৃষ্ট দুর্যোগের পুনরাবৃত্তি রোধে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ আশা করছি।
এ-তো দেখছি কাফকার শহর!
হটাৎ করে একের পর এক বিন্ডিং হেলে পড়ছে এটা মেনে নেয়া কঠিন ব্যাপার। আমার মনে হয় আগে থেকেই হেলে পড়েছিল কেউ খেয়াল করেনাই। এখন ভয়ে সবাই নিজেদের বিন্ডিং এ ভালকরে নজর দিয়ে নতুন করে ফাটল বা হেলে পড়া আবিষ্কার করছে।
একটা বিষয় সবাই খেয়াল করে দেখবেন, ভবন হেলে পড়ে পরার ব্যাপারটি কোন নতুন বিষয় নয়।আমি নিজেই আমাদের শহরে কয়েকটা হেলে পড়া ভবন দেখেছি। লোকজনের দিব্যি সেগুলোতে বাস করছে।
যখনই একটি দূর্ঘটনা ঘটে, তখনই লোকজনের টনক নড়ে, আর সংশ্লিষ্ট দূর্ঘটনার ঝুকির মুখে থাকা ভবনগুলোর দিকে সবার নজর পড়ে।কয়েকদিন পরে লোকজন আবার তা ভুলেও যায়।আজ টিভিতে দেখলাম, কনকর্ড টাওয়ারে ফ্লাট মালিকরা বেশ কিছুদিন ধরেই কর্তৃপক্ষকে ভবন হেলে পড়ার ব্যাপারে অভিযোগ করে আসছিলেন।কিন্তু তারা তাতে কর্ণপাত করেননি। আজ একটি দূর্ঘটনা ঘটনার পর ব্যাপারটি সবার নজরে এল। কয়েকদিন আগেও তো একটি বহুতল ভবনে অগ্নিদগ্ধ ও ধোঁয়ায় দমবদ্ধ হয়ে বেশ কিছু মানুষ মারা গেল। রাজউক কর্তৃপক্ষ যদি তখনই যদি একটি ব্যবস্থা নিতেন, তাহলে আজ আমাদের হয়তো এতগুলো মানুষের মৃত্যু দেখতে হতো না।
আল্লাচালাইনার দেয়া বই এই ব্রুস অ্যালবার্টস মলিকিউলার বায়োলজি অফ দি সেল বইটা কততম এডিশনের এটা আমার জানা দরকার। তাহলে লাইব্রেরী থেকে বইটা এনে দেখতাম।সম্ভব হলে জানাবেন। আমি আমার ব্লগ যেখানে আল্লাচালাইনা কমেন্ট করেছেন সেখানে কমেন্ট ক্রতে না পেরে আপনার হেল্প চাচ্ছি। আমার কমেন্টগুলো দেখলাম মডারেশনে যাচ্ছে!
@ঋণগ্রস্ত,
প্লাগইন আপগ্রেড করতে গিয়ে সমস্যা হয়েছিলো বোধ হয়। ধন্যবাদ ব্যাপারটি নজরে আনার জন্য। এখন লেখক হিসবে আপনার নামই দেখা যাওয়ার কথা। দেখুন এখন সব ঠিক আছে কিনা। তবে শুধু নিজের প্রবন্ধেই মন্তব্য না করে এরকম বিভিন্ন প্রবন্ধে মন্তব্য করলে ভাল লাগবে।
আল্লাচালাইনাকে করা প্রশ্নের উত্তর উনিই দিক। আর বইয়ের ব্যাপারে আপনাকে অনুরোধ করব, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয় যে কোন একটা পাঠ্যপুস্তক যোগাড় করে নিতে। হয়তো আপনার সাথে আলোচনায় সব কিছু পরিস্কার করতে পারি নি, কিন্তু আমি নিঃসন্দেহ যে, আপনি বিবর্তনের কোন বই লাইব্রেরি থেকে তুলে পড়া শুরু করলে অনেক কিছুই পরিস্কার হয়ে যাবে। এই অধ্যাপক ফুতুয়ামা আর অধ্যাপক মার্ক রিডলীর দুটো বই খুবই কাজের –
Evolution, Douglas J. Futuyma, Sinauer Associates, 2005
Evolution (Paperback), Mark Ridley, Wiley-Blackwell; 3 edition (November 14, 2003)
আর পপুলার লেভেলে লেখা বই অধ্যাপক জেরি কয়েনের ‘হোয়াই এভুলুশন ইজ ট্রু’ বইটাতে খুব সহজে সব ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে –
Why Evolution Is True, Jerry A. Coyne, Viking Adult (January 22, 2009)
এরা সবাই কিন্তু একাডেমিক লাইনে গবেষণা করা জীববিজ্ঞানী।
মুক্তমনায় আলোচনা চালিয়ে যাবার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
লঞ্চ ডুবির সাথে আগুন লাগা এবং দালান হেলে পড়া যোগ হচ্ছে বাংলাদেশের নিয়মিত দুর্ঘটনা হিসেবে। অচিরেই এ ব্যাপারগুলোতেও সবাই নির্বিকার-চিত্ত হয়ে পড়বে।
সত্যিই মর্মান্তিক! এ ভাবে প্রতিদিন অস্বভাবিক মৃত্যু মেনে নেয়া যায় না।
অভিজিত দা, আমার লেখা দুটোর লেখকের নামের জায়গার মডারেটর লেখা কেন? বুঝতে পারছি না।
– এ কথা অনেক কিছুর ক্ষেত্রেই খাটে। শুধু আগুন নয়, আমাদের পুরো দেশটাই এতই বিশৃংখ এবং অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে এবং সরকার ও জনগণ কেউই নিরাপত্তামূলক ব্যাবস্থার সাধারন বিধিগুলিও মানতে চায় না, তদুপরি আইনকে কলা দেখিয়ে বিমলানন্দ পায় তাতে যে নিত্যদিনই আরো ভয়াবহ দূর্ঘটনা ঘটে না তা নেহায়েতই ভাগ্যের ব্যাপার। আল্লাহ যে আছেন তার প্রমান মনে হয় শুধু এখানে থেকেই পাওয়া সম্ভব! সেটা ঘরবাড়ি নির্মান, সড়ক দূর্ঘটনা, অনেক কিছুর ক্ষেত্রেই খাটে।
আমি নিজের পেশাগত অভিজ্ঞতা থেকে জানি যে ঢাকার বাড়িগুলি কি মারাত্মক ঝুকির উপর আছে। কোন পত্রিকায় মাত্র গত সপ্তাহে যেন পড়েছিলাম যে ঢাকার শতকরা ৯০ ভাগ বাড়িরই যথাযথ অনুমোদন নেই। মোটেও অবাক হইনি। ৫ তলা বাড়ির অনুমোদন নিয়ে দেদারসে করা হয় ৭/৮ তলা। শুধু তাই নয়, আবাসিক বাড়ির যায়গায় বসিয়ে দেওয়া হয় ভারী যন্ত্রপাতিওয়ালা গার্মেন্টস জাতীয় শিল্প কারখানা। ফলে বাড়ির স্ট্রাকচার যে ভার নেবার কথা ভেবে ডিজাইন করা হয়েছিল ও রাজউক অনুমোদন দিয়েছে তার যায়গায় ভার বেড়ে যাচ্ছে অনেক। ফলাফল হতে পারে খুবই মারাত্মক। প্রশ্ন হতে পারে যে তাহলে কেন সব বাড়িতে বিপর্যয় হচ্ছে না? তার কারন সব ডিজাইনের ফ্যাক্টর অফ সেফটি চিন্তা করে কিছু বেশী ভার ধরে ওভার ডিজাইন করা হয়। এই অবস্থা মারাত্মক ঝুকিপূর্ণ। সামান্য ভূতাত্বিক নড়াচড়া বা একযোগে বহু লোকে বাড়িতে জমায়েত, অথবা ভারী যন্ত্রপাতি টানা হ্যাঁচড়া করা হলেই আকস্মিকভাবে ঘটে যাতে পারে মহা বিপর্যয়। আর ওভার ষ্ট্রেসড অবস্থায় বাড়ির লোহার রড দীর্ঘদিন থাকলে তা হারিয়ে ফেলবে তার স্বাভাবিক ইলাষ্টিসিটি, ঘটে যাবে কোন নোটিস ছাড়াই মহা বিপর্যয়, মানে এমনকি আগে থাকতে ফাটল টাটল এমন কোন আগাম সাবধানবানীও দেখা যাবে না।
এমনকি অনুমোদন পাওয়া বেশীরভাগ বাড়িতেই খরচ বাচাতে অনেক তেলেসমাতি ব্যাপার ঘটানো হয় যার কোন লেখাঝোকা নেই। এক যায়গায় শুনেছিলাম লোহার রডের সাথে বাঁশের কঞ্চি ভরে দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ভুমিকম্প বলয়ে হলেও বিপ্লব যে কারন বললেন সে কারনেই আমাদের দেশে ডিজাইনে ভূমিকম্পকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় না। আসলেই বাংলাদেশের মাটি নির্মানের জন্য খুবই ভাল। পলি/বালি মাটি বাড়ির ভীতের জন্য খুবই নিরাপদ। অনেক বাড়ি যে কোন ডিজাইন বা অনুমোদন ছাড়াই টিকে আছে তার একটা কারন এটা। ভুমিকম্প হিসেব করে বাড়ি বানাল খরচ বেড়ে যায় বহুগুন। তবে এই ঘনবসতিপূর্ন হাইরাইজ ওয়ালা ঢাকায় হাইতি মাপের কিছু হলে কি হবে তা চিন্তা করারও ক্ষমতা আমার নেই।
এখন কথা হল এ ব্যাপারগুলি কেন ঘটছে, কিভাবেই বা সবার চোখের সামনেই এমন তোঘলকি ব্যাপার ঘটছে? দেশে কি সরকার বা সচেতন মানুষ কেউই নেই?
এর প্রধান কারন ঢাকা শহরে মাত্রাতিরিক্ত লোক। এত ছোট একটি যায়গায় সোয়া কোটি লোকে থাকলে এমন বিপর্যয় অনেক দিক দিয়েই আসতে পারে। দূঃখজনকভাবে অনেক সময়ে জেনেশুনেই আমাদের ঝুকিপূর্ন কাজকারবার করতে হয়। যেমন, ঢাকার রাস্তায় কতদিন আমি নিজে বাসের দরজায় কোনমতে ২ ইঞ্চি যায়গায় এক পায়ের অংশবিশেষ ঢুকিয়ে শরীরের বাকি অংশ বাইরে ঝুলিয়ে চলাচল করেছি। আমি একাই নই, ওই অবস্থায় কন্ডাকটরসহ আছে আরো ৮/১০ জন। সেই অবস্থায় অন্য গাড়ি পাশ দিয়ে গেলে সবাইকে এক্রোবেট কায়দায় শরীর বেকিয়ে চু্রিয়ে পাশ কাটাতে হয়। কয়েজকনকে পড়েও যেতে দেখেছি। নিজেও একবার এক টেম্পুর সাথে বাড়ি খেয়েছি। কথা হল, আমি এই ঝুকি না নেওয়া ছাড়া কোন গতি দেখতাম না। প্রযোযন ও আর্থিক সংগতির কাছে সাধারন নিরাপত্তাবোধ হয়ে গেছিল গৌণ।
বহু আগেই উচিত ছিল ডিসেন্ট্রালাইজড ব্যাবস্থা গড়ে তোলার। করা হয়েছে উলটা। জনসংখ্যার ঘন্ত্ব কমানো ছাড়া আবাসন, যানজট, পানি/বিদ্যুত কোন সমস্যারই সমাধান সম্ভব নয়। এর সাথে যোগ হয়েছে আমাদের জাতীয় চরিত্রের কয়েকটি খারাপ দিক। আইনকে কলা দেখানোর মারাত্মক প্রবণতা তার অন্যতম। একটি ক্লাসিক উদাহরন দেখুনঃ
“বহুতল বানিজ্যিক ভবন নুরজাহান কমপ্লেক্সের মালিক আনোয়ার হোসেন, আশে পাশের বসত বাড়ি ও মার্কেটে ফাটল প্রসংগে, বড় একটি কাজ করতে গেলে এমন ছোটখাট ক্ষতি হতেই পারে”
এ ধরনের দায়িত্ববোধহীন, স্বার্থপর, নিষ্ঠুর, অমানবিক বক্তব্য প্রকাশ্যে দেওয়া মনে হয় শুধু আমাদের দেশেই সম্ভব।
@আদিল মাহমুদ,
একজন ইঞ্জিনিয়ারের দৃষ্টিকোন থেকে করা চমৎকার বিশ্লেষণ। বুয়েটের বাংলা বিভাগ তাইলে মরে নাই! 😀
@অভিজিৎ,
হতেই হবে।
“আগে চাই মাতৃভাষার গাঁথুনী, তারপর বিদেশী ভাষার পত্তন”।
আশা করি মনে আছে।
@আদিল মাহমুদ,
বর্তমানে আমি মনে করি ঢাকাতে সাধারন সময়ে কম করে হলেও দুই কোটি মানুষ থাকে। অবাক হব না যদি তা বাস্তবে আরো ৫০ লক্ষ বেশি হয়।
ভূমিকম্প ঢাকাতে হওয়া মুশকিল-কারন ঢাকা বসে আছে প্রায় ৩০০ মিটার পলিস্তরের ওপর-ক্লে শক এবসর্বার-সেই জন্যে বদ্বীপে ভূমিকম্পের তীব্রতা কম থাকে।
তবে আগুন যেকোন দিন ও লাগতে পারে। কিছুদিন আগে কোলকাতার স্টিফেন কোর্টে আগুন লেগে ৫০ জন মারা গেছে। ঢাকা এবং কোলকাতা চলমান জতুর্গৃহ। ব্যাঙ্গালোরে গিয়েছিল ২৭ জন। সবই এ বছরের ঘটনা।
সেই একই কথা। দেশের লোকেদের বিজ্ঞানচেতনার অভাব। ফলে উনুন, রাসায়নিক কারখানা-সব কিছু এক জায়গায়।
হেলে পড়েছে পুরান ঢাকার আরেকটি বাড়ি।
দয়াগঞ্জের পুরানো ৫তলা বাড়ি সামনের দিকে হেলে পরেছে।
আরো একটি খবর , শান্তিনগর এলাকায় কনকডের ২০ তলা ভবন হেলে পরেছে । লো্কজন কে অন্য যায়গায় সরিয়ে নেয়া হচছে।
এবার আরেকটি খবর-
মগবাজারে একটি পাকা রাস্তার মাঝখান দিয়ে গ্যাস লিক হচ্ছে। এটা নাকি দুদিন আগে থেকে শুরু হয়েছে, তবে এখন তা তীব্রতর হচ্ছে। তবে শুরু থেকে তিতাস গ্যাসকে বিষয়টি এলাকাবাসী খবর দিলেও তারা এই দুদিন পেরিয়েও এখনো ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেনি। এদিকে তিতাস গ্যাসের অফিসে গিয়ে তথ্য পরিবেশন করা হলো- বর্ষায় রাস্তাঘাটে পানি জমে উঠার কারণে গত দুদিনে এরকম ৮৫ টি গ্যাস লিকের তথ্য তাদের কাছে এসেছে বলে জানায়। কিন্তু লোকবলের কারণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া তাদের পক্ষে নাকি সম্ভব হচ্ছে না।
টিভি ক্যামেরার সামনে বৃষ্টি ভেজা রাস্তার মাঝখানে পানি জমে বুদবুদ তৈরির স্থানটিতে একজন মেচের কাঠি জ্বালিয়ে ছেড়ে দিলে দাউ দাউ করে মাঝারি আকারের আগুন জ্বলে উঠে। এলাকাবাসীর আশঙ্কা এখনই জরুরি উদ্যোগ না নিলে লালবাগের মতো আরেকটি দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়া বিচিত্র নয়।
@রণদীপম বসু,
আমদের মনে হয় ঢাকাকে পরিত্যাক্ত নগরী ঘোষনার সময় এসে গেল।
@রণদীপম বসু,
অনেকগুলো মর্মান্তিক খবর দিলেন একই সাথে। আসলেই ঢাকা বোধ হয় ধীরে ধীরে পরিত্যক্ত নগরী হয়ে উঠছে।
পুরাতন ঢাকার বাড়িগুলোকে দেখলে মনে হয় কোন মৃত বাড়ির কঙ্কাল। এখন সেগুলো ভেঙ্গে অনেক বহুতল ভবন উঠছে। কিন্তু রাস্তার জন্য নতুনকরে কোন জায়গা ছাড়া হচ্ছেনা। আগে দুই তলা বাড়ির সামনে ৬ ফুট রাস্তা ছিলো এখন ১৫ তলা বাড়ির সামনেও ছয় ফুট রাস্তা। আফসোসে মাথার চুল ছিড়ে ফেলতে ইচ্ছা করে দেখলে। এটাই ছিল রাস্তাটা ত্রিশফিট করে নেয়ার উপযুক্ত সময়। সরকারের আইন আছে ৪০% জায়গা ছেড়ে বাড়ি করতে হবে। কিন্তু এই আইনগুলো কিছু সরকারি কর্মকর্তা-কর্মকর্তার উপরি আয়ই কেবল বৃদ্ধি করে চলেছে।
মন্ত্রী মহোদয় সাধু না তাই আমলা তার কথা মানে না। আমলা সাধু না তাই অন্যরা তাকে মানে না। এভাবেই চলছে দেশ, এভাবেই চলছে প্রশাসন। আসলে আমাদের সমস্যা মাথায়, পেটের চিকিৎসা করলে কোন উপকার পাওয়া যাবে না।
আরেকটি দুঃসংবাদ প্রচারিত হচ্ছে টিভি চ্যানেলে-
শান্তিনগরে একটি ২২তলা টাওয়ার বিল্ডিং (নাম সম্ভবত কনকর্ড গ্রান্ড টাওয়ার) ইতোমধ্যে হেলে পড়তে শুরু করেছে। এলাকায় মাইকিং হচ্ছে। বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা সেখানে অবস্থান নিয়েছে। ওই টাওয়ার থেকে জরুরিভাবে লোকজনকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে এবং আসেপাশের বাড়িগুলো থেকেও মানুষজন নিচে নেমে এসেছে। এরই মধ্যে টাওয়ারের বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে।
যেকোনো সময়ে আরেকটা ভয়ঙ্কর ঘটনার মুখোমুখি হতে হচ্ছে মনে হয়।
@রণদীপম বসু,
সরি, আমার তথ্যে একটু ভুল আছে। হেলে পড়া নয়, টাওয়ারটিতে বিপজ্জনকভাবে ফাটল দেখা দিতে শুরু করেছে। টিভিতে ভবনটির নম্বর সম্ভবত ১৫৯/১ দেখলাম। নিচের পাঁচতলা পর্যন্ত বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, উপর থেকে আবাসিক। আশেপাশে রাস্তায় যান-চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
@রণদীপম বসু,
এলাকাটি কর্ডন করে রাখা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এলাকাবাসীকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে মর্মে ঘোষণা প্রচার করা হচ্ছে।
তবে একজন ইঞ্জিনিয়ারের বক্তব্য শুনলাম- এই ফাটল নাকি উপরের পুরু প্লাস্টার পর্যন্ত, ভেতরের মূল ভিত্তি অটুট রয়েছে।
এইমাত্র একুশে চ্যানেল থেকে আবার প্রচারিত হচ্ছে, ইস্টার্ন প্লাস শপিং মলের বিপরীতে একটি ২১তলা ভবন (উপরোক্ত) হেলে পড়েছে।
মানে সব আউলাঝাউলা ! এইমাত্র ভবনের পেছন দিক থেকে ক্যামেরায় দেখানো হচ্ছে অসংখ্য জায়গায় বিপজ্জনক ফাটল এবং ভবন হেলে পড়ার দৃশ্য !
@রণদীপম বসু,
ইতোমধ্যে স্থানীয় সাংসদ এবং রাশেদ খান মেননও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গেলেন। ফায়ার ব্রিগেড থেকে এই স্থানে লোকচলাচলকে ঝুঁকিপূর্ণ বলা হচ্ছে। সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে আশেপাশের এলাকাবাসীকে নিরাপদ অবস্থানে চলে যাওয়ার জন্য মুহূর্মুহূ মাইকিং চলছে। কোথাও যাবার জায়গা নাই বলেই কিনা, নাকি অন্য কোন কারণে, উপরের আবাসিক অংশের শতাধিক পরিবারের মধ্যে কোন কোন পরিবার ফ্ল্যাটেই রয়ে গেছেন বলে জানা যাচ্ছে।
আরেকটি বিষয় জানা গেলো কনকর্ডের এই বিল্ডিংটার প্রাথমিক অনুমতি ছিলো দশ তলা পর্যন্ত। পরবর্তী আরো দশ-বারো তলা নির্মাণের অনুমোদন আছে কিনা জানতে পারিনি।
@রণদীপম বসু,
বিডিনিউজ২৪-এর খবরটি এখানে।
@রণদীপম বসু,
আমি এই কথা লেখার জন্য এলাম।দেখছি আপনি আগেই বলেছেন।খুব ভালো করেছেন।
তবে আশ্চর্যের কথা কর্তৃপক্ষ নাকি বলছে সরে যাবার দরকার নাই। সবাই নিরাপদে থাকবে।
যেখানে মাইকিং করে বলা হচ্ছে সবাইকে এবং আশে পাশে যারা আছে তারাও যেনো নিরাপদ স্থানে সরে যাক অথচ কর্তৃপক্ষ (বিল্ডং এর ) এমন নির্বিকার ভাবে বলে কী করে?
ঢাকা শহর থেকে যতো বাইরের লোক জন সরাতে উৎসাহি করবে সরকার ততোটাই মঙ্গল।এই জন্য
দরকার ঢাকার বাইরে কেন্দ্রিয় কার্যালয় করা।অর্থাৎ যাকে ডি সেন্ট্রালাইজেসন বলে। ইন্ডিয়াতে যেমন চলছে। আমাদের সরকারি আমলা,মন্ত্রীরা ভোটের সময় নিজ নিজ এলাকায় যান।বাকি সময় ঢাকায় থাকতেই পছন্দ করেন। কি জানি কেনো।
টিভির সামনে বসে সারারাত এ ঘটনা দেখেছি। উহ, সে কী অবস্থা। ১১৭ টা মানুষ পুড়ে লাশ হয়ে গেল। নিহতদের আত্মীয়-স্বজনদের সে কী আহাজারি আর আহতদের সে কী আর্তনাদ।
রায়হান আবীর বলেছে
আসলে আমাদের দেশের মানুষের ইমান এত মজবুত। একটি লেখায় দেখলাম নিহতদের রুহের মাগফেরাত কামনা করা হচ্ছে। গতকাল শুক্রবার মসজিদে মসজিদে দোয়া পালন করা হয়েছে। আচ্ছা, মানুষগুলো যখন পুড়ছিল, শিশুগুলো পুড়ছিল তখন আল্লা কোথায় ছিলেন?- এ প্রশ্ন কারো মধ্যে দেখলাম না। আমাদের মধ্যে সচেতনতা কবে যে আসবে?
আসুন, আমরা যে যেভাবে সম্ভব দূর্ঘটনা কবলিত মানুষদের সাহায্যে এগিয়ে আসি।
@সৈকত চৌধুরী,
আমি ইচ্ছে করেই আল্লাহ খোদার ব্যাপারগুলো লেখায় আনিনি। এমনিতেই আগুনে পুড়ে জীবন মর্মান্তিক পর্যায়ে চলে গেছে, তাদের সাহায্যের ব্যাপারটাই হওয়া উচিৎ মূখ্য। বর ভাবছিলাম এখন বোধ হয় আল্লাহর নিষ্ঠুরতা নিয়ে প্রশ্ন করার সঠিক সময় নয়, বরং ভবিষ্যতে এ ধরণের দুর্ঘটনা থেকে বাঁচার বাস্তবসম্মত উপায় কী কী হতে পারে। কিন্তু উপরে রায়হানের আর আপনার মন্তব্যের পর ভাবতে বাধ্য হলাম “আল্লাহ ভরসা” কিংবা “রাখে আল্লাহ, মারে কে?” ধরণের মনোভাব অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের সঠিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হিসবে কাজ করে। এটা অস্বীকার করা বোকামি। আমরা সব কিছু ঈশ্বরের হাতে তুলে দিতে যে পরিমান স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি, ঠিক সেই পরিমানই অনীহা সঠিক প্রযুক্তি ব্যবহারে, আর সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহনে। মানুষ মরে সাফা হয়ে গেলেও বলা হয় আল্লাহর পরীক্ষা আর ঘটা করে শুরু হয় রূহের মাগফেরাত কামনা, আর বেঁচে থাকলেও সেই আল্লাহরই দয়া আর লীলা। কি আর বলব!
এসব অনিয়মে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যে নিশ্চুপ থাকে, তাতে মনে হয় এটা হয়তো আমাদের অযাচিত জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের সরকারি গূঢ় কৌশল।
যে বাড়িটা কাত হয়ে গেছে, ওটা নাকি ঝুঁকির তালিকাভুক্ত ৫০০০ বাড়ির একটি। বাবি ৪৯৯৯টা বাড়ির লোকেশন কোথায় ? এটা জানা যাবে না। আবার আরেকটা কাত হলে নূরানি চেহারা বুলাতে বুলাতে সংশ্লিষট কেউ আবার বলবেন- এটাও আমাদের তালিকায় ছিলো।
আর আমরাও তখন মুগ্ধ বিস্ময় নিয়ে বলবো- তাইতো ! তালিকায় না থাকলে ওটা কাত হবে কেন ? আর এটা যে কাত হবে, তারা এটা বুঝলো কেমনে ! ভয়ানক প্রতিভা তো !
আমার সুপারভাইজার স্যার সেদিন একটা ঘটনা বলেছিলেন। সেইটা শেয়ার করি।
কয়েকদিন আগে উনি রাস্তা ধরে হেঁটে যাচ্ছেন। পাশে একটা ট্যাম্পু মানুষ ভরছে। উনি খেয়াল করলেন ট্যাম্পুটির সামনের চাকায় সবগুলো স্ক্রু লাগানো নাই। ব্যাপারটা ভয়াবহ রকমের রিস্কি, যেকোনো সময়ে চাকা খুলে দূর্ঘটনা ঘটে যাবে। চালককে সেটা বলতে ব্যাটা বললো, স্যার আল্লাহ ভরসা!
এই যে আল্লাহ ভরসা আল্লাহ ভরসা করে সব কাজে আমরা অতিরিক্ত রিস্ক নেই। আমরা মনে করি, কিছু হবেনা। আসলেই হয়তো প্রতি একশ এমন ঘটনায় ৯৯ বারই কিছু হয়না। কিন্তু একবার তো হয়। একটু সচেতনতা ঐ একটি ঘটনা বা ঐ একটি মর্মান্তিক দূর্ঘটনা থেকে তো আমাদের রেহাই দিতে পারে। আল্লাহর দিকে তাকানোর পাশাপাশি আমরা যদি একটু সচেতন হই, ঐ টেম্পু ড্রাইভারটা যদি একটু সচেতন হয়, সেটা কী খুব কঠিন?
চানখারপুল এলাকায় সত্যিকার অর্থেই অনেক বাড়ির নীচের তলায় কারখানা, উপরে কাপড়ের গুদাম। তারপর তিন তলা থেকে মানুষের বসবাস। এইসব জায়গায় আগুন লাগলে উপরের মানুষগুলোকে আল্লাহ এসেও বাঁচাতে পারবেনা। হ্যাঁ! এতে করে বাড়িওয়ালার কিছু উপরি ইনকাম হচ্ছে এবং একটু রিস্ক থাকলেও আদতে তো কিছু হয়না তেমন। ৯৯ ঘটনার পর একটা ঘটনা কালকে ঘটল।
গতকাল বুয়েট থেকে বের হওয়া মাত্রই লাশের মিছিল যাওয়া শুরু হলো সামনে থেকে। এতো লাশ যে সবাই একটা করে কফিনও পায়নি। ভ্যানে, ট্রাকে কাপড় মুড়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
আমাদের সবার নিজেদের ক্ষেত্র থেকে সচেতন হওয়া দরকার। আমরা নিজেরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে শুদ্ধ না হলে কেউ এসে আমাদের শুদ্ধ করে দিবেনা …
আমি গতকাল প্রচন্ড বৃষ্টির মধ্যে বিবেকের ডাকে হতভাগ্য মানুষ গুলোকে স্বান্তনা দেয়ার জন্য সকাল বেলাই চলে যাই নিমতলী। যা দেখলাম গিয়ে, তা ভাষায় প্রকাশ করার মত সাধ্য আমার নাই। ভাগ্যহারা মানুষগুলোর বিলাপ, আহাজারী কতক্ষন সহ্য করা যায়? ডুকরে ডুকরে কান্না চলে আসে ভিতর থেকে। স্বজন হারানোর বেদনায় উদভ্রান্ত মানুষ গুলোর পাকছাটা খাওয়া আর বুকচাপড়াচাপড়ি আমি সহ্য করতে পারিনি বেশীক্ষন। ফিরে এসেছি । কিন্তু শান্তিতে নেই, সারাক্ষন শুধু বিলাপের দৃশ্যগুলো চোখের সামনে ভেসে ওঠে। ঘুমুতে পারিনি সারা রাত কাল। শুধু একটাই চিন্তা হচ্ছে- ওরা কিভাবে বাচবে বাকি জীবনটা, কি নিয়ে বাচবে, কাকে নিয়ে বাচবে? ওদের তো সব শেষ হয়ে গেছে। ওদের চোখের দিকে তাকিয়ে শুধু বুঝলাম যে ওদের বেচে থাকার ইচ্ছাটুকুও আর নাই। :brokenheart: