আমেরিকার Wisconsin বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক Sean B. Carroll আণবিক জীববিজ্ঞান এবং বংশগতিবিদ্যার জগতে এক সুপরিচিত মুখ। হাওয়ার্ড হগস মেডিকেল ইনস্টিটিউটের গবেষক Sean B. Carroll -এর গবেষণার মূল বিষয় ‘প্রাণীর দৈহিক বিন্যাসের জন্য দায়ী জিনগুলোর নিয়ন্ত্রণ এবং বৈচিত্র্যময় প্রাণীর উদ্ভবের পিছনে বিবর্তনের ভূমিকা’ নির্ধারণ। ক্যারলের উল্লেখযোগ্য আবিষ্কারগুলো নানা সময়ে TIME, US News & World Report, The New York Times, Discover, Natural History -এর মত বিশ্বের প্রথম শ্রেণীর দৈনিক, সাপ্তাহিক খবরের কাগজসহ প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞান জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
একজন জিন-বিজ্ঞানী হিসেবে অধ্যাপক ক্যারলের যেমন বিজ্ঞান-জগতে রয়েছে দৃপ্ত পদচারণা তেমনি বিজ্ঞানের (বিশেষ করে আণবিক জীববিজ্ঞান) মত নিরস-কাটখোট্টা বিষয়কে অত্যন্ত সাবলীল ভঙ্গিতে সহজবোধ্য ভাষায় সাহিত্যের সরস উপস্থিতিতে একেবারে সাধারণ পাঠকের কাছে উপস্থাপনে তিনি সিদ্ধহস্ত। বিবর্তন সম্পর্কে তাঁর লেখা চমৎকার বইগুলি হচ্ছে : The Making of the Fittest: DNA and the ultimate forensic record of Evolution (2006, W.W. Norton)এবং Endless Forms Most Beautiful: The New Science of Evo Devo (2005, W.W. Norton)। আবার জেন গ্রেনিয়ার (Jen Grenier) ও স্কট ওয়েদারবী (Scott Weatherbee) এর সাথে যৌথভাবে লিখেছেন From DNA to Diversity: Molecular Genetics and the Evolution of Animal Design (2nd ed, 2005; Blackwell Scientific)এবং অধ্যাপক ক্যারল, এন্থনি গ্রিফিথিস (Anthony Griffiths), রিচার্ড লিওয়েনটিন (Richard Lewontin), সুসান ওয়েসলার (Susan Wessler)-এর সাথে রচনা করেছেন Introduction to Genetic Analysis (2007, W.H. Freeman and Co.)) বইটি। লেখক এবং সহযোগী লেখক হিসেবে ইতিমধ্যে তাঁর শতাধিক গবেষণাপত্র বিভিন্ন বিজ্ঞান-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। তিনি আমেরিকার National Academy of Sciences -এর সদস্য এবং American Association for the Advancement of Science এর একজন সম্মানিত ফেলো। অধ্যাপক ক্যারলের গবেষণা সম্পর্কে জানা যাবে পাশের ওয়েব এড্রেস থেকে : http://www.molbio.wisc.edu/carroll/index.html ।
সন ক্যারলের আলোচ্য সাক্ষাৎকারটি খ্যাতনামা বিজ্ঞান পত্রিকা Discover এর মার্চ, ২০০৯ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে। সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন ডিসকোভার ম্যাগাজিনের Pamela Weintraub । পাঠকের সুবিধার্থে সাক্ষাৎকারটির ইন্টারনেট এড্রেস তুলে দেওয়া হল : http://discovermagazine.com/2009/mar/19-dna-agrees-with-all-the-other-science-darwin-was-right । যুক্তি’র জন্য আলোচ্য সাক্ষাৎকারটি অধ্যাপক সন ক্যারলের অনুমতিক্রমে অনুবাদ করেছেন সিদ্ধার্থ (শিক্ষার্থী, শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। সদস্য, বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী কাউন্সিল)।– সম্পাদক, যুক্তি।
:line:
ডিসকোভার : চার্লস ডারউইন তাঁর ‘On the Origin of Species’ গ্রন্থে ‘বিবর্তন তত্ত্ব’ প্রস্তাবনার পর দেড়শ বছর পেরিয়ে গেল; কিন্তু আজও বিবর্তনের ধারণা কিছু ক্ষেত্রে অধিক বিতর্কিত হয়ে উঠছে। এরকমটা কেন হচ্ছে বলে আপনি মনে করেন?
সন বি. ক্যারল : বিবর্তন তত্ত্বের বিরোধিতা করা একটা সাংস্কৃতিক প্রচারণা, বিজ্ঞানের কোন বিষয় নয়। বিবর্তন নিয়ে আমরা (বিভিন্ন উৎস থেকে যেমন ফসিলবিদ্যা, বংশগতিবিদ্যা, আণবিক জীববিদ্যা ইত্যাদি) আলাদা আলাদা স্বাধীন প্রমাণের এক কেন্দ্রাভিমুখী প্রবাহ দেখতে পাই; যা থেকে বিবর্তনের প্রতি আমাদের ভরসা প্রতি বছরই উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফসিল রেকর্ড থেকে আমরা যা জানতে পেরেছি তা আবার ডিএনএ রেকর্ড এবং ভ্রণতত্ত্ব থেকে পুনরায় প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু সাধারণ জনগণ বিবর্তনকে অস্বীকার করতে উচ্চকণ্ঠ এবং বিবর্তনের জ্ঞান থেকে ধর্মীয় বিশ্বাসকে অধিক গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করছে। বর্তমান সময়ে আমরা কাউকে দোষী সাব্যস্ত করতে কিংবা নির্দোষ প্রমাণ করতে ডিএনএ পরীক্ষার উপর নির্ভরশীল। জন্মপরিচয় নির্ণয়ে আমরা ডিএনএ প্রযুক্তির দ্বারস্থ হচ্ছি। ক্লিনিকে রোগীর রোগাক্রান্তের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে, এমন কী দেহে ক্যানসারের ঝুঁকি নির্ণয়ে ডিএনএ’র উপর নির্ভর করছি। ডিএনএ-বিজ্ঞান আমাদের চারপাশ থেকে ঘিরে রেখেছে। অথচ শুধুমাত্র একটি ক্ষেত্রে (বিবর্তন সম্পর্কে ডিএনএ’র প্রমাণ) আমরা বাস্তবতাকে মেনে নিতে কুণ্ঠাবোধ করি। ডিএনএ’র প্রকারণের (Variation) উপর নির্ভর করেই বিচারক অপরাধীর মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিতে পারছেন কিন্তু জনসাধারণ এই ‘প্রকারণ বা ভ্যারিয়েশন সৃষ্টির জন্য ডিএনএ’র মেকানিজম’ এবং ‘ডিএনএ’র কোন সুনির্দিষ্ট গঠনের কারণে অন্য জীব থেকে মানুষ স্বতন্ত্র’-সে সম্পর্কে জানতে আগ্রহী নয়। এটা সংস্কার মাত্র। আমি মনে করি, আমরা এই অবস্থা অতিক্রম করে যেতে পারব। তবে আমি জানি না, এর জন্য আমাদেরকে কয় দশক বা শতাব্দী অপেক্ষা করতে হবে।
ডিসকোভার : আপনার সদ্য প্রকাশিত ‘Remarkable Creatures’ বইয়ে ডারউইন কিভাবে বিবর্তন তত্ত্বে উপনীত হলেন, তা বর্ণনা করেছেন। আপনি কি এখানে কোনো যোগসূত্র স্থাপন করতে পারবেন?
সন বি. ক্যারল : কলেজ জীবনে ডারউইন প্রায়ই গোবরে পোকা সংগ্রহ করতেন। তিনি আরো বেশি সংগ্রহের সুযোগ খুঁজছিলেন। ব্রিট্রিশ জাহাজ এইচ.এম.বিগলে ‘প্রকৃতি-বিজ্ঞানী’ হিসেবে যোগদানকে তিনি সেই সুযোগ পূরণের উপায় হিসেবে পেলেন। ডারউইনের জন্য এটি ছিল খুবই লোভনীয় ব্যাপার। তিনি বিগল জাহাজে করে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চল, ইংল্যান্ডের ঠাণ্ডা-ধূসর-স্যাঁতস্যাঁতে অঞ্চলে ভ্রমণ করেছিলেন। যা ছিল জীবনের প্রাণ-প্রাচুর্যে ভরপুর। কিন্তু ঐ ভ্রমণের জন্য মাত্র ২২ বছর বয়সে পিতাকে রাজি করাতে তাকে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। পাঁচ বছরের দীর্ঘ ভ্রমণে দুইবার বিরতি পেয়েছিলেন। প্রথম পর্যায়ের বিরতিতে তিনি আর্জেন্টিনার উপকূলে নামেন; সেখানে বিলুপ্ত অনেক প্রজাতির ফসিল উদ্ধার করেন, যেমন বিশালাকার বিলুপ্ত স্তন্যপায়ী প্রাণীর ফসিল। দক্ষিণ আমেরিকার বনাঞ্চলে জীবন্ত স্তন্যপায়ীদের সাথে ঐ প্রাণীর ফসিলের অনেক সাদৃশ্য খুঁজে পেয়েছিলেন। এ আবিষ্কারের ফলে তার মনে ‘জীবনের পরিবর্তন ঘটছে’-ধারণাটি জন্ম লাভ করে।
এরপর ডারউইন গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জে পৌঁছালেন। সেখানে তিনি একের পর এক দ্বীপ ঘুরে ঘুরে মকিংবার্ড (আমেরিকার এক ধরনের পাখি, যারা অন্য পাখির কণ্ঠস্বর অনুকরণ করতে পারে) এবং ফিঙ্গে পাখি সংগ্রহ করতে লাগলেন। তিনি লক্ষ্য করলেন, পাখিগুলো একই রকম হওয়া সত্ত্বেও দ্বীপভেদে তাদের মধ্যে কিছুকিছু পার্থক্য রয়েছে। গ্যালাপাগোস দ্বীপ ত্যাগ করার পর তার মনে নতুন চিন্তার উদয় হল। তিনি বুঝতে পারলেন, পাখিগুলো আপাত একই ধরনের দ্বীপে থাকার পর তাদের মধ্যকার পার্থকের পেছনে একটি ব্যাখ্যা রয়েছে; পাখিগুলো একই প্রজাতি থেকে উদ্ভূত কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এবং ভৌগলিক বিচ্ছিন্নতার কারণে তারা একে অপর থেকে পৃথক হয়ে আলাদা আলাদা প্রজাতিতে পরিণত হয়েছে।
ডিসকোভার : ডারউইনের এই অন্তর্দৃষ্টি ব্যাপকভাবে ‘ধর্মবিরোধী’ হিসেবে বিবেচিত হবার কারণ কি?
সন বি. ক্যারল : প্রচলিত সৃষ্টিবাদ অনুসারে, প্রতিটি জীব এক অলৌকিক শক্তি দ্বারা বিশেষভাবে সৃষ্টি হয়েছিল; এবং রহস্যময় প্রক্রিয়ায় পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে একটি নির্দিষ্ট সময়ে সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়েছে। সৃষ্টিবাদের এই দাবি প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের গবেষণার জন্য উন্মুক্ত ছিল না। ডারউইন বললেন, না, প্রজাতিসমূহ পরিবর্তনীয় এবং নতুন প্রজাতির উদ্ভব সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক নিয়মে ঘটে থাকে, যেমনটা পদার্থ বিজ্ঞানে দেখা যায়। মানুষের অস্তিত্ব নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, ‘আমরা কিভাবে এলাম?’ বিবর্তন, এই সবচেয়ে বড় প্রশ্নটি সবচেয়ে বড় উত্তর। অবশ্য বিকল্প ধারণাগুলো বহু দিন ধরেই মানুষের মনে বিরাজ করছে; বিবর্তন তত্ত্ব মানুষের উৎপত্তির পেছনে ‘অলৌকিক ব্যাখ্যা’র পরিবর্তে লৌকিক-প্রাকৃতিক ব্যাখ্যা হাজির করেছে।
বহুরূপী বহির্ভাগের ভেতরে সকল প্রাণীরই এক সেট ‘দেহ-নির্মাণকারী জিন’-এর অস্তিত্ব রয়েছে। আমি যদি পাঁচ মিনিটের জন্য ডারউইনের সাথে থাকতাম, তবে ঠিক এই জায়গা থেকেই তাঁর সাথে কথা বলা শুরু করতাম। এটা নিশ্চিৎ তাঁর মনে ঝড় তুলতো।
ডিসকোভার : ডারউইন তাঁর বিবর্তন তত্ত্ব প্রকাশ করতে ২০ বছরের মত সময় নিলেন কেন?
সন বি. ক্যারল : ২২ বছর বয়সে (প্রকৃতি বিজ্ঞানী হিসেবে) বিগল জাহাজে ভ্রমণের সময় ডারউইন কিছুটা দ্বিধান্বিত ছিলেন। পাঁচ বছর পর ২৭ বছরে ভ্রমণ শেষে তিনি যখন ইংল্যান্ডের মাটিতে পা রাখেন, তখন তার মনে এই চিন্তাগুলো (প্রজাতির উৎপত্তি নিয়ে প্রাকৃতিক নির্বাচন তত্ত্ব) ঘোরপাক খাচ্ছিল। তিনি জানতেন এ তত্ত্ব প্রকাশ পেলে পরিণাম কি হতে পারে? কিন্তু তারপরও তিনি বৈজ্ঞানিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। আমাদের মেনে নিতে অসুবিধা নেই যে-ক্ষমতাসীনগোষ্ঠীকে চ্যালেঞ্জ করার মত সময় তখনো আসেনি। ডারউইনের সে সময়ের সত্য প্রকাশ করার ঘটনাটি আমাদের মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করা উচিৎ।
ডিসকোভার : বিবর্তন নিয়ে আপনার আগ্রহের পেছনে কোন বিষয়গুলো আপনাকে প্রেরণা জুগিয়েছে?
সন বি. ক্যারল : ছোটবেলায় আমি জেব্রা, জিরাফ, চিতাবাঘ দেখে আশ্চর্য হয়েছি। আমি একসময় সাপ পোষতাম, তাদের শরীরের রঙের বিন্যাস আমার ভাল লাগত। যখন বড় হচ্ছি, তখন মনে বিভিন্ন প্রশ্ন জাগত-বিশেষ করে প্রাণীর শরীরে এ ধরনের বিন্যাস ও আকার কিভাবে তৈরি হল? একটি উর্বর ডিম থেকে জটিল প্রাণীর জন্ম হওয়া পৃথিবীতে নিঃসন্দেহে এক অভূতপূর্ব প্রদর্শনী। সন্তান জন্মদানকারী প্রাণী মাত্রই এই প্রক্রিয়া নিয়ে আশ্চার্যন্বিত। বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রাজুয়েট শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় আমরা এগুলো দেখতে পেতাম কিন্তু ভেতরকার কলাকৌশল বুঝতে পারতাম না। দেহের ভেতরে ঠিক কোন ঘটনার কারণে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, চোখ সঠিক জায়গায় প্রতিস্থাপিত হচ্ছে, এবং রক্তসংবহনতন্ত্র ও মেরুদণ্ড খণ্ডিত হয়েছে? একটি সাপের সাথে একটি টিকটিকির পার্থক্য, কিংবা একটি জেব্রার সাথে জিরাফের দৈহিক বিকাশের পার্থক্যের দুর্নিবার রহস্য হৃদয়ঙ্গম করার জন্য আমাকে আরো বেশি অপ্রতিরোধ্য করে তুলেছিল। দৈহিক বিকাশ বোঝার সাথে সাথে আমার মধ্যে দুটি মৌলিক প্রশ্নের উদয় হয় : একটি ডিম থেকে কিভাবে জটিল প্রাণীর জন্ম হয়, এবং বিভিন্ন প্রাণীরই-বা বিবর্তন হলো কিভাবে?
ডিসকোভার : মনে হচ্ছে একটি ভ্রুণের ভ্রুণতাত্ত্বিক বিকাশ এবং একটি সমগ্র প্রজাতির বিবর্তন-দুটি আলাদা ঘটনা। এরা কিভাবে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত?
সন বি. ক্যারল : প্রথম দিকে ফসিল-বিজ্ঞানীরা (বিবর্তন বিষয়ে জানতে) বহু প্রাচীন ফসিল নিয়ে গবেষণা করছিলেন। এরপর বংশগতিবিদ্যার উন্মেষ হল। বংশগতিবিদ্যার গবেষকরা জিনের মিউটেশন উপর ভিত্তি করে প্রজাতির অভ্যন্তরের ছোট ছোট পার্থক্যগুলো (প্রকারণ বা Variation) নিয়ে গবেষণা করতে লাগলেন। চল্লিশের দশকে এ দুটি ক্ষেত্রে (ভ্রুণতাত্ত্বিক বিকাশ ও সমগ্র প্রজাতির বিবর্তন) ‘সংশ্লেষণী তত্ত্বে’র মাধ্যমে সংযোগ স্থাপনের বিষয়টি সামনে চলে আসে। আজ আমরা প্রতিনিয়তই আমাদের জনসমষ্টির মধ্যে যে জিনগত পার্থক্য দেখতে পাই তা বিশাল সময় জুড়ে ‘যৌগিক সংশ্লষণ ও বিশ্লেষণে’র মাধ্যমে তৈরি হয়েছে এবং এই তথ্য ফসিল রেকর্ড থেকে পাওয়া তথ্যের সাথে মিলে যায়। অর্থাৎ বিবর্তনের আধুনিক সংশ্লেষণী তত্ত্বের মাধ্যমে দুটির ক্রমের (ভ্রুণতাত্ত্বিক বিকাশ ও সমগ্র প্রজাতির বিবর্তন) মাঝে ঐক্যতান স্থাপিত হয়েছে।
অবশ্য ‘সংশ্লেষণী তত্ত্ব’ বিবর্তনকে পুরোপুরি ব্যাখ্যা করতে পারেনি। কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল । তাহলে বিবর্তনের অকাট্য প্রমাণ কোথায় পাওয়া যাবে? ডারউইনের ‘প্রজাতির উদ্ভব’ তত্ত্বটি একটি ‘ব্ল্যাক বক্স’। কোন সে পরিবর্তনের কারণে প্রাণীর দৈহিক পরিবর্তনগুলো হচ্ছে (প্রকারণ বা Variation তৈরি হচ্ছে) ঐ সময়ে জানা সম্ভব ছিল না। কিন্তু বংশগতিবিদ্যার বিকাশের সাথে সাথে আমরা প্রাণীর উৎপত্তির কলাকৌশলের গভীরে যেতে পারছি। আমরা এখন ডিএনএ-তে সংরক্ষিত তথ্য এবং বিকাশমান ভ্রুণ পর্যালোচনা করি, ঠিক কোথায় এই পরিবর্তনগুলোর (প্রকারণ বা Variation) সূচনা হয়? এ থেকে আমরা বিবর্তনের পরীক্ষালব্ধ প্রমাণ পাই। হয়তো একটি পূর্ণবয়স্ক প্রাণীর মাঝে পরিবর্তনগুলো দেখা যাবে না, কিন্তু যদি একটি প্রাণীর ভ্রুণের বিকাশকালীন পর্যায়ে (রঙের জন্য দায়ী) জিনের নিউক্লিক এসিডের বেস পরিবর্তন করে ফেলা যায়, তখন দেখা যায় প্রাণীটি কালো হয়ে জন্মাচ্ছে। আবার যদি জিনের নিউক্লিক এসিডের তিনটি বেসের পরিবর্তন ঘটান হয়, তবে দেখা যাবে প্রাণীটির বাহু লম্বা হয়ে যাবে। এই ডিএনএ-তে পরিবর্তনই বিবর্তনের মূল ভিত্তি। পরীক্ষাগারে পরীক্ষণ এবং প্রত্যক্ষণের মাধ্যমে আমরা বিবর্তনের আধুনিক সংশ্লেষণী তত্ত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছি।
ডিসকোভার : আপনি বিবর্তনকে ‘চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ’ (Compounding interest)-এর সাথে তুলনা করেছেন। কেমন করে?
সন বি. ক্যারল : একটি ‘ভাল মুদ্রা বাজারের হিসাব ব্যবস্থা’র মত বিবর্তন ক্রমবিকাশময় পরিবর্তনের মাধ্যমে কাজ করে। একটি প্রজাতির মধ্যকার প্রকারণ যদি সুবিধা প্রদান করে, তবে তা যতই সামান্যতমই হোক না কেন, সেটাই প্রকৃতিতে টিকে থাকার জন্য নির্বাচিত হবে। যদি কোন প্রাণীর (যেমন প্রজাপতি) ডানায় থাকা দাগগুলো আকর্ষণীয় করে তোলে তার সঙ্গীর নিকট, কিংবা শিকারীর নিকট বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে, তবে এই প্রাণীই প্রকৃতিতে টিকে থাকবে। এই প্রকারণগুলো বেশি সন্তানের জন্ম দেবে। বিগত কয়েক শতাব্দী, সহস্রাব্দ এবং তারও বেশি সময় জুড়ে প্রকারণসমূহের মাঝে ‘প্রাকৃতিক নির্বাচন’ নামক প্রতিযোগিতার কারণে পৃথিবীর বুকে এত পরিবর্তন লক্ষ্য করছি।
ডিসকোভার : অধিকাংশ মানুষের কাছেই এই বিশাল সময়সীমার ব্যাপারটি সহজবোধ্য নয়।
সন. বি. ক্যারল : এক শতাব্দী আগে যখন টেডি রুজভেল্ট আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তখন মোটর গাড়ি ব্যবহারের প্রচলন খুবই কম ছিল। আজকে এই এক শতাব্দীকে এমনিতে বিশাল সময়কাল মনে হলেও জীববিজ্ঞান বা ভৌগলিক দিক থেকে এটি কয়েক সেকেন্ডের ঘটনা মাত্র। তেমনি কয়েক মিলিয়ন বছর ধরে হোমিনিডদের (Hominids) উৎপত্তি হওয়াটি শুধুই এক মুহূর্তের ঘটনা। সমুদ্রপৃষ্ঠে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেতে, কিংবা নদীর গতিপথ পরিবর্তনে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হয়। আবার তাপমাত্রার পরিবর্তন, রেইন ফরেস্ট বিলুপ্ত হওয়া কিংবা মরুকরণের সাথে সাথে সংশ্লিষ্ট ভূখণ্ডের প্রাণীকূল পরিবর্তিত পরিবেশের সাথে অভিযোজিত ও পরিবর্তিত হচ্ছে।
ডিসকোভার : আপনি বিবর্তন ও ভ্রুণতাত্ত্বিক বিকাশের সংমিশ্রণকে একত্রে ‘Evo-Devo’ নামে সংজ্ঞায়িত করেছেন, এটা আসলে কি?
সন বি. ক্যারল : এটা ‘বিবর্তনীয় বিকাশমূলক জীববিজ্ঞান’ (Evolutionary Developmental Biology) এর সংক্ষিপ্ত রূপ। বিকাশমান বিবর্তনের একটি ক্ষুদ্র পাঠ্যক্রমের এটি। ডেভু শব্দটি আশির দশকের প্রথম ভাগের ব্যান্ড দল ‘ডেভু’ এর সাথে সম্পর্কযুক্ত। ৮০’ দশকের আগে ‘বিবর্তনকে সময়ের সাথে পরিবর্তনময়’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করার জন্য খুব বেশি তথ্য আমাদের কাছে ছিল না।
ডিসকোভার : ঠিক এসময় দৃশ্যপটে আপনার উদয় হল।
সন বি. ক্যারল : হ্যাঁ। আমি ঐ সময় বোস্টনের টার্ফ বিশ্ববিদ্যালয়ে রোগ-প্রতিরোধ বিজ্ঞানের (Immunology) গবেষক ছিলাম। প্রায় সময় আমি সাবওযেতে ভ্রমণ করতাম এবং তিন-চারটি সেমিনারে অংশগ্রহণ করতাম। এগুলো আমাকে উদ্দীপিত করত। কিন্তু সবগুলো সূত্রের মিল জানা ছিল খুবই কষ্টকর। আমি সবসময়ই শুনতে পেতাম বিবর্তন এবং দৈহিক বিকাশ ও প্রকারণ উদ্ভবের বিষয়গুলো সহজবোধ্য নয়। তাই ভাবতাম কিভাবে আমি মূল লক্ষ্যে পৌঁছব। একসময় আমি ফলের মাছির (Immunology) শরীরের গঠন সৃষ্টিকারী জিন এবং অসাধারণ কিছু মিউট্যান্টদের সম্পর্কে জানতে পারলাম। এই মিউট্যান্টদের মাঝে শুধুমাত্র একটি জিনের কারণে মাছির মাথার শূঁড়ের জায়গায় পা গজাতে পারে। একটি মিউটেশন এসব প্রাণীকে একসেট অতিরিক্ত ডানা দিয়েছে অথবা চোখ ও অতিরিক্ত পাখাগুলো বিলুপ্ত করে দিয়েছে। অভাবনীয় পরিবর্তন সৃষ্টিকারী এই স্বতন্ত্র মিউটেশন জিন সম্পর্কে প্রশ্ন জাগতে শুরু করে : এই জিনগুলো আদতে কি, এবং এগুলোর কার্যকারণের ব্যাখ্যা-ই বা কি? প্রশ্ন ছিল এই জিনগুলো কিভাবে ফলের মাছির শরীরকে গঠন করেছে?
ডিসকোভার : আপনি ফলের মাছিকে (Drosophila melanogaster) বিবর্তন ও (ভ্রুণের) বিকাশের ‘জানালা’ হিসেবে দেখেছিলেন। কিভাবে এর সমন্বয় করলেন?
সন বি. ক্যারল : এই বিষয়ে প্রথম দিকে আমাদের কোনো সুস্পষ্ট ধারণা ছিল না, কারণ ধারণা ছিল যে লোমশ প্রাণীর বিবর্তনে সম্পর্কে জানতে হয়তো ফলের মাছির গবেষণা থেকে কিছু জানা যাবে না। কিন্তু ১৯৮৩ সালে কলরোডা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণাগারে মেরি স্কটের সাথে কাজ করার সুযোগ পাই; যখন থেকে আমরা কাজ শুরু করলাম, তখন আমাদের ও অন্যান্যদের গবেষণায় এটি স্পষ্ট হলো যে, এসব ‘শরীরবৃদ্ধিকারী জিন’ শুধুমাত্র ফলের মাছির (Drosophila) মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তারা সমস্ত প্রাণীকূলের মাঝে বিদ্যমান-এটা আমাদের জন্য একটি বড় বিস্ময় ছিল। হঠাৎ করেই আমরা বিবর্তনের সবচেয়ে মৌলিক গবেষণায় মনোনিবেশ করলাম, যা আমাদের ‘প্রাণীর শরীরের আকৃতিগত বিবর্তন’ বুঝতে সাহায্য করেছিল।
ডিসকোভার : তাহলে বিজ্ঞানীরা এই মৌলিক জিনকে বিভিন্ন প্রজাতির মাঝে খোঁজে পাচ্ছেন?
সন বি. ক্যারল : হ্যাঁ। মানুষের চোখ ও পোকার চোখের মাঝে মিল খোঁজে পাওয়া ছিল আমাদের জন্য অপ্রত্যাশিত আবিষ্কার। আপনি নিশ্চয়ই চিন্তা করতে পারেননি, এই দুই প্রজাতির মাঝে সাধারণ কোনো মিল থাকতে পারে? পোকার চোখ যা ৮০০ পার্শ্ববিশিষ্ট, একটি মানুষের চোখের চেয়ে ভিন্ন দর্শানুভূতিতে কাজ করে। প্রায় দেড় শতাব্দী ধরে বিজ্ঞানীরা ভাবতেন সবকিছুই স্বকীয়ভাবে বিবর্তিত হয়েছে, বিভিন্ন আকৃতির এসব চোখ আবিষ্কৃত হয়েছে প্রাণীদের মধ্যে বিভিন্ন কারণে, সবগুলোই বিভিন্ন প্রজাতির নিজের প্রয়োজনে। আমরা এখন আবিষ্কার করেছি যে, সব প্রাণীর চোখের গঠনের জন্য একটি ‘সাধারণ জিন’ বিদ্যমান। যদিও এসব প্রাণীরা ৫০০ মিলিয়ন বছর ধরে আলাদাভাবে বিবর্তিত হচ্ছে। যদি আমরা ইঁদুর থেকে এই জিনের প্রতিলিপি নেই, সেই প্রতিলিপি মানুষের চোখেও খুঁজে পাব এবং এটা যদি মাছির মধ্যে প্রবিষ্ট করি তবে মাছির চোখের টিস্যুও তৈরি করতে পারবো।
আমাদের গবেষকেরা দেখিছেন যে, একটি সাধারণ জিন মানুষ ও মাছির দেহে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তৈরির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এ থেকে বেরিয়ে আসলো যে, দেহের বাইরে বেরিয়ে আসা শূঁড়, পা, শিং-এর মত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তৈরির জন্য ঐ জিনগুলিই দায়ী। এই পরীক্ষাগুলো আমাদের পূর্বের ধ্যান-ধারণাকে নাড়িয়ে দিল। এবং মানুষকে নতুন চিন্তা করতে বাধ্য করলো; ভিন্নরূপী বিভিন্ন প্রাণীর শরীরের বর্হিভাগের পেছনে একই সাধারণ জিনের জেনেটিক গঠন দায়ী। ডারউইনের দেখা পেলে এই বিষয়টাই তাকে জানাতাম, যা তাকে নিশ্চিতভাবে নাড়া দিত।
ডিসকোভার : নিঃসন্দেহে আমরা ‘পরীক্ষানির্ভর ডারউইনিজম’-এর যুগে চলে এসেছি। নির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে এই পরীক্ষাগুলো কি রকম?
সন বি. ক্যারল : আমরা একটি নির্দিষ্ট অঙ্গাণুর প্রাথমিক আকার বের করার জন্য বিভিন্ন প্রাণীকে পর্যবেক্ষণ করছি; প্রাথমিক অঙ্গাণু পুনর্নিমাণ করে পরবর্তীতে নতুন আকৃতি ও কর্মপদ্ধতি তৈরির ধাপগুলো পর্যবেক্ষণ করতে পেরেছি। দুটি প্রজাতির ভিন্নতা সৃষ্টির পেছনে নির্দিষ্ট জিনগুলোর পরিবর্তনই দায়ী, এবং এই জিনগুলি অদল-বদল করা সম্ভব। আমরা এই পরীক্ষাগুলি ধাপের পর ধাপে করে যাচ্ছি। পরীক্ষাগুলি চোখের সামনে ঘটা আরো অনেক পরীক্ষার মাঝে খুবই কার্যকরী পরীক্ষা। বিভিন্ন প্রাণী কোন আলোতে (বর্ণালী) ভালো দেখবে, তা নির্ধারিত হয়েছে ঐ প্রাণী কোন পরিবেশে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পেরেছে; যেমন তারা হয়তো সমুদ্রের তলে, অথবা গুহায় বসবাস করে, কিংবা দিনের বেলা বা রাতের বেলা বেশি চলাচল করে; অথবা তারা হয়তো শিকারের সময় ফুলের বা শিকারের রঞ্জিত বিন্যাসগুলি চিহ্নিত করতে চায়। দৃষ্টিশক্তি প্রাণীর জীবনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রাণীকূলের বসবাসের ভিন্নতার মধ্য দিয়ে দৃষ্টির ধরন অনেকটাই বিবর্তিত হয়েছে। পরীক্ষাগারে এই পরিবর্তনগুলো দেখার জন্য যেসব পরীক্ষা করা হয়, সেগুলো খুবই কার্যকরী। দৃষ্টিশক্তির ভিন্নতার জন্য দায়ী এই জিনগুলি চিহ্নিত করা হয়েছে এবং এ জিনগুলি অদল-বদল করা যায়; ফলে আলোক-সংবেদী রেটিনার প্রোটিনগুলোকে পরিবর্তন করা যায়। খুবই কম সময়ে এই পরিবর্তনের ফলাফল বুঝতে ও পরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই করে এর সম্পর্কে পূর্বানুমান করা সম্ভব। উদাহরণস্বরূপ পরীক্ষাগারে গবেষণার জন্য ইঁদুরের দেহে বর্ণচিহ্নিতকারী এক সেট অতিরিক্ত জিন প্রবিষ্ট করানো হয়; এবং দেখা গেছে, এই জিনের দ্বারা শরীরে যে প্রোটিন তৈরি হয়েছে তা মস্তিষ্কের ভিতরে কোনো পরিবর্তন ছাড়াই ইঁদুরকে অধিক তরঙ্গদৈর্ঘ্যরে আলো দেখতে সক্ষম করে তুলে।
ডিসকোভার : আমরা কি এই আবিষ্কারগুলোকে মানুষের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে পারি?
সন বি. ক্যারল : আমরা এখন জানি, মানুষের জিনোম এবং শিম্পাঞ্জিদের জিনোমের পার্থক্য বলতে গেলে মাত্র ১ শতাংশ। যদিও শিম্পাঞ্জিদের সাথে আমাদের দেহ ও মস্তিষ্কে পার্থক্য রয়েছে। মানুষ, শিম্পাঞ্জি এবং অন্যান্য প্রাইমেটদের জিনের মধ্যে এত মিল থাকা সত্ত্বেও আমরা মানুষেরা কিভাবে ভিন্ন হলাম? আমরা কিভাবে হাত মুষ্টিবদ্ধ করার ক্ষমতা অর্জন করলাম? আমরা কিভাবে সোজা হয়ে হাঁটার ক্ষমতা অর্জন করেছি? আমরা কিভাবে ভাষার ব্যবহার শুরু করলাম? আমরা কিভাবে বড় মস্তিষ্কের অধিকারী হলাম? যদি মানুষ এবং শিম্পাঞ্জিদের মধ্যে অর্থবোধক কার্যগত পরিবর্তনগুলো চিহ্নিত করা যায়, তখন বুঝা যায় সামান্য জিনগত ভিন্নতার কারণেই বড় ধরনের শারীরবৃত্তীয় ও আচরণগত পরিবর্তন ঘটতে পারে। ‘ঊাড়-উবাড়’ আমাদেরকে এই রহস্য সমাধানের পথ বাতলে দিয়েছে। একই ধরনের জিন বিভিন্নভাবে বিন্যস্ত এবং ব্যবহৃত হয়েছে; কোন ক্ষেত্রে তা তাড়াতাড়ি ঘটেছে আবার কোন ক্ষেত্রে তা কিছুটা সময় নিয়ে ঘটেছে। এটা নির্ভর করে সময় এবং স্থানের ভিন্নতার উপর। জিনগুলির এই বিন্যাস ও ব্যবহৃত হওয়ার ধরন অনেকটা ‘ব্যালে নৃত্যের’ মত; যেখানে একই নর্তক-নতর্কী রয়েছে কিন্তু তাদের সময়ে সময়ে ভিন্ন অবস্থানের মাধ্যমে নৃত্যকলায় ভিন্নতা তৈরি হয়।
ডিসকোভার : আপনার নতুন বই ‘Endless Froms Most Beautiful’ -এ ক্যাম্ব্রিয়ান পিরিয়ডে আকষ্মিক বিশাল সংখ্যক প্রাণের উন্মেষের কথা বলেছেন; কিন্তু বিবর্তনের সমালোচকরা আকষ্মিক বিশাল প্রাণের উন্মেষকে ‘অস্বাভাবিক’ বলে অঙুলি নির্দেশ করে থাকেন। এই অস্বাভাবিক পরিবর্তন কী আপনার বর্ণিত বিবর্তন প্রক্রিয়া ও বিশাল সময় জুড়ে ঘটে চলা ধীর গতির বিবর্তনকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দেয় না?
সন বি. ক্যারল : ৫৪৩ মিলিয়ন বছর আগে (অর্থাৎ ক্যাম্ব্রিয়ান পিরিয়ডের পূর্বে) জেলি মাছ ও স্পঞ্জের মত অমেরুদণ্ডী প্রাণী দেখা যেত কিন্তু পোকামাকড় এবং ট্রাইলাবাইটদের মত দ্বিপার্শ্বীয় প্রাণীর (মেরুদণ্ডী) অস্তিত্ব তখন ছিল না। ক্যাম্ব্রিয়ান বিস্ফোরণ পিরিয়ডে বিশাল ও জটিলাকার প্রাণীদের উদ্ভব ঘটলো। আমরা আজকে প্রাণী জগতে যে বিশাল বিভাজন (প্রাণীজগতের বিভিন্ন পর্ব ও শ্রেণী) দেখতে পাই তা ক্যাম্ব্রিয়ান বিস্ফোরণের সময়কালে উদ্ভূত। ফসিল রেকর্ডে ক্যাম্ব্রিয়ান বিস্ফোরণকে অনেকটা আকষ্মিক মনে হতে পারে, কিন্তু ‘ ‘Evo-Devo’ -এর চমকপ্রদ তথ্য হল, বড় ও জটিল প্রাণীদেহ গঠনের জন্য দায়ী জিনগুলো ঐ প্রাণীদেহ আবির্ভাবের বহু পূর্ব থেকেই বিদ্যমান ছিল। এই জিনগুলো ক্যাম্ব্রিয়ান যুগের পূর্বের সরল-নরম দেহের অধিকারী প্রাণীদের মধ্যে ছিল; কিন্তু তাদের বিকশিত হওয়ার মত উপযুক্ত বাস্তুগত পরিবেশ ছিল না। অর্থাৎ ক্যাম্ব্রিয়ান পিরিয়ডে প্রচুর পরিমাণে সম্পূর্ণ নতুন জিনের উদ্ভব ঘটেনি, বরঞ্চ পূর্ব থেকে বিদ্যমান জিনগুলির বহুমাত্রিক ব্যবহারের ফলে জটিল প্রাণীর উদ্ভব ঘটেছে।
ডিসকোভার : এটা নিশ্চিতভাবে আপনাকে বর্তমানের সম্ভাবনা নিয়ে বিস্ময়াভূত করে।
সন বি. ক্যারল : বলা যায় ডায়নোসর বিলুপ্ত হবার পূর্ব পর্যন্ত এটি প্রাধান্য বিস্তারকারী প্রাণী ছিল। অন্য স্তন্যপায়ী প্রাণীরা সে যুগে বর্তমান ছিল, কিন্তু আকারে ক্ষুদ্র এবং বিচ্ছিন্নভাবে জীবনযাপন করতো। পরবর্তী ১০ থেকে ১৫ মিলিয়ন বছরে ডায়নোসর বিলুপ্ত হবার পর স্তন্যপায়ীরা বিশালাকার দৈহিক আকৃতিতে বিকাশ লাভ করে এবং ভৌগলিক বাস্তুসংস্থানে প্রাধান্য বিস্তার করে।
যখন জেনেটিক সম্ভাবনা বাস্তুতান্ত্রিক সুযোগের সাথে মিলিত হয়, তখন হাতি, জিরাফ ও বাইসনের উদ্ভব ঘটল। বাস্তুসংস্থানকে একটি ছিপিবদ্ধ বোতলের সাথে তুলনা করা যায়; যেন ছিপি খুললেই ভেতরের জিনিষগুলো বিস্ফোরণের সহিত বেরিয়ে আসবে।
ডিসকোভার : ‘The Making of The Fittest’ বইয়ে আপনি সকল প্রাণীতেই ‘ফসিল জিন’ (Fossil Gene) থাকার কথা উল্লেখ করেছেন। ‘ফসিল জিন’ বলতে আপনি কি বুঝিয়েছেন?
সন বি. ক্যারল : ফসিল জিন হচ্ছে এগুলোই, প্রাণীদেহ বিদ্যমান যেসব জিন ধ্বংস হয়ে যাবার কারণে বর্তমানে আর ব্যবহৃত হচ্ছে না, এবং এদের মৌলিকতা বিনষ্ট হয়েছে। বোভেট (Bouvet) দ্বীপের ‘বরফ মাছ’-এর উদাহরণটি আমার খুব প্রিয়। এই প্রাণীগুলো অ্যান্টার্কটিকার শীতল পানিতে বসবাস করতো। এরা একমাত্র মেরুদণ্ডী প্রাণী যারা ‘লোহিত রক্তকণিকা’ ছাড়াই তাদের টিস্যুগুলোকে কর্মক্ষম রাখার জন্য অক্সিজেন ব্যবহার করত। এই মাছের রক্তে অক্সিজেন পরিবহনকারী হিমোগ্লোবিনের জিনগুলোর একটি (রক্তে অক্সিজেন পরিবহনকারী প্রোটিন) সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত হয়ে গেছে এবং অন্যটি ভেঙে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এ থেকে বুঝা যায়, এই মাছদের পূর্বপুরুষদের দেহে লাল রক্ত বিদ্যমান ছিল; কিন্তু এই মাছগুলো বর্তমানে লাল রক্ত নিয়ে তাদের জীবন-যাপন বাদ দিয়েছে।
কিভাবে এমনটা হল? এর ব্যাখ্যা বাস্তুতান্ত্রিক। এ প্রাণীগুলো হিমশীতল পানিতে বসবাস করে। ফলে হতে পারে যে, লাল রক্তকণিকাকে সূক্ষ্ম নালিকা দিয়ে দেহের মধ্যে হিমশীতল পানিতে উঠানামা করানো খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। বরঞ্চ এসব মাছের বড় ফুলকা ও প্রায় আঁশহীন দেহ রয়েছে। ফলে তাদের প্রয়োজনীয় অক্সিজেন চারপাশের পানি থেকেই সংগ্রহ করে নিচ্ছে। এভাবে তারা ৫০০ মিলিয়ন বছর ধরে মেরুদণ্ডী প্রাণীর জীবন প্রণালীকে ত্যাগ করেছে। আমরা মানুষেরা আমাদের পূর্বপুরুষ স্তন্যপায়ী ও তারও আগের মিলিয়ন বছর আগের পূর্বপুরুষ থেকে বিবর্তিত হবার পথে ৮০০ জিনকে ত্যাগ করেছি। কে জানে, এই হারিয়ে যাওয়া জিনগুলি আজ থেকে এক হাজার পরে হয়তো কোনো কাজে লাগত। কিন্তু এগুলো সংরক্ষণের কোন ব্যবস্থা নেই। আমি মনে করি, এই জিনগুলির মাঝে কিছু জিন ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের কাজ করা উচিৎ।
ডিসকোভার : আবার আপনি কিছু জিনের অমরত্বের (Immortal Gene) কথা বলেছেন?
সন বি. ক্যারল : Immortal Gene হচ্ছে সেগুলোই, যে জিনগুলি পৃথিবীতে প্রাণের প্রারম্ভকাল থেকেই বর্তমান ছিল; এবং এরা এতই গুরুত্বপূর্ণ যে এদের জেনেটিক তথ্য গত ৩ বিলিয়ন বছর ধরে এখন পর্যন্ত সব প্রাণীর দেহের মধ্যে সংরক্ষিত Immortal জিনগুলোর উদ্ভব ঘটেছিল খুবই মৌলিক উপায়ে, জৈবিক অণুগুলোর জেনেটিক কৌশলের উন্মেষের মাধ্যমে। এ জিনগুলি ছাড়া জেনেটিক তথ্য ব্যাখ্যা করা যায় না এবং প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় দৈহিক প্রোটিন উৎপাদনও সম্ভব হয় না।
ডিসকোভার : আপনি বিবর্তনের ‘হিমবাহ’ সদৃশ অকাট্য প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন। কিন্তু বিবর্তনবিরোধীরা এর সবকিছুকেই প্রত্যাখ্যান করেছে। এর জবাবে আপনি কি বলবেন?
সন বি. ক্যারল : এই ধরনের বিরোধিতা ভিত্তিহীন; ন্যায়সঙ্গত নয়, এমন কী যৌক্তিকও নয়। যতই দিন যাচ্ছে, এগুলো ততই নির্বুদ্ধিতাপূর্ণ হয়ে পড়ছে। তারপরও বিরোধিতাকারীরা বন্দুক তাক করে রয়েছে।
ডিসকোভার : আমরা এই বিরোধী মানুষগুলোকে জৈববিবর্তনবাদী দৃষ্টিভঙ্গি বোঝানোর জন্য কি করতে পারি?
সন বি. ক্যারল : শিক্ষাদানের একদম প্রাথমিক পর্যায় থেকেই বিবর্তনকে বিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হিসেবে পড়ানো উচিৎ। কোন কিছুই স্থির নয়। মহাবিশ্বের পরিবর্তন ঘটছে, পৃথিবীর পরিবর্তন ঘটছে এবং প্রাণের বিবর্তনের মধ্য দিয়ে জীবজগতেরও পরিবর্তন হচ্ছে। এই বিষয়গুলো পাঠ্যক্রমে অন্তভূক্ত করতে হবে সাধারণের সহজবোধ্য ভাষায়।
ডিসকোভার : আপনার চোখে ‘বিবর্তনবাদী জীববিজ্ঞান’ কোন দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
সন বি. ক্যারল : আমরা এই মুহূর্তে দ্বিতীয় স্বর্ণযুগে রয়েছি। আমরা ডারউইনের মত এখন আর পোষ্য জীবজন্তু সংগ্রহ করছি না কিংবা মিউজিয়ামের দ্বারস্থ হচ্ছি না। এর পরিবর্তে আমরা পৃথিবী জুড়ে প্রাণীদের জেনেটিক রেসিপগুলো সংগ্রহ করছি এবং বিবর্তনের মাধ্যমে তাদের উৎপত্তি বোঝার চেষ্টা করছি। আমরা বিবর্তনের তথ্য সংগ্রহ করতেছি, বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী যেমন ম্যামথদের সাথে হাতির এবং নিয়ান্ডারথালদের সাথে আমাদের মিল-অমিল খুঁজতেছি।
এক তৃতীয় স্বর্ণযুগ আসবে যখন আমরা প্রাণকে বুঝতে পৃথিবীকেও ছাড়িয়ে যাব। প্রাণের বিবর্তন কতবার ঘটেছে, এবং এর উৎস কতগুলি ছিল। প্রাণ কি গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে পৌঁছেছে? ভিনগ্রহে প্রাণের রসায়ন পৃথিবীতে প্রাণের রসায়ন থেকে কি আলাদা? এগুলি জানা যদিও কঠিন কাজ তবে আমাদেরকে অবশ্যই সামনের দিকে এগুতে হবে। মহাবিশ্বের বাইরে অন্য কোথাও প্রাণের সন্ধান পাওয়া-আমাদের দেখা বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে সবচেয়ে বড় আবিষ্কার হিসেবে পরিগণিত হবে।
**সিলেট বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী কাউন্সিল এর মুখপত্র ‘যুক্তি’ (সংখ্যা ৩, ২০১০) এ প্রকাশিত।
প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । মানবজাতির ইতিহাস জানতে ও বুঝতে মিঃ স্যারনের আলোচনা বারবার খুটিয়ে খুটিয়ে পড়ার ইচ্ছা জাগে ।
যুক্তির সব গুলো আর্টিকেল একে একে পোস্ট করলে এখানে রেখে দেয়া যেতে পারে। ফলে পুরো সংখ্যাটিই একটি ইবুক হয়ে উঠবে।
কাল কিংবা পরশু দেখেছিলাম অভীক একটি লেখা পোস্ট করেছিলেন – বিবর্তন নিয়ে চারটি ভ্রান্ত ধারণা / মূল : চার্লস সুল্লিভান ও ক্যামেরন ম্যাকফেরসন স্মিথ (অনুবাদ অভীক দাস)। কিন্তু পুরোটা মনে হয় ঠিক মত পোস্ট করতে পারেননি। এডমিনের পক্ষ হতে অনুরোধ করা হয়েছিল লেখাটি ঠিক করে দিতে । কিন্তু উনি বোধ হয় করেন নি, লেখাটা সরিয়ে ফেলেছেন। পোস্ট করতে উনার কোন ঝামেলা হচ্ছে কিনা বুঝতে পারছি না। আপনি কিংবা সৈকত একটু খোঁজ নিয়ে জানাবেন?
এবার একটা ছোট মন্তব্য করি আপনার দেয়া শিরোনামটার ব্যাপারে। ডিস্কোভারের শিরোনামটি ছিলো –
DNA Agrees With All the Other Science: Darwin Was Right
আমার মতে এটার অনুবাদ হতে পারে –
ডিএনএ (থেকে পাওয়া ফলাফল) এবং অন্যান্য বিজ্ঞানের সাজুয্য প্রমাণ করে ডারউইন সঠিক ছিলেন।
আপনার দেওয়া শিরোনামে “ডিএনএ এবং অন্যান্য বিজ্ঞান ” কথাটা একসাথে ব্যবহার করায় অনেকের ভুলবশতঃ মনে হতে পারে যে, ডিএনএ বুঝি আরেকটা বিজ্ঞান। কিন্তু আসলে লেখক বোঝাতে চেয়েছিলেন যে, ডিএনএ বিশ্লেষণ করে যে ফলাফল পাওয়া গেছে তা অন্য বিজ্ঞানের সাথে মিলে যাচ্ছে।
@অভিজিৎদা,
সমস্যাটা হল,আমাদের এখানে কয়েকদিন ধরে নেট খুবই স্লো ছিল।ফলে অভীক দুবার চেষ্টা করেও পুরো লেখাটা পোষ্ট করতে পারেনি। আমিও দুবার চেষ্টা করে তৃতীয়বার সফল হয়েছি। এখন নেটের অবস্থা মোটামুটি ভাল। আমি অভীককে বলব কাল পরশুর মাঝে পোষ্ট দিয়ে দিতে। আর যুক্তির সবগুলো লেখাই পোষ্ট করে দেয়া হবে একে একে।
আপনার দেয়া শিরোনামটিই ভাল হবে বলে মনে হচ্ছে।
@অভিজিৎদা,
শুধু যে নেটের সমস্যা তা নয়। আমার মডেমও নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। যা হোক এখন অতি শীগ্রই সেটা আবার পোস্ট করব।
অনুবাদটির জন্য সিদ্ধার্থকে আন্তরিক অভিনন্দন। নিঃসন্দেহে একটি প্রয়োজনীয় কাজ সম্পাদন করা হয়েছে। Sean B. Carroll সম্পর্কে দুঃখজনকভাবে অনেকেই তেমন একটা জানেন না। এর মাধ্যমে তারা এ নিবেদিত প্রাণ বিজ্ঞানী সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা পাবেন।
অনুবাদটির সাথে মূল লেখার লিংক দেয়া হয়েছে। প্রয়োজনে মিলিয়ে পড়তে পারেন।
সিদ্ধার্থ
কয়েকটা মতামত দেই অনুবাদটা সম্পর্কে, আশা করি কিছু মনে করবেন না। অনন্তকে বলেছিলাম আমার ফিডব্যাকগুলো পাঠাবো কিন্তু সময় করে ওঠা হয়নি। আপনাকে যেহেতু এখানেই পাওয়া গেল, ব্লগেই দিয়ে দেই আমার মতামতগুলো।
আমার কাছে মনে হয়েছে এখানে অনুবাদটা বোধ হয় একটু ভুল হয়েছে । এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে, ৮০’ দশকের আগে ‘বিবর্তনকে সময়ের সাথে পরিবর্তনময়’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করাতেই সমস্যা ছিল। এটা কিন্তু বিবর্তনের নির্যাস, এক্কেবারে বেসিক ব্যাপার, ‘বিবর্তন যে সময়ের সাথে পরিবর্তনময়’ এটা নিয়ে কারও কোন সন্দেহই ছিল না, একে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছিল অনেক আগেই, আর সবকিছু বাদ দিলেও ফসিল রেকর্ড থেকেই তা খুব ভালোভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু একটা জীবের অভ্যন্তরে ঠিক কোন পদ্ধতিতে এই পরিবর্তন ঘটছে তার ব্যখ্যায় কিছু গ্যাপ ছিল। এ পদ্ধতি নিয়ে কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে বিজ্ঞানীরা তখনও হোচট খাচ্ছিলেন, এর অর্থ এই নয় যে সংজ্ঞায়িত করার জন্য খুব বেশি তথ্য তাদের কাছে ছিল না। আশা করি আমি কি বলতে চাচ্ছি তা বোঝাতে পেরেছি।
এখানে মনে হয় ‘ধ্বংস’ কথাটা বলা ঠিক হবে না, জিন আসলে সবসময় ধ্বংস হয়ে যায় না, এখানে মনে হয় ক্যারল অব্যবহৃত জিনগুলোর অবশিষ্টাংশের কথা বলতে চেয়েছেন।
কিছু আঞ্চলিকতার সমস্যা রয়ে গেছে মনে হয় অনুবাদের মধ্যে। যেমন, গোবরে (গুবরে), পোষতাম (পুষতাম), ঘোরপাক (ঘুরপাক), খোঁজে( যেখানে খুঁজে হবে), করতেছি (করছি), খুঁজতেছি (খুঁজছি) টাইপের কিছু শব্দ রয়ে গেছে।
আজ এ পর্যন্তই, অনেক কিছু বলে ফেললাম আশা করি কিছু মনে করবেন না। অত্যন্ত কঠিন এই অনুবাদের কাজে হাত দেওয়ার জন্য আবারও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
@বন্যাদি,
এই সাক্ষাৎকারটি ছাড়াও আরো কিছু লেখা অনুবাদের কাজ করেছি এবং এখনও করছি।সাক্ষাৎকারটি অনুবাদ করে মনে হয়েছে, আর দশটা অনুবাদের সাথে এর বৈশিষ্ঠ্যগত কিছু পার্থক্য রয়েছে। সাক্ষাৎকার প্রদানের সময় বক্তা অনেক সময়ই সময়ের সীমাবদ্ধতার কারণে আলোচ্য বিষয় সম্পর্কেই দু একথা বলেই তার বক্তব্য শেষ করেন।ফলে তার বক্তব্যের মূল নির্যাসটুকু অনেক ক্ষেত্রেই বোধগম্য হয়না। এজন্য অনেক সময়ই দেখা যায়, সাক্ষাৎকার প্রকাশ করার পর অনেকেই নিজের বক্তব্যকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে আপত্তি তোলেন।এ লেখাটির অনুবাদের সময় এই ব্যাপারটি নিয়েই ভয় পাচ্ছিলাম এবং যথারীতি ধরা খেয়েছি।
সময়ের ব্যাপারটি সম্পর্কে আপনার সাথে একমত।এখানে ’সংজ্ঞায়িত শব্দটি ব্যবহার করা উচিত হয়নি।একইভাবে ফসিল জিনের ক্ষেত্রেও ‘ধবংস’ শব্দটি ব্যবহার করাটা ভুল হয়েছে। আর উদ্ভট কিছু আঞ্চলিক শব্দ ব্যবহারের কারণে দুঃখিত।
ভুলগুলো সংশোধন করে দেবার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
বিবর্তন বিরোধীরা বিবর্তনের পথ ধরেই একদিন হারিয়ে যাবে। একদিন ডি এন এ মডিফিকেশনের মাধ্যমে আমরা অমরত্য লাভ করব, তারা তা করবেনা কারণ হায়াত ,ময়ুত বা বিয়ে আল্লার হাতে।
সন ক্যারলের এই গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাৎকারটি আমি আগেই ডিস্কোভার ম্যাগাজিনে পড়েছিলাম। পরে বাংলাটা পড়েছিলাম যুক্তিতে। আমি অভিনদন জানাচ্ছি সিদ্ধার্থকে লেখাটি অনুবাদ করার জন্য। এ ধরনের আধুনিক বিবর্তনের লেখা বাংলাতে তো বটেই, ইংরেজীতেও দুর্লভ।
সন ক্যারল বিবর্তন নিয়ে হাতে কলমে কাজ করা বিজ্ঞানী। তিনি আনবিক জীববিজ্ঞান এবং জেনেটিক্সের উপর একজন খ্যাতিমান বিশেষজ্ঞ। তার কাজ বিবর্তনীয় বিকাশমান জীববিজ্ঞানে (এভো ডেভো) এনেছে নতুন মাত্রা। তার কাজগুলো চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, ডারউইনের বিবর্তন বিষয়ক তত্ত্ব কত সঠিক ছিলো। তারপরেও অনেকে আছেন না বুঝেই বিবর্তন বিরোধিতার ঢোল পিটিয়ে যান। আমি বারে বারেই বলে আসছি জীববিজ্ঞানের কোন জার্নালেই বিবর্তনের বিরোধিতা করা হয় না। বিবর্তন ছাড়া আসলে জীববিজ্ঞান অচল। এই সহজ ব্যাপারটা যদি কেউ না বুঝে তাহলে আর কীই বা করার আছে। সন ক্যারল – যিনি একাডেমিকভাবে আধুনিক বিবর্তন নিয়েই কাজ করেন, তার চেয়ে যদি সে সব নবিসেরাই বিবর্তন ‘ভাল বোঝেন’ তবে তো আর বলার কিছু নেই। সন ক্যারলের এই লাইনগুলোই তাদের জন্য জবাব –
আবারো সিদ্ধার্থকে অনেক ধন্যবাদ প্রবন্ধটি অনুবাদের জন্য।
@অভিজিৎদা,
আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।সন ক্যারল শুধুমাত্র অনেক বড় বিজ্ঞানীই নন, তার লেখনী ক্ষমতাও যে কত অসাধারণ তা তার লেখা বইগুলো পড়েই বুঝতে পেরেছি।আপনাদের উৎসাহ পেলে সন ক্যারলের আরও কিছু লেখা অনুবাদ করার ইচ্ছে রয়েছে।
এ সাক্ষাৎকারটি অনুবাদে যুক্তি সম্পাদক অনন্ত বিজয় দাস এবং ব্লগার সৈকত চৌধুরী খুবই সহযোগিতা করেছেন।তাদের প্রতিও রইল কৃতজ্ঞতা।
@সিদ্ধার্থ, যাক তাহলে আপনার সাথে ফাইনালি মোলাকাত হল। অনেক অনেক ধন্যবাদ এভো ডেভোকে বাংলায় ইন্ট্রোডিউস করার জন্য। হ্যা, অনন্তের যে হাত আছে এর পিছনে তা তো জানাই ছিল 🙂 , ওকে গত বছর এই ইন্টারভিউটা পাঠানোর সাথেই সাথেই সে এটার গুরুত্ব বুঝেছিল এবং বলেছিল এটার অনুবাদের ব্যবস্থা করছে। আসলে আজকে বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞান যে অবস্থায় এসে পৌঁছেছে এভো ডেভো ছাড়া এই গল্প আর সম্পূর্ণভাবে বলা সম্ভব নয়। তাই, আমিও মানব বিবর্তনের বইটা লিখতে শুরু করার পর দেখলাম এভো ডেভো নিয়ে বিস্তারিত না লিখলে কোনভাবেই আজকের লেটেষ্ট তথ্য এবং গবেষণাগুলো কভার করা সম্ভব নয়। আপনি বলেছেন, শন ক্যরালের বইগুলো পড়ছেন, কোন বইগুলো পড়ছেন? আগে আমি ডকিন্সের লেখা পড়ে মুগ্ধ হতাম, এনার বইগুলো পড়ার পর আমার ফেভারেট বিজ্ঞান লেখক বদলে ক্যারল হয়ে গেছে। গবেষণায় ডুবে থাকা একজন বিজ্ঞানী জটিল টেকনিক্যাল বিষয়গুলো নিয়ে কিভাবে এত চমৎকার গল্প লিখতে পারেন তা ক্যরলের লেখা না পড়লে আসলেই বুঝতাম না। আপনি যেহেতু ক্যারলের বইগুলো পড়ছেন, আমার লেখা এভো ডেভোর লেখাগুলোতে একটু সময় করে ফিডব্যাক দিলে খুশী হব।
আর অনুবাদের কাজে হাত দিয়ে দেন, অপেক্ষা কিসের? এই ধরণের লেখা যত বেশী অনুবাদ হয় ততই ভালো। আচ্ছা, একটা প্রশ্ন করি, আপনি যুক্তিতেও ‘সন’ লিখেছেন দেখলাম। আমারতো মনে হয় ‘শন’ ক্যারল বললেই ঠিক হয়। ওনার নামের বানান sean, কিন্ত ইংলিশে একে Shawn উচ্চারণ করা হয়। আইরিশএ মনে হয় sean লেখা হয়।
বন্যাদি,
প্রথমেই বলে রাখি, আপনার আর অভিজিৎ দার লেখা পড়েই আমার বিবর্তন সম্পর্কে জানার হাতেখড়ি। তাই পোষ্ট দিয়েই আপনাদের প্রতিক্রিয়া জানার অপেক্ষায় ছিলাম। আপনার মতোই শন ক্যারল আমারও প্রিয় লেখক হয়ে ওঠেছেন।যদিও তার দুটো মাত্র বই আমার সংগ্রহে আছে (The Making of the Fittest, Endless Forms Most Beautiful)।ডকিন্স এর বইগুলো সংগ্রহে থাকলেও তার বইয়ের কঠিন ভাষারীতির কারণে এখনো খুব বেশি এগোতে পারিনি।ব্লগার আন্দালিব ‘সেলফিশ জিন’ অনুবাদ শুরু করেছেন দেখে খুব ভাল লাগল। আমাদের মতো নবিস দের খুব সুবিধা হবে। শন ক্যারল তার বই গুলোতে ছোট ছোট গাণিতিক রেখচিত্র এবং পরিসংখ্যানের সাহায্যে বিবর্তনকে খুব চমৎ কারভাবে ফুটিয়ে তোলেন, যা এককথায় অসাধারণ। আপনার এভো ডেভো এর লেখাগুলোতে সময় দিতে পারলে খুব খুশি হব।‘শন ক্যারল’ বানান এর ব্যাপারে আপনার বক্তব্যটিই সঠিক।উচ্চারণ অনুসারে ‘শন’ ই হবারই কথা। এটি আমার প্রথম অনুবাদ।তাই লেখার সময় ক্যারলের বক্তব্যগুলো নিয়েই বেশি মাথা ঘামিয়েছি।নামের ব্যাপারটি আর মাথাই আসেনি।
আরেকটি কথা,আমি বয়েসে অনেক ছোট, সবেমাত্র তৃতীয় বর্ষে আছি। তাই সিনিয়র ব্লগাররা ‘তুমি’ করে সম্বোধন করলে খুব খুশি হব।
@অভিজিৎ,
এই বিষয় গুলো পড়ে যাই মন্তব্য করিনা। আপনার একটা কথায় আমার চোখ আটকালো,
“তারপরেও অনেকে আছেন না বুঝেই বিবর্তন বিরোধিতার ঢোল পিটিয়ে যান। আমি বারে বারেই বলে আসছি জীববিজ্ঞানের কোন জার্নালেই বিবর্তনের বিরোধিতা করা হয় না। বিবর্তন ছাড়া আসলে জীববিজ্ঞান অচল।
কেন জানিনা আমার মনে হয় বিজ্ঞানের কতোগুলো শব্দ মানুষ বুঝেনা,আর বুঝেনা বলেই এই ধরণের অনীহা। যেমন একটা সহজ শব্দ “বিবর্তন” মানুষজন ভেবে বসে না জানি কী কঠিন ব্যপার।
এমনও তো ধরা যেতে পারে,একটা শিশু জন্ম গ্রহন করে বা পৃথিবীতে আসে,একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে।মাধ্যমটা কী? মাধ্যম হচ্ছে “মা” কথাটা নিষ্ঠুর শোনালেও এইটাই সত্য। যেদিন এই প্রক্রিয়া থেকে অন্যপ্রক্রিয়াতে বিষয়টা চলে যাবে,সেটাও হবে একটা যুগান্তকারী “বিবর্তন”।
ভুল বলেছি কী।