ভারত বিভক্ত হয় ১৯৪৭ সালে। জন্ম নেয় নতুন দু’টি রাষ্ট্র ভারতবর্ষ ও পাকিস্তান। দুইশত বছর ইংরেজরা চালিয়েছিল সাম্রাজ্যবাদের রাজত্ব, তার পূর্বে ছিল মোঘল সাম্রাজ্য। ইংরেজ শাসনামলে অবিভক্ত ভারতকে করেছিল নিপীড়িত, শোষিত। সভ্যতাও দিয়েছিল সেই সাথে। কিন্তু,দেখা যায় যতটুকু শিক্ষা পায় অন্যান্য নারীরা মুসলিম নারী সে তুলনায় অনেক পিছিয়ে থাকে ।মুসলিম নারীদের পিছিয়ে থাকার মূল কারণ হিসেবে দেখা যায়, তাদের ধর্মীয় ও পর্দা প্রথাকে। অসংখ্য নিষেধাজ্ঞার বেড়াজাল ডিঙ্গিয়ে মুসলিম নারীদের কাছে শিক্ষার আলো পৌঁছানো প্রায় দুঃসাধ্য ছিল। এই কারণে কেবল মাত্র ধর্মগ্রন্থ পাঠের মাঝেই তাদের শিক্ষা সীমাবদ্ধ ছিল।
এখন দেখা যাক এই প্রসঙ্গে হুমায়ুন আজাদের কিছু কথা:
“ নারী সব চেয়ে পীড়িত ছিল ভারতে, তাই ওখানেই প্রথম দেখা দেন নারী ত্রাতা: রামমোহন রায় ও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। রামমোহন নারীকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সহমরণ বিষয়ক প্রবর্ত্তক ও নিবর্ত্তকের সস্বাদ প্রথম প্রস্তাব করেন ১৮১৮ তে, দ্বিতীয় প্রস্তাব ১৮১৯ এ। এ বিষয়ে তার শেষ লেখা সহমরণ বেরোয় ১৮২৯ এ। বিদ্যাসাগর বিধবা বিবাহ প্রচলিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক প্রথম প্রস্তাব করেন ১৮৫৫ তে। এবং একই বছর প্রকাশ করেন দ্বিতীয় প্রস্তাব। পৃথিবীর আর কোথাও তাদের, অন্ততঃ রামমোহনের আগে নারীর পক্ষে কোন পুরুষ কিছু লেখেননি, লড়াইয়ে নামেনি।
রামমোহন ও বিদ্যাসাগর পৃথিবীর দুই আদি নারীবাসী পুরুষ—মহাপুরুষ। তাঁরা কর্মবীর হিসেবেও অসামান্য। তবে রামমোহন ও বিদ্যাসাগর নারী মুক্তি বা নারী স্বাধীনতার কথা বলেননি। মুক্তি ও স্বাধীনতার কথা বলা যায় সভ্য সমাজে। তাঁরা নারীর জন্য দাবী করেছেন দু’টি সামান্য জিনিষ—বেঁচে থাকা ও জীবনযাপনের অধিকার যা তখন হিন্দু নারীদের জন্য ছিলো মুক্তির থেকেও অনেক বড়।(নারীঃ হুমায়ুন আজাদ পৃঃ ২৭১)

নারী মুক্তির কথা আলোচনার সাথে আর একজনের নাম অবধারিত ভাবে এসে পড়ে। তিনি হচ্ছেন বেগম রোকেয়া। রংপুরের পায়রাবন্দ গ্রামে ১৮৮০ সালে তাঁর জন্ম।সম্ভবতঃ মৃত্যু হয়েছিল ৯-ই ডিসেম্বর ১৯৩২ সালে। তিনি উগ্র পিতৃ্তান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে সব সময় ছিলেন সোচ্চার। বেগম রোকেয়ার অবদান আলোচনায় এলে আমরা তাঁর অনেক কিছুই মূল্যবান তথ্য পাবো। তাই এটা পরে আলোচনার ইচ্ছে পোষণ করছি।

ধর্ম ও নারী- আলোচ্য বিষয়ে আমি কোন মতান্তর পাইনা। সকল ধর্মগ্রন্থের রচয়িতা পুরুষ। সুতরাং সব কিছুই পুরুষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে। এটাই নিয়ম হয়ে গেছে যুগ যুগ ধরে। তাই দেখা যায় শিক্ষার আলো ধর্মগ্রন্থ ও কুরআন পাঠের মাঝে সীমাবদ্ধ ছিল। ধীরে ধীরে তা স্বামীর কাছে পত্রলেখা ও বিবিধ কারণে পড়াশোনার আবির্ভাব ঘটে। তাও সীমিত পরিমানে।
আমাদের সামাজিক রীতি হল: পুরুষ শিক্ষিত হবে, সে সংসারের যাবতীয় খরচপাতির যোগানদার হবে। স্ত্রী হবে তার অনুগত গৃহপালিত দাসী বিশেষ। আদি হতে অধুনা পর্যন্ত এ চিত্রের কেবল রঙ বদল হয়েছে। আজ পর্যন্ত দেখা যায় অবস্থান ভেদে যে তিমিরে নারীর অবস্থান, সেই তিমিরেই বিদ্যমান। তফাত এইটুকু যে আগে ছিল অশিক্ষিত স্ত্রী, এখন শিক্ষিত স্ত্রী। সূচনা পর্বে ইতিহাস লিখিনি কেন? ইতিহাস আসবে।যদিও আমি ঐতিহাসিক নই, তবু সূচনা পর্বে কিছু তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
আমার এই রচনার বিশেষ বক্তব্য হচ্ছে নারী ও পুরুষের অবস্থান ভেদ, শিক্ষায় নারীর অনগ্রসতার কারণ। ছাড়াও নারীর অর্থনৈতিক স্বাধীনতা এ ক্ষেত্রে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।

আমাদের সমাজে কি ভাবে একজন নারীর জীবন অতিবাহিত হয় সেটা তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
আমাদের সমাজে পুত্র সন্তানকে কন্যা সন্তান অপেক্ষা বেশি মনোযোগ দেবার ব্যাপারটি খুবই উল্লেখযোগ্য। দেখা যায় জন্মের পর থেকে কন্যা সন্তানটিকে অবহেলা করার মূল সূত্র হয়ে যায়। মায়েদের ধারণা পুত্র মানেই নিরাপদ, পুত্র মানেই উপার্জনের নিঃশ্চয়তা। মা হয়ে তার কন্যার প্রতি এই অবহেলার কারণ হচ্ছে, একদা ঐ মা-ও বৈষম্যের শিকার হয়েছিল। এখনকার অবস্থানে হয়তো নারীটিকে রূপচর্চা,লেখাপড়া সব দিক দিয়েই নিজকে তৈরি করতে হয়। অনেক আগেও মূলত যেমন নারীদের রূপ, দৈহিক সৌন্দর্য নিয়া ব্যস্ত থাকতে হতো। যে কোনো উপায়ে ফর্সা হবার আপ্রাণ চেষ্টা, ত্বকে উজ্জ্বলতার জন্য অবিরল প্রচেষ্টা যতো, ব্যক্তিত্বে ততোটা নয়। সর্বদা একই ভুল করা হয়। মানুষের দেহ চামড়া সম্পুর্ণ ক্রোমোজমের চরিত্র, প্রাকৃ্তিক পরিবেশ, জল বায়ুর উপর নির্ভরশীল।

তবুও লেখাপড়া যেনো অনেকটা বিয়ে হবার কারণেই শেখা। শিক্ষা জীবনের অবসানের আগেই বিবাহ নারীটির জীবনকে আরো অন্ধকারাচ্ছন্ন করে ফেলে।তাকে অনেকটা মেরুদন্ডহীন প্রানীতে পরিণত করে। বিবাহের পরে অধিকাংশ নারীকেই দেখা গেছে তার পাঠ অসম্পুর্ণ রেখে সংসার, হাঁড়ি, বাসন, রান্না ঘরের মাঝে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। বিবাহের ফলে নারী অধীন হয়ে পড়ে পুরুষের। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে নারীর যোগ্যতা পুরুষের চাইতে বেশি হলেও তাকে একান্ত বাধ্য দাসীর মতো থাকতে হয়।
নারীর এইরকম অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতা তার জন্য যেনো মৃত্যুর শামিল হয়ে পড়ে।
এমন বহু নারী আছে যারা অত্যন্ত মেধাবী ছিল।বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বর থেকেও কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ। কিন্তু এখন দেখা যায় সে একজন সাধারণ গৃহিণীর মতোই পেঁয়াজ কাটায় এবং নানা ধরণের রন্ধনে রত। সংসারের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে তার মেধা ধীরে ধীরে অন্তর্হিত হয়। সন্তান প্রতিপালনের পর যৌবন পেরিয়ে প্রৌঢ়ত্বে পা দেয়া রমণীটি স্বামী হতে পুত্রের উপর অর্থনৈতিক দিক দিয়ে নির্ভরশীল হতে বাধ্য হয়। তার মেধা, তার সম্ভবনা তার জীবনের যা কিছু চাওয়া পাওয়া সব কিছুর অপমৃত্যু ঘটে।
শতরকম প্রতিভা নিয়ে জন্মানো নারীটা্র সমস্ত প্রতিভা একদিন বিলুপ্ত হয়ে যায়।
একটা ছোট উদাহরণের মাঝে একটা সামাজিক বা পারিবারিক চিত্র তুলে ধরলেই ব্যাপারটা আরো পরিষ্কার হবে।
একজন লেখক তিনি লিখতে গেলে তার চারপাশের পরিমণ্ডল থাকে সুবিন্যস্ত,সুসজ্জিত। তার কামরাটায় থাকে পিনপতন স্তব্ধতা, কোলাহলমুক্ত, অথবা তিনি যে পরিবেশ পছন্দ করেন সেই পরিবেশ অনুযায়ি তৈরি হয়ে যায় সব কিছু। একজন শিল্পী যখন গান পরিবেশন করেন,তার পেছনে তাকে সাহায্য করে কতো বাদ্যযন্ত্র, বেহালা, তবলা, সেতার, আলো ইত্যাদি। নানা প্রকার সাহায্যে গান হয়ে ওঠে ব্যঞ্জনায় মুখর। কিন্তু শিল্পীর এই পেছনের মানুষের অবদানের কথা কারো মনে থাকেনা। খোঁজ নেয়না কেউ ঐ নেপথ্যের ব্যক্তিদের। তিনি হন জনপ্রিয়।
অনু রূপভাবে একজন লেখকের (এখানে লেখকের কথাই বলছি আরো নানা পেশার মানুষজনও এর মাঝে পড়েন) লেখার পেছনে কতো স্বজনের অবদান।বিশেষতঃ প্রাকৃ্তিক নিয়মে যা প্রয়োজন তা তিনি পান অনায়াসে।
পক্ষান্তরে একজন নারী যখন শুধুমাত্র বিদ্যালয়ে শিক্ষা অর্জনের জন্য পাঠরত থাকে,তখন দেখা যায় সংসারের মা অনেক সময় মেয়েটার সাথে বৈষম্যমূ্লক আচরণ করে।

নারী সে হোক শিল্পী, গৃহিণী অথবা লেখক। তার ক্ষেত্রে দেখা যায় চিত্রটা আলাদা। সংসার, স্বামী, পুত্র, কন্যা সব কিছু সামলিয়ে যদি কখনও অবসর হয় সে ফাঁকে লিখতে বসতে পারে। লিখতে বসলেও নানা প্রতিবন্ধকতা। মেয়ে হোক বা নারী হবার কারণে বিভিন্ন ভাবে তাকে নিরুৎসাহিত করা হয়—মেয়েমানুষ, মহিলা মানুষ, মেয়েছেলে বিভিন্ন খেতাব দ্বারা। এরপরে বলা হয় তার যতোদুর তাতো হলোই, অর্থাৎ লেখাপড়া সমাপ্ত বা অর্ধসমাপ্ত হবার পরে তার মূল কাজ সম্পর্কে সচেতন করা হয় প্রচ্ছন্নভাবে। স্বামীর সেবা, পুত্রসেবা, শ্বশুর শাশুড়ি সেবা, সামাজিকতায় স্বামীর সাহচর্যে তাকে অলংকৃ্ত করা, এই কাজই ঐ নারীটার। মূলতঃ বুদ্ধিমতি নারীটাকেও বেশ বোকা বা অবলা হিসাবে দেখতে হয়। পুরুষরাও এইপ্রকার নারী পছন্দ করে। তারা এই বিশ্বাস করে যে, প্রতিবাদী নারী, বুদ্ধিমতি নারী তাদের জন্যে ক্ষতিকর।
সাহিত্য রচনা বা যে কোন লেখনীতে নারীটাকে প্রতিনিয়ত বাধার সম্মুখীন হতে হয়, তিরস্কৃত হতে হয়। প্রতিকূল অবস্থানকে দৃড়ভাবে মোকাবিলা করে কেউবা হন প্রতিষ্ঠিত।আবার কেউ বা ধীরে ধীরে নিজকে গুটিয়ে ফেলেন সংসারের শান্তি বজায় রাখার জন্য। অনেক স্বামী গর্ব করে বলেন, তিনি তার স্ত্রীকে সকল স্বাধীনতা দিয়েছেন। অর্থাত পরোক্ষভাবে বুঝিয়ে দেয়া নারীটা আসলেই শৃংখলিত। এর সমস্ত কুফল শুধু নিজ দেশ নয়, পুরো পৃথিবী কতো সম্ভাবনা থেকে বঞ্চিত হয়।প্রশ্ন হচ্ছে-একটা বিশাল শক্তি, বিরাট সম্ভবনাকে ঘরের মাঝে আবদ্ধ করে পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় কারা?
ধর্মীয় ভাবেও নারীদের বিভিন্ন বাধা বিপত্তির নির্দেশ প্রদান করা হয়। এই নির্দেশ নারীদের মনে জ্ঞান হওয়া অবধি ভয়-ভীত, মনের মাঝে এমনভাবে গেঁথে বসে যে পরবর্তিতে তারা শিক্ষা দীক্ষায় স্বাবলম্বী হলেও সামাজিক এবং ধর্মীয় কারণে পদে পদে তারা বাধাগ্রস্থ হয়। পুরুষের কথায় কথায় ধর্মীয় উদ্ধৃতি, তার মাঝে সঞ্চার করে ভয়-ভীতি।
এ প্রসঙ্গে কোরানে উল্লেখ:
দেখুন আল্লাহ্‌ কি বলেছেন ৪:৩৪ আয়াতে:
পুরুষেরা নারীদের উপর কর্তৃত্বশীল। এজন্য যে, আল্লাহ্‌ একের উপর অন্যের বৈশিষ্ট্য দান করেছেন এবং এ জন্য যে, তারা তাদের অর্থ ব্যয় করে। সেমতে নেক্‌কার স্ত্রীলোকগণ হয় অনুগতা এবং আল্লাহ্‌ যা হেফাযতযোগ্য করে দিয়েছেন লোকচক্ষুর অন্তরালেও তার হেফাযত করে। আর যাদের মধ্যে অবাধ্যতার আশঙ্কা কর তাদের সদুপদেশ দাও, তাদের শয্যা ত্যাগ কর এবং প্রহার কর। যদি তাতে তারা বাধ্য হয়ে যায়, তবে আর তাদের জন্য অন্য কোন পথ অনুসন্ধান করো না। নিশ্চয় আল্লাহ্‌ সবার উপর শ্রেষ্ঠ। (তফসীর মারেফুল কোরআন, অনুবাদ মাওলানা মুহিউদ্দিন খান)


এখানে বলা যেতে পারে ছোট বেলা থেকেই মেয়েটা ধর্মীয় ভাবে শাসিত, শোষিত, এবং বড় হবার পর বিবাহিত জীবনের অবধারিত খারাপ পরিণতির জন্য শংকিত। এই ধর্মীয়ভীতি যতোটা নারীদের বেলায় প্রযোজ্য পুরুষের বেলায় তা অনেক শিথিল।


সাহি মুসলিমে লেখা আছে:
জাবির বর্নীত: একদা আল্লাহ্‌র রসুল এক রমণী দেখিলেন। তার পর তিনি তাঁর স্ত্রী জ়য়নাবের নিকট আসিলেন। জয়নাব তখন চামড়া পরিষ্কার করিতে ছিলেন। রসুলুল্লাহ জয়নাবের সাথে যৌনসংগম করিলেন। তারপর তিনি তাঁর সঙ্গীদের বলিলেন: একজন স্ত্রীলোক শয়তানের রুপে বাহির হয় এবং ফেরত যায়। কাজেই তোমরা কেহ বাহিরে কোন রমণী দেখিলে তোমাদের স্ত্রীর নিকটে চলিয়া আসিবে। এর ফলে তোমাদের মনে যা ছিল তাহা দূর হইবে। (সাহি মুসলিম, ভলুম ২, হাদিস ৩২৪০, প্রকাশক কিতাব ভবন, দিল্লি, ইংরাজি অনুবাদ অধ্যাপক আব্দুল হামিদ সিদ্দিকী, বাংলা অনুবাদ, লেখকের)

তিরমিজি হাদিসে লেখা:
মুয়াদ বিন জাবাল বলিলেন:
একজন স্বামী তার স্ত্রীর অতিথি। শীঘ্রই তার স্বামী স্ত্রী কে ছাড়িয়া চলিয়া যাইবে। তাই বিশ্বের কোথাও কোন স্ত্রী যদি তার স্বামীকে বিরক্ত করে তবে আল্লাহ্‌ সেই স্ত্রীকে ধ্বংস করিবেন। (হাসান) (জামি তিরমিজি, ভলুম ২, হাদিস ১১৭৪, পৃ: ৫৪০, ইংরাজি অনুবাদ আবু খালীল, প্রকাশক দারুসসালাম, রিয়াদ, সৌদি আরব। বাংলা অনুবাদ লেখকের)

পুরুষ ও মানুষ, স্ত্রীলোকটাও তাই, অথচ দেখা যাচ্ছে শাসনের বেড়াজালে আবদ্ধ নারীটা প্রতিক্ষণ থাকে সন্ত্রস্ত।একজন উপার্জনশীল নারী যতোটুকু পরিশ্রম করে বাড়ি ফেরে, পুরুষটা তার চাইতে অনেক কম পরিশ্রম করে গৃহস্থালীর পরিচর্যায়। কেননা ঘর গেরস্থালির কাজটুকু একান্তই নারীর জন্য প্রযোয্য। পুরুষটা ক্লান্ত, শ্রান্ত হয়ে বাড়ি ফেরার পর তার গৃহে কাজ কর্ম নাই বললেই চলে। পক্ষান্তরে, কর্মজীবি নারীকে দেখা যায়, তার কর্মক্ষেত্র থেকে আসার পর পরেই সংসারের প্রত্যাহিক কাজকর্ম, স্বামীসেবা ইত্যাদিতে মন দিতে হয়। কর্মজীবি নারীটা মূহুর্তেই পরিণত হয় দাসী রূপে।
বয়ঃসন্ধি হতে একজন নারীকে বিবাহ সম্পর্কে নানা ভয় ভীতি সর্বদা তাড়িত করে। কোন কারণে স্বামী অসন্তুষ্ট হলে তাকে ভীতিকর শারিরীক নির্যাতন(কিছু ক্ষেত্রে) ও তালাক শব্দটার ভয়ে ভীত হতে বাধ্য করেছে। সর্বদা অজানা আশঙ্কায় আতংকিত হতে হচ্ছে নারীটাকে। কেননা ধর্মই তাকে ভীত হতে বাধ্য করছে। এছাড়াও ইসলাম ধর্মে স্বামীকে একের অধিক বিবাহের অনুমতি দেওয়াতে অনিশ্চয়তায় ভোগে বিবাহিত রমণীরা।
মূলত দরিদ্র দেশের নারীদের এই শোচনীয় অবস্থান হতে মুক্তির দরকার। প্রগতিশীলতা তাদের কিছুটা হলেও মুক্তি এনে দিতে পারে। কিন্তু,এ পথও বহু কন্টকপূর্ণ।নারীদের সচেতনতাই তাদের সাফল্যের চাবিকাঠি। নারী ধীরে ধীরে পঙ্গু হয় মনে। দেহে যতোটুকু দুর্বল তার চাইতে মানসিক ভাবে পর্যুদস্ত বেশি। অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতা, সামাজিক বাধা, ধর্মীয় অনুশাসনের বেড়াজাল ডিঙ্গিয়ে তাকে আসতে হবে সম্মুখে। নিজকে পরিণত করতে হবে মানুষ রূপে, দাসী রূপে নয়।